সূচনাঃ 

বিশ্বসভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, জ্ঞাত ইতিহাসের সকল অধ্যায়ে নারীর অবমাননা এবং বঞ্চনার কথা লিপিবদ্ধ রয়েছে। তার আত্মা আছে কি-না সে-ব্যাপারে সন্দেহ করা হয়েছে; ফলে পুরতষের মত তাকে দেওয়া হয়নি আত্মিক উন্নতির সুযোগ। তাকে দেওয়া হয়নি সম্পত্তির উত্তরাধিকার; বরং নিতামত অসহাবর সম্পত্তির মত তাকে যথেচ্ছা হসতামতর বা বিত্রুয় করা হয়েছে। নারীর ন্যায়বিচার লাভের আশা চিরদিন রয়ে গেছে সুদূর পরাহত। কোন কোন সভ্যতায় নারী শুধু মাতা হিসাবে সমতানদের ভত্তিু লাভ করেছে। এ-ছাড়া কন্যা, সএী, ভগ্ণী, সমাজের সদস্যা─ কোন রদপেই সে তেমন কোন সম্মান বা অধিকার পায়নি। তাকে মনে করা হত ইতর প্রাণীর চেয়ে কিছুটা উন্নত অথচ মানুষের চেয়ে কিছুটা নিচু সতরের জীব। এ-ক্ষেত্রে ইসলামী সভ্যতা ব্যতিত্রুমধর্মী দৃষ্টামত সহাপন করেছে। কিমও অজ্ঞতা বা বিদ্বেষের আধিক্য কিংবা উপলব্ধির স্বল্পতার কারণে ইসলামের অবসহানকে বারংবার আত্রুমণের লক্ষ্যবসতু করা হয়েছে। আলোচ্য প্রবন্ধে আমরা দেখব, ইসলামের আশ্রয়ে নারী কতটা শামিত, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা লাভ করতে পারে। তুলনামূলক চিত্র সব সময় যথার্থ উপলব্ধির জন্য সহায়ক হয়ে থাকে। তাই অন্যান্য সভ্যতা নারীকে কি দিয়েছে এখানে তাও তুলে ধরা হয়েছে।
ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় নারীঃ
প্রাচীন এই সভ্যতা সম্পর্কে আমাদের যে জ্ঞান, তার সবচেয়ে বড় উৎস হল রাজা হাম্মুরাবীর আইন। এই আইনের বিভিন্ন ধারা থেকে আমরা তৎকালীন সমাজে নারীর অবসহা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারি। হাম্মুরাবীর বিধানে পুরতষ ছিল নারীর উপর পূর্ণ কর্তৃত্বের অধিকারী। পরিবারের সকল সিদ্ধামত এবং বিচারের পূর্ণ এখতিয়ার ছিল তার। এমনকি ঋণ পরিশোধের টাকা সংগ্রহের প্রয়োজনে পুরতষ তার সএীকে দাসী হিসাবে বিত্রুয়ও করতে পারত। স্বামীর সম্মান এবং সমতানের বৈধতা নিশ্চিত করার জন্য হাম্মুরাবী বিধান দিয়েছিলেন, ব্যভিচারিণী সএী এবং তার অপকর্মের সঙ্গীকে একত্রে বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে মারতে হবে। অথচ স্বামীর জন্য ব্যভিচারের সুযোগ ছিল অবারিত। সে পতিতা, দাসী কিংবা রক্ষিতার সাথে অবাধে মিলতে পারত। এজন্য তাকে কোন শাসিতর সম্মুখীন হতে হত না। [সূত্রঃ Traditions Encounters. Pp- 45] ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় নারীর সামাজিক অবসহান একজন মার্কিন ইতিহাসবেত্তা এভাবে তুলে ধরেছেনঃ ""ব্যাবিলনীয় আইন সএীকে আবশ্যিকভাবে স্বামীর সম্পত্তি বিবেচনা করত। যদি কোন সএী নগরের মধ্যে তার স্বামীর বদনাম কিংবা গুজব রটাতো, তবে তাকে পানিতে ডুবিয়ে মারা হত। তাকে একই ভাগ্য বরণ করতে হত তার প্রেমিকের সাথে যদি তাকে ব্যভিচারে লিপ্ত অবসহায় পাওয়া যেত। অথচ স্বামীরা আইনগতভাবে যৌন স্বাধীনতা ভোগ করত।'' [সূত্রঃ Western Civilizations. Pp-54]
গ্রীক সভ্যতায় নারীঃ
প্রাচীন গ্রীকরা ছিল যুদ্ধবাজ; যুদ্ধের মধ্য দিয়েই তারা সভ্যতার রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হয়। টিকে থাকার জন্যও তাদেরকে অবিরাম সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হচ্ছিল প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে। তাই তাদের কাছে যুদ্ধ এবং যোদ্ধার গুরতত্ব ছিল অপরিসীম। যুদ্ধই ছিল তাদের দৃষ্টিভঙ্গী এবং জীবনবোধের নিয়ামক। নারীর প্রতি তাদের যে অবজ্ঞাসূচক দৃষ্টিভঙ্গী─ তারও কারণ ছিল এই যুদ্ধপ্রিয়তা। কোমলাঙ্গী নারীকে তারা যুদ্ধের অনুপযুত্তু মনে করত। দুর্বল শারীরিক গঠনের জন্য তাদেরকে কৃপার পাত্রী ভাবা হত। বরং বলা যায়, নারীকে নিমণসতরের প্রাণী বিবেচনা করা হত। যোদ্ধাপুরতষের পেশীবহুল দেহাবয়ব ছিল তাদের কাছে ঈর্ষনীয় সম্পদ। নারীদেহের প্রতি এই অবজ্ঞা এবং বলিষ্ঠ পুরতষদেহের প্রতি অনুরত্তু হবার কারণে গ্রীসের স্বামীদের মনে তাদের সএীদের প্রতি সামান্যই আসত্তিু থাকত। [সূত্রঃ Western Civilizations. Pp-142] পুরতষদেহের প্রতি যেহেতু তাদের আসত্তিু ছিল, সেহেতু বিত্তশালী বয়স্ক পুরতষেরা যৌনসঙ্গী হিসাবে একেকজন কিশোর বা তরতণকে বেছে নিত। গ্রীসের ঐতিহাসিক কাহিনী, কাব্যগ্রমহ, বিচারের রায় সংত্রুামত যে-সব দলিল ঐতিহাসিকগণ উদ্ধার করেছেন তা থেকে দেখা যায়, নারীর প্রতি অবহেলা এবং সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ পুরতষ-সমাজে ব্যাপকতা লাভ করেছিল। [সূত্রঃ The West in the World. Pp-56]
নারীর প্রতি এই সাধারণ অবজ্ঞা সত্তেবও পুরতষ তাকে বিয়ে করত─ সে শুধু সমতান উৎপাদনের জন্য এবং ঘর-গেরসহালি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। একজন নারী মৃত্যুর পূর্ব পর্যমত গড়ে প্রতি দুই-তিন বছর অমতর অমতর একটি করে সমতান জনম দিতে থাকত। নারীর প্রতি গ্রীক পুরতষের এই নেতিবাচক দৃষ্টিভংঙ্গ যথার্থভাবে প্রতিফলিত হয়েছে এথেন্সের এক বাগ্মী-পুরতষের কথায়ঃ ""আমাদেরকে আনন্দ দেবার জন্য রয়েছে পতিতা, প্রতিদিনকার দৈহিক সেবাদানের জন্য রয়েছে রক্ষিতা আর বৈধ সমতান দেবার জন্য এবং ঘরের বিশ্বসত রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসাবে রয়েছে সএী।'' [সূত্রঃ Western Civilizations. Pp-142] উল্লেখ্য, এখানে নারীকে যে ভতনটি রদপে উপসহাপন করা হয়েছে, তার প্রভতটিই অবমাননাকর।
প্রাচীন গ্রীসে, বিশেষ করে এথেন্সের নগর-রাষ্ট্রে, নারীর ব্যত্তিুস্বাধীনতা বলে কিছু ছিল না। জীবনের প্রতিটি সতরে কোন না কোন পুরতষের অধীন হয়ে থাকতে হত তাকে। শৈশব-কৈশোরে পিতার, যৌবনে স্বামীর এবং তার মৃত্যুর পরে পুত্রের আজ্ঞাধীন হয়ে থাকতে হত তাকে।[সূত্রঃ Traditions Encounters. Pp- 257]
গ্রীক নারীর সামাজিক অবসহা সম্পর্কে একজন বিশিষ্ট ইতিহাসবেত্তা বলেছেনঃ ""বিবাহে মত দেবার অধিকার কন্যার ছিল না। কনের পিতা বরকে যৌতুক দিত যেন সেই অর্থে মেয়েটির ব্যয়-নির্বাহ করা যায়। আইনগতভাবে সএী হত তার স্বামীর সম্পত্তি।'' [সূত্রঃ Western Civilizations. Pp-142]
রোমান সভ্যতায় নারীঃ
রোমানরাও ছিল গ্রীকদের মত যোদ্ধা জাতি এবং যুদ্ধে পারদর্শিতাই ছিল তাদের দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি। এ-জন্য তারাও গ্রীকদের মত নারীকে পুরতষের তুলনায় নীচু সতরের প্রাণী মনে করত। তাদের পরিবার ব্যবসহা ছিল পিতৃতামিএক। সবচেয়ে বয়স্ক পুরতষ হত পরিবারের প্রধান। তাকে বলা হত পরিবারের পিতা (patar familias)। পরিবারে নিরঙ্কুশ আইনগত ক্ষমতার (patria potestas) অধিকারী ছিল সে। অধীনসতদের যে কোন শাসিত─ এমনকি মৃত্যুদন্ড দেবার অধিকারও তার ছিল। পরিবারের সমসত সম্পত্তির একমাত্র মালিক হত পরিবার প্রধান। গ্গকান নারী কিংবা অন্য কোন সদস্যের অধিকার ছিল না সম্পত্তির মালিক হবার। বিয়ের পর এই ক্ষমতা হসতামতরিত হত। এবার স্বামী হয়ে বসত নারীর দন্ড-মুন্ডের কর্তা। সএীর সম্পত্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যেত স্বামীর মালিকানায়। [সূত্রঃ "ancient Rome. "Encyclopædia Britannica] স্বামী তার প্রয়োজন মেটাতে সএীকে দাসী হিসাবে বিত্রুয় করতে পারত। সএীকে হত্যা করবার অধিকারও তার ছিল। স্বামীর ক্ষমতা সম্পর্কে একজন ঐতিহাসিক জানাচ্ছেনঃ ""আগের কালে রোমের পরিবারের ভিত্তি ছিল স্বামীর অর্থনৈতিক ও আইনগত কর্তৃত্বের উপর যা তাদেরকে প্রায় নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রদান করেছিল।''[সূত্রঃ Western Civilizations. Pp-195]
নারী-পুরতষের ক্ষেত্রে এই সভ্যতা দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করত। পুত্র-সমতানের জন্মকে স্বাগত জানানো হলেও অনেক সময় কন্যা-সমতানকে সাদরে বরণ করা হত না। অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে বাড়ির বাইরে ফেলে রাখা হত (expose) ধুঁকে মরার জন্য। এ-রকম লোমহর্ষক ঘটনার স্বক্ষী হয়ে আছে এক রোমান সৈনিকের পত্র। গর্ভবতী সএীকে সে এই পত্র লিখেছিল যাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, পুত্র-সমতান হলে রেখে দিতে হবে, আর কন্যা সমতান হলে মরার জন্য বাইরে ফেলে আসতে হবে। [সূত্রঃ The West in the World. Pp- 123]
নর-নারীর খাদ্যাখাদ্য বিচারেও ছিল বৈষম্য। পুরতষদের মধ্যে মদ্যপানের ব্যাপক প্রচলন ছিল। প্রত্যেক বেলার আহারের পর মদ পান করা ছিল সাধারণ রীতি। অথচ নারীর জন্য এটা ছিল অমার্জনীয় অপরাধ। এই অপরাধে স্বামী তার সএীকে হত্যাও করতে পারত এবং এটা ছিল আইনসিদ্ধ। প্রাচীন রোমের বিশিষ্ট পন্ডিত প্লিনি (২৩-৭৯ খৃঃ) এক মর্মামিতক ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। একবার এক নারী মদ রাখবার কুঠুরির চাবি চুরি করেছিল, হয়ত-বা সে মদপানের আকাংখা থেকে এটা করেছিল। এই অপরাধে তার পরিবার তাকে অনাহারে রেখেছিল যতদিন সে মৃত্যুবরণ না করে। সূত্রঃ [The West in the World. Pp-125] এছাড়া, রোমান আইনে মৃতের সম্পত্তিতে পুরতষের উত্তরাধিকার থাকলেও নারী এ অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। [সূত্রঃ Traditions Encounters. Pp- 285]
হিন্দু-ভারতে নারীঃ
হিন্দু সমাজে নারীজন্ম ছিল বড়ই বেদনার। শুধু জননী হিসাবে সমতানের ভত্তিু ও ভালবাসার পাত্রী ছিল সে। এছাড়া কন্যা, জায়া, ভগ্ণী─ কোন রদপেই তার ছিল না তেমন কোন সম্মান। নারীকে ইতর প্রাণীর মত মনে করা হত। শাসেএ বলা হচ্ছেঃ নারী, কুকুর, কালো পাংখ─ এদের প্রতি দৃষ্টিপাত করা উচিত নয়; নইলে আলোক ও অন্ধকার, শুভ ও অশুভ সব একাকার হয়ে যাবে।[সূত্রঃ শতপথ ব্রাহ্মণ-১৪ঃ১ঃ১ঃ৩১। উদ্ধৃতঃ ভারত-ইতিহাসে নারী। পৃ- ১৪] আরেকটি ধর্মশাসএ আমাদেরকে বলছে, সর্বগুণে গুণবতী নারীও সবচেয়ে অধম পুরতষের চেয়ে নিকৃষ্ট।[সূত্রঃ তৈত্তিরীয় সংহিতা- ৬ঃ৫ঃ৮ঃ২। উদ্ধৃতঃ প্রাগুত্তু। পৃ- ১৪] কয়েকটি প্রাণী হত্যার জন্য মাত্র এক দিন প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়। এরা হল কালো পাখি, শকুনি, বেজি, ছুঁচো, কুকুর, শূদ্র ও নারী।[সূত্রঃ আপসতম্ব ধর্মসূত্র- ১ঃ৯ঃ২৩ঃ৪৫। উদ্ধৃতঃ প্রাগুত্তু। পৃ- ১৪] মৃত্যুর কিছু পূর্বে ভীষ্ম যুধিষ্ঠিরকে উপদেশ দিয়েছিলেনঃ ""নারীর চেয়ে অশুভ আর কিছু নেই, পুত্র, পুরতষের উচিত সর্বদা নারীর প্রতি আসত্তিু পরিহার করা।'' [সূত্রঃ মহাভারত-১৩ঃ৪৩ঃ২৫। উদ্ধৃতঃ প্রাগুত্তু। পৃ- ১৪।
পরিবারে মেয়ে-শিশু ছিল অবাঞ্ছিত। জগতের বুকে প্রথম চোখ মেলে সে কিছু বিষণ্ণ মুখ দেখতে পেত। সারাটা জীবনেও এ-সব মুখ আর তার প্রতি প্রসন্ন হত না। ""ঐতরেয় ব্রাহ্মণে স্পষ্টই বলা হয়েছে, কন্যা পরিবারে দুঃখ নিয়ে আসেন, পুত্র পরিবারকে রক্ষা করেন। অথর্ববেদে কন্যার জন্মকে দুর্ভাগ্যজনক বলা হয়েছে। কন্যা তার পিতার বংশধারাকে রক্ষা করতে পারেন না, তিনি তার পিতৃপুরতষকে জলও দিতে পারেন না। কন্যা যা পারেন না, পুত্র অনায়াসে তা সম্পন্ন করতে পারেন।'' [সূত্রঃ ভারত-ইতিহাসের সন্ধানে। পৃ-১২৯] বেদ অনুসারে উত্তম নারী হল সে, যে স্বামীকে প্রসন্ন করে, পুত্র সমতানের জন্ম দেয় ও স্বামীর কথার প্রতিবাদ করে না। [সূত্রঃ অথর্ব বেদ।১১ঃ ৫ঃ ১৮। উদ্ধৃতঃ ভারত-ইতিহাসে নারী। পৃ-১০] নারীর প্রকৃষ্ট কর্তব্য হল পুত্রোৎপাদন করা। [সূত্রঃ মৈত্রায়নী সংহিতা-১ঃ১০ঃ১১; তৈত্তিরীয় সংহিতা-৬ঃ৫ঃ৮ঃ২ উদ্ধৃতঃ প্রাগুত্তু। পৃ-১০] পুত্র সমতানের জন্ম দিতে না পারলে স্বামী অনায়াসেই সএীকে ত্যাগ করতে পারত।[সূত্রঃ শতপথ ব্রাহ্মণ-৫ঃ২ঃ৩ঃ১৩। উদ্ধৃতঃ প্রাগুত্তু] এই ভেদনীতির কারণে অনেক সময় কন্যা-শিশুকে প্রাণ দিয়ে তার নারীজন্মের পাপ মোচন করতে হত। ""রাজপুত সমাজে নবজাতা কন্যাকে নুন খাইয়ে কিংবা নাক-মুখের উপর ফুল বা নাড়ি রেখে তাকে হত্যা করা হত। এখনো বহু জাতির মধ্যে কন্যা-বধের প্রথা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি।'' [সূত্রঃ রাহুল সাংকৃত্তায়ন। মানব সমাজ। পৃ-৭০]
বৈদিক ও পৌরাণিক যুগের ভারতে নারীর শিক্ষালাভের অধিকার ছিল না। সে-কালে শিক্ষা বলতে বুঝাতো বেদ পাঠ করতে শেখা। এই শিক্ষা শুরত হত উপনয়নের মাধ্যমে। শূদ্র এবং নারীর যেহেতু উপনয়নের অধিকার ছিল না, সেহেতু তাদেরকে নিরক্ষর থাকতে হত। [সূত্রঃ ভারত-ইতিহাসে নারী।পৃ-৩] তৈত্তিরীয় আরণ্যকে নারীশিক্ষার বিরতদ্ধে যুত্তিু পেশ করা হচ্ছে এভাবেঃ ""প্রিয়ঃ সতীৎ তা উ যে পুংস আহুঃ।'' [সূত্রঃ ১ঃ ১১ঃ ৪] অর্থাৎ- শিক্ষিত নারী তো পুরতষই। মনু সংহিতায় বলা হয়েছে, নারীর ক্ষেত্রে বিবাহই হল উপনয়ন, স্বামীর সেবা হল বেদপাঠ আর স্বামীর ঘরে বাস করাই হল গুরতগৃহে বাস করা।[সূত্রঃ ২ঃ৬৭] এর অর্থ, স্বামী ও তার স্বজনদের সেবা হল শিক্ষার বিকল্প; সত্যিকারের শিক্ষার তার কোনই প্রয়োজন নেই।[সূত্রঃ ভারত-ইতিহাসে নারী। পৃ-৩]
হিন্দু ধর্মে নারীর ব্যত্তিুস্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে তাকে কোন না কোন পুরতষের অধীনে থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে মনুর নির্দেশ হলঃ ""ন সএী স্বাতমএ্যমর্হতি।'' অর্থাৎ- নারীর স্বাধীনতা থাকা উচিত নয়। [সূত্রঃ শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র। নারীর পথে। পৃ-১৬] । একই কথা বশিষ্ট সংহিতায় বলা হয়েছে। যাজ্ঞবল্ক্য সংহিতায় আরো এক ধাপ এগিয়ে বলা হয়েছে, পিতা, স্বামী বা পুত্র কেউ যার নেই, তেমন নারী তার জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর পুরতষদের অধীনা হবে, তবু তার স্বাধীন সত্তা কিছুতেই কাম্য নয়। [্উদ্ধৃতঃ নারীর পথে। পৃ-১৬] ""কিমও ভারতবর্ষে এই অ-স্বতমএতা যে কত উৎকট হয়ে উঠেছিল, এখন সে কথাই বলতে হয়। গুপ্তযুগ শেষ হবার পর ভারতীয় সমাজ তার সএী জাতির জন্য সহমরণের ব্যবসহা করে দিয়েছিল─ এই প্রথানুসারে মৃত পতির শবের সঙ্গে প্রত্যেক সএীর পুড়ে মরা অনিবার্য বলে নির্দিষ্ট হয়। মাত্র শতাধিক বছর আগে ইংরেজ সরকারের সাহায্যে এই ত্রুুর প্রথা বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। কিমও এর আগে পনর শত বছর ধরে এই হত্যা-যজ্ঞ ভারতবর্ষে বাধাহীনভাবেই অনুষ্ঠিত হয়।'' [সূত্রঃ রাহুল সাংকৃত্তায়ণ। মানব সমাজ। পৃ-১২৬]
হিন্দুধর্মে সএীর চোখে স্বামী হল দেবতা। তার সেবা করাই সএীর ধর্ম। এতেই তার মুত্তিু, এতে স্বর্গলাভ। বিষ·ু বলেছেন-
""নাসিত সএীণাং পৃথক্ যজ্ঞো ন ব্রতং নাপ্যুপোষিতম্।
পতিং শুশ্রদষতে যত্তু তেন স্বর্গে মহীয়তে।।'' [বিষ·ু সংহিতা-২৫ঃ১৫]
অর্থ- সএীদের পৃথক যজ্ঞ বা ব্রত ইত্যাদি কিছুই নাই। পতির শুশ্রদষা দ্বারাই তারা সর্বপ্রকার সুখের অধিকারী হয়ে থাকে।[উদ্ধৃত- নারীর পথে]
স্বামীর এই দেবত্ব হল প্রশণাতীত। এমনকি স্বামী যদি শয়তানও হয়, তবু তাকে ভগবানজ্ঞানে সেবা করা সএীর পরম কর্তব্য। শাসএ বলে-
""সএীভিঃ ভর্ত্তৃবচঃ কার্য্যমেব ধর্ম্মঃ পরঃ সিএয়াঃ।
আ শুদ্ধেঃ সম্প্রতীক্ষ্যো হি মহাপাতক দূষিতঃ।।''
অর্থাৎ- সএীদের স্বামীর বাক্যই পালনীয়-- এটাই তাদের পরম ধর্ম। স্বামী মহাপাপী- দূষিত হলেও তার শুদ্ধির আশায় বহুকাল পর্যমত প্রতিক্ষা করা বিধেয়।[যাজ্ঞবল্ক্য-সংহিতা-১ঃ৭৭। উদ্ধৃত- নারীর পথে]
স্বামীকে বার বার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সএীর সামনে তার আহার করা চলবে না।[শতপথ ব্রাহ্মণ- ১ঃ৯ঃ২ঃ২; ৩ঃ৪ঃ২২; ৫ঃ২ঃ১-১০; ১০ঃ৫ঃ২ঃ৯। উদ্ধৃত- ভারত-ইতিহাসে নারী। পৃ-১০] খাওয়া শেষ করে স্বামী কি করবে তা-ও পরিস্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছেঃ ""ভুত্তুা উচ্ছিষ্টং বধৈব দদ্যাৎ।'' অর্থাৎ- স্বামী আহার করে উচ্ছিষ্টটা সএীকে দেবে।[সূত্রঃ খাদিরসূত্র- ১ঃ৪ঃ১১। উদ্ধৃতঃ প্রাগুত্তু। পৃ-১০]
সএীর উপর স্বামীর কর্তৃত্ব ছিল নিরঙ্কুশ। সে সএীকে বিত্রুয় করতে পারত, বন্ধক রাখতে পারত, অন্যকে উপহার দিতে পারত─ তাকে নিয়ে যা খুশি করতে পারত। আর বন্ধু বা অতিথির সমওষ্টির জন্য নিজের সএীকে তাদের হাতে তুলে দেবার ঘটনা বৈদিক যুগে দুর্লভ ছিল না। এমনকি প্রাতঃস্মরণীয় ব্যত্তিুরাও এটা করেছেন। এক্ষেত্রে সএীর মতামতের কোনই মূল্য ছিল না। ""যুবনাশ্ব তাঁর প্রিয় পতণীকে দান করে স্বর্গলাভ করেছিলেন; মিত্রসহ বশিষ্টকে আপন পতণী দময়মতীকে উপভোগ করতে দিয়ে স্বর্গপ্রাপ্ত হন। সুদর্শন অতিথি সেবায় নিজপতণী অর্পন করে অমর কীর্তির অধিকারী হয়েছিলেন।'' [সূত্রঃ রাহুল সাংকৃত্তায়ণ। মানব সমাজ। পৃ-৭৫]
ইহুদী ও খৃস্টান ধর্মে নারীঃ
এই দুটি ধর্মের কথা একত্রে আলোচনার কারণ প্রথমেই ব্যাখ্যা করা দরকার। বণী ইসরাঈলের ইতিহাস-ঐতিহ্য এই দুই ধর্মই তাদের সম্পদ বলে দাবী করে। তাছাড়া, ইহুদীদের ধর্মগ্রমহ বাইবেলের পুরাতন নিয়মকে (The Old Testament) খৃস্টানরা তাদেরও পবিত্র গ্রমহ হিসাবে গ্রহণ করেছে। তাদের ধর্মীয় রচনা-আলোচনা কদাচিৎ পুরাতন নিয়মকে বাদ দিয়ে হয়ে থাকে।
যাহোক, এই দুই ধর্মে নারীকে তেমন মর্যাদা দেওয়া হয়নি। বরং তাকে পাপের উৎস বা জননী মনে করা হয়েছে। বাইবেলের পুরাতন নিয়ম (The Old Testament) আমাদেরকে বলছে, বেহেশ্ত থেকে বিতাড়িত হবার পরে শয়তান সাপের রদপ ধরে আবার সেই উদ্যানে প্রবেশ করে এবং মা হাওয়াকে গন্দম ফল খেতে প্রলুব্ধ করে। মা হাওয়া পাপকর্মটা করার পর বাবা আদমকে তাতে প্ররোচিত করেন। অতএব, আদিপাপ (Original Sin) যা মানুষ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মামতরে বয়ে বেড়াচ্ছে, তার জন্য দায়ী হল নারী। [সূত্রঃ পয়দায়েশঃ ৩ঃ১২] বাইবেলের নতুন নিয়মে (The New Testament) জোর দিয়ে বলা হয়েছেঃ ""আদম ছলনায় ভুলে নাই, কিমও সএীলোক সম্পূর্ণভাবে ভুলেছিল এবং খোদার হুকুম অমান্য করেছিল।''[সূত্রঃ ১ তীমথিয়-২ঃ ১৪]
বাইবেল অনুসারে, খোদা আদিপাপ করার জন্য হাওয়া এবং তার মধ্যদিয়ে নারীজাতিকে অভিশাপ দিয়েছেন, তাদেরকে অনেক কষ্ট ভোগ করতে হবে─ গর্ভকালীন কষ্ট এবং প্রসবকালীন কষ্ট। [সূত্রঃ পয়দায়েশঃ ৩ঃ১৬]
বাইবেল সাধারণভাবে নারীর উপর পুরতষকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছে। বলা হয়েছে, যীশুর উপর যেমন মহান খোদার শ্রেষ্ঠত্ব, সকল পুরতষের উপর যেমন যীশুর শ্রেষ্ঠত্ব, তেমনিভাবে নারীর উপর পুরতষের শ্রেষ্ঠত্ব। [সূত্রঃ ১ করিমহীয়-১১ঃ৩] শুধু তাই নয়, দাবী করা হয়েছে, পুরতষের জন্যই নারীর সৃষ্টি। ঘোষণা করা হয়েছেঃ ""পুরতষ সএীলোক থেকে আসেনি কিমও সএীলোক পুরতষ থেকে এসেছে। সএীলোকের জন্য পুরতষের সৃষ্টি হয়নি, কিমও পুরতষের জন্য সএীলোকের সৃষ্টি হয়েছে।'' [সূত্রঃ ১ করিমহীয়-১১ঃ৮-৯] এই একই যুত্তিু দিয়ে বাইবেল নারীর কণ্ঠরোধ করেছে। তাকে সম্পূর্ণ বাধ্য থাকতে হবে এবং চুপ থাকতে হবে, কারণ তার সৃষ্টি আদমের পরে। [সূত্রঃ ১ তীমথিয়-২ঃ১১] পুরতষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্ন করার জন্য আরেকটা যুত্তিু প্রদান করা হয়। নারী পুরতষের তুলনায় বেশি মাংশল। অতএব তাকে পুরতষের অধীন থাকা উচিত । কারণ দেহ হল আত্মার অধীন। [সূত্রঃ ইফিষীয়-৫ঃ২১-৩৩]
খৃস্টানদের দৃষ্টিভঙ্গী সম্পর্কে এক মার্কিন ঐতিহাসিক বলেনঃ ""সএী হিসাবে নারীর নিকট প্রত্যাশা করা হত যে, তারা কোন পেশা অবলম্বন করবে না এবং শিক্ষিতা এমনকি অক্ষরজ্ঞানসম্পন্নও হবে না। ভবিষ্যতে যদিও তারা পারলৌকিক মুত্তিুর ব্যাপারে সম্পূর্ণ আশাবাদী ছিল, দৈনন্দিন ইহলৌকিক ব্যাপারগুলোয় তাদেরকে নিমণতর পর্যায়ের মনে করা হত, এটা এমন আচরণ যা আধুনিক কালের পূর্ব পর্যমত টিকে ছিল।''[সূত্রঃ Western Civilizations. Pp-232]
বাইবেল শুধু নারীর আত্মাকেই পাপ-প্রবণ এবং নিকৃষ্টতর হিসাবে উপসহাপন করেনি, তার দৈহিক শূচিতাকেও প্রশণবিদ্ধ করেছে। ইহুদীরা নারীকে আনুষ্ঠানিক উপাসনা থেকে বাদ দিয়েছে এই কারণে যে, প্রতি মাসে কিছু দিন তারা অশূচি থাকে। তাছাড়া, সমতান জন্মের পরও তারা অপরিস্কার থাকে। মাসিক ঋতুস্রাব চলাকালীন নারীর বিধান সম্পর্কে বাইবেলের পুরাতন নিয়মে বিসতারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এতে দেখা যায়, স্রাবরতা নারীকে অস্পৃশ্য হিসাবে উপসহাপন করা হয়েছে। যদি কেউ তাকে স্পর্শ করে, সে-ও নাপাক হয়ে যাবে। এমনকি তার ব্যবহদত পোশবক, বিছানা কিংবা আসন যদি কেউ স্পর্শ করে, তাহলে সে নাপাক হয়ে যাবে। এই স্পর্শকারী ব্যত্তিুকে গোসল করতে হবে, পোশাক ধুয়ে ফেলতে হবে। তারপরও সন্ধ্যা পর্যমত সে অশূচি থাকবে। [সূত্রঃ লেবীয়-১৫ঃ ১৯-৩০]
নারীর এই অশূচিতার ক্ষেত্রেও বাইবেল লিঙ্গবৈষম্য সৃষ্টি করেছে। সমতান জন্মদানের পর কিছুকাল প্রসূতি অশূচি থাকে। বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে এই সময়কাল নিয়ে। যদি নবজাতক পুত্র হয়, তবে প্রসূতি অশুচি থাকবে চল্লিশ দিন, আর কন্যা-সমতানের জন্ম দিলে এই অপবিত্রতা থাকবে দ্বিগুণ সময় অর্থাৎ আশি দিন।[সূত্রঃ ডঃ জামাল বাদাবী। ইসলামী শিক্ষা সিরিজ। পৃ-৩০৬। দি ইনসটিটিউট অব ইসলামিক থট, ঢাকা]
ধর্ষণের শাসিত বিধান করতে গিয়ে বাইবেল নারীত্বকে অপমান করেছে। বলা হয়েছে, কেউ যদি কোন অবিবাহিতা নারীকে নির্জনে পেয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে, তবে মেয়েটির পিতাকে ধর্ষক আধা কেজি রদপা ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেবে আর মেয়েটিকে যেহেতু নষ্ট করেছে, সেহেতু তাকে বিয়ে করবে। কোনদিন সে তাকে তালাক দিতে পারবে না। [সূত্রঃ দ্বিতীয় বিবরণ-২২ঃ২৮-২৯] এটা অনেক সময় ধর্ষকের জন্য শাসিত না হয়ে পুরস্কারস্বরদপ হবে, বিশেষকরে সে যদি উত্তু নারীর উপযুত্তু পাত্র না হয়। এতে ধর্ষণ উৎসাহিত হওয়া খুব স্বাভাবিক। রদপ, গুণ আর ঐশ্বর্যের অধিকারী নারীকে সএী হিসাবে পাবার জন্য অনেক দুর্বৃত্ত এই পাপাচারের পথ বেছে নেবে। তাছাড়া, এক অসহায় নারীকে এমন এক পাপিলষ্ঠর সাথে আজীবন কাটাতে বাধ্য করা হচ্ছে, যার প্রতি তার ঘৃণা হয়ত কখনোই শেষ হবে না।
ইসলামপূর্ব আরবে নারীঃ
ইসলামপূর্ব আরবে নারীর আক্ষরিক অর্থেই কোন মর্যাদা ছিল না। কি কন্যা, কি জায়া, কি জননী- সকল রদপেই তাকে অবমাননাকর অসিতত্ব বয়ে বেড়াতে হত। তার জীবন, সম্মান, সম্পদ- কোন কিছুরই নিরাপত্তা ছিল না। পরিবারে কন্যা-সমতানের জন্মকে দুর্ভাগ্যজনক মনে করা হত। এই দুর্ভাগ্য থেকে বাঁচার জন্য অনেক আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন লোক নিজ কন্যাকে জীবমত কবর দিত। যাদের জীবন দুর্ভাগ্যজনকভাবে বেঁচে যেত, তাদের অদৃষ্টে জমা হয়ে থাকত অনেক দুঃখ, কষ্ট, অপমান। স্বামীর ঘরে দাসী-বাঁদীর চেয়ে ভাল ব্যবহার তাদের ভাগ্যে জুটত না। সম্পদে তাদের কোন উত্তরাধিকার ছিল না। বরং সমতানেরা পিতার মৃত্যুতে সৎমায়েদেরকে উত্তরাধিকারসূত্রে অন্যান্য সম্পত্তির সাথে সাথে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিত।
আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতায় নারীঃ
পাশ্চাত্য সভ্যতা সম-অধিকারের আকর্ষণীয় মোড়কে নারীকে উপহার দিয়েছে বিরাট প্রবঞ্চনা। নারী-পুরতষের মধ্যে স্বভাব-প্রকৃতিগত কোন পার্থক্য থাকতে পারে- এই ধারণাকে তারা উড়িয়ে দিয়েছে। নারী আজ পুরতষ হয়ে উঠতে ব্যাকুল। এখানেই তার প্রথম পরাজয়। পরাজিত মানসিকতা অনুকরণে অনুপ্রাণিত করে। পুরতষের অনুকরণ করতে গিয়ে আজ নারী নিজেকে সহজলভ্য করে তুলেছে। স্কুল-কলেজে, অফিস-আদালতে, বীচে-বাজারে-বারে- সর্বত্র তারা পুরতষের সংস্পর্শে আসছে, আর পুরতষ এ-সুযোগ লুফে নিচ্ছে। নারীদেহ ভোগের মহোৎসবে মেতেছে পাশ্চাত্যের চতুর পুরতষ। আধুনিক "নারীমুত্তিুকামী' হয়ত বলবেনঃ "বিষয়টা অন্যভাবেও দেখা যায়। এ-হল লাইফকে এনজয় করা; আর মিলনের প্রত্রিুয়ায় নারী বরং পুরতষের চেয়ে বেশি এনজয় করে থাকে।' এরা ভুলে যান যে, ভোগ যদিও-বা পুরতষের সাথে সাথে নারীও করে, দুর্ভোগ কিমও নারীকে একাই পোহাতে হয়। প্রতি বছর পাশ্চাত্যে বিপুল সংখ্যক কিশোরী-তরতণী অযাচিতভাবে গর্ভবতী হয়ে পড়ে। ""১৯৭০ এর দশক থে¬কে শুধু আ¬-মরিকাতেই প্রতি বছর দশ লক্ষের বেশি অবাঞ্ছিত গর্ভধার¬ণের ঘটনা ঘ¬¬ট থা¬কে।. . . এই তারত¬ণ্যে গর্ভধার¬ণের মহামারী সংশ্লিষ্ট ব্যত্তিু এবং সমা¬জের জন্য দুর্দশার এক অবিরাম উৎ¬সে পরিণত হ¬য়ে¬¬ছ।'' [সূত্রঃ Social Psychology : Understanding Human Interaction. pp-328 ] এ-সব কুমারী মাতারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গর্ভপাত করছে। আমেরিকায় ১৯৯৬ সালে ১৩ লক্ষ ৬৫ হাজার ৭ শ ৩০ টি গর্ভপাত ঘটানো হয়। [সূত্রঃ The World Almanac-2002. pp-88] ইউরোপীয় সভ্যতার মশালবাহী ইংল্যান্ডে ২০০৬ সালে ১,৯৩,৭০০ টি গর্ভপাত ঘটানো হয়। [সূত্রঃ Abortion Statistics, England and Wales: 2006]
এ-ছাড়া, পশ্চিমা নারীর ভাগ্যে রয়েছে যৌনরোগের দুর্ভোগ। চিকিৎসা-বিজ্ঞান আমাদেরকে বলে, পুরতষের তুলনায় নারীর যৌন রোগে আত্রুামত হবার আশংক্ব বহুগুণ বেশি। উদাহরণস্বরদপ, কানাডার এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৫ থেকে ১৯ বছরের তরতণীদের মধ্যে সমবয়সী তরতণদের তুলনায় ক্ল্যামাইডিয়া ৬ গুণ বেশি আর গনোরিয়া বেশি দ্বিগুণ। আমরা জানি, এইডস সবচেয়ে বেশি ছড়ায় যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে। এগ্ধক্ষত্রে এই মরণ-ব্যাধি নারী থেকে পুরতষে যত সংত্রুমিত হয়, পুরতষ থেকে নারীতে হয় তার ১৭গুণ। এই কারণে পৃথিবীর যে কোন দেশে পুরতষের তুলনায় নারীর এইডসে আত্রুামত হবার সংখ্যা অনেক বেশি। যেমন, ব্রাজিলে ১৯৯৪ গ্গথকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে নারীদের মধ্যে এইডস রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৭৫ ভাগেরও বেশি, অথচ পুরতষদের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ১০ ভাগের একটুবেশি। [সূত্রঃ A New Psychology of Women. pp-297-298] অতএব দেখা যাচ্ছে, পুরতষ নারীকে লাইফ এনজয় করতে প্রলুব্ধ করছে। তারপর সে নিজে নিঃসংকোচে এনজয় করে সরে পড়ছে। নারীকে একা ভোগ করতে হচ্ছে যত দুর্ভোগ। তার একার জন্য যমএণাদায়ক ক্ল্যামাইডিয়া-গনোরিয়া-ওয়ার্টস ইত্যাদি যৌনরোগ, কষ্টদায়ক গর্ভধারণ। তার একার জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাত, প্রাণঘাতী এইডস।
নারীদেহ ভোগের এই বাধাহীন মহোৎসবেও কিমও পুরতষ তৃপ্ত নয়। সে দুর্বল নারীকে সুযোগ পেললই বলাৎকার করছে। পুরতষ বারবার নারীকে বলছে বটে, তুমি দুর্বল নও, অবলা নও, কিমও সে যখন বল প্রয়োগ করে, তখন এই আশ্বাস মিথ্যা প্রমাণিত হয়; নারী নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। পাশ্চাত্য সভ্যতার শিরোমণি আমেরিকায় প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে থাকে। NCVS [National Crime Victimization Survey] এর দেওয়া তথ্যমতে, ১৯৯৮ সা¬লে মার্কিন যুত্তুরা¬ষ্ট্রে যৌননিপীড়ন এর ঘটনা ঘ¬¬ট ১ লক্ষ ৩৩ হাজার। আর ধর্ষ¬ণের ঘটনা ঘ¬¬ট প্রায় ২ লক্ষ (অর্থাৎ গ¬¬ড় প্রায় আড়াই মিনি¬টে একটি ) [সূত্রঃ “rape”.The Encarta Encyclopaedia.] । সম্পর্ক বাঁচানোর জন্য বন্ধুর, চাকুরী বাঁচানোর জন্য কর্মকর্তার, আশ্রয় বাঁচানোর জন্য সৎপিতার এবং জীবন বাঁচানোর জন্য দুর্বৃত্তের যৌন নিপীড়ন তাকে মুখ বুঁজে সহ্য করতে হয়।
নারীর উপরে পাশ্চাত্যের আরেকটা বড় জুলুম হল, এই সভ্যতা নারীর শামিতপূর্ণ পারিবারিক জীবন কেড়ে নিয়েছে। যে মাতৃত্বে নারীজন্মের সার্থকতা, যার জন্য নারীর চরম ব্যাকুলতা- তাকে ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। তার গর্ভাশয় পরবর্তী প্রজন্মকে ধারণ করতে প্রসতুত, তার সতনযুগল প্রসতুত যার পুষ্টিদানে, হদদয়ের সেণহ-মমতা প্রসতুত যার মনের বিকাশ সাধনে-তাকে আজ পশ্চিমা নারী কোলে ধারণ করতে আগ্রহী নয়। তার সামনে যে আরো বেশি গুরতত্বপূর্ণ কাজ! তাকে পুরতষের মত হয়ে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। তাকে উপার্জন করতে হবে, কেরিয়ার বিল্ডআপ করতে হবে। সমতানের জন্ম, লালন-পালন এ-পথে বড় বাধা। অতএব, পশ্চিমা নারী আজ এ-ঝামেলা থেকে মুত্তু থাকতে চাচ্ছে।
পাশ্চাত্যের বসতুবাদী সমাজ টাকা-পয়সা নামক দেবতার বেদীতে সব কিছু বলি দিতে প্রসতুত। নারীকেও বলি দিতে তারা দ্বিধা করেনি। তারা দুর্বল নারীর উপরে পুরতষের দ্বিগুণ কাজের দুঃসহ বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। একদিকে স্বামী-সমতানের পরিচর্যা, গৃহসহালির যাবতীয় কাজ, অন্য দিকে অফিসে পুরতষের সমপরিমাণ কাজের বাড়তি বোঝা। পুরতষের কর্মক্ষেত্র শুধুই বাইরে; অথচ নারীকে ঘর সামলে আবার বাইরে ছুটতে হয় পুরতষের সাথে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে। কী করতণ এ-সব নারীর জীবন! কানাডীয় সমাজবিজ্ঞানী রেজিনাল্ড বিবি এবং ডোনাল্ড পস্টারস্কি নারীর এই করতণ চিত্র এ-ভাবে তুলে ধরেছেন-
""এ ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ খুব কমই রয়েছে যে, পেশাজীবী মায়ের কাছে বহুমুখ£ দাবী তাকে বড় চাপের মধ্যে ফেলে দেয়। . . . যে-সব নারী দিনে দ্বিগুণ কাজ করে, তাদেরকে অসাধারণ ভারি বোঝা বহন করতে হয়, এবং যে মূল্য তাদেরকে দিতে হয় তা বিপুল। তারা দীর্ঘ সময় কাজ করে এবং আসলেই কোন অবসর পায় না। তারা উচ্চ মাত্রার চাপের শিকার হয়।'' (Teen Trends. p-152)
ইসলামের দৃষ্টিতে নারীঃ
ইসলামে নারীর মর্যাদা নিয়ে আলোচনার প্রারম্ভে একটি কথা পরিস্কার হওয়া দরকার। কোন ধর্মের অনুসারীদেরকে দিয়ে সে-ধর্মের বিচার করা সংগত নয়, বরং সেই ধর্মের পবিত্র গ্রমহ এবং তার প্রবর্তকের কর্মকান্ড দিয়ে তাকে বিচার করা উচিত। কাজেই ইসলামে নারীর মর্যাদা নির্ণয় করতে গিয়ে বিভিন্ন মুসলিম দেশে প্রচলিত রীতি বা প্রথা বিবেচ্য নয়, বরং কুরআন-সুন্নাহর বাণী বা বিধানকেই বিবেচনা করতে হবে। কারণ, ইসলামের মূল উৎস এই দু'টি এবং এগুলির সাথে যা সাংঘর্ষিক তা যত পবিত্র উৎস থেকেই আসুক, মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই বিষয়টি বিবেচনায় গ্গরখে আমরা দেখব, আধ্যাত্মিক, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নারীকে কতটা মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম।
নারীর আধ্যাত্মিক মর্যাদাঃ
ইতোপূর্বে আমরা লক্ষ্য করেছি, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ১৭/১৮ বছরের তরতণ, তখনো খৃস্টান সমাজে বিতর্ক চলছিল নারীর আধ্যাত্মিকতা নিয়ে। তার কি আত্মা আছে? তাকে কি মানুষ বলা চলে? এসব প্রশণ নিয়ে বিতর্ক চলছিল পাদ্রীদের মধ্যে। এ-দিকে প্রাচ্যে ভারতীয় সভ্যতা নারীর পারলৌকিক মুত্তিুর পথ রোধ করে দাঁড়িয়ে ছিল- তাকে ধর্মশাসএ পাঠ, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান থেকে বিরত রেখেছিল।
এ রকম সময়ে ইসলাম এগিয়ে এসেছিল নারীকে মুত্তিুর পথ দেখাতে, তার আত্মিক উন্নতির উপায় বাৎলে দিতে। দীর্ঘ ছয় শতাব্দী ধরে চলে আসা কলঙ্কের কালিমা প্রথমেই ধুয়ে মুছে সাফ করে দেওয়া হল যেন তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস আসে, হীনমন্যতা দূর হয়। তাকে বলা হল, হে নারী! আদি পাপ বলে কিছু নেই। ভুল যা হয়েছে, তা প্রথম নারী এবং প্রথম পুরতষ দুজনেরই হয়েছে। তাঁরা দুজনই এজন্য অনুতপ্ত হয়েছিলেন এবং তাঁদের দুজনকেই ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছিল।[সূত্রঃ আল কুরআন- ২ঃ ৩৬-৩৭; ৭ঃ ২০-২৪] তাঁদের ভুলের জন্য আর কাউকে দায়ী করা হবে না। আল্লাহ পাক স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেনঃ ""প্রত্যেক ব্যত্তিু আপন কৃতকর্মের জন্য দায়ী থাকবে।'' [সূত্রঃ আল কুরআন-৭৪ঃ ৩৮] এভাবে ইসলাম নারীর আত্মার কালিমা প্রথমেই দূর করে দিচ্ছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে নারীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার আত্মিক উন্নতির সুযোগ পুরতষের সমান। আল্লাহ্ তা’লা বলেনঃ ""নারী হোক আর পুরতষ হোক, তিনি কারো আমল বিনষ্ট করেন না। তোমরা একে অন্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।''[সূত্রঃ সূরা আলে ইমরান। আয়াত-১৯৫] এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, কর্মফল প্রদানের ক্ষেত্রে আল্লাহ্ নারীর প্রতি কোনরদপ বৈষম্য করবেন না।
এরপর আসে পারলৌকিক মুত্তিুর প্রসঙ্গ। যেসব পুণ্যকর্ম করলে পরকালে মুত্তিু অর্জন করা যাবে, আল্লাহ্ সেসবের তালিকা পেশ করেছেন। এখানেও আমরা সমতার সুস্পষ্ট চিত্র দেখতে পাই। যেসব কাজে পুরতষের মুত্তিু, নারীর মুত্তিুও ঠিক সেসব কাজেই। আল কুরআন ঘোষণা করছে-
আল্লাহ্র প্রতি আত্মসমর্পনকারী পুরতষ ও নারী, বিশ্বাসী পুরতষ ও নারী, দৃঢ় পুরতষ ও নারী, বিনীত পুরতষ ও নারী, দানশীল পুরতষ ও নারী, সিয়াম পালনকারী পুরতষ ও নারী, সৎ পুরতষ ও নারী, আল্লাহ্কে স্মরণকারী পুরতষ ও নারী- এদেরকে আল্লাহ্ অবশ্যই ক্ষমা ও মহাপুরস্কার প্রদান করবেন।[সূত্রঃ আল কুরআন-৩৩ঃ ৩৫]
আত্মিক উন্নতির জন্য যেসব আনুষ্ঠানিক ইবাদাত, তার নিয়ম-নীতিও নর-নারীর জন্য একই রকম। ইসলামের পাঁচটি সতম্ভ যথা ঈমান, সালাত, যাকাত, সাওম ও হজ্জ- এগুলি একই নিয়মে নর-নারীকে পালন করতে হয়।
নারীর ইমামতি সংত্রুামত অভিযোগের পর্যালোচনাঃ
কখনো বা প্রশণ করা হয়, সালাতে নারী ইমামতি করতে পারে না কেন? কেনই-বা তাকে পিছনের কাতারে সহান দেওয়া হয়? এর কারণ অনুধাবন করা খুব কঠিন নয়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "সালাত হল বিশ্বাসীদের জন্য মিরাজ তথা আল্লাহ্র সম্মুখীন হওয়া।' তিনি আরো বলেছেনঃ "এমনভাবে সালাত আদায় কর যেন তুমি আল্লাহ্কে দেখছ। যদি তা নাও পারো, তবে তিনি তো তোমাকে দেখছেন।' কাজেই সালাতে পূর্ণ একাগ্রতা ও ভত্তিু থাকা বাঞ্ছনীয়। এটি নিশ্চিত করার জন্য নারীকে ইমামতি, পুরতষের সামনে বা পাশে দাঁড়ানোর অনুমতি প্রদান করা হয়নি। সালাতে রতকু-সিজদার মত কিছু কাজ আছে যা সামনের নারী যদি করে, তাহলে গ্গপছনের পুরতষের পক্ষে একাগ্রতা বজায় রাখা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। "উপাসনা করতে এসে আবার মনে কু-চিমতা কেন আসবে'─ এই ধরণের স্বভাব-প্রকৃতি বিরতদ্ধ দাবী ইসলাম কখনো করে না। বরং প্রাকৃতিক বাসতবতাকে মেনে নিয়েই সকল ইসলামী বিধান প্রণীত হয়েছে। যারা ঐ ধরণের উচ্চ আদর্শের কথা বলেন, প্রকৃতি-বিরতদ্ধ হবার কারণে সেই আদর্শের বাসতবায়ন ঘটাতে পারেন না। ফলে তাদের উপাসনালয়ে যৌন অনাচার অনুপ্রবেশ করে।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, নারীর ইমাম হতে বাধা থাকলেও ধর্মীয় শিক্ষক হতে কোন বাধা নেই। নবীপতণী হযরত আয়িশা (রা) ছিলেন এর উজ্জবল দৃষ্টামত। তাঁর কাছ থেকে অনেক লোক হাদীস শাসেএর পাঠ গ্রহণ করেছেন।
নারীর নবুওয়াত সংত্রুামত বিষয়ের মীমাংসাঃ
প্রশণ করা হয়, আধ্যাত্মিকভাবে নারী যদি পুরতষের সমান হয়, তবে নারীদের মধ্য থেকে কোন নবী বা রাসূল কেন প্রেরণ করা হয়নি? এটিও অনুধাবন করতে খুব কষ্ট হবার কথা নয়। যাহোক, এখানে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হচ্ছেঃ
নবী-রাসূলদেরকে সত্যের দাওয়াত নিয়ে পথে, ঘাটে, হাটে সবখানে দিনে রাতে সব সময় ছুটে বেড়াতে হত। মানুষকে বুঝানোর জন্য একাকী তাদের সাথে সাক্ষাত করতে হত দিনের পর দিন। এভাবে পুরতষ-সমাজে অবাধ বিচরণের এবং নিভৃত সাক্ষাতের সুযোগ ইসলাম নারীকে দেয়নি। কারণ, এটা অসংখ্য সামাজিক সমস্যার জন্ম দেয়। (পর্দা সম্পর্কিত অধ্যায়ে এ-বিষয়ে বিসতারিত আলোচনা করা হয়েছে)।
নবুওয়ৎতের দায়িত্ব মোটেই সহজ-সাধ্য ছিল না। বরং এ ছিল খুব বিপদ-সংকুল এক পথ যার প্রতিটি বাঁকে থাকত প্রাণঘাতী বিপদের আশংকা। প্রায় সকল নবী-রাসূলকে অত্যাচার-নির্যাতনে জর্জরিত করে দেওয়া হয়েছে। অনেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন দেশ থেকে দেশামতরে। পলাতক হিসাবে অনেকে খোলা আকাশের নিচে, জঙ্গলে, পাহাড়ের গুহায় রাত্রি যাপন করেছেন। বহুসংখ্যক নবী-রাসূলকে হত্যা করা হয়েছে। ইসলাম মনে করে, ইজ্জত ও জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে এভাবে কাজ করা নারীর জন্য কাম্য নয়।
নবুওয়ৎতের দায়িত্ব ছিল বিশাল এবং সার্বক্ষণিক ব্যসততাপূর্ণ। আল্লাহ্ সেই সব জাতির নিকট নবী পাঠাতেন, যারা পথভ্রষ্ট হত, অধঃপতিত হত। আপন জাতিকে অধঃপতনের অতল গহ্বর থেকে উঠিয়ে আনাই ছিল নবী-রাসূলের কাজ। এ-জন্য তাঁদেরকে সর্বক্ষণ ছুটে বেড়াতে হত মানুষের দ্বারে দ্বারে। দিনের পর দিন তাদেরকে বুঝাতে হত, সংগঠিত করতে হত। এটি ছিল সার্বক্ষণিক কাজ (full-time duty)। নারীকে এ দায়িত্ব দিলে বড় জোর খন্ডকালীন দায়িত্ব (part-time duty)হিসাবে দিতে হত। কারণ, পরিবার ব্যবসহাপনার গুরতদায়িত্ব ইসলাম নারীর উপর অর্পন করেছে। এমতাবসহায় তার পক্ষে কি পরিবারের দায়িত্ব, কি নবুওয়ৎতের মিশন- কোনটিই সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হত না। তাছাড়া, ঋতুস্রাবকালীন প্রতি মাসে চার-পাঁচ দিন নারীর পক্ষে আনুষ্ঠানিক ইবাদাত পরিচালনা সম্ভব হত না। সর্বোপরি, গর্ভসঞ্চার এবং সমতান প্রসবের কারণে দীর্ঘকাল নারীর পক্ষে নবুওয়ৎতের দায়িত্ব পালন সম্ভব হত না। সমতান জন্মের পরও একই সাথে মায়ের এবং নবীর দায়িত্ব পালন করা নারীর পক্ষে সম্ভব ছিল না। পক্ষামতরে, একজন পুরতষের পক্ষে নবুওয়ৎতের চরম ঝুঁকিপূর্ণ গুরতদায়িত্ব নারীকে না দিলেও ইসলাম তাকে অতীব উচ্চ সম্মান প্রদর্শন করতে কসুর করেনি। কুরআনে ফিরআউনের সএী আছিয়া (রা)-এর আল্লাহ্-প্রেমের উজ্জবল দৃষ্টামত উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত মারইয়াম (আ)-এর নিকট আল্লাহ্ জিব্রাঈল ফেরেশতাকে পাঠিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, মারইয়াম (আ)-কে জান্নাতী খাবার দেওয়া হত, যে সৌভাগ্য খুব কম নবী-রাসূলেরই হয়েছিল। এছাড়া আমরা হাদীস শরিফের মাধ্যমে জানতে পারি, হযরত খাদিজা (রা)-কে স্বয়ং আল্লাহ্ সালাম প্রদান করেছেন। হযরত আয়িশা (রা)-এর নিকট থেকে অনেক সাহাবী কুরআন-হাদীসের শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও অনেক মহীয়সী নারী সমসাময়িক অনেক পুরতষ তাপসের তুলনায় শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ছিলেন। আসলে আত্মিক উন্নতির সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সতরে উপনীত হতে নারী হওয়াটা কোন বাধা নয়।
পারিবারিক জীবনে নারীঃ
পরিবারে আমরা নারীকে মূলতঃ তিনটি রদপে দেখি- কন্যা হিসাবে, সএী হিসাবে এবং জননী হিসাবে। এখানে আমরা দেখব, ইসলাম নারীকে কোন্ রদপে কতটা মর্যাদা দিয়েছে।
ক) কন্যা হিসাবে নারীঃ
আমরা দেখেছি, শত শত বছর ধরে নানা সভ্যতায় কন্যা সমতানের প্রতি কত অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। এই অমানবিকতার অবসান ঘটাতে সর্বপ্রথম সোচ্চার হয়েছে ইসলাম। মানুষের অমতরপট থেকে এই ঘৃণ্য মনোবৃত্তি মুছে ফেলতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তার বিশ্বাসের সংস্কার সাধনের জন্য আল্লাহ্ পাক ঘোষণা করেন-
""তাদের কাউকে যখন কন্যা সমতানের সুখবর দেওয়া হয়, তখন তার মুখমন্ডল কালো হয়ে যায় এবং গ্গস অসহনীয় মনোকষ্টে ভুগতে থাকে। তাকে যে খবর দেওয়া হয় তার গ্লানির জন্য সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্মগোপন করে। সে চিমতা করে, হীনতা সত্তেবও সে তাকে রেখে দেবে, না মাটিতে পুঁতে ফেলবে। সাবধান! গ্গস যে সিদ্ধামত নেয় তা কত নিকৃষ্ট।'' [সূত্রঃ আল কুরআন- ১৬ঃ ৫৭-৫৯]
লক্ষ্যনীয়, কুরআনের এই আয়াতে কন্যা সমতানের জন্মের খবরকে "সুখবর' এবং তাকে হত্যা করার সিদ্ধামতকে খুবই "নিকৃষ্ট' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা বাহুল্য, কুরআনের এই প্রভাব বিশ্বাসীদের উপরে ছিল অপরিসীম।
কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছেঃ ""(শেষ বিচারের দিন) জীবমত প্রোথিত কন্যাকে প্রশণ করা হবে, কোন্ অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল।'' [সূরা আত্ তাকভীরঃ আয়াত-৯]
শত শত বছরের লাঞ্ছনার সতুপ সরিয়ে মেয়ে-শিশুকে মানবতার পুণ্যালোকে প্রতিষ্ঠা করতে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও অনেক উৎসাহ-ব্যঞ্জক বাণী দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ ""তোমাদের মধ্যে সেই ব্যত্তিু উত্তম যার প্রথম সমতান কন্যা।'' [সূত্রঃ সম্পাদনা পরিষদ। দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম। পৃ-১৩২]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ ""যার তত্তবাবধানে কোন শিশু কন্যা থাকে আর সে তাকে জীবিত দাফন না করে, তার প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শন না করে এবং পুত্রদেরকে তার উপর প্রাধান্য না দেয়, আল্লাহ্ তালা তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন।''[সূত্রঃ সহীহ আবু দাউদ]
আমরা দেখলাম, কন্যা-সমতানের জন্মকে অপমানজনক মনে করার প্রবণতাকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঠিক বিপরীত ধারণা দিয়ে প্রতিসহাপন করেন। তিনি এটিকে সৌভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেন। এরপর তিনি নির্দেশ দেন, পুত্রকে কন্যার উপর প্রাধান্য দেওয়া চলবে না।
হযরত আনাস (রা) এ সম্পর্কিত একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। একবার এক ব্যত্তিু রাসূলে করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বসা ছিল। এ সময় তার পুত্র সমতান তার কাছে এলো। সে তাকে চুমু দিল এবং কোলে তুলে নিল। এরপর তার কন্যা সমতান এলো এবং সে তাকে সামনে বসিয়ে দিল। কন্যার প্রতি লোকটার এই অবহেলা মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অমতরকে ব্যথিত করল। তিনি বললেন, "তুমি এদের উভয়ের সাথে একই রকম ব্যবহার করলে না কেন?' [সূত্রঃ দৈনন্দি জীবনে ইসলাম। পৃ-১৩০]
কন্যা প্রতিপালনের মাহাত্ম্য বর্ণনা করে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ""যে ব্যত্তিু দু'টি মেয়েকে সাবালিকা হওয়া পর্যমত লালন-পালন করল, সে কিয়ামৎতের দিন এরদপ অবসহায় আসবে যে, আমি ও সে এ রকম একত্র থাকব।'' তিনি তাঁর আঙুলগুলো মিলিয়ে দেখালেন। [সূত্রঃ রিয়াদুস সালেহীন]
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবনে কখনো এমনটি হয়নি যে, তিনি যা বলেছেন নিজে তা করেননি; কন্যার গুরতত্ব প্রদানের ক্ষেত্রেও এটি সমভাবে সত্য। আপন কন্যাদেরকে তিনি অত্যমত সেণহ করতেন। হযরত আয়িশা (রা) বর্ণনা করেনঃ ""কথা-বার্তায়, চলনে-বলনে হযরত ফাতিমার চাইতে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বেশি সাদৃশ্য আমি আর কারো দেখিনি। যখন তিনি (ফাতিমা) তাঁর কাছে আসতেন, তখন তিনি তাঁর দিকে ছুটে যেতেন। তাঁকে খোশ আমদেদ জানাতেন, তাকে চুম্বন করতেন এবং তাঁর হাত ধরে নিয়ে গিয়ে নিজের বসার সহানে বসিয়ে দিতেন।''[সূত্রঃ আল আদাবুল মুফরাদ]
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আরেকটি গুরতত্বপূর্ণ সংস্কার হল কন্যা-সমতানের মতামতের গুরতত্ব প্রদান। ইতোপূর্বে আমরা লক্ষ্য করেছি, আধুনিক কালের আগে কোন সভ্যতাই কনের মতামতকে বিয়ের জন্য প্রয়োজন মনে করেনি। বরং বিয়েটা ছিল কর্তৃত্ব বদল─ পিতা তার কর্তৃত্ব বিলুপ্ত করে স্বামীর নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধীনে অর্পন করত তার মেয়েকে। অথচ মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কনের মতামত শুধু প্রয়োজনই না, অপরিহার্য বলে ঘোষণা করেছেন। তার সম্মতি ছাড়া বিয়ের কোন বৈধতা থাকে না। তিনি বলেনঃ
""বয়স্কা মহিলাকে বিয়ে দেওয়া যাবে না, যতক্ষণ না তার মত নেওয়া হবে। আর কুমারীকেও বিয়ে দেওয়া হবে না, যতক্ষণ না তার অনুমতি নেওয়া হয়। আর তার নীরবতাই অনুমতি হিসাবে গণ্য হবে।'' [সূত্রঃ সহীহ্ ইবনে মাজাহ্]
বুরাইদা (রা) এক দিনের একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। জনৈকা মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, "আমার পিতা আমাকে তার ভাতিজার কাছে বিয়ে দিয়েছে যাতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।' তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিষয়টি মেয়ের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিলেন। মেয়েটি বলেন, "আমার পিতা যা করেছেন তা আমি মেনে নিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল, মেয়েরা যেন জেনে নেয় যে, বিয়ের ব্যাপারে পিতাদের (চূড়ামত) মত দেবার অধিকার নেই।' [সূত্রঃ ইবনে মাজাহ্]
খ) সএী হিসাবে নারীঃ
বিভিন্ন সভ্যতার আলোচনা করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, সকল কালেই─ এমনকি গ্রীক ও রোমান সভ্যতার মত গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতাতেও─ সএীকে মানবিক মর্যাদা প্রদান করা হয়নি। সে ছিল নিতামতই স্বামীর সম্পত্তি যা স্বামী অন্যের সাথে বিনিময় করতে পারত, বন্ধক রাখতে পারত, অন্যকে উপহার দিতে পারত, এমনকি আর্থিক সংকট কাটাতে তাকে দাসী হিসাবে বিত্রিুও করতে পারত। স্বামী তাকে যে কোন শাসিত─ এমনকি মৃত্যুদন্ডও দিতে পারত। এরকম মানবেতর অবসহা থেকে নারীকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এসেছে কালজয়ী আদর্শ ইসলাম। আল্লাহ্ রাববুল আলামীন ঘোষণা করেছেনঃ ""তাদেরও (সএীদের) তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে, যেমন আছে তাদের উপর (পুরতষের)।'' [সূত্রঃ আল কুরআন-২ঃ ২২৮] কুরআন-পাকের অন্যত্র বলা হয়েছেঃ "তারা তোমাদের পোশাক স্বরদপ এবং তোমরা তাদের পোশাক স্বরদপ।' [সূত্রঃ আল কুরআন-২ঃ১৮৭]
সএীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করবার জন্য নারীমুত্তিুর প্রথম এবং প্রকৃত প্রবত্তুা মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও নানাভাবে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেনঃ ""কোন মুমিন ব্যত্তিু আল্লাহ্র ভয় ও ভত্তিুর (তাকওয়া) পর পুণ্যবতী সএীর চেয়ে উত্তম কিছু লাভ করে না।'' [সূত্রঃ ইবনে মাজাহ্]
অন্যত্র তিনি বলেছেনঃ ""দুনিয়ার জীবন খুবই ক্ষণসহায়ী। এখানে যে যত সুবিধাই গ্রহণ করতক না কেন, সেটা সাময়িক ও ক্ষণসহায়ী। তবে এই পার্থিব জগতে ধার্মিক সএী ব্যতীত উত্তম আর কোন জিনিস হতে পারে না।'' [সূত্রঃ ইবনে মাজাহ্]
কুরআন পাকে যখন সোনা-রদপা জমা করতে নিষেধ করা হল, তখন হযরত উমার (রা) মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করেনঃ "ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমরা কোন্ সম্পদ সঞ্চয় করব?' তখন মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ "তোমাদের সকলেই যেন সঞ্চয় করে কৃতজ্ঞ অমতর, আল্লাহকে স্মরণকারী জিহ্বা, আর ঈমানদার সএী, যে তোমাদের আখিরাতের কাজে সহায়তা করবে।' [সূত্রঃ ইবনে মাজাহ্]
অতএব, আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইসলাম নারীকে "সম্পত্তি'র অবমাননাকর অবসহান থেকে "সম্পদ' এর গৌরবজনক অবসহানে উন্নীত করেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে স্বামী তার সএীর মালিক-মোত্তুার নয়, বরং জীবন সাথী। অতএব সাথীর প্রতি যে আচরণ শোভন, তেমনটি করতেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ্ বলেনঃ ""তাদের সাথে মিলে মিশে সৎভাবে জীবন যাপন করবে। তোমরা যদি তাদের অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে, আল্লাহ্ যে বিষয়ে অশেষ কল্যাণ রেখেছেন সেটাকেই তোমরা অপছন্দ করছ।'' [আল কুরআন- ৪ঃ১৯]
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "যে আচার-আচরণে নিষ্ঠাবান, যে তার সএীর প্রতি সদয়, সে-ই প্রকৃত মুমিন।' [সূত্রঃ তিরমিযী ও নাসাঈ শরীফ]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেনঃ ""সএী ও সুগন্ধী আমার নিকট পছন্দনীয় এবং নামায হচ্ছে আমার চক্ষুশীতলকারী।'' [সূত্রঃ নাসাঈ শরীফ]
বিশ্বনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের জীবনে সএীর মর্যাদা প্রদানের অনুপম দৃষ্টামত সহাপন করেছিলেন। বলা বাহুল্য, নতুন এক জীবন-ব্যবসহার প্রচার ও প্রতিষ্ঠা এবং নবগঠিত ইসলামী রাষ্ট্র আর একের পর এক যুদ্ধ পরিচালনার মত বিরাট দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাঁকে দারতণ ব্যসত থাকতে হত। এরপরও তিনি গৃহকর্মে সএীদেরকে সাহায্য করেছেন। একবার নবীপতণী আয়িশা (রা)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘরে কি কাজ করতেন। জবাবে তিনি বলেছিলেনঃ "তোমাদের কোন এক ব্যত্তিু নিজ ঘরে যা করে থাকো, তিনিও তাই করতেন─ জুতা সেলাই করতেন, কাপড়ে তালি লাগাতেন এবং সেলাই করতেন।' [সূত্রঃ আল আদাবুল মুফরাদ] একই সংকলণের পরবর্তী হাদীসে আমরা দেখতে পাই, তিনি কাপড় পরিস্কার করতেন, ছাগলের দুধ দোহাতেন।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দাম্পত্য জীবন ছিল সএী-প্রেমের অনন্য দৃষ্টামত। তিনি এমন কিছুকাজ করতেন যা ছিল খুব আমতরিকতাপূর্ণ এবং তাঁর সএীরা তাঁর হদদয়ের উষ·তা অনুভব করতে পারতেন। যেমন তিনি তাঁদের সাথে একই পাত্রে খাবার খেতেন এবং এক পেয়ালায় পানি পান করতেন। নবীপতণী উম্মে হাবীবা (রা) বলেন, "একই পাত্রে আমার এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাতের মধ্যে ছোঁয়া লাগতে থাকত' (অর্থাৎ একই পাত্রে তাঁরা আহার করতেন)।[সূত্রঃ আল আদাবুল মুফরাদ] তাঁর হদদয়ের এই উষ·তা ছিল নিখাদ। সএীদের ঋতুস্রাবের সময়ও তিনি তাঁদের সাথে একই রকম আমতরিকতা প্রদর্শন করতেন। হযরত আয়িশা (রা) বলেনঃ ""আমি হায়েয অবসহায় হাড়ের গোশ্ত দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে খেয়ে তা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দিতাম। তিনি সে জায়গায় মুখ লাগিয়ে খেতেন যে জায়গায় আমার মুখ লেগেছিল। আমি বাটি থেকে পানি পান করে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দিলে তিনি সে সহানে মুখ রেখে পান করতেন, যেখানে আমি মুখ রেখে পান করেছিলাম।'' [সূত্রঃ আবু দাউদ, নাসাঈ, আল আদাবুল মুফরাদ]
বিশ্বনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সএীদের বিনোদনের প্রতিও সজাগ ছিলেন। আয়িশা (রা) বলেনঃ ""আমার কয়েকজন বান্ধবী ছিল, তাদের সঙ্গে আমি খেলা করতাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে আসলে আমার বান্ধবীরা দৌড়ে পালাতো। তিনি তাদের খোঁজ করে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন; আমরা পুনরায় খেলা আরম্ভ করতাম।'' [সূত্রঃ সহীহ বুখারী]
আয়িশা (রা) আরেকটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। একবার ঈদের দিনে কিছু হাবশী লোক মসজিদে ঢাল-তলোয়ার নিয়ে খেলা করছিল। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে প্রশণ করলেন, "তলোয়ার চালনার খেলা দেখতে চাও কি?' আমি বললাম, "হাঁ'। হযরত (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আড়াল করে রাখছিলেন। আমি আমার গন্ডদেশ হযরতের গন্ডদেশে লাগিয়ে হাবশীদের অসএচালনা দেখছিলাম। . . . আমি যখন নিজেই অবসাদ অনুভব করলাম তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন, "মন ভরেছে কি?' আমি বললাম, "হাঁ'। তিনি বললেন, "তবে যাও।' [সহীহ আল বুখারী]
বিশ্বনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বয়ং সএীদের সাথে বন্ধুর মত খেলা-ধূলা করতেন। আয়িশা (রা) বলেনঃ "আমি একবার রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ভ্রমণ করছিলাম; তখন তাঁর সাথে আমার দৌড় প্রতিযোগিতা হল। আমি দৌড়ে তাঁকে পরাজিত করলাম। যখন আমি সহুলকায় হয়ে গিয়েছিলাম, তখন তাঁর সাথে আরেকবার দৌড় প্রতিযোগিতা হয়েছিল। এবার তিনি দৌড়ে আমাকে পরাজিত করলেন এবং বললেন, "আয়িশা, এ হল তোমার পূর্ববিজয়ের প্রতিশোধ।'
খৃস্টবাদের মত ইসলাম বলে না যে, সএীদের চুপ থাকা উচিত এবং শুধু আনুগত্য করে যাওয়া উচিত। বরং পারস্পরিক আলোচনা-পরামর্শের উপর ইসলামে গুরতত্ব আরোপ করা হয়েছে। যেমন শিশু-সমতানকে বুকের দুধ ছাড়ানোর ব্যাপারে আল্লাহ্ পাক নির্দেশ দিচ্ছেনঃ ""স্বামী ও সএী যদি পরস্পর পরামর্শ ও সমেতাষের ভিত্তিতে শিশু সমতানের দুধ ছাড়াতে ইচ্ছা করে, তবে তাতে কোন দোষ হবে না তাদের।'' [সূত্রঃ আল কুরআন-২ঃ ২৩৩]
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সএীদের মতামতের যথেষ্ট মূল্য দিতেন। জীবনের বড় এক সংকটকালে তিনি তাঁর এক সএীর পরামর্শমত কাজ করে সংকট নিরসণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এটা ছিল হুদাইবিয়ার সন্ধির সময়ের ঘটনা। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সদলে উমরা করতে কা‘বা ঘরে যাচ্ছিলেন। কিমও সকল রীতি-নীতি লঙ্ঘন করে কুরাইশরা তাঁদেরকে বাধা প্রদান করল। অনেক আলোচনার পর অবশেষে এক সন্ধি-চুত্তিু স্বাক্ষরিত হল। এর শর্তগুলো ছিল আপাত দৃষ্টিতে মুসলিমদের জন্য খুব অবমাননাকর (যদিও কুরআনে এটাকে প্রকাশ্য বিজয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে তা প্রমাণিতও হয়েছে)। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণ এতে দারতণ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। ফলে তিনি যখন তাঁদেরকে হুদায়বিয়ার প্রামতরেই পশু কুরবানী করতে বললেন, তখন তাঁরা মুখ ভার করে বসে রইলেন। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথায় যাঁরা হাসতে হাসতে মৃত্যুর মুখে ঝাঁপিয়ে পড়তেন, তয়বদের এই নির্লিপ্ততায় তিনি হতবুদ্ধি হয়ে গ্গগলেন। সেখান থেকে উঠে তিনি তাঁবুর মধ্যে প্রবেশ করলেন। নবীপতণী উম্মে সালমা (রা) সবকিছু শুনে বললেনঃ "হে আল্লাহ্র নবী, আপনার কি এ যুত্তিু পছন্দ হয়? আপনি নিজে বের হোন, কারো সাথে কোন কথা না বলে নিজের পশু জবাই করুন এবং ক্ষৌরকারকে ডেকে নিজের মাথা মুন্ডন করতন।' মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জীবনের এই বিব্রতকর অবসহায় সএীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করলেন। এতে সুফল পাওয়া গেল। সাহাবীরা সবাই নিজি নিজ পশু কুরবানী দিলেন এবং মাথা মুন্ডন করলেন। [সূত্রঃ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া। ৪র্থ খন্ড। পৃ-৩২৪]
ইসলাম সএীকে দিয়েছে তালাকের অধিকার। নারীর তালাক গ্রহনের প্রত্রিুয়াকে ইসলামী পরিভাষায় বলা হয় খুলা। ইবনে আব্বাস (রা)-এর একটি বর্ণনা থেকে জানা যায়, ছাবিত বিন কায়সের সএী রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আমলে তার স্বামী থেকে খুলা তালাক গ্রহণ করেছিলেন। [সূত্রঃ তিরমিযী শরীফ] ইমাম মালিক (রঃ) অভিমত পোষণ করেছেন যে, সএীর পক্ষ হতে স্বামীর বিরতদ্ধে অসস্প্রীতি ও উপেক্ষার অভিযোগ থাকলে সএীর জন্য তা কাযীর আদালতে উথুাপনের অধিকার রয়েছে। প্রথমতঃ কাযী স্বামীকে মৌখিক উপদেশ দেবেন। স্বামী উপদেশ মেনে চললে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। উপদেশ কার্যকর না হলে সএীর জন্য খোরপোষ প্রদানের আদেশ এবং সএীকে আনুগত্য (বিশেষ অর্থে) না করার নির্দেশ দেওয়া হবে এবং সএীর জন্য স্বামীকে সাময়িক বর্জন করার ও তার ঘরে না যাওয়ার বৈধতা দেওয়া হবে। এতে স্বামী সরল পথে আসলে এভাবে নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। কিমও এতে স্বামী সম্মত না হলে কাযী তাকে প্রহারের শাসিত দেবেন। তাতেও ফলোদয় না হলে চূড়ামত বিচ্ছেদের সিদ্ধামত দেওয়া হবে। [সূত্রঃ মিনহাজুস সালেহীন। পৃ-৪০৮]
পুরতষের কর্তৃত্ব সংত্রুামত অভিযোগের পর্যালোচনাঃ
বলা হয়, ইসলাম নারীর উপরে পুরতষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছে। আসুন, এ সম্পর্কিত কুরআনের আয়াতটি দেখি। ঘোষণা করা হয়েছেঃ
""পুরতষেরা নারীদের তত্তবাবধায়ক, কারণ আল্লাহ্ তাদের কতককে কতকের উপর বিশেষত্ব দান করেছেন এবং পুরতষেরা নিজেদের অর্থ ব্যয় করে।'' [সূত্রঃ আল কুরআন- ৪ঃ ৩৪] উল্লেখিত আয়াতে পুরতষের প্রাধান্যসূচক যে শব্দ ব্যবহদত হয়েছে সেটি হল "কাওয়াম'। এই শব্দ দিয়ে সর্বময় কর্তৃত্ব বুঝায় না। এই ধরণের ক্ষমতা বুঝানোর জন্য আরবীতে পৃথক দুটি শব্দ রয়েছে, সে-গুলি হল "মুহাইমিনুন' এবং "মুছাইতিরতন'। উল্লেখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনুল আরাবী বলেনঃ ""স্বামী কাওয়াম এর অর্থ হল স্বামী তার সএীর আমানতদার, রক্ষণাবেক্ষণকারী, তার যাবতীয় কাজের দায়িত্বশীল, কর্তা এবং তার অবসহার সংশোধনকারী ও কল্যাণ বিধানকারী।'' [সূত্রঃ মাওলানা আব্দুর রহীম। পরিবার ও পারিবারিক জীবন। পৃ-২০৫]
অতএব আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইসলাম স্বামীকে সএীর প্রভু বানিয়ে দেয়নি বরং তাকে করেছে দায়িত্বশীল যার অনিবার্য দাবী হল সএীর যাবতীয় মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং নিরাপত্তা বিধান। এখন প্রশণ হল, এই যে আমৃত্যু গুরতদায়িত্ব─ এ কি কোন উপভোগ্য ব্যাপার? বরং এ তো স্বামীর কাঁধে ভারী এক বোঝা যা তাকে বহন করতে বাধ্য করা হয়েছে। সএীর কাঁধে এই বোঝা চাপানো কোন বিবেচনাতেই সংগত হত না। প্রশণ উঠতে পারে, এই কর্তৃত্ব বা দায়িত্ব অর্পনের যৌত্তিুকতা কি? প্রশণটা মূলতঃ পাশ্চাত্যের। এই সভ্যতা ব্যত্তিুস্বাতমেএর উপর অত্যধিক গুরতত্ব আরোপ করে থাকে। ব্যত্তিুর রতচি-অভিরতচিকে মূল্য দিতে গিয়ে আর সব কিছুকে তারা অবলীলায় অবহেলা করতে পারে। ব্যত্তিু স্বাধীনতার দেবতাকে তুষ্ট করতে তারা সামষ্টিক স্বার্থকে সহজেই বলি দিতে পারে। তাই তারা পরিবারে স্বামীর প্রতি সএীর আনুগত্যের মধ্যে কোন যুত্তিু খুঁজে পায় না। তারা এই সহজ কথাটাও বুঝতে পারে না যে, কোন প্রতিষ্ঠানই একজন কর্তার অনুপসিহতিতে ঠিকমত চলতে পারে না; আর পরিবার হল সমাজের সবচেয়ে গুরতত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। পাশ্চাত্যে পারিবারিক জীবনে বিশৃংখলা আর অশামিতর অন্যতম প্রধান কারণ হল কর্তাবিহীন পরিবার। এর থেকে সৃষ্টি হয় ব্যত্তিুত্বের দ্বন্দব, হানাহানি, বিবাহ-বিচ্ছেদ। পশ্চিমা বিশ্বে এ সব সমস্যা ব্যাপক।
আরেকটি বিষয় প্রসঙ্গত্রুমে মনে রাখা দরকার, তা হলঃ সএী হিসাবে নারী পুরতষের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও জীবনের আরেক পর্যায়ে তাকে পুরতষের তুলনায় অনেক বেশি মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। মা হিসাবে নারীকে পুরতষের তিন গুণ সম্মান প্রদান করেছে ইসলাম। এ-প্রসঙ্গে হাদীসগ্রমহগুলিতে খুব নির্ভরযোগ্য এক বর্ণনা রয়েছে। একবার এক লোক মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করল, "আমার কাছে সর্বাধিক সদ্ব্যবহার পাবার যোগ্য কে?' জবাবে তিনি বললেন, "তোমার মাতা।' লোকটি জিজ্ঞাসা করল, "তারপর কে?' তিনি বললেন, "তোমার মাতা।' লোকটি পুনরায় প্রশণ করল, "তারপর কে?' তিনি বললেন, "তোমার মাতা।' চতুর্থবারও লোকটি একই প্রশণ করল। এবার মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, "তোমার পিতা।' [সূত্রঃ আল আদাবুল মুফরাদ] অতএব আমরা দেখতে পাচ্ছি, জীবনের এক পর্যায়ে নারী তুলনামূলকভাবে কম পাচ্ছে (যা পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানকে সফল করার জন্য অপরিহার্য), আরেক পর্যায়ে পাচ্ছে বেশি। এভাবে সমন্ববয় সাধন করা হচ্ছে। প্রসিদ্ধ ইসলাম প্রচারক ডাঃ জাকির নায়েক এ-প্রসঙ্গে এক সুন্দর উদাহরণ দিয়ে থাকেন। দু'জন ছাত্র "ক' এবং "খ' কোন এক পরীক্ষায় সমান নম্বর পেয়েছে, ধরা যাক ৮০% নম্বর পেয়েছে। কিমও এর অর্থ এটা নয় যে, প্রতিটি প্রশেণ তারা সমান নম্বর পেয়েছে। "ক' প্রথম প্রশেণ পেয়েছে ১০ এর মধ্যে ৯, "খ' এখানে পেয়েছে ৭। দ্বিতীয় প্রশেণ "ক' পেয়েছে ৭ আর "খ' পেয়েছে ৯। অন্যান্য প্রশেণ তারা দুজনেই ৮ করে পেয়েছে। এভাবে তারা সামগ্রিকভাবে সমান হলেও একটি প্রশেণ "ক' এর অবসহান ভাল, আরেকটিতে ভাল অবসহান "খ' এর। তেমনিভাবে, নারী-পুরতষ সমান হলেও স্বামী হিসাবে পুরতষ ভাল অবসহানে আছে, আর মা হিসাবে নারীর অবসহান উন্নততর।
সএীকে প্রহারের অধিকার সংত্রুামত অভিযোগের পর্যালোচনাঃ
অভিযোগ করা হয়, কুরআন স্বামীকে অধিকার দিয়েছে, সে সএীকে প্রহার করতে পারে। বিষয়টি এসেছে সূরা আন্ নিসার ৩৩ নং আয়াতে। এই আয়াতে বলা হয়েছেঃ ""সএীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশংকা কর, তাদেরকে সদুপদেশ দাও, পরবর্তীতে তাদের শয্যা থেকে দূরে সরিয়ে রাখো। শেষে তাদেরকে প্রহার কর। এর ফলে তারা যদি তোমাদের বাধ্য হয়ে যায়, তাহলে তাদের ব্যাপারে অন্য কোন পথ তালাশ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ্ই হচ্ছেন সর্বোচ্চ, সর্বশ্রেষ্ঠ।''
এটাও পাশ্চাত্য থেকে আমদানিকৃত অভিযোগ যারা বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি না করেই সমালোচনায় অবতীর্ণ হয়। এক্ষেত্রে তাদেরকে পাল্টা প্রশণ করা যায়, ইসলামের বিরতদ্ধে এই অভিযোগ করার নৈতিক অধিকার কি পশ্চিমা বিশ্বের আছে? প্রায় শত ভাগ শিক্ষিত জনসংখ্যা অধ্যূষিত এসব দেশে বিপুল সংখ্যক নারীকে স্বামীর হাতে কিংবা (লিভ টুগেদারের ক্ষেত্রে ) যৌনসঙ্গীর হাতে নির্যাতিত হতে হয়। যুত্তুরাষ্ট্র, কানাডা, কলম্বিয়াসহ ১০টি পশ্চিমা দেশের উপর জাতিসংঘ এক ব্যাপক জরিপ পরিচালনা করে। এতে দেখা যায়, গড়ে প্রতি তিন জন নারীর মধ্যে একজন স্বামী বা সঙ্গীর দ্বারা শারীংরক নির্যাতনের শিকার হয় [সূত্রঃ Social Problems. Annual Edition-02/03. pp-92.] পাশ্চাত্যের ভাবাদর্শে গড়া প্রাচ্যের দেশ জাপান। এখানেও সএী-নির্যাতনের হার এক তৃতীয়াংশ। [সূত্রঃ A New Psychology of Women. Pp-426]
সএীকে প্রহার করা, এমনকি তার সাথে দুর্ব্যবহার করা ইসলামের দৃষ্টিতে খুব অপছন্দনীয় কাজ। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বার বার এটা নিরতৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেনঃ "তোমরা আল্লাহ্র দাসীদেরকে মারধোর করো না।' [সূত্রঃ সহীহ্ আবু দাউদ] এখানে সএীদেরকে "আল্লাহ্র দাসী' হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে; বিষয়টি খুব তাৎপর্যপূর্ণ। কোন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন লোক প্রতিবেশীর চাকর-খাদেমকে মারধোর করতে পারে না। আর নিজের পরম সাফল্য কি চরম শাসিত যাঁর হাতে, সেই সত্তার যে দাসী, তার উপর যুলুম-নির্যাতন কতইনা স্পর্ধার কাজ! সএীর প্রতি ব্যবহারের উপর এতটা গুরতত্ব আরোপ করা হয়েছে যে, এটাকে স্বামীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মানদন্ড করে দেওয়া হয়েছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা করেছেনঃ ""তোমাদের মধ্যে সেই ব্যত্তিুই উত্তম, যে তার সএী-পরিজনের নিকট উত্তম।'' [সূত্রঃ জামে আত তিরমিযী] মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্যত্র বলেছেনঃ ""মর্যাদাবানই (সএীদের) মর্যাদা দেয় এবং ইতর লোকই তাদের মর্যাদাহানি করে।'' [সূত্রঃ মিনহাজুস সালেহীন] বিশ্বনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিজ-জীবনে সএীদের প্রতি সদ্ব্যবহারের অনুপম দৃষ্টামত সহাপন করে গেছেন। তিনি কোন দিন তাঁর কোন সএীকে প্রহার করেননি। এমনকি তাঁদের সাথে কখনো কোন দুর্ব্যবহারও করেননি। বিশ্বাসীদের মাতা আয়িশা (রা) বলেনঃ ""রাসূলে করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন সএীকে কিংবা কোন চাকর-খাদেমকে কখনো মারধোর করেননি─ না তাঁর নিজের হাত দিয়ে, না আল্লাহ্র পথে।'' [সূত্রঃ সুনান আন নাসাঈ] মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দাম্পত্য জীবনের যে বিবরণ হাদীস শাসেএর মাধ্যমে আমাদের কাছে পৌঁছেছে, তা থেকে আমরা জানতে পারি, তাঁর সএীরা কখনো কখনো কিছুটা বাড়াবাড়ি করেছেন, অথচ তিনি সহিষ·ুতার পরিচয় দিয়েছেন। একবার হযরত উমার (রা)-এর সএী তাঁকে বললেনঃ "আল্লাহ্র কসম! নবীর বেগমরা পর্যমত তাঁর কথার প্রত্যুত্তর দিয়ে থাকেন। এমনকি তাঁদের এক-একজন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দিনের বেলা ত্যাগ করে রাত পর্যমত অভিমান করে থাকেন।' একথা শুনে উমার (রা) দ্রতত তাঁর কন্যৎ এবং নবীপতণী হাফসা (রা)-এর কাছে গেলেন এবং মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এধরণের আচরণ না করার উপদেশ দিলেন। [সূত্রঃ পরিবার ও পারিবারিক জীবন। পৃ-১৮২] অতএব, আমরা দেখতে পাচ্ছি, সএী-নির্যাতন ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয় কাজ।
ইসলাম সংশোধন ও প্রত্যাবর্তনের সব পথ খোলা রাখতে চায়। কারো মুখের উপর ঝট করে কপাট বন্ধ করে দেওয়া এই মহান ধর্মের রীতি নয়। তাই কখনো কখনো অপছন্দনীয় কোন বিষয়েরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি এই জন্য যে, চরম অনাকাঙ্খিত কোন ঘটনা যেন না ঘটে যায়। এই ধরণের আরেকটা উদাহরণ হল তালাক। ইসলামে এটা অতি অপছন্দের কাজ। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্র কাছে সর্বাধিক অপছন্দনীয় বৈধ বিষয় হচ্ছে তালাক। [সুনান আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ]। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেছেনঃ বিয়ে কর, তালাক দিয়ো না; কেননা, তালাকের কারণে পরম দয়ালুর আরশ পর্যমত কেঁপে ওঠে। [সূত্রঃ মিনহাজুস সালেহীন] এরকম একটা কাজকেও ইসলাম নিষিদ্ধ করেনি। কারণ, কখনো কখনো এটা অনিবার্য হয়ে পড়ে। যাহোক, চরম অপছন্দনীয় ব্যাপার তালাক প্রতিরোধের সর্বশেষ প্রয়াস হিসাবে মৃদু প্রহারের ব্যবসহা রাখা হয়েছে। এর আগে আরো দু'টি পর্যায়ত্রুমিক পদক্ষেপের কথা কুরআনের ঐ একই আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে; প্রথমটি হল উপদেশ প্রদান এবং দ্বিতীয়টি শয্যা পৃথককরণ। ধৈর্য্য ও বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ করলে অধিকাংশ সএীর জন্য প্রথম পদক্ষেপই যথেষ্ট; দ্বিতীয়টিরও প্রয়োজন পড়ে না। আর শয্যা পৃথক করার পরও সংশোধন হবে না, এরকম সএী নিঃসন্দেহে দুর্লভ।
সএীর সঙ্গে ব্যবহারে ধৈর্যশীল হওয়া সুখময় দাম্পত্য জীবনের পূর্বশর্ত। মানুষ হিসাবে তাদের মধ্যে দোষ-ত্রতটি থাকতেই পারে। তবে ধৈর্য্য ও সদুপদেশের সাহায্যে তা দূর করা সম্ভব। ধৈর্যের গুরতত্ব সম্পর্কে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ""কোন মুসলিম পুরতষ যেন কোন মুসলিম মহিলাকে তার কোন একটা অভ্যাসের কারণে ঘৃণা না করে। কেননা, একটা অপছন্দ হলে অন্য আরো অভ্যাস দেখে সে খুশিও হয়ে যেতে পারে।'' [সূত্রঃ মুসলিম, মুসনাদে আহমদ] অন্যত্র তিনি বলেনঃ ""মেয়েলোক পাঁজরের হাড়ের মত। তাকে সোজা করতে চাইবে তো ভেঙ্গে ফেলবে, আর তাকে ব্যবহার করতে প্রসতুত হলে তার স্বাভাবিক বত্রুতা রেখেই ব্যবহার করবে।'' এই হাদীসে নারীর স্বভাব-প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা দিয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে, জোর করে তার প্রকৃতি পরিবর্তন করতে চাইলে দাম্পত্য সম্পর্কই ভেঙ্গে যেতে পারে। অতএব, কল্যাণকর পমহা হল, তাদের প্রতি সহিষ·ুতা প্রদর্শন করা। এভাবেই মধুর পারিবারিক জীবন গঠন করা সম্ভব। এই হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা আশ্ শাওকানী (রঃ) বলেনঃ ""এ হাদীসে নির্দেশ করা হয়েছে যে, নারীদের সাথে সব সময়ই ভাল ও আমতরিকতাপূর্ণ ব্যবহার করতে হবে। তাদের স্বভাব-চরিত্রে বত্রুতা থাকলে অসীম ধৈর্য্য অবলম্বন করতে হবে।''[ উদ্ধৃতঃ পরিবার ও পারিবারিক জীবন, পৃ-১৭২] ইবনে হাজার আল আসকালানী (রঃ) এই হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃ ""নারীদের এই বাঁকা স্বভাব দেখে তাদেরকে এমনি ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়; বরং ভাল ব্যবহার ও অনুকূল পরিবেশ দিয়ে তাদের সংশোধন করতে চেষ্টা পাওয়াই পুরতষের কর্তব্য। দ্বিতীয়তঃ নারীদের প্রতি ভাল ব্যবহার করা সব সময়ই প্রয়োজন,তাহলেই স্বামী-সএীর পারস্পরিক প্রেম ভালবাসার বন্ধন দৃঢ় হবে। সেই সঙ্গে মেয়েদের অনেক দোষ ক্ষমা করে দেওয়ার গুণও অর্জন করতে হবে স্বামীদের। খুঁটিনাটি ও ছোটখাটো দোষ দেখেই চটে যাওয়া কোন স্বামীরই উচিত নয়।'' [প্রাগুত্তু, পৃ-১৭২] এভাবে স্বামী যদি নিজেকে সএীর প্রকৃত বন্ধু এবং অভিভাবক হিসাবে প্রমাণ করতে পারে, তার মধ্যে অবাধ্যতার লক্ষণ দেখলে ধৈর্য্য সহকারে উপদেশ দিতে থাকে, তাহলে আশা করা যায় এতেই সুফল পাওয়া যাবে। অধিকাংশ সএী এই পর্যায়েই নিজেকে সংশোধন করে নেবে। সংখ্যায় অল্প হলেও কিছু নারী এই পর্যায়ে সংশোধিত না-ও হতে পারে, আনুগত্য স্বীকার নাও করতে পারে। তাদের জন্য কুরআনের পরবর্তী ব্যবসহাপত্র হল শয্যা পৃথক করে দেওয়া। কিছুদিন এভাবে সঙ্গ বর্জন করার পরও সংশোধিত হবে না কিংবা আনুগত্য স্বীকার করবে না─ এরকম নারী সমাজে দুর্লভ। যে নগণণ্ঠ সংখ্যক নারী স্বামীর শয্যা থেকে বিচ্ছিন্ন হবার পরও নিজেকে শুধরে নেবে না, তাদেরকে সংশোধনের শেষ প্রয়াস হল মৃদু প্রহার। কুরআনের বিখ্যাত ভাষ্যকারগণ আয়াতটি থেকে এই অর্থই বুঝেছেন। আল্লামা ইবনে কাসীর (রঃ) আয়াতটির ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ ""উপদেশ প্রদান এবং শয্যা পরিত্যাগ অবসহায় ফলোদয় না ঘটিলে এবং উহাতেও সএী তাহার অবাধ্যতা হইতে ফিরিয়া না আসিলে তোমরা তাহাদিগকে সামান্য প্রহার করিতে পার।'' [সূত্রঃ তাফসীরে ইবনে কাসীর, তৃতীয় খন্ড, পৃ-৭২] ""হযরত ইবনে আব্বাস (রা)সহ একাধিক তাফসীরকার আলোচ্য আয়াতের ব্যখ্যায় বলিয়াছেন যে, সএীর প্রতি স্বামী কর্তৃক প্রযোজ্য প্রহার হইতেছে সামান্য প্রহার। হাসান বসরী (রঃ) বলিয়াছেন, উহা হইতেছে এইরদপ প্রহার যাহা প্রহারের সহানে দাগ সৃষ্টি না করে।'' [প্রাগুত্তু, পৃ-৭৩] মৃদু প্রহারের যে অনুমতি এখানে দেওয়া হয়েছে, তার লক্ষ্য হল সএীর আনুগত্য অর্জন যা পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানকে সফল করবার জন্য অপরিহার্য। সএীর প্রতি অবমাননা এর লক্ষ্য নয়। এ-জন্য পর্যায়ত্রুমে তিনটি পমহা বাৎলে দেওয়া হয়েছে। এগুলো একের পর এক প্রয়োগ করতে হবে এবং ফলাফল লক্ষ্য করতে হবে। প্রথমটা সফল হলে দ্বিতীয়টা নিষ্প্রোয়জন, আর দ্বিতীয়টার সাফল্যে তৃতীয়টা বর্জনীয়। আর এ-ক্ষেত্রে আল্লাহ্কে ভয় করে চলা উচিত। আল্লাহ্র দাসীদের প্রতি অত্যাচারী শাসকের মত আচরণ করার ব্যাপারে ঐ একই আয়াতে সাবধান করে দেওয়া হয়েছেঃ ""এতে যদি তারা তোমাদের বাধ্য হয়ে যায়, তবে তাদের ব্যাপারে অন্য কোন পথ তালাশ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ।'' ইমাম ফখরতদ্দীন রাযী (রঃ)-এর মতে এর তাৎপর্য হলঃ ""এ-কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া যে, অপেক্ষাকৃত হালকা শাসনে উদ্দেশ্য সিদ্ধ হলে পরে তাতেই ক্ষামত হওয়া উচিত এবং তারপরও অধিকতর কঠোর নীতি অবলম্বনে অগ্রসর হওয়া কিছুতেই জায়েয নয়।'' [উদ্ধৃত- পরিবার ও পারিবারিক জীবন। পৃ-১৭৮] এখানে আল্লাহ্ ইঙ্গিত করছেন, সএীর উপরে কর্তৃত্ব দেবার কারণে যদি তুমি তাদের সাথে নির্দয় আচরণ কর, তাহলে একথাও ভুলে যেও না যে, আল্লাহ্ তোমার উপর অসীম ক্ষমতা রাখেন এবং তিনি তোমার প্রতি নাখোশ হলে তোমার চরম সর্বনাশ।
বহু-বিবাহ সংত্রুামত অভিযোগের পর্যালোচনাঃ
ইহুদী-খৃস্টান ধর্মসহ কোন ধর্মই বহু-বিবাহকে নিষিদ্ধ করেনি, এমনকি সীমিতও করেনি; অথচ এ-ব্যাপারে ইসলামকেই শুধু আত্রুমণের লক্ষ্যবসতু করা হয়। বলা হয়, ইসলাম বহু-বিবাহ সমর্থনের মাধ্যমে নারীর মর্যাদাহানি করেছে। আসুন বাসতবতার দিকে দৃষ্টিপাত করি।
ইহুদী, খৃস্টান, হিন্দু সব ধর্মেই বহু-বিবাহের বিধান আছে। এ-সব ধর্মের অনুসারী কোন পুরতষ যত খুশি তত বিয়ে করতে পারে; এ-ব্যাপারে তাদের ধর্মে কোন বাধা নেই। বাধা যা আছে তা সমাজের বা রাষ্ট্রের। জে হেস্টিংস সম্পাদিত The Dictionary of the Bible এ বলা হয়েছে, ""বহুবিবাহ একটি বাসতবতা, কারণ আব্রাহাম, দাউদ, জেকব, সলোমন এ চর্চা করেছেন।'' [উদ্ধৃতঃ ডঃ জামাল বাদাবী। ইসলামের সামাজিক বিধান। পৃ-১১৯] হিন্দুদের মধ্যে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ হয় ১৯৫৪ সালে এসে। এর আগে কয়েক হাজার বছর ব্যাপী ভারতবর্ষে এই প্রথার ব্যাপক প্রচলন ছিল।
ইসলাম বহুবিবাহ প্রথার প্রচলন করেনি, বরং পূর্ব থেকে অতিপ্রচলিত এই ব্যবসহাকে সংস্কার করেছে, সীমিত করেছে। সএীর সংখ্যাকে সর্বোচ্চ চার জনে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে এবং একাধিক সএী গ্রহণকে কঠোর এক শর্তের অধীন করে দিয়েছে। আল্লাহ্ নির্দেশ দিচ্ছেন, ""যদি এরদপ আশংকা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে একটি বিয়ে কর।'' [সূত্রঃ সূরা আন্ নিসা, আয়াত-৩] মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সএীদের মধ্যে সমতা রক্ষা করার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন, ""যে ব্যত্তিুর দুইজন সএী রয়েছে, সে যদি এদের মধ্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে পূর্ণ সমতা ও ইনসাফ করতে না পারে, তবে কিয়ামৎতের ময়দানে সে এমনভাবে উঠবে যে, তার শরীরের একপার্শ্ব অবশ হয়ে থাকবে।[সূত্রঃ তিরমিযী ও আবু দাউদ শরীফ। উদ্ধৃত- তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন] অতএব দেখা যাচ্ছে, ইসলামের দৃষ্টিতে একাধিক সএী গ্রহণ কোন সুযোগ নয় বরং নিজেকে অগ্ণিপরীক্ষায় নিক্ষেপ করার শামিল। কোন ভাল মুসলিম নিতামত সখের বশে এতবড় ঝুঁকি নিতে চাইবে না। আর এ-জন্যই কোন কালে মুসলিম সমাজে একাধিক বিবাহের ব্যাপক প্রচলন ছিল না।
চিকিৎসা-বিজ্ঞান আমাদেরকে বলে, জন্মের পর থেকে শুরত করে জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে নারীর রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরতষের তুলনায় বেশি। নারীর গড় আয়ুষ্কালও পুরতষের তুলনায় বেশি। এতে করে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে নারীর সংখ্যা পুরতষকে ছাড়িয়ে যায়। তাছাড়া, নানা রকম দুর্ঘটনা যেমন আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে, উঁচু সহান থেকে পড়ে, সড়ক দুর্ঘটনায়, খনি-দুর্ঘটনায়, নির্মাণ কাজের সময় সংঘভটত দুর্ঘটনায়, আত্রুমণের শিকার হয়ে─ এরকম অনেক অস্বাভাবিক পমহায় পুরতষের মৃত্যুর হার নারীর তুলনায় অনেক বেশি। তাই দেখা যায়, পৃথিবীর সকল দেশে বিপতণীকের তুলনায় বিধবার সংখ্যা অনেক বেশি। নারীর এই সংখ্যাধিক্যের একমাত্র যৌত্তিুক সমাধান হল পুরতষকে একাধিক বিবাহের অনুমতি প্রদান।
কোন দেশে পুরতষের সংখ্যাহ্রাসের সবচেয়ে বড় কারণ হল যুদ্ধ-বিগ্রহ। আর এটা দাবী করার কোন উপায় নেই যে, বর্তমানের "সুসভ্য' মানুষ অতীতের চেয়ে কম যুদ্ধবাজ। যাহোক, কোন দেশে যুদ্ধ শুরত হলে তাতে লক্ষ লক্ষ পুরতষ নিহত হয়। ফলে পুরতষের সংখ্যা এত হ্রাস পায় যে, প্রত্যেক পুরতষের জন্য একজন সএীর বিধান বলবৎ থাকলে অনেক নারীর পক্ষে স্বামী জোটানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। তখন সমাজকে ব্যভিচার থেকে রক্ষা করবার কোন উপায় থাকে না। এ-ধরণের এক জটিল অথচ বাসতব সমস্যার সমাধান ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম বা সমাজ-ব্যবসহা দিতে পারেনি। যারা ইসলামের এই অসাধারণ বিধানটির সমালোচনা করে, সেই খৃস্টান-জগতও কখনো কখনো এই নীতি অবলম্বন করতে বাধ্য হয়েছে। উদাহরণ স্বরদপ, ১৬৫০ সালে যখন ত্রিশ বছর ব্যাপী যুদ্ধ শেষ হয়, তখন নুরেমবার্গে আইন পাশ হয় যে, প্রত্যেক পুরতষ দুজন নারীকে বিয়ে করতে পারবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিপুল সংখ্যক পুরতষ নিহত হওয়ায় নারীর সংখ্যাধিক্য সমস্যা মুকাবিলার জন্য ১৯৪৮ সালে মিউনিখে এক বিশ্বসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইসলামের বহু-বিবাহ প্রথা প্রসতাব আকারে গৃহীত হয়।[সূত্রঃ ইসলামের সামাজিক বিধান। পৃ-১১৮, ১২৫]
বহুবিবাহের সমালোচনা করার নৈতিক অধিকার পাশ্চাত্য জগতের নেই। তারা আইন করে একাধিক বিবাহ নিষিদ্ধ করেছে বটে, তবে একজন সএীর প্রতি নিষ্ঠাবান থাকতে পারেনি। কাজেই আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাবার যে সহজ সুযোগ রয়েছে, পাশ্চাত্যবাসীরা এ-সুযোগের সদ্ব্যবহার সচরাচর করে থাকে। এটা হল একের পর এক সএী পরিবর্তন। সমাজবিজ্ঞানী ডঃ রম ল্যানডাউ বলেন-
""একজন পুরতষ একই সাথে দু'জন সএী রাখতে পারে না, কিমও কেউ তাকে কয়েক বছরের মধ্যে দশজন সএী রাখতে বাধা দিতে পারে না।'' [সূত্রঃ Sex, Life and Faith: A Modern Philosophy of Sex. pp-136. Quoted in: Islam an Introduction. pp- 103 ] একজন মার্কিন সমাজ-বিজ্ঞানীর দেওয়া তথ্য এই মমতব্যের সত্যতা প্রতিপাদন করছে। যুত্তুরাষ্ট্রে ২০ লক্ষেরও বেশি লোক তিন-চার বার বিয়ে করেছে এবং এই সংখ্যা দ্রতত বৃদ্ধি পাচ্ছে।[সূত্রঃ Social Psychology: Understanding Human Interaction. Pp-344]
পশ্চিমা সমাজের আরেকটি সংকট হল, একাধিক সএী গ্রহণ তাদের দৃষ্টিতে নিন্দনীয় হলেও অসংখ্য উপপতণীতে কোন বাধা নেই। এ এক বিরাট ভন্ডামী। বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স নরডান লিখেছেন-
""আইন প্রয়োগের মাধ্যমে একক বিবাহ চালু থাকলেও সভ্য দেশগুলিতে মানুষ এক ধরণের বহুবিবাহের মধ্যে বাস করে; শত-সহস্র পুরতষের মধ্যে একজনও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ যে মৃত্যু শয্যায় শুয়ে বলবে, তার জীবনকালে একজনের বেশি নারীর সংস্পর্শে আসেনি।'' [সূত্রঃ Conventional Lies of Our Civilization. pp-301. Quoted in: Islam an Introduction. pp-106 ]
অন্য পুরতষের জীবনে শুধু সাময়িক আনন্দের সঙ্গিনী হওয়া নারীর জন্য চরম অবমাননাকর। কারো দ্বিতীয় সএী হলে নারী অমততঃ একটা ঘর পায়, মর্যাদা পায়, সমতানের বৈধ পিতৃত্ব পায়, সর্বোপরি আত্মিক প্রশামিত পায়। অথচ উপপতণী হলে তার কপালে বঞ্চনা ছাড়া কিছুই জোটে না। অবৈধ সমতান কোলে পথে পথে ঘোরাই হয় তার নিয়তি। ডঃ এ্যানি বেসামত চমৎকার বলেছেন-
""পাশ্চাত্য জগত একক-বিবাহের ভান করে, আসলে কিমও সেখানে বহুবিবাহ চালু রয়েছে তবে দায়-দায়িত্ব ছাড়া; পুরতষটা যখন ক্লামিতকর মনে করে, তখন সে রক্ষিতাকে ছুঁড়ে ফেলে আর সে ত্রুমশঃ পথের মেয়েতে পরিণত হয়। কারণ, তার ভবিষ্যত নিয়ে প্রথম প্রেমিকের কোন মাথা ব্যথা নেই। তার অবসহা তখন বহুবিবাহ-ভুত্তু পরিবারে আশ্রিত সএী বা মা-এর তুলনায় শতগুণ খারাপ হয়ে পড়ে। যখন আমরা পশ্চিমা শহরগুলির রাসতায় রাত্রিকালে হাজার হাজার দুর্দশাগ্রসত নারীকে ভিড় করতে দেখি, তখন আমাদেরকে উপলব্ধি করতেই হয় যে, ইসলামকে বহুবিবাহের জন্য নিন্দা করা পাশ্চাত্যের পক্ষে শোভা পায় না।'' [The Life and Teachings of Muhammad. pp-3. Quoted in: Islam an Introduction. pp-13]
গ) জননী হিসাবে নারীঃ
ইসলাম নারীকে জননী রদপে যে মর্যাদা দিয়েছে, তা পুরতষের জন্য ঈর্ষণীয়। আল্লাহ্ তা'লা ইরশাদ করেনঃ ""আমি মানুষকে মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে কষ্টের সঙ্গে গর্ভে ধারণ করে এবং বেদনার সঙ্গে প্রসব করে।''[সূত্রঃ সূরা আহকাফঃ১৫] মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ""নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের উপর হারাম করেছেন মাতাদের অবাধ্যতা, কন্যা সমতানদেরকে জীবমত কবর দেওয়া, দানের ব্যাপারে নিজের হাত গুটিয়ে রাখা এবং অন্যের কাছে পাওয়ার মনোবৃত্তি পোষণ করাকে।'' [সূত্রঃ আল আদাবুল মুফরাদ] রাসূলে করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ ""জান্নাত জননীর পদতলে।''[সূত্রঃ মিশকাত, আন্ নাসাঈ, বাইহাকী] এই একটি হাদীসে সমতানের কাছে মাতার গুরতত্ব পিতার তুলনায় অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। মায়ের এই তুলনামূলক শ্রেষ্ঠত্ব আরো সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে, যখন দেখি এক যুবকের প্রশেণর জবাবে মহানবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর পর তিন বার মায়ের অধিকারের কথা বলেন আর চতুর্থবার বলেন পিতার অধিকারের কথা। এই হাদীসের ব্যাখ্যায় ডাঃ জাকির নায়েক চমৎকার বলেছেনঃ ""মা পাচ্ছেন স্বর্ণপদক, মা পাচ্ছেন রৌপ্যপদক, মা পাচ্ছেন ব্রোঞ্জপদক। পিতাকে শুধু সামতবনা পুরস্কার নিয়ে সমওষ্ট থাকতে হচ্ছে।''
ইসলাম মাকে এতটা সম্মানিত করেছে যে, তার সেবাকে পাপমুত্তিুর উপায় বলে ঘোষণা করা হয়েছে। একবার এক ব্যত্তিু নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে উপসিহত হয়ে আরয করল, "ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার দ্বারা একটা জঘন্য পাপ সংঘটিত হয়ে গেছে। এখন আমার তওবার কোন ব্যবসহা আছে কি?" জবাবে নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, "তোমার মা কি এখনও জীবিত আছেন?' সে ব্যত্তিু বলল, "জ্বী না, তবে আমার খালা এখনো বেঁচে আছেন।' রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, "তবে তার সাথে সদ্ব্যবহার করবে।' [সূত্রঃ জামে আত তিরমিযী]
সমতানের জীবনে মায়ের যে অবদান, তাকে ইসলাম অসীম গুরতত্ব প্রদান করেছে। এ-গুরততব যথার্থভাবে ফুটে উঠেছে একটি হাদীসে। হযরত ইবন্ উমার (রা) একদা জনৈক ইয়ামানী যুবককে তার মাকে পিঠে নিয়ে তওয়াফরত (কা‘বাঘর প্রদক্ষিণরত) অবসহায় দেখতে পেলেন। সে তখন নিমণরদপ কবিতা আবৃত্তি করছিলঃ "আমি তার অনুগত উলটর মত। যদি তার রেকাব (পা-দানী) আমাকে আঘাত করে, তবুও নিরতদ্বেগে তা সহ্য করে যাই।' তারপর সে বলল, "আমি কি আমার প্রতিদান দিতে পেরেছি বলে আপনি মনে করেন?' তিনি বললেন, "না, তাঁর একটা দীর্ঘশ্বাসের প্রতিদানও তো হয়নি।' [সূত্রঃ আল আদাবুল মুফরাদ]
ইবন আবু আওফা (রা) বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসে আছে যে, এক যুবক মৃত্যুকালে কোন মতেই তার মুখ থেকে কৎলেমা উচ্চারণ করতে পারছিল না। কেননা তার মা তার প্রতি অসমওষ্ট ছিলেন। অতঃপর মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুপারিশে তার মা তাকে ক্ষমা করে দিলেন, আর তখনই তার মুখে কৎলেমা উচ্চারিত হল।[সূত্রঃ আল আদাবুল মুফরাদ]
বিশ্বনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিজের মায়ের সেবা করার সৌভাগ্য লাভ করেননি; তাঁর বয়স যখন মাত্র ছয় বছর তখন তাঁর মা মৃত্যুবরণ করেন। কিমও তাঁর দুধমাতার প্রতি ভত্তিু প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে তিনি অনুপম নজির সহাপন করেছেন। হযরত আবুত তুফাইল (রা) বলেন, একদা আমি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জুরানা নামক সহানে গোশ্ত বিতরণ করতে দেখতে পাই। আমি তখন ছেলে মানুষ; আমি উটের এক একটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধরে উঠাতেছিলাম। এমন সময় তাঁর কাছে জনৈকা মহিলা এলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জন্য নিজের চাদরখানি বিছিয়ে দিলেন। আমি লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম, "মহিলাটি কে?' জবাবে একজন বলে উঠল, "নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সেই মাতা যিনি তাঁকে শৈশবে দুগ্ধদান করেছেন।'[সূত্রঃ আল আদাবুল মুফরাদ]
নারীর সামাজিক মর্যাদাঃ
সমাজের বৃহত্তর পরিসরে পুরতষের যেসব অধিকার, নারীকেও ইসলাম তা প্রদান করেছে। শিক্ষাগ্রহণের অধিকার, সম্পত্তির মালিকানা লাভের অধিকার, মতামত প্রকাশের অধিকার, ভোট প্রদানের অধিকার, অর্থ উপার্জনের অধিকার─ এরকম আরো অনেক বৈধ অধিকার ইসলাম নারীকে প্রদান করেছে। তবে এ-ক্ষেত্রে দু'টি বিষয় বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার। প্রথমতঃ ইসলাম নারী-পুরতষের অবাধ মেলামেশাকে বরদাশত করে না। এর ফলে ব্যভিচার, পারিবারিক অশামিত, বিবাহ-বিচ্ছেদ, যৌনরোগ প্রভৃতি সমাজে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয়তঃ পরিবারই হল নারীর মূল কর্মক্ষেত্র। পরিবার ব্যবসহাপনাই হল তার প্রকৃত ও প্রাকৃতিক দায়িত্ব। সে আর যা-ই করতক, পারিবারিক দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালনের পরই কেবল তার সুযোগ পাবে; পরিবারকে অবহেলা করে নয়।
ক) শিক্ষালাভের অধিকারঃ
ইসলামপূর্ব এবং তার সমসাময়িক কোন সভ্যতা নারীর শিক্ষালাভের অধিকারকে স্বীকার করেনি। এপ্রসঙ্গে আমরা গ্রীক, রোমান ও ভারতীয় সভ্যতার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে পারি। ইসলাম এক্ষেত্রে চমৎকার দৃষ্টামত সহাপন করেছে। শিক্ষাগ্রহণকে নর-নারী উভয়ের জন্য বাধতামূলক বলে ঘোষণা করা হয়েছে। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দেনঃ ""বিদ্যা-শিক্ষা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য বাধ্যতামূলক।''[সূত্রঃ মিশকাতুল মাসাবীহ্]
ইসলামে নারীশিক্ষাকে এতটা গুরতত্ব প্রদান করা হয়েছে যে, অধীনসহ দাসীদেরকেও শিক্ষা প্রদানে উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ""কারো অধীনে কোন দাসী থাকলে সে যদি তাকে ভালভাবে লেখা-পড়া ও শিষ্টাচার শিখিয়ে স্বাধীন করে দেয় এবং বিয়ে করে, তবে সে দুটি প্রতিদান লাভ করবে।''
বিশ্বনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বয়ং তাঁর কর্মকান্ডের দ্বারা নারীশিক্ষার গুরতত্ব প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। ঈদের নামায শেষে তিনি ভাষণ (খুত্বা) প্রদান করতেন। কখনো যদি তাঁর মনে হত, গ্গপছনের কাতার থেকে মেয়েরা তাঁর কথা শুনতে পায়নি, তখন তিনি তাদের দিকে এগিয়ে যেতেন এবংপুনরায় তাদেরকে নসিহত করতেন।[সূত্রঃ সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিম]
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এই সংস্কার কর্মসূচীর সুফল খুব দ্রতত ফলেছিল। নারীরা জ্ঞানার্জনে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। মসজিদে নববীতে তারাও শিক্ষালাভ করতেন। এরপরও তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অনুরোধ করেন, তাদের শিক্ষার জন্য একটি দিন বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করে দেবার জন্য। তিনি এই আগ্রহী ছাত্রীদেরকে নিরাশ করেননি। সপ্তাহের একটি দিনে বিশেষভাবে নারীদেরকে শিক্ষা দিতেন তিনি।[সূত্রঃ সহীহ্ আল বুখারী]
খ) মত প্রকাশের অধিকারঃ
বাইবেলের মত কুরআন নারীকে এ কথা বলে না যে, পুরতষের জন্যই তাদের সৃষ্টি; অতএব, তাদের চুপ থাকা উচিত। বরং কোন ব্যাপারে নিজের মতামত প্রকাশ করা, বৈধ কোন ব্যাপারে জোরালো দাবী পেশ করা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা─ এসবের পূর্ণ অধিকার ইসলাম নারীকে প্রদান করেছে। ইসলামের সোনালী যুগের নারীরা এ অধিকার প্রয়োগ করতেও কসুর করেননি। এমনকি স্বয়ং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে একজন নারী বাদানুবাদ করেছেন─ এ-রকম ঘটনাও কুরআন পাকে উল্লেখিত হয়েছে। একবার হযরত আউস ইবনে সামিত (রা) তাঁর সএী খাওলা (রা)-কে বললেন, ""তুমি আমার কাছে আমার মায়ের পিঠের মত অর্থাৎ হারাম।'' ইসলামপূর্ব আরবে এ-ধরণের কথা উচ্চারণ করলে সএী সত্যিই হারাম হয়ে যেত অর্থাৎ চূড়ামতভাবে তালাক হয়ে যেত। এবার খাওলা (রা) মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গেলেন ইসলাম এ ব্যাপারে কি বলে তা জানবার জন্য। তখনো এ ব্যাপারে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে কোন নির্দেশ আসেনি। ফলে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরবের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী রায় দিলেনঃ ""আমার মতে তুমি তোমার স্বামীর জন্য হারাম হয়ে গেছ।'' খাওলা (রা) এই রায়ে খুশি হতে পারলেন না। তিনি বললেন, ""আমি আমার যৌবন তার কাছে নিঃশেষ করেছি। এখন বার্ধক্যে সে আমার সাথে এই ব্যবহার করল! আমি কোথায় যাবো? আমার ও আমার বাচ্চাদের ভরণ-পোষণ কিরদপে হবে?'' মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুনরায় বললেন, ""আমি মনে করি, তুমি তোমার স্বামীর জন্য হারাম হয়ে গেছ।'' খাওলা (রা) বললেন, ""আমার স্বামী তো "তালাক' কথাটা উচ্চারণ করেনি। এমতাবসহায় তালাক কিরদপে হয়ে গেল?'' এরপর তিনি উচ্চতর আদালতে আপিল করার মত করে বললেন, ""আল্লাহ্, আমি তোমার দরবারে অভিযোগ পেশ করছি।'' এই পর্যায়ে আল্লাহ্ তাঁর বিধান অবতীর্ণ করলেনঃ ""যে নারী তার স্বামীর বিষয়ে আপনার সাথে বাদানুবাদ করছে এবং আল্লাহ্র কাছে অভিযোগ করছে, আল্লাহ্ তার কথা শুনেছেন. . .।''
যে খৎলিফা উমার (রা)-এর কোন কথার একবার প্রতিবাদ করতে একজন সাহসী পুরতষকেও কয়েকবার ভাবতে হত, কারণ তিনি ছিলেন মেজাজী লোক, নারী-সমাজ থেকে তাঁর কথারও প্রতিবাদ এসেছে। ঘটনাটি ছিল দেনমোহর নিয়ে। একবার মসজিদে খুৎবা দানকালে উমার (রা) লোকদেরকে নিরতৎসাহিত করছিলেন খুব বেশি দেনমোহর না ধার্য করতে। তাঁর এ-ভাষণ শুনে মহিলাদের মধ্য থেকে একজন প্রতিবাদ করে বললেন, ""আল্লাহ্ তো আমাদেরকে দিচ্ছেন, আর আপনি হারাম করে দিচ্ছেন? . . . আপনি কি শোনেননি, আল্লাহ্ তা'লা বলেছেন, "তোমরা তোমাদের একেকজন সএীকে মোহরানা দিচ্ছ বিপুল পরিমাণে?' তখন উমার (রা) বললেন, ""একজন নারী ঠিক বলতে পারল; কিমও ভুল করল একজন রাষ্ট্রনেতা।''
মুসলিম নারীর এই তেজোদীপ্ত প্রতিবাদী রদপ খুলাফায়ে রাশেদীনের পরবর্তী যুগেও লক্ষ্য করা গেছে। বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ্ বিন যুবাইর (রা)কে হত্যা করার পর হাজ্জায বিন ইউসুফ আবু বাকর (রা)-এর কন্যা আসমা (রা)-এর সাথে দেখা করে। সে বলে, ""আমি আল্লাহ্র শত্রতর সাথে যে আচরণ করেছি, সে-সম্পর্কে আপনি কি বলেন?'' আসমা (রা) নির্ভীকভাবে এই খুনীর মুখের উপর উচিত জবাব দেন। তিনি বলেন, ""আমি মনে করি, তুমি তার পার্থিব জীবন নষ্ট করেছ, আর সে তোমার পরকালীন জীবন নষ্ট করেছে।' রাসূনলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন, "সাকিফ গোত্রে একজন চরম মিথ্যাবাদী আর একজন ঘাতক রয়েছে।' মিথ্যাবাদীকে তো আমরা দেখেছি, ঘাতক হিসাবে তোকে ছাড়া আর কাউকে দেখছি না।'' এরপর অত্যাচারী হাজ্জায মাথা নীচু করে এই প্রতিবাদী নারীর সামনে থেকে চলে যায়। [সূত্রঃ সহীহ মুসলিম]
গ) রাজনৈতিক অধিকারঃ
মুমিন পুরতষ ও নারীদের প্রতি আল্লাহ্র নির্দেশ হল, কল্যাণকর সকল কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করবে এবং অন্যায় কাজের বিরোধিতাও তারা সম্মিলিতভাবে করবে। ইসলামের সোনালী যুগের ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি, মুসলিম নারীরা রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও এ-দায়িত্ব পালন করেছেন। এক্ষেত্রে মু'মিনদের মাতা আয়িশা (রা)-এর ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি হযরত উসমান (রা)-এর ভখলাফাতকালে তাঁর অনেক পদক্ষেপের সমালোচনা করতেন। হযরত আলী (রা)-এর বিরতদ্ধে যুদ্ধ কার্যক্রমে অংশ নেন।
ইসলামে যে বাইয়াতের ব্যবসহা, তার পরিধি ব্যাপক; রাজনীতিও এর বাইরে নয়। বাইয়াত অর্থ ইসলামী নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যের শপথ। এটি আধুনিক কালের ভোটাধিকার প্রয়োগের সাথে তুলনীয়। এ-কালে নিজের পছন্দের নেতাকে ভোট দেবার মাধ্যমে সমর্থন জানানো হয়। সে-যুগে এই ব্যবসহা ছিল না। তখন বাইয়াত করে সমর্থন জানানো হত; আর বাইয়াত না করলে বুঝা যেত, সমর্থন নেই। বাইয়াতকে শুধু আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে আনুগত্য ভাববার কোন সুযোগ ইসলামে নেই। ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন-ব্যবসহা; রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষানীতি, যুদ্ধনীতি, সন্ধিনীতি─ সব বিষয়েই ইসলামের দিক-নির্দেশনা রয়েছে। আনুগত্যের শপথ তথা বাইয়াতও পূর্ণাঙ্গ। যাহোক, কুরআন সুন্নাহ্ থেকে আমরা জানতে পারি, বিশ্বনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যের শপথ বা বাইয়াত গ্রহণ (যা ছিল সেই সময়ের ভোট গ্রহণ) করেছেন। নারীরাও তাঁর নিকট বাইয়াত করতেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় ভহজরাত করার আগে আকাবা নামক সহানে কিছু মদীনাবাসীর নিকট থেকে আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেছিলেন। সে-সময় কিছু নারীও তাঁর নিকট বাইয়াত করেছিলেন। এরপর কুরআনে আমরা হুদায়বিয়ার সন্ধির সময়ে সংঘটিত বাইয়াতের উল্লেখ পাই। এখানেও নারীদের আনুগত্যের শপথের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।[সূত্রঃ আল কুরআন- সূরা মুমতাহিনাঃ১৬] ""হাদীস থেকে প্রমাণিত আছে যে, এই শপথ কেবল হুদায়বিয়ার ঘটনার পরেই নয়, বরং বারবার হয়েছে। এমনকি মক্কা বিজয়ের দিনও রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরতষদের কাছ থেকে শপথ গ্রহণ সমাপ্ত করে সাফা পর্বতের উপর নারীদের কাছ থেকে শপথ গ্রহণ করেন। পর্বতের পাদদেশে দাঁড়িয়ে হযরত উমার (রা) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাক্যাবলী নিচে সমবেত মহিলাদের কাছে পৌঁছে দিতেন।'' [সূত্রঃ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন। ৮ম খন্ড। পৃ-৪১৭] অতএব, আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইসলাম নারীকে ভোটাধিকার দান করেছে। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওফাতের পর খালীফা নির্বাচনকালে মহিলাদেরও মতামত নেওয়া হয়েছে।
নারীর নেতৃত্ব সম্পর্কিত অভিযোগের পর্যালোচনাঃ
নারীর রাজনৈতিক অধিকার প্রসঙ্গে বলা হয়, ইসলাম নারীকে রাষ্ট্রপ্রধান হবার অনুমতি প্রদান করেনি। এর কারণ সমূহ এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।
ইসলামী রাষ্ট্রের নেতৃত্ব কোন লোভনীয় ব্যাপার নয় যেখানে আয়েশে কর্তৃত্বের স্বাদ নেওয়া যাবে এবং অন্যদের আনুগত্য উপভোগ করা যাবে। বরং এটি দায়িত্বের দারতণ ভারী এক বোঝা। তাই তো দেখা যায়, খৎলিফা উমার (রা) দারতণ দুর্ভাবনার সাথে বলেছেনঃ ""ফোরাতের তীরে একটা কুকুরও যদি অনাহারে মারা যায়, সে-জন্যও উমৎরকে (শেষ বিচারে) পাকড়াও করা হবে।'' এই উপলব্ধি থেকেই খৎলিফাগণ গভীর রাতে জনগলণর খোঁজ-খবর নিয়ে বেড়াতেন, দুঃখীদের দুঃখ ঘোচাতে চেষ্টা করতেন। ইসলামী শাসকরা ছিলেন মূলতঃ জনগণের সেবক। আপন পরিবার ব্যবসহাপনার পর (আগেই বলা হয়েছে, এটিই নারীর প্রকৃত দায়িত্ব) নারীর পক্ষে ঐ রকম নিষ্ঠার সাথে জনগণের খেদমত করা সম্ভব নয়।
একজন রাষ্ট্রনেতাকে সকল পর্যায়ের মানুষের সাথে অবাধে মেলা-মেশা করতে হয়। তাকে সভা-সমাবেশ করতে হয়, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে সম্মেলন করতে হয়, মমএণাপরিষদের সাথে বৈঠক করতে হয়, সাংবাদিক সম্মেলন করতে হয়, দেশের এপ্রামত থেকে ওপ্রামত ছুটে বেড়াতে হয়, আমতজ-বতিক সম্মেলনে যোগ দিতে হয়, এমনকি রতদ্ধদ্বার বৈঠকও করতে হয়। ইসলাম নারী-পুরতষের এরকম অবাধ মেলামেশা বরদাশত করে না (পর্দা বিষয়ক অধ্যায়ে এর কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে)। আর যার সাথে বিবাহ করা বৈধ, তার সাথে রতদ্ধদ্বার বৈঠক তো ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
চিকিৎসা-বিজ্ঞান আমাদেরকে বলে, নারীর মাসিক ঋতুস্রাবের সময় তার শরীর ও মনে নেক পরিবর্তন সাধিত হয়। মানসিকভাবে সে তখন স্বাভাবিক থাকে না। ""ঋতুস্রাবের আগের লক্ষণগুলো অনেক নারীকে তাদের স্রাব শুরত হবার ৩-১০ দিন আগে থেকে প্রভাবিত করে। অসুসহতার এই লক্ষণগুলো বিভিন্ন রকম যার মধ্যে আছে উৎকণ্ঠা, বিমর্ষতা, আকস্মিক মেজাজ পরিবর্তন, সহজেই কান্না পাওয়া, রাগ বা বিরত্তিুবোধ, মাথাব্যথা, শরীর ফুলে যাওয়া, সতনে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্ষুধা বৃদ্ধি এবং ক্লামিত।'' [The Worldbook Encyclopedia. আরো দেখুন- The Grolier Encyclopedia] নারীর এই ৫/৬ দিনের অসুসহতা প্রতি মাসে চলতে থাকে তার মধ্য বয়স পর্যমত। এরপর ৪৫-৫০ বছর বয়সে ঋতুস্রাব একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এটাকে বলে মেনোপজ। এ সময়েও শুরত হয় বেশ কিছু শারীংরক ও মানসিক পরিবর্তন। ""ঋতুস্রাব সহায়ীভাবে বন্ধ হবার মনসতাত্তিবক লক্ষণগুলো হল উৎকণ্ঠা, বিমর্ষতা, রতক্ষ মেজাজ, কর্মস্পৃহা কমে যাওয়া, মনোযোগে ঘাটতি এবং দুশ্চিমতা।''[The Worldbook Encyclopedia. আরো দেখুন-The Grolier Encyclopedia] নারী রাষ্ট্র-প্রধান বা সরকার প্রধান হলেও প্রকৃতি তাকে ঋতুস্রাব বা সহায়ী ঋতুবিরতি জনিত অসুসহতা থেকে নিষ্কৃতি দেবে না। এ ধরণের মনসতাত্তিবক সংকটকালে তার গৃহীত কোন সিদ্ধামত দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
বিষয়টি যেহেতু ইসলামী রাষ্ট্র নিয়ে, সেহেতু সামগ্রিকভাবে ইসলামী শাসকের প্রকৃতি এখানে বিবেচ্য। ইসলামী রাষ্ট্রের শাসক শুধুই রাষ্ট্র-প্রধান হবেন না, তিনি দেশের প্রধান ইমাম এবং সামরিক প্রধান। জাতীয় মসজিদে জুম্মার নামায এবং জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামালয তাকেই ইমামতি করতে হবে। ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, নারীর পক্ষে পুরতষের সামনে থেকে রতকু-সিজদা করা শালীনতার পরিপমহী এবং ইবাদতে পুরতষের মনযোগ নষ্ট করতে সহায়ক। তাছাড়া, নারীর সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হওয়াটা প্রকৃতির দাবীকে অগ্রাহ্য করার শামিল। তাইতো দেখা যায়, পাশ্চাত্যের কোন দেশেও নারীকে আজ পর্যমত এই দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
নারীর মাতৃত্ব এক অনিবার্য বাসতবতা। একজন নারী যখন গর্ভবতী হন, তখন দীর্ঘ সময় তার পূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এরপর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমতান প্রসব। ইসলাম বলে, মাতৃদুগ্ধ হল সমতানের অধিকার। এই অধিকার থেকে শিশুকে বঞ্চিত করার এখতিয়ার কৎরো নেই। এরপর আসে সদাচার ও সততা শিক্ষাদানের মাধ্যমে সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব। অতএব, নারীর পক্ষে মা ও রাষ্ট্র-প্রধান উভয় দায়িত্ব যথাযথভাবে আঞ্জাম দেওয়া অসম্ভব ব্যাপার। পক্ষামতরে, পুরতষের পক্ষে পিতা ও দেশনেতার দায়িত্ব একই সাথে পালন করা তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ।
নারীর অর্থনৈতিক অধিকারঃ
ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি, নারীকে কখনো সম্পত্তির মালিক হবার অধিকার দেওয়া হয়নি; বরং তাকে অসহাবর সম্পত্তির মত ব্যবহার করা হয়েছে। গ্রীক, রোমান ও ভারতীয় সভ্যতায় তাদেরকে বিত্রুয় করা হত; আরবে অন্যন্য সম্পত্তির মত সৎমায়েদেরকে নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেওয়া হত। মাত্র বিংশ শতাব্দীতে এসে ইউরোপীয় নারী উত্তরাধিকার, সম্পদের মালিকানা, হসতামতর─ প্রভৃতির অধিকার লাভ করে। অথচ আরো ১৩শ' বছর আগে ইসলাম নারীকে এই অধিকার প্রদান করেছিল।
ক) উপার্জন ও সম্পদের মালিকানাঃ
আল্লাহ ঘোষণা করেনঃ ""পুরতষ যা অর্জন করে, সেটা তার অংশ এবং নারী যা অর্জন করে, সেটা তার অংশ।''[সূত্রঃ আল কুরআন- ৪ঃ৩২] দেখা যাচ্ছে, নারীর উপার্জিত সম্পদ একামতই তার। সে-সম্পদ ভোগ-দখল বা হসতামতর করার অধিকার তার স্বামী, পিতা, ভাই কিংবা আর কারো নেই। নারী যে উপার্জন করতে পারে, সে-ইঙ্গিতও ঐ আয়াতে দেওয়া হয়েছে। হাদীস শৎস্ত্র পাঠে আমরা জানতে পারি, ইসলামের সোনালী যুগে কিছু নারী ব্যবসায়-বাণিজ্য, কুংটরশিল্প এবং কৃষিকাজের মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করেছেন। তবে তারা তাদের প্রকৃত এবং প্রাকৃতিক কাজ তথা সমতান প্রতিপালন ও পরিবার ব্যবসহাপনাকে অবহেলা করে এ-সব করেননি।
খ) দেনমোহরঃ
বিয়ের সময় বর তার নববধুকে নগদ অর্থ বা সম্পত্তি প্রদান করে। একেই বলে দেনমোহর। এটি দয়ার দান নয়, বরং স্ত্রীর অধিকার যা প্রদান করতে স্বয়ং আল্লাহ স্বামীদের নির্দেশ প্রদান করেছেন। তাই দেনমোহর প্রদান করা স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক। এটি প্রদান না করলে বিয়ে বৈধ হয় না। আল্লাহ তা’লা নির্দেশ দেন-
‘‘স্ত্রীদের প্রাপ্য মোহরানা তাদেরকে প্রদান কর আন্তরিক খুশির সাথে এবং তাদের অধিকার মনে করে।’’ [সূত্রঃআল কুরআন - ৪ ী ৪ ]
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন-‘‘ষয লোক কোন মেয়েকে কম বেশি পরিমাণের মোহরানা দেবার ওয়াদায় বিয়ে করে অথচ তার মনে স্ত্রীর সে হক আদায় করবার ইচ্ছা থাকে না, সে কিয়ামাতের দিন আল্লাহর সম্মুখে ব্যভিচারী রূপে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।’’
দেনমোহরের পরিমাণ নিতান্ত তুচ্ছ হওয়া উচিত নয়। বরের আর্থিক অবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে আকর্ষণীয় পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা উচিত। স্বয়ং আল্লাহ বেশি মোহর প্রদানকে উৎসাহিত করে বলেছেন- ‘ষতামরা তোমাদের এক এক স্ত্রীকে মোহরানা দিচ্ছ বিপুল পরিমাণে’ [সূত্রঃ আল কুরআন-৪ঃ২০]
গ) সম্পত্তির উত্তরাধিকারঃ
কোন নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুর পর পুরতষের মত নারীও উত্তরাধিারসূত্রে সহাবর এবং অসহাবর সম্পত্তি লাভ করবে। আল কুরআনে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ্ ঘোষণা করেছেনঃ ""পুরতষদের অধিকার রয়েছে সে-সম্পদে যা রেখে গেছেন মাতা-পিতা এবং নিকটাত্মীয়গণ। নারীদেরও অধিকার রয়েছে সে সম্পদে যা রেখে যান মাতা-পিতা এবং নিকটাত্মীয়গণ। এ সম্পদ অল্প হোক বা বেশি। অংশ নির্ধারিত রয়েছে।''[সূত্রঃ সূরা আন্ নিসাঃ রতকু ১১] এই অংশ ঠিকমত হসতামতর করার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ""আমি নির্দিষ্টভাবে তোমাদেরকে দুই দুর্বলের সম্পত্তি থেকে সতর্ক করে দিচ্ছি। এদের একজন হল নারী আর অপরজন ইয়াতিম।''[ইবনে কাসীর। প্রথম খন্ড। পৃ-৪৫৬]
নারীর উত্তরাধিকার সংত্রুামত অভিযোগের পর্যালোচনাঃ
বলা হয়ে থাকে, ইসলামে নারীকে পুরতষের সমান মর্যাদা দেওয়া হয়েছে; উত্তরাধিকারের নীতি কি এই দাবীকে অসার প্রমান করে না? কন্যাকে পুত্রের অর্ধেক সম্পত্তি দেওয়া কি সুস্পষ্ট বৈষম্য নয়? এই তথাকথিত বৈষম্যের কারণ এখানে উল্লেখ করা হলঃ
আপাতদৃষ্টিতে কন্যার তুলনায় পুত্রের দ্বিগুণ উত্তরাধিকার লাভের বিষয়টিকে আপত্তিকর মনে হচ্ছে বটে। তবে ইসলাম নারী-পুরতষের উপর যেসব দায়িত্ব অর্পণ করেছে, সেগুলি বিবেচনায় রাখলে এই ব্যবসহাকে সুবিচার এবং সুবিবেচনাপ্রসূত বলে স্বীকার করতেই হবে। প্রথমেই একটি বিষয় বুঝে নেওয়া দরকার। তা হল, দায়িত্বের প্রকৃতি অনুসারে সুযোগ-সুবিধা প্রদান করাই ইনসাফের দাবী। প্রতিটি দেশের গণকর্মচারীদেরকে ভিন্ন ভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয় তাদের কাজের প্রকৃতির দিকে লক্ষ্য রেখে। পার্বত্য অঞ্চলে কর্মরত ব্যত্তিুদের বিশেষ ভাতা প্রদান করা হয়, ঝুঁকিবহুল পেশায় যারা নিয়োজিত তাদেরকে ঝুঁকি-ভাতা দেওয়া হয়, বড় বড় নগরীতে কর্মরত লোকদেরকে তুলনামূলকভাবে বেশি বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়- এসব সুযোগ মর্যাদার মাপকাঠি নয়, বরং প্রয়োজন অনুসারে সুযোগের ভিন্নতা সৃষ্টির বাসতব নমুনা।
তেমনিভাবে, ইসলাম নারী-পুরতষকে পৃথক পৃথক দায়িত্ব প্রদান করেছে আর এই পার্থক্যকে বিবেচনায় রেখে উপায়-উপকরণের ভিন্নতা এনেছে। যাবতীয় অর্থনৈতিক দায়-দায়িত্ব ইসলাম অর্পন করেছে পুরুষের উপর। মাতা-পিতা, সএী-সমতানাদির খাওয়া-পরার ব্যবস্থা গ্রহণ, বাসগৃহ নির্মাণ বা মেরামত, শিক্ষা খাতে ব্যয়, চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন, পরিজনদের উপর ধার্যকৃত ফিৎরা প্রদান, নবজাতকের আকিকা প্রদান, ধর্মীয় বা সামাজিক উৎসবের ব্যয় নির্বাহ, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ব্যয়ভার বহন─ সকল দায়িত্ব ইসলাম অর্পণ করেছে পুরুষের উপর। এ হল দারুণ ব্যয়বহুল একটি দায়িত্বের বোঝা ।
নারীর উপর ইসলাম কোন আর্থিক দায়িত্ব অর্পণ করেনি। নিজের পিতা-মাতা, স্বামী-সমতানের দেখাশোনা, খোর-পোষের কোন দায়িত্ব ইসলাম নারীকে দেয়নি। সএীর যত সম্পদই থাক, সংসার চালানোর জন্য স্বামী তা দাবী করতে পারে না। এ সম্পদ একামতই তার। তার বিনাঅনুমতিতে এর এক কপর্দকও ব্যবহার করার অধিকার স্বামীর নেই। পক্ষান্তরে, স্বামী যদি স্ত্রীর ভরণ-পোষণ করতে কোন প্রকার কার্পণ্য করে, তবে স্বামীর অনুমতি ছাড়াই স্ত্রী নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে নিতে পারে।
অতএব দেখা যাচ্ছে, নারী উত্তরাধিকারসূত্রে পুরুষের অর্ধেক সম্পত্তি পেলেও তা অটুট থাকছে। পক্ষান্তরে, পুরুষের সম্পত্তি থেকে ব্যয়িত হচ্ছে নানা খাতে। এখন প্রশণ, যার উপর যাবতীয় আর্থিক দায়িত্ব চাপানো হল, আর যাকে তা দেওয়া হল না, তাদেরকে সমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়া কি সুবিচার হতে পারে?
ন্যায়বিচার লাভের অধিকারঃ
ইসলামের দৃষ্টিতে যেটি ভাল কাজ, তা নর-নারী উভয়ের জন্য ভাল; যা মন্দ, তা-ও উভয়ের জন্যই। কুরআন-সুন্নাহ্য় নারী-পুরতষ উভয়কে যেমন একই রকম পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া, তেমনি পাপকর্মের শাসিততেও কোন বৈষম্য নেই। যেমন, আল্লাহ্ নির্দেশ দিচ্ছেনঃ ""চোর পুরতষ হোক আর নারী হোক, তার হাত কেটে দাও।'' [সূত্রঃ সূরা আল মায়িদাঃ ৩৮]
ব্যৎবিলনীয়, মিশরীয়, গ্রীক, রোমান, ভারতীয়- সব সভ্যতায় আমরা দেখেছি, নারীর ব্যভিচার ছিল চরম শাসিতযোগ্য অপরাধ। অথচ পুরতষের জন্য এটা কোন অপরাধই ছিল না। ইসলাম এ-ক্ষেত্রে পূর্ণ সমতা বিধান করেছে। আল্লাহ্ নির্দেশ দিচ্ছেনঃ ""ব্যভিচারিনী ও ব্যভিচারী উভয়কে একশ কষাঘাত করবে।'' [সূত্রঃ সূরা আন্ নূরঃ আয়াত-২] বিবাহিত পুরতষ ব্যভিচার করলে তার শাসিত হল পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা, বিবাহিতা নারীর শাসিতও তাই।
নারীর সম্মানকে ইসলাম এতটা মূল্যবান মনে করে যে, তার প্রতি কোন প্রকার অন্যায় আঘাত বরদাশত করে না। কেউ যদি কোন সচ্চরিত্রা নারীর উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে, তবে তাকে কঠোর শাসিত প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ্ ঘোষণা করছেনঃ ""যারা কোন সতী-সাধ্বী নারীর উপর অপবাদ আরোপ করে, অতঃপর সপক্ষে চারজন সাক্ষী উপসিহত না করে, তবে তাদেরকে আশিটা কষাঘাত করবে, আর কখনো তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না।''[সূত্রঃ সূরা আন্ নূরঃ ৪]
কোন স্বামী যদি তার সএীর প্রতি ব্যভিচারের অভিযোগ উথুাপন করে, সে-ক্ষেত্রে বাইবেল নারীকে অগ্ণিপরীক্ষার মত কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছে; কুরআন দিয়েছে খুবই যুত্তিুসঙ্গত এক বিধান। বাইবেল স্বামীর অভিযোগ সত্য ধরে নিয়ে অগ্রসর হয়। নারীর উপরে দায়িত্ব পড়ে নিজের সতীত্ব প্রমাণ করার। স্বীকারোত্তিু আদায়ের জন্য ধর্মযাজক তাকে ময়লা, দুর্গন্ধযুত্তু, তিত্তু পানি পান করাতে থাকবেন যতক্ষণ না তার পেট ফুলে যায়। কুরআন শুধু স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে সএীকে দোষী সাবূস্ত করে না। বরং প্রথমে স্বামীকে নির্দেশ দেয় তার অভিযোগের সপক্ষে আরো তিনজন সাক্ষী হাজির করতে। এটা করতে যদি সে অপারগ হয়, তবে স্বামী-সএী উভয়কে লেয়ান করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এটা হল, নিজের উপর আল্লাহ্র অভিশাপ ডেকে আনা। প্রথমে স্বামী চারবার আল্লাহ্র নামে কসম করে বলবে যে, তার অভিযোগ সত্য। পঞ্চমবার বলবে, তার দাবী মিথ্যা হলে তার উপরে যেন আল্লাহ্র অভিশাপ নেমে আসে। সএীও চারবার আল্লাহ্কে সাক্ষী রেখে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবী করবে। পঞ্চমবার সে একই ভাবে বলবে, তার দাবী যদি মিথ্যা হয়, তাহলে যেন তার উপরে আল্লাহ্র অভিশাপ নেমে আসে। এরপর সএীকে নির্দোষ ঘোষণা করা হবে। তাদের মধ্যে প্রকৃত দোষী ব্যত্তিুকে আল্লাহ্ ইহকালে অথবা পরকালে তাঁর ইচ্ছামত শাসিত দেবেন। তবে বিচারক তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেবেন।
নারীর সাক্ষ্য সম্পর্কিত অভিযোগের পর্যালোচনাঃ
এই পর্যায়ে একটা অভিযোগ উথুাপন করা হয়, তা হল- আইনের দৃষ্টিতে যদি নারী-পুরতষ সমান হয়, তবে দু'জন নারীর সাক্ষ্য কেন একজন পুরতষের সাক্ষ্যের সমান? এখানে সম্ভাব্য কারণগুলি তুলে ধরছি।
আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সাক্ষ্যপ্রদান করাটা মর্যাদার মাপকাঠি নয়। বরং জেরার সময় উকিল সাহেবরা অনেক কটু কথা, মিথ্যাচারের অভিযোগ, ব্যত্তিুত্বের দুর্বল দিক, অপ্রিয় অতীত ইত্যাদি টেনে আনেন। এতে বরং সম্মানীয় ব্যত্তিুরা অপমাণিত বোধ করে থাকেন, জনসমক্ষে তাদের মাথা হেট হয়ে যায়। তাই আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন কোন লোকই কাঠগড়ায় গিয়ে দাঁড়াতে পছন্দ করবেন না।
আর্থিক লেনদেন, চুত্তিু ইত্যাদির সাক্ষ্য প্রদানের ক্ষেত্রে দু'জন নারীর সাক্ষ্যকে একজন পুরতষের সমান বলে কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর কারণ সম্ভবতঃ এই যে, ইসলামি সমাজে অর্থনৈতিক দায়-দায়িত্ব পুরতষের উপরে ন্যসত করা হয়েছে। নারীকে পরিবার ব্যবসহাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং অর্থনৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অতএব, ইসলামী সমাজে অর্থসংত্রুামত ব্যাপারগুলি পুরতষের কিছুটা বেশি বুঝা স্বাভাবিক। বিশ্বখ্যাত ইসলাম প্রচারক ডাঃ জাকির নায়েক এ-প্রসঙ্গে সুন্দর এক উদাহরণ দিয়ে থাকেন। ধরা যাক, কোন রোগীর অপারেশনের জন্য দু'জন দক্ষ সার্জনের পরামর্শ প্রয়োজন। যদি দক্ষ সার্জন পাওয়া যায় একজন, তাহলে অপরজনের বিকল্প হিসাবে দু'জন সাধারণ এম,বি,বি,এস, ডিগ্রীধারী ডাত্তুারের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পরে। তেমনিভাবে, আর্থিক লেন-দেনের ব্যাপারে বাসতব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দু'জন পুরতষ সাক্ষী কাম্য। তাদের কোন একজনের বিকল্প হিসাবে দু'জন নারীর সাক্ষ্য গ্রহণ করাটা মোটেই অযৌত্তিুক নয়।
সাক্ষী সম্পর্কে কুরআনে সাত জায়গায় কথা বলা হয়েছে। আর্থিক লেনদেন বিষয়ক দু'টি আয়াত ছাড়া অন্য পাঁচটিতে বলা হয়নি সাক্ষী পুরতষ হবে কি নারী। এ-থেকে অধিকাংশ ধর্মতত্তববিদ্ সিদ্ধামত নিয়েছেন যে, অর্থসংত্রুামত ব্যাপার ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে একজন নারীর সাক্ষ্য একজন পুরতষের সাক্ষ্যের সমান। অনেকে আবার সূরা সূরা আল বাকারার ২৮২ নম্বর আয়াতকে মূলনীতি হিসাবে গ্রহণ করে দাবী করেন, সবক্ষেত্রেই দু'জন নারীর সাক্ষ্য একজন পুরতষের সাক্ষ্যের সমান। কিমও কুরআনের অন্য একটি আয়াত তাঁদের এই দাবীর অসারতা প্রমান করছে। সূরা আন্ নূর এর ৬ষ্ঠ আয়াতে বলা হচ্ছেঃ ""যদি স্বামী অথবা সএী একে অন্যের বিরতদ্ধে অভিযোগ করতে চায় এবং কোন সাক্ষী না পায়, তবে তাদের একক সাক্ষ্যই যথেষ্ট হবে।'' এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, একজন নারীর সাক্ষ্য একজন পুরতষের সাক্ষ্যের সমান। বিশ্বনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন অনেক বিচারকার্য সমাধা করেছেন, যেখানে তিনি শপথের ভিত্তিতে মাত্র একজন পুরতষ বা একজন নারীর সাক্ষ্য গ্রহণ করে রায় দিয়েছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে নারীই কেবল সাক্ষ্য দিতে পারে; পুরতষের সাক্ষ্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। নারীর যেসব বিষয় পর-পুরতষের সামনে প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে, সেসব ব্যাপারে আদালতে সাক্ষ্য কেবল নারীই দিতে পারে; এক্ষেত্রে পুরতষের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়।
পর্দা সংত্রুামত অভিযোগের পর্যালোচনাঃ
অনেকে মনে করেন, ইসলামের পর্দা-ব্যবসহা নারীর অমর্যাদার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এমনটি মনে করার মূল কারণ হল পর্দা সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা না থাকা। এরা মনে করেন, পর্দা শুধু নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অথচ পুরতষও পর্দার আওতার বাইরে নয়। বরং নারীর আগে পুরতষকেই পর্দা পালনের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আল কুরআনের সূরা আন্ নূর-এ প্রথমে পুরতষকে বলা হয়েছে দৃষ্টি নিয়মএণ করতে এবং ব্যভিচার থেকে বিরত থাকতে (দ্রঃ আয়াত-৩০), এরপর নারীকে দেওয়া হয়েছে এই একই নির্দেশ (দ্রঃ আয়াত-৩১)। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরতষদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, কোন নারীর প্রতি সহসা দৃষ্টি পড়লে দ্বিতীয়বার দৃষ্টি নিক্ষেপ না করতে। [সূত্রঃ ংমশকাত শরীফ। ৬ষ্ঠ খন্ড। হাদীস নং-২৯৭৬] অনুমতি না নিয়ে কারো বাড়িতে বা ঘরে প্রবেশ করতে কিংবা উঁকি দিতে পুরতষকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। [সূত্রঃ আল-আদাবুল মুফরাদ] এমনকি বিশ্রামের সময়, যখন পোশাক সংযত থাকে না, অনুমতি না নিয়ে নিজের মায়ের ঘরে প্রবেশ করাও পুরতষের জন্য জায়েয নয়। [সূত্রঃ আল-আদাবুল মুফরাদ] বিবাহে বাধা নেই এমন কোন নারীর সাথে নির্জনে সাক্ষাত করতে পুরতষকে নিষেধ করা হয়েছে। [সূত্রঃ সহীহ আল বুখারী, নং-৪৮৫৬] এসব হল পর্দার আচরণগত দিক। পোশাকী পর্দা থেকেও পুরতষকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। নাভি থেকে হাঁটু পর্যমত আবৃত রাখা পুরতষের জন্য ফরজ। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরতষকে তার উরত অন্য কোন পুরতষের সামনেও প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন। [সূত্রঃ ংমশকাত শরীফ। ৬ষ্ঠ খন্ড। হাদীস নং-২৯৮০] সঙ্গত কারণেই পোশাকী পর্দায় নারীর প্রতি বেশি বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। নারীর গোটা দেহেই রয়েছে দুর্বার আকর্ষণী শত্তিু। তাছাড়া, সে শারীংরকভাবে পুরতষের তুলনায় দুর্বল। অতএব, তার সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনও বেশি।
অনেকে মনে করেন, নারীকে চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দী করে রাখাই পর্দার উদ্দেশ্য। বলা বাহুল্য, এটাও বহুল প্রচলিত এক ভুল ধারণা। নারী ধর্মীয় প্রয়োজনে মসজিদে, ঈদগাহে, এমনকি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে হজ্জ বা উমরা করতে যেতে পারে। সামাজিক প্রয়োজনে বিবাহে, রোগীর সেবায় বা শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারে। নারী অর্থনৈতিক কর্মকান্ডও পরিচালনা করতে পারে। জাতীয় প্রয়োজনে যুদ্ধযাত্রার সুযোগও ইসলাম তাকে প্রদান করেছে। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং খুলাফায়ে রাশেদীনের শাসনামলে নারীরা এ সকল সুযোগ ভোগ করেছেন। এক্ষেত্রে একটি বিষয় তাকে সর্বদা মনে রাখতে হবে, পর-পুরতষের সান্নিধ্য তার জন্য বর্জনীয়। ইতোপূর্বে আমরা লক্ষ্য করেছি, পুরতষকেও নারীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইসলামে যেটা নিষিদ্ধ সেটা নারীর বাইরে চলাফেরা নয়, বরং নারী-পুরতষের অবাধ মেলামেশা। কারণ, এটা থেকে অসংখ্য সামাজিক সমস্যার উদ্ভব হয়। নর-নারীর অবাধ মেলামেশা থেকে ত্রুমশঃ ব্যভিচারের বিসতার ঘটে। আজ পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে এমন একজন মানুষ খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব, যে কখনো ব্যভিচার করেনি। ব্যভিচারের এই ব্যাপকতার কারণে পাশ্চাত্যে হাইস্কুলে পড়ুয়া কিশোরীরা পর্যমত গর্ভবতী হয়ে পড়ছে। এটার ব্যাপকতা বুঝাতে সমাজবিজ্ঞানীরা “teen age pregnancy epidemic” বলে থাকেন। জন্মনিরোধক সামগ্রী সরবরাহ করেও সরকার তারতণ্যে গর্ভধারণের মহামারী রোধ করতে পারছে না। এটার কারণে এক দিকে যেমন প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে গর্ভপাত তথা ভ্রদণহত্যা করা হচ্ছে, অন্য দিকে জারজ সমতানের জন্ম হচ্ছে ব্যাপক হারে। তাছাড়া, ধর্ষণ, সমকামিতাসহ নানা রকম যৌনবিকৃতি, এইডসসহ নানা রকম প্রাণঘাতী যৌনরোগ মহামারী আকার ধারণ করে। পর্দাহীনতার পথ ধরে সমাজে বিসতার ঘটে পরকীয় প্রেম, পারিবারিক দ্বন্দ, বিবাহ-বিচ্ছেদ ইত্যাদি পারিবারিক সমস্যার। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে উল্লেখিত প্রত্যেকটা সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
পর্দা নারীর জন্য অমর্যাদাকর নয়, বরং তার মর্যাদার রক্ষাকবচ। কুরআন পাকে আল্লাহ্ তা'লা নির্দেশ দিচ্ছেন-
হে নবী, তোমার সএীগণ, কন্যাগণ এবং মুমিন লোকদের নারীদেরকে বলে দাও তারা যেন নিজেদের উপরে তাদের চাদরের আঁচল ঝুলিয়ে দেয়। এটি উত্তম ব্যবসহা, যেন তাদেরকে (পবিত্রা নারী হিসাবে) চিনতে পারা যায় এবং উতণ্ঠত্তু করা না হয়। [সূত্রঃ সূরা আল আহযাব। আয়াত-৫৯]
পর্দাহীন নারীর সম্মান কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা কোন মুসলিম সমাজে বসে ধারণাও করা সম্ভব নয়। ইউরোপ-আমেরিকার একেকটা দেশে ধর্ষণের হিসাব কষা হয় দিন বা ঘণ্টায় নয়, বরং মিনিটে বা সেকেন্ডে। তাছাড়া, পর্দা-ব্যবসহা নারীর সহজলভ্য হবার পথে এক বড় অমতরায়; আর এ-কথা ব্যাখ্যা করার অবকাশ রাখে না যে, জগতে যে জিনিস যত সহজলভ্য তার গুরতত্ব বা মর্যাদা দেওয়া হয় তত কম। আরেকটা লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, পর্দাহীন নারীকে শিল্পে-সাহিত্যে, সিনেমা-নাটকে, ফ্যাশানে-বিজ্ঞাপনে যৌন-আবেদনময়ী হিসাবে উপসহাপন করা হতে থাকে। এর ফলে পুরতষের অবচেতন মনে নারীর যৌন-আকর্ষণ মুখ্য অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে। অর্থাৎ পর্দাহীন সমাজে পুরতষেরা নারীকে ভোগের সামগ্রী (sex object) ছাড়া আর কিছু ভাবতে শেখে না। এটা নারীর জন্য সম্মানজনক নয়; বরং চরম অবমাননাকর।
সারকথাঃ
সভ্যতার ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, ইসলাম ব্যতীত অপর কোন সভ্যতা নারীকে দেয়নি তার উপযুত্তু প্রাপ্য। আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতা নারীকে অনেক কিছু দিতে চেয়েছে; কিমও তার স্বভাব-প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় সংকটের শুধু মাত্রাবৃদ্ধিই হয়েছে। অন্যান্য সভ্যতা নারীকে তেমন কিছুই দিতে চায়নি। তাকে দেওয়া হয়নি জান, মাল কিংবা ইজ্জতের নিরাপত্তা। তাকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, দেওয়া হয়নি সম্পদের মালিক হবার অধিকার। ন্যায় বিচার লাভের কোন সুযোগ তাকে দেওয়া হয়নি। মত-প্রকাশের স্বাধীনতা তার জন্য ছিল অকল্পনীয়। অনেক সভ্যতায় নারীর আত্মা আছে কি-না তা নিয়েও প্রশণ তোলা হয়েছে।
ইসলাম নারীর মর্যাদা নিশ্চিত করেছে তার জন্মের সাথে সাথেই। কন্যা-সমতানের জন্মকে সৌভাগ্যসূচক বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কন্যার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পিতা-মাতাকে নিষেধ করা হয়েছে। সএী সম্পর্কে বলা হয়েছে, স্বামীর উপরে তার ততটা অধিকার রয়েছে, যতটা রয়েছে তার উপরে স্বামীর। তাছাড়া, সএীর প্রতি আচরণকে স্বামীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মানদন্ড বলে ঘোষণা করা হয়েছেঃ যে ভাল আচরণ করে সে উত্তম, আর যে দুর্ব্যবহার করে সে অধম। মাতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, তার পদতলেই জান্নাত। সমতানের সদ্ব্যবহার পাবার অধিকার মাতাকে দেওয়া হয়েছে পিতার তুলনায় তিন গুণ। এছাড়া, পাপ-পঁণ্যে পুরতষের সমান প্রতিফল নির্ধারিত রয়েছে নারীর জন্য। ইসলামী আইনে একই ধরণের অপরাধে নারী-পুরতষের সমান শাসিতর ব্যবসহা রয়েছে। নারীকে দেওয়া হয়েছে সম্পত্তির উত্তরাধিকার, উপার্জন ও সম্পদের মালিকানা লাভের অধিকার। নারীর রয়েছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ভোটাধিকার। ইসলাম নারীর শিক্ষা গ্রহণকে পুরতষের মতই বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। সর্বোপরি, ইসলাম নারীকে দিয়েছে তার স্বভাব-প্রকৃতির অনুকূল ঝুঁকি ও ঝামেলামুত্তু, আবেগঘন, শামিতময় জীবনের নিশ্চয়তা। তাইতো দেখি, ইসলাম নারীকে তেমন কোন মর্যাদা দেয়নি─ এই মর্মে ব্যাপক অপপ্রচার সত্তেবও পশ্চিমা বিশ্বে পুরতষের তুলনায় নারীর ইসলাম গ্রহণের হার অনেক বেশি। ÿ
সহায়ক গ্রমহাবলী :
ইমাম ইবনে জরীর তাবারী (রঃ)। তাফসীরে তাবারী শরীফ। ৭ম খন্ড। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।
আল্লামা ইমাদুদ্দীন ইবনে কাসীর (রঃ)। তাফসীরে ইবনে কাসীর। ২য় খন্ড। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।
আল্লামা ইমাদুদ্দীন ইবনে কাসীর (রঃ)। তাফসীরে ইবনে কাসীর। ৩য় খন্ড। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।
মুফতি মুহাম্মাদ শফী (রঃ)। তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন। ২য় খন্ড ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।
মুফতি মুহাম্মাদ শফী (রঃ)। তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন। ৮ম খন্ড ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।
ইমাম মুহাম্মাদ ইসমাঈল আল বুখারী (রঃ)। আল আদাবুল মুফরাদ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।
ইমাম আবু আবদির রহমান আন-নাসাঈ (রঃ)। সুনানু নাসাঈ শরীফ। ৪র্থ খন্ড। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।
ইমাম আবু আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাজাহ্ (রঃ)। সহীহ্ ইবনে মাজাহ্। ২য় খন্ড। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।
ইমাম ইয়াহইয়া নববী (রঃ)। রিয়াদুস সালেহীন। বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ঢাকা।
আল্লামা ইযযুদ্দিন বালীক (রঃ)। মিনহাজুস সালেহীন। ১ম খন্ড। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।
আল্লামা ইবনে কাসীর (রঃ)। আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া। ৪র্থ খন্ড। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।
সম্পাদনা পরিষদ। দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম। দ্বিতীয় সংস্করণ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।
ডঃ মুহাম্মদ ইউসূফুদ্দীন। ইসলামের অর্থনৈতিক মতাদর্শ। অনুঃ মুহাম্মাদ আব্দুল মতীন জালালাবাদী। ৩য় সংস্করণ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।]
মাওলানা আব্দুর রহীম। পরিবার ও পারিবারিক জীবন। খায়রতন প্রকাশনী, ঢাকা।
তৌরাত শরীফ (বাংলা অনুবাদ)। বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি, ঢাকা।
ইঞ্জিল শরীফ (বাংলা অনুবাদ)। বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি, ঢাকা।
শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র। নারীর পথে। ১২শ সংস্করণ। সৎসঙ্গ পাবলিশিং হাউস। ঝাড়খন্ড, ভারত।
রাহুল সাংকৃত্তায়ণ। মানব সমাজ। অনুঃ মহিদুল ইসলাম। সাহিত্য প্রকাশনালয়, ঢাকা।
দিলীপ কুমার গঙ্গোপাধ্যায়। ভারত-ইতিহাসের সন্ধানে। সাহিত্যলোক। গ্গকালকাতা, ভারত।
রতণাবলী চট্রোপাধ্যায়, গৌতম নিয়োগী (সম্পাদিত)। ভারত-ইতিহাসে নারী। পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদ। কোলকাতা, ভারত।
The World Almanac-2002
"ancient Rome." Encyclopaedia Britannica. Ultimate Reference Suite. Chicago: Encyclopaedia Britannica, 2009.
“menstruation.” “menopause.” The World Book Encyclopaedia.
“menstruation.” “menopause.” Year 2000 Grolier Multimedia Encyclopedia. Deluxe Version 12.00
“rape” The Encarta Encyclopaedia. Microsoft Corporation, U.S.A.
Jerry H. Bentley & Herbert F. Ziegler. Traditions Encounters. 2nd edition. Vol-1. McGraw-Hill Co. Newyork, U.S.A.
Dennis Sherman & Joyce Salisbury. The West in the World. McGraw-Hill Company. Newyork, U.S.A.
Judith G. Coffin, Robert C. Stacey, Robert E. Lerner & Standish Meacham. Western Civilizations. 14th edition. W.W. Norton & Company. Newyork. U.S.A.
Social Problems. Annual Edition-02/03. McGraw-Hill Company. Newyork, U.S.A.
Hilary M. Lips. A New Psychology of Women. 2nd ed. McGraw-Hill Company. Newyork. U.S.A.
Reginald Bibby, Donald Postersky. Teen Trends. Stoddart. Canada.
Robert A. Baron and Donn Byrne. Social Psychology: Understanding Human Interaction. 7th edition. Prentice Hall. U.S.A.
Abortion Statistics, England and Wales: 2006. Department of Health. U.K.

[প্রবন্ধটি ১৯/০৩/২০১০ তারিখে বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ হিসেবে উপস্থাপিত হয়]