 ইসলাম পরিপালনের জন্য সংঘবদ্ধ হওয়ার এবং সংঘবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন সূরা আলে ‘ইমরানের ১০৩ নাম্বার আয়াতে বলেন,

وَاعْتَصِمُواْ بِحَبْلِ اللهِ جَمِيعًا وَّلاَ تَفَرَّقُواْ ০
‘এবং তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে (অর্থাৎ আল্লাহর দীনকে) শক্তভাবে অাঁকড়ে ধর সংঘবদ্ধভাবে এবং পৃথক হয়ে যেয়ো না।’
 সংঘবদ্ধতার নির্দেশ দিয়ে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
اَناَ امُرُكُمْ بِخَمْسٍ اللهُ اَمَرَنِىْ بِهِنَّ اَلْجَمَاعَةُ وَالَسَّمْعُ وَالطَّاعَةُ وَالْهِجْرَةُ وَالْجِهَادُ فِىْ ০ سَبِيْلِ الله
[আলহাকিম, আহমাদ]
‘আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি যেই পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। (সেইগুলো হচ্ছে:) সংঘবদ্ধতা, শ্রবণ, আনুগত্য, হিজরাত এবং আল্লাহর পথে জিহাদ।’
 সংঘবদ্ধতার গুরুত্ব সম্পর্কে উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) বলেন,
لاَ اِسْلاَمَ اِلَّا بِجَمَاعَةٍ وَلاَ جَمَاعَةَ الَّا بِاِمَارَةٍ وَلاَ اِمَارَةَ اِلَّا بِطَاعَةٍ ০
‘সংঘবদ্ধতা ছাড়া ইসলাম হয় না। নেতৃত্ব ছাড়া সংঘবদ্ধতা হয় না এবং আনুগত্যশীল কর্মীদল ছাড়া নেতৃত্ব হয় না।’
 সংঘবদ্ধতার অপর নাম সংগঠন।
সংগঠন আন্দোলনের মেরুদন্ড।
সংগঠন আন্দোলনের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে।
সংগঠন ছাড়া ইসলামের শক্তির বিকাশ ঘটে না।
সংগঠন ছাড়া ইসলাম মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না।
সংগঠন ছাড়া ইসলাম রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে না।
সংগঠন ইসলামকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উন্নীত করার সিঁড়ি।
অসংগঠিত অসংখ্য মানুষ কোন শক্তি নয়।
সংগঠিত কিছু লোকও একটি শক্তি।
 ইসলামী সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত হওয়া কোন সখের বিষয় নয়। এটি একটি কর্তব্য। অবশ্য কর্তব্য।
ইসলামী সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অর্থ একটি ফরম পূরণ করা নয়। এর অর্থ- নিজকে সংগঠনের নিয়ম-শৃংখলার অধীনে পেশ করে দেওয়া এবং সংগঠনের দাবি পূরণের জন্য নিজের সময়, শ্রম, মেধা ও অর্থ কুরবানী করা।
 সুন্দর সাংগঠনিক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য কতগুলো সাংগঠনিক নীতি একনিষ্ঠভাবে অনুসৃত হওয়া প্রয়োজন। যেমন-
১। নেতৃত্ব পদ লাভের অভিলাসী হওয়া যাবে না।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
اِنَّا وَاللهِ لاَ نُوَلِّىْ عَلى هذَا الْعَمَلِ أَحَدًا سَأَلَهُ وَلاَ أَحَدًا حَرَصَ عَلَيْهِ ِ০
[ছাহীহ মুসলিম, ছাহীহ আলবুখারী]
‘আল্লাহর কসম, অবশ্যই আমরা এমন কোন লোকের ওপর এই কাজের দায়িত্ব অর্পণ করবো না যে তা চায় অথবা এর আকাংখা পোষণ করে।’
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
اِنَّكُمْ سَتَحْرِصُوْنَ عَلَى الْاِمَارَةِ فَسَتَكُوْنُ نَدَامَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ ০
[ছাহীহ আলবুখারী]
‘অচিরেই তোমরা নেতৃত্ব পদের অভিলাষী হয়ে পড়বে। আর কিয়ামাতের দিন এটি তোমাদের জন্য লজ্জা ও দুঃখের কারণ হবে।’
২। যোগ্যতম ব্যক্তির হাতে নেতৃত্ব দানের দায়িত্ব তুলে দিতে হবে।
সূরা আন্ নিসা-র ৫৮ নাম্বার আয়াতে এই বিষয়ে মুমিনদের জন্য শিক্ষা নিহিত রয়েছে।
এই আয়াতে আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন বলেন,
اِنَّ اللهَ يَاْمُرُكُمْ اَنْ تُؤَدُّوا الْاَمَانَاتِ اِلى اَهْلِهَا لا
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে যাবতীয় আমানাত হকদারের নিকট সুপর্দ করতে নির্দেশ দিচ্ছেন।’
উল্লেখ্য যে নেতৃত্ব প্রদানের দায়িত্বও একটি আমানাত।
প্রত্যেক ভোটার স্বতন্ত্রভাবে, স্বাধীনভাবে, গোপনভাবে তাঁর বিবেচনায় যিনি যোগ্যতম তাঁকে ভোট দেবেন। সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট প্রাপ্ত ব্যক্তি আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে নেতৃত্ব প্রদানের ভারী বোঝা কাঁধে তুলে নেবেন।
৩। এক্সিকিউটিভ টীম গঠনে নেতার চয়েসকে অনার করতে হবে।
সূরা তা-হা-র ২৯ থেকে ৩২ নাম্বার আয়াতে, সূরা তা-হা-র ৩৬ নাম্বার আয়াতে এবং সূরা আলফুরকান-এর ৩৫ নাম্বার আয়াতে এই বিষয়ে মুমিনদের জন্য শিক্ষা নিহিত রয়েছে।
মূসা ইবনু ইমরান (আলাইহিস সালাম) আল্লাহ রাববুল ‘আলামীনের নিকট আবেদন জানালেন,
وَاجْعَلْ لِّىْ وَزِيْرًا مِّنْ اَهْلِىْ ০ هرُوْنَ اَخِىْ ০ اشْدُدْ بِه اَزْرِىْ ০ وَاشْرِكْهُ فِىْ اَمْرِىْ ০
‘আমার বংশের লোকদের মধ্য থেকে একজনকে, আমার ভাই হারুনকে, আমার ওয়াযির বানিয়ে দিন, তার দ্বারা আমার হাত শক্তিশালী করুন এবং তাকে আমার কাজে শরীক বানিয়ে দিন।’
আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন তাঁর এই আবেদন কবুল করে বললেন,
(قال) قَدْ اُوْتِيْتَ سُؤْلَكَ يـمُوْسى ০
‘হে মূসা, তুমি যা চেয়েছো তা তোমাকে দেওয়া হলো।’
وَجَعَلْنَا مَعَه اَخَاهُ هرُوْنَ وَزِيْرًا ০
‘আর আমি তার ভাই হারুণকে তার ওয়াযির বানিয়ে দিলাম।’
অর্থাৎ মূসা ইবনু ইমরান (আলাইহিস সালাম) তাঁর ওয়াযির হিসেবে হারুণ (আলাইহিস সালাম)-কে পাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন তাঁর ইচ্ছা অনুমোদন করেন।
উল্লেখ্য যে ‘ওয়াযির’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বোঝা বহন কারী। নেতা তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্বের ভারী বোঝা লাঘব করার জন্য যাঁকে বা যাঁদেরকে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে বাছাই করেন তিনি বা তাঁরাই তাঁর ওয়াযির।
৪। পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
সূরা আশ্ শূরার ৩৮ নাম্বার আয়াতে মুমিনদের অন্যতম বৈশিষ্ট বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন বলেন,
وَاَمْرُهُمْ شُوْرى بَيْنَهُمْ ص
‘তাদের সামষ্টিক কাজ-কর্ম পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়।’
সূরা আলে ইমরানের ১৫৯ নাম্বার আয়াতে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর অনুগামীদের সাথে পরামর্শ করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন বলেন,
وَشَاوِرْهُمْ فِى الاَمْرِ ج فَاِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ ط
‘সামষ্টিক কাজ-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ কর। কোন বিষয়ে তোমার মত সুদৃঢ় হয়ে গেলে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল কর।’
উল্লেখ্য যে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি রাতে ছালাতুল ইশার পর আবু বাকর আছ্ছিদ্দিক (রা) ও উমার ইবনুল খাত্তাব (রা)-এর সাথে কিছুক্ষণ পরামর্শ করতেন।
বড়ো কোন বিষয় হলে তিনি ‘আশ্ইয়াখে বাদরীন’ (বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রবীণ ছাহাবীগণ)-এর সাথে পরামর্শ করতেন।
৫। মাজলিস থেকে ওয়াক আউট করা যাবে না।
সূরা আন্ নূর-এর ৬২ নাম্বার আয়াতে এই বিষয়ে মুমিনদের জন্য শিক্ষা নিহিত রয়েছে। আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন বলেন,
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ امَنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَاِذَا كَانُوْا مَعَه عَلى اَمْرٍ جَامِعٍ لَّمْ يَذْهَبُوْا
حَتّى يَسْتَئْذِنُوْهُ ط
‘প্রকৃত মুমিন তো তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সত্যিকার অর্থেই মানে এবং
তারা যখন কোন সামষ্টিক কাজে রাসূলের কাছে সমবেত হয়, তখন তার অনুমতি না নিয়ে চলে যায় না।’
একজন নায়েবে রাসূলের পরিচালনাধীন ‘‘আমরিন জামি‘য়িন’’-এর ক্ষেত্রেও একই নীতি প্রযোজ্য।
৬। মাজলিসের প্রসিডিংস ফাঁস করা যাবে না।
এই বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদীসটিতে মুমিনদের জন্য শিক্ষা নিহিত রয়েছে।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
اَلْمَجَالِسُ بِالاَمَانَةِ اِلًّا ثَلَاثَةُ مَجَالِسَ سَفْكُ دَمٍ حَرَامٍ أَوْ فَرْجٍ حَرَامٍ أَوْ اِقْتِطاَعُ ماَلٍ بِغَيْرِ حَقٍّ ০
[জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (রা), সুনান আবী দাউদ, মুসনাদে আহমাদ, সুনান আল বাইহাকী।]
‘মাজলিসের প্রসিডিংস আমানাত। তিনটি মাজলিস ছাড়া। সেইগুলো হচ্ছে : অন্যায়ভাবে রক্তপাত ঘটানো, ব্যভিচার সংঘটন অথবা অবৈধভাবে কারো অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠনের উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত মাজলিস।’
এই হাদীসে যেই তিনটি অন্যায় কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা তো কোন ইসলামী মাজলিসের আলোচ্য বিষয় হতেই পারে না। এই হাদীসের মাধ্যমে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেনো এই কথাই জানিয়ে দিলেন যে মাজলিসের প্রসিডিংস অবশ্যই ফাঁস করা যাবে না।
৭। আন্তরিকভাবে নেতার আনুগত্য করতে হবে।
সূরা আন্ নিসা-র ৫৯ নাম্বার আয়াতে এই বিষয়ে মুমিনদের জন্য সুস্পষ্ট শিক্ষা নিহিত রয়েছে। আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন বলেন,
ياَيُّهَا الَّذِيْنَ امَنُوْا اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَاُولِى الْاَمْرِ مِنْكُمْ ج فَاِنْ تَنَازَعْتُمْ فِىْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ اِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاَخِرِ ط ذلِكَ خَيْرٌ وَّاَحْسَنُ تَاْوِيْلاً০
‘ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর এবং আনুগত্য কর উলুল আমরের। তোমাদের মধ্যে যদি কোন বিষয়ে মত বিরোধ দেখা দেয়, তোমরা যদি আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী হও তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরাও। এটাই সঠিক কর্মনীতি এবং শেষ ফলের দিক দিয়ে এটাই উত্তম।’
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ فِيْمَا اَحَبَّ وَكَرِهَ اِلاَّ اَنْ يُّؤْمَرَ بِمَعْصِيَةٍِ فَاِذَا اُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلاَ سَمْعَ وَلاَ طَاعَةَ ০
[ছাহীহ মুসলিম, ছাহীহ আলবুখারী]
‘প্রত্যেক মুসলিমের ওপর নেতার নির্দেশ শুনা এবং আনুগত্য করা অবশ্য কর্তব- চাই তা পছন্দ হোক বা অপছন্দ হোক, যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহর নাফরমানির নির্দেশ দেওয়া হয়। আল্লাহর নাফরমানির নির্দেশ দেওয়া হলে, তা শুনা এবং আনুগত্য করা যাবে না।’
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
مَنْ اَطَاعَنِىْ فَقَدْ اَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَانِىْ فَقَدْ عَصَى اللهَ وَمَنْ يُطِعِ الاَمِيْرَ فَقَدْ اَطَاعَنِىْ وَمَنْ يَعْصِ الاَمِيْرَ فَقَدْ عَصَانِىْ ০ [ছাহীহ আলবুখারী]
‘যেই ব্যক্তি আমার আনুগত্য করলো, সে আল্লাহরই আনুগত্য করলো। যেই ব্যক্তি আমাকে অমান্য করলো সে আল্লাহকেই অমান্য করলো। আর যেই ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করলো, সে আমারই আনুগত্য করলো। যেই ব্যক্তি আমীরকে অমান্য করলো, সে আমাকেই অমান্য করলো।’
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
عَلَيْكَ السَّمْعُ وَ الطَّاعَةُ فِىْ عُسْرِكَ وَ يُسْرِكَ وَ مَنْشَطِكَ وَ مَكْرَهِكَ وَ اَثَرَةٍ عَلَيْكَ০
[আবু হুরাইরা (রা), ছাহীহ মুসলিম]
‘কঠিন অবস্থায়, সহজ অবস্থায়, সন্তুষ্টিতে, অসন্তুষ্টিতে এবং তোমার ওপর অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও, তোমার কর্তব্য হচ্ছে নেতার নির্দেশ শুনা ও মানা।’
মনে রাখা প্রয়োজন, আনুগত্যই-সাংগঠনিক শৃংখলার মূল উপাদান।
৮। আনুগত্যের হাত গুটিয়ে নেওয়া যাবে না।
এই বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদীসে সুস্পষ্ট শিক্ষা নিহিত রয়েছে।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
مَنْ خَلَعَ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ لَقِىَ اللهُ يَوْمَ الْقِيََامَةِ وَلاَ حُجَّةً لَهُ وَ مَنْ مَاتَ وَ لَيْسَ فِىْ عُنُقِهِ بَيْعَةٌ مَاتَ مِيْتَةٌ جَاهِلِيَةٌ ০
[আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা), ছাহীহ মুসলিম]
‘যেই ব্যক্তি আনুগত্যের হাত গুটিয়ে নেয়, কিয়ামাতের দিন সে আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় মিলিত হবে যে তার পক্ষে কোন যুক্তি থাকবে না। আর যেই ব্যক্তি এইরূপ অবস্থায় মারা যায় যে তার ঘাড়ে আনুগত্যের বন্ধন নেই, তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু।’
উল্লেখ্য যে নেতার নির্দেশ উপেক্ষা করা কিংবা সদস্যপদে ইস্তফা দেওয়া আনুগত্যের হাত গুটিয়ে নেওয়ার শামিল।
৯। অনুগামীদের প্রতি নম্রতা-কোমলতা অবলম্বন করতে হবে।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর অনুগামীদের প্রতি নম্রতা-কোমলতা অবলম্বন করতেন।
এই বিষয়টি সপ্রশংস ভংগিতে আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন সূরা আলে ইমরানের ১৫৯ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন,
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْ ج وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيْظَ الْقَلْبِ لاَنفَضُّواْ مِنْ حَوْلِكَ ص
