তাহারাত অধ্যায়
তাহারাত
নবুয়তের মর্যাদায় ভূষিত হবার পর নবীর দায়ত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করার জন্যে নবী মুস্তফা (সা)এর উপর প্রথমে যে অহী নাযিল হয় তাতে তৌহীদের শিক্ষার পরই এ নির্দেশ দেয়া হয় যে, পরিপূর্ণ পরিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা (তাহারাত) অবলম্বন করতে হবে।

وَثِيَابَكَ فَطَهِّر )المدثر-4)

নিজেকে পাক পবিত্র ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন (মুদ্দাসসির-৪)।

ثياب শব্দটি ثوب শব্দের বহুবচন। যার শাব্দিক অর্থ পোশাক। কিন্তু এখানে ثياب (সিয়াব) বলতে শুধুমাত্র পোশাক-পরিচ্ছদ বুঝানো হয়নি। বরঞ্চ শরীর, পোশাক, মন-মস্তিস্ক মোট কথা সমগ্র ব্যক্তিসত্তাকে বুঝানো হয়েছে। আরবী ভাষায় طاهر الثوب ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যে সকল ক্রটি-বিচ্যুতি ও মলিনতার উর্ধে। কুরআনের নির্দেশের মর্ম এই যে, স্বীয় পোশাক, শরীর ও মন-মস্তিস্কের মলিনতার অর্থ শির্ক কুফরের ভ্রন্ত মতবাদ ও চিন্তাধারা এবং চরিত্রের উপর তার প্রতিফলন। শরীর ও পোশাক পরিচ্ছদের মলিনতার অর্থ এমন অপবিত্রতা ও অশুচিতা যা অনুভব করা যায় এবং রুচিপ্রকৃতির কাছে ঘৃণ্য। অতপর শরীয়তও যার অপবিত্র (নাপাক) হওয়ার ঘোষণা করেছে।

পবিত্রতার এ গুরুত্বকে সামনে রেখে কুরআন পাক স্থানে স্থনে এর জন্যে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে। কুরআনের দু স্থনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন যে, যারা পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করে তারা তাঁর প্রিয়া বান্দাহ।

وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ

যারা পাকসাফ এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকে, আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন- (তওবাঃ ১০৮)

إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ

যারা বার বার তওবা করে এবং পাক-পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকে, আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন (বাকারাঃ ২২২)।

নবী পাক (সা) স্বয়ং পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার অতুলনীয় দৃষ্টান্ত ছিলেন। উম্মতকে তিনি পবিত্রতা-পরিচ্ছন্নতার জন্যে বিশেষভাবে তাগীদ করেছেন এবং বিভিন্নভাবে তার গুরুত্ব বর্ণনা করে পাকসাফ থাকার জন্যে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি এরশাদ করেন, পবিত্রতা-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক (الطهور شطر لايمان) । অতপর তিনি বিস্তারিতভাবে ও সুস্পষ্টরূপে তার হুকুম-আহকাম ও পন্থা বলে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি স্বয়ং তাঁর বাস্তব জীবনে তা কার্যকর করে তাঁর অনুসারীদেরকে বুঝাবার এবং হৃদয়ংগম করার হক আদায় করেছেন। অতএব প্রতিটি মুসলমানের অপরিহার্য কর্তব্য হচ্ছে তাঁর সে সব মূল্যবান নির্দেশ মেনে নেয়া স্মরণ রাখা এবং তদনুযায়ী নিজের যাহের ও বাতেনকে (বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ দিক) পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখা। মন ও মস্তিস্ককে ভ্রন্ত মতবাদ ও চিন্তধারা এবং শির্ক ও কুফরের আকীদাহ-বিশ্বাস থেকে পবিত্র রাখা, নিজের শরীর, পোশাক ও তৎসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়গুলোকেও সকল প্রকার অপবিত্রতা ও মলিনতা থেকে পাক রাখাও প্রত্যেকের অপরিহার্য কর্তব্য। শির্ক কুফরের আকীদাহ-বিশ্বাসসমূহ পূর্ববর্তী অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে। পরবর্তী পৃষ্ঠাগুলোতে প্রকাশ্যে নাজাসাতগুলোর (নাপাকীর) হুকুম বর্ণনা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে এ বিষয়টি ভালোভাবে মনে রাখতে হবে যে, পাক-নাপাকের কষ্টিপাথর হলো আল্লাহর শরীয়ত। এ ব্যাপারে নিজের জ্ঞান বিবেক অথবা রুচি অনুযায়ী কিছু কম-বেশী করার অধিকার কারো নেই। একমাত্র ওসব বস্তুই পাক যাকে শরীয়ত পাক বলেছে এবং হক শুধু তাই যাকে শরীয়ত হক বলে ঘোষণা করেছে। ঠিক তেমনি ওসব বস্তু অবশ্য অবশ্যই বাতিল এবং নাপাক যাকে শরীয়ত বাতিল ও নাপাক বলেছে। অতপর শরীয়ত পাক করার ও পাক হওয়ার যেসব পন্থা পদ্ধতি বলে দিয়েছে একমাত্র সেভাবেই পবিত্রতা অর্জন করা যায়। এ ব্যাপারে নিজস্ব কোন রুচি ও ধ্যান-ধারণার বশবর্তী হয়ে পাক-নাপাকের কোন কষ্টিপাথর ঠিক করা এবং অযথা কুসংস্কার ও সন্দেহের কারণে আল্লাহর সহজ সরল শরীয়তকে দুঃসাধ্য করে ফেলা শুধু নিজেকেই বিরাট অসুবিধার মাধ্যে ঠেলে দেয়া নয়, বরঞ্চ একটা সাংঘাতিক রকমের গোমরাহী এবং দ্বীনের সঠিক ধারণা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা। এ ধরণের ভ্রান্ত ধারণা ও কর্যকলাপের ফলে অনেক সময় মারাত্মক কুফল দেখতে পাওয়া যায় এবং লোকে শরীয়তকে নিজের জন্যে এক বিরাট মসীবত মনে করে দ্বীন ইসলাম থেকে দূরে সরে যায়।

নাজাসাতের (অপবিত্রতা) বর্ণনা
নাজাসাতের (نجاست) অর্থ হচ্ছে মলিনতা, অশুচিতা ও অপবিত্রতা। এ হলো তাহারাত (طهارت) বা পবিত্রতার বিপরীত। তাহারাতের মর্ম পন্থা-পদ্ধতি, হুকুম-আহকাম এবং মাসয়ালা জানার জন্যে প্রথমে প্রয়োজন হচ্ছে যে, নাজাসাতের মর্ম, তার প্রকারভেদ এবং তা পাক করার নিয়মপদ্ধতি জেজে নিতে হবে। এ জন্যে প্রথমেই নাজাসাতের হুকুমগুলো ও সে সম্পর্কিত মাসয়ালাগুলো বর্ণনা করা হচ্ছে।

নাজাসাতের প্রকারভেদ

নাজাসাত দুই প্রকারের। নাজাসাতের হাকিকী ও নাজাসাতে হুকমী। উভয়ের হুকুম আহকাম ও মাসয়ালা পৃথক পৃথক। পবিত্রতা অর্জন করার জন্যে তার হুকুম ও মাসয়ালাগুলো ভালো করে বুঝেসুঝে তা মনে রাখা অত্যন্ত জুরুরী।

নাজাসাতে হাকিকী

ঐ সব জিনিসকে নাজাসাতে গালিযা বলা হয় যাদের নাপাক হওয়া সম্পর্কে কোন প্রশ্নই থাকতে পারে না। মানুষের স্বভাব প্রকৃতি সগুলোকে ঘৃণা করে এবং শরীয়ত সেগুলোকে নাপাক বলে ঘোষণা করে। এ সবের অপবিত্রতা অসুচিত্রা খুব তীব্রভাবে অনুভূত হয় এবং সে জন্যে শরীয়তে এ সবের জন্যে কঠোর নির্দেশ রয়েছে। নিম্নে নাজাসাতে গালিযার কিছু বর্ণনা করা হচ্ছে।

১. শূকর। তার প্রতিটি বস্তুই নাজাসাতে গালযা। সে জীবিত হোক অথবা মৃত।

২. মানুষের পেশাব, পায়খানা, বীর্য, প্রশ্রাবের দ্বার দিয়ে নির্গত যে কোন তরল বস্তু, সকল পশুর বীর্য এবং ছোট ছেলেমেয়েদের পেশাব-পায়খানা।

৩. মানুষ অথবা পশুর রক্ত।

৪. বমি যে কোন বয়সের মানুষের হোক।

৫. মেয়েদের প্রস্রাবের দ্বার দিয়ে নির্গত রক্ত।

৬. মেয়েদের প্রস্রাবের দ্বার দিয়ে নির্গত কোন তরল পদার্থ।

৭. ক্ষতস্থান থেকে নির্গত পূঁজ, রস অথবা অন্য কোন তরর পদার্থ।

৮. যে সব পশুর ঝুটা নাপাক তাদের ঘাম ও লালা।

৯. যবেহ করা ব্যতীত যে সব পশু মারা গেছে তাদের গোশত, চর্বি ইত্যাদি এবং চামড়া নাজাসাতে গালিযা। অবশ্য চামড়া দাবাগাত (tanning) করা হলে তা পাক। ঠিক তেমনি যার মধ্যে রক্ত চলাচল করে না যেমন শিং দাঁত ক্ষুর ইত্যাদি পাক।

১০. হারাম পশুর-জীবিত অথবা মৃত-দুধ এবং মৃত পশুর (হালাল অথবা হারাম) দুধ।

১১. মৃত পশুর দেহ থেকে নির্গত তরল পদার্থ।

১২. নাপাক বস্তু থেকে নির্গত নির্যাস অথবা ঐ ধরণের কোন বস্তু।

১৩. পাখী ব্যতীত সকল পশুর পেশাব পায়খনা। গরু, মহিষ, হাতি, ঘোড়া, গাধা, খচ্চর প্রভৃতির গোবর, উট ছাগল প্রভৃতির লাদ। উড়তে পারে না এমন পাখী, যেমন হাঁস-মুরগী ইত্যাদির পায়খানা। সকল হিংস্র পশুর পেশাব পায়খানা।

১৪. মদ এবং অন্যান্য তরল মাদক দ্রব্য।

১৫. সাপের খাল।

১৬. মৃত ব্যক্তির মুখের লালা।

১৭. শহীদ দেহ থেকে নির্গত রক্ত যা প্রবাহিত হয়।

নাজাসাতে খফিফা

ঐ সব জিনিস নাজাসাতে খফিফা যার মায়লা কিছুটা হালাকা। শরীয়তের কোন কোন দলিল-প্রমাণ থেকে তাদের পাক হওয়ার সন্দেহ হয়। এ জন্যে শরীয়তে তাদের সম্পর্কে হুকুমও কিছুটা লঘু। নিম্নে এমন সব জিনিসের নাম করা হচ্ছে যাদের নাজাসাত নাজাসাতে খফিফা ।

১. হালাল পশুর পেশাব, যেমন গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি।

২. ঘোড়ার পেশাব।

৩. হারাম পাখীর মল, যেমন কাক, চিল, বাজ প্রভৃতি। অবশ্যি বাদুরের পেশাব-পায়খানা পাক।

৪. হালাল পাখীর পায়খানা যদি দুর্গন্ধযুক্ত হয়।

৫. নাজাসাতে খফিফা যদি নাজাসাতে গালিযার সাথে মিশে যায় তা গলিযার পরিমাণ যতোই কম হোক না কেন, তথাপি সব নাজাসাতে গালিযা হয়ে যাবে।

নাজাসাতে হাকিকী থেকে পাক করার পদ্ধতি

নাপাক হওয়ার জিনিসগুলো যেমন বিভিন্ন ধরনের তেমনি তা থেকে পাক হওয়ার পদ্ধতিও বিভিন্ন, যেমন কতকগুলো জিনিস স্থির থাকে। কতকগুলো হালকা এবং বয়ে যায়। কতকগুলো আর্দ্রতায় শুকে যায়। কতকগুলো শুকায় না অথবা অল্পমাত্রায় শুকায়। কতকগুলো ময়লা নিঃশেষ হয়ে যায়। আবার কতকগুলো হয় না। সে জন্যে তাদের পাক করার নিয়ম-পদ্ধতি ভালো করে বুঝে নিতে হবে।

মাটি প্রভৃতি পাক করার নিয়ম

১. মাটি নাপাক হলে, অল্প কিংবা তারল মল দ্বারা হোক অথবা ঘনো গাঢ় মল দ্বারা, উভয় অবস্থাতেই শুকে গেলেই পাক হয়ে যাবে। কিন্তু এমন মাটিতে তায়াম্মুম করা ঠিক হবে না।

২. নাপাক মাটি শুকোবার আগে তাতে ভালো করে পানি ঢেলে দিতে হবে যেন পানি বয়ে যায়। অথবা পানিঢেলে দিয়ে তা কোন কাপড় বা অন্য কিছু দিয়ে চুষিয়ে নিতে হবে যেন মলের কোন চিহ্ন না থাকে বা গন্ধ না থাকে। এতেও মাটি পাক হয়ে যাবে। অবশ্যি তিন বার এ রকম করা উচিত।

৩. মাটি, ঢিল, বালু, পাথর প্রভৃতি শুকে গেলে পাক হয়। যে পাথর মসৃণ নয় এবং তরল বস্তু চুষে নেয়, তা শুকে গেলে পাক হয়।

৪. মাটি থেকে উদগত ঘাস, শস্য, গাছের চারা নাপাক হওয়ার পর শুকে গেলে পাক হয়ে যায়।

৫. মাটিতে যেসব জিনিস সুদৃঢ় হয়ে থাকে, যেমন দেয়াল, স্তম্ভ, বেড়াটাটি, চৌকাঠ প্রভৃতি, তা শুকে গেলে পাক হয়ে যায়।

৬. নাপাক মাটি ওলট পালট করে দিলেও তা পাক হয়ে যায়।

৭. চুলা যদি মলদ্বার নাপাক হয়ে যায় তাহলে আগুন জ্বালিয়ে ময়লার চিহ্ন মিটিয়ে দিলে পাক হয়ে যায়।

৮. নাপাক যমীনের উপর মাটি ঢেলে দিয়ে মল এভাবে ঢেকে দিতে হবে যেন মলের গন্ধ না আসে, তাহলে তা পাক হয়ে যায়। অবশ্যি তাতে তায়াম্মুম করা যাবে না।

৯. নাপাক মাটি থেকে তৈরী পাত্র যতোক্ষণ কাঁচা থাকে ততোক্ষণ নাপাক। তা যখন শুকে পাকা হয়ে যাবে তখন পাক হবে।

১০. গোবর মাখা মাটি নাপাক। তাঁর উপর কোন কিছু বিছিয়ে না নিলে নামায পড়া দুরস্ত হবে না।

নাপাক শোষণ করে নিতে পারে না

এমন জিনিস পাক করার নিয়ম

১. ধাতু নির্মিত জিনিস, যেমন- তলোয়ার, ছুরি, চাকু আয়না, সোনা, চাঁদি ও অন্যান্য ধাতুর গহনা অথবা তামা, পিতল, এলোমনিয়াম ও স্টীলের বাসন, বাটি প্রভৃতি নাপাক হয়ে গেলে মাটি দিয়ে ঘষে মেজে নিলে এথবা ভিজে কাপাড় দিয়ে ভালো করে মুছে ফেললে পাক হয়ে যাবে। এমনভাবে ঘষে মেজে নিতে হবে যা মুছে ফেলতে হবে যেন নাজাসাতের কোন চিহ্ন বা গন্ধ না থাকে। অবশ্যি জিনিসগুলো যেন নকশী না হয়।

২. চিনা মাটি, কাঁচ অথবা মসৃণ পাথরের থালা, বাটি অথবা পুরাতন ব্যবহৃহ থালা, বাটি, পাতিল যা নাজাসাত চুষে নিতে পারে না, মাটি দিয়ে ঘষে মেজে নিলে অথবা ভিজে কাপড় দিয়ে মুছে ফেললে পাক হয়। এমনভাবে তা করতে হবে যেন নাপাকীর কোন চিহ্ন না থাকে। অবশ্য যদি তা নকশী না হয়।

৩. ধাতু নির্মিত জিসিন অথবা চিনা মাটির জিনিস তিন বার পানি দিয়ে ধুলে পাক হয়।

৪. এসব জিসিসপত্র যদি নকশী হয় যেমন অলংকার অথবা নকশী থালা বাটি, তাহলে তা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা ব্যতীত শুধু ঘষলে অথবা ভিজে কাপড় দিয়ে মুছে ফেললে পাক হবে না।

৫. ধাতু নির্মিত থালা, বাটি অথবা অন্যান্য জিনিসপত্র যেমন চাকু, ছুরি, চিমটা, বেড়ি প্রভৃতি আগুনে দিলে পাক হয়।

৬. মাটি ও পাথরের থালা বাটি আগুনে দিলে পাক হয়ে যায়।

৭. চাটাই, চৌকি, টুল-বেঞ্চ অথবা এ ধরনের কোন জিনিসের উপর ঘন বা তরল ময়লা লেগে গেলে শুধু ভিজে কাপড় দিয়ে মুছে দিলে পাক হবে না। পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

যেসব জিসিস নাজাসাত চুষে নেয় তা পাক করার নিয়ম

১. মুজা, জুতা অথবা চামড়ার তৈরী অন্যান্য জিনিস যদি নাপাক হয়ে যায় আর নাজাসাত যদি ঘনো হয় যেমন- গোবর, পায়খান, রক্ত, বীর্য প্রভৃতি, তাহলে নাজাসাত চেঁচে বা ঘষে তুলে ফেললে পাক হয়ে যায়। আর নাজাসাত যদি তরল হয় এবং শুকে গেলে দেখা না যায়, তাহলে না ধুলে পাক হবে না। তা ধুয়ে ফেলার নিময় এই যে, প্রত্যেক বার ধুবার পর এতটা বিলম্ব করতে হবে যেন পানি টপকানো বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে তিনবার ধুতে হবে।

২. মাটির নতুন বরতন (থালা, বাটি, বদনা) অথবা পাথরের বরতন যা পানি চুষে নেয় অথবা কাঠের বরতন যাতে নাজাসত মিশে যায় এ ধরনের থালা, বাটি অথবা ব্যবহারের জিসিসেপত্র যদি নাপাক হয়ে যায়, তাহলে তা পাক করার নিয়ম এই যে, তা তিনবার ধুতে হবে এবং প্রতিবার এতখানি শুকনো হতে হবে যেন পানি টপকানো থেমে যায়। কিন্তু প্রবাহিত পানিতে ধুতে গেলে এ শর্ত পালনের দরকার নেই। ভালো করে ধয়ে ফেলার পর পানি সব নিংড়ে গেলেই যথেষ্ট হবে।

৩. খাদ্য শস্য নাপাক হলে তিনবার ধুতে হবে এবং প্রত্যেক বার শুকাতে হবে, যদি নাজাসাত গাঢ় হয় এবং এক স্থানে জমা হয়ে থাকে তাহলে তা সরিয়ে ফেললেই হবে। যেমন শস্যের স্তুপের উপর বিড়াল পায়খানা করেছে এবং তা শুকে জমাট হয়ে আছে। তা সরিয়ে ফেললেই চলবে। বড়ো জোর অন্য শস্যের উপর যদি তার কোন লেশ আছে বলে সন্দেহ হয় তাহলে সেগুলো তিনবার ধুয়ে ফেলতে হবে।

৪. কাপড়ে নাজাসাত লাগলে তিনবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং প্রত্যেক বার ভালো করে চাপ দিয়ে নিংড়াতে হবে। ভালো করে নিংড়িয়ে ধুবার পরও যদি দুর্গন্ধ থেকে যায় কিংবা দাগ থাক তাতে কোন দোষ নেই, পাক হয়ে যাবে।

৫. কাপড়ে যদি বীর্য লাগে এবং শুকে যায়, তাহলে আচড়ে তুলে ফেললে অথবা রগড়ে মর্দন করে তুলে ফেললে পাক হয়ে যায়। আর যদি বীর্য শুকনো না হয় তাহলে তিনবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে কাপড় পাক হয়ে যায়। পেশাব করে পানি নেয়ার পর যদি বীর্য বের হয় তাহলে আবার ধুয়ে ফেলতে হবে। যদি বীর্য খুব তরর হয় এবং শুকে যায় তাহলে ধুলেই পাক হবে।

৬. পানির মতো যেসব জিনিস তরল এবং যদি তৈলাক্ত না হয় তাহলে তা দিয়ে কাপড়ে লাগা নাজাসাত ধুয়ে পাক করা যায়।

৭. প্রবাহিত পানিতে কাপড় ধুবার সময় নিংড়াবার দরকার নেই। কাপড়ের একদিক থেকে অন্যদিকে পানি চলে গেলেই যথেষ্ট।

৮. কাপড় যদি এমন হয় যে, চাপ দিয়ে নিংড়াতে গেলে তা ফেটে যাবে, তাহলে তিনবার ধুয়ে দিতে হবে। তারপর হাত দিয়ে অথবা অন্য কিছু দিয়ে এমনভাবে চাপ দিতে হবে যেন পানি বেরিয়ে যায় এবং কাপড়েও না ফাটে।

৯. নাপাক তেল, ঘি বা অন্য কোন তেল যদি কাপড়ে লাগে তাহলে তিনবার ধুয়ে দিলে কাপড় পাক হয় যদিও তেলের তৈলাক্ততা কাপড়ে রয়ে যায়। তেলের সাথে মিশ্রিত নাজাসাত তিনবার ধুলে পাক হয়ে যায়।

১০. যদি কোন মৃতের চর্বি দ্বারা কাপড় নাপাক হয় তাহলে তিনবার ধুলেই যথেষ্ট হবে না। তৈলাক্ততা দূর করে ফেরতে হবে।

১১. চাটাই, বড় সতরঞ্চি, কার্পেট বা এ ধরনের কোন বিছানা-পত্র যা নিংড়ানো যায় না, তার উপর যদি নাজাসাত লাগে তাহলে তা পাক করার নিয়ম এই যে, তার উপর তিনবার পানি ঢালতে হবে। প্রত্যেকবার পানি ঢালার পর শুকাতে হবে। শুকাবার অর্থ এই যে, তার উপর কিছু রাখলে তা ভিজে উঠবে না।

১২. কোন খালি শূন্যগর্ভ পাত্র যদি নাপাক হয় এবং তা নাজাসাত চুষে নিয়ে থাকে তাহলে তা পাক করার পদ্ধতি এই যে, তা পানি দিয়ে পূর্ণ করতে হবে। নাজাসাতের চিহ্ন বা প্রভাব পানির মধ্যে দেখা গেলে পানি ফেলে দিয়ে আবার ভরতে হবে। যতোক্ষণ পানিতে নাজাসাতের লেশ পাওয়া যায় ততোক্ষণ এভাবে পানি ফেলতে হবে এবং নতুন পানি ভরতে হবে। এমনি করে যখন নাজাসাতের রং এবং দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে তখন পাত্র পাক হয়ে যাবে।

১৩. নাপাক রঙে রং করা কাপড় পাক করার জন্যে এতবার ধুতে হবে যেন পরিস্কার পানি আসতে থাকে। তারপর রং থাক বা না থাক কাপড় পাক হয়ে যাবে।

তরল ও তৈলাক্ত জিনিস পাক করার নিয়ম

১. নাপাক চর্বি অথবা তেল থেকে সাবান তৈরী করলে সাবান পাক হবে।

২. তেল অথবা ঘি যদি নাপাক হয় তাহলে তেল বা ঘিয়ে সমপরিমাণ পানি ঢেলে দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। পানি শেষ হবার পর পুনরায় ঐ পরিমাণ পানি দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। এভাবে তিনবার করলে তা পাক হবে। অথবা তেল বা ঘিয়ের মধ্যে পানি দিতে হবে। পানির উপর তেল বা ঘি এসে যাবে। তখন তা উপর থেকে তুলে নিয়ে আবার পানি ঢালতে হবে। এভাবে তিনবার করলে তা পাক হয়ে যাবে।

৩. মধু, সিরাপ বা শরবত যদি নাপাক হয় তাহলে তাতে পানি দিয়ে জ্বল দিতে হবে। পানি সরে গেলে আবার পানি দিতে হবে। এভাবে তিনবার করলে তা পাক হবে।

৪. যদি নাপাক তেল মাথায় বা শরীরে মালিশ করা হয়, তাহলে শুধু তিনবার ধলেই মাথা বা শরীর পাক হবে। কোন কিছু দিয়ে তৈলক্ততা দূর করার দরকার নেই।

জমাট জিনিস পাক করার নিয়ম

১. জমাট হওয়া ঘি, চর্বি অথবা মধু যদি নাপাক হয়, তাহলে নাপাক অংশটুকু বাদ দিলেই পাক হয়ে যাবে।

২. সানা আটা অথবা শুকনো আটা নাপাক হয়ে গেলে আপাক অংশ তুলে ফেললেই বাকীটা পাক হয়ে যাবে। যেমন সানা আটার উপরে কুকুরে মুখ দিয়েছে, তাহলে সে অংশটুকু ফেলে দিলেই পাক হয়ে যাবে অথবা শুকনো আটায় যদি মুখ দেয় তাহলে তার মুখের লালা যতখানিতে লেগেছে বলে মনে হবে ততখানি আলাদা করে দিলে বাকীটুকু পাক হয়ে যাবে।

৩. সাবানে যদি কোন নাপাক লাগে তাহলে নাপাক অংশ কেটে ফেললেই বাকী অংশ পাক থাকবে।

চামড়া পাক করার নিয়ম

১. দাবাগত (পাকা) করার পর প্রত্যেক চামড়া পাক হয়ে যায়। সে চামড়া হালাল পশুর হোক অথবা হারাম পশুর। হিংস্র পশুর হোক অথবা তৃণভোজী পশুর। কিন্তু শূকরের চামড়া কোনক্রমেই পাক হবে না।

২. হালাল পশুর চামড়া যবেহ করার পরই পাক হয়, তা পাক করার জন্যে দাবাগাত করার দরকার হয় না।

৩. যদি শুকরের চর্বি অথবা অন্য কোন নাপাক জিনিস দিয়ে চামড়া পাকা করা হয় তাহলে তা তিনবার ধুয়ে ফেললেই পাক হবে।

শরীর পাক করার নিয়ম

১. শরীরে নাজাসাতে হাকিকী লাগলে তিনবার ধুলেই পাক হবে। যদি বীর্য লাগে এবং শুকে যায় তাহলে তা তুলে ফেললেই শরীর পাক হবে। বীর্য তরল হলে ধুলে পাক হবে।

২. যদি নাপাক রঙে শরীর বা চুল রাঙানো হয়, তাহলে এতটুকু ধুলে যথেষ্ট হবে যাতে পরিস্কার পানি বেরুতে থাকে। রং তুলে ফেলার দরকার করে না।

৩. শরীরে খোদাই করে যদি তার মধ্যে কোন নাপাক জিনিস ভরে দেয়া হয়, তাহলে তিনবার ধুলেই শরীর পাক হবে ঐ নাপাক জিনিস বের করে ফেলার দরকার নেই।

৪. যদি ক্ষতের মধ্যে কোন নাপাক জিনিস ঢুকিয়ে দেয়া হয় তারপর ক্ষত ভালো হয়ে গেল, তাহলে ঐ নাপাক জিনিস বের করে ফেলার দরকার নেই। শুধু ধুলেই শরীর পাক হবে। যদি হাড় ভেঙ্গে যায় তার স্থানে যদি নাপাক হাড় বসানো হয়, অথবা ক্ষতস্থান নাপাক জিনিস দিয়ে সিলাই করা হলো, অথবা ভাঙ্গা দাঁত কোন জিনিস দিয়ে জমিয়ে দেয়া হলো- এ সকল অবস্থায় সুস্থ হওয়ার পর তিনবার পানি দিয়ে ধুলেই পাক হয়ে যাবে।

৫. শরীরে নাপাক তেল অথবা অন্য কোন তৈলাক্ত কিছু মালিশ করার পর শুধু তিনবার ধুয়ে ফেললেই শরীর পাক হবে। তৈলাক্ততা দূর করার প্রয়োজন নেই।

তাহারাতের ছয়টি কার্যকর মূলনীতি

১. অযথা পরিশ্রম থেকে বাঁচার জন্যে তাহারাতের হুকুমগুলোতে লাঘবতা করা হয়।

অর্থাৎ যে হুকুমগুলো কিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত, তাদের মধ্যে কোন সময়ে যদি কোন অসাধারণ অসুবিধা হয়ে পড়ে, তাহলে শরীয়তের পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং লাঘব করা হয়। যেমন ধরুন, মাইয়েত ধুয়ে দেবার সময় তার লাশ থেকে যে পানি পড়ে তা নাপাক। কিন্তু যারা লাশ ধুয়ে দেয় তাদের শরীরে যদি সে পানির ছিটা পড়ে তাহলে তা মাফ করে দেয়া হয়েছে। কারণ এর থেকে শরীর রক্ষা করা খুব কঠিন।

২. সাধারণত যেসব বিষয়ের সাথে মানুষ জড়িত হয়ে পড়ে তাও অযথা পরিশ্রমের মধ্যে শামিল। অর্থাৎ যে কাজ সাধারণত সকলেই করে থাকে এবঙ কিয়াসের দ্বারা তাকে নাপাক বলা হয়, কিন্তু তা পরিহার করা বড়ই কঠিন। এ জন্যে এ বিষয়ে শরীয়তের হুকুম সহজ করা হয়েছে। যেমন ধরুন বৃষ্টির সময় সাধারণত রাস্তায় পানি কাদা হয়ে যায়। তার থেকে নিজেকে বাঁচানো খুব মুশকিল। সে জন্যে কাদা পানির ছিটা কাপড়ে লাগলে তা মাফ করা হয়েছে।

৩. যে জিনিস বিশেষ প্রয়োজনে জায়েয বলা হয়েছে, তা প্রয়োজন হলেই জায়েয হবে। অর্থাৎ যে জিনিস কোন সময়ে কোন বিশেষ প্রয়োজনে জায়েয করা হয়েছে, তা শুধু সে অবস্থায় জায়েয হবে। অন্য অবস্থায় বিনা প্রয়োজনে তা জায়েয হবে না।

যেমন, পশুর সাহায্যে শস্য মাড়াবার সময় শস্যের উপর পশু পেশাব করে দিলে প্রয়োজনের খাতিরে তা মাফ এবং শস্য পাক থাকবে। কিন্তু এ সময় ছাড়া অন্য কোন সময়ে শস্যের উপর পেশাব করলে তা নাপাক হবে।

৪. যে নাপাক একবার মিটে গেছে তা পুনরায় ফিরে আসবে না। অর্থাৎ শরীয়তে যে নাপাকি খতম হয়ে যাওয়ার হুকুম দেয়া হয়তা আর পুনরায় হবে না। যেমন কাপড় থেকে শুকনো মণি বা বীর্য ঘষে তুলে ফেললে কাপড় পাক হয়ে যায়। তারপর সে কাপড় পানিতে পড়লে না কাপড় নাপাক হবে, না পানি। এমনি নাপাক মাটি শুকাবার পরে পাক হয়। তারপর ভিজে গেলে সে নাপাকী আর ফিরে আসে না।

৫. বিশ্বাস এবং দৃঢ় ধারণার স্থলে কুসংস্কার ও সন্দেহের কোন মূল্য দেয়া হবে না। অর্থাৎ যে বস্তু সম্পর্কে বিশ্বাস অথবা দৃঢ় ধারণা আছে যে, তা পাক, তাহলে তা পাকই হবে। শুধু সন্দেহের কারণে তা নাপাক বলা যাবে না।

৬. সাধারণ ভাবে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী হুকুম দিতে হবে। অর্থাৎ জায়েয নাজায়েয হুকুম দেবার সময় প্রচলিত নিয়ম ও অভ্যাসের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন, মানুষের চিরাচরিত অভ্যাস এই যে, সকলে খানাপিনাকে নাপাকী থেকে রক্ষা করতে চায়। অতএব অমুসলমানদের খানাপিনার বস্তুকেও পাক মনে করতে হবে। তা নাপাক বলা তখনই ঠিক হবে যখন কোন প্রকৃতি দলীল প্রমাণ দ্বারা তার নাপাক হওয়াটা জানা যাবে।

তাহারাতের হুকুমগুলোতে শরীয়তের সহজকরণ

১. নাজাসাতে গালিযা এক দিরহাম পরিমাণ মাফ। গাঢ় হলে এক দিরহাম ওযন পরিমাণ এবং তরল হলে এক দিরহাম আকারের পরিমান। অর্থাৎ এ পরিমাণে শরীর অথবা কাপড়ে নাজাসাতে গালিযা লাগলে যদি তা নিয়ে নামায আদায় করা হয় তবে নামায হয়ে যাবে, দোহরাতে হবে না। অবশ্যি ধুয়ে ফেলার সুযোগ হলে তা করা উত্তম।

২. নাজাসাতে খফিফা যদি শরীর অথবা কাপড়ে লাগে তাহলে এক চতুর্থাংশ পরিমাণ মাফ।

৩. মাইয়েত গোসল করার সময় গোসলকারীদের যে ছিটা লাগে তা মাফ।

৪. উঠানে মাড়া দেবার সময় পশু পেশাব করলে শস্য পাক থাকে।

৫. পেশাব অথবা অন্য কোন নাজাসাতের সূচনা মাথা পরিমাণ ছি’টা কাপড় বা শরীরে লাগলে তা নাপাক হবে না। যারা গৃহপালিত পশু বাড়ীতে প্রতিপালন করে তাদের শরীরে বা কাপড়ে পশুর পেশাব গোবর ইত্যাদি লাগলে তা এক দিরহাতের বেশী হলেও মাফ।

৬. বর্ষার সময যখন রাস্তাঘাটে পানি কাঁদা হয়ে যায় এবং তা থেকে বাঁচা মুশকিল হলে তার ছিটা মাফ।

৭. খাদ্যশস্যের সাথে ইঁদুরের পায়খানা মিশে গেলে এবং তা যদি এমন অল্প পরিমাণ হয় যে, তার কোন প্রভাব আটার মধ্যে অনুভব করা যায় না তাহলে সে আটা পাক। যদি কিছু পরিমাণ ইঁদুরের মল রুটি বা ভাতের সঙ্গে রান্না হয়ে যায় এবং তা যদি গলে না গিয়ে শক্ত থাকে, তাহলে সে খাদ্য পাক থাকবে এবং খাওয়া যেতে পারে।

৮. মানুষের রক্ত শোষণকারী ঐসব প্রাণী যাদের মধ্যে চলাচলকারী রক্ত নেই, যেমন মাছি, মশা, ছারপোকা ইত্যাদি। তারা যদি রক্ত পান করে এবং তাদের মারলে যদি শরীরে বা কাপড়ে রক্ত লাগে তাহলে শরীর ও কাপড় নাপাক হবে না।

৯. নাজাসাত আগুনে জ্বালালে তার ধুয়া পাক এবং ছাইও পাক। যেমন গোবর জ্বালালে তার ধুঁয়া যদি রুটি বা কোন খাদ্যে লাগে অথবা তার ছাই দিয়ে থালা বাটি মাজা হয় তা জায়েয। কোন কিছু নাপাক হবে না।

১০. নাপাক বিছানায়, চাটাইয়ে, চৌকি অথবা মাটিতে যদি কেউ শয়ন করে আর যদি ভিজা থাকে অথবা নাপাক বিছানা অথবা মাটিতে কেউ ভিজা পা দেয় অথবা নাপাক বিছানার উপর নাজাসাতের প্রভাব সুস্পষ্ট না হয় তাহলে শরীর পাক থাকবে।

১১. দুধ দোহন করার সময় যদি হাঠাৎ দু’এক টুকরা গোবর দুধে পড়ে যায়, গাইয়ের হোক অথবা বাছুরের, তাহলে সংগে সংগে তা তুলে ফেলতে হবে। এ দুধ পাক থাকবে এবং তা ব্যবহার করতে দোষ নেই।

১২. ভিজা কাপড় কোন নাপাক জায়গায় শুকাবার জন্যে দেয়া হয়েছে অথবা এমনিই রাখা হয়েছে, অথবা কেউ নাপাক চৌকির উপর বসে পড়েছে আর তার কাপড় ভিজা ছিল, তাহলে কাপড় নাপাক হবে না। কিন্তু কাপড়ে যদি নাজাসাত অনুভব করা যায় তাহলে পাক থাকবে না।

পাক নাপাকের বিভিন্ন মাসয়ালা

১. মাছ, মাছি, মশা, ছারপোকার রক্ত নাপাক নয়। শরীর এবং কাপড়েগ তা লাগলে নাপাক হবে না।

২. সতরঞ্চি, চাটাই বা এ ধরণের কোন বিছানার এক অংশ নাপাক এবং বাকী অংশ পাক হলে পাক অংশের উপর নামায পড়া ঠিক হবে।

৩. হাত, পা এবং চুলে মেহেদী লাগাবার পর মনে হলো যে মেহেদী নাপাক ছিল। তখন তিন বার ধুয়ে ফেললেই পাক হবে, মেহেদীর রং উঠাবার প্রয়োজন নেই।

৪. চোখে সুরমা আথবা কাজল লাগানোর পর জানা গেল যে, এ নাপাক ছিল। এখন তা মুছে ফেলা বা ধুয়ে ফেলা ওয়াজেব নয়। কিন্তু কিছু পরিমাণ যদি প্রবাহিত হয়ে বাহির বেরিয়ে আসে। তা ধুয়ে ফেলতে হবে।

৫. কুকুরের লালা নাপাক কিন্তু শরীর নাপাক নয়। কুকুর যদি কারো শরীর অথবা কাপড় ছুয়ে দেয় আর যদি তার গা ভিজাও হয়, তথাপি কাপড় বা শরীর নাপাক হবে না। কিন্তু কুকুরের গায়ে নাপাকী লেগে থাকলে তখন সে ছুলে কাপড় বা শরীর নাপাক হবে।

৬. এমন মোটা তক্তা যে তা মাঝখানে থেকে ফাঁড়া যাবে তাতে নাজাসাত লাগলে উল্টা দিকের উপর নামায পড়া যাবে।

৭. মানুষের ঘাম পাক সে মুসলমান হোক অথবা অমুসলমান এবং কোন স্ত্রী লোক হায়েয ও নেফাসের অবস্থায় হোক না কেন তার ঘাম পাক। ঐ ব্যক্তির ঘামও পাক যার গোসলের দরকার।

৮. নাজাসাত জ্বালায়ে তার ধূয়া দিয়ে কোন কিছু রান্না করলে তা পাক হবে। নাজাসাত থেকে উথিত বাষ্পও পাক।

৯. মিশক এবং মৃগনাভি পাক।

১০. ঘুমন্ত অবস্থায় মুখ দিয়ে পানি বের হয়ে যদি শরীর এবং কাপড়েগ লাগে তা পাক থাকবে।

১১. হালাল পাখীর আণ্ডা পচে গেলেও পাক থাকে। কাপড় অথবা শরীরে লাগলে তা পাক থাকবে।

১২. যদি কোন কিছু নাপাক হয়ে যায় কিন্তু কোন স্থানে নাজাসাত লেগেছে তা স্মরণ নেই, তখন সবটাই ধুয়ে ফেলা উচিত।

১৩. কুকুরের লালা যদি ধাতু নির্মিত বা মাটির বাসনপত্রে লাগে তাহলে তিনবার ভালো করে ধুলে পাক হয়ে যাবে। উত্কৃষ্ট পন্থা এই যে, একবার মাটি দিয়ে মেজে পানি দিয়ে ধুতে হবে এবং দুবার শুধু পানি দিয়ে ধুতে হবে।

নাজাসাতে হুকমী
নাজাসাতে হুকমী নাপাকীর এমন এক অবস্থা যা দেখা যায় না। শরীয়তের মাধ্যমে তা জানা যায়। যেমন অজুহীন হওয়া, গোসলের প্রয়োজন হওয়া। নাজাসাতে হুকমীকে হাদাসও বলে।

নাজাসাতে হুকমীর প্রকার ভেদ

নাজাসাতে হুকমী বা হাদাস দু’প্রকারঃ হাদাসে আসগার এবং হাদাসে আকবার।

হাদাসে আসগার

পেশাব পায়খান করলে, পায়খানার দ্বার দিয়ে বায়ু নির্গত হলে, শরীরের কোন অংশ থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হলে, মুখ ভরে মবি হলে, ইস্তেহাযার রক্ত বের হলে, ঠেস দিয়ে ঘুমালে যে নাপাকীর অবস্থা হয় তাকে হাদাসে আসগার বলে। এর থেকে পাক হতে হলে অযু করতে হবে। পানি পাওয়া না গেলে অথবা পানি ব্যবহার ক্ষতিকারক হলে তায়াম্মুম দ্বারাও পাক হওয়া যায়। হাদাসে আসগার অবস্থায় নামায পড়া যাবে না, কুরআন পাক স্পর্শ করা যাবে না। কিন্তু যাদের হাতে সর্বদা কুরআন থাকে এবং বার বার অযু করা মশকিল অথবা কুরআন পাঠকারী যদি শিশু হয় তাহলে অযু ছাড়া চলতে পারে। বিনা অযুতে অর্থাৎ হাদাসে আসগার অবস্থায় মৌখিক কুরআন পাঠ করা যায়।

হাদাসে আকবার

স্ত্রীলোকের সাথে সহবাস করার পার অথবা যে কোনভাবে কামভাবসহ বীর্য নির্গত হলে, অথবা স্বপ্নে বীর্যপাত হলে এবং হায়েয ও নেফাসের রক্ত বের হলে যে নাপাকীর অবস্থা হয় তাকে বলে হাদাসে আকবার। হাদাসে আকবার থেকে পাক হতে হলে গোসল করতে হবে। গোসল করা সম্ভব না হলে তায়াম্মুম দ্বারাও পাক হওয়া যায়। হাদাসে আকবারের অবস্থায় নামায পড়া যাবে না, কুরআন পাক স্পর্শ করা যাবে না, মৌখিক কুরআন তেলাওয়াতও করা যাবে না এবং মসজিদে প্রবেশ করাও যাবে না। কিন্তু অত্যাবশ্যাক কারণে মসজিদে যাওয়া যাবে। যেমন গোসলখানার রাস্তা মসজিদের ভেতর দিয়ে, পানির পাত্রের জন্যে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি শরীয়ত দান করে।

হায়েযের বিবরণ
সাবালিকা হওয়ার পর মেয়েদের প্রস্রাবের দ্বার দিয়ে স্বভাবত যে রক্ত নির্গত হয় তাকে হায়েয বলে। এ রক্ত নাপাক। কাপড় এবং শরীরে লাগলে তা নাপাক হয়ে যাবে।

হায়েয হওয়ার বয়স

হায়েয হওয়ার বয়স কমপক্ষে ন’ বছর। ন’ বছরের পূর্বে কোন মেয়ের যদি রক্ত আসে তাহলে তা হায়েয বলে গন্য হবে না। তারপর সাধারণত মেয়েদের পঞ্চান্ন বছর পর্যন্ত হায়েয হয়ে থাকে। পঞ্চান্ন বছরের পর রক্ত এলে তা আবার আয়েয বলা যাবে না। হাঁ তবে এ বয়সে রক্তের রং যদি গাঢ় লাল হয় অথবা কালচে লাল হয়, তাহলে হায়েয মনে করা হবে।

হায়েযের সময়-কাল

১. হায়েযের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে একেবারে সাদা রঙের ব্যতীত যে বঙের রক্ত আসবে তা লাল, হলুদ, খাকি, সবুজ, কালো, যাই হোক না কেন, সব হায়েয বলে গন্য হবে।

২. যে সব মেয়েদের পঞ্চান্ন বছরের আগেও গাঢ় লাল বর্ণের ছাড়াও সবুজ, খাকি এবং হলুদ বর্নের রক্ত আসে, তার পঞ্চান্ন বছরের পরেও সবুজ, খাকি এবং হলুদ বর্ণের রক্ত এলে তা হায়েয মনে করতে হবে।

৩. তিন দিন তিন রাতের সময়ের কিছু কম সময় রক্ত এলে তাও হায়েয হবে না। যেমন কোন মেয়ের জুমার দিন সূর্য উঠার সময় রক্ত এলো এবং সোমবার সূর্য উদয় হওয়ার বেশ খানিক পূর্বে রক্ত বন্ধ হয়ে গেল অর্থাৎ তিন দিন তিন রাত পূর্ণ হতে কিছু সময় বাকী থাকলো, তাহলে এ রক্ত হায়েযের মনে করা হবে না, বরঞ্চ এস্তেহাযার।

৪. যদি কোন মেয়ের তিন চার দিন রক্ত আসার অভ্যাস রয়েছে। তারপর কোন মাসে তার অধিক দিন এলো, তাহলে তা হায়েয হবে। কিন্তু দশ দিনের কিছু বেশী সময় যদি রক্ত আসে তাহলে যত দিনের অভ্যাস ছিল ততদিন হায়েয মনে করা হবে এবং বাকী দিনগুলো এস্তেহাযা।

৫. দু’হায়েযের মধ্যবর্তী পাক অবস্থায় মুদ্দত কমপক্ষে পনেরো দিন এবং বেশী হওয়ার কোন নির্দিষ্ট সীমা নেই। অতএব কোন মেয়ের যদি কয়েক মাস পর্যন্ত অথবা সারা জীবন রক্ত না আসে তাহলে সে পাকই থাকবে। অথবা এক দুই দিন রক্ত এলো তারপর দশ বারো দিন ভালো থাকলো, তারপর এক দুই দিন রক্ত এসে বন্ধ হলো, তাহলে পুরা সময়টা এস্তেহাযা ধরতে হবে।

৬. কোন মেয়েলোকের হায়েযের মুদ্দতের কম সময় অর্থাৎ দু’একদিন রক্ত আসার পর ১৫ দিন সে পাক থাকলো। পরপর আবার দু’একদিন রক্ত এলো। এ ১৫ দিন তো সে পাক থাকবেই তারপর যে রক্ত এলো সেটা হবে এস্তেহাযা।

৭. কারো প্রথম রক্ত দেখা দিল। তারপর কয়েক মাস পর্যন্ত চললো। যে দিন প্রথমে রক্ত দেখা দিল সেদিন থেকে দশ দিন হায়েয, বাকী অতিরিক্ত দিন এস্তেহাযা। এভাবে প্রত্যেক মাসের প্রথম দশ দিন হায়েয এবং বাকী বিশ দিন এস্তেহাযা ধরতে হবে।

৮. কোন মেয়ে লোকের দু’একদিন রক্ত আসার পর ১৫ দিনের কম পাক থাকলো। তারপর আবার রক্ত আসা শুরু হলো। তাহলে এ পাক থাকার কোন বিশ্বাস নেই বরঞ্চ মনে করতে হবে যে, তার রক্ত বারবার চলতে ছিল। এখন সে মেয়ে লোকের অভ্যাস অনুযায়ী সময়কাল তো হায়েয ধরা হবে আর বাকী সময়টা এস্তেহাযা। আর প্রথম বার তার রক্ত এলে প্রথম দশদিন হায়েয এবং বাকী সময় এস্তেহাযা ধরতে হবে। যেমন ধরুন, কোন মেয়েলোকের মাসের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনের হায়েয হওয়ার অভ্যাস। অতপর কোন মাসে একই দিন রক্ত এসে বন্ধ হয়ে গেল, তারপর চৌদ্দ দিন পাক থাকলো। তারপর ষোল দিনে আবার রক্ত এলো। তাহলে বুঝতে হবে ষোল দিন বারবার রক্ত এসেছে তাহলে অভ্যাস অনুযায়ী প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন হায়েয ধরা হবে এবং বাকী তের দিন এস্তেহাযা। যদি চতুর্থ পঞ্চম এবং ষষ্ঠ দিন হায়েযের অভ্যাস থাকে, তাহলে এগুলো হায়েযের দিন মনে করতে হবে এবং প্রথম তিন দিন এবং শেষের দশ দিন এস্তেহাযা মনে করতে হবে।

৯. যদি কোন মেয়েলোকের কোন অভ্যাস নির্দিষ্ট নেই। কখনো চার দিন, কখনো সাত দিন, কখনো দশ দিন। তাহলে এসব হায়েয বলে গণ্য হবে। তার যদি আবার দশ দিনের বেশী রক্ত আসে, তাহলে দেখতে হবে গত মাসে কত দিন এসেছিল। ততদিন হায়েয ধরা হবে এবং বাকী দিন এস্তেহাযা।

নেফাসের বিবরণ
বাচ্চা পয়দা হওয়ার পর স্ত্রীলোকের বিশেষ অংগ থেকে যে রক্ত বের হয় তাকে নেফাস বলে। অবশ্য শর্ত এই যে, বাচ্চা অর্ধেকের বেশীর ভাগ বাইরে আসার পর যে রক্ত বের হয় তাই নেফাস এবং তার পূর্বে যা বেরোয় তা নেফাসের রক্ত নয়।

নেফাসের রক্ত আসার মুদ্দত খুব জোর চল্লিশ দিন। আর কমের কোন নির্দিষ্ট মুদ্দত নেই। এটাই হতে পারে যে, মেয়েলোকদের নেফাসের রক্ত মোটেই আসবে না।

নেফাসের মাসয়ালা

১. যদি বাচ্চা পয়দা হবার পর কোন মেয়েলোকের মোটেই রক্ত না আসে, তবুও বাচ্চা হওয়ার পর তার গোসল করা ওয়াজিব।

২. নেফাসের মুদ্দতের মধ্যে একবারে সাদা রং ব্যতীত যে রঙেরই রক্ত আসুক তা নেফাসের রক্ত হবে।

৩. নেফাসের পর হায়েয হওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে পাক থাকার সময় সমপক্ষে ১৫ দিন।

৪. গর্ভপাত হওয়ার অবস্থায় বাচ্চার অংগ গঠন হয়ে থাকলে তারপর রক্ত এলে তা হবে নেফাসের রক্ত। কিন্তু বাচ্চা যদি শুধু একটা মাংসপিণ্ড হয় তাহলে যে রক্ত বেরুবে তা নেফাসের হবে না। কিন্তু এতে যদি হায়েযের শর্ত পূর্ণ হয় তাহলে হায়েয মনে করতে হবে। নতুবা এস্তেহাযা। যেমন ধরুন, তিন দিনের কম রক্ত এলো অথবা পাক থাকার সময় পূর্ণ ১৫ দিন হলো না তাহলে এস্তেহাযা হবে।

৫. যদি কোন মেয়ে মানুষের ৪০ দিনের বেশী রক্ত এলো এবং এ হচ্ছে তার প্রথম বাচ্চা, তাহলে ৪০ দিন নেফাসের এবং বাকী এস্তেহাযার। ৪০ দিন পর গোসল করে পাক সাফ হয়ে দ্বীনী ফরযগুলো আদায় করবে, রক্ত বন্ধ হওয়ার অপেক্ষা করবে না, যদি তার প্রথম বাচ্চা না হয় এবং নির্দিষ্ট অভ্যাস জানা যায় তাহলে তার অভ্যাস অনুযায়ী নেফাসের মুদ্দত হবে, বাকী দিনগুলো এস্তেহাযার।

৬. কোন মেয়েলোকের অভ্যাস হয়ে পড়েছে যে, ৩০ দিন নেফাসের রক্ত আসে। কিন্তু কোন বার ৩০ দিনের পরও রক্ত বন্ধ হলো না ৪০ দিন পুরা হওয়ার পর বন্ধ হলো হাতলে এ ৪০ দিনই তার নেফাস হবে। তারপর রক্ত এলে তা হবে এস্তেহাযার। এ জন্যে ৪০ দিনের পর সংগে সংগেই গোসল করে নামায ইত্যাদি আদায় করবে এবং পূর্বের ১০ দিনের নামায কাযা আদায় করবে।

৭. যদি কারো ৪০ দিন পুরা হবার আগেই রক্ত বন্ধ হয়, তাহলে ৪০ দিন পুরা হবার অপেক্ষা না করে গোসল করে নামায ইত্যাদি পড়া শুরু করবে। যদি গোসল কোন ভীষণ ক্ষতির আশংকা থাকে, তাহলে তায়াম্মুম করে পাক হবে এবং নামায আদায় করবে। নামায কিছুতেই কাযা হতে দিবে না।

হায়েয নেফাসের হুকুম

১. হায়েযের দিনগুলোতে নামায রোযা হারাম। নামায একেবারে মাফ। কিন্তু পাক হওয়ার পর কাযা রোযা রাখতে হবে।

২. হায়েয নেফাসের সময় মেয়েদের জন্যে মসজিদে যাওযা, কা’বা ঘরের তাওয়াফ করা এবং কুরআন পড়া হারাম।

৩. সিজদায়ে তেলাওয়াত এবং কুরআন স্পর্শ করাও জায়েয নয় অবশ্য জুযদান অথবা রুমালের সাহায্যে কুরআন স্পর্শ করা যায়। পরিধানের কাপড় দিয়েও জায়েয নয়। কুরআনের সাথে সেলাই করা কাপড় দিয়ে স্পর্শ করাও নাজায়েয।

৪. সূরায়ে ফাতেহা দোয়ার নিয়াতে পড়া জায়েয। এমনি দোয়ার নিয়তে দোয়ায়ে কুনুত এবং কুরআনের অন্যান্য দোয়া পড়া জায়েয।

৫. কালেমা পড়া, দরূদ পড়া, আল্লাহর যিকির করা, ইস্তেগফার এবং অন্য কোন অযীফা পড়া জায়েয। যেমন যদি কেউ “লা হুওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ” পড়ে তো দোষ নেই।

৬. ঈদগাহে যাওয়া, কোন দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া এবং অনিবার্য প্রয়োজনে মসজিদে যাওয়া জায়েয। তবে তায়াম্মুম করে মসজিদে যাওয়া ভালো।

৭. যে মেয়েলোক কাউকে কুরআন শিক্ষা দেয় সে হায়েয অবস্থায় কুরআন শিখাতে পারে। তবে গোটা আয়াত এক নিঃশ্বাসে না পড়ে থেমে থেমে আয়াতকে খণ্ড খণ্ড করে পড়াবে। এ ধরনের মেয়েদের জন্যে এভাবে পড়া জায়েয।

৮. হায়েয নেফাসের সময় স্ত্রী সহবাস হারাম। এ একটি কাজ ব্যতীত অন্য সব জায়েয, যেমন চুমো দেয়া, এক সাথে খানাপিনা করা, এক বিছানায় শুয়ে থাকা ইত্যাদি। কিন্তু এ সময়ে এক বিছানায় থাকা, এক সাথে খানাপিনা করা, চুমো দেয়া, আদর করা ইত্যাদি কাজ থেকে বিরত থাকা মাকরুহ। [মাকরুহ হওয়ার কারণ এই যে, নবী (সা) তাঁর বিবিগণের হায়েযের অবস্থায় তাঁদের সাথে মেলামেশা করতেন। আর একটা কারণ এই যে, ইহুদীরা হায়েযের সময় তাদের বিবিদেরকে অছ্যুৎ বানিয়ে রাখতো। সে জন্যে মুসলমানদেরকে ইহুদীদের অনুকরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।]

৯. কোন মেয়েলোকের ৫দিন রক্ত আসার অভ্যাস, কিন্তু ৪ দিনের পর রক্ত বন্ধ হলো। এ ধরনের মেয়েদের গোসল করে নামায পড়া ওয়াজেব। অবশ্য ৫ দিন পূরণ হওয়ার পূর্বে স্বামী সহবাস করা যাবে না- হয়তো তারপর রক্ত আসতে পারে।

১০. কারো পুরো ১০ দিন ১০ রাত পর রক্ত বন্ধ হয়ে গেল। এ অবস্থায় সে গোসল না করলেও তার সাথে সহবাস জায়েয।এমনি যার ৬ দিনের অভ্যাস আছে এবং তারপর রক্ত বন্ধ হলো। এ অবস্থাতেও তার গোসলের পূর্বে সহবাস জায়েয। কিন্তু নির্দিষ্ট অভ্যাসের পূর্বে রক্ত বন্ধ হলে অভ্যাসের দিনগুলো পূরণ হওয়ার পূর্বে সহবাস জায়েয নয়। সে মেয়েলোক যদি গোসলও করে ফেলে তবুও না।

১১. কোন মেয়ে মানুষের ৬ দিনে রক্ত বন্ধ হওয়ার অভ্যাস। কিন্তু কোন মাসে এমন হলো যে, ৬ দিন পুরো হয়ে গেল কিন্তু রক্ত বন্ধ হলো না, তাহলে সে গোসল করে নামায পড়বে না, বরঞ্চ রক্ত বন্ধ হওয়ার অপেক্ষায় থাকবে। তারপর ১০ দিন পুরো হওয়ার পর অথবা তার আগে রক্ত বন্ধ হলে এ পুরো সময়টা হায়েয বলে গণ্য হবে। কিন্তু ১০ দিনের পরও যদি রক্ত বন্ধ না হয়, তাহলে হায়েযের মুদ্দত ঐ ৬ দিনই থাকবে। বাকী দিনগুলো এস্তেহাযার মধ্যে শামিল হবে।

১২. যে মেয়েলোক রমযান মাসে দিনের বেলায় পাক হলো, তার জন্যে দিনের বাকী অংশে খানাপিনা থেকে বিরত থাকা ওয়াজেব। সন্ধ্যা পর্যন্ত রোযাদারদের মতো কাটাবে এবং ঐ দিনের রোযা কাযা করবে।

১৩. কোন মেয়েলোক পাক থাকা অবস্থায় তার নির্দিষ্ট স্থানে কাপড়ের টুকরা গুজেঁ রেখে শুয়ে পড়লো। অতপর সকালে দেখলো যে সে কাপড়ে রক্তের দাগ। এ অবস্থায় যখন রক্তের দাগ দেখা গেল তাখন থেকে হায়েযের সূচনা ধরতে হবে।

এস্তেহাযার বিবরণ
এস্তেহাযা এমন এক প্রবাহিত রক্ত যা না হায়েযের আর না নেফাযের, বরঞ্চ রোগের কারণে বের হয়। এ এমন রক্ত যেমন কারো নাকশিরা ফেটে রক্ত বেরুতে থাকে এবং বন্ধ হয় না।

এস্তেহাযার অবস্থা

১. ন’বছর বয়সের কম বালিকার যে রক্ত আসে তা এস্তোহাযা এবং ৫৫ বছরের বেশী বয়সের মেয়ে মানুষের যে রক্ত আসে তাও এস্তেহাযা। কিন্তু শেষোক্ত বেলায় রক্তের রং যদি গাঢ় লাল অথবা কালচে লাল হয় তাহলে হায়েয মনে করতে হবে।

২. গর্ভবতী মেয়েদের যে রক্ত আসে তা এস্তেহাযা।

৩. তিন দিন তিন রাতের কম যে রক্ত আসে তা এস্তেহাযা এবং এমনি ১০ দিন ১০ রাতের পর যে রক্ত তা এস্তেহাযা।

৪. যে মেয়েলোকের হায়েযের মুদ্দত তার অভ্যাস অনুযায়ী নির্দিষ্ট তার এ নির্দিষ্ট মুদ্দতের পর রক্ত এলে এ অতিরিক্ত দিনগুলোর রক্ত এস্তেহাযা। তবে এ অবস্থায় যখন রক্তদশ দিনের পরও চলতে থাকে।

৫. কোন মেয়েলোকের ১০ দিন হায়েয থাকার পর বন্ধ হলো তারপর ১৫ দিনের পূর্বেই আবার রক্ত আসা শুরু হলো। তাহলে এ হবে এস্তেহাযার রক্ত। কারণ দু’হায়েযের মধ্যে পাক থাকার সময় কমপক্ষে ১৫ দিন।

৬. চল্লিশ দিন নেফাসের রক্ত আসার পর বন্ধ হলো। তারপর ১৫ দিনের কম বন্ধ থেকে পুনরায় শুরু হলো। এই দ্বিতীয় রক্ত এস্তেহাযার। কেননা নেফাস বন্ধ হওয়ার পর হায়েয আসার জন্যে মাঝে অন্ততপক্ষে ১৫ দিন দরকার।

৭. বাচ্চা পয়দা হওয়ার পর কোন মেয়েলোকের ৪০ দিনের বেশী রক্ত এলো। যদি তার প্রথম বাচ্চা হয় এবং কোন অভ্যাস নির্দিষ্ট না থাকে তাহলে ৪০ দিনের বেশী যতো দিন রক্ত আসবে তা হবে এস্তেহাযা। কিন্তু যদি নির্দিষ্ট অভ্যাস থাকে, তাহলে নির্দিষ্ট অভ্যাসের অতিরিক্ত যত দিন রক্ত আসবে তা এস্তেহাযা হবে।

এস্তেহাযার হুকুম

যেসব মেয়েলোকের এস্তেহাযা হয় তাদের হুকুম ঐসব রোগীদের মতো যাদের নাকশিরা ফেটে রক্ত ঝরা শুরু হয় এবং বন্ধ হয় না। অথবা এমন ক্ষত যা থেকে সর্বদা রক্ত ঝরে অথবা পেশাবের রোগ যার কারণে সব সময় টপটপ করে পেশাব বের হয়। এস্তেহাযাওয়ালী মেয়েদের হুকুম নিম্নরূপঃ

১. এস্তেহাযার সময় নামায পড়া জরুরী। নামায কাযা করার অনুমতি নেই। রোযাও ছাড়তে পারবে না।

২. এস্তেহাযার সময় সহবাস জায়েয। এস্তেহাযা হওয়াতে মেয়েলোকের গোসল ফরয নয়।

৩. অযু করলেই পাক হবে।

৪. এ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত, মসজিদে প্রবেশ সব জায়েয।

৫. এ সব মেয়েলোক এক অযুতে একাধিক নামায পড়তে পারবে না। প্রত্যেক বারে নতুন অযু করতে হবে।

প্রদর

এ রোগে মেয়েলোকের বিশেষ অংগ থেকে সাদা অথবা হলুদ তরল পদার্থ অনবরত বেরুতে থাকে। তার হুকুমও ঠিক এস্তেহাযার মত। এসব মেয়েরা নামাযও পড়বে, রোযাও রাখবে। কুরআন তেলাওয়াতও করবে। অবশ্য প্রত্যেক নামাযের পূর্বে গুপ্তাংগ ভালো করে ধুয়ে নেবে এবং তাজা অযু করে নামায পড়বে।

পানির বিবরণ
তাহারাত (পবিত্রতা) শুধু সেই পানি হতে পারে যা স্বয়ং পাক। নাপাক পানি দ্বারা না অযু-গোসল হতে পারে আর না কোন নাপাক জিনিস পাক হতে পারে। বরঞ্চ এর দ্বারা পাক জিনিসই নাপাক হয়ে যায়। এ জন্যে পানি পাক-নাপাক হওয়ার হুকুম ও মাসয়ালা ভালোভাবে বুঝে নেয়া দরকার যাতে করে নিশ্চয়তা এবং নিশ্চিন্ততা সহকারে তাহারাত অর্জন করা যায়।

পানি প্রকার

বুনিয়াদীভাবে পানি দুই প্রকারের: পাক ও নাপাক

পাক পানি

পবিত্রতা অর্জনের দিক দিয়ে পাক পানি চার রকমের ঃ

১. তাহের মুতাহহের গায়ের মাকরুহঃ অর্থাত্ এমন পাক পানি যার দ্বারা কোন কেরাহাত (ঘৃণা বা অশ্রদ্ধার ভাব) ব্যতিরেকে নিশ্চিন্ত মনে অযু-গোসল করা যায়। যেমন বৃষ্টির পানি, নদী, সমুদ্র, পুকুর, নালা, ঝর্ণা, কূপ, টিউবওয়েল প্রভৃতির পানি। সে পানি মিঠা হোক অথবা লোনা, শিশির অথবা বরফ পানি হোক কোন প্রকার কেরাহাত ব্যতিরেকে এ সব পানি দিয়ে অযু ও গোসল করা যাবে।

২. তাহের মুতাহহের মাকরুহঃ এটা এমন পানি যার দ্বারা অযু ও গোসল করা মাকরুহ। যেমন কোন ছোট শিশু পানিতে হাত দিয়েছে। তার হাত যে নাপাক ছিল তা নিশ্চিত করে বলা যায় না, তবে সন্দেহ হয়। অথবা বিড়াল বা এমন কোন প্রাণী মুখ লাগিয়েছে যার ঝুটা বা উচ্ছিষ্ট মাকরুহ। অতএব এমন পানিতে অযু-গোসল মাকরুহ হবে।

৩. তাহের গায়ের মুতাহহেরঃ এমন পাক পানি-যার দ্বারা অযু ও গোসল জায়েয নয় যেমন, মায়ে মুস্তামাল অর্থাত্ এমন পানি যা দিয়ে কেউ অযু করেছে অথবা গোসল ফরয এমন ব্যক্তি গোসল করেছে কিন্তু শরীরে কোন নাজাসাত লাগা নেই। এমন পানি যদি শরীর এবং কাপড়ে লগে তাহলে নাপাক হবে না। কিন্তু এ পানি দিয়ে অযূ গোসল হবে না।

৪. মশকুকঃ অর্থাত্ এমন পানি যা দিয়ে অযূ-গোসল জায়েয হওয়া না হওয়া বিষয়ে সন্দেহ আছে। যেমন, যে পানিতে গাধা বা খচ্চর মুখ দিয়েছে। সে পানির হুকুম এই যে, এ পানি দিয়ে অযু করার পর তায়াম্মুমও করতে হবে।

মায়ে নাজাসাত (নাপাক পানি)

১. নাপাক পানির অবস্থাঃ প্রবাহমান পানিতে নাজাসাত পড়ে অবস্থা এমন সৃষ্টি করলো যে, পানির রং গন্ধ এবং স্বাদ বদলে দিল।

২. কাসীর রাকেদঃ আবদ্ধ অনেক পানি। কিন্তু ময়লা (নাজাসাত) পড়ার কারণে সব দিকের পানি রং গন্ধ এবং স্বাদ বদলে গেছে।

৩. কালীল রাকেদঃ অল্প আবদ্ধ পানি। তাতে যদি সামান্য নাজাসাত পড়ে এবং তার দ্বারা পানির রং, গন্ধ এবং স্বাদে কোন পরিবর্তন না আসে, তথাপি সে পানি দিয়ে অযু-গোসল হবে না এবং কোন নাপাক জিনিস পাক করা যাবে না।

পানির ব্যাপারে ছয়টি কার্যকর মূলনীতি
১. পানি প্রকৃতপক্ষে পাক। অর্থাত্ মৌলিক দিক দিয়ে পাক। এ জন্যে যতোক্ষণ পর্যন্ত তার নাপাক হওয়ার প্রমাণ পাওয়া না যাবে, ততোক্ষণ তা পাক বলতে হবে। যেমন ধরুন বনের মধ্যে কেন গর্তে পানি রয়েছে তা পাক। তবে যদি কোন যুক্তি প্রমাণে তা নাপাক হওয়া নিশ্চিত হয় তাহলে নাপাক মনে করতে হবে।

২. সন্দেহের কারণে নিশ্চিত বিষয় পরিত্যাগ করা যাবে না। যেমন ধরুন, কোন ঘরে পানি রাখা আছে। সেখানে থেকে কুকুর বেরুতে দেখা গেল। এখন সন্দেহ হয় যে, হয়তো কুকুর তাতে মুখ দিয়েছে। অথবা কুকুরকে মুখ দিতে দেখা যায়নি, আর না কোন অবস্থাগত প্রমাণ পাওয়া যায় যে, কুকুর পানিতে মুখ দিয়েছে। এমন অবস্থায় পানি পাক মনে করতে হবে। কারণ তার পাক হওয়াটা নিশ্চিত। নাপাক হওয়ার শুধু সন্দেহ হয়। সন্দেহের কারণে নিশ্চিয়তা দূর হয় না।

৩. কঠিন অবস্থায় হুকুম লাঘব হয়। যেমন ধরুন পাখীর পায়খানা নাপাক। এখন কূপকে তার থেকে রক্ষা করা বড়ো কঠিন জন্যে হুকুম এই যে, পাখীর পায়খানাতে কূপের পানি নাপাক হয় না।

৪. অনিবার্য প্রয়োজনে নাজায়েয জিনিসও জায়েয হয়ে যায়। যেমন কোন সময়ে পিপাসায় প্রাণ যায় যায়। পাক পানি পাওয়া যচ্ছে না। শুধু নাপাক পানি পাওয়া যায়। এমন অবস্থায় নাপাক পানি পান করা জায়েয।

৫. শরীয়তের হুকুম লাগাবার সময় অধিক বস্তুর উপর নির্ভর করতে হবে। যেমন ধরুন কোন পাত্রে পাককারী পানি এবং ব্যবহৃত পাক পানি মিশ্রিত হয়েছে। তার মধ্যে যার পরিমাণ বেশী হবে তার উপরে হুকুম হবে। যদি মুতাহহের পানি বেশী হয় তাহলে সমস্ত পানি মুতাহহের মনে করতে হবে। তা দিয়ে অযু গোসল জায়েয হবে। আর যদি মুস্তামাল (ব্যবহৃত) পানি বেশী হয় তাহলে সমস্তটাই মুস্তামাল মনে করতে হবে। তা দিয়ে অযু গোসল জায়েয হবে না।

৬. কোন নতুন বিষয় জানা গেলে, যখন তা জানা যাবে তখন থেকে মানতে হবে। যেমন ধরুন কোন কূপে মৃত ইঁদুর দেখতে পাওয়া গেল। এখন হুকুম এই যে, যখনই দেখা যাবে তখন থেকে কূপের পানি নাপাক মনে করতে হবে। তার পূর্বে যদি ঐ পানি দিয়ে গোসল করা হয়ে থাকে তাহলে তা জায়েয মনে করতে হবে।

পানির মাসয়ালা

পানি-যা দিয়ে তাহারাত দুরস্ত

১. বর্ষার পানি, নদী, সমদ্র, পুকুর, ঝর্ণা, কূপ, টিউবওয়েল প্রভৃতির পানি, মিঠা হোক অথবা লোনা এবং এমনি শিশির, বরফ ও বরফগলা পানি পাক। এ সবের প্রত্যের ধরনের পানি দিয়ে বিনা দ্বিধায় অযু গোসল করা জায়েয।

২. গোবর, পায়খানা প্রভৃতি দ্বারা আগুন জ্বালিয়ে পানি গরম করলে তা পাক থাকবে এবং তা দিয়ে অযু গোসল করা দুরস্ত হবে।

৩. কোন পুকুর, হাউজ অথবা গর্তে বহুদিন ধরে পানি আবদ্ধ রয়েছে, অথবা পাত্রে বহুদিন যাবত পানি রাখা আছে, এ কারণে তার রং, গন্ধ অথবা স্বাদ বদলে গেছে, তথাপিও পানি পাক এবং তা দিয়ে বিনা দ্বিধায় তাহারাত হাসিল করা যাবে।

৪. বনে জংগলে ছোট বড় গর্তে যে পানি জমা হয় তা পাক। বিনা কেরাহাতে তা দিয়ে তাহারাত হাসিল করা যায়। তবে কোন যুক্তি প্রমাণ দ্বারা যদি নাপাক হওয়া নিশ্চিত হয় অথবা প্রবল ধারণা জন্মে তাহলে তা দিয়ে অযু-গোসল করা ঠিক হবে না।

৫. পথের মধ্যে লোকে ঘড়া ও মটকাতে পানি রেখে দেয় যা থেকে ছোট, বড়ো, নগরবাসী, গ্রামবাসী সকলে পানি পান করে। এ ব্যাপারে পুরাপুরি সতর্কতাও অবলম্বন করা হয় না। এ পানি পাক এবং তার দ্বারা অযু-গোসল করা যাবে। তবে কোন ‍যুক্তি প্রামাণ দ্বারা নাপাক হওয়া সাব্যস্ত হলে অন্য কথা।

৬. ছোট শিশু যদি পানির মধ্যে হাত দেয় এবং তার হাত নাপাক হওয়া সম্পর্কে না নিশ্চিত হওয়া যায় আর না সন্দেহ হয় কিন্তু যেহেতু শিশুরা সাবধানতা অবলম্বন করে না বলে মনে হয় যে, হয়তো তার হাতে নাজাসাত লেগেছিল, এমন অবস্থায় এ পানির হুকুম এই যে, তা পাক এবং তা দিয়ে অযু-গোসল দুরস্ত হবে।

৭. অমুসলমানদের পাত্রের পানি পাক। কেননা সাধারণত সকলেই নাজাসাত থেকে দূরে থাকতেচায়। তবে যুক্তি প্রমাণ দ্বারা তা নাপাক প্রমাণিত হলে তার দ্বারা গোসল দুরস্ত হবে না।

৮.পানির মধ্যে যদি পাক জিনিস পড়ে যায় এবং তার দ্বারা পানির রং অথবা গন্ধ অথবা স্বাদ বদলে যায়, শর্ত এই যে, ঐ জিনিস পানির মধ্যে দিয়ে জাল দেয়া হয়নি আর না তার দ্বারা পানি গাঢ় হয়েছে যেমন স্রোতের পানির সাথে বালু মিশানো রয়েছে। অথবা জাফরান পড়ে পানিতে তার কিছুটা রং এসে গেল, অথবা সাবান প্রভৃতি গলে গেল অথবা এ ধরনের আর কোন পাক জিনিস পড়ে গেল, এ সকল অবস্থাতে পানি পাক থাকবে এবং তা দিয়ে অযু গোসল জায়েয।

৯. ঐসবকূপ, যার থেকে বিভিন্ন রকমের লোক পানি নেয় এবং তাদের হাত-পা, বালতি বদনা প্রভৃতি অপরিস্কার থাকে, ধূলাবালিতে ভর্তি থাকে তবুও ঐসব কূপের পানি পাক। অবশ্যি যারা পানি নেয় তাদের হাত-পা বা পাত্র নাপাক হওয়ার যদি কোন প্রমাণ পাওয়া যায় তা অন্য কথা।

১০. গাছের পাতা পড়ার কারণে পানির তিনটি গুণ অথবা কোন একটি বদলে গেলেও পানি পাক থাকে। তা দিয়ে অযু গোসল দুরস্ত।

১১. কাপড় অথবা শরীর পরিস্কার করার জন্যে অথবা পানি পরিস্কার করার জন্যে সাবান, কুলপাতা অথবা অন্য এমন কোন কিছু দিয়ে পানি জ্বাল দেয়া হলো এবং তাতে পানি গাঢ় না হয়ে তারলই থাকলো, তাহলে তা দিয়ে অযু গোসল সবই দুরস্ত হবে যদিও তার রং, গন্ধ এবং স্বাদ পরিবর্তন হয়ে যায়।

১২. যে পানিতে পাক পাত্র, চাউল, তরিতরকারী প্রভৃতি ধোয়া হয় অথবা পাক কাপড়ে চুবড়ানো হয় এবং তাতে পানির একটি গুণই বদলে যায় অথবা কিছুই বদলায় না, এমন অবস্থায় সে পানি দিয়ে অযু গোসল দুরস্ত হবে।

১৩. শূকর এবং কুকুর ছাড়া অন্য কোন জীবিত পশুকে যে পানিতে গোসল করানো হয়, আর যদি পশুর গায়ে কোন নাপাকী লেগে না থাকে এবং তার মুখের লালা পানিতে না লাগে, তাহলে সে পানি পাক। এমনি কোন পানিতে শূকর এবং কুকুর ছাড়া কোন পশু নেমে পড়ে বা গোসল করে এবং শরীরে কোন নাপাকী না থাকে, তাহলে সে পানি পাক। শর্তএই যে, পশুর মুখ উপর দিকে থাকে এবং লালা না পড়ে। ঘোড়া এবং অন্য কোন পশু যার গোশত হালাল তার লালা পানিতে পড়লেও পানি পাক থাকবে। তা দিয়ে নিসন্দেহে অযু-গোসল করা যায়।

১৪. যদি পানিতে কিছু পরিমাণ দুধ পড়ে যায় এবং তাতে পানির রং কিছুটা পরিবর্তন হোক বা না হোক তা দিয়ে বিনা দ্বিধায় অযু-গোসল করা যাবে।

১৫. স্রোতের পানি নাপাক হওয়ার পর নাপাকীর প্রভাব যখনই নষ্ট হবে, তখন পুনরায় সে পানি পাক হবে। তা দিয়ে তাহারাত করা যাবে।

১৬. রক্ত চলাচল করে না এমন জীব মাছি, মশা, ভোমর প্রভৃতি পানিতে পড়ে মরে গেলে অথবা মরে পানিতে পড়লে সে পানি পাক থাকবে এবং তা দিয়ে অযু-গোসল করা যাবে।

১৭. পানির জীব যদি পানিতে মরে, যেমন মাছ, কাঁকড়া, কাছিম, ব্যাঙ প্রভৃতি তাহলে পানি পাক থাকবে। বিনা কেরাহাতে তা দিয়ে তাহারাত হাসিল করা যায়।

বিঃ দ্রঃ-স্থলের এবং পানির ব্যাঙ সম্পর্কে একই হুকুম। তবে স্থলের ব্যাঙের মধ্যে রক্ত হলে এবং তা পানিতে মরলে পানি নাপাক হবে।

এমন পানি যা দিয়ে তাহারাত দুরস্ত নয়

১. অল্প বদ্ধ পানিতে পেশাব, রক্ত অথবা মদের এক ফোঁটা পড়লে অথবা অন্য কোন নাজাসাত সামান্য পরিমাণে পড়লে অথবা রতি পরিমাণ পায়খানা পড়লে সমস্ত পানি নাপাক হয়ে যাবে। তাতে পানির রং, স্বাদ ও গন্ধ বদলাক না বদলাক তা দিয়ে তাহারাত দুরস্ত হবেনা।

২. রক্ত চলাচল করে এমন জীব যদি অল্প পানিতে পড়ে মরে অথবা মরে পড়ে তাহলে পানি নাপাক হবে এবং রক্ত চলাচল করে না এমন জীবের মধ্যে যে সব মানুষের রক্ত চুষে (যেমন জোঁক, বড়ো মাছি, বড়ো ছারপোকা) সেগুলো মরে গেলে তাতে পানি নাপাক হবে যে ব্যাঙের রক্ত হয় তা পানিতে মরলে পানি নাপাক হবে এবং তা দিয়ে তাহারাত দুরস্ত হবে না।

৩. পায়খানা এবং গোবরে যে পোকা হয় তা অল্প পানিতে মরলে পানি নাপাক হবে।

৪. কোন হাউজে অল্প পানিতে নাজাসাত ছিল। তারপর তাতে পানি ঢেলে দিয়ে অনেক বেশী করা হলো্ তথাপি সব পানি নাপাক হবে তাহারাত দুরস্ত হবে না।

৫. যে পানিতে অন্য কিছু মিশানো হয় অথবা পাকানো হয়, তারপর তাকে আর সাধারণ পানি বলা হয় না। (যেমন শরবত, শিরা, শুররা, ছাতু প্রভৃতি), তা দিয়ে অযু-গোসল দুরস্ত হবে না।

৬. যে সব প্রবহমান ও তরল বন্তুকে পানি বলা হয় না, তা দিয়ে অযু গোসল জায়েয নয় যেমন আখের রস, কেওড়া, গোলাব, সির্কা প্রভৃতি। এমনি ফলের আরক, ফলের পানি প্রভৃতি দিয়েও অযু-গোসল হবে না। যেমন লেব-কমলার রস বা আরক, তরমুজ ও নারিকেলের পানি ইত্যাদি।

৭. যদি পানিতে কোক পাক জিনিস দিয়ে জ্বাল দেয়া হয় এবং তাকে সাধারণত পানি বলা হলেও তা কিছুটা গাঢ় হয় তা দিয়েও অযু-গোসল করা যাবে না।

৮. পানিতে দুধ অথবা জাফরান পড়ার পর ভালোবাবে দুধ বা জাফরানের রং হয়ে গেল। তা দিয়ে অযু-গোসল হবে।

৯. এমন কোন জীব পানিতে মরলো অথবা মরে পানিতে পড়লো যা পানির জীব নয় কিন্তু পানিতে থাকে, যেমন হাঁস। তাহলে সে পানি দিয়ে অযু-গোসল হবে না।

১০. মায়ে মুস্তামাল (ব্যবহৃত পানি) যদিও পাক, অর্থাঃ তা গায়ে বা কাপড়ে লাগলে তা নাপাক হবে না, কিন্তু তা দিয়ে অযু-গোসল জায়েয নয়। এ জন্যে যে সে নিজে পাক হলেও অপরকে পাক করতে পারে না।

১১. পাক পানিতে ব্যবহৃত পানি মিশে গেল এবং ব্যবহৃত পানির পরিমাণ বেশী হলো, তখন সমস্ত পানিই ব্যবহৃত পানিতে গণ্য হবে এবং তা দিয়ে অযু-গোসল হবে না।

এমন পানি যা দিয়ে তাহারাত মাকরুহ

১. রোদে যে পানি গরম হয়, তা দিয়ে অযু-গোসল মাকরুহ হয়। এর থেকে শরীরে কুষ্ঠের সাদা দাগ হতে পারে।

২. অল্প পানিতে মানুষের থুথু, কাশি পড়লে তা দিয়ে অযু-গোসল মাকরুহ হবে।

৩. কোন অমুসলিম (যার পাক নাপাকের অনুভূতি নেই) যদি পাক পানিতে হাত দেয় কিন্তু হাতে নাপাকী সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না, শুধু সন্দেহ হয় যে, যেহেতু সাধারণত অমুসলিম পাক নাপাকির অনুভূতি রাখে না, সে জন্যে হয়ত তার হাত নাপাক ছিল, এমন অবস্থায় সে পানি দিয়ে অযু-গোসল করা মাকরুহ হবে।

৪. অযু নেই এমন ব্যক্তির যমযমের পানিতে অযু না করা উচিত এবং এমন ব্যক্তির সে পানিতে গোসল করা উচিত নয় যার গেসাল করা ফরয। এ পানি দিয়ে নাপাক ধোয়া এবং এস্তেঞ্জা করা মাকরুহ।

৫. যে স্থানে কোন জাতির উপর আল্লাহর আযাব নাযিল হয়েছে, সে স্থানের পানিতে অযু-গোসল করা মাকরুহ।

৬. বিড়াল, ইঁদুর এবং হারাম পাখীর ঝুটা পানিতে অযু-গোসল মাকরুহ।

৭. গাধা এবং খচ্চরের ঝুটা পানিতে পড়লে অযু-গোসল করা সন্দেহযুক্ত। কারণ পাক নাপাক কোনটাই নিশ্চিত করে বলা যায় না। সে জন্যে এ পানিতে অযু-গোসলের পর তায়াম্মুম করতে হবে।

ঝুটা পানি প্রভৃতির মাসয়ালা

১. মানুষের ঝুটা পাক। মুসলমান হোক কিংবা অমুসলমান, দ্বীনদার হোক অথবা বদকার নারী হোক অথবা পুরুষ, জানাবাত অবস্থায় হোক কিংবা হায়েয নেফাস অবস্থায় হোক, সকল অবস্থায় তাদের ঝুটা পাক। অবশ্যি শারাব এবং অন্য কোন নাপাক জিনিস খাওয়ার পর পরই পানি ঝুটা করলে তা নাপাক হবে।

২. হালাল প্রাণীর ঝুটা পাক, পাখী হোক অথবা তৃণভোজী পশু হোক। যেমন গরু, মহিষ, ছাগল, হরিণ, ঘুঘু, কবুতর ইত্যাদি। ঘোড়ার ঝুটাও পাক।

৩. রক্ত চলাচল করে না এমন প্রাণীর ঝুটাও পাক তা হারাম হোক বা হালাল হোক। পানির জীবের ঝুটাও পাক, তা হালাল হোক বা হারাম হোক। তবে নাজাসাত খাওয়ার পর পরই পানি ঝুটা করলে তা নাপাক হবে। তার দ্বারা তাহারাত জায়েয হবে না।

৪. হারাম প্রাণী যা সাধারণত ঘরে বাস করে যেমন ইঁদুর, বিড়াল এবং ঐসব পাখী যা হারাম অথবা ঐসব ছোট্ট প্রাণী যা ছুটাছুটি করে এবং ইচ্ছা করে খায়, যেমন মুরগী, হাঁস প্রভৃতি তাদের ঝুটা মাকরুহ। মুরগী বাঁধা থাকলে তার ঝুটা পাক। বিড়াল ইঁদুর খাওয়ার পর পরই পানি ঝুটা করলে তা নাপাক হবে।

৫. শূকর, কুকুর এবং সকল প্রকার হিংস্র জীবের ঝুটা নাপাক। যেমন বাঘ, ভালুক, বাঁদর, শকুন প্রতিটির ঝুচা নাপাক।

৬. বনে বাসকারী হারাম পশু, যেমন হাতী, গণ্ডার প্রভৃতির ঝুটাও নাপাক।

৭. দুধ, দৈ, ছালন প্রভৃতিতে বিড়াল মুখ দিলে তা খাওয়া জায়েয।

৮. গাধা ও খচ্চরের ঝুটা সন্দেহযুক্ত। তার দ্বারা অযু গোসলও সন্দেহযুক্ত হবে। এমন পানিতে অযু করার পর তায়াম্মুম করতে হবে।

৯. শিকারী পাখীর ঝটা মাকরুহ। যেমন শ্যেন, বাজপাখী ইত্যাদি।

১০. ইঁদুর রুটি, বিস্কুট খানিকটা কেটে ফেলেছে। ঐ অংশটুকু কেটে ফেলে দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

১১. যেমব জীবের ঝুটা নাপাক তাদের ঘামও নাপাক। যাদের ঝুটা মাকরুহ তাদের ঘামও মাকরুহ।

১২. পর পুরুষের ঝুটা খানাপিনা নারীদের জন্যে মাকরুহ।

কূপের মাসয়ালা ও হুকুম
কুপের পানি পাক করার বিস্তারিত হুকুম

কূপের মাসয়ালা এবং তা পাক করার নিয়ম-পদ্ধতি ও হুকুম-আহকাম বুঝতে হলে নিম্নের সাতটি বিস্তারিত হুকুম মনে রাখতে হবে:

১. কূপের সমস্ত পানি নাপাক হলে তা পাক করার জন্যে সমস্ত পানি তুলে ফেলতে হবে। সমস্ত পানি তুরে ফেলার অর্থ এইযে, তাতে বালতি ফেললে যেন আধ বালতি পানিও না উঠে। এত পানি তুলে ফেলার পর কূপের সিঁড়ি, রশি, বালতি সবই পাক হয়ে যায়। আর যে কূপের সব পানি উঠানো সম্ভব নয়, তার থেকে তিনশো বালতি পানি উঠাতে হবে এবং তাতে কূপের পানি পাক হয়ে যাবে।

২. যে অবস্থায় কুপ পাক থাকে এবং অল্প পানিও তুলে ফেলার প্রয়োজন হয় না এমন অবস্থায় যদি কেউ তার মনে আশ্বস্তির জন্যে কোন সময়ে কূপ থেকে বিশ বাইশ বালতি পানি তুলে ফেলতে চায় তো তা শরীয়তের খেলাপ হবে না এবং এতে কোন দোষ নেই।

৩. কূপ নাপাক হওয়ার সময় নিশ্চিত করে যদি জানা যায় এবং জানার কোন সূত্রও পাওয়া না যায় তাহলে যখনই নাজাসাত দেখা যাবে তখন থেকেই নাপাক বলতে হবে। আর যদি কোন সূত্র পাওয়া যায়, যেমন কোন একটি জীব মরে ফুলে পচে উঠেছে তাহলে নিশ্চিত ধারণা এই করা হবে যে, কদিন পূর্বেই কুয়াতে পড়ে মরেছে। তার জন্যে তিন দিন তিন রাতর নামায পুনরায় আদায় করতে হবে এবং যেসব থারা ঘটিবাটি এবং কাপড় চোপড় ঐ পানিতে ধোয়া হয়েছে তা পুনরায় পাক করতে হবে। আর যা সংশোধন করা যাবে না তার জন্যে দু:খ করার দরকার নেই।

৪. যে কূপে যে বালতি বা ডোল ব্যবহার করা হয় সে কূপে পাক করার জন্যে সেই বালতির হিসাবই ধরতে হবে। যদি যথা সময়ে কোন বেশী বড়ো অথবা বেশী ছোট বালতি দিয়ে পানি তোলা হয় তাহলে মাঝারি ধরণের বালতির হিসাব ধরতে হবে। যত পানি তুলে ফেলার হুকুম, তা যদি কোন পাইপ দিয়ে বা অন্য উপায়ে উঠানো হয় তাতেও কূপ পাক হয়ে যাবে।

৫. কুপ পাক করার জন্যে সমস্ত পানি একেবারে উঠানো হোক অথবা থেমে থেমে উঠানো হোক, উভয় অবস্থাতেই কূপ পাক হবে।

৬. যে জিনিস কূপে পড়ার জন্যে পানি নাপাক হয়েছে তা যদি স্বয়ং নাপাক হয়, যেমন মরা ইঁদুর, বিড়াল প্রভৃতি। তাহলে প্রথমে তা উঠিয়ে ফেলতে হবে এবং পরে হুকুম মুতাবিক পানি উঠাতে হবে। আর সে মৃত প্রাণী না উঠিয়ে কূপের যতো পানিই উঠানো হোক তাতে কূপ পাক হবে না। আর যদি এ বিশ্বাস হয় যে, প্রাণীটি মরে পঁচে একেবারে মাটি হয়ে গেছে তাহলে তা উঠাবার দরকার নেই, হুকুম মুতাবিক পানি উঠালেই কূপ পাক হবে।

৭. যদি কূপের মধ্যে এমন জিনিস পড়ে যা স্বয়ং পাক, কিন্তু তাতে নাজাসাত ছিল, যেমন ফুটবল, জুতা, কাপড় ইত্যাদি, তাহলে তা উঠিয়ে ফেলা কূপ পাক হওয়ার শর্ত নয় শুধু হুকুম মুতাবিক পানি উঠালেই চলবে।

যে নাপাকির জন্যে সমুদয় পানি তুলে ফেলতে হবে

১. কূপের মধ্যে যে কোন নাজাসাত পড়ুক, তা খফিফা হোক বা গালিয়া অল্প হোক অথবা বেশী, সমস্ত পানি নাপাক হয়ে যাবে এবং সমস্ত পানি তুলে ফেলা জরুরী হবে। যেমন মানুষের পেশাব পায়খানা পড়লে অথবা গরু-মহিষ, কুকুর, বিড়াল প্রভৃতির পেশাব পায়খানা অথবা রক্ত এবং মদের ফোটা যদি পড়ে তাহলে এর যে কোন অবস্থাতে কূপ নাপাক হয়ে যাবে।

২. কূপ যদি শুকর পড়ে-তা জীবিত হোক বা মৃত-সমস্ত পানি নাপাক হয়ে যাবে। এ জন্যে যে শুকরের শরীর পেশাব পায়খানার মত নাপাক।

৩. যদি মানুষ কূপে পড়ে মরে যায় সে মুসলমান হোক অথবা অমুসলমান, সব পানি নাপাক হয়ে যাবে। ঠিক এমনি মরার পরে যদি কূপে পড়ে যায় তা সে বাচ্চা হোক বা বয়স্ক হোক সব পানি নাপাক হবে।

৪. কুকুর, ছাগল অথবা তার চেয়ে বড় পশু, যেমন গরু, মহিষ, উট, হাতী, ঘোড়া প্রভৃতি কূপে পড়ে মরলে সমস্ত পানি নাপাক হবে।

৫. রক্ত চলাচল করে এমন কোন প্রাণী আহত হয়ে কূপে পড়লে, মরে যাক বা জীবিত থাক সমস্ত পানি তুলে ফেলতে হবে।

৬. কোন নাপাক জিনিস, যথা কাপড়, ঘটিবাটি, জুতা প্রভৃতি পড়লে সব পানি নাপাক হবে।

৭. রক্ত চলাচল করে এমন কোন প্রাণী যতো ছোট হোক না কেন, কূপে পড়ে মরলে এবং পচে ফূলে গেলে, অথবা মরা-পচা-ফুলা অবস্থায় কুয়ায় পড়ে গেলে সব পানি নাপাক হবে। যেমন ইঁদুর, টিকটিকি, রক্ত চোষা প্রভৃতি পড়ে মরে ফলে গেলে সমস্ত পানি উঠাতে হবে।

৮. হাঁস-মুরগীর মল কূপে পড়লে সব পানি তুলতে হবে।

৯. যদি দুটি বিড়াল অথবা এতটা ওজনের অন্য কয়েকটি প্রাণী কুপে পড়ে মরে গেলে তাহলে সব পানি নাপাক হয়ে যাবে।

১০. যদি ইঁদুর অথবা গিরগিটি জাতীয় বহুরূপী লেজ কেটে গিয়ে কুপে পড়ে তাহলে সমস্ত পানি তুলে ফেলতে হবে।

১১. রক্ত চলাচল করে না এমন কোন প্রাণী, যেমন বিচ্ছু, ভোমর, বোলতা, বহুরূপী অথবা ডাঙ্গার ব্যাঙ প্রভৃতি যদি কূপে পড়ে মরে যায় এবং ফুলে ফেটে যায়, তাহলে সমুদয় পানি নাপাক হয়ে যাবে এবং সমস্ত পানি উঠাতে হবে।

যে নাপাকির জন্যে সমুদয় পানি তুলে ফেলা জরুরী নয়

১. বিড়াল, মুরগী, কবুতর অথবা তার সমান কোন প্রাণী যদি কূপে পড়ে মরে যায় কিন্তু ফুলে ফেটে না যায়, তাহলে ৪০ ডোল বা বালতি পানি তুলে ফেললে কূপ পাক হয়। তবে ৬০ বালতি তুলে ফেলা ভালো।

২. যদি ইঁদুর, চিড়িয়া অথবা তার সমান কোন প্রাণী কূপে পড়ে মরে যায় কিন্তু ফুলে ফেটে না যায়, তাহলে ২০ বালতি পানি উঠালেই কূপ পাক হয়। তবে ৩০ বালতি তুলে ফেলা ভালো।

বি: দ্র: কুপে কোন প্রাণী পড়ে যাওয়ার কারণে কূপের নাপাকীর আন্দাজ করার জন্যে ফেকাহশাস্ত্রে কষ্টিপাথর হিসাব তিন প্রাণী ধরা হয়েছে, ছাগল, বিড়াল এবং ইঁদুর।

ছাগলের সমান অথবা তার বড়ো প্রাণীর হুকুম বিড়ালের ন্যায়।

বিড়ালের সমান অথবা ছাগলের ছোট প্রাণীর হুকুম বিড়ালের ন্যায়।

ইঁদুরের সমান অথবা তার বড়ো বিড়ালের ছোটো প্রাণীর হুকুম ইঁদুরের ন্যায়।

৩. বড় গিরগিটি, যার মধ্যে প্রবাহমান রক্ত থাকে, যদি কুয়ায় পড়ে মরে কিন্তু ফুলে ফেটে না যায়, তাহলে ২০ বালতি তুলতে হবে। তবে ৩০ বালতি তুলে ফেলা ভালো।

৪. কোন কূপে মুরগী পড়ে মারে গেল। একজন পানি উঠাবার সময় বলা হলো যে কূপ নাপাক। সে পানি ফেলে দিল বটে কিন্তু সেই ভিজা বালতি অন্য পাক কূপে নেয়ার জন্যে ফেলল। তাহলে সে পাক কূপও নাপাক হয়ে গেল। তা পাক করার জন্যে নাপাক কূপের সমানই অর্থা** ৪০ বালতি পানি তুলে ফেলতে হবে।

সে অবস্থায় কূপ নাপাক হয় না

১. রক্ত চলাচল করে না এমন প্রাণী যেমন বিচ্ছু, বোলতা, ডাঙ্গার ব্যাঙ প্রভৃতি কূপে পড়ে মরলে অথবা মরার পর পড়লে কূপ নাপাক হয় না।

২. পানির জীব, যেমন মাছ, কাঁকড়া, কুমীর প্রভৃতি কূপে পড়ে মরলে অথবা মরার পর পড়লে কূপ নাপাক হয় না।

৩. জীবিত মানুষ কূপে পড়লে এবং ডুবার পর জীবিত বের হয়ে আসলে কূপ নাপাক হবে না। তবে তার শরীরে কোন নাপাক লেগে থাকলে কুপ নাপাক হবে।

৪. শূকর ব্যতীত যে কোন হালাল বা হারাম প্রাণীর চুল, ক্ষুর অথবা শুকনো হাড় কূপে পড়লে কূপ পাক থাকবে।

৫. যে সব প্রাণীর ঝুটা পাক তা কূপে পড়ে যদি জীবিত বের হয়ে আসে তাহলে কূপ পাক থাকবে।

৬. যে সব প্রাণীর ঝুটা নাপাক [শুকর যদি কূপে পড়ে জীবিত বের হয়ে আসে তথাপি কূপ নাপাক হবে। তার শরীরের কোন অংশ পড়লেও নাপাক হবে।] অথবা সন্দেহ যুক্ত তারা যদি কূপে পড়ে জীবিত বের হয়ে আসে তাহলে কূপ নাপাক হবে না। শর্ত এই যে, তাদের মুখ পানিতে না ডুবে অথবা লালা পানিতে না পড়ে। তবে সাবধানতার জন্যে ২০/৩০ বালতি পানি তুলে ফেলা ভলো।

৭. হাঁস-মুরগী ব্যতীত অন্য কোন পাখীর মল কূপে পড়ে গেলে কূপ নাপাক হয় না।

৮. ছাগলের কিছুটা মল কুপে পড়লে নাপাক হবে না।

৯. যারা গরু মহিষ বাড়িতে রাখে তাদের কূপের গোবর থেকে রক্ষা করা কঠিন তাদের থালা বাটিও গোবর থেকে রক্ষা করা যায় না। যেহেতু গোবর থেকে পুরাপুরি সাবধান হওয়া তাদের জন্যে মুশকিল সে জন্যে অল্প অল্প গোবর কূপে পড়লে তা নাপাক হবে না।

১০. কোন অমুসলিম যদি কূপে পড়ে যায় অথবা যার গোসলের প্রয়োজন সে যদি কূপে নামে তাহলে কূপের পানি নাপাক হবেনা। শর্ত এই যে তার শরীরে কোন নাপাক লেগে না থাকে। তবে ২০/৩০ বালতি পানি তুলে ফেলা ভালো।

১১. এমন কোন জিনিস যদি কুপে পড়ে, যার নাপাক হওয়াটা নিশ্চিত নয়, যেমন বিলাতি ঔষুদ, যার সম্পর্কে সন্দেহ হয় যে, ততে মদ রয়েছে, তাহলে কুপে নাপাক হবে না।

১২. শহরে টাংকি থেকে পাইপের সাহায্যে পানি সরবরাহ করা হয়। এ হলো প্রবাহমান পানি। এতে নাজাসাত পড়লে তখনই নাপাক মনে করা হবে যখন পানির রং, গন্ধ এবং স্বাদ নষ্ট হবে।

এস্তেঞ্জার বিবরণ
পেশাব পায়খানার পর শৌচ করাকে এস্তেঞ্জা বলে। শরীয়তে এস্তেঞ্জার জন্যে বিশেষ তাকিদ করা হয়েছে। এস্তেঞ্জায় অবহেলা করা বড়ো গুনাহ। নবী পাক (সা) একে কবর আযাবের কারণ বলেছেন। একবার তিনি দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় বলেন, এ দুজন মুর্দার উপর আযাব হচ্ছে। কোন বড়ো কারণের জন্যে নয় বরং এমন কাজের জন্য যা খুব সাধারণ মনে করা হয়। এদের মধ্যে একজন এমন ছিল যে পেশাবের পর ভালোভাবে পাক হতো না আর দ্বিতীয় ব্যক্তি চোড়লখুরি করতো (বুখারী)।

পেশাব পায়খানা করার আদব ও হুকুম

১. পেশাব পায়খানার সময় কেবলার দিকে মুখ অথবা পিঠ করে বসা নিষেধ। বাচ্চাদেরকে পেশাব পায়খানা করাবার সময় এমনভাবে বসানো উচিত নয় যাতে মুখ অথবা পিঠ কেবলার দিকে হয়। চাঁদ সূর্যের দিকে মুখ পিঠ করে পেশাব পায়খানা করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

২. কোন ছিদ্র বা শক্ত মাটির উপর পেশাব করা নিষেধ। ছিদ্রে নিষেধ এ জন্যে যে তাতে কোন ক্ষতিকারক প্রাণী থাকতে পারে যে বের হয়ে দংশন করতে পারে। শক্ত মাটির উপর পেশাব করলে যায়ে পেশাবের ছিটা লাগবে।

৩. ছায়াদানকারী গাছের নীচে নদী ও পুকুরের তীরে যে দিক দিয়ে মানুষ পানি নেয়, ফলবান বৃক্ষের নীচে, যেখানে মানুষ অযু-গোসল করে সেখানে, কবরস্থানে, মসজিদ, ঈদগাহের এতোটা নিকটে যে, সেখান থেকে দুর্গন্ধে নামাযীদের কষ্ট হয়, জনসাধারণের চলাচলের রাস্তায়, রাস্তার পাশে, কোন বৈঠকাদির নিকটে, মোট কথা এমন সকল স্থনে পেশাব পায়খানা করা নিষেধ যেখানে মানুষ উঠা বসা করে বিশ্রাম নেয় অথবা অন্যান্য কাজকর্ম করে। এসব স্থানে পেশাবে পায়খানায় মানুষের কষ্ট হয়।

৪. দাঁড়িয়ে পেশাব পায়খানা করা নিষেধ। তবে বিশেষ কারণে কোন সময় করলে দোষ নেই।

৫. যদি আংটিতে আল্লহর নাম, কালেমা, কোন আয়াত বা হাদীস লেখা থাকে, তাহলে পেশাব পায়খানায় যাবার সময় তা খুলে রাখতে হবে, নতুবা বেয়াদবি হবে।

হযরত আনাস (রা) বলেন-

নবী পাক (সা) একটা আংটি ব্যবহার করতেন যাতে মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ কুন্দানো ছিল। তিনি পেশাব পায়খানার সময় তা খুলে রেখে যেতেন (মুসলিম, তিরমিযী)।

৬. পেশাব পায়খানা করার সময় বিনা কারণে কথা বলা, কাশি দেয়া, হাদীস, কুরআনের আয়াত বা কোন ভালো জিনিস পড়া, হাঁচি হলে আলহামদুলিল্লাহ বলা দুরস্ত নয়। মনে মনে পড়লে দোষ নেই।

৭. পায়কানা বিলকুল উলংগ হয়ে অথবা বিনা কারণে শুয়ে বা দাঁড়িয়ে পেশাব পায়খানা করা ঠিক নয়।

৮. মাঠে পায়খানা করতে হলে বসার পূর্বে এবং টয়লেট বা পায়খানায় প্রবেশ কারার আগে নিম্নের দোয়া পড়া উচিত:

আরবী****************১০৮******)

হে আল্লাহ! দুস্কৃতিকারী নারী-পুরুষ ও জ্বীন থেকে তোমার পানাহ (আশ্রয়) চাই- (বোখারী)

পায়খানা শেষ করার পর বাইরে এসে এ দোয়া পড়তে হয়:

(আরবী************১০৮*****)

আল্লাহর শোকর যিনি আমার মলমূত্রের কষ্ট দূর করে দিয়ে আমাকে শান্তি দান করেছেন- (নাসায়ী, ইবনে মাজাহ)। পায়খানা থেকে বেরুবার পর উপরের দোয়া মনে না থাকলে শুধু এতটুকু পড়লেও হবে (আরবী***) হে আল্লাহ! আমি তোমার মাগফেরাত চাই।

৯. আবদ্ধ পানিতে বা স্রোতে পেশাব না করা উচিত। হযরত জাবের (রা) বলেন, নবী (সা) স্রোতের পানিতে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরও বলেন, নবী (সা) আবদ্ধ পানিতেও পেশাব করতে নিষেধ করেছেন- (মুসলিম, নাসায়ী)

এস্তেঞ্জার আদব ও হুকুম

১. পেশাব পায়খানার পর আবশ্যক মতো মাটির ঢিলা দিয়ে মলদ্বার ভালো করে পরিস্কার করে তারপর পানি দিয়ে তাহারাত হাসিল করা মসনুন। ঢিলা পাওয়া না গেলেও শুধু পানি দিয়েও পাক সাফ করা যায়। শুধু পানি দিয়ে এস্তেঞ্জা করতে হলে পেশাবের পর এতোটা সময় কাটাতে হবে যেন পরে ফোঁটা পেশাব না বেরয়। তারপর পানি দিয়ে এস্তেঞ্জা করবে।

২. পেশাবের পর ঢিলা দিয়ে এতক্ষণ ধরে এস্তেঞ্জা করতে হবে যেন ঢিলা একেবারে শুকিয়ে যায়-হাটাহাটি করে তা করা হোক অথবা অন্য কোন পন্থায়।

৩. ঢিলা দিয়ে এস্তেঞ্জা করার সময় সভ্যতা, ভদ্রতা, সুরুচি, দ্বীনি মর্যাদা এবং লজ্জা শরমের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেখানে নারী, শিশু, পুরুষ সাধারণত চলাফেরা করে সেখানে বিনা দ্বিধায় পায়খানা বা তহবন্দের মধ্যে হাত দিয়ে হাঁটাহাটি করা, কথাবর্তা বলা এক উরু দিয়ে অন্যটাকে চাপ দেয়ার বিচিত্র ভঙ্গি চরম নির্লজ্জতা ও অসভ্যতার পরিচায়ক। এতে ইসলামী তাহযীব ও রুচিবোধের প্রতি ভ্রন্ত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এ কাজ পায়খানার মধ্যেই করা উচিত অথবা মানুষের দৃষ্টি এড়িয়ে।

৪. পানি, মাটির ঢিল, পাথর, মামুলি পুরানো কাপড়, চুষে নিতে পারে এমন অন্যান্য জিনিস দিয়ে এস্তেঞ্জা করা যায় যা পাক হয় এবং যার দ্বারা নাজাসাত দূর হয়। অবশ্য লক্ষ্য রাখতে হবে যে, যা দিয়ে এস্তেঞ্জা করা হবে তা যেন কোন মূল্যবান এবং সম্মানের বন্তু না হয়।

৫. গোবর, মল বা এমন ঢিল যা দিয়ে যা দিয়ে একবার এস্তেঞ্জা করা হয়েছে অথবা এমন বস্তু দিয়ে নাজাসাত দূর হবে না, যেমন সির্কা, শরবত প্রভৃতি এসব দিয়ে এস্তেঞ্জা করা নিষেধ।

৬. হাড়, কায়লা, কাঁচ অথবা এমন কঠিন বস্তু যা দিয়ে এস্তেঞ্জা করলে কষ্ট হতে পারে এসব দিয়ে এস্তেঞ্জা নিষেধ।

৭. লোহা, তামা, পিতল, সোনা-চাঁদি এবং অন্যান্য ধাতব দ্রব্য দিয়ে এস্তেঞ্জা করা নিষেধ।

৮. যেসব বস্তু পশুর খাদ্য, যেমন ঘাস, পাতা, খড় ইত্যাদি। মূল্যবান বস্তু যেমন কাপড়, মানবদেহের অংশ বিশেষ, যেমন চুল, গোশত ইত্যাদি। মসজিদের বিছারার টুকরা, ঝারণ প্রভৃতি। লেখার কাগজ যার উপর লেখা যাবে, যমযম পানি, ফলের ছাল মোট কথা মানুষ এবং পশু যেসব বস্তু থেকে উপকার লাভ করে এবং যার সম্মান করা জরুরী সে সব দ্বারা এস্তেঞ্জা নিষেধ।

৯. যদি মল মলদ্বারের বাইরে ছড়িয়ে না পড়ে তাহলে এস্তেঞ্জা করা সুন্নত মুয়াক্কাদাহ। আর ছড়িয়ে পড়লে ফরয।

১০. পেশাব পায়খানার দ্বার দিয়ে অন্য কোন বস্তু যেমন রক্ত, পুঁজ প্রভৃতি বের হলে এস্তেঞ্জা করতে হবে।

১১. এস্তেঞ্জা বাম হাতে করতে হবে। এস্তেঞ্জার পর মাটি বা সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে।

হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, নবী (সা) যখন পায়খানায় যেতেন তখন আমি একটি পিতলের পাত্রে তাঁকে পানি দিতাম। তিনি এস্তেঞ্জা করে মাটিতে হাত ঘষে সাফ করতেন। – (আবু দাউদ, নাসায়ী)

অযুর বিবরণ
অযুর ফযীলত ও বরকত

অযুর মহত্ব ও গুরুত্ব এর চেয়ে অধিক আর কি হতে পারে যে, স্বয়ং কুরআনে তার শুধু হুকুমই নেই, বরঞ্চ তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, অযুতে দেহের কোন কোন অংগ ধুতে হবে। আর এ কথাও সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, অযু নামাযের অপরিহার্য শর্ত।

(আরবী*****************১১১)

যারা তোমরা ঈমান এনেছো জেনে রাখো, যখন তোমরা নামাযের জন্যে দাঁড়াবে তার আগে নিজেদের মুখ-মণ্ডল ধুয়ে নেবে এবং তোমাদের দু‘হাত কুনুই পর্যন্ত ধুয়ে নেবে এবং মাথা মাসেহ করবে এবং তারপর দু‘পা চাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেলবে- (মায়েদাহ: ৬)।

নবী (সা) অযুর ফযীলত ও বরকত বয়ান করতে গিয়ে বলেন-

আমি কোয়ামতের দিন আমার উম্মতের লোকদেরকে চিনে ফেলবো। কোন সাহাবী জিজ্ঞাস করলেন- কেমন করে, হে আল্লাহর রসূল? নবী (সা) বলেন, এ জন্যে তাদেরকে চিনতে পারব যে, অযুর বদৌলতে আমার উম্মতের মখমণ্ডল এবং হাত-পা উজ্জ্বলতায় ঝকঝক করবে।

অন্য এক সময়ে নবী পাক (সা) অযুর মহত্ব বয়ান করতে গিয়ে বলেন, যে ব্যক্তি আমার বলে দেয়া পদ্ধতি অনুযায়ী ভালোবাবে অযু করবে এবং অযুর পর এ কালেমা শাহাদাত পাড়বে-

(আরবী**********১১১)

তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। তারপর সে যে দরজা দিয়ে খুশী জান্নাতে প্রবেশ করবে (মুসলিম)।

উপরন্তু তিনি আরও বলেন,

অযু করার কারণে ছোটো খাটো গুনাহ মাফ হয়ে যায় এবং অযুকারীকে আখেরাতে উচ্চ মর্যাদায় ভুষিত করা হব এবং অযুর দ্বারা শরীরের সমস্ত গুনাহ ঝরে পড়ে (বুখারী, মুসলিম)

আর একবার নবী (সা) অযুকে ঈমানের আলামত বলে অভিহিত করে বলেন, হকের রাস্তায় ঠিকভাবে কায়েম থাক, আর তোমরা কখনো সত্য পথে অটল থাকার হক আদায় করতে পারবে না। (সে জন্যে নিজেদের ভুলত্রুটি ও অক্ষমতা সম্পর্কে সজাগ থাক) এবং ভাল করে বুঝে রাখ যে, তোমাদের সকল আমলের মধ্যে নামায উত্কৃষ্টতম এবং অযুর পুরোপুরি রক্ষণাবেক্ষণ তো শুধু মু‘মেনই কারতে পারে- (মুয়াত্তায়ে ঈমাম মালেক, ইবনে মাজাহ)

অযুর মসনুন তরিকা

অযুকারী প্রথেমে মনে মনে এ নিয়ত করবে, আমি শুধু আল্লাহকে খুশী করার জন্যে এবং তাঁর কাছ থেকে আমলের প্রতিদান পাবার জন্যে অযু করছি। তারপর (আরবী*****১১২********) বলে অযু শুরু করবে এবং নিম্নের দোয়া পড়বে (আবু দাউদ, তিরমিযি, নাসায়ী)

(আরবী***********১১২)

হে আল্লাহ! আমার গুনাহ মাফ কর, আমার বাসস্থান আমার জন্যে প্রশস্ত করে দাও এবং রুযীতে বরকত দাও।– (নাসায়ী)।

হযরত আবু মুসা আশয়ারী বলেন, আমি নবী (সা) এর জন্যে অযুর পানি আনলাম। তিনি অযু করা শুরু করলেন। আমি শুনলাম যে, তিনি অযুতে এ দোয়া পড়ছিলেন (আরভী***********) আমি জিজ্ঞাস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহু! আপনি এ দোয়া পড়ছিলেন? তিনি বললেন, আমি দ্বীন ও দুনিয়ার কোন জিনিস তাঁর কাছে চাওয়া ছেড়ে দিয়েছি?

অযুর জন্যে প্রথমে ডানে হাতে পানি নিয়ে দু‘হাত কব্জি পর্যন্ত খুব ভাল করে তিনবার ঘষে ধুতে হবে। তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে তিনবার কুল্লি করতে হবে। মিসওয়াকও করতে হবে। [নবী (সা) মিসওয়াককে অসাধারণ গুরুত্ব দিতেন। হযরত আয়েশা (রা) বলেন, নবী (সা) দিনে বা রাতে যখনই ঘুম থেকে উঠতেন, তাঁর অভ্যাস ছিল, অযুর পূর্বে অবশ্যই মিসওয়াক করতেন (আবু দাউদ (আবু দাউদ)। হুযায়ফা (রা) বলেন, নবী (সা) যখন রাতে তাহাজ্জুদের জন্যে ঘুম থেকে উঠতেন, তখন তাঁর অভ্যাস এই ছিল যে, মিসওয়াক দিয়ে ভাল করে মুখ দাঁত পরিস্কার করতেন তারপর অযু করে তাহাজ্জুদ নামাযে মশগুল হতেন।

নবী (সা) উম্মাতকে মিসওয়াকের জন্যে উদ্বুদ্ধ করে বলতেন, মিসওয়াক মুখ ভালোভাবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে এবং আল্লাহকে অত্যন্ত খুশী করে (বুখারী, নাসায়ী)।

নবী (সা) আরও বলেন, আমার উম্মতের কষ্টের প্রতি যদি খেয়াল না করতান, তাহলে প্রত্যেক অযুতে মিসওয়াক করার হুকুম দিতাম। (বুখারী, মুসলিম) ]

কোন সময়ে মিসওয়াক না থাকলে শাহাদৎ অঙ্গুরি দিয়ে ভালো করে ঘষে দাঁত সাফ করতে হবে। রোযা না থাকলে তিনবারই গড়গড়া করে কুল্লি করতে হবে। তার উদ্দেশ্যে গলদেশের ভেতর পর্যন্ত পানি পৌছানো। তারপর তিনবার এমনভাবে নাকে পানি দিতে হবে যেন নাসিকার ভেতর পর্যন্ত পৌছে। অবশ্য রোযার সময় সাবধানে কাজ করতে হবে। তারপর বাম হাতের আঙ্গুল দিয়ে নাক সাফ করতে হবে। প্রত্যেকবার নাকে নতুন পানি দিতে হবে। তারপর দু‘হাতের তালু ভরে পানি নিয়ে তিনবার সমস্ত মুখমণ্ডল (চেহেরা) এমনভাবে ধুতে হবে যেন চুর পরিমাণ স্থানও শুকনো না থাকে। দাঁড়ি ঘন হলে তার মধ্যে খেলাল করতে হবে যেন চুলের গোড়া পর্যন্ত পানি পৌছে যায়। চেহেরা ধুবার সময় এ দোয়া পড়তে হবে

(আরবী***********১১৩)

হে আল্লাহ ! আমার চেহেরা সেদিন উজ্জ্বল করে দাও যেদিন কিছু লোকের চেহেরা উজ্জ্বল হবে এবং কিছু লোকের মলিন হবে।

তারপর দু‘হাত কনুই পর্যন্ত ভালো করে ঘষে ধুবে। প্রথম ডান হাত এবং পরে বাম হাত তিন তিনবার করে ধুতে হবে। হাতে আংটি থাকলে এবং মেয়েদের হাতে চুড়ি-গয়না থাকলে তা নাড়াচাড়া করতে হবে যেন ভালোভাবে পানি সবখানে পৌছে। হাতের আঙ্গুলগুলিতে আঙ্গুল দিয়ে খেলাল করতে হবে। তারপর দু‘হাত ভিজিয়ে মাথা এবং কান মাসেহ করতে হবে।

মুসেহ করার পদ্ধতি

মুসেহ করার পদ্ধতি এই যে, বড়ো এবং শাহাদাত আঙ্গুলি আলাদা রেখে বাকী দু‘হাতের তিন তিন অংগুলি মিলিয়ে অংগুলিগুলোর ভেতর দিক দিয়ে কপালের চুলের গোড়া থেকে পেছন দিকে মাথার এক চতুর্থাংশ মুসেহ করতে হবে। তারপর দুহাতের হাতুলির পেছন দিক থেকে সামনের দিকে টেনে মাথার তিন চতুর্থাংশ মুসেহ করতে হবে। তারপর শাহাদাত অংগুলি দিয়ে কানের ভেতরের অংশ এবং বুড়ো অংগুলি দিয়ে কানের বাইরের অংশ মুসেহ করতে হবে। তারপর দু‘হাতের অংগুলিগুলোর পিঠ দিয়ে ঘাড় মুসেহ করতে হবে। গলা মুসেহ করতে হবে না। এ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য এই যে, এভাবে কোন অংশ মুসেহ করতে হাতের ঐ অংশ দ্বিতীয় বার ব্যবহার করতে হয় না যা একবার ব্যবহার করা হয়েছে।

মুসেহ করার পর দু‘পা টাখনু পর্যন্ত তিন তিনবার এমনভাবে ধুতে হবে যে, ডান হাত দিয়ে পানি ঢালতে হবে এবং বাম হাত দিয়ে ঘষতে হবে। বাম হাতের ছোট আংগুল দিয়ে পায়ের আংগুলগুলোর মধ্যে খেলাল করতে হবে। ডান পায়ে খেলাল ছোট আংগুল থেকে শুরু করে বুড়ো আংগুলে শেষ করতে হবে। বাম পায়ে খেলাল বুড়ো আংগুল থেকে ছোট আংগুল পর্যন্ত করতে হবে। অযুর কাজগুলো পর পর কর যেতে হবে। অর্থাৎ একটার পর সংগে সংগে অন্যটি ধুতে হবে। খানিকক্ষণ থেমে থেমে করা যেন না হয়।

অযু শেস করে আসমানের দিকে মুখ করে তিন বার এ দোয়া পড়তে হবে।

(আরবী************************১১৪*********)

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা) তাঁর বান্দাহ ও রাসূল। হে আল্লাহ, আমাকে ঐসব লোকের মধ্যে শামিল কর যারা বেশী বেশী তওবাকারী এবং আমাকে ঐসব লোকের মধ্যে শামিল করা যারা বেশী বেশী পাক সাফ থাকে।
অযুর হুকুম
যে যে অবস্থায় অযু ফরয হয়

১. প্রত্যেক নামাযের জন্যে অযু ফরয, সে নামায ফরয হোক অথবা ওয়াজেব। সুন্নাত বা নফল হোক।

২. জানাযার নামাযের জন্যে অযু ফরয।

৩. সিজদায়ে তেলাওয়াতের জন্যে অযু ফরয।

যে সব অবস্থায় অযু ওয়াজেব

১. বায়তুল্লাহ তওয়াফের জন্যে।

২. কুরআন পাক স্পর্শ করার জন্যে।

যে সব কারণে অযু সুন্নাত

১. শোবার পূর্বে অযু সুন্নাত।

২. গোসলের পূর্বে অযু সুন্নাত।

যে সব অবস্থায় অযু মুস্তাহাব

১. আযান ও তাকবীরের জন্যে অযু মুস্তাহাব।

২. খুতবা পড়ার সময়-জুমার খুতবা হোক বা নেকাহের খুতবা।

৩. দ্বীনি তালিম দেয়ার সময়।

৪. যিকরে এলাহীর সময়।

৫. ঘুম থেকে উঠার পর।

৬. মাইয়েত গোসল দেবার পর।

৭. নবী (সা) এর রওযা মুবারক যিয়ারতের সময়।

৮. আরাফার ময়দানে অবস্থানের সময়।

৯. সাফা ও মারওয়া সায়ী করার সময়।

১০. জানাবাত অবস্থায় খাবার পূর্বে।

১১. হায়েয নেফাসের সময়ে প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্তে।

১২. সব সময় অযু থাকা মুস্তাহাব।

অযুর ফরযসমূহ

অযুর চারটি ফরয এবং প্রকৃতপক্ষে এ চারটির নামই অযু। এ চারের মধ্যে কোন একটি বাদ গেলে অথবা চুল পরিমাণ কোন স্থান শুকনো থাকলে অযু হবে না।

১. একবার গোটা মুখমণ্ডল ধোয়া। অর্থাৎ কপালের উপর মাথার চুলের গোড়া থেকে থুতনির নীচ এবং এক কানের গোড়া থেকে অপর কানের গোড়া পর্যন্ত সমস্ত মুখমণ্ডল ধোয়া ফরয।

২. দু‘তাহ অন্তত: একবার কুনুই পর্যন্ত ধোয়া।

৩. একবার মাথা এক চতুর্থাংশ মুসেহ করা।

৪. একবার দু‘পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া।

অযুর সুন্নাতসমূহ

অযুর কিছু সুন্নাত আছে। অযু করার সময় তা রক্ষা করা দরকার। অবশ্য যদিও তা ছেড়ে দিলে কিংবা তার বিপরীত কিছু করলেও অযু হয়ে যায়, তথাপি ইচ্ছা করে এমন করা এবং বার বার করা মারাত্মক ভুল। আশংকা হয় এমন ব্যক্তি গুনাহগার হয়ে যেতে পারে।

অযুর সুন্নাত পনেরটি

১. আল্লাহর সন্তষ্টি এবং আখেরাতের প্রতিদানের নিয়ত করা।

২. বিসমিল্লাহির রাহমানিররাহিম বলে অযু শুরু করা।

৩. মুখ ধোয়ার আগে কব্জি পর্যন্ত দু‘হাত ধোয়া।

৪. তিন পার কুলি করা।

৫. মিসওয়াক করা।

৬. নাকে তিনবার পানি দেওয়া।

৭. তিনবার দাড়ি খেলাল করা। [ইহরাম অবস্থায় দাড়ি খেলাল করা ঠিক হবে না যদি হঠাৎ কোন দাড়ি উপড়ে যায়। ইহরামকারীর জন্যে চুল উপড়ানো নিষেধ।]

৮. হাত পায়ের আংগুলে খেলাল করা।

৯. গোটা মাথা মুসেহ করা।

১০. দু‘কান মুসেহ করা। [কান মুসেহ করার জন্যে নতুন পানিতে তাহ ভেজাবার দরকার নেই। তবে, টুপি, পাগড়ি, রুমাল প্রভৃতি স্পর্শ করার কারণে হাত শুকিয়ে গেলে দ্বিতীয় বার হাত ভিজিয়ে নিতে হবে।]

১১. ক্রমানুসারে করা।

১২. প্রথমে ডান দিকের অংগ ধোয়া তারপর বাম দিকের।

১৩. একটি অংগ ধোয়ার পর পর দ্বিতীয়টি ধোয়া। একটির পর একটি ধুতে এত বিলম্ব না করা যে, প্রথমটি শুকিয়ে যায়।

১৪. প্রত্যেক অংগ তিন তিনবার ধোয়া।

১৫. অযুর শেষে মসনুন দোয়া পড়া (পূর্বে দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে)।

অযুর মুস্তাহাব

অর্থাৎ এমন কিছু খুটিনাটি যা পালন করা অযুর মুস্তাহাব।

১. এমন উঁচু স্থানে বসে অযু করা যাতে পানি গড়িয়ে অন্য দিকে যায় এবং ছিটা গায়ে না পড়ে।

২. কেবলার দিকে মুখ করে অযু করা।

৩. অযুর সময় অপরের সাহায্য না নেয়া। অর্থাৎ নিজেই পানি নেয়া এবং নিজ নিজেই অংগাদি ধোয়া। [যদি কেউ অযাচিতভাবে এগিয়ে এসে পাত্র ভরে পানি দিয়ে দেয় তাতে কোন দোষ নেই। কারো কাছে সাহায্যের প্রতীক্ষায় থাকা ঠিক নয়। রোগী বা অক্ষম ব্যক্তির অপরের অংগপ্রত্যংগাদি ধয়ে নেয়া মোটেই দুষণীয় নয়।]

৪. ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করা এবং নাকে পানি দেয়া।

৫. বাম হাত দেয়ে নাক সাফ করা।

৬. পা ধোবার সময় ডান হাতে পানি ঢালা এবং বাম হাতে ঘষে ধোয়া।

৭. অঙ্গ ধোবার সময় মসনূন দোয়া পড়া।

৮. অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ঘষে ঘষে ধোয়া যেন কোন স্থানে শুকনো না থাকে এবং ময়লা থেকে না যায়।

অযুর মাকরুহ কাজগুলো

১. অযুর শিষ্টাচার ও মুস্তাহাব ছেড়ে দেয়া অথবা তার বিপরীত করা।

২. প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যয় করা।

৩. এতো কম পরিমাণ পানি ব্যবহার করা যে, অঙ্গাদি ধুতে কিছু শুকনো থেকে যায়।

৪. অযুর সময় আজে বাজে কথা বলা।

৫. জোরে জোরে পানি মেরে অঙ্গাদি ধোয়া।

৬. তিন তিনবারের বেশী ধোয়া।

৭. নতুন পানি নিয়ে তিনবার মুসেহ করা।

৮. অযুর পরে হাতের পানি ছিটানো।

৯. বিনা কারণে অযুর মধ্যে ঐসব অঙ্গ ধোয়া যা জরুরী নয়।

ব্যাণ্ডেজ এবং ক্ষত প্রভৃতির উপর মুসেহ

১. ভাঙ্গা হাড়ের উপর কাঠ দিয়ে ব্যাণ্ডেজ বা প্লাষ্টার করা আছে। অথচ সে স্থান ধোয়া অযুর জন্যে জরুরী। এখন তার উপর মুসেহ করলেই চলবে।

২. ক্ষত স্থানে ব্যাণ্ডেজ বা প্লাষ্টার করা আছে। তাতে পানি লাগলে ক্ষতির আশংকা। এ অবস্থায় মুসেহ করলেই চলবে এবং তাতেও ক্ষতির আশংকা হলে তাও মাফ করা হয়েছে।

৩. যদি যখমের অবস্থা এমন হয় যে, ব্যাণ্ডেজ করতে দেহের কিচু সুস্থ অংশও তার মধ্যে আছে। এখন ব্যাণ্ডজ খুললে বা খুলে ভালো অংশ ধুতে গেলে ক্ষতির আশংকা রয়েছে, তাহলে মুসেহ করলেই চলবে।

৪. ব্যাণ্ডেজ খুলে দেহের ঐ অংশ ধুলে কোন ক্ষাতির আশংকা নেই কিন্তু খুললে আবার বাঁধাবার কেউ নেই। এমন অবস্থায় মুসেহ করার অনুমতি আছে।

৫. ব্যাণ্ডেজের উপর আর এক ব্যাণ্ডেজ করা হরে তার উপরও মুসেহ করা যায়।

৬. কোন অঙ্গে আঘাত বা যখম হয়েছে। পানি লাগালে ক্ষতির সম্ভবনাব। তখন মুসেহ করলেই যথেষ্ট হবে।

৭. যদি চেহারা বা হাত-পা কেটে গিয়ে থাকে কিংবা কোন অংগে ব্যাথা হলে এবং পানি লাগালে ক্ষতির আশংকা, তাহলে মুসেহ করলেই হবে। আর যদি মুসেহ করলেও ক্ষতি হয় তাহলে মুসেহ না করলেও চলবে।

৮. হাত-পা ফাটার কারণে তার উপর মোম অথবা ভেসলিন অথবা অন্য কোন ওষুধ লাগানো হয়েছে তাহলে উপর দিয়ে পানি ঢেলে দিলেই হবে। ভেসেলিন প্রভৃতি দূর করা জরুরী নয়। পানি দেয়াও যদি ক্ষতিকারক হয় তাহলে মুসেহ করলেই হবে।

৯. যখম অথবা আঘাতের উপর ওষুধ লাগানো হলো অথবা পট্টির উপর পানি দেয়া হলো অথবা মুসেহ করা হলো। তারপর পট্টি খলে গেল অথবা যখম ভালো হয়ে গেল, তখন ধুতেই হবে মুসেহ আর চলবে না।

যে সব জিনিসের উপর মুসেহ জায়েয নয়

১. দস্তানার উপর।

২. টুপির উপর।

৩. মাথার পাগড়ি অথবা মাফলারের উপর।

৪. দুপাট্টা অথবা বোরকার উপর।

যেসব করণে অযু নষ্ট হয়

যেসব করণে অযু নষ্ট হয় তা দু‘প্রকার:

এক- যা দেহের ভেতর থেকে বের হয়।

দুই- যা বাইর থেকে মানুষের উপর পসে পড়ে।

প্রথম প্রকার

১. পেশাব পায়খানা বের হওয়া।

২. পায়খানার দ্বার দিয়ে বায়ু নি:সরণ হওয়া।

৩. পেশাব পায়খানার দ্বার দিয়ে অন্য কিছু বের হওয়া, যেমন ক্রিমি, পাথর, রক্ত, মুযী প্রভৃতি।

৪. দেহের কোন অংশ থেকে রক্ত বের হয়ে গড়িয়ে যাওয়া।

৫. থুথু কাশি ব্যতীত বমির সাথে রক্ত, পুঁজ, খাদ্য অথবা অন্য কিছু বের হলে এবং মুখ ভরে বমি হলে।

৬. মুখ ভলে বমি না হলে বার বার হলেও এবং হলে এবং তার পরিমাণ মুখ ভরে হওয়ার সমান হলে অযু নষ্ট হবে।

৭. থুথুর সাথে রক্ত এলে এবং রক্তের পরিমাণ বেশী হলে।

৮. কামভাব ছাড়া বীর্যপাত হলে, যেমন ভারী বোঝা উঠালে, উঁচু স্থান থেকে নীচে নামতে, অথবা ভীষণ দু:খ পেলে যদি বীর্য বের হয় অযু নষ্ট হবে।

৯. চোখে কোন কষ্টের কারণে ময়লা বা পানি বের হয়ে যদি গড়িয়ে পড়ে তাহলে অযু নষ্ট হবে। কিন্তু যার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ে তার জন্যে মাফ।

১০. কোন মেয়েলোকের স্তনে ব্যথার কারণে দুধ ছাড়া কিছু পানি যদি বের হয় তাহলে অযু নষ্ট হবে।

১১. এস্তেহাযার রক্ত এলে।

১২. মুযি বের হলে।

১৩. যে যে কারণে গোসল ওয়াজেব হয় তার কারণে অযুও অবশ্যই নষ্ট হবে, যেমন হায়েয, নেফাস, বীর্যপাত প্রভৃতি।

দ্বিতীয় প্রকার

১. চিত হয়ে কাত হয়ে, অথবা ঠেস দিয়ে ঘুমালে।

২. যে যে অবস্থায় জ্ঞান ও অনুভূতি থাকে না।

৩. রোগ অথবা শোকের কারণে জ্ঞান হারালে।

৪. কোন মাদকদ্রব্য সেবনে অথবা ঘ্রাণ নেয়ার কারণে নেশাগ্রস্ত হলে।

৫. জানাযা নামায ব্যতীত অন্য যে কোন নামাযে অট্যহাস্য কারলে।

৬. দুজনের গুপ্তাংগ একত্র মিলিত হলে এবং দু অংগের মাঝে কোন কাপড় বা প্রতিবন্ধক না থাকলে বীর্যপাত ছাড়াও অযু নষ্ট হবে।

৭. রোগী শুয়ে শুয়ে নামায পড়তে যদি ঘুমিয়ে পড়ে।

৮. নামাযের বাইরে যদি কেউ দু‘জানু হয়ে বসে বা অন্য উপায়ে ঘুমিয়ে পড়ে এবং তার দু‘পাঁজর মাটি থেকে আলাদা থাকে, অযু নষ্ট হবে।

যে সব কারণে অযু নষ্ট হয় না

১. নামাযের মধ্যে এমনকি সিজদাতে ঘুমালে।

২. বসে বসে ঝিমুলে।

৩. নাবালকের অট্ট হাসিতে।

৪. জানাযায় অট্ট হাসিতে।

৫. নামাযে অষ্ফুট শব্দে হাসলে এবং মৃদু হাস্য করলে।

৬. মেয়েলোকের স্তন থেকে দুধ বের হলে।

৭. সতর উলংগ হলে, সতরে হাত দিলে, অন্যে সতর দেখলে।

৮. যখম থেকে রক্ত বের হয়ে যদি গড়িয়ে না যায়, যখমের মধ্যেই থাকে।

৯. অযুর পা মাথা বা দাড়ি কামালে অথবা নেড়ে করলে।

১০. কাশি ও থুথু বের হলে।

১১. নারী পুরুষ একে অপরকে চুমা দিলে।

১২. মুখ, কান অথবা নাক দিয়ে কোন পোকা বেরুলে।

১৩. শরীর থেকে কোন পোকা বেরুলে।

১৪. ঢেকুর উঠলে এমনকি দুর্গন্ধ ঢেকুর হলেও।

১৫. মিথ্যা কথা বললে, গীবত করলে এবং কোন গুনাহের কাজ করলে (মাআযাল্লাহ)।

হাদাসে আসগারের হুকুমাবলী

১. হাদাসে আসগার অবস্থায় নামায হারাম যে কোন নামায হোক।

২. সিজদা করা হারাম, তেলাওয়াতের সিজদা হোক, শোকরানার হোক অথবা এমনিই কেউ সিজদা করুক।

৩. কুরআন পাক স্পর্শ করা মাকরুহ তাহরীমি, কুরআন পাক জড়ানো কাপড় ও ফিতা হোক না কেন।

৪. কা‘বার তাওয়াফ মাকরুহ তাহরীমি।

৫. কোন কাগজ, কাপড়, প্লাষ্টিক, রেক্সিন প্রভৃতি টুকরায় কোন আয়াত লেখা থাকলে তা স্পর্শ করাও মাকরুহ তাহরীমি।

৬. কুরআন পাক যদি জুযদান অথবা রুমাল প্রভৃতিতে অর্থাৎ আলাদা কাপড়ে জড়ানো থাকে তাহলে স্পর্শ করা মাকরুহ হবে না।

৭. নাবালক বাচ্চা, কিতাবাতকারী, মুদ্রাকর ও জিলদ তৈয়ারকারীর জন্যে হাদাসে আসগার অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা মাকরুহ নয়। কারণ তাদের জন্যে সর্বদা হাদাসে আসগার থেকে পাক থাকা কঠিন।

৮. হাদাসে আসগার অবস্থায় কুরআন শরীফ পড়া, পড়ানো, দেখে হোক না দেখে হোক, মুখস্ত হোক সর্বাবস্থায় জায়েয।

৯. তাফসীরের এমন কেতাব যার মধ্যে কুরআনের মুল বচন আছে, বেঅযুতে স্পর্শ করা মাকরুহ।

১০. হাদাসে আসগার (বেঅযু) অবস্থায় কুরআন পাক লেখা যায় যদি যাতে লেখা হচ্ছে তা স্পর্শ করা না হয়।

১১. কুরআন পাক তরজমা অন্য কোন ভাষায় হলে অযু করে তা স্পর্শ করা ভালো।

রোগীর জন্যে অযুর হুকুম

অযুর ব্যাপারে ঐ ব্যক্তিকে ব্যতিক্রম মনে করা হবে যে এমন রোগে আক্রান্ত যার শরীর থেকে সব সময় অযু ভংগকারী বস্তু বের হতে থাকে এবং রোগীর এতটা অবকাশ নেই যে, তাহারাতের সাথে নামায পাড়তে পারে। যেমন :

১. কেউ চোখের রোগী সব সময় তার চোখ দিয়ে পিচুটি ময়লা অথবা সব সময় পানি বেরুতে থাকে।

২. কারো পেশাবের রোগ আছে এবং সব সময় ফোঁটা ফোঁটা পেশাব বেরয়।

৩. কারো বায়ু নি:সরণের রোগ আছে। সব সময় বায়ু নি:সরণ হতে থাকে।

৪. কারো পেটের রোগ এবং সর্বদা পায়খান হতে থাকে।

৫. এমন রোগী যার সর্বদা রক্ত বা পুঁজ বেরয়।

৬. কারো নাকশিরা রোগ আছে এবং সর্বদা নাক দিয়ে রক্ত পড়ে।

৭. কারো প্রস্রাবের দ্বার দিয়ে সর্বদা মনি বা মুযি বের হতে থাকে।

৮. কোন মেয়েলোকের সব সময় এস্তেহাযার রক্ত আসে।

এ ধরণের সকল অবস্থায় হুকুম এই যে, এ ধরণের লোক প্রত্যেক নামাযের জন্যে নতুন অযু করবে এবং অযু ততোক্ষণ পর্যন্ত থাকবে যতোক্ষণ না অন্য দ্বিতীয় কোন কারণ হয়েছে যার দ্বারা অযু নষ্ট হয়। যেমন কারো নাকশিরা ব্যরাম আছে। সে যোহর নামাজের অযু করলো। এখন তার অযু আসর পর্যন্ত বাকী থাকবে। তাবে নাকশিরার রক্ত ছাড়া যদি পেশাব করে, অথবা বায়ু নি:সরণ হয় তাহলে অযু নষ্ট হবে।

রোগীর মাসয়ালা

১. অক্ষম রোগী ব্যক্তি নয়া অযু করার পর ওয়াক্ত থাকা পর্যন্ত সে অযুতে ফরয, সুন্নাত, নফল সব নামায পড়তে পারে।

২. কেউ ফজর নামাযের জন্যে অযু করলো। তারপর সূর্য উঠার পর তার অযু শেষ হয়ে গেল। এখন কোন নামায পড়তে হলে নতুন অযু করতে হবে।

৩. সূর্য উঠার পর অযু করলে যে, অযুতে যোহর নামায পড়া যায়। যোহরের জন্যে দ্বিতীয়বার অযু করার দরকার নেই তবে আসরের ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে এ অযু শেষ হয়ে যাবে।

৪. এ ধরণের কোন রোগীর কোন নামাযের পুরা ওয়াক্ত এমন গেল যে, এ সময়ের মধ্যে তার সে রোগ বিলকুল ঠিক হয়ে গেল। যেমন, কারো সব সময়ে ফোঁটা ফোঁটা পেশাব পড়তো। এখন তার যোহর থেকে আসর পর্যন্ত এক ফোঁটাও পড়লো না। তাহলে তার রোগের অবস্থা খতম হয়ে গেল। এরপর যতবার পেশাবের ফোঁটা পড়বে ততবার অযু করতে হবে।
মুজার উপর মুসেহ
যথাযোগ্য লাঘবতার লক্ষ্যে শরীয়ত মুজার উপর মুসেহ করার অনুমতি দিয়েছে। কোন কোন কঠিন আবহাওয়ায় বিশেষ করে ঐসব দেশে যেখানে ভায়ানক ঠান্ডা পড়ে, শরীয়তের এ সুযোগ দানের জন্যে আপনা আপনি কৃতজ্ঞতার আবেগ-উচ্ছ্বাসে মন-প্রাণ ভরে যায় এবং আল্লাহর অশেষ রহম ও করমের অনুভূতি পয়দা হয়। তারপর এ একীন বাড়তে থাকে যে, দ্বীন আমাদের কোন প্রয়োজন এবং অসুবিধা উপেক্ষা করেনি।

কোন কোন মুজার উপর মুসেহ জায়েয

চামড়ার মুজার উপর মুসেহ জায়েয হওয়ার ব্যাপারে প্রায় সকলেই একমত। তাবে পশমী, সূতী, রেশমী ও নাইলন মুজার উপর মুসেহ জায়েয হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে কিছু মতভেদ আছে। অধিকাংশ ফেকাহবিদ পশমী, সূতী প্রভৃতি মুজার উপর মুসেহ জায়েয হওয়ার জন্যে কিছু শর্ত আরোপ করেছেন। আবার কতিপয় আহলে এলম বলেন যে, কোন শর্ত ব্যতিরেকেই সকল প্রকার মুজার উপর মুসেহ জায়েয। সাধারণত ফেকাহের কেতাবগুলোতে শুধু ঐসব মুজার উপর মুসেহ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে যেগুলোর মধ্যে নিম্নলিখিত চারটি শর্ত পাওয়া যাবে।

১. এমন মোটা হবে যাকোন কিছু দিয়ে না বাঁধলেও পায়ের উপর লেগে থাকবে।

২. এমন মজবুত হবে যে, তা পায়ে দিয়ে তিন মাইল পায়ে হেঁটে যাওয়া যাবে।

৩. একখানি মোটা হবে যে, ভেতর থেকে পায়ের চামড়া দেখা যাবে না।

৪. ওয়াটর প্রুফ হতে হবে যেন উপরে পানি দিলে পানি চুষতে না পারে এবং পানি নীচ পর্যন্ত পৌছতে না পারে।

যেসব মুজায় এ চারটি শর্ত পাওয়া যাবে না, তার উপর মুসেহ জায়েয হবে না।[কতিপয় দুরদর্শী আলেম এ শর্তগুলো স্বীকার করেন না। তাঁরা বলেন, সুন্নাত থেকে যা কিছু প্রামাণিত আছে তা শুধু এই যে, নবী (সা) মুজা এবং জুতার উপর মুসেহ করেছেন।

অতএব সকল প্রকার মুজার উপর কোন শর্ত ব্যতিরেকেই মুসেহ করা জায়েয। বর্তমান যুগের একজন প্রখ্যাত ও সর্বজন পরিচিত চিন্তাশীল ও দূরদর্শী আলেমে দ্বীন মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ‘লা মুওদুদী স্কটল্যান্ডে বসবাসকারী একজন ছাত্রের প্রশ্নের জবাবে যে বিশদ ব্যাখ্যা দান করন তার দ্বারা বিষয়টির উপর বিশষ আলোকপাত করেন। নিম্নে সে প্রশ্ন ও তার জবাব উধৃত করা হলো:

প্রশ্ন: মুজার উপর মুসেহ করার ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। আমি শিক্ষালাভের জন্যে স্কটল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে বাস করি। এখানে শীতকালে ভায়ানক ঠান্ডা পড়ে। সব সময়ে পশমী পুজা পরিধান করা অপরিহার্য হয়। এ ধরণের মুজার উপর মুসেহ করা যায় কি? শরীয়তের তথ্যানুন্ধান ও গবেষণার আলোকে মেহেরবানী করে বিস্তারিত লিখে জানাবেন।

উত্তর: চামড়ার মুজার উপর মুসেহ করার ব্যাপারে প্রায় সব আহলে সুন্নাতের মধ্যে মতৈক্য রয়েছে। কিন্তু পশমী ও সূতী মুজার ব্যাপারে সাধারণত আমাদের ফেকাহশস্ত্রবিদগণ এ শর্ত লাগিয়েছেন যে, তা মোটা হতে হবে, এমন পাতলা না হয় যেন নীচ থেকে পায়ের চামড়া দেখা যায়। আর সে মুজা কোন প্রকার বন্ধন ব্যতিরেকেই পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকবে। আমি আমার সাধ্যমত তালাশ করার চেষ্টা করেছি যে, এসব শর্তের উত্স কি? কিন্তু সুন্নাতের ভেতর এমন কোন জিনিস খুঁজে পাইনি। সুন্নাত থেকে যা কিছু প্রমাণিত আছে তা এই যে, নবী (সা) জুতা এবং মুজার উপরে মুসেহ করেছেন। নাসায়ী ব্যতীত হাদীসের কেতাবগুলোতে এবং মুসনাদে আহমদে মুগীরাহ বিন শু‘বার রেওয়ায়েত রয়েছে যে, নবী (সা) অযু করলেন (আরবী**********) এবং আপন মুজা এবং জুতার উপর মুসেহ করলেন। আবু দাউদের বর্ণনায় আছে যে, হযরত আলী (রা),আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা), বারা বিন আযেব (রা), আনাস বিন মালেক (রা), আবু উসামা (রা) সাহল বিন সা‘দ (রা) এবং আমর বিন হারেস (রা) মুজার উপর মুসেহ করেন। উপরন্তু হযরত ওমর (রা) এবং ইবনে আব্বাস (রা) এ কাজ করেছেন বলে বর্ণিত আছে। বরঞ্চ বায়হাকী ইবনে আব্বাস (রা) এবং আনাস ইবনে মালেক (রা) থেকে এবং তাহাবী আউস ইবনে আবি আউস (রা) থেকে ও রেওয়ায়েত করেছেন যে, নবী (সা) শুধু জুতার উপর মুসেহ করেছেন। এতে মুজার উল্লেখ নেই। হযরত আলী (রা) ও এরূপ করতেন বলে বর্ণিত আছে। এসব বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, শুধু মুজা এবং শুধু জুতা এবং মুজা পরা অবস্থায় জুতার উপর মুসেহ করাও ঐরূপ জায়েয যেমন চামড়ার মুজার উপর। এসব বর্ণনায় কোথাও এমন পাওয়া যায় না যে, নবী (সা) ফকীহগণের আরোপীত শর্তগুলোর মধ্যে কোন একটি শর্তের কথা বলেছেন। আর কোথাও এ বর্ণনা পাওয়া যায় না যে, নবী (সা) এবং উপরোক্ত সাহাবীগণ যে মুজার উপর মুসেহ করেছেন তা কোন ধরণের ছিল। এ জন্যে আমি এ কথা বলতে বাধ্য যে, ফকীহগুণের আরোপিত শর্তগুলোর কোনই উত্স নেই, যার উপর ভিত্তি করে তারা এসব আরোপ করেছেন। আর ফকীহগণ যেহেতু শরীয়ত প্রণেতা নন সে জন্যে তাঁদের আরোপিত শর্তের উপর যদি কেউ আমল না করে তাহলে সে গুনাহগার হবে না।

ঈমান শাফী (রহ) এবং ইমাম আহমদের (রহ) অভিমত এই যে, মুজার উপর এ অবস্থায় মুসেহ করা যদি কেউ জুতা পায়ের উপর থেকে পারিধান করে থাকে। কিন্তু উপরে যেসব সাহাবী (রা) এর আমল বর্ণনা করা হয়েছে তাঁরা কেউই এ শর্তের অনুসারণ করেননি।

মুজার উপর মুসেহ করার বিষয়টির উপর চিন্তা-ভাবনা করে আমি যা বুঝতে পেরেছি তা এই যে, প্রকৃতপক্ষে এটা তায়াম্মুমের ন্যায় একটি সুবিধা দান (conesion) যা আহলে ইমানকে এমন অবস্থায় দেয়া হয়েছে যখণ যেমন করেই হোক পা ঢেকে রাখতে তারা বাধ্য হয় এবং বার বার পা ধোয়া ক্ষতিকর অথবা কষ্টকর হয়। এ সুবিধাদানের ভিত্তি এ ধারণার উপর রাখা হয়নি যে, তাহারাতের পর মাজা পরিধান করলে পা নাজাসাত থেকে রক্ষা পাবে এবং তা আর ধোয়ার প্রয়োজন হবে না। বরঞ্চ তার ভিত্তি হলো আল্লাহর রহমত যা বন্দাহকে সুবিধা দানের দাবী জানায়। অতএব ঠান্ডা এবং পথের ধুলিবালি থেকে পা-কে রক্ষা করার জন্যে পায়ের কোন যখমের রক্ষণা-বেক্ষণের জন্যে মানুষ যা কিছুই পরিধান করে এবং যা বার বার খুলে পরিধান করতে কষ্ট হয়, এমন সব কিছুর উপরেই মুসেহ করা যেতে পারে। সেটা পশমী মুজা হোক অথবা সুতী, চামড়ার জুতা হোক অথবা ক্রীচ অথবা কোন কাপড়ই হোক যা পায়ের সাথে জড়িয়ে বাঁধা হয়েছে।

আমি যখন কাউকে দেখি যে, সে অযুর পর মুসেহ করার জন্যে পায়ের দিকে তার হাত পাড়াচ্ছে তখন আমার মনে হয় যেন সে বান্দাহ আল্লাহকে বলছে, হুকুম হলে এক্ষুণি এ মুজা খুলে ফেলে পা ধুয়ে ফেলবো। কিন্তু সকল কর্তৃত্ব প্রভূত্বের মালিক যিনি তিনিই যেহেতু অনুমতি দিয়ে রেখেছেন সে জন্যে মুসেহ করেই ক্ষন্ত হচ্ছি।“ আমার কাছে প্রকৃতপক্ষে এই অর্থই মুজার উপর মুসেহ করার সত্যিকার তাত্পর্য। আর এ তাত্পর্যর দিক দিয়ে ঐ সকল জিনিসই একরূপ যা প্রয়োজন অনুসারে মানুষ পরিধান করে, যার সুবিধা দানের লক্ষ্যে মুসেহ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। (রাসায়েল ও মাসায়েল দ্বিতীয় খণ্ড –পৃ: ২৫৮)।

এ তথ্যানুসন্ধানের সংক্ষিপ্ত সার এই যে, সকল প্রকার মুজার উপর নিশ্চিত মনে মুসেহ করা যেতে পারে, তা সে মুজা পশমী হোক অথবা সুতী, রেশমী হোক অথবা চামড়ার, অথবা অয়েল ক্লথ এবং রেক্সিনের হোক না কেন। এমন কিন পায়ের উপর কাপড় জড়িয়ে যদি বাঁধা হয তাহলে তার উপর মুসেহ করাও জায়েয হবে।

আল্লামা মওদুদী ছাড়াও আল্লামা ইবনে তাইমিয়া তাঁর ফতোয়া গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে অনুরূপ ফতোয়াই দিয়েছেন।

হাফেয ইবনে কাইয়েম এবং আল্লামা ইবনে হাযেমের অভিমতও এই যে, বিনা শর্তে সকল প্রকার মুজার উপর মুসেহ করা যেতে পারে। (বিস্তরিত বিবরণের জন্যে “তরজুমানুল কুরআন“ ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৮, রাসায়েল ও মাসায়েল শীর্ষ নিবন্ধ-পৃ: ৫৩ দ্রষ্টব্য)]

মুজার উপর মুসেহ করার পদ্ধতি

দুহাত অব্যবহৃত পানি দিয়ে ভিজিয়ে ডান হাতের আঙ্গুলগুলো কিছুটা ফাঁক করে তা ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে ডান পা এবং বাম হাতের আঙ্গুল দিয়ে বাম পা মসেহ করতে হবে।
পায়ের আঙ্গুলের দিক থেকে উপরের টাখনুর দিকে আঙ্গুল বুলিয়ে আনতে হবে।
আঙ্গুলগুলো একটু চাপ সহকারে টেনে আনতে হবে যেন মুজার উপর ভেজা হাতের স্পর্শ অনুভূত হয়।
মুসেহ পায়ের উপরিভাগে, নীচের দিকে নয়।
মুসেহ দু‘পায়ের উপর মাত্র একবার করে করতে হবে।
মুসেহের মুদ্দত

মুসাফিরের জন্যে মুসেহ করার মুদ্দত তিন দিন তিন রাত। মুকীমের জন্যে একদিন এক রাত। এ মুদ্দতের সময় অযু নষ্ট হওয়ার পর থেকে ধরা হবে। মুজা পরিধান করার সময় থেকে ধরা হবে না। যেমন ধরুন, কেউ যোহরের সময় অযু করে মুজা পরলো। তারপর সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় অযু নষ্ট হলো। তাহলে মুকীমের জন্যে পরের দিন সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় পর্যন্ত মুসেহ দুরস্ত হবে। অর্থাৎ যখনই অযু নষ্ট হবে তখন অযুর সাথে মুসেহ করবে। আর যদি সে মুসাফির হয় তাহলে তৃতীয় দিন সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় পর্যন্ত তার মুসেহ করা দুরস্ত হবে। অর্থাৎ নষ্ট হওয়ার সময় থেকে তিন দিন তিনরাত পুরা করার পর মুসেহ করার মুদ্দত খতম হবে। যেমন ধরুন, জুমার দিন সূর্য ডুবার সময় অযু নষ্ট হলো। তাহলে সোমবার সূর্য ডুবার সময় পর্যন্ত মুসেহ করার মুদ্দত থাকবে আর যদি সোমবার সূর্য অস্ত যাওয়ার পর সে মাগরেবের জন্যে অযু করে তাহলে পা ধেতে হবে।

যে যে কারণে মুসেহ নষ্ট হয়ে যায়

১. যে যে কারণে অযু নষ্ট হয়, সেই সেই কারণে মুসেহ বাতিল হয়ে যায়। অর্থাৎ অযু করার পর পুনরায় মুসেহ করতে হবে।

২. কোন কারণে মুজা খুলে ফেলে, অথবা মুজা আপনা আপনি খুলে গেলে অথবা পায়ের অধিকাংশ খুলে গেল বা বাহির হয়ে পড়ল।

৩. মুজা পরা অবস্থায় যদি পা পানিতে ভিজে যায়, সমস্ত পা অথবা পায়ের অধিকাংশ যদি ভিজে যায়।

৪. মুসেহ করার মুদ্দত খতম হয়ে গেলে। অর্থাৎ মুকীমের জন্যে একদিন একরাত এবং মুসাফিরের জন্যে তিন দিন তিন রাত পার হয়ে গেলে।

শেষোক্ত তিন অবস্থায় পুনরায় অযু করার দরকার নেই, শুধু পা ধয়ে নিলেই হবে।

মুসেহ করার কতিপয় মাসয়ালা

১. যদি মুসেহ না করার কারণে ওয়াজেব ছুটে যাওয়া অপরিহর্য হয়ে পড়ে তাহলে মুসেহ করা ওয়াজেব হয়ে পড়বে। যেমন মনে করুন কেউ আশংকা করলো যে, পা ধুয়ে সময় নষ্ট করতে গেলে আরফাত অবস্থান করার সুযোগ পাওয়া যাবে না, অথবা জামায়াত চলে যাবে অথবা নামাজের ওয়াক্ত চলে যাবে এসব অবস্থায় মুসেহ করা ওয়াজিব হবে।

২. কারো নিকটে এতটুকু পানি আছে যে, তাতে শুধু পা ব্যতীত অন্য অংগসমূহ ধোয়া যায়, তাহলে মুসেহ ওয়াজেব হবে।

৩. মুজা এতো ছোট যে, টাখনু খলে যায়। তখন চামড়া অথবা কাপড় প্রভৃতি দিয়ে মুজা যদি বাড়ানো যায়, তাহলে তার উপর মুসেহ জায়েয হবে।

৪. এমন জুতার উপর মুসেহ করা জায়েয যা টাখনু সমেত গোটা পা ঢেকে রাখে এবং যার দ্বারা পায়ের কোন স্থানের চামড়া দেখা যায় না। তা সে জুতা চামড়ার হোক, রাবার, প্লষ্টিক অথবা নাইলনের হোক।

৫. যদি কেউ মুজার উপর মুজা পরে থাকে তাহলে উপরের মুজার উপর মুসেহ করলেই যথেষ্ট হবে।

৬. তায়াম্মুমকারীদের জন্যে মুসেহ করার দরকার নেই। গোসলের সাথেও মুজার উপর মুসেহ দুরস্ত হবে না, পা ধোয়া জরুরী।
গোসলের বিবরণ
গোসলের পারিভাষিক অর্থ

অভিধানে গোসলের অর্থ হলো সমস্ত শরীর ধুয়ে ফেলা এবং ফেকাহর পরিভাষায় তার অর্থ হলো শরীয়তের বলে দেয়া বিশেষ পদ্ধতি অনুযায়ী নাপাকী দুর করার উদ্দেশ্যে অথবা সওয়াবের আশায় সমস্ত শরীর ধোয়া।

গোসল সম্পর্কে সাতটি হেদায়েত

১. গোসলখানয় অথবা খোলা জায়গায় গোসল করতে হলে তহবন্দ, নেকাব অথবা অন্য কাপড় পড়ে গোসল করতে হবে।

২. হামেশা পর্দা করা স্থানে গোসল করতে হয় যাতে করে পর পুরুষ বা পর স্ত্রীর নজরে না পড়ে।

এরূপ স্থানে না হলে লংগি প্রভৃতি বেঁধে গোসল করবে। যদি বাঁধাবারও কিছু না থাকে তাহলে আঙ্গুল দিয়ে চারদিকে আঁক টেনে বিসমিল্লাহ বলে বসে বসে গোসল করবে।

৩. মেয়েদের উচিত সর্বদা বসে গোসল করা। পুরুষ যদি উলংগ হয় তাহলে বসে বসেই গোসল করবে। তাবে লুংগি প্রভৃতি পরে দাঁড়িয়ে গোসল করতে দোষ নেই।

৪. গোসলের সময় কথাবার্তা না বলা উচিত। বিশেষ প্রয়োজন হলে অন্য কথা।

৫. উলংগ হয়ে গোসল করতে কেবলামুখী হওয়া চলবে না।

৬. সর্বদা পাক-সাফ জায়গায় গোসল করবে। গোসলের জায়গায় পেশাব প্রভৃতি করা থেকেও বিরত থাকবে হবে।

৭. যেসব জিনিস অযুতে মাকরূহ তা সবই গোসলে মাকরূহ। এসব থেকে বিরত থাকতে হবে। গোসলের সময় অযুর দোয়া পড়া মাকরূহ।

গোসলের মসনুন তরীকা

সুন্নাত মুতাবিক গোসলের পদ্ধতি এই যে, ডান হাতে পানি নিয়ে দু‘হাত কব্জি পর্যন্ত ধুবে। তারপর এস্তেঞ্জা করবে তা এস্তেঞ্জারস্থানে কোন নাজাসাত থাক বা না থাক। তারপর শরীরে কোথাও নাজাসাত লেগে থাকলে তা সাফ করতে হবে। তারপর সাবান দিয়ে দু‘হাত ভালো করে ধুয়ে অযু করবে। কুল্লি করার সময় কণ্ঠদেশে এবং নাকের ভেতর ভালো করে পানি পৌছাতে হবে। গোসলের স্থানে পানি জমা হয়ে থাকলে গোসলের পর পা ধুবে। গোসল যদি ফরজ হয় তাহলে অযুতে বিসমিল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন দোয়া পড়বে না। অযুর পর মাথায় পানি ঢালবে, তারপর ডান কাঁধের উপর, তারপর বাম কাঁধের উপর। সমস্ত শরীর ভালোভাবে ঘষতে হবে। সাবান দিয়ে হোক বা খালি হাতে হোক, যেন কোন স্থান শুকনো না থাকে এবং শরীর ভালভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়।

তারপর দু‘বার এভাবে সমস্ত শরীর ভালভাবে পানি ঢালতে হবে যেন কোন স্থান শুকনো থাকার আশংকা না থাকে। অযুর সময় পা ধোয়া হয়ে না থাকলে, এখন পা ধুতে হবে। তারপর সমস্ত শরীর কোন কাপড় বা গামছা তোয়ালে দিয়ে ভাল করে মুছে ফেলতে হবে।
গোসলের ফরয
গোসলের মাত্র তিন ফরয

১. কুল্লি করা। কুল্লি করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কণ্ঠদেশ পর্যন্ত সমস্ত মুখে পানি পৌছে।

২. নাকে পানি দেয়া।

৩. সমস্ত শরীরে পানি দেয়া যেন চুল পরিমাণ কোন স্থানে শুকনো না থাকে। চুলের গোড়েয় এবং নখের ভেতর পানি পৌছতে হবে।

প্রকৃতপক্ষে এ তিনের নামই গোসল। এ তিনটির কোন একটি ছুটে গেলে গোসল হয় না।

চুলের খোঁপা এবং অলংকারের হুকুম

১. খোঁপা খোলা ব্যতীত চুলের গোড়ায় পানি পৌছলে, মেয়েদের জন্যে খোঁপা অথবা বেনী খোঁলার দরকার হবে না। তবে চুল যদি খুব ঘন হয় অথবা খোঁপা এমন শক্ত করে বাঁধা আছে যে, তা না খুললে পানি পৌছবে না, তাহলে খুলতেই হবে।

২. চুল যদি খোলা হয় তাহলে সব চুল ভিজানো এবং গোড়া পর্যন্ত ভালো করে পানি পৌছাতে হবে যেন একটিও শুকনো না থাকে।

৩. পুরুষ যদি লম্বা চুল রাখে এবং মেয়েদের মতো খোঁপা বাঁধে অথবা এমনি একত্রে বেঁধে রাখে, তাহলে খুলে প্রত্যেক চুল এবং তার গোড়ায় পানি পৌছাতে হবে।

৪. আট সাট অলংকার যেমন আংটি, গলাবন্দ প্রভৃতি এবং ঐসব অলংকার যা ছিদ্র করে পরা হয়, যেমন নাকের বালি, কানের রিং বা দুল প্রভৃতি, তাহলে সেসব নড়ায়ে চাড়ায়ে তার নীচে পানি পৌছাতে হবে।

গোসলের সুন্নাত

১. আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং সওয়াবের নিয়তে পবিত্রতা অর্জন করা।

২. সুন্নাতের ক্রমানুসারে গোসল করা এবং প্রথমে অযু করা।

৩. দু‘হাত কব্জা পর্যন্ত ধোয়া।

৪. শরীর থেকে নাপাক দূর করা এবং ঘষে ঘষে ধোয়া।

৫. মিসওয়াক করা।

৬. সারা শরীরে তিনবার পানি দেয়া।

গোসলের মুস্তাহাব

অর্থাৎ যেসব কাজ করা গোসলে মুস্তাহাব

১. এমন স্থানে গোসল করা যেন মানুষের নজরে না আসে। দাঁড়িয়ে গোসল করলে কাপড় পরা অবস্থায় করতে হবে।

২. ডান দিকে প্রথমে এবং বাম দিকে পরে ধোয়া।

৩. পাক জায়গায় গোসল করা।

৪. অপব্যয় হয় এমন বেশী পানি ব্যবহার না করা এবং এত কম পানি ব্যবহার না করা যাতে শরীর ভালোভাবে ভিজে।

৫. বসে গোসল করা।
গোসলের হুকুম
গোসলের প্রকার

গোসল তিন উদ্দেশ্যে করা হয়।

১. হাদাসে আকবার থেকে পাক হওয়ার জন্যে। এ গোসল ফরয।

২. সওয়াবের নিয়তে। এ গোসল সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব।

৩. শরীরকে ধুলাবালি ও ময়লা থেকে পরিস্কার করা। গরমের সময় আরাম লাভ করার জন্যে। এ গোসল মুবাহ।

গোসল ফরয হওয়ার অবস্থা

চার অবস্থায় গোসল ফরয হয়।

১. বীর্যপাত হলে।

২. পুরুষাংগের মাথা স্ত্রীর অংগে প্রবেশ করালে।

৩. হায়েয হলে।

৪. নেফাসের রক্ত বেরুলে।

গোসল ফরয হওয়ার প্রথম অবস্থা

কামভাবসহ পুরুষ বা নারীর বীর্যপাত হলে গোসল ফরয হয়। বীর্যপাত অনেক ভাবে হতে পারে, যেমন-

রাতে বা দিনে স্বপ্নদোষ হলে-স্বপ্নে কিছু দেখে হোক না দেখে হোক।
কোন পুরুষ, নারী অথবা কোন প্রাণীর সাথে সাহবাসে বীর্যপাত হলে।
চিন্তা ধারণার মাধ্যমে অথবা যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী গল্প উপন্যাস পাঠ করে।
হস্ত মৈথুন বা অন্য কোন উপায়ে বীর্যপাত হলে।
মোট কথা যেমন করেই হোক কামভাব ও কামেচ্ছাসহ বীর্যপাত হলে গোসল ফরয হবে। [প্রকাশ থাকে যে এখানে যেহেতু গোসল ফরয হওয়ার ফেকাহর হুকুম বর্ণনা করা হচ্ছে সে জন্যে বীর্যপাতের বিভিন্ন অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। নতুবা আপন বিবির সাথে সহবাস এবং স্বপ্নদোষ (ইহতেলাম) ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে বীর্যপাত করা চরম অজ্ঞতা এবং গুনাহের কাজ।]

বীর্যপাত সম্পর্কে কিছু মাসয়ালা

১. কোন উপায়ে কিছুটা বীর্য বের হলো এবং সে ব্যক্তি গোসল করলো। তারপর আবার কিছুটা বীর্য বের হলো তার প্রথম গোসল বাতিল হবে, দ্বিতীয় বার গোসল করতে হবে।

২. এক ব্যক্তি ঘুমের ঘোরে স্বপ্নদোষে যৌন আস্বাদ উপভোদ করলো। কিন্তু ঘুম থেকে জাগার পর কাপড়ে বীর্যের কোন চিহ্ন দেখতে পেলো না। তার গোসল ফরয হবে না।

৩. ঘুম থেকে উঠার পর কেউ দেখলো তার কাপগে বীর্য লেগে আছে কিন্তু স্বপ্নদোষের (ইহতেলাম) কথা মনে পড়ে না। তার গোসল ওয়াজেব হবে।

৪. ঘুমের মধ্যে যৌন আস্বাদ পাওয়া গেছে কিন্তু কাপড়ে যে চিহ্ন বা আদ্রতা সে সম্পর্কে নিশ্চিত যে তা বীর্য নয়, মুযী বা অদী। তাহলে সকল অবস্থায় গোসল ফরয হবে।

৫. কারো খাতনা হয়নি এবং বীর্য বের হয়ে চামাড়ার মধ্যে রয়ে গেছে যা কেটে ফেলা হয়। তাহলেও গোসল ফরয হবে।

৬. কারো যে কোন উপায়ে যৌন আস্বাদ উপভোগ হয়েছে কিন্তু ঠিক বীর্যপাতের সময় লিংগ চেপে ধরে বীর্য বাইরে আসতে দেয়নি। তারপর চরম আনন্দ শেষ হওয়ার পর বীর্য বের হলো। (গোসল ফরয হবে)

গোসল ফরয হওয়ার দ্বিতীয় কারণ

পুরুষের পুংলিঙ্গ যদি কোন জীবিত মানুষের দেহে প্রবেশ করে তাহলে গোসল ফরয হবে এ জীবিত মানুষ নারী হোক, পুরুষ হোক, মুখান্নাস বা হিজড়া হোক, দেহের প্রস্রাবের দ্বার দিয়ে হোক, বাহ্যদ্বার দিয়ে হোক, বীর্য বেরুক অথবা না বেরুক সকল অবস্থায় গোসল ফরয হবে।

কর্মকারী এবং যার উপর কর্ম করা হলো উভয়ে বালেগ ও সজ্ঞান হলে উভয়ের উপর গোসল ফরয হবে। নতুবা দু‘জনের মধ্যে যে বালেগ সজ্ঞান হবে শুধু তার উপর ফরয হবে।[এখানে যা কিছু বলা হচ্ছে গোসল ফরয হওয়ার হুকুম বলা হচ্ছে। নতুবা নিজের বিবির সামনের দ্বার ব্যতীত পেছন দ্বার (বাহ্যদ্বার) এবং অন্য মানুষের যে কোন দ্বারে নিজের লিংগ প্রবেশ করানো ভয়ানক গুনাহ।]

গোসল ফরয হওয়ার কতিপয় মাসয়ালা

১. কোন পুরুষ যদি তার পুরুষাংগ কোন অল্প বয়স্ক বালিকার অংগে প্রবেশ করায় এবং এ আশংকা না হয় যে, তার অগ্র পশ্চাৎ অংগ সে কারণে ফেটে একাকার হয়ে গেছে, তাহলে পুরুষের উপর গোসল ফরয হবে।

২. কোন মেয়ে লোক যদি কামরিপুর তাড়নায় অধীর হয়ে কোন কামহীন পুরুষের অথবা কোন পশুর বিশেষ অংগ অথবা কোন বন্তু প্রভৃতি তার মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেয় তাহলে তার বীর্যপাত হোক বা না হোক গোসল ফরয হবে।

৩. খাসি করা পুরুষের পুরুষাংগ যদি কোন নারী বা পুরুষের দেহে প্রবেশ করে তথাপি গোসল ফরয হবে। উভয়ে আকেল ও বালেগ হলে উভয়ের উপর, নতুবা যে আকেল ও বালেগ হবে তার উপর।

৪. কোন পুরুষ তার পুংলিঙ্গে কাপড়, রবার অথবা অন্য কিছু জড়িয়ে কারো দেহে প্রবেশ করালে গোসল ফরয হবে।

গোসল ফরয হওয়ার তৃতীয় কারণ

গোসল ফরয হওয়ার তৃতীয় কারণ বা অবস্থা হলো হায়েযের রক্ত। হায়েযের মুদ্দত কমপক্ষে তিন দিন তিন রাত। উর্ধপক্ষে ১০ দিন ১০ রাত। দু‘হায়েযের মধ্যে পাক থাকার মুদ্দত কমপক্ষে ১৫ দিন। অর্থাৎ তিন দিনের কম যদি রক্ত আসে তাহলে গোসল ফরয হবে না। এক হায়েয বন্ধ হওয়ার পর ১৫ দিনের পূর্বে এলে তাও হায়েয হবে না। সে জন্যে গোসল ফরয হবে না।

গোসল ফরয হওয়ার চতুর্থ কারণ

চতুর্থ কারণ হলো নেফাসের রক্ত। ঐ রক্তের উপর নেফাসের হুকুম হবে যা অর্ধেক বাচ্চা বের হওয়ার পর আসে। তার পূর্বে যে রক্ত আসবে তা নেফাসের নয়। তার জন্যে গোসল ফরয হবে না। নেফাসের মুদ্দত উর্ধপক্ষে ৪০ দিন ৪০ রাত। তারপর যে রক্ত আসবে তাতে গোসল ফরয হবে না। বাচ্চা পয়দা হওয়ার পর কোন মেয়েলোকের যদি মোটেই কোন রক্ত না আসে তাহলে গোসল ফরয হবে না। অবশ্য সাবধানতার জন্যে গোসল করা ভালো।

যে যে অবস্থায় গোসল ফরয হয় না

১. মুযী এবং অদী বের হলে এবং এস্তেহাযার রক্ত বেরুলে গোসল ফরয হবে না।

২. পুংলিঙ্গ তার মাথার কম পরিমাণ ভেতরে প্রবেশ করলে গোসল ফরয হবে না।

৩. স্ত্রী লিঙ্গে পুরুষের বীর্য সহবাস ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে প্রবেশ করলে গোসল ফরয হবে না।

৪. কারো নাভিতে পুরুষাংগ প্রবেশ করলে গোসল ফরয হবে না।

যে যে অবস্থায় গোসল সুন্নাত

১. জুমার দিন জুমার নামাযের জন্যে গোসল সুন্নাত।

২. দুই ঈদের নামাযের জন্যে গোসল সুন্নাত।

৩. হজ্ব অথবা ওমরার ইহরামের জন্যে গোসল সুন্নাত।

৪. হাজীদরে জন্যে আরাফাতের দিনে বেলা পড়ার পর গোসল সুন্নাত।

যে যে অবস্থায় গোসল মুস্তাহাব

১. ইসলাম গ্রহণের জন্যে গোসল করা মুস্তাহাব।

২. মুর্দা গোসল দেয়ার পর গোসল করা মুস্তাহাব।

৩. মস্তিস্ক বিকৃতি ও সংজ্ঞাহীনতা দূর হওয়ার পর গোসল করা মুস্তাহাব।

৪. শাবানের ১৫ই রাতে গোসল মুস্তাহাব।

৫. মক্কা মুয়াযযামা ও মদীনা শরীফে প্রবেশের আগে গোসল মুস্তাহাব।

৬. সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহনের নামাযের জন্য গোসল মুস্তাহাব।

৭. মুযদালফায় অবস্থানের জন্যে ১০ তারিখের ফজর বাদে গোসল।

৮. পাথর মারার সময় গোসল।

৯. কোন গুনাহ থেকে তওবা করার জন্যে গোসল।

১০. কো দ্বীনি মাহফিল বা অনুষ্ঠানে যোগদানের পূর্বে এবং নতুন পোশাক পরার পূর্বে গোসল।

১১. সফর থেকে বাড়ী পৌছার পর গোসল।

যে যে অবস্থায় গোসল মুবাহ

ধুলাবালি ময়লা থেকে শরীর রক্ষা করার জন্যে, গরমের তাপ থেকে শরীর রক্ষা করে ঠান্ডা করার জন্যে শ্রান্তি ও ক্লান্তি দূর করার জন্যে গোসল করা মুবাহ।

গোসলের বিভিন্ন মাসয়ালা

১. কেউ যদি হাদাসে আকবারের অবস্থায় নদী-নালা বা পুকুরে ডুব দেয় অথবা বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে এবং তার সমস্ত শরীরে যদি পানি প্রবাহিত হয়ে যায় সে কুল্লিও করে, নাকে পানিও দেয় তাহলে তার গোসল আদায় হয়ে যাবে এবং হাদাসে আকবার থেকে পাক হয়ে যাবে।

২. কেউ যদি গোসলের পূর্বে অযু না করে তাহলে গোসলের পর আলাদা করে অযু করার দরকার নেই। কেননা, গোসলে ঐসব অংগই ধোয়া হয়েছে যা অযুতে ধোয়া ফরয ছিল। সে জন্যে গোসলের সাথে অযুও হয়েগেছে।

৩. গোসল করার সময় কুল্লি করা হয়নি তবে খুব মুখ ভরে পানি খেয়ে নিয়েছে যাতে সমস্ত মুখে পানি পৌছে গেছে। এমন অবস্থায় গোসল দুরস্ত হবে। কেননা, কুল্লি করার উদ্দেশ্যেই হলো মুখের সব স্থানে পানি পৌছানো এবং তা হয়ে গেছে।

৪. মাথায় খুব ভাল করে তেল মালিশ করা হয়েছে অথবা শরীরেও মালিশ করা হয়েছে। তারপর শরীরে পানি পড়ার পর পানি পিছলে পড়লো শরীরের লোম কুপে ঢুকলো না। তাতে কোন ক্ষতি নেই। গোসল দুরস্ত হবে।

৫. নখের মধ্যে আটা লেগে শুকিয়ে শক্ত হয়ে গেছে অথবা অন্য কোন সৌন্দর্য সামগ্রী লাগানো হয়েছে। তা উঠিয়ে না ফেললে নীচ পর্যন্ত পানি পৌছে না। এমন অবস্থায় তা উঠিয়ে না ফেললে গোসল দুরস্ত হবে না।

৬. রোগের কারণে মাথায় পানি দেয়া ক্ষতিকর হলে মাথা ব্যতীত সমস্ত শরীরে পানি দিলে গোসল হয়ে যাবে। ক্ষতির আশংকা না থাকলে মাথায় পানি দিতে হবে।

হাদাসে আকবারের হুকুমাবলী

১. হাদাসে আকবার অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করা হারাম। তবে অনিবার্য কারণে প্রবেশ করতে হলে তায়াম্মুম করে যাওয়ার অনুমতি আছে। যেমন কারো বাসস্থানের পথ মসজিদের ভেতর দিয়ে এবং বাইরে বেরুবার অন্য কোন পথ নেই এবং পানির ব্যবস্থাও মসজিদে। বাইরে কোন পানির কল, কুয়া বা পুকুর নেই। এমন অবস্থায় তায়াম্মুম করে মসজিদে যাওয়া যায়। কিন্তু কাজ সেরে তত্ক্ষণাৎ বাইরে আসতে হবে।

২. হাদাসে আকবার অবস্থায় বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করা হারাম।

৩. কুরআন পাক তেলাওয়াতও হারাম, এক আয়াতই হোক বা না কেন।

৪. কুরআন পাক স্পর্শ করাও হারাম। অবশ্যি যেসব শর্তে হাদাসে আসগার অবস্থায় স্পর্শ করা জায়েয, সেসব শর্তে জাযেয হবে।

৫. যেসব কাজ হাদাসে আসগার অবস্থায় নিষিদ্ধ তা হাদাসে আকবারেও নিষিদ্ধ। যেমন নামায পড়া, সিজদায়ে তেলওয়াত, সিজদায়ে শোকর প্রভৃতি।

৬. হাদাসে আকবার অবস্থায় ঈদগাহ যাওয়া দুরস্ত এবং দ্বীনি তালীমের স্থনে যাওয়াও জায়েয।

৭. কুরআন পাকের ঐসব আয়াত তেলাওয়াত করা জাযেয যার মধ্যে হামদ, তাসবীহ এবং দোআ আছে, যেমন-

(আরবী****************১৩৮*******)

৮. দোয়ার নিয়াতে সুরায়ে ফাতেহা এবং দোয়া কুনুত পড়া জায়েয।

৯. হায়েয ও নেফাস অবস্থায় রোযা রাখা হারাম।

১০. হায়েয ও নেফাসের সময় বিবির সাথে সহবাস হারাম। অবশ্য সহবাস ব্যতীত চুমো দেয়া, আদর করা, একত্রে শয়ন করা প্রভৃতি জায়েয, বরঞ্চ এ অবস্থায় বিবির সাথে মেলামেশা বন্ধ করা মাকরুহ।

তায়াম্মুমের বয়ান

তাহারাত আসিল করার আসল মাধ্যম পানি যা আল্লাহ তায়ালা তাঁর বিশেষ মেহেরবানীতে বান্দাদের জন্যে প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ করে রেখেছেন। তথাপি এমন অবস্থার সৃষ্টিও হতে পারে যে, কোন স্থানে পানি পাওয়া যাচ্ছে না, অথবা পাওয়া গেলেও পানি দিয়ে তাহারাত আসিল করা মানুষের সাধ্যের বাইরে, অথবা পানি ব্যবহারে ভীষণ ক্ষতির আশংকা রয়েছে। এসব অবস্থায় আল্লাহ তায়ালা অতিরিক্ত মেহেরবানী এই যে, তিনি মাটি দিয়ে তাহারাত হাসিল করার অনুমতি দিয়েছেন। তার পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন যাতে করে বান্দাহ দ্বীনের উপর আমল করতে কোন অসুবিধা বা সংকীর্ণতার সম্মুখীন না হয়।

কুরআনে আছে-

(আরবী*******************************১৩৯*************)

“আর তোমরা যদি পানি না পাও, তাহলে পাক মাটি দিয়ে কাজ সেরে নাও। তাতে হাত মেরে চেহারা এবং হাত দুটির উপর মুসেহ কর। আল্লাহ তোমাদেরকে সংকীর্ণতার মধ্যে ফেলতে চাননা। বরঞ্চ তিনি তোমাদেরকে পাক করতে চান এবং চান যে তোমাদের উপর তাঁর নিয়ামত পরিপূর্ণ করে দিবেন যাতে তোমরা শোকরগোযার হতে পার“। (মায়েদাহ: ৬)

তায়াম্মুমের অর্থ

অভিধানে তায়াম্মুম শব্দের অর্থ হচ্ছে ধারণা ও ইচ্ছা করা। ফেকাহের পরিভাষায় এর অর্থ হলো মাটির দ্বারা নাজাসাতে হুকমী থেকে পাক হওয়ার এরাদা করা। তায়াম্মুম অযু এবং গোসল উভয়ের পরিবর্তে করা যায়। অর্থাৎ তার দ্বারা হাদাসে আসগার এবং হাদাসে আকবার উভয় থেকেই পাক হওয়া যায়। তায়াম্মুমের এ অনুমতি নবী পাক (সা) এর উম্মতের উপর এক বিশিষ্ট দান। যে উম্মতের কাজের পরিধি ও পরিসর গোটা দুনিয়ার মানবতা এবং যার সময়কাল কেয়ামত পর্যন্ত, তার এ সুবিধা (concession) লাভ করার অধিকার ন্যায়সঙ্গতভাবেই রয়েছে যাতে করে যে কোন যুগে যে কোন অবস্থায় এবং দুনিয়ার যে কোন প্রান্তে দ্বীনি আহকামের উপর আমল করার ব্যাপারে উম্মাকে কোন সংকীর্ণতা বা অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়।

কি কি অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয

১. এমন এক স্থানে অবস্থান যেখানে পানি পাওয়ার কোন আশা নেই। কারো কাছে জানারও উপায় নেই এবং এমন কোন নিদর্শনও পাওয়া যায়না যে, এখানে পানি পাওয়া যেতে পারে। অথবা পানি এক মাইল অথবা আরও দূরবর্তী স্থানে আছে এবং সেখানে যেতে বা সেখান থেকে পানি আনতে ভয়ানক কষ্ট হবার কথা। এমন অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয।

২. পানি আছে তবে তার পাশে শত্রু আছে অথবা হিংস্র পশু বা প্রাণী আছে, অথবা ঘরের বাইরে পানি আছে কিন্তু চোর-ডাকাতের ভয় আছে, অথবা কুয়া আছে কিন্তু পানি উঠাবার কিছু নেই, অথবা কোন মেয়ে মানুষের জন্যে বাইরে থেকে পানি আনা তার ইযযাত আবরুর জন্যে ক্ষতিকারক। এমন সব অবস্থাতে তায়াম্মু জায়েয।

৩. পানি নিজের কাছেই রয়েছে। কিন্তু পরিমাণে এতো কম যে, যদি তা দিয়ে দিয়ে অযু বা গোসল করা হয় তাহলে পিপসায় কষ্ট হবে অথবা খানা পাকনো যাবেনা, তাহলে তায়াম্মুম জায়েয হবে।

৪. পানি আছে কিন্তু ব্যবহারে রোগ বৃদ্ধির আশংকা আছে, অথবা স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে অবশ্য কোন কুসংস্কারবশে নয়, যেমন ধরুন, কোন ব্যক্তি শীতের দিনে গরম পানি দিয়ে অযু গোসল করতে অভ্যস্ত, তার অযু বা গোসলের প্রয়োজন হলে এবং পানিও আছে কিন্তু তা ঠাণ্ডা পানি। তার অভিজ্ঞাতা আছে যে, ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করলে তার অসুখ হয় অথবা স্বাস্থ্যের হানি হয়। এমন অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয। গরম পানির অপেক্ষায় নাপাক থাকা অথবা নামায কাযা করা ঠিক নয়, বরঞ্চ তায়াম্মুম করে পাক হবে এবং নামায ইত্যাদি আদায় করবে।

৫. পানি পাওয়া যায় কিন্তু পানিওয়ালা ভয়ানক চড়া দাম চায়, অথবা পানির দাম ন্যায়সংগত কিন্তু অভাবগ্রস্ত লোকের সে দাম দেয়ার সংগতি নেই, অথবা দাম দেয়ার মতো পয়সা আছে কিন্তু পথ খরচের অতিরিক্ত নেই এবং তা দিয়ে পানি কিনলে অসুবিধায় পড়ার আশংকা আছে এমন অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয।

৬. পানি আছে কিন্তু এতো শীত যে ঠাণ্ডা পানি ব্যবহারে প্রাণ যেতে পারে অথবা পক্ষাঘাত রোগ হতে পারে অথবা কোন রোগ যেমন নিউমুনিয়া প্রভৃতির আশংকা আছে, পানি গরম করার সুযোগও নেই এমন অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয।

৭. অযু বা গোসল করলে এমন নামায চলে যাওয়ার আশংকা আছে যার কাযা নেই, যেমন জানাযা, ঈদের নামায, কসুফ ও খসুফের নামায, তাহলে তায়াম্মুম করা জায়েয হবে।

৮. পানি ঘরেই আছে কিন্তু এতো দুর্বল যে উঠে পানি নেয়ার ক্ষমতা নেই, অথবা টিউবওয়েল চালাতে পারবে না। এমন অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয।

৯. কেউ রেল, জাহায অথবা বাসে সফর করছে। যানবাহন ক্রমাগত চলতেই আছে এবং যানবাহনে পানি নেই, অথবা পানি আছে কিন্তু এতো ভিড় যে তাতে অযু করা সম্ভব নয়, অথবা যানবাহন কোথাও থামলে এবং নীচে নামাই গেল না এমন অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয।

১০. শরীরের অধিকাংশ স্থানে যখম অথবা বসন্ত হয়েছে তাহলে তায়াম্মুম জায়েয।

১১. সফরে পানি সংগে আছে। কিন্তু সামনে কোথাও পানি পাওয়া না যেতে পারে যার ফলে পিপাসায় কষ্ট হবে। অথবা প্রাণ যাওয়ারই আশংকা আছে এমন অবস্থায় পানি সংরক্ষণ করে তায়াম্মুম করা জায়েয।

তায়াম্মুমের মসনুন তরীকা

বিসমিল্লহির রাহমানির রাহীম‘ বলে তায়াম্মুমের নিয়ত করবে তারপর দুহাতের তালু একটু প্রসারিত করে ধীরে পাক মাটির উপর মারবে। বেশী ধূলাবালি হাতে লেগে গেলে ঝেড়ে নিয়ে অথবা মুখ দিয়ে ফুঁক দিয়ে তা ফেলে দেবে। তারপর দুহাত এভাবে সমস্ত মুখমণ্ডলের উপর মৃদু মর্দন করবে যাতে চুল পরিমাণ স্থান বাদ পড়ে না যায়। দাঁড়িতে খেলালও করতে হবে। তারপর দ্বিতীয় বার এভাবে মাটির উপর হাত মেরে এবং হাত ঝেড়ে নিয়ে প্রথমে বাম হাতের চার আংগুলের মাথায় নিম্নভাগ দিয়ে ডান হাতের আংগুলের উপর থেকে কনুই পর্যন্ত নিয়ে যাবে। তারপর বাম হাতের তালু কনুইয়ের উপরের অংশের উপর মর্দন করে হাতের পিঠের উপর দিয়ে ডান হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত নিয়ে যাবে এবং আঙ্গুলগুলোর খেলালও করবে। এভাবে ডান হাত দিয়ে বাম হাত মর্দন করবে। হাতে কোন ঘড়ি বা আংটি থাকলে তা সরিয়ে তার নীচেও মর্দন করা জরুরী।

তায়াম্মুমের ফরযগুলো

তায়াম্মুমের তিন ফরয :

১. আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে পাক হওয়ার নিয়ত করা।

২. দুহাত মাটির উপর মৃদু আঘাত করে সমস্ত চেহারার উপর মর্দন করা।

৩. তারপর দু‘হাত পাটির উপর মৃদু আঘাত করে বা মেরে নিয়ে কনুই পর্য়ন্ত দুহাত মর্দন করা।

তায়াম্মুমের সুন্নাত

১. তায়াম্মুমের প্রথমে বিসমিল্লাহ বলা।

২. মসনূন তরীকায় তায়াম্মুম করা। অর্থাৎ প্রথমে চেহারা মুসেহ করা এবং তারপর দুহাত কনুই পর্যন্ত মুসেহ করা।

৩. পাক মাটির উপর হাতের ভেতর দিক মারতে হবে, পিঠের দিক না।

৪. হাত মাটিতে মারার পর মাটি ঝেড়ে ফেলা।

৫. মাটিতে হাত মারার সময় আংগুলগুলো প্রসারিত রাখা যাতে ভেতরে ধূলা পৌছে যায়।

৬. অন্ততপক্ষে তিন আঙ্গুল দিয়ে চেহেরা ও হাত মুসেহ করা।

৭. প্রথম ডান হাত পরে বাম হাত মুসেহ করা।

৮. চেহেরা মুসেহ করার পর দাড়ি খেলাল করা।

যেসব বন্তু দ্বারা তায়াম্মুম জায়েয না নাজায়েয হয়

১. পাক মাটি দিয়ে তায়াম্মুম জায়েয তো বটে, উপরন্তু মাটির ধরনের সকল বন্তু দিয়েই জায়েয। যে সব বস্তু আগুনে জ্বালালে ছাই হয়ে যায়না নরম হয়ে যায়না, মাটির মতই, যেমন সুরমা, চুন, ইট, পাথর, বাল কংকর মরমর পাথর অথবা আকীকা, ফিরোজা, প্রভৃতি এ সব দিয়ে তায়াম্মুম জায়েয।

২. ঐ সব জিনিস দিয়ে তায়াম্মুম নাজায়েয যা মাটির ধরণের নয়, যা আগুনে দিলে জ্বলে ছাই হয়ে যায় অথবা গলে যায়। যেমন কাঠ, লোহা, সোনা, চাঁদি, তামা, পিতল, কাঁচ, রং, এবং সকল প্রকার ধাতব দ্রব্যাদি, কয়লা, খাদ্য শস্য, কাপড়, কাগজ, নাইলন, প্লাষ্টিক, ছাই এ সব দিয়ে তায়াম্মুম নাজায়েয।

৩. যেসব জিনিস তায়াম্মুম নাজায়েয তার উপর যদি এতোটা ধুলোবালি জমে যায় যে, হাত মারলে উড়ে যায়, অথবা হাত রেখে টানলে দাগ পড়ে, তাহলে তা দিয়ে তায়াম্মুম জায়েয হবে। যেমন কাপড়ের থানের উপর ধূলা পড়েছে চেয়ার টেবিলে ধূলা পড়েছে, অথবা কোন মানুষের গায়ে ধুলা পড়েছে।

৪. যেসব জিনিস দিয়ে তায়াম্মুম জায়েয, যেমন মাটি, ইট, পাথর, মাটির পাত্র প্রভৃতি, এসব যদি একেবারে ধোয়া হয় তার উপর কোনরূপ ধূলাবালি না থাকে, তথাপি তা দিয়ে তায়াম্মুম জায়েয হবে।

যেসব জিনিসে তায়াম্মুম নষ্ট হয়

১. যেসব জিনিসে অযু নষ্ট হয় ঐসব দিয়ে তায়াম্মুম নষ্ট হবে। যেসব কারণে গোসল ওয়াজেব হয়, সে করণে অযুর বদলে তায়াম্মুম এবং গোসলের বদলে তায়াম্মুম উভয়ই নষ্ট হয়ে যায়।

২. অযু ও গোসল উভয়ের জন্যে একই তায়াম্মুম করলে যদি অযু নষ্ট হয় তাহলে অযুর তায়াম্মুম নষ্ট হবে কিন্তু গোসলের তায়াম্মুম নষ্ট হবে না। তবে গোসল ওয়াজেব হয় এমন কোন কারণ ঘটলে গোসলের তায়াম্মুমও নষ্ট হবে।

৩. যদি নিছক পানি না পাওয়ার কারনে তায়াম্মুম করা হয়ে থাকে তাহলে পানি পাওয়ার সাথে সাথে তায়াম্মুম নষ্ট হবে।

৪. কোন ওযর অথবা রোগের কারণে যদি তায়াম্মুম করা হয়ে থাকে তারপর ওযর অথবা রোগ রইলো না, তাখন তায়াম্মুম নষ্ট হবে। যেমন কেউ ভয়ানক ঠাণ্ডার জন্যে অযু না করে তায়াম্মুম করলো, তারপর গরম পানির ব্যবস্থা হলো, তখনই তায়াম্মুম নষ্ট হয়ে যাবে।

৫. পানির নিকটে কোন হিংস্র জন্তু, সাপ অথবা শত্রু থাকার কারণে অযুর বদলে তায়াম্মুম করা হয়েছে। এখন যেই মাত্র এ আশংকা দূরীভূত হবে, তায়াম্মুম নষ্ট হয়ে যাবে।

৬. কেউ যদি রেল, জাহায অথবা বাসে ভ্রমনকালে পানির অভাবে তায়াম্মুম করে, অতপর পথ অতিক্রম করার সময় পথে নদীনালা, পুকুর, ঝর্ণা প্রভৃতি দেখতে পায়। কিন্তু যেহেতু চলন্ত গাড়ী বা জাহাযে পানির ব্যবহার করার কোনই সুযোগ নেই, সে জন্যে তার তায়াম্মুম নষ্ট হবেনা।

৭. কোন ব্যক্তি কোন একটি ওযরের কারণে তায়াম্মুম করলো, শেষে ওযর শেষ হলো কিন্তু দ্বিতীয় একটি ওযর সৃষ্টি হলো। তথাপি প্রথম ওযর শেষ হওয়ার সাথে সাথে তায়াম্মুম নষ্ট হয়ে গেল। যেমন ধরুন, পানি না পাওয়ার জন্যে কেউ তায়াম্মুম করলো। কিন্তু পরে পানি পাওয়ার সাথে সাথেই সে এমন অসুস্থ হয়ে পড়লো যে পানি ব্যবহার তার পক্ষে সম্ভব নয়। তথাপি তার প্রথম তায়াম্মুম শেষ হয়ে যাবে যা পানি না পাওয়ার করণে হয়েছিল।

৮. কেউ অযুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করেছিল। তারপর অযু করার পরিমাণ পানি পেয়ে গেল। তখন তার তায়াম্মুম চলে গেল। কেউ যদি গোসলের পরিবর্তে অর্থাৎ হাদাসে আকবার থেকে পাক হওয়ার জন্যে তায়াম্মুম করলো তারপর এতটুকু পানি পেলো যে তার দ্বারা শুধু অযু হতে পারে কিন্তু গোসল হবেনা। তাহলে গোসলের তায়াম্মুম নষ্ট হবেনা।

তায়াম্মুমের বিভিন্ন মাসয়ালা

১. কেউ পানির অভাবে তায়াম্মুম করলো এবং নামায পড়লো। নামায শেষে পানি পেয়ে গেল। এ পানি ওয়াক্তের মধ্যে পেয়ে গেলেও নামায দ্বিতীয় বার পড়তে হবেনা।

২. পানির অভাবে অথবা কোন রোগ বা অক্ষমতার কারণে যখন মানুষ তায়াম্মুমের প্রয়োজন বোধ করে, নিশ্চিত মনে তায়াম্মুম করে দ্বীনি ফারায়েয আদায় করবে। এ ধরনের কোন প্ররোচনা যেন তাকে পেরেশান না করে যে, শুধু পানির দ্বারাইতো পাক হওয়া যায়, তায়াম্মুমের দ্বারা কি হবে। পাক নাপাকের ব্যাপারে পানি বা মাটির উপর নির্ভর করেনা, আল্লাহর হুকুমের উপর নির্ভর করে। আর আল্লাহর শরীয়ত যখন মাটি দ্বারা পাক হয়ে নামাযের অনুমতি দিয়েছে, তখন বুঝতে হবে যে, তায়াম্মুমের দ্বারাও তেমন তাহারাত হাসিল করা যায় যেমন অযু গোসলের দ্বারাও করা যায়।

৩. কেউ যদি মাঠে ময়দানে পানির তালাশ করে তায়াম্মুম করে নামায পড়লো। তারপর জানা গেল যে, নিকটেই পানি ছিল। তথাপি তায়াম্মুম এবং নামায উভয়ই দুরস্ত হবে। অযু করে নামায দুহরাবার দরকার নেই।

৪. সফরে যদি অন্য কারো নিকটে পানি থাকে এবং মনে হয় যে, চাইলে পাওয়া যাবে, তাহলে চেয়ে নিয়ে অযুই করা উচিত। আর যদি মনে হয় যে, চাইলে পাওয়া যাবেনা, তাহলে তায়াম্মুম করাই ঠিক হবে।

৫. অযু এবং গোসল উভয়ের পরিবর্তে তায়াম্মুম দুরস্ত আছে। অর্থাৎ হাদাসে আসগার এবং এবং হাদাসে আকবার উভয় থেকে পাক হওয়ার জন্যে তায়াম্মুম করা দুরস্ত আছে এবং তায়াম্মুমের পদ্ধতি ঐ যা উপরে বয়ান করা হয়েছে। দুইয়ের জন্যে আলাদা আলাদা তায়াম্মুমেরও দরকার নেই। একই তায়াম্মুম উভয়ের জন্যে যথেষ্ট। যেমন, এক ব্যক্তির উপর গোসল ফরয হয়েছে। সে তায়াম্মুম করলো। এখন এ তায়াম্মুমে সে নামাযও পড়তে পারবে। অযুর জন্যে আলাদা তায়াম্মুমের দরকার নেই।

৬. তায়াম্মুমে এ বাধ্যবাধকতা নেই যে, এক তায়াম্মুমে একই ওয়াক্তের নামায পড়তে হবে। বরঞ্চ যতোক্ষণ তা নষ্ট না হয়, ততোক্ষণ কয়েক ওয়াক্তের নামায পড়তে পারবে। এভাবে ফরয নামাযের জন্যে যে তায়াম্মুম করা হবে তা দিয়ে ফরয, সুন্নাত, নফল, জানাযা, সিজদায়ে তেলাওয়াত। কিন্তু শুধু কুরআন পাক স্পর্শ করার জন্যে, মসজিদে প্রবেশ করার জন্যে, কুরআন তেলাওয়াতের জন্যে অথবা কবরস্থানে যাওয়ার জন্যে যে তায়াম্মুম করা হয় তার দ্বারা নামায প্রভৃতি পড়া দুরস্ত হবেনা।

৭. পানি আছে কিন্তু অযু বা গোসল করতে গেলে নামাযে জানাযা, ঈদের নামায, কুসুফ ও খসুফের নামায প্রভৃতি পাওয়া যাবেনা তাহলে এ অবস্থায় তায়াম্মুম করে নামাযে শরীক হওয়া জায়েয। কারণ অন্য সময়ে এ সব নামাযের কাযা হয়না।

৮. কেউ যদি অক্ষম হয় এবং নিজ হাতে তায়াম্মুম করতে না পারে তাহলে অন্য কেউ তাকে মাসনূন তরীকায় তায়াম্মুম করিয়ে দেবে। অর্থাৎ তার হাত মাটিতে মেরে প্রথমে চেহেরা পরে হাত ঠিকমতো মুছে দেবে।

৯. কারো নিকট দুটি পাত্রে পানি আছে, একটিতে পাক পানি অন্যটিতে নাপাক পানি। এখন তার জানা নাই কোনটিতে পাক আর কোনটিতে নাপাক পানি। এ অবস্থায় তায়াম্মুম করা উচিত।

১০. মাটির একটা ঢিলে একই জন কয়েকবার তায়াম্মুম করতে পারে। ঐ একটি ঢিলে কয়েক জনের তায়াম্মুমও জায়েয। যে পটিতে তায়াম্মুম করা হয় তার হুকুম মায়ে মুস্তা‘মালের (ব্যবহৃত পানির) মতো নয়।


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি