মুখ্য বিষয়সমূহ
লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি
সংশ্লিষ্ট বই
বাংলাদেশে ইসলামী হুকুমাতঃ রূপরেখা ও প্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়া
লেখকঃ নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশনীঃ খায়রুন প্রকাশনী
বর্তমান যুগে কি ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা ও তার সফল পরিচালনা সম্ভব? ইসলাম কি বর্তমান যুগের জনজীবনের সমস্যাবলীর সমাধান দিতে সক্ষম? যে দেশে মুসলমান ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বী লােকও বসবাস করে সেখানে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা কি সংখ্যালঘুদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করবে না? এক সময় এগুলাে ছিল গুরুত্বপূর্ণ জিজ্ঞাসা। কিন্তু এখন এসব প্রশ্নের অবসান হয়ে থাকা উচিত। কারণ, এসব প্রশ্নের তাত্ত্বিক জবাব বহুবার বহুভাবে দেয়া হয়েছে যা আজ পর্যন্ত কেউ খণ্ডন করতে পারেনি। শুধু তা-ই নয়, সাম্প্রতিককালে কার্যতঃও এর সন্তোষজনক জবাব দেয়া হয়েছে। তাই অবশ্যই এসব প্রশ্নের অবসান হয়ে থাকা উচিত। তবে কারাে যদি দেখার মত চোখ, শােনার মত কান, অনুভব করার মত অন্তঃকরণ ও বুঝার মত বিচারবুদ্ধি না থাকে তাে তাকে উপেক্ষা করা ছাড়া উপায় কি?
তাই উপরােক্ত প্রশ্নগুলাের নতুন করে জবাব দেয়ার প্রয়ােজন আছে বলে মনে হয় । অবশ্য অন্য কোন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রসঙ্গতঃ এসব বিষয়ও কিছুটা এসে যেতে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা যথেষ্ট বিবেচনাযােগ্য পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। বাংলাভাষী মুসলিম জনগণের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী প্রথম মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদ ও বিপ্লবী ইসলামী চিন্তানায়ক হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রঃ) ইসলামী হুকুমত কায়েমের লক্ষ্যে চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি অত্র ভূখণ্ডে ইসলামী আন্দোলনের সূচনা করেন এবং বাংলাভাষী জনগণের মধ্যে ইসলামকে একটি কালজয়ী বিপ্লবী আদর্শ হিসেবে পরিচিত করেন। পরবর্তীকালে আরাে অনেকে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন। আল্লাহর রহমতে বর্তমানে বাংলাদেশে ইসলামী শক্তি সবিশেষ রাজনৈতিক গুরুত্বের অধিকারী। কিন্তু এ ইসলামী শক্তির সবচেয়ে বড় নেতিবাচক দিক হচ্ছে তার অনৈক্য যা জনগণের মধ্যে এ শক্তি সম্বন্ধে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। তবে তারা ঐক্যবদ্ধ হলে যে বিরাট শক্তি-এটা সকলেই স্বীকার করে। তাই ঐক্যপ্রচেষ্টা প্রতিহত করার প্রচেষ্টাও সমান তালে অব্যাহত রয়েছে। এমতাবস্থায় এ সমস্যার একটা কার্যকর সমাধান উদ্ভাবন অপরিহার্য।
বাংলাদেশের ইসলামী শক্তির সামনে আরাে দুটি বড় ধরনের সমস্যা প্রশ্নের আকারে বিদ্যমান। তা হচ্ছে। এ দেশে কোন প্রক্রিয়ায় ইসলামী হুকুমত কায়েম হবে? এবং সে হুকুমতের সাংবিধানিক কাঠামাে ও রূপরেখা কেমন হবে? অনেকের মনেই আজ এ প্রশ্ন যে, বাংলাদেশের সংবিধানের কয়েকটি শব্দ বা বাক্য পরিবর্তন করে।
(যেমন ঃ সার্বভৌমত্বের মালিক, আইনের উৎস ও প্রজাতন্ত্রের বিশেষণ) বর্তমান ব্যক্তিদের স্থলে ইসলামী দলের লােকদের মন্ত্রী বানালেই কি ইসলামী হুকুমত হয়ে যাবে? ইসলামী দলসমূহের পক্ষ থেকে এসব প্রশ্নের সুস্পষ্ট ও সহজবােধ্য জবাব দেয়া হয়নি। এমনকি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ইসলামী দলসমূহও তাদের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে তাদের পরিকল্পিত ইসলামী হুকুমতের কাঙিক্ষত সাংবিধানিক কাঠামাে তুলে ধরেনি। কিন্তু জনমনে ইসলামী হুকুমতের প্রশ্নটি বর্তমানে এতখানি গুরুত্ব পাচ্ছে যে, এখন এ প্রশ্নের জবাব দেয়া অপরিহার্য বলে মনে হয়।
অত্র পুস্তক কোন প্রস্তাবিত খসড়া ইসলামী সংবিধান নয়। খসড়া ইসলামী সংবিধান প্রণয়ন যথাসময়ে যথাব্যক্তিগণই করবেন। এখানে কেবল উপরােক্ত ক’টি প্রশ্নের জবাব দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এ জবাব অত্র লেখকের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা মাত্র। এ প্রস্তাবনা হয়তাে ইসলামী শক্তিগুলাের এতদসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করতে সক্ষম হবে।
অত্র লেখককে যারা ব্যক্তিগতভাবে জানেন বা অত্র পুস্তকের পাণ্ডুলিপির সাথে বা তার অংশ বিশেষের সাথে পূর্ব থেকেই যাদের পরিচয় ছিল তাদের মনে একটি প্রশ্ন জাগ্রত হবার সম্ভাবনা আছে বিধায় এখানে সে সম্পর্কেও কিছু বলা জরুরী মনে করছি। তা হচ্ছে, এ পুস্তকের বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে অত্র লেখকের এবং এর দায়-দায়িত্বও অত্র লেখকের। তাই একে কোন সংগঠনের বক্তব্য মনে করা বা এ জন্য কোন সংগঠনকে দায়ী করা বা প্রশ্ন করা ঠিক হবে না।
তবে অত্র পুস্তিকার ছােট হলেও একটি ইতিহাস আছে। সপ্তম সংসদ নির্বাচনের পরে ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের মজলিসে আমলের পক্ষ থেকে আমাকে বক্ষ্যমান বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রবন্ধ আকারে পেশ করতে বলা হয়। আমি যথাসময়ে তা পেশ করি এবং তার ওপর আলােচনা হয়। অবশ্য প্রবন্ধের মূল বক্তব্যের সাথে একমত হলেও কোন কোন বক্তব্যের সাথে অনেকে দ্বিমত প্রকাশ করেন। তবে প্রবন্ধটি কোন সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য নয়, বরং এ বিষয়ে একাডেমিক ধরনের আলােচনার জন্যে পেশ করতে বলা হয়েছিল যা ছিল অনেকটা সেমিনারের ন্যায়। তাই এটি গ্রহণ বা বর্জনের প্রশ্ন ওঠেনি। কিন্তু প্রবন্ধটি সাধারণ পাঠক-পাঠিকাদের নিকট পেশ করার উপযােগী মনে করেছি বিধায় সামান্য পরিবর্ধিত আকারে পুস্তকরূপে প্রকাশের চিন্তা করেছি। এর আগে সপ্তম সংসদ নির্বাচনের অব্যবহিত পরেই দৈনিক আজকের প্রত্যাশয়ায় “সপ্তম সংসদ নির্বাচন ও বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির ভবিষ্যত” শীর্ষক একটি দীর্ঘ উপসম্পাদকীয় লিখেছিলাম যা কয়েক কিস্তিতে প্রকাশিত হয়। প্রয়ােজন অনুভূত হওয়ায় তারও একটি অংশ এ পুস্তকের পরিবর্ধনে ব্যবহার করেছি।
পরিশেষে উল্লেখ না করলে নয় যে, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন কেবল জনগণের বিপ্লবের মাধ্যমেই ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা সম্ভব বলে মনে করে এবং সেকুলার সংবিধানের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণকে সঙ্গত মনে করে না। বাংলাদেশের বাস্তবতা দৃষ্টে আমিও মনে করি, এ দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তবে তাত্ত্বিকভাবে স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি যে, বিপ্লবই ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ নয়, বরং পরিস্থিতিই বলে দেবে কখন কোন্ দেশে কোন্ পন্থায় ইসলামী হুকুমত কায়েম হবে অথবা হবে না। আর তা নির্ধারণের দায়িত্ব ইসলামী হুকুমত কায়েমের উদ্যোগ গ্রহণকারী দ্বীনী নেতৃত্বের। এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মত।
আমার জন্য এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। সাংগঠনিকভাবে সংগঠনের কর্মসূচী এবং সিদ্ধান্তই বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে কর্মসূচী আকারে বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত না। হলেও ব্যক্তি তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা পাবে এটা কম কথা নয়। অতীতেও আমি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এমন কতক রাজনৈতিক প্রবন্ধ লিখেছি যাতে একান্তই ব্যক্তিগত মতামত প্রতিফলিত হয়। কিন্তু এজন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে চিন্তার স্বাধীনতার ওপর কোনরূপ বিধি-নিষেধ আরােপ করা হয়নি। এভাবে ইসলামী ঐক্য আন্দোলন প্রমাণ করেছে যে, এটি কোন সংকীর্ণ রাজনৈতিক দল নয়, বরং একটি আন্দোলন। আমি নিশ্চিত যে, অত্র পুস্তক প্রকাশিত হবার পরেও ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের এতদসংক্রান্ত ভূমিকায় কোন পরিবর্তন হবে না। | পরিশেষে আল্লাহ রাব্বল আলামীনের নিকট মুনাজাত করি, তিনি অত্র পুস্তককে বাংলাদেশ ইসলামী হুকুমতের লক্ষ্য এগিয়ে নেয়ার ও তার প্রতিষ্ঠাকে সহজতর করার ক্ষেত্রে সহায়ক করে দিন এবং লেখকের পরকালীন মুক্তির পাথেয়স্বরূপ কবুল করে নিন।
নূর হােসেন মজিদী
ঢাকা ১৬ই নভেম্বর, ১৯৯৭
- প্রিয়তে যোগ করতে লগিন করুন
- লাইব্রারীতে যোগ করতে লগিন করুন
পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।
দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি