সূচিপত্র

ভূমিকা
প্রথম অধ্যায় : ইসলামে পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব
পরিবারের সংজ্ঞা
ইসলামে পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব
বয়ের প্রতি উৎসাহিতকরণ
জাহিলী যুগে বিয়ের ধরন
বিয়ের হুকুম বা বিধান
বিয়ের উদ্দেশ্য ও উপকারিতা
স্বামী-স্ত্রীর অধিকার ও দায়িত্ব-কর্তব্য
পিতা-মাতার হক
সন্তানের হক
দ্বিতীয় অধ্যায় : ইসলামে পরিবার গঠনের স্তর
প্রথম স্তর
দ্বিতীয় স্তর-স্ত্রী নির্বাচন
তৃতীয় স্তর-প্রস্তাব প্রদান ও পাত্রী দেখা
নারীর কোন কোন অঙ্গ দেখা যাবে
চতুর্থ স্তর- মোহর
মোহর ওয়াজিব করার তাৎপর্য
মোহরের পরিমাণ
মোহরের নিম্নসীমা
পঞ্চম স্তর- ইজাব ও কবুল
তৃতীয় অধ্যায় : পরিবার সংরক্ষণে ইসলামের গৃহীত পদক্ষেপ
দৃষ্টি সংযতকরণ
পর্দার বিধান
ব্যভিচার নিষিদ্ধকরণ
নারীর জন্য ক্ষতিকর বিয়ে নিষিদ্ধকরণ-মুত‘আ
শিগার
হিল্লা বিয়ে
তালাকের বিধান
বহুবিবাহ
স্বামী-স্ত্রীর কর্মপরিধি নির্ধারণ
চতুর্থ অধ্যায় : পাশ্চাত্যের ভঙ্গুর পারিবারিক ব্যবস্থা
পঞ্চম অধ্যায় : প্রচলিত যৌতুক প্রথা ও সমাজে তার বিরূপ প্রভাব
ষষ্ঠ অধ্যায় : পারিবারিক বিপর্যয় রোধে আমাদের করণীয়
উপসংহার

ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবার ও পারিবারিক জীবন
ভূমিকা :
পৃথিবীকে আবাদ করার জন্য আল্লাহ রাববুল আলামীন প্রথমে আদম (আ)-কে সৃষ্টি করেন। অতঃপর তাঁর পাজর থেকে জুড়ি হিসেবে হাওয়া (আ)-কে সৃষ্টি করেন। তাঁদের উভয়ের দাম্পত্য জীবনের মাধ্যমে পৃথিবীতে পরিবারের সূচনা হয়। মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيراً وََّنِسَاءً ‘‘হে মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতেই সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তা হতে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তাদের দু’জন হতে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন।’’ (সূরা আন নিসা, আয়াত ১)। يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ وَّأُنثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوْباً وَّقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوْا ‘‘হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ এবং নারী থেকে। তারপর তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গ্রোত্রে যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হতে পার..।’’ (সূরা আল হুজুরাত, আয়াত ১৩)। আর এভাবেই মানুষের সামাজিক জীবনের যাত্রা শুরু হয়। মানুষ সকল যুগ ও কালে কোন না কোনভাবে সামাজিক জীবন যাপন করেছে। প্রাচীন কাল থেকেই পরিবার সামাজিক জীবনের প্রথম ক্ষেত্র বা স্তর হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। পরিবার হচ্ছে পৃথিবীর আদি সংস্থা। Family and Marriage গ্রন্থে বলা হয়েছে,
One of the oldest among human institutions, the family, is also the most resilient.
মানব জীবনের প্রথম ভিত্তি হচ্ছে পরিবার। ব্যক্তি পরিবারের একটা অংশ। আর পরিবার সমাজের অংশ ও ভিত্তিপ্রস্তর। সমাজকে বাদ দিয়ে যেমন রাষ্ট্রের কল্পনা করা যায় না, তেমনি পরিবার ছাড়া সমাজও অকল্পনীয়। পরিবার ঠিক হলে ব্যক্তি ঠিক হয়ে যায়। আর ব্যক্তি ঠিক হয়ে গেলে পরিবার ও সমাজ উভয়ই ঠিক হয়ে যায়। সুখে-সমৃদ্ধিতে গড়ে ওঠে সর্বাঙ্গীন সুন্দর এক সমাজ কাঠামো। এজন্য ইসলাম পারিবারিক জীবনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছে এবং কুরআন-সুন্নাহর বিধি-বিধানের একটা বৃহৎ অংশ জুড়ে রয়েছে পরিবার।
প্রথম অধ্যায় : ইসলামে পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব
পরিবারের সংজ্ঞা :
কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফে পরিবার বুঝাতে ‘আল’ (آل), ‘আহ্ল’ (أهل) ও ‘ইয়াল’ (عِياَل) শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। ‘আল-মু‘জামুল ওয়াসীত’ অভিধানে বলা হয়েছে, آل الرجل: أهله و عياله কোন ব্যক্তির ‘আল’ হচ্ছে তার পরিবার-পরিজন, الأهل: الأقارب والعشيرة. والزوجة অর্থাৎ الأهل হচ্ছে আত্মীয়-স্বজন ও স্ত্রী, العيل অর্থ হচ্ছে عيل الرجل: أهل بيته الذين يكفلهم. কোন ব্যক্তির ঘরের ঐ সকল অধিবাসী যাদের দায়-দায়িত্ব ঐ ব্যক্তি বহন করে। আরবীতে ‘আল-উসরাহ’ বলতেও পরিবার বুঝায়। ড. মাহমূদ আবদুর রহমান আব্দুল মুনঈম বলেন, الأسرة: عشيرة الرجل وأهل بيته- ‘‘ব্যক্তির পরিবার-পরিজন ও নিকটাত্মীয়দেরকে পরিবার বলে।’’
পরিবারের সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে ‘আল-ফিকহুল মানহাজী’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ويقصد بالأسرة اصطلاحا فى نظام الإسلام تلك الخلية التى تضم الآباء والأمهات، والأجداد والجدات، والبنات والأبناء، وأبناء الأبناء. ‘‘ইসলামের দৃষ্টিতে পারিভাষিক অর্থে পরিবার বলতে বুঝায় বাবা-মা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনীদের নিয়ে গঠিত জনসমষ্টিকে।’’
ইসলামে পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব
ইসলাম পরিবারকে সুশৃঙ্খল ও গতিশীল করার জন্য নানাবিধ বিধি-বিধান প্রবর্তন করেছে, যেগুলো পরিবারের প্রতি ইসলামের সীমাহীন গুরুত্বারোপের প্রমাণবাহী। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবীবের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাধ্যমে এসব বিধি-বিধান মানবজাতিকে জানিয়ে দিয়েছেন। উৎ. ঝযধয়ির উধুভ বলেন, The Family is the basic unit of Muslim society and God revealed to the Prophet rules and legislations which enhanced its solidarity and strengthened the bonds holdign it together to this day.
নিম্নে পারিবারিক জীবনের প্রতি ইসলামের গুরুত্বারোপের উল্লেখযোগ্য কিছু দিক আলোচিত হলো :
১. বিয়ের প্রতি উৎসাহিতকরণ :
পরিবারের মূল ভিত্তি হলো বিয়ে। বিয়ের মাধ্যমেই গড়ে ওঠে পরিবার। রচিত হয় সভ্যতার ভিত্তিভূমি। মাওলানা মুহাম্মাদ আলী বলেন, The family which is the real unit of the human race and the first cohesive force which makes civilization possible, owes its existence solely to marriage. If there is no marriage, then there can be no family, no ties of kinship, no force uniting the different elements of humanity and consequently, no civilization.
তাই তো ইসলাম পরিবার গঠনে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিয়ের নির্দেশ প্রদান করেছে। মহান আল্লাহ বলেন, وَإِنْ خِفْتُمْ أَلاَّ تُقْسِطُواْ فِي الْيَتَامَى فَانْكِحُواْ مَا طَابَ لَكُمْ مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَى وَثُلاَثَ وَرُبَاعَ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلاَّ تَعْدِلُواْ فَوَاحِدَةً ‘‘তোমরা যদি আশংকা কর যে, এতিম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিয়ে করবে নারীদের মধ্য থেকে যাকে তোমাদের ভাল লাগে, দুই, তিন অথবা চার; আর যদি আশংকা কর যে, সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনকে...’’ (সূরা আন নিসা, আয়াত ৩) وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِيْنَ أُوتُواْ الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ إِذَا آتَيْتُمُوْهُنَّ أُجُوْرَهُنَّ مُحْصِنِيْنَ غَيْرَ مُسَافِحِيْنَ وَلاَ مُتَّخِذِيْ أَخْدَانٍ ‘‘মুমিন সচ্চরিত্রা নারী ও তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের সচ্চরিত্রা নারী তোমাদের জন্য বৈধ করা হল যদি তোমরা তাদের মোহর প্রদান কর বিয়ের জন্য, প্রকাশ্য ব্যভিচার অথবা গোপন প্রণয়িনী গ্রহণের জন্য নয়।’’ (সূরা আল মায়িদা, আয়াত ৫)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘‘হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কারণ তা দৃষ্টিকে সংবরণকারী এবং লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণকারী। আর যে সক্ষম নয় তার সিয়াম পালন করা উচিত। কারণ তা তার জন্য কামস্পৃহা দমনকারী।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘বিয়ে করা আমার সুন্নাত। সুতরাং যে আমার সুন্নাত বর্জন করবে সে আমার দলভুক্ত নয়।’’
শুধু তাই নয়, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিয়েকে ঈমানের অর্ধেক গণ্য করে বলেন, إذا تزوج العبد؛ فقد استكمل نصف الدين، فليتق الله فى النصف الباقى. ‘‘যখন কোন বান্দা বিয়ে করে তখন সে অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ করে। কাজেই অবশিষ্ট অর্ধেকের ব্যাপারে সে আল্লাহকে ভয় করুক।’’
একদা তিন জনের একটি দল নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য তাঁর স্ত্রীদের বাড়িতে আসল। যখন তাদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হলো, তখন তারা ইবাদতের পরিমাণ কম মনে করল এবং বলল, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আমাদের তুলনা হতে পারে না। কারণ, তাঁর আগের ও পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। এমন সময় তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি সারাজীবন রাতভর সালাত (নামায) আদায় করতে থাকব। অপর একজন বলল, আমি সব সময় রোযা রাখব এবং কখনো বাদ দিব না। অপরজন বলল, আমি নারী সংসর্গ ত্যাগ করব, কখনো বিয়ে করব না। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিকট এলেন এবং বললেন, ‘‘তোমরা কি ঐসব লোক যারা এমন এমন কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি বেশি অনুগত। অথচ আমি রোযা রাখি, আবার তা থেকে বিরতও থাকি। নামায আদায় করি, নিদ্রা যাই ও মেয়েদেরকে বিয়েও করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নাতকে বর্জন করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়।’’ তাছাড়া উসমান বিন মায‘উন (রা)-এর যৌন ক্ষমতা বিলোপন করার প্রস্তাব রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাকচ করে দিয়েদিলেন। এত্থেকে বুঝা যায় যে, পরিবার গঠনে ইসলাম কতটুকু গুরুত্ব প্রদান করেছে।
জাহিলী যুগে বিয়ের ধরন :
আয়িশা (রা) বলেন, জাহিলী যুগে চার প্রকারের বিয়ে প্রচলিত ছিল। এক প্রকার হচ্ছে, বর্তমানে বিয়ের যে রীতি চলছে অর্থাৎ কোন ব্যক্তি কোন মহিলার অভিভাবকের নিকট তার অধীনস্থ মহিলা অথবা তার কন্যার জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিবে এবং তার মোহর নির্ধারণের পর বিয়ে করবে। দ্বিতীয় প্রকার হচ্ছে, কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে মাসিক থেকে মুক্ত হবার পর একথা বলত যে, তুমি অমুক ব্যক্তির কাছে যাও এবং তার সঙ্গে যৌন মিলন করো। এরপর স্বামী তার স্ত্রী থেকে পৃথক থাকত এবং কখনও তাকে স্পর্শ করত না, যতক্ষণ না সে অন্য ব্যক্তির দ্বারা গর্ভবতী হত, যার সঙ্গে স্ত্রীর যৌন মিলন হত। যখন তার গর্ভ সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ হত তখন ইচ্ছে করলে স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সঙ্গম করত। এতে উদ্দেশ্য ছিল যাতে করে সে একটি উন্নত জাতের সন্তান লাভ করতে পারে। এ ধরনের বিয়েকে نِكاَحُ الْاِسْتِبْضاَع বলা হত। তৃতীয় প্রথা ছিল এরূপ- দশ জনের কম কয়েক ব্যক্তি একত্রিত হয়ে পালাক্রমে একই মহিলার সঙ্গে যৌনসঙ্গম করত। যদি মহিলা এর ফলে গর্ভবতী হত এবং কোন সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার পর কিছুদিন অতিবাহিত হত, তখন সেই মহিলা ঐ সকল ব্যক্তিকে ডেকে পাঠাত এবং কেউই আসতে অস্বীকৃতি জানাতে পারত না। যখন সকলেই সেই মহিলার নিকটে একত্রিত হত, তখন সে তাদেরকে বলত, তোমরা সকলেই তোমাদের কুকর্ম সম্পর্কে অবগত আছ। এখন আমি সন্তান প্রসব করেছি, সুতরাং হে অমুক! এটা তোমারই সন্তান। এ কথা বলে ঐ মহিলা যাকে খুশি তার নাম ধরে ডাকত। তখন এ ব্যক্তি উক্ত শিশুটিকে গ্রহণ করতে বাধ্য থাকত। চতুর্থ প্রকারের বিয়ে হচ্ছে, বহু পুরুষ একই মহিলার সঙ্গে যৌন মিলনে লিপ্ত হত এবং ঐ মহিলা তার কাছে যত পুরুষ আসত, কাউকে শয্যা-সঙ্গী করতে অস্বীকার করত না। এরা ছিল পতিতা, যার চিহৃ হিসেবে নিজ ঘরের সামনে পতাকা উড়িয়ে রাখত। যে কেউ ইচ্ছা করলে অবাধে এদের সঙ্গে যৌন মিলনে লিপ্ত হতে পারত। যদি এ সকল মহিলাদের মধ্য থেকে কেউ গর্ভবতী হত এবং কোন সন্তান প্রসব করত তাহলে যৌন মিলনে লিপ্ত হওয়া সকল পুরুষ এবং একজন ‘কাফাহ’ (এমন একজন বিশেষজ্ঞ যে সন্তানের মুখ অথবা শরীরের কোন অঙ্গ দেখে বলতে পারত, এটা অমুকের ঔরসজাত সন্তান)-কে ডেকে আনা হত। সে সন্তানটির যে লোকটির সঙ্গে সাদৃশ্য দেখতে পেত তাকে বলত, এটি তোমার সন্তান। তখন ঐ লোকটি ঐ সন্তানকে নিজের সন্তান হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হত এবং লোকে ঐ সন্তানকে তার সন্তান হিসেবে আখ্যা দিত এবং সে এই সন্তানকে অস্বীকার করতে পারত না। যখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সত্য দ্বীনসহ পাঠানো হলো তখন তিনি বর্তমানে প্রচলিত ব্যবস্থা ছাড়া জাহিলী যুগের বিবাহের সকল রীতি বাতিল করে দিলেন।
বিয়ের হুকুম বা বিধান :
বিয়ে করা নবী-রাসূলগণের সুন্নাত। আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর পূর্ববর্তী নবীগণ বিয়ে করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلاً مِّنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجاً وَّذُرِّيَّةً ‘‘তোমার পূর্বে আমি তো অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছিলাম।’’ (সূরা আর রা‘দ, আয়াত ৩৮)। সাহাবীগণ ও বরেণ্য ইমামগণও বিয়ে করেছেন। সাধারণভাবে বিয়ে করা সুন্নাত। তবে বিয়ের হুকুম সকলের ক্ষেত্রে একই রকম নয়। ব্যক্তি ভেদে তা ওয়াজিব, মুস্তাহাব, মাকরূহ প্রভৃতি হয়ে থাকে।
ওয়াজিব : যে ব্যক্তি বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, বিয়ে না করলে ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়ার নিশ্চিত আশংকায় নিপতিত হয় এবং মোহর ও স্ত্রীর ভরণ-পোষণের ক্ষমতা রাখে তার জন্য বিয়ে করা ওয়াজিব বা অবশ্য কর্তব্য।
মুস্তাহাব : যে ব্যক্তি বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, কিন্তু ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়ার ভয় করে না তার জন্য বিয়ে করা মুস্তাহাব। এমতাবস্থায় নির্জনে ইবাদত করার চেয়ে বিয়ে করা উত্তম। কারণ ইসলামে বৈরাগ্যবাদের কোন স্থান নেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, تزوجوا فإنى مكاثر بكم الأمم، ولا تكونوا كرهبانية النصارى. ‘‘তোমরা বিয়ে কর। কারণ আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে অন্যান্য উম্মতের সামনে গর্ব করব। আর তোমরা খ্রিস্টানদের বৈরাগ্যবাদের অনুসারী হয়ো না।’’
মাকরূহ : স্ত্রীর ভরণ-পোষণ করতে অক্ষম হওয়া, খারাপ ব্যবহার করা বা স্ত্রী সহবাসের ব্যাপারে আগ্রহ না থাকার কারণে বিয়ে করলে অন্যের প্রতি যুল্ম-অত্যাচার করা হবে বলে যদি ভয় হয় (দৃঢ় বা নিশ্চিত বিশ্বাসের পর্যায়ে না হয়) তাহলে বিয়ে করা মাকরূহ।
বিয়ের উদ্দেশ্য ও উপকারিতা :
বিয়ে ইসলামী শরীয়তের এক অনন্য ব্যবস্থা। এর তাৎপর্য ও উপকারিতা অপরিসীম। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:-
১. আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সহজাত প্রবৃত্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ তার প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণের জন্য সদা উদ্গ্রীব থাকে। যদি সে তার মনোদৈহিক চাহিদা পূরণের অবকাশ না পায় তাহলে হতচকিত-বিচলিত হয়ে পড়ে এবং পাপের পথে ধাবমান হয়। এক্ষেত্রে বিয়েই একমাত্র কার্যকর ব্যবস্থা, যা তার দেহ-মনের চাহিদা পূরণ করে তাকে আত্মিক প্রশান্তি ও অনাবিল সুখানুভূতিতে অবগাহন করিয়ে ব্যভিচারের পথ থেকে নিবৃত্ত করে। এদিকে ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ বলেন, وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجاً لِّتَسْكُنُوْا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَّرَحْمَةً إِنَّ فِيْ ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُوْنَ ‘‘আর তাঁর (আল্লাহ) নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সংগিনীদেরকে যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।’’ (সূরা আর রূম, আয়াত ২১)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘স্ত্রীলোক শয়তানের বেশে সামনে আসে এবং শয়তানের বেশে প্রস্থান করে। অতএব তোমাদের কেউ কোন স্ত্রীলোক দেখতে পেলে সে যেন তার স্ত্রীর নিকট আসে। কারণ তা তার মনের ভেতর যা রয়েছে তা দূর করে দেবে।’’ অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘‘যখন তোমাদের কাউকে কোন স্ত্রীলোক মুগ্ধ করে এবং তা তার মনকে প্রলুব্ধ করে তখন সে যেন তার স্ত্রীর নিকট আসে এবং তার সাথে সংগম করে। কারণ তা (সহবাস) তার মনে যা আছে তা দূর করে দেবে।’’
২. সন্তান জন্মদান ও বংশবিস্তার বিয়ের অন্যতম একটি উদ্দেশ্যে। বিয়ের মাধ্যমে এক পরিবারের সাথে আরেক পরিবারের আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মহান আল্লাহ বলেন, وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ مِنَ الْمَاءِ بَشَراً فَجَعَلَهُ نَسَباً وَّصِهْراً ‘‘এবং তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে। অতঃপর তিনি তার বংশগত ও বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করেছেন।’’ (সূরা আল ফুরকান, আয়াত ৫৪)।
স্বামী-স্ত্রীর মিলনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম নেয়ার ফলশ্রুতিতে মুসলিম উম্মাহর সংখ্যাও বেড়ে যায়। ফলে মুসলিম উম্মাহ একটি শক্তিশালী ভিত্তির উপর দন্ডায়মান হয়। এজন্য নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, تزوجوا الودود الولود، فإنى مكاثربكم ‘‘তোমরা এমন স্ত্রীলোকদের বিয়ে করবে, যারা স্বামীদের অধিক ভালবাসে এবং অধিক সন্তান প্রসব করে। কেননা আমি (কিয়ামতের দিন) তোমাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে (পূর্ববর্তী উম্মতদের উপর) গর্ব প্রকাশ করব।’’
শায়খ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (১৯১৪-৯৯) হাদীসে উল্লেখিত الودود ও الولود শব্দ দুটির ব্যাখ্যায় বলেন, وقيد بهذين لأن الولود إذا لم تكن ودودا لم يرغب الزوج فيها، والودود إذا لم تكن ولودا لم يحصل المطلوب؛ وهو تكثير الأمة بكثرة التوالد. ‘‘এ দু’টি শর্ত আরোপের কারণ হলো, অধিক সন্তান জন্মদানকারিণী যদি অধিক মহববতকারিণী না হয় তাহলে তার ব্যাপারে স্বামী আগ্রহান্বিত হবে না। অন্যদিকে অধিক মহববতকারিণী যদি অধিক সন্তান প্রসবকারিণী না হয় তাহলে বিয়ের উদ্দেশ্যে সাধিত হবে না। আর তা (বিয়ের উদ্দেশ্য) হচ্ছে অধিক সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর সংখ্যা বৃদ্ধি করা।’’
শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী বলেন,
تواد الزوجين به تتم المصلحة المنزلية، وكثرة النسل بها تتم المصلحة المدنية والملية، وود المرأة لزوجها دال على صحة مزاجها وقوة طبيعتها مانع لها من أن يطمع بصرها إلى غيره باعث على تجملها بالامتشاط وغير ذلك، وفيه تحصين فرجه ونظره.
‘‘স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসার দ্বারা পারিবারিক কল্যাণ পূর্ণ হয় এবং বংশ বৃদ্ধির দ্বারা সভ্যতা ও জাতির কল্যাণ পূর্ণ হয়। আর স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালবাসা তার (স্ত্রী) মেজাজের সঠিকতা ও স্বভাব-চরিত্রের দৃঢ়তার প্রতি নির্দেশ করে। অধিকন্তু স্ত্রীর দৃষ্টিকে স্বামী ব্যতীত অন্যের প্রতি কামনা-বাসনা জাগ্রত করা থেকে বাধা প্রদান করে এবং চিরুনি বা অন্য মাধ্যম দ্বারা সাজ-গোজ করতে উৎসাহিত করে। এতে তার (স্বামীর) লজ্জাস্থান ও দৃষ্টির পবিত্রতা নিশ্চিত হয়।’’
৩. দৃষ্টি সংযতকরণ, আদর্শ জাতি ও আদর্শ সমাজ গঠন এবং পৃথিবী আবাদ করার জন্য বিয়ের প্রয়োজন।
৪. বিয়ের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রেম-ভালবাসার যে ফল্গুধারা প্রবাহিত হয় তা পরিবারের গন্ডি পেরিয়ে বৃহত্তর মানবপ্রেমে মানুষকে উজ্জীবিত করে।
৫. বিয়ের ফলে স্ত্রী-সন্তানদের প্রতি স্বামীর যে দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয় তা তার কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধি করে ও তার যোগ্যতা-অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে উদ্বুদ্ধ করে। সে তাদের জন্য উপার্জনে প্রবৃত্ত হয়। ফলে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে সম্পদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। আবিষ্কৃত হতে থাকে নিত্য-নতুন খনিজ সম্পদ ও অন্যান্য জিনিস।
৬. বিয়ের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য লাভ করা যায় ও আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ রাববুল আলামীন ইরশাদ করেন, وَأَنْكِحُوْا الْأَيَامَى مِنْكُمْ وَالصَّالِحِيْنَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ إِنْ يَّكُوْنُوْا فُقَرَاءَ يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ ‘‘তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও। তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন। আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’’ (সূরা আন নূর, আয়াত ৩২) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ثلاثة حق على الله عونهم: المجاهد فى سبيل الله، والمكاتب الذى يريد الأداء، والناكح الذى يريد العفاف. ‘‘তিন ব্যক্তির সাহায্য করা আল্লাহর কর্তব্য হয়ে পড়ে। তারা হলো: ক. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী খ. যে দাস নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আদায় করে দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে চায় ৩. যে লোক বিয়ে করে চারিত্রিক নিষ্কলুষতা রক্ষা করতে চায়।’’
৭. বিয়ের মাধ্যমে চারিত্রিক অবক্ষয় থেকে জাতি রক্ষা পায়। সমাজে যেনা-ব্যভিচার ও অশ্লীলতা হ্রাস পায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, إذا جاءكم من ترضون دينه وخلقه فأنكحوه، إلا تفعلوا تكن فتنة فى الارض وفسادعريض ‘‘যার দ্বীনদারী ও নৈতিক চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট, সে যদি তোমাদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তবে তার সাথে (তোমাদের পাত্রীর) বিয়ে দাও। যদি তা না কর তবে পৃথিবীতে ফিতনা-ফাসাদ ও ব্যাপক বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়বে।’’
৮. বিয়ে মানুষকে পশুর জীবন থেকে নিষ্কৃতি দিয়ে মনুষ্যত্বের পর্যায়ে উন্নীত করে।
৯. বিয়ে হচ্ছে মানুষের দায়িত্ব-কর্তব্যবোধের একটি প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র। এখান থেকে মানুষ নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য সস্পর্কে সচেতন হয়ে সমাজের মানুষের প্রতিও তার যে দায়িত্ব-কর্তব্য আছে সে ব্যাপারে সজাগ হয়।
১০. বিয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়।
২. স্বামী-স্ত্রীর অধিকার ও দায়িত্ব-কর্তব্য নির্ধারণ :
স্বামীর দায়িত্ব-কর্তব্য :
ক. মোহর প্রদান : স্ত্রীর প্রতি স্বামীর প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে সন্তুষ্টচিত্তে তার মোহর পরিশোধ করে দেয়া (সূরা আন নিসা, আয়াত ৪)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘‘অবশ্য পূরণীয় শর্ত হচ্ছে, যার বিনিময়ে তোমরা স্ত্রীর যৌনাঙ্গকে নিজের জন্য হালাল মনে করো।’’ অর্থাৎ মোহর।
খ. ভরণ-পোষণ : মহান আল্লাহ বলেন, وَعلَى الْمَوْلُوْدِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ ‘‘পিতার কর্তব্য যথাবিধি তাদের ভরণ-পোষণ করা।’’ (সূরা আল বাকারাহ, আয়াত ২৩৩) الرِّجَالُ قَوَّامُوْنَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُواْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ ‘‘পুরুষ নারীর কর্তা, কারণ আল্লাহ তাদের এককে অপরের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এজন্য যে, পুরুষরা তাদের নিজেদের ধন-সম্পদ থেকে ব্যয় করে।’’ (সূরা আন নিসা, আয়াত ৩৪) أَسْكِنُوْهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنتُمْ مِّنْ وُجْدِكُمْ وَلَا تُضَارُّوْهُنَّ لِتُضَيِّقُوْا عَلَيْهِنَّ وَإِنْ كُنَّ أُولَاتِ حَمْلٍ فَأَنفِقُوْا عَلَيْهِنَّ حَتَّى يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ- لِيُنفِقْ ذُوْ سَعَةٍ مِّنْ سَعَتِهِ وَمَن قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللَّهُ ‘‘তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেরূপ গৃহে বাস কর তাদেরকে সেরূপ গৃহে বাস করতে দিবে; তাদেরকে উত্ত্যক্ত করবে না সঙ্কটে ফেলার জন্য; তারা গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসব পর্যন্ত তাদের জন্য ব্যয় করবে...। বিত্তবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবনোপকরণ সীমিত সে আল্লাহ যা দান করেছেন তা হতে ব্যয় করবে।’’ (সূরা আত তালাক, আয়াত ৬-৭)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ولهن عليكم رزقهن وكسوتهن بالمعروف ‘‘তাদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা তোমাদের দায়িত্ব।’’
হাকীম বিন মু‘আবিয়া (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করি, হে রাসূলুল্লাহ! স্বামীদের উপর স্ত্রীদের কী হক? তিনি বলেন, ‘‘সে যা খাবে তাকেও (স্ত্রী) তা খাওয়াবে, আর সে যা পরিধান করবে তাকেও তা পরিধান করাবে। আর তার (স্ত্রীর) মুখমন্ডলে প্রহার করবে না এবং তাকে ঘর হতে বের করে দিবে না।’’
গ. সদ্ব্যবহার : মহান আল্লাহ বলেন, وَعَاشِرُوْهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ ‘‘তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন করবে।’’ (সূরা আন নিসা, আয়াত ১৯) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট সর্বোত্তম।’’
তিনি আরো বলেন, واستوصوا بالنساء خيرا، فإنهن خلقن من ضلع، وإن أعوج شيئ فى الضلع أعلاه، فإن ذهبت تقيمه كسرته، وإن تركته لم يزل أعوج، فاستوصوا بالنساء خيرا. ‘‘তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। কেননা, তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে (পুরুষের) পাঁজরের হাড় থেকে। আর সবচেয়ে বাঁকা হচ্ছে পাঁজরের ওপরের হাড়। যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে ভেঙ্গে যাবে। আর যদি যেভাবে আছে সেভাবে রেখে দাও তাহলে বাঁকাই থাকবে। অতএব, নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে।’’
ঘ. স্ত্রীদের মধ্যে সুবিচার প্রতিষ্ঠা : যদি কারো একাধিক স্ত্রী থাকে তাহলে তাদের মধ্যে ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ আচরণ করা স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য (সূরা আন নিসা, আয়াত ১২৯)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর প্রত্যেক স্ত্রীর জন্য একটি দিন ও রাত নির্ধারিত করতেন। অবশ্য সাওদা বিনত যাম‘আ ব্যতীত। কেননা, তিনি (বার্ধক্যের কারণে) তাঁর পালার দিনটি আয়িশার জন্য দান করেছিলেন।
অন্য একটি হাদীসে এসেছে, আয়িশা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মৃত্যুকালীন রোগের সময় তাঁর সকল স্ত্রীকে আহবান করেন। আমরা সকলে একত্রিত হলে তিনি বলেন, (বর্তমানে) তোমাদের সকলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে (পালাক্রমে) অবস্থানের ক্ষমতা আমার নেই। কাজেই তোমরা সকলে যদি অনুমতি দাও, তবে আমি (অসুস্থতার) দিনগুলো আয়িশার নিকট কাটাতে চাই। তখন সকলেই তাঁকে অনুমতি প্রদান করেন। অন্য আরেকটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, ‘‘যার দু’জন স্ত্রী আছে আর সে তার মধ্যে একজনের প্রতি অধিক ঝুঁকে পড়ে, সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন অর্ধাঙ্গ অবশ অবস্থায় উত্থিত হবে।’’
স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য :
ক. স্বামীর আনুগত্য করা : স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, إذا صلت المرأت خمسها، وصامت شهرها، وحفظت فرجها، وأطاعت زوجها، قيل لها: أدخلى الجنت من أى أبواب الجنت شئت. ‘‘কোন মহিলা যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে, রমযানের রোযা রাখে, নিজের সতীত্বকে রক্ষা করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, তাহলে তাকে (কিয়ামতের দিন) বলা হবে, জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করো।’’
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন,
لا يصلح لبشر أن يسجد لبشر، ولو صلح لبشر أن يسجد لبشر لأمرت المرأة أن تسجد لزوجها، لعظم حقه عليها. ‘‘কোন মানুষের জন্য কোন মানুষকে সিজদা করা বৈধ নয়। যদি কোন মানুষের জন্য কোন মানুষকে সিজদা করা বৈধ হত তাহলে স্ত্রীর উপর স্বামীর হক বড় হওয়ায় স্ত্রীকে আদেশ করতাম তার স্বামীকে সিজদা করতে।’’
তবে স্বামী যদি স্ত্রীকে কোন পাপের কাজে নির্দেশ প্রদান করে তাহলে স্ত্রী সে নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করবে; কখনো মানবে না। ইমাম বুখারী (র) সহীহ বুখারীতে এর প্রমাণে যে হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন তা হচ্ছে- আয়িশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক আনসারী মহিলা তার মেয়েকে বিয়ে দিলেন। কিন্তু তার মাথার চুলগুলো উঠে যেতে লাগল। এরপর সে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে এ ঘটনা বর্ণনা করে বলল, তার স্বামী আমাকে বলেছে আমি যেন আমার মেয়ের মাথায় কৃত্রিম চুল লাগিয়ে দেই। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না তা করো না। কারণ, আল্লাহ তায়ালা কৃত্রিম চুল পরিধানকারিণীদের ওপর অভিসম্পাত করেন।
খ. স্বামীর আমানত রক্ষা করা : স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজেকে যাবতীয় অশ্লীলতা ও অপকর্ম থেকে হিফাযত করা এবং স্বামীর অর্থ-সম্পদের আমানত রক্ষা করা স্ত্রীর অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। মহান আল্লাহ বলেন, فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللّهُ ‘‘সাধ্বী স্ত্রীরা হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হিফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোকচক্ষুর অন্তরালে তার হিফাযত করে।’’ (সূরা আন নিসা, আয়াত ৩৪)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘‘তিনটি জিনিস সেŠভাগ্যের নিদর্শন। ১. ঐ স্ত্রী যাকে দেখলে তুমি বিমুগ্ধ-বিমোহিত হও এবং তার কাছ থেকে দূরে থাকলে তার সতীত্ব ও তোমার সম্পদের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাক। ২. দ্রুত পথ চলতে সক্ষম ঐ বাহন, যে তোমাকে তোমার সফরসঙ্গীদের নাগাল পাইয়ে দেয়। ৩. প্রশস্ত ও আরামদায়ক বাড়ি।’’
গ. স্বামীর যৌন দাবী পূরণ : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘‘স্বামী যখন স্ত্রীকে শয্যা গ্রহণের আহবান করে তখন সে যদি তাতে অসম্মতি জ্ঞাপন করে তাহলে সকাল হওয়া পর্যন্ত ফেরেশতাগণ তার প্রতি লানত করতে থাকেন।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘স্বামী যখন (যৌন) প্রয়োজনে স্ত্রীকে ডাকবে, তখন সে চুলায় রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকলেও সঙ্গে সঙ্গে স্বামীর ডাকে সাড়া দিবে।’’
৩. পিতা-মাতার হক প্রবর্তন :
পিতা-মাতা সন্তানকে লালন-পালন করে বড় করে তোলে। সে কারণে ইসলাম পরিবারের বন্ধনকে সুদৃঢ় করার জন্য মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য নির্ধারণ করেছে।
বাবা-মার সাথে সদ্ব্যবহার করা, তাদেরকে সম্মান করা এবং তাদের আনুগত্য করা সন্তানের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। মহান আল্লাহ বলেন, وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وِّلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيْماً ‘‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত না করতে ও পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ্’ বল না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বলো।’’ (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত ২৩)। وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْناً عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِيْ عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِيْ وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيْرُ‘‘আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। জননী সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করে এবং তার দুধ ছাড়ান হয় দুই বৎসরে। সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই নিকট।’’ (সূরা লুকমান, আয়াত ১৪)।
তবে পিতা-মাতা যদি অন্যায় কাজের আদেশ করে তাহলে সেক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য করা যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন, وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلى أَنْ تُشْرِكَ بِيْ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوْفاً ‘‘তোমার পিতা-মাতা যদি তোমাকে পীড়াপীড়ি করে আমার সাথে কাউকে শরীক করতে যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তুমি তাদের কথা মানবে না। তবে পৃথিবীতে তাদের সাথে সদভাবে বসবাস করবে।’’ (সূরা লুকমান, আয়াত ১৫)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘‘আল্লাহর অবাধ্যতায় কারো কোন আনুগত্য নেই। আনুগত্য শুধু ভাল কাজে।’’
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন, لا طاعة لمخلوق فى معصية الخالق ‘‘স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির কোন আনুগত্য নেই।’’
একদা এক ব্যক্তি বলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমার ভাল ব্যবহার পাওয়ার সবচাইতে বেশি হকদার কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তিনি বললেন, তোমার মা, তারপর তোমার মা, তারপর তোমার মা, অতঃপর তোমার পিতা। অতঃপর তোমার নিকটতম ব্যক্তিবর্গ।
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দীয় আমল কোনটি? তিনি বললেন, সময়মত নামায আদায় করা। আমি বললাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। আমি বললাম, তারপর কোন কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা।
আনাস বিন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, من سره أن يمد له فى عمره، ويزاد فى رزقه؛ فليبر والديه، وليصل رحمه. ‘‘যে ব্যক্তি তার আয়ু ও রিযিক বৃদ্ধি করতে ইচ্ছুক, সে যেন তার বাবা-মার সাথে ভাল ব্যবহার করে এবং আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখে।’’
পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা যেমন সন্তানের কর্তব্য, তেমনি তাদের সাথে সম্পর্কছেদ করা কবীরা গুনাহ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্পর্কে অবগত করব না? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই হে রাসূলুল্লাহ! তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শিরক করা, পিতা-মাতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা।
সন্তানের সম্পদে বাবা-মার অধিকার রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, يَسْأَلُوْنَكَ مَاذَا يُنْفِقُوْنَ قُلْ مَا أَنفَقْتُم مِّنْ خَيْرٍ فَلِلْوَالِدَيْنِ وَالأَقْرَبِيْنَ وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِيْنِ وَابْنِ السَّبِيْلِ ‘‘লোকে কি ব্যয় করবে সে সম্পর্কে তোমাকে প্রশ্ন করে। বল, যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় করবে তা পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকীন এবং মুসাফিরদের জন্য।’’ (সূরা আল বাকারা, আয়াত ২১৫) সুতরাং বাবা-মা যদি অসচ্ছল হয় আর সন্তান সচ্ছল হয় তাহলে তাদেরকে সহায়তা করা সন্তানের জন্য অবশ্য কর্তব্য।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘‘নিজ উপার্জনের আহার সর্বোত্তম আহার। অবশ্য তোমাদের সন্তানও নিজ উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত।’’
এক ব্যক্তি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ধন-সম্পদও আছে এবং আছে সন্তান-সন্ততিও। কিন্তু এমতাবস্থায় আমার পিতা আমার সম্পদ নিতে চায়। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি আর তোমার ধন-সম্পদ সবই তোমার পিতার।
ইমাম শাওকানী বলেছেন, الإجماع على أنه يجب على الولد الموسر مؤنة الأبوين المعسرين. ‘‘দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত পিতা-মাতার জন্য অর্থ ব্যয় করা সচ্ছল সন্তানের উপর ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে আলিমগণের ইজমা (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’’
৪. সন্তানের হক প্রবর্তন :
বাবা-মার প্রতি সন্তানের যেমন দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে, তেমনি সন্তানের প্রতিও তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে। এসব দায়িত্ব-কর্তব্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
ক. নবজাতকের কানে আযান দেয়া :
সন্তান জন্মের সাথে সাথেই তাদের প্রতি পিতা-মাতার কিছু কর্তব্য আরোপিত হয়, যেগুলো পালন করা পিতা-মাতার জন্য জরুরী। তন্মধ্যে প্রথম কর্তব্য হচ্ছে নবজাতকের কানে আযান দেয়া। আবূ রাফি (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতিমা (রা) যখন হাসান (রা)-কে প্রসব করলেন, তখন আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তার কানে নামাযের আযানের মতো আযান দিতে দেখেছি।
উল্লেখ্য যে, নবজাতকের ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামত দেয়া মর্মে বর্ণিত হাদীসটি মাওযূ বা জাল।
খ. আকীকা করা ও সুন্দর-অর্থপূর্ণ নাম রাখা :
জন্মের সপ্তম দিনে আকীকা করা ও শিশুর একটি সুন্দর ও অর্থবোধক নাম রাখা পিতা-মাতার অন্যতম কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক শিশু আকীকার সাথে আবদ্ধ থাকে। জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু জবেহ করা হবে, তার মাথা কামানো হবে এবং তার নাম রাখা হবে।’’ সালমান বিন আমির (রা) বলেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘‘শিশুর জন্মের সাথে আকীকা সম্পৃক্ত। সুতরাং তার পক্ষ থেকে তোমরা রক্ত প্রবাহিত কর এবং তার শরীর হতে কষ্ট দূর কর। অর্থাৎ মাথার চুল কেটে ফেল।
পুত্র সন্তানের জন্য দু’টি এবং কন্যা সন্তানের জন্য একটি ছাগল আকীকা করা উত্তম। উম্মু কুরয (রা) বলেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘‘ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি ছাগল এবং মেয়ের পক্ষ থেকে একটি ছাগল জবেহ করতে হবে। সেগুলি ছাগল বা ছাগী হোক তাতে কোন দোষ নেই।’’ তবে একটি ছাগলও আকীকা করার প্রমাণ পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসান ও হুসাইন (রা)-এর জন্য একটি করে ছাগল আকীকা করেছিলেন।
সন্তানের সুন্দর ও অর্থপূর্ণ নাম রাখা পিতা-মাতার কর্তব্য। যাতে এ নামের প্রভাবে পরবর্তী জীবনে সন্তানের স্বভাব-চরিত্রে শুচি-শুভ্রতা ফুটে ওঠে। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন যে, তার দাদা হায্ন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে গেলে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, তোমার নাম কি? তিনি বললেন, আমার নাম হায্ন (শক্ত)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না বরং তোমার নাম হওয়া উচিত সাহ্ল (সহজ-সরল)। তিনি উত্তরে বললেন, আমার পিতা আমার যে নাম রেখেছেন তা আমি পরিবর্তন করব না। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব বলেন, এরপর আমাদের পরিবারে পরবর্তীকালে কঠিন অবস্থা ও পেরেশানী লেগে থাকত।
গ. সন্তানদের মাঝে সমতা বিধান :
ছেলে-মেয়ে উভয়ই মহান আল্লাহর অপার করুণার নিদর্শন। সুতরাং তাদের উভয়ের মাঝে সমতা বিধান ও তাদের প্রতি সুবিচার করা অবশ্য কর্তব্য। নু‘মান বিন বাশীর (রা)-কে তার বাবা একটি দাস দান করার কথা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে ব্যক্ত করলে তিনি তাকে বললেন, তোমার অন্য সন্তানদেরকেও কি অনুরূপ দান করেছ। তিনি বললেন, না। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমার সন্তানদের মাঝে সমতা বিধান কর। একথা শুনে নু‘মানের বাবা তাকে দেয়া দান ফেরত নেন।
ইবনু আববাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, مَنْ كَانَتْ لَهُ أُنْثَى فَلَمْ يَئِدْهَا وَلَمْ يُهِنْهاَ، وَلَمْ يُؤْثِرْ وَلَدَهُ عَلَيْهَا- يَعْنِى الذكور- أدْخَلَهُ اللهُ الْجَنَّةَ- ‘‘যার একটি কন্যা সন্তান রয়েছে, সে যদি তাকে জীবন্ত পুঁতে না ফেলে, তাকে তুচ্ছ জ্ঞান না করে এবং পুত্র সন্তানকে তার ওপর প্রাধান্য না দেয়, তবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’’
ঘ. সন্তানদের দ্বীনী শিক্ষা দেয়া ও চরিত্রবান করে গড়ে তোলা :
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘‘প্রত্যেক শিশু ইসলামী স্বভাবের উপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদী, খ্রিস্টান অথবা মূর্তিপূজকে পরিণত করে।’’ মু‘আয (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসিয়ত করলেন, ‘‘তুমি তোমার উপার্জিত সম্পদ তোমার পরিবারের উপর সামর্থ্য অনুসারে ব্যয় কর, পরিবার-পরিজনকে শিষ্টাচার শিক্ষাদানের ব্যাপারে শাসন থেকে বিরত থেক না এবং আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে পরিবারের লোকজনকে ভীতি প্রদর্শন কর।’’ এ হাদীস দু’টি থেকে বুঝা যায় যে, সন্তানকে আদর্শবান-চরিত্রবান ও ইসলামী আদর্শে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মা-বাবার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
সন্তান জন্মের পর থেকে বাবা-মাকে পরিকল্পনা মাফিক সন্তানকে দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে ও নৈতিক চরিত্র গঠনে তৎপর হতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘‘তোমরা তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের নামায আদায়ের জন্য আদেশ কর, যখন তাদের বয়স ৭ বছর হয়। ১০ বছর বয়সে নামায আদায় না করলে প্রহার কর এবং তাদের শয্যা পৃথক কর।’’ ছোটবেলা থেকেই দ্বীনের অন্যান্য মৌলিক বিধি-বিধান ও আক্বীদা-বিশ্বাস তাদেরকে অবগত করতে হবে, যাতে বড় হয়ে তারা আদর্শ সন্তানে পরিণত হয় এবং যাবতীয় শিরক-বিদ‘আত থেকে বেঁচে থাকে। সন্তানদের দ্বীনী ও নৈতিক জ্ঞান শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি জাগতিক বিষয়েও শিক্ষা দিতে হবে।
লুকমান (আ) তাঁর সন্তানকে যে উপদেশগুলো দিয়েছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপদেশগুলো হলো-
১. يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ ‘‘হে বৎস! আল্লাহ্র সাথে কাউকে শরীক করবে না। নিশ্চয় শিরক চরম যুল্ম।’’
২. يَا بُنَيَّ إِنَّهَا إِنْ تَكُ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ فَتَكُنْ فِيْ صَخْرَةٍ أَوْ فِي السَّمَاوَاتِ أَوْ فِي الْأَرْضِ يَأْتِ بِهَا اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ لَطِيْفٌ خَبِيْرٌ ‘‘হে বৎস! ক্ষুদ্র বস্ত্তটি (পুণ্য বা পাপ) যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় এবং তা যদি থাকে শিলাগর্ভে অথবা আকাশে কিংবা মাটির নিচে, আল্লাহ তাও উপস্থিত করবেন। আল্লাহ সূক্ষদর্শী, সম্যক অবগত।’’
৩. يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ ‘‘হে বৎস! নামায কায়েম করবে, সৎ কর্মের নির্দেশ দিবে, অসৎ কর্মে নিষেধ করবে এবং আপদে-বিপদে ধৈর্য ধারণ করবে।’’
৪. وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحاً إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ ‘‘অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করবে না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন উদ্ধত, অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’’
৫. وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ إِنَّ أَنكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيْرِ ‘‘তুমি চলাফেরা করবে সংযতভাবে এবং তোমার কণ্ঠস্বর নিচু করবে। নিশ্চয় সুরের মধ্যে গাধার সুরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।’’ (সূরা লুকমান, আয়াত ১৩, ১৬-১৯)।
ঙ. কন্যা সন্তানদের লালন-পালন ও শিক্ষা দান :
জাহিলী যুগে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত প্রোথিত করা হতো। (সূরা আত-তাকভীর, আয়াত ৮-৯; আন নাহল ৫৮-৫৯; আল আন‘আম ১৪০ প্রভৃতি)। ইসলাম নারীকে মর্যাদার উচ্চশৃঙ্গে স্থান দিয়ে তাকে বাঁচার অধিকার প্রদান করেছে। কুরআন মাজীদে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করা হয়েছে, وَلاَ تَقْتُلُواْ أَوْلادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلاَقٍ نَّحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ إنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْءاً كَبِيْراً ‘‘তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে দারিদ্রে্যর ভয়ে হত্যা করো না। আমিই তাদেরকে ও তোমাদেরকে রিয্ক দেই। নিশ্চয়ই তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ।’’ (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত ৩১)।
শুধু তাই নয়, ইসলাম কন্যা সন্তানের লালন-পালন ও শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারে সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি কন্যা সন্তানদের ব্যাপারে সমস্যায় পড়েছে এবং তাদের সাথে উত্তম আচরণ করেছে, তার জন্য এ কন্যা সন্তানরাই জাহান্নামের আগুন হতে অন্তরায় হবে।’’ অন্য আরেকটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত দু’টি কন্যার লালন-পালনের দায়িত্ব পালন করবে, আমি ও সেই ব্যক্তি কিয়ামতের দিন এভাবে একত্রে থাকব।’’ এ কথা বলে তিনি নিজের আঙ্গুলগুলো মিলালেন।
নারীদের শিক্ষার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘তিন প্রকার লোকের জন্য দু’টি করে পুরস্কার রাখা হয়েছে। ১. আহলে কিতাবের যে ব্যক্তি তার নবী ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি ঈমান এনেছে। ২. ঐ ক্রীতদাস যে আল্লাহ ও তার মনিবের হক আদায় করেছে এবং ৩. ঐ ব্যক্তি যার অধীনে একজন ক্রীতদাসী রয়েছে, সে তাকে সুন্দরভাবে সৎ গুণাবলী সম্পন্ন করে গড়ে তোলে এবং সুন্দরভাবে তাকে সুশিক্ষা দান করে। অতঃপর তাকে মুক্ত করে বিয়ে করে। এরূপ ব্যক্তির জন্য দু’টি করে পুরস্কার রয়েছে।’’
চ. সন্তানদের ভালবাসা :
সন্তানরা বাবা-মার নয়নের মণি। তাদের ভালবাসা ও স্নেহ-মমতার বাহুডোরে আগলে রাখা পিতা-মাতার কর্তব্য। হযরত আয়িশা (রা) বলেন, একদা এক বেদুঈন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, তোমরা কি শিশুদেরকে চুম্বন করো? আমরা তো শিশুদের চুম্বন করি না। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘‘যদি আল্লাহ তায়ালা তোমার অন্তর থেকে স্নেহ-মমতা দূর করে দেন তাহলে আমি কি তাতে বাধা দিতে সক্ষম হব?’’
আবূ হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসান (রা)-কে চুমু খেলেন। তখন তাঁর নিকট আকরা বিন হাবিস আত-তামীমী বসা ছিলেন। আকরা বললেন, আমার ১০টি সন্তান রয়েছে। আমি তাদের কাউকেই তো চুম্বন করি না। (একথা শুনে) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘যে ব্যক্তি অনুগ্রহ করে না, তার ওপরও অনুগ্রহ করা হয় না।’’ অত্র হাদীস দু’টি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার ভালবাসা ও স্নেহ-মমতা হবে নিবিড়।
ছ. সন্তানদের জন্য দোয়া করা :
বাবা-মার দোয়া সন্তানের জন্য খুবই ফলপ্রসূ। সেজন্য বাবা-মা তাদের সন্তানের ইহকালীন সুখ-সমৃদ্ধি ও পরকালীন মুক্তির জন্য দোয়া করবেন কায়মনোবাক্যে হৃদয় খুলে। মহান আল্লাহ বলেন, وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيْمُ رَبِّ اجْعَلْ هَـذَا الْبَلَدَ آمِناً وَاجْنُبْنِيْ وَبَنِيَّ أَنْ نَّعْبُدَ الأَصْنَامَ ‘‘স্মরণ করো, ইবরাহীম বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! এই নগরীকে (মক্কা মুকাররমা) নিরাপদ করো এবং আমাকে ও আমার পুত্রগণকে মূর্তি পূজা হতে দূরে রেখো।’’ (সূরা ইবরাহীম, আয়াত ৩৫)। رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِيْنَ إِمَاماً ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করো যারা হবে আমাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর এবং আমাদেরকে করো মুত্তাকীদের জন্য অনুসরণযোগ্য।’’ (সূরা আল ফুরকান, আয়াত ৭৪)। رَبِّ هَبْ لِيْ مِنْ لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً ‘‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তুমি তোমার নিকট হতে সৎ বংশধর দান করো।’’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৩৮)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উসামা বিন যায়েদ ও হাসান (রা)-এর জন্য এ বলে দোয়া করেছিলেন, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি এদের দু’জনের প্রতি করুণা করো। কারণ আমি তাদের স্নেহ করি।’’
৫. মীরাছের বিধান প্রবর্তন : পরিবারের প্রতি ইসলামের সীমাহীন গুরুত্বারোপের অন্যতম প্রমাণ মীরাছ বা উত্তরাধিকারের বিধান প্রবর্তন। পরিবারের কোন সদস্য মারা গেলেও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মাঝে সম্পর্ক অটুট থাকা নিশ্চিত করে এ বিধান। মহান আল্লাহ বলেন, لِّلرِّجَالِ نَصيِْبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالأَقْرَبُوْنَ وَلِلنِّسَاء نَصِيْبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالأَقْرَبُوْنَ مِمَّا قَلَّ مِنْهُ أَوْ كَثُرَ نَصِيْباً مَّفْرُوْضاً ‘‘পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীরও অংশ আছে, তা অল্পই হৌক অথবা বেশি হৌক, এক নির্ধারিত অংশ।’’ (সূরা আন নিসা, আয়াত ৭)।
দ্বিতীয় অধ্যায় : ইসলামে পরিবার গঠনের স্তর
পরিবার সংক্রান্ত বিধি-বিধান ইসলামের সামাজিক বিধি-বিধানের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। পরিবারই হচ্ছে কল্যাণকর সমাজের ভিত্তি। সুতরাং আদর্শ সমাজ গঠনের অপরিহার্য শর্ত আদর্শ পরিবার গঠন। পরিবার গঠনের উল্লেখযোগ্য ধাপ বা স্তরগুলো নিম্নরূপ:
প্রথম স্তর : ইসলামে পরিবার গঠনের প্রথম স্তর হচ্ছে ইসলামী শরীয়তের নিয়মানুযায়ী পরিবার গঠনের নিরন্তর প্রচেষ্টা চালানো এবং এ ব্যাপারে যুবকদেরকে উদ্বুদ্ধ করা। সাথে সাথে এক্ষেত্রে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতার অবসান ঘটানো। বর্তমান সমাজে যৌতুক বিয়ের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম প্রতিবন্ধক। অনেক সময় গরীব বাবা-মা যৌতুকের কারণে তাদের মেয়েদের বিয়ে দিতে পারে না। সমাজ বিধ্বংসী মাইন যৌতুকের কারণে আমাদের দেশে শতকরা ৫০% নারী নির্যাতনের শিকার হয়। সুতরাং এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে ।
দ্বিতীয় স্তর : স্ত্রী নির্বাচন হচ্ছে পরিবার গঠনের দ্বিতীয় স্তর। বলা হয়, সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে। সেজন্য স্ত্রী নির্বাচনের ব্যাপারে ইসলাম সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। কারণ স্ত্রী হচ্ছে স্বামীর জন্য প্রশান্তির উৎস, জীবনসঙ্গিনী, বাড়ির গিন্নী, সন্তানদের মা ও পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। সন্তানেরা তার কাছ থেকেই সৎ গুণাবলীর উত্তরাধিকারী হয়, তার কোলেই পরম স্নেহের আবেশে বেড়ে ওঠে এবং তার আচার-আচরণ প্রভৃতি বিষয় সন্তানদের উপর দারুণভাবে প্রভাব বিস্তার করে। মনোবিজ্ঞানী লেস্টার ডি. ক্রো এবং এলিস ক্রো বলেছেন, ঞযব সড়ঃযবৎহং ধঃরঃঁফব ফঁৎরহম নধনু-যড়ড়ফুবধৎং পধহ যধাব ৎবষধঃরাবষু ংবৎরড়ঁং বভভবপঃং ড়হঃযব পযরষফহং ফবাবষড়ঢ়রহম নবযধারড়ঁৎ.
সতী-সাধ্বী স্ত্রী নির্বাচনের ব্যাপারে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করেছে এবং তাকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পদ রূপে বিবেচনা করেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, إن الدنيا كلها مةاع وخير مةاع الدنيا المرأة الصالحة. ‘‘সমগ্র পৃথিবীটাই হলো সম্পদ। আর পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো সতী-সাধ্বী নারী।’’
স্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন বিষয়কে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে সে সম্পর্কে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিকনির্দেশনা প্রদান করতে গিয়ে বলেন, ‘‘রমণীদেরকে চারটি গুণের অধিকারিণী দেখে বিবাহ করা হয়। (ক) তার ধন-সম্পদ (খ) বংশমর্যাদা (গ) তার সৌন্দর্য ও (ঘ) তার ধর্মপরায়ণতার জন্য। তোমরা ধর্মপরায়ণা নারীকে বিয়ে করে ধন্য হও, অন্যথায় তোমার উভয় হস্ত অবশ্যই ধুলায় ধূসরিত হবে। (অর্থাৎ তুমি লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে।)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সতী-সাধ্বী স্ত্রীর গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘‘সব চেয়ে উত্তম নারী সেই যার দিকে তুমি দেখলে তোমাকে খুশী করতে পারে, আদেশ করলে মান্য করে এবং নিজের ব্যাপারে ও স্বামীর সম্পদের ব্যাপারে স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কিছুই করে না।
যে মেয়েকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দেয়া হবে সে যেন সম্ভ্রান্ত বংশের, শান্ত মেজাজের অধিকারিনী এবং সুস্থ মানসিকতাসম্পন্না হয়। কারণ এ ধরনের নারী সন্তানদের প্রতি স্নেহপরায়ণা এবং স্বামীর হকের প্রতি যত্নবান হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘‘উষ্ট্রারোহী মহিলাদের মধ্যে কুরাইশ বংশীয়া মহিলারা সর্বোত্তম। তারা শিশু সন্তানদের প্রতি স্নেহশীল এবং স্বামীর মর্যাদার উত্তম রক্ষাকারিণী।’’ স্ত্রী যদি সম্ভ্রান্ত বংশের হয় তাহলে সাধারণত তাদের সন্তানরাও অনুরূপ হয়। এজন্য নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘স্বর্ণ-রৌপ্যের খনির ন্যায় মানুষ খনি সদৃশ। তাদের মধ্যে জাহিলী যুগে যারা ভাল ছিল তারা ইসলামী যুগেও ভাল, যখন তারা জ্ঞান অর্জন করে।’’
বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে সন্তান জন্মদান। সুতরাং স্ত্রী সন্তান জন্মদানকারিণী হওয়া বাঞ্ছনীয়। এক ব্যক্তি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, আমি এক সুন্দরী এবং সদ্বংশীয়া রমণীর সন্ধান পেয়েছি, কিন্তু সে কোন সন্তান প্রসব করে না (বন্ধ্যা)। আমি কি তাকে বিয়ে করব? তিনি বলেন, না। অতঃপর সে ব্যক্তি দ্বিতীয়বার এসে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে নিষেধ করেন। পরে তৃতীয়বার সে ব্যক্তি এলে তিনি বলেন, তোমরা এমন মেয়েদের বিয়ে করবে যারা স্বামীদের অধিক মহববত করে এবং অধিক সন্তান প্রসব করে। কেননা আমি (কিয়ামতের দিন) তোমাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে (পূর্ববর্তী উম্মতদের উপর) গর্ব প্রকাশ করব।’’
স্ত্রী কুমারী হওয়া ভাল। কারণ তারা সাধাসিধে ও লাজুক প্রকৃতির হয়ে থাকে। পূর্বে কোন পুরুষের সাথে তার যৌন সম্পর্ক স্থাপিত না হওয়ায় স্বামীর প্রতি তার ভালবাসা হয় নিবিড়। এতে বিয়ের বন্ধনও হয় মজবুত। জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রা) বিধবাকে বিয়ে করলে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, ‘‘কুমারী বিয়ে করলে না কেন? তাহলে তুমি তার সাথে আমোদ করতে আর সেও তোমার সাথে আমোদ করত।’’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন, عليكم بالأبكار فإنهن أعذب أفواها وأنتق أرحاما وأرضى باليسير. ‘‘তোমরা কুমারীদেরকে বিয়ে করো। কেননা তারা মিষ্টভাষিণী, অধিক গর্ভধারিণী এবং অল্পতে সন্তুষ্ট হয়।’’
বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বয়স, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সমতার দিকে লক্ষ্য করা উচিত। কারণ এসব বিষয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমতা পারিবারিক বন্ধনকে চিরস্থায়ী ও প্রেম-ভালবাসাকে স্থায়িত্ব দান করতে সহায়তা করে। আবু বকর ও উমার (রা) ফাতিমা (রা)-কে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে তো ছোট। এরপর আলী (রা) তাকে প্রস্তাব দিলে তার সাথে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাতিমার বিয়ে দেন।
মোদ্দাকথা, পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ধার্মিকতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। এর মানে এই নয় যে, সৌন্দর্য, বংশমর্যাদা ও সম্পদের দিকে লক্ষ্য করতে হবে না। যদি ধার্মিকতার সাথে এ গুণগুলোও পাওয়া যায় তবে তা হবে সোনায় সোহাগা। সাথে সাথে উপরোল্লেখিত বিষয়গুলোর প্রতিও লক্ষ্য রাখতে হবে। তাহলে পরিবার হবে জান্নাতের টুকরা।
উল্লেখ্য যে, ধার্মিক, সচ্চরিত্রবান ও সম্ভ্রান্ত বংশের ছেলের হাতে মেয়েকে পাত্রস্থ করা অভিভাবকের দায়িত্ব। সাহল (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিল। তখন তিনি (সাহাবীগণকে) বললেন, এ লোকটি সম্পর্কে তোমাদের কী ধারণা? তাঁরা উত্তর দিলেন, যদি কোথাও কোন মহিলাকে এ লোকটি বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তার সাথে বিয়ে দেয়া যায়। যদি সে সুপারিশ করে, তাহলে সুপারিশ গ্রহণ করা হয়, যদি কথা বলে, তবে তা শোনা হয়। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুপ থাকলেন। এরপর সেখান দিয়ে একজন গরীব মুসলিম অতিক্রম করতেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমাদের কী ধারণা? তারা জবাব দিলেন, যদি এ ব্যক্তি কোথাও বিয়ের প্রস্তাব করে তার সাথে বিয়ে দেয়া হয় না। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, দুনিয়া ভর্তি ঐ ধনীদের চেয়ে এ দরিদ্র লোকটি উত্তম।
ইমাম আল গাযালী বলেন, ‘‘মেয়ের পাত্র নির্বাচনের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বিয়ের মাধ্যমে সে যেন অনিচ্ছা সত্ত্বেও এক প্রকার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়। আর স্বামী সর্বাবস্থায় তালাক প্রদানের ক্ষমতা রাখে। যে ব্যক্তি কোন অত্যাচারী, ফাসিক, বিদ‘আতী অথবা মদ্যপের সাথে তার মেয়ের বিয়ে দিবে সে তার ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা ও খারাপ পাত্র পছন্দের কারণে আল্লাহর ক্রোধে নিপতিত হবে।’’
তৃতীয় স্তর : প্রস্তাব প্রদান করা ও পাত্রী দেখা বিয়ের অন্যতম প্রারম্ভিক বিষয়। বর-কনে যে কোন পক্ষ থেকেই প্রস্তাব প্রদান করা যায়। দাম্পত্য জীবনে পদার্পণের পূর্বেই নারী-পুরুষ পরস্পরকে দেখে নেয়ার ব্যাপারে ইসলামী শরীয়তে সুস্পষ্ট বিধান বিধৃত রয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, বিয়ের পূর্বেই যাতে নারী-পুরুষ পরস্পরকে জানার সুযোগ পায় এবং দাম্পত্য জীবন সুখকর হয়। শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী বলেন,
السبب فى استحباب النظر إلى المخطوبة أن يكون التزوج على روية وأن يكون أبعد من الندم الذى يلزمه إن اقتحم فى النكاح ولم يوافقه فلم يرده، وأسهل للتلافى إن رد وأن يكون تزوجها على شوق ونشاط إن وافقه، والرجل الحكيم لا يلج مولجا حتى يتبين خيره وشره قبل ولوجه.
‘‘বিয়ে যেন ধীরস্থিরতার সাথে হয়, পাত্রী অপছন্দ হওয়া ও প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে অক্ষম হওয়া সত্ত্বেও বিয়েতে প্রবৃত্ত হওয়ার অনুতাপ থেকে বেঁচে থাকতে পারে, যদি তার প্রস্তাব প্রত্যাখান করা হয় তাহলে যেন তার ধকল কাটিয়ে উঠতে সহজতর হয় এবং যদি প্রস্তাবে সম্মত হয় তাহলে বিয়ে যেন আগ্রহ সহকারে হয় সেজন্য পাত্রী দেখা সুন্নাত। বিচক্ষণ ব্যক্তি কল্যাণ-অকল্যাণ পরখ না করে কোন স্থানে প্রবেশ করতে পারে না।’’ আল-আ‘মাশ বলেন, ‘‘যে বিয়ে দেখা ছাড়াই অনুষ্টিত হয় তার শেষ পরিণতি হয় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।’’
মহান আল্লাহ বলেন, فَانْكِحُواْ مَا طَابَ لَكُمْ مِّنَ النِّسَاءِ ‘‘তোমরা বিয়ে কর সেই নারীকে যাকে তোমার ভাল লাগে।’’ (সূরা আন নিসা, আয়াত ৩)। কোন পুরুষের কোন নারী এবং কোন নারীর কোন পুরুষ পছন্দ তা পরস্পরকে দেখার মাধ্যমে জানা সম্ভব। উল্লেখিত আয়াতাংশের ব্যাখায় ইমাম সুয়ূতী বলেছেন, ‘‘এ আয়াতে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে যে, বিয়ের পূর্বে কনেকে দেখে নেয়া সম্পূর্ণ হালাল। কেননা দেখার মাধ্যমেই কোন মেয়ে পছন্দ ও ভাল তা বুঝা যাবে।’’
এ সম্পর্কে বেশ কিছু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে-
১. জাবির (রা) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ কোন নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তখন যদি তার পক্ষে সম্ভব হয় তাহলে সে যেন তার এমন অঙ্গ দেখে নেয়, যা তাকে বিয়ের প্রতি উৎসাহিত করবে। জাবির (রা) বলেন, অতঃপর আমি জনৈকা কুমারীকে বিয়ের জন্য প্রস্তাব দেই এবং গোপনে তাকে দর্শন করি, এমনকি তার চেহারাও আমি দেখি, যা আমাকে তার সাথে বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ হতে উদ্বুদ্ধ করে। অতঃপর আমি তাকে বিয়ে করি।’’
২. মুগীরা বিন শো‘বা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি এক মহিলার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেন, ‘‘তাঁকে দেখে নাও। এটা তোমাদের উভয়ের মধ্যে ভালবাসার সৃষ্টি করবে।’’
৩. আবু হুরাইরা (রা) বলেন, আমি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি তার নিকট এসে তাঁকে বলল যে, সে আনসার সম্প্রদায়ের এক মেয়েকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, ‘‘তুমি কি তাকে দেখেছ? সে বলল, না। তিনি বললেন, যাও! তুমি তাকে দেখে নাও। কারণ আনসারদের চোখে কিছুটা ত্রুটি আছে।’’
৪. সাহল বিন সা‘দ (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি নিজেকে আপনার কাছে সমর্পণ করতে এসেছি। এরপর রাসূলুল্লাহ তার দিকে দেখলেন এবং অত্যন্ত সতর্কতার সাথে দৃষ্টি দিলেন, আপাদমস্তক দেখা শেষ করে তিনি মাথা নিচু করলেন।
নারীর কোন কোন অঙ্গ দেখা যাবে :
অধিকাংশ বিদ্বানের মতে, নারীর শুধু মুখমন্ডল ও দুই হাত দেখা যাবে। কারণ মুখমন্ডল দেখলে সুন্দর-অসুন্দর হওয়ার বিষয়টি অনুধাবন করা যায়। যেহেতু মুখমন্ডল হচ্ছে সৌন্দর্যের মিলনস্থল। আর দু’হাত দেখলে শরীরের কোমলতা-অকোমলতা অনুভব করা যায়। ইমাম আবু হানীফা (র) পাত্রীর দু’পা দেখা বৈধ আখ্যা দিয়েছেন। হাম্বলী মাযহাবের আলেমগণ পাত্রীর ৬টি অঙ্গ দেখা বৈধ বলেছেন। যথা: মুখমন্ডল, হাঁটু, হাত, পা, মাথা ও পায়ের নলা।
পাত্র যেমন পাত্রী দেখবে তেমনি পাত্রীও পাত্রকে দেখে নিবে। তবে পাত্র-পাত্রী দেখার নামে উভয়ে নির্জনে মিলিত হওয়া হারাম। কারণ ইসলামী শরীয়তে শুধু দেখা বৈধ করা হয়েছে। অবশ্য পাত্র-পাত্রীর সাথে যদি মাহরাম থাকে তাহলে কোন সমস্যা নেই। কারণ এমতাবস্থায় ফিতনার আশঙ্কা থাকে না। ইবনু আববাস (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘মাহরামের বিনা উপস্থিতিতে কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে নির্জনে সাক্ষাৎ করবে না।’’ অন্য হাদীসে এসেছে, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে সে যেন মাহরাম ব্যতীত কোন নারীর সাথে নির্জনে মিলিত না হয়।’’ আরেকটি হাদীসে এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘যখন দু’জনে নির্জনে মিলিত হয় তখন তাদের মধ্যে তৃতীয়জন হয় শয়তান।’’
আমাদের সমাজে পাত্রী দেখার নাম করে হবু বর-কনে নির্জনে মিলিত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে খোঁড়া যুক্তি দেখানো হয়, তারা পরস্পরকে জানা-শোনার জন্য এরূপ করে থাকে। অন্যদিকে অনেকে অতি ভাল মানুষী দেখাতে গিয়ে পাত্রীকে দেখতে দেয় না। আবার অনেকে শুধু ছবি দেখানোকেই যথেষ্ট মনে করে। এ ধরনের মানসিকতা বর্জনীয়। ইসলাম এক্ষেত্রে মধ্যম পন্থাকেই বেছে নিয়েছে। পাত্রী দেখার নামে যেমন মাহরাম ব্যতীত নির্জনে মিলিত হওয়া ইসলামে বৈধ নয়, তেমনি পাত্রীকে না দেখানোও ইসলাম সমর্থন করে না। বরং বিয়ের পূর্বে পাত্র-পাত্রী পরস্পরকে দেখে নিবে। যাতে পরবর্তীতে কারো বিরুদ্ধে কারো কোন অভিযোগ-অনুযোগ না থাকে এবং তাদের দাম্পত্য জীবন ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে মনোরম হয়ে ওঠে। আবার অনেক সময় শুধু ইনগেইজমেন্ট হয়ে গেলে তারা উভয়ে যথেচ্ছ ঘুরে বেড়ায় এবং হবু স্ত্রীর বাসায় গিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করে। এ ধরনের কর্মকান্ডও অবশ্যই বর্জনীয়। কারণ শুধু প্রস্তাব দেয়া ও ইনগেইজমেন্টের কারণে বিয়ে হয়ে যায় না।
চতুর্থ স্তর : অর্থনৈতিক প্রস্ত্ততি গ্রহণ। মোহর এক্ষেত্রে অন্যতম একটি বিষয়। ইসলামী শরীয়তে পুরুষের ওপর মোহর প্রদান করাকে ওয়াজিব করা হয়েছে। এর প্রমাণ নিম্নরূপ:
১. ইরশাদ হয়েছে, وَآتُواْ النَّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ‘‘তোমরা নারীদেরকে তাদের মোহর স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে।’’ (সূরা আন নিসা, আয়াত ৪)। ইমাম কুরতুবী (র) বলেন, هذه الأية تدل على وجوب الصداق للمرأة، وهو مجمع عليه ولا خلاف فيه. ‘‘এ আয়াতটি নারীকে মোহর প্রদান ওয়াজিব হওয়ার প্রতি নির্দেশ করে। এটি স্বতঃসিদ্ধ বিষয় এবং এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই।’’ আল্লাহ রাববুল আলামীন আরো বলেন, وَأُحِلَّ لَكُمْ مَّا وَرَاء ذَلِكُمْ أَنْ تَبْتَغُواْ بِأَمْوَالِكُم مُّحْصِنِيْنَ غَيْرَ مُسَافِحِيْنَ فَمَا اسْتَمْتَعْتُمْ بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوْهُنَّ أُجُوْرَهُنَّ فَرِيْضَةً ‘‘উল্লেখিত নারীগণ ব্যতীত অন্য নারীকে অর্থব্যয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে চাওয়া তোমাদের জন্য বৈধ করা হল, অবৈধ যৌন সম্পর্কের জন্য নয়। তাদের মধ্যে যাদেরকে তোমরা সম্ভোগ করেছ তাদের নির্ধারিত মোহর অর্পণ করবে।’’ (সূরা আন নিসা, আয়াত ২৪)। فَانْكِحُوْهُنَّ بِإِذْنِ أَهْلِهِنَّ وَآتُوْهُنَّ أُجُوْرَهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ ‘‘তাদেরকে বিয়ে করবে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে এবং তাদেরকে তাদের মোহর ন্যায়সংগতভাবে দেবে।’’ (সূরা আন নিসা, আয়াত ২৫)। وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ أَنْ تَنْكِحُوْهُنَّ إِذَا آتَيْتُمُوْهُنَّ أُجُوْرَهُنَّ ‘‘তোমরা তাদেরকে বিয়ে করলে তোমাদের কোন অপরাধ হবে না যদি তোমরা তাদেরকে মোহর দাও।’’ (সূরা মুমতাহিনা, আয়াত ১০)।
২. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, تزوج ولوبخاتم من حديد ‘‘লোহার আংটি দিয়ে হলেও বিয়ে করো।’’
উল্লেখ্য, রাসূলুললাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে কোন বিয়েই মোহর ছাড়া করেননি।
মোহর ওয়াজিব করার তাৎপর্য : মোহর হচ্ছে নারীর যৌনাঙ্গ ভোগ করার বিনিময়। স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে মোহর প্রদান করা তার সাথে সুন্দর আচরণের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবন সুখকর করার প্রমাণ। মোহর প্রদানের মাধ্যমে নারীকে সম্মান করা হয় এবং এতে বিয়ের গুরুত্বও প্রতিভাত হয়। জাহিলী যুগে নারীরা কোন সম্পদের মালিক হতে পারত না। মোহরের বিধান প্রবর্তনের মাধ্যমে তাদেরকে সম্পদের মালিকানা লাভের অধিকার প্রদান করা হয়েছে। এসব কারণেই ইসলামী শরীয়তে মোহর প্রদান ওয়াজিব করা হয়েছে।
মোহরের পরিমাণ : সকলের ঐক্যমত অনুযায়ী মোহরের কোন নির্দিষ্ট ঊর্ধ্বসীমা নেই। কেননা কুরআন-হাদীসের এমন কোন প্রমাণ নেই যা এ ব্যাপারে নির্দেশ করে। ইমাম শাওকানী বলেন, ‘‘মোহরের আধিক্যের সীমা না থাকার ব্যাপারে ইজমা সাব্যস্ত হয়েছে।’’ ইরশাদ হয়েছে, وَإِنْ أَرَدتُّمُ اسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَّكَانَ زَوْجٍ وَآتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنْطَاراً فَلاَ تَأْخُذُواْ مِنْهُ شَيْئاً ‘‘তোমরা যদি এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করা স্থির কর এবং তাদের একজনকে অগাধ অর্থও দিয়ে থাক, তবুও তা থেকে কিছুই প্রতিগ্রহণ করো না।’’ (সূরা আন নিসা, আয়াত ২০)। এ আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, মোহরের সর্বোচ্চ কোন সীমা নেই।
একদা উমার (রা) খুতবায় ৪০০ দিরহামের বেশি মোহর নির্ধারণ করতে নিষেধ করে বলেন, তোমরা মোহর নির্ধারণের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করবে না। কেননা যদি তা পার্থিব জীবনে সম্মানের বস্ত্ত হত অথবা আল্লাহর নিকট তাকওয়ার বস্ত্ত হত, তবে তা পাওয়ার যোগ্যতম ব্যক্তি হতেন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তিনি তাঁর কোন স্ত্রীর এবং তাঁর কোন কন্যার জন্য বার উকিয়ার বেশী মোহর ধার্য করেননি। মিম্বর থেকে নামার পর জনৈক কুরাইশী মহিলা তাঁকে বলল, হে উমার! এটা আপনার এখতিয়ারভুক্ত কোন বিষয় নয়। উমার (রা) বললেন, কেন? মহিলাটি বলল, কারণ আল্লাহ বলেছেন, ‘‘যদি তাদের একজনকে অগাধ অর্থও দিয়ে থাক, তবুও তা থেকে কিছুই প্রতিগ্রহণ করবে না। তোমরা কি মিথ্যা অপবাদ এবং প্রকাশ্য পাপাচরণ দ্বারা তা গ্রহণ করবে।’’ (সূরা আন নিসা, আয়াত ২০) এ কথা শুনে উমার (রা) বলেন, একজন মহিলা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে এবং একজন পুরুষ ভুল করেছে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, উমার (রা) বলেন, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর। সবাই উমারের চেয়ে বেশী জ্ঞানী। অতঃপর তিনি পুনরায় মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, আমি তোমাদেরকে স্ত্রীদের মোহর ৪০০ দিরহামের বেশী ধার্য করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু যে ব্যক্তি তার সম্পদ থেকে যত খুশী স্ত্রীকে প্রদান করতে চায় (সে যেন তা প্রদান করে)।
তবে মোহর বেশী নির্ধারণ না করাই উত্তম। ইমাম শাওকানী বলেন, ‘‘কারণ মোহরের পরিমাণ কম হলে বিয়ে করা কঠিন হবে না। ফলে এতে কাঙ্খিত বিয়ের সংখ্যা বাড়বে, গরীবরাও বিয়ে করতে সমর্থ হবে এবং বংশ বিস্তার লাভ করবে, যা বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য। পক্ষান্তরে মোহর যদি বেশী হয় তাহলে বড় লোকেরা ছাড়া অন্যরা বিয়ে করতে সমর্থ হবে না। ফলে সংখ্যাধিক্য গরীবরা অবিবাহিত থেকে যাবে। এতে মুসলিম উম্মাহর সংখ্যাধিক্যতা অর্জিত হবে না, যে ব্যাপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিকনির্দেশা প্রদান করেছেন।’’
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে লোহার আংটি ও কুরআনের আয়াত শিক্ষা দানকে মোহর নির্ধারণ করা হয়েছিল। আলী (রা) ফাতিমা (রা)-কে একটি বর্ম মোহর হিসেবে প্রদান করে বিয়ে করেন।
বিখ্যাত তাবেঈ সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব এক ইলমের মজলিসে তার ছাত্রের সাথে মেয়ের বিয়ে দেয়ার জন্য তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার নিকট কি আছে? সে বলল, আমার নিকট মাত্র ১ দিরহাম আছে। সাঈদ বললেন, আমি এক দিরহামের বিনিময়ে আমার মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে দিলাম।
মোহরের নিম্নসীমা : হানাফীদের মতে, মোহরের সর্বনিম্ন সীমা ১০ দিরহাম। এর প্রমাণ এ হাদীসটি- ‘‘১০ দিরহামের কমে মোহর নেই।’’ ইমাম শাওকানী বলেন, ‘‘যদি এই হাদীসটি সহীহ হত তাহলে তা পূর্বোল্লেখিত যেসব হাদীসে মোহরের পরিমাণ এর চেয়ে কম হতে পারে বলে নির্দেশ করা হয়েছে, সেগুলোর বিরোধী হত। কিন্তু এই হাদীসটি বিশুদ্ধ নয়। এ হাদীসে মুবাশশির বিন আবীদ ও হাজ্জাজ বিন আরতাআহ নামে দু’জন দুর্বল বর্ণনাকারী রয়েছে। হাজ্জাল মুদাললিস এবং মুবাশশির পরিত্যক্ত বর্ণনাকারী হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।’’
মালেকীদের মতে, মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হচ্ছে ১/৪ দীনার অথবা তিন দিরহাম অথবা সমমূল্যের ব্যবসায়ী পণ্য। আর শাফেঈ ও হাম্বলীদের মতে, মোহরের কোন সর্বনিম্ন সীমা নেই। তাদের মতে, যে জিনিসের মূল্য রয়েছে তা মোহর হিসেবে গণ্য হতে পারে। আর যে জিনিস মূল্যহীন তা মোহর হতে পারে না। ইমাম শাওকানী এ মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
মোদ্দাকথা, মোহরের সুনির্দিষ্ট কোন পরিমাণ নেই। তা কমও হতে পারে। আবার বেশিও হতে পারে। পারস্পরিক সমঝোতা এবং সামর্থ্যের উপর ভিত্তি করে মোহর কম-বেশী হতে পারে। শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী বলেন, ‘‘নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মোহরের এমন নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারণ করেননি যার কম বা বেশি মোহর নির্ধারণ করা চলবে না। কারণ এ ব্যাপারে লোকদের আগ্রহ প্রকাশ করার রেওয়াজ ও অভিরুচি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তাছাড়া চাহিদার ক্ষেত্রেও লোকদের স্তর রয়েছে। এজন্য তাদের জন্য মোহরের পরিমাণ নির্দিষ্ট করা সম্ভব নয়। যেমন কাঙ্খিত পণ্যের নির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারণ করা অসম্ভব। মোহরের পরিমাণ এমন হওয়া উচিত যা আদায় করার জন্য প্রয়াস চালাতে হয় এবং তার একটা মূল্য থাকে। আর এমন পরিমাণ হওয়া উচিত নয় যা সাধারণত লোকদের চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী আদায় করা কষ্টসাধ্য হবে। এটাই মোহরের ক্ষেত্রে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যে রীতি রয়েছে তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য।’’
মোহরের ব্যাপারে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে মুসলিম সমাজ অনেক দূরে সরে গেছে। স্ত্রীকে তালাক প্রদানের প্রতিবন্ধক অথবা সামাজিক মর্যাদার দোহাই পেড়ে নারী পক্ষ মোটা অংকের মোহর দাবী করে বসে। যেন নারী পণ্য। অনেক সময় মোহরের অংক নিয়ে বর ও কনে পক্ষের মতদ্বৈততার কারণে বিয়ে পর্যন্ত ভেঙ্গে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মোহর পরিশোধের কোন তোয়াক্কাই করা হয় না। অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কম বা বেশী পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করে বিয়ে করল আর মনে মনে তা পরিশোধ না করার সংকল্প করল, সে তার স্ত্রীর সাথে প্রতারণা করল। মোহর পরিশোধ না করা অবস্থায় যদি সে মৃত্যুবরণ করে তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট ব্যভিচারী হিসেবে সাক্ষাৎ করবে।’’
আল্লামা আবুল আলা মওদূদী বলেন, ‘‘এ দেশের মুসলমানরা সাধারণত দেন মোহরকে একটা প্রথাগত জিনিস মাত্র মনে করে। কুরআন হাদীসে মোহরের যে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে তাদের দৃষ্টিতে তার সে গুরুত্ব অবশ্যই নেই। বিয়ের সময় সম্পূর্ণ প্রদর্শনীমূলকভাবে মোহরের চুক্তি হয়ে থাকে। কিন্তু এ চুক্তি কার্যকর করার কোনো চিন্তাই তাদের মস্তিষ্কে থাকে না। মোহরের বিষয় আলোচনাকালে আমি নিজ কানে বহুবার একথা শুনেছিঃ ‘‘আরে মিঞা! মোহর দেয়ই বা কে আর নেয়ই বা কে!’’ এ যেনো কেবল একটা ফরয পূরণের জন্যেই ধার্য করা হয়। আমার জানা মতে শতকরা আশিটি বিয়ে এরূপ হয়ে থাকে যেগুলোতে কখনো মোহর পরিশোধ করা হয় না। লোকেরা কেবল তালাকের প্রতিবন্ধক হিসেবেই মোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করে থাকে। এভাবে কার্যত নারী সমাজের শরীয়তপ্রদত্ত একটি পাকাপোক্ত অধিকারকে বিলুপ্ত করা হলো। একথার কোনো পরোয়াই করা হয় না যে, যে শরীয়তের দৃষ্টিতে এ লোকেরা নারীদেরকে পুরুষদের জন্য বৈধ করে নেয় সে শরীয়তই মোহরকে নারীর যৌনাঙ্গ হালাল করার জন্য ‘বিনিময়’ বলে ঘোষণা করেছে। আর এ বিনিময় পরিশোধ করার নিয়ত না থাকলে খোদার নিকট পুরুষের জন্যে স্ত্রী হালালই হয় না।’’
পঞ্চম স্তর : ইসলামে পরিবার গঠনের পঞ্চম স্তর হচ্ছে ইজাব (প্রস্তাব) ও কবুল (গ্রহণ)। এটি বিয়ের অন্যতম রুূকন। কারণ এর মাধ্যমেই একজন পুরুষের সাথে আরেকজন নারীর সম্পর্ক জুড়ে দেয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে উভয়ের সম্মতি শর্ত। বর-কনে যে কোন একজনের পক্ষ থেকে প্রথমে বিয়ের সম্মতিসূচক যে উক্তি বের হয় তা হানাফীদের মতে ইজাব। তার পরে অন্য জনের পক্ষ থেকে যে উক্তি বের হয় তা কবুল। যেমন কোন পুরুষ যদি কোন মহিলাকে বলে, তুমি আমার সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হও। তখন মহিলা বলল, আমি (এই প্রস্তাব) গ্রহণ করলাম। তাহলে হানাফীদের মতে প্রথমটি হবে ইজাব (প্রস্তাব) আর দ্বিতীয়টি হবে কুবল (গ্রহণ)। তবে অধিকাংশ বিদ্বানের মতে, মেয়ের অভিভাবকের কথা হবে ইজাব বা প্রস্তাব। আর বরের কথা হবে কবুল।
তৃতীয় অধ্যায় : পরিবার সংরক্ষণে ইসলামের গৃহীত পদক্ষেপ
ইসলাম পরিবারকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
১. দৃষ্টি সংযতকরণের নির্দেশ প্রদান :
দেখার মাধ্যমেই একজনের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয় এবং ক্রমান্বয়ে ব্যভিচারের পথে ধাবিত করে। একজন আরবী কবি বলেছেন, نـــظرة فابتــسامة فسلام + فكـــلام فموعـــد فلــقاء
দৃষ্টি বিনিময়, মুচকি হাসি, সালাম
তারপর আলাপ, সাক্ষাতের স্থান নির্ধারণ ও সাক্ষাৎ।
তাই ইসলাম পরিবারকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নারী-পুরুষ উভয়কে দৃষ্টি সংযতকরণের নির্দেশ প্রদান করেছে। মহান আল্লাহ বলেন, قُل لِّلْمُؤْمِنِيْنَ يَغُضُّوْا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوْا فُرُوْجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيْرٌ بِمَا يَصْنَعُوْنَ-وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ ‘‘মুমিনদেরকে বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে; এটাই তাদের জন্য উত্তম। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে..।’’ (সূরা আন নূর, আয়াত ৩০-৩১)।
‘‘রাস্তার হক কী’’ এ প্রশ্নের উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন, ‘‘দৃষ্টিকে সংযত রাখা, কাউকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের উত্তর দেয়া, ভালো কাজের আদেশ করা এবং খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করা।’’ অন্য হাদীসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘‘আল্লাহ তায়ালা আদম সন্তানের জন্য তার ব্যভিচারের অংশ নির্ধারিত করে রেখেছেন। সে তা নিশ্চয় করবে। চোখের ব্যভিচার দেখা, জিহবার ব্যভিচার কথা বলা আর মন চায় ও আকাঙ্খা করে এবং গুপ্ত অঙ্গ তাকে সত্য অথবা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে।’’
২. পর্দার বিধান প্রবর্তন :
আল্লাহ রাববুল আলামীন পুরুষ ও নারীকে পরস্পরের প্রতি আকর্ষণীয় করে সৃষ্টি করেছেন। এটি একটি স্বভাবগত ব্যাপার। কিন্তু এ আকষর্ণকে নিয়ন্ত্রণহীন করলে তা সমাজকে কলুষিত করে ধ্বংসের গহবরে নিক্ষেপ করে। সমাজে যেনা-ব্যভিচার মহামারীর আকার ধারণ করে। তাই সমাজদেহকে কলুষমুক্ত রাখতে এবং অন্তরকে শয়তানী চিন্তা-ভাবনা থেকে পবিত্র রাখতে ইসলাম নারীকে পর্দার বিধান মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, وَلَا يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُوْلَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاء بُعُوْلَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاء بُعُوْلَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِيْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِيْŠ أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِيْنَ غَيْرِ أُوْلِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِيْنَ لَمْ يَظْهَرُوْا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاء ‘‘তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা-রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারো নিকট তাদের আভরণ প্রকাশ না করে।’’ (সূরা আন নূর, আয়াত ৩১)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاء الْمُؤْمِنِيْنَ يُدْنِيْنَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيْبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُّعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ ‘‘হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলো, তার যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টানিয়ে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।’’ (সূরা আহযাব, আয়াত ৫৯)।
ইসলামে পর্দার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ কোন পুরুষ যখন কোন নারীর প্রতি তাকায়, তার সৌন্দর্য অবলোকন করে এবং তার শরীরের কামোত্তেজক অঙ্গগুলো প্রত্যক্ষ করে তখন সেই পুরুষের হৃদয়ে জ্বলে ওঠে কামনার প্রাকৃতিক শিখা। সে শিখার দহনে অবিরাম দগ্ধিভূত হতে থাকে সে। নিরাশায় ভাবতে থাকে কল্পনার স্বচ্ছ দর্পণে অঙ্কিত সেই নারীর দেহ সৌন্দর্য নিয়ে। কত ঘুম তার নষ্ট হয় সেই ভাবনার আঘাতে। কত রজনী কাটে বিনিদ্র কল্পনার জাল বুনতে বুনতে। কল্পনার সেই ছোট ছোট ঢেউ এক সময় বিক্ষুব্ধ তরঙ্গের সৃষ্টি করে তার যৌবন দরিয়ায়। সে তরঙ্গে অনাথের মত হারিয়ে যায় সমাজ সভ্যতা নামের বেড়ি-বন্ধন। স্বপ্নের নীলাকাশে সে তখন উড়তে থাকে কল্পনার পাখায় গা এলিয়ে বিহঙ্গের মতো। তার স্বপ্নের নারীকে এ্রকান্তে পাবার ক্ষীপ্র বাসনায় ক্ষুধার্ত ব্যাঘ্রের মতো হিংস্র হয়ে ওঠে সে। তারপর ঘটে যায় দুর্ঘটনা। পুরুষ নারীকে তার বাহুডোরে বেঁধে ফেলে পাপের চোরাগলিতে হারিয়ে যায়। এজন্য ইসলাম এ থেকে রক্ষা করার জন্য দেহ সৌন্দর্যকে ঢেকে রাখা তথা পর্দার বিধান দিয়েছে।
পর্দার উপকারিতা অনেক। যে সমাজের নারীরা পর্দায় থাকে সে সমাজ আশা করতে পারে একটি নিদাগ পবিত্র বিধৌত আলোকিত মা জাতির। যে জাতি সমাজকে উপহার দিবে একটি পরিচ্ছন্ন আলোকময় নতুন প্রজন্ম। যাদের পরশে সোনা হয়ে উঠবে সমাজ সভ্যতা ও দেশ। সভ্য সতী নারী যে সমাজে নেই সভ্য প্রজন্ম সে সমাজ পাবে কোথায়? তাছাড়া সভ্য প্রজন্ম ছাড়া কি কোন সমাজ সভ্য হতে পারে।
ইসলাম বিদ্বেষীরা উঁচু গলায় বলে বেড়ায়, ইসলামের হিজাব বা পর্দা প্রথা মুসলিম মহিলাদের পেছনে ঠেলে দিচ্ছে। তাদের কারণে জাতীয় উন্নয়ন ও প্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কাজেই জাতীয় উন্নতি ও প্রগতি চাইলে মুসলিম মহিলাদের হিজাব বা পর্দা ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে।
মুক্ত বিহঙ্গের মত বন্ধু-বান্ধবীর হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো, ফ্যাশনের নামে বেলেল্লাপনা, নাইট ক্লাবে গিয়ে ভিন পুরুষের সাথে রাত কাটানো, অফিসের বসকে নিয়ে কিংবা অফিসের পি.এ বা পি.এসকে নিয়ে প্লেজার ট্যুরে যাওয়া- এগুলি যদি প্রগতি হয় তাহলে ইসলাম তথাকথিত এ প্রগতির ঘোর বিরোধী। আর যদি প্রগতি বলতে নারী-পুরুষ স্ব-স্ব ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেয়া বুঝায়, আদর্শ পরিবার, আদর্শ সমাজ ও জনকল্যাণমূলক আদর্শ রাষ্ট্র বুঝায়, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বুঝায় তাহলে ইসলাম সেই প্রগতির বিরোধী তো নয়ই বরং ইসলাম-ই তার প্রবক্তা।

৩. ব্যভিচার নিষিদ্ধকরণ :
ইসলাম পরিবারের বন্ধনকে সুদৃঢ় করার জন্য ব্যভিচারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ইসলামে ব্যভিচারকে হালাল মনেকারীকে কাফির ও হালাল মনে না করে ব্যভিচারে নিপতিত ব্যক্তিকে ফাসিক বলে গণ্য করা হয়েছে। যদি ব্যভিচারী ব্যক্তি বিবাহিত হয় তবে তাকে পাথর মেরে হত্যা করতে হবে। আর যদি অবিবাহিত হয় তাহলে একশ’ বেত্রাঘাত ও দেশান্তর করতে হবে। যায়েদ বিন খালেদ আল-জুহানী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি অবিবাহিত ব্যভিচারী ব্যক্তিকে একশ’ বেত্রাঘাত এবং এক বছর দেশান্তর করার কথা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি।
আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মাদকে সত্য দ্বীন সহ প্রেরণ করেছেন এবং তার উপর কুরআন মাজীদ অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা যেসব আয়াত নাযিল করেছেন তন্মধ্যে রজমের আয়াত একটি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রজম করেছেন এবং তাঁর পরে আমরাও রজম করেছি। আর মূলত রজমের বিধান আল্লাহর কিতাবের মধ্যে সত্য ও অবধারিত সেই ব্যক্তির উপর, যে পুরুষ ও নারী বৈবাহিক জীবন যাপনের পর ব্যভিচারে লিপ্ত হলো এবং এর প্রমাণও পাওয়া গেল অথবা অবৈধ গর্ভ প্রমাণিত হলো কিংবা স্বীকারোক্তি করল।
যুগে যুগে ব্যভিচারই সভ্যতা ধ্বংসের অন্যতম কারণ ছিল। ব্যভিচার হচ্ছে সমাজদেহ বিধ্বংসী উইপোকা সদৃশ। যা সমাজকে কুরে কুরে খেয়ে নিঃশেষ করে দেয়। মহান আল্লাহ বলেন, وَلاَ تَقْرَبُواْ الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَّسَاءَ سَبِيْلاً ‘‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। ইহা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।’’ (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত ৩২)। অন্যত্র আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন,
سُورَةٌ أَنزَلْنَاهَا وَفَرَضْنَاهَا وَأَنزَلْنَا فِيْهَا آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ لَّعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ -الزَّانِيَةُ وَالزَّانِيْ فَاجْلِدُوْا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِئَةَ جَلْدَةٍ وَلَا تَأْخُذْكُم بِهِمَا رَأْفَةٌ فِيْ دِيْنِ اللَّهِ إِنْ كُنتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِّنَ الْمُؤْمِنِيْنَ-الزَّانِيْ لَا يَنكِحُ إلَّا زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً وَالزَّانِيَةُ لَا يَنكِحُهَا إِلَّا زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ وَحُرِّمَ ذَلِكَ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ.
‘‘এটি একটি সূরা, ইহা আমি অবতীর্ণ করেছি এবং ইহার বিধানকে অবশ্য পালনীয় করেছি। এতে আমি অবতীর্ণ করেছি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী- এদের প্রত্যেককে এক শত কশাঘাত করবে, আল্লাহর বিধান কার্যকরীকরণে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবান্বিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী হও; মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। ব্যভিচারী ব্যভিচারিণীকে অথবা মুশরিক নারীকে ব্যতীত বিয়ে করে না এবং ব্যভিচারিণী- তাকে ব্যভিচারী অথবা মুশরিক ব্যতীত কেউ বিয়ে করে না, মুমিনের জন্য ইহা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’’ (সূরা আন নূর, আয়াত ১-৩)।
শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী বলেন,
والسر فيه أن كون الزانية فى عصمته و تحت يده وهى باقية على عادتها من الزنا ديوثية وانسلاخ عن الفطرة السليمة، وأيضا فإنه لا يأمن من أن تلحق به ولد غيره.
‘‘ব্যভিচারিণীকে ব্যভিচারী অথবা মুশরিক ব্যতীত কেউ বিয়ে না করার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হচ্ছে, ব্যভিচারিণী স্বামীর সংশ্রব ও অধীনে থেকে তার ব্যভিচারের অভ্যাসে বহাল থাকা গর্হিত কাজ এবং সহজাত স্বভাব থেকে বেরিয়ে আসার নামান্তর। অনুরূপভাবে এরূপ স্ত্রীর স্বামী এ থেকে নিরাপদ নয় যে, অন্যের গর্ভজাত সন্তান তার সাথে সংশ্লিষ্ট হবে।’’
এক্ষণে প্রশ্ন হলো, ইসলাম ব্যভিচারের ব্যাপারে কেন এত কড়াকড়ি আরোপ করেছে? এর উত্তর হচ্ছে, ব্যভিচারের দ্বার রুদ্ধ করে পরিবারকে রক্ষা করার জন্যই ইসলাম এ ব্যাপারে এত কড়াকড়ি আরোপ করেছে। পরিবারের পবিত্র বন্ধন যেন নিষ্কলুষ হয় সেজন্যই ইসলামের এ বজ্রকঠিন পদক্ষেপ। যদি ব্যভিচারের দ্বার উন্মুক্ত রাখা হতো তাহলে বৈধ সন্তান জন্মগ্রহণ করত না, স্বামী-স্ত্রী তাদের পারিবারিক জীবনের কষ্ট-ক্লেশ বহন করত না এবং পুরুষ মোহর প্রদান ও স্ত্রী-সন্তানের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করত না।
ব্যভিচার পরিবারের ভিত্তিকে ধসিয়ে দেয়া এবং অশ্লীলতার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া ছাড়াও ব্যভিচারী-ব্যভিচারিণীকে নানাবিধ দুরোরোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত করে। যেমন সিফিলিস, গনোরিয়া, এইডস প্রভৃতি। এসব অসুখ-বিসুখ তাকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। বংশপরম্পরায় পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও এসব রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে মহামারী আকারে। ব্যভিচারী ব্যক্তি দুরারোধ্য রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত যদি নাও হয় তবু চারিত্রিক ব্যাধিতে সে নিরন্তর আক্রান্ত হয়। সে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং যৌন চাহিদা নিবারণের বক্র পথ অবলম্বন করে।
ব্যভিচার বিস্তার লাভ করলে বেশ্যাবৃত্তি বৃদ্ধি পায়। যা সমাজের ভিতকে নড়বড়ে করে দেয় এবং সর্বব্যাপী অশ্লীলতা সমাজকে অক্টোপাসের ন্যায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। মানুষ সহজে যৌনক্ষুধা নিবারণের সুযোগ পেয়ে যায়। ফলে বিয়ের মাধ্যমে জৈবিক চাহিদা পূরণের বৈধ পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ে। এমত পরিস্থিতিতে সমাজে জারজ সন্তানের সংখ্যাও বেড়ে যায়। এরা পিতা-মাতার স্নেহের পরশ থেকে বঞ্চিত হবার ফলে সমাজের প্রতি বিদ্বেষী হয়ে বেড়ে ওঠে এবং নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। সমাজ ও পরিবার হয় হুমকির সম্মুখীন। এজন্য ইসলামে ব্যভিচারকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
আমরা যদি উন্নত সভ্যতার দাবীদার পাশ্চাত্যের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে উল্লেখিত রূঢ় সত্য আমাদের সামনে পূর্ণিমা রাতে মেঘমুক্ত আকাশে উদিত নবশশীর ন্যায় উদ্ভাসিত হয়। সিএনএন পরিবেশিত এক খবরে বলা হয়েছে, ২৯ শতাংশ আমেরিকান পুরুষ জীবনে ১৫ জন বা ততোধিক নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে। অপরদিকে ৯ শতাংশ নারী তাদের জীবনে ১৫ বা ততোধিক পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে। ১৫ বছর বয়সের আগে যৌনতার স্বাদ উপভোগ করে ১৬ শতাংশ। মাত্র ২৫ শতাংশ নারী এবং ১৭ শতাংশ পুরুষ বলে যে, তাদের ১ জনের বেশী জীবনসঙ্গী নেই। আমেরিকার ওকলাহোমা নগরীতে প্রতি ৪ জন শিশুর ১জন ১০-১৪ বছর বয়সী অবিবাহিত নারীর গর্ভে জন্মলাভ করে। ১৯৭৭ সালে আমেরিকায় পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ১৯৭২-৭৪ সাল পর্যন্ত প্রত্যেক বছর ৬ লক্ষ ৪৩ হাজার নারীর গর্ভপাত ঘটানো হয়েছে। ১৯৭৬ সালে এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় এক মিলিয়ন বা ১০ লাখের বেশি। পরিসংখ্যান থেকে আরো জানা যায়, ৭০ শতাংশ গর্ভপাত ঘটানো হয়েছে অবিবাহিত নারীদের। যুক্তরাষ্ট্রের গুটম্যাচার ইনস্টিটিউট প্রদত্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী সেদেশে প্রতিবছর ১৫-১৭ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার অবিবাহিত নারী গর্ভবতী হয়। আর সেদেশের ক্যালিফোর্নিয়ায় বছরে ১ লাখ ১৩ হাজার কিশোরী গর্ভবতী হয়।
৪. নারীর জন্য ক্ষতিকর বিয়ে নিষিদ্ধকরণ :
নারী-পুরুষের মধ্যে বৈধ সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে হচ্ছে বিয়ে। বিয়ের উদ্দেশ্য যেন ব্যাহত না হয় সেজন্য পরিবার সংরক্ষণের তাগিদে ইসলাম কয়েক ধরনের বিয়েকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তন্মধ্যে মুত‘আ, শিগার ও হিল্লা বিয়ে অন্যতম। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা পেশ করা হলো:
ক. মুত‘আ : নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাউকে বিয়ে করাকে মুত‘আ বিয়ে বলে। যেমন: কোন পুরুষ কোন নারীকে বলল, এই দশ টাকা নাও। এর বিনিময়ে আমি তোমাকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভোগ করব। তখন নারী সেই টাকা গ্রহণ করল। এরূপ বিয়েকে সাময়িক বা খন্ডকালীন বিয়েও বলা হয়।
ইসলামের প্রথম যুগে মুত‘আ বিয়ে জায়েয ছিল। ইবনু আবী ‘আমরা বলেন, انها كانت رخصة فى أول الإسلام لمن اضطر اليها، كالميتة والدم ولحم الخنزير، ثم أحكم الله الدين ونهى عنها. ‘‘ইসলামের প্রাথমিক যুগে নিরুপায় অবস্থায় মৃত জীব, রক্ত ও শূকরের গোশত ভক্ষণের ন্যায় তার (মুত‘আ) অনুমতি ছিল। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা দ্বীনকে শক্তিশালী-সুদৃঢ় করলেন এবং তা নিষিদ্ধ করলেন।’’
ইমাম নববী বলেন,
والصواب المختار أن التحريم، والإباحة كانا مرتين، وكانت حلالا قبل خيبر، ثم حرمت يوم خيبر، ثم ابيحت يوم فتح مكة.. ثم حرمت يومئذ بعد ثلاثة أيام تحريما مؤبدا إلى يوم القيامة واستمر التحريم.
‘‘সঠিক ও গ্রহণযোগ্য মত হচ্ছে, মুত‘আ হারাম ও বৈধ হওয়ার ব্যাপারটি ছিল দু’বার। খায়বারের পূর্বে তা হালাল ছিল। অতঃপর খায়বারের দিন হারাম করা হয়। এরপর মক্কা বিজয়ের দিন তা বৈধ করা হয়। অতঃপর সে সময় তিন দিন পর কিয়ামত পর্যন্ত চিরকালের জন্য তা হারাম করা হয়। হারাম হওয়ার বিধান অব্যাহত রয়েছে।’’
উলামায়ে কেরামের সর্বসম্মত মতানুযায়ী এ বিয়ে হারাম। যদি কেউ এরূপ বিয়ে করে তাহলে তা বাতিল সাব্যস্ত হবে। এর প্রমাণ হচ্ছে-
প্রথমত : কুরআন মাজীদে বর্ণিত বিয়ে, তালাক, ইদ্দত ও মীরাছের বিধি-বিধানের সাথে এ বিয়ের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। কাজেই অন্যান্য বাতিল বিয়ের ন্যায় এটিও বাতিল বলে গণ্য হবে।
দ্বিতীয়ত : এ বিয়ে হারাম হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন- (ক) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
يأيها الناس! إنى قد كنت أذنت لكم فى الاستمتاع من النساءِ، وإن الله قد حرم ذلك إلى يوم القيامة، فمن كان عنده منهن شىء فليخل سبيله، ولاتأخذوا مما آتيتموهن شيئا. ‘‘হে লোক সকল! আমি তোমাদেরকে স্ত্রীলোকদের সাথে মুত‘আ বিয়ের অনুমতি দিয়েছিলাম। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তা হারাম করেছেন। অতএব যার নিকট এই ধরনের বিয়ে সূত্রে কোন স্ত্রীলোক আছে, সে যেন তার পথ ছেড়ে দেয়। আর তোমরা তাদের যা কিছু দিয়েছ তা কেড়ে রেখে দিও না।’’
খ. আলী (রা) ইবনু আববাস (রা) কে বলেছেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার যুদ্ধে মুত‘আ বিয়ে এবং গৃহপালিত গাধার গোশত খাওয়া নিষেধ করেছেন।
তৃতীয়ত : উমার (রা) তাঁর খেলাফতকালে মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দেয়া অবস্থায় মুত‘আ বিয়ে হারাম ঘোষণা করেছেন। উপস্থিত সাহাবীগণও তাঁর মতকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। যদি উমার (রা) কোন ভুল সিদ্ধান্ত দিতেন তাহলে তারা অবশ্যই তা মেনে নিতেন না।
চতুর্থত : ইমাম খাত্তাবী বলেছেন, ‘‘কিছু শী‘আ ছাড়া মুত‘আ বিয়ে হারাম হওয়ার ব্যাপারে ইজমা হয়েছে। মতবিরোধপূর্ণ বিষয়ে আলী (রা)-এর মতের দিকে ফিরে যাওয়ার যে মূলনীতি শী‘আদের রয়েছে সে অনুযায়ীও এ বিয়ে জায়েয নয়। কারণ আলী (রা) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত আছে যে, এ বিয়ে রহিত হয়ে গেছে। ইমাম জাফর আস-সাদিককে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, هى الزنا بعينه ‘‘এটিতো সাক্ষাৎ ব্যভিচার।’’
পঞ্চমত : এ বিয়ের দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে শুধু প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ। এর দ্বারা বৈবাহিক জীবন স্থায়ীকরণ, স্ত্রীর সাথে সদারচণ করা, সন্তান জন্মদান, স্ত্রী-সন্তানদের ভরণ-পোষণ ও উত্তরাধিকার কোনটিই উদ্দেশ্য নয়। শুধু জৈবিক চাহিদা নিবারণ উদ্দেশ্য হওয়ায় এ বিয়ে ব্যভিচারের সাথে সাদৃশ্যমান। অধিকন্তু এ বিয়ে নারীর ক্ষতিসাধন করে। সে ঐ পণ্যের মতে হয়ে যায় যা একজনের থেকে অন্যজনের কাছে স্থানান্তরিত হয়। অনুরূপভাবে তা সন্তানদেরও ক্ষতির কারণ। কারণ তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করার ঘর পায় না এবং বাবা তাদের লালন-পালনের দায়িত্বও বহন করে না।
শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী বলেন,
وأيضا ففى جريان الرسم به اختلاط الأنساب لأنها عند انقضاء تلك المدة تخرج من حيزه ويكون الأمر بيدها فلا يدرى ماذا تصنع، وضبط العدة فى النكاح الصحيح الذى بناؤه على التأبيد فى غاية العسر، فما ظنك بالمتعة وإهمال النكاح الصحيح المعتبر فى الشرع؟
‘‘অনুরূপভাবে মুত‘আ বিয়ে নিষিদ্ধ করার কারণ হচ্ছে- এ প্রথা চলতে থাকলে বংশধারার সংমিশ্রণ ঘটবে। কারণ নির্দিষ্ট সময়ের পর স্ত্রী তার (সাময়িক স্বামী) আওতা থেকে বের হয়ে যাবে এবং তার দায়িত্ব নিজের উপর ন্যস্ত হবে। এমতাবস্থায় সে কী করবে তা বুঝতে পারবে না। কঠিন অবস্থাতেও চিরস্থায়ী বন্ধনের উপর ভিত্তিশীল শুদ্ধ বিয়ের ক্ষেত্রে যদি ইদ্দত পালনের বিধান রাখা হয়, তাহলে মুত‘আ ও শরীয়তে স্বীকৃত শুদ্ধ বিয়ে উপেক্ষা করার ব্যাপারে তোমার ধারণা কি?’’
একটি সংশয় নিরসন :
ইবনু আববাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি মুত‘আ বিয়েকে বৈধ বলেছেন। এর জবাব হচ্ছে, তিনি মুত‘আ বিয়ে অবৈধকরণের সংবাদ অবগত না হওয়া পর্যন্ত এ মত দিয়েছিলেন। যখন তিনি মুত‘আ হারাম হওয়ার সংবাদ অবগত হন তখন তার পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসেন। সাঈদ বিন জুবাইর থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আববাস খুতবায় দাঁড়িয়ে বলেছেন, মুত‘আ বিয়ে মৃত জীব, রক্ত ও শূকরের গোশত ভক্ষণের ন্যায় হারাম।’’ কাজেই শী‘আরা ইবনু আববাসের দোহাই পড়ে অধ্যাবধি এ বিয়েকে জায়েয মনে করার কোন যুক্তি নেই। উল্লেখ্য, শী‘আরা এখনও এ বিয়েকে মহাপুণ্যের কাজ মনে করে থাকে। (নাউযুবিল্লাহ)
খ. শিগার : কোন ব্যক্তি নিজের কন্যা বা বোনকে অন্য এক ব্যক্তির সাথে বিয়ে দেবে এ শর্তে যে, সেও তার কন্যা বা বোনকে তার সাথে বিয়ে দেবে। আর তাদের মধ্যে কোন মোহর থাকবে না।এ ধরনের বিয়েকে শিগার বলে।
জাহিলী যুগে এ বিয়ে প্রচলিত ছিল। কিন্তু ইসলামে এ বিয়েকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। ইমাম নববী বলেন,وأجمع العلماء على أنه منهى عنه. ‘‘উলামায়ে কেরাম এ বিয়ে নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।’’
ইবনু আব্দিল বার্র বলেন, أجمع العلماء على أن نكاح الشغار لا يجوز، ولكن اختلفوا فى صحته فالجمهور على البطلان. ‘‘শিগার বিয়ে নাজায়েয হওয়ার ব্যাপারে আলেমগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তবে বিয়ে হয়ে গেলে তা শুদ্ধ হবে কি-না সে ব্যাপারে তারা মতানৈক্য করেছেন। অধিকাংশ বিদ্বানের মতে এমন বিয়ে বাতিল বলে গণ্য হবে।’’
ড. ওয়াহবাহ আয-যুহায়লী বলেন,
والخلاصة: أن نكاح الشغار باطل عند الجمهور، صحيح مكروه تحريما عند الحنفية، فإن وقع فسخ النكاح عند الجمهور قبل الدخول وبعده.
‘‘মোদ্দকথা, শিগার বিয়ে অধিকাংশ বিদ্বানের নিকট বাতিল। তবে হানাফীদের মতে এভাবে বিয়ে যদি হয়েই যায় তাহলে সেই বিয়ে শুদ্ধ ও মাকরূহে তাহরীমী হবে। পক্ষান্তরে অধিকাংশের মতে যদি এ ধরনের বিয়ে হয়ে যায় তাহলে বিয়ে বিচ্ছেদ হয়ে যাবে। চাই সহবাস করুক বা না করুক।’’ হানাফীদের যুক্তি হচ্ছে, ব্যক্তিদ্বয় এমন জিনিসকে মোহর নির্ধারণ করেছে যাকে মোহর হিসেবে গণ্য করা যায় না। যেহেতু নারীর বদলে নারী কোন সম্পদ নয়। কাজেই মোহরের দিক থেকে এ বিয়েতে ফাসাদ (বিপর্যয়) এসেছে। আর তা বিয়ে বিচ্ছেদকে আবশ্যক করে না। এমতাবস্থায় তাদের মতে স্বামীকে তার স্ত্রীকে মোহরে মিছাল প্রদান করতে হবে।
শিগার নিষিদ্ধ হওয়ার দলীল :
ক. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, لا شغار فى الإسلام ‘‘ইসলামে শিগার নেই।’’
খ. ইবনু উমার (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিগার পদ্ধতির বিয়ে নিষিদ্ধ করেছেন।
শিগার নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ :
১. একজনের বিয়ের সাথে অন্যজনের বিয়ের সংশ্লিষ্টতা ও হওয়া না হওয়ার প্রশ্ন অর্থাৎ যেন একজন আরেকজনকে বলে, তোমার মেয়ের বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমার মেয়ের বিয়ে হবে না।
২. মোহর না পাওয়ার কারণে নারী অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মোহর ছাড়া এভাবে একজন নারীর বিনিময়ে অন্য নারীকে বিয়ে করা তাদের উভয়ের প্রতি যুল্ম।
৩. এ ধরনের বিয়ে উভয়ের বৈবাহিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কারণ তাদের একজনের বিনিময়ে অন্যজনকে গ্রহণ করা হয়েছে। একজনের ক্ষতি হলে দু’জনেরই ক্ষতি হয়। তাই নারীর অর্থনৈতিক অধিকার রক্ষা ও বৈবাহিক জীবনকে নিষ্কণ্টক করার জন্য এ বিয়ে হারাম করা হয়েছে।
গ. হিল্লা বিয়ে :
তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে যদি তার পূর্ব স্বামী ফিরিয়ে নিতে চায় তাহলে তাকে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে সহবাস শেষে তালাক নিয়ে প্রথম স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দেওয়াকে প্রচলিত অর্থে হিল্লা বিয়ে বলে।
হিল্লা বিয়ের হুকুম : ইসলামে হিল্লা বিয়ে হারাম। ড. ওয়াহবাহ আয-যুহায়লী বলেন, فهو حرام باطل مفسوخ لقوله صلى الله عليه وسلم: لعن الله المحلل و المحلل له. ‘‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী: আল্লাহ হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় তাদের উভয়ের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন এর জন্য হিল্লা বিয়ে হারাম ও বাতিল বলে গণ্য হবে।’’ উকবা বিন আমির (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ألا أخبركم بالتيس المستعار؟ قالوا: بلى يا رسول الله قال: هو المحلل، لعن الله المحلل والمحلل له. ‘‘আমি কি তোমাদেরকে ভাড়াটে ষাঁড় সম্পর্কে অবহিত করব না? সাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই হে রাসূলুল্লাহ। তখন তিনি বললেন, সে হল হালালকারী। আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন হালালকারী ও যার জন্য হালাল করা হয় উভয় ব্যক্তিকে।’’
ইমাম শাওকানী বললেন, والأحاديث المذكورة تدل على تحريم التحليل لأن اللعن إنما يكون على ذنب كبير. ‘‘উল্লেখিত হাদীসগুলো হিল্লা বিয়ে হারাম হওয়ার প্রতি নির্দেশ করে। কারণ বড় পাপের ক্ষেত্রেই অভিসম্পাত করা হয়।’’
আল্লামা সান‘আনী বলেন, ‘‘এ হাদীস হল তাহলীল হারাম হওয়ার দলীল। কেননা হারামকারী ব্যতীত অন্যের ওপরে অভিসম্পাত করা হয় না। আর প্রত্যেক হারাম বস্ত্ত নিষিদ্ধ। এখানে নিষিদ্ধতার দাবী হল বিবাহ ভঙ্গ হওয়া। তাহলীল-এর অনেকগুলি পদ্ধতি লোকেরা বর্ণনা করেছে। অভিসম্পাতের কারণে সকল পদ্ধতির হিল্লা বিয়ে বাতিল।’’
ইবনু উমার (রা) বলেন, ‘‘আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে এটিকে ব্যভিচার বলে গণ্য করতাম।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘এরা দু’জনেই ব্যভিচারী। যদিও তারা ২০ বছর যাবত স্বামী-স্ত্রী নামে দিন যাপন করে।’’ উমার ফারূক (রা) বলতেন, ‘‘হালালকারী বা যার জন্য হালাল করা হয়েছে, এমন কাউকে আমার কাছে আনা হলে আমি তাকে প্রস্তারাঘাতে হত্যা করব।’’
ইবনুল কাইয়িম (র) বলেন, ‘‘তাহলীল-এর সময় মুখে শর্ত করুক বা না করুক, মদীনাবাসী বিদ্বানমন্ডলী এবং আহলুল হাদীস ও তাদের ফকীহদের নিকটে ঐ বিয়ে বাতিল। কেননা এই সাময়িক বাহ্যিক বিয়ে মিথ্যা ও ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহ দ্বীনের মধ্যে এ বিয়েকে বিধিসম্মত করেননি এবং কারো জন্য একে বৈধও করেননি । কেননা এর ক্ষতিকারিতা কারো নিকটে গোপন নয়।’’
ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (র) বলেন, ‘‘আল্লাহর দ্বীন অতি পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন। তা কখনোই হারাম পন্থায় কোন নারীকে হালাল করার অনুমতি দেয় না। যতক্ষণ না কোন পশু স্বভাবের পুরুষকে ভাড়াটে ষাঁড় হিসেবে উক্ত কাজে ব্যবহার না করা হয়।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘কীভাবে কোন হারাম বস্ত্ত অন্যকে হালাল করতে পারে? কীভাবে কোন অপবিত্র বস্ত্ত অন্যকে পবিত্র করতে পারে?’’
সাইয়িদ সাবিক বলেন, ‘‘এটাই সঠিক কথা এবং এ কথায় বলেন, ইমাম মালেক, আহমাদ, সাওরী, আহলুয যাহের এবং অন্যান্য ফকীহগণ। যেমন হাসান বাসরী, ইবরাহীম নাখঈ, কাতাদাহ, লাইস, ইবনুল মুবারাক প্রমুখ। পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানীফা ও যুফার (র) বলেন, তাহলীল-এর সময় যদি প্রথম স্বামীর জন্য হালাল করে দেয়ার শর্ত করে তাহলে বিয়ে সিদ্ধ হবে। তবে তা মাকরূহ হবে। কেননা অন্যায় শর্তের জন্য বিয়ে বাতিল হতে পারে না। ইমাম আবু ইউসুফ (র)-এর মতে উক্ত বিয়ে বাতিল হবে। কেননা এটি সাময়িক বিয়ে। ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর মতে দ্বিতীয় বিয়ে সিদ্ধ হবে। তবে প্রথম স্বামীর জন্য উক্ত স্ত্রী হালাল হবে না।
মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম বলেন, ‘‘এ রীতি কুরআনের পূর্বোক্ত আয়াত থেকে প্রমাণিত নয়, প্রমাণিত নয় কোন হাদীস থেকে। এ হচ্ছে সম্পূর্ণ মনগড়া, নিজেদের প্রয়োজনে আবিষ্কৃত ও উদ্ভাবিত এক জঘন্য পন্থা।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘হানাফী মাযহাবের লোকদের মতে এরূপ বিয়ে মাকরুহ। কিন্তু প্রথমোক্তদের মত যে এ ব্যাপারে খুবই শক্তিশালী এবং অকাট্য দলীলভিত্তিক তাতে সন্দেহ নেই। যে ‘তাহলীল’ বিয়ে এবং ‘হালালকারী’ সম্পর্কে রাসূলে করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লা’নত ঘোষণা করেছেন, তাকে শুধু মাকরুহ বলে ছেড়ে দেয়া কিছুতেই সমীচীন হতে পারে না। বস্ত্তত এ ‘তাহলীল’ বিয়ের সুযোগ নিয়ে সমাজে যে অশ্লীলতার বন্যা প্রবাহিত হয়েছে, তাতে গোটা সমাজটাই পংকিল হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, এতে করে তিন তালাকের পর স্ত্রীর হারাম হয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিন তালাকের পর এত সহজে স্ত্রী লাভের সুযোগ থাকলে কেউই তিন তালাক দিতে একবিন্দু পরোয়া করবে না।
উল্লেখ্য, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনেও হিল্লা বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
হিল্লা বিয়ে হারাম হওয়ার হিকমত : হিল্লা বিয়ে হারাম হওয়ার দু’টি কারণ রয়েছে। দু’টি কারণই নারীর অধিকারের গ্যারান্টি দেয়।
প্রথম কারণ : হিল্লা বিয়ে হারাম হওয়া তালাকের সংখ্যা কমে যাওয়ার সহায়ক। কারণ স্বামী যখন অবগত হবে যে, সে যদি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে দেয় তাহলে তাকে অন্য কেউ বিয়ে করে যৌন সঙ্গম করার পর স্বেচ্ছায় তালাক না দিলে সে আর তাকে ফিরে পাবে না, তখন সে তালাক প্রদান করতে ভীত-সন্ত্রস্ত হবে। এতে তাদের জীবন দুর্বিষহ হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
দ্বিতীয় কারণ : ইসলামী শরীয়ত হিল্লা বিয়ে হারাম করে নারীদের মর্যাদা সংরক্ষণ ও সমুন্নত করেছে। হিল্লা বিয়ের ফলে নারীকে যথেচ্ছ ব্যবহার করা হয়, সমাজে তার বদনাম ছড়িয়ে পড়ে এবং পুরুষদের কাছ সে পণ্যে পরিণত হয়।
হিল্লা বিয়ে নিষিদ্ধ হওয়ার হিকমত বর্ণনা করতে গিয়ে শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলবী বলেন,
لما كان من الناس من ينكح لمجرد التحليل من غير أن يقصد منها تعاونا فى المعيشة، ولا يتم بذلك المصلحة المقصودة، وأيضا ففيه وقاحة وإهمال غيرة، وتسويغ ازدحام على الموطوءة، من غيرأن يدخل فى تضاعيف المعاونة، نهى عنه.
‘‘যেহেতু সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যারা দাম্পত্য জীবনে পরস্পরকে সহযোগিতা করার মানসে নয়; বরং শুধু হালাল করার জন্য বিয়ে করে এবং এতে ঈপ্সিত লক্ষ্যও অর্জিত হয় না। অনুরূপভাবে তাতে বেহায়াপনা, আত্মসম্মানকে বিসর্জন দেয়া এবং সহযোগিতা করার সীমানায় প্রবেশ ছাড়াই নারীর কাছে পুরুষদের ভিড় করার বৈধতা প্রদান করা হয়, সেহেতু এ ধরনের বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’’
৫. তালাক ও তৎপূর্ব বিধান প্রবর্তন :
জাহিলী যুগে সাধারণত: পুরুষই তালাক দেয়ার ক্ষমতা রাখত। এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোন সীমা ছিল না। আয়িশা (রা) বলেন, লোকেরা (জাহিলী যুগে) যেমন ইচ্ছা নিজ স্ত্রীকে তালাক দিত। এমনকি সে শতবার বা ততোধিক তালাক প্রদানের পরও তাকে ইদ্দতের মধ্যে ফেরত নিলে সে রীতিমত তার স্ত্রী গণ্য হত। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছল যে, এক লোক তার স্ত্রীকে বলল, আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে এমন তালাকও দিব না যে, তুমি আমার থেকে পৃথক হয়ে যাবে এবং তোমাকে কখনো আশ্রয়ও দিব না। তার স্ত্রী বলল, এ কেমন কথা? সে বলল, আমি তোমাকে তালাক দিব এবং ইদ্দত শেষ হওয়ার পূর্বে ফিরিয়ে নিব। তোমার সাথে বরাবর এরূপ করতে থাকব। মহিলাটি আয়িশা (রা)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে তাকে এ ঘটনা অবহিত করল। আয়িশা (রা) চুপ করে থাকলেন। ইতিমধ্যে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে গেলেন। তিনি তাঁকে বিষয়টি অবহিত করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব থাকলেন। এ সময় কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হল: الطَّلاَقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوْفٍ أَوْ تَسْرِيْحٌ بِإِحْسَانٍ ‘‘তালাক দুইবার। অত:পর স্ত্রীকে হয় বিধিমত রেখে দিবে অথবা সদয়ভাবে মুক্ত করে দিবে।’’ (সূরা আল বাকারাহ, আয়াত ২২৯) আয়িশা (রা) বলেন, এপর থেকে যে লোক পূর্বে তালাক দিয়েছে আর যে দেয়নি উভয়ই ভবিষ্যতের জন্য নতুনভাবে তালাকের অধিকার প্রাপ্ত হল। অবশ্য কখনো কখনো নারীরাও জাহিলী যুগে পুরুষদের তালাক প্রদান করত। তবে তারা মুখে তালাক উচ্চারণ করার প্রয়োজনবোধ করত না। রবং কোন নারী কোন পুরুষকে তালাক প্রদান করতে চাইলে তার ঘরের দরজা পরিবর্তন করে দিত। যদি দরজা পূর্ব দিকে থাকত তাহলে পশ্চিম দিকে অথবা দক্ষিণ দিকে থাকলে উত্তর দিকে পরিবর্তন করে দিত। আর যাদের ঘর-বাড়ি থাকত না তার এমনসব পদ্ধতির আশ্রয় গ্রহণ করত যার দ্বারা পুরুষকে তালাক প্রদান করা বুঝাত। যেমন- কোন নারী কোন পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর তার সাথে বাসর রাত উদযাপন করে সকাল বেলায় স্ত্রী যদি স্বামীকে সকালের নাশতা পরিবেশন করত, তাহলে স্বামী বুঝে নিত যে, স্ত্রী তার প্রতি সন্তুষ্ট। আর এমনটি না করলে স্বামী বুঝে নিত যে, স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে দিয়েছে। এভাবে বিবাহ ও তালাক প্রদান তাদের কাছে ছেলেখেলায় পরিণত হয়েছিল। কিন্তু ইসলামে বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন। এ বন্ধন চিরস্থায়ী। এটি কোন সাময়িক চুক্তি নয়। কুরআন মাজীদে স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনকে এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে, وَأَخَذْنَ مِنْكُم مِّيْثَاقاً غَلِيْظاً ‘‘তারা তোমাদের নিকট থেকে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি নিয়েছে।’’ (সূরা আন নিসা, আয়াত ২১)। কিন্তু সাংসারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভুল বোঝাবুঝি ও অবনিবনার বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাই ইসলাম পরিবারকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য দাম্পত্য কলহ-বিবাদ নিরসনে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পদক্ষেপগুলো হলো:
১. ইসলাম স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পরের ও সন্তানদের প্রতি দায়িত্ব সচেতন হবার আহবান জানিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, كلم راع وكلكم مسئول عن رعيته، والأمير راع، والرجل راع على أهل بيته، والمرأة راعية على بيت زوجها وولده، فكلكم راع و كلكم مسئول عن رعيته. ‘‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমরা প্রত্যেকেই স্বীয় দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। আমীর দায়িত্বশীল, একজন ব্যক্তি তার পরিবারের লোকদের দায়িত্বশীল এবং একজন নারী তার স্বামীর গৃহের ও সন্তানদের দায়িত্বশীল। তোমরা সবাই দায়িত্বশীল এবং সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’’ যদি তাদের মধ্যে এ দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত হয় তাহলে সকল সমস্যা আপনাআপনি দূর হয়ে যাবে।
২. যখন উভয়ের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিবে তখন দু’জনকেই ধৈর্য ও সহনশীলতার সবের্বাচ পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে হবে। সাময়িক ক্রোধ বা উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে তাড়াহুড়া করে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না। এতে দাম্পত্য জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবার সমূহ সম্ভাবনা থেকে রেহাই পাবে। মহান আল্লাহ বলেন, وَعَاشِرُوْهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ فَإِنْ كَرِهْتُمُوْهُنَّ فَعَسَى أَن تَكْرَهُواْ شَيْئاً وَيَجْعَلَ اللّهُ فِيْهِ خَيْراً كَثِيْراً ‘‘তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন করবে। তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ কর তবে এমন হতে পারে যে. আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ।’’ (সূরা আন নিসা, আয়াত ১৯)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, لا يفرك مؤمن مؤمنة، إن كره منها خلقا، رضى منه آخر. ‘‘কোন মুমিন পুরুষ যেন কোন মুমিন নারীকে ঘৃণা না করে। কেননা, যদি সে তার এক কাজকে অপছন্দ করে, তার অপর কাজকে পছনদ করবে।’’
৩. স্বামী-স্ত্রীর নিবিড় সম্পর্কের দাবী হচ্ছে, তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের সমাধান তারা নিজেরাই করবে। ঘরের কথা বাইরের কেউ যেন জানতে না পারে। কারণ পারিবারিক সমস্যা বাইরের কারো কাছে প্রকাশ করলে তাদের সংকট আরো ঘনীভূত হবে। এজন্য স্বামীকে সম্বোধন করে আল্লাহ বলেন, وَاللاَّتِي تَخَافُوْنَ نُشُوْزَهُنَّ فَعِظُوْهُنَّ وَاهْجُرُوْهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوْهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلاَ تَبْغُواْ عَلَيْهِنَّ سَبِيْلاً إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلِيّاً كَبِيْراً ‘‘স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, অতঃপর তাদের শয্যা বর্জন কর এবং তাদেরকে প্রহার কর। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ অন্বেষণ কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহান, শ্রেষ্ঠ।’’ (সূরা আন নিসা, আয়াত ৩৪)।
এ আয়াতে আল্লাহ রাববুল আলামীন স্বামীকে তিনটি বিষয়ের নির্দেশ প্রদান করেছেন।
ক. সুদপদেশ প্রদান। অর্থাৎ তাদেরকে স্বামীর সাথে সদ্ব্যবহার করা, স্বামীর অধিকার, মর্যাদা ও তার বিরুদ্ধাচরণের পরিণতি প্রভৃতি বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। স্বামী স্ত্রীকে বলবে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘আমি যদি কোন ব্যক্তিকে অপর কাউকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে অবশ্যই স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করতে।’’
খ. শয্যা বর্জন : যদি উপদেশ প্রদান ফলপ্রসূ না হয় তাহলে শয্যা বর্জন করবে। ইবনু আববাস (রা) বলেন, الهجر هو أن لا يجامعها ويضاجعها على فراشها ويوليها ظهره ‘‘শয্যা বর্জনের অর্থ হচ্ছে তার সাথে সহবাস করবে না এবং তার সাথে একই বিছানায় শয়ন করবে, কিন্ত সে (স্বামী) স্ত্রীর দিকে পিঠ করে ঘুমাবে।’’ তবে অনেকেই বলেছেন, উভয়ে আলাদা বিছানায় ঘুমাবে।
ইমাম কুরতুবী বলেন,
هو قول حسن؛ فإن الزوج إذا أعرض عن فراشها فإن كانت محبة للزوج فذلك يشق عليها فترجع للصلاح، وإن كانت مبغضة فيظهر النشوز منها؛ فيتبين أن النشوز من قبلها.
‘‘এটি সুন্দর অভিমত। কারণ স্বামী যখন স্ত্রীর সাথে এক বিছানায় ঘুমানো থেকে বিরত থাকবে তখন স্ত্রীর মনে যদি স্বামীর প্রতি ভালবাসা থেকে থাকে তাহলে এ ব্যাপারটি তার মনোপীড়ার উদ্রেক করবে। ফলে সে মীমাংসার পথ বেছে নিবে। আর যদি সে স্বামীর প্রতি ক্রদ্ধ হয় তখন তার পক্ষ থেকে অবাধ্যতা প্রকাশ পাবে। এতে প্রমাণিত হবে যে, অবাধ্যতা স্ত্রীর পক্ষ থেকেই।’’
গ. প্রহার করা : যদি সদুপদেশ ও শয্যা ত্যাগে কোন ফল না আসে তাহলে স্ত্রীকে মৃদু প্রহার করা যাবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেন,
فاتقوا الله فى النساء، فإنكم أخذ تموهن بأمان الله، واستحللتم فروجهن بكلمة الله، ولكم عليهن أن لا يوطئن فرشكم أحدا تكرهونه، فإن فعلن ذلك فاضربوهن ضربا غير مبرح، ولهن عليكم رزقهن وكسوتهن بالمعروف.
‘‘তোমরা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করবে। কেননা, তোমরা তাদেরকে গ্রহণ করেছ আললাহর আমানতে এবং আল্লাহর নির্দেশে তাদের যৌনাঙ্গকে হালাল করেছ। তাদের উপর তোমাদের হক হল তারা যেন তোমাদের অন্দর মহলে এমন কাউকে যেতে না দেয়, যাদেরকে তোমরা অপছন্দ করো। যদি তারা তা করে, তবে তাদেরকে মৃদু প্রহার করবে। আর তোমাদের উপর তাদের হক হল, তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদের অন্ন ও বস্ত্রের ব্যবস্থা করবে।’’
ফকীহদের মতে, এমনভাবে প্রহার করা যাবে না যে, তাতে হাড্ডি ভেঙ্গে যায় এবং শরীরে ক্ষতের সৃষ্টি করে। তবে কোন অবস্থাতেই মুখমন্ডলে প্রহার করা যাবে না। হাদীসে মুখমন্ডলে প্রহার করতে নিষেধ করা হয়েছে।
৪. উপরোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণেও যদি কোন কাজ না হয় এবং তাদের মধ্যে বিচ্ছেদের আশঙ্কা ঘনীভূত হয় তাহলে স্বামী তার পক্ষ থেকে একজনকে এবং স্ত্রী তার পক্ষ থেকে একজনকে প্রতিনিধি নিয়োগ করবে। তারা তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের কারণগুলো খতিয়ে দেখে উভয়ের মধ্যে মীমাংসার প্রাণান্ত চেষ্টা করবে। কুরআন মাজীদের ভাষায়, وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُواْ حَكَماً مِّنْ أَهْلِهِ وَحَكَماً مِّنْ أَهْلِهَا إِنْ يُّرِيْدَا إِصْلاَحاً يُوَفِّقِ اللّهُ بَيْنَهُمَا إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلِيْماً خَبِيْراً ‘‘তাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ আশঙ্কা করলে তোমরা তার (স্বামীর) পরিবার হতে একজন ও উহার (স্ত্রীর) পরিবার হতে একজন সালিশ নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ে নিষ্পত্তি চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত।’’ (সূরা আন নিসা, আয়াত ৩৫)।
৫. এই সালিশীও যদি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় তাহলে তখনই কেবল এক তালাক দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এক তালাক দেয়ার পর স্বামী-স্ত্রীর যৌন সম্পর্ক স্থগিত থাকবে এবং স্ত্রী স্বামীর ঘরে থেকেই ইদ্দত পালন করবে। মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَطَلِّقُوْهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَأَحْصُوا الْعِدَّةَ وَاتَّقُوا اللَّهَ رَبَّكُمْ لَا تُخْرِجُوْهُنَّ مِنْ بُيُوْتِهِنَّ وَلَا يَخْرُجْنَ إِلَّا أَن يَأْتِيْنَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ وَتِلْكَ حُدُوْدُ اللَّهِ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُوْدَ اللَّهِ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ لَا تَدْرِيْ لَعَلَّ اللَّهَ يُحْدِثُ بَعْدَ ذَلِكَ أَمْراً ‘‘হে নবী! তোমরা যখন তোমাদের স্ত্রীগণকে তালাক দিতে ইচ্ছা কর তাদেরকে তালাক দিও ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং তোমরা ইদ্দতের হিসাব রেখ এবং তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা তাদেরকে (স্ত্রীদেরকে) তাদের বাসগৃহ হতে বহিষ্কার করবে না এবং তারাও যেন বের না হয়, যদি না তারা লিপ্ত হয় স্পষ্ট অশ্লীলতায়। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে আল্লাহর সীমা লংঘন করে সে নিজেরই উপর অত্যাচার করে। তুমি জান না, হয়তো আল্লাহ এর (তালাকের) পরেও কোন (সমঝোতার) পথ বের করে দিবেন।’’ (সূরা আত তালাক, আয়াত ১)।
ইসলামে তালাক প্রদানের অনুমতি দেয়া হলেও এ ব্যাপারে স্বামীকে তালাকে প্ররোচিত করতে নিষেধ করে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘‘সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়, যে কোন স্ত্রীলোককে তার স্বামীর বিরুদ্ধে এবং কোন দাসকে তার মনিবের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে।’’ অনেক সময় কোন স্ত্রী স্বামীর কাছে তার অন্য স্ত্রীর আসন দখল করার জন্য তাকে তালাক দিতে বলে। এ ব্যাপারেও কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘‘কোন স্ত্রীলোক যেন নিজের স্বার্থ ও সুবিধার জন্য তার ভগ্নির তালাক কামনা না করে, নিজে তার সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য। কেননা, তার জন্য তাই যা তার ভাগ্যে আছে।’’ শারঈ কোন কারণ ছাড়া তালাক চাওয়ার ভয়াবহতা সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যে মহিলা তার স্বামীর নিকট থেকে কোন ক্ষতির আশঙ্কা ছাড়াই তালাক প্রার্থনা করবে, তার জন্য জান্নাতের সুগন্ধি হারাম হয়ে যায়।’’
যাহোক, প্রথম তালাক দেয়ার পর ইদ্দতের মধ্যে স্বামী স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু ইদ্দতকাল শেষ হওয়ার পরে ফেরত নিতে চাইলে তাকে উভয়পক্ষের সম্মতিক্রমে নতুন বিয়ের মাধ্যমে ফেরত নিতে হবে। প্রথম তালাক দেয়ার পর স্বামী যদি স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু করে এবং পুনরায় তাদের মধ্যে অবনিবনা দেখা দেয় তাহলে পূর্বে উল্লেখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে হবে। তাতে কাজ না হলে স্বামী স্ত্রীকে দ্বিতীয় তালাক প্রদান করবে। দ্বিতীয় তালাক দেয়ার পরও যদি স্বামী-স্ত্রী পুনরায় দাম্পত্য জীবন শুরু করে এবং অবনিবনা দেখা দেয় তাহলে আবারো তালাকের পূর্বে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর পুনরাবৃত্তি করতে হবে। যদি এসব পদক্ষেপ বিফল হয় তাহলে স্বামী স্ত্রীকে তৃতীয় তালাক প্রদান করবে এবং এর মাধ্যমে তাদের মধ্যে বিয়ে বিচ্ছেদ হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন, الطَّلاَقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوْفٍ أَوْ تَسْرِيْحٌ بِاِحْساَنٍ- فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلاَ تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّىَ تَنكِحَ زَوْجاً غَيْرَهُ فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَّتَرَاجَعَا إِنْ ظَنَّا أَنْ يُقِيْمَا حُدُوْدَ اللّهِ وَتِلْكَ حُدُودُ اللّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُوْنَ ‘‘এই তালাক দু’বার। অতঃপর স্ত্রীকে হয় বিধিমত রেখে দিবে অথবা সদয়ভাবে মুক্ত করে দিবে। ... অতঃপর যদি সে তাকে (তৃতীয়) তালাক দেয় তবে সে তার জন্য বৈধ হবে না, যে পর্যন্ত সে অন্য স্বামীর সাথে সংগত না হবে। অতঃপর সে যদি তাকে তালাক দেয় আর তারা উভয়ে মনে করে যে, তারা আল্লাহ্র সীমারেখা রক্ষা করতে সমর্থ হবে, তবে তাদের পুনর্মিলনে কারও কোন অপরাধ হবে না। এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ ইহা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন।’’ (সূরা আল বাকারা, আয়াত ২২৯-৩০)।
উল্লেখ্য, হায়েয বা ঋতু অবস্থায় তালাক প্রদান করা যাবে না। শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (র) বলেন,
وإنما أمر أن يكون الطلاق فى الطهر قبل أن يمسها لمعنين: أحدهما بقاء الرغبة الطبيعية فيها فإنه بالجماع تفتر سورة الرغبة، ثانيهما أن يكون ذلك أبعد من اشتباه الأنساب.
‘‘স্ত্রীর সাথে সহবাস করার পূর্বে পবিত্র অবস্থায় তালাক প্রদান করার আদেশ দেয়া হয়েছে দুটি কারণে। এক. স্ত্রীর প্রতি প্রাকৃতিক আকর্ষণ অবশিষ্ট রাখার জন্য। কেননা মিলনের মাধ্যমে আকর্ষণ দুর্বল হয়ে পড়ে। দুই. তালাক যেন সন্তানের ব্যাপারে সংশয় সৃষ্টি থেকে মুক্ত থাকে।’’
আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে তাঁর স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দেন। উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘‘তাকে নির্দেশ দাও, সে যেন তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনে এবং নিজের কাছে রেখে দেয় যতক্ষণ না সে মহিলা পবিত্র হয়ে আবার ঋতুবতী হয় এবং আবার পবিত্র হয়। অতঃপর সে যদি ইচ্ছে করে তবে তাকে রেখে দিবে আর যদি ইচ্ছে করে তবে সহবাসের পূর্বে তাকে তালাক দেবে। আর এটাই তালাকের নিয়ম, যে নিয়মে আল্লাহ তায়ালা স্ত্রীদের তালাক দেয়ার বিধান দিয়েছেন।’’ উল্লেখ্য, এটিই হল সুন্নাতী পদ্ধতিতে তালাক। ইমাম বুখারী (র) বলেন, وطلاق السنة أن يطلقها طاهرا من غير جماع ويشهد شاهدين. ‘‘সুন্নাত তালাক হল পবিত্রাবস্থায় সহবাস ব্যতীত স্ত্রীকে তালাক দেয়া এবং দু’জন সাক্ষী রাখা।’’
একত্রে তিন তালাক প্রদান : শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী বলেন,
وكره أيضا جمع الطلقات الثلاث فى طهر واحد، وذلك لأنه إهمال للحكمة المرعية فى شرع تفريقها فإنها شرعت ليتدارك المفرط ولأنه تضييق على نفسه وتعرض للندامة، وأما الطلقات الثلاث فى ثلاثة أطهار فأيضا تضييق ومظنة ندامة غير أنها أخف من الأول من جهة وجود التروى والمدة التى تتحول فيها الأحوال.
‘‘এক তুহুরে তিন তালাক প্রদান করা অপছন্দনীয়। কারণ এতে তিন তুহুরে তিন তালাক প্রদান করার যে অন্তর্নিহিত তাৎপর্য রয়েছে তা ব্যাহত হয়। সীমালংঘনকারীর যাতে শুভবুদ্ধির উদয় হয় সেজন্য তিন তুহুরে তিন তালাক প্রদান করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে তা তালাক প্রদানকারীর মনোপীড়ার যেন কারণ হয় এবং সে লজ্জিত হয় সেজন্যও এ রীতি প্রবর্তিত হয়েছে। অপরপক্ষে তিন তুহুরে তিন তালাক প্রদান করাও অন্তঃপীড়া ও লজ্জিত হওয়ার কারণ। কিন্তু চিন্তা-ভাবনা এবং অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার মত যথেষ্ট সময় পাওয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে তা প্রথম পদ্ধতির চেয়ে কম পীড়াদায়ক।’’
সূরা আল বাকারার ২৯-৩০ ও সূরা আত তালাকের ১নং আয়াত দ্বারা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত হয় যে, তালাক একটা পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়া। যদি এক সাথে তিন তালাকের মাধ্যমে স্বামী স্ত্রীর সাথে চূড়ান্তভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটায় তাহলে এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন অসম্ভব। সিরিয়ার প্রখাত ইসলামী চিন্তাবিদ ড. মুস্তাফা আস্ সিবায়ী (১৯১৫-৬৪) বলেন, ‘‘এক সাথে একই বাক্যে তিন তালাক দিলে তাকে এক তালাক বিবেচনা করা উচিত। এ ব্যাপারে হানাফী মাযহাবের মত এই যে, এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই সংঘটিত হবে। এই মত অনুসৃত হবার কারণে মুসলিম সমাজ দীর্ঘকাল জটিল সমস্যায় ভুগছে এবং কলংকজনক ‘হীলা’ প্রথা চালু হয়েছে। যার কথা ভাবতেও লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি সকল মহলের দৃষ্টি এদিকে আকষর্ণ করতে চাই যে, আল-কুরআনের তালাক সংক্রান্ত আয়াতগুলো থেকে স্পষ্টতই শেষোক্ত (এক সাথে তিন তালাক দিলে এক তালাক গণ্য হওয়া) মতটিই অভ্রান্ত বলে প্রতীয়মান হয়। তালাক সংক্রান্ত আয়াতগুলো থেকে বুঝা যায় যে, তালাকের সংখ্যা তিনে নির্ধারণের উদ্দেশ্য এই যে, প্রথম ও দ্বিতীয় তালাকের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আপোষ ও আন্তরিকতা ফিরে আসার সুযোগ ও অবকাশ সৃষ্টি হোক।’’
খোলা তালাক :
সাংসারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হতে পারে। কখনো তাদের মাঝে সম্পর্ক এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না। একে অপরকে অপছন্দ করতে থাকে। এমতাবস্থায় স্বামী যদি স্ত্রীর সাথে ঘর-সংসার করতে না চায় তাহলে সে স্ত্রীকে তালাক প্রদান করতে পারে। পক্ষান্তরে স্ত্রী যদি স্বামীর সাথে সংসার করতে না চায় তাহলে সে (স্ত্রী) স্বামীর নিকট থেকে কোন কিছুর বিনিময়ে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিতে পারে। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় একে খোলা (الخلع) বলে।
ইবনু কুদামা (র) বলেন,
والخلع لإزالة الضرر الذى يلحقها بسوء العشرة والمقام مع من تكرهه وتبغضه.
‘‘খারাপ সম্পর্ক এবং অপছন্দীয় ব্যক্তি তথা স্বামীর সাথে অবস্থানের কারণে স্ত্রীর যে ক্ষতি সাধিত হত তা থেকে মুক্তি দেয়ার জন্যই খোলার বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে।’’
ইবনুল কাইয়িম (র) বলেন, إن الله تعالى شرع الخلع رفعا لمفسدة المشاقة الواقعة بين الزوجين، وتخلص كل منهما من صاحبه. ‘‘স্বামী স্ত্রীর মাঝে সৃষ্ট টানাপড়েনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করা ও তাদের একজনকে অপরজনের কাছ থেকে মুক্ত করার জন্য আল্লাহ তায়ালা খোলার বিধান প্রবর্তন করেছেন।’’
মহান আল্লাহ খোলা সম্পর্কে বলেন, فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلاَّ يُقِيْمَا حُدُوْدَ اللّهِ ‘‘তোমরা যদি আশংকা কর যে, তারা আল্লাহ্র সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে না, তবে স্ত্রী কোন কিছুর বিনিময়ে নিষ্কৃতি পেতে চাইলে তাতে তাদের কারো কোন অপরাধ নেই।’’ (সূরা আল বাকারাহ, আয়াত ২২৯)।
আব্দুল্লাহ বিন আববাস (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাবিত বিন কায়স বিন শাম্মাস (রা)-এর স্ত্রী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সাবিতের ধার্মিকতা ও চরিত্রের ব্যাপারে কোন দোষ দিচ্ছি না। তবে আমি কুফরীর আশংকা করছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দিতে প্রস্ত্তত আছ? সে বলল, হ্যাঁ। অতঃপর সে বাগানটি তাকে (স্বামীকে) ফিরিয়ে দিল। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার স্বামীকে নির্দেশ দিলে সে মহিলাকে পৃথক করে দিল। এটাই হল ইসলামের ইতিহাসে প্রথম খোলা তালাকের ঘটনা।
৪. বহুবিবাহ (সর্বোচ্চ চারটি) অনুমোদন :
পরিবার সংরক্ষণে ইসলাম যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তন্মধ্যে একটি হল বহু বিবাহ (সর্বোচ্চ চারটি) অনুমোদন। ইসলামে এক বিবাহই আদর্শ। বহু বিবাহ ব্যতিক্রম মাত্র। মাওলানা মুহাম্মাদ আলী বলেছেন, In the first place it must be born in mind that polygamy is allowed in Islam only as an exception.
বহু বিবাহ পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্ম ও সমাজে প্রাচীন কাল থেকেই প্রচলিত ছিল। Encyclopaedia Britannica তে বলা হয়েছে, As an institution polygamy exists in all parts of the world.
গ্রীক, চৈনিক, ভারতীয়, ককেশীয়, অ্যাসিরীয়, মিশরীয়, পারসিক,রোমান সকল জাতি ও সভ্যতায় বহু বিবাহ অনুমোদিত ছিল। তাওরাতে বহু বিবাহ বৈধ করা হয়েছে। ইঞ্জীলেও বহু বিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়নি। মধ্য যুগের গীর্জার বিশপরা তা নিষিদ্ধ করেছিল। যদিও রাষ্ট্রপ্রধান ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য কখনো কখনো বহু বিবাহের অনুমতি দেয়া হত। তাওরাতে বলা হয়েছে, সুলায়মান (আ)-এর সাতশ’ স্ত্রী এবং তিনশ’ দাসী ছিল। চীনের লীকী ধর্ম একজন পুরুষকে এক সঙ্গে ১৩০ জন পর্যন্ত স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি দিয়েছিল। অনেক চীনা সন্ন্যাসীর তিন হাজার পর্যন্ত স্ত্রী ছিল। জাহিলী যুগে একজন পুরুষ একাধিক মহিলাকে বিয়ে করত। ইসলাম গ্রহণকালে নওফেল বিন মু‘আবিয়ার অধীনে ৫ জন স্ত্রী ছিল, কায়েস বিন হারেসের ছিল ৮ জন এবং গায়লান সাকাফীর ছিল ১০ জন।
ইসলাম এক্ষেত্রে একটি বৈপ্লবিক সংস্কার সাধন করে একজন পুরুষের জন্য সর্বোচ্চ চার জন মহিলাকে বিয়ে করার অনুমতি প্রদান করেছে। তবে জুড়ে দিয়েছে এক কঠিন শর্ত। কুরআনের ভাষায়, وَإِنْ خِفْتُمْ أَلاَّ تُقْسِطُواْ فِي الْيَتَامَى فَانْكِحُواْ مَا طَابَ لَكُمْ مِّنَ النِّسَاء مَثْنَى وَثُلاَثَ وَرُبَاعَ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلاَّ تَعْدِلُواْ فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ذَلِكَ أَدْنَى أَلاَّ تَعُوْلُواْ ‘‘তোমরা যদি আশঙ্কা কর যে, এতিম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিয়ে করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে, দুই, তিন অথবা চার; আর যদি আশঙ্কা কর যে, সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনকে অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকে। এতে পক্ষপাতিত্ব না করার অধিকতর সম্ভাবনা।’’ (সূরা আন নিসা, আয়াত ৩)।
স্ত্রীদের মধ্যে খাদ্য ও বাসস্থান, পোষাক-পরিচ্ছদ, রাত্রি যাপন প্রভৃতি বিষয়ে সমতা রক্ষা করতে হবে। যদি এসব বিষয়ে সমতা বিধান করতে সক্ষম হয় তবেই কেবল চারজনকে বিয়ে করতে পারবে। তবে ভালবাসার ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করা সম্ভব নয়। তাবেঈ বিদ্বান মুহাম্মাদ বিন সিরীন বলেন, আমি উবাইদাকে সূরা আন নিসার ১২৯ নং আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তা ভালবাসা ও সহবাস। তবে কাউকে অত্যধিক ভালবাসা এবং কারো প্রতি একেবারে উদাসীন থাকা অনুচিত। মহান আল্লাহ বলেন, وَلَنْ تَسْتَطِيْعُواْ أَن تَعْدِلُواْ بَيْنَ النِّسَاء وَلَوْ حَرَصْتُمْ فَلاَ تَمِيْلُواْ كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوْهَا كَالْمُعَلَّقَةِ ‘‘আর তোমরা যতই ইচ্ছা কর না কেন তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে কখনই পারবে না, তবে তোমরা কোন একজনের দিকে সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকে পড় না ও অপরকে ঝুলানো অবস্থায় রেখ না।’’ (সূরা আন নিসা, আয়াত ১২৯)।
বহু বিবাহের যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা :
১. স্বাভাবিক অবস্থায় পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি হলে :
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে পরিচালিত একাধিক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে, যুদ্ধকালীন সময় ছাড়াও সাধারণ অবস্থায় পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা ১ লাখ বেশি। তাছাড়া পরিসংখ্যান শাস্ত্র প্রমাণ করেছে যে, জন্ম থেকে যৌবনকালে পদার্পণ পর্যন্ত নারীর চেয়ে পুরুষের মৃত্যুর হার বেশী। ফলে ক্রমেই নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৬৫ সালের ১৬ নভেম্বরের ‘আল-আহরাম’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক জরিপে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে দুই মিলিয়ন, জার্মানীতে তিন মিলিয়ন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নে ২০ মিলিয়ন বেড়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে, প্রতি ১০ বছরে সেখানে এক মিলিয়ন করে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ফিনল্যান্ডের প্রতি চারটি বা তিনটি শিশুর একটি পুরুষ এবং অবশিষ্টগুলো মেয়ে।
এহেন পরিস্থিতিতে যদি বহু বিবাহ অনুমোদন না দেয়া হয় তাহলে অনেক নারী পরিবারহীন হয়ে যাবে। সমাজে বেশ্যাবৃত্তি মহামারীর রূপ পরিগ্রহ করবে। এজন্যই ইসলাম বহু বিবাহ অনুমোদন দিয়েছে।
সমাজবিজ্ঞানী ড. ম্যারিন ল্যাঙ্গার বলেন, ‘‘পুরুষের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়া রোধে সমাজের নিকট দু’টি সম্ভাব্য সমাধান রয়েছে। হয় বহু বিবাহ অনুমোদন, না হয় এমন পদ্ধতি আবিষ্কার করা যা পুরুষের আয়ু বাড়িয়ে দিবে। এমন কোন পদ্ধতি আবিষ্কার করা কী সম্ভব যা নারী ছাড়া শুধু পুরুষের আয়ু বাড়িয়ে দিবে। না আমরা দেখতে চাই যে, অচিরেই বিশ্ব বহু বিবাহের বৈধতা প্রদান করবে।’’
২. যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণে নারীর সংখ্যা বেশী হলে :
যুদ্ধ-বিগ্রহ মানবজাতির নিত্য সহচর। প্রাচীন কাল থেকেই এ ধারা চলে আসছে। যুদ্ধে পুরুষদের নিহত হবার ফলে নারীর সংখ্যা বেড়ে গেলে বহু বিবাহের অনুমতি প্রদান ছাড়া গত্যন্তর নেই।
বিশ্ববাসী প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এ বাস্তবতা লক্ষ্য করেছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ১০ মিলিয়ন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ৫০ মিলিয়ন পুরুষ মারা গেছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানীতে ৪ বা ৬ জন নারীর অনুপাতে পুরুষের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ জনে। ফলে কোটি কোটি নারী স্বামী ও অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। সংগতকারণেই ইউরোপীয় দেশগুলোতে বিশেষত জার্মানীতে একাধিক নারী সংগঠন বহু বিবাহের অনুমতি দানের জোর দাবি জানায়। সে সময় হিটলার জার্মান জাতির ভবিষ্যৎ সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে প্রত্যেক পুরুষকে আইনগতভাবে দু’টি বিয়ে করার জন্য বাধ্য করা জরুরী বলে মনে করেন। তাইতো বহু বিবাহের কট্রর বিরোধী স্পেন্সারও বলতে বাধ্য হয়েছেন, ‘‘যুদ্ধের ফলে বিপুল সংখ্যক পুরুষ মারা গেলে বহু বিবাহ ছাড়া আর কোন উপায়ে ক্ষতিপূরণ সম্ভব হয় না। এরূপ অবস্থায় সবদিক দিয়ে সমান শক্তিশালী দু’টি প্রতিদ্বন্দ্বী জাতির মধ্যে যে জাতি তার সকল প্রজনন ক্ষমতাসম্পন্ন নারীকে সন্তান প্রজননে নিয়োগ করবে, তার কাছে অপর জাতিটি পরাজিত না হয়ে পারে না।’’
৩. পুরুষ বয়োঃপ্রাপ্ত হওয়া থেকে ৬০-৭০ বছরে পদার্পণ পর্যন্ত সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা রাখে। কিন্তু নারী সাধারণত ৪৫-৫০ বছর পর্যন্ত এ ক্ষমতা রাখে। তাছাড়া নারীর হায়েয, নেফাসজনিত সমস্যা তো রয়েছেই। এসব পরিস্থিতিতে স্ত্রী যদি স্বামীর যৌন চাহিদা পূরণ করতে অক্ষম হয় তাহলে স্বামীর জন্য একাধিক বিয়ে করা উত্তম, না ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়া উত্তম? নিঃসন্দেহে এমত পরিস্থিতিতে একাধিক বিয়ে করাই যুক্তিযুক্ত।
৪. স্ত্রী যদি বন্ধ্যা হয় এবং স্বামী সন্তান চাই অথবা স্ত্রী কোন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় তাহলে স্বামীকে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করা থেকে বিরত রেখে সন্তান চাওয়ার বাসনা থেকে নিবৃত্ত রাখা, অসুস্থ স্ত্রীর বাড়ির কাজ-কর্ম দেখাশোনা করার জন্য দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি না দেয়া, অসুস্থ বা বন্ধ্যা স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আশ্রয়হীনা করা উত্তম? নাকি অন্য নারীকে বিয়ে করা উত্তম? নিঃসন্দেহে শেষোক্ত পন্থাই নৈতিকতা ও বিবেকের দাবী।
৫. প্রকৃতিগতভাবেই অনেক পুরুষ প্রচন্ড জৈবিক চাহিদার অধিকারী হয়ে থাকে। ফলে একজন স্ত্রী তার চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট হয় না। বিশেষ করে গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলোতে। এমতাবস্থায় ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়ে ধর্ম, নৈতিকতা ও সম্পদ নষ্ট করা উত্তম? নাকি দ্বিতীয় বিয়ে থেকে নিবৃত্ত থেকে নিজেকে কষ্ট দেয়া উত্তম? নাকি একাধিক বিয়ে করা উত্তম? শেষোক্ত সমাধানটিই যে সমাজ ও নিজের জন্য কল্যাণকর তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
৬. এতিমদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের চেয়ে বাবা-মার স্নেহ-ভালবাসা ও শিক্ষার প্রয়োজন কোন অংশেই কম নয়। যদি বিধবা নারীরা স্বামীর মৃত্যুর পর বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয় তাহলে তার এতিম সন্তানরা একটি পারিবারিক পরিবেশ লাভ করে। যেখানে সে পিতৃস্নেহ ও শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ লাভ করতে পারে। অনুরূপভাবে যদি কোন পুরুষের স্ত্রী মারা যায় তাহলে মাতৃস্নেহ বঞ্চিত শিশুদেরকে লালন-পালন করার জন্যও একাধিক বিয়ের প্রয়োজন অনুভূত হয়। সূরা আন নিসার ৩ নং আয়াতে এ দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। সুতরাং এতিম-অনাথ ও বিধবারা বহু বিবাহের সুফল লাভ করতে পারে।
ইসলাম বিদ্বেষী অনেক পশ্চিমা বুদ্ধিজীবী ইসলামের বহু বিবাহ নিয়ে সমালোচনা করেছেন এবং এটিকে নারীর মানবাধিকার লংঘন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে নিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবীরা ইসলামের এ বিধানকে কল্যাণকর বলে মন্তব্য করেছেন। ড. এ্যানি বেসান্ত বলেছেন, There is pretended monogamy in the West, but there is really polygamy without responsibility; the mistress is cast off when the man is weary of her and sinks gradually to be the woman of the street; for the first lover has no responsibility for her future and she is a hundred times worse off than the sheltered wife and mother in the polygamous home. When we see the thousands of miserable women who crowd the streets of western towns during the night, we must surely feel that it does not lie in western mouth to reproach Islam for polygamy. It is better for a woman, happier for a woman, more respectable for a woman to live in polygamy united to one man only, with the legitimate child in her arms and surrounded with respect, than to be reduced, cast out into the streets, perhaps with an illegitimate child outside the pale of society, un-sheltered and uncared for, to become the victim of every passerby, night after night, rendered incapable of motherhood, despised of all.
‘‘পাশ্চাত্যের এক বিবাহ একটি কপটতা মাত্র; সেখানে প্রকৃতপক্ষে দায়িত্বশূন্য বহু বিবাহই বিদ্যমান। কোন পুরুষ যখন তার রক্ষিতার উপর বিরক্ত হয়ে পড়ে, তখন সে তাকে দূরে নিক্ষেপ করে এবং ধীরে ধীরে এই স্ত্রীলোকটি পথের বণিতায় পরিণত হয়। কারণ তার ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে প্রথম প্রেমিকের কোন দায়িত্ব নেই এবং বহু বিবাহের অধীনে পরিবারের আশ্রিতা বধূ ও মাতা অপেক্ষা তার অবস্থা শতগুণ নিকৃষ্ট হয়। পশ্চিমের শহরগুলিতে হাজার হাজার দুর্দশাগ্রস্তা নারীকে যখন রাত্রিকালে রাস্তায় ভীড় জমাতে দেখি, তখন আমরা একথা অবশ্যই হৃদয়ঙ্গম করি যে, বহু বিবাহের জন্য ইসলামকে গালি দেওয়া পশ্চিমা দেশগুলির মোটেই শোভা পায় না। লাঞ্ছিতা ও অবমানিতা হয়ে এবং সম্ভবত একটি অবৈধ সন্তান নিয়ে দূরে নিক্ষিপ্ত হয়ে আশ্রয়হীনা অবস্থায় রাত্রির পর রাত্রি প্রত্যেক পথিকের শিকারে পরিণত হওয়া এবং মাতৃত্বের আইনসম্মত অধিকার হতে বঞ্চিতা ও সকলের দ্বারা ঘৃণিতা হওয়া অপেক্ষা বহু বিবাহ প্রথার অধীনে কোলে একটি বৈধ সন্তানসহ সকলের শ্রদ্ধার পাত্রী হিসেবে এক পুরুষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকা স্ত্রীলোকের পক্ষে অধিকতর শ্রেয়, সুখকর ও সম্মানজনক।’’
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপক মিস নাবিয়া এবট বলেছেন, Monogamous society at its worst is not free from prostitutes, or the kept mistress or the proverbial cat and dog family life. ‘‘এক বিয়ে প্রথার প্রচলিত সমাজের নিকৃষ্টতম দিক হচ্ছে, তা পতিতাবৃত্তি, রক্ষিতা বা কুকুর-বিড়ালকে জীবনসঙ্গী করার প্রবাদতুল্য প্রবণতা থেকে মুক্ত নয়।’’
প্রসঙ্গত উল্লেখ যে, ইসলামে বহু বিবাহ অনুমোদিত হলেও মুসলিম দেশগুলোতে এক বিবাহই বেশি প্রচলিত। বহু বিবাহের হার খুবই কমই। ১০% কুয়েতী পুরুষ এবং ১% মিসরীয় বহু বিবাহ করে থাকে বলে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে। ভারতে পরিচালিত এক জরিপ থেকে জানা গেছে, ১৯৬১-৯১ সাল পর্যন্ত হিন্দুদের মধ্যে একাধিক বিয়ের শতকরা হার ৫.০৬%। আর মুসলমানদের মধ্যে একই সময়ে সেই হার ৪.৩১%। অথচ ভারতের আইন অনুযায়ী মুসলমানদের একাধিক বিয়ে করা বৈধ। পক্ষান্তরে হিন্দুদের একাধিক বিয়ে সিদ্ধ নয়।
৫. স্বামী-স্ত্রীর কর্মপরিধি নির্ধারণ :
ইসলাম পরিবার সংরক্ষণে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তন্মধ্যে অন্যতম হল পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের কর্মপরিধি নির্ধারণ। যাতে একজনের দায়িত্বের সাথে আরেকজনের দায়িত্ব সাংঘর্ষিক না হয়।
প্রকৃতিগতভাবেই পুরুষ হয়ে থাকে দৃঢ় মানসিকতার অধিকারী ও কষ্টসহিষ্ণু। যে কোন কঠিন কাজ করার সামর্থ্য তার রয়েছে। পক্ষান্তরে মহিলারা হয়ে থাকে নাজুক প্রকৃতির ও মমতাময়ী। সেজন্য তাদের উভয়ের কর্মক্ষেত্রও পৃথক হওয়া বাঞ্ছনীয়। পুরুষ পরিবারের কর্তা। স্ত্রী-সন্তানের ভরণ-পোষণের মত কষ্টকর দায়িত্ব তাকেই পালন করতে হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘জনকের কর্তব্য যথাবিধি তাদের ভরণ-পোষণ করা।’’ (সূরা আল বাকারা, আয়াত ২৩৩) কুরআন মাজীদের অন্যত্রে বলা হয়েছে, ‘‘পুরুষ নারীর কর্তা। কারণ আল্লাহ তাদের এককে অপরের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এজন্য যে, পুরুষরা তাদের নিজেদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে..।’’ (সূরা আন নিসা, আয়াত ৩৪)। পক্ষান্তরে মা হচ্ছেন গৃহের রাণী। সন্তানদের লালন-পালন এবং বাড়ির অভ্যন্তরীণ বিষয়াদির দায়িত্ব তাকেই পালন করতে হয়। যাতে বাড়িটি হয়ে ওঠে শান্তির নীড়।
এক্ষণে প্রশ্ন জাগতে পারে, ইসলাম নারীর ওপর কোন অর্থোপার্জনের ও পুরুষের ন্যায় কঠিন দায়-দায়িত্ব পালনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করল না? এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে সিরিয়ার প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ড. মুস্তাফা আস্ সিবায়ী বলেন, ‘‘জীবিকা উপার্জনের জন্য নারীর বাইরে শ্রম দেয়ার চাইতে গৃহস্থালীর কাজে আত্মনিয়োগ করা তার মানবিক মর্যাদাকে আরো ভালভাবে নিশ্চিত করে। এক্ষেত্রে ইসলামের নীতি যে অধিকতর বিজ্ঞানসম্মত ও ভারসাম্যপূর্ণ তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। পূর্ববর্তী ধর্মমত ও আইনের মত ইসলাম গৃহবহির্ভূত কাজ তার জন্য নিষিদ্ধও করেনি, আবার তাকে এজন্য উৎসাহিতও করেনি যে, বাড়িঘর ও পরিবারের কল্যাণের তোয়াক্কা না করে পুরুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যত খুশী কাজ করুক- যেমনটি আধুনিক সভ্যতায় চলছে। বস্ত্তত এমন প্রাজ্ঞবিধান যে একমাত্র মহাকুশলী ও মহাবিজ্ঞানী আল্লাহর রচিত বিধানই হতে পারে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।’’
আজকে নারী স্বাধীনতার নামে মুসলিম নারীদেরকে ঘর থেকে বাইরে বের করে উলঙ্গ করার নগ্ন পাঁয়তারা চলছে। এর মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মুসলমানদের পারিবারিক ব্যবস্থার ভিত্তিকে ধসিয়ে দেয়া। নারীদেরকে চাকুরী করতেই হবে এমন ধোঁকায় ফেলে তাদেরকে তাদের মূল দায়িত্বব পালন থেকে বিরত রাখার সার্বিক প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পাশ্চাত্যবাসী ইতোমধ্যেই এর কুফল লক্ষ্য করেছে। সেজন্য তাদের অনেক চিন্তাশীল ব্যক্তি নারীকে তার মূল দায়িত্বে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জোর দাবী জানিয়েছেন। আধুনিক সভ্যতার এই ক্রান্তিলগ্ন থেকে উত্তরণের জন্য নারী-পুরুষের কর্মক্ষেত্রে আলাদা হওয়া উচিত তা এখন সর্বত্রই ধ্বনিত হচ্ছে। মাওলানা মুহাম্মাদ আলী বলেন, Modern civilization is ultimately coming round to the opinion that the true progress of humanitiy demands a division fo work, and that while the duty of bread-wininig must be generally left to man, the duty of the management of the home and the bringing up of the children belongs to the woman.

চতুর্থ অধ্যায় : পাশ্চাত্যের ভঙ্গুর পারিবারিক ব্যবস্থা
সুন্দর একটা সমাজ গঠনের জন্য বিয়ের প্রয়োজন সর্বজনবিদিত। কিন্তু পাশ্চাত্য সমাজ ব্যবস্থায় বিয়ে ও পরিবার প্রথা বিলুপ্তির পথে। পাশ্চাত্যে বিয়ের স্থান দখল করেছে অবাধ ভালবাসা তথা যৌনাচার, যা পাশ্চাত্য সভ্যতার বিদায়ঘণ্টা বাজাচ্ছে নিরন্তর।
এই অবাধ ভালবাসা তথা যৌনাচার নারী-পুরুষকে চূড়ান্তভাবে স্বার্থপর করে তোলে। ফলে নারী-পুরুষ একজন আরেকজনকে যে কোন সময় পরিত্যাগ করতে কzুণ্ঠত হয় না। তাছাড়া অবাধ ভালবাসায় বিয়ের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য সন্তান জন্মদানও উপেক্ষিত হয়।
আধুনিক ইউরোপীয় সভ্যতায় পরিবারের ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে। এই সভ্যতা বাবা-মাকে সন্তানের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ডে কেয়ারে শিশুরা প্রতিপালিত হওয়ায় বাবা-মা ও সন্তানের মাঝে আত্মিক বন্ধন আলগা হয়ে গেছে। শিশুকাল থেকেই শিশুরা বাবা-মার স্নেহের পরশবঞ্চিত হওয়ায় জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার শন গ্র্যান্ট (Shawn Grant) নামে বাবাহীন পরিবারের এক সন্তান কীভাবে অপরাধ জগতের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলল তার বিবরণ দিতে গিয়ে House Select Committee on Children, Youth and Families কে বলেছে, My father has had little contact with me since I was one year old. In my neighborhood, a lot of negative things go on. People sell drugs; a lot of the gang members parents use drugs and often these guys do not see their parents.... When I was young I use (sic) to worry about my father. I also resented his not being involved in my life. Now I do not care. However, I think that I would not have become involved in a gang if I had a job and if my father had had a relationship with me.
এই বাস্তবতা শুধু শন গ্র্যান্টের নয়; রবং কোটি কোটি শন গ্র্যান্টের যারা বাবা-মার স্নেহবঞ্চিত হয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছে। সাথে সাথে এর ফলে শিশুদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও বাড়ছে। আমেরিকাতে ২০০৩ থেকে ২০০৪ সালে ১০-১৪ বছর বয়সী শিশুদের আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়েছে ৭৬%। অন্য এক পরিসংখ্যান মতে, আমেরিকাতে ২০০৪ সালে ১৫-১৯ বছর বয়সী ছেলে এবং মেয়েদের আত্মহত্যার পরিমাণ বেড়েছে যথাক্রমে ৩২.৩% ও ৯%।
পাশ্চাত্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক একটি হোটেলে কোন প্রয়োজনে সাময়িকভাবে অবস্থানকারীদের মতো হয়ে গেছে। অধিকাংশ স্বামী-স্ত্রী সকাল ৭-টা থেকে বিকেল ৫-টা পর্যন্ত অফিসের বা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকে। ফলে ঘুমের পূর্বে তারা কয়েক ঘণ্টা সময় ছাড়া একে ওপরের সাথে সাক্ষাৎ হয় না। এর চেয়ে আরো মারাত্মক হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর কাজের সময়ের ভিন্নতা। ফলে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া তারা একে অপরের সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগ পায় না। পরিবারের সদস্যদের সাথে আহার করা, বাড়িতে রান্না করা খাবার খাওয়া, সন্তানদের স্নেহের পরশ বুলানো ও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রেম-ভালবাসা বিনিময় তো সুদূরপরাহত।
পাশ্চাত্যে নারী সহজলভ্য হওয়ায় পারিবারিক বন্ধন বালির বাধের মতো ঠুনকো হয়ে গেছে। এমনকি স্বামী-স্ত্রীর কোন একজনের ঘুমের মধ্যে নাক ডাকায় অন্যজন বিরক্ত হওয়া বা তাদের একজনের কুকুর আরেকজনের পছন্দ না হওয়ার মতো তুচ্ছ কারণেও বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে থাকে। ১৯৫৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমেরিকায় প্রতি ১ হাজার বিয়ের মধ্যে ২৪৬.২টি বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। ১৯৬০ সালে আমেরিকায় শতকরা ২৬টি বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। ১৯৭৫ সালে এসে এ সংখ্যা দাঁড়ায় শতকরা ৪৮টিতে। ১৯৭৯ সালে আমেরিকায় ২৩,৩১,০০০টি বিয়ের মধ্যে ঐ বছরই ১১,৮১,০০০টি তালাক হয়ে যায়। ১৯৮৩ সালে আমেরিকায় প্রতি ১ হাজার বিয়ের মধ্যে ১১৪টি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। সেখানে বর্তমানে বিবাহ বিচ্ছেদের হার ৩৮%।
১৯৯১ সালে ব্রিটেনে ৮০ সালের চেয়ে ৯% এবং ৯০ সালের চেয়ে ৩% বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়ে যায়। ১৯৯১ সালে ব্রিটেনে মোট বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লক্ষ ৭১ হাজার ১ শত। ব্রিটেনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে ২০০৬ সালে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে মোট ২,৩৬,৯৮০টি বিয়ে হয়েছে। ১৯৮৫ সাল থেকে হিসাব করলে ২০০৫ সালে সেদেশে বিয়ে হয়েছে সবচেয়ে কম। পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে বিবাহযোগ্য লোকের সংখ্যা। কিন্তু সমস্যা হলো বেশি লোক বিয়ে করছে না। আর বিয়ে করলেই ডিভোর্সের হার যেভাবে বাড়ছে, তাতে জনসংখ্যার মধ্যে বিবাহিত লোকের সংখ্যার অনুপাত উত্তরোত্তর কমছে।
ফ্রান্সের সেন নগরীর একটি আদালতে একদিনে ২৯৪টি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। বিবাহ বিচ্ছেদের নতুন আইন প্রবর্তনের পরও ফ্রান্সে ১৮৪১ সালে ৪ হাজার, ১৯০০ সালে ৭ হাজার, ১৯১৩ সালে ১৬ হাজার এবং ১৯৩১ সালে ২০ হাজার বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। ১৯৬০-১৯৭০ সাল পর্যন্ত সেখানে বার্ষিক বিয়ের হার বেড়ে দাঁড়ায় মাত্র ৬.৩% এবং ১৯৭০-৭৪ পর্যন্ত ৮%। কিন্তু ১৯৭৪-৭৫ সালে বিয়ের হার ৭.৪% নেমে যায়।
রক্ষণশীল দেশ চীনে বিবাহ বিচ্ছেদকে সুনজরে দেখা না হলেও সেদেশে তালাকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। চীনের বেসামরিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে ৪মে ’০৪ সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানান, ২০০৩ সালে ১৩ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি চীনা দম্পতি বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটায়। এ সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ১ লাখ ৫৪ হাজারের বেশি। এছাড়া পরিবারের মান-সম্মান এবং সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার আশংকায় অনেক দম্পতি আবার একই ছাদের নিচে অসুখী জীবন-যাপন করে।
পশ্চিমা সমাজে বিয়ের পূর্বে অবাধ যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। এটাকে কোন অপরাধ হিসেবেই গণ্য করা হয় না। প্রত্যেক দিন আমেরিকায় ২০ বছরের কম বয়সী ২৭০০ বালিকা গর্ভবতী হয় এবং ১৩০০ জন সন্তান জন্ম দেয়। প্রত্যেক বছর এক মিলিয়ন টিনেজ বালিকা গর্ভবতী হচ্ছে। অর্থাৎ গড়ে দশজনের মধ্যে একজন। ১৯৫০ সালে কুমারী মাতাদের সংখ্যা ছিল ১৫.৪%। ১৯৭০ সালে এর দ্বিগুণ এবং ১৯৮৬ সালে দাঁড়ায় ৬০.৮%। ২০০৮ সালে আমেরিকায় প্রায় সাড়ে ৭ লাখ কিশোরী গর্ভবতী হয়েছে। ২০ বছর বয়স হওয়ার আগেই প্রতি ১০ জনের তিনজন গর্ভবতী হয়েছে।
অবাধ যৌনাচারের ফলে পাশ্চাত্যে জারজ সন্তানের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। আমেরিকার ৫০% মানুষ জারজ সন্তান। ১৯৯০ সালের গোড়ার দিকে ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন, ১৯৭৯-৮৭ সাল পর্যন্ত নারী-পুরুষের অবৈধ মেলামেশার কারণে ব্রিটেনে ৪,০০০০০ জারজ সন্তান জন্মগ্রহণ করে।
প্রাক-ইসলামী যুগে পিতা কর্তৃক নিজ কন্যা ধর্ষিত হতো। বর্তমান সভ্যতার ধ্বজাধারী পাশ্চাত্যের উন্নত দেশগুলোতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। বিবিসিহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার এক নরাধম বাবা ২৪ বছর ধরে নিজ বাড়িতে স্বীয় কন্যা এলিজাবেথকে আটকে রেখে ধর্ষণ করেছে। মেয়ের গর্ভে বাবার ঔরসে একাধিক সন্তানের জন্মও হয়েছে। সে একই বাড়ির উপর তলায় স্ত্রী এবং নিচ তলায় ঔরসজাত কন্যাকে ২৪ বছর আটকে রাখে। পরে পুলিশের হাতে ধৃত হয়।
পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে সমকামিতা আইনসিদ্ধ। গত ১৭ জুন মেয়রের উপস্থিতিতে ক্যালিফো©র্র্নয়ায় ১২টি সমকামী যুগলের বিয়ে সম্পাদিত হয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সরকারী কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ অনুমতির ফলে এ সমকামী বিয়ে সম্পাদন হতে পেরেছে।
এই অবাধ যৌনতার ফলে পাশ্চাত্যে মানুষেরা নানাবিধ মারাত্মক রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে এইডস অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-এর সূত্র মতে, ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৫৬ হাজার ৩০০ জন এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়। এতদিন প্রতিবছর আনুমানিক সংক্রমণের হার প্রায় ৪০ হাজার বলে ধরা হতো। সর্বশেষ গবেষণা মতে, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন যারা সংক্রমিত হয়েছে তাদের ৫৩ শতাংশ সমকামী ও উভকামী পুরুষ। আক্রান্তদের মধ্যে ৩১ শতাংশ বহুগামী ও ১২ শতাংশ মাদকাসক্ত। শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার সাত গুণ বেশী। প্রতি এক লাখ শ্বেতাঙ্গের মধ্যে ১১ দশমিক ৫ জন সংক্রমিত হলেও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এ হার হচ্ছে এক লাখে ৮৩ দশমিক ৭ জন। উল্লেখ্য, বিশ্বে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা তিন কোটি ৩০ লাখ। ২০০৭ সালে বিশ্বে এইডসে ২০ লাখ লোকের মৃত্যু হয়।
পঞ্চম অধ্যায় : প্রচলিত যৌতুক প্রথা ও সমাজে তার বিরূপ প্রভাব
যৌতুক একটি ঘোরতর অপরাধ। সমাজে শান্তি ও স্থিতিলীলতা বিনাশী এ প্রথা পরিবার বিধ্বংসী বোমা সদৃশ। একজন ইংরেজ লেখক যথার্থই বলেছেন, ÒWhen Marriage is formed with money, its nothing but a leagal prostitution for which goverment is giving openly license for the sake of a tax.Ó ‘‘বিবাহ যখন টাকা-পয়সার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, তখন এটা বিবাহ হয় না, এটা হয় পতিতাবৃত্তি,কর লাভের জন্য সরকার যার উন্মুক্ত লাইসেন্স প্রদান করেছেন।’’
প্রাচীনকাল থেকেই এদেশে হিন্দু সমাজে নারীর কোন সামাজিক ও আর্থিক অধিকার স্বীকৃত ছিল না। পিতৃ সম্পত্তিতে মেয়ের ছিল না কোন উত্তরাধিকার। এজন্যই বোধ হয় হিন্দু মেয়েদের বিয়েতে যৌতুক দেয়া ছিল অপরিহার্য। খুব সম্ভব এ উপমহাদেশে দীর্ঘ দিন হিন্দু-মুসলিম এক সঙ্গে বসবাস করার ফলে যৌতুক নামক সমাজ বিধ্বংসী এই কুপ্রথা ধীরে ধীরে মুসলিম সমাজে ঢুকে পড়েছে।
বর্তমানে আমাদের সমাজে যৌতুক একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। বিয়ের ঘোষিত বা অঘোষিত শর্ত হিসেবে মেয়ে পক্ষের নিকট থেকে ছেলে পক্ষের যৌতুক আদায়ের এক নির্লজ্জ প্রতিযোগিতা চলছে। ছেলেরা টাকার বিনিময়ে আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে বিয়ের বাজারে কুরবানীর পশুর দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে জামাই রূপী লোভী নরপশুদের আবদার পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় অনেক বিবাহযোগ্য মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না। অনেক দরিদ্র বাবা তাদের মেয়েদের সুখের আশায় ভিটে-মাটি বিক্রি করেও জামাইয়ের উদর পূর্তি করতে না পেরে আত্মহত্যা করছে। যৌতুকলোভী স্বামীর নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করতে হচ্ছে কত নারীকে তার কোন ইয়ত্তা নেই। অনেককে বিসর্জন দিতে হচ্ছে প্রাণ। একটি তথ্য থেকে জানা গেছে, ১৯৮২-১৯৯২ পর্যন্ত দশ বছরে যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৬৪৪ জন নারী। ২০০৩ সালের জুলাই মাসে প্রাপ্ত জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউ.এন.ডি.পি.)-র এক রিপোর্টে দেখা গেছে, গত ১০ বছরে ৫০% নারী যৌতুকের কারণে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০৩ সালে সারাদেশে অন্তত ১২৮ জন মহিলা খুন হয়েছে যৌতুকের কারণে। স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করেছে ১৮ জন, আর নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৪০ জন। যৌতুক দিতে অক্ষম হওয়ায় তালাকপ্রাপ্তা হয়েছে ১৪ জন।
২০০৩ সালের জানুয়ারী থেকে ২০০৪ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত সংবাদপত্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী যৌতুকের জন্য হত্যা করা হয়েছে ২৬২ জনকে। নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১২৪ জন। ১২ জনকে করা হয়েছে এসিডদগ্ধ। আত্মহত্যা করেছে ৯ জন।
প্রচলিত যৌতুক প্রথাকে ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় উপমহাদেশের খ্যাতনামা মুহাদ্দিস, মিশকাত শরীফের আরবী ভাষ্য ‘মির‘আতুল মাফাতীহ’-এর রচয়িতা আল্লামা উবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী (১৯০৯-৯৪) বলেন, ‘‘বিয়ে ঠিক করার সময় পাত্রের পক্ষ হতে পাত্রী পক্ষের নিকট থেকে কোন জিনিসের দাবি করা এবং বিয়ের জন্য উক্ত দাবি পূরণকে শর্ত রাখা শরী‘আতের দৃষ্টিতে হারাম ও অবৈধ। জিনিসপত্রের মাধ্যমে, নগদ টাকার মাধ্যমে কিংবা স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মাধ্যমে হৌক। এ ধরনের শর্ত আরোপকারী ব্যক্তি বা তার সহযোগীরা দ্বীনের দিক থেকে ঘোরতর পাপী ও কাবীরা গুনাহগার। পাত্রী পক্ষ থেকেও আগে বেড়ে পাত্র পক্ষকে কিছু দেওয়ার ওয়াদা করা বা প্রলোভন দেখানো শরী‘আতের দৃষ্টিতে অন্যায়।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘বিয়েতে দেওয়া-নেওয়ার এই প্রথা যার নাম পণ, ডিমান্ড, প্রেজেন্টেশন, যৌতুক যাই-ই রাখা হৌক না কেন, ইসলামে তা হারাম ও অবৈধ। এ থেকে বেঁচে থাকা একান্তভাবে অপরিহার্য।’’
সমাজদেহের দুষ্টক্ষত যৌতুক প্রথাকে নির্মূল করার জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সরকারী আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়াও সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, জুম‘আর খুতবা, রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টি, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান ও গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে।

ষষ্ঠ অধ্যায় : পারিবারিক বিপর্যয় রোধে আমাদের করণীয়
পাশ্চাত্যে বহু আগেই পারিবারিক প্রথা ভেঙ্গে পড়েছে। সেই ঢেউয়ের প্রচন্ড অভিঘাত আমাদের পারিবারিক ব্যবস্থার উপরও আছড়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত। অবাধ নারী স্বাধীনতার নামে আমাদের দেশের নারীদেরকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা চলছে পুরোদমে। আজকে এনজিওরা আমাদের মা-বোনদের মুখ দিয়ে বলাচ্ছে-
কিসের ঘর কিসের বর
ঘর যদি হয় মারধর
শাক-শুটকি খাব না
স্বামীর কথা মানব না।
আমার দেহ আমার মন
কথায় কেন অন্যজন
রাতের বেড়া ভাঙব
স্বাধীনভাবে চলব।
আজকে আমাদের পারিবারিক ব্যবস্থা মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে চলেছে। সময় থাকতে আমাদেরকে এখুনি এ ব্যাপারে সাবধান হতে হবে। পারিবারিক বিপর্যয় রোধে গ্রহণ করতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা । নিম্নে এ সম্পর্কে কিছু সুপারিশ উপস্থাপন করা হলো।
১. আমাদের সমাজের নারী-পুরুষ বিশেষত যুবক-যুবতীদের দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ আমূল পরিবর্তন করতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে, পাশ্চাত্যের বস্ত্তবাদী ও ভোগবাদী সমাজ ও পরিবার মুসলমানদের সমাজ ও পরিবারের জন্য কোন দিক দিয়েই আদর্শ ও অনুসরণীয় হতে পারে না। আমাদের আদর্শ হচ্ছে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গড়া ইসলামী সমাজ ও পরিবার ব্যবস্থা। ইউরোপীয় সমাজ ও পরিবারের রীতি-নীতি শুধু পারিবারিক বিপর্যয়েরই সৃষ্টি করে না, মানুষকে পশুর চাইতেও নিকৃষ্ট চরিত্রের বানিয়ে দেয়। অতএব, তাদের অন্ধ অনুকরণ করে আমরা কোনক্রমেই পশুত্বের স্তরে নেমে যেতে পারি না।
২. অসৎ সঙ্গে মিশে ছেলে-মেয়ে যাতে নষ্ট না হয়ে যায় সেদিকে পরিবারের অভিভাবক ও সদস্যদের তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখতে হবে। তারা কার সাথে চলাফেরা, উঠাবসা, খেলাধূলা ও বন্ধুত্ব স্থাপন করে সে বিষয়ে খোঁজখবর নিতে হবে। এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিম্নোক্ত হাদীসটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
عَنْ أَبِىْ مُوْسى، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ للهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَثَلُ الْجَلِيْسِ الصَّالِحِ وَالسُّوْءِ، كَحَامِلِ الْمسْكِ وناَفِخِ الْكِيْرِِ؛ فَحَامِلُ الْمِسْكِ إمَّا أنْ يُحْذِيَكَ وَإِمَّا أَنْ ةَبْةاَعَ مِنْهُ، وَإِمَّا أَنْ ةَجِدَ مِنْهُ رِيْحًا طَيِّبَةً؛ وَنَافِخُ الْكِيْرِ إمَّا أنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ، وَإِمَّا أَنْ ةَجِدَ مِنْهُ رِيْحًا خَبِيْثَةً.
আবূ মূসা আশ‘আরী (রা) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘সৎ সঙ্গ ও অসৎ সঙ্গের দৃষ্টান্ত হচ্ছে সুগন্ধি বিক্রেতা ও কামারের হাপরে ফুঁ দানকারীর মতো। সুগন্ধি বিক্রেতা হয়তো তোমাকে এমনিতেই কিছু দিয়ে দেবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে কিছু ক্রয় করবে অথবা তার সুঘ্রাণ তুমি পাবে। আর কামারের হাপরে ফুঁ দানকারী হয় তোমার কাপড় জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেবে নতুবা তার দুর্গন্ধ তো তুমি পাবেই।’’
৩. ছোটবেলা থেকেই ছেলে-মেয়েদের পোষাক-পরিচ্ছদের প্রতি খেয়াল রাখা।
৪. উপযুক্ত বয়সে ছেলে-মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৫. সু্ন্দরী প্রতিযোগিতা ও ফ্যাশন শোর নামে নারী দেহের নগ্ন প্রদর্শনী বন্ধ করতে হবে। সাথে সাথে অশ্লীল গান, নৃত্য ও নাচ পরিহার করতে হবে।
৬. বেশ্যাবৃত্তির লাইসেন্স প্রদান বন্ধ করে অবাধ যৌনতার পথ রুদ্ধ করতে হবে।
৭. যৌতুক নামক পরিবার বিধ্বংসী প্রথা বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে এবং এ ব্যাপারে গণসচেনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
৮. যৌন সুড়সুড়ি প্রদানকারী অশ্লীল বই-পত্র ও ম্যাগাজিন বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
৯. মেয়েদের জন্য পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
১০. পর্দা প্রগতির অন্তরায় নয়; বরং তা শালীনতা, শুচি-শুভ্রতার প্রতীক এবং নারী নির্যাতন,ইভটিজিং, এসিড নিক্ষেপ প্রভৃতি রোধের কার্যকর উপায়। সুতরাং মেয়েদেরকে ছোটবেলা থেকেই পর্দার বিধান মেনে চলার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
১১. নারী-পুরুষ উভয়েই যাতে স্ব স্ব অবস্থানে থেকে দেশ ও জাতির উন্নয়নে কাজ করতে পারে সে লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায়, ইসলামে পরিবার ও পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব অপরিসীম। দেহের মধ্যে হার্ট বা কলবের স্থান যেমন, ইসলামে পরিবারের স্থান তেমন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘শরীরের মধ্যে একটি গোশতপিন্ড রয়েছে। যদি তা সুস্থ-স্বাভাবিক থাকে তাহলে গোটা শরীর সুস্থ-স্বাভাবিক থাকে। আর যদি তা অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে সমস্ত শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঐ গোশতপিন্ডটি হচ্ছে কলব বা হৃদয়।’’ সুতরাং পরিবার যদি ঠিক হয়ে যায় তাহলে সমাজ ঠিক হয়ে যাবে। আর সমাজ ঠিক হয়ে গেলে রাষ্ট্রও ঠিক হয়ে যাবে। সেজন্য পরিবার ও পারিবারিক জীবনকে স্বর্গীয় আভায় আলোকিত করার লক্ষ্যে ইসলাম এতদসংক্রান্ত নানাবিধ দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে।
সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে। তাই একটি আদর্শ পরিবার গঠনের জন্য ধার্মিকা ও চরিত্রবতী স্ত্রী বেছে নেয়ার জন্য কুরআন মাজীদ ও সহীহ হাদীসে নানাভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ স্ত্রী হচ্ছে ঘরের রাণী। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক আদম সন্তান কর্তা। পুরুষ তার পরিবারের কর্তা আর নারী তার ঘরের কত্রী।’’
পরিবারকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ইসলাম সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তাই তালাকের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদের ব্যবস্থা সেখানে থাকলেও তার পূর্বে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দ্বন্দ্ব-কলহ নিরসনের নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেসব উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলে একই ছাদের নিচে অসুখী জীবন যাপনের চেয়ে পরিবার রক্ষার উদ্দেশ্যেই ইসলামে তালাক বিধিসম্মত করা হয়েছে। ইসলামে তালাক অনেকটা তেতো ঔষধ সদৃশ, যা অনিচ্ছা সত্ত্বেও কখনো কখনো গিলতে হয়।
পশ্চিমা সমাজে পরিবারপ্রথা বিলুপ্তির পথে। তথাকথিত নারী নেত্রী ও উদার বুদ্ধিজীবীদের (!) কল্যাণে নারী স্বাধীনতা, নারী অধিকার, নারীর মানোন্নয়ন, নারীকে স্বাবলম্বী করা ইত্যাদি প্রতারণাপূর্ণ এজেন্ডার মাধ্যমে সেই ঢেউ আমাদের সমাজেও লেগেছে। আজকে পাশ্চাত্যের ন্যায় আমাদের মাঝেও এ এ্যানথ্র্যাক্স জীবাণু ছড়ানোর চেষ্টা চলছে যে, পরিবার মানে কেবল স্বামী-স্ত্রী। বাবা-মা, দাদা-দাদী, নানা-নানীর সেখানে কোন স্থান নেই। এভাবে আমিত্বের বিষবাষ্পে জর্জরিত করে পরিবারকে ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে। অন্যদিকে নারী স্বাধীনতার নামে নারীদেরকে রাস্তায় বের করে উলঙ্গ করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। নারীর নিরাপত্তার প্রতীক পর্দা প্রথার বিরুদ্ধে নানাভাবে বিষোদগার করা হচ্ছে। অথচ একজন বিধর্মী লেখক বলেছেন, ‘‘একজন বেপর্দা নারী মুসলমানদের জন্য এক হাজার কামানের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক।’’
পাশ্চাত্য সমাজ যখন নারীকে তার মূল দায়িত্ব তথা সন্তান-সন্ততি প্রতিপালন ও গার্হস্থ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত করার জোর দাবি জানাচ্ছে তখন নারীকে চাকুরী করতেই হবে এমন গোলকধাঁধায় ফেলে আমাদের পরিবারগুলোকে নরকের আগুনে দাউ দাউ করে প্রজ্জ্বলিত করার নগ্ন পাঁয়তারা অব্যাহত রয়েছে। এভাবে সন্তানকে বঞ্চিত করা হচ্ছে মাতৃস্নেহ থেকে এবং স্বামীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে স্ত্রীর আদর-সোহাগ থেকে। এ বিষয়ে আমাদের আরো সতর্ক ও সাবধান হতে হবে। অন্যথা পাশ্চাত্যের মত আমাদেরকেও এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে। আল্লাহ আমাদের পরিবারগুলোকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করুন! আমীন!!

 

রেফারেন্সঃ

. সহীহ আল বুখারী (বৈরূত : আল-মাকতাবাতুল আসরিয়্যাহ, ২০০৬), পৃ. ৯৫২, হাদীস নং- ৫১৮৬।
. ঔড়যহ গড়মবু (বফ.), ঋধসরষু ধহফ গধৎৎরধমব (খবরফবহ: ঊ.ঔ. ইৎরষষ, ১৯৬৩), চ. ঠষষ.
. ড.ইবরাহীম আনীস ও অন্যান্য, আল-মু‘জামুল ওয়াসীত (দিল্লী : দার লিইশাআতি ইসলামিয়াহ, তা.বি.), পৃ. ৩১, ৩৩ ও ৬৪০।
. ড. মাহমূদ আব্দুর রহমান আব্দুল মুনঈম, মু‘জামুল মুসতালাহাত ওয়াল আলফায আল-ফিকহিয়্যাহ (কায়রো : দারুল ফাযীলাহ, ১৯৯১), ১ম খন্ড, পৃ. ১৭৪।
. ড. মুসতাফা আল-খিন ও ড. মুসতাফা আল-বুগা, আল-ফিকহুল মানহাজী (দামেশক : দারুল কলম, ১৯৯৬), ২য় খন্ড, পৃ. ১৬।
. Dr. Shawqi Dayf, The Universality of Islam (ISESCO : ১৯৯৮), চ. ১০৩.
. Mohammad Ali, The Religion of Islam (Lahore : Ripon Printing Press, N.D.), P. ৬০৪.

. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ৯৩২, হাদীস নং- ৫০৬৬; সুনান নাসাঈ, তাহকীক : শায়খ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রিয়াদ : মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ১৪১৭ হি.), পৃ. ৪৯৬, হাদীস নং- ৩২০৯।
. সুনান ইবনু মাজাহ, তাহকীক : শায়খ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রিয়াদ : মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ১৪১৭ হি.), পৃ. ৩২১, হাদীস নং- ১৮৪৬।
. সহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, তাহকীক : শায়খ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রিয়াদ : মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ২০০১), ২য় খন্ড, পৃ. ৪০৪, হাদীস নং- ১৯১৬।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ৯৩২, হাদীস নং- ৫০৬৩।
. ঐ, পৃ. ৯৩৪, হাদীস নং- ৫০৭৩-৭৪।
. ঐ, পৃ. ৯৪৩, হাদীস নং-৫১২৭, কিতাবুন নিকাহ।
. সাইয়িদ সাবিক, ফিকহুস সুন্নাহ (বৈরূত : মুআস্সাসাতুর রিসালাহ, ২০০৩), ২/১০৫; ড. ওয়াহবাহ আয-যুহায়লী, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু (দামেশক : দারুল ফিকর, ১৯৮৯), ৭/৩১-৩৩; ড. সালিহ বিন ফাওযান আলে ফাওযান, আল-মুলাখখাস আল-ফিকহী (সৌদি আরব : দারু ইবনিল জাওযী, ১৪তম সংস্করণ, ১৪২১ হি.), ২/২৫৮।
. শায়খ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী, সহীহুল জামে আস-সাগীর (বৈরূত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৯৯৬), ১ম খন্ড, পৃ. ৫৬৬, হাদীস নং- ২৯৪১।
. আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ৭/৩২; ফিকহুস সুন্নাহ ২/১০৬।
.সহীহ মুসলিম (রিয়াদ : দারুস সালাম, ২০০০), পৃ. ৫৮৭, হাদীস নং- ৩৪০৭; সুনান আবু দাউদ, তাহকীক : শায়খ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রিয়াদ : মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ১৪১৭ হি.), পৃ. ৩২৬, হাদীস নং- ২১৫০; জামে আত্ তিরমিযী, তাহকীক : শায়খ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রিয়াদ : মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ১৪১৭ হি.), পৃ. ২৭৫, হাদীস নং- ১১৫৮।
. সহীহ মুসলিম, পৃ. ৫৮৭, হাদীস নং- ৩৪০৯।
. সুনান আবু দাউদ, পৃ. ৩১২, হাদীস নং-২০৫০।
.সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ২/৪০৭, পাদটীকা- ১ দ্র.।
. শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ (কায়রো : দারুত তুরাস, ১৯৩৬), ২/১২৩।
. জামে আত্ তিরমিযী, পৃ. ৩৮৮, হাদীস নং- ১৬৫৫; সুনান নাসাঈ, পৃ. ৪৮১, হাদীস নং- ৩১২০।
. জামে আত্ তিরমিযী, পৃ. ২৫৬, হাদীস নং- ১০৮৫।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ৯৪৮, হাদীস নং- ৫১৫১; জামে আত্ তিরমিযী, পৃ. ২৬৭, হাদীস নং- ১১২৭; সুনান নাসাঈ, পৃ. ৫১৮, হাদীস নং- ৩২৮১; সুনান ইবনু মাজাহ, পৃ. ৩৩৮, হাদীস নং- ১৯৫৪।
. সহীহ মুসলিম, পৃ. ৫১৫, হাদীস নং- ২৯৫০ ‘হজ্জ’ অধ্যায় ।
. সুনান আবু দাউদ, পৃ. ৩২৫, হাদীস নং-২১৪২।
. জামে আত্ তিরমিযী, পৃ. ২৭৬, হাদীস নং- ১১৬২; সুনান ইবনু মাজাহ, পৃ. ৩৪২, হাদীস নং- ১৯৭৮।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ৯৫২, হাদীস নং- ৫১৮৬।
. সুনান আবু দাউদ, পৃ. ৩২৪, হাদীস নং- ২১৩৮।
. ঐ, হাদীস নং- ২১৩৭।
. ঐ, পৃ. ৩২৩-২৪, হাদীস নং -২১৩৩।
. সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, ২য় খন্ড, পৃ. ৪১২, হাদীস নং- ১৯৩২।
. ঐ, ২/ ৪১৫, হাদীস নং-১৯৩৬।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ৯৫৭, হাদীস নং- ৫২০৫, ‘অবৈধ কাজে স্ত্রী স্বামীর আনুগত্য করবে না’ অনুচ্ছেদ।
. সহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, ২য় খন্ড, পৃ. ৪০৪, হাদীস নং ১৯১৫।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ৯৫৫, হাদীস নং-৫১৯৩।
. জামে আত্ তিরমিযী, পৃ. ২৭৬, হাদীস নং- ১১৬১।
. সুনান আবু দাউদ, পৃ. ৩৯৭, হাদীস নং- ২৬২৫, ‘জিহাদ’ অধ্যায়, ‘আনুগত্য’ অনুচ্ছেদ।
. মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-খাতীব আত-তাবরীযী, মিশকাতুল মাসাবীহ (বৈরূত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৯৮৫), ২/১০৯২, হাদীস নং- ৩৬৯৬।
. সহীহ আল বুখারী, ১০৭৮, হাদীস নং- ৫৯৭১; সহীহ মুসলিম, পৃ. ১১১৭, হাদীস নং- ৬৫০১।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ১০৭৮, হাদীস নং- ৫৯৭০।
. সহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব ২/৬৫১, হাদীস নং- ২৪৮৮।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ১০৭৯, হাদীস নং- ৫৯৭৬; সহীহ মুসলিম, পৃ. ৫৩, হাদীস নং- ২৫৯-৬১, ‘ঈমান’ অধ্যায়।
. জামে আত্ তিরমিযী, পৃ. ৩২০, হাদীস নং- ১৩৫৮; সুনান নাসাঈ, পৃ. ৬৮৩, হাদীস নং- ৪৪৪৯ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়; সুনান ইবনু মাজাহ, পৃ. ৩৯২, হাদীস নং- ২২৯০ ‘ব্যবসা-বাণিজ্য’ অধ্যায়।
. সুনান ইবনু মাজাহ, পৃ. ৩৯২, হাদীস নং- ২২৯১।
. ইমাম শাওকানী, নায়লুল আওতার (বৈরূত : দারুল কিতাবিল আরাবী, ২০০০), ৪/৭২।
. জামে আত্ তিরমিযী, পৃ. ৩৫৮, হাদীস নং- ১৫১৪; সুনান আবু দাউদ, পৃ. ৭৬৫, হাদীস নং- ৫১০৫।
. শায়খ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী, ইরওয়াউল গালীল (বৈরূত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৯৮৫), ৪/৪০১-০২, হাদীস নং- ১১৭৪; হাদীসটি হলো- ‘‘যার কোন নবজাতক জন্মগ্রহণ করবে আর সে নবজাতকের ডান কানে আযান আর বাম কানে ইকামত দিলে সে নবজাতকের এমন অসুখ হবে না, যা তাকে অজ্ঞান করে দেয়।’’ এ হাদীসে ইয়াহ্ইয়া বিন আলা আল-বাজালী ও মারওয়ান বিন সালিম আল-গিফারী আল-জাযারী নামে দু’জন বর্ণনাকারী (রাবী) রয়েছে যারা হাদীস জাল করত (শায়খ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীস আয-যঈফাহ ওয়াল মাওযূ‘আহ (বৈরূত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৩৯৮হি.), ১ম খন্ড, পৃ. ৩২৯, হাদীস নং- ৩২১) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, ‘‘ইয়াহ্ইয়া বিন আলা আল-বাজালী মিথ্যুক। সে জাল হাদীস রচনা করত।’’ আবু হাতিম বলেন, ‘‘সে শক্তিশালী রাবী নয়।’’ ইমাম দারাকুতনী বলেন, ‘‘সে পরিত্যক্ত।’’(শামসুদ্দীন আয-যাহাবী, মীযানুল ই‘তিদাল (বৈরূত : দারুল মা‘রিফাহ, তা.বি.), ৪র্থ খন্ড, পৃ. ৩৯৭)। অন্যদিকে মারওয়ান বিন সালিম সম্পর্কে ইমাম আহমাদ ও অন্যরা বলেছেন, ‘‘সে নির্ভরযোগ্য রাবী নয়।’’ ইমাম বুখারী, মুসলিম ও আবু হাতিম বলেছেন, ‘‘তার হাদীস অগ্রহণযোগ্য।’’ আল-হাররানী বলেন, ‘‘সে হাদীস জাল করত।’’ (ঐ, ৪/৯০)। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী বলেন, ‘‘সে পরিত্যক্ত।’’ (তাকরীবুত তাহযীব (আলেপ্পো, সিরিয়া : দারুর রশীদ, ১৯৮৮), পৃ. ৫২৬, রাবী ক্রমিক- ৬৫৭০।
. সুনান আবু দাউদ, পৃ. ৪৩২, হাদীস নং ২৮৩৮; জামে আত্ তিরমিযী, পৃ. ৩৬০, হাদীস নং- ১৫২২, সুনান নাসাঈ, পৃ. ৬৫১, হাদীস নং- ৪২২০।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ১০০৩, হাদীস নং- ৫৪৭২; জামে আত্ তিরমিযী, পৃ. ৩৫৮, হাদীস নং- ১৫১৫; সুনান আবু দাউদ, পৃ. ৪৩২, হাদীস নং- ২৮৩৯।
. ফিকহুস সুন্নাহ ২/৩২।
. সুনান নাসাঈ, পৃ. ৬৫০, হাদীস নং- ৪২১৭-১৮; জামে আত্ তিরমিযী, পৃ. ৩৫৯, হাদীস নং- ১৫১৬; সুনান আবু দাউদ, পৃ. ৪৩২, হাদীস নং- ২৮৩৫।
. সুনান আবু দাউদ, পৃ. ৪৩২, হাদীস নং- ২৮৪১, ‘আকীকা’ অনুচ্ছেদ।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ১১১০, হাদীস নং- ৬১৯০ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়।
. ঐ, পৃ. ৪৪৬, হাদীস নং ২৫৮৬-৮৭, ‘হেবা ও তার ফযীলত’ অধ্যায়।
. সুনান আবু দাউদ, পৃ. ৭৭০; শায়খ আলবানী (র) হাদীসটিকে যঈফ বা দুর্বল বলেছেন। দ্র. মিশকাত ৩/১৩৮৯, টীকা নং-৫।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ২৪০, হাদীস নং- ১৩৮৫, ‘জানাযা’ অধ্যায়।
. আহমাদ; মিশকাত, ১/২৫, হাদীস নং- ৬১।
. সুনান আবু দাউদ, পৃ. ৮২, হাদীস নং- ৪৯৫।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ১০২৮, হাদীস নং- ৫৯৯৫, কিতাবুল আদাব।
. সহীহ মুসলিম, পৃ. ১১৪৬ , হাদীস নং- ৬৬৯৫, কিতাবুল বির্র ওয়াস সিলাহ ওয়াল আদাব।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ৩৭, হাদীস নং-৯৭, কিতাবুল ইলম।
. ঐ, পৃ. ১০২৮, হাদীস নং- ৫৯৯৮, কিতাবুল আদাব।
. ঐ, পৃ. ১০৮২, হাদীস নং-৫৯৯৭, কিতাবুল আদাব।
. ঐ, পৃ. ১০৮৩, হাদীস নং- ৬০০৩, কিতাবুল আদাব।

. Lester D.Crow and Alice Crow, Child Development and Adjustment (New York: The Macmillan Company, ১৯৬৭), চ. ৪৬৩.
. সহীহ মুসলিম, পৃ. ৬২৭, হাদীস নং- ৩৬৪৯; সুনান নাসাঈ,পৃ. ৫০০, হাদীস নং- ৩২৩২।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ৯৩৬, হাদীস নং- ৫০৯০; সহীহ মুসলিম, পৃ. ৬২৪, হাদীস নং- ৩৬৫৫।
. সুনান নাসাঈ, পৃ. ৫০০, হাদীস নং-৩২৩১।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ৯৩৫, হাদীস নং- ৫০৮২।
. সহীহুল জামে আস-সাগীর, ২য় খন্ড, পৃ. ১১৪৯-৫০, হাদীস নং- ৬৭৯৭।
. সুনান আবু দাউদ, পৃ. ৩১১, হাদীস নং- ২০৫০।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ৯৩৪, হাদীস নং- ৫০৭৯-৮০।
. শায়খ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীস আস-সহীহা (বৈরূত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৯৮৫), ২য় খন্ড, পৃ. ১৯২, হাদীস নং- ৬২৩।
. সুনান নাসাঈ, পৃ. ৪৯৮,হাদীস নং- ৩২২১।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ৯৩৬, হাদীস নং- ৫০৯১।
. ফিকহুস সুন্নাহ ২/১১১।
. হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ২/১২৪।
. ফিকহুস সুন্নাহ ২/ ১১৩-১৪।
. মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম, পরিবার ও পারিবারিক জীবন (ঢাকা : খায়রুন প্রকাশনী, ২০০৮), পৃ. ১১৭।
. সুনান আবু দাউদ, পৃ. ৩১৬, হাদীস নং- ২০৮২।
. জামে আত্ তিরমিযী, পৃ. ২৫৭, হাদীস নং- ১০৮৭; সুনান নাসাঈ, পৃ.৫০১, হাদীস নং- ৩২৩৫; সুনান ইবনু মাজাহ, পৃ. ৩২৪, হাদীস নং- ১৮৬৫-৬৬।
. সহীহ মুসলিম, পৃ. ৫৯৭, হাদীস নং- ৩৪৮৫।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ৯৪৩, হাদীস নং- ৫১২৬।
. হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী, ফাতহুল বারী (রিয়াদ : দারুস সালাম, ১৯৯৭), ৯/২২৮; নায়লুল আওতার ৪/১৮৫; ফিকহুস সুন্নাহ ২/১১৪; ইমাম নববী, আল-মিনহাজ শারহু সহীহ মুসলিম (বৈরূত : দারুল মা‘রিফাহ, ১৯৯৬), ৯/২১৪।
. আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ৭/২৩; আল-ফিকহুল মানহাজী ২/৪৩; আল-মিনহাজ ৯/২১৪।
. আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ৭/২৩।
. ফিকহুস সুন্নাহ ২/১১৫; আল-ফিকহুল মানহাজী ২/৫০।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ৯৬১, হাদীস নং- ৫২৩৩।
. সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ২/৪০১, হাদীস নং- ১৯০৯।
. আহমাদ; সহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব ২/৪০০, হাদীস নং- ১৯০৮; নায়লুল আওতার ৪/১৮৫, হাদীস নং- ২৬৪৬।
. তাফসীরে কুরতুবী (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১৯৯৩), ৫/১৭।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ৯৪৭, হাদীস নং- ৫১৫০।
. আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ৭/২৫২।
. আল-ফিকহুল মানহাজী ২/৭২; ফিকহুস সুন্নাহ ২/২০৪; আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ৭/২৫৩।
. নায়লুল আওতার ৪/২৫৩।
. সুনান আবু দাউদ, পৃ. ৩১৯, হাদীস নং- ২১০৬; সুনান ইবনু মাজাহ, পৃ. ৩২৮, হাদীস নং- ১৮৮৭; আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ৭/২৫৫-৫৬; ফিকহুস সু্ন্নাহ ২/২০৬-৭।
. নায়লুল আওতার ৪/ ২৫২।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ৯৪৭; হাদীস নং- ৫১৪৯-৫০।
. সুনান আবু দাউদ, পৃ. ৩২২, হাদীস নং- ২১২৫।
. মাহমূদ হুমাম, আয-যাওয়াজু ফিতরাতান ওয়া শারী‘আতান, সাপ্তাহিক আল-ফুরকান, কুয়েত, সংখ্যা ৪৮৩, ২৪ মার্চ ২০০৮, পৃ. ২৫।
. আব্দুর রহমান আল-জাযীরী, আল-ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আহ (কায়রো : দারুল হাদীস, ২০০৪), ৪/৭৯।
. নায়লুল আওতার ৪/২৫০।
. আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ৭/২৫৬-৫৭; আল-ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আহ ৪/৭৯।
. নায়লুল আওতার ৪/২৫০।
. হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ২/১২৯।
. সহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব ২/৪০৮।
. আবদুস শহীদ নাসিম, ইসলামের পারিবারিক জীবন (ঢাকা : বর্নালি বুক সেন্টার, ২০০৭), পৃ. ৪০-৪১।
. আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ৭/৩৬-৩৭; ফিকহুস সুন্নাহ ২/১১৮।
.সহীহ আল বুখারী, পৃ. ৪২৩, হাদীস নং-২৪৬৫, কিতাবুল মাযালিম ওয়াল গাসব ।
.ঐ, পৃ. ১১১৯, হাদীস নং- ৬২৪৩, কিতাবুল ইসতি’যান, বাবু যিনাল জাওয়ারিহ দূনাল ফারজ।
. লেখকমন্ডলী, দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ৭ম সংস্করণ, ২০০৮), পৃ. ৩৯৪।
. ঐ, পৃ. ৩৯৪।
. মাওলানা মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মুমিন, আল হিজাবের মর্মকথা (ঢাকা : বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ২০০৮), পৃ. ১৪৯।
. ড. আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুহসিন আত-তুর্কী, মিনহাজুল ইসলাম ফী বিনায়িল উসরাহ (সৌদি আরব: ওযারাতুশ শুউন আল-ইসলামিয়্যাহ ওয়াল আওকাফ ওয়াদ দাওয়াহ ওয়াল ইরশাদ, ১৪১৮হি.), পৃ. ৭৫।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ১২১৫, হাদীস নং- ৬৮৩১; মিশকাত ২/১০৫৬; হাদীস নং- ৩৫৫৬ ‘দন্ডবিধি’ অধ্যায়।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ১২১৩, হাদীস নং- ৬৮২৯; সহীহ মুসলিম, পৃ. ৭৪৯-৫০, হাদীস নং- ৪৪১৮, ‘দন্ডবিধি’ অধ্যায়; মিশকাত ২/১০৫৬-৫৭, হাদীস নং- ৩৫৫৭।
. হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ২/১৩৩।
. ইনকিলাব, ৪ এপ্রিল ’০৮, পৃ. ১৪।
. মিনহাজুল ইসলাম ফী বিনায়িল উসরাহ, পৃ, ৮৬।
. ইনকিলাব, ৫ এপ্রিল ’০৮, পৃ. ১৪।
. ফাতহুল বারী ৯/২০৯; আল-ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আহ ৪/৭৪; ফিকহুস সুন্নাহ ২/১২৩; শরীফ আলী আল-জুরজানী, কিতাবুত তা‘রীফাত (বৈরূত : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, ১৯৮৮), পৃ. ২৪৬।
. আল-ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আহ ৪/৭৪-৭৫; হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ২/১২৮; আল-মিনহাজ ৯/১৮৩।
. সহীহ মুসলিম, পৃ. ৫৯০, হাদীস নং- ৩৪২৯।
. আল-মিনহাজ ৯/১৮৪।
. ফিকহুস সুন্নাহ ৪/১২৩; আল-ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আহ ৪/৭৪।
. সহীহ মুসলিম, পৃ. ৫৮৯, হাদীস নং- ৩৪২২।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ৯৪১, হাদীস নং- ৫১১।
. ফিকহুস সুন্নাহ ৪/১২৪।
. নায়লুল আওতার ৪/২১৪।
. ড. মুহাম্মাদ ইয়াকুব দেহলভী, যিমানাতু হুকূকিল মারআহ আয-যাওজিয়্যাহ (মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ২০০৪), পৃ. ৫৩; ফিকহুস সুন্নাহ ৪/১২৪।
. হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ২/১২৮।
. আল-ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আহ ৪/৭৫-৭৬; ফিকহুস সুন্নাহ ৪/১২৪।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ৯৪০, হাদীস নং- ৫১১২; সহীহ মুসলিম, পৃ. ৫৯৫, হাদীস নং- ৩৪৬৫; জামে আত্ তিরমিযী, পৃ. ২৬৬; সুনান ইবনু মাজাহ, পৃ. ৩২৭; ইবনুল আসীর, আন-নেহায়া ফী গারীবিল হাদীস ওয়াল আসার (বৈরূত : আল-মাকতাবাতুল ইলমিয়্যাহ, তা.বি.), ২/৪৮২; আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ৭/১১১।
. আল-মিনহাজ ৯/২০৪।
. নায়লুল আওতার ৪/২২১।
. আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ৭/১১৭।
. ইবনু আবেদীন, রাদ্দুল মুহতার আলাদ দুররিল মুখতার (মিসর : মুস্তাফা আল-বাবী আল-হালাবী, ১৩৮৬ হি.), ৩/১০৬; ফিকহুস সুন্নাহ ৪/১০৩।
. সহীহ মুসলিম, পৃ. ৫৯৫, হাদীস নং- ৩৪৬৮।
. ঐ, পৃ. ৫৯৫, হাদীস নং- ৩৪৬৫।
. নায়লুল আওতার ৪/২২১; ফিকহুস সুন্নাহ ৪/১৩৪; যিমানাতু হুকূকিল মারআহ আল-যাওজিয়্যাহ, পৃ. ৫৮।
. সুনান ইবনু মাজাহ, পৃ. ৩৩৫, হাদীস নং- ১৯৩৬।
. আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ৭/১১৭।
. সুনান ইবনু মাজাহ, পৃ. ৩৩৫, হাদীস নং- ১৯৩৬; ইরওয়াউল গালীল ৬/৩০৯-১০।
. নায়লুল আওতার ৪/২১৮।
. মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আস-সান‘আনী, সুবুলুস সালাম (কায়রো : দারুর রাইয়ান লিত-তুরাস, ১৯৮৯), ৩য় খন্ড, পৃ. ২৬৯, হাদীস নং-৯৩৬।
. ইরওয়াউল গালীল ৬/৩১১।
. ফিকহুস সুন্নাহ ৪/১২৭; The Religion of Islam, P. ৬৮৫.
. ফিকহুস সুন্নাহ ২/১২৭-২৮।
. পরিবার ও পারিবারিক জীবন, পৃ. ৩৮১।
. ঐ, পৃ. ৩৮৩।
. যিমানাতু হুকূকিল মারআহ আয-যাওজিয়্যাহ, পৃ. ৬৩-৬৪; ফিকহুস সুন্নাহ ২/১২৯-৩০।
. হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ২/১৩৯।
.সফিউর রহমান মুবারকপুরী, আর-রাহীকুল মাখতূম (রিয়াদ : দারুস সালাম, ১৯৯৩), পৃ. ৪৪।
.জামে আত্ তিরমিযী, পৃ.২৮৩-৮৪, হাদীস নং-১১৯২, আবওয়াবুত তালাক ওয়াল লি‘আন আন রাসূলিল্লাহি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), শায়খ আলবানী হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন।
. সালাহুদ্দীন মাকবূল আহমাদ,আল-মারআতু বায়না হেদায়াতিল ইসলাম (কুয়েত : দারু ইলাফ, ১৯৯৭), পৃ. ৫৮।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ৯৫৬, হাদীস নং- ৫২০০।
. সহীহ মুসলিম, পৃ. ৬২৬, হাদীস নং- ৩৬৪৫।
. সুনান ইবনু মাজাহ, পৃ. ৩২২, হাদীস নং- ১৮৫২।
. তাফসীর ইবনে কাসীর (কায়রো : মাকতাবাতুস সফা, ২০০৪), ২/১৭৬।
. তাফসীরে কুরতুবী ৫/১১২।
. সহীহ মুসলিম, পৃ. ৫১৫, হাদীস নং- ২৯৫০ ‘হজ্জ’ অধ্যায়; মিশকাত ২/৭৮৫, হাদীস নং- ২৫৫৫, ‘হজ্জ’ অধ্যায়, ‘বিদায় হজ্জের কাহিনী’ অনুচ্ছেদ।
. তাফসীরে কুরতুবী ৫/১১৩; তাফসীর ইবনে কাসীর ২/১৭৭।
. সুনান আবু দাউদ, পৃ. ৩২৫, হাদীস নং- ২১৪২-৪৩।
. ঐ, পৃ. ৩৩০, হাদীস নং- ২১৭৬।
. ঐ, পৃ. ৩৩০, হাদীস নং- ২১৭৬।
. জামে আত্ তিরমিযী, পৃ. ২৮২-৮৩, হাদীস নং- ১১৮৭; সুনান আবু দাউদ, পৃ. ৩৩৮, হাদীস নং- ২২২৬; সুনান ইবনু মাজাহ, পৃ. ৩৫৪-৫৫, হাদীস নং- ২০৫৫।
. হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ২/১৪০।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ৯৬৪, হাদীস নং- ৫২৫১।
. ঐ।
. হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ২/১৪০।
. ড. মুস্তাফা আস্ সিবায়ী, ইসলাম ও পাশ্চাত্য সমাজে নারী (ঢাকা : বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ২০০৭), পৃ. ৯০।
.ফিকহুস সুন্নাহ ২/২৯৮-৯৯।
.ইবনু কুদামা, আল-মুগনী (কায়রো : দারু হিজর, ১৪০৯ হি.), ১০ম খন্ড, পৃ. ২৬৯।
.ইবনুল কাইয়িম, ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন (বৈরুত : দারুল ফিকর, ১৩৯৭ হি.), ৪র্থ খন্ড, পৃ. ১১০।
.সহীহ আল বুখারী, পৃ. ৯৬৯, হাদীস নং- ৫২৭৬, কিতাবুত তালাক।
.তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৩২২।
. ঞযব জবষরমরড়হ ড়ভ ওংষধস. ঢ়. ৬৩৮.
. মুহাম্মাদ আবু যুহরাহ, তানযীমুল উসরাহ ওয়া তাহদীদুন নাসল (কায়রো : দারুল ফিকর আল-আরাবী, তা.বি.), পৃ. ৬০; ইসলাম ও পাশ্চাত্য সামাজে নারী, পৃ. ৪৬; পরিবার ও পারিবারিক জীবন, পৃ. ২২২।
. আল-মারআতু বায়না হেদায়াতিল ইসলাম ওয়া গাওয়াতিল ই‘লাম,পৃ. ৫৫।
. ফিকহুস সুন্নাহ ২/১৭৪।
. ঐ ২/১৭৫।
. আফীফ আব্দুল ফাত্তাহ তববারাহ, রূহ আদ-দ্বীন আল-ইসলামী, পৃ. ২৩৯।
. ইনকিলাব, ৩ সেপ্টেম্বর ’০৮, পৃ. ৬।
. আল-মারআতু বায়না হেদায়াতিল ইসলাম ওয়া গাওয়াতিল ই‘লাম, পৃ. ২৩৯।
. ইসলাম ও পাশ্চাত্য সমাজে নারী, পৃ. ৫২।
. আল-মারআতু বায়না হেদায়াতিল ইসলাম ওয়া গাওয়াতিল ই‘লাম, পৃ. ২৪০-৪১।
. ঐ, পৃ. ২৪১।
. আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ৭/১৬৯।
. আল-আহরাম, মিসর, ১৩ ডিসেম্বর ১৯৬০।
. ইসলাম ও পাশ্চাত্য সমাজে নারী, পৃ. ৫৩-৫৪।
. Raymond Scupin and Christopher R. Decorse, Anthropology A Global Perspective (New Delhi: Prentice-Hall of India Private limited, 2005), P. 554, Chap. Globalization in the Middle East and Asia.
. ডা. জাকির নায়েক, ইসলামের ওপর ৪০টি অভিযোগ ও তার প্রমাণ ভিত্তিক জবাব (ঢাকা : পিস পাবলিকেশন, ২০০৮), পৃ. ২৫।
. ইসলাম ও পাশ্চাত্য সমাজে নারী, পৃ. ৩৩।
. The Religion of Islam, P. 647.
. Frank J. Macchiarola and Alan Gartner (eds), Caring for America`s Children (New York: 1989), p. 25.
. ড. আমীর আব্দুল আযীয, নিযামুল ইসলাম (কায়রো : দারু ইবনিল জাওযী, ২০০৫), পৃ. ২৪১।
. ইনকলিাব, ৮ জুলাই ’০৮, পৃ. ১৪।
. মাজাল্লাতুল বুহূস আল-ইসলামিয়্যাহ, কেন্দ্রীয় দারুল ইফতা, রিয়াদ, সৌদি আরব, সংখ্যা ৭৭, ডিসে: ’০৫-মার্চ’০৬, পৃ. ৩৬০।
. ঐ, পৃ. ৩৬১।
. পৃথিবী, জানুয়ারী ২০০৭, পৃ. ৬৪।
. আমার দেশ, ২৯ জুন ’০৮, পৃ. ৫।
. মিনহাজুল ইসলাম ফী বিনায়িল উসরাহ, পৃ. ৮২-৮৪।
. Caring for America`s Children, P. 24.
. যায়যায়দিন, ২৯ অক্টোবর ২০০৮, পৃ. ১৫ ও ১৬।
. আল-মারআতু বায়না হেদায়াতিল ইসলাম ওয়া গাওয়াতিল ই‘লাম, পৃ. ৩৩৪।
. ইনকিলাব, ১২মে ’০৮, পৃ. ৭।
. ঐ, ১৮ জুন ’০৮, পৃ. ৬।
. প্রথম আলো, ৪ আগস্ট ’০৮, পৃ. ৭।
.শেখ মুহাম্মদ আব্দুর রহীম, যৌতুক একটি অপরাধ (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ২০০৭), পৃ. ৩৭-৩৮।
.ঐ, পৃ. ৩৮।
.উবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী, পণপ্রথা ও ইসলাম, অনুবাদ: মুহাম্মাদ ইসমাঈল (পশ্চিমবঙ্গ: জামঈয়্যাতুশ শুববানিল মুসলিমীন, তা.বি.), পৃ. ৩-৪।
.পরিবার ও পারিবারিক জীবন, পৃ. ৩৮৯।
. সহীহ আল বুখারী, পৃ. ১০১৪, হাদীস নং- ৫৫৩৪, কিতাবুয যাবায়িহ ওয়াস সায়দ, বাবুল মিসক।
. ঐ, পৃ. ৩৭, হাদীস নং- ৫২ ‘ঈমান’ অধ্যায়।
. শায়খ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীস আস-সহীহা (রিয়াদ : মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ১৯৯১), ৫ম খন্ড, পৃ. ৬৯, হাদীস নং- ২০৪১।
. আল-ফুরকান, সংখ্যা ৪৭১, ১৭ ডিসেম্বর ২০০৭, পৃ. ২৩।