আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন পৃথিবীর মানুষের কল্যাণের জন্য তাঁর মহাজ্ঞান ও মহাবিজ্ঞতা উৎসারিত জীবন বিধান ইসলামকে অবশ্য পালনীয় করেছেন। একমাত্র ইসলামের অনুসরণ করেই মানুষ পারিবারিক জীবনে সুখ, সামাজিক জীবনে শান্তি, রাজনৈতিক জীবনে সম্প্রীতি, অর্থনৈতিক জীবনে শোষণশূন্যতা এবং সাংস্কৃতিক জীবনে অনাবিলতা লাভ করতে পারে।
যখনই মানুষ আল্লাহ্‌ রাববুল ‘আলামীনের দেওয়া জীবন বিধানের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছে এবং মানব চিন্তাপ্রসূত মতবাদের অনুশীলন করতে গেছে তখনই মানুষ অগণিত সমস্যার আবর্তে পড়ে লাঞ্ছিত হয়েছে। এই বাস্তবতা মানুষকে এই শিক্ষাই দেয় যে মানুষ নিজেদের উপযোগী জীবন বিধান রচনা করার কোন যোগ্যতাই রাখে না।
সেহেতু মানুষের কর্তব্য হচ্ছে ধৃষ্টতা পরিহার করে, অহমিকা বর্জন করে, দ্বিধাহীন চিত্তে আল্লাহ্‌ রাববুল ‘আলামীন প্রদত্ত জীবন বিধান গ্রহণ করে সোজা সঠিক পথের অনুসারী হওয়া।
আল্লাহ্‌ রাববুল ‘আলামীন মানুষের কল্যাণের জন্য জীবন-বিধান পাঠিয়েছেন নবী-রাসূলদের (আলাইহিমুস্ সালাম) মাধ্যমে যাতে তাঁরা মানুষকে সেই জীবন বিধান মুতাবিক ব্যক্তি গঠন ও সমাজ গঠনের পদ্ধতি শিক্ষা দিতে পারেন। আর নবী-রাসূলদের (আলাইহিমুস্ সালাম) সর্বশেষ জন হচ্ছেন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।
আল্লাহ্‌ রাববুল ‘আলামীন প্রদত্ত জীবন বিধানে মানুষের জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগ সম্পর্কে দিক নির্দেশনা রয়েছে। আর প্রতিটি দিক নির্দেশনাকেই বাস্তব জীবনে রূপায়িত করে গেছেন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।
আল্লাহ্‌ রাববুল ‘আলামীন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহকে (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের জন্য ‘উসওয়াতুন হাসানাহ’ বা সর্বোত্তম নমুনা বলে ঘোষণা করেছেন। অর্থাৎ জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগে ইসলামের অনুশীলন করতে হবে একমাত্র তাঁকে অনুসরণ করেই। ছালাত কায়েমের জন্য, ছাওম পালনের জন্য, যাকাত আদায়ের জন্য, হাজ পালনের জন্য যেমন তাঁর অনুসরণ একান্ত আবশ্যক, তেমনিভাবে ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের জন্যও তাঁর অনুসরণ অত্যাবশ্যক।
মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্মপদ্ধতির দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে তিনি সর্বাগ্রে মানুষের সামনে আল্লাহ্‌র যাত, আল্লাহ্‌র ছিফাত, আল্লাহ্‌র কুদরাত এবং আল্লাহ্‌র হুকুক সম্পর্কিত ধারণা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন, এই পৃথিবীতে আল্লাহ্‌র আব্দ ও খালীফা হিসেবে কর্তব্য পালনের গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষকে সজাগ করে তোলার প্রয়াস চালিয়েছেন এবং দুনিয়ার জীবনই যে চূড়ান্তৃ নয় বরং তার পরে এক অনন্ত জীবনে মানুষকে পাড়ি দিতে হবে এবং দুনিয়ার জীবনের কৃত কর্মের নিরিখে সেই অনন্ত জীবনে শাস্তি অথবা অনাবিল সুখ ও শান্তি ভোগ করতে হবে, সেই সম্পর্কে মানুষকে ওয়াকিফহাল করে তোলার চেষ্টা চালিয়েছেন।
আল কুরআন অংশ অংশ করে নাযিল হচ্ছিলো, আর মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল কুরআনের আলোকে মানুষের চিন্তা-চেতনাকে আলোকিত করা এবং আল কুরআনের রঙে মানুষের ব্যক্তি জীবন ও সামষ্টিক জীবনকে রাঙিয়ে তুলেছিলেন। এমন আলোকিত ও রঙিন মানুষের সংখ্যার যখন গণভিত্তিতে উত্তরণ ঘটে, তখনই তিনি তাঁদেরকে নিয়ে গড়ে তোলেন একটি অনুপম ইসলামী রাষ্ট্র।
মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা. আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শক্তি প্রয়োগ করে ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করার কোন পদক্ষেপই নেননি। কেননা আল্লাহ্ রাববুল ‘আলামীন এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে তাঁকে নিষেধ করেছিলেন। তদুপরি হিকমাতের নামে সরাসরি ইসলামের কথা না বলে অন্য কোন পরিভাষা ব্যবহার করে, মানুষের আস্থা অর্জন করে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টাও তিনি করেননি। আল্লাহ্‌ রাববুল ‘আলামীন যখনই কোন কিছু নাযিল করতেন, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখনই তা জনসমক্ষে তুলে ধরতেন। হিকমাতের নামে তিনি কোন কিছু গোপন করতেন না।
আসলে ইসলামের মর্মকথা সুন্দর বক্তব্য ও সুন্দর যুক্তিসহকারে মানুষের সামনে তুলে ধরাই ছিলো নবী-রাসূলদের (আলাইহিমুস্ সালাম) কাজ। এই যুগের ইসলাম প্রতিষ্ঠাকামীদেরকেও এই পদ্ধতিই অনুসরণ করে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ও সৌন্দর্য মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। কোন ভূ-খন্ডের জনগণের অধিকাংশ যদি ইসলামী জীবন বিধানকে তাদের জীবন বিধান রূপে মেনে নেয়, তখন তাদের ম্যান্ডেট নিয়েই তো ইসলামী সরকার গঠন করতে হবে এবং ক্রমান্বয়ে রাষ্ট্রে ইসলামের বিধি-বিধান জারি করতে হবে।
এটাই তো ছিলো ‘উসওয়াতুন হাসানাহ’-র কর্মপদ্ধতি। আর এই পদ্ধতি অনুসরণ না করে ডানে বাঁয়ে চলে গেলেই তো আমরা নিপতিত হবো বিভ্রান্তির আবর্তে।