ইসলাম এক কালজয়ী আদর্শের নাম। যে আদর্শ পৃথিবীর সকল মানুষকে মানুষের গোলামীর জিঞ্জির থেকে মুক্ত করে সারা জাহানের মালিকের গোলামে পরিণিত করতে চায়। যে আদর্শ যুগে যুগে বিশ্ব মানবতাকে সত্য ও শান্তি প্রতিষ্টায় ব্রত করেছে। একমাত্র সেই আদর্শই ধণী-গরিব, সাদা-কালো, রাজা-প্রজা সবাইকে এককাতারে শামিল করেছে। যে আদর্শের ছোঁয়ায় হাবশী ভৃত্য বেলাল পরিণত হয়েছেন সোনার মানুষে, হয়রত ওমরের মত ক্রোধান্বিত দুর্দম স্বাধীনচেতা ব্যাক্তি পরিণত হয়েছিলেন অর্ধ জাহানের শাসক ও জনমানুষের মনের মানুষে। যারা স্বীয় কামনা-বাসনা পুরণের পরিবর্তে সব কিছুর সফলতার মানদন্ড মুনিবের সন্তুষ্টিকেই (আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালন) জীবনের প্রকৃত সফলতা হিসেবে মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন। যতদিন পর্যন্ত মুসলমানরা এই আদর্শ ও চেতনাকে মনে প্রাণে ধারণ করে নিজেদের কার্য সাধনের তীব্র সাধনা অব্যাহত রেখেছে ততদিন তারা নেতৃত্ব দিয়েছে। লাঞ্চনা-অবমাননা তাদেরকে গ্রাস করতে পারে নি। মুসলমানদের একটা অংশ যখন থেকে তাদের চেতনা-বিশ্বাসকে জলাঞ্জলী দিয়ে ভিন্ন আদর্শকে নিজেদের জীবনের অংশ হিসেবে গ্রহন করেছে এবং অপর অংশ অজ্ঞতাবশতঃ ইসলাম বর্তমান দুনিয়ায় অকার্যকর (!) বলে মনে করতে শুরু করেছে তখন থেকেই মুসলমানদের নানামুখী অধঃপতন শরু হয়েছে। বর্তমান ঝঞ্জা-বিক্ষুদ্ধ দুনিয়া একটু শান্তির জন্য হাহাকার করছে, যেমন একজন তৃষ্ণার্ত মরুযাত্রী পানির তেষ্টায় ছটফট করে। সেই কালজয়ী আদর্শ ইসলামের ছোঁয়াই কেবলমাত্র সকল অবসাদের অবসান ঘটাতে পারে। তাই আদর্শের ধারণকারীদের কথিপয় ভাবনা, ভূমিকা ও চিন্তার ঐক্যমতের উপর নির্ভর করবে আগামী বিশ্বব্যাবস্থার পরিবর্তন হবে কি না? হেরার আলোয় আলোকিত সমাজ প্রতিষ্টা হবে কি হবেনা? এই আদর্শের কর্মীরা ব্যক্তিগত ভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উপযোগীতা লাভ করবে কিনা? নিশ্চয় আল্লাহর নির্দেশিত পথেই কেবল মাত্র দুনিয়া ও পরকালের প্রকৃত সফলতা নিহিত রয়েছে।

আদর্শ কি
আদর্শ মানে বিশ্বাস, চিন্তা বা চেতনা। কোন ব্যক্তি, সমাজ বা সংগঠন যেই বিশ্বাস লালন করে সে সেই বিশ্বাসের অনুসারী হয়ে থাকে। যে বা যারা যে আদর্শ লালন করে সেই বিশ্বাস বা চেতনা কারো পছন্দ হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। সে বিশ্বাস কারো দৃষ্টিতে ভূলে ভরা হতে পারে। কিন্তু সেই আদর্শে বিশ্বাসী ব্যক্তি বা গোষ্টি আত্নবিশ্বাসের সাথে যখন তাদের মতাদর্শ মনে-প্রাণে-ধ্যাণে লালন করতে থাকে, সকল শত প্রতিকুলতা মাড়িয়ে এর প্রচার অব্যাহত থাকে, তখন তাদের আদর্শের গতি প্রকৃতি সমাজে কি ধরণের প্রভাব সৃষ্টি করছে এর উপর ভিত্তি করে একটি বৃহৎ শ্রেণী বা ক্ষুদ্র শ্রেণীর তৈরী হয়। ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে অনেক আদর্শ ভূলের উপর প্রতিষ্টিত হয়েছে, যা কালান্তরে প্রমাণিত সত্য। কিন্তু সে আদর্শবাহী লোকেরা তাদের চেতনাকে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে, মনে-প্রাণে অন্ধভাবে লালন করেছে এবং সেই আদর্শকে কায়েম করতে জীবন বিসর্জন দিয়েছে। তাই দুনিয়ায় কিছুকাল তাদের মতার্দশের রাষ্ট্র বা সমাজ পরিচালিত হয়েছে। সমাজতন্ত্র, চলমান পুঁজিতন্ত্র ও গণতন্ত্রের ধারক বাহকদের বিশ্বব্যাবস্থায় চরম ব্যর্থতার কারণে এবং এসবের তুলনায় শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে ইসলামী চেতনার উড্ডয়ন এখন সময়ের অনিবার্য দাবী।

ইসলাম ও জাহেলিয়াতের ঐতিহাসিক আদর্শিক দ্বন্দঃ
ইসলাম ও জাহেলিয়াত ভিন্ন দুটো পথ। যার গতি-প্রকৃতি সম্পূর্ণ আলাদা। একটি সৃষ্টিকর্তার নির্দেশিত পথে, আরেকটি মনগড়া মত ও পথে পরিচালিত। যে ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে পৃথিবীতে মনুষ্য জগতের প্রারম্ভিকা হতে। হাবিল ও কাবিলের দ্বন্দ এর প্রথমটি। একজন নিয়ম মাফিক চলতে রাজি আরেকজন নিয়ম ভাঙ্গতে অটুট। আল্লাহ তায়ালা বলেন- “যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে, আর যারা কাফির তারা সংগ্রাম করে তাগুদের পথে। তাই শয়তানের সাথীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাও। জেনে রাখ শয়তানের চাল বড়ই দূর্বল” (সুরা নিসা-৭৬)। সুতরাং আল্লাহর পথের বিপরীত পথই হল জাহেলিয়াত বা ভ্রষ্ট্র পথ। যুগে যুগে ইসলামী আদর্শকে নানা কায়দায় পরাস্ত করার নিমিত্তে ষড়যন্ত্র হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে ইসলামী আদর্শের অনুসারীরা যেখানে কৌশলী ভূমিকা পালন করেছে, দৃঢ় পদে আদর্শিক ভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে সেখানে মুসলমানরা বিজয়ী হয়েছে। যারা যুগের দোহাই দিয়ে নিজের আদর্শকে জাহেলিয়াতের সাথে গুলিয়ে ফেলে তারা কখনো ইসলামী চেতনা বা আদর্শ লালনকারী হতে পারেনা । ইসলামী চেতনা লালনকারীর সংখ্যায় যত কমই হোক না কেন তারা কিয়ামত অবধি সত্য ও ন্যায়কে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পর্কে বলেন- “এখন তোমরাই দুনিয়ার ঐ সেরা উম্মত, যাদেরকে মানবজাতির হেদায়ত ও সংশোধনের জন্য ময়দানে আনা হয়েছে। তোমরা নেক কাজের আদেশ কর ও মন্দ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখ এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখ” ( সুরা আল-ইমরান-১১০)।

যেখানে আলো সেখানে অন্ধকার জেঁকে বসতে চায়, যেখানে সত্য সেখানে মিথ্যা ঢেকে দিতে চায়। এমন আলো আঁধারির খেলা কেয়ামত অবধি চলতে থাকবে। তবে আল্লাহ তায়ালা আলোকে আঁধারের উপর উচ্চকিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন- মুমিনদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিজয়ের ঘোষণা “আল্লাহ লিখে দিয়েছেন যে, তিনি এবং তাঁর রাসূল অবশ্যই বিজয়ী হবেন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ মহাশক্তিমান ও পরাক্রমশালী” (৫৮:২১ )। অন্যত্র আল্লাহ বলেন- “এরা তাদের মুখের ফুঁ দিয়ে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়। অথচ আল্লাহর ফায়সালা হলো তিনি তাঁর নূরকে পূর্ণরুপে বিকশিত করবেন। কাফেররা তা যতই অপছন্দ করুক না কেন। তিনিই সেই মহান সত্তা যিনি তাঁর রাসূলকে হিদায়াত এবং দ্বীনে হক্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি এ দ্বীনকে অন্য সকল দ্বীনের ওপর বিজয়ী করেন, চাই তা মুশরিকদের কাছে যতই অসহনীয় হোক না কেন। (৬১:৮-৯)। পৃথিবীর দিকে দিকে এখন হক ও বাতিলের লড়াই চলছে। চিরতরে নিঃশেষ করার। এমন কঠিন মুহুর্তে আদর্শের ধারকরা মুষড়ে পড়লে চলবে না ,লড়াইয়ের ময়দানে থমকে গেলে হবেনা । সবার মনে রাখা উচিৎ ইসলাম ও জাহেলিয়াতে দ্বন্দ ঐতিহাসিক ও চিরন্তন।

মুসলমানদের আদর্শিক পরিচয়ঃ
মুসলমানেরা তাদের মতাদর্শ আল-ইসলামের অনুসারী। মূলতঃ “লা ইলাহা ইল্লাললাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সঃ)” ই- মুসলমানদের চেতনা, বিশ্বাস বা আদর্শ। কুরআনে এ বিশ্বাসকে বলা হয়েছে তাওহীদ বা একাত্ববাদ- “যারা বিশ্বাস আনবে অদৃশ্যের প্রতি, নামাজ কায়েম করবে এবং যা তাদেরকে প্রদান করা হয়েছে তা থেকে আল্লাহর পথে ব্যয় করবে”। (সুরা বাকারা-৩)। মানে না দেখেও বিশ্বাস করা এবং তাঁর নির্দেশিত কর্মসূচী বিনা বাক্যে পালন পালন করা। বিশ্বাস, চেতনা বা আদর্শ হল এমন এক আত্নিক বিষয় যা এর অনুসারীদের যে কোন সাংঘাতিক ভয়- ভীতি, ক্ষয়-ক্ষতিতেও তাদের আনিত বিশ্বাসের উপর অটল রাখে। ইসলামী আদর্শবাদীদের বিশ্বাস দুনিয়ার জীবনের উপর ভিত্তি করে আখেরাতের সফলতা ব্যর্থতা, আল্লাহর নির্দেশিত পথে মানুষের কল্যাণ সাধনে নিজকে উজার করা।

স্বৈরতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, চলমান পুঁজিতন্ত্র ও গণতন্ত্রের ধারক বাহকদের একটি অংশের কাছে ইসলামের আদর্শ বা চেতনা হাস্যকর বটে। তাদের মতে ইসলামী আদর্শের ধারকরা ভূলের মাঝে ডুবন্ত। তাদের দৃষ্টিতে আল্লাহ, স্রষ্টা, পরকাল বা পরকালের হিসেব নিকাশ বলতে কিছু নেই। দুনিয়াটাই সব, তাদের হিসেব সব নগদে নগদ, সব কিছু দৃশ্যমান হওয়া বাঞ্চনীয়। তারা “খাও দাও ফুঁর্তি কর দুনিয়াটা মস্তবড়” নীতিতে বিশ্বাসী। তারা যুক্তি তোলে আল্লাহ বা স্রষ্টা আছেন তার প্রমাণ কি? উদাহরণ স্বরপ আমার এক শিক্ষকের উদাহরণ টানতে পারি, তিনি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া। তার ভাষায়- “আমাদের ক্লাশে এক শিক্ষক ক্লাশ নেয়ার ফাঁকে নিয়মিত