আদদা‘ওয়াতু ইল্লাহ মুমিনদের অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্তব্য। যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ এই সুমহান কর্তব্য পালনের অত্যুজ্জল উদাহরণ উপস্থাপন করে গেছেন। নবী-রাসূলগণই ছিলেন আল্লাহর দিকে আহবানকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তিত্ব। নবী-রাসূলগণ সকলে একই যুগে আবির্ভূত হননি। কোন কোন যুগে একাধিক নবী আবির্ভূত হলেও এমন বহু সংখ্যক নবী-রাসূল ছিলেন যাঁদের মাঝে শত শত বছর তো বটেই, হাজার হাজার বছরের ব্যবধানও বিদ্যমান। তাঁরা যেমনি আবির্ভূত হয়েছিলেন বিভিন্ন যুগে তেমনি বিভিন্ন ভূ-খন্ডে এবং বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের মাঝে। হাজার হাজার বছরের এই প্রান্তের মানুষ আর ওই প্রান্তের মানুষের লাইফ স্টাইলে ছিলো বিস্তর ফারাক। যুগ পরিক্রমায় মানুষের ব্যবহৃত উপায়-উপকরণে পরিবর্তন ঘটেছে এবং পরিবর্তন ঘটেই চলছে। মানুষ নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে তাদের লাইফ স্টাইলে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেছে। কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয় বক্তুগত উপায়-উপকরণ আবিষ্কার, ব্যবহার এবং এর ফলশ্রুতিতে মানুষের লাইফ স্টাইলে নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটলেও মানব-প্রকৃতিতে কোন পরিবর্তন ঘটেনি কিংবা ঘটছে না। নিরাপদ জীবন মানুষকে সুখী করে, নিরাপত্তাহীনতা মানুষকে দুঃখ-ভারাক্রান্ত করে। জীবন ধারণের প্রকৃত প্রয়োজন পূরণ হলে মানুষ খুশি হয়, প্রয়োজন পূরণ না হলে মানুষ দুঃখ পায়। মনের ভাব প্রকাশ করতে পারলে মানুষ পরিতৃপ্ত হয়, মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারলে হয় বিষণ্ণ। মানুষ সুখে হাসে, দুঃখে কাঁদে।
হাজার হাজার বছর আগে এটাই ছিলো মানব-প্রকৃতির স্বরূপ। শত শত বছর আগেও এমনটিই ছিলো, আজো তা-ই আছে।
আর মানব-প্রকৃতির প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেই কর্তব্য পালন করে গেছেন নবী-রাসূলগণ। সেই জন্যই যুগের ব্যবধান, ভূ-খন্ডের ব্যবধান এবং ভাষার ব্যবধান সত্ত্বেও তাঁদের সকলেরই মৌলিক বক্তব্য ছিলো অভিন্ন।
উল্লেখ্য যে মানব-প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ভালো-মন্দ বোধ, ন্যায়-অন্যায় বোধ যাকে এক কথায় বলা হয় বিবেক। মানব-প্রকৃতির একটি বিশাল অংশ জুড়ে বিবেক নামক এই বিষয়টির উপস্থিতি থাকা সত্বেও মানুষ সব সময় ভালোকে ভালো বলে, ন্যায়কে ন্যায় বলে এবং মন্দকে মন্দ বলে, অন্যায়কে অন্যায় বলে চিহ্নিত করতে পারে না। তবে ভালো কিংবা ন্যায় যখন তার উজ্জ্বল্য নিয়ে পরিপূর্ণরূপে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে, তখন তাকে চিনতে বিবেক সাধারণত ভুল করে না।
আবার এটাও সত্য যে মন্দতে কিংবা অন্যায়ে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ব্যক্তির বিবেক এতোই ভোঁতা হয়ে যায় যে ভালো ও ন্যায়ের উজ্জ্বল্য তার চোখে ধরা পড়েও পড়ে না।
বিবেকের এই অসহায়ত্বের প্রতিকারেই নিয়োজিত ছিলো নবী-রাসূলগণের প্রয়াস। তাঁরা মানুষের বিবেককে সত্যের আলোকে আলোকিত করতে চেয়েছেন।
আর এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে হাজার হাজার বছর আগে সত্যের উৎস ছিলেন আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন। শত শত বছর আগেও তিনিই ছিলেন সত্যের উৎস। আজো সত্যের উৎস একমাত্র তিনিই।
আর বিবেক যখন আল্লাহ রাববুল ‘আলামীনকে সত্যের উৎসরূপে গ্রহণ করে, তখন গোটা মানব-প্রকৃতিতে মহা আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সংশয়জনিত দুর্বলতামুক্ত হয়ে সে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। মানব-প্রকৃতি তখন পরিশীলিত সত্তা রূপে বিকশিত ও সমুন্নত হয়।
লাইফ স্টাইলের পরিবর্তনে যেহেতু মানব-প্রকৃতি বদলায় না, সেহেতু বস্ত্তগত উপায়-উপকরণের নিরিখে মানব-প্রকৃতিকে পরিশীলিত করার চিন্তা-ভাবনা সঠিক কাজ নয়। তবে বস্ত্তগত উপায়-উপকরণ ব্যবহার করে অল্প সময়ে অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে সত্যের বার্তা পৌঁছানো বিজ্ঞতারই দাবি।
যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ অভিন্নণ বক্তব্য নিয়ে আবির্ভূত হয়েছেন মানব সমাজে। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন সর্বশেষ নবী। আদ্দাও‘আতু ইলাল্লাহ-র ক্ষেত্রে তাঁর কর্মনীতি ও কর্মপদ্ধতির বিবরণ রয়েছে আমাদের হাতের নাগালে। তাঁর প্রতি ঈমান পোষণকারী প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য হচ্ছে তাঁর উপস্থাপিত কর্মনীতি এবং অনুসৃত কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করে বলিষ্ঠভাবে আদদা‘ওয়াতু ইলাল্লাহ-র কাজে আত্মনিয়োগ করা।