‘এটা আল্লাহর বড়ই অনুগ্রহ যে তুমি তাদের (তোমার অনুগামীদের) প্রতি নম্র হয়েছো। যদি তুমি রুক্ষভাষী ও কঠোরচিত্ত হতে তারা তোমার চারদিক থেকে সরে যেতো।’
নম্রতা-কোমলতা অবলম্বনের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
اِنَّ اللهَ رَفِيْقٌ يُّحِبُّ الرِّفْقَ فىِ الْاَمْرِ كُلِّهِ০
[আয়িশা আছ্ ছিদ্দিকা (রা) ছাহীহ আলবুখারী, ছাহীহ মুসলিম]
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোমল। তিনি সকল কাজেই কোমলতা পছন্দ করেন।’
একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে নাছীহাত করতে গিয়ে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
اِنَّ شَرَّ الرَّعَاءِ الْحُطَمَةُ فَاِيَّاكَ اَنَ تَكُوْنَ مِنْهُمْ০
[আয়িশা আছ্ ছিদ্দিকা (রা) ছাহীহ আলবুখারী, ছাহীহ মুসলিম]
‘নিশ্চয়ই নিকৃষ্ট দায়িত্বশীল ঐ ব্যক্তিরা যারা অনুগামীদের প্রতি কঠোর। সাবধান, তুমি তাদের
অন্তর্ভুক্ত হয়োনা।’
কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে কোন ব্যক্তি শৃংখলা বিরোধী কাজ করলে কিংবা কোন অপরাধ সংঘটিত করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করা যাবে না।
১০। অভিযোগ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
এই বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদীসে মুমিনদের জন্য শিক্ষা নিহিত রয়েছে।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لاَ يُبَلِّغْنِىْ اَحَدٌ مِنْ اَصْحَابِىْ عَنْ اَحَدٍ شَيْئًا فَاِنِّىْ اُحِبُّ اَنْ اَخْرُجَ اِلَيْكُمْ وَاَنَا سَلِيْمُ الصَّدْرِ০
[আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রা), সুনানু আবী দাউদ]
‘আমার ছাহাবীদের মধ্য থেকে কেউ যেনো অপর ছাহাবী সম্পর্কে কোন অভিযোগ আমার নিকট না পৌঁছায়। কারণ আমি তোমাদের নিকট প্রশান্ত অন্তরে উপস্থিত হতে চাই।’
এই হাদীসে ‘অভিযোগ প্রবণতা’কে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কেউ যুলমের শিকার হলেও অভিযোগ করতে পারবে না, তা বুঝানো হয়নি।
১১। একে অপরের প্রতি আয়নার ভূমিকা পালন করতে হবে।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
اَلْمُؤْمِنُ مِرْاَةُ أَخِيْهِ وَالْمُؤْمِنُ اَخُو الْمُؤْمِنِ يَكُفُّ عَلَيْهِ ضَيْعَتَه وَ يَحُوْطُه مِنْ وَّرآئِهِ ০
[আবু হুরাইরা (রা), আল আদাবুল মুফরাদ]
‘মুমিন তার (দীনী) ভাইয়ের আয়না স্বরূপ। এক মুমিন আরেক মুমিনের ভাই। সে তার অনুপস্থিতিতে তার সম্পদের হিফাযাত করে এবং তার অবর্তমানেও তা-ই করে।’
আবু হুরাইরা (রা) বলেন,
اَلْمُؤْمِنُ مِرْاَةُ أَخِيْهِ وَإِذَا رَاى فِيْهِ عَيْباً اَصْلَحَهُ ০
[আল আদাবুল মুফরাদ]
‘মুমিন তার (দীনী) ভাইয়ের আয়না স্বরূপ। সে তার মাঝে কোন ত্রুটি দেখতে পেলে তা সংশোধন করে দেয়।’
একজন মুমিনের কোন ভুলত্রুটি যদি কারো চোখে ধরা পড়ে, সংশোধনের নিয়াতে, তিনি সেটি তাকে ধরিয়ে দেবেন। কিন্তু অন্য কারো কাছে সেই ভুল ত্রুটির কথা বলে বেড়াবেন না।
আর ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার এই কাজটি তিনি করবেন সহৃদয়তার সংগে, মোলায়েম ভাষায়।
ত্রুটিটি ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড়ো করে তুলবেন না।
অতীতের কোন ত্রুটিকে টেনে আনবেন না।
একেবারেই খুঁটিনাটি বিষয়কে মুহাসাবার বিষয় বানানো যাবে না।
ভুল-ত্রুটি যদি এমন পর্যায়ের হয় যদ্বারা সেই ব্যক্তির বা সংগঠনের ভাব-মর্যাদা ক্ষুন্ন হতে থাকে, তাহলে সেটিকে মুহাসাবার বিষয় বানাতে হবে।
ব্যক্তিগত মুহাসাবার পরও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সংশোধিত না হলে বিষয়টি সামষ্টিক ফোরামে আনা যাবে। তবে মনে রাখতে হবে, মুহাসাবা অনুষ্ঠানকে কিছুতেই বিতর্ক অনুষ্ঠানে পরিণত করা যাবে না।
১২। একান্ত অভ্যন্তরীণ বিষয় অন্যদেরকে জানানো যাবে না।
সূরা আলে ইমরান-এর ১১৮ নাম্বার আয়াতে এই বিষয়ে মুমিনদের জন্য শিক্ষা নিহিত রয়েছে। আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন বলেন,
ياَيُّهَا الَّذٍِيْنَ امَنُوْا لاَتَتَّخِذُوْا بِطَانَةً مِّنْ دُوْنِكُمْ لاَ يَاْلُوْنَكُمْ خَبَالاً ط
‘ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, নিজেদেরকে ছাড়া অন্য লোকদেরকে তোমাদের একান্ত অভ্যন্তরীণ বিষয়ের শরীক বানাবে না। তারা তোমাদের ক্ষতি করার কোন সুযোগই হাতছাড়া করবে না।’
১৩। কারো মান-সম্মানের ওপর আঘাত হানা যাবে না।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
اَلْمُسْلِمُ اَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَخُوْنُهُ وَلاَ يَكْذِبُهُ وَلاَ يَخْذُلُهُ كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ عِرْضُهُ وَمَالُهُ وَدَمُهُ০
[আবু হুরাইরা (রা), জামে আততিরমিযী]
‘মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, তাকে মিথ্যা বলবে না এবং তাকে হেয় করবে না। প্রত্যেক মুসলিমের মান-সম্মান, অর্থ-সম্পদ ও রক্ত অন্য মুসলিমের জন্য হারাম।’
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
... وَكُوْنُوْا عِبَادَ اللهِ اِخْوَانًا اَلْمُسْلِمُ اَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُهُ وَ لاَ يَحْقِرُهُ وَلاَ يَخْذُلُهُ০ [আবু হুরাইরা (রা), ছাহীহ মুসলিম]
‘তোমরা ভাই ভাই হয়ে আল্লাহর বান্দা হয়ে থাক। এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার ওপর যুলম করতে পারে না, তাকে হেয় করতে পারে না এবং তাকে অপমানিত করতে পারে না।’

১৪। নেতা ও অনুগামীগণ পরস্পরের জন্য দু‘আ করতে হবে।
এই বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদীসে শিক্ষা নিহিত রয়েছে।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
خِيَارُ اَئِمَّتِكُمُ الَّذِيْنَ تُحِبُّوْنَهُمْ وَيُحِبُّوْنَكُمْ وَ تُصَلُّوْنَ عَلَيْهِمْ وَ يُصَلُّوْنَ عَلَيْكُمْ وَشِرَارُ اَئِمَّتِكُمُ الَّذِيْنَ تُبْغِضُوْنَهُمْ وَ يُبْغِضُوْنَكُمْ وَتَلْعَنُوْنَهُمْ وَ يَلْعَنُوْنَكُمْ ০
[আওফ ইবনু মালিক (রা), ছাহীহ মুসলিম]
‘তোমাদের উত্তম নেতা তারা যাদেরকে তোমরা ভালবাস এবং তারাও তোমাদেরকে ভালবাসে। তোমরা তাদের জন্য দু‘আ কর, তারাও তোমাদের জন্য দু‘আ করে। পক্ষান্তরে তোমাদের অধম নেতা তারা যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর এবং তারাও তোমাদেরকে ঘৃণা করে। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ দিয়ে থাক এবং তারাও তোমাদেরকে অভিশাপ দিয়ে থাকে।’
আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন আমাদেরকে এইসব সাংগঠনিক নীতি সঠিকভাবে অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন!

 

--০--