পৃথিবীর কোন পরিচালক নেই , আল্লাহ বলতে কেউ নেই (!) বলে বা স্রষ্টা আছেন তার প্রমাণ কি? এমন ধরণের নানা প্রশ্ন আমাদের ছুঁড়ে দিতেন। একদিন আমি স্যারের এমন প্রশ্নে স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম স্যার আপনি আপনার জন্মদাতাকে দেখেছেন? স্যার বললেন কেন আমার বাবা! তখন স্যারকে বল্লাম স্যার আপনার জন্মদাতাকে জন্মদানকালে না দেখেও মায়ের কথার উপর বিশ্বাস করে সেই ব্যক্তিকে আপনার পিতা হিসেবে গ্রহন করে নিয়েছেন! আপনার মা একজন ব্যক্তি বা আপনার মায়ের স্বামীকে আপনার বাবা বলে পরিচয় করিয়ে দেয়ার পর তাকে বাবা বলে মনে-প্রাণে অস্তিত্বে গেঁথে নিয়েছেন! কারণ আপনি নিখাঁদ ভাবে আস্থা রাখেন আপনার মা কখনো অন্তত আপনার পিতৃ পরিচয়ের ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারেন না। আপনার প্রতি আপনার পিতার কর্তব্যপরায়নতার কারণে তাকে বাবা বলে নিঃশ্বাসে-বিশ্বাসে লালন করতে কোন বাঁধা থাকেনা। তেমনি ভাবে আল-আমিন বা বিশ্বাসী শেষ নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর উপর যে অহি নাজিল হয়েছে তাঁর “লা ইলাহা ইল্লাললাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সঃ) আহবান যারা গ্রহন করেছে তারা অস্থি মজ্জায় আল্লাহকে বিশ্বাস করে নিয়েছেন। আর সেই রবের পৃথিবীতে সর্বদা তাঁরই অবিভাবকত্ব বিরাজমান! স্যার নিশ্চুপ হয়ে রইলেন!

সঠিক ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসীদের চেতনা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ করেন- “তারাই সত্যিকার মুমিন, যারা আল্লাহ তার রাসুলের প্রতি ঈমান এনেছে, এরপর এতে কোন সন্দেহ করেনি এবং আল্লাহর পথে জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করেছে। এরাই সাচ্চা লোক।” (সুরা আল-ইমরান-১৬০)। ইসলামী আদর্শের ধারকরা আল্লাহ ও তার নির্দেশিত পথে চলতে গেলে ইসলাম বিদ্বেষীদের চাকচিক্যময় জীবন ও দুনিয়ার চাহিদা, ভোগ-বিলাস, লোভ-লালসা উপেক্ষা করে নিজের আদর্শের কর্মসূচীকে আপাদমস্তক ভাবে গ্রহন করে। নিজের পথকে জাহেলিয়াতের সকল দূষিত ছোঁয়া থেকে সিঞ্চন করে আসল রূপকেই লালন করতে সাধ্যমাফিক প্রচেষ্টা চালাবে।
মোদ্দাকথা আল্লাহ তাঁর রাসুলের জন্য নিজের জীবনের সবটুকুট নিখাদ ভাবে উজার করে দেয়াই একজন আদর্শিক কর্মীর আদর্শ।

আদর্শের উপর অটল থাকা
পৃথিবীতে যে কোন আদর্শ বিজয়ী হয়েছে নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব দিয়েছে তাঁর অনুসারীদের ভূমিকার কারণে। আবার অনেক আন্দোলন মতাদর্শের আতুঁড়ে ঘরে সলিল সমাধী ঘটেছে সেই আর্দশের অনুসারীদের দূর্বল চিত্তের ভূমিকার কারণে।এমন উত্থান-পতনের মূলমন্ত্র হল আদর্শের কর্মীদের আদর্শের প্রতি দৃঢ় অটলতা অথবা দূর্বলতা। দৃঢ় অটলতার কারণে যেমন একটি ঠায় অগ্রহনীয় মতাদর্শ একটি জনগোষ্টির মতাদর্শে পরিণত হয়; একটি সময় সেই জনপদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই ভিত্তির উপর গড়ে উঠতে থাকে অনুরূপভাবে প্রতিশ্রুতিশীল গ্রহনীয় একটি মতাদর্শের অগ্রযাত্রা কোন আলোর মুখ দেখে না শুধুমাত্র সেই আদর্শের অনুসারীদের স্বীয় আদর্শের প্রতি অবিচলতার অভাবে। মানুষ তার ভবিষ্যৎ যখন সমুজ্জল বলে অনুভব করে তখন কিছু প্রতিকুলতা, চড়াই-উতরাই মাড়িয়ে তার মানজিলের দিকে ছুটে চলতে চেষ্টা করে তেমনি আদর্শের লালনকারীরা যখন তাদের আদর্শ বিস্তার বা সে আলোকে সমাজ প্রতিষ্টার স্বপ্ন দেখে তখন তাদের কাজের গতি-প্রকৃতি হয় একরকম, আর যারা তাদের আদর্শিক পরাজয়ের চিন্তায় হতাশার তিমিরে নিমজ্জিত থাকে তাদের ভূমিকা হয় অন্যরকম। ইতিহাসের পাতায় মুহাম্মদ (সঃ) ৩১৩ জন সাহাবীর ১০০০ সুসজ্জিত কাফিরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন আদর্শিক চেতনার কারণে। তাদের চেতনা ছিল আদর্শ বিজয়ের জন্য চেষ্টা করা আর এর জন্য মূল সাহায্যকারী আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। আবার জাগতিক উদাহরণ হিসেবে হিটলারের ন্যাৎসি বাহিনীর অবিচলতার কথা পৃথিবীর শেষবধি লেখা থাকবে কারণ তারা যা বিশ্বাস করেছিল তার জন্য জীবনবাজি রেখে তাদের মতাদর্শের বিজয়ের জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছে। সুতরাং হিনমন্যতা পরিহার করে আদর্শের বিজয়ের জন্য চেষ্টা করাই হচ্ছে আদর্শিক কর্মীদের অন্যতম কাজ। জয় পরাজয়কে তারা থোড়াই কেয়ার করে, তারা বিশ্বাস করে এ পথে আগুয়ান হতে গিয়ে সকল বাঁধা-বিপত্তি, ঘাত-প্রতিঘাত ও পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ তাদের আদর্শিক যাত্রাকে আরো সুদৃঢ় করে। আদর্শের জন্য প্রতিটি জীবনদান নতুন করে আদর্শিক অগ্রযাত্রাকে আরো বেশী তীব্র ও সঞ্জিবিত করে। যে কোন আন্দোলনের নেতা-কর্মীর মুনাফেকী অবস্থান আন্দোলনকে কুঁড়ে কুঁড়ে নিঃশেষ করে দেয়। যে আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা আদর্শিক চেতনা ধারণ করে জীবনবাজী রেখে আদর্শের জন্য কাজ করে পৃথিবীতে সে আন্দোলন যেমন বিজয়ী হয়েছে তেমনি আদর্শিক নেতা-কর্মীদের দেশ-জাতি দল বিজয়মাল্য পড়িয়ে সম্মানিত করেছে। আল্লাহর রাসুল (সঃ) আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি বা নীতিমালা রাসুল (সঃ) এর একটি হাদীসে আমরা দেখতে পাই- “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সঃ) এরশাদ করেছেন- তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ ঈমানদারহতে পারবে না, যতক্ষণ না তার কামনা বাসনাকে আমার উপস্থাপিত দ্বীনের অধীনে করতে না পারবে।” (আল-ইবনাতুল কুবরা লি ইবনি বাত্তাহ-২১৯)।

মুসলমানরা কি তাদের আদর্শের উপর অটল আছে?
এককথায় যদি বলি তাহলে বলতে হয় মুসলমানরা তাদের আদর্শের উপর পুরোপুরিভাবে অটল নেই। কারণ তাদের সিংহভাগ আত্নকলহে জর্জরিত। অনৈক্য, মতানৈক্য ও মতদ্বৈততার বেড়াজালে পিষ্ট। দুনিয়ার চাওয়া পাওয়ার প্রতিযোগীতায় যে যার মত মত্ত। একজন মুসলমান মানেই একজন ভাল মানুষ, একজন মুসলমান মানেই সত্য-ন্যায়ের মূর্তপ্রতিক, একজন মুসলমান মানুষ মানেই আলোকিত মানুষ হিসেবেই এমন আলোর ব্যপ্তি ছড়িয়েছিল সাহাবায়ে আজমায়িনরা। আর এখন মুসলমানদের জীবন থেকে মুসলমানিত্ব লোপ পেতে বসেছে। স্যেকুলার চিন্তা-চৈতণ্যের প্রভাবে অনেকের মাথায় ঘুঁন ধরেছে। তাদের মতে ধর্ম একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। মানব জীবনে এর কোন প্রভাব নেই। তাইতো এসব মুসলমানদের কারণে অন্য ধর্মের অনুসারীরা প্রভাবিত হয় না। ভিন্ন ধর্মের অনুসারীর যখন দেখে তাদের জীবনবোঁধের মধ্যে কোন ফাঁরাক নেই তখন তারা ধরে নেয় আমরা ও মুসলমানদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। বর্তমানে মুসলমানদেরকে মানবিকতা ও অমানবিকতার বিষয়গুলো স্রেফ লোকদেখানো ও নিয়মরক্ষার জন্য করতে লক্ষ করা যায়। প্রকৃতপক্ষে এদের সকল কর্মকান্ড শঠতা ও কপটতায় ভরা। যেখানে একজন মুসলমান মানে আল আমিন, আমানতদার, একজন ভাল সন্তান, ভাল স্বামী-স্ত্রী, ভাল বাবা-মা সেই বিশ্বাসের ইমারতে মুসলমানরা কি আছে? তাই কিসের ভিত্তিতে ভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা বা অধার্মিকরা নামধারী মুসলমাদের কাতারে এসে দাড়াবে? বা মুসলমানদেরকে বিশ্বাস করবে? তবে নিখাঁদ জেনে বুঝে কিছু লোক ইসলামে দিক্ষিত হচ্ছেন, আরেকটা অংশ স্রেফ দুনিয়ার সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য মুসলমান হওয়ার দাবী করছে। তাদের জীবনে মুসলমানিত্বের লেশমাত্র আছর পরখ করা যায় না। মুসলমানদের আচার-আচরণ, জীবন-বোঁধের অনন্য স্বকীয়তা দেখে তাদের আদর্শের প্রতি কথাও কাজে মিল থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এখনো মানুষ জড়ো হয়ে জীবনের রং-রূপকে ইসলামের রং লেপন করতে চেষ্টা করেছে এর সংখ্যা অনুল্লেখ করার মতই। তার মূল কারণ মুসলমানরা তাদের আদর্শের উপর ঠায় অটল নেই। তাই মুসলমানদের উচিৎ হবে নিজেদের মতাদর্শের উপর অটল থাকা। তাহলে আল্লাহই মুসলমানদের জন্য একটা ব্যবস্থা করবেন- “আল্লাহ যদি তোমাদেরকে সাহায্য করেন তাহলে কোন শক্তি তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না। তিনি যদি তোমাদেরকে ত্যাগ করেন, তাহলে তার পরে কে আছে যে তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারে! কাজেই যারা সাচ্চা মু’মিন তাদের আল্লাহর উপর ভরসা করা উচিৎ” (সুরা আল ইমরান-১৬০)।

মুসলমানরা যদি তাদের চেতনাকে লালন করে কালজয়ী আদর্শের উপর অবিচল থাকতে পারে তাহলে বিজয়ের মুকুট তাদের জন্যই অপেক্ষা করছে।