ইসলামী সংগঠন কর্মী গঠন
কর্মী গঠন কষ্টসাধ্য, কিন্তু অসাধ্য নয়। ধৈর্য সহকারে চেষ্টা চালাতে থাকলে ইসলামের সঠিক রূপ উপলব্ধিকারী একজন ব্যক্তিকে করমীরূপে গড়ে তোলা যায়। এই ধরনের একজন ব্যক্তি কর্মী বা হওয়ার পেছনে অবশ্যই কোন কর্মী বানাবার জন্য বিচক্ষণতা সহকারে অগ্রসর হবেন।
(১) সহচর্য দান
যাকে কর্মী বানাবার জন্য সিলেক্ট করা হবে সে তো এই সমাজেরই মানুষ। সমাজের বহু নারী ও পুরুষের সাথে তার মেলামেশা। তাদের কথাবার্তা, ধ্যান-ধারণা ও আচরণ দ্বারা সে নিশ্চয় প্রভাবিত। ইসলামের পথের আহবান শুনেই সে এক লাফে চলে আসতে পারে না। সে একজন সামাজিক জীব। তার মন উন্মুক্ত করার জন্য, মনের ভার লাঘব করার জন্য এবং ভাব-বিনিময় করার জন্য ওই লোকগুলো তার প্রয়োজন। ওসব লোকের বেষ্টনী থেকে মুক্ত করতে হলে তাকে সাহচর্য দান করতে হবে। তার আপঞ্জনে পরিণত হতে হবে। তার বন্ধু মহলের বিকল্প একটি মহল তাকে দিতে হবে। এই পর্যায়ে দু’ধরনের কাজ করতে হবেঃ
(ক) অন্তর্দ্বন্দ্ব নিরসন
কিছু বই পুস্তক পড়ে অথবা কিছুকাল যাবত যুক্তিপূর্ণ আলাপ-আলোচনা শুনে সে ইসলামের দিকে ঝুঁকেছে। কিন্তু আগেকার ধ্যান-ধারণাগুলো মাঝে মাঝে তাঁর মনোজগতে উদিত হচ্ছে। সেগুলোর চাকচিক্য মাঝে মাঝে তাঁর মনে একটা দোলা দিয়ে যায়। কোন আদর্শটি শ্রেষ্ঠতম এটা সে এখনো ভালোভাবে বুখে ওথাতে পারেনি। এই বিষয়ে তাঁর মনে এখনো দৃঢ় প্রত্যয় সৃষ্টি হয়নি। তদুপরি এই পথে চলতে গেলে সে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশংকা দেখছে। বেশ কিছুকাল ধরেই তাঁর মনে এই দ্বন্দ্বে থাকা স্বাভাবিক। মনের এই অবস্থাটা সত্যিই নাজুক। এই সময়টি একজন মানুষের জীবনের অন্যতম জটিল বিষয়। এই সময় ইসলামী সংগঠনের কর্মী তাঁর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে আল ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণাগুলো তার সামনে স্পষ্টতর করে তুলতে থাকবে। লাভ-ক্ষতির সঠিক তাৎপর্য তাকে বুঝাবে। দুনিয়ার লাভের চেয়ে আখিরাতের লাভ যে অনেক বেশি বড়ো ও মূল্যবান তা তাকে বুঝাতে হবে। আশা করা যায় এক পর্যায়ে এসে সেই ব্যক্তির অন্তর্দ্বন্দ্ব দূর হবে। ইসলামের প্রতি তার মনে দৃঢ় প্রত্যয় সৃষ্টি হবে।
(খ) মানসিক দৃঢ়তা অর্জনে সহযোগিতা দান
এবার সেই ব্যক্তি নিজেকে ইসলামের অনুসারী বলে পরিচয় দিতে শুরু করবে। কিন্তু এই সময় তাকে অনেক হোঁচট খেতে হবে। তার পরিবার-পরিজন এবং পূর্বতন বন্ধুমহল তার জীবন দুর্বিসহ করে তুলবে। তাকে নিয়ে হাসি-তামাশা করবে। তার সমালোচনা করবে। ইসলামের পথে অগ্রসর না হবার জন্য তাকে চাও দেবে। বিভিন্ন ব্যাপারে তার সাথে অসহযোগিতা করবে।
এই সময় তার পাশে থেকে মুমিনের চলার পথে স্বাভাবিকভাবে যেসব বাধা আসে সেগুলো সম্পর্কে তাকে ওয়াকিফহাল করে তুলতে হবে। এসব বাধার মুকাবিলা করার জন্য তাকে সাহস যোগাতে হবে। এসব আসহাবে রাসূল এবং পরবর্তী যুগের ইসলামের মুজাহিদদের পরীক্ষার ঘটনাসমূহ তার সামনে তুলে ধরতে হবে এবং পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার লক্ষ্যে মনোবল অটুট রাখার জন্য তাকে উৎসাহ দিতে হবে।
(২) সাংগঠনিক পরিবেশে আনয়ন
এই ধরনের বাধার মুকাবিলা করে যে সমনে অগ্রসর হয় তার পিছুটান দেবার আশংকা কম এবার তাকে সাংগঠনিক পরিবেশের সাথে পরিচিত করে তুলতে হবে। তাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজির করতে হবে। সাংগঠনিক পরিবেশের পরিত্রতা ও চমৎকারিত্ব দেখে সে প্রীত হবে এবং নিজেকে আরো দৃঢ় করে নিতে পারবে।
(৩) ছোট খাটো দায়িত্ব অর্পণ
সাংগঠনিক পরিবেশে নিয়মিত আসা-যাওয়ার ভেতরে তার আন্তরিকতা পরিস্ফুট হয়ে ওঠবে। এবার তাকে ছোটোখাটো কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব দিতে হবে। নিশ্চয়ই সে এগুলো সম্পন্ন করতে থাকবে। এভাবে কাজের প্রতি তার মনে সৃষ্ট হবে অনুরাগ। আবার কাজের অভিজ্ঞতাও সে অর্জন করবে এভাবেই।
(৪) অর্থ দানে উদ্বুদ্ধকরণ
এবার তাকে আল্লাহর পথে অর্থ দানের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ইনফাক ফী সাবীলিল্লাহর তাৎপর্য ও গুরুত্ব তাকে বুঝাতে হবে। আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এতো আগ্রসর হবার পর সে নিশ্চয়ই অকাতরে অর্থ দান করবে সংগঠনের বাইতুলমালে।
(৫) প্রাথমিক প্রশিক্ষণ প্রদান
অগ্রসরমান ব্যক্তির জন্য চাই প্রশিক্ষণ। ইসলামের প্রত্যয়বাদ, ইসলামী জীবন বিধান এবং অন্যান্য মতবাদের তুলনামুলক জ্ঞান দিয়ে তাকে সমৃদ্ধ করে তুলতে হবে। এজন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কাযর্ক্রমে তাকে যোগদানের সুযোগ দিতে হবে।
(৬) আহবান জ্ঞাপনের দায়িত্ব অর্পণ
এই পর্যায়ে উপনীত হবার পর তাকে আহবান জ্ঞাপনের গুরুত্ব বুঝিয়ে এই কাযে আত্মনিয়োগ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আল্লাহর দিকে আহবান জ্ঞাপনের পদ্ধতি সম্পর্কেও তাকে করতে হবে ওয়াকিফহাল।
(৭) কাজের রিপোর্ট গ্রহণ
সপ্তাহে একবার খবর নিতে হবে তার কাজের। জেনে নিতে হবে কারা তার টার্গেট। কি ধরনের বই তাদেরকে দেয়া হচ্ছে এবং কি ধরনের আলাপ হচ্ছে তাদের সাথে। তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শও দিতে থাকতে হবে। যদি দেখা যায় এই ব্যক্তি ধারাবাহিকভাবে আহবান জ্ঞাপন এবং সংগঠনের অর্পিত বিভিন্ন কাজ সঠিকভাবে পালন করেছে তাহলে সে ইসলামী সংগঠনের একজন কর্মী হলো।
কর্মী গঠনের কাজ যত ব্যাপক হবে, ইসলামী বিপ্লব সাধনের সময়ও ততই ত্বরান্বিত হবে। আর নতুন কর্মী গঠনের এই কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হবে হবে পুরোনো কর্মীদেরকেই।


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি