ইসলামী নেতৃত্বের গুণাবলী
ইসলামী সংগঠনে নেতৃত্বের গুরুত্ব অপরসীম। নেতৃত্বকে কেন্দ্র করেই গোটা কর্মী বাহিনী আবর্তিত হয়। নেতৃত্বের গুণাবলী কর্মী বাহিনীর ওপর প্রতিবিম্বিত হয়। এখানে নেতৃত্বের কয়েকটি বুনিয়াদী গুণের কথা আলোচিত হচ্ছে অতি সংক্ষেপে।

জ্ঞানের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব
ইসলামী নেতৃত্বকে জ্ঞানের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হতে হয়। ইসলামী জীবন দর্শন ও জীবন বিধান সর্ম্পকে তার ব্যাপক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। সংগে সংগে ইবলীসী চিন্তা প্রসূত যেসব মতবাদ দুনিয়ার মানুষকে বিভ্রান্ত করে রেখেছে জীবন ও জগত, মানব জীবনের উদ্দেশ্য ও কর্তব্য সর্ম্পকে সেই মতবাদ গুলোর বক্তব্য এবং সেগুলো সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠিত থাকার কারণে মানবগোষ্ঠী কোন কোন সমস্যার সম্মুখীন- এসব কিছুর সর্ম্পকে তাঁর সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। সাধারণ জ্ঞানের দৈন্যও তাঁর থাকা উচিত নয়। তদুপরি নেতাকে যেহেতু মানুষ চালাতে হয় সেই জন্য মানব মনকে বোঝার যোগ্যতাও তাঁর থাকা উচিত। তাই মনোবিজ্ঞানও তাঁর ভালোভাবে পড়া প্রয়োজন। জ্ঞানই শক্তি কথাটা নি:সন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারলে নেতার পক্ষে কেবল কর্মী বাহিনীর ওপরই নয়, এর বাইরে যে বিশাল মানবগোষ্ঠী রয়েছে সেখানেও প্রভাব বিস্তার করা সহজ হয়।

উন্নত আমল
নেত কে হতে হবে ইসলামের মূর্ত প্রতীক। তাঁর চিন্তা-ভাবনা, কথাবার্তা, আচার-আচরণ এবং যাবতীয় কাজকর্মে ইসলামের সঠিক রূপ প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর মূল নেতা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (সা) চরিত্র সকলের জন্য উদাহরণ। তিনি ছিলেন বিমূর্ত আল কুরাআন। মসুলিম জীবনের যেই রূপটি আল কুরআন অংকন করেছে আল্লাহর রাসূল (সা) ছিলেন তারই জীবন্ত রূপ। তাঁর জীবনের বৈশিষ্টগুলোতে ইসলামের যেই সৌন্দর্য ফুটে উঠেছিলো প্রধানত: তাতে আকৃষ্ট হয়েই অমুসলিমগণ ইসলাম গ্রহণ করতো।

নম্র ব্যবহার
রুক্ষ ভাষা এবং রূঢ় আচরণ মানুষকে আহত করে। রূঢ় আচরণে অভ্যস্ত ব্যক্তি কখনো মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারে না। ইসলামী নেতার পক্ষে রূঢ় আচরণ বড়ো রকমের অযোগ্যতা। কর্মীগণ সাংগঠনিক শৃঙ্খলার খাতিরে এই ধরনের নেতার আনুগত্য করলেও তাদের অন্তরে তীব্র বেদনা থাকে। বেদাহত কর্মীরা স্বত:স্ফূর্তভাবে গতিশীল হয়ে কাজ করতে পারে না। তাই নেতাকে অবশ্যই নম্র ব্যবহারের অধিকারী হতে হবে। তাঁর আচরণের সৌন্দর্য কর্মীদের তাঁর দিকে চুম্বকরে মত আকর্ষণ করে নিয়ে আসবে। এতে করে সংগঠনের আভ্যন্তরীণ সংহতি অত্যন্ত মজবুত হবে, এটাই স্বাভাবিক।

সাহসিকতা
ইসলামী সংগঠনের নেতা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করবেন না। প্রকৃত পক্ষে তাকওয়ার দাবীও এটাই। যেই হৃদয়ে আল্লাহর ভয় থাকবে সেই হৃদয় অন্য কাউকে ভয় করবে, তার অবকাশ কোথায়! আল্লাহর রাসূল সো) বলেন, “ যেই ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে দুনিয়ার সবকিছু থাকে ভয় করে। কিন্তু যেই ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ভয় পোষণ করেনা দুনিয়ার সবকিছু তাকে দেখায়। ” সংগঠনের নেতা নির্ভীক হলে তার প্রভাব পড়ে সংগঠনের কর্মী বাহিনীর ওপর। এই ধরনের নেতার কর্মীবাহিনী বিপদ-মুসিবাত দেখে মনভাংগা হয় না। হিম্মতহারা হয় না।

সময়ানুবর্তিতা
নেতাকে প্রতিদিন অনেক কাজ করতে হয়। অনেক লোকের সাথে সাক্ষাৎ করতে হয়। অনেক স্থানে যেতে হয় দিনের শুরুতেই করণীয় কাজের তালিকা তৈরী করে নেতা যদি সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করে চলেন, তিনি এ্কদিনেই বহু কাজ করতে পারেন। এক জায়গায় সময় প্রতিপালনের ব্যর্থ হলে তাঁর সারা দিনের কাজগুলো একের পর এক ডিস্টার্বড হতে থাকবে। দিনান্তে হয়তো দেখা যাবে বেশ কয়েকটি কাজ কিছুতেই শেষ করা গেলোনা। সময় সর্ম্পকে সদা সচেতন থাকলে এবং প্রতিটি কাজের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করলেই দেখা যাবে সারাদিনের করণীয় সবগৃলো কাজই সম্পন্ন করা গেছে।

সংগঠনের প্রজ্ঞা
সংগঠনের নেতাকে অবশ্যই সবচেয়ে বেশী সাংগঠনিক প্রজ্ঞার অধিকারী হতে হবে। সংগঠন গড়ে তোলার যোগ্যতা, কর্মী পরিচালনার যোগ্যতা, সংগঠনের সংহতি সংরক্ষণের যোগ্যতা, ময়দানে বিশ্লেষণ করার যোগ্যতা, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার যোগ্যতা, জনশক্তির কর্মমুখর রাখার যোগ্যতা, কর্মীদের মানোন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কর্মপন্থ উদ্ভাবনের যোগ্যতা এবং সংগঠনের কর্মীদের গ্যাপ অব ইনফরমেশন থেকে বাঁচিয়ে রাখার যোগ্যতা নেতার অবশ্যই থাকতে হবে।

প্রেরণা সৃষ্টির যোগ্যতা
নেতা হবেন কর্মীদের জন্য প্রেরণার উৎস ও সান্ত¦নার স্থল। নেতার কথাবার্তা কর্মীদের মাঝে হতাশা বা নিরাশার বিষবাষ্প ছড়াবে না। তাঁর কথা শুনে কর্মীরা প্রণবন্ত হয়ে ওঠবে।
নেতা হবেন কর্মীদের জন্য বটগাছ যার ছায়াতে এসে কর্মীগণ অন্তরকে শীতল করতে পারবে। প্রতিকূলতার আঘাত খেয়ে খেয়ে কর্মীরা যখন অস্থির হয়ে ওঠে তখন মনের বেদনা প্রকাশ করার জন্য তারা নেতার ছুটে আসে। নেতার হাসিমাখা মুখের মিষ্ট সান্তনা-বাণী তাদের মনের জ্বালা দূর করে দেয়। নেতার হৃদয়ে কর্মীদের জন্য মুহাব্বতের ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়ে থঅকে তাতে সিক্ত হয়ে তারা প্রশান্ত হয়। যেই নেতা কর্মীদের ওপর বটগাছের মত শীতল ছায়া বিস্তার করতে পারেন না তিনি নৎসী পার্টির নেতা হতে পারেন, কিন্তু ইসলামী সংগঠনের নেতা হওয়া তাঁর সাজে না।

সুভাষণ
নেতা সুবক্তা হওয়া প্রয়োজন। কম কথায় বেশী ভাব প্রকাশ উত্তম ভাষণের অন্যতম বৈশিষ্ট। বক্তৃতা পয়েন্ট ভিত্তিক হলে শ্রোতার পক্ষে বুঝা সহজ হয়। বক্তৃতার ভাষা সহজ হওয়া দরকার। বক্তৃতার প্ররম্ভ, মধ্যভাগ ও সমাপ্তি থাকা চাই। বক্তৃতার ভাবগুলো ধারাবাহিকভাবে সাজানো রূপে আসা দরকার যাতে বক্তৃতার বিষয় বুঝা শ্রোতারদের কষ্ট না হয়। আল্লাহর রাসূল (সা) বলেন, “বুয়িসতু বিজাওয়ামিইল কালাম” অর্থাৎ আমি ব্যাপক অর্থবোধক সংক্ষিপ্ত ভাষণের যোগ্যতাসহ আবির্ভূত হয়েছি। আল্লাহর রাসূল (সা) ছিলেন শ্রেষ্ঠ বক্তা। তার বক্তব্য ছিল প্রাঞ্জল ও চিত্তাকর্ষক। ইসলামী সংগঠনের নেতার তাঁরই অনুকরণে চেষ্টা করা উচিত।

নথিপত্র সংরক্ষণে পারদর্শিতা
নেতাকে হতে হবে নথিপত্রে সংরক্ষণে পারদর্শী। নথিপত্রের সঠিক নামকরণ, যথাযথভাবে নাম্বারিং করণ এবং ভেতরের সঠিবভাবে কাগজপত্র সন্নিবেশ করণের যোগ্যতা তাঁর অন্য সকলের চেয়ে বেশী দরকার। নিজে পারদর্শী না হলে অন্যদের দ্বারা এগুলো ভালভাবে করিয়ে নেয়া সম্ভব হয় না। নথিপত্র সঠিকভাবে সংরক্ষণ না হলে অনেক সময়ই প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের হদিস পাওয়া যায় না, অথবা সেগুলো খুঁজে বের করতে বেশ খানিকটা সময় অপচয় হয়।

হিসাব সংরক্ষণে পারদর্শিতা
নেতা হবেন দক্ষ হিসাব রক্ষক। সংগঠনের যাবতীয় আয় ব্যয়ের রেকর্ড ও হিসাব সঠিকভাবে রক্ষণের দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত। এই ক্ষেত্রে ব্যর্থতা নেতার অতি বড়ো এক অযোগ্যতা।


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি