ইসলামী সংগঠনের কর্মীদের পরীক্ষা
ইসলামী সংগঠন কেবল নিষ্ঠাবান নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিরই অবস্থান করুক এটাই আল্লাহ চান। যারা নির্ভেজাল ঈমানের অধিকারী এবং আল্লাহর সন্তোষ অর্জনকে কেন্দ্র করেই যাদের জীবনের সামগ্রিক তৎপরতা পরিচালিত, তারাই ইসলামী সংগঠনের পবিত্র অঙ্গনে বিচরণ করার উপযুক্ত ব্যক্তি। সমাজ অঙ্গনে ইসলাম বহির্ভূত ব্যক্তিদের প্রতিপত্তি ও ধন সম্পদের প্রাচুর্য দেখে যাদের মন-মানসিকতা প্রভাবিত হয় না ইসলামী সংগঠনের পবিত্র অঙ্গন তাদেরই জন্য। ব্যাধিগ্রস্ত কোন ব্যক্তি ইসলামী সংগঠনের চৌহদ্দীতে প্রবেশ করলেও ব্যাধি দুর না হলে কোন না কোন এক সময়ে তাকে সংগঠন চ্যুত হতেই হয়।
ইসলামী সংগঠনের হিফাজাতের জন্য ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তিদের প্রভাব থেকে একে মুক্ত করার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এমন এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা করেছেন যার কার্যকারিতা অতুলনীয়। এই প্রক্রিয়াকে ইসলামী সংগঠনের রক্ষাকবচ বলা যায়।
ইসলামী সংগঠনে যারা এলো তাদের মধ্যে কে ভেজালযুক্ত আর কে ভেজালমুক্ত তা স্পষ্ট করে তোলার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই সংগঠনে চলার পথ সুগম রাখেননি। এই পথ অতি দুর্গম। এই পথে আছে অনেক চড়াই উৎরাই।
যারা ভেজালযুক্ত দুর্গম পথের বাঁকে কাফিলা থেকে ছিটকে পড়ে যারা ভেজালমুক্ত তারা পথের দুর্গমতা উপেক্ষা করে দৃঢ় পদে সামনে এগুতে থাকে।
ইসলামী সংগঠনের কর্মীদেরকে প্রতিকূলতার মধ্যে ফেলে দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পরীক্ষা করেন। এই পরীক্ষায় কেউ ফেল করে। কেউ আবার কৃতকার্য হয়ে উন্নত মানের মুমিনে পরিণত হয়।
আল্লাহর ওপর যারা পরিপূর্ণভাবে তাওয়াক্কুল করতে পারে না প্রতিকূল পরিবেশে তারা বিহ্বল হয়ে পড়ে। এদের সংখ্যাধিক্যের চাপ থেকে আল্লাহ সংগঠকে হিফাযাত করে থাকেন।
তদুপরি যেই ব্যক্তি জীবনভর আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের জন্যই তার সময়, শারীরিক শক্তি, চৈন্তিক যোগ্যতা এবং ধন সম্পদ ব্যয় করে তাকে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত-জন্নাত দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন। যাকে তিনি জান্নাত দেবেন সে যে সত্যিকারভাবেই তা পাবার উপযুক্ত তার প্রমাণ সে রেখে যাক, এটিই আল্লাহর অভিপ্রায়। পরীক্ষার অন্যতম কারণ এটাও।
কে ঈমানের দাবীতে সত্যবাদী আর কে সত্যবাদী নয়, কে জিহাদে আত্মনিয়োগ করতে প্রস্তুত আর কে প্রস্তুত নয় তা তো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর অসীম জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দ্বারা এমনিতেই জানেন। কোন ব্যক্তির মনের আসল অবস্থা জানার জন্য তাঁকে পরীক্ষার রেজাল্টের ওপর নির্ভর করতে হবে ব্যাপারটি মোটেই এমন নয়।
আসলে আশশাহাদাহ বা সাক্ষ্যদানর দায়িত্ব কে পালন করছে আর কে পালন করছে না তা দুনিয়াবাসীর নিকট সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করাই আল্লাহর ইচ্ছা।
আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণকারী যেই কোন ব্যক্তির এটা অবশ্য কর্তব্য যে সে তার কথাবার্তা ও কাজকর্মের মাধ্যমে সাক্ষ্য দেবে যে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়েছে এবং অন্য কারো নির্দেশ পালন ও শাসন কর্তৃত্ব গ্রহণ তার পক্ষে সম্ভব নয়।
যেই ব্যক্তি কেবল মৌখিক সাক্ষ্য দেয় অথচ তার অন্তরে খাঁটি ঈমান থাকে না তার জান্নাত পাওয়ার তো কোন প্রশ্নই ওঠে না। তদুপরি মেকী ঈমান নিয়ে তার ইসলামী সংগঠনে অবস্থানও আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় নয়।
ঝড় এলে যেভাবে গাছের শুকনো পাতা ঝরে পড়ে, চলার পথে সংকট বা বিপদ এসে পড়লে তারাও সেভাবে ঝরে পড়ে। ঝড় তুফানের ঝাপটা সহ্য করে যে পাতাগুলো টিকে থাকে সেগুলো জীবন্ত ও মজবুত। তেমনিভাবে বিপদ সংকটে ঝাপটা সহ্য করে যারা ইসলামী সংগঠনে টিকে থাকে তারা নিষ্ঠাবান মুমিন।
বিপদ-সংকট তাই ইসলামী সংগঠনকে দুর্বল করে না, বরং তার মান উন্নত করে। ইসলামী সংগঠনের মান সংরক্ষণের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলাইমীনই এই বিজ্ঞান সম্মত প্রক্রিয়া প্রবর্তন করেছেন।


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি