বিশ্বের মনিষীদের দৃষ্টিতে মাওলানা মওদূদী - ১ম খন্ড
লেখকঃ আব্বাস আলী খান
প্রকাশনীঃ বই কিতাব প্রকাশনী
মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী ছিলেন যুগ ও ইতিহাস স্রষ্টা এক ব্যক্তিত্ব। ইতিহাসের পাতায় এখম বিরাট মনীষীর উল্লেখ কমই পাওয়া যায়। সাধারণতঃ সবার রঙে রঙ মিশিয়ে অথবা গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে কিছু লোক ও সাময়িকভাবে চমক সৃষ্টি করতে পারেন এবং করেছেনও। কিন্তু বিশ্বের দরবারে কেন, আপন সমাজেও তাদের কোন কল্যাণকর প্রভাব তারা রেখে যেতে পারেননি।
মাওলানা মওদুদী অতি প্রতিকল পরিবেশে এক বিপ্লবের ডাক দিয়েছেন এবং এ বিপ্ললবে সাফল্যও লাভ করেছেন। তাঁর আপনজন সংগী সাথী ও সমাজ পতিগণ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। শধু, তাই নয়, তাকে অনেক বাধার পাহাড় অতিক্রম করতে হয়েছে। বিশ্বব্যাপী। জাহেলী চিন্তাধারা ও কর্মকাণ্ডের প্রকান্ড দেয়াল ভেঙে তিনি সামনে অগ্রসর হান। অসংখ্য অগণিত মানুষের মনের দুনিয়া বদলে দিয়েছেন।
তাঁদের বাস্তব জীবন, আচার আচরণ ও ক্রিয়াকর্ম এক নতুন ধারায় প্রবাহিত করে দিযেছেন। একেই বলে মানসিক ও নৈতিক বিপ্লব। জাহেলিয়াতের ঘন অধার, খোদাদ্রোহিতা ও খোদা বিমুখতা থেকে অসংখ্য মানুষকে ইসলামের স্বচ্ছ ও নির্মল আলোতে টেনে এনেছে। এবং তাদের গোটা জীবনকে এক ও লা-শরীক আল্লাহর আনুগত্যের অধীন করে দিয়েছেন। তার এ বিপ্লব তার আপন দেশেই সীমিত থাকেনি, তার প্রভাব সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছে।
এ কাজ সহজেই হয়নি। এর জন্যে সরাজীবন তাকে অশেষ জুলম, অবিচার, নির্যাতন, নিষ্পেষণ, বহুবার নির্জন কারাবাস, এমন কি মৃত্যুদণ্ডও হাসিমুখে মেনে নিতে হয়েছে। এ ব্যাপারে স্বৈরাচারী শাসক গােষ্ঠীর কাছে তিনি ক্ষণিকের জনেও নতি স্বীকার করেন নি। সত্যর প্রতি তার এ অবিচলতা এবং তাঁর অতুলনীয় চরিত্রের বৈশিষ্ট্য তাকে বিশেষ স্থানে নিয়ে যান।
তাঁর চরিত্রের মধ্যে ইমাম আযম (রহ), ইমাম অাহমদ বিন হাম্বল (রহ), ইমাম মালেক (রহ) এবং ইমাম তাইমিয়ার (রহ) চরিত্রের প্রতিচ্ছবিই দেখতে পাওয়া যায়। অনেক ইসলামী পণ্ডিত ও মনীষী তাকে এ যুগের ইমাম তাইমিয়া বলেও আখ্যায়িত করেছেন। | তিনি একই সাথে বহ, ফন্টে কৃতিত্বের সাথে লড়াই করেছেন। ? প্রাশ্চাত্য সভ্যতা সংস্কৃতির ধারক বাহকের দল, নাকি খোদাদ্রোহীর দল, উদ্ভট নবুয়তের দাবীদার, হাদীস অমান্যকারীর দল, ইসলামকে নিছক কিছু ধমীয় অনুষ্ঠান ও ক্রিয়াকর্মে রুপান্তরকারীর দল, জাহেলিয়াতের চিন্তাধারার আবর্জনায় ইসলামকে আচ্ছন্নকারীর দল এবং পাশ্চাত্য চিন্তাধারার ছাচে ইসলামকে ঢেলে সাজাবার দল—এ সবের বিরুদ্ধে তিনি প্রচণ্ড মসিযুদ্ধ চালিয়ে তাদেরকে পরাভূত করেছেন। এই বিশ্বের সর্বত্র আজ ইসলামের নবজাগরণ দেখা যাচ্ছে। এসবই তার নির্মল ও বিপ্লবী-চিন্তাধারারই ফসল।
ইসলামী বিশ্ব মাওলানার জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ এই যে, তিনি ইসলামকে একটি বিপ্লবী চেতনা-বিশ্বাস ও একটি জীবন্ত জীবন বিধান হিসেবে এবং আদিকালীন পবিত্রতা (PRISTINE PURITY) এবং পরিপণতাসহ পেশ করেছেন। তার প্রকাশভংগী অত্যন্ত সহজ সরল ও হৃদয়গ্রাহী। পাঠকের মনের গভীরে তা সহজেই প্রবেশ করে। তার ভাষায় ভাব-প্রবণতা নেই, সত্যকে উপলব্ধি করার প্রেরণা ও প্রবণতা আছে, বিবের উত্তাপ আছে যা মনমস্তিষ্ককে উত্তপ্ত করে তোলে নিজন কক্ষ থেকে সংগ্রামের ময়দানে টেