ভূমিকা: 

২০০৫ সালের ১৮ মার্চ নিউইয়র্কের এক গীর্জায় (!) বিশেষ জুম‘আর নামাযে ড. আমিনা মুহসিন ওয়াদুদ নাম্নী এক মহিলা ইমামতি করে সারা বিশ্বে, বিশেষত মুসলিম বিশ্বে, হৈচৈ ফেলে দেন। সমগ্র বিশ্বের মুসলিম সমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। কড়া নিরাপত্তায় যে গীর্জায় জুম‘আর নামায আদায় হচ্ছিল তার বাইরেও বিক্ষোভ করেছেন মার্কিন মুসলিমগণ। পুরো বিশ্বের তাবৎ মুসলিম সমাজ এ-কর্মকে ইসলামবিরোধী কাজ বলে চিহ্নিত করেছেন। এটি এমন এক ঘটনা যার কোন পূর্বদৃষ্টান্ত নেই ইসলামের ইতিহাসে। সুতরাং এটি একটি বিদ‘আহ। তবে পশ্চিমে বসবাসরত ক্ষুদ্র একদল ইসলামী চিন্তাবিদ ড. ওয়াদুদের কর্মকান্ডকে সমর্থন করেছেন। ঐ ঘটনার পর থেকে পন্ডিত পর্যায়ে নামাযে নারীর ইমামতি নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা-পর্যালোচনা হচ্ছে।
পাশ্চাত্যে বসবাসরত মুসলিমদের মাঝে ইসলাম চর্চায় এই বৈপ্লবিক মানসিকতার উদ্ভবের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ও যৌক্তিক ধারণা পেতে হলে আমাদেরকে একটু পূর্বে যেতে হবে। পশ্চিমে খৃস্টবাদের সম্প্রসারণের পূর্বেই নারীরা চরমভাবে নিগৃহীত ছিল। মানব চিন্তার সর্বোচ্চ চূড়ায় যারা আসীন হয়েছিলেন বলে মনে করা হয় সেই পশ্চিমা দর্শনের অবিসংবাদিত পুরোধা সক্রেটিস, এরিস্টটল ও প্লেটো নারী সম্পর্কে নিম্ন ধারণা পোষণ করতেন। পশ্চিমে খৃস্টবাদের বিকাশের পরও নারীর প্রতি এই মনোভঙ্গিতে কোন পরিবর্তন আসেনি। শিল্প বিপ্লবোত্তর পশ্চিমা সমাজে নারীরা নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই শুরু করে। মুক্তচিন্তার দাবীদার কিছু দার্শনিক-চিন্তুক এর পেছনে বুদ্ধিবৃত্তিক রসদ যোগায়।
এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই, মুসলিম বিশ্বে নারীদের অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক ছিল এবং এজন্য ইসলাম দায়ী না হলেও একদল ইসলামী পন্ডিত ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নেতৃত্বের আচরণে ইসলাম বিতর্কিত হয়ে পড়ে। পশ্চিমে নারী জাগরণ দেখে পাশ্চাত্যে বসবাসরত নারী সমাজ এবং এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রাচের মুসলিম নারীকুলও নিজেদের শোচনীয় দুরবস্থার জন্য ইসলামকে দায়ী করে। এজন্য অবশ্য তাদেরকে দায়ী করা যায় না; কারণ ইসলামে নারীর অধিকার এবং স্বর্ণযুগে নারীকুল কিভাবে তা চর্চা করত তার প্রকৃত রূপ মুসলিম নারীদের সামনে অনুপস্থিত ছিল। মনুষ্যত্বের নিম্ন কাতারে অবস্থানরত নারীকুল নিজেদের মুক্তির জন্য পশ্চিমা মডেল গ্রহণ করল। পশ্চিমা মডেলের নারীমুক্তি আন্দোলন দু’টি বড় বিভ্রান্তিকর অনুসিদ্ধান্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত:
এক: পুরুষকে মুক্তির আদর্শ মাপকাঠি হিসেবে নির্ধারণ অর্থাৎ পুরুষরা যা করে তা করা ও পুরুষ যে অধিকার ভোগ করে তা করার মাঝেই নারীমুক্তি নিহিত বলে ধরে নেয়া;
দুই: নারী ও পুরুষের মাঝে প্রকৃতিগত পার্থক্য অবজ্ঞা করা।
উপর্যুক্ত অনুসিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পশ্চিমা নারীকুল নিজেদের মুক্তির জন্য তাই করতে শুরু করল যা পুরুষরা করে। লাম্পট্যপ্রিয় পুরুষ সমাজ এর পেছনে উৎসাহ জুগিয়ে গেল। নারীরা ঘর থেকে বের হল, স্কুল কলেজ, অফিস আদালত, কল-কারখানায় কাজ শুরু করল। শুধু তাই নয় তারা পুরুষের পোশাক পরিধান করে, পুরুষের ন্যায় চুল ছোট করে রাখে। তথাকথিত এই মুক্তির পেছনে ছুটতে গিয়ে পাশ্চাত্য নারী নিজেদের প্রকৃতিগত স্বাতন্ত্র ও দায়িত্ব ভুলতে শুরু করল। প্রকৃতিও প্রতিশোধ গ্রহণ করল; ভেঙ্গে ছারখার হয়ে গেল পশ্চিমা পরিবার; অগণিত মানব সন্তানের বাজারে পশ্চিমা মানুষ আজ চরম একা, উপেক্ষিত ও অবহেলিত। পুরুষকে ছোঁয়ার প্রতিযোগিতায় নারীরা সন্তান ধারণে অনাগ্রহী; পশ্চিমা পুরুষ সন্তান লাভের জন্য প্রাচ্যের দরিদ্র নারীদের গর্ভ ভাড়া নেয়।
পুরুষকে মানদন্ড বানানোর এ নেশা পাশ্চাত্যে বসবাসরত একদল মুসলিম নারীকেও পেয়ে বসে। জীবনের সর্বক্ষেত্রে পুরুষের সমান হওয়ার প্রতিযোগিতায় তারা নামাযে নারীর ইমামতির দলীল সন্ধান শুরু করে। যার ধারাবাহিকতায় ১৮ মার্চ ২০০৫-এ তারা নিউইয়র্কে নারীর ইমামতিতে জুম‘আর নামায আদায়ের আয়োজন করেন।
এ রচনার মূল আলোচ্য বিষয় হবে মিশ্র-জামা‘আতে নারীর ইমামতি; তবে প্রাসঙ্গিকতার কারণে নারীদের স্বতন্ত্র নামাযে নারীর ইমামতি নিয়েও আলোচনা করা হবে। রচনার শেষে মহিলাদের মসজিদে গমণ বিষয়ে যৎসামান্য আলোকপাত করা হবে।
নারীর ইমামতির পক্ষে বিপক্ষে যেসব যুক্তি দেয়া হয় তা নিরাসক্ত দৃষ্টিভঙ্গিতে পর্যালোচনা করা হবে। মিশ্র-লিঙ্গের নামাযে নারীর ইমামতির বিষয়টি সর্বসাম্প্রতিক বিষয় হওয়ার এর স্বপক্ষের যুক্তিগুলো প্রধানত বিভিন্ন অনলাইন প্রবন্ধ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

মহিলাদের নামাযে মহিলার ইমামতি
কেবল মহিলাদের নামাযে মহিলা ইমামতি করতে পারবে কি? সামান্য মতপার্থক্যসহ চার মাযহাবের ইমামগণ এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন; মহিলাদের নামাযে মহিলা ইমামতি করতে পারবেন, তবে তাদের ইমাম প্রথম কাতারের মাঝখানে দাঁড়াবেন। বিস্তারিত মতামত নিম্নে উল্লেখ করা হল:
এক. শাফি‘ঈ মাযহাব মতে মহিলাদের নামাযে মহিলার ইমামতি শুধু বৈধই নয়; বরং তা মুস্তাহাবও বটে। ইমাম শাফি‘ঈ এ অভিমতের সমর্থনে নিজ সনদে কিছু হাদীস উল্লেখ করেছেন। তম্মধ্যে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হচ্ছে:
قال الشافعي أخبرنا سفيان عن عمار الدهني عن امرأة من قومه يقال لها حجيرة أن أم سلمة أمتهن فقامت وسطهن.
ক...হুজাইরা বলেন, উম্ম সালামাহ (রহ.) তাদের (মহিলাদের) নামাযে ইমামতি করেছিলেন তাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে।
হাদীসটি ইবনু আবি শায়বা, আবদুর রাজ্জাক ও আল-বাইহাকীও বর্ণনা করেছেন।
روى الليث عن عطاء عن عائشة أنها صلت بنسوة العصر فقامت في وسطهن
খ.. ‘আতা (রহ), আয়িশা (রা) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি [‘আয়িশা (রা)] মহিলাদের নিয়ে ‘আসর’ নামায আদায়কালে তাদের মাঝখানে দন্ডায়মান হয়েছিলেন।
এ হাদীসটি সামান্য সংযোজনীসহ আল-বাইহাকীও বর্ণনা করেছেন:
أخبرنا عبد الله الحافظ، ثنا أبو العباس محمد بن يعقوب، ثنا أحمد بن عبد الجبار، ثنا عبد الله بن ادريس، ثنا ليث عن عطاء عن عائشة: أنها كانت تؤذن وتقيم وتؤم النساء وتقوم وسطهن.
.. .. ‘আয়িশা (রা) আযান-ইকামত দিতেন আর মহিলাদের ইমামতি করতেন তাঁদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে।
وكان علي بن الحسين يأمر جارية له تقوم بأهله في شهر رمضان وكانت عمرة تأمر المرأة أن تقوم للنساء في شهر رمضان
গ. ‘আলী ইবনুল হুসাইন (রহ) এক দাসীকে তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে রমাদানে তারাবীহ নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ‘উমরাহ (রা.) এক মহিলাকে রমাদানে মহিলাদের নিয়ে তারাবীহ নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।’
أخبرنا أبو عبد الله الحافظ، ثنا أبو العباس محمد بن يعقوب، ثنا عبد الله بن أحمد بن حنبل حدثني أبي، ثنا وكيع، ثنا سفيان عن ميسرة أبي حازم، عن رائطة الحنفية أن عائشة أمَّت نسوة في المكتوبة فأمتهن بينهن وسطا.
ঘ. .. ..রা’ইতা আল-হানাফিয়্যাহ হতে বর্ণিত, ‘আয়িশা (রা) মহিলাদের ফরয নামাযে ইমামতি করতেন তাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে।
নারীদের নামাযে মহিলার ইমামতির আইনানুগতার সমর্থনে আরো হাদীস উল্লেখ করা যায়। সংক্ষেপণের জন্য বর্জন করা হল। ফিকহ-এর ইমামগণের মাঝে আশ্-শাফি‘ঈ ছাড়াও আল-আওযা‘ঈ, আছ্-ছাওরী এবং ইসহাক মহিলাদের নামাযে মহিলাদের ইমামতি মুস্তাহাব বলে মত প্রকাশ করেছেন।
দুই. হাম্বলী মাযহাব মতে মহিলাদের নামাযে মহিলার ইমামতি বৈধ; তবে তা মুস্তাহাব নয়:
وروي عن أحمد أن ذلك غير مستحب
‘আহমাদ (ইবনু হাম্বল) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, এটি মুস্তাহাব নয়।’

তিন. হানাফী মাযহাব: অগ্রবর্তী হানাফী ইমামগণ মহিলাদের নামাযে মহিলার ইমামতিকে মকরূহ বলে গণ্য করেছেন। আল-মারগিনানী লিখেন:
ويكره للنساء أن يصلين وحدهن الجماعة، لأنها لا تخلو من ارتكاب المحرم وهو قيام الإمام وسط الصف فيكره كالعراة؛ فإن فعلن قامت الإمام وسطهن؛ لأن عائشة فعلت كذلك، وحمل فعلها الجماعة على ابتداء الإسلام، ولأن في التقدم زيادة الكشف.
‘কেবল মহিলাদের জামা‘আতে নামায আদায় করা মাকরূহ; কারণ সে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে মুক্ত নয়। আর তা (হারাম কাজ) হল: মধ্য কাতারে ইমাম দাঁড়ানো। অতএব উলঙ্গদের জামা‘আতের ন্যায় মহিলাদের জামা‘আতও মাকরূহ। যদি তারা তা করে তবে ইমাম মাঝখানে দাঁড়াবেন; কারণ ‘আয়িশা (রা) তেমনটি করেছিলেন। নামাযে তাঁর ইমামতিকে ইসলামের প্রাথমিক যুগের অনুমোদন বলে চালিয়ে দেয়া যায়। তাছাড়া মহিলারা সামনে গেলে অত্যধিক উন্মোচনের সম্ভাবনা থাকে।
ইবনু ‘আবিদীন একটু এগিয়ে বলেছেন: ويكره تحريما جماعة النساء ولو في التراويح ‘মহিলাদের জামা‘আত মাকরূহ তাহরীমী, যদিও তা হয় তারাবীহ নামাযের জামা‘আত।
আল-আতরাযী আরেকটু এগিয়ে বলেছেন, মহিলাদের জামা‘আত বিদ‘আহ।
প্রাথমিক যুগের হানাফী ‘আলিমগণের এ মন্তব্যগুলোর কড়া সমালোচনা করেছেন পরবর্তী প্রজন্মের হানাফী ‘আলিম আল-‘আইনী। তিনি ‘আয়িশা (রা) ও উম্ম সালামাহ (রা.) কর্তৃক মহিলাদের নামাযে ইমামতির হাদীস উল্লেখ করে প্রশ্ন তুলেছেন, যে কাজ ‘আয়িশা (রা) ও উম্ম সালামাহ (রা.) করেছেন তা কী করে বিদ‘আহ হয়? কাতারের মাঝখানে ইমামের দাঁড়ানো হারাম বলে যে অভিমত প্রকাশ করেছেন হিদায়া প্রণেতা, তারও সমালোচনা করেছেন আল-‘আইনী; ‘আয়িশা (রা) ও উম্ম সালামাহ (রা.) কি তবে হারাম কাজ করেছিলেন?’ ‘আয়িশা (রা.) কর্তৃক মহিলাদের জামা‘আতে ইমামতির ঘটনা ইসলামের প্রারম্ভে প্রদত্ত অনুমোদন যা পরবর্তীতে রহিত হয়ে গেছে’ এমন দাবীর শক্ত বিরোধিতা করেছেন তিনি। আল-‘আইনী বলেন:
وهذا كلام من لم يطلع في كتب القوم، وأمضى فيه لأنه عليه السلام أقام بمكة بعد النبوة ثلاث عشرة سنة كما رواه البخاري ومسلم ثم تزوج عائشة بالمدينة وبنى بها وهي تسع وبقيت عند النبي عليه السلام تسع سنين وما صلت إماما إلا بعد بلوغها، فكيف يستقيم حمله على ابتداء الإسلام؟
‘এ জাতির গ্রন্থসমূহ যারা অধ্যয়ন করেনি তারাই এ ধরণের কথা বলে; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবুওয়াতের পর তের বছর মক্কায় অবস্থান করেন-যেমন আল-বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন- তারপর মদীনায় ‘আয়িশা (রা) কে বিয়ে করেন; তাঁর সাথে বাসর করেন যখন কনের বয়স নয় বছর ছিল। ‘আয়িশা (রা.) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে নয় বছর ছিলেন, বালিগ হওয়ার আগে তিনি নিশ্চয় নামাযে ইমামতি করেননি। এখন এ দাবী কীভাবে যথার্থ হতে পারে যে তিনি ইসলামের প্রাথমিক যুগে মহিলাদের নামাযে ইমামতি করেছিলেন?
আরো অনেক হানাফী ‘আলিম মহিলাদের স্বতন্ত্র জামা‘আতের ব্যাপারে তাঁদের পুর্বসূরিদের সাথে দ্বিমত করেছেন। আল-হিদায়াহ এর ভাষ্যকার কামালুদ্দিন ইবনুল হুম্মাম মহিলাদের জামা‘আতের ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনা সমাপনান্তে জোর দিয়ে দাবী করেছেন যে, মহিলাদের স্বতন্ত্র জামা‘আত মাকরূহ হওয়ার কোন কারণ নেই। এমনকি বিগত শতাব্দীর ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হানাফী ‘আলিম আবদুল হাই লাখনৌবীও পূর্বসূরি হানাফী ‘আলিমগণের অভিমত প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ঘ. মালিকী মাযহাব: ইবনু রুশ্দ আল-হাফীদ জোর দিয়ে বলেছেন যে, মালিকী মাযহাব মতে মহিলাদের স্বতন্ত্র জামা‘আত ও তাতে মহিলার ইমামতি বৈধ নয়। কারণ তাঁদের দৃষ্টিতে ইমাম হওয়ার জন্য সাধারণ শর্ত হল ‘পুরুষ হওয়া’-মুক্তাদী যে-ই হোক না কেন। তাছাড়া মহিলাদের আযান বৈধ নয়; অতএব আযানের মাধ্যমে যেদিকে আহবান করা হয় তাও তাদের জন্য বৈধ নয়। হাসান ও সালমান ইবনু ইয়াসারও অনুরূপ অভিমত পোষণ করেছেন। অবশ্য আল-মাওয়ার্দি উল্লেখ করেছেন যে, পরবর্তী কালের মালিকী ইমামগণ নারীদের স্বতন্ত্র জামা‘আত ও তাতে মহিলার ইমামতিকে বিনা মাকরুহ বৈধ বলে মত প্রকাশ করেছেন।
* আশ্-শা‘বী, আন্-নাখঈ ও কাতাদার মতে, মহিলারা স্বতন্ত্র নফল নামাযে নারীর ইমামতিতে নামায আদায় করতে পারবেন; ফরয নামাযে নয়।
ফিকহী ধারার প্রতিষ্ঠাতাবৃন্দ অনেকে ক্ষেত্রে হাদীস সংকলন সমাপ্ত হওয়ার আগেই মতামত জ্ঞাপন করতে বাধ্য হয়েছেন পরিস্থিতির কারণে। ফলে ক্ষেত্র বিশেষে তাঁদের মতামতে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গীর অভাব পরিলক্ষিত হয় এবং তাতে অনিচ্ছাকৃত একদেশদর্শিতা পরিদৃষ্ট হয়। কোন অনুশীলন-বিষয়ে সাহাবায়ে কিরামের (রা.) ‘আমল পাওয়া গেলে এবং তাঁদের মধ্য হতে কারো বিরোধিতার কথা জানা না গেলে সে অনুশীলন নাজায়েজ হওয়া উচিত নয়।
মহিলাদের নামাযে মহিলার ইমামতি তেমন একটি বিষয়; সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, আয়িশা (রা) ও উম্ম সালামা (রা.)-এর মত সাহাবীয়াগণ মহিলাদের নামাযে প্রথম কাতারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ইমামতি করেছেন। কোন সাহাবী এ-অনুশীলনের বিরোধিতা করেছেন বলে জানা যায় না। অতএব এটি নাজায়েজ হতে পারে না।
তদুপরি মহিলাদের স্বতন্ত্র জামা‘আত সুন্নাত-নিদেনপক্ষে মুস্তাহাব-হওয়া উচিত। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
صلاة الجماعة ةفضل صلاة الفذ بسبع وعشرين درجة. ‘জামা‘আতে নামায, একাকী নামাযের চাইতে সাতাশ গুণ মর্যাদার অধিকারী।’ এ হাদীসটি ব্যাপক; এখানে কোন লিঙ্গ বিশেষকে নির্দিষ্ট করা হয়নি। সুতরাং এটা বলা যেতে পারে না, এ হাদীস শুধু পুরুষের বেলায় প্রযোজ্য। এ ধরণের দাবী করলে অসুবিধাও রয়েছে। যদি হাদীসটিকে পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট করা হয় তবে প্রশ্ন ওঠবে: সাতাশ গুণ বেশি সওয়াব লাভের অধিকার শুধু কি পুরুষেরই থাকবে? তারপর প্রশ্ন আসবে মহিলারা কীভাবে সাতাশ গুণ বেশি সওয়াব অর্জন করবে? উত্তর হতে পারে মসজিদে পুরুষ ইমামের পেছনে জামা‘আতে নামায আদায় করার মাধ্যমে। কিন্তু সহীহ হাদীস মারফত জানা যাচ্ছে মহিলাদের জন্য মসজিদের চাইতে ঘরে নামায পড়া উত্তম। এখন সাতাশ গুণ ফজিলত অর্জনের সুযোগ দিতে চাইলে মহিলাদেরকে ঘরের অর্থাৎ স্বতন্ত্র জামা‘আতের অনুমতি দেয়ার বিকল্প নেই।
ইবনুল কায়্যিম আল-জুযিয়্যা সংশ্লিষ্ট হাদীস উল্লেখ করে মহিলাদের স্বতন্ত্র জামা‘আত এবং তাতে মহিলার ইমামতি মুস্তাহাব বলে দাবী করেছেন। পরিশেষে তিনি বলেন:
ولو لم يكن في المسألة إلا عموم قوله عليه السلام: تفضل صلاة الجماعة على صلاة الفذ بسبع وعشرين درجة، لكفى.
‘এই মাসআলায় রাসূলের এই হাদীসটি-জামা‘আতে নামায, একাকী নামাযের চাইতে সাতাশ গুণ মর্যাদার অধিকারী- ছাড়া অন্য কিছু না থাকলেও যথেষ্ট হত।
ইবনু হাযম বলেন:
بل صلاة المرأة بالنساء داخل ةحة قول رسول الله صلاة الجماعة ةفضل صلاة الفذ بسبع وعشرين درجة
‘বরং মহিলার জামা‘আতে মহিলার ইমামতি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এই বাণী صلاة الجماعة ةفضل صلاة الفذ بسبع وعشرين درجة -এর অন্তর্ভুক্ত।

মহিলাদের স্বতন্ত্র নামাযের কয়েকটি দিক
• আলাদা জামা‘আতের ব্যবস্থা করা ও তাতে মহিলার ইমামতি করা
মুস্তাহাব।
• মহিলারা বাড়িতে জামা‘আতের ব্যবস্থা করতে পারেন কিংবা তাদের নামায আদায়ের জন্য স্বতন্ত্র মসজিদ স্থাপন করা যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্ম ওয়ারাকা (রা.)-কে মসজিদ স্থাপনের অনুমতি দিয়েছিলেন। বাংলাদেশে চাপাই জিলায় আহলে হাদীস অধ্যুষিত এলাকায় মহিলাদের জন্য স্বতন্ত্র ঈদগাহ আছে।
• মহিলা ইমাম প্রথম সারির মাঝখানে দাঁড়াবে, পুরুষ ইমামের ন্যায় সামনে দাঁড়াবে না। মুসল্লি বেশি হলে দ্বিতীয়-তৃতীয় কাতারে এভাবে পেছনের দিকে দাঁড়াবে।
• মহিলাদের জন্য আযান-ইকামত নেই। ইমাম শাফি‘ঈ ব্যতিত অন্যরা বলেন, মহিলাদের আযান ও ইকামত মাকরুহ। শাফিঈ বলেন, এতে কোন অসুবিধা নেই। তবে পুরুষের অনুকরণের ইচ্ছা থাকলে তবে মাকরূহ হবে। আর অনুচ্চ স্বরে আযান-ইকামত দিলে তা যিকর বলে পরিগণিত হবে। ‘আয়িশা (রা.) আযান ও ইকামত দিতেন। মহিলাদের নামাযের আযানের জন্য পুরুষ মুআয্যিন নিয়োগ করা যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্ম ওয়ারাকা (রা.)-এর জন্য একজন মুআয্যিন নিয়োগ করেছিলেন।

 

 

 

 

 

মিশ্র-লিঙ্গের জামা‘আতে নারীর ইমামতি
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে ২০০৫ সালের পূর্বে মিশ্র-জামা‘আতে নারীর ইমামতির বিষয়টি একেবারেই অনালোচিত একটি বিষয় ছিল। তবুও ফিকহ-এর গ্রন্থে এ বিষয়ে নির্দেশনা পাওয়া যায়; ইমামগণ অনেক উপপ্রমেয়মূলক (Hypothetical) বিষয়ে মতামত দিয়েছেন। মিশ্র-লিঙ্গের নামাযে নারীর ইমামতি তেমন একটি বিষয়। মিশ্র-জেন্ডারের ফরয ও নফল নামাযে নারীর ইমামতির বিষয়ে মতামতের কিছুটা তারতম্য পাওয়া যায়। তাই বিষয় দু’টিকে আলাদা শিরোনামের আওতায় আলোচনা করা হচ্ছে।
• মিশ্রলিঙ্গের নফল নামাযে নারীর ইমামতি।
• মিশ্রলিঙ্গের ফরয নামাযে নারীর ইমামতি।
এখানে দ্বিতীয় পয়েন্টে গুরুত্ব দেয়া হবে; কারণ এটি একটি সাম্প্রতিক ইস্যু। তারপরও প্রাসঙ্গিকতার কারণে প্রথম শিরোনামের ওপর যৎকিঞ্চিত আলোচনা উপস্থাপন করা হচ্ছে:
মিশ্র-লিঙ্গের নফল নামাযে নারীর ইমামতি
নারী-পুরুষের মিশ্র নফল নামাযে নারীর ইমামতির বিষয়ে ইমামগণের মাঝে সামান্য মতভেদ রয়েছে।
প্রথম অভিমত: পুরুষ বা মিশ্রলিঙ্গের নফল বা ফরয নামায- কোন নামাযেই নারীর ইমামতি বৈধ নয়। এটি মদীনার সাত ফকীহ, ইমাম আবু হানিফা, মালিক ও শাফি‘ঈসহ ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘আলিম ও মুজতাহিদদের অভিমত।
দ্বিতীয় অভিমত: মহিলা যদি উপস্থিত পুরুষদের চাইতে কুরআন তিলাওয়াত ও অধ্যয়নে অধিক পারঙ্গম হয় তবে মহিলাদের পক্ষে পুরুষের নফল নামাযে/তারাবীহ নামাযে ইমামতি করা বৈধ। অবশ্য কেউ কেউ বলেন, এটি কেবল বৃদ্ধাদের জন্য প্রযোজ্য।
ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল হতে এ ধরণের অভিমত বর্ণিত হয়েছে। তাঁর সূত্রে কেউ কেউ বলেছেন, তিনি পুরুষের নফল নামাযে নারীর ইমামতির বৈধতা দিয়েছেন; ইবনু তামীম, আবুল খাত্তাব ও যারকাশী, ইমাম আহমাদের সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, মহিলারা পুরুষের তারাবীহ নামাযে ইমামতি করতে পারবে। আবুল খাত্তাব দাবী করেছেন এটি অধিকাংশ হাম্বলী ‘আলিমের অভিমত। তবে শর্ত হল পুরুষদের মধ্যে বিশুদ্ধ তিলাওয়াতকারী থাকতে পারবে না। কেউ কেউ বলেন, মহিলা বৃদ্ধা ও রক্তসম্পর্কীয় আত্নীয় হলেই কেবল এ অনুশীলন অনুমোদনযোগ্য হবে। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া বলেন:
ولهذا جوز أحمد على المشهور عنه أن تؤم المرأة الرجال لحاجة، مثل أن تكون قارئة وهم غير قارئين فتصلى بهم التراويح، كما أذن رسول الله لأم ورقة أن تؤم أهل دارها، وجعل لها مؤذنا، تتأخر خلفهم.
‘আর এ কারণে আহমাদ-তাঁর কাছ থেকে বর্ণিত মশহূর মতানুসারে- পুরুষের নামাযে নারীর ইমামতির বৈধতা দিয়েছেন; যেমন মহিলা বিশুদ্ধ তিলাওয়াতকারী, পুরুষরা তেমন নয়, এমতাবস্থায় সে (রমণী) পুরুষদেরকে নিয়ে তারাবীহ নামায আদায় করতে পারবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্ম ওয়ারাকা (রা.)- কে তার পরিবার-পরিজনের নামাযে ইমামতির অনুমতি দিয়েছিলেন এবং তাঁর জন্য মুআয্যিন নির্ধারণ করেছিলেন। অবশ্য এক্ষেত্রে মহিলা ইমাম পুরুষ মুসল্লিদের পেছনে দাঁড়াবে।
অবশ্য পরক্ষণেই তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠদের মত ও তাঁদের সমর্থনে হাদীস উল্লেখ করেছেন:
هذا مع ما روي عنه من قوله: لا تؤمن امرأة رجلا وان المنع من إمامة المرأة بالرجال قول عامة الفقهاء.
[আহমাদ উপর্যুক্ত অভিমত জ্ঞাপন করেছেন] রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিম্নোক্ত বাণী সত্ত্বেও: ‘কোন নারী যেন পুরুষের নামাযে ইমামতি না করে’ এবং ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ ফকীহগণ পুরুষের নামাযে নারী ইমামতি নিষিদ্ধ বলে মত প্রকাশ করেছেন।
এখানে বিস্তারিত যুক্তিতর্কের অবতারণা করা হবে না। পরবর্তী পয়েন্টে যুক্তি উপস্থাপন করা হবে। ইবনু তাইমিয়া ও হাম্বলী ‘আলিমগণ উম্ম ওয়ারাকা (রা.)-এর হাদীস উল্লেখ করে যে যুক্তি দিয়েছেন তা অসার। সংখ্যাগরিষ্ঠ ফকীহ ও মুহাদ্দিসের মতে উম্ম ওয়ারাকা (রা.)-কে প্রদত্ত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুমতি কেবল মহিলাদের স্বতন্ত্র জামা‘আতে সীমাবদ্ধ ছিল। উম্ম ওয়ারাকা (রা.)-এর হাদীসকে যদি পুরুষের নামাযে মহিলার ইমামতির বৈধতার জন্য ব্যবহার করা হয় তবে তা নফল বা তারাবীহ নামাযে সীমাবদ্ধ করার উপায় নেই। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), উম্ম ওয়ারাকা (রা.)-কে ফরয নামাযে ইমামতির অনুমতি দিয়েছিলেন। অথচ হাম্বলী ‘আলিমগণ পুরুষের ফরয নামাযে মহিলার ইমামতি অবৈধ বলে মত প্রদান করেন। পুরুষের ফরয নামাযে মহিলার ইমামতি অবৈধ হলে নফল/তারাবীহ নামাযে তা বৈধ হওয়ার কোন জো নেই।
মিশ্র-লিঙ্গের ফরয/জুম‘আর নামাযে নারীর ইমামতি
মিশ্র-লিঙ্গের ফরয বা জুম‘আর নামাযে নারীর ইমামতির বিষয়টি এ রচনার মুখ্য বিষয়। আগেই যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৫ সনের ১৮ মার্চ নিউইয়র্কের এক ক্যাথেড্রালে ড. আমিনা ওয়াদুদ নারী-পুরুষের সম্মিলিত জুম‘আর নামাযে খুতবা দেন, ইমামতি করেন। এটি একদিনে সম্ভব হয়নি। এর পেছনে মুসলিম নামধারী নারীবাদীদের দীর্ঘ প্রচেষ্টা ছিল। এখানে সংক্ষিপ্তাকারে ঘটনা প্রবাহ উল্লেখ করা হচ্ছে:
ঘটনাপ্রবাহ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগ থেকে শুরু করে ২০০৪ সাল পর্যন্ত, প্রায় দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে কোন নারীর ইমামতিতে মিশ্র-লিঙ্গের নামায অনুষ্ঠানের নজির পাওয়া যায় না। অবশ্য আল-মাস‘উদী উল্লেখ করেছেন খারেজীদের কাছে কূফার পতনের পর গাযালা নাম্নী জনৈক মহিলা তার পুরুষ যোদ্ধাদের নামাযে ইমামতি করেন। নামাযের দু’রাক‘আতে তিনি কুরআনের বৃহৎ দু’টি সূরা তিলাওয়াত করেন। এটি অবশ্য কেবল উল্লেখ করার জন্য। অন্যথায় খারেজীদের কোন বিষয় আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে না।
২০০৪ সালের পূর্বে এ ধরনের কোন ঘটনা মুসলিম বিশ্বে সংঘটিত হয়নি। এটি এতটা অপ্রাসঙ্গিক ছিল যে ফিকহ সম্পাদনাকালে নেতৃস্থানীয় অনেক ফকীহ এ বিষয়ে তেমন কোন আলোচনা করেননি। অথচ তথাকথিত মধ্যযুগেও মুসলিম জাহানে মহিলা রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন; সুলতানা রাজিয়া (১২৩৬-৪০) ভারত শাসন করেছেন, শাজরাতুদ দুর (১২৫৮-৬১) মিশর শাসন করেছেন। এই দু’রমণী বা তাদের যুগের অন্য কোন রমণী নামাযে ইমামতি করেননি বা ইমামতির খায়েশও প্রকাশ করেননি।
কানাডা
২০০৪: ইউনাইটেড মুসলিম এসোসিয়েশনের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত ও টরেন্টোর এটোবিকক মসজিদে অনুষ্ঠিত ঈদুল ফিতরের নামাযে দ্বিতীয় খুতবা প্রদান করেন ২০ বছর বয়সী মারইয়াম মির্জা।
২০০৪: ইয়াসমিন শাদীর নারী-পুরুষের যৌথ ‘ইশার নামাযে ইমামতি করেন। আধুনিককালে কোন মহিলা কর্তৃক মিশ্রলিঙ্গের নামাযে ইমামতি করার এটি প্রথম রেকর্ডেড ঘটনা। যদিও এটি খুব একটা প্রচার পায়নি। আয়োজক: ইউনাইটেড মুসলিম এসোসিয়েশন
২০০৫: রাহীল রেজা নাম্নী জনৈক মহিলা জুম‘আর খুতবা দেন ও নামাযে ইমামতি করেন। টরেন্টোর কোন মসজিদে জায়গা না পেয়ে এ্যাকটিভিস্ট তারেক ফাতাহ-এর বাড়ির পেছন-আঙিনায় এ নামায আদায় করা হয়। আয়োজক: মুসলিম কানাডিয়ান কংগ্রেস
পামেলা টেলর, ১৯৮৬ সালে ইসলামে দীক্ষিত হন, কানাডা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত টরেন্টোর ইউএমএ মসজিদে জুম‘আর খুতবা দেন ও মিশ্র-লিঙ্গের নামাযে ইমামতি করেন।
মার্শেই শহরের সাবেক মুফতি শুহেইব বেনশেখ, রাহীল রেজা বা পামেলা টেলর-এর ইমামতিতে নামায আদায়ের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন। কানাডা সফরকালে তার এ আকুতি পূরণে এগিয়ে আসে মুসলিম কানাডিয়ান কংগ্রেস। এবারও একটি ব্যক্তিগত বাড়িতে মিশ্র-লিঙ্গের নামায আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়।
বাহরাইন
২০০৪: জনৈক বাহরাইনি মহিলা গোপন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দ্বীপ রাষ্ট্রটির বড় এক মসজিদে নামাযে ইমামতির চেষ্টা করেন। ২০০৪ সালের রমযানের শেষ খুতবা দেয়ার জন্য তিনি নকল দাড়ি লাগিয়ে মিম্বরে দন্ডায়মান হন। প্রতারক খতিব খুতবা শুরু করার সাথে সাথে মুসল্লিরা বুঝতে পারে যে ইমাম হলেন একজন প্রতারক নারী। সাথে সাথে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
নিউইয়র্ক ২০০৫:
২০০৫ সালের প্রারম্ভে ঘোষণা করা হয়, ড. আমিনা ওয়াদুদ, এক আফ্রিকান আমেরিকান ও ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক, মিশ্র-লিঙ্গের জুম‘আর নামাযে ইমামতি করবেন। তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসেন আসরা নোমানীর নেতৃত্বাধীন মুসলিম উইমেনস ফ্রিডম ট্যুর ও প্রগ্রেসিভ মুসলিম ইউনিয়ন। তিনটি মসজিদের কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেন আয়োজকরা। কোন মসজিদ-কর্তৃপক্ষ রাজী না হওয়ায় সিদ্ধান্ত হয় ম্যানহাটনের সোহো ডিস্ট্রিকের একটি আর্ট গ্যালারিতে নামায আদায় করা হবে। পরবর্তীতে ভেন্যু পরিবর্তন করে এপিসকোপাল ক্যাথেড্রাল অভ সেন্ট জন দ্য ডিভাইন-এর মালিকানাধীন সাইনড হাউসে ১৮ মার্চ ২০০৫ তারিখে মিশ্রলিঙ্গের জুম‘আর নামাযে ইমামতি করেন ড. আমিনা ওয়াদুদ। ৬০ মহিলা ও ৪০ পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামায আদায় করেন। আযান দেন আরেক মহিলা, সোহেইলা আল-আত্তার [জিন্স প্যান্ট পরিধান করে, স্কার্ফবিহীন অবস্থায়]। এ নামাযের কিছু ছবি ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। অংশগ্রহণকারী মহিলাদের অনেকে ত্বকঘনিষ্ঠ জিন্সের প্যান্ট পরিধান করেছিলেন। অনেকের মাথায় স্কার্ফও ছিলো না।
প্রতিক্রিয়া
ড. আমিনা ওয়াদুদ কর্তৃক জুম‘আর নামাযে ইমামতিতে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অধিকাংশ প্রতিক্রিয়ায় এটিকে বিদ‘আতী কর্মকান্ড ও ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে চি‎‎হ্নত করা হয়। যারা প্রতিবাদ করেছেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের ইমাম শায়খ সাইয়েদ তানতাবী, সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি, মসজিদুল হারাম ও মসজিদ-ই-নববীর ইমাম এবং আফ্রিকা ও এশিয়ার অন্যান্য ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ। উত্তর আমেরিকার বেশ কয়েকটি মুসলিম সংগঠনও এ ঘটনার নিন্দা জানায়, এসেম্বলি অব মুসলিম জুরিস্ট ইন আমেরিকা, ইসলামিক সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকা তীব্র ভাষায় এ কর্মকান্ডের নিন্দা জানায়। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাভিত্তিক দু’একটি তথাকথিত মুসলিম সংগঠন, যেমন প্রগ্রেসিভ মুসলিম ইউনিয়ন ও মুসলিম ওয়েক আপ, ড. ওয়াদুদের কর্ম সমর্থন করেন। এশিয়া ও আফ্রিকার গুটি কয়েক পন্ডিতও তাঁর কর্ম সমর্থন করেছেন। এখানে বাচাইকৃত কয়েকটি প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হচ্ছে:
নিন্দা
১. মিশরের গ্রান্ড মুফতি আলী গুম‘আ এক অফিসিয়াল ফাতওয়া-এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন:
পুরুষের নামাযে মহিলার ইমামতির বিষয়ে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘আলিম বলেন, এটি নিষিদ্ধ এবং এ ধরণের নামায বৈধ বলে পরিগণিত হবে না।
সমগ্র বিশ্বে আজ আমরা দুটি বিষয়কে গুলিয়ে ফেলতে দেখছি, নামাযে ইমামতি ও জুম‘আর খুতবা প্রদান। সমগ্র ইসলামী ইতিহাসে হাতেগোনা দুয়েক জন মনীষী মিশ্র নামাযে নারীর ইমামতির পক্ষে বললেও এ পর্যন্ত কোন কালের কোন ‘আলিম বা ইমাম জুম‘আর নামাযে নারীর খুতবা বৈধ বলে মত প্রদান করেননি। আজ যারা নারীর ইমামতির বৈধতা দাবী করছে তারা আবার কয়েক গ্রুপে বিভক্ত: একদল সুন্নাহ ও ‘ইজমা অস্বীকার করে, কেউ কেউ আরবী শব্দের অর্থ বিকৃত করে, কেউ আবার সমকামিতা, বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক ও গর্ভপাতের বৈধতা দাবী করে,অন্য এক দল উত্তরাধিকার অংশের পরিবর্তন চায়।
প্রায় সকল যুগে এদের প্রাদুর্ভাব ঘটে এবং আপসেআপ এদের শোরগোল উবে যায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমগণ ঠিকই আল্লাহ-প্রদর্শিত আলোকোজ্জ্বল পথ অনুসরণ করেন:
فَأمَّا الزَّبَدُ فَيَذهَبُ جُفَاء، وّأمَّا مَا يَنفَعُ النَّاسَ فَيَمكُثُ فِي الأرضِ
‘যাহা আবর্জনা তাহা ফেলিয়া দেওয়া হয় এবং যাহা মানুষের উপকারে আসে তাহা জমিয়া থাকিয়া যায়।’ [আল-কুরআন ১৩ : ১৭]
২. আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আহমাদ উমার হাশিম বলেন,
‘সর্ব-পুরুষ জামা‘আতে বা মিশ্র-জামা‘আতে নারীর ইমামতি কোনভাবেই ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলাম, পুরুষের সামনে নারী দেহের প্রদর্শন অনুমোদন করে না। তাহলে কীভাবে পুরুষের সামনে একজন নারীর হাঁটু ভাজ করা, শরীর বাঁকানো অনুমোদিত হতে পারে?’
৩. আমিনা ওয়াদুদের ইমামতির প্রতিক্রিয়ায় ড. ইউসুফ আল-কারযাভী বলেন:
মুসলিম ইতিহাসে কখনো কোন নারী কর্তৃক জুম‘আর খুতবা প্রদান বা নামাযে ইমামতির কথা শোনা যায়নি। এমনকি শাজারাতুদ দুর-এর শাসনামলেও না, যিনি মামলুকদের আমলে মিশর শাসন করেছিলেন। এটি সর্বজনমান্য বিষয় যে মিশ্রলিঙ্গের নামাযে ইমামতি করবেন একজন পুরুষ।
যুক্তরাষ্ট্রে যেসব বোন নারীর ইমামতিতে জুম‘আর নামায আদায় করেছেন তাদের প্রতি আমার উপদেশ হল, তারা যেন আল্লাহর কাছে তওবা করে সঠিক পথে ফিরে আসেন। ঐ দেশের মুসলিম ভাইদেরকেও আমি অনুরোধ করছি তারা যেন এ ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক আহবানে সাড়া না দেন।
৪. এ রচনাকারের এক প্রশ্নের জবাবে শায়খ সামী আল-মজিদ বলেন:
ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘আলিম নারীর ইমামতিতে মিশ্র-লিঙ্গের নামায আদায় করা অবৈধ বলে মত প্রকাশ করেছেন। মাত্র দু’জন ফকীহ ভিন্নমত পোষণ করেছেন, আবু ছাওর ও আল-মুযানী।
তবে কোন কালের কোন আলিম কখনো এই অভিমত প্রকাশ করেননি যে, জুম‘আর নামাযে নারীর ইমামতি বৈধ। হাতেগোণা যে ক’জন ‘আলিম পুরুষের নামাযে নারীর ইমামতি বৈধ বলেন তারাও কখনই জুম‘আর নামাযে ইমামতি ও খুতবা প্রদান বৈধ বলে মত দেননি।
৫. ইসলামিক সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকা (ইসনা)-এর প্রধান শায়খ নূর আবদুল্লাহ তীব্র ভাষায় ড. ওয়াদুদের কর্মকান্ডের নিন্দা জ্ঞাপন করেন। পক্ষ-বিপক্ষের যুক্তিসমুহ সবিস্তারে আলোচনা করার পর তিনি বলেন, ‘ইসলামের ইতিহাসে এমন কোন ঘটনা নেই যাতে প্রমাণ করা যায় মহিলা তার পরিবারের বাইরে কারো নামাযে ইমামতি করেছে। আর আমাকে যেভাবে নামায আদায় করতে দেখেছ সেভাবেই নামায আদায় করবে এ হাদীসের সাথে গেলে আমরা নামায আদায়ের নতুন কোন পন্থা আবিষ্কার করতে পারি না।’
৬. দি এসেম্বলি অব মুসলিম জুরিস্ট অব আমেরিকা প্রতিক্রিয়া নিম্নরূপ:
প্রাচ্য-প্রতীচ্যের সকল ‘আলিম এ বিষয়ে একমত যে নারীর পক্ষে জুম‘আর নামাযে ইমামতি করা বা খুতবা দেয়া বৈধ নয়। কেউ যদি এ ধরণের নামাযে অংশ নেয় তাঁর নামায বাতিল বলে গণ্য হবে। হানাফী, শাফিঈ, মালিকী, হাম্বলী এমনকি শিয়াদের কোন ফিকহ গ্রন্থে এ মতামতের সমর্থন পাওয়া যায় না। অতএব এটি একটি নব আবিষ্কার এবং ফলশ্রুতিতে বিদ‘আহ বলে পরিগণিত। যে-ই এধরণের নামাযে অংশগ্রহণ করবে বা আয়োজন করবে বা সমর্থন সে-ই বিদআতি হিসেবে পরিগণিত হবে।
৭. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররম এর সাবেক খতিব মরহুম উবায়দুল হক-স্বাক্ষরিত একটি ফাতওয়া এই রচনাকারের হাতে রয়েছে, তিনি লিখেছেন, ইমামগণের ইজমা‘-এর মাধ্যমে মহিলাদের ইমামতি অবৈধ। ভিন্নমত পোষণকারীরা ইজমা‘ সম্পাদিত হওয়ার পর মত প্রকাশ করায় তাদের মতভিন্নতার কোন গুরুত্ব নেই।’
সমর্থন
আগেই যেমনটি বলা হয়েছে, মিশ্র জামা‘আতে নারীর ইমামতির সমর্থনে কিছু বক্তব্য পাওয়া যায়; বাচাইকৃত দুয়েকটি উদ্ধৃতি দেয়া হচ্ছে:
1. মিশরের আওকাফ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক আব্দেল গণি শাম‘আ বলেন, ‘একজন নারী নামাযে ইমামতি করতে পারেন যদি তিনি পুরুষের চাইতে অধিক জ্ঞানী হন। এই কাজ ইসলামী আইনসম্মত হবে না যদি নারীর পিছনে নামাযরত পুরুষদের কেউ তার চাইতে বেশি জ্ঞানী হয়ে থাকে।’
2. ইসলামিক কমিশন অব স্পেন-এর সেক্রেটারী মিশ্র-জেন্ডারের জুম‘আর নামাযে নারীর ইমামতি সমর্থন করেছেন যদি কম্যুনিটি রাজি থাকে।
3. লাহোরস্থ আল-মাওরিদ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক সায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি জাভেদ ঘামিদি বলেন, আমিনা ওয়াদুদ কোন ইসলামী নির্দেশনা ভঙ্গ করেননি; তিনি যদি কিছু ভঙ্গ করে থাকেন তবে মুসলিম ঐতিহ্য ভঙ্গ করেছেন।
4. একটু আগে মিশরের গ্রান্ড মুফতি শায়খ আলী গুম‘আর উক্তি উল্লেখ করা হয়েছে যাতে তিনি নারীর ইমামতিতে নামায আদায়ের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু নারীর ইমামতিতে নামায আদায়ের সমর্থনেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়। স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল আল-আরাবিয়ার একটি প্রতিবেদন মতে, শায়খ গুম‘আ মিশরীয় টিভিতে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আলিমগণের মাঝে মিশ্র-জামা‘আতে নারীর ইমামতি নিয়ে মতৈক্য নেই। ইমাম তাবারী ও ইবনুল আরাবীর মত পন্ডিতগণ এই অনুশীলন অনুমোদনযোগ্য মনে করেছিলেন।
আল-আরাবিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, মুফতি যোগ করেন, ‘মতানৈক্যের বিষয়ে পরিস্থিতি নির্ভর করে তাদের ওপর যারা জড়িত। যদি জামা‘আত নারী ইমাম গ্রহণ করেন তবে সেটা তাদের ব্যাপার ,তাতে কোন সমস্যা নেই; কারণ তাতেই তারা অভ্যস্ত।
এ রচনাকার-এর পক্ষ থেকে আল-আরাবিয়া ও দারুল ইফতা কর্তৃপক্ষ- দু’পক্ষের নিকট ইমেইল পাঠানো হয়েছিল। আল-আরাবিয়া কোন উত্তর দেয়নি। পক্ষান্তরে দারুল ইফতা থেকে জানানো হয় অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে আলী গুম‘আ যে ফাতওয়া দিয়েছেন এ বিষয়ে সেটিই তার চূড়ান্ত বক্তব্য।
পূর্বসূরি ‘আলিমগণের অভিমত
পূর্বসূরি ‘আলিমগণের অতি ক্ষুদ্র অংশ-যাদের সংখ্যা এক হাতের আঙ্গুলে গণনা করা যায়- ব্যতিত সমগ্র মুসলিম ইতিহাসের সকল ইমাম, মুজতাহিদ, ‘আলিম ও চিন্তাবিদ এ বিষয়ে একমত যে নারীর ইমামতিতে মিশ্রলিঙ্গের ফরয/জুম‘আর নামায আদায় বা জুম‘আর খুতবা দেয়া বৈধ নয়:
ক. হানাফী ‘আলিম ইবনু ‘আবিদীন বলেন (রদ্দুল মুখতার ১/৫৭৭):
‘নারীর ইমামতিতে কোন পুরুষ নামায আদায় করলে তা বিশুদ্ধ হবে না।’
খ. মালিকী ফকীহ আল-হাত্তাব বলেন (আত-তাজ ওয়াল ইকলীল ২/৪১২):
‘নারীর ইমামতিতে পুরুষের ইমামতি অবৈধ; কোন পুরুষ নারীর পেছনে নামায আদায় করলে সেই ওয়াক্তের নামায তাকে পুনরায় আদায় করতে হবে, এমনকি ওয়াক্ত পার হয়ে গেলেও।’
গ. ইমাম শাফি‘ঈ বলেন (আল-উম্ম ১/১৯১): ‘কোন মহিলা যদি নারী-পুরুষ ও বালকের নামাযে ইমামতি করে তবে মহিলার নামায বৈধ হবে; তবে পুরুষ ও বালকের নামায বৈধ হবে না। কারণ আল্লাহ পুরুষকে নারীর তত্ত্বাবধায়ক বানিয়েছেন এবং নারীকে অভিভাবকের দায়িত্ব দেননি। কোন অবস্থাতেই পুরুষের নামাযে নারীর ইমামতি বৈধ নয়।’
ঘ. নামজাদা শাফি‘ঈ ফকীহ আল-নওয়াবী লিখেন (আল-মাজমূ‘ ৪/১৫১):
‘আমাদের ‘আলিমগণ এ বিষয়ে একমত যে মহিলার পেছনে সাবালক পুরুষ বা বালকের নামায আদায় করা জায়েজ নয়। এই নিষেধাজ্ঞা ফরয, নফল, তারাবীহসহ সকল নামাযে ইমামতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এটি পূর্বসূরি ও উত্তরসূরি ‘আলিমগণের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের অভিমত।’
ঙ. ইবনু হুবাইরা বলেন: ‘আলিমগণ এ বিষয়ে মতৈক্যে পৌছেছেন যে, পুরুষের ফরয নামাযে নারীর ইমামতি বৈধ নয়।’
আরো অনেক গ্রন্থ হতে উদ্ধৃতি দেয়া যায়; সংক্ষেপনের জন্য বর্জন করা হল।
ভিন্নমত
১৪০০ বছরের মুসলিম ইতিহাসে হাতেগোণা ৫ (পাঁচ) জন ‘আলিমের নাম পাওয়া যায় যারা নারীর ইমামতিতে পুরুষের নামায আদায় বৈধ মনে করতেন। তাঁরা হলেন, ১) আবু ছাওর ইবরাহিম ইবনু খালিদ ইবনুল ইয়ামান আল-কালবী, ২) আবু ইবরাহিম ইসমা‘ঈল ইবনু ইয়াহইয়া আল-মুযানী , ৩) ইবনু জারীর আত-তাবারী, ৪) দাউদ আয-যাহিরী ও ৫) মুহিউদ্দীন ইবনু ‘আরাবী।
এঁদের অভিমতের বিস্তারিত বিবরণ ফিকহ-এর গ্রন্থসমূহে পাওয়া যায় না। ছিঁটেফেঁটা যা পাওয়া যায় পরবর্তীতে তা আলোচিত হবে।
মিশ্র-জেন্ডারের জামা‘আতে নারীর ইমামতির পক্ষে-বিপক্ষে অনেক যুক্তি/দলীল উপস্থাপন করা হয়। আগেই যেমনটি বলা হয়েছে, সর্বসাম্প্রতিক প্রসঙ্গ বলে এ বিষয়ে স্বতন্ত্র গ্রন্থ পাওয়া যায় না। স্বাভাবিকভাবেই, প্রধানত অনলাইন প্রবন্ধের ওপর ভিত্তি করে যুক্তিতর্ক সাজানো হয়েছে।

 

 

 

মিশ্র-জেন্ডারের জামা‘আতে নারীর ইমামতির বিপক্ষে যুক্তি
মিশ্র-লিঙ্গের নামাযে নারীর ইমামতি বিষয়টি সাম্প্রতিক ইস্যু হলেও প্রাথমিক যুগের গ্রন্থগুলিতে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ফিক্হ-এর ইমামগণ অনেক Hypothetical বিষয়ে মতামত দিতেন। তেমনি একটি বিষয় হল মিশ্র-জেন্ডারের নামাযে নারীর ইমামতি। এ বিষয়ে সম্প্রসারিত চার মাযহাবসহ অন্যান্য ইমামগণের মতামত উল্লেখ করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, মুসলিম ইতিহাসে হাতে গোণা চার-পাঁচ জন ‘আলিম ছাড়া সমগ্র মুসলিম বিশ্বের সকল শহরের সকল যুগের ‘আলিমগণ এ বিষয়ে একমত যে নারীর ইমামতিতে পুরুষের নামায আদায় বৈধ নয়।
এক.
মিশ্র-জেন্ডারের নামাযে নারীর ইমামতি অভূতপূর্ব ঘটনা।
সমগ্র মুসলিম ইতিহাসে এ ধরণের কোন ঘটনার রেকর্ড নেই যে কোন নারী জুম‘আর নামাযে খুতবা দিয়েছেন বা ইমামতি করেছেন বা ওয়াক্তিয়া নামাযে ইমামতি করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবায়ে কিরাম ও তাবি‘ঈদের যুগে কোন নারী সম্মিলিত জামা‘আতে ইমামতি করেছেন এমন নজির পাওয়া যায় না। মধ্যযুগেও মুসলিম বিশ্বের নানা দেশে নারীরা দেশ শাসন করেছেন; শাজরাতুদ্ দুর (১২৫৮-৬১) মিশর শাসন করেছেন, সুলতানা রাজিয়া (১২৩৬-৪০) ভারত শাসন করেছেন। তাদের শাসনকালেও কোন নারী সম্মিলিত জামা‘আতে ইমামতি করেননি। অতএব নারী-পুরুষের সম্মিলিত জামা‘আতে নারীর ইমামতি বিদ‘আহ এবং স্বভাবতই পরিতাজ্য।
দুই:
‘সম্মিলিত জামা‘আতে নারীর ইমামতি অবৈধ’ এ বিষয়ে ‘ইজমা রয়েছে:
প্রাচ্য-প্রতীচ্যের সকল যুগের সকল ‘আলিম এ ব্যাপারে একমত যে, সম্মিলিত জামা‘আতে নারী ইমামতি করতে পারবে না। এ বিষয়ে চার মাযহাবের ইমামগণ একমত। এমনকি শী‘আ মতাবলম্বীরাও এ ব্যাপারে দ্বিমত করেননি। মাযহাব ও ফিরকা নির্বিশেষে এটি একটি ঐকমত্যের বিষয়। অতএব মিশ্র-লিঙ্গের নামাযে নারীর ইমামতি দীনে নতুনত্ব আনয়নের শামিল বিধায় পরিত্যাজ্য।
এ রচনাকারের কাছে মওলানা উবায়দুল হক-স্বাক্ষরিত যে ফাতওয়া আছে তাতে এ যুক্তিটি উল্লেখ করা হয়েছে। ‘ইজমা-এর অস্তিত্ব সম্পর্কে বিতর্ক রয়েছে। স্বতন্ত্র পরিচ্ছেদে তা আলোচিত হবে।
তিন:
মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম কাতার হল শেষ কাতার
উপর্যুক্ত মতৈক্যে উপনীত হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে নিম্নের হাদীসটি:
عن أبي هريرة قال قال رسول الله: خير صفوف الرجال أولها وشرها آخرها؛ وخير صفوف النساء أولها وشرها أولها
‘পুরুষদের সর্বোত্তম কাতার হল প্রথমটি, আর সর্বনিকৃষ্ট কাতার হল শেষেরটি; মহিলাদের সর্বোত্তম কাতার হল শেষেরটি আর সর্বনিকৃষ্ট কাতার হল প্রথমটি।
একই ভাষায় হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আত্-তিরমিযী ও আন্-নাসাঈ।
এই বাণীর আলোকে মদীনার মসজিদের কাতার সাজানো হত। প্রথমে থাকত পুরুষের সারি, তারপর বালকের (যা নারী ও পুরুষের সারির মাঝে প্রতিবন্ধকের কাজ করত) তারপর মহিলাদের সারি। নামাযের উপযুক্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশ তৈরী করার লক্ষ্যেই এই কাতার-ব্যবস্থাপনা প্রবর্তিত হয়েছিল। রক্তে-মাংসে সৃষ্ট মানুষের স্বভাব ইসলাম অস্বীকার করে না। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশায় প্রবৃত্তি জেগে ওঠা অসম্ভব নয়। নিবিষ্টচিত্তে ও গভীর ধ্যানে নামায আদায়ের মাধ্যমে একজন মু’মিন আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেন। ইসলাম নামাযের পরিবেশে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে চায় না। অপরিচিত নারী-পুরুষ যদি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করে তবে নামাযে মনোযোগ দেয়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি হবে। এটি প্রমাণের প্রয়োজন পড়ে না। এজন্য পুরুষদের কাতার সামনে ও মহিলাদের কাতার পেছনে নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা কোন মতেই লৈঙ্গিক বৈষম্য নয়।
একজন নারী যিনি মসজিদের পেছনের অংশে নামাযে দাঁড়ান, তাঁর পক্ষে কীভাবে সামনে দাঁড়ানো মুসল্লিদের ইমাম হওয়া সম্ভব?
নেভিন রেজার আপত্তি
জনৈক ওয়াদুদ-সমর্থক নেভিন রেজা উপর্যুক্ত হাদীসের বিষয়ে আপত্তি তুলেছেন। তিনি লিখেছেন:
লিঙ্গভিত্তিক পৃথক ব্যবস্থা (gender segregation) কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময় প্রবর্তিত হয়েছিল না পরবর্তীতে আরোপ করা হয় তা যাচাই করার জন্য আবু হুরাইরার হাদীসটিকে কুরআন ও অন্য হাদীসের আলোকে মূল্যায়ন করতে হবে। ‘কাতার’ বা ‘সারি’ বুঝাতে এই হাদীসে সাফ্ফ শব্দটি আনা হয়েছে। কুরআনে নামাযের আলোচনায় কোথাও সাফ্ফ শব্দটি আসেনি, বরং যুদ্ধের আলোচনায় এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। (দেখুন আল-কুরআন ৬১:৪ صفا كأنهم بنيان مرصوص ] এই হাদীসে নামায শব্দটির উল্লেখ নেই; বলা হয়নি, ‘নামাযে পুরুষের সর্বোত্তম কাতার’। অতএব এটা মোটেই অসম্ভব নয় যে, যুদ্ধে সৈনিকদের সারি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বর্ণিত এই হাদীসটি পরবর্তীতে নামাযে আরোপ করা হয়েছে।
এই বক্তব্যে মিস রেজা দু’টি দাবী করেছেন; লিঙ্গভিত্তিক পৃথক ব্যবস্থা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সময় প্রবর্তিত হয়নি এবং ওপরের হাদীসটি যুদ্ধ-ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে-নামাযের সারি সম্পর্কে নয়।
আপত্তির জবাব
ক. লিঙ্গভিত্তিক পৃথক ব্যবস্থা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সময় প্রবর্তিত হয়নি
এটা সত্য যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে মহিলারা বিবিধ সামাজিক ও রাষ্ট্রীক কাজে অংশগ্রহণ করতেন। তবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন ব্যবস্থা চালু করেছিলেন যেখানে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ ছিল না এবং অবাধে মেলামেশা না করেও নারীরা তাদের অধিকার ভোগ করতেন, সামাজিক ও রাষ্ট্রীক দায়িত্ব পালন করতেন। তাঁরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন; তবে পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলাতেন না। তারা মসজিদে নামায আদায় করতেন। তবে পুরুষের সাথে একই সারিতে দাঁড়াতেন না।। পুরুষরা দাঁড়াতেন মসজিদের সামনের সারিতে, মহিলারা দাঁড়াতেন পেছনের দিকের সারিতে। নামাযের উসিলায় নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা প্রতিরোধে তিনি আরো কিছু পদক্ষপ গ্রহণ করেছিলেন:
عن أم سلمة زوج النبي أنها أخبرت أن النساء في عهد رسول الله (صلى الله عليه وسلم) كن إذا سلمن من المكتوبة قمن، وثبت رسول الله ومن صلى من الرجال ما شاء فإذا قام رسول الله قام الرجال.
‘নবীপত্নি উম্ম সালামাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে মহিলারা যখন ফরয নামাযের সালাম ফিরাতেন, তৎক্ষণাৎ (বাসায় ফেরার জন্য) ওঠে দাঁড়াতেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাথে যে পুরুষরা নামায আদায় করতেন তাঁরা তিনি যতক্ষণ চাইতেন স্বস্থানে স্থির থাকতেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ওঠতেন তখন পুরুষগণ দাঁড়াতেন।’
নিচের হাদিসটিও ইঙ্গিত করছে যে, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা প্রতিরোধে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রহণ করেছিলেন:
عن أم سلمة قالت كان رسول الله (صلى الله عليه وسلم) إذا سلم قام النساء حين يقضى تسليمه، ويمكث هو في مقامه يسيرا قبل أن يقوم قال: نرى ুوالله أعلم- أن ذلك كان لكي ينصرف النساء قبل أن يدركهن أحد من الرجال.
‘উম্ম সালামা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম শেষ করলে মহিলারা ওঠে দাঁড়াত, দাঁড়ানোর আগে তিনি কিছুক্ষণ স্বস্থানে অবস্থান করতেন। যুহরী বলেন, আমরা মনে করতাম -আল্লাহ অধিক জানেন- তিনি এটা করতেন এজন্য যাতে কোন পুরুষ মহিলাদের সাথে মিলিত হওয়ার আগেই তারা ফিরে যেতে পারে।
এই হাদীসের আরেক ভার্সনে বিষয়টি আরো পরিষ্কারভাবে এসেছে:
فينصرف النساء فيدخلن بيوتهن من قبل أن ينصرف رسول الله (صلى الله عليه وسلم)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিরে আসার আগে মহিলারা ফিরতো এবং বাড়ীতে প্রবেশ করত।
নারীরা যেন নিজেদের স্বাতন্ত্র বজায় রেখে মসজিদে হাজির হতে পারে তজ্জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে নববীর একটি দরজা পৃথক করতে চেয়েছিলেন:
عن نافع عن ابن عمر قال قال رسول الله (صلى الله عليه وسلم): لو تركنا هذا الباب للنساء. قال نافع: فلم يدخل منه ابن عمر حتى مات
নাফি‘, ইবনু ‘উমার হতে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আমরা যদি এই দরজা নারীদের জন্য ছেড়ে দিতাম।’ নাফি‘ বলেন, ইবনু ‘উমার আমৃত্যু ঐ দরজা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করেননি।
এভাবে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্মপন্থা পর্যালোনায় দেখা যায়, তিনি নারীদেরকে গৃহের বাইরের কর্তব্য পালনে বাধা প্রদান করেননি। পাশাপাশি অবাধ মেলামেশার দ্বার বন্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছেন। অতএব নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার পথে প্রতিবন্ধকতার উপায়গুলো রাসূলের জীবদ্দশায় প্রবর্তিত হয়েছে। এগুলো পরবর্তী সময়ের ‘আলিমগণের স্বকপোলকল্পিত আবিষ্কার নয়।
খ. কাতার ব্যবস্থাপনার হাদিসটি যুদ্ধ প্রসঙ্গে বর্ণিত
যে হাদীস পেছনের কাতারকে মহিলাদের জন্য শ্রেষ্ঠ কাতার বলা হয়েছে সে হাদীসকে নেভিন রেজা যুদ্ধ-প্রসঙ্গে বর্ণিত হাদীস বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছেন। তাঁর এ দাবী মেনে নিলেও মসজিদে নারী-পুরুষের কাতার ব্যবস্থাপনায় কোন পরিবর্তন আসার কথা নয়। কাতার বিন্যাস বিষয়ে আরো অনেক বিশুদ্ধ ও সুস্পষ্ট হাদীস বর্ণিত হয়েছে:
عن أنس بن مالك قال: صليت أنا ويتيم في بيتنا خلف النبي (صلى الله عليه وسلم) وأمي أم سليم خلفنا
আনাস (রা) বলেন, আমাদের বাড়িতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে নামায আদায় করেছিলেন; আমি ও এক ইয়াতিম ছিলাম তাঁর পেছনে আর আমার মা উম্মু সুলাইম ছিলেন আমাদের পেছনে।
এই হাদীসেও কাতার ব্যবস্থাপনার একই নির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে, প্রথমে থাকবে পুরুষের কাতার, তারপর বালক ও সর্বশেষে মহিলাদের কাতার।
‘মহিলাদের সর্বোৎকৃষ্ঠ কাতার হল পেছনের কাতার’ এ হাদীসটি (মিস রেজার দাবী অনুসারে) যুদ্ধ-প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে, এমন দাবী মেনে নিলেও এটিকে নামাযে প্রয়োগ করতে কোন অসুবিধা নেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
صفوفهم في الصلاة وصفوفهم في الجهاد سواء
‘তাদের (মু’মিনদের) নামাযের ও জিহাদের কাতার সমান।’
এই সমতাকে দুই দৃষ্টিকোণে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। নামায ও জিহাদের কাতার মর্যাদার দিক দিয়ে সমান হতে পারে। আবার সারি বিন্যাসের দৃষ্টিতেও সমতা থাকতে পারে। অতএব মিস রেজার দাবী মতে হাদীসটি যুদ্ধ-প্রসঙ্গে বর্ণিত হলেও ওটি সমভাবে নামাযের কাতার ব্যবস্থাপনার ব্যাপারেও প্রযোজ্য হয়।
চার:
মুক্তাদি পুরুষ হলে ইমামের পুরুষ হওয়া অপরিহার্য
মুক্তাদি পুরুষ বা মিশ্র জেন্ডারের হলে ইমামকে অবশ্যই পুরুষ হতে হবে। অতএব নারীর পক্ষে পুরুষের ইমাম হওয়া বা মিশ্র-জেন্ডারের জামা‘আতে ইমামতি করা সম্ভব নয়। প্রাসঙ্গিক কিছু উদ্ধৃতি পরবর্তীতে উল্লেখ করা হবে।
পাঁচ:
ফরয নামায জামা‘আতে আদায় করা মহিলাদের ওপর ওয়াজিব/সুন্নাতে মুআক্কাদা নয়। তেমনিভাবে সালাতুল জুম‘আ আদায় করা মহিলাদের ওপর ফরয/ওয়াজিব নয়। অপরদিকে জামা‘আতে নামায আদায় করা পুরুষদের ওপর ওয়াজিব/সুন্নাতে মুআক্কাদা এবং জুম‘আর নামায আদায় করা ফরয/ওয়াজিব। যার ওপর জামা‘আত ওয়াজিব নয় (মহিলা) সে কীভাবে এমন মুসল্লিদের ইমাম হবে যাদের ওপর জামা‘আত ওয়াজিব?
ক. জামা‘আতে নামায আদায় করা মহিলাদের ওপর ওয়াজিব/সুন্নাতে মুআক্কাদা নয়:
চার মাযহাবসহ অন্যান্য ধারার ‘আলিমগণ এ বিষয়ে একমত যে জামা‘আতে নামায আদায় করা মহিলাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
ইবনু হাযম বলেন, ولا يلزم النساء فرضا حضور الصلاة المكتوبة في جماعة وهذا لا خلاف فيه
‘ফরয নামাযের জামা‘আতে উপস্থিত হওয়া মহিলাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়, এ বিষয়ে কোন মতান্তর নেই।
হানাফী ‘আলিমগণ বলেন, الجماعة في الفرائض غير الجمعة سنة مؤكدة للرجال العاقلين القادرين عليها
‘সক্ষম ও বুদ্ধিসম্পন্ন (পাগল নয় এমন) পুরুষদের ওপর জুম‘আ ব্যতিত অন্য ফরয নামায জামা‘আতে আদায় করা সুন্নাতে মুআক্কাদা।’
হাম্বলী ‘আলিম ইবনু কুদামা বলেন, الجماعة واجبة على الرجل
‘জামা‘আত পুরুষের ওপর ওয়াজিব।’
‘আলিমগণের এই অভিমত মনগড়া নয়; মহিলাদেরকে মসজিদে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে বক্তব্য দিয়েছেন তা হতে সর্বোচ্চ এতটুকু সাব্যস্ত করা যায় যে, মসজিদে জামা‘আতে উপস্থিত হওয়া মহিলাদের জন্য মুবাহ বা বৈধ: لا تمنعوا إماء الله مساجد الله
‘আল্লাহর বাঁদীদেরকে আল্লাহর মসজিদে যেতে বারণ করো না।’
তদুপরি, মসজিদে নামাযের জামা‘আতে অনুপস্থিত থাকার জন্য কেবল পুরুষদেরকে শাস্তির হুমকি দেয়া হয়েছে:
عن أبي هريرة أن رسول الله (صلى الله عليه وسلم) قال: والذي نفسي بيده لقد هممت أن آمر بحطب فيحطب، ثم آمر بالصلاة فيؤذن لها، ثم آمر رجلا فيؤم الناس، ثم أخالف إلى رجال فأحرق عليهم بيوتهم.
আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ! আমার ইচ্ছে হয়, আমি লাকড়ি দিয়ে আগুন জ্বালি, তারপর নামায আদায়ের নির্দেশ দিই। অতঃপর আযান দেয়া হল, তারপর এক পুরুষকে ইমামতির নির্দেশ দিই যে লোকদের নিয়ে নামায আদায় করবে। অতঃপর [জামা‘আতে উপস্থিত না হওয়া] পুরুষদের কাছে পেছন থেকে গিয়ে তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিই।’
ইবনু হাজর বলেন, والتقيد بالرجال يخرج النساء والصبيان ‘পুরুষের শর্তারোপ, মহিলা ও শিশুদেরকে বের করে দেয়।’
জামা‘আতে নামায আদায় যে মহিলাদের ওপর ওয়াজিব নয় তা ওপরের আলোচনায় প্রমাণিত হল; পক্ষান্তরে জামা‘আতে নামায আদায় করা পুরুষের ওপর ওয়াজিব/সুন্নাতে মুআক্কাদা। অতএব পুরুষের নামাযে মহিলাদের ইমামতি কিছুতেই ন্যায়সঙ্গত ও বৈধ হতে পারে না।
খ. মহিলাদের ওপর জুম‘আ ওয়াজিব/ ফরয নয়:
বিভিন্ন মাযহাবের ‘আলিমগণ এ বিষয়ে একমত যে মহিলার ওপর জুম‘আ (জুমু‘আ) ওয়াজিব নয়।
ইবনু হাযম বলেন, ولا جمعة على معذور بمرض أو خوف أو غير ذلك من الأعذار ولا على النساء لأن الجمعة كسائر الصلواة ةجب على من وجبة عليه سائر الصلواة بالجماعة ‘অসুস্থতা, ভয় বা অন্য কোন কারণে ওযরগ্রস্ত ব্যক্তি এবং মহিলার ওপর জুম‘আ ওয়াজিব নয়; কারণ জুম‘আ অন্য সব নামাযের মত, যার ওপর অন্যান্য নামায জামা‘আতে আদায় করা ওয়াজিব তাঁর ওপর জুম‘আ ওয়াজিব।
ইবনু কুদামা বলেন:
والذكورة شرط لوجوب الجمعة وانعقادها لأن الجمعة يجتمع لها الرجال,‏ والمرأة ليست من أهل مجامع الرجال ولكنها تصح منها لصحة الجماعة منها فإن النساء كن يصلين مع النبي - صلى الله عليه وسلم
‘জুম‘আ ওয়াজিব ও সম্পাদিত হওয়ার জন্য পুরুষ হওয়া শর্ত; কারণ জুম‘আ-এ পুরুষরা একত্রিত হয়, নারীরা পুরুষদের সম্মিলনে আসার উপযুক্ত নয়, তবে জুম‘আর নামাযে উপস্থিত হলে তাদের নামায আদায় হয়ে যাবে; কারণ রমণীকুল রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে নামায আদায় করতেন।’
ফকীহগণ-এর উপর্যুক্ত সিদ্ধান্তের পক্ষে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন
الجمعة حق واجب على كل مسلم في جماعة إلا أربعة: عبد مملوك أو امرأة أو صبي أو مريض
‘প্রত্যেক মুসলিমের জন্য জুম‘আ আদায় করা অবশ্য পালনীয় হক; তবে চার প্রকার লোক ব্যতিত: মালিকানাধীন দাস, মহিলা, শিশু ও অসুস্থ।’
ইবন রুশদ অবশ্য বলেছেন, এই হাদীসটি সহীহ নয়। আবু দাউদ বলেন, [এ হাদীসের প্রথম রাবী] তারিক ইবনু শিহাব রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছেন; তবে তাঁর কাছ থেকে শুনেননি। সাহারানপুরী বলেন, খুব বেশি হলে এটুকু বলা যায় যে হাদীসটি মুরসাল। আর এ ধরনের হাদীস দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য। এতদসত্ত্বেও যুক্তিটি অকার্যকর হয় না। জুম‘আর নামায জামা‘আত ব্যতিত আদায় করা যায় না। আর মহিলাদের ওপর জামা‘আতে নামায আদায় করা ওয়াজিব নয়, ফলশ্রুতিতে তাঁদের ওপর জুম‘আও ওয়াজিব নয়।
যার ওপর জুম‘আ ওয়াজিব নয় (মহিলা) তার পক্ষে ঐ নামাজের খুতবা প্রদান বা ইমামতি করা বৈধ হতে পারে না।
ছয়:
উম্মুহাতুল মু’মিনীন কখনো মিশ্র-লিঙ্গের নামাযে ইমামতি করেননি।
পুরুষের নামাযে বা মিশ্র-জেন্ডারের নামাযে নারীর ইমামতি যদি বৈধ বা অনুমোদিত হত তাহলে এজন্য সবচাইতে বেশি উপযুক্ত ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সম্মানিত স্ত্রীগণ। তাঁদের অনেকেই ছিলেন বিদূষী মহিলা। বিশেষত ‘আয়িশা (রা) ছিলেন বাগ্মী, বিশুদ্ধভাষী, বিদূষী। নারীর ইমামতিতে মিশ্রলিঙ্গের নামাযের সামান্যতম বৈধতা যদি থাকত তবে তিনি নিশ্চয় তা করতেন। মুসলিম ইতিহাসে হাদীস ও ফিকহ শাস্ত্রসহ জ্ঞানের নানা শাখায় অবদান রেখেছেন এমন বিপুল সংখক নারীর নাম পাওয়া যায়। তাঁরা ছিলেন সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত। ইমাম আয-যাহাবী বলেন, ‘কোন নারী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নামে মিথ্যা হাদীস রচনা করেছে, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না।’ নারীরা পুরুষদের মাঝেও জ্ঞান বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ইমাম ইবনু ‘আসাকিরের শিক্ষকগণের মাঝে ৮০ জন ছিলেন নারী। আবু মুসলিম আল-ফারাহীদী ৭০ জনের মত নারী বর্ণনাকারী হতে বর্ণনা করেছেন। আশ-&শাফিঈ, আল-বুখারী, ইবন খাল্লিকান, ইবনু হায়্যানসহ অনেক মুহাদ্দিস ও ফকীহ-এর নারী শিক্ষক ছিলেন। এঁদের কেউ কখনো জুম‘আর নামাযে ইমামতি করেননি বা খুতবাও প্রদান করেননি। যদিও তাঁরা তাদের যুগের অনেক পুরুষের চাইতে ধর্মীয় জ্ঞানে অনেক বেশি জ্ঞানী ছিলেন। মুসলিম নারীদের গৌরবোজ্জল অবদানে ইসলামের ইতিহাস সমৃদ্ধ হয়েছে। ফিকহ সম্পাদনা, হাদীস বর্ণনাসহ জ্ঞানের নানা শাখায় অবদান রেখেছেন, যুদ্ধাবস্থাসহ যে কোন জরুরী পরিস্থিতিতে কাজ করেছেন। সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করার ক্ষেত্রেও অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু এ যাবৎ এমন কোন ঘটনা পাওয়া যায় না যাতে দেখা যায় কোন নারী জুম‘আর খুতবা দিয়েছেন বা মিশ্র-জেন্ডারের নামাযে ইমামতি করেছেন। ‘আয়িশার (রা) মত বিদূষী নারী তাঁর দাসের ইমামতিতে তারাবীহ আদায় করেছেন।
সাত:
‘যে জাতি কোন নারীকে ইমাম/নেতা বানায় সে জাতি সফল হবে না।’
আবু ইউসুফ তৌফিক চৌধুরী তার অনলাইন প্রবন্ধে মহিলাদের ইমামতির বিপক্ষে এ-যুক্তিটি উল্লেখ করেছেন। মূলত: এটি সহীহুল বুখারীর হাদীস। পারস্যরাজ কিসরা পারভেজ নিহত হওয়ার পর তার কন্যা বুরানকে পারস্যবাসী ক্ষমতায় বসিয়েছে-এ সংবাদ শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, لن يفلح قوم ولوا أمرهم امرأة ‘সে জাতি সফল হবে না কখনো যারা নিজেদের শাসনভার এক মহিলার হাতে অর্পণ করে।’
ওয়াদুদ-সমর্থক মিস রেজা অত্যন্ত কদর্য ভাষায় এ হাদীসের সমালোচনা করেছেন এই বলে যে, এই হাদীসের বর্ণনাকারী আবু বাকরা (রা) ব্যভিচারের অপবাদ দেয়ার অপরাধে শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি। হযরত ‘উমার (রা) তাঁর ওপর অপবাদের হদ কার্যকর করেন। যে ব্যক্তি সতী-সাধ্বী রমণীকে অপবাদ দেয় তার সাক্ষী গ্রহণ না করার নিদের্শ দেয়া হয়েছে আল-কুরআনে ২৪:৪। অতএব এ হাদীসটি ধর্তব্যে আনার মত নয়।
নেভিন রেজা’র এই সমালোচনা গণ্য না করেও বলা যায় এ হাদীসটি এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। অধিকাংশ ‘আলিমের মতে এখানে রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বের (الإمامة العظمى) কথা বলা হয়েছে, নামাযের ইমামতি নয়। ইবনুল কায়্যিম আল-জুযিয়্যাহ বলেন,
لن يفلح قوم ولوا أمرهم امرأة هذا إنما هو في الإمامة العظمى والولاية، وأما الرواية والشهادة والفتيا والإمامة فلا تدخل في هذا.
‘এ হাদীসটি রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বের ব্যাপারে প্রযোজ্য। হাদীস বর্ণনা, সাক্ষ্য, ফাতওয়া ও ইমামতি এর আওতাভুক্ত নয়।’
আট:
ألا لا تؤمن امرأة رجلا ‘সাবধান! কোন নারী যেন পুরুষের ইমামতি না করে।’
কয়েকটি হাদীস গ্রন্থে এই বর্ণনাটি এসেছে; আবু নু‘আইম আল-হিলয়া-এ জাবির (রা) হতে, আল-তাবরানী আল-আওসাতে আবু সাঈদ খুদরী (রা) হতে এটি বর্ণনা করেছেন। ইবন তাইমিয়াও এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। মহিলাদের ইমামতি অবৈধ হওয়ার দলীল হিসেবে কিছু ফিকহ গ্রন্থেও হাদীসটি এসেছে। অনেকে দাবী করেন হাদীসটি ইবনু মাজাহ্র সুনানে রয়েছে। তবে এই রচনাকার অনেক অনুসন্ধান করে হাদীসটি সুনানে ইবন মাজায় পায়নি। দু’সৌদি গবেষক-ড. মুহাম্মদ শরফুদ্দিন খাত্তাব ও সায়্যিদ মুহাম্মদ হাসান, যারা বিখ্যাত হাম্বলী টেক্সট আল-কাফী সম্পাদনা করেছেন, তাঁরাও হাদীসটি ইবনু মাজা’র সুনানে পাননি।
পুরুষের জামা‘আতে নারীর ইমামতির বিষয়ে এটিই সরাসরি নিষেধাজ্ঞার একমাত্র হাদিস। অবশ্য হাদীসবিশারদগণ এ হাদীসের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে আপত্তি তুলেছেন; বর্ণনাটির সনদে আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ আল-তামীমী নামে একজন বর্ণনাকারী আছেন যিনি জাল হাদীস বানাতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অতএব হাদীসটির গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত নয়।
নয়:
أخروهن حيث أخرهن الله ‘তাদেরকে পিছিয়ে দাও, যেহেতু আল্লাহ তাদেরকে পিছিয়ে দিয়েছেন।’
মিশ্র-জেন্ডারের নামাযে নারীর ইমামতির নাজায়েজ হওয়ার দলীল হিসেবে এ বর্ণনাটি ফিকহ-এর বিভিন্ন গ্রন্থে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে; ইবনু কুদামা, ইবনু হাযম, ইবনুল হুম্মাম ও ইবনু রুশদসহ অনেকেই এটিকে রাসূলের বাণী (لقوله عليه السلام) হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের যুক্তি হল আল্লাহ যেহেতু নারীদেরকে পিছিয়ে দিয়েছেন সেহেতু নামাযেও তাদেরকে পিছিয়ে রাখতে হবে। আর এ কারণে নামাযে মহিলাদের কাতার পেছনের দিকে হয়ে থাকে। এটি হল অবস্থানগত পশ্চাতপদতা। মর্যাদাগতভাবেও মহিলাদেরকে পিছিয়ে দিতে হবে। যিনি ইমামতি করেন স্বাভাবিকভাবে তিনি মুক্তাদির চাইতে বেশি মর্যাদাবান হওয়ার কথা; অতএব যে পেছনের দিকে দাঁড়ায় (অর্থাৎ মহিলা) তাঁর পক্ষে সামনে দাঁড়ানো পুরুষের ওপর ইমামতি করা বৈধ বা সম্ভব নয়। তেমনিভাবে কম মর্যাদাসম্পন্ন মহিলাদের পক্ষে তাদের চাইতে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন পুরুষের সামনে ইমামতি করা সম্ভব নয়।
আধুনিক যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হাদীসবিশারদ নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী এ হাদীসটি এড্রেস করেছেন। তিনি এটিকে খুব দুর্বল বলে চিহ্নিত করেছেন। এটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী নয়; বরং এটি ইবন মাস‘উদের উক্তি।
আবদুর রাজ্জাক এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইবন মাস‘উদ হতে:
عن ابن مسعود كان النساء والرجال في عهد بني اسرائيل يصلون جميعا، فكانت المرأة لها الخليل تلبس القالبين عليها، تطول بهما لخليلهما، فألقى عليها الحيض. فكان ابن مسعود يقول: أخروهن حيث أخرهن الله.
ইবনু মাস‘উদ (রা.) হতে বর্ণিত, বনী ইসরাঈলের নারী-পুরুষরা একত্রে নামায আদায় করত; মহিলারা জুতা পরে পুরুষের চেয়ে দীর্ঘ হত; অতঃপর তাদের ওপর হায়েয চাপিয়ে দেয়া হয়। ইবনু মাস‘উদ (রা.) বলতেন, ‘ওদেরকে পিছিয়ে দাও যেমন আল্লাহ ওদেরকে পিছিয়ে দিয়েছেন।’
অনুরূপ বর্ণনা আবদুর রাজ্জাক আয়িশা (রা.) হতেও বর্ণনা করেছেন, তবে তাঁর বর্ণনায় ‘ওদেরকে পিছিয়ে দাও যেমন আল্লাহ ওদেরকে পিছিয়ে দিয়েছেন’ এই অংশটুকু নেই। তবে তাঁর বর্ণনায় অতিরিক্ত তথ্য রয়েছে: এ কারণে তাদেরকে মসজিদে যেতে বারণ করা হয়।
ইবন মাস‘উদের (রা.) এই মওকুফটির গ্রহণযোগ্যতা নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ‘বনী ইসরাঈলের নারীদের ওপর হায়েজ আরোপিত হয়েছে’ এটি বাস্তবতা ও কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী বক্তব্য। নারীদের হায়েয হওয়ার সাথে সাবালিকা হওয়া ও সন্তান ধারণ উপযোগী হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। মহিলাদের এ শারীরিক বৈশিষ্ট্যের সূচনা বনী ইসরাঈলের নারীদের দিয়ে শুরু হতে পারে না। আল-কুরআনের একটি আয়াতে এ ইঙ্গিত আছে যে, পূর্ববতী নারীরাও ঋতুবতী হতেন: وامرأته قائمت فضحكت ইবনু ‘আববাস হতে তাবারী বর্ণনা করেছেন, فضحكت এর অর্থ হল فحاضت। ইবরাহীমের স্ত্রী বনী ইসরাঈলের পূর্বের যুগের নারী ছিলেন। আল-হাকিম ও ইবনুল মুনযির সহীহ সনদে ইবনু ‘আববাস হতে বর্ণনা করেছেন, হায়েয সূচনা হয়েছিল হাওয়াকে দিয়ে, জান্নাত হতে পৃথিবীতে নেমে আসার পর। আল-বুখারী ‘আয়িশার (রা) সূত্রে বর্ণনা করেছেন, وهذا أمر كتبه الله على بنات آدم এটি এমন এক বিষয় যা আল্লাহ আদম-কন্যাদের ওপর আরোপ করেছেন। ইমাম বুখারী এ বক্তব্য সমর্থন করে বলেন, وحديث النبي أكثر ‘এ বিষয়ে অন্যদের উক্তির চেয়ে নবীর বাণী অধিক অন্তর্ভুক্তকারী।
দ্বিতীয়তঃ ‘নারীদেরকে আল্লাহ পিছিয়ে দিয়েছেন’
‘আল্লাহ নারীদেরকে পিছিয়ে দিয়েছেন’ এ বক্তব্য সর্বোতভাবে সত্য নয়। আল্লাহ নারী-পুরুষ উভয়কে তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োজনানুসারে অধিকার ও মর্যাদা দিয়েছেন। কোন ক্ষেত্রে বাহ্যদৃষ্টিতে পুরুষের অধিকার বেশি বলে মনে হতে পারে; তবে নিজস্ব প্রজ্ঞার আলোকে আল্লাহ সবাইকে ন্যয্য অধিকার দিয়েছেন। ‘কে সন্তানের সদাচরণ পাওয়ার বেশি উপযুক্ত’ এ প্রশ্নের উত্তরে তিনবার মায়ের কথা বলা পর চতুর্থবার পিতার কথা বলা হয়েছে। আল-কুরআনে মাতা-পিতা উভয়ের সাথে সদাচরণ করতে সন্তানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে সন্তানের প্রতি মায়ের অনুগ্রহের বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এভাবে সামগ্রিকভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় আল্লাহ কারো ওপর বিন্দুমাত্র যুল্ম করেননি এবং নারী-পুরুষ কাউকে পিছিয়ে দেননি। অতএব أخروهن حيث أخرهن الله এ যুক্তিটি এখানে প্রাসঙ্গিক নয়।
উপর্যুক্ত দলীলগুলো সংক্ষেপে পর্যালোচনা করার পর নারী ইমামতির স্বপক্ষের যুক্তি সমূহ পর্যালোচনা করা হবে। তারপর ইজমা‘ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

 

 

 


মিশ্রলিঙ্গের নামাযে নারীর ইমামতির পক্ষে
যুক্তি ও পর্যালোচনা
মিশ্র-জেন্ডারের নামাযে নারীর ইমামতির বিষয়টি সর্বসাম্প্রতিক হওয়ায় এ বিষয়ে খুব বেশি গ্রন্থ রচিত হয়নি। এ কর্মনীতির স্বপক্ষের যুক্তি খুঁজতে নারীবাদী একটিভিস্টদের ওয়েবসাইটে দ্বারস্থ হওয়ার বিকল্প নেই। নিউইয়র্কে নারীর ইমামতিতে জুম‘আ আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে ওয়েবসাইটে যেসব যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলি সমন্বিত আকারে এখানে উপস্থাপন করা হবে এবং নিরাসক্ত মনোভঙ্গি নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে।
নারীর ইমামতিতে মিশ্র-লিঙ্গের নামায বা জুম’আর নামায আদায়ের পক্ষে যেসব যুক্তি দেয়া তার বেশির ভাগই পরোক্ষ যুক্তি। উম্ম ওয়ারাকার হাদীস ছাড়া এর কর্মপন্থার সমর্থনে কোন শক্তিশালী ও সরাসরি যুক্তি পাওয়া যায় না। এ যুক্তিটি সবিশেষ গুরুত্বের দাবী রাখে। এ রচনায় আরো পরের দিকে হাদীসটি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। প্রথমে অন্যান্য যুক্তিসমূহ উপস্থাপন করা হচ্ছে।
এক.
আল-কুরআনে এমন কোন আয়াত নেই বা হাদীসের গ্রন্থগুলিতে এমন কোন হাদীস পাওয়া যায় না যাতে মহিলাকে মিশ্র-জেন্ডারের নামাযে বা জুম‘আর নামাযে ইমামতি করতে নিষেধ করা হয়েছে। নারী-পুরুষের সম্মিলিত জামা‘আতে নারীর ইমামতি নিষিদ্ধ হলে তার উল্লেখ অবশ্যই কুরআন-সুন্নাহ-এ পাওয়া যেত। অতএব যে বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহ-এ কোন নিষেধাজ্ঞা নেই সে বিষয়টি কিছুতেই অবৈধ বা নিষিদ্ধ হতে পারে না।
পর্যালোচনা:
এটা সত্য যে, নারীর ইমামতির বিপক্ষে আল-কুরআন ও সহীহ হাদীসে সরাসরি কোন নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়নি। তবে, ‘নিষেধাজ্ঞা নেই বলে নারীর ইমামতি বৈধ’ এমন দাবী করা সঙ্গত নয়:
لأن الإمامة في الصلاة من العبادة والعبادة مبنية على التوقيف
‘কারণ নামাযে ইমামতি ইবাদাহ-এর অন্তর্গত; আর ইবাদাহ, তাওকীফ (&শর‘ঈ নির্দেশনা)-এর ওপর নির্ভরশীল।’
ফকীহগণ মানুষের কর্মকান্ডকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন: এক. ইবাদাহ; যেমন, নামায, যাকাত, রোযা, হজ্জ ও অনুরূপ কার্যাদি এবং মু‘আমালাহ, যেমন, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাষাবাদ ইত্যাদি। ইবাদাহসমূহ তাওকীফী অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশনা অনুযায়ী পালন করতে হবে। নিজের পক্ষ থেকে কোন ধরণের হ্রাস-বৃদ্ধি করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: صلوا كما رأيتموني أصلى ‘আমাকে যেভাবে নামায আদায় করতে দেখেছ সেভাবেই নামায আদায় কর।’ একটি উদাহরণ দেয়া হচ্ছে: ফজরের ফরয দু’রাকা‘আত। কেউ যদি সদুদ্দেশ্যে চার রাকা‘আত ফজরের ফরয নামায আদায় করতে চায় তাহলে তা বৈধ হবে না। তেমনিভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা ফরয। কেউ যদি ৬ষ্ঠ এক ওয়াক্ত নামায ফরয হিসেবে আদায় করতে চায় তা বৈধ হবে না। যদিও এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন নিষেধাজ্ঞা আল-কুরআন বা সুন্নাহ-এ নেই। কারণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রদর্শিত পদ্ধতিতে কোন রূপ হ্রাস-বৃদ্ধি ছাড়া ইবাদাহ আদায় করতে হবে। অতএব, কুরআন ও হাদীসে নিষেধাজ্ঞা নেই বলে নারীর ইমামতিতে নামায আদায় বৈধ এমন দাবী করা যাবে না।
দুই.
ইমামতির শর্ত হিসেবে পুরুষ হওয়ার কথা বলা হয়নি।
বিভিন্ন হাদীসে ইমামতির নানা শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে: কুরআন তিলাওয়াত করতে পারা, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহর বিষয়ে জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া, জামা‘আতের লোকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ একটি হাদীস উল্লেখ করা হচ্ছে:
يؤم القوم أقرؤهم لكةاب الله فإن كانوا في القراءة سواء فأعلمهم بالسنة
‘সম্প্রদায়ের ইমামতি করবে কিতাবুল্লাহ অধ্যয়নে অধিক পারঙ্গম ব্যক্তি, এতে যদি অনেকে সমান হয় তবে ঐ ব্যক্তি যে সুন্নাহ বিষয়ে অধিক জ্ঞানী।’
দেখা যাচ্ছে ইমামতির কোন শর্ত লিঙ্গ সম্পর্কিত নয়। তেমনিভাবে খতিবের যোগ্যতার কোন শর্তও লিঙ্গ সম্পর্কিত নয়। খতীবের শর্তগুলো হল: কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান ইত্যাদি। এভাবে দেখা যাচ্ছে ইমাম বা খতীব হওয়ার কোন শর্ত লিঙ্গ সম্পর্কিত নয় এবং ইমাম বা খতীব হওয়ার জন্য পুরুষ হওয়া অপরিহার্য নয়।
পর্যালোচনা:
পুরুষ হওয়া ইমামতির জন্য শর্ত নয় বলে যে যুক্তি দেয়া হচ্ছে তা একটি অপূর্ণাঙ্গ বক্তব্য। হ্যাঁ, শুধু মহিলাদের জামা‘আতে ইমামতি করার জন্য পুরুষ হওয়া শর্ত নয়। তবে মুক্তাদি পুরুষ হলে কিংবা মিশ্র-জেন্ডারের হলে ইমামকে অবশ্যই পুরুষ হতে হবে। বিভিন্ন মাযহাবের ফিকহ-এর গ্রন্থগুলোর সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে চোখ বুলালে এর স্বপক্ষে প্রমাণ পাওয়া যাবে। ইবন কুদামা বলেন:
هو الرجل المسلم العدل القائم بأركان الصلاة وشرائطها
‘নামাযের শর্ত ও রুকনসমূহ প্রতিপালনে সক্ষম ন্যায়বান মুসলিম পুরুষ ইমাম হবেন।’
ড. ওয়াহবাহ আল-যুহাইলী বলেন, الذكورة المحققة إذا كان المقتدي به رجلا أو خنثى
‘মুক্তাদি পুরুষ বা খোজা হলে ইমামকে অবশ্যই পুরুষ হতে হবে।’
উল্লেখিত হাদীসে ইমামতির সাধারণ যোগ্যতা বর্ণনা করা হয়েছে যা নারী ও পুরুষ উভয় ইমামের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। এজন্য লিঙ্গ সম্পর্কিত কোন শর্তারোপ করা হয়নি। অর্থাৎ কোন মহিলা যদি শুধু মহিলাদের জামা‘আতে ইমামতি করতে চান তবে তাকে উপস্থিত মহিলাদের মাঝে কুরআন অধ্যয়নে সবচাইতে বেশি পারঙ্গম হতে হবে। তেমনিভাবে সম্মিলিত নামাযে ইমামতির ক্ষেত্রে ইমাম হবেন এমন একজন পুরুষ, যিনি উপস্থিত সকল পুরুষের চাইতে কুরআন অধ্যয়নে অধিক পারঙ্গম।
তিন.
প্রাথমিক যুগের অনেক মুসলিম ‘আলিম নারীর ইমামতিতে নামায আদায় বৈধ বলে মত প্রকাশ করেছেন।
বিভিন্ন মাযহাবের একদল মুসলিম স্কলার নারীর ইমামতিতে মিশ্র-জেন্ডারের নামায আদায় করা বৈধ বলে মত প্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন: আবু ছাওর (মৃ. ২৪০ হি.), আল-মুযানী (২৬৪ হি.), আত্-তাবারী (৩৪০ হি.), জাহেরী মযহাবের প্রতিষ্ঠাতা দাউদ জাহেরী (২৭০/৮৮৪) ও মুহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী। অতএব এটি অভূতপূর্ব দাবী নয়; কোন বিষয়ে পন্ডিত মহলে মতভেদ থাকলে সে ব্যাপারে মুসলিম কম্যুনিটির স্বাধীনতা থাকে। তারা মতভেদপূর্ণ বিষয়ে যে কোন মত গ্রহণ করতে পারে।
পর্যালোচনা
সম্প্রসারিত চার মাযহাব ও অন্যান্য ধারার অসংখ্য ‘আলিমগণের মাঝে কেবল এই পাঁচ জনের নাম পাওয়া যায় যারা নারীর ইমামতিতে নামায পড়ার বৈধতা সমর্থন করেছেন। অনেক অনুসন্ধানের পরও এই ইস্যুতে এঁদের অভিমত
সবিস্তারে পাওয়া যায়নি। তবে ফিক্হ-এর গ্রন্থে উপর্যুক্ত ‘আলিমগণের অভিমত সম্পর্কে ছিটেফোঁটা যা পাওয়া যায় তাতে মনে হয় তারা সাধারণভাবে নারীর ইমামতিতে পুরুষের নামায আদায়কে বৈধ বলেননি। জুম‘আর নামাযে নারীর ইমামতির বৈধতা তো অনেক পরের ব্যাপার। ইবনু কুদামা বলেন:
وقال أبو ثور‏:‏ لا إعادة على من صلى خلفها وهو قياس قول المزنى
আবু ছাওর বলেন, ‘কোন পুরুষ নারী ইমামের পেছনে নামায পড়লে তাকে নামায দোহরাতে হবে না। আল-মাযিনীও এমত রায় দিয়েছেন।’
এ উদ্ধৃতি থেকে বুঝা গেল আল-মাযিনী ও আবু ছাওর সাধারণভাবে নারীর ইমামতিতে পুরুষের নামায আদায়ের বৈধতা দেননি। তাঁদের অভিমত হল: কেউ যদি ঘটনাচক্রে কোন নারীর পেছনে নামায আদায় করে তবে তাকে পুনরায় নামায আদায় করতে হবে না। এই বক্তব্য হতে এটা বুঝা যায় না যে মসজিদে নারীর ইমামতিতে মিশ্র-জেন্ডারের নামায আদায় বৈধ। ‘জুম‘আর নামাযে নারীর ইমামতি বৈধ’ এমন অভিমত কোন কালের কোন মনীষী ব্যক্ত করেননি।
চার:
মিশ্র-লিঙ্গের জামা‘আতে নারীর ইমামতি সম্পর্কে কোন ‘ইজমা নেই।
ওপরে উল্লেখিত মতভেদের উপস্থিতিতে এটা নির্দ্ধিধায় বলা যায়, মিশ্র-লিঙ্গের বা পুরুষের নামাযে নারীর ইমামতির বৈধতা/অবৈধতার বিষয়ে কোন ‘ইজমা নেই’। আর যে বিষয়ে কোন ‘ইজমা নেই সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কম্যুনিটি সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিক। মতবিরোধপূর্ণ বিষয়ে কোন এক পক্ষের অভিমত যদি কোন কম্যুনিটি গ্রহণ করতে চায় তবে সে অধিকার তাদের আছে। নিউইয়র্কের মুসলিম কম্যুনিটি যদি মনে করে নারীর ইমামতিতে নামায আদায় বৈধতার সুযোগ তারা গ্রহণ করবে তবে সে অধিকার তাদের আছে। তেমনিভাবে অন্য কোন অঞ্চলের মুসলিম কম্যুনিটি যদি বিপক্ষে সিদ্ধান্ত নেয় সে অধিকারও তাদের রয়েছে।
‘ইজমার সংজ্ঞা ও অস্তিত্ব নিয়ে মতভেদ আছে। এ প্রবন্ধে আরো পরের দিকে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হবে।
পাঁচ:
উম্ম ওয়ারাকার (রা) হাদীস
এই হাদীসটি নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা করা প্রয়োজন। কারণ এটিই নারীবাদীদের একমাত্র সরাসরি যুক্তি। স্বতন্ত্র এক অধ্যায়ে হাদীসটি নিয়ে আলোচনা করা হবে। এখানে সংক্ষেপে এটুকু উল্লেখ করা হচ্ছে যে, সুনান আবি দাউদের এক বর্ণনা মতে উম্ম ওয়ারাকা (রা.) নাম্নী জনৈকা আনসারী সাহাবীয়া বদর যুদ্ধের প্রাক্কালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে যুদ্ধে অংশগ্রহণের অনুমতি চেয়েছিলেন, তাঁর অন্তরে শাহাদাতের তামান্না ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে শাহাদাতের সুসংবাদ দিয়ে বাড়িতে অবস্থানের নির্দেশ দেন। উম্ম ওয়ারাকা (রা.) বিদূষী রমণী ছিলেন; কুরআন হিফজ করতেন এবং এর কিছু অংশ লিখিত আকারে তাঁর কাছে সংরক্ষিত ছিল। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে অনুমতি চাইলেন তাঁর জন্য যেন এক মুআয্যিন নিয়োগ দেয়া হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জন্য মুআয্যিন নিয়োগ দিলেন যিনি বয়োবৃদ্ধ ছিলেন এবং তাঁকে পরিবারের সদস্যদের নামাযে ইমামতির অনুমতি দেন।
এ হাদীসে أهل دارها বাক্যাংশটি এসেছে। এ বাক্যের কল্পিত ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে ড. আমিনা ওয়াদুদ জুম‘আর নামাযে ইমামতি করেছেন।
ছয়:
আল-কুরআনে মু’মিন নারী-পুরুষকে পরস্পরের বন্ধু-অবিভাবক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে:
والمؤمنون والمؤمنات بعضهم أولياء بعض يأمرون بالمعروف وينهون عن المنكر..
‘মু’মিন নর ও মু’মিন নারী একে অপরের বন্ধু, তারা সৎকার্যের নির্দেশ দেয় ও অসৎকার্য নিষেধ করে [আল-কুরআন ৯:৭১]।’ সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ হতে নিষেধ করার বিষয়ে তাদের পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। জুম‘আর খুতবা বার্তা পৌছানোর এক অপূর্ব সুযোগ নিয়ে আসে। নারীরা যদি জুম‘আর খুতবা দিতে পারে তবে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধসহ মু’মিন সমাজের নানাবিধ বিষয়ে নিজেদের মতামত কম্যুনিটির বিশাল সংখ্যক সদস্যের কাছে পৌছাতে পারে। এই অপূর্ব সুযোগ থেকে নারীদেরকে বঞ্চিত করা ইসলামী সমাজের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়ার নামান্তর।
পর্যালোচনা:
এই পয়েন্টের মূল বক্তব্য খুবই যৌক্তিক; সমাজ পরিচালনায় নানা বিষয়ে নারীদের অংশগ্রহণ ও তাদের মত গ্রহণের প্রয়োজনীতা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু এটি এমন তীব্র প্রয়োজন নয় যে এর জন্য শরী‘আহ-এর বিধান পরিবর্তন করতে হবে। অনিবার্য প্রয়োজনে শরী‘আহ-বিধানে শিথিলতা আরোপের বিষয়টি ইসলামে স্বীকৃত। যেমন বাধ্য হলে শুকরের মাংস ভক্ষণ করা ইত্যাদি। কম্যুনিটির সদস্যদের কাছে নারী সমাজের বক্তব্য ও ভাবনা পৌছে দেয়া এমন অনিবার্য প্রয়োজন নয় যে, এজন্য শরী‘আহ-এর প্রচলিত বিধানে পরিবর্তন আনতে হবে। তদুপরি এমন অনেক উপায় আছে যদ্বারা নারী সমাজকে আরো বেশি সম্পৃক্ত করা যায় এবং তাদের বক্তব্য শোনা ও তাদের মতামত গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করা যায়। ‘আলিম সমাজের বিবেচনার জন্য এখানে কয়েকটি বিকল্প উপস্থাপন করা হচ্ছে:
ক.
পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে খুতবা-পূর্ব বক্তব্য রাখার প্রচলন রয়েছে। মূল খুতবার পূর্বে ইমাম সাহেব কোন বিষয়ে মাতৃভাষায় নাতিদীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। তারপর আরবী ভাষায় খুতবা প্রদান করেন। আমাদের দেশে গুটি কয়েক মসজিদে প্রথম খুতবা বাংলায় প্রদানের রেওয়াজ চালু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহল্লার নারীগণ তাদের বক্তব্য লিখিত আকারে ইমাম সাহেবকে প্রদান করতে পারেন যা ইমাম তার খুতবা-পূর্ব বক্তৃতায় অন্তর্ভুক্ত করবেন।
খ.
এমনকি নারীরা খুতবার পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখতে পারেন। বক্তব্য রাখার জন্য শ্রোতাদের সামনে আসা অপরিহার্য নয়। দ্বিতল ও তিতল মসজিদে খতিবকে ওপরের তলার মুসল্লিগণ দেখতে পায় না। সাধারণত মসজিদে নারীদের জন্য পৃথক স্থানের ব্যবস্থা করা হয়। তারা নিজেদের অবস্থানে থেকে বক্তব্য রাখতে পারেন, এজন্য মিহরাবের কাছে সকলের সামনে আসার প্রয়োজন নেই।
উপর্যুক্ত উপায়ে নারী সমাজকে সমাজের ভাল-মন্দের বিষয়ে আরো বেশী সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। এজন্য শরী‘আহর নির্দেশনা অমান্য করার কোন প্রয়োজন নেই।
সাত:
রাজনৈতিক অঙ্গনে নারীর নেতৃত্বদানের সামর্থ সম্পর্কে আল-কুরআনে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী রয়েছে; সাবা-র রাণীর প্রসঙ্গে যেমনটি এসেছে সূরাতুন নামল-এ (২৩-৪৪)। অ-নবী ক্যাটাগরীতে তিনিই হলেন সৎ নেতৃত্বের কুরআনিক রোল মডেল। তাঁর রাষ্ট্রপরিচালনার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, জনস্বার্থ বিবেচনা ও পরামর্শভিত্তিক সরকার পরিচালনা। পক্ষান্তরে আল-কুরআনের দৃষ্টিতে নেতিবাচক নেতৃত্বের প্রতিভূ হল ফির‘আউন (আল-কুরআন ৭৯:২৪), যে কিনা একজন পুরুষ। সুতরাং সৎ ও সফল নেতৃত্বের জন্য লিঙ্গ কোন গ্যারান্টি দিতে পারে না। অনেক সময় পুরুষ অত্যাচারী শাসক হয় আর নারী হয় ন্যায়বান শাসক। অতএব যোগ্যতাই হল বড় মাপকাঠি- জেন্ডার নয়।
আল্লাহর ঘোষণায় যে ইঙ্গিত রয়েছে তার বিরুদ্ধাচারণ করা মানুষের উচিত নয়:
ولا تقولوا لما تصف ألسنتكم الكذب هذا حلال وهذا حرام لتفتروا على الله الكذب إن اللذين يفترون على الله الكذب لا يفلحون
‘তোমাদের জিহবা মিথ্যা আরোপ করে বলিয়া আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করিবার জন্য তোমরা বলিও না, ‘ইহা হালাল এবং উহা হারাম’। নিশ্চয়ই যাহারা আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করিবে তাহারা সফলকাম হইবে না।’ [আল-কুরআন ১৬: ১১৬]
আট:
ধর্মীয় ক্ষেত্রে ভূমিকা পালনে নারীর যোগ্যতা সম্পর্কেও আল্লাহ পরিষ্কার ভাষায় ঘোষণা দিয়েছেন:
মৌলিক ধর্মীয় ভূমিকা পালনে নারীর সক্ষমতা সম্পর্কে আল্লাহ নিশ্চয়তাজ্ঞাপক ঘোষণা দিয়েছেন। আল-কুরআনে নবী ঈসার (আ) মাতা মারইয়ামকে নাজিরিট হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রাচীন ইসরাঈলী নাজিরিটদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় পদে প্রবেশের ক্ষমতা ছিল যেমনটা দেখা গেছে সামুয়েল ও স্যামসন-এর ক্ষেত্রে। হলি অব দ্য হলিস পর্যন্ত তাদের প্রবেশাধিকার ছিল যেখানে আর্ক অব কভেনান্ট রাখা ছিল। ধর্মীয় এলিট ছাড়া কেউ সেখানে যেতে পারত না। ইবাদতগাহ-এর সেবক বানানোর জন্য মারইয়ামের মা একজন পুত্র কামনা করেছিলেন, আল্লাহ তাকে এক কন্যা দান করলেন এটি প্রমাণ করার জন্য যে, ধর্মীয় ক্ষেত্রে ভূমিকা পালনে নারী-পুরুষ সমান।
নয়:
আল্লাহ লিঙ্গ-বৈষম্য ঘৃণা করেন
আল-কুরআনের নানা স্থানে লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য সৃষ্টি করাকে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন:
وإذا بشر أحدهم بالأنثى ظلّ وجهه مسودا وهو كظيم. يتواري من القوم من سوء ما بشر به أيمسكه على هون أم يدسه في التراب. ألا ساء ما يحكمون.
‘উহাদের কাহাকেও যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তাহার মুখমন্ডল কালো হইয়া যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। উহাকে যে সংবাদ দেয়া হয় তাহার গ্লানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হইতে আত্নগোপন করে। (সে চিন্তা করে) হীনতা সত্ত্বেও উহাকে রাখিয়া দিবে, না মাটিতে পুঁতিয়া দিবে! সাবধান! উহারা যাহা সিদ্ধান্ত করে তাহা কত নিকৃষ্ট! (আল-কুরআন ১৬:৫৮-৫৯)
মুসলিম নারীদেরকে ইমামতি ও খুৎবা প্রদানসহ নানাবিধ ধর্মীয় দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান লিঙ্গবৈষম্যের পর্যায়ে পড়ে যা আল্লাহ কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন।
দশ
আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দিয়েছেন
আল্লাহ তা‘আলা জীবনের সর্বক্ষেত্রে ন্যায় প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছেন। আল-কুরআনে বারবার ন্যায় প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেয়া হয়েছে:
يا أيها الذين آمنوا كونوا قوامين لله شهداء بالقسط ز ولا يجرمنكم شنآن قوم على ألا تعدلوا ط اعدلوا قف هو أقرب للتقوى ز واتقوا الله ط إن الله خبير بما تعملون Ο
‘হে মু’মিনগন! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকিবে; কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদিগকে যেন কখনও সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে। সুবিচার করিবে, ইহা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় করিবে, তোমরা যাহা কর নিশ্চয়ই আল্লাহ তাহার সম্যক খবর রাখেন। [আল-কুরআন ৫:৮)
[আরো দেখুন ৭:৩৩; ১৬:৯০]
পুরুষকে নামাযের জামা‘আতে ইমামতি ও জুম‘আর খুৎবা প্রদান অধিকার দেয়া আর নারীকে এসব ধর্মীয় অধিকার হতে বঞ্চিত করা ঘোরতর অন্যায়।
পর্যালোচনা
ওপরের যুক্তিগুলো (৭, ৮, ৯ ও ১০) যৌক্তিক হলেও প্রাসঙ্গিক নয়। আল্লাহ তা‘আলা সাবা’র রাণীর রাষ্ট্রপরিচালনাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে উপস্থাপন করেছেন। তার ইসলাম গ্রহণের বিষয়টিও প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু নবী সুলায়মানের (আ) দরবারে আগমনের পর এবং ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর রাজনৈতিক ভূমিকা সম্পর্কে আল-কুরআন নীরবতা পালন করছে।
নাজারিট হিসেবে মারইয়ামের ভূমিকা পালন ও নামাযে নারীর ইমামতির মাঝে কোন সম্পর্ক, যোগসূত্র বা সাদৃশ্য নেই। ইসলাম নারীর ধর্মীয় অধিকার ও শ্রেষ্ঠতা অর্জনের যোগ্যতা বিষয় অস্বীকার করে না। তবে নামাযে ইমামতি করতে বারণ করার নারীর ধর্মীয় অধিকার ক্ষুণ্ণ হয় না।
আল্লাহ লিঙ্গ-বৈষম্যকে পছন্দ করেন না। মিশ্রলিঙ্গের নামাযে ইমামতি হতে নারীকে বঞ্চিত করা লিঙ্গবৈষম্য নয়। তেমনিভাবে এটি অবিচারও নয়।
পশ্চিমা নারীবাদী আন্দোলনের একটি বড় কুফল হল এটি সর্বক্ষেত্রে পুরুষকে সম্মান-মর্যাদা ও অধিকার-অনধিকারের মাপকাঠি নির্ধারণ করেছে। এই আন্দোলনের দেখাদেখি এক শ্রেনীর মুসলিম নারীও পুরুষের সমকক্ষতায় নিজের অধিকার সন্ধানে ব্যস্ত। পুরুষরা যা করে তা করতে পারার অধিকারকেই নারী অধিকারের চূড়ান্ত রূপ বলে গণ্য করা হচ্ছে। অথচ আল্লাহ নারীকে নিজস্ব হিকমাতের আওতায় সম্মান দিয়েছেন, পুরুষের সাপেক্ষে নয়। কিন্তু পশ্চিমা নারীবাদ প্রেক্ষাপট থেকে আল্লাহকে বাদ দেয়ায় পুরুষ হল মানদন্ড। ফলে, একজন পশ্চিমা নারীবাদী (বা পশ্চিমা নারীবাদে বিশ্বাসী যে কেউ) পুরুষ-সাপেক্ষে মূল্য-অনুসন্ধানে ব্যাপৃত হয় এবং সে মেনে নেয় যে পুরুষ হচ্ছে মানদন্ড এবং পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে হলে পুরুষ হতে হবে; মানে পুরুষ যা করে তা করতে হবে।
একজন পুরুষ যখন চুল ছোট করে ছাঁটে সেও (পশ্চিমা নারীবাদী) চুল ছোট করে ছাঁটে। পুরুষ যখন সেনাবাহিনীতে যোগ দেয় সেও সেনাবাহিনীতে যোগ দেয় ইত্যাদি। সে এসব করে এ কারণে যে তার মানদন্ড অর্থাৎ পুরুষ তা করে।
সে বুঝতে ভুল করে নারী-পুরুষকে আল্লাহ মর্যাদা দিয়েছেন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে, সমরূপীতার ভিত্তিতে নয়।
১৪০০ ধরে মুসলিম পন্ডিতদের মাঝে এ বিষয়ে ঐকমত্য চলে আসছে যে, নামাযের জামা‘আতে ইমামতি করবেন একজন পুরুষ। ইমামতি শ্রেষ্ঠত্বের কোন নিশ্চিত নিদর্শন নয় যে তা করতেই হবে। মানুষকে বাহ্যিকতার ভিত্তিতে বিচার করতে হয়। আল্লাহ বাহ্যিকতার পাশাপাশি অন্তরের নিয়াত তথা একনিষ্ঠতাও বিচার করবেন। সুতরাং এটা মোটেই অসম্ভব নয় যে মুক্তাদীদের কেউ তাকওয়ার বিচারে ইমামের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পারেন। ইমামতি যদি শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হত ‘আয়িশা (রা) ও খাদিজার (রা.) মত নারীগণ ইমামতি করতেন। অথচ সহীহ হাদীস দ্বারা এটা প্রমাণিত যে ‘আয়িশা (রা) তাঁর দাসের পেছনে নামায আদায় করেছেন।
ইমামতির অধিকার আল্লাহ পুরুষকে দিয়েছেন; পক্ষান্তরে কেবল নারীই মা হতে পারে। আর ইসলাম শেখায় যে মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত । কার প্রতি বেশি সদয় হওয়া উচিত? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনবার মায়ের কথা বলার পর চতুর্থবারে পিতার কথা বলা হয়েছে। এটিও কি লিঙ্গ-বৈষম্য?
আল্লাহ নারী-পুরুষকে তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের আলোকে নিজ বিবেচনা-সাপেক্ষে মর্যাদা দিয়েছেন। চরম পরিতাপের বিষয় হল নারীবাদীরা মর্যাদা খোঁজে পুরুষের কাছে। পশ্চিমা নারীবাদ পুরুষকে এমনভাবে মানদন্ড হিসেবে নির্ধারণ করেছে যে, তাদের দৃষ্টিতে নারীসুলভ সবকিছুই ঘৃণ্য, পরিত্যাজ্য। স্পর্শকাতরতা অপমানজনক, মা হওয়া অবমাননাকর। আত্নসংযমী যুক্তিশীলতা (পুরুষোচিত হিসেবে বিবেচিত) ও আত্নোৎসর্গকারী অনুকম্পার (নারীসুলভ বলে বিবেচিত) মধ্যে লড়াইয়ে যুক্তিশীলতা সর্বোৎকৃষ্ট।
নারীরা যখন এটা মেনে নিল যে, পুরুষের যা আছে বা পুরুষ যা করে তা আরো-ভালো। এর অনিবার্য পরিণতিতে তারা তাই করতে থাকল যা পুরুষ করে। পুরুষ সামনের কাতারে নামায পড়ে; অতএব তা আরো ভালো, তা করতেই হবে। পুরুষ নামাযে ইমামতি করে; সুতরাং এটি আরো ভালো এবং তা করতেই হবে, এর মাঝেই নিহিত আছে অধিকার আর মর্যাদা। একজন মুসলিম নারীর প্রয়োজন নেই পুরুষ-অনুকরণের পেছনে ছুটে নিজেকে এভাবে অপমানিত করা। আল্লাহ তাকে মর্যাদা দিয়েছেন। পুরুষ-সাপেক্ষে তার মর্যাদাবান হওয়ার দরকার নেই।
বাস্তবে, পুরুষকে অনুসরণ করার নেশায় নারীরা কখনো খেয়াল করেনি যে তাদের যা আছে তা আরো-ভালো। কোন কোন ক্ষেত্রে পুরুষকে অনুসরণ করতে গিযে নারীরা আরো- ভালো জিনিস হাতছাড়া করে।
পঞ্চাশ বছর আগে ফ্যাক্টরীতে কাজ করার জন্য পুরুষরা বাড়ি ছাড়ে। নারীরা ছিল মা। তা সত্ত্বেও তারাও পুরুষের অনুসরণে ফ্যাক্টরিতে গেল। কালক্রমে নারীদের মনে এ ধারণা জন্মাল যে মনুষ্য প্রাণীকে লালন-পালন করার চাইতে মেশিনে কাজ করা নারীমুক্তির নিশ্চয়তা দেবে। ফ্যাক্টরিতে কাজ করা সমাজের ভিত্তি স্থাপনকারী কাজের চাইতে উৎকৃষ্ট-কারণ তা পুরুষ করে।
তারপর, ফ্যাক্টরিতে কাজ করার পর, আশা করা হয়, নারীরা হবে অতি মানব- নিখুঁত মা, নিখুঁত স্ত্রী, নিখুঁত ঘরণী, আবার থাকবে ত্রুটিমুক্ত ক্যারিয়ার। যদিও নারীর ক্যারিয়ার থাকা দোষের কিছু না তবুও এক সময় নারীরা বুঝতে পারে পুরুষের অন্ধ অনুকরণ করে তারা কি হারাতে বসেছে। নিজ সন্তান অচেনা হয়ে ওঠতে দেখে তারা বুঝতে পারে কোন্ সুযোগ-সুবিধাগুলো তারা হারিয়েছে।
এতদিন পশ্চিমা নারীদের উপলব্ধি হয়েছে, পশ্চিমা নারী এখন সন্তান লালন-পালনের পক্ষে রায় দেয়। ইউনাইটেড স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচারের মতে যাদের এক সন্তান আছে এমন মায়েদের ৩১% আর যাদের দুই বা ততোধিক সন্তান আছে এমন মায়েদের মাত্র ১৮% ফুলটাইম কাজ করেন। কর্মরত নারীদের ৯৩% বলেন পারলে তারা সন্তানদের সাথে ঘরে থাকতেন, কিন্তু আর্থিক দায়-দায়িত্বের কারণে কাজ করতে বাধ্য হন। আধুনিক পশ্চিমে জেন্ডার সমতার মাধ্যমে নারীদের ওপর আর্থিক দায়-দায়িত্ব চাপানো হয়েছে। ইসলামের জেন্ডার বিশেষত্ব নারীকে এ দায় থেকে মুক্ত রাখে।
নারী যা না তা হওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়; আল্লাহ প্রদত্ত স্বভাব-বৈশিষ্ট্য অস্বীকার করে পুরুষ অনুকরণের পেছনে ছুটলে নারীর মুক্তি মিলবে না। বিশ্ব-সংসারে নেতৃত্ব দান ও পায়ের তলার জান্নাত কোনটিকে নারীর প্রাধান্য দেয়া উচিত। আমি বলব দ্বিতীয়টি।
উপর্যুক্ত আলোচনান্তে বুঝা গেল মিশ্র-জেন্ডারের নামাযে নারীকে ইমামতি বঞ্চিত করা লিঙ্গ-বৈষম্য নয়, এটি অবিচারও নয়। বরং আল্লাহর হিকমাতের অনিবার্য ফলাফল।
ইারীর ইমামতির পক্ষ-বিপক্ষের যুক্তিগুলো পর্যালোচনা করা হল। দু’টি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি সবিস্তারে আলোচনা করা প্রয়োজন; এক: ইজমা‘, যা নারীর ইমামতি অবৈধ হওয়ার পক্ষে সবচাইতে শক্তিশালী যুক্তি। আরেকটি উম্ম ওয়ারকা (রা.)-এর হাদীস, যা নারীর ইমামতির বৈধতার পক্ষে সবচাইতে শক্তিশালী যুক্তি হিসেবে উপস্থাপিত হয়। পর্যায়ক্রমে যুক্তি দু’টি বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে।
‘মিশ্র-জেন্ডারের জামা‘আতে নারীর ইমামতি অবৈধ’ এ বিষয়ে কোন ইজমা‘ আছে কি?
পূর্বের আলোচনায় আমরা দেখেছি নারীর ইমামতিতে মিশ্র-লিঙ্গের নামায অবৈধ হওয়ার বিষয়ে ইজমা‘ আছে কিনা এ বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। আমিনা ওয়াদুদ-সমর্থকরা এ বিষয়ে ইজমা‘ নেই বলে দাবী করছেন। তাদের একটি বড় যুক্তি হল আবু ছাওর, আল-মুযানী ও আত-তাবারীর মত মনীষীগণের ভিন্নমতের উপস্থিতিতে এটা দাবী করা যায় না যে, নারীর ইমামতি নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে ইজমা‘ রয়েছে। আর কোন বিষয়ে যদি ইজমা‘ না থাকে তবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট মুসলিম কম্যুনিটির এখতিয়ার রয়েছে; তারা মতভেদপূর্ণ বিষয়ের যে কোন একটি গ্রহণ করতে পারে। এ মূলনীতির ভিত্তিতে পিএমউ নারীর ইমামতিতে জুম‘আর নামায আদায়ের ব্যবস্থা করে।
অপরদিকে যাঁরা নারীর ইমামতির বিপক্ষে লেখালেখি করেছেন তাঁরা বিভিন্ন ফিকহ গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে জোরের সাথে বলছেন ‘মিশ্র-লিঙ্গের জামা‘আতে নারীর ইমামতি অবৈধ’ এ বিষয়ে ইজমা‘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইবনু হাযম বলেন:
ولا يجوز أن تؤم المرأة الرجل أو الرجال وهذا ما لا خلاف فيه
‘মহিলার জন্য এক পুরুষ বা অধিক পুরুষ কারোই ইমামতি করা জায়েজ নয়। এ বিষয়ে কোন মতান্তর নেই।
ইবনু হাযম আরো বলেন:
واتفقوا ان المرأة لا تؤم الرجال وهم يعلمون انها امرأة فان فعلوا فصلاتهم فاسدة باجماع ‘মুজতাহিদগণ এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, কোন মহিলা পুরুষের ইমামতি করতে পারবে না, যদি তারা জানে যে ইমাম একজন মহিলা। যদি তারা তা করে তবে ইজমা‘-এর ভিত্তিতে তাদের নামায নষ্ট হয়ে যাবে।
পরস্পরবিরোধী দাবীদ্বয় নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গীতে পরীক্ষা করতে হলে ইজমা‘ এর সংজ্ঞা জানা প্রয়োজন।
ইজমা‘ কি
এ রচনার মূল আলোচ্যবিষয় ইজমা‘ নয়; অতএব এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনার সুযোগ নেই। অতি সংক্ষেপে ইজমা‘-এর পরিচয় এখানে উপস্থাপন করা হবে।
ড. ওয়াহবাতুয যুহাইলী বলেন,
اتفاق المجتهدين من أمة محمد بعد وفاته في عصر من العصور على حكم شرعي.
‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওফাতের পর কোন শর‘ঈ হুকুমের বিষয়ে কোন যুগের মুজতাহিদগণের ঐকমত্যকে ইজমা‘ বলে।’
ইজমা‘-এর বাস্তব অস্তিত্ব আছে কি?
যে বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহ-এ সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যায় সে ব্যাপারে তৃতীয় কোন যুক্তির/দলীলের প্রয়োজন হয় না। এ কারণে ইজমা‘-এর সংজ্ঞায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগের পরবর্তী সময়ের কথা বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন তিনি ওয়াহী-এর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দিতেন। তাঁর ওফাতের পর উদ্ভূত নানা শর‘ঈ সমস্যার সমাধানে সাহাবায়ে কিরাম পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রশ্ন হল: সকল মুজতাহিদ একমত হয়েছেন এমন কোন বিষয় আছে কি অর্থাৎ ইজমা‘-এর বাস্তব কোন অস্তিত্ব আছে কি?
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওফাতের পর নব-উদভূত নানা সমস্যা সমাধানে সাহাবায়ে কিরাম ইজতিহাদ করেছেন; অনেক বিষয়ে তাঁদের মাঝে মতানৈক্য হলেও মতৈক্যের দৃষ্টান্তও কম নয়। যেমন, যাকাত অস্বীকারকারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, আল-কুরআন গ্রন্থাকারে একত্রিত করা, দাদীকে তর্কার এক-ষষ্ঠাংশ দেয়া, বোন ও ফুফুকে একত্রে বিয়ে করার নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি। সাহাবায়ে কেরাম মোটামুটি নির্দিষ্ট এলাকায় বসবাস করতেন; বিজয়াভিযানে যারা অংশ নিতেন তাঁদের মাঝে মুজতাহিদ সাহাগণের অবস্থান অজ্ঞাত ছিল না। ফলে ইজমা‘ সম্পাদন সম্ভব ছিল।
সাহাবায়ে কিরামের পরবর্তী যুগে কোন ইজমা‘-এর অস্তিত্ব নিয়ে মতভেদ আছে। বিশেষত নিরেট ইজতিহাদী বিষয়ে, যে বিষয়ে কোন সমস্যা উদ্ভূত হয়নি অথচ মুজতাহিদগণ হাইপোথিটিক্যালি সমস্যা ধরে নিয়ে অগ্রিম সমাধান দিয়েছেন। এ ধরণের মাসআলা ফিকহ-এর গ্রন্থে অবিদিত নয়। এ ধরণের বিষয়ে ইজমা‘ সম্পাদিত হওয়া খুব সহজ নয়। ড. ওয়াহবাতুয যুহাইলী বলেন,
أما الإجماع في المسائل الاجتهادية البحتة فلا يمكن الإجماع عليها بسهولة، كل ما يمكن قوله: هو أن هناك أراء كثيرة لا يعلم الخلاف بين الصحابة وغيرهم، وهذا عند الجمهور داخل في الإجماع الظني. أما التحقق من عدم المخالف فهي دعوى تحتاج إلى إثبات ونقل صحيح، أو أن يقال: إن الإجماع الذي يدعونه في عصر الصحابة هو حكم صادر عن شورى الجماعة، لا عن رأى الفرد. وبناء عليه فإن تعريف الإجماع الذي ذكر عند الجمهور (وهو اتفاق جميع المجتهدين من أمة محمد قولا على حكم شرعي) ليس من السهل إثباته بدليل قطعي لا شبهة فيه، لا سيما بعد الصحابة، فإنه لم ينعقد إجماع، وكان التشريع فرديا لا شوريا.
‘নিরেট ইজতিহাদি বিষয়ে ইজমা‘ সম্পাদন খুব সহজ নয়। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ এটুকু বলা যায়: এখানে অনেক অভিমত রয়েছে, সাহাবা বা অন্যদের মাঝে এ বিষয়ে মতভেদ আছে বলে জানা যায় না, সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘আলিমের মতে এটিও ইজমা‘; তবে ধারণামূলক ইজমা‘ [অকাট্য বা নিশ্চিত ইজমা‘ নয়]। তবে বিরোধী মতাবলম্বী না থাকার দাবী পরম্পরাসূত্রে প্রমাণের মুখাপেক্ষী। অথবা এটা বলা যায়: সাহাবীদের যুগে ইজমা‘ সম্পাদিত হয়েছে বলে যে দাবী করা হচ্ছে তা হল একদল সাহাবীর পরামর্শভিত্তিক সিদ্ধান্ত [ব্যক্তিগত মত নয়।] এ আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, সংখ্যাগরিষ্ঠ উসূলবিদ ইজমা‘-এর যে সংজ্ঞা দিয়েছেন [অর্থাৎ উম্মাতে মুহাম্মাদীর মুজতাহিদগণের কোন বিষয়ে মতৈক্যে উপনীত হওয়া] তা সন্দেহমুক্ত অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণ করা সহজ নয়, বিশেষত সাহাবীদের যুগের পর। কারণ [তাঁদের যুগের পর] ইজমা‘ সম্পাদিত হয়নি, আর আইন প্রণয়নের কাজ হয়েছে ব্যক্তিগত উদ্যোগে, পরামর্শভিত্তিক নয়।’
সম্ভবত এ কারণে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল বলতেন:
من ادعى الإجماع فهو كاذب، لعل الناس قد اختلفوا ولكن يقول: لا نعلم الناس اختلفوا إذا لم يبلغه.
‘যে ইজমা‘-এর দাবী করে সে মিথ্যাবাদী; ‘আলিমগণ হয়ত মতভেদ করেছেন; তাই মতভেদের বিষয়ে কিছু জানা না থাকলে [‘আলিমগণ ইজমা‘ করেছেন’ না বলে] এভাবে বলা উচিত: ‘আলিমগণ মতভেদ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই।’
সাহাবী, তাবি‘ঈ বা পরবর্তীতে ইমামগণের যুগে কোন নারী ইমামতি করেছিলেন বলে জানা যায় না কিংবা জোরালোভাবে এ দাবী উত্থাপিত হয়েছিল এমন তথ্যও আমাদের জানা নেই। তবে অনেক ইমাম এ বিষয়টি এড্রেস করেছেন, অনেকে এড্রেস করেননি। যেহেতু এটি বাস্তব সমস্যা ছিল না তাই এ সমস্যা উদ্ভূত হলে অন্যরা কি সমাধান দিতেন তা প্রশ্নসাপেক্ষ। অতএব এ বিষয়ে ইজমা‘ রয়েছে বলে দাবী করা কঠিন। তদুপরি এখানে আরো সমস্যা রয়েছে: আবু ছাওর, আল-মুযানীর মত ফকীহ-এর কন্ঠে ভিন্নমত উচ্চারিত হয়েছে।
দুয়েক জনের মতানৈক্যের উপস্থিতিতে ইজমা‘ সম্পাদিত হয় কি?
আলোচ্য বিষয়ে দেখা যাচ্ছে, প্রায় দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে মাত্র হাতে গোণা তিন জন মুজতাহিদ (অনেকে আত-তাবারীকে মুজতাহিদ বলে গণ্য করেন না।) পুরুষের জামা‘আতে নারীর ইমামতি বৈধ বলেছেন। তাঁদের এই মতানৈক্য ইজমা‘ সংঘটিত হওয়ায় অন্তরায় কি?
ইজমা‘ সম্পাদিত হওয়ার জন্য বেশকিছু শর্ত রয়েছে। তম্মধ্যে অন্যতম হল إجماع الكل বা সকলের ঐকমত্য; সব অঞ্চলের, সব বর্ণের, সব মাযহাবের মুজতাহিদগণের একমত হওয়া শর্ত। কোন এক অঞ্চলের মাত্র একজন মুজতাহিদের মতানৈক্য ইজমা‘ সংঘটনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আল-আমিদী বলেন,
اختلفوا في انعقاد إجماع الأكثر مع مخالفة الأقل، فذهب الأكثرون إلى أنه لا ينعقد ‘ সংখ্যালঘুর বিরোধিতায় সংখ্যাগুরুর ইজমা‘ সম্পাদিত হয় কি, এ বিষয়ে উসূলবিদগণ মতভেদ করেছেন; তবে অধিকাংশ উসুলবিদ বলেন, অল্পসংখক মুজতাহিদের বিরোধিতা থাকলে ইজমা‘ সম্পাদিত হয় না।’ আবুল বারাকাত আল-নাসাফী বলেন, والشرط إجماع الكل وخلاف الواحد مانع كخلاف الأكثر
‘শর্ত হল সকলের একমত হওয়া; আর একজনের বিরোধিতা অধিকাংশের বিরোধিতার মত ইজমা‘ সংঘটনে প্রতিবন্ধক।’
আয-যুহাইলী বলেন:
لا بد من موافقة جميع المجتهدين فإذا خالف أحدهم لم ينعقد الإجماع .. .. اختلف العلماء في انعقاد الإجماع بأكثر المجتهدين، فقال الجمهور لا ينعقد.
‘ অবশ্যই সকল মুজতাহিদকে একমত হতে হবে; যদি কোন একজন ভিন্নমত পোষণ করেন তবে ইজমা‘ হবে না .. ..অধিকাংশ মুজতাহিদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে ইজমা‘ সম্পাদনে ‘আলিমগণ মতভেদ করেছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘আলিম বলেন, ইজমা‘ হবে না [সকল মুজতাহিদের ঐকমত্য প্রয়োজন।]
এখন প্রশ্ন হল: আবু ছাওর, আল-মুযানী, ও দাউদ জাহেরীর মত অন্যূন তিন/চারজন মুজতাহিদ-এর বিরোধিতা সত্ত্বেও কীভাবে পুরুষের জামা‘আতে/মিশ্র জামা‘আতে নারীর ইমামতি নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে ইজমা‘ হল?
এ প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানের পূর্বে উপর্যুক্ত চার মনীষীর বিরোধিতার ধরণ সম্পর্কে সম্যক আলোকপাত করা দরকার।
নারীর ইমামতি সমর্থনকারী এ চার মুজতাহিদের নাম কোন কিতাবে একত্রে পাওয়া যায় না। কোন গ্রন্থে দু’জনের নাম পাওয়া যায়, কেউ বা শুধু একজনের নাম উল্লেখ করেছেন। অনেকে দাউদ জাহেরীর নাম নারীর ইমামতির বিরোধিতাকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
নারীর ইমামতি সমর্থনকারী হিসেবে আবু হামিদ শুধু আবু ছাওর-এর নামোল্লেখ করেছেন: وقال الشيخ أبو حامد: مذهب الفقهاء كافة أنه لا يصح صلاة الرجال ورائها إلا أبا ثور
শায়খ আবু হামিদ বলেন, ‘সমস্ত ফকীহ-এর মাযহাব এই যে, মহিলার পেছনে পুরুষের নামায শুদ্ধ নয়। একমাত্র আবু ছাওর ব্যতিত অর্থাৎ কেবল আবু ছাওর এই মাসআলায় মতানৈক্য করেছেন।’
ইমাম নওয়াবী দাউদ জাহেরীর নাম নারীর ইমামতির বিরোধিতাকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন:
وهذا مذهبنا ومذهب جماهير العلماء من السلف والخلف وحكاه البيهقي عن الفقهاء السبعة فقهاء المدينة والتابعين. وهذا مذهب أبي حنيفة ومالك وسفيان وأحمد وداؤد
‘(পুরুষের নামাযে নারীর ইমামতি জায়েজ নয়) এটি আমাদের অভিমত, উর্ধতন ও অধস্তন পূর্বসূরি ‘উলামার অভিমত। আল-বাইহাকী, মদীনার সাত ফকীহ ও তাবিঈগণের অভিমত হিসেবে এটি হেকায়ত করেছেন। এটি আবু হানিফা, মালিক, আহমাদ, সুফইয়ান আল-ছাওরী ও দাউদ-এর অভিমত।
ইবনু রুশদ নারীর ইমামতির সমর্থক হিসেবে শুধু আবু ছাওর ও আত্-তাবারী-এর নামোল্লেখ করেছেন:
وشذ أبو ثور والطبري فأجازا إمامتها على الإطلاق.
‘আবু ছাওর ও আত্-তাবারী অভিনব মত দিয়েছেন, তাঁরা সাধারণভাবে নারীর ইমামতির বৈধতা দিয়েছেন।’
নারীর ইমামতি সমর্থনকারী হিসেবে ইবনু কুদামা আবু ছাওর ও আল-মুযানীর নামোল্লেখ করেছেন; অন্যদের কথা বলেননি। আল-‘আইনী শুধু আত্-তাবারীর নাম উল্লেখ করেছেন; তাঁর দৃষ্টিতে আত্-তাবারী মুজতাহিদ নন বলে তাঁর বিরোধিতাকে অগ্রাহ্য করেছেন।
ইবন রাসলান, তাবারী ও আবু ছাওর-এর কথা বলেছেন। আর আল-মানহাল গ্রন্থে এসেছে তিনজনের নাম: দাউদ, আবু ছাওর ও আল-মুযানী।
নারীর ইমামতির সমর্থনকারীগণের নামোল্লেখে এই ভিন্নতার পাশাপাশি তাঁদের অভিমতের ধরণ সম্পর্কেও নানা টাইপের বক্তব্য পাওয়া যায়।
দাউদ জাহেরীর কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে; দু’পক্ষেই তাঁর নাম পাওয়া যায়। আত-তাবারী বিনাশর্তে নারীর ইমামতির বৈধতা দেননি। মহিলার ইমামতি সম্পর্কে আত্-তাবারীর অভিমত সম্পর্কে আল-‘আইনী বলেন: , يجوز إمامتها في التراويح إذا لم يكن هناك قارئ غيرها.
‘যদি মহিলা ছাড়া পুরুষদের মাঝে কোন বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াতকারী না থাকে তবে তারাবীহ-এর নামাযে মহিলার ইমামতি বৈধ।’
আবু ছাওর ও আল-মুযানীও সাধারণভাবে মহিলাদের ইমামতি বৈধ বলেননি, তাঁদের মতে, ঘটনাচক্রে কোন পুরুষ যদি নারীর পেছনে নামায আদায় করে তবে তাকে নামায দোহরাইতে হবে না। ইবনু কুদামা বলেন:
وقال أبو ثور‏:‏ لا إعادة على من صلى خلفها وهو قياس قول المزنى
আবু ছাওর বলেন, মহিলার পেছনে কেউ (কোন পুরুষ) নামায আদায় করলে তাকে নামায দোহরাতে হবে না। আল-মুযানীর অভিমতও অনুরূপ।
ভিন্নমতাবলম্বীদের মত যাচাই শেষে ইজমা‘র অস্তিত্ব নিয়ে আলোচনা করা দরকার। ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, একজন মুজতাহিদও যদি ভিন্নমত পোষণ করে তবে ইজমা‘ সম্পাদিত হবে না। এখানে দেখা যাচ্ছে পুরুষের জামা‘আতে নারীর ইমামতি অবৈধ হওযার বিষয়ে মৌলিকভাবে কেউ বিরোধিতা করেননি। তবে খুঁটিনাটি বিষয়ে কিছু মতভেদ রয়েছে। সাধারণভাবে পুরুষের জামা‘আতে নারীর ইমামতির বৈধতা কেউ দেননি এবং এ মতভেদ ইজমা‘ সম্পাদনে প্রতিবন্ধক হতে পারে না। তবে এই মাসআলায় ইজমা‘-এর প্রকার ও আওতা সীমাবদ্ধ করা যেতে পারে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে হাম্বলী ‘আলিমগণের একাংশ তারাবীহ ও নফল নামাযে নারীর ইমামতির বৈধতা দিয়েছেন, যদি উপস্থিত পুরুষের মাঝে বিশুদ্ধ তিলাওয়াতকারী না থাকে। পরিশেষে এটুকু বলা যায়: ‘পুরুষের ফরয নামাযে নারীর ইমামতি বৈধ নয়’ এ বিষয়ে ‘আলিমগণের ইজমা‘ রয়েছে।’ তবে এটি সুস্পষ্ট ইজমা‘ (الإجماع الصريح ( নয়, যা অস্বীকার করলে কাফির হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটিকে বরং الإجماع الظني বা ধারণামূলক ইজমা‘ বলা যেতে পারে। এ-ধরণের ইজমা‘ অস্বীকারকারী কাফির না হলেও হুজ্জাত হওয়ার জন্য এটি যথেষ্ট। অতএব ফরয কিংবা জুম‘আর নামাযে নারীর ইমামতি জায়েজ নয়। তবে পুরুষের নফল বা তারাবীহ নামাযে নারীর ইমামতির অবৈধতার বিষয়ে ইজমা‘ নেই। তার মানে এ নয় যে, পুরুষের নফল নামাযে মহিলার ইমামতি বৈধ। ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘আলিম ও মুজতাহিদের মতে ফরয বা নফল বা তারাবীহ যে কোন ধরণের নামাযে-যেখানে পুরুষ মুক্তাদী থাকে- নারীর ইমামতি বৈধ নয়। আর পুরুষের বা মিশ্র-জেন্ডারের ফরয নামাযের জামা‘আতে নারীর ইমামতি অবৈধ হওয়ার বিষয়ে ‘আলিমগণের মাঝে ঐকমত্য (ইজমা‘) রয়েছে।
অনেকে বিরোধীদের অনুচ্চ স্বরের ভিন্নমত শ্রবণ করেননি বা ধর্তব্যে আনেননি। তাঁদের মতে এই ‘আলিমদের [আবু ছাওর, আল-মুযানী..] ভিন্নমত প্রকাশের আগেই পুরুষের জামা‘আতে নারীর ইমামতির অবৈধতার বিষয়ে ইজমা‘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অতএব পূর্ববর্তীদের ইজমা‘-এর মাধ্যমে পরবর্তীদের [মানে আবু ছাওর, আল-মুযানী ও আত্-তাবারীর] ভিন্নমত আমলঅযোগ্য হয়ে পড়েছে: فقول القائلين بجواز إمامتها للرجال محجوج بإجماع من قبله
‘যারা পুরুষের নামাযে নারীর ইমামতি বৈধ বলেন, তাদের ভিন্নমত, পূর্ববর্তীদের ইজমা‘-এর মাধ্যমে অযৌক্তিক হয়ে পড়েছে।
এ রচনাকারের অভিমত: এ ধরণের বক্তব্য মুজতাহিদ ‘আলিমগণের বক্তব্যকে বিনা পর্যালোচনায় প্রত্যাখ্যান করার নামান্তর। নারীর ইমামতির বৈধতা জ্ঞাপনকারীদের মাঝে আল-মুযানী’র নাম রয়েছে। তিনি ইমাম আশ-শাফি‘ঈ’র ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন, যখন ইমাম সাহেব আল-উম্ম রচনা করেছিলেন। আশ-শাফি‘ঈ কিতাবুল উম্ম-এ বলেছেন, পুরুষের নামাযে নারীর ইমামতি অবৈধ; কোন পুরুষ নারীর পেছনে নামায আদায় করলে তাকে পুনরায় তা আদায় করতে হবে। আর ঐ একই সময়ে আল-মুযানী তাঁর ইমামের মতের বিরোধিতা করেছেন। এখন কীভাবে বলা যায়, বিরোধীদের বিরোধিতা পূর্ববর্তীদের ইজমা‘ দ্বারা বাতিল হয়ে গেছে? তাছাড়া পূর্ববর্তীদের ইজমা‘ কখন সম্পাদিত হয়েছিল তার কোন দিনক্ষণ জানা নেই।
পুরুষের নামাযে নারীর ইমামতি অবৈধ হওয়ার বিষয়ে যেসব প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যুক্তি দেওয়া হয় সেগুলি সবিস্তারে পর্যালোচনা করা হল। এ বিষয়ে আল-কুরআন ও সুন্নাহ-এ কোন সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে নিষেধাজ্ঞার অনুপস্থিতি নারীর ইমামতিকে বৈধতা দেয় না। কারণ ইবাদাহ হিসেবে নামাযের সব বিধি-বিধান তাওকীফী। তাছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইমাম, মুজতাহিদ ও ‘আলিমগণের মাঝে এ বিষয়ে মতৈক্য রয়েছে। তদুপরি মহিলাদের ওপর জুম‘আ ও জামা‘আতে নামায আদায় ওয়াজিব নয় আর পুরুষের ওপর ওয়াজিব। নামাযে মহিলাদের কাতার পুরুষ ও বালকদের পেছনে হয়ে থাকে; এটি প্রতিষ্ঠিত ও অবিতর্কিত সুন্নাহ। আবার ইমামকে সামনে বা একই কাতারে দাঁড়াতে হয়। এ নিয়ম ফরয, নফল ও তারাবীহ্সহ সকল নামাযে প্রযোজ্য। অতএব কোন নামাযে কিছুতেই পুরুষের জন্য নারীর ইমামতি বৈধ হতে পারে না। আর তাই ইবনু হাযম বলেন:
وحكمه عليه السلام بأن تكون وراء الرجل ولا بد في الصلاة، وأن الإمام يقف أمام المأمومين ولا بد، أو مع المأموم في صف واحد على ما نذكر إن شاء الله تعالى في مواضعه. ومن هذ النصوص يثبت بطلان إمامة المرأة للرجل وللرجال يقينا
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেন মহিলারা পুরুষের পেছনে থাকবে, এবং নামাযে এটি বাধ্যতামূলক, আবার বাধ্যতামূলকভাবে ইমাম, মুক্তাদীর সামনে বা একই কাতারে দাঁড়ান। [যেমনটি যথাস্থানে আমি বর্ণনা করব ইনশা আল্লাহ।] এইসব নস হতে এক পুরুষ বা অনেক পুরুষের নামাযে নারীর ইমামতির অবৈধতা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়।
নারীর ইমামতির পক্ষে সবচাইতে শক্তিশালি যে দলীল উপসস্থাপন করা হয় অর্থাৎ উম্ম ওয়ারাকার (রা) সেটি এখন সবিস্তারে পর্যালোচনা করা হবে।

 

উম্ম ওয়ারাকার (রা) হাদীস
নারীর ইমামতিতে মিশ্র-লিঙ্গের নামাযের বৈধতার দাবীদারদের সবচাইতে শক্তিশালী যুক্তি হল উম্ম ওয়ারাকার হাদীস। এ হাদীসের মূলভাষ্যের ব্যাখ্যা নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। এর ওপর মূল যুক্তি আবর্তিত হওয়ায় হাদীসটি সবিস্তারে আলোচনা করা হবে।
ছিহাহ ছিত্তা নামে পরিচিত হাদীসের বিখ্যাত গ্রন্থ ছয়ের মাঝে কেবল আবু দাউদের সুনান-এ হাদীসটি এসেছে। আবু দাউদ দু’টি সনদে বর্ণনাটি এনেছেন। এখানে সনদসমেত বর্ণনাদ্বয় উল্লেখ করা হল।
حدثنا عثمان بن أبي شيبة حدثنا وكيع بن الجراح حدثنا الوليد بن عبد الله بن جميع قال حدثةني جدةي وعبد الرحمن بن خلاد الأنصاري عن أم ورقة بنة عبد الله بن نوفل الأنصارية أن النبي (صلى الله عليه وسلم) لما غزا بدرا قالة قلة يا رسول الله! ائذن لي في الغزو معك أمرض مرضاكم لعل الله أن يرزقني شهادة. قال: قري في بيةك؛ فإن الله يرزقك الشهادة. قال: فكانة ةسمى الشهيدة. قال: وقد كانة قرأة القرآن فاسةأذنة النبي أن ةةخذ في دارها مؤذنا فإذن لها. قال: وكانة قد دبرة غلاما لها وجارية فقاما إليها بالليل فغماها بقطيفة لها حةى ماةة وذهبا، فلما أصبح عمر قام في الناس فقال من كان عنده من هذين علم فليجيئ بهما فامر بهما فصلبا فكانا أول مصلوب بالمدينة.
সনদ: উছমান ইবন আবু শায়বা→ওয়াকী‘ ইবনুল জার্রাহ→আল-ওয়ালীদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবন জুমাই‘→তদীয় দাদী/আবদুর রহমান ইবনু খাল্লাদ আল-আনসারী→উম্ম ওয়ারাকা
মতন: (উম্মু ওয়ারাকা বিনত আবদুল্লাহ ইবন নওফিল আল-আনসারিয়্যাহ বলেন) নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন বদর যুদ্ধের প্রস্ত্ততি নিচ্ছিলেন তখন আমি তাঁকে বললাম, ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনার সাথে আমাকে যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দিন, আমি পীড়িতের সেবা করব; হয়ত আল্লাহ আমাকে শাহাদাতের উপজীবিকা দান করবেন।’ তিনি [রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেন, ‘আপনার বাড়ীতে অবস্থান করুন; আল্লাহ নিশ্চয় আপনাকে শাহাদাতের উপজীবিকা দান করবেন।’ বর্ণনাকারী ওয়াকী‘ বলেন, তিনি ‘শাহীদা (শাহাদাত বরণকারী)’ নামে পরিচিত ছিলেন। বর্ণনাকারী আল-ওয়ালীদ বলেন, তিনি কুরআন হিফজ করতেন, তাই নবীর কাছে তাঁর বাড়িতে একজন মুআয্যিন রাখার অনুমতি চাইলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে (মুআয্যিন রাখার) অনুমতি দিলেন। বর্ণনাকারী ওয়াকী‘ বলেন, উম্মু ওয়ারাকা (রা) এক দাস ও এক দাসীকে এই শর্তে আযাদ করেছিলেন যে, ওদের আযাদী তাঁর মৃত্যুর পর কার্যকর হবে। এক রাতে ওরা লেপ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে উম্ম ওয়ারাকাকে হত্যা করে পালিয়ে গেল। সকালে ওঠে ‘উমার (রা.) জনমন্ডলীর মাঝে ভাষণে দন্ডায়মান হয়ে বললেন, ‘কারো কাছে এদের দু’জনের ব্যাপারে তথ্য থাকলে সে যেন তাদেরকে পাকড়াও করে নিয়ে আসে।’। (হত্যাকারীদের ধরে আনা হলে) ‘উমার (রা.) তাদের ব্যাপারে নির্দেশ দিলেন এবং তাদেরকে শূলীতে চড়িয়ে হত্যা করা হল এবং মদীনায় এদেরকেই সর্বপ্রথম শূলীতে চড়ানো হয়েছিল।’

আবু দাউদের দ্বিতীয় বর্ণনা
حدثنا الحسن بن حماد الحضرمي حدثنا محمد بن فضيل عن الوليد بن جميع عن عبد الرحمن بن خلاد عن ام ورقة بنت عبد الله بن الحارث بهذا الحديث والأول أتم وقال كان رسول الله يزورها في بيتها وجعل لها مؤذنا يؤذن لها وامرها أن تؤم أهل دارها. قال عبد الرحمن رأيت مؤذنها شيخا كبيرا
সনদ: আল-হাসান ইবনু হাম্মাদ আল-হাযরামী→মুহাম্মাদ ইবনু ফুযাইল→আল-ওয়ালীদ ইবনু জুমাই‘→আবদুর রহমান ইবনু খাল্লাদ→উম্ম ওয়ারাকা
মতন: আল-হাসান উপর্যুক্ত সনদে এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন; তবে প্রথমটি অধিকতর পূর্ণাঙ্গ। বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনু ফুদাইল বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বাড়িতে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁর জন্য একজন মুআয্যিন নির্ধারণ করেছিলেন যিনি তাঁর জন্য আযান দিতেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে পরিবার-পরিজনের নামাযে ইমামতি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বর্ণনাকারী আবদুর রহমান বলেন, ‘আমি তাঁর মুআয&&যনকে দেখেছি, তিনি খুব বৃদ্ধ ছিলেন।’
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিশুদ্ধতম সংকলন ষষ্টকের মধ্যে কেবল আবু দাউদের সুনানে উম্ম ওয়ারাকার হাদীসটি এসেছে।
উপর্যুক্ত বর্ণনাদ্বয়ের বেশিরভাগ বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত ও গ্রহণযোগ্য; তবে তিন বর্ণনাকারীর ব্যাপারে কিছুটা কথাবার্তা রয়েছে।
এক. আল-ওয়ালীদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন জুমাই‘। তাঁর পূর্ণ নাম আল-ওয়ালীদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন জুমাই‘ আল-যুহরী আল-মক্কী আল-কূফী। তাঁর বিশ্বস্ততার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে মতভেদ রয়েছে-
• আল-মুনযিরী বলেন, তাঁর ব্যাপারে কথাবার্তা রয়েছে (فيه مقال)।
• ইয়াহয়া ইবনু সাঈদ আল-কাত্তান বলেন, তাঁর অবস্থা জানা যায় না (مجهول الحال)।
• ইবন মু‘ঈন, আল-আজালী, ইবন সা‘দ ও ইবন হিববান তাঁকে বিশ্বস্ত (ثقة) বলে গণ্য করেছেন।
• ইমাম আহমাদ, আবু দাউদ ও আবু যুর‘আ বলেন, তাঁর গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে তেমন কোন সমস্যা নেই (لا بأس به)।
• ইবন হাজর তাঁকে সত্যবাদি (صدوق)বলে উল্লেখ করেছেন।
• আবু হাতিম বলেন: صالح الحديث।
• ইমাম মুসলিম আল-ওয়ালীদের সূত্রে বর্ণিত হাদীস গ্রহণ করেছেন।
অতএব বলা যায়, বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে সামান্য মতভেদ থাকলেও আল-ওয়ালীদকে বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী বলে গণ্য করা যায়।
দুই.
আল-ওয়ালীদের দাদী
কোন কোন বর্ণনায় তাঁর নাম পাওয়া যায়, লায়লা বিনত মালিক। ইবনু হাজর বলেন, তাঁর সম্পর্কে জানা যায় না। আয-যাহাবী বলেন, ما علمت في النساء من اتهمت ‘মহিলাদের কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা বর্ণনার অভিযোগ আনা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। সম্ভবত এ কারণে ইবনু খুযাইমা হাদীসটিকে সহীহ বলে গণ্য করেছেন।
তিন
আবদুর রহমান ইবনু খাল্লাদ আল-আনসারী
• ইবন কাত্তান ও ইবন হাজর বলেন, তাঁর অবস্থা জানা যায় না (مجهول الحال)।
• ইবন হিববান তাঁকে গ্রহণযোগ্য বলে চি‎‎হ্নত করেছেন।
ইবন হিববান ছাড়া অন্য কেউ আবদুর রহমান ইবন খাল্লাদের ব্যাপারে ইতিবাচক মন্তব্য না করলেও তাঁর সূত্রে বর্ণিত এই হাদীসটির গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে তেমন কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। কারণ এ বর্ণনায় তার স্তরে অন্য একজন বর্ণনাকারী আছেন তিনি হলেন অধস্তন বর্ণনাকারী আল-ওয়ালীদের দাদী, লায়লা বিনত মালিক।। আর তাই সার্বিক বিচারে হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলে চি‎‎হ্নত করেছেন আধুনিক যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হাদীসবিশারদ আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানী।
বিশুদ্ধতম সংকলন ষষ্টকের অন্য কোন গ্রন্থে হাদীসটি না থাকলেও আরো অনেক সংকলক হাদীসটি উল্লেখ করেছেন; তাঁদের মাঝে আহমাদ, বাইহাকী, ইবন আবি ‘আসিম, হাকিম, তাবরানী ও দারাকুতনী রয়েছেন।
উপর্যুক্ত গ্রন্থসমূহের বর্ণনার আলোকে উম্ম ওয়ারাকা (রা.)-কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক নামাযের ইমামতি করার অনুমতি প্রদানের বিষয়টি আমরা সমন্বিত আকারে উপস্থাপনে সচেষ্ট হব।
বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য উম্ম ওয়ারাকার (রা) আকাঙ্ক্ষা
উম্ম ওয়ারাকা বিনত আবদুল্লাহ ইবন নওফিল আল-আনসারিয়্যাহ বিদূষী সাহাবিয়া ছিলেন। তিনি আল-কুরআন হিফজ করতেন এবং এই মহাগ্রন্থের কিছু অংশ লিপিবদ্ধ আকারে একত্রও করেছিলেন। বদর যুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে যুদ্ধে অংশগ্রহণের অনুমতি চাইলেন, বললেন, ‘আমাকে আপনার সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহনের অনুমতি দিন; আমি আহত ও পীড়িতের সেবা করব। আমার আশা, আল্লাহ আমাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করবেন।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আপনি বাড়ীতে অবস্থান করুন, অবশ্যই আল্লাহ আপনাকে শাহাদাতের উপজীবিকা দান করবেন।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এ সুসংবাদের পর হতে উম্ম ওয়ারাকা ‘শহীদা’ হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে প্রতি জুম‘আবারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে দেখতে তাঁর বাড়িতে যেতেন। তিনি মাঝে মাঝে সাহাবীগণকে বলতেন, ‘চলো, শহীদার বাড়িতে যাই।’
উম্ম ওয়ারাকার (রা) নামাযে ইমামতির অনুমতি প্রার্থনা
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে উম্ম ওয়ারাকা কুরআন হিফজ করতেন এবং এ মহাগ্রন্থের কিছু অংশ লিপিবদ্ধ আকারে একত্রও করেছিলেন। তাই তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে অনুমতি চাইলেন, তিনি যেন তাঁর বাসায় জামা‘আতে নামায আদায়ের জন্য একটি স্থান নির্ধারণের অনুমতি দান করেন। এখানটায় অবশ্য বর্ননাকারীদের মাঝে সামান্য মতভেদ আছে। ইবন আবি ‘আসিমের বর্ণনানুসারে উম্ম ওয়ারাকা (রা.) নিজ বাড়িতে মসজিদ স্থাপনের অনুমতি প্রার্থনা করেছিলেন। অন্য কোন বর্ণনায় মসজিদ স্থাপনের অনুমতি প্রার্থনার কথা আসেনি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুমতির বিষয়ে ইবন আবি ‘আসিমসহ সবাই অভিন্ন বাক্য ব্যবহার করেছেন, ‘ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে নামায আদায়ের জন্য একটি স্থান নির্ধারণের অনুমতি দিলেন।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জন্য একজন মুআয্যিন নিয়োগ করেছিলেন। বর্ণনাকারী পরিষ্কার বলছেন, তিনি ছিলেন বয়োবৃদ্ধ এক লোক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্ম ওয়ারাকা (রা.)-কে তার পরিবার-পরিজনের (হাদীসে أهل دارها শব্দগুচ্ছ এসেছে; আমরা পরবর্তীতে শব্দ দু’টি সম্পর্কে সবিস্তারে আলোচনা করব) ফরয নামাযে ইমামতি করার অনুমতি দান করেন।
রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুসংবাদ বাস্তবায়িত হল: উম্ম ওয়ারাকা (রা) শহীদ হলেন
উম্ম ওয়ারাকার এক দাস ও এক দাসী ছিল। তিনি তাঁদেরকে আযাদ করেছিলেন, তবে শর্ত ছিল তাদের আযাদী কার্যকর হবে তাঁর মৃত্যুর পর। দাসদ্বয়ের তর সইছিল না। অধৈর্য দাস-দাসী এক রাতে লেপ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে উম্ম ওয়ারাকাকে হত্যা করে পালিয়ে গেল। এটি ‘উমার (রা.)-এর খিলাফাত-কালের ঘটনা।
পরদিন সকালে ওঠে ‘উমার (রা.) বললেন, কি ব্যাপার! আজ খালার (অর্থাৎ উম্ম ওয়ারাকার) কুরআন তিলাওয়াত শুনতে পাচ্ছি না কেন? তারপর ‘উমার (রা.) উম্ম ওয়ারাকা (রা.)-এর আঙিনায় প্রবেশ করলেন, কাউকে পেলেন না। বাড়িতে প্রবেশ করে তাঁকে মৃত অবস্থায় দেখতে পেলেন। তারপর ‘উমার (রা.) মিম্বরের আরোহণ করে জনমন্ডলীর উদ্দেশ্যে বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্য বলেছেন; উম্ম ওয়ারাকা শহীদ হয়েছেন। তোমাদের কেউ হত্যাকারী দাস-দাসীকে পেলে ধরে এনো।’ লোকজন দু’খুনীকে ধরে আনল, তারা অপরাধের কথা স্বীকার করল। খলীফার নির্দেশে তাদেরকে শূলীতে চড়িয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হল। মদীনায় এটি ছিল শূলীতে চড়িয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার প্রথম ঘটনা।
যুক্তি গ্রহণ পদ্ধতি
এ হাদীসের ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন প্রগ্রেসিভ মুসলিম ইউনিয়ন-এর নেত্রী ড. আমিনা ওয়াদুদ মিশ্র-লিঙ্গের নামাযে ইমামতি করেছিলেন। এ হাদীসের যে বাক্যের ওপর তাদের যুক্তির ভিত্তি সেটি হল:
وجعل لها مؤذنا وأمرها أن تؤم أهل دارها
নারীর ইমামতির সমর্থকরা এ হাদীসকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করেন যে তা তাদের মতের স্বপক্ষে দলীল হয়ে দাঁড়ায়। তাদের মতে বাক্যটির অনুবাদ নিম্নরূপ:
‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্ম ওয়ারাকার জন্য একজন মুআয্যিন নিয়োগ করলেন এবং তাঁকে নির্দেশ দিলেন তিনি যেন তাঁর গোত্র ও এলাকাবাসীর নামাযে ইমামতি করেন।’
এ ব্যাখ্যার স্বপক্ষে তারা ইবন আবি ‘আসিমের রিওয়ায়াতের সাহায্য গ্রহণ করেন যেখানে বলা হয়েছে, ‘উম্ম ওয়ারাকা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে একটি মসজিদ স্থাপনের অনুমতি চেয়েছিলেন।’ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে নামাযের জন্য একটি স্থান নির্ধারণের অনুমতি দেন। আমিনা ওয়াদুদ-সমর্থকদের মতে ‘নামাযের জন্য স্থান নির্ধারণের অনুমতি দেওয়ার অর্থই হল মসজিদ স্থাপনের অনুমতি প্রদান।’ উপর্যুক্ত হাদীসের দু’টি শব্দের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যাখ্যার ভিত্তিতে তারা নারীর ইমামতির বৈধতা সাব্যস্তকরণে সচেষ্ট হয়েছেন-
১. أهل دارها -এর أهل শব্দটি নারী-পুরুষ উভয়কে অন্তর্ভুক্ত করে;
২. دارها বলতে উম্ম ওয়ারাকার গোত্র ও এলাকা বুঝানো হয়েছে। অতএব রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে তাঁর এলাকার নারী-পুরুষের সম্মিলিত নামাযে ইমামতির অনুমতি দিয়েছিলেন।
নেভিন রেজা বলেন,
আরবী শব্দ দার বলতে যেমন একটি বাড়ি বুঝায় তেমনি একটি দেশও বুঝাতে পারে। যেমন, দারফূর বলতে ফূর জাতির এলাকা, দারুল ইসলাম বলতে ইসলামী বিশ্বকে বোঝানো হয়। বর্তমান সময়ের মত এত বড় বাড়ি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে ছিল না। সে সময় একটি আঙিনার চারপাশে ছোট ছোট কক্ষে গুচ্ছাকারের বাড়িতে গোত্রের লোকেরা বসবাস করতে। উম্ম ওয়াকার আঙিনার চতুষ্পার্শে তারই গোত্রের কয়টি বাড়ী ছিল বা কতজন লোক বসবাস করত তা জানা যায় না। তবে মানুষ যেহেতু বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করত না সেহেতু ধরে নেয়া যায় উম্ম ওয়ারাকার সাথে অন্তত তাঁর গোত্রের লোকজন তারই বাড়ির সন্নিহিত হয়ে বসবাস করতেন।
তাবাকাত ও জীবনীগ্রন্থগুলিতে সাধারণত কারো জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহ উল্লেখ করা হয়। কারো পারিবারিক জীবনের বিস্তারিত বিবরণ বা সন্তান-সন্ততির পরিচয় অনেক ক্ষেত্রে উল্লেখ থাকে না। উম্ম ওয়ারাকার কুনিয়াত হতে ধারণা করা যায়, ওয়ারাকা নামে তার এক সন্তান ছিল; যদিও জীবনীগ্রন্থগুলিতে তার নাম আসেনি। তার দু’দাস-দাসীর বর্ণনা এ কারণেই এসেছে যে তারা উম্মু ওয়ারাকাকে হত্যা করেছিল। এটি মনে করার কোন কারণ নেই যে তার বাড়িতে মাত্র তিনজন লোক ছিল।
উম্ম ওয়ারাকার হাদীসের প্রেক্ষিতে دارها বলতে মাত্র একটি বাড়ি বুঝানো হয়েছে এমন ধারণা করার কোন কারণ নেই; এক বাড়ির মানুষকে নামাযে আহবানের জন্য মুআয্যিন লাগে না। হাদীসে সুস্পষ্টভাবে এসেছে, তাঁর জন্য একজন মুআয্যিন নিয়োগ করা হয় যিনি লোকজনকে নামাযে আহবান জানাতেন। অতএব এ হাদীসে দার বলতে অন্তত এত বড় ভৌগলিক এলাকা বোঝানো হয়েছে যেখানে নামাযে আহবান করতে একজন মুআয্যিনের প্রয়োজন হয়।
আবদেন্নুর প্রাডো বলেন, ‘এ হাদীসের একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা এই যে, আনসারী মহিলা উম্মু ওয়ারাকাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মহল্লার মসজিদের ইমাম নিযুক্ত করেছিলেন। মহল্লাটি মদীনার উপকণ্ঠে অবস্থিত ছিল। সেখানে নারী-পুরুষ উভয়ে উম্মু ওয়ারাকার পেছনে নামায আদায় করত।’
হামিদুল্লাহ খান নামে ভারতীয় বংশোদ্ভূত জনৈক ফরাসী নাগরিক যিনি ফরাসী ভাষায় কুরআনের তর্জমা করেছেন তিনি কল্পনার ফানূস উড়িয়ে লিখেছেন:
উম্মু ওয়ারাকার গোত্র মসজিদে নববী হতে বেশ দূরে বসবাস করত; তাদের পক্ষে মসজিদে নববীতে এসে নামায আদায় করা সম্ভব হত না। তাই উম্মু ওয়ারাকা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে তাঁর এলাকায় একটি মসজিদ স্থাপনের অনুমতি চাইলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মু ওয়ারাকার বাড়ীতে মসজিদ স্থাপনের অনুমতি দিলেন, তাঁর জন্য একজন মুআয্যিন নিয়োগ করলেন এবং উম্ম ওয়ারাকাকে সেই মসজিদের ইমাম নিযুক্ত করলেন।
এ রচনায় আরো পরে আমরা এসব স্বকপোলকল্পিত বক্তব্যের পর্যালোচনা করব।
সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘আলিম সমাজের অভিমত
সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘আলিম উম্মু ওয়ারাকার হাদীসের উপর্যুক্ত ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁদের মতে হাদীসটির সংশ্লিষ্ট অংশের অনুবাদ হবে: ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জন্য একজন মুআয্যিন নিয়োগ করলেন এবং তার বাড়ির মহিলাদের নামাযে ইমামতির নির্দেশ দিলেন।’
যুক্তি:
১) أهل শব্দটি যদিও নারী-পুরুষ উভয়কে অর্ন্তভুক্ত করে তথাপি এ হাদীসে أهل বলতে কেবল মহিলাকে বোঝানো হয়েছে; কারণ উম্মু ওয়ারাকার হাদীসের অন্য একটি ভার্সনে أهل دارها শব্দের স্থলে نسائها শব্দটি এসেছে:
حدثنا أحمد بن العباس البغوي، ثنا عمر بن شيبة أبو أحمد الزبيري، نا الوليد بن جميع عن أمه عن أم ورقة: أن رسول الله أذن لها أن يؤذن لها وتؤم نسائها
সনদ: আহমাদ ইবন আল-আববাস আল-বাগভী→‘উমার ইবন শায়বা→আবু আহমাদ আল-যুবাইরী→আল-ওয়ালীদ ইবন জুমাই‘→তদীয় মাতা→উম্ম ওয়ারাকা
মতন: উম্ম ওয়ারাকা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জন্য আযান দেয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন এবং তাঁর বাড়ির মহিলাদের নামাযে ইমামতি করার অনুমতি দিয়েছিলেন।
২) দার শব্দটি নানা অর্থে ব্যবহৃত হয়: বাড়ি, এলাকা, মহল্লা, জনপদ এমনকি বৃহত্তর পরিসরে দেশ বুঝায়। কিন্তু এখানে দার বলতে এলাকা বা জনপদের অর্থ গ্রহণ করা সম্ভব নয়। একটি উদাহরণ দেওয়া হচ্ছে: ইসলাম প্রচারের শুরুতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবীগণ দার আরকামে বসে দাওয়াতী কাজ চালাতেন। এখানে দার আরকাম বলতে কিছুতেই আরকামের জনপদ বোঝানো হয়নি। বরং সুনির্দিষ্টভাবে আরকামের বাড়ি বোঝানো হয়েছে।
৩) উম্মু ওয়ারাকার জন্য মুআয্যিন নিয়োগ করায় এ কথা বলার কোন জো নেই যে তিনি মিশ্র-লিঙ্গের মুসল্লিদের বড় একটি জামাআতে ইমামতি করতেন। মুসল্লিদের সংখ্যার সাথে আযানের কোন সম্পর্ক নেই; অধিকাংশ ফকীহ এ বিষয়ে একমত যে একাকী নামায পড়লেও আযান দেয়া উত্তম।
সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘আলিম ও আমিনা ওয়াদুদ-সমর্থকদের দৃষ্টিকোণে উম্মু ওয়ারাকার হাদীসের ব্যাখ্যা উপস্থাপনের পর নিরাসক্ত (Objective) দৃষ্টিভঙ্গীতে হাদীসটির মর্মোদ্ধারে ব্যাপৃত হব।
পর্যালোচনা
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে উম্মু ওয়ারাকার হাদীসের যে বাক্যের ব্যাখ্যার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে সেটি হচ্ছে: وأمرها أن تؤم أهل دارها আরো নির্দিষ্ট করে বললে أهل ও دار শব্দের ব্যাখ্যার বিষয়ে যত মতভেদ। নির্ভরযোগ্য আরবী অভিধান ও প্রচলনের ওপর ভিত্তি করে শব্দ দু’টির ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে।
أهل এটি একটি مشترك (বহু অর্থবোধক) শব্দ যা অনেক অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন: পরিবার-পরিজন, আত্নীয়-স্বজন, অনুসারী, স্ত্রী, বাসিন্দা ইত্যাদি। শব্দটির অর্থ নির্ধারণে এর مضاف إليه এর যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। أهل الرجل বলতে কোন ব্যক্তির পরিবার-পরিজনকে বুঝায় আবার তাঁর স্ত্রীকেও বুঝায়। أهل البلد বলতে নগরবাসীকে বুঝানো হয়। প্রখ্যাত আরবী অভিধানবেত্তা ইবন মানযূর তাঁর لسان العرب গ্রন্থে লিখেছেন, أهل الرجل: عشيرته و ذو قربائه ‘কোন লোকের أهل বলতে তার পরিবার-পরিজন ও নিকটাত্নীয়কে বোঝানো হয়।’ অতএব দেখা যাচ্ছে যে أهل শব্দটি নারী-পুরুষ উভয়কে অন্তর্ভুক্ত করে।
অনেকে দারাকুতনীর বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে বলেন, أهل শব্দটি নারী-পুরুষ উভয়কে অন্তর্ভুক্ত করলেও উম্মু ওয়ারাকার হাদীসে أهل বলতে শুধু মহিলাদেরকে বোঝানো হয়েছে।
নিরপেক্ষ পর্যালোচনায় আমরা দেখা যায়, এ যুক্তির গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত নয়। কারণ দারাকুতনী একটি বর্ণনায় أن تؤم نسائها উল্লেখ করেছেন, অন্য সকল সংকলক أن تؤم أهل دارها উল্লেখ করেছেন। স্বয়ং দারাকুতনী নিজেও এক বর্ণনায় أن تؤم أهل دارها উল্লেখ করেছেন। তদুপরি দারাকুতনীর ভিন্নধর্মী বর্ণনার (أن تؤم نسائها) সনদে কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে; দারাকুতনী ব্যতিত অপরাপর সংকলকগণ আল-ওয়ালীদ ইবন জুমাই‘-এর পর তাঁর দাদীর নাম উল্লেখ করেছেন, কেবল দারাকুতনী এই বর্ণনায় আল-ওয়ালীদ ইবন জুমাই‘-এর পর তাঁর মায়ের নাম উল্লেখ করেছেন। সনদ ও মতনের এই অভিনবত্বের কারণে দারকুতনীর আলোচিত হাদীসটির গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আভিধানিক দৃষ্টিকোণে নারী-পুরুষ উভয়-ই এ-হাদীসে উল্লেখিত أهل শব্দের আওতাভুক্ত; সেক্ষেত্রে উম্মু ওয়ারাকা নারী-পুরুষ উভয়ের নামাযে ইমামতি করতেন সেটিই সাব্যস্ত হয়। তবে প্রায়োগিক দৃষ্টিতে এ-অর্থ গ্রহণে বেশ অসুবিধা রয়েছে। دار এর অর্থ বর্ণনার পর এ বিষয়ে আলোকপাত করা হবে।

دار শব্দটিও مشترك; নানা অর্থে প্রয়োগ করা যায়। ইবন মানযূর লিসানুল আরবে বলেন:
الدار محل يجمع البناء والعرصة و الدار البلد واسم لمدينة سيدنا رسول الله.
‘ভবন/স্থাপনা ও আঙিনাসমেত বাড়িকে দার বলা হয়; দার বলতে নগর/দেশও বুঝায় তাছাড়া মাদীনাতু রাসূলিল্লাহকেও দার বলা হয়।’
উপর্যুক্ত উদ্ধৃতি হতে পরিষ্কার হল দার বলতে একটি বাড়ির মত নির্দিষ্ট স্থান থেকে শুরু করে দেশ-এর মত বিস্তৃত স্থা্নকে বুঝানো হয়।
এই শব্দটির অর্থ নির্ধারণেও مضاف إليه এর ভূমিকা রয়েছে। যেমন, দারফূর (دارفور): ফূর জাতির এলাকা, দারুল ইসলাম (دار الإسلام (: ইসলামের দেশ বা মুসলিম বিশ্ব; আবার দার আরকাম (دار أرقم) বলতে আরকামের বাড়ি বুঝানো হয়। উদ্ধৃত হাদীসে দার শব্দটিকে উম্মু ওয়ারাকার প্রতি ইঙ্গিতবাহী সর্বনাম ها এর প্রতি সম্বন্ধযুক্ত করা হয়েছে। অতএব এখানে দারিহা বলতে নির্দিষ্টভাবে উম্ম ওয়ারাকার বাড়ি বোঝানো হয়েছে।
উপর্যুক্ত বিশ্লেষণে দেখা গেল أهل শব্দটি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পরিবারের সদস্যদেরকে বোঝায় আর دارها বলতে সুনির্দিষ্টভাবে উম্মু ওয়ারাকার বাড়িকে বুঝানো হয়েছে। ফলে এই পর্যায়ে এই হাদীসটির অর্থ দাঁড়াচ্ছে নিম্নরূপ:
‘তিনি তাঁকে (নারী-পুরুষ নির্বিশেষে) পরিবারের সদস্যদের নামাযে ইমামতির অনুমতি প্রদান করেন। এবং তার জন্য একজন মুআয্যিন নিয়োগ করেন।’
উপর্যুক্ত আপাত-সরল অর্থের ওপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত কোন আইনি সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে আমাদেরকে কতগুলি বিষয় বিবেচনা করতে হবে।
এক. মসজিদে নববী হতে উম্মু ওয়ারাকার বাড়ির দূরত্ব
উম্মু ওয়ারাকার ইমামতিতে কোন পুরুষ নামায আদায় করতেন কিনা তা যাচাই করতে হলে আমাদেরকে দেখতে হবে তাঁর বাড়ি ও মসজিদে নববীর দূরত্ব কতটুকু ছিল। হাদীস বা ঐতিহাসিক বর্ণনায় এই তথ্যানুসন্ধানের কোন জবাব নেই। উম্মু ওয়ারাকা সম্পর্কে যা জানা যায় তা ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে। কোথাও মসজিদে নববী হতে তাঁর বাড়ির দূরত্বের বিষয়ে কিছুই বর্ণিত নেই। তবে উম্মু ওয়ারাকার শাহাদাতের পর ‘উমার (রা.)-এর মন্তব্য হতে এ বিষয়ে ধারণা করা যায়; ‘উমার (রা.) বলেছিলেন, ‘কি ব্যাপার! আজ খালার তিলাওয়াত শুনতে পাচ্ছি না কেন?’ এ বক্তব্য থেকে ধারণা করা যায় উম্মু ওয়ারাকার বাড়ি মসজিদ নববী হতে খুব দূরে ছিল না এবং তিনি দূরত্বের কারণে বাড়িতে নামায পড়ানোর অনুমতি চেয়েছিলেন এমন নয়। বরং তিনি নিজে হাফিজা ছিলেন এবং সম্ভবত ‘মহিলাদের জন্য মসজিদে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক নয়’ এ হাদীসটি তিনি জানতেন। তাই তিনি নিজ বাড়ীতে নামাযে ইমামতি করার অনুমতি চেয়েছিলেন।
দ্বিতীয় বিবেচ্য বিষয়: উম্ম ওয়ারাকার ইমামতিতে কোন পুরুষ কি নামায আদায় করেছিলেন?
ইতিহাস ও হাদীসের গ্রন্থসমূহ এ প্রশ্নের জবাবেও নিরবতা পালন করছে। সুতরাং আনুষঙ্গিকতার ভিত্তিতে ধরে নেয়া (assume) ছাড়া গত্যন্তর নেই। প্রথম বিবেচ্য বিষয়ে দেখা গেছে উম্মু ওয়ারাকার বাড়ি মসজিদে নববীর অনতিদূরে অবস্থিত ছিল। এমতাবস্থায় কোন সাহাবী মসজিদে নববীতে নামায আদায় না করে উম্মু ওয়ারাকার ইমামতিতে নামায আদায় করবেন তা সুস্থ বিবেচনায় কল্পনাসম্ভব নয়। আবদুল্লাহ ইবন উম্মু মাকতূম অন্ধ ছিলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে মসজিদে অনুপস্থিত থাকার অনুমতি দেননি:
أن رسول الله استقبل الناس في صلاة العشاء فقال: لقد هممت أني آتي هؤلاء الذين يتخلفون عن الصلاة في فأحرق عليهم بيوتهم. فقال ابن أم مكتوم فقال: يا رسول الله! قد علمت ما بي، وليس لي قائد ুزاد أحمد-وأن بيني وبين المسجد شجرا ونخلا ولا أقدر على قائد كل ساعة. قال: أتسمع الإقامة؟ قال: نعم. قال: فاحضرها. ولم يرخص له. ولابن حبان من حديث جابر قال: أتسمع الأذان؟ قال: نعم. قال: فأتها ولو حبوا.
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইশার নামাযে উপস্থিতির দিকে ফিরে বললেন: আমার ইচ্ছে হয় যারা নামায আদায় না করে পেছনে রয়ে যায় তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিই। এ-কথা শুনে ইবনু উম্ম মাকতূম বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তো জানেন আমার আমার অবস্থা আর আমার কোন পথ প্রদর্শকও নেই-আহমাদ অতিরিক্ত যোগ করেছেন-আমার ও আপনার বাড়ির মাঝে খেজুর ও অন্যান্য বৃক্ষের বাগান আছে, আমি সব সময় পথ প্রদর্শকও পাই না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তুমি কি ইকামত শুনতে পাও? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নামাযে উপস্থিত হও। তিনি তাঁকে রুখসত দেননি। ইবন হিববান জাবিরের (রা) সূত্রে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি আযান শুনতে পাও? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও আসবে।
বানূ সালামাহ মসজিদে নববী হতে অনেক দূরে অবস্থান করত। তারা নিজেদের ভিটা পরিবর্তন করে মসজিদে নববীর কাছাকাছি আসতে চাইলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদেরকে বারণ করে বললেন, دياركم ؛ تكتب آثاركم ‘নিজেদের বাড়িতে অবস্থান কর; তোমাদের পদক্ষেপসমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়।’ এতে বুঝা যায় অনেক দূর হতে সাহাবীগণ মসজিদে নববীতে নামায আদায় করতে আসতেন। তাছাড়া সাহাবায়ে কিরাম রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পেছনে নামায পড়ার সৌভাগ্য বঞ্চিত হতে চাইতেন না। অতএব এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, কোন পুরুষ উম্মু ওয়ারাকার ইমামতিতে নামায পড়তেন না। এমনকি এটা মোটেও অসম্ভব নয় যে উম্মু ওয়ারাকার মুআয্যিন আযান দেয়ার পর মসজিদে নববীতে নামায আদায় করতেন।
তৃতীয় বিবেচ্য: মদীনায় উম্মু ওয়ারাকার মসজিদ নামে কোন মসজিদ ছিল কিনা?
হাদীস ও ইতিহাসের বিভিন্ন গ্রন্থে মদীনা ও তৎসন্নিহিত অঞ্চলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় যেসব মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার বিবরণ রয়েছে। ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিস ‘উমার ইবনু শাববাহ অন্যূন ৫০টি মসজিদের নাম উল্লেখ করেছেন, যার বেশিরভাগ মসজিদে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামায আদায় করেছেন; কোন কোন মসজিদের নকশাও তিনি এঁকে দিয়েছেন। উম্মু ওয়ারাকার মসজিদ নামে কোন মসজিদের নাম সেই তালিকায় পাওয়া যায় না।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাঝে মাঝেই তাঁর সাথীদের বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণ করতেন। সাহাবীদের মাঝে যারা দূরত্ব বা অন্য কোন কারণে মসজিদে যেতে পারতেন না তাঁদের কেউ কেউ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অনুরোধ করতেন, তিনি যেন তাদের বাড়ীতে নামায আদায়ের মাধ্যমে একটি স্থান নির্ধারণ করে দেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাথীদের অনুরোধ রাখতেন এবং তাঁদের বাড়িতে নামায আদায় করতেন। পরবর্তীতে সাহাবীগণ সেই স্থানে নামায আদায় করতেন। সহীহুল বুখারীতে এই ধরণের একটি ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়:
عن محمود بن الربيع الأنصاري، أن عتبان بن مالك كان يؤم قومه وهو أعمى وأنه قال لرسول الله: يا رسول الله إنها تكون الظلمة والسيل، وأنا رجل ضرير البصر، فصلّ يا رسول الله في بيتي، مكانا اتخذه مصلى، فجاءه رسول الله فقال: أين تحب أن أصلي؟ فأشار إلى مكان من البيت، فصلى فيه رسول الله.
মাহমূদ ইবনুর রাবী‘ আল-আনসারী হতে বর্ণিত, ‘উতবান ইবনু মালিক অন্ধ ছিলেন, তিনি তার গোত্রের মসজিদে ইমামতি করতেন; তিনি একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মাঝে মাঝে অন্ধকার ও প্রবল বর্ষণ হয় আর আমি অন্ধলোক; অতএব হে আল্লাহর রাসূল! আমার বাড়িতে নামায আদায় করুন, (আপনি যে জায়গায় নামায আদায় করবেন সেটিকে) আমি নামাযের স্থান হিসেবে গ্রহণ করব। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার তাঁর বাড়িতে এসে বললেন, আমাকে কোথায় নামায আদায় করতে বল? তিনি একটি জায়গা দেখিয়ে দিলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানটায় নামায আদায় করলেন।
অন্যান্য পুরুষ ও মহিলা সাহাবীর ঘরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামায আদায় করেছেন বলে বর্ণিত হয়েছে; তিনি আশ্-শিফা, বুসরা বিনতে সাফওয়ান, ‘আমর ইবনু উমাইয়া আদ্দামরীসহ অনেকের বাসায় নামায আদায় করেছেন।
ইতিপূর্বে জানা গেছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- সাহাবীগণকে সাথে নিয়ে কালেভদ্রে উম্মু ওয়ারাকার বাড়িতে যেতেন; কিন্তু উম্মু ওয়ারাকা মিশ্র-লিঙ্গের নামায আদায়ের জন্য তার বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত মসজিদে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অনুরোধ করেছেন এমন কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। উম্মু ওয়ারাকার বাড়িতে যদি মিশ্র-লিঙ্গের নামায আদায়ের জন্য মসজিদ স্থাপিত হত তবে অবশ্যই তিনি সে মসজিদে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নামায আদায়ের জন্য অনুরোধ করতেন।
মহিলা সাহাবীগণ গৃহস্থালীর কাজের বাইরে অনেক সামাজিক ও রাষ্ট্রীক কাজে অংশগ্রহণ করতেন; যেমন, তারা যুদ্ধে গমন করতেন, শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখতেন এবং তাঁদের এসব কর্মকান্ড ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হয়েছে। কোন মহিলা সাহাবী যদি মিশ্র-লিঙ্গের নামাযে ইমামতি করতেন তবে তা কিছুতেই ইতিহাস গ্রন্থে উপেক্ষিত হত না।
উপর্যুক্ত বিবেচ্যসমূহ সামনে রাখলে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে উম্মু ওয়ারাকা মিশ্র-লিঙ্গের নামাযে ইমামতি করতেন না। মুহাদ্দিস ও ফকীহগণ উম্মু ওয়ারাকার হাদীসকে মহিলাদের নামাযে মহিলাদের ইমামতির দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ইবনুল হুম্মাম আল-হিদায়া-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল কাদীরে মহিলাদের নামাযে মহিলাদের ইমামতির বৈধতা প্রমাণে উম্মু ওয়ারাকার হাদীসের দ্বারস্থ হয়েছেন। বাজলুল মাজহূদ প্রণেতা أهل دارها এর ব্যাখ্যা করেছেন نساء المحلة বলে।
ভাষাতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণে উম্মু ওয়ারাকার হাদীসটি পর্যালোচনা করা হল। উম্মু ওয়ারাকার পেছনে কোন পুরুষ নামায আদায় করেছেন তা এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় না।
ইসলামের নামায খৃস্টবাদের প্রার্থনার মত কিছু সঙ্গীত-সমষ্টি নয়। নামাযে ওঠা-বসা-রুকু‘-সিজদাসহ অনেক আমল রয়েছে যাতে শারীরিক নড়াচড়ার প্রয়োজন হয়। নামাযের উদ্দেশ্য হল কায়মনোবাক্যে ও একাগ্রচিত্তে আল্লাহর কাছে আত্নসমর্পণ করা। সবিনয় মনোযোগে নামায আদায়ের জন্য ইসলামে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অপরিচিত নারী-পুরুষের পারস্পরিক স্পর্শে চিত্তচাঞ্চল্য সৃষ্টি হওয়া খুবই স্বাভাবিক ও জৈবিক বিষয়। মিথ্যাবাদী ছাড়া কেউ এটি অস্বীকার করতে পারে না। এ ধরণের চিত্তচাঞ্চল্য নামাযে মনোযোগ সৃষ্টি ও কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে আত্নসমর্পণের পরিবেশে বিঘ্ন ঘটায়। তদুপরি কবীরা গোনাহ তথা প্রাক-যিনার সুযোগ সৃষ্টি করে, যা ইবাদাতের নামে অনাসৃষ্টির নামান্তর। তাই একই কাতারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নারী-পুরুষের নামায আদায় কিংবা সামনে দাঁড়িয়ে নারী-ইমামতির অনুমতি দেয়া হয়নি। এটি নারীত্বের অবমূল্যায়ন নয়, মহিলাদেরকে পেছনে ঠেলে দেয়াও নয়। বরং আল্লাহর নির্ভুল প্রজ্ঞার নিদর্শন।
তৃতীয় মত
আধুনিক যুগের ‘আলিমগণের একাংশ তৃতীয় একটি ধারা অবলম্বন করেছেন। আল-কারযাভীসহ একদল য়ুরোপ প্রবাসী ‘আলিম বলেন, কোন মহিলা যদি উপস্থিত পুরুষদের চেয়ে কুরআন অধ্যয়নে অধিক পারঙ্গম হন, তবে তিনি পরিবারের নারী ও মুহরিম পুরুষ সদস্যদের নামাযে ইমামতি করতে পারবেন। এঁরা উম্মু ওয়ারাকা (রা.)-এর হাদীসের আভিধানিক অর্থের ওপর জোর দিয়েছেন। তাঁদের মতে أهل বলতে নারী-পুরুষ উভয়কে বোঝায় আর دارها বলতে শুধু উম্মু ওয়ারাকার বাড়ি বোঝানো হয়েছে, অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মু ওয়ারাকাকে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামাযে ইমামতির অনুমতি দিয়েছিলেন। অতএব কুরআন তিলাওয়াতে পারদর্শী কোন মহিলা তাঁর পরিবারের মুহরিম পুরুষ সদস্যদের নামাযে ইমামতি করতে পারবেন। এতে চিত্তচাঞ্চল্যের কারণে নামাযে মনোযোগে বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনাও থাকে না।

বিন বাযের মন্তব্য
বিন বায (রহ.) ও তাঁর পারিষদের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিলো: কোন মহিলা যদি পরিবারের সবার চেয়ে ইসলামী জ্ঞান ও কুরআন তিলাওয়াতে অধিক পারদর্শী হন তার পক্ষে তার স্বামী ও পরিবারের মুহরিম পুরুষদের নামাযে ইমামতি করা বৈধ হবে কি?
জবাবে বিন বায ও তাঁর পারিষদ বলেন:
المكلفون من أهل هذه المرأة يجب عليهم أن يصلوا في المسجد جماعة مع جماعته ولا يجوز للمكلف أن يتخلف عن الجماعة إلا بعذر شرعي وقد دل الكتاب والسنة العملية والقولية على ذلك ودرج عليه خلفاء رسول الله وأصحابه من بعده وأخذ به السلف الصالح من بعدهم، وأما من لم يبلغ سن التكليف من الأبناء فعلى أولياء أمورهم أن يأمروهم بالصلاة جماعة مع جماعة المسلمين في المساجد لعموم قوله مروا أبناءكم بالصلاة لسبع واضربوهم عليها لعشر
‘এই মহিলার পরিবারের পুরুষ সদস্যদের মাঝে যারা সাবালক তাদের ওপর মসজিদে গিয়ে জামা‘আতে নামায আদায় করা ওয়াজিব। শর‘ঈ ওযর ছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের জামা‘আত তরক নাজায়েজ। আল-কুরআন, কার্যমূলক ও বাচনিক সুন্নাহ এই বক্তব্য সমর্থন করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খলিফাগণ এবং সাহাবায়ে কিরাম এ নির্দেশনা অনুসরণ করেছেন, পরবর্তীতে পুণ্যবান পূর্বসূরিরাও তা গ্রহণ করেছেন। ঐ মহিলার পরিবারের যারা সাবালক হয়নি তাদের অভিভাবকের দায়িত্ব হল তাদেরকে মুসলিমদের জামা‘আতের সাথে মসজিদে জামা‘আতে নামায আদায়ের নির্দেশ দেয়া; যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছরে নামাযের নির্দেশ দাও আর দশ বছরে নামাযের জন্য শাসন কর।
একটি বিরল প্রেক্ষিত
কোনও এক মুসলিম পরিবার অমুসলিম দেশের এক শহরে বসবাস করে, আশেপাশে কোন মুসলিম পরিবার/কম্যুনিটি নেই, পুরো শহরে কোন মসজিদও নেই। সেই পরিবারের কর্ত্রী পুরুষদের চেয়ে ইসলামী জ্ঞান ও কুরআন তিলাওয়াতে বেশী পারদর্শী। এখন কয়েক উপায়ে তারা নামায আদায় করতে পারে।
এক. নারী-পুরুষ আলাদাভাবে নামায আদায় করবে;
দুই. জামা‘আতে নামায আদায় করবে কম জ্ঞানী পুরুষের ইমামতিতে;
দুই. বেশি জ্ঞানী মহিলার ইমামতিতে পরিবারের পুরুষ সদস্যগণ [অর্থাৎ মহিলার স্বামী ও মুহরিম পুরুষ] নামায আদায় করবেন।
জ্ঞানের দীনতা সত্ত্বেও এ প্রবন্ধকার মনে করে এক্ষেত্রে উল্লেখিত পরিবার নামায আদায়ে তৃতীয় পন্থা অবলম্বন করতে পারে। বিজ্ঞ ‘আলিম সমাজের সুবিবেচনাপ্রসূত মতামত প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
নারীর ইমামতি সম্পর্কে আলোচনা-পর্যালোচনার সারমর্ম:
• রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন মহিলাকে মিশ্র-জেন্ডারের নামাযে ইমামতির অনুমতি দিয়েছেন- এমন দাবী সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত নয়।
• তাই ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘আলিম ও মুজতাহিদ এ বিষয়ে একমত যে, ফরয বা নফল বা তারাবীহ কোন স্তরের নামাযে মিশ্র-জেন্ডারের মুসল্লির সামনে নারীর ইমামতি বৈধ নয়।
• হাতেগোণা চার/পাঁচজন মনীষী মিশ্র-লিঙ্গের নামাযে নারীর ইমামতির বৈধতা দিয়েছেন বলে দাবী করা হয়। নিরপেক্ষ পর্যালোচনায় দেখা যায়, মিশ্র-জেন্ডারের ফরয নামাযে তাঁরাও বিনাশর্তে নারীর ইমামতির বৈধতা দেননি।
• হাম্বলী মাযহাবের কয়েকজন ‘আলিম, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বলের সূত্রে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি মিশ্র-লিঙ্গের নফল/তারাবীহ নামাযে নারীর ইমামতির অনুমতি দিয়েছেন। তাঁরা উম্মু ওয়ারাকার হাদীসকে দলীল হিসেবে ব্যবহার করেন। ওপরের আলোচনায় দেখা গেছে উম্মু ওয়ারাকার হাদীসের ভিত্তিতে নফল/তারাবীহ নামাযে নারীর ইমামতির বৈধতা সাব্যস্ত করা যায় না।
• কোন মহিলা জুম‘আর খুতবা দিয়েছেন বা ওয়াক্তিয়া নামাযে মসজিদে ইমামতি করেছেন-প্রায় দেড় হাজার বছরের ইসলামের ইতিহাসে এর কোন নজির নেই। ইমাম ও মুজতাহিদগণের কেউ কখনো নারীর ইমামতিতে জুম‘আর নামায আদায় বৈধ বলে মত প্রকাশ করেননি।
• আধুনিক যুগের য়ূরোপ-প্রবাসী একদল [আল-কারযাভী এঁদের একজন] ‘আলিম মনে করেন, কোন মহিলা যদি কুরআন অধ্যয়নে অত্যধিক পারঙ্গম হন তবে তিনি কেবল তার পরিবারের মুহরিম সদস্যদের নামাযে ইমামতি করতে পারেন।
এখন মহিলাদের মসজিদে গমন নিয়ে আলোচনা করা হবে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় মসজিদেও নারীর কোন স্থান নেই অর্থাৎ মহিলারা মসজিদে যায় না এবং হাতেগোণা দুয়েকটি মসজিদ ছাড়া অধিকাংশ সমজিদে তাঁদের জন্য পৃথক কোন ব্যবস্থা নেই। মহিলাদের মসজিদে গমণে এই অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা কেন? এর পেছনে কোন শরী‘আহ-ভিত্তি আছে কি? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশনা, সাহাবায়ে কিরামের অনুশীলন ও ইমামগণের মতামতের ভিত্তিতে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হচ্ছে।

 

 

 

 

 

 

মসজিদে নারীর স্থান
ফিকহ-এর গ্রন্থসমূহে মসজিদে নারীর উপস্থিতির বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে; কোন কোন ক্ষেত্রে তা হাদীস পরিপন্থি বলে মনে হতে পারে। বাংলাদেশসহ অধিকাংশ মুসলিম দেশের প্রচলন হিসেবে যা দেখা যায় তাতে মসজিদে নারীর স্থান খুবই সংকীর্ণ বলে মনে হয়। বেশির ভাগ মসজিদে মহিলাদের নামায আদায়ের কোন ব্যবস্থা নেই। কোন কোন মসজিদে থাকলেও তা খুবই অপ্রতুল।
ইমামগণের অভিমত
ক. হানাফী মাযহাব
ويكره لهن حضور الجماعات يعني الشواب منهن لما فيه من خوف الفتنة، ولا بأس للعجوز أن تخرج في الفجر والمغرب والعشاء، وهذا عند أبي حنيفة- وقالا: يخرجن في الصلوات كلها، لأنه لا فتنة لقلة الرغبة إليها فلا يكره كما في العيد، وله أن فرط الشبق حامل، فتقع الفتنة، غير أن الفساق انتشارهم في الظهر والعصر والجمعة، وأما في الفجر والعشاء فهم نائمون، وبالمغرب بالطعام مشغولون، والجبانة متسعة فيمكنها الاعتزال عن الرجال فلا يكره.
যুবতী মহিলাদের মসজিদে উপস্থিত হওয়া মাকরুহ, কারণ এতে ফিতনার ভয় রয়েছে। তবে ফজর, মাগরিব ও ‘ইশার নামাযে বৃদ্ধার উপস্থিত হওয়ায় কোন অসুবিধা নেই। এটি আবু হানীফা (রহ.)-এর অভিমত। আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রহ.) বলেন, বৃদ্ধা সকল ওয়াক্তে মসজিদে যেতে পারবে। কারণ তার প্রতি আগ্রহের কমতির কারণে ফিতনার আশঙ্কা নেই-যেমন ঈদের নামাযে বৃদ্ধার উপস্থিতি মাকরুহ নয়। আবু হানিফার যুক্তি হল, কামাসক্তির আধিক্য প্ররোচনা দেয়; অতএব [বৃদ্ধার ক্ষেত্রেও] ফিতনার সম্ভাবনা থাকে। তবে দুষ্ট প্রকৃতির লোকেরা দুপুর ও বিকেলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। ফজর ও ‘ইশার সময় তারা ঘুমিয়ে থাকে আর মাগরিবে থাকে পানাহারে ব্যস্ত। অপরদিকে ‘ঈদের সময় [নিরাপত্তা কর্মীদের আধিক্যের কারণে] দুষ্টরা ভীত থাকে। ফলে মহিলারা পুরুষদের কাছ থেকে নিরাপদ থাকতে পারে। আর তাই তা মাকরুহ হতে পারে না।
ইমামগণ তাদের যুগ-কাল-প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। অন্যথায় মহিলাদেরকে মসজিদে উপস্থিত হওয়ায় ক্ষেত্রে সাধারণ অনুমতি দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি আগের চাইতে খারাপ হওয়া এবং ফিতনা সৃষ্টির সম্ভাবনা আগের চেয়ে বেশি হওয়া সত্ত্বেও ইমামত্রয়ের যুক্তি সম্পূর্ণরূপে মেনে নেয়া যায় না। নিরাপত্তা বেশি থাকায় ইমাম আবু হানীফা রাতে ও প্রত্যুষে মসজিদে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। তাঁর যুগে সম্ভবত অসৎ প্রকৃতির লোকেরা ‘ইশা ও ফজরের সময় নিদ্রামগ্ন থাকত। বর্তমানে দুষ্ট প্রকৃতির লোকেরা ‘ইশার সময় নিদ্রা গমন করে না, মাগরিবে আহারে ব্যস্ত থাকে না আর ফজরে অধিকাংশ লোক নিদ্রামগ্ন থাকলেও ছিনতাইকারীদের একদল নিজেদের দায়িত্ব পালনে তৎপর থাকে। জুহর ও আসরের সময় বরং রাস্তাঘাটে জনাধিক্যের কারণে নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত থাকে। মসজিদে উপস্থিত হতে চাইলে মহিলাদেরকে বারণ করতে নিষেধ করেছেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। এতদসত্ত্বেও ইমামগণ বিপরীত মত প্রকাশ করেছেন। সম্ভবত আয়িশা (রা.)-এর উক্তি এ ক্ষেত্রে তাঁদেরকে প্রভাবিত করে থাকতে পারে। ‘রমণীরা এ যুগের যে সাজগোজের সমাহার ঘটিয়েছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা দেখলে তাদেরকে মসজিদে যেতে বারণ করতেন।’ তাছাড়া হাদীসে রয়েছে যে, ‘মহিলাদের জন্য বাড়িতে নামায পড়া মসজিদে নামায পড়ার চাইতে উত্তম।’
খ. শাফি‘ঈ মাযহাব
يكره للمرأة حضور الجماعة مطلقا في الجمعة وغيرها إن كانت مشتهاة، ولو كانت في ثياب رثة، ومثلها غير مشتهاة إن كانت تزينت وتطيبت، فإن كانت عجوزا وخرجت في أثواب رثة، ولم تضع عليها رائحة عطرية، ولم يكن للرجال فيها غرض فإنه يصح لها أن تحضر الجمعة بدون كراهة؛ على أن ذلك مشروط بشرطين: الأول: أن يأذن لها وليها بالحضور سواء كانت شابة أو عجوزا فإن لم يأذن حرم عليها، الثاني: أن لا يخشى من ذهابها الجماعة افتنان أحد بها، وإلا حرم عليها الذهاب.
জীর্ণ পোষাক পরিধান করলেও যুবতী মহিলার জন্য জুম‘আ বা অন্য জামা‘আতে উপস্থিত হওয়া মাকরুহ। বৃদ্ধারা সেজেগুঁজে আর সুগন্ধি ছড়িয়ে বের হলে একই হুকুম প্রযোজ্য হবে। বৃদ্ধা যদি জীর্ণ জামা পরিধান করে আতর না মেখে বের হয় আর তাঁর প্রতি পুরুষের কোন গরজ না থাকে তবে সে জুম‘আ ও অন্যান্য জামা‘আতে অংশগ্রহণ করতে পারে। তবে এতে দুটো শর্ত রয়েছে: ওলীর অনুমতি লাগবে বৃদ্ধা হলেও, অনুমতি না থাকলে হারাম হবে। দুই: তার জামা‘আতে যাওয়ায় কারো সম্মোহিত হওয়ার আশঙ্কা যেন না থাকে। যদি তা হয় তবে তা হারাম হবে।
গ. হাম্বলী মাযহাব
ويباح لهن حضور الجماعة مع الرجال لأن النساء كن يصلين مع رسول الله - صلى الله عليه وسلم- قالت عائشة‏:‏ ‏(‏كان النساء يصلين مع رسول الله - صلى الله عليه وسلم- ثم ينصرفن متلفعات بمروطهن ما يعرفن من الغلس‏)‏ متفق عليه وقال النبي - صلى الله عليه وسلم-‏:‏ ‏(‏لا تمنعوا إماء الله مساجد الله وليخرجن تفلات يعنى غير ‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏
মহিলাদের জন্য জামা‘আতে হাজির হওয়া মুবাহ (বৈধ)। কারণ মহিলারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে নামায আদায় করতেন। আয়িশা (রা) বলেন, মহিলারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে নামায আদায় করতেন। তারপর চাদর পেঁচিয়ে ফিরতেন, অন্ধকারের জন্য তাঁদেরকে চেনা যেত না। [মুত্তাফাকুন আলাইহি] নবী বলেছেন, আল্লাহর বাঁদীদেরকে আল্লাহর মসজিদে গমণে বাধা দিয়ো না। তবে তারা যেন সুগন্ধি না মেখে বের হয়।
মাযহাবসমূহের মতামত পর্যালোচনায় দেখা যায় নামায আদায়ে বের হয়ে ফিতনা সৃষ্টির বিষয়ে তাঁরা খুবই সচেতন ছিলেন। জামা‘আতে হাজির হওয়া মুবাহ বিষয়, তা করতে গিয়ে ফিতনা সৃষ্টির মত বিপর্যয়কর বিষয় যেন সংঘটিত না হয় সে বিষয়ে তাঁরা খুবই সচেতন ছিলেন।
তবে বহুল-অনুসৃত মাযহাবের বাইরে কিছু মুজতাহিদের নাম পাওয়া যায় যাঁরা মহিলাদেরকে মসজিদে গমণের অনুমতি দিয়েছেন। ইবনু হাযমের মতে নামায আদায়ের জন্য মহিলাদের মসজিদে যাওয়া বৈধই নয়, বরং ঘরে নামায আদায়ের চাইতে তা উত্তম: ৩২১ مسألت: ولا يحل لولي المرأت ولا لسيد الأمت منعهما من حضور الصلات في جماعت في المسجد، إذا عرف أنهن يردن الصلات ولا يحل لهن أن يخرجن متطيبات ولا في ثياب حسان، فإن فعلت فليمنعها، وصلاتهن في الجماعت أفضل من صلاتهن منفردات ৩২১ মাসআলা- যদি জানা যায় মহিলারা নামায আদায়ের জন্য বের হয় তবে মহিলার অভিভাবক বা দাসীর মনিবের জন্য তাদেরকে মসজিদে যেতে বাধা দেয়া জায়েজ নয়। তবে সুগন্ধি ব্যবহার করে এবং সুন্দর পোশাকে পারিপাট্যের সাথে মসজিদে যাওয়া মহিলাদের জন্য জায়েজ নয়। তারা যদি তা করে তবে অভিভাবক নিষেধ করবেন; আর মহিলাদের জন্য মসজিদে জামায়াতে নামায আদায় করা একাকী নামাযের চাইতে উত্তম।
মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার বৈধতা-অবৈধতার বিষয়ে চূড়ান্ত বক্তব্য প্রদানের আগে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশনা ও সাহাবায়ে কিরামের কর্মনীতি পর্যালোচনা করে দেখা উচিত।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে নারীরা মসজিদে জামা‘আতে নামায আদায় করতেন:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে নারীরা তাঁরই পেছনে মসজিদে নববীতে তাঁর ইমামতিতে নামায আদায় করতেন; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওফাত পর্যন্ত এ অনুশীলন অব্যাহত ছিল। ন্যায়বান খলিফাদের যুগেও এ ব্যবস্থা বহাল ছিল। তবে হযরত ‘উমার (রা.) মহিলাদের মসজিদে প্রবেশের জন্য পৃথক দরজার ব্যবস্থা করেন। সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমসহ হাদীসের প্রায় সব গ্রন্থে এ সংক্রান্ত বর্ণনা পাওয়া যায়। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হল:
عن عائشة: لقد كان رسول الله يصلى الفجر، فيشهد معه نساء من المؤمنات متلفعات في مروطهن ثم يرجعن إلى بيوتهن، ما يعرفن أحد.
‘আয়িশা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজর নামায আদায় করতেন, তাঁর সাথে মুমিন নারীরা চাদর পেঁচিয়ে নামায আদায় করতেন, তারপর তাঁরা ফিরতেন, তাঁদেরকে কেউ চিনতে পারত না।’ এ হাদীসটি কেবল সহীহুল বুখারীতে কমপক্ষে তিনটি অনুচ্ছেদে উল্লেখিত হয়েছে। ‘আয়িশার (রা) তিন ছাত্র-‘উরওয়া, ‘আমরা ও আল-কাসিমের সূত্রে আল-বুখারী হাদীস তিনটি বর্ণনা করেছেন।
অনেক সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামায দীর্ঘ করতে চাইতন; কিন্তু তিনি তা সংক্ষিপ্ত করতেন পাছে শিশুর কান্নায় নামাযে উপস্থিত তার মা অস্থির হয়ে পড়ে।
عن عبد الله بن أبي قتادة الأنصاري، عن أبيه، قال: قال رسول الله إني لأقوم إلى الصلاة، وأنا أريد أن أطول فيها، فأسمع بكاء الصبي، فأتجوز في صلاتي؛ كراهية أن أشق على أمه.
আবদুলস্নাহ ইবনু আবি কাতাদা তদীয় পিতা হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি নামাযে দাঁড়িয়ে তা দীর্ঘ করতে চাই; কিন্তু শিশুর কান্না শুনে আমার নামায সংক্ষিপ্ত করি পাছে তার মায়ের কষ্ট হবে।
আল-বুখারী সালাত অধ্যায়ে চারটি স্থানে এ বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন, দু’টি আবু কাতাদা হতে আর দু’টি আনাস ইবনু মালিক হতে। আত-তিরমিযীসহ অনেক সংগ্রাহকও হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
প্রথমদিকে মুসলিমরা নিদারুণ অনটনে ছিলেন। এমনকি তাদের অনেকের দু’প্রস্থ কাপড়ও ছিল না। এজন্য অনেককে এক প্রস্থ কাপড় কোনমতে পেঁচিয়ে নামায আদায় করতে হত। পুরুষরা সামনে ও মহিলারা পেছনে নামায আদায় করতেন। মহিলাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল পুরুষরা সিজদা হতে পূর্ষরূপে মাথা তোলার পর যেন তারা মাথা ওঠায়:
عن سهل بن سعد قال: كان الناس يصلون مع النبي وهم عاقدوا أزرهم من الصغر على رقابهم، فقيل للنساء: لا ترفعن رءوسكن حتى يستوي الرجال جلوسا.
সাহল ইবনু সা‘দ (রা) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে লোকজন নামায আদায় করত, সংক্ষিপ্ত হওয়ায় তারা তহবন্দ ঘাড়ে বাঁধতেন। আর তাই মহিলাদেরকে বলা হল: তোমরা মাথা তুলবে না যতক্ষণ না পুরুষরা সোজা হয়ে বসে।
আল-বুখারী বর্ণনা করেছেন। মুসলিমও সামান্য শব্দভেদসহ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। কোন কোন বর্ণনায় দেখা যায় মহিলাদেরকে দেরীতে মাথা তোলার নির্দেশ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেই দিয়েছেলেন। এ হাদীস থেকে যেমন এটা প্রমাণিত হয় যে, মহিলারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে মসজিদে জামা‘আতে নামায আদায় করতেন, তেমনি এটাও প্রমাণিত হয় যে, মহিলাদের কাতার পুরুষের কাতারের পেছনে ছিল।
মসজিদে জামা‘আতে ফরয নামায আদায়ের পর মহিলারা খুব দ্রুত বাসায় ফিরতেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন যাতে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা রোধ করা যায়:
عن أم سلمة قالت: كان رسول الله إذا سلم، قام النساء حين يقضى تسليمه، ويمكث هو في مقامه يسيرا قبل أن يقوم، قال: نرى والله أعلم أن ذلك كان لكي ينصرف النساء قبل أن يدركهن أحد من الرجال.
উম্মু সালামাহ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাম ফিরাতেন মহিলারা ওঠে দাঁড়াতো, দাঁড়ানোর আগে তিনি নিজ স্থানে ক্ষণিক অবস্থান করতেন। যুহরী বলেন, আমরা মনে করি-আল্লাহ আরো ভাল জানেন-তিনি এজন্য তা করতেন যেন বাসায় ফেরার আগে মহিলাদেরকে কোন পুরুষ নাগাল না পায়।
সহীহুল বুখারীর অন্যূন চারটি স্থানে হাদীসটি উল্লেখিত হয়েছে। নবীপত্নি উম্মু সালামাহ (রা.) হতে তাঁর বান্ধবী হিন্দ বিনত আল-হারিছ আল-ফিরাসিয়্যা আল-কুরাশিয়্যা’র সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। باب صلاة النساء خلف الرجال [অনুচ্ছেদ: পুরুষের পেছনে নারীর নামায] নামে আল-বুখারী দু’টি অনুচ্ছেদ-শিরোনাম করেছেন; দু’অনুচ্ছেদেই হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে মহিলারা ‘ঈদের নামাযে অংশগ্রহণ করতেন
عن جابر بن عبد الله: قام النبي يوم الفطر فصلى، فبدأ بالصلاة ثم خطب، فلما فرغ، نزل فأتى النساء، فذكرهن وهو يتكأ على يد بلال، وبلال باسط ثوبه، يلقي فيه النساء الصدقة، قلت لعطاء، زكاة يوم الفطر؟ قال: لا، ولكن صدقة يتصدقن حينئذ، تلقي فتخها ويلقين، قلت أترى حقا على الإمام ذلك ويذكرهن؟ قال: إنه لحق عليهم وما لهم لا يفعلونه.
‘জাবির ইবনু ‘আবদিল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘ঈদুল ফিতর-এর দিন নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নামায আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করলেন, প্রথমে নামায আদায় করলেন, তারপর খুতবা দিলেন। ভাষণ শেষে মিম্বর থেকে নেমে তিনি মহিলাদের কাছে আসলেন, অতঃপর তাদেরকে উপদেশ দিলেন, এ সময় তিনি বেলালের হাতে ভর দিয়ে ছিলেন আর বেলাল কাপড় মেলে ধরেছিলেন যাতে নারীরা সাদাকাহ ঢেলে দিচ্ছিলেন। আমি [ইবনু জুরাইজ] ‘আতাকে বললাম: [মহিলারা কি] সাদাকায়ে ফিতর [আদায় করছিলেন]? ‘আতা বললেন: না, এটি ছিল ঐ সময়ে দানকৃত বিশেষ সাদাকাহ; নারীরা নিজেদের আংটি খুলে দিচ্ছিলেন। আমি বললাম: বর্তমানে ইমামের কি উচিত হবে মহিলাদেরকে উপদেশ দেয়া? তিনি বললেন: এটি তাদের কর্তব্য, কেন তারা তা করবে না?
আল-বুখারী সালাত অধ্যায়ে এ হাদীসটি কমপক্ষে ছয়টি স্থানে উল্লেখ করেছেন। চারটি ইবন ‘আববাস (রা) হতে বাকী দু’টি জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (রা) হতে।
এ হাদীস থেকে বুঝা যায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে নারীরা ‘ঈদের নামাযে অংশ গ্রহণ করতেন। মহিলাদের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দ্বিতীয়বার বিশেষ ভাষণ প্রদান করেছেন। এতে প্রমাণিত মহিলারা পুরুষদের কাছ থেকে পৃথক হয়ে কিছুটা দুরত্বে অবস্থান করতেন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঋতুবতী নারীদেরকেও ঈদগাহে যাওয়ার নির্দেশ দিতেন
عن حفصة بنت سيرين قالت: كنا نمنع جوارينا أن يخرجن يوم العيد، فجاءت امرأة فنزلت قصر بني خلف، فأتيتها، فحدثت أن زوج أختها غزا مع رسول الله ثنتي عشرة غزوة، فكانت أختها معه في ست غزوات، فقالت: فكنا نقوم على المرضى ونداوي الكلمى، فقالت: أعلى إحدانا بأس-إذا لم يكن لها جلباب-أن لا تخرج؟ فقال: لتلبسها صاحبتها من جلبابها، فليشهدن الخير ودعوة المؤمنين، قالت حفصة: فلما قدمت أم عطية أتيتها فسألتها أسمعت في كذا وكذا؟ قالت: نعم بأبي- وقلما ذكرت النبي إلا قالت: بأبي- قال: ليخرج العواتق وذوات الخدور-أو قال العواتق وذوات الخدور، شك أيوب-والحيض ويعتزل الحيض المصلى، وليشهدن الخير ودعوة المسلمين. قالت: فقلت لها: الحيض؟ قالت: نعم، أليس الحائض تشهد عرفات، وتشهد كذا وتشهد كذا؟
সীরীন-তনয়া হাফসা বলেন: আমরা আমাদের মেয়েদেরকে ‘ঈদের দিন বের হতে বারণ করতাম। একবার এক মহিলা এসে বনী খালাফ-এর প্রাসাদে ওঠলেন। তিনি বর্ণনা করলেন যে তার ভগ্নিপতি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বারোটি যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তম্মধ্যে ছয়টি যুদ্ধে তাঁর বোন স্বামীর সাথে ছিলেন। তিনি [আগন্তুক মহিলার বোন] বলেন: আমরা রোগীদের দেখাশোনা করতাম আর আহতদের সেবা করতাম। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন : আমাদের কারো যদি জিলবাব [বড় চাদর] না থাকে, তার বের না হওয়ায় কি কোন অসুবিধা আছে? তিনি বললেন: তার সঙ্গিনী যেন স্বীয় চাদর দিয়ে বান্ধবীকে ঢেকে নেয়। তাদের [মহিলাদের] উচিত কল্যাণময় কাজ ও মু’মিনদের দু‘আ’র স্থানে উপস্থিত থাকা। উম্মু ‘আতিয়্যা যখন আসলেন আমি তার কাছে গেলাম। তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি এই ব্যাপারে কিছু শুনেছেন? তিনি বললেন: হ্যাঁ, আমার পিতা উৎসর্গিত হোক-উম্মু আতিয়্যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নামোচ্চারণ করলেই বলতেন তার জন্য আমার পিতা উৎসর্গিত হোক- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: সাবালিকা তরুণী ও পর্দানশীনরা [অথবা সাবালিকা পর্দনশীন তরুণীরা, আইয়ুব সন্দেহ করেছেন] এবং ঋতুবতী নারীরা যেন বের হয়; তবে ঋতুবতীরা নামাযের স্থান হতে দূরে থাকবে। তারা যেন কল্যাণের কাজ ও মু’মিনদের দু‘আর স্থলে হাজির হয়। হাফসা বলেন: আমি তাকে বললাম: ঋতুবতীরাও? তিনি বললেন: হ্যাঁ, কেন নয়? ঋতুবতী নারী কি আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয় না? তারা কি এটাতে-ওটাতে যায় না? [যেমন মুযদালিফা, মিনায় অবস্থান]
প্রথম যুগ অতিক্রান্ত হওয়ার পর নৈতিক মানের অবনতির কারণে অনেকে মহিলাদেরকে ‘ঈদে বা অন্যন্য উৎসবে বের হতে বারণ করতেন। তবে সে সময় যেসব সাহাবা (রা.) বেঁচে ছিলেন তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কর্মপন্থা অনুসরণ করার চেষ্টা করতেন এবং মহিলাদেরকে নামাযে ও ঈদে গমণে বারণ করতে নিষেধ করতেন। এই হাদীসে দেখা যাচ্ছে, প্রয়োজনে বান্ধবী বা বোনের কাছ থেকে চাদর ধার নিয়ে বের হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ হাদীসে বেশ কিছু নির্দেশনা পাওয়া যায়: বড় চাদরে শরীর আবৃত না করে মহিলাদের বের হওয়া নিষেধ। ‘ইবাদাহ ও কল্যাণময় কাজে নারীদের অংশগ্রহণ করা উচিত। ঋতুবতী নারীদের অচ্ছুত করার ইহুদি রীতি ইসলাম সমর্থন করে না। মসজিদে প্রবেশ করা ব্যতিত অন্য সব স্থানে তারা যেতে পারে; কল্যাণময় কাজের স্থান, যিকর, ও জ্ঞানার্জনের আসরে যেতে তাদের কোন বাধা নেই।
অধিকাংশ ‘আলিমের মতে ঈদগাহে বের হতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এই নির্দেশ অবশ্য-পালনীয় নয়। এটি মনদুব বা উত্তম। ইসলামের শি‘আর বা নিদর্শন প্রকাশ করা, সমাবেশ বড় করা ও বরকত হাসিলের জন্য ঋতুবতী নারীসহ সবাইকে ঈদগাহে গমণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যথায় ঋতুকালে নামায ওয়াজিব নয়। তেমনিভাবে ঋতুবতীদেরকে দূরে থাকার যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাও অবশ্য-পালনীয় নয়। কারণ ঈদগাহ মসজিদ নয়; নামাযের কাতারের বাইরে ঈদগাহের মধ্যে তাঁদের অবস্থান করতে কোন অসুবিধা নেই।
মহিলারা মসজিদে যেতে চাইলে তাদেরকে বারণ করা যাবে না; তবে তাঁরা সুগন্ধি মেখে সৌন্দর্য ও সুবাস ছড়িয়ে মসজিদে যেতে পারবে না।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিদের্শনা দিয়েছেন, মসজিদে যেতে চাইলে মহিলাদেরকে বাধা দেয়া যাবে না। কারণ নারীরা আল্লাহর বাঁদী আর মসজিদ আল্লাহর ঘর; আল্লাহর ঘরে তাঁর বাঁদীদেরকে যেতে বারণ করা উচিত নয়। তবে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন, তারা যেন সুগন্ধি মেখে সৌন্দর্য ছড়িয়ে মসজিদে না যায়। কারণ এতে ইবাদাহ-এর মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। আল্লাহর সমীপে আত্নসমর্পন ও কাকুতি-মিনতি করার পরিবেশ বিনষ্ট হবে। এ সংক্রান্ত ভিন্ন শব্দের ও কাছাকাছির অর্থের বেশ কিছু হাদীস নানা গ্রন্থে উল্লেখিত হয়েছে। এখানে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হচ্ছে:
إذا استأذنت امرأة أحدكم فلا يمنعها
‘তোমাদের কারো স্ত্রী [মসজিদে গমণের] অনুমতি চাইলে সে যেন বাধা না দেয়।’
إذا استأذنت أحدَكم امرأتُه إلى المسجد فلا يمنعها
‘তোমাদের কারো স্ত্রী যদি মসজিদে গমণের অনুমতি চায় তবে সে যেন তাকে মানা না করে।’
لا تمنعوا إماء الله مساجد الله
‘আল্লাহর বাঁদীদেরকে আল্লাহর মসজিদে গমণে বাধা দিয়ো না।’
ائذنوا للنساء بالليل إلى المساجد.
‘মহিলাদেরকে রাতে মসজিদে গমণের অনুমতি দাও’।
ইবনু হাজর বলেন, রাতে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেশি থাকে। রাতেই যদি মহিলাদেরকে মসজিদে গমণের অনুমতি দেয়া হয় দিনে কোন বাধা থাকার প্রশ্নই আসে না। হানাফীগণ দুষ্ট লোকদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার অজুহাতে মহিলাদেরকে বারণ করার যে মত প্রকাশ করেন তা যুক্তিযুক্ত নয়। রাতের আঁধারে অঘটন ঘটার যে সম্ভাবনা থাকে দিনে বহু লোকের উপস্থিতির কারণে তা কম থাকে।
মহিলাদের মসজিদে গমণ পছন্দ না করলেও ‘উমার (রা) তাঁর স্ত্রীকে মসজিদে যেতে বারণ করেননি
দ্বিতীয় খলীফা ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.) মহিলাদের মসজিদে যাওয়া পছন্দ করতেন না; কিন্তু তাঁর স্ত্রী ‘আতিকা নামায আদায়ে মসজিদে যেতেন। অপছন্দনীয় হওয়ার পরও ‘উমার (রা.) তাঁর স্ত্রীকে বাধা দেননি। কারণ তিনি নিজের পছন্দ-অপছন্দের ওপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অভিপ্রায়কে অগ্রাধিকার দিতেন।
عن نافع عن ابن عمر كانت امرأة لعمر تشهد صلاة الصبح والعشاء في الجماعة في المسجد، فقيل لها لم تخرجين وقد تعلمين أن عمر يكره ذلك ويغار؟ قالت: وما يمنعه أن ينهاني؟ قال: يمنعه قول رسول الله: لا تمنعوا إماء الله مساجد الله.
নাফি‘, ইবনু ‘উমার (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন, ‘উমার (রা.)-এর এক স্ত্রী ফজর ও ‘ইশার জামা‘আতে মসজিদে হাজির হতেন। তাকে বলা হল: তুমি কেন বের হও অথচ তুমি জান ‘উমার (রা.) তা পছন্দ করেন না এবং মর্যাদাহানিকর মনে করেন? ‘উমার (রা.)-এর স্ত্রী বললেন: আমাকে নিষেধ করতে তাকে কে বাধা দেয়? তিনি বললেন: তাঁকে বাধা দেয় রাসূলের এই বাণী ‘আল্লাহর বাঁদীকে আল্লাহর মসজিদে যেতে বাধা দিয়ো না। ইসলামী অনুশাসন প্রতিষ্ঠায় ‘উমার (রা.) অত্যন্ত কঠোর ছিলেন। জামা‘আতে হাজির হওয়ার অজুহাতে অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু সংঘটনের ব্যাপারে তিনি খুবই সাবধান ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি মহিলাদেরকে মসজিদে গমণে বাঁধা দেননি। তবে অবাধ মেলামেশা রোধে তিনি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি মসজিদে মহিলাদের পৃথক প্রবেশদ্বার ও অযুর ব্যবস্থা করেন। তাঁর স্ত্রী ‘আতিকা বিনত যায়িদ ইবন ‘আমর তাঁর পেছন পেছন মসজিদে গমণ করতেন, জামা‘আতে নামায আদায় করার জন্য। যেদিন ‘উমার (রা.) ছুরিকাহত হন সেদিনও ‘আতিকা মসজিদে ছিলেন। ‘উমার (রা.) অপছন্দ করলেও তাঁকে মসজিদে গমণে বাধা দেননি। কারণ তিনি জানতেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মহিলাদেরকে মসজিদে গমণে বাধা দিতে নিষেধ করেছেন। সাহাবায়ে কিরাম ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ওপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদেশ-নিষেধকে প্রাধান্য দিতেন- এটি তারই প্রমাণ।
মহিলাদেরকে মসজিদে গমণে বাধা দেয়ার প্রতিজ্ঞা করায় ইবনু ‘উমার (রা.) তাঁর পুত্রকে শাসন করেছিলেন
যেসব সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন ইবনু ‘উমার (রা.) তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদেরকে মসজিদে গমণের অনুমতি সংক্রান্ত হাদীসটি তিনি বর্ণনা করেছেন। তাঁর এক পুত্র এ হাদীস জানা থাকা সত্ত্বেও প্রাসঙ্গিক অবস্থার বিচারে মহিলাদের মসজিদে গমণে বাধা দেয়ার সংকল্প করলে তিনি তাকে শাসন করেছিলেন:
عن ابن شهاب، قال: أخبرني سالم بن عبد الله، أن عبد الله بن عمر قال: سمعت رسول الله يقول: لا تمنعوا نساءكم المساجد إذا استأذنكم إليها.
قال: فقال بلال بن عبد الله: والله لنمنعهن. قال: فاقبل عليه عبد الله، فسبه سبا سيئا، وقال: أخبرك عن رسول الله وتقول والله لنمنعن!
ইবনু শিহাব হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে সালিম ইবনু ‘আবদিলস্নাহ [ইবনু ‘উমার] সংবাদ দিয়েছেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রা.) বলেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেতে শুনেছেন, তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের কাছে মসজিদে গমণের অনুমতি চাইলে তোমরা তাদেরকে মানা করো না।’ সালিম বলেন, [এ কথা শুনে ইবনু ‘উমারের এক পুত্র] বেলাল ইবনু ‘আবদিল্লাহ বললেন: আল্লাহ কসম! আমরা অবশ্যই তাদেরকে [মসজিদে গমণে] বাধা দেব। সালিম বলেন, [এ কথা শুনে] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রা.) পুত্রের দিকে এগিয়ে গেলেন, তারপর তাকে কঠোর ভাষায় বকা দিলেন আর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী তোমাকে জানাচ্ছি আর তুমি বলছ, ‘আমরা অবশ্যই তাদেরকে মসজিদে গমণে বাধা দেব!
উপর্যুক্ত ঘটনার বিবরণ সহীহ মুসলিম, সুনানু আবি দাউদ ও সুনানুত তিরমিযীসহ অন্যান্য সংকলনে পাওয়া যায়। অধিকাংশ বর্ণনায় ইবনু ‘উমারের প্রতিবাদী ছেলেটির নাম এসেছে বেলাল। কোন বর্ণনায় দেখা যায় তাঁর নাম ওয়াকিদ। যে যুক্তিতে তিনি মহিলাদেরকে মসজিদে গমণে বাধা দিতে চেয়েছিলেন সে বিবরণও আছে কতক বর্ণনায়: إذن يتخذنه دغلا ‘তাহলে তারা ফাসাদ সৃষ্টির সুযোগ গ্রহণ করবে।’ পুত্রের এ আশঙ্কা যৌক্তিক হলেও ইবনু ‘উমার (রা.) তাকে শাসন করেন। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুস্পষ্ট নির্দেশনার বিপরীতে কোন যুক্তিকে প্রাধান্য দেয়া যায় না। পুত্রটির সাথে ইবনু ‘উমার (রা.) আমৃত্যু কথা বলেননি। খুব সম্ভবত এ ঘটনার অব্যবহিত পরে তাঁদের একজনের মৃত্যু হয়।
মহিলাদের মসজিদে যেতে মানা না করার এই নির্দেশকে অনেকে অবশ্য-পালনীয় নয় বলে মন্তব্য করেছেন। অবশ্য আল-‘উছাইমীন, ইবনু ‘উমার ও তদীয় পুত্রের ঘটনা উল্লেখ করে দাবী করেছেন যে এটি অবশ্য-পালনীয় নির্দেশ অর্থাৎ কোন মহিলা, ইসলামী শিষ্টাচার মেনে তার স্বামী বা উপযুক্ত অভিভাবকের কাছে নামায আদায়ে মসজিদে গমণের অনুমতি চাইলে তাকে নিষেধ করা হারাম হবে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশনা, সাহাবায়ে কিরামের কর্মনীতি, ইমামগণের মতামত ও আমাদের সমাজ-বাস্তবতার নিরিখে মহিলাদের মসজিদে গমণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিন-রাতের যে কোন সময় যে কোন বয়সের মহিলাদেরকে মসজিদে গমণের অনুমতি দিয়েছিলেন, তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত মসজিদে নববীতে এ অনুশীলন চালু ছিল। তাঁর ওফাতের পরও এ অনুশীলন অব্যাহত ছিল। দ্বিতীয় খলিফা ‘উমার (রা.) মহিলাদের মসজিদে গমণ পছন্দ না করলেও তা বন্ধ করেননি। অবাধ মেলামেশার দ্বার বন্ধের জন্য কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিলেন; তিনি মহিলাদের জন্য পৃথক ওযু ও প্রবেশদ্বারের ব্যবস্থা করেন। পরবর্তী খলিফাদের সময়ও মহিলাদের মসজিদে উপস্থিতি অব্যাহত ছিল। সাহাবায়ে কিরাম (রা.)-এর যুগের শেষের দিকে মহিলাদের সাজগোজ প্রদর্শনের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় অনেকে তাদেরকে মসজিদে যেতে বাধা দিতেন। ‘আয়িশার উক্তিতে এর সমর্থন পাওয়া যায়: ‘এ কালের মহিলারা সাজগোজের যে বাহার আবিষ্কার করেছে তা দেখলে রাসূলুল্লাহ তাদেরকে মসজিদে যেতে বারণ করতেন।’ এটি অবশ্য ‘যদি-তবে‘ নির্ভর উপপ্রমেয়মূলক মন্তব্য। সীরীন তনয়া হাফসার হাদীস থেকেও বুঝা যায় তাঁরা মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিরুৎসাহিত করতেন। তবে সাহাবীগণ রাসূলের সুস্পষ্ট নির্দেশনার কারণে মহিলাদেরকে মসজিদে গমণে বারণ করতেন না।
ফিকহী মাযহাবসমূহের প্রতিষ্ঠাতাবৃন্দের সাধারণ মনোভাব এই যে তাঁরা যুবতী ও সুন্দরী মহিলাদেরকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দেননি। এমনকি বৃদ্ধারা যদি সুগন্ধি মেখে সাজগোজ প্রদর্শন করে বেড়ায় তবে তাদেরকেও মসজিদে যেতে বারণ করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে ফিতনার আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে।
ফিকহী ধারার প্রতিষ্ঠাতাবৃন্দ যে ফিতনার আশঙ্কা উল্লেখ করেছেন তা বর্তমান যুগে লাগামহীন পর্যায়ে পৌছেছে। হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই ও অপহরণের মত অপরাধগুলো এখন ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। তাছাড়া অবাধ মেলামেশার সুযোগে পারস্পরিক সম্মতিতে তরুণ-তরুণীরা যা করে তাতে অনেক ক্ষেত্রে প্রাক-যিনা ছাড়িয়ে যিনা’র পর্যায়ে পৌছে যায়। এখন, চারিত্রিক ও নৈতিক পতনের যুগে মহিলাদেরকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দেয়া যাবে কীনা?
একদল ‘আলিম এ ব্যাপারে খুবই কঠোর মনোভাব প্রদর্শন করেন, তাদের মতে মহিলাদেরকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে ফিতনা বিস্তারের কোন প্রয়োজন নেই। এঁরা বলেন, মহিলারা হাটে-বাজারে স্কুল-কলেজ, কল-কারখানাসহ নানা জায়গায় বিচরণ করে। তবে এসব স্থানে তারা ইবাদাহ পালন করতে যায় না। ইবাদাহ পালনের উদ্দেশ্যে বের হয়ে অনাসৃষ্টি মেনে নেয়া যেতে পারে না।
আমরা মনে করি মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারে এ মনোভাব বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পড়ে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদেরকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দিতে বলেছেন, তিনি তাদেরকে-এমনকি ঋতুবতী মহিলাদেরকেও- ঈদগাহে উপস্থিত হয়ে মুসলিমদের কল্যাণ কামনায় শরীক হতে বলেছেন। এ নির্দেশনাসমূহের কোনটি কাল-সংশ্লিষ্ট নয়। ধর্ষণের চেয়ে বেশি মারাত্নক ফিতনা হতে পারে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে মহিলা ধর্ষিতা হয়েছেন। তবুও তিনি মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে বারণ করেননি। ফিতনার আশঙ্কায় মহিলাদেরকে মসজিদে গমণে বাধা দেয়া সমীচীন হবে না। দুয়ার বন্ধ করলে প্রলয় থামে না। মহিলাদেরকে মসজিদে গমণে বাঁধা দেয়া ফিতনা দূর করার উপায় নয়। আজকাল মহিলারা নানাকাজে ঘরের বাইরে যায়। কোন ক্ষেত্রে কারো অনুমতি নেয়ার বালাই নেই। মার্কেটে গেলে মনে হয় এটি একটি নারীস্থান, পুরুষরা সেখানে অপাংক্তেয়, উচ্ছিষ্ট। এমতাবস্থায় শুধু মসজিদে গমণে বাধা দেয়া মোটেও যৌক্তিক হবে না।
ফিতনার বিষয়ে অতিরিক্ত স্পর্শকাতরতা যেমন গ্রহণযোগ্য নয় তেমনি এ বিষয়ে চূড়ান্ত উদাসীনতাও কাম্য নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময় মহিলারা পুরুষদের সাথে মসজিদের একই কক্ষে নামায আদায় করতেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শারি‘ ছিলেন, ওহীর নির্দেশনার আলোকে যে কোন সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান তিনি দিতে পারতেন। বর্তমান সময়ে অনেক মসজিদে পৃথক প্রবেশদ্বারসহ মহিলাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। পৃথক ব্যবস্থা না থাকলে মহিলাদের মসজিদে গমণ সমীচীন হবে না। একই ফ্লোরের পর্দা দিয়ে মহিলাদের জন্য আলাদা স্থান নির্ধারণ করা যেতে পারে। আবার তাদের জন্য পৃথক ফ্লোরের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে।
‘বর্তমান যুগে মহিলারা মসজিদে যেতে পারবে কীনা’ এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হয়ে শায়খ বিন বায ও তাঁর পারিষদ নিম্নরূপ জবাব দিয়েছিলেন:
يجوز للمرأة أن تصلى بالمسجد في هذا الزمان وغيره..
ولكن عليها أن تحافظ على آداب الإسلام من ستر عورتها وعدم مس الطيب عند خروجها وعدم الاختلاط.
এই যুগে এবং অন্য যুগেও মসজিদে মহিলাদের নামায আদায় বৈধ। .. তবে তাদের উচিত সতর ঢাকা, বের হওয়ার সময় সুগন্ধি ব্যবহার না করা, পুরুষের সাথে না মেশার মত ইসলামী শিষ্টাচার বজায় রাখা’।
স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মহিলাদেরকে আতর মেখে মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন:
أن زينب الثقفية كانة ةحدث عن رسول الله أنه قال: إذا شهدة إحداكن العشاء فلا ةطيب ةلك الليلة.
যায়নাব আল-ছাকাফিয়্যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হতে হাদীস বর্ণনা করে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ ‘ইশার নামাযে অংশগ্রহণ করতে চাইলে সে রাতে যেন সুগন্ধি ব্যবহার না করে। এ নিষেধাজ্ঞা নামায আদায়ের পূর্বে বলবৎ থাকবে। নামায আদায়ের পর বাসায় ফিরে সুগন্ধি ব্যবহার করলে তাতে কোন অসুবিধা নেই।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আরো বলেছেন,
أيما امرأة أصابة بخورا فلا ةشهد معنا العشاء الآخرة.
‘কোন রমণী সুগন্ধি ব্যবহার করলে সে যেন আমাদের সাথে শেষ ‘ইশার নামাযে অংশগ্রহণ না করে।
সুগন্ধি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার হাদীসগুলোতে রাতের নামাযের কথা বলা হয়েছে, এটা হতে এ ধারণা করার কোন কারণ নেই যে মহিলারা দিনের নামাযে সুগন্ধি মেখে যেতে পারবে। সেকালে মহিলারা সাধারণত রাতে সুগন্ধি ব্যবহার করত; দিবাবসানে কর্মব্যস্ত স্বামী ঘরে ফিরতেন, মহিলারা তাই রাতে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। তাই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশনা দিয়েছেন কেউ নামাযে আসতে চাইলে সুগন্ধি যেন ব্যবহার না করে। আগেই যেমনটি বলা হয়েছে নামায হতে ফিরে সুগন্ধি ব্যবহার করলে কোন অসুবিধা নেই।
মহিলাদের জন্য ঘরে নামায আদায় করা উত্তম না মসজিদে উপস্থিত হয়ে জামা‘আতে নামায আদায় করা উত্তম?
পূর্বের আলোচনা হতে কিছু বিষয় পরিষ্কার হয়েছে:
ক. মসজিদে উপস্থিত হয়ে জামা‘আতে নামায আদায় করা মহিলাদের জন্য ওয়াজিব/সুন্নাতে মুআক্কাদা নয়;
খ. মহিলাদের স্বতন্ত্র জামা‘আত মুস্তাহাব;
গ. মহিলারা ইসলামী শিষ্টাচার বজায় রেখে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে যেতে চাইলে মহিলাদেরকে বাধা দেয়া যাবে না।
এগুলো মোটামুটি মীমাংসিত বিষয়। প্রশ্ন হল মহিলাদের জন্য ঘরে নামায আদায় করা উত্তম না মসজিদে জামা‘আতে নামায আদায় করা উত্তম [মনদূব]?
এ বিষয়ে ‘আলিমগণের মাঝে তেমন কোন মতভেদ নেই। চার ইমামসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘আলিমদের মতে মহিলাদের ঘরে নামায পড়া উত্তম। তাঁদের এ মতের পক্ষে বেশ কিছু হাদীস উল্লেখ করা হয়। প্রতিনিধিত্বশীল মুজতাহিদগণের মাঝে ইবনু হাযম এ মতের বিরোধিতা করেছেন। তিনি অত্যন্ত জোরালো ভাষায় দাবি করেছেন, মহিলাদের জন্য মসজিদে নামায আদায় করা ঘরে নামায আদায় করার চাইতে উত্তম। যেসব হাদীসের ভিত্তিতে মহিলাদের জন্য ঘরে নামায পড়া উত্তম বলে দাবী করা হয় ইবনু হাযম সেগুলো পর্যালোচনা করেছেন।
ঘর-ই মহিলাদের নামায আদায়ের জন্য অধিক উত্তম স্থান: এ-সংক্রান্ত হাদীসের পর্যালোচনা
لا تمنعوا إماءكم المساجد وبيوتهن خير لهن
ক. ‘তোমাদের স্ত্রীদেরকে মসজিদে যেতে মানা করো না; তবে ঘর-ই তাদের জন্য উত্তম।’
সনদ: উছমান ইবনু আবি শায়বা→ইয়াযিদ ইবনু হারুন→আল-‘আওওয়াম ইবনু হাওশাব→হাবীব ইবনু আবি ছাবিত→ইবনু ‘উমার
একই ভাষায় আল-হাকিম মুসতাদরাকে এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন এবং এটি সহীহাইনের শর্তে সহীহ বলে দাবী করেছেন; আল-বুখারী ও মুসলিম বর্ণনাটি এনেছেন। তবে দুই পুরোধার বর্ণনায় হাদীসের দ্বিতীয় অংশটি [‘ তবে ঘর-ই তাদের জন্য উত্তম’] নেই। আল-নওয়াবী ও আল-হাফিজ আল-‘ইরাকী বলেন হাদীসটি সহীহ। তবে আল-‘ইরাকী যোগ করেন বুখারীর শর্তে সহীহ। ইবনু খুযাইমা তাঁর সহীহে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। তবে হাদীসটি সহীহ হওয়ার বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন; তাঁর মতে, হাবীব ইবনু আবি ছাবিত এই হাদীসটি ইবনু ‘উমার (রা.) থেকে শুনেছেন, এমন কোন তথ্য তাঁর জানা নেই। আল-আলবানী বলেন, ‘হাবীব ইবনু আবি ছাবিতের ব্যাপারে তাদলীসের অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া ইবনু ‘উমার হতে তিনি عنعنة পদ্ধতিতে বর্ণনা করেছেন। এ ত্রুটি দু’টি না থাকলে আমি এটিকে সহীহাইনের শর্তে সহীহ বলে গণ্য করতাম। তবে এ হাদীসের কয়েকটি শাহিদ থাকায় এটিকে সহীহ লিগাইরিহি বলা যায়।’ আমিনা ওয়াদুদ-সমর্থক নেভিন রেজা এ হাদীসের দ্বিতীয় অংশকে ইদরাজ বলে সন্দেহ করেছেন।
عن عبد الله عن النبي قال: صلاة المرأة في بيتها أفضل من صلاتها في حجرتها، وصلاتها في مخدعها أفضل من صلاتها في بيتها
খ. আবদুল্লাহ [ইবনু মাস‘উদ] হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মহিলাদের জন্য কক্ষে নামায আদায় করা হলঘর/বারান্দায় নামায আদায় করার চাইতে উত্তম আর শয়নকক্ষে নামায আদায় করা অন্য কক্ষে নামায আদায় করার চাইতে উত্তম।
সনদ: ইবনুল মুছান্না→‘আমর ইবনু ‘আসিম→হুমাম→কাতাদা→মুওয়াররিক →আবুল আহওয়াস→আবদুলস্নাহ ইবনু ‘মাস‘উদ
আল-হাকিম (১/২০৯), আল-বাইহাকী (৩/১৩১), ও ইবনু খুযাইমা হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইবনু খুযাইমা সনদের ব্যাপারে মৃদু সমালোচনা করেছেন। এ হাদীসের অন্যতম রাবী কাতাদা, মুওয়াররিকের সূত্রে আবুল আহওয়াস থেকে শুনেছেন কীনা তিনি নিশ্চিত নন; কারণ কাতাদা মাঝে মাঝে তাঁর ও আবুল আহওয়াসের মাঝে মুওয়াররিকের নামোল্লোখ করেন, আবার মাঝে মাঝে করেন না। এ বর্ণনায় দেখা যাচ্ছে কাতাদা ও আবুল আহওয়াসের মাঝে মুওয়াররিক নামে একজন বর্ণনাকারী আছেন।
আল-হাকিম ও আয-যাহাবীর মতে হাদীসটি সহীহাইনের শর্তে সহীহ। তবে আল-আলবানী বলেন, এ দাবী সঠিক নয়; কারণ আবুল আহওয়াস হতে বুখারী তাঁর সহীহে কোন বর্ণনা আনেননি। বাস্তবতা হল এটি মুসলিমের শর্তে সহীহ।
উম্মু হুমাইদ নাম্নী জনৈকা আনসারী রমণী একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গিয়ে অভিযোগ করে বললেন, আমরা আপনার সাথে নামায আদায় করতে চাই, কিন্তু আমাদের স্বামীরা আমাদেরকে মানা করে। জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন:
قد علمت أنك تحبين الصلاة معي، وصلاتك في بيتك خير لك من صلاتك في حجرتك، وصلاتك في حجرتك خير من صلاتك في دارك، وصلاتك في دارك خير من صلاتك في مسجد قومك، وصلاتك في مسجد قومك خير من صلاتك في مسجدي قال، فأمرت فبني لها مسجد في أقصى شيء من بيتها أظلمه، فكانت تصلي فيه حتى لقيت الله عز وجل.
গ. আমি জানি তুমি আমার পেছনে নামায আদায় করতে পছন্দ কর। তবে তোমার জন্য কক্ষে নামায আদায় করা বারান্দায় নামায আদায়ের চেয়ে উত্তম, কক্ষে নামায আদায় করা বাড়িতে নামায আদায় করার চাইতে উত্তম, বাড়িতে নামায আদায় করা তোমার সম্প্রদায়ের মসজিদে নামায আদায় করার চাইতে উত্তম আর তোমার সম্প্রদায়ের মসজিদে নামায আদায় করা আমার মসজিদে নামায আদায় করার চাইতে উত্তম। বর্ণনাকারী বলেন, উম্মু হুমাইদের নির্দেশে তাঁর ঘরের নিভৃতে অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানে মসজিদ স্থাপিত হয়; মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ তক তিনি তথায় নামায আদায় করতেন।
এ হাদীসের সনদের বিষয়ে ইবনু হাযম আপত্তি তুলেছেন; তাঁর মতে এর সনদে আবদুল হামিদ ইবন আল-মুনযির নামে এক রাবী রয়েছেন যিনি অজ্ঞাত। একজন অজ্ঞাত রাবী’র বর্ণনার ভিত্তিতে বিশ্বস্ত রাবীদের বর্ণনা সমষ্টিকে অগ্রাহ্য করা যায় না। তবে ইবনু খুযাইমা এটিকে তাঁর সহীহ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। এ হাদীসের ওপর ভিত্তি করে তিনি দাবী করেছেন যে, মসজিদে নববীতে নামায আদায়ে অতিরিক্ত ফযিলতের যে কথা হাদীসে রয়েছে তা কেবল পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য। আল-আলবানী এটিকে হাসান লিগাইরিহী বলে গণ্য করেছেন।
عن السائب مولى أم سلمة زوج النبي عن النبي قال: خير مساجد النساء قعر بيوتهن
ঘ. নবীপত্নি উম্মু সালামাহ (রা.)-এর আযাদকৃত দাস আস-সাইব, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন, ‘ঘরের নিভৃত অংশই হল মহিলাদের সর্বোৎকৃষ্ট মসজিদ।’
সনদ: আবু তাহির→আবু বকর→য়ূনুস ইবনু ‘আবদিল আ‘লা→ইবনু ওয়াহাব→‘আমর ইবনুল হারিছ→দাররাজ আবুস সামহ→আস-সাইব
ইবনু খুযাইমা বলেন, আমি আস-সাইব-এর ন্যায়পরায়ণতা বা প্রশ্নবিদ্ধতা সম্পর্কে কিছুই জানি না। এ হাদীসটি আহমাদ, তাবরানী (আল-কাবীর-এ) এবং আল-হাকিমও বর্ণনা করেছেন। তাবারানীর সনদে ইবনু লাহিয়া রয়েছেন, যার ব্যাপারে কথাবার্তা আছে। আল-হাকিম অবশ্য বলেছেন এর সনদ সহীহ। আল-আলবানী এটিকে হাসান লিগাইরিহী-এর পর্যায়ভুক্ত করেছেন।
قالت عائشة: لو أدرك رسول الله ما احدث النساء، لمنعهن، كما منعت نساء بني اسرائيل. قلت لعمرة: أومنعن؟ قالت: نعم.
ঙ. ‘আয়িশা (রা) বলেন, মহিলারা যা আবিষ্কার করেছে [সাজগোজ ও সৌন্দর্য প্রদর্শনের ব্যাপারে] তা যদি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেখতেন তবে তাদেরকে [মসজিদে গমণে] বাধা দিতেন যেমন বনী ইসরাঈলের নারীদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল। আমি [ইয়াহয়া ইবনু সাঈদ] ‘আমরাকে বললাম: তাদেরকে কি নিষেধ করা হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
এ হাদীসটি আল-বুখারী , মুসলিম , আবু দাউদ , বাইহাকী ও আহমাদ বর্ণনা করেছেন। মাওকূফ হাদীসটির সনদের বিশুদ্ধতা প্রশ্নাতীত।
‘মহিলাদের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট মসজিদ হল তাদের গৃহকোণ’- এ বক্তব্যের সমর্থনে আরো অনেক বিশুদ্ধ বর্ণনা পাওয়া যায়। এ হাদীসগুলির ভিত্তিতে ইমাম চতুষ্টয়সহ অধিকাংশ ‘আলিম বলেন, মসজিদে নামায আদায় করার চাইতে ঘরে নামায আদায় করা মহিলাদের জন্য উত্তম।
ইবনু হাযম বলিষ্ঠ কণ্ঠে উপর্যুক্ত মতের বিরোধিতা করেছেন। একটু আগে উল্লেখিত হাদীসসমূহের সনদে ত্রুটি ধরার চেষ্টা করেছেন। এতে তিনি সফল হননি। আল-মুহাল্লার টীকাকার তাঁর ব্যর্থতাসমূহ তুলে ধরেছেন। ইবনু হাযম ‘আয়িশার (রা) হাদীসটি সবিস্তারে পর্যালোচনা করেছেন এবং নানা সাফাইয়ের ফাঁকে এর ব্যাখ্যা দিতে সচেষ্ট হয়েছেন।
তাঁর মতে ‘আয়িশার হাদীসে মহিলাদের মসজিদে গমণের বিপক্ষে কোন যুক্তি নেই; কারণ,
প্রথমত: মহিলারা যা আবিষ্কার করেছে তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেখেননি এবং নিষেধও করেননি। তিনি যখন নিষেধ করেননি অন্য কারো নিষেধ করা অবৈধ ও বিদ‘আহ। যেমন আল্লাহ বলেছেন, يا نساء النبي من يأت منكن بفاحشة مبينة يضاعف لها العذاب ضعفين. ‘হে নবীপত্নিরা! তোমাদের কেউ যদি সুস্পষ্ট অশ্লীলতায় লিপ্ত হয় তবে তাকে তার শাস্তি দিগুণ করা হবে।’ তাঁরা কোন অশ্লীল কাজ করেননি, আল্লাহও তাঁদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দেননি। আলহামদুলিল্লাহি রাবিবল ‘আলামীন। আরো যেমন আল্লাহ বলেছেন, ولو أن اهل القرى آمنوا واتقوا لفتحنا عليهم بركات من السماء والارض. ‘জনপদবাসী যদি ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত আমি তাদের জন্য আকাশ ও যমিনের বরকত উন্মুক্ত করে দিতাম।’ তারা ঈমান আনেনি, আল্লাহও বরকত দেননি।
দ্বিতীয়ত: মহিলারা কী আবিষ্কার করবেন তা আল্লাহ জানতেন, যে এটা অস্বীকার করবে সে কুফরি করবে। আল্লাহ রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে কখনো এই বলে ওহী পাঠাননি যে, মানুষকে সংবাদ দাও মহিলারা যখন এই এই আবিষ্কার করবে তখন তাদেরকে মসজিদে গমণে বাঁধা দিয়ো।’ আল্লাহ যখন তা করেননি তখন এই বক্তব্য প্রদান অসার ও দোষের।
তৃতীয়ত: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে ছিল না এমন কিছু মহিলারা আবিষ্কার করছে বলে আমরা জানি না। ব্যভিচারের চাইতে মারাত্মক অপকর্ম হতে পারে না; এই অপরাধও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে সংঘটিত হয়েছে এবং এজন্য রজমও করা হয়েছে। এতদসত্ত্বেও মহিলাদেরকে বারণ করা হয়নি। ব্যভিচার পুরুষদের জন্য তেমনি হারাম মহিলাদের জন্য যেমন। ব্যভিচার যদি পুরুষদের মসজিদে গমণে প্রতিবন্ধক না হয় শুধু মহিলাদের জন্য কেন প্রতিবন্ধক হবে? এ ধরনের ব্যাখ্যা প্রদান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পছন্দ নয়।
চতুর্থত: সকল মহিলা সৌন্দর্য প্রদর্শনের দোষে দুষ্ট নয়; যারা দোষী নয় তাদেরকেও কল্যাণ বঞ্চিত করা সমীচীন নয়। যদি না এ বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনা আসে। আল্লাহ বলেছেন, ولا تزر وازرة وزر أخرى ‘কোন বহনকারীর ওপর অপরের বোঝা চাপানো হবে না।’
পঞ্চমত: সৌন্দর্য প্রদর্শনে নব আবিষ্কার যদি তাদের মসজিদে গমণে প্রতিবন্ধক হয়, তবে তা তাদের বাজার-মার্কেটে গমণেও প্রতিবন্ধক হওয়া উচিত। তবে কেন শুধু মসজিদে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেয়া হবে? আবু হানিফা মহিলাদেরকে মরুভূমি ও নির্জনপ্রান্তরে আড়াইদিন পর্যন্ত একাকী ভ্রমণের অনুমতি দেন তিনিই আবার তাদেরকে মসজিদে যেতে বাধা দেন! এটা কেমন দ্বৈততা?!
ষষ্ঠত: ‘আয়িশা (রা) এ কারণে মহিলাদেরকে সুস্পষ্ট ভাষায় বারণ করেননি। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদি এসব দেখতেন তবে নিষেধ করতেন। আমরাও তো তা-ই বলি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করলে আমরাও নিষেধ করতাম। তিনি নিষেধ করেননি, তাই আমরাও নিষেধ করি না। বিরোধীরা কেবল সুন্নাহ-এর বিরোধিতা করেছে-এমন নয়, তারা ‘আয়িশার (রা) বক্তব্যেরও বিরোধিতা করছে। ‘আয়িশা (রা) তো নিষেধ করেননি।
‘আয়িশার (রা) উক্তির বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা শেষে ইবনু হাযম আরেকটি বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তি দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা দেখলাম, মসজিদে ও ঈদগাহে মহিলাদের গমণ করা একটি অতিরিক্ত কাজ, ভোরে, অন্ধকারে, কঠিন গরমে আর আর তীব্র শীতে, রোদে পুড়ে আর বৃষ্টিতে ভিজে। এখন বিরোধীরা [সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘আলিম] বলছেন, মহিলাদের জন্য ঘরে নামায পড়া উত্তম। তাহলে অতি অবশ্যই দু’টি অবস্থা হবে: (ক) মসজিদে নামায আদায় ও বাসায় নামায আদায় সমান মর্যাদাপূর্ণ হবে, সেক্ষেত্রে মসজিদে গমণের অতিরিক্ত আমলটুকু অনর্থক ও অমূলক হবে। তারা কিন্তু এটা বলে না। (খ) অথবা মসজিদে নামায আদায় করা বাড়িতে নামায আদায় করার চেয়ে কম ফজিলতের হবে যা তারা বলেন। তাহলে মসজিদে গমণের পুরো আমলটুকু পাপ ও ফজিলত হানিকর বলে বিবেচিত হবে। কারণ অতিরিক্ত ‘আমলের জন্য নামাযের ফজিলত তথনই কম হবে যখন সেই অতিরিক্ত আমলটি হারাম হয়। মসজিদে নামায আদায় কম মর্যাদাপূর্ণ হচ্ছে মসজিদে গমণের কারণে; অতএব ফজিলত হানিকর মসজিদে গমণ করার কাজটি পাপকাজ।
কিন্তু পুরো দুনিয়াবাসী একমত যে, আমৃত্যু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদেরকে তাঁর মসজিদে গমণে বাধা দেননি। ন্যায়বান খলিফারাও না। তাহলে প্রমাণিত হল [মহিলাদের মসজিদে গমণের] আমলটি মনসূখ [রহিত] নয়। কোন সন্দেহ নেই এটি একটি পূণ্যকাজ; অন্যথায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদেরকে এমন কাজ করতে দিতে পারেন না যাতে কোন উপকার নেই, বরং আছে ক্ষতি। এটি কল্যাণ কামনা [নসিহত] নয়। স্বয়ং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, الدين النصيحة দীন হল কল্যান কামনা। বরং তিনি তাঁর উম্মাতের জন্য সবচেয়ে বড় শুভার্থী। তিনি মহিলাদের মসজিদে গমণের ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, وليخرجن تفلات অতএব মহিলাদের মসজিদে গমণ কমসে কম মনদূব হওয়া উচিত।
ইবনু হাযমের বক্তব্যের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়; তবে এখানে তা করা হবে না। আমরা মনে করি যুক্তির চেয়ে বিশুদ্ধ হাদীসের ভিত্তিতে আমল করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ‘মহিলাদের জন্য ঘরে নামায আদায় করা উত্তম’ এই অর্থে অনেকগুলো হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এখানে মাত্র কয়েকটি উল্লেখ করা হয়েছে। আল-আলবানী হাদীসগুলোকে সহীহ বলে মত দিয়েছেন। এখন যুক্তির ভিত্তিতে এতগুলো সহীহ হাদীস কীভাবে বর্জন তরা যেতে পারে?
আজকাল মহিলারা নানাকাজে বাড়ির বাইরে গমন করে; বাইরে অবস্থানকালে নামাযের সময় হলে বাড়িতে ফেরার অপেক্ষা না করে আশপাশের কোন মসজিদে নামায আদায় করাই শ্রেয়। তবে মহিলারা ঘরে অবস্থান করলে কেবল নামায আদায়ের জন্য মসজিদে যাওয়ার চাইতে বাসায় নামায আদায় করা উত্তম।
উপসংহার
নামাযে মহিলার ইমামতির নানা দিক নিয়ে এ রচনায় সবিস্তারে আলোকপাত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাচনিক ও কার্যমূলক সুন্নাহ, সাহাবায়ে কিরামের অনুশীলন ও ইমামগণের মতামতের ভিত্তিতে বলা যায় সর্ব-পুরুষ বা মিশ্র-জেন্ডারের নামাযে নারীর ইমামতি বৈধ নয়। তবে মহিলাদের স্বতন্ত্র জামা‘আতে তাদের সমশ্রেণীর ইমামতি বৈধ। নামাযের জামা‘আতে অংশ নেয়ার জন্য মহিলাদের মসজিদে গমণ সম্পর্কেও সম্যক আলোকপাত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আরঅইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশনা দিয়েছেন যে, মসজিদে যেতে চাইলে মহিলাদেরকে যেন বারণ না করা হয়; তবে ঘরে নামায আদায় করা তাদের জন্য উত্তম।
জীবনের সর্বক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশনা অনুসরণ করা একজন মুসলিমের ওপর অবশ্য কর্তব্য। কোন বিষয়ে পূর্ব ধারণা প্রতিষ্ঠা করার মানসে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাণী বিকৃত করা বা জোরপূর্বক ভিন্ন ব্যাখ্যা দেয়া সমীচীন নয়।


হাওয়ালা
ক.
আল-কুরআনুল কারীম

সহীহুল-বুখারী, (কায়রো: দারুত তাকওয়া ২০০১)
সহীহ মুসলিম, (কায়রো: দারুল হাদীস ১৯৯৭)
জামি‘উত তিরমিযী (বৈরুত: দারু ইহয়াউত তুরাছিল আরাবী ১৯৯২)
সুনানুত তিরমিযী (কায়রো: মাতবা‘আতুল মাদানী ১৯৬৪)
সুনান আবি দাউদ, (বৈরুত: দারুল জীল, তাবি )
আল-বাইহাকী, আস্ সুনানুল কুবরা (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যা ১৯৯৯)
সুনান আল-দারাকুতনী, (বৈরুত: দার আল-ফিকর ১৯৯৪)
মুসতাদরাক আল-হাকিম, মাকতাবাহ শামিলা হতে
মুসনাদ আহমাদ, মাকতাবাহ শামিলা হতে
মুসান্নাফ ইবন আবি শাইবা, মাকতাবাহ শামিলা হতে
ইবনু আবি ‘আসিম, আল-আহাদ ওয়াল-মাছানী, মাকতাবাহ শামিলা হতে
আল-তাবারানী, আল-মু‘জাম আল-কাবীর, মাকতাবাহ শামিলা হতে
সহীহু ইবনি খুযাইমা, অনলাইন সংস্করণ http://www.al-eman.com;
নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী, সহীহুত তাগরীব ওয়াত তারহীব, www.alalbany.net/alalbany_mawsoa.php
নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীসিদ দা‘ঈফা ওয়াল মাওদু‘আ (রিয়াদ: মাকতাবাতুল মা‘আরিফ ১৯৯২)
আল-আলবানী, সহীহ আবি দাউদ (কুয়েত: দারু গিরাস ২০০২)

আশ্ শাফি‘ঈ, কিতাবুল উম্ম (কায়রো: বূলাক ১৩২১ হি.)
আল-মাওয়ার্দী, আল-হাভী আল-কাবীর (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যা ১৯৯৪)
আবদুর রহমান আল-জাযিরী, কিতাবুল ফিক্হ ‘আলাল মাযাহিবিল ‘আরবা‘আ (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যা ১৯৯৯)
ইবনু কুদামা, আল-মুগনী (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যা তাবি)
আল-‘আইনী, আল-বিনায়াহ (হিদায়াহ-সহ), (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা ১৯৯৯),
আল-কাসানী, বাদাইউস সানাই‘ (মিসর: মাতবাআ‘ শিরকাতিল মাতবু‘আত আল-ইলমিয়্যা ১৩২৭ হি.)
ইবনু আবিদীন (মৌলভী করম আলী কৃত উর্দু অনুবাদ), রদ্দুল মুখতার (লক্ষ্ণৌ: মুনশী নওল কিশোর ১৯০০)
ইবনু রুশদ আল-হাফীদ, বিদায়াতুল মুজতাহিদ ওয়া নিহায়াতুল মুকতাসিদ (কায়রো: মুস্তাফা আল-বাবী আল-হালবী ১৯৯৩)
ইবনুল কায়্যিম আল-জুযিয়্যা, ই‘লামুল মুওয়াক্কি‘ঈন (কায়রো: দারুল হাদীস ১৯৯৩)
ইবনু হাযম, আল-মুহাল্লা, (কায়রো: ইদারাতুত তিবা‘আহ আল-মুনীরিয়্যাহ ১৩৪৮ হি.)
ইবনু হাযম, মারাতিবুল ‘ইজমা, অনলাইন সংস্করণ www.ibnhazm.net
আর-মারদাভী, আল-ইনসাফ (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যা ১৯৯৭)
ইবনু তাইমিয়া, মাজমূ‘আতুল ফাতওয়া
আয-যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা (বৈরুত: মুআসসাসাতুর রিসালাহ ১৯৯৬)
আস-সাবাকী, তাবাকাতুশ শাফি‘ঈয়্যা (কায়রো: দারু ইহয়াউল কুতুবিল ‘আরাবিয়্যা তা.বি.)
লুইস মা‘লুফ, আল-মুনজিদ ফিল আ‘লাম (বৈরুত: দারুল মাশরিক ১৪২৩)
সাহারনপুরী, বাজলুল মাজহূদ ফি হাল্লি আবি দাউদ (মিরাট: মাতবা‘আ নামী ১৩৪২ হি.)
সামছুল হক আল-আযীমাবাদী, ‘আউন আল-মা‘বুদ (বৈরুত: দার আল-ফিকর ১৯৯৫)
ড. ওয়াহবাতুয যুহাইলী, উসুলুল ফিকহিল ইসলামী (দামেশক: দারুল ফিকর ১৯৮৬)
ইবনু হাজর আল-আসকালানী, ফাতহুল বারী (কায়রো: দারুত তাকওয়া লিত তুরাছ ২০০০)
আবদুল্লাহ ইবনু বায ও কমিটির সদম্যবৃন্দ, ফাতওয়াল লিজনাতিদ দাইমা লিল বুহূছিল ইসলামিয়্যা ওয়াল ইফতা (রিয়াদ: মাকতাবাতুল মা‘আরিফ লিন নাশরি ওয়াত তাওযী‘ ১৯৯৭)
আস-সায়্যিদ সাবিক, ফিকহুস সুন্নাহ, আমেরিকান ট্রাস্ট পাবলিকেশন্স, ১৯৮৯
ইবন কুদামা আল-মাকদিসী, আল-কাফী (কায়রো: দারুল ইহয়ায়িল কুতুবিল ‘আরাবিয়্যা)
আল-আমিদী, আল-ইহকাম ফি উসুলিল আহকাম (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যা ১৯৮০)
মুল্লা জিউন, নূরুল আনওয়ার (আল-মানারসহ) (ঢাকা: এমদাদিয়া লাইব্রেরি ১৯৬৭)
ইমাম নওয়াবী, আল-মজমু‘
ইবন মানযূর, লিসানুল আরব (বৈরুত: দার ইহয়া আল-তুরাছ আল-আরাবী ১৯৯৭)
আল-ফীরূযাবাদী, আল-কামূস আল-মুহীত (বৈরুত: দার ইহয়া আল-তুরাছ আল-আরাবী ১৯৯৭)
‘উমার ইবনু শাববাহ, তারিখুল মদীনা, ওয়েব সংস্করণ
আল-‘উছাইমীন, আশ-শারহুল মুমতি‘ ‘আলা যাদিল মুসতাকনি‘ (রিয়াদ: মুআসসাসাহ আসাম ১৯৯৫)
ড. মাহমূদ আত-তাহান, তাইসীর মুসতালাহাতিল হাদীস (আলেকজান্দ্রিয়া: মারকাযুয হুদা লিদ-দিরাসাত ১৪১৫ হি.)
সিলেটের জামি‘আ কাসিমুল ‘উলুমের ফাতওয়া
রেহনুমা আহমেদ, ইসলামী চিন্তার পুনর্পঠন (ঢাকা: একুশে পাকলিকেশন্স লিমিটেড ২০০৬)

Abu Yousuf Tawfique Chowdhury, Women Leading men in Prayer http://www.islamwakening.com/viewarticle.php?articleID=1212
http://www.pmuna.org/archives/the_womenled_prayer_initiative/index.php
http://www.islamonline.net/servlet/satellite?cid=1119503549588
http://www.islamtoday.com fatwa ID 34832
http://wwwpmuna.org/archives/2005/04hina_azams_crit.php#more
http://www.al-mawrid.org/Content?ViewArticle.aspx?articleID=159
http://www.arabnews.com/?page=4&section=0&article=60721&d=20&m=3&y=2005
http://www.islamonline.net/servlet/satellite?cid=1119503549588
Nevin Reda, What Would the Prophet Do? The Islamic Basis for Female-led Prayer, http://www.pmuna.org/archives/2005/04hina_azam_crit.php.
Abdennur Prado, About the Friday Prayer led by Amina Wadud, http://www.pmuna.org/archives/2005/04/approvals_of_wo_php
http://www.arabnews.com/?=4&section=0&article=60721&d=20&m=3&y=2005
http://www.pmuna.org/archives/2005/04approvals_of_wo.php
Hina Azam, A Critique of the Arguments for Women-led Friday Prayers; http://www.altmuslim.com/perm.php?id=1416_0_25_0_C
http://islamonline.net/servlet/satellite?cid=1119503549588&pagename=islamonline-english-Ask_scholar/ftwE/fatwaeaskthescholar
http://www.al-eman.com;
www.alalbany.net/alalbany_mawsoa.php
http://www.islamqa.com/ar/ref/8868

 

ফুটনোটঃ

 

. আল-মাওয়ার্দী, আল-হাভী আল-কাবীর (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যা ১৯৯৪), খ. ২, পৃ. ৩৬৫; আবদুর রহমান আল-জাযিরী, কিতাবুল ফিক্হ ‘আলাল মাযাহিবিল ‘আরবা‘আ (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যা ১৯৯৯), খ. ১, পৃ. ৩৭২
. আশ্ শাফি‘ঈ, কিতাবুল উম্ম (কায়রো: বূলাক ১৩২১ হি.), খ. ১, পৃ. ১৪৫
. আল-বাইহাকী, আস্ সুনানুল কুবরা (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যা ১৯৯৯), খ. ৩, পৃ. ১৮৭; http://www.islamonline.net
. কিতাবুল উম্ম খ. ১, পৃ. ১৪৫
. আস্-সুনানুল কুবরা, খ. ২, পৃ. ৬০০; খ. ৩, পৃ. ১৮৭
. আস্-সুনানুল কুবরা, প্রাগুক্ত, খ. ৩, পৃ. ১৮৭
. ইবনু কুদামা, আল-মুগনী (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যা তাবি), খ. ৩, পৃ. ৩৪
. ইবন কুদামা, আল-মুগনী, খ.২, পৃ. ৩৬
. আল-‘আইনী, আল-বিনায়াহ (হিদায়াহ-সহ), (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা ১৯৯৯), খ. ২, পৃ. ৩৩৪-৩৬; আরো দেখুন, আল-কাসানী, বাদাইউস সানাই‘ (মিসর: মাতবাআ‘ শিরকাতিল মাতবু‘আত আল-ইলমিয়্যা ১৩২৭ হি.), খ. ১, পৃ. ১৫৭
. ইবনু আবিদীন (মৌলভী করম আলী কৃত উর্দু অনুবাদ), রদ্দুল মুখতার (লক্ষ্ণৌ: মুনশী নওল কিশোর ১৯০০), খ. ১, পৃ. ২৬২
. আল-‘আইনী, আল-বিনায়াহ, খ. ২, পৃ. ৩৩৫
. প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ৩৩৮
.
. ইবনু রুশদ আল-হাফীদ, বিদায়াতুল মুজতাহিদ ওয়া নিহায়াতুল মুকতাসিদ (কায়রো: মুস্তাফা আল-বাবী আল-হালবী ১৯৯৩), খ. ১, পৃ. ১৩৪
. আল-হাবী আল-কাবীর, খ. ২, পৃ. ৩৫৬
. আল-মুগনী, খ. ২, পৃ. ৬৩
সহীহ আল-বুখারী, কিতাবুস সালাত: বাবু ফাযলি সালাতিল জামা‘আহ (কায়রো: দারুত তাকওয়া ২০০১), খ. ১, পৃ. ১৫৮
. ইবনুল কায়্যিম আল-জুযিয়্যা, ই‘লামুল মুওয়াক্কি‘ঈন (কায়রো: দারুল হাদীস ১৯৯৩), খ. ২, পৃ. ৩১৮
. ইবনু হাযম, আল-মুহল্লা, অনলাইন সংস্করণ খ. ৩, পৃ. ১২৮
. উম্ম ওয়ারাকার হাদীস সম্পর্কে পরবর্তীতে সবিস্তারে আলোচনা করা হবে।
. Abu Yousuf Tawfique Chowdhury, Women Leading men in Prayer, http://www.islamwakening.com/viewarticle.php?articleID=1212
. আল-মারদাভী, আল-ইনসাফ ( বৈরুত: দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যা ১৯৯৭), খ. ২, পৃ. ২৫৬
. ইবনু তাইমিয়া, মাজমূ‘আতুল ফাতওয়া, খ. ২৩, পৃ. ২৪৭
. পরবর্তী আলোচনায় দেখা যাবে হাদীসটি অত্যন্ত দুর্বল।
. মাজমূ‘আতুল ফাতওয়া, পূর্বোক্ত পৃষ্টা
. উম্ম ওয়ারাকার হাদীস সম্পর্কে বিস্তরিত আলোচনা আসছে পৃ.
. http://en.wikipedia.org/wiki/women_as_imams
. http://www.pmuna.org/archives/the_womenled_prayer_initiative/index.php [এ প্রবন্ধে উল্লেখিত আর-কুরআনের আয়াতসমূহের অনুবাদ ইফাবা প্রকাশিত আল-কুরআনুল কারীম হতে নেয়া হয়েছে।
. রেহনুমা আহমেদ, ইসলামী চিস্তার পুনর্পঠন (ঢাকা: একুশে পাকলিকেশন্স লিমিটেড ২০০৬), পৃ. ২৯৬
. http://www.islamonline.net/servlet/satellite?cid=1119503549588
. http://www.islamtoday.com fatwa ID 34832
. http://wwwpmuna.org/archives/2005/04hina_azams_crit.php#more
. ibid
. রেহনুমা আহমেদ, ইসলামী চিন্তার পুনর্পঠন পৃ. ২৯৬
. প্রাগুক্ত, পৃ. ২৯৫
. http://www.al-mawrid.org/Content?ViewArticle.aspx?articleID=159
. http://www.arabnews.com/?page=4&section=0&article=60721&d=20& m=3&y=2005
. এ রচনাকারের ইমেইলের জবাবে শায়খ সামী আল-মজিদ যে ফাতওয়া দিয়েছিলেন তাতে উপর্যুক্ত অভিমতসমূহ [ক, খ, গ, ঘ ও ঙ] উল্লেখ করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে দেখুন, Fatwa ID 34832 islamtoday.com
. আবু ছাওর (১৭০-২৪০ হি.) ছিলেন শাফি‘ঈ মযহাবের একজন মহান ফকীহ। তিনি ইমাম শাফি‘ঈ-এর সরাসরি ছাত্র। সুফইয়ান ইবন ‘উয়াইনার কাছেও তিনি হাদীস অধ্যয়ন করেছেন। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন বিখ্যাত হাদীস সংকলক আবু দাউদ ও ইবনু মাজাহ। তাঁর সম্পর্কে আবু হাতিম ইবনু হিববানের মন্তব্য: ‘ ফিকহ, ‘ইলম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে আবু ছাওর ছিলেন বিশ্বনেতাদের একজন।’ একবার জনৈক প্রশ্নকর্তা আহমাদ ইবনু হাম্বলকে একটি প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমাকে জিজ্ঞেস করো না, ফকীগণকে জিজ্ঞেস করো; আবু ছাওরের কাছে যাও।’ ইরাকে শাফি‘ঈ মাযহাবের বিস্তারে আবু ছাওরের বিরাট অবদান রয়েছে। দেখুন, আয-যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা (বৈরুত: মুআসসাসাতুর রিসালাহ ১৯৯৬), খ. পৃ. ৭২-৭৬; আস-সাবাকী, তাবাকাতুশ শাফি‘ঈয়্যা (কায়রো: দারু ইহয়াইল কুতুবিল ‘আরাবিয়্যা তা.বি.), খ. ২, পৃ. ৭৪-৮০
. আল-মুযানী (১৭৫-২৬৪ হি.) ইমাম শাফি‘ঈ-এর ঘনিষ্ঠ ছাত্রদের একজন। তিনি একাধারে মুহাদ্দিস ও ফকীহ ছিলেন, তবে ফকীহ হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি অনেক বেশি ছিল। ইবনু খুযাইমা ও আবু জা‘ফর আত-তাহাবী তাঁর ছাত্র ছিলেন। ইমাম শাফি‘ঈ যখন আল-উম্ম রচনা করেন তখন আল-মুযানী তাঁর প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। মুসলিম বিশ্বে শাফি‘ঈ মাযহাবের সম্প্রসারণে আল-মুযানীর বড় অবদান রয়েছে। তিনি অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন; যেমন,আল-জামি‘উল কাবীর, আল-জামি‘উস সাগীর, আল-মানছূর, আল-মাসাইলুল মু‘তাবারাহ ইত্যাদি। অত্যন্ত উঢ়ুঁ মানের ফকীহ হলেও তিনি খুবই বিনয়ী ছিলেন; মৃতদেও গোসল দিতেন তিনি। তিনিই ইমাম শাফি‘ঈর মৃতদেহের গোসল দেন। দেখুন, আয-যাহাবী, সিয়ার, খ. ১২, পৃ. ৪৯২-৯৭; আস-সাবাকী, তাবাকাত, খ. ২, পৃ. ৯৪
. আবু জা‘ফর মুহাম্মদ ইবনু জারীর আত-তাবারী (৩১০/৯২৩): ঐতিহাসিক, তাফসীরকার ও শাফি‘ঈ মাযহাবের ফকীহ। ইতিহাস, তাফসীর ও ইলমুল কিরাআতসহ নানা বিষয়ে বহু গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। উল্লেখযোগ্য রচনা: জামি‘ঊল বয়ান ফি তাফসীরিল কুরআন, তারিখুল উমাম ওয়াল মূলূক, ইখতিলাফুল ফুকাহা, আদাবুল কুযাত ও তাহযীবুল আছার। [লুইস মা‘লুফ, আল-মুনজিদ ফিল আ‘লাম (বৈরুত: দারুল মাশরিক ১৪২৩), পৃ. ৩৫৫ /.&
. http://www.islamonline.net/servlet/satellite?cid=1119503549588
. সিলেটের জামি‘আ কাসিমুল ‘উলুমের ফাতওয়া
. সহীহ মুসলিম, ‘কিতাবুস সালাত: বাবু তাসভিয়াতুস্ সুফুফ’ (কায়রো: দারুল হাদীস ১৯৯৭), খ. ১, পৃ. ৩৩৭
. জামি‘উত তিরমিযী (বৈরুত: দারু ইহয়াইত তুরাছিল আরাবী ১৯৯২), খ. ২, পৃ. ২৩
. What Would the Prophet Do?
. সহীহ আল-বুখারী, ‘কিতাবুস্ সালাত: বাবু ইনতিযারিন নাস কিয়মিল ইমামিল ‘আলিম খ.১, পৃ. ২০৭-০৮
. প্রাগুক্ত, খ. ১, পৃ. ২০৮-০৯
. প্রাগুক্ত, পৃ. ২০৪
. সাহারনপুরী, বাজলুল মাজহহদ ফি হালিস্ন আবি দাউদ, বাবু মা জাআ ফী খুরূজিন নিসা ইলা মাসাজিদ (মিরাট: মাতবা‘আ নামী ১৩৪২ হি.), খ. ১, পৃ. ৩২০; আল-মুহাল্লা, ক. ৩, পৃ. ১৩১
. সহীহুল বুখারী, ‘কিতাবুস সালাত: বাবুল মারআতি ওয়াহদাহা তাকূনু সাফ্ফান পৃ. ১৭৬; সুনানুত তিরমিযী (কায়রো: মাতবা‘আতুল মাদানী ১৯৬৪), খ. ১, পৃ. ২৩৪
. সুনানুদ দারিমী, আল-মুকাদ্দিমা
. ইবনু হাযম, আল-মুহাল্লা, খ. ১, পৃ. ১২৫
. ড. ওয়াহবাতুয যুহাইলী, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতিুহূ, খ. ২, পৃ. ১১৬৭
. ইবনু কুদামা আল-মাকদিসী, আল-মুগনী, খ. ১, পৃ.১৮৬
. সহীহ মুসলিম, খ. ১, পৃ. ৩৩৮
. সহীহুল বুখারী, কিতাবুস সালাত: বাবু উজুবি সালাতিল জামা‘আহ, খ.১, পৃ. ১৫৮
. ইবনু হাজর আল-আসকালানী, ফাতহ, খ. ২, পৃ. ১৫৭
. ইবনু হাযম, আল-মুহাল্লা, খ. ৫, পৃ. ৫৫
. ইবন কুদামা আল-মাকদিসী, আল-মুগনী, খ. ২ পৃ. ১৮৮
. সুনান আবি দাউদ, ‘কিতাবুস সালাত: বাবুল জুম‘আ লিল মামলূক ওয়াল মারআহ (বৈরুত: দারুল জীল ), খ. ১, পৃ. ২৮০
. والحديث لم يصح عند أكثر العلماء ইবনু রুশ্দ, বিদায়াহ, খ. ১, পৃ. ১৪৫
. সাহারনপুরী, বাজলুল মাজহূদ ফি হাল্লি আবি দাউদ (বৈরুত দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যা তাবি), খ. ৬, পৃ. ৪৩-৪৪
. Abu Yousuf Tawfique Chowdury, Women leading men in Prayer, http://www.islamwakening.com/viewarticle.php?articleID=1212
. সহীহুল বুখারী, ‘কিতাবুল মাগাযী:বাবু কিতাবিন নাবিয়্যি ইলা কিসরা ওয়া কায়সার’, খ. ২, পৃ. ৪৪৪
.
. ইবনুল কায়্যিম আল-জুযিয়্যাহ, ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন (কায়রো: দারুল হাদীস ১৯৯৩), খ. ২, পৃ. ৩১৮
. ইবনু কুদামা, আল-মুগনী, খ. ২, পৃ. ১৮৭
. ড. ইউসুফ আল-কারযাভী, অনলাইন ফাতওয়া
. কামালুদ্দিন ইবনুল হুম্মান, ফাতহুল কাদীর, ভারতীয় ছাপা, খ. ১, পৃ. ১৪৭; ইবনু রম্নশদ, বিদায়াতুল মুজতাহিদ ওয়া নিহায়াতুল মুকতাসিদ, খ. ১, পৃ. ১৩৪; আল-‘আইনী, আল-বিনায়াহ, খ. ২, পৃ. ৩৪৩
. নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীসিদ দা‘ঈফা ওয়াল মাওদু‘আ (রিয়াদ: মাকতাবাতুল মা‘আরিফ ১৯৯২), খ. ২, পৃ. ৩১৯ ইবনু হাজর, ফাতহ, খ.১, পৃ. ৪৮৬; খ. ২, ৪২৫
. ইবনু হাজর, ফাতহ, খ. ১, পৃ. ৪৮৫-৮৬
. প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৮৬
. Nevin Reda, What Would the Prophet Do? The Islamic Basis for Female-led Prayer, http://www.pmuna.org/archives/2005/04hina_azam_crit.php.
. আবদুল্লাহ ইবনু বায ও কমিটির সদম্যবৃন্দ, ফাতওয়াল লিজনাতিদ দাইমা লিল বুহূছিল ইসলামিয়্যা ওয়াল ইফতা (রিয়াদ: মাকতাবাতুল মা‘আরিফ লিন নাশরি ওয়াত তাওযী‘ ১৯৯৭), খ. ৭, পৃ. ৩৯১
. সহীহ মুসলিম, খ. ১, পৃ. ৪৬৫; www.ahlalhadith.com/nb/showthread.phppt=332111
. Nevin Reda, What Would the Prophet Do?
. ইবন কুদামা আল-মাকদিসী, আল-কাফী (কায়রো: দারুল ইহয়ায়িল কুতুবিল ‘আরাবিয়্যা) খ.১, পৃ. ১৯৪
. ড. ওয়াহবা আল-যুহাইলী, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, খ. ২, পৃ. ১১৯৪
. ইবন রুশ্দ আল-হাফীদ, বিদায়াতুল মুজতাহিদ ওয়া নিহায়াতুল মুকতাসিদ, খ. ১, পৃ. ১৩৪; Nevin Reda, What Would the Prophet Do?; Abdennur Prado, About the Friday Prayer led by Amina Wadud, http://www.pmuna.org/archives/2005/04/approvals_of_wo_php
.
. ইবন কুদামা, আল-মুগনী, খ. ২, পৃ. ১৮৭
. http://www.arabnews.com/?=4&section=0&article=60721&d=20&m=3&y=2005
. What Would the Prophet Do?
. What Would the Prophet Do?
. হিব্রু বাইবেল অনুসারে কোন ব্যক্তি [নারী বা পুরুষ] কতিপয় বিষয়ে শপথ গ্রহণ করলে নাজারিট হতে পারেন: ক) মদ বর্জন করা, খ) কারো মাথার চুল কর্তন করা থেকে বিরত থাকা, ইত্যাদি। http://en,wikipedia.org/wiki/nazirite
. Ark of Covenant প্রতিশ্রুত সিন্দুক বা تابوت العهد
. প্রাগুক্ত
. প্রাগুক্ত
. প্রাগুক্ত
. আল-মুহালস্না, ..
. ইবনু হাযম, মারাতিবুল ‘ইজমা, পৃ. ১২ অনলাইন সংস্করণ www.ibnhazm.net
. ড. ওয়াহবাতুয যুহাইলী, উসুলুল ফিকহিল ইসলামী (দামেশক: দারম্নল ফিকর ১৯৮৬), খ. ১, পৃ. ৪৯০
. আয-যুহাইলী, উসূল খ. ১, পৃ. ৫৭৪
. প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৭৩
. আল-আমিদী, আল-ইহকাম ফি উসুলিল আহকাম (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যা ১৯৮০),খ. ১, পৃ. ৩৩৬
. মুল্লা জিউন, নূরুল আনওয়ার (আল-মানারসহ) (ঢাকা: এমদাদিয়া লাইব্রেরি ১৯৬৭), পৃ. ৩১৮
. আয-যুহাইলী, উসূল. খ. ১, পৃ. ৪৯২;
. প্রাগুক্ত, পৃ. ৫১৮
. ইমাম নওয়াবী, আল-মজমু‘, খ. ৪, পৃ. ২৫৫
. ইমাম নওয়াবী, প্রাগুক্ত, খ. ৪, পৃ. ২৫৫
. ইবনু রুশদ, বিদায়াতুল মুজতাহিদ, খ. ১, পৃ. ১৩৪
. ইবনু কুদামা, আল-মুগনী, খ. ২, পৃ. ১৮৭
. আল-‘আইনী, আল-বিনায়াহ, খ. ২, পৃ. ৩৪৩
. সাহারনপুরী, বজলুল মজহুদ, খ. ৪, পৃ. ২১১
. প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ৩৪৩-৪৪
. আল-মুগনী খ. ১, পৃ. ১৮৭
. বাজলুল মাজহূদ, ৪/২১১
. ইবনু হাযম, আল-মুহাল্লা, খ. ৩, পৃ. ১২৬
. এ হাদীসের সনদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে দেখুন, আল-আলবানী, সহীহ আবি দাউদ (কুয়েত: দারু গিরাস ২০০২), খ. ৩, পৃ. ১৪২-৪৩
. সামছুল হক আল-আযীমাবাদী, ‘আউন আল-মা‘বুদ (বৈরুত: দার আল-ফিকর ১৯৯৫), খ. ২, পৃ. ২২৬-২৭; সাহারনপুরী, বাযল আল-মাজহূদ ফী হাল্লি আবি দাউদ (মিরাট: আল-মাতবা‘আ আল-নামী ১৩৪২ হি.), খ. ১, পৃ. ৩৩০; মুসতাদরাক আল-হাকিম, খ. ২, পৃ. ২৩৫ মাকতাবা শামিলা হতে
. মুসনাদ আহমাদ, হাদীস উম্ম ওয়ারাকা বিনত আবদুল্লাহ, ৫৫/২৭৭-২৭৮; মুসান্নাফ ইবন আবি শাইবা, খ. ৭, পৃ. ৭২৮; খ. ৮, পৃ. ৩৩৯; আল-বায়হাকী, আস-সুনান আল-কুবরা, খ. ১, পৃ. ৪০৬; খ.৩, পৃ. ১৩০; ইবন আবি ‘আসিম, আল-আহাদ ওয়াল-মাছানী খ. ৯, পৃ. ২৬৭; মুসতাদরাক আল-হাকিম, খ. ২, পৃ. ২৩৫; আল-তাবরানী, আল-মু‘জাম আল-কাবীর, খ.৫, পৃ. ৩১২-৩১৩; সুনান আল-দারকুতনী, খ. ১, পৃ. ২৮০; খ. ১, পৃ. ৪০৪ মা. শা. হতে
. Nevin Reda, `What would the Prophet do? The Islamic Basis of Female-led Prayer.’ http://www.pmuna.org/archives/2005/04hina_azams_crit.php#more
. Abdennur Prado, About the Friday Prayer led by Amina Wadud, http://www.pmuna.org/archives/2005/04approvals_of_wo.php
. প্রাগুক্ত
. সুনান আল-দারাকুতনী, বাব ফি যিকর আল-জামাআহ ওয়া আহলিহা ওয়া সিফাত আল-ইমাম (বৈরুত: দার আল-ফিকর ১৯৯৪), খ. ১, পৃ. ২২৩
. Hina Azam, A Critique of the Arguments for Women-led Friday Prayers; http://www.altmuslim.com/perm.php?id=1416_0_25_0_C
. ইবন মানযূর, লিসানুল আরব (বৈরুত: দার ইহয়া আল-তুরাছ আল-আরাবী ১৯৯৭), খ. ১, পৃ. ২৫৩; আল-ফীরূযাবাদী, আল-কামূস আল-মুহীত (বৈরুত: দার ইহয়া আল-তুরাছ আল-আরাবী ১৯৯৭), খ. ২, পৃ. ১২৭৬
. ইবন মানযূর, প্রাগুক্ত, খ. ৪, পৃ. ৪৪০-৪১
. ইবনু হাজার আল-আসকালানী, ফাতহ খ. ২, পৃ. ১৫৬
. মদীনা ও এর উপকণ্ঠে স্থাপিত যেসব মসজিদে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামায আদায় করেছেন, তম্মধ্যে কয়েকটির নাম উল্লেখ করা হচ্ছে: ১. উহুদ পাহাড়ের পাদদেশে জিরার উপত্যকার ছোট মসজিদ; ২. মসজিদ আল-ফাতহ; ৩. মসজিদ বনী খুদারাহ; ৪. মসজিদ বনী উমাইয়্যা মিনাল আনসার; ৫. মসজিদ জুহাইনা; ৬. মসজিদ বনী ‘আমর ইবনু মাবযূল; ৭. মসজিদ দারিন নাবিগা; ৮. মসজিদ বনী আবদিল আশহাল; ৯. মসজিদ বনী আল-হারিছ ইবনিল খাযরাজ; ১০. মসজিদ ‘আতিকা; ১১. মসজিদুল কিবলাতাইন; ১২. মসজিদুল ফাদীহ;
যেসব মসজিদের নকশা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অঙ্কন করেছিলেন তম্মধ্যে কয়েকটির নাম উল্লেখ করা হচ্ছে: ১. মসজিদু বনী মাযিন; ২. মসজিদ বনী জুহাইনা
[‘উমার ইবনু শাববাহ, তারিখুল মদীনা, ওয়েব সংস্করণ পৃ. ২৩-৩০]
. সহীহুল বুখারী (কায়রো: দারুত তাকওয়া ২০০১), খ. ১, পৃ. ১৬২
. http://islamonline.net/servlet/satellite?cid=1119503549588&pagename=islamonline-english-Ask_scholar/ftwE/fatwaeaskthescholar
. বিন বায ও তাঁর পারিষদ, ফাতওয়া, খ. ৭, পৃ. ৩৯১, ফাতওয়া নং ২৪২৮
. আল-‘আইনী, আল-বিনায়া (হিদায়াসহ), খ. ২, পৃ. ২৫৫
. আল-জাযীরী, কিতাবুল ফিকহ ‘আলাল মাযাহিবিল ‘আরবা‘আ খ. ১, পৃ. ৩৪৯
. ইবনু কুদামা, আল-মুগনী, খ. ২, পৃ. ১৮৮
. ইবনু হাযম, আল-মুহালস্না, খ. ৩, পৃ. ১২৯
. সহীহুল বুখারী, ‘কিতাবুস সালাত: বাব ফি কাম তুসালিস্নল মারআতু ফিস ছিয়াব’ খ. ১, পৃ. ৯৯; ‘ বাব ইনতিযারুন নাসি কিয়ামাল ইমামিল ‘আদিল, খ. ১, পৃ. ২০৮; বাবু সুর‘আতি ইনসিরাফিন নিসাই মিনাস সুবহ, খ. ১, পৃ. ২০৮; আল-মুহাল্লা, খ. ৩, পৃ. ১৩০-১৩১
. সহীহুল বুখারী, ‘কিতাবুস সালাত: বাবু মান আখাফ্ফা ‘ইনদা বুকাইস সাবিয়্যি’, খ. ১, পৃ. ১৭২; বাবু ইনতিযারিন নাসি কিয়ামাল ইমামিল ‘আদিল, খ. ১, পৃ. ২০৮
. সুনানুত-তিরমিযী, খ. ১, পৃ. ২৩৪
. সহীহুল বুখারী, ‘কিতাবুস সালাত: বাবু ‘আকদিছ ছিয়াবি ওয়া শাদ্দিহা ওয়া মান দাম্মা ইলাইহি ছাওবাহহ ইযা খাফা আন তুকশাফু ‘ধাওরাতাহহ, খ. ১, পৃ. ১৯৭; সহীহু মুসলিম, কিতাবুস সালাত: বাবু আমরিন নিসাইল মুসাল্লিয়াতি ওরাআর রিজালি.., খ. ১, পৃ. ৩৩৭
. عن جابر عن رسول الله قال: يا معشر النساء إذا سجد الرجال فاغضضن أبصاركن، لا ترين عورات الرجال من ضيق الاز [আল-মুহালস্না খ. ৩, পৃ. ১৩১]
. সহীহুল বুখারী, ‘কিতাবুস সালাত: বাবু মাকছিল ইমাম ফি মুসাল্লাহু বা‘দাস সালাম,’ খ. ১, পৃ. ২০৪; বাব ইনতিযারিন্নাস কিয়ামাল ইমামিল ‘আদিল, খ. ১, পৃ. ২০৭; বাবু সালাতিন নিসা খালফার রিজাল, খ. ১, পৃ. ২০৮; বাবু সালাতিন নিসা খালফার রিজাল, খ. ১, পৃ. ২০৯
. সহীহুল বুখারী, ‘কিতাবুস সালাত: বাবু মাউ‘ইযাতিল ইমামিন নিসাআ ইয়াওমাল ‘ঈদ, ক. ১, পৃ. ২৩৪
. সহীহুল বুখারী, ‘কিতাবুস সালাত: বাবুল মাশয়ি ওয়ার রুরুবি ইলাল ‘ঈদ, ক. ১, পৃ. ২৩০; বাবুল খুতবাতি বা‘দাল ‘ঈদ, খ. ১, পৃ. ২৩১; বাবুল ‘আলামিল্লাজি বিল মুসাল্লা, খ. ১, পৃ. ২৩৪
. বসরাস্থ একটি প্রাসাদ, তালহা ইবনু আবদিল্লাহ ইবনু খালাফ আল-খুজা‘ঈ এর প্রতি সর্ম্পকিত হওযায এটিকে বনী খালাফ এর প্রাসাদ বলা হয়। এই তালহা সিজিস্তানের আমীর ছিলেন। [ইবনু হাজর, ফাতহ, খ. ১, পৃ. ৫১৪]
. অন্য বর্ণনায়: فسألت أختي النبي
. সহীহুল বুখারী, কিতাবুল হাইয: বাবু শুহূদিল হায়িযিল ‘ঈদাইন, খ. ১, পৃ. ৮৪; কিতাবুস সালাত: বাবু খুরূযিন নিসা ওয়াল হুয়য়াজ ইলাল মুসাল্লা, খ. ১, পৃ. ২৩৩; বাবুন ইযা লাম ইয়াকুন লাহা জিলবাবুন ফিল ‘ঈদ, খ. ১, পৃ. ২৩৫; বাবু ই‘তিযালিল হুয়য়াসিল মুসাল্লা, খ. ১, পুৃ. ২৩৫;
. সহীহুল বুখারী, কিতাবুস সালাত: বাবু ইসতিযানিল মারআতি যাওযাহা বিল খুরূজি ইলাল মসজিদ, খ. ১, পৃ. ২০৯
. সহীহ মুসলিম, কিতাবুস সালাত: বাবু খুরুজিন নিসাই ইলাল মাসাজিদ, খ. ১ পৃ. ৩৩৮
. প্রাগুক্ত, একই পৃষ্টা ; বজলুল মজহহদ, খ. ৪, পৃ. ১৬২; আল-মুহাল্লা, ক. ৩, পৃ. ১২৯
. সহীহুল বুখারী, কিতাবুস সালাত: বাবু হাল ‘আলা মান লাম ইয়াশহাদিল জুমু‘আহ গুসলুন মিনান নিসা ওয়াস সিবয়ান ওয়া গাইরিহিম, খ. ১, পৃ. ২১৪
. প্রাগুক্ত, একই পৃষ্টা
. আল-মুহাল্লা, খ. ৩, পৃ. ১৩৯
. সহীহ মুসলিম, কিতাবুস সালাত: বাবু খুরূযিন নিসা ইলাল মাসাজিদ, খ. ১, পৃ. ৩৩৮; আল-মুহাল্লা, খ. ৩, পৃ. ১২৯-৩০
. প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৩৮-৩৯
. আল-‘উছাইমীন, আশ-শারহুল মুমতি‘ ‘আলা যাদিল মুসতাকনি‘ (রিয়াদ: মুআসসাসাহ আসাম ১৯৯৫), খ. ৪, পৃ. ২৮৪
. বিন বায ও পরিষদ, ফাতওয়া আল-লিজনা আদ্দাইমা খ. ৭, পৃ. ৩৩৩
. সহীহ মুসলিম , খ. ১, পৃ. ৩৪
. إذا استأذنت المرأة إلى المسجد كره منعها وبيتها خير لها আল-ইনসাফ, খ.২, পৃ. ২৩৬
. বজলুল মজহূদ (সুনানু আবি দাউদসহ), খ. ৪, পৃ. ১৬২
. মুস্তাদরাকে হাকিম, খ. , পৃ. ২০৯
. সহীহুল বুখারী, খ. ১, পৃ. ২১৪
. সহীহ মুসলিম, খ. ১, পৃ. ৩৩৮
. সহীহু ইবনি খুযাইমা, কিতাবুল ইমামাহ ফিস সালাত: বাবু ইখতিয়ারি সালাতল মারআতি ফি বাইতিহা, হাদীস নং ১৬৮৩;
http://www.al-eman.com;
. قول الراوي فلان عن فلان যে হাদীসে রাবী বলেন ‘অমুক হতে অমুক বর্ণনা করেছেন’ তাকে হাদীস মু‘আন‘আন বলে। [ড. মাহমূদ আত-তাহান, তাইসীর মুসতালাহিল হাদীস (আলেকজান্দ্রিয়া: মারকাযুয হুদা লিদ-দিরাসাত ১৪১৫ হি.), পৃ. ৬৭]
. সহীহ লিগাইরিহীর সংজ্ঞা দিতে হলে সহীহ কি তা জানতে হবে; এজন্য পারস্পরিক নির্ভরশীল সংজ্ঞগুলো একত্রে উল্লেখ করা হল:
ক. সহীহ লিযাতিহি: ন্যায়পরায়ণ ও পূর্ণস্মরণশক্তির অধিকারী রাবীর মুত্তাসিল (অবিচ্ছিন্ন) সনদে বর্ণিত হাদীসকে সহীহ লিযাতিহী বলে।
খ. হাসান লিযাতিহি: ন্যায়পরায়ণ, কিন্তু পূর্ণস্মরণশক্তির অধিকারী নয়, এমন রাবীর হাদীসকে হাসান লিযাতিহি বলে।
গ. সহীহ লিগাইরিহি: হাসান লিযাতিহি যদি কয়েক সনদে বর্ণিত হয় তবে তা শক্তিপ্রাপ্ত হয়ে সহীহ-এর পর্যায়ে পৌছে, এটি সহীহ লিগাইরিহি।
ঘ. হাসান লিগাইরিহি: জ‘য়ীফ হাদীস নানাসূত্রে বর্ণিত হলে হাসান লিগাইরিহি-ও মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়। [মাহমূদ আত-তাহান, তাইসীর পৃ. ১০৬-১০৯]
. নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী, সহীহ সুনানি আবি দাউদ (কুয়েত: মুআসসাসাহ গিরাস ২০০২), খ. ৩, পৃ. ১০৩-১০৫; নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী, সহীহূত তাগরীব ওয়াত তারহীব, কিতাবুস সালাত: বাবু তারগীবিন নিসা ফিস সালাতি ফি বুয়ুতিহিন্না; www.alalbany.net/alalbany_mawsoa.php
. বাইত ও হুজরাহ শব্দ দুটি এ হাদীসে প্রচলিত অর্থে আসেনি; এখানে বাইত-এর অর্থ হল: কক্ষ। পক্ষান্তরে হুজরা-এর অর্থ হল ঘরের চত্বর বা বারান্দা বা হলঘর। দেখুন, http://www.islamqa.com/ar/ref/8868
. সাহারানপূরী, বজলুল মজহূদ (সুনানু আবি দাউদসহ) , খ. ৪, পৃ. ১৬৫
. সহীহ সুনানি আবি দাউদ, খ. ৩, পৃ. ১০৮
. সহীহ ইবনু খুযাইমা, কিতাবুল ইমামাহ ফিস সালাত: বাবু ইখতিয়ারি সালাতিল মারআতি ফি বাইতিহা, হাদীস নং ১৬৮৫
. সহীহ সুনানি আবি দাউদ, খ. ৩, পৃ. ১০৮-০৯
. মুসনাদে আহমদ, খ. ৬, পৃ. ৩৭১; ইবনুল আছীর, উসুদুল গাবাহ, খ. ৫, পৃ. ৫৭৮; ইবনু হাজর, আল-ইসাবাহ, খ. ৮, পৃ. ২২৬; ইবনু ‘আবদিল বার, আল-ইস্তি‘আব, খ. ১, পৃ. ৭৯১; ইবনু হাযম, আল-মুহাল্লা, খ. ৩, পৃ. ১৩৩
. আল-মুহাল্লা, খ.৩, পৃ. ১৩৬
. সহীহু ইবনি খুযাইমা, হাদীস নং ১৬৮৯
. আল-আলবানী, সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, কিতাবুস সালাত: বাবু তারগীবুন নিসা ফিস সালাতি ফি বুয়ূতিহিন্না
. সহীহু ইবনি খুযাইমা, হাদীস নং- ১৬৮৩
. সহীহু ইবনি খুযাইমা, কিতাবুল ইমামাহ ফিস সালাত: বাবু ইখতিয়ারি সালাতল মারআতি ফি বাইতিহা, হাদীস নং ১৬৮৩;
. আল-আলবানী, সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, কিতাবুস সালাত: বাবু তারগীবুন নিসা ফিস সালাতি ফি বুয়ূতিহিন্না
. সহীহুল বুখারী, কিতাবুস সালাত; বাবু ইনতিযারিন নাসি কিয়ামাল ইমামিল ‘আদিল, খ. ১, পৃ. ২০৮
. সহীহ মুসলিম, কিতাবুস সালাত:বাবু খুরূজিন নিসা ইলাল মাসাজিদ, খ.১, পৃ. ৩৪০
. বজলুল মজহূদ (সুনানু আবি দাউদসহ), ক. ৪, পৃ. ১৬৪
. আল-আলবানী, সহীহ সুনানি আবি দাউদ, খ. ৩, পৃ. ১০৭-০৮
. আল-মুহাল্লা, খ. ৩, পৃ. ১৩৮
. সহীহ ইবনি খুযাইমা ও আত-তারগীব ওয়া আত-তারহীব-এর সংশ্লিষ্ট অধ্যায় দেখুন