প্রকাশকের কথা
দীর্ঘদিন থেকে ইলমে ফেকাহের উপর এমন একটি গ্রন্থের প্রয়োজন গভীরভাবে অনুভূত হচ্ছিল যা হবে সংক্ষিপ্ত অথচ প্রত্যেক মুসলিমের জীবনের সর্ব দিকের প্রয়োজন মেটাবে। আল্লাহর শোকর, মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ ইসলাহী কর্তৃক উর্দূ ভাষায় রচিত “আসান ফেকাহ“ আমাদের সে প্রয়োজন পূর্ণ করেছে। দু‘খণ্ডে রচিত এ গ্রন্থ বাংলা ভাষায় প্রকাশ করতে পেরে আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি।

বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও সাহিত্যিক জনাব আব্বাস আলী খান কর্তৃক ভাষান্তর হওয়ায় বইটির অনুবাদ যথার্থ হয়েছে বলে আমরা মনে করি। এ খণ্ডে ‘আকায়েদ‘, তাহারাত ও সালাত নামে তিনটি অধ্যায় রয়েছে। ২য় খণ্ডে রয়েছে, যাকাত, সাওম ও হজ্জের আহকাম।

এখানে উল্লেখযোগ্য যে, বর্তমান মুসলিম বিশ্বে ইলমে ফেকাহের চারটি মত প্রচলিত রয়েছে, তা হলো হানাফী, মালেকী, শাফেয়ী, ও হাম্বলী। এ ছাড়াও ভিন্ন একটি মতেরও অনুসারী রয়েছে যাঁরা উপরোক্ত চার মতের কারো অনুসরণ করেন না। তাঁরা ‘সালাফী‘ বা আহলে হাদীস‘ নামে পরিচিত। উপরোক্ত সব মতই সঠিক। সব মতের ভিত্তিই কুরআন ও হাদীসের উপর প্রতিষ্ঠিত। সকলেরই প্রচেষ্টা ছিল কুরআন ও হাদীসের সার্বিক অনুসরণ। উপরোল্লেখিত মতপার্থক্যের কারণে একে অন্যের উপর দোষারোপ করা একে অন্যকে দ্বীন থেকে খারেজ মনে করে মুসলিম উম্মার ঐক্যে ফাটল সৃষ্টির প্রচেষ্টা কোন মুখলেস হকপন্থীর কাজ হতে পারে না।

উপমহাদেশে সব মতের অনুসারীই রয়েছে। কিন্তু হানাফী মতের অনুসারীদের সংখ্যাই অধিক বিধায় মতপার্থক্য এড়িয়ে শুধুমাত্র হানাফী মতের উপর ভিত্তি করেই এ গ্রন্থ প্রণীত হয়েছে। যাতে করে সাধারণ মুসলমান দ্ধিধাহীন চিত্তে ও পূর্ণ নিশ্চিন্ততার সহিত নিজস্ব মাযহাবের অনুসরণ করতে পারে। তবে স্থান বিশেষে কোথাও কোথাও ফেকহী মাসলাকের অভিমতও টিকায় সন্নিবেশিত করা হয়েছে।

বিভিন্ন যুগে ওলামায়ে কেরাম কোন কোন মাসয়ালার ব্যাপারে ব্যাপক গবেষণার পর বিভিন্ন মতের সুপারিশ করেছেন, এসব মতের যেটিকে সঠিক মনে করা হয়েছে তাও টিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে করে যে চায় প্রশস্ত অন্তকরণে তার উপরও আমল করতে পারে। এ ছাড়া মাসয়ালা মাসায়েলের সাথে সাথে ইবাদাত ও আমলের ফযীলত ও গুরুত্ব হাদীসের আলোকে বর্ণিত হয়েছে যাতে ইবাদাতের প্রতি অন্তরে জযবা পয়দা হয়।

আমাদের সাফল্য পাঠকদেরই বিচার্য। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তার দ্বীনের পূর্ণ অনুসরণের তৌফিক দিন। আমিন। প্রকাশক

পরিভাষা
ফেকাহর কেতাবগুলোতে কিছু এমন পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে যেগুলোর কিছু নির্দিষ্ট এবং বিশেষ অর্থ রয়েছে। ফেকাহর আহকাম ও মাসায়েল বুঝতে হলে এগুলোর সঠিক অর্থও জেনে রাখা দরকার।

এ গ্রন্থেও স্থানে প্রয়োজনমত এসব পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। প্রত্যেকবার তা ব্যাখ্যা করার পরিবর্তে গ্রন্থের প্রথমেই তার ব্যাখ্যাসহ তালিকা সন্নিবেশিত করা যুক্তিসঙ্গত মনে করা হয়েছে। বাংলা ভাষার আক্ষরিক ক্রম অনুসারে ও পরিভাষাগুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং প্রয়োজনবোধ করলে তা দেখে নেয়া যেতে পারে। সকল পরিভাষাগুলো একত্রে মনে করে নেয়াও যেতে পারে।

১. আদা

যে এবাদত তার নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন করা হয তাকে আদা বলে। যেমন ফজরের নামায সুবহে সাদেকের পর থেকে বেলা উঠার আগে পর্যন্ত পড়া এবং রমযানের রোযা রমযান মাসেই রাখাকে বলে আদা।

২. আওসাতে মুফাসসাল

সূরা الطارق থেকে البينة পর্যন্ত সূরাগুলোকে ‘আওসাতে মুফাসসাল বলে। আসর এবং এশার নামাযে এগুলো পড়া মসনূন।

৩. আইয়ামে তাশরীক

যুলহজ্জ মাসের ১১, ১২, ১৩ তারিখগুলোকে আইয়ামে তাশরীক বলে। ইয়াওমে আরফা (৯ই যুলহজ্জ), ইয়াওমে নহর (১০ই যুলহজ্জ) এবং আইয়ামে তাশরীক এ পাঁচ দিনর প্রত্যেক ফরয নামাযের পর যে তাকবীর পড়া হয় তাকে তাকবীরে তাশরীক বলে।

৪. আকীদাহ

অর্থাৎ এমন এক সত্য যার উপর মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে, যেমন এ সত্য যে আল্লাহ এক এবং তাঁর সত্তা, গুণাবলী, হুকুম ও এখতিয়ারে তাঁর সাথে কেউ শরীক নেই। এ হলো মুসলমানের আকীদাহ।

৫. আমলে কালীল

আমলে কালীল বলতে এমন কাজ বুঝায় যা নামাযী বেশী করে না। কোন প্রয়োজনে আমলে কালীল হলে তাতে নামায নষ্টও হয় না এবং মাকরুহও হয় না।

৬. আমলে কাসীর

এমন কাজ যা নামাযী বেশী করে এবঙ কেউ দেখলে মনে করে যে, লোকটি নামায পড়ছে না। যেমন কেউ দু’হাতে শরীর চুলকাতে লেগে অথবা মেয়েলোক নামাযে মাথার চুল বাঁধতে লাগলো। এগুলোকে আমলে কাসীর বলে এবং এতে নামায নষ্ট হয়েযায়।

৭. আওরত

শরীরের ঐসব অংশকে আওরত বলে যা আবৃত রাখা ফরয। পুরুষের জন্যে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত আবৃত রাখা ফরয। হাঁটু ঢেকে রাখাও ফরয। নারীদের জন্যে মুখ, হাতের তালু এবং পায়ের তালু ব্যতীত সমস্ত শরীর আবৃত রাখা ফরয।

৮. ইসলামী শায়ায়ের

ইসলামী শায়ায়ের বলতে ঐসব দ্বীনী এবাদত এবং আমল বুঝায় যা দ্বীনের মহত্ব ও মর্যাদা প্রকাশের নিদর্শন এবং যা দ্বীনের জন্যে আকর্ষণ, ভালোবাসা ও তার মহত্ব এবং গুরুত্বের অনুভূতি সৃষ্টি করে।

৯. ইসালে সওয়াব

নিজের নেক আমল এবং পার্থিব ও দৈহিক এবাদতের সওয়াব কোন মৃত ব্যক্তিকে পৌছানো অর্থাৎ আল্লাহর কাছে এ দোয়া করা, আমার এ এবাদত অথবা নেক আমলের সওয়াব অমুক ব্যক্তির রূহে পৌছিয়ে দিন, একে বলে ইসালে সওয়াব।

১০. ইয়ায়েসা

যে বৃদ্ধার হায়েয বন্ধ হয়, তাকে ইয়ায়েসা বলে।

১১. এযনে আম

এ হচ্ছে জুমার নামায ওয়াজেব হওয়ার শর্তাবলীর মধ্যে একটি। তার অর্থ হলো যেখানে জুমার নামায পড়া হয় সেখানে সকল শ্রেণীর লোকরে শরীক হওয়ার অবাধ অনুমতি থাকবে এবং কারো জন্যে কোন প্রকারের বাধা নিষেধ থাকবে না।

১২. একামাত

জামায়াতে দাঁড়াবার পূর্বে এক ব্যক্তি ঐ কথাগুলোর পুনরাবৃত্তি করা যা আযানে বলা হয়েছে এবং অতিরিক্ত قد قامت الصلوة ও দু’বার বলা তাকে একামাত বলে। সাধারণত একে তাকবীরও বলা হয়।

১৩. এক্তেদা

ইমামের পেছনে জামায়াতে নামায পড়াকে ‘এক্তেদা বলে। এক্তেদাকারীকে মুক্তাদী বলে। যে ইমামের এক্তেদা করা হয় তাকে মুক্তাদা বলা হয়।

১৪. এস্তেকবালে কেবলা

নামায পড়ার সময় কেবলার দিকে মুখ করাকে এস্তেকবালে কেবলা বলে। কেবলার দিকে মুখ করার অর্থ মুখ এবং বুক কেবলা মুখী করা। এ হলো নামাযের শর্তাবলীর মধ্যে একটি এবং এ শর্ত পূর্ণ না করলে নামায সহীহ হয় না।

১৫. এস্তেখারা

এস্তেখারা অর্থ হলো মঙ্গল কামনা করা। পরিভাষা হিসাবে এস্তেখারা অথবা ইস্তেখারার নামায বলতে ঐ নফল নামায বুঝায় যা নবী (সা) মুসলমানদেরকে এ উদ্দেশ্যে শিক্ষা দিয়েছেন যে, যদি কখনো কোন জায়েয কাজ করতে গিয়ে তার ভালো দিকটা কি তা সুস্পষ্ট হয় না এবং ভালো মন্দ কোন দিক সম্পর্কেই নিশ্চিন্ত হওয়া যায় না, তখন দু’রাকয়াত নফল নামায পড়ে এস্তেখারার মসনূন দোয়া পড়বে আশা করা যায় যে, আল্লাহ এস্তেখারা নামাযের বরকতে কোন একটি দিক সম্পর্কে নিশ্চিন্ততা অথবা মনের প্রবণতা সৃষ্টি করে দেবেন।

১৬. এস্তেঞ্জা

মানবীয় প্রয়োজন তথা পেশাব পায়খানার পর শরীরের অগ্রপশ্চাৎ অংশ পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করাকে বলা হয় এস্তেঞ্জা। এ এস্তেঞ্জা মাটি অথবা পানি দ্বারা হতে পারে।

১৭. এস্তেহাযা

হায়েয ও নেফাস ছাড়া মেয়েদের প্রশ্রাবদ্বার দিয়ে যে রক্ত আসে তাকে এস্তেহাযা বলে।

১৮. এক মিসাল

বেলা গড়ার সময় প্রত্যেক বস্তুর যে আসল ছায়া হয় তা বাদে প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমান হলে তাকে এক মিসাল বলে।

১৯. এয়াদাত

এয়াদাতের অর্থ হলো রোগীর নিকটে গিয়ে তার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা। এ কাজ মুস্তাহাব।

২০. ওয়াজেব

ওয়াজেব আদায় করা ফরযের মতোই অনিবার্য। যে ব্যক্তি একে তুচ্ছ ও গুরুত্বহীন মনে করে এবং বিনা কারণে ত্যাগ করে সে ফাসেক এবং শাস্তির যোগ্য হবে। এটা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরী। অবশ্যি ওয়াজেব অস্বীকারকারীকে কাফের বলা যাবে না।

২১. ওয়াদী

বীর্যপাত এবং তার পূর্ব মুহূর্তে যে তরল পদার্থ বের হয় তাছাড়া অন্য সময়ে যে গাঢ় পদার্থ লিংগ দিয়ে নির্গত হয় এবং বেশীর ভাগ প্রশ্রাবের পর নির্গত হয় তাকে ওয়াদী বলে।

২২. ওয়াতনে আসলী

এমন স্থানকে ওয়াতনে আসলী বলে যেখানে মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করে। যদি কেউ সে স্থানে পরিত্যাগ করে অন্য কোথাও স্থায়ীভাবে বসবাসের ইচ্ছা করে তাহলে সে স্থান ওয়াতনে আসলী হয়ে যাবে। প্রথম স্থান ওয়াতনে আসলী আর থাকবে না।

২৩. কেরায়াত

নামাযে কুরআন পাক তেলাওয়াত করাকে কেরায়াত বলে। নামাযে একটি বড়ো আয়াত অথবা তিনটি ছোটো আয়াতের পরিমাণ কেরায়াত ফরয। কেরায়াত নামাযের রুকনগুলোর মধ্যে একটি। এছাড়া নামায হয় না।

২৪. কুরবানী

ঈদুল আযহার দিনগুলোতে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে পশু যবেহ করাকে কুরবানী বলে। এ হচ্ছে একথারই অংগীকার যে প্রয়োজন হলে আল্লাহর পথে নিজের রক্ত দিতে বান্দাহ কুণ্ঠিত হবে না।

২৫. কা’দায়ে উলা

চার রাকয়াত বিশিষ্ট নামাযে দ্বিতীয় রাকয়াতের পর আত্তাহিয়্যাতু পড়ার জন্যে বসাকে কাদায়ে উলা বলে।

২৬. কা’দায়ে আখিরা

প্রত্যেক নামাযের শেষ রাকয়াতে আত্তাহিয়্যাত পড়ার জন্যে বসাকে কা’দায়ে আখিরা বলে। দু’রাকায়াত বিশিষ্ট নামাযের দ্বিতীয় রাকয়াতের, তিন রাকয়াত বিশিষ্ট নামাযের তৃতীয় রাকয়াতের এবং চার রাকয়াত বিশিষ্ট নামাযের চতুর্থ রাকায়াতে বৈঠককে কা’দায়ে আখিরা বলা হবে। প্রত্যেক নামাযে কাদায়ে আখিরা ফরয

২৭. কাওমা

রুকু থেকে উঠার পর নিশ্চিত মনে সোজা হয়ে দাঁড়ানোকে বলে কাওমা। এটা নামাযের ওয়াজেবগুলোর একটি।

২৮. কেসারে মুফাসসাল

সূরা الزلزال থেকে সূরা الناس পর্যন্ত সুরাগুলোকে কেসারে মুফাসসাল বলে। মাগরেবের নামাযে এ সূরাগুলো পড়া মসনূন।

২৯. কুনুতে নাযেলা

কুনুতে নাযেলা বলতে ঐ দোয়া বুঝায় যা দুশমনের ধ্বংসকারিতা থেকে বাঁচাতে, তার শক্তি চূর্ন করতে এবং তার ধ্বংসের জন্যে নবী (সা) পড়েছেন। নবীর পর সাহাবীগণও তা পড়ার ব্যবস্থা করেছেন।

৩০. খসূফ

চাঁদে গ্রহণ লাগাকে বলে খসূফ। কুরআনে আছে وخسف القمر অর্থাৎ ”চাঁদে গ্রহণ লাগবে এবং তা আলোহীন হয়ে যাবে।” খসূফের সময় যে দুরাকায়াত নামায পড়া হয় তাকে সালাতুল খসূফ বা খসূফের নামায বলে।

৩১. গায়ের দমবী জানোয়ার

যে সব প্রাণীর মোটেই রক্ত নেই অথবা থাকলেও তা চলাচল করে না, যেমন মশা, মাছি, বোলতা, বিচ্ছু প্রভৃতি তাদেরকে গায়ের বমুবী বলে।

৩২. গোসল

শরীয়ত অনুযায়ী গোটা শরীর ধুয়ে তাকে নাজাসাতে হাকীকি ও হুকমী থেকে পাক করাকে গোসল বলে।

৩৩. ছায়া আসলী

দুপুর বেলা প্রত্যেক বস্তুর যে ছায়া থাকে তাকে ছায়া আসলী বলে।

৩৪. ছায়া এক মিসাল

ছায়া আসলী বাদে প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমান হলে তাকে ছায়া এক মিসাল বলে।

৩৫. ছায়া দু’মিসাল

ছায়া আসলী বাদে প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার দ্বিগুণ হলে তাকে ছায়া দু’মিসাল বলে।

৩৬. দু’ সিজদার সাঝখানে বৈঠককে ফেকাহর পরিভষায় জালসা বলে, নামাযের ওয়াজেবগুলোর মধ্যে এ একটি।

৩৭. জামায়াতে সানী

মসজিদে নিয়মিত জামায়াত হওয়ার পর যারা এ জামায়াতে শরীক হতে পারেনি, তারা যদি পুনরায় জামায়াত করে তাকে জামায়াতে সানী বলা হয়। কোন অবস্থায় এ জামায়াতে সানী জায়েয এবং কোন অবস্থায় মাকরুহ।

৩৮. জমা’বায়নাস সালাতাইন

দু’ওয়াক্তর নামায এক ওয়াক্তে একত্রে পড়াকে জমা বায়নাস সালাতাইন বলে। যেমন যোহর এবং আসরের নামায যোহরের ওয়াক্তে পড়া। হজ্জের সময় আরফাতে ৯ই যুলহজ্জের যোহরের সময়ে যোহর এবং আসরের নামায একত্রে পড়া হয়। তারপর মুযদালেফায় পৌছে এশার ওয়াক্তে মাগরেব এবং এশা একসাথে পড়া হয়। হজ্জে তো জমা বায়নাস সালাতাইন করাই হয়ে থাকে, কিছু লোকের মতে সফরেও তা জায়েয।

৩৯. জময়ে সূরী

এর অর্থ এই যে, এক নামাযকে বিলম্বিত করে এমন সময় পড়া যখন তার সময় শেষ হতে থাকে এবং দ্বিতীয় ওয়াক্তের নামায ওয়াক্ত শুরু হতেই পড়া। এভাবে দৃশ্যত তো এটাই মনে হবে যে, দু’নামায একই সাথে পড়া হলেও প্রকৃতপক্ষে উভয় নামায আপন আপন ওয়াক্তে পড়া হলো। হানাফীদের মতে হজ্জের সময় ব্যতীত অন্যান্য সফরে শুধু জময়ে সূরী জায়েয জময়ে হাকীকি জায়েয নয়।

৪০. জময়ে হাকীকি

এর অর্থ হলো কোন এক নামাযের ওয়াক্তে দু’ওয়াক্তের নামায এক সাথে পড়া। যেমন যোহরের ওয়াক্তে যোহর এবং আসর এক সাথে পড়া।

৪১. জময়ে তাকদীম

এর অর্থ হচ্ছে দ্বিতীয় নামাযকে ওয়াক্তের পূর্বেই প্রথম নামাযের ওয়াক্তে এক সাথে পড়া। যেমন আসরের নামায তার সময় হওয়ার পূর্বে যোহরের ওয়াক্তে যোহরের নামাযের সাথে পড়া। যেমন হজ্জের সময় আরাফাতে পড়া হয়।

৪২. জময়ে তা’খীর

এর অর্থ হলো, এক ওয়াক্তের নামায বিলম্বিত করে দ্বিতীয় দ্বিতীয় নামাযের ওয়াক্তে দ্বিতীয় নামাযের সাথে পড়া। যেমন মাগরেবের নামায মাগরেবের ওয়াক্তে না পড়ে তা বিলম্বিত করে এশার ওয়াক্তে এশার নামাযের সাথে পড়া। যেমন মুযদালফায় পড়া হয়।

৪৩. জানাবাত

জানাবাতের আভিধানিক অর্থ দূরে থাকা। ফেকাহর পরিভাষায় তাকে নাপাকির ঐ অবস্থা বুঝায় যাতে পুরুষ বা নরীর জন্যে গোসল ফরয হয়। আর এ গোসলের প্রয়োজন হয় যৌনকার্য সম্পন্ন করার পর অথবা অন্য উপায়ে বীর্যপাত করলে বা হলে। এমন অবস্থায় যেহেতু মানুষকে তাহারাত এবং নামায থেকে দূরে থাকতে হয়, সে জন্যে তাকে জানাবাত বলা হয়।

৪৪. জেহরী নামায

অর্থাৎ এমন নামায যাতে ইমামের জন্যে উচ্চ শব্দে কেরায়াত করা ওয়াজেব হয়। যেমন মাগরেব এবং এশার প্রথম দু রাকায়াত, ফজর, জুমা এবং দু ঈদের নামায জেহরী। এ নামাযগুলোতে উচ্চ শব্দে কেরায়াত করা ঈমামের জন্যে ওয়াজেব।

৪৫. তাহমীদ

রুকু থেকে উঠার পর কাওমার অবস্থায় ربنا لك الحمد পড়া।

৪৬. তাহিয়্যাতুল মসজিদ

তাহিয়্যাতুল মসজিদ এমন নামাযকে বলে যা মসজিদে প্রবেশকারীদের জন্যে পড়া মসনূন। তাহিয়্যাতুল মসজিদ দু’রাকায়াতও পড়া যায় এবং তার বেশীও মসনূন। যদি কেউ মসজিদে প্রবেশ করার পর কোন ফরয ওয়াজেব অথবা সুন্নাত নামায পড়ে তাহলে তা তাহিয়্যাতুল মসজিদের স্থলাভিষিক্ত হবে।

৪৭. তাসবীহ

নামাযে সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম অথবা সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা পড়া।

৪৮. তাসমী

রুকু থেকে উঠার সময় سمع الله لمن حمده পড়া।

৪৯. তাসমিয়া

بسم الله الرحمن الرحيم পড়া।

৫০. তাশাহুদ

বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়া। তার শেষে যেহেতু তাওহীদ ও রেসালাতের সাক্ষ্য দেয়া হয় সে জন্যে একে তাশাহুদ বলে।

৫১. তায়াউয

اعوذ بالله من الشيطان الرجيم পড়া।

৫২. তা’দীলে আরকান

রুকু সিজদা প্রভৃতি নিশ্চিত মনে করা এবং কাওমা’ জালসা’ প্রভৃতি সুষ্ঠভাবে পালন করা।

৫৩. তাযিয়াত

মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনের প্রতি ধৈর্যধারনের উপদেশ দেয়া, শোক প্রকাশ করা এবং মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করাকে তা’যিয়াত বলে।

৫৪. তাকবীরে তাহরীমা

নামায শুরু করার সময় আল্লাহ আকবার বলা। একে তাকবীরে তাহরীমা’ এ জন্যে বলা হয় যে, তারপর নামায শুরু হয় এবং নাময অবস্থায় কথাবার্তা, খানাপিনা প্রভৃতি সবই হারাম হয়ে যায়।

৫৫. তাকবীর

আল্লাহু আকবার বলা। সাধারণত একামাতকেও তাকবীর বলা হয়।

৫৬. তাকবীরে তাশরীক

যুলহজ্জ মাসের ৯ তারিখের ফজরের পর থেকে ১৩ই যুলহজ্জের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয নামাযের পর একবার উচ্চস্বরে যে তাকবীর বলা হয় তাকে তাকবীরে তাশরীক বলে। তা হলো-

الله اكبر الله اكبر لااله الاالله والله اكبر الله اكبر ولله الحمد-

৫৭. তাহলীল

لااله الاالله পড়াকে তাহলীল বলে।

৫৮. তাহাজ্জুদ

তাহাজ্জুদের অর্থ ঘুম থেকে উঠা, রাতে কিছু সময় ঘুমাবার পর উঠে যে নামায পড়া হয় তাকে তাহাজ্জুদ নামায বলে। তাহাজ্জুদের মসনূন তরীকা এই যে, মানুষ অর্ধেক রাত পর ঘুম থেকে উঠে নামায পড়বে।

৫৯. তায়াম্মুম

অভিধানে তায়াম্মুমের অর্থ হলো সংকল্প ও ইচ্ছা করা এবং ফেকাহর পরিভাষায় তায়াম্মুমের অর্থ হলো পানির অভাবে পাক মাটি প্রভৃতি দিয়ে নাজাসাতে হুকমী থেকে তাহারাত লাভ করা। অযুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করা যায় এবং গোসলের পরিবর্তেও।

৬০. তায়ামন

প্রত্যেক কাজ ডান দিক থেকে শুরু করা। যেমন ডান হাত থেকে অযু শুরু করা, ডান পায়ে প্রথমে জুতা পরা ইত্যাদি।

৬১. তেলাওয়ালে মুফাসসাল

সুরায়ে الحجرات থেকে সুরায়ে البروج পর্যন্ত সূরাগুলোকে তোওয়ালে মুফাসসাল বলে। ফজর এবং যোহর নামাযে এগুলো পড়া মসনূন।

৬২. তাহারাত

তাহারাত নাজাসাতের বিপরীত। তাহারাত অর্থ শরীরের নাজাসাতে হাকীকি ও হুকমী থেকে শরীয়ত অনুযায়ী পাক হওয়া।

৬৩. তোহর

দু’হায়েযের মধ্যবর্তী পাক অবস্থাকে তোহর বলে।

৬৪. দাবাগাত

কাঁচা চামড়া পাকা করে তার আর্দ্রতা ও দুর্গন্ধ দুর করাকে দাবাগাত করা বলে। দাবাগাতের দ্বারা প্রত্যেক হালাল ও হারাম পশুর চামড়া পাক হয়। কিন্তু শুকরের চামড়া কিছুতেই পাক হয় না।

৬৫. দামুবী প্রানী

যার মধ্যে রক্ত চলাচল করে।

৬৬. দিরহাম

দিরহামের ওজন তিন মাসা এক রতি। প্রায় এক টাকার সমান।

৬৭. দু’মিসাল

বেলা পড়ার সময় প্রত্যেক বস্তুর যে আসল ছায়া হয় তা বাদে প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার দ্বিগুণ হলে তাকে দু’মিসাল বলে।

৬৮. নাজাসাতে হাকীকি

নাজাসাতে হাকীকি বলতে ঐ সব মল বুঝায় যার থেকে মানুষের স্বাভাবিক ঘৃণার উদ্রেক হয়, তার থেকে নিজের শরীর, কাপড়-চোপর ও অন্যান্য জিনিসপত্র বাঁচিয়ে রাখা এবং শরীয়ত তার থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দেয়।

৬৯. নাজাসাতে হুকমী

নাপাক হওয়ার এমন অবস্থা যা দেখা যায় না, বরং শরীয়তের মাধ্যমে জানা যায় তাকে নাজাসাতে হুকমী বলে, যেমন অযু না থাকা গোসলের প্রয়োজন হওয়া। একে হাদাসও বলে।

৭০. নাজাসাতে খফীফা

ঐ সব অনুভূত মলিনতাকে নাজাসাতে খফীফা বলে, যার মলিনতা কিছুটা লঘু এবং শরীয়তের কোন কোন দলীল প্রমান অনুযায়ী তা পাক হওয়ারও সন্দেহ হয়। এ জন্যে শরীয়তে তার হুকুমও কিছুটা লঘু। যেমন হারাম পাখীর মল।

৭১. নাজাসাতে গালীযা

যার মল হওয়া সম্পর্কে কোন সন্দেহ থাকে না তাকে নাজাসাতে গালীযা বলে। মানুষও স্বাভাবিকভাবে তাকে ঘৃণা করে এবং শরীয়তেও তার নাপাক হওয়ার প্রমাণ আছে। যেমন, শুকর এবং তার প্রত্যেকটি বস্তু, মানুষের পেশাব পায়খানা প্রভৃতি।

৭২. নফল

এমন কাজ যা নবী (সা) মাঝে মধ্যে করেছেন এবং অধিকাংশ সময় করেননি তাকে নফল বলে। নফলকে মন্দুব, মুস্তাহাব এবং তাতাবোও বলে।

৭৩. নেফাস

বাচ্চা পয়দা হওয়ার পর নারীর বিশেষ অংগ থেকে যে রক্ত বের হয় তাকে নেফাস বলে। এ রক্ত বেরুবার মুদ্দত বেশী পক্ষে ৪০ দিন এবং কমের কোন নির্দিষ্ট মুদ্দত নেই।

৭৪. নামাযে চাশত

সূর্য ভালোভাবে উঠার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত যে নফল নামায পড়া হয় তাকে চাশতের নামায বলে। এ নামায মুস্তাহাব। এ চার রাকায়াতও পড়া যায় অথবা তার বেশী

৭৫. নামাযে কসর

নামাযে কসর বলতে সফর কালীন সংক্ষিপ্ত নামায বুঝায়। শরীয়ত মুসাফিরকে এতখানি সুবিধা দান করেছে যে, সে যোহর, আসর এবং এশার নামায চার রাকয়াতের পরিবর্তে দু’রাকয়াত করে পড়তে পারবে। ফজর ও মাগরেবের কসর নেই।

৭৬. এমন কাজ যা করা প্রত্যেক মুসলমানের অপরিহার্য এবং তা অস্বীকারকারী কাফের। যে ব্যক্তি বিনা ওযরে ফরয ত্যাগ করবে সে ফাসেক ও শাস্তিরযোগ্য। ফরয দু’প্রকার। ফরযে আইন, ফরযে কেফায়া।

৭৭. ফরযে আইন

যা করা প্রত্যেক মুসলমানের একেবারে অপরিহার্য, না করলে কঠিন গুনাহগার এবং শাস্তির যোগ্য। যেমন, নামায, রোযা প্রভৃতি।

৭৮. ফরযে কেফায়া

যা ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকের জন্যে অপরিহার্য নয়, সামগ্রিকভাবে সকল মুসলমানের ফরয, যাতে করে কিছু লোক আদায় করলে সকলের জন্যে হয়ে যায়, আর কেউই আদায় না করলে সকলে গুনাহগার হবে। যেমন জানাযার নামায, মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন করা ইত্যাদি।

৭৯. ফেকহ

ফেকহ শব্দের অর্থ বুদ্ধি বিবেচনা, ধী’শক্তি, উপলব্ধি, পরিভাষায় ফেকাহর অর্থ শরয়ী আহকাম। যা কুরআন ও সুন্নায় গভীর জ্ঞান ও পারদর্শিতা সম্পন্ন আলেমগণ কুরআন সুন্নাহ থেকে যুক্তি প্রমাণসহ বের করেছেন।

৮০. ফিদিয়া

ফিদিয়ার অর্থ হলো এমন সদকা যা কাযা করা নামাযের পরিবর্তে মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে আদায় করা হয়। এক ওয়াক্তের নামাযের ফিদিয়া সোয়া সের গম অথবা আড়াই সের যব। তার মূল্যেও দেয়া যায়।

৮১. মায়ে জারী

প্রবহমান পানিকে ‘মায়ে জারী’ বলে। যেমন- নদী, সমদ্র, পাহাড়ী ঝর্ণা, নালা প্রভৃতির পানি। ‘পায়ে জারী’পাক। তার দ্বারা তাহারাত লাভ করা যায়। তবে যদি তাতে এত পরিমাণ মলমিশ্রিত হয় যে, তার রং, স্বাদ ও গন্ধ পরিবর্তন হয়ে যায় তাহলে তার দ্বারা তাহারাত হবে না।

৮২. মায়ে রাকেদ কালীল

রাকেদ অর্থ স্থির। মায়ে রাকেদ কালীল’ অর্থ এমন স্থির বা আবদ্ধ পানি যা পরিমাণে এতো অল্প যে তার একধারে কোন মল পড়লে অন্য ধার পর্যন্ত সমস্ত পানির রং গন্ধ এবং স্বাদ বদলে যায়।

৮৩. মায়ে রাকেদ কাসীর

এমন আবদ্ধ পানি যা পরিমাণে এতো বেশী যে তার একধারে কোন মল পড়লে অন্যধারে কোন পরিবর্তন আসে না। অর্থাৎ পানির রং, গন্ধ এবং স্বাদ বদলায় না।

৮৪. মায়ে তাহের মুতাহহের

যে পানি স্বয়ং পাক এবং অন্য জিনিসও পাক করতে পারে এবং যার দ্বারা অযু গোসল দুরস্ত হয় তাকে মায়ে তাহের মুতাহহের বলে।

৮৫. মায়ে মুস্তা’মাল

এমন পানি যার দ্বারা কেউ অযু করেছে, হাদাসে আসগার থেকে পাক হওয়ার জন্যে অথবা সওয়াবের নিয়তে করেছে, অথবা যার গোসল ফরয এমন ব্যক্তি গোসল করেছে তবে তার শরীরে কোন নাজাসাত লেগে ছিল না। এমন পানি স্বয়ং পাক কিন্তু তার দ্বারা অযু গোসল দুরস্ত হবে না।

৮৬. মায়ে মশকুক

মায়ে মশকুক (সন্দেহযুক্ত) এমন পানি যা পাক কিন্তু তার দ্বারা পাক হওয়া না হওয়া নিয়ে সন্দেহ আছে। যেমন গাধা বা খচ্চরের ঝুটা পানি। এ পানির হুকুম এই যে, তার দ্বারা অযু করে আবার তায়াম্মুমও করতে হবে।

৮৭. মায়ে নাজাস (নাপাক পানি)

এমন পানি যার দ্বারা তাহারাত হবে না এবং তা কাপড় অথবা শরীর লাগবে তাও নাপাক হবে।

৮৮. মুবাহ

প্রত্যেক জায়েয কাজ যা করলে সওয়াব নেই, না করলে গুনাহ নেই।

৮৯. মুবাশেরাত

যৌন সম্ভোগ করাকে মুবাশেরাত বলে।

৯০. মুদরেক

যে ব্যক্তি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইমামের সাথে জামায়াতে শামিল থাকে তাকে মুদরেক বলে।

৯১. মুযী

যৌন কার্যের চরম মুহূর্তে বীর্যপাতের পূর্বে যে শ্বত তরল পদার্থ নির্গত হয় তাকে মুযী বলে।

৯২. মুরতাদ

মুরতাদ এমন ব্যক্তিকে বলে যে, ইসলামের প্রতি ঈমান আনার পর পুনরায় কুফরের দিকে প্রত্যাবর্তন করে।

৯৩. মুসাফির

শরীয়তের পরিভষায় মুসাফির এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, ৩৬ মাইল [কতিপয় হানাফী আলেমদের মতে এ দূরত্ব ৪৮ মাইল।] দূরত্ব পর্যন্ত ভ্রমন করার জন্যে আপন বস্তি থেকে বের হয়। এমন ব্যক্তি সফরে কসর নামায পড়বে।

৯৪. মসবুক

মসবুক এমন মুক্তাদীকে বলা হয়, যে কিছু বিলম্বে জামায়াতে শরীক হয় যখন এক বা দু’রাকায়াত হয়ে গেছে।

৯৫. মুস্তাহাব

মুস্তাহাব এমন আমলকে বলা হয় যা নবী (সা) মাঝে মাঝে করেছেন এবং অধিকাংশ সময় করেননি। এ আমলে অনেক সওয়াব আছে, না করলে গুনাহ নেই।

৯৬. মুসেহ

মুসেহ করার অর্থ হলো ভিজা হাত বুলানো। মাথা মুসেহ করা হোক অথবা মুজার উপর, অব্যবহৃত পানি দিয়েই তা করতে হবে।

৯৭. মুক্তাদী

ইমামের পেছনে নামায পাঠকারীকে মুক্তদী বলে।

৯৮. মুকাব্বের

একামাত এবং তাকবীর দানকারীকে মুকাব্বের বলে। বড়ো জামায়াত হলে যে ব্যক্তি ইমামের তাকবীর পুনরাবৃত্তি করে সকল মুক্তাদী পর্যন্ত সে আওয়াজ পৌছে দেয় তাকেও মুকাব্বের বলে।

৯৯. মাকরুহ তাহরীমি

এমন প্রত্যেক কাজ যার থেকে দূরে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের ওয়াজেব। যে ব্যক্তি সত্যিকার ওযর ব্যতীত তা করে সে কঠিন গুনাহগার হয়ে পড়ে। অবশ্য অস্বীকারকারীকে কাফের বলা যাবে না।

১০০. মাকরুহ তানযীহি

এমন কাজ যা থেকে দূরে থাকলে সওয়ার পাওয়া যাবে, করলে গুনাহগার হবে না।

১০১. মনি

এমন পদার্থ যা বের হলে যৌন বাসনা পরিপূর্ণ হয় এবং উত্তেজনা শিথিল হয়।

১০২. রুকন

রুকন কোন জিনিসের এমন অংশকে বলা হয় যার উপরে তার প্রতিষ্ঠিত থাকা না থাকা নির্ভর করে। রুকনের বহু বচন আরকান। যেমন নামাযের আরকানের অর্থ কেয়াম, কেরায়াত, রুকু, সিজদা, কাওমা এবং কা’দায়ে আখিরা এ সব নামাযের এমন অংশ যার উপর নামাযের অস্তিত্ব নির্ভর করে। ইসলামের আরকান-আকীদাহ, নামায, যাকাত, রোযা ও হজ্জ। এ সবের উপরেই ইসলামের প্রাসাদ প্রতিষ্ঠিত। এসব না হলে এ প্রাসাদ কায়েম থাকতে পারবে না।

১০৩. লাহেক

লাহেক এমন মুক্তাদীকে বলে যে শুরু থেকে জামায়াতে শামিল থাকে কিন্তু তারপর তার এক অথবা একাধিক রাকয়াত নষ্ট হয়।

১০৪. সুতরা

নামাযী যদি এমন স্থানে নামায পড়ে যে, তার সামনে দিয়ে লোক চলাচল করে, তাহলে তার সামনে আড়াল করার জন্যে কোন উচু জিনিস খাড়া করাকে পরিভাষা হিসাবে সুতরা বলে।

১০৫. সতরে আওরত

আওরত বলতে শরীরের ঐ অংশ বুঝায় যা প্রকাশ করা শরীয়তের দিক দিয়ে হারাম। পুরুষের জন্যে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢাকা ফরয, মেয়েদের জন্যে মুখ, হাত এবং পা ছাড়া সমস্ত শরীর আবৃত রাখা ফরয। সতরে আওরতের অর্থ এসব অংশ ঢাকা, যা ফরয।

১০৬. সিজদায়ে সাহু

সহু অর্থ ভুলে যাওয়া। নামাযের মধ্যে ভুলবশত: যে কম বেশী হয় তাতে যে নামাযের অনিষ্ট হয় তা পূরনের জন্যে নামাযের শেষে দুটি সিজদা করা ওয়াজেব হয়েযায়। তাকে সহু সিজদা বলে।

১০৭. সেররী নামায

যে সব নামাযে ইমামের চুপে চুপে কেরায়াত করা ওয়াজেব তাকে বলে সেররী নামায। যেমন যোহর ও আসরের নামায।

১০৮. সুন্নাত

সুন্নাত ঐসব কাজ যা নবী (সা) এবং সাহাবায়ে কেরাম (রা) করেছেন। তা দুপ্রকার-সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, সুন্নাহে গায়ের মুয়াক্কাদাহ।

১০৯. সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ

ঐসব কাজ যা নবী (সা) এবং সাহাবায়ে কেরাম (রা) হামেশা করেছেন এবং ওযর ব্যতীত কখনো ত্যাগ করেননি। অবশ্যি যারা করেনি তাদেরকে সতর্ক করে দেননি। তাবে যে ব্যক্তি বিনা ওযরে তা পরিত্যাগ করে এবং ছেড়ে দেয়ার অভ্যাস করে সে ফাসেক এবং গুনাহগার। নবী (সা) এর শাহাদাত থেকে সে বঞ্চিত হবে। অবশ্যি ঘটনক্রমে কোনটা বাদ গেলে সে অন্য কথা।

১১০. সুন্নাতে গায়ের মুয়াক্কাদাহ

যে কাজ নবী (সা) অথবা সাহাবীগণ করেছেন এবং বিনা ওযরে কখনো আবার ছেড়েও দিয়েছেন। এ কাজ করলে খুব সওয়াব না করলে গুনাহ নেই।

১১১. সাহেবে তরতীব

যে মুমেন বান্দাহ কখনো নামায কাযা হয়নি অথচ এক, দুই অথবা দিন রাতের পাঁচ ওয়াক্ত কাযা হয়েছে, ক্রমাগত হোক কিংবা বিভিন্ন সময়ে হোক অথবা পুর্বে কাযা হয়ে থাকলে তা পড়ে ফেলেছেন এবং তার ঘাড়ে এক দু’কিংবা পাঁচ নামাযের কাযা আছে-এমন ব্যক্তিকে শরীয়তের পরিভাষায় সাহেবে তরতীব বলে।

১১২. সদকায়ে ফেতর

সদকায়ে ফেতর ঐ সদকাকে বলে যা প্রত্যেক সচ্ছল ব্যক্তি ঈদুল ফেতরের নামাযের পূর্বে হকদারকে দিয়ে দেয়। এ দিয়ে দেয়া প্রত্যেক এমন মুসলমানের ওয়াজেব যার এতটা সম্পদ থাকে যা তার মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত। তার উপর যাকাত ওয়াজেব হোক বা না হোক। তারপর এ শর্তের দরকার নেই যে, সে মাল এক বত্সর স্থায়ী হতে হবে। প্রত্যেক নাবালেগের পক্ষ থেকেও দেয়া ওয়াজেব। এমন কি পাগল যদি মালদার হয় তার পক্ষ থেকেও দেয়া ওয়াজেব।


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি