০১| ভূমিকাঃ
সাম্প্রতিক কালে আমাদের দেশে একটি সামাজিক সমস্যা প্রবল ভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সমস্যাটি হলো-
ইভ-টিজিং। এটি একটি গুরততর সামাজিক ব্যাধিতে রদপ নিয়েছে। ইভ-টিজিং এর শিকার হয়ে দেশব্যাপী হত্যা-আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটছে।
পুলিশ সদর দপ্তর হতে পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, আগস্ট, ২০১০ পর্যমত গত এক বছরে ইভ-টিজিং এর ঘটনায় সারা দেশে ১৫০টি মামলা হয়েছে। সাধারণ ডায়েরি হয়েছে ৩৭৭ টি। ১,২৬৯ জনের বিরতদ্ধে থানায় অভিযোগ হয়েছে। পুলিশ গ্রেপ্তার করেছেন ৫২০ জনকে। বেসরকারি মানবাধিকার সংসহা ডেমোত্রেুসি ওয়াচের মাসিক প্রতিবেদন মতে, গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে ইভ-টিজিং এর শিকার হয়েছেন ২৮ জন, আত্মহত্যা করেছেন ১৪ জন, খুন হয়েছেন ১৫৯ জন, ধর্ষিতা হয়েছেন ৮ জন এবং পড়ালেখা বন্ধ হয়েছে ৯ জনের। প্রতিবাদ করতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে ২ জনের- প্রভাষক জনাব মিজানুর রহমান ও শ্রীমতী চাঁপা রাণী।
উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সামগ্রিক পরিসিহতির দ্রতত ত্রুমাবনতি হচ্ছে। বিষয়টি সমাজ বিজ্ঞানী, অপরাধ বিজ্ঞানী, আইনবিদ, রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজকে গভীর ভাবে ভাবিয়ে তুলছে।
০২| প্রবন্ধ রচনার উদ্দেশ্যঃ
বর্তমান প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের ত্রুমবর্ধমান ইভ-টিজিং সমস্যার প্রকৃত কারণ সমূহ বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য প্রতিকার খূঁজে বের করা এবং জাতির সামনে এ লক্ষ্যে কিছু সুাপারিশ তুলে ধরা। যাতে করে আমাদের তরতণ তরতণীরা পঙ্কিলতার অতল গহবর থেকে বের হয়ে সুসহ ও মানবিক জীবন ধারায় ফিরে আসতে পারেন, আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠতে পারেন।
০৩| প্রবন্ধের বিন্যাসঃ
প্রবন্ধের শুরততে ইভ-টিজিং এর সংজ্ঞা নিয়ে কথা বলা হয়েছে। এরপর যথাত্রুমে ইভ টিজার কারা, এ যমএণার শিকার কারা, ইভ-টিজিং এর উল্লেখযোগ্য কারণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অতঃপর ইভ-টিজিং প্রতিরোধে দেশে বিদ্যমান আইন এবং বিভিন্ন ধর্মে বিধৃত ধর্মীয় অনুশাসন সমূহ সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হয়েছে। পরিশেষে এ অনাচার মোকাবেলায় কিছু সুপারিশ পেশ করা হয়েছে।
০৪| সংজ্ঞাঃ
ইভ (Eve) শব্দটি পবিত্র বাইবেল এর ‘ইভ’ থেকে এসেছে, যার অর্থ পৃথিবীর আদি মাতা। ইসলাম ধর্মে যাঁকে বলা হয় বিবি হাওয়া, হিবরততে বলে ‘হাব্বাহ’। শব্দটি নারী জাতির রদপক বা প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। টিজিং (Teasing) শব্দের আভিধানিক অর্থ ঠাট্রা করা, বিরত্তু করা, প্রশণ করে বিব্রত করা, উত্ত্যত্তু বা জ্বালাতন করা।
ইভ-টিজিং এর সুস্পষ্ট ও স্বচ্ছ কোন আইনী সংজ্ঞা এখনও নির্ধারণ করা হয় নি। তবে সাধারণ ভাবে সুনির্দিষ্ট কোন ব্যত্তিু/ব্যত্তিুবর্গের উদ্দেশ্যে অন্য সুনির্দিষ্ট ব্যত্তিু/ব্যত্তিুবর্গ স্বাভাবিক সভ্যতা, ভদ্রতা ও নীতি ~~নতিকতা পরিহার করে যখন অশালীন ও আপত্তিকর কোনরদপ অঙ্গ-ভঙ্গি করেন অথবা কোন বাক্য প্রয়োগ করেন তখন সেটিকে ‘ইভ-টিজিং’ বলা হয়ে থাকে।
সমাজ বিজ্ঞানীগণের মতে, ইভ-টিজিং শব্দটি বাসতব নির্মমতার তুলনায় অনেকটাই হালকা এবং এ শব্দের দ্বারা নির্মমতার ব্যাপকতা বোঝা যায় না। নারীর প্রতি টিজিং বা নারীকে বিব্রত করা, উত্ত্যত্তু করার মধ্যেই কেবল ইভ টিজিং শব্দটির গূঢ়ার্থ সীমিত থাকে না। এটি মূলত এক ধরনের ইউফেমিজম (Euphemism)। পুরো উপমহাদেশে শব্দটির ব্যবহার দেখা যায়। জনসমাবেশে, রাসতাঘাটে, বাসে, জনসাধারণের সামনে নারী কেবল উত্ত্যত্তেুর শিকারই হন না, তাঁরা নিগৃহীত হন, যৌন হয়রানি বা যৌন নিপীড়নের শিকার হন। অর্থাৎ, উত্ত্যত্তু করার আড়ালে থাকে যৌন প্রবৃত্তির মোড়ক। এটিই হলো ইউফেমিজম। বখাটেদের উৎপাতের আড়ালে লুকিয়ে থাকা যৌন উৎপাতের ক্ষত সামাজিক দৃষ্টিতে কিংবা জনসাধারণের চোখে খুব স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে না। কেবল ভুত্তুভোগীই বোঝেন এর অমতর্নিহিত গোপন যাতনা। স্বাধীনভাবে ও নিরাপদে পথচলার মতো মৌলিক অধিকারের ওপর সরাসরি আঘাত এ উত্ত্যত্তুতা। সুতরাং, ইভ টিজিং এক প্রকার ভয়াবহ যৌন হয়রানি বা যৌন সমএাস।
প্রখ্যাত মনোচিকিৎসক ডাঃ মোহিত কামাল এর মতে-
মানুষের আমতসম্পর্কের মধ্যে নানা ভাবে টিজিং শব্দটি ব্যবহার করা হয়। দুটি গুরতত্বপূর্ণ ধরন হচ্ছে - কৌতুক বা পরিহাস চ্ছলে একে অপরকে আমতরিক কোন অভিপ্রায় ছাড়া কেবল স্ফূর্তির জন্য টিজ (Playful) অথবা কারও ওজন, উচ্চতা, আচরণ, সামর্থ্য, গায়ের রং বা পোষাক পরিচ্ছেদ নিয়ে একতরফা টিজ (Hurtful)। এক্ষেত্রে অভিসন্ধি বা উদ্দেশ্য যা-ই হোক না কেন, আত্রুামতকারীর অনুভূতিতে আঘাত লাগে, কষ্ট হয়। এটি এক ধরনের হয়রানি, আবেগের প্রতি হামলা, আত্রুমণ। এ অবসহা ভিকটিম এর নিকট অপ্রীতিকর, অগ্রহণযোগ্য।
কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, সর্বত্র এ ধরণের আঘাতকে ইমোশনাল অ্যাবিউজ হিসেবে দেখা হয়। তারপর অন্যের অনুভূতিতে জখম করার জন্য বিদ্রদপাত্মক শব্দ ব্যবহার বা আচরণ করা হলে সেটাকে বলা হয় বুলিং (Bullying)। ভয়াবহ মর্মযাতনার কারণ হতে পারে কটু শব্দ। মনে যে ক্ষত ~~তরী করে তা অনুমান করা যায় না, বাইর থেকে বোঝা যায় না। শিশুকাল থেকে বুলিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে বড় হয় শিশুরা। কেউ অবজ্ঞা করতে পারে, কেউ পারে না। ভিকটিমও বড় হওয়ার কালে বড় শিশু, বয়ষ্ক ও টিভি চরিত্র দেখে দেখে নিজেও আত্রুমণকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। এভাবে কাদামাটির বয়স থেকে অন্যকে টিজ করার ~~বশিষ্ট্য নিজের মধ্যে গেড়ে বসে। বিষয়টি জানে না শিশুরা, জানে না মা-বাবা। সাধারণত অপেক্ষাকৃত বড় শিশুরা ছোটদের থ্রেট করতে পারে, গালাগাল করতে পারে (Verbal bullying) দল থেকে আলাদা করে দিতে পারে, বদনাম রটিয়ে দিতে পারে (Psychological bullying)  শারীরিক আঘাত করতে পারে, ধাক্কা দিতে পারে, বইপত্র কেড়ে নিতে পারে (Physical bullying)। মেয়ে শিশুরা বুলিং করে পরোক্ষ ও সুক্ষ্ম উপায়ে। এভাবে মনসতাত্মিক ক্ষত হয় বেশী। ছেলেরা বুলিং করে সরাসরি, আত্রুমণাত্মক। বিশ্বব্যাপী স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে (২০-৩০%) এ প্রবণতা দেখা যায় । হয় তারা বুলিং করে অথবা বুলিং এর শিকার হয়। স্কুলে যাওয়ার আগ থেকেই এমন ~~বশিষ্ট গেড়ে বসতে পারে শিশুর ব্যত্তিুত্বে। তবে ত্রুামিতকাল, এক পর্যায় থেকে অন্যপর্যায়ে উত্তরণের মধ্যবর্তী সময়, বয়ঃসন্ধি ইত্যাদি পর্যায়ে বুলিং এর হার ব্যাপক ভাবে দেখা যায়।
০৫| ইভ-টিজার কারাঃ
ইভ টিজিং এর ঘটনাগুলো যাদের দ্বারা সংঘটিত হয় তাদের বেশীর ভাগই হলো ১৪-২২ বছর বয়সী স্কুল-কলেজগামী কিশোর ও তরতণ। এক শ্রেণীর উঠতি বয়সের ছেলে, পাড়ার বখাটে, গলির মোড়ের দোকানদার, ফেরিওয়ালা, বাস চালক-হেলপার, রিক্সা চালক এমনকি কতক ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরতষ সহকর্মীসহ বয়সীদেরকেও ইভটিজার হিসেবে লক্ষ্য করা যায়।
এরা মেয়েদের দেখে শিস দেয়, অশোভন অঙ্গভঙ্গি করে--- শুরতটা অনেকটা এ ভাবেই হয়। ত্রুমশ তা রদপ নেয় হিংস্রতায়, সমএাসে, পাশবিকতায়। অতীতে এদের রোমিও বলা হতো, যারা রকে বসে আড্ডা দিতো, মেয়েদের দেখলে শিস দিতো। বর্তমানে সেই রোমিওরাই হয়ে উঠেছে যৌনদস্যু, নারী উৎপীড়কে। এদের লজ্জা-শালীনতা- ~~নতিক মূল্যবোধ কোন কিছুরই বালাই নেই।
০৬| ইভটিজিং এর শিকার কারাঃ
ইভ টিজিংরদপী সহিংসতায় সচরাচার বেশী শিকার হয়ে থাকেন অল্প বয়সী নারীরা। বয়স জনিত নাজুকতার কারণে তারা বেশী উত্ত্যত্তেুর শিকার হন। অন্যদিকে তাদের উপর প্রভাবও পড়ে মারাত্মক। তারা সহজে ঘাবড়ে যান।
শারীরিক আঘাতের চেয়ে ভয়াবহ আঘাত লাগে মনে। বখাটেদের নির্যাতন, ত্রাস সৃষ্টিজনিত মানসিক ক্ষতির কারণে কেউ কেউ আত্মহত্যা পর্যমত করে বসেন।
‘পিংকী আমার প্রসতাব শোনেনি। তাই রাসতার মধ্যেই তাকে থাপ্পর মারি। এরপরও যখন সে কথা শুনছিল না তখন তাকে গালিগালাজ করি এবং পুনরায় চড় মারি। আমার সাথে থাকা অন্যরা পিংকীর ওড়না ধরে টানাটানি করছিল। এর এক ফাঁকে পিংকী একজনকে ধাক্কা দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এরপর কী হয়েছে বলতে পারি না’।
শ্যামলী আইডিয়াল টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্রী নাসপিয়া আকন পিংকীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী বখাটে মুরাদ এ ভাবেই পুলিশের কাছে গত ২৪|০১|২০১০ তারিখে স্বীকারোত্তিু প্রদান করে।

তবে নারীরাই যে কেবল বখাটেদের ইভ টিজিং এর শিকার হচ্ছেন এমনটি নয়। ইভটিজিং এর শিকার সব বয়সী নারী পুরতষই হতে পারেন। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাত্তুন উপাচার্য প্রফেসর আবদুল মান্নান গত ৪|১১|২০১০ তারিখে ~~দনিক ইত্তেফাক এ তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন এভাবে --
ছায়ানটের পার্শের রাসতা দিয়ে হেঁটে আমার ~~বকালিক ভ্রমণের ধানমন্ডি লেকের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ পিছনে কিছু একটার স্পর্শ অনুভব করি। ফিরে দেখি বিরাট ঢাউস এক কালো রঙের জীপ গাড়ী। চালকের আসনে বছর ১৮ বয়সের এক তরতণ। সাথে সমবয়সী আরও ৪ বন্ধু। প্রথমে শরীরটা হিম হয়ে এলো। আর একটু হলেই তো চাপা দিতো। গাড়ীটাকে হাতের ইশারায় দাঁড় করালাম। চালকের আসনে বসা বালকটি গাড়ীর আয়না নামিয়ে একগাল হেসে বললো, ‘আক্কেল কিছু মনে করবেন না। একটু মজা করলাম’। বুঝতে বাকি রইল না এটি ড্যাডির গাড়ী। প্রিয়তম ‘সান’ মজা করার জন্য গাড়ীঢি ~ নিয়ে বের হয়েছে। বুঝতে আমার অসুবিধা হয় না এরা হয়তো ধানমন্ডি এলাকার হাজার টাকা দামের কোন কোচিং সেন্টারে পড়ে। আমার বয়স এবং সামাজিক অবসহান আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। তা না হলে এসব বাচালের শায়েসতা করার ওষুধ আমার ঠিকই জানা ছিল। বুঝতে তো অসুবিধা হয় না এসব বাচালের ড্যাডী আর মাম্মিদের সময় হয় না তাদের প্রিয়তম ‘সান’দের পারিবারিক ভাবে সঠিক শিক্ষা দেয়ার। এরা হচ্ছে এ প্রজন্মের বখে যাওয়া সমতানদের প্রতিনিধি।
আরও দুটি উদাহরণঃ
ক| এবার থানার ওসিকে উত্ত্যত্তু করার অভিযোগে নাসরিন (২৫) নামে এক গৃহ বধুকে গ্রেফতার করেছে শখিপুর থানা পুলিশ। টাঙ্গাইল জেলার শখিপুর থানার ওসি মোজাম্মেল হক মামুন জানান, শনিবার রাতে তাঁর মোবাইল ফোনে এক মহিলা পর পর ৩৭ বার ফোন করেন। বারবার নিষেধ করা সত্তেবও ঐ মহিলা তাঁকে ফোন করতেই থাকে এবং নারী সংত্রুামত বিষয়ে হুমকি দেয়। ওসি বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ফোনকারী মহিলা উপজেলার কালিয়ান গ্রামের রায়হান মাস্টারের মেয়ে নাসরিন। রোববার সকালে তাকে পৌর এলাকার বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার কাছে দেশি-বিদেশী ১৬টি মোবাইল ফোনের সিম পাওয়া গেছে। ধৃত গৃহবধু জানায় তার স্বামীর নাম আবদুল হাই। তিনি বিদেশে আছেন। এটা তার তৃতীয় স্বামী। ওসি আরও জানান, ঐ গৃহবধু কয়েকটি হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। (~~দনিক নয়া দিগমত, ২২|১১|২০১০)।
খ| ফরিদপুরে মেয়ের হাতে টিজিংয়ের শিকার হয়েছে স্কুল ছাত্র। এ ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সালিস করে বিষয়টি মিমাংসা করার চেষ্টা হলেও টিজিংয়ের শিকার ছেলেটি সামাজিক ভাবে চরম বিব্রতকর পরিসিহতিতে পড়েছে। ছেলেটির অভিযোগ, মেয়েটির পরিবর্তে সে ইভটিজিং করলে তাকে কঠিন শাসিতর সম্মুখীন হতে হতো। ২৮ নভেম্বর শহরের পশ্চিম আলিপুরেরর আম্বিকাপুর সড়কে এ ঘটনা ঘটে। এখন পরিচিতমহলে চরম লজ্জাজনক অবসহায় পড়েছে ছেলেটি। ওই দিন একটি বিয়ে অনুষ্ঠানে বর-কনের বিদায় দেখছিল পশ্চিম খাবাসপুর নিবাসী ফরিদপুর জিলা স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রটি। এ সময় পাশে এসে আকস্মৎ তাকে জড়িয়ে জনসমক্ষে চুম্বন করে একই এলাকার সমবয়সী এক মেয়ে। এতে বিব্রত স্কুল ছাত্রটি মেয়ের পরিবারের কাছে অভিযোগ জানায়। এ নিয়ে পরের দিন রাতে সালিসি ~~বঠক হয়। ~~বঠকে উপসিহত একই এলাকার বাপ্পি ও মিন্টু ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ~~বঠকে মেয়েটিকে তিরস্কার করে চড়-থাপ্পর দিয়ে এবং স্কুল ছাত্রটিকে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। স্কুলছাত্রটি তার প্রতিত্রিুয়ায় জানায়, ঘটনার পর থেকে বন্ধুমহলে তাকে বিব্রতকর পরিসিহতিতে পড়তে হচ্ছে। সে অভিযুত্তু হলে এর জন্য তাকে কঠিন শাসিত পেতে হতো। মেয়েটির মা জানায়, দুষ্টমির ছলে তার মেয়ে ছেলেটিকে চুম্বন করেছে। এ জন্য তাকে শাসিয়ে দেয়া হয়েছে। (~~দনিক নয়া দিগমত ৩|১২|২০১০)
০৭| ইভটিজিং এর কারণঃ
ইভ টিজিং এর কারণ সুনির্দিষ্ট ভাবে একটি - দুটি নয় । অনেকগুলো মৌলিক বিষয়ই সামষ্টিক ভাবে এ সামাজিক ব্যাধির জন্য দায়ী। তবে মৌলিক কারণগুলো নিমণরদপঃ
ক| ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব ও উপেক্ষা,
খ| সমতানের প্রতি মাতা-পিতা ও অভিভাবকগণের চরম উদাসীনতা,
গ| গৃহ ও বিদ্যালয়ে ~~নতিক শিক্ষার ঘাটতি,
ঘ. শিক্ষা ব্যবসহায় ও পাঠ্যত্রুমে ~~নতিক শিক্ষার অভাব,
ঙ| মানুষের প্রতি স্বাভাবিক শ্রদ্ধা ও মানবতাবোধের অভাব,
চ| আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসন,
ছ| প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া সমূহের দায়িত্বহীন ভূমিকা,
জ| চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অশ্লীলতা,
ঝ| সাইবার ক্যাফে সমূহের উপর রাষ্ট্রযমেএর নিয়মএণহীনতা,
ত্র·| মোবাইল কোম্পানী সমূহের দায়িত্বহীন ভূমিকা,
ট| কর্মমুখী শিক্ষার অপ্রতুলতা,
ঠ| অাইনের অপ্রতুলতা এবং আইনের প্রায়োগিক ব্যর্থতা,
ড| আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নেতিবাচক ভূমিকা,
ঢ| অপরাধীদের প্রতি রাজ~~নতিক পৃষ্ঠপোষকতা,
ণ| মাদক দ্রব্যের সহজলভ্যতা,
ত| গ্গবকারত্ব।
৮.১. অপরাধের কারণ হিসেবে মাতা-পিতাঃ
নিমেণাত্তু প্রকার মাতাপিতার সমতানগণ অপরাধী হয়ে থাকে ঃ
ক. সংসারত্যাগী বা পলাতক মাতাপিতাঃ এরা সমতানদের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবসহা না করে পলাতক হয়েছেন। সমতান এদের অপত্য সেণহ-মমতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
খ. অপরাধী মাতাপিতাঃ এরা সমতানকে পাপের মধ্যে রেখে বড় করেন। কখনওবা সমতানের সহায়তায় পাপ করেন।
গ. অপকর্মে সহায়ক মাতাপিতাঃ এরা সমতানের অপরাধস্পৃহায় উৎসাহ দেন।
ঘ. অসচ্চরিত্র মাতাপিতাঃ তারা নির্বিচারে সমতানের সামনেই নানা অসামাজিক কাজ করেন ও কথা বলেন।
ঙ. অযোগ্য মাতাপিতাঃ এরা সমতানকে প্রয়োজনীয় ধর্মীয় ও ~~নতিক শিক্ষা দানে অমনোযোগী বা অপারগ।
আধুনিককালে শহরগুলোতে দেখা যায় যে, মা-বাবা উভয়ে ঘরের বাইরে কাজ করছেন। ফলে সমতান-সমওতি তাদের উপযুত্তু সেণহ-শাসন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই তারা আচরণে বিদ্রোহধর্মী হয়ে যাচ্ছে। এমনটিও দেখা যায় যে,মৃত্যু বা বিবাহ বিচ্ছেদের ফলে কোন কোন সমতান মা অথবা বাবাকে হারাচ্ছে। এ কারণেও তাঁদের স্বাভাবিক ব্যত্তিুত্ব বিকাশে সমস্যা দেখা দেয় এবং তারা অসংলগ্ণ আচরণ তথা সমাজবিরোধী কাজকর্মে লিপ্ত হয়। অধিকমও পারিবারিক পরিমন্ডলে সমতানেরা যদি সর্বদা ঝগড়া বিবাদ, ব্যত্তিুত্বের সংঘাত এবং অপরাধমূলক ও হিংসাত্মক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে তাহলে তাদের পক্ষে সহসা অপরাধী হয়ে উঠা অসম্ভব নয়।
৮.২ সুষ্ঠু বিনোদন সঙ্কটঃ
তরতণদের জন্য উপযুত্তু চিত্তবিনোদনমূলক ব্যবসহা নেহায়েত অপ্রতুল। এজন্য খেলাধুলা, শরীর চর্চা, সঙ্গীত এবং নানাবিধ সুসহ বিনোদনধর্মী অনুষ্ঠানের ব্যবসহা থাকা প্রয়োজন। এ সবের অভাব তরতণকে যত্রতত্র রাসতা-ঘাটে ঘুরতে ফিরতে এবং ছুটাছুটি করতে দেখা যায়।এ ধরনের বিশৃংখল ঘোরাফেরা তরতণ মনে সাময়িক আনন্দ দিলেও বসতুতঃ পক্ষে তা একটি আদর্শ ও সুশৃংখল পরিবেশ সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়। তাদের জন্য উপযুত্তু সৎ সাহিত্য, নাটক, চলচ্চিত্র ও বিনোদন কেন্দ্রেরও চরম সংকট রয়েছে আমাদের। আর এ কারণেও তরতণরা অসৎ সঙ্গে মেশে এবং একটি অনিয়মতামিএক পমহার মধ্যে সময় কাটানোর কারণে তাদের চরিত্রে অনিয়ম এবং অসংলগ্ণতার সৃষ্টি হয় এবং পরিণামে তারা হয়ে উঠে অপরাধ প্রবণ।
৮.৩ ইন্টারনেট এর অপব্যবহারঃ
মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট সহ বর্তমান বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় এক কোটি। কিমও তাদের জন্য তেমন কোন নীতিমালা বা ব্যবহারের ওপর কোন বিধিনিষেধ (Filtering) নির্ধারণ করা হয় নি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, বিভিন্ন দেশে সাইবার ক্যাফে ব্যবসা পরিচালনার জন্য সাইবার লঞ্চ ও নীতিমালা থাকলেও বাংলাদেশে এখনও তা প্রণীত হয় নি।

ফলে নিয়ম নীতিহীনভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা সাইবার ক্যাফেগুলোতে ইন্টারনেট ব্যবহারের নামে চলছে রীতিমত পর্ণোগ্রাফির প্রদর্শনী। সার্ভিস চার্জ কম হওয়ায় এবং অন্যান্য অসৎ সুবিধা থাকায় উঠতি বয়সীরা এখন সাইবার ক্যাফের প্রধান গ্রাহক। অবাধ তথ্য প্রযুত্তিুর নামে অশ্লীল ওয়েবসাইটগুলো হয়ে উঠছে তাদের বিনোদনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে। শিক্ষার্থীরা নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নানা অজুহাতে বেরিয়ে এসে সাইবার ক্যাফেতে ঢুকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পর্ণো ওয়েবসাইট ব্রাউজিং করছে। এখানে এক ভিন্ন নেশায় মত্ত হয়ে তারা ঘন্টার পর ঘন্টা এমনকি কেউ কেউ পুরোদিনই চ্যাটিংয়ে ব্যসত থাকছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘন্টা ইন্টারনেট ব্যবহার করে। বন্ধুদের সাথে কথাবার্তা, ছবি আদান-প্রদান ছাড়াও অপরিচিতদের সাথেও এরা দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করে। এর ফলে পড়াশুনার প্রতি তাদের অমনোযোগিতা সৃষ্টিই শুধু নয়, ইভ টিজিং এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়াসহ নৈতিক চরিত্রের অবনতি ঘটছে।
৬৯ শতাংশ ছেলেমেয়ে স্বীকার করে যে, তাদের সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে মা-বাবার সর্বক্ষণ ঝগড়া লেগেই থাকে। ফলে দীর্ঘমেয়াদি পারিবারিক সম্পর্কেরও অবনতি ঘটছে। এদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ সারাক্ষণ ইন্টারনেটে বসে কী করে তা তাদের মা-বাবা এমনকি বন্ধুদেরকেও সচরাচর বলে না। (~~দনিক প্রথম আলো, ২৬.১১.২০১০)
ফেসবুকঃ
বেশী সময় ধরে ইন্টারনেট ব্যবহারের অন্যতম কারণ হলো -- সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ‘ফেসবুক’ এ আসত্তিু। ফেসবুক মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করছে। কিমও এ কথাও সত্য যে, দাম্পত্য সম্পর্ক ভাঙতেও এটি বড় ভূমিকা রাখছে। যুত্তুরাষ্ট্রে প্রতি পাঁচটি ডিভোর্সের অমতত একটির পেছনে ফেসবুক ভূমিকা রাখছে বলে একটি জরিপে ধরা পড়েছে। ফেসবুকের মাধ্যমে স্বামী কিংবা সএী পরস্পরের অজামেত এমন সব নারী কিংবা পুরতষের সঙ্গে একামত সম্পর্ক গড়ে তুলছেন যাকে ‘অবিশ্বসততা’ বলা যায়। এ অবিশ্বসততার ত্রুমবর্ধমান বলি হচ্ছে তরতণ সমাজ।
আমেরিকান একাডেমি এব ম্যাট্রিমনিয়াল ল’ইয়ার্স দেশটিতে সংঘটিত ডিভোর্সের ওপর একটি গবেষণা জরিপ পরিচালনা করেছে। দেখা গেছে, ফেসবুক ব্যবহার করে স্বামী-সএী পরস্পরকে প্রতারণা করার হার দিন দিন বাড়ছে। পরস্পরের অজামেত ফেসবুকে খুঁজে পাওয়া কারও সাথে অ~~নতিক সম্পর্ক গড়ে তুলছেন। বিস্ময়কর হলেও সত্য, মার্কিন আদালতে ডিভোর্স আবেদনে বাদীর পক্ষের শতকরা ৬৬ জন আইনজীবী অ~~নতিক সম্পর্কের প্রমাণ হিসেবে ফেসবুক থেকে নেয়া তথ্য ব্যবহার করছেন। এর সাথে আছে সামাজিক যোগাযোগের অন্য ওয়েবসাইট - ‘মাইস্পেস’।
এ জরিপে আরও বলা হয়েছে ব্রিটেনেও প্রতি একশর মধ্যে ২০টি ডিভোর্সের ঘটনায় ভূমিকা রাখছে ফেসবুক। (~~দনিক ইত্তেফাক ২|১২|২০১০)
গবেষণায় দেখা যায়, অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে এসবের প্রভাব আমাদের দেশেও পড়ছে। বাংলাদেশে প্রায় ১২ শতাংশ ছেলেমেয়ে ফেসবুকে প্রতিনিয়ত যৌন উত্তেজনাকর তথ্য আদান-প্রদান অথবা আলাপচারিতা করে। ফেসবুকে পরিচয়ের মাধ্যমে তারা একাধিকবার যৌন কাজে লিপ্ত হয়েছে এবং অল্প বয়সে অনিয়মিএত গর্ভধারণ ও গর্ভপাত করাতেও বাধ্য হয়েছে। (~~দনিক প্রথম আলো, ২৬.১১.২০১০)
৮.৪ মোবাইল কোম্পানীসমূহের ভূমিকাঃ
১৩ থেকে ২৩ বছর বয়সী ছাত্র-ছাত্রীর ওপর চালানো এক বেসরকারী জরিপ রিপোর্ট গত ৮.৭.২০০৯ তারিখে দৈনিক নয়া দিগমেত প্রকাশিত হয়। রিপোর্টে বিধৃত মোবাইল সম্পর্কিত ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা যেতে পারে -------
জরিপের ১০০ শতাংশ শিক্ষার্থীরই মোবাইল আছে অমতত একটি। ৪০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী দুটি করে সেট ব্যবহার করে। ৮০ শতাংশ দুই থেকে তিন বা এর অধিক সিমও ব্যবহার করে থাকে। ৫০ শতাংশ দৈনিক চার থেকে পাঁচ বা তার চেয়ে বেশি ঘন্টা সময় পার্টনারের সাথে কথা বলে। ৮০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী এতে কমপক্ষে দু্ই ঘন্টা ব্যয় করে। ৪০ শতাংশেরও বেশি ছাত্রছাত্রী মোবাইলের মাধ্যমে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এর মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী ও আছে। ৬০ শতাংশেরও বেশি ছাত্রছাত্রী মোবাইলে বিকৃত সেক্স করে থাকে।
এ দেশের অনেক মোবাইলই প্রবাসীদের পাঠানো। শেকড়ের টানে মালয়েশিয়ার রাবার বাগানে কর্মরত বা সুউচ্চ টাওয়ারে ঝুলমত বা মধ্যপ্রাচ্যের মরতভূমির লু তপ্ত কোন শ্রমিকের রত্তুপানি করা টাকায় পাঠানো মোবাইল নিয়ে তার সএী, পুত্র, কন্যা, ভাইবোন কী করে, তা তারা জানতে পারেন না। দেশের তরতণ প্রজন্মকে নিয়ে খেলায় মেতেছে মোবাইল কোম্পানীগুলো। ডিজুইস জেনারেশনের নামে নতুন এক প্রজাতির জন্ম দিয়েছে তারা। এতে বাড়তি সংযোজন এফ এম রেডিও। এগুলো ইভ-টিজিং এর মতো অপরাধে অবিরাম ইন্ধন যুগিয়ে চলছে।
৮.৫ শিল্পায়ন ও নগরায়নঃ
শিল্পায়নের ফলে নগরায়ন ত্বরান্বিত হয় এবং শিল্প নির্ভর নগর জীবনে কতিপয় সমস্যার উদ্ভব ঘটে। এগুলোর মধ্যে আবাসিক সমস্যা অন্যতম। এর অনিবার্য ফলস্বরদপ বসিতর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং গোটা শহর জনাকীর্ণ হয়ে পড়ে। চরম আবাসিক সংকটের কারণে জনাকীর্ণ এলাকার কিশোরদের চলাফেরা,গল্পগুজব এবং নানা ধরনের মেলামেশা বৃদ্ধি পায়। একদিকে দারিদ্র অন্যদিকে অবাধ ও সারাক্ষণ দলবদ্ধ জীবনযাপন করতে গিয়ে অনেক সময় কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা জাগে। তাদের এই অপরাধ প্রবণতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে দুঃসাহসিক অভিযান ও কাজকর্মকে কেন্দ্র করে। এ অবসহায় তারা কখনও একাকী আবার কখনও বা ছোট ছোট দল বেধে নানা ধরনের অপরাধ কর্মে লিপ্ত হয়।
বাংলাদেশের শহর এলাকার মধ্যে রাজধানী ঢাকা শহরের চিত্র ভয়ঙ্কর। বসিত আর রাসতায় বেড়ে উঠা কিশোর-তরতণেরা সবকিছু এখানেই রপ্ত করে। এরা চলতে শিখলেই ছোট ছোট চুরি করে। একটু সাহস হলেই স্ট্রিটলাইট, ম্যানহোল, ইট, রড়ের টুকরো চুরি করে। পরবর্তীতে পরিবেশ-পরিসিহতি এদেরকে ত্রুমশ মাদকদ্রব্যের দিকে টেনে নেয়।
কখনও এরা পরিণত হয় রাজনৈতিক দলের সমএাস-বাহিনী- যা হয়ে উঠে হরতাল, ধর্মঘট, অবরোধ তথা কোন দলীয় কর্মসূচী বাসতবায়নের হাতিয়ার। এদের ব্যবহার করা হয় অসএ বহনের কাজে। এমনকি মাঝে মধ্যে ওদের ব্যবহার করা হয় মানুষ মারার মতো ঘৃণ্য ও ভয়াবহ কাজে।
দুর্ধর্ষ সমএাসীদের সহযোগী হিসেবেও এরা কাজ করে থাকে। অপরদিকে ছিন্নমূল তরতণীরা নেমে পড়ে ভাসমান পতিতাবৃত্তিতে। কিমও এ-তো গেল দরিদ্রদের কথা।
ধনীর দুলালেরা নষ্ট হচ্ছে ঘুষখোর, উচ্ছৃঙ্খল, মদ্যপ, জুয়াড়ি, মাতা-পিতার অযতণ, অবহেলা, উদাসীনতা, সেণহহীনতা, বিত্তবৈভবের প্রাচুর্যের কারণে। তাছাড়া ড্রাগ, ভিসিআর, ডিশ এন্টেনার অনুপ্রবেশ, ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব ও রাজনৈতিক অসিহতিশীলতাও ঠেলে দিচ্ছে নগরের বিত্তবানদের সমতানদেরকে অপরাধকর্মে।
৮.৬. অন্যান্য কারণঃ
সামাজিক অসাম্য, দুঃখ-দুর্দশা, তদারকীর ঘাটতি, অবিচার, আশৈশব দুর্ব্যবহার প্রাপ্তি, কু-সংস্কার ও কুসঙ্গ, প্রাকযৌন অসিহরতা, প্রাক্-যৌন অভিজ্ঞতা, অসময়ে পিউবারটি (Puberty), অপছন্দকর কর্মসহান, অতি আদর বা অনাদর, আর্থিক অসচ্ছলতা বা আর্থিক প্রাচুর্য, অনিদ্রা, পরাশ্রয়, বিমাতা বা দূর আত্মীয়ের গলগ্রহ হওয়া, মাতা বা পিতার মালিকের গৃহে বসবাস, মালিক - তনয় দ্বারা নিগ্রহ ও অবজ্ঞা, অপুষ্টি, ভেজাল আহার, ¢nr¡m­u pa£bÑ­cl E­fr¡ J Efq¡p, à¾cÄla je J ¢h¢hd fÐc¢ja j­e¡SV (complex) ­cq J j­el SeÉ j¡l¡aÈL r¢aLlz
এগুলো তরতণদের উম্মাদ, নির্বোধ ও ইভ টিজিংসহ নানা অপরাধে অপরাধী করে তোলে যা জীবন প্রভাতে তাদের চরিত্রবান নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠার পথে প্রবল প্রতিবন্ধক।
৯| ইভ-টিজিং প্রতিরোধে করণীয়ঃ
আগেই বলা হয়েছে যে, মানব জীবনের একটি গুরতত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর অধ্যায় হলো তারতণ্য। এটি এমন এক সময় যখন একজন ব্যত্তিু বয়স ও বুদ্ধি- এ উভয় দিক থেকে ত্রুমশ এগিয়ে যেতে থাকে বটে, তবে যথার্থ অর্থে বয়সী তথা প্রাপ্তবয়স্ক ও বুদ্ধিমান হয়ে উঠে না। প্রাকৃতিকভাবে জীবনের এ সন্ধিক্ষণটি হয় স্বাপিণক ও কৌতুহলোদ্দীপক। এ সময়ে সে জানতে চায়, জানাতে চায়। জানতে ও জানাতে গিয়ে যদি বাধাগ্রসত হয় বা হোচট খায় তাহলে সে মূক ও বিমূঢ় হয়ে পড়ে, বিভ্রামিত তাকে অপরাধী করে তোলে, নিয়ে যায় সর্বনাশার অতল গহবরে।
অন্যদিকে যদি সে অবলীলায় জানতে পারে, জানাতে পারে, উত্তর পায়, মানসিক আশ্রয় ও অবলম্বন পায়, নৈতিক দীক্ষা ও প্রেরণা পায় তাহলে তার অগ্রগতি-অগ্রযাত্রাও হয়ে উঠে অনিবার্যভাবে সুন্দর, শাশ্বত ও সাবলীল।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কোন মানুষই অপরাধী হয়ে জন্মায় না। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নানাবিধ কারণে আবেগ ও পরিবেশের নেতিবাচক প্রভাবে মানুষ অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে।
সুতরাং ইভ-টিজাররা পেশাদার অপরাধীদের সঙ্গে কীভাবে যুত্তু হচ্ছে তা অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিকারমূলক ব্যবসহা গ্রহণ প্রয়োজন। এজন্য সবার আগে দরকার গ্রাম কিংবা শহর, পাড়া কিংবা মহল্লায় সর্বত্র ভাল পরিবেশ বজায় রাখতে শিক্ষিত সজ্জন ও অভিভাবক শ্রেণীর সম্মিলিত প্রয়াস। অধ্যয়ন, সৃজনশীলতা এবং ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করাও জরতরী। পরিবার, সমাজ ও স্কুলের পরিবেশ হওয়া দরকার আনন্দময় ও প্রণোদনাপূর্ণ।

৯.১. পরিবারের দায়িত্বঃ
কিশোর-তরতণদের কাদামাটির সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে। শিল্পী কাদামাটিকে যেভাবে রদপ দিতে চান, সে রদপেই গড়ে তুলতে পারেন। বসতুত, তারা কাদামাটির মতোই কোমল। পরিবার ও সমাজ-জীবনের পরিপার্শ্বের মধ্যে তারা বেড়ে ওঠে। সভ্যতার প্রথম সোপানই হলো পরিবার সংগঠন।
দয়া, মায়া, প্রেম, ভালবাসা অপরের প্রতি সৌজন্যবোধ, মানবতাবোধ সহনশীলতা, সত্যবাদিতা প্রভৃতি হদদয়বৃত্তিগুলোর বিকাশের উপযুত্তু শিক্ষালয় হচ্ছে পরিবার। পরিবারকে বলা যায়, মানব জীবনের প্রধান বুনিয়াদ।
তাই সুষ্ঠু ব্যত্তিুত্ব বিকাশে এবং অপরাধ প্রতিরোধে একটি সুসংহত পরিবার এবং পারিবারিক দায়িত্ব অপরিসীম। অস্বীকার করার জো নেই যে, নৈতিক শিক্ষার ভিত এখানেই রচিত হয় যা আজীবন টেকসই হতে পারে। টিনএজ বা তারতণ্যের ইভ টিজিং প্রতিরোধ করার জন্য এভাবে ইতিবাচক ~~বশিষ্টের বীজ রোপণ করে দিতে হবে। ইতিবাচক বীজই টিনএজ বা তারতণ্যের ইনিষ্টিটিউচুয়াল ড্রাইভ বা ~~জবিক প্রবৃত্তির উম্মাতাল ঢেউগুলো সামাল দেওয়ার শত্তিু যোগাবে, অশুভকে না বলতে পারবে, স্খলনের পথ থেকে সরিয়ে আনতে পথ দেখাবে।
এ প্রসঙ্গে নিমেণ কয়েকটি দিকের প্রতি অালোকপাত করা হল ঃ
ক. নিয়মএণঃ কিশোর-তরতণদের এমন শিক্ষা দিতে হবে যাতে তারা তাদের কার্যকলাপ একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে নিবদ্ধ রাখে এবং ‘সীমার বাইরের কাজ করলে তা অন্যায়ের পর্যায়ে পড়বে’ - এ বোধ তৈরী হয়।
খ. বোধজ্ঞানঃ তাদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট নৈতিক মানের সৃষ্টি করতে হবে। স্বাভাবিক উচিত-অনুচিত, বড়কে সম্মান-ছোটকে সেণহ, ভাল-মন্দের সাধারণ প্রভেদ ইত্যাদি তাকে বুঝতে দিতে হবে।
গ. সাহায্যঃ মাতাপিতাকে প্রত্যেক সমতানের আসহা ভাজন হতে হবে। তারা যাতে নিজের ও অন্যের উপকার করবার মানসিকতা অর্জন করতে পারে তার জন্য তাকে সাহায্য করতে হবে।
ঘ. বিশ্বাসঃ কাকে বিশ্বাস করা উচিত এবং কাকে বিশ্বাস করা অনুচিত এসব সম্বন্ধে তাকে অবহিত করা প্রয়োজন।
ঙ. স্বাধীনতাঃ একটি নিদিষ্ট গন্ডির মধ্যে তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া প্রয়োজন এবং অপরিহার্য না হলে তাদের কোন কাজের প্রতিবন্ধক হওয়া অনুচিত।
চ. ভালবাসাঃ একটি তরতণ যেন অনুভব করে যে, তাদের প্রতি তাদের মাতা-পিতার অসীম ভালবাসা ও গভীর দরদ রয়েছে এবং এ ভালোবাসায় আছে তাদের প্রতি তাঁদের মাতাপিতার ‘সমতা-নীতি’।
ছ. রক্ষা কার্যঃ সমতান যেন বিশ্বাস করে যে, মাতা-পিতা তাদের বিপদের বান্ধব, সর্বোপরি সবসময়ের অকৃত্রিম রক্ষাকবজ।
জ. নিরাপত্তাঃ কিশোররা যেন উপলব্ধি করে যে, তাদের ঘর তাদের জন্য সর্বোত্তম আশ্রয় ও সর্বাপেক্ষা নিরাপদ সহান।
ঝ. সংযমঃ ব্যবহার, কাজকর্মসহ বিভিন্ন বিষয়ে কতটা পর্যমত এগুনো উচিত, কী পরিমাণে একটি কাজ করা উচিত, কখন ও কেন একটি কাজ পরিহার করা উচিত - ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রাথমিক পরিমিতিবোধ ও তৎসম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান তাকে দিতে হবে।
ঞ. কিশোর তরতণদেরকে সরল ও সংক্ষিপ্ত ভাষায় বোঝাতে হবে। কথা অপেক্ষা ঘটনা ও দৃষ্টামত তাদেরকে প্রভাবিত করে বেশী। তারা অনুকরণ প্রিয়। সুতরাং, মাতাপিতাকে তাদের সামনে মিথ্যাচার, ভন্ডামী বা নৈতিকতা বর্জিত আচরণ হতে বিরত থেকে নিজেদেরকে অনুকরণযোগ্য দৃষ্টামত হিসেবে পেশ করতে হবে। মাতাপিতা হবেন সমতানের কাছে একজন সৎ ও সুন্দর মানুষের প্রোজ্জবল প্রতিভূ।
৯.২. শিক্ষালয়ের ভূমিকাঃ
কিশোর- কিশোরীরা দিবসের একটি উল্লেখযোগ্য সময় ধরে বিদ্যালয়ে অবসহান করে। বিদ্যালয়ের রীতিনীতি, আচার-শৃঙ্খলা, শিক্ষক- শিক্ষিকাদের ব্যবহার, দৃষ্টিভঙ্গি, সিলেবাস -কারিকুলাম ইত্যাদি কিশোর-কিশোরীদের মানস গঠনে গভীর প্রভাব ফেলে। একটি বিদ্যালয়ের রীতিনীতি -আচার শৃঙ্খলায় যদি সভ্যতা, ভব্যতা, নিয়মানুবর্তিতা, সমতা ইত্যাদিসহ নানামুখী সুসহ্য সংস্কৃতির নিয়ত চর্চা ও প্রাত্যহিক অনুশীলন ঘটে তাহলে কিশোর-কিশোরীরা ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত হতে বাধ্য। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে অতীব গুরতত্বপূর্ণ। তাঁদের চরিত্র -মাধুয,র্ চিমতা-চেতনা, আচার-ব্যবহার, রতচি-লেহাজ, দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি দ্বারা কোমলমতি শিক্ষার্থীরা উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠে। সুতরাং শিক্ষক যদি চরিত্রবান না হন, সুন্দর স্বভাবের অধিকারী না হন, সমতা ও সমদর্শিতার গুণে গুণান্বিত হয়ে না উঠেন, সর্বোপরি শিক্ষার্থীর মনোরাজ্যে একটি নির্মল আসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারেন তাহলে তার ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁর কাছ থেকে নিছক পাঠ্য পুসতকের বাইরে জীবন গঠনের কোন দীক্ষা লাভ করতে পারবে না। শিক্ষক হলেন একটি বিদ্যাপীঠের প্রাণ, শিক্ষার্থীরা হলো স্পন্দন, আর অভিভাবকগণ হলেন হদদপিন্ড।
সুতরাং, সর্বাগ্রে প্রয়োজন শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং আদর্শ ও চরিত্রবান শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন। পাশাপাশি স্কুল/মাদ্রাসার সিলেবাস-কারিকুলামকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে যা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব তরতণের মাঝে একগুচ্ছ অভিন্ন নৈতিক মূল্যবান মূল্যবোধ তৈরীতে সহায়ক হয়, হয় জীবনমুখী।
স্কুল কলেজে জীবন কেন্দ্রীক শিক্ষা ইভটিজিং বন্ধের একটি সফল উদ্যোগ হতে পারে। এক সময় শিশু শিক্ষায় যে নীতিকথা শেখানো হতো তা সারা জীবনের পাথেয় হতো। যেমন আদর্শলিপি ও বাল্যশিক্ষায় ছিল ‘লম্ফ দিয়া চলিও না’, ‘সদা সত্য কথা বলিবে’, ‘মিথ্যা বলা মহা পাপ।’ শিক্ষক সপ্তাহে একদিন অমতত নীতিকথা শেখাতেন। এখন সেই শিক্ষা নেই বললেই চলে। সময় এসেছে, আবার সেদিকেই ফিরতে হবে আমাদেরকে।
অন্যদিকে কর্মমুখী শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের মাধ্যমে ইভ টিজিং প্রতিরোধ করা যায়। সাধারণত লেখাপড়ায় অনগ্রসর শিক্ষার্থীরা অপকর্মের সাথে বেশি জড়িত হয়। ‘অলস মসিতষ্ক শয়তানের কারখানা’ - এ অমোঘ সত্যকে উপলব্ধি করে অনগ্রসরদের বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুললে তাদের বাজে কাজে সময় দেবার মানসিকতা থাকবে না।
শিক্ষার্থী জীবন কেন্দ্রিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও কারিগরি শিক্ষা পেলে মানব সম্পদে পরিণত হবে। তার একাডেমিক শিক্ষা কম হলেও সে আত্মকর্মসংসহান খুঁজে পাবে এবং বেকারত্ব ঘুচাতে পারবে।
৯|৩ মাদক মুত্তু সমাজঃ
মাদকাসত্তিুর সঙ্গে বখাটেপনার রয়েছে গভীর সম্পর্ক। দেখা গেছে, মাদকাসত্তিুরাই চুরি, ছিনতাই, ইভ টিজিং ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত। সম্প্রতি ইউএনডিপি-র অর্থায়নে পরিচালিত এক জরিপে সারাদেশে ৬,৭৯,৭২৮ জন ছিন্নমুল মানুষের হিসাব পাওয়া গেছে যাদের বয়স ২০ এর নিচে। এদের মাঝে লক্ষাধিক মাদকাসত্তু (~~দনিক নয়াদিগমত, ১৮|১২|২০০৯)। তাই মাদকের হাত থেকে আমাদের কিশোর ও যুব সমাজকে বাঁচানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। অভিভাবকদের নিজ সমতানের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সরকারকে মাদকের বিসতার রোধে অনেক বেশী কঠোর হতে হবে।
৯| ৪ সুসহ সাংস্কৃতিক ধারাঃ
অসুসহ সাংস্কৃতিক ধারা থেকে রক্ষা করতে হবে তরতণ সমাজকে। এর মূল দায়িত্ব নিতে হবে সাংস্কৃতিক কর্মীদের। নাটক, সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে, শিল্পকলা আর অশ্লীলতা এক নয়। মানুষের জীবনের গোপন বিষয়গুলোকে উম্মুত্তু করে দিলে সমাজ বেহায়াপনার দিকে ধাবিত হতে বাধ্য।
আমাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন নির্মাতাদের উন্নত রতচিবোধের পরিচয় দিতে হবে। তাঁরা যেভাবে বিজ্ঞাপনে নারীদের মেলে ধরেন তা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। প্রায়শ তা উদ্ভট ও রতচিহীন। স্বল্পবসনা নারীদের উদ্দাম নৃত্য অথবা বিস্কুট কিংবা চকলেটের প্রসতাব দিয়ে প্রেম নিবেদনে সফল হওয়া অথবা ষোড়শীর শিশুসুলভ পোষাক আর লাফ-ঝাঁপ অথবা অকারণ ~~দহিক অবয়ব প্রদর্শন ইত্যাদি সমাজকে কুলুষিত করবেই। ছোট পোষাকই যদি সভ্যতার পরিচায়ক হয় তাহলে বলতে হবে আদিম যুগের লোকেরাই বেশি সভ্য ছিলেন। আমাদের নির্মাতা ও মডেলগণ তাঁদের সামাজিক দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হলে সমাজ উপকৃত হবে নিঃসন্দেহে।
আমাদের প্রিন্ট মিডিয়া ইভ টিজিং প্রতিরোধে গুরতত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এমন কিছু পত্রিকা রয়েছে যেগুলোতে প্রতিদিনই অমতত একটি অশ্লীল ছবি ছাপা হয়। নারী খেলোয়াড়, মডেল ও নায়িকাদের মার্জিত ছবি ছাপানোর মাধ্যমে ইভটিজিং প্রতিরোধে ভূমিকা রাখা সম্ভব।
৯| ৫ রাজ~~নতিক সিহরতাঃ
রাজনীতি দেশের প্রতিটি অঙ্গ, সতর ও প্রতিষ্ঠানে প্রভাব ফেলে। রাজনীতিতে যদি বিরামহীন অসিহরতা, প্রতিহিংসা, বিষোদ্গার, হানাহানি ইত্যাদি বিরাজ করে তখন মন্দলোকগুলোর মন্দ কাজের বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি হয়ে যায়। আমাদের রাজনীতিবিদদের আমতরিক প্রচেষ্টায়ই কেবল সমাজ থেকে অসিহরতা দূর হতে পারে। একটি শুদ্ধ ও সুসংহত গণতামিএক রাজ~~নতিক সংস্কৃতি অপরাধ মুত্তু সমাজের জন্য অপরিহার্য - যা ইভ টিজিং প্রতিরোধেও কার্যকর হতে পারে। পাশাপাশি অপরাধীরা যাতে রাজ~~নতিক পৃষ্ঠপোষকতা না পায় সেদিকেও রাজনীতিবিদগণের দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।

১০| গণপ্রজাতমএী বাংলাদেশের সংবিধান এর অনুপম নির্দেশনাঃ
প্রসংগত বাংলাদেশ সংবিধানের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরতষ নির্বিশেষে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার সহ তাঁদের দেহ-জীবন-সম্পদ ইত্যাদির সুনাম ও মর্যাদা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করার কথাও বলা হয়েছে।
অনুচ্ছেদ-১১ ঃ প্রজাতমএ হইবে একটি গণতমএ, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে (এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে)।
অনুচ্ছেদ-২৮ (৪) ঃ নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান - প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।
অনুচ্ছেদ-৩১ ঃ আইনের আশ্রয় লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহার লাভ যে কোন সহানে অবসহানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবসহানরত অপরাপর ব্যত্তিুর অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং বিশেষতঃ আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবসহা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোন ব্যত্তিুর জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে।
১১| জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিঃ
২০০৮ সনের ফেব্রতয়ারী মাসে বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মমএণালয় জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করে। এ নীতির প্রথম অধ্যায়ে বিভিন্ন আমতর্জাতিক কনভেনশন এবং অন্যান্য আমতর্জাতিক দলিলে বর্ণিত প্রতিশ্রততি অনুযায়ী নারীদের অধিকার ও সম্মান নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। ২০০০ সালে অনুষ্ঠিত মিলেনিয়াম সামিটে অংশগ্রহণকারী সিডও অপশনাল প্রোটোকলে স্বাক্ষরকারী দশটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ নীতি মালার লক্ষ্য হিসেবে ‘নারীর মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ’ ও ‘নারীর প্রতি সকল নির্যাতন দূরীকরণ’ প্রসঙ্গে বলা হয়েছেঃ
অনুচ্ছেদ-৩|৩ ঃ “নারীর মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান আইন সংশোধন ও প্রয়োজনীয় নতুন আইন প্রণয়ন করা।”
অনুচ্ছেদ-৫|১ ঃ “পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি শারীরিক, মানসিক ও যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ, পতিতাবৃত্তিতে নিয়োগ, যৌতুক ও নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করা। ”
অনুচ্ছেদ-৫|২ ঃ “নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সম্পর্কিত প্রচলিত আইন যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে সংশোধন এবং নতুন আইন প্রণয়ন করা ।”
১২. ইভ টিজিং প্রতিরোধে বিদ্যমান আইনঃ
ইভ-টিজিং নামক অপরাধটি প্রতিরোধে বাংলাদেশে বিদ্যমান আইনসমূহের গুরতত্বপূর্ণ ধারাগুলো উল্লেখ করা প্রয়োজন। এতদ্সংত্রুামত বিভিন্ন আইনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ বিষয়ে বর্ণনা, নির্দেশনা, শাসিত ও সংশোধন-ব্যবসহাপনার কথা বিধৃত হয়েছে।
১২.১. নারীর প্রতি যৌন নিপীড়ন বিরোধী হাইকোর্টের দিক-নির্দেশনা ী
একজন পুরুষ যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে পথে চলতে পারে, নারী যদি তার পথচলায় সেই আত্মবিশ্বাস না পায়, তাহলে সামাজিক অর্জনগুলো মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। আমাদের সমাজে যত দিন দুর্বৃত্তরা নারীকে লাঞ্ছিত করে, তার জীবন ধ্বংস করে পার পেয়ে যেতে পারে, তত দিন নারীর জন্য সামাজিক পরিসর নিরাপদ হবে না। যারা বখাটেদের অত্যাচারের শিকার, তাদের সুরক্ষা ও সহায়তা দেওয়া এবং অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া সমাজ ও রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব।
গত ১৪ মে, ২০০৯ তারিখে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ মাহমুদ হোসেন বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ নারীর প্রতি যৌন নিপীড়ন বিরোধী একটি দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। যৌন নিপীড়ন সম্পর্কে যতক্ষণ পর্যন্ত না কোনো আইন প্রণয়ন হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত এ দিক-নির্দেশনা বাংলাদেশ সংবিধান এর অনুচ্ছেদ ১১১ অনুসারে আইন হিসেবে সকল সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যথারীতি বলবৎ ও কার্যকর হবে।

১. প্রসারঃ
এই নির্দেশনা বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে সকল সরকারী এবং বেসরকারী কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য কার্যকর হবে।
২. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ
ক. যৌন নির্যাতন সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা;
খ. যৌন নির্যাতনের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি কারা;
গ. ‘যৌন নির্যাতন শাস্তিযোগ্য অপরাধ’-এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
৩. নিয়োগদাতার কর্তব্যঃ যেহেতু রাষ্ট্রীয় সংবিধান এবং আইন মেনে চলা সকল নাগরিক ও সরকারী কর্মচারীদের কর্তব্য এবং যেহেতু প্রজাতন্ত্রের সংবিধানের একাধিক অনুচ্ছেদে জেন্ডার সমতা নিশ্চিতকরণের বিষয়ে বলা হয়েছে এবং যেহেতু সকল ধরণের জেন্ডার বৈষম্য দূরীকরণে রাষ্ট্র দৃঢ় প্রত্যয় এবং যেহেতু সংবিধানে রাষ্ট্র এবং গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার এবং সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী বকলে বলা হেয়ছে সেহেতু যৌন নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নমূলক অপরাধের ঘটনাকে প্রতিরোধ এবং নিবৃত্ত করার জন্য একটি কার্যকরী পন্থা গ্রহণ করা এবং প্রচলিত আইন ও সম্ভাব্য প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপের মাধ্যমে যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের উদ্দেশ্যে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিগণের উপর বর্তায়।
৪. সংজ্ঞা ঃ
i) যৌন হয়রানি বলতে বোঝায়ঃ
ক. অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন আবেদনমূলক আচরণ (সরাসরি কিংবা ইঙ্গিতে) যেমনঃ শারীরিক স্পর্শ বা এ ধরনের প্রচেষ্টা।
খ. প্রাতিষ্ঠানিক ও পেশাগত ক্ষমতা ব্যবহার করে কারও সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করা।
গ. যৌন হয়রানি বা নিপীড়নমূলক উক্তি।
ঘ. যৌন সুযোগলাভের জন্য অবৈধ আবেদন।
ঙ. পর্ণোগ্রাফি দেখানো।
চ. যৌন আবেদনমূলক মন্তব্য বা ভঙ্গি।
ছ. অশালীন ভঙ্গি, যৌন নির্যাতনমূলক ভাষা বা মন্তব্যের মাধ্যমে উত্যক্ত করা, কাউকে অনুসরণ করা বা পেছন পেছন যাওয়া, যৌন ইঙ্গিতমূলক ভাষা ব্যবহার করে ঠাট্টা বা উপহাস করা।
জ. চিঠি, টেলিফোন, মোবাইল, এসএমএস, ছবি, নোটিশ, কার্টুন, বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিল, নোটিশ বোর্ড, অফিস, ফ্যাক্টরি, শ্রেণীকক্ষ, বাথরুমের দেয়ালে যৌন ইঙ্গিতমূলক অপমানজনক কোনো কিছু লেখা।
ঞ. ব্ল্যাকমেইল অথবা চরিত্র লঙ্ঘনের উদ্দেশ্যে স্থির বা চলমান চিত্র ধারণ করা।
ট. যৌন নিপীড়ন বা হয়রানির কারণে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও শিক্ষাগত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হওয়া।
ঠ. প্রেম নিবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হয়ে হুমকি দেওয়া বা চাপ প্রয়োগ করা।
ড. ভয় দেখিয়ে বা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বা প্রতারণার মাধ্যমে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বা স্থাপনের চেষ্টা করা।
ক-ড ধারায় উল্লিখিত আচরণসমূহ অপমানজনক এবং কর্মস্থলে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নারীর স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার প্রতি হুমকী হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ আচরণসমূহ বৈষম্যমূলক হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তার এই প্রতিবাদের কারণে কর্মক্ষেত্রে বা শিক্ষাগত উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা বা বৈরী পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে।
ii) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলতে বুঝায় যে কোন সরকারী বা বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কর্মক্ষেত্রের কর্তৃপক্ষ, যিনি প্রতিষ্ঠানের অন্যায় আচরণ দমনে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা বলবৎ করার ক্ষেত্রে ক্ষমতা রাখেন।

iii) শৃঙ্খলাবিধি বলতে বুঝায় সরকার কর্তৃক প্রণীত আইন বা অধ্যাদেশ বা অধ্যাদেশের আওতাভুক্ত সকল বিধি যা সরকারী বেসরকারী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রে শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রণয়ন করা হয়েছে।
৫. সচেতনতা ও জনমত সৃষ্টিঃ
K. সরকারি-বেসরকারি সব কর্মক্ষেত্রে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জেন্ডার বৈষম্য, যৌন হয়রানি এবং নির্যাতননিরোধ ও নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টিতে নিয়োগদাতা/সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সচেতনতামূলক প্রকাশনার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে। এ বিষয়ে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতি শিক্ষাবর্ষের প্রারম্ভে শ্রেণীর কাজ শুরুর আগে শিক্ষার্থীদের এবং সব কর্মক্ষেত্রে মাসিক এবং ষান্মাসিক ওরিয়েন্টেশন ব্যবস্থা রাখতে হবে।
খ. প্রয়োজন হলে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য অবশ্যই উপযুক্ত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
গ. সংবিধানে উল্লিখিত অনুচ্ছেদ এবং সংবিধিবদ্ধ আইনে নারী শিক্ষার্থী এবং কর্মে নিয়োজিত নারীদের যে অধিকারের বিষয়ে উল্লেখ করা আছে, তা সহজ ভাষায় বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
ঘ. আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যক্তিদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রের নিয়োগকর্তারা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং কার্যকরী মতবিনিময় করবেন।
ঙ. সংবিধানে বর্ণিত জেন্ডারসমতা এবং যৌন অপরাধ সম্পর্কিত দিক-নির্দেশনাটি পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করতে হবে।
চ. সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত নিশ্চয়তাগুলো প্রচার করতে হবে।
৬. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাঃ সকল নিয়োগকর্তা এবং কর্মক্ষেত্রে দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ যৌন হয়রানি প্রতিরোধের লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এ দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে, অন্যান্য পদক্ষেপ ছাড়াও তাঁরা নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেনঃ
ক. নির্দেশনায় উল্লিখিত ৪ ধারা অনুযায়ী যৌন হয়রানি এবং যৌন নির্যাতনের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হয়েছে, তা কার্যকরভাবে প্রচার ও প্রকাশ করতে হবে।
খ. যৌন হয়রানি সংক্রান্ত যেসব আইন রয়েছে এবং আইনে যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের জন্য যেসব শাস্তির উল্লেখ রয়েছে, তা ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে।
গ. কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষাক্ষেত্রের পরিবেশ নারীর প্রতি যেন বৈরী না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে এবং কর্মজীবী মহিলা ও নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ বিশ্বাস ও আস্থা গড়ে তুলতে হবে যে, তাঁরা তাঁদের পুরুষ সহকর্মী ও সহপাঠীদের তুলনায় অসুবিধাজনক অবস্থায় থাকবেন না।
৭. শৃঙ্খলাবিধি কার্যক্রমঃ এ নির্দেশনায় উল্লিখিত ৪ ধারা অনুযায়ী, যৌন হয়রানি এবং যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে যথাযথ শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়ন ও কার্যকর করতে হবে।
৮. অভিযোগঃ যেসব আচরণ এ গাইডলাইনের অন্তর্ভুক্ত নয়, এমন অশোভন আচরণ সম্পর্কে যদি অপরাধের শিকার নারী অভিযোগ করতে চায়, তা গ্রহণ করার ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং তা প্রতিকারের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা থাকতে হবে। এ জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
ক. অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিচয় গোপন রাখতে হবে।
খ. সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অভিযোগকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
গ. অপরাধের শিকার নিজে অথবা বন্ধু বা চিঠি বা আইনজীবীর মাধ্যমে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করতে পারে।
ঘ. অভিযোগকারীর ব্যক্তি স্বতন্ত্রভাবে অভিযোগ কমিটির নারী সদস্যের কাছে অভিযোগ জানাতে পারে।
O. অভিযোগ কমিটির কাছে অভিযোগ দায়ের করার জন্য নিম্নে বর্ণিত ধারা ৯ অনুসরণ করতে হবে যা নিম্নরুপ।
৯. অভিযোগ গ্রহণকারী কমিটিঃ
ক. অভিযোগ গ্রহণের জন্য, তদন্ত পরিচালনার জন্য এবং সুপারিশ করার জন্য সরকারি-বেসরকারি সব কর্মক্ষেত্রে এবং সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গ্রহণের জন্য কমিটি গঠন করবে।
খ. কমপক্ষে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হবে, যার বেশির ভাগ সদস্য হবেন নারী। সম্ভব হলে কমিটির প্রধান হবেন নারী।
গ. কমিটির দুজন সদস্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে নিতে হবে, যে প্রতিষ্ঠান জেন্ডার এবং যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে কাজ করে।
N. অভিযোগ কমিটি সরকারের কাছে এ নীতিমালা বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত বাৎসরিক অভিযোগ প্রতিবেদন পেশ করবে।
১০. অভিযোগ কমিটির পরিচালনা প্রণালীঃ সাধারণভাবে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগ কমিটির কাছে অভিযোগ পেশ করতে হবে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণের জন্য কমিটিঃ
i) লঘু হয়রানির ক্ষেত্রে যদি সম্ভব হয়, অভিযোগ কমিটি সংশ্লিষ্ট উভয় পক্ষের সম্মতি নিয়ে অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেবে এবং এ বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
ii) অন্য সব ক্ষেত্রে অভিযোগ কমিটি বিষয়টি তদন্ত করবে।
iii) অভিযোগ কমিটি ডাকযোগে উভয় পক্ষকে এবং সাক্ষীদের রেজিষ্ট্রার বিজ্ঞাপন প্রেরণ, শুনানি পরিচালনা, তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ এবং সব সংশ্লিষ্ট দলিল পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা রাখবে। এ ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে মৌখিক প্রমাণ ছাড়াও অবস্থানগত প্রমাণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ অভিযোগ কমিটির কার্যক্রম নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট অফিস সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানে বাধ্য থাকবে। অভিযোগ কমিটি অভিযোগকারীদের পরিচয় গোপন রাখবে। অভিযোগকারীর সাক্ষ্য গ্রহণের সময় এমন কোনো প্রশ্ন বা আচরণ করা হবে না, যা উদ্দ্যেশ্যমূলকভাবে নীচ, অপমানজনক এবং হয়রানিমূলক হয়। সাক্ষ্য গ্রহণ ক্যামেরায় ধারণ করতে হবে। অভিযোগকারী যদি অভিযোগ তুলে নিতে চায় বা তদন্ত বন্ধের দাবি জানায়, তাহলে এর কারণ তদন্ত করে প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে হবে। অভিযোগ কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে তাঁদের সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রদান করবে। প্রয়োজনে এ সময়সীমা ৩০ কার্যদিবস থেকে ৬০ কার্যদিবসে বাড়ানো যাবে।
যদি এটি প্রমাণিত হয় যে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের জন্য সুপারিশ করা হবে। অভিযোগ কমিটির বেশির ভাগ সদস্য যে রায় দেবে, তার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
১১. শাস্তিঃ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে (ছাত্র ব্যতিরেকে) সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারে এবং ছাত্রদের ক্ষেত্রে অভিযোগ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তাদের ক্লাস করা থেকে বিরত রাখতে পারে।
অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করবে এবং সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রের শৃঙ্খলাবিধি অনুসারে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং যদি ওই অভিযোগ দন্ডবিধির যেকোনো ধারা অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট কোর্ট বা ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেবে।
১২.২.১| ঢাকা মেট্রো্পলিটান পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ ী
ধারা ৭৬ঃ মহিলাদিগকে উত্যক্ত করার শাস্তিঃ
যদি কেউ রাস্তায় বা সাধারণের ব্যবহার্য স্থানে বা সেখান হতে দৃষ্টিগোচরে স্বেচ্ছায় এবং অশালীনভাবে নিজদেহ এমনভাবে প্রদর্শন করে যা কোন গৃহ বা দালানের ভিতর হতে হউক বা না হউক, কোন মহিলা দেখতে পায়, অথবা স্বেচ্ছায় কোন রাস্তায় সাধারণের ব্যবহার্য স্থানে কোন মহিলাকে পীড়ন করে বা তার পথরোধ করে, অথবা কোন রাস্তায় বা সাধারণের ব্যবহার্য স্থানে অশালীন ভাষা ব্যবহার করে বা অশ্লীল আওয়াজ, অংগভংগী বা মন্তব্য করে কোন মহিলাকে অপমান বা বিরক্ত করে, তবে সে ব্যক্তি ১ (এক) বৎসর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা ২০০০ (দু হাজার) টাকা পর্যন্ত জরিমানা দন্ড অথবা উভয় প্রকার দন্ডে দন্ডনীয় হবে।
১২.২.২| চট্টগ্রাম মেট্রো্পলিটান পুলিশ অধ্যাদেশ- ১৯৭৮ ী
ধারা ৭৮ঃ মহিলাদের উত্যক্ত করার শাস্তিঃ
কেউ কোন রাস্তায় বা সর্বসাধারণের ব্যবহার্য স্থানে অথবা গৃহাভ্যন্তরে বা ঘরের বাইরে মহিলাদের দেখিয়ে বা দেখানোর উদ্দেশ্যে নিজের অংগ প্রত্যংগ প্রদর্শন করলে অথবা রাস্তায় বা সর্বসাধারণের ব্যবহার্য প্রকাশ্য স্থানে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মহিলার পথরোধ করলে বা তাকে চাপ দিলে অথবা অশালীন বাক্য বা শব্দে বা মন্তব্য করে বা অংগভংগী করে কোন মহিলাকে উত্যক্ত করলে ১ (এক) বৎসর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা ২০০০ (দু হাজার) টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় প্রকার দন্ডে দন্ডনীয় হবে।
১২.২.৩| খুলনা মেট্রো্পলিটান পুলিশ অধ্যাদেশ- ১৯৮৫ ী
ধারা ৭৯ঃ মহিলাদের উত্যক্ত করার শাস্তিঃ
কোন ব্যক্তি রাস্তায় বা সর্বসাধারণের ব্যবহার্য স্থানে অথবা গৃহাভ্যন্তরে বা ঘরের বাইরে মহিলাদের দেখিয়ে বা দেখানোর উদ্দেশ্যে নিজের অংগ-প্রত্যংগ প্রদর্শন করে অথবা রাস্তায় বা সর্বসাধারণের ব্যবহার্য প্রকাশ্যস্থানে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মহিলার পথরোধ করে বা তাকে চাপ দেয় অথবা অশালীন বাক্য বা শব্দ বা মন্তব্য করে বা
অংগভংগী করে কোন মহিলাকে উত্যক্ত করে, তবে সে ব্যক্তি ১ (এক) বৎসর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা ২০০০ (দুই হাজার) টাকা পর্যন্ত জরিমানা দন্ড অথবা উভয় প্রকার দন্ডে দন্ডনীয় হবে।
১২.২.৪| রাজশাহী মেট্রো্পলিটান পুলিশ অধ্যাদেশ- ১৯৯২ঃ
ধারা ৭৯ঃ মহিলাদের উত্যক্ত করার শাস্তিঃ
কোন ব্যক্তি কোন রাস্তা বা সর্বসাধারণের ব্যবহার্য স্থানে অথবা গৃহাভ্যন্তরে বা ঘরের বাহিরে মহিলাকে দেখিয়ে বা দেখানোর উদ্দেশ্যে নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রদর্শন করলে অথবা রাস্তায় বা সর্বসাধারণের ব্যবহার্য স্থানে প্রকাশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মহিলার পথ রোধ করলে বা তার শরীরের কোন স্থান স্পর্শ করলে অথবা অশালীন বাক্য বা শব্দ বা মন্তব্য করলে, অঙ্গভঙ্গী করে তাকে উত্যক্ত করলে, তিনি ১ (এক) বৎসর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা ২০০০ (দুই হাজার) টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে অথবা উভয় প্রকার দন্ডে দন্ডিত হবেন।
১২.৩. ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ঃ
ধারাঃ ১৪৪ - উৎপাত বা আশঙ্কিত বিপদের ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ সম্পূর্ণ আদেশ জারির ক্ষমতাঃ
যে সকল ক্ষেত্রে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অথবা এই ধারার অধীন কাজ করিবার জন্য সরকার বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিশেষ ভাবে ক্ষমতা প্রাপ্ত (অন্য কোন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের) মতে, এই ধারার অধীনে অগ্রসর হইবার মত যথেষ্ট কারণ রহিয়াছে এবং আশু বা দ্রতত প্রতিকার বাঞ্ছনীয়,
সেই সকল ক্ষেত্রে এইরদপ ম্যাজিষ্ট্রেট লিখিত আদেশে ঘটনার মূল বিষয়বসও বর্ণনা করিয়া এবং ইহ|া ১৩৪ ধারায় বর্ণিত পদ্ধতিতে জারি করিয়া যে কোন ব্যত্তিুকে নির্দিষ্ট কাজ করা হইতে বিরত থাকিবার অথবা কোন নির্দিষ্ট সম্পত্তি তাহার দখলে কিংবা তাহার ব্যবসহাধীনে লইবার নির্দেশ দিতে পারিবেন, যদি উত্তু ম্যাজিস্ট্রেট বিবেচনা করেন যে, তাহার নির্দেশে আইন সংগতভাবে নিযুত্তু কোন ব্যত্তিুর প্রতি বাধা, বিরত্তিু বা ক্ষতি, অথবা বাধা, বিরত্তিু বা ক্ষতির ঝুঁকি, অথবা মানুষের জীবন, স্বাসহ্য বা নিরাপত্তার প্রতি বিশদ অথবা জনশামিতর বিরত্তিু বা দাঙ্গা বা মারামারি নিরোধে সম্ভাবনা আছে কিংবা নিরোধে সহায়তা করিবে।
১২.৪| বাংলাদেশ পেনাল কোডঃ
৫০৯ ধারায় ইভ টিজিং অর্থে বলা হয়েছে, কোন নারীর শালীনতার অমর্যাদার অভিপ্রায়ে কোন মমতব্য, অঙ্গভঙ্গি বা কোন কাজকে বোঝাবে। কাজ অর্থ স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের রাসতাঘাটে দেখে শিস দেওয়া, গান গাওয়া, চোখ বাঁকা করে তাকানো, কোন ব্যত্তিু নারীর শালীনতায় অমর্যাদা করার অভিপ্রায়ে কোন মমতব্য করা, কোন শব্দ বা অঙ্গভঙ্গি করা বা বসও প্রদর্শন করা এবং অনুরদপ মমতব্য, শব্দ নারী শুনতে পায় বা বসও দেখতে পায় কিংবা কোন নারীর নির্জনবাসে অনধিকার প্রবেশ।
বাংলাদেশ সরকার গত ৯|১১|২০১০ তারিখে এক প্রজ্ঞাপন জারীর মাধ্যমে ভ্রাম্যমান আদালত আইন, ২০০৯ এ একই আইনের ১৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতা বলে আইনের ৯৩ তম সংযোজনীতে দন্ডবিধির এ ধারা (ধারা ৫০৯) যুত্তু করেছেন।
১২.৫| নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনঃ
ধারাঃ ১০ - যৌন পীড়ন, ইত্যাদির দন্ডঃ (১) কোন পুরতষ অ~~বধভাবে তার যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তার শরীরের যে কোন অঙ্গ বা কোন বসও দ্বারা কোন নারী বা শিশুর যৌন অঙ্গ বা অন্য কোন অঙ্গ স্পর্শ করেন তাহলে তার এ কাজ হবে যৌন পীড়ন এবং তজ্জন্য উত্তু পুরতষ অনধিক ১০ (দশ) বৎসর কিমও অন্যূন
৩ (তিন) বৎসর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিত্তু অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হবেন।
(২) কোন পুরতষ অ~~বধভাবে তার যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে কোন নারীর শ্লীলতাহানি করলে বা অশোভন অঙ্গভঙ্গি করলে তার এ কাজ হবে যৌন হয়রানি এবং তজ্জন্য উত্তু পুরতষ অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কিমও অন্যূন ২ (দুই) বৎসর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিত্তু অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হবেন।
‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০৬’ সংশোধন করে এতে ১০ এর (ক) ধারা সংযোজনের প্রসতাব করা হয়েছে। প্রসতাবিত নতুন এ ধারায় যৌন হয়রানিকে সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। প্রসতাবে বলা হয়েছে যে, যদি কোন ব্যত্তিু ইচ্ছাকৃতভাবে কোন নারীর বা শিশুর পথরোধ করে অথবা অশালীন কোন মমতব্য বা শব্দ করে অথবা অশোভন অঙ্গভঙ্গি বা বসও বা চিত্র বা সাংকেতিক চিহু বা চিত্র প্রদর্শন করে অথবা ইন্টারনেট বা টেলিফোন বা মোবাইল ফোন বা এসএমএস বা অন্য কোন মাধ্যম ব্যবহার করে বা আলোকচিত্র গ্রহণের মাধ্যমে কোন নারী বা শিশুকে উত্ত্যত্তু করে বা অপমানজনক বা শালীনতার অমর্যাদা ঘটায় বা উত্তু নারী বা শিশু দেখতে পায় বা শুনতে পায়, তা যৌন হয়রানিমূলক অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে অনধিক সাতবছর এবং সর্বনিমণ এক বছর কারাদন্ড এবং অর্থদন্ডের বিধান রাখা হচ্ছে।
১২.৬. বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ঃ
ধারা - ৩৩২ঃ
মহিলাদের প্রতি আচরণঃ কোন প্রতিষ্ঠানের কোন কাজে কোন মহিলা নিযুত্তু থাকিলে, তিনি যে পদমর্যাদারই হোক না কেন, তার প্রতি উত্তু প্রতিষ্ঠানের অন্য কেহ এমন আচরণ করিতে পারিবেন না যাহা অশ্লীল কিংবা অভদ্রজনোচিত বলিয়া গণ্য হইতে পারে, কিংবা যাহা উত্তু মহিলার শালীনতা ও সম্ভ্রমের পরিপমহী।
১২.৭. শিশু আইন, ১৯৭৪ঃ
১৮ বছরের কম বয়সীদের প্রতি মাতা-পিতা ও অভিভাবকগণের দায়িত্ব ও কর্তব্য সুনির্দিষ্টকরণসহ সমতানের প্রতি অবজ্ঞা-অবহেলা-গাফলতির জন্য শাসিতর বিধান রয়েছে।
ধারাঃ ৩১- প্রধান পরিদর্শক, ইত্যাদির নিয়োগঃ
(১) সরকার প্রত্যায়িত ইনস্টিটিউটের জন্য একজন প্রধান পরিদর্শক এবং তার সহায়তাকল্পে সরকারি বিবেচনামতে উপযুত্তু সংখ্যক পরিদর্শক ও সহকারী পরিদর্শক নিয়োগ করবেন।
(২) প্রধান পরিদর্শক বা সহকারী পরিদর্শক, প্রধান পরিদর্শকের সেরদপ ক্ষমতা ও কর্তব্য থাকবে।
(৩) প্রত্যেক পরিদর্শক বা সহকারী পরিদর্শক, প্রধান পরিদর্শকের সেরতপ ক্ষমতা লাভ করবেন ও কর্তব্য পালন করবেন যেরদপ সরকার নির্দেশ দিবেন এবং প্রধান পরিদর্শকের নির্দেশানুযায়ী কাজ করবেন।
ধারাঃ ৫৪- পিতামাতাকে জরিমানা ইত্যাদি প্রদানে আদেশ দেয়ার ক্ষমতাঃ
(1) যেক্ষেত্রে কোন শিশু জরিমানাদন্ডে দন্ডনীয় অপরাধে দন্ডিত হয়, সেক্ষেত্রে আদালত জরিমানার অর্থ পরিশোধের জন্য শিশুটির পিতামাতা বা অভিভাবককে নির্দেশ দিতে পারেন।
(2) কোন পিতামাতা বা অভিভাবককে উপ-ধারা (১) অনুযায়ী জরিমানা পরিশোধের আদেশ হলে তা ফৌজদারী
কার্যবিধির বিধান অনুসারে আদায় করা হবে।
ধারাঃ ৬৩- ধর্ম সংত্রুামত বিধানঃ
(১) এ আইনের অধীনে শিশুকে যে প্রত্যায়িত ইনস্টিটিউট, অনুমোদিত আবাস অথবা উপযুত্তু ব্যত্তিু অথবা অন্য ব্যত্তিুর নিকট শিশুকে সোপর্দ করা হবে তা নির্ধারণের জন্য আদালত শিশুর ধর্মীয় নাম বা আখ্যা নিরতপণ করবেন এবং এরতপ প্রত্যায়িত ইনস্টিটিউট, অনুমোদিত আবাস অথবা অন্য উপযুত্তু ব্যত্তিু নির্বাচনকালে শিশুর নিজ ধর্মে শিক্ষা-দীক্ষার জন্য যে সকল সুবিধা প্রদত্ত হয় তার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
(২) শিশুকে যেক্ষেত্রে এরতপ কোন প্রত্যায়িত ইনস্টিটিউট অথবা অনুমোদিত আবাসের তত্তবাবধানে সোপর্দ করা হয় সেখানে তার নিজ ধর্ম সংত্রুামত শিক্ষা-দীক্ষার কোন সুযোগ-সুবিধা নেই, অথবা এরতপ কোন ব্যত্তিুর তত্তবাবধানে ন্যসত করা হয় যিনি শিশুকে তার ধর্মমতে পালন করার জন্য কোন বিষেষ সুযোগ দিতে পারেন না। সেক্ষেত্রে এরতপ প্রত্যায়িত ইনস্টিটিউট অথবা অনুমোদিত আবাসে এরতপ কর্তৃপক্ষ অথবা উপযুত্তু ব্যত্তিু শিশুকে তার নিজ ধর্ম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম অনুযায়ী লালন-পালন করবেন না।
(৩) যেক্ষেত্রে প্রধান পরিদর্শকের দৃষ্টিগোচর করা হয় যে, (২) উপধারার বিধান ভঙ্গ করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে তিনি প্রত্যায়িত ইনস্টিটিউট, অনুমোদিত আবাস অথবা উপযুত্তু ব্যত্তিুর জিম্মি হতে শিশুটিকে তার মতে অন্য কোন উপযুত্তু প্রত্যায়িত ইনস্টিটিউট অথবা অনুমোদিত আবাসে বদলি করবেন।
উপরে বিধৃত বিদ্যমান আইন সমূহের নিরপেক্ষ ও যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আইনেই আইনের ভেতরে আইনের প্রয়োগ ও শাসিত নিশ্চিত করার যথাযথ বিধান থাকা প্রয়োজন। পাশাপাশি আইনের অপপ্রয়োগ যাতে না ঘটে সেদিকেও খেয়াল রাখা জরতরী। ইতোমধ্যেই আইনের অপপ্রয়োগের কিছু খবর পত্রিকামতরে প্রকাশিত হয়েছে।
একটি উদাহরণঃ
নরসিংদী পলিটেকনিক্যাল ইনষ্টিটিউটে নিয়মিত শিক্ষক নিয়োগের দাবীতে আবেদনপত্র জমা দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ইভটিজিং মামলার হুমকির শিকার হয়ে গত রবিবার ক্লাস বর্জন করছে। শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়মিত শিক্ষকের জন্য তদবির না করে কম্পিউটার বিভাগের প্রধান আবুল কালাম আজাদের সএী মলি বেগম এবং তার নিকট আত্মীয় বিলকিস বেগমকে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। এতে শিক্ষার্থীদের চাহিদা পুরণ না হওয়ায় তারা নিয়মিত শিক্ষক নিয়োগের ব্যবসহা নিতে গত ২৭|১১|২০১০ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বরাবর আবেদন করেন। অধ্যক্ষ আবেদনপত্র জমা না নিয়ে তাদের গালিগালাজ করেন এবং এ ব্যাপারে কোন কথা বললে ইভটিজার বলে মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। তিনি শিক্ষার্থীদেরকে আরও বলেন, তোমাদের বিভাগে বিভাগীয় প্রধান ছাড়া সকল খন্ডকালীন শিক্ষক মহিলা হওয়াতে আমি খুশি। বেশী কথা বললেই ইভটিজার বানিয়ে মামলায় ফাঁসিয়ে দেব। এই ইভটিজিং মামলার হুমকিতে আতংকগ্রসত হয়ে খন্ডকালীন অযোগ্য শিক্ষিকাদের ক্লাস বর্জন করতে বাধ্য হয় বলে শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের জানায়। (ইত্তেফাক, ৩০|১১|২০১০)
১৩| ইভ-টিজিং প্রতিরোধে ধর্মঃ
ইভ টিজিং এর মতো অপরাধ প্রতিরোধে ধর্মীয় সংস্কৃতির অনুশীলনের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। কেননা মানুষের শুধু শারীরিক সত্তা নয়, তার একটি মানস ও মনন রয়েছে। এ মনন বা মানসের বিকাশ দরকার এবং সেটা কেবল বসতুগত নয়। এ মানস বিকাশ ধর্মের দ্বারা সম্ভব। ধর্ম মানবজীবনকে পরিপূর্ণ ও সৌন্দর্যমন্ডিত করে এবং ধর্ম হচ্ছে ঐতিহাসিকভাবে মূল্যবোধ ও নৈতিকতার ভিত্তি।
ধর্ম শব্দটি সংস্কৃত। ধৃ+মন = ধর্ম। এর অর্থ করা হয়, ‘ধ্রিয়তে লোকো অনেন, ধরতি লোকংবা’ অর্থাৎ যা লোককে ধারণ করে এবং লোক যা ধারণ করে চলে তাকেই ধর্ম বলা হয়। মহাভারতের মতে, ‘ধারণাদ্ধর্মামিত্যাছ,’ যা ধারণ করে তা-ই ধর্ম। কারো কারো মতে , ‘ চোদনালক্ষণোইর্থো ধর্ম্মঃ’ - লৌকিক ইষ্টভাল ও অনিষ্ট নিবৃত্তির উপায়কে ধর্ম বলে (~~জমিনি সূত্র,১/১/২)। ইংরেজিতে ধর্মকে বলে Religion । এ শব্দটি Religare থেকে উদ্ভুত। এর অর্থ, বন্ধন। অর্থাৎ একটা আইনের বন্ধনের মধ্যে জীবন যাপন কে Religion বলে। কান্ট এর মতে, Religion is morality. ফিত্তেুর অভিমত হলো, Religion is konwledge । Emile Durkheim (1858-1917) এর ভাষায়, পবিত্র বসও এবং করণীয়-অকরণীয় কাজের প্রতি বিশ্বাস ও কর্মের সমন্বিত রদপকে ধর্ম বলা হয়। (The Elimentary forms of Religious Life)
আরও সহজ করে এভাবে বলা যায়, ধর্ম মানবের জন্য স্রষ্টা প্রদত্ত আইন। মানুষকে জীবন চলার পথে কোনও না কোন প্রকার আইন মেনে চলতে হয়। আইন ছাড়া এ জগৎ এক মুহূর্তও চলতে পারে না। প্রতিটি দেশ একটি বিশেষ আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। জন্মলগ্ণ থেকে মানুষ যে ঐশী আইন দ্বারা নিয়মিএত, পরিচালিত তারই অপর নাম ধর্ম। ধর্মহীন মানুষ একটি অমানবিক জীব। সে যেমন নিজে বাঁচতে পারে না। তেমনই অপরকেও বাঁচতে দিতে পারে না। জ~~নক ইংরেজ দার্শনিক এ অবসহাটাকে এ ভাবে বর্ণনা করেছেন, A man without religion is like a horse without bridle.
এক কথায় মানব জীবনে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, নৈতিকতা - অনৈতিকতা ইত্যাদি বিচার-বিবেচনার এক সাবলীল ও সুষ্ঠু নির্ণায়ক নীতি বা বন্ধন হলো ধর্ম।
পৃথিবী সৃষ্টির শুরত থেকে যুগে যুগে যত ধর্ম এসেছে, যত ধর্মগুরত এসেছেন সবাই অন্যায়ের বিপক্ষে ন্যায়ের, নীতির ও মানবতার জয়গান গেয়েছেন। সততা, সাধুতা, সেবা, সংযম, সৌজন্য, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, সদাচার, দয়া, ক্ষমা, প্রেম, পরোপকার, পরমতসহিষ·ুতা, বিনয়, বদান্য ইত্যাদি সব-ধর্মেরই সার কথা। সব ধর্মই তার প্রতিটি অনুসারীকে শৈশব-কৈশোর থেকে সৎপথে চলার, সুন্দরভাবে বাঁচার, সরলপথ অনুসরণ করার তাগিদ দিয়েছে।
সুতরাং, আশৈশব স্বধর্মের বিশুদ্ধ চর্চা ও যথাযথ অনুশীলন ব্যত্তিুর অপরাধস্পৃহা অবদমন সহ আত্মশুদ্ধির জন্য সহায়ক।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেও বলেছেন-
ধর্ম আমাদের অনেকের পক্ষেই সামাজিকতার একটা অঙ্গমাত্র। এমন-কি সমাজে এমন লোক দেখিয়াছি যাঁহারা যথার্থ ধর্মনিষ্ঠাকে চিত্তের দুর্বলতা বলিয়া অমতরের সহিত অবজ্ঞা করিয়া থাকেন। এইরদপে ধর্মকে যদি আমাদের জীবনের এক কোণে সরাইয়া রাখি অথচ এই অবসহায় ছেলেমেয়েদের জন্য ধর্মশিক্ষা কী করিয়া অল্পমাত্রায় ভদ্রতা-রক্ষার পরিমাণে বরাদ্দ করা যাইতে পারে সে কথা চিমতা করিয়া উদ্বিগ্ণ হইয়া উঠি, তবে সেই উদ্বেগ অত্যমত সহজে কী উপায়ে নিবারণ করা যাইতে পারে তাহা বলা অত্যমত কঠিন। তবু বর্তমান অবসহাকে স্বীকার করিয়া লইয়া ব্যবসহা চিমতা করিতে হইবে। অতএব, এ সম্বন্ধে আমাদের আলোচনা করিয়া দেখা কর্তব্য তাহাতে সন্দেহ নাই। (ধর্ম শিক্ষা, শিক্ষা, বিশ্বভারতী, আশ্বিন, ১৩৯৭)।
এখানে আমরা পবিত্র ইসলামসহ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ধর্মে তরতণদের প্রতি অনুসরণীয় ধর্মীয় নৈতিক অনুশাসনের একটি রেখাচিত্র তুলে ধরছি।
১৩.১. ইসলাম ধর্মঃ
অাঁধার ঘনিয়ে এলে আলোর প্রয়োজন তীব্রতর হয়। মানুষের সমাজ জীবন যখন পাপাচার, অন্যায়, অত্যাচার ও খুন-খারাবির অন্ধ আত্রুমণে বিধ্বসত হয়েছিল ঠিক তখনই মানবতার মুত্তিুর দিশা নিয়ে আসে আল-ইসলাম।
বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মানুষ মুসলমান। এ প্রজাতমেএর রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম। আল কুরআন ও সুন্নাহর অনুশাসন হলো ইসলামী সংস্কৃতির প্রধান উপজীব্য।
সমতানদেরকে সঠিক প্রতিপালনের ওপর বিশেষ গুরতত্বারোপ করেছে ইসলাম । এ প্রসঙ্গে ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে - “প্রথম সাত বছর তাকে (সমতানকে) মুত্তু রাখ, দ্বিতীয় সাত বছর তাকে শিষ্টাচার (আদব) শিক্ষা দাও এবং তৃতীয় সাত বছর তার সাথে গভীর সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোল।” (ক্বুদূরী)
ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রাঃ) বলেছেনঃ
“পিতার ওপর পুত্রের যেরদপ অধিকার আছে পুত্রের ওপরও পিতার তদ্রদপ অধিকার আছে। পিতার অধিকার হলো পুত্র শুধুমাত্র আল্লাহ্কে অমান্য করার আদেশ ব্যতীত তাঁর সকল আদেশ মেনে চলবে এবং পুত্রের অধিকার হলো পিতা তার একটি সুন্দর নাম রাখবে, তাকে উত্তম প্রশিক্ষণ দেবে এবং কুরআন শিক্ষা দেবে।” (‘নাহজ্ আল বালাঘা’)
আমীরতল মোমেনিন তাঁর পুত্র হাসানকে বলেছেনঃ
হে আমার পুত্র, আমার কাছ থেকে চারটি জিনিস এবং আরো চারটি জিনিস লিখে নাও এগুলো চর্চা করলে তোমার কোন ক্ষতি হবে না। বিষয়গুলো হলো, বুদ্ধিমত্তা সর্বোত্তম সম্পদ, মূর্খতা সব চাইতে বড় দুঃসহতা, আত্মগর্ব সব চাইতে বড় বর্বরতা এবং ~~নতিক চরিত্র সর্বোত্তম অবদান। হে অামার পুত্র, মূর্খ লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করো না, কারণ সে তোমার উপকার করতে গিয়ে অপকার করে ফেলবে। কৃপণের সাথে বন্ধুত্ব করো না, কারণ যখন তুমি তার প্রয়োজন অনুভব করবে তখন সে দৌড়ে পালাবে। পাপী লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করো না, কারণ সে তোমাকে স্বল্প মূল্যে বিত্রিু করে দেবে। মিথ্যাবাদীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করো না, কারণ সে তোমাকে দূরের জিনিস কাছের এবং কাছের জিনিস দূরের বলবে। (‘নাহজ্ আল বালাঘা’)
ইসলাম অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই তাকে অংকুরে বিনষ্ট করতে চায়। এ কারণে ইসলামী শরিয়ত মানুষের নৈতিক সুরক্ষার্থে নিমণলিখিত কর্মসূচী, বিধান ও মূলনীতির মাধ্যমে ব্যত্তিুর চারদিকে সুদৃঢ় ও দুর্ভেদ্য প্রাচীর তুলে দেয়, যার বিশুদ্ধ চর্চা তাকে পাপের দিকে আকর্ষণ ও পদঙ্খলন থেকে নিয়ত রক্ষা করতে সহায়ক হয়।
ক. ইসলাম আশৈশব ব্যত্তিুর সংশোধন, ব্যত্তিুর মন পবিত্র ও পরিশুদ্ধকরণ এবং তাকে সুন্দর ও নির্মলভাবে লালন ও প্রশিক্ষণ দিয়ে উন্নত মহান চরিত্রে বিভূষিত করে তোলে। তার হদদয়ে ঈমানের বীজ বপন করে তাকে কল্যাণমুখী বানিয়ে তার মধ্যে অপরাধ ও বিপর্যয় বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করে দিতে চায়। আর প্রকৃত সঠিক ঈমান ও একনিষ্ঠ দৃঢ় প্রত্যয়-ই হচ্ছে সুদৃঢ় দুর্ভেদ্য দুর্গ এবং নির্লজ্জতা ও নিষিদ্ধ কাজ অবলম্বনের বিরতদ্ধে এক শত্তু প্রতিরোধ। কেননা সে নিঃসন্দেহে জানে ও বিশ্বাস করে যে, সে যা কিছুই করছে, আল্লাহপাক সে বিষয়ে পুরোপুরি অবহিত আছেন।
খ. ইসলাম নিষিদ্ধ কাজ করা থেকে দূরে রাখার জন্য খারাপ পরিণতির ভয় প্রদর্শন করে। সে খারাপ পরিণতি মানুষের সম্মুখে ভয়াবহরদপে চিত্রিত করে পেশ করা হয়েছে। যা স্বভাবতই মানব মনে এমন তীব্র ভীতির সঞ্চার করে যে, সে কিছুতেই সেই খারাপ কাজের দিকে পা বাড়াতে সাহস করে না।
গ. ইসলাম শরীয়তী বিধি বিধানের মাধ্যমে সকল ভাল কাজে পারস্পরিক সহযোগিতা, পারস্পরিক কল্যাণ কামনা, সৎ কাজে আদেশ- অসৎ কাজে নিষেধ, ধৈর্য অবলম্বনের উপদেশ এবং সকল পাপ, সীমালংঘনমুলক কাজ, অন্যায়, জুলুম ও বিপর্যয় প্রতিরোধের নির্দেশ দেয়।
O. ইসলাম যখন কোন কাজকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, তখন সেই কাজের সুযোগ করে দেয় বা অনিবার্য করে তোলে যেসব পথ, তা- ও সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেয়, সেই উপায়, পথ ও পমহাকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। যেসব প্রাথমিক অবসহা ও কর্ম কান্ড সেসব নিষিদ্ধ কাজকে সহজ করে দেয়, সেগুলোও সাথে সাথে নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
ঙ. ইসলাম যখন কোন জিনিস বা কাজ নিষিদ্ধ করে, তখন তদসহলে একটা বৈধ- কাজের পমহাও বাতলে দেয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষ নিষিদ্ধ কাজটি পরিহার করে বৈধ কাজটির দ্বারা তার প্রয়োজন পূরণ করতক।
চ. মানুষের মন পবিত্রকরণ, আত্মা বিশুদ্ধকরণ এবং তাদেরকে পাপ ও অভিশপ্ত কাজে জড়িত হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য ইসলামে অবশ্য পালনীয় দুটি ইবাদাত সর্বজন পরিচিত, মৌলিক এবং ব্যাপক প্রভাবশালী ইসলামী জীবনে সর্বাধিক গুরতত্বের অধিকারী। এ দুটি ইবাদাত হলো - সালাত ও সিয়াম।
মূলত এ দুটি ইবাদাতই বিশেষ প্রশিক্ষণ স্বরদপ। যার চূড়ামত ও সর্বোচ্চ লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে সকল প্রকার হীনতা-নীচতা থেকে মুত্তু করে কেবল এক আল্লাহর অনুগত বান্দাহ্ বানানো।
সালাতঃ সালাত মহান আল্লাহর সাথে তাঁর বান্দাহ্র এবং বান্দাহ্র সাথে তার মাবুদের প্রেমময়, গভীর ও পবিত্র সর্ম্পক সহাপনের মাধ্যমে মানব হদদয়ে আল্লাহর ভয় এবং আল্লাহ্র কাছে সম্পূর্ণরদপে আত্মসমর্পণের ভাবধারার সৃষ্টি করে।
পবিত্র কোরআনের সূরা ত্বোয়াহা-র ১৩২ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, “আপনি (হে রাসূল!) আপনার পরিবারের লোকদের নামাজের আদেশ দিন”।
আবু দাউদ শরীফে নামায অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, “ তোমাদের সমতানকে সাত বছর বয়সে নামায পড়ার নির্দেশ দাও। ”
সালাতে মানবদেহের প্রায় সবকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়োজিত হয়। দিন-রাত্রির চব্বিশ ঘন্টায় পাঁচবারের সালাত অাল্লাহ তা’আলা বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে সব মানুষের ওপর ফরয করেছেন। এরই মাধ্যমে বান্দাহ্ ও আল্লাহর মাঝে সহায়ী সর্ম্পক সহাপিত হয়। দুনিয়ার কোন মোহ সে সম্পর্ককে দুর্বল বা ছিন্ন করতে পারে না। বান্দাহ্ তখন ভুলে না যে, তার ওপর আল্লাহর হক সর্বাগ্রে এবং তাঁর ফরমানসমূহ কাজে পরিণত করেই মহামহিমের সেই অধিকার যথাযথভাবে আদায় করা সম্ভব। মোদ্দা কথা, সারাদিনের কোন মুহূর্তেও মহান আল্লাহ্কে ভুলে না যাওয়াই পাঁচ ওয়াত্তু সালাতের বড় সুফল ও মহামূল্যবান প্রাপ্তি। এরদপ অবসহায় কোন অপরাধজনক কাজে অংশগ্রহণ করা তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ কারণেই সালাত সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলার ঘোষণা হচ্ছেঃ
“নিশ্চয়ই সালাত মানুষকে সর্বপ্রকারের নির্লজ্জ ও ঘৃণ্য কাজ-কর্ম থেকে বিরত রাখে”। -সূরা আল আনকাবুত ঃ ৪৫।
সিয়ামঃ রমযানের মাসব্যাপী সিয়ামের প্রশিক্ষণমূলক অবদান অত্যমত সূক্ষ্ণ, ব্যাপক ও গভীর। সিয়াম মানব মনের যাবতীয় কুপ্রবৃত্তির ওপর শত্তু লাগাম লাগিয়ে দেয় এবং রোযাদারকে যাবতীয় অপকর্ম থেকে বিরত রাখে।
অপরাধ যে ধরনের ও যে প্রকৃতিরই হোক, তা হদদয়ের কামনা, বাসনা, লোভ ও লালসা থেকে উৎসারিত হয়। আর এর উৎসে তিনটি প্রবল শত্তিু নিহিত থাকে। প্রথম, লোভ-লালসা; দ্বিতীয়, যৌন স্পৃহা ও কু-প্রবৃত্তি এবং তৃতীয় হচ্ছে, অহমিকা-দাম্ভিকতা বোধ। সিয়ামের প্রবল প্রশিক্ষণমূলক প্রভাব রয়েছে এ তিনটি শত্তিুর ওপর।

এভাবে আল ইসলামের উপর্যুত্তু মূলনীতি ও বিধানাবলীর আলোকে মানব জীবনকে শৈশব-কৈশোর হতে সকল প্রকার অনাচার, পাপ ও পংকিলতা থেকে মুত্তু করা গেলে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই অপরাধজনক কাজ থেকে দূরে সরে থাকবে। ইসলামের এ বিধানসমূহ প্রতিটি মানব সমতানকে সেই লক্ষ্যে ত্রুমশ প্রসতুত করে তোলে।
ইসলামে আখলাক্ব, শিষ্টাচার, বিনয়, নম্রতা ও মানবতাবোধ সম্পর্কে আরও অনেক কথা বলা যেতে পারে। প্রবন্ধের কলেবর বৃদ্ধির কারণে এখানে সেসব উল্লেখ করা হলো না।
১৩|২| হিন্দু ধর্মঃ
হিন্দু ধর্মের প্রাথমিক যুগের দিকে তাকালে দেখা যায়, বিদ্যা শিক্ষার মূল ছিল বেদ। বেদ মানেই বিদ্যা। তাদের প্রাচীন ফিলসফির মূল প্রতপাদ্য বিষয় ছিল বেদ। অর্থাৎ শিক্ষার কেন্দ্র ছিল এই বেদ।
শ্রীমদভগবদ গীতার স্কন্ধ ৭, অধ্যায় ৬ এ বলা হয়েছেঃ
শ্লোক-১ ঃ প্রহ্লাদ মহারাজ বললেন, প্রাজ্ঞ ব্যত্তিু মনুষ্যজন্ম লাভ করে জীবনের শুরত থেকেই, অর্থাৎ, বাল্যকাল থেকেই, অন্য সমসত প্রয়াস ত্যাগ করে ভাগবত-ধর্ম অনুষ্ঠান করবেন। মনুষ্যজন্ম দুর্লভ, এবং অন্যান্য শরীরের মতো অনিত্য হলেও তা অত্যমত অর্থপূর্ণ, কারণ মনুষ্য-জীবনে ভগবানের সেবা সম্পাদন করা সম্ভব। নিষ্ঠাপূর্বক কিঞ্চিৎ মাত্র ভগবদ্ভত্তিুর অনুষ্ঠান করলেও মানুষ পূর্ণসিদ্ধি লাভ করতে পারে।
শ্লোক-২৪ঃ অতএব ~~দত্য কুলোদ্ভূত আমার বালক বন্ধুগণ, তোমরা সকলে এমনভাবে আচরণ কর যাতে অধোক্ষজ ভগবান তোমাদের প্রতি প্রসন্ন হন। তোমাদের আসুরিক প্রবৃত্তি পরিত্যাগ করে শত্রততা এবং ~~দ্বতভাব রহিত হয়ে কর্ম কর। ভগবদ্ভত্তিুর জ্ঞান প্রদান করে সমসত জীবের প্রতি তোমাদের করতণা প্রদর্শন কর, এবং এইভাবে তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী হও।
১৩|৩| খ্রিষ্ট ধর্মঃ
খ্রিস্ট সম্প্রদায়ের অতীত ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, তাঁদের শিক্ষা ছিল গির্জাকে কেন্দ্র করা। প্রতিটি গির্জা একটি কলেজ বা শিক্ষালয় ছিল। সেখানে যা পড়ানো হতো তার মূল ভিত্তি ছিল বাইবেল।
পবিত্র বাইবেলের পুরাতন নিয়মের ‘ হিতোপদেশ’ অধ্যায়ে প্রভু যিশু বলছেনঃ
অতএব, তুমি ধার্মিকতা ও বিচার বুঝিবে, ন্যায় ও সমসত উত্তম পথ বুঝিবে।
কেননা প্রজ্ঞা তোমার হদদয়ে প্রবেশ করিবে, জ্ঞান তোমার প্রাণের তুষ্টি জন্মাইবে,
পরিণামদর্শিতা তোমার প্রহরী হইবে, বুদ্ধি তোমাকে রক্ষা করিবে,
যেন তোমাকে উদ্ধার করে দুষ্টের পথ হইতে, সেই সকল লোক হইতে, যাহারা কুটিল বাক্য বলে,
যাহারা সরলতার পথ ত্যাগ করে, অন্ধকার মার্গে চলিবার নিমিত্ত,
যাহারা কুত্রিুয়া সাধনে আনন্দিত হয়, দুষ্টতার কুটিলতায় উল্লসিত হয়,
যাহারা বত্রু পথের পথিক, আপন আপন আচরণে বিপথগামী।
সে তোমাকে উদ্ধার করিবে পরকীয়া সএী হইতে, সেই চাটুবাদিনী বিজাতীয়া হইতে। (২ঃ ৯-১৪)
পবিত্র বাইবেলের নূতন নিয়মের ‘ ইফিষীয়’ অধ্যায়ে প্রভু যিশু আরও বলেছেনঃ
সমতানেরা, তোমরা প্রভুতে পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও, কেননা তাহা ন্যায্য।
“তোমার পিতাকে ও তোমার মাতাকে সমাদর করিও”, -- এ ত প্রতিজ্ঞাসহযুত্তু
প্রথম আজ্ঞা - “যেন তোমার মঙ্গল হয়, এবং তুমি দেশে দীর্ঘায়ু হও।”
আর পিতারা, তোমরা আপন আপন সমতানদিগকে ত্রুুদ্ধ করিও না, বরং
প্রভুর শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল। (৬ঃ১-৪)
১৩|৪| বৌদ্ধ ধর্মঃ
বৌদ্ধদের ইতিহাসে দেখা যায়, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শিক্ষা দেয়া হতো সেই শিক্ষা ব্যবসহার মূলে ছিল চরিত্র বা বৌদ্ধ ধর্মের নৈতিকতা। এর সাথে তাঁরা ভারতে প্রচলিত অন্যান্য বিদ্যাকেও শামিল করে নিয়েছিলেন।
১৩|৫| বাহাই ধর্মঃ
অনুচ্ছেদ ১০ঃ আমরা তোমাদের বয়ঃপ্রাপ্তির শুরত হইতেই প্রার্থনা ও উপবাস ব্রত পালনের জন্য আদেশ দিয়াছি। ইহা তোমাদের পরম প্রভু এবং তোমাদের পূর্বপুরতষদের পরম প্রভু, ঈশ্বর কর্তৃক আদিষ্ট হইয়াছে।
অনুচ্ছেদ ৪৮ঃ প্রত্যেক পিতার প্রতি তাহার পুত্র ও কন্যাকে পঠন ও লিখনের কলা ও পবিত্র ফলকপিলিতে যাহা কিছু লিপিবদ্ধ করা হইয়াছে তাহাতে প্রশিক্ষণ দান করিতে নির্দেশ প্রদান করা হইয়াছে। তাহার প্রতি যাহা নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে, সে যদি উহা পালন না করে, যদি ঐ ব্যত্তিু ধনী হয়, তখন তত্তবাবধায়কগণকে তাহার নিকট হইতে তাহা লইতে হইবে, যাহা তাহাদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজন এবং যদি ধনী না তাহা হইলে বিষয়টি বিচারালয়ের ওপর বর্তাইবে। সত্যসত্যই, আমরা ইহাকে দরিদ্র ও নিঃস্বদের জন্য একটি আশ্রয়সহল করিয়াছি। যে তাহার নিজের পুত্রকে অথবা অন্য কাহারো পুত্রকে শিক্ষা দেয় সে যেনো আমারই একজন পুত্রকে শিক্ষিত করিয়া গড়িয়া তুলিতেছে। তাহার উপর আমার জ্যোতি, আমার প্রেমপূর্ণ দয়ার্দ্রতা, আমার করতণা রহিল, যাহা বিশ্বকে পরিবেষ্টন করিয়া রাখিয়াছে।
অনুচ্ছেদ ১৫০ঃ তোমাদের শিশু দিগকে মহিমা ও শত্তিুর স্বর্গ হইতে অবতীর্ণ বাণী সমূহ শিক্ষা দিবে, এই জন্য যাহাতে তাহারা মাশরিকুল আযকার সমূহের মধ্যসিহত আংশিক ঘেরা সহান সমূহে উপবিষ্ট হইয়া মধুরতম সুরে পরম করতণাময়ের ফলকলিপিগুলি আবৃত্তি করিতে পারে।
১৪| সুপারিশমালাঃ
১. সমন্বিত ভূমিকা গ্রহণঃ ইভ টিজিং প্রতিরোধে মাতা-পিতা, অভিভাবক, শিক্ষক, রাজনীতিক সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। পরিবার, শিক্ষালয়, সমাজ, সরকার ও রাষ্ট্র সবাইকে অপরাধ প্রতিরোধে সংবেদনশীল ও সহানুভূতিশীল হতে হবে। সুসহ তরতণ - মানস ও মনন গঠনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্ব স্ব সহান থেকে সমন্বিত প্রয়াস চালাতে হবে। মোদ্দা কথা, এটিকে একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে দেখতে হবে।
২. সুষ্ঠু বিনোদনঃ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশসত খেলার মাঠ থাকা উচিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে বার্ষিক ত্রুীড়া প্রতিযোগিতা, বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, বার্ষিক মিলাদ মাহফিল, বার্ষিক নাটক, বিজ্ঞান মেলা, বই পড়া প্রতিযোগিতা, বিতর্ক উৎসব, দেয়ালিকা প্রকাশ, বিভিন্ন দিবস উদযাপন ইত্যাদি নিয়মিত হওয়া প্রয়োজন। স্কুলগুলোতে ছাত্রদেরকে ‘বয় স্কাউট’ ও ছাত্রীদেরকে ‘গার্ল গাইড’ - এ যোগদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। জাতীয় ~~দনিক পত্রিকা গুলোতে তরতণদের জন্য সাপ্তাহিক বা মাসিক বিভাগ প্রকাশ এবং রেডিও ও টিভি চ্যানেল গুলোতে নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠান করা প্রয়োজন।
৩. ধর্মচর্চাঃ ধর্মীয় নৈতিকতা তরতণ মনে পোত্তুভাবে প্রোথিত হতে হবে। এ লক্ষ্যে আ~~শশব ধর্মের বিশুদ্ধ চর্চা ও যথাযথ অনুশীলন করতে হবে। মসজিদের ইমাম, মন্দিরের ঠাকুর, গির্জার ফাদার, বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ এ ক্ষেত্রে গুরতত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
৪. আইনের যথাযথ প্রয়োগঃ ইভ-টিজিং প্রতিরোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আইন সবার জন্য এবং সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রয়োগ করা জরতরী। পাশাপাশি আইনের অপপ্রয়োগ যাতে না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৫. অভিভাকগণের জবাবদিহিতাঃ ১৮ বছরের কম বয়সী অপরাধীদের ক্ষেত্রে তাঁদের অভিভাবকগণকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে দেশে বিদ্যমান আইনের আলোকে ক্ষেত্রবিশেষে তাঁদেরকে আইন-আদালতের আওতায় আনার ব্যবসহা ও করতে হবে।
৬. সুশিক্ষক নিয়োগদানঃ শিক্ষকের দায়িত্ব হলো শিক্ষার্থীর মানসিক শত্তিু-সামর্থ্য- চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা কার্যত্রুম পরিচালনা করা। শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক দুর্বলতার কারণ সমূহ অবগত হয়ে শিক্ষক এর প্রতিকারের ব্যবসহা করবেন এবং শিক্ষার্থীর অধীত বিষয় সমূহে অর্জিত জ্ঞানের পরিমাপ করবেন। শিক্ষকদের আদর-যতণ, মায়া-মমতা ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মনে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে তুলতে হবে। এজন্য প্রয়োজন বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও অভিজ্ঞ শিক্ষক/শিক্ষিকা নিয়োগদান এবং বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ সহ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের গুণগত মান নিশ্চিত করা এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে কিশোর- তরতণদের মানসিকতা অনুধাবন করার মত বিষয় অমতর্ভুত্তু করা।
৭. নিরাপত্তা সেল গঠনঃ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে নিরাপত্তা সেল গঠন করা যেতে পারে। মেয়েদের স্কুল-কলেজের সামনে সাদা পোশাকধারী বা টহল পুলিশের ব্যবসহা করতে হবে।
৮. ইন্টারনেট ব্যবহার ও মোবাইল কোম্পানীসমূহের ওপর নিয়মএণঃ ইন্টারনেট ব্যবহার, সাইবার ক্যাফে ব্যবসা পরিচালনা এবং মোবাইল কোম্পানীসমূহের ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়মএণ থাকতে হবে। এ লক্ষ্যে সুস্পষ্ট নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করা উচিত।
৯. কাউন্সেলিংঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপযুত্তু শিক্ষক-শিক্ষিকা অথবা ক্ষেত্রবিশেষে মনোবিজ্ঞানী বা মনোচিকিৎসকগণের মাধ্যমে কাউন্সেলিং সার্ভিস প্রদান করা যেতে পারে। এতে তরতণ-তরতণীদেরকে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে সমস্যা মোকাবিলার চেষ্টা করা যেতে পারে।
১০. প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠাঃ তরতণ অপরাধীদের উন্নয়নের জন্য সরকারী ও বেসরকারী উভয় উদ্যোগে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা যায়। ইনস্টিটিউটগুলো হবে নিতামতই তরতণ-বান্ধব। সেখানে তাদের আর্থিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসূচী ও প্রশিক্ষণের ব্যবসহা থাকতে হবে।
১১. প্রতিরোধ কমিটি গঠনঃ ইভ-টিজিং এর বিরতদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এজন্য অভিভাবক, জনপ্রতিনিধি, বিচারক, আইনজীবী, সাংবাদিক, সরকারি প্রতিনিধি নিয়ে প্রতি মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা প্রয়োজন।
১৫| উপসংহারঃ
অপার সম্ভাবনায় ভাস্বর আমাদের তরতণ জনগোষ্ঠী। মেধা ও মননে তারা পশ্চাদপদ নন। দেশের ভেতরে এমনকি দেশের বাইরেও তারা তাদের মহিমময় শত্তিু, বুদ্ধি ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। দেশ ও জাতির ত্রুামিতকালে তারা জীবন উৎসর্গ করতেও দ্বিধা করেননি।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের এ গৌরবদীপ্ত তরতণ সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আজ নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার। নানা অপরাধে তারা নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলছেন। ইভ-টিজিং হতে শুরত করে নারীর সম্ভ্রমহানির মতো নানা অসৎ কাজে সম্পৃত্তুতা তাদের একাংশের ভালে ত্রুমশ কলঙ্কের তিলক এঁকে দিচ্ছে। মানবিক মূল্যবোধের ঘাটতির কারণেই মূলত এটি হচ্ছে। অভিশাপের এ ভয়াল থাবা থেকে তাদেরকে মুত্তু করতে হবে। এ জন্যে উপরের সুপারিশমালার আলোকে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাসতবায়ন প্রয়োজন। পাপ-পঙ্কিলতার কালো আঁধার থেকে মুত্তু হয়ে একরাশ উন্নত, মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধে তারা উজ্জীবিত হয়ে উঠুন- এটিই সমগ্র জাতির ঐকামিতক প্রত্যাশা। 

গ্রমহপঞ্জি ঃ
১. ডঃ পঞ্চানন ঘোষাল, ‘অপরাধ-তত্তব’, ডক্টর মোহাম্মদ সাদেক, ‘অপরাধ ও সংশোধন’,
২. বি.এল. দাস, ‘অপরাধ বিজ্ঞান’, কামরতল বুক হাউস, মে, ২০১০,
৩. ডক্টর মোহাম্মদ সাদেক, ‘অপরাধ সংশোধন’,
৪. গাজী শামছুর রহমান, ‘অপরাধ বিজ্ঞান’,
৫. ডা. মোহিত কামাল, মানব মনের গতিপ্রকৃতি, বিদ্যাপ্রকাশ প্রকাশনী, ২০০১।
৬. ডঃ সুকুমার বসু, ‘অপরাধ ও অপরাধী’,
৭. মওলানা আঃ রহীম, ‘অপরাধ প্রতিরোধে ইসলাম’,
৮. আহমদুল্যাহ মিয়া ও এ এস এম আতীকুর রহমান। কিশোর অপরাধ সংশোধনী প্রতিষ্ঠান থেকে মুত্তিুপ্রাপ্ত কিশোরদের বর্তমান অবসহান উপর জরিপ। ঢাকাঃ সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনষ্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৮৮। পৃঃ ৬
৯. ডা. মোহিত কামাল, ‘মানবমনের উদ্বেগ ও বিষন্নতা’, বিদ্যাপ্রকাশ প্রকাশনী, ২০০৫।
১০. রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর, ‘শিক্ষা,’ বিশ্বভারতী-গ্রমহনবিভাগ, কলকাতা, আশ্বিন, ১৩৯৭।
১১. মোহাঃ আবদুস সালাম, ‘অপরাধ, শাসিত, সংশোধনীমূলক প্রবেশন এবং মুত্তিুপ্রাপ্ত কয়েদীর সংশোধনমূলক কার্যত্রুম’, আলীগড় লাইব্রেরী, ঢাকা, আগষ্ট, ১৯৮৯।
১২. fÐc£f L¤j¡l l¡u, ‘hÉhq¡¢lL e£¢a¢hcÉ¡’, h¡wm¡ HL¡­Xj£, Y¡L¡z
১৩. মোঃ সিদ্দিকুর রহমান ও মোঃ শাওকাত ফারতক, ‘শিক্ষা ব্যবসহা’, আহমদ পাবলিশিং হাউস, মে,১৯৯৮।
১৪. ভত্তিু প্রসাদ মল্লিক, ‘অপরাধ জগতের ভাষা ও শব্দকোষ’, দেজ পাবলিশিং, কলকাতা, ১৯৯৩।
১৫. ডা. মোহিত কামাল, ‘মনোসমস্যা মনোবিশ্লেষণ’, অবসর প্রকাশনী, ২০০৫।
১৬. আলী ইবনে আবি তালিব, ‘নাহজ্ আল বালাঘা’ র্যামন পাবলিশার্স, ঢাকা, ২০০০।
১৭. ডা. মোহিত কামাল, ‘টিনএজ মন’, তাম্রলিপি প্রকাশনী, ২০১০।
১৮. Morales A., Yvonne F. And P.R. Munford. The Juvenile Justice System and Minorities. Social Work, Boston: Allyn and Bacon INC, 1986 Pp.391-3
১৯. Tappa Paul, Juvenile Deliquency. New York: Mc Graw Hill Book Company, INC. 1949.p-17.
২০. Ahmed, Salahuddin. Studies in Juvenile Delinquency and Crime in East Pakistan. Dhaka: College of Social Welfare and Research Center, 1966. P. 19
২১. All Port G.W., 1961: “Pattern of Growth in Personality”. Holt, N.Y.
২২. Havinghurst. R.J., 1953: “Human Development of Education, Longmans, N.Y.
২৩. Ginsberg, H. & Opper S. 1969: “Piaget’s Theory of Intellectual Development”, Prentice Hall, N.D.
২৪. Walters, A. Bandura, 1963: “Social Learning and Personality Development”, Holt, Rinehart & Winston, N.Y.
২৫. Boultwood and S.J. Curtis: “A Short History of Educational Ideas”, 5th edition, University Tutorial Press.
২৬. Schuster, Clara, Shaw & Ashburn, Shirley, Smith: “The Process of Human Development, A holistic Approach”, Little Brown & Compay, U.S.A.
২৭. Cameron, Margaret and Yngve Hofvander: “Manual on Feeding Infants and Young Children”, Oxford University Press.
২৮. Papalia, Daniel, E. & Olds, Sally Wendkos: “Human Development”, McGraw Hill Book Co.
২৯. Havinghurst, R.J.: “Development Tasks and Education”, (3rd ed.) N. Y., 1972.
৩০. Smart, M.S. & Smart, L.S.: “Families Developing Relationships”, (2nd ed.) N. Y., Macmillan, 1972.
৩১. W. Paul Tappan, “Crime, Justice & Correction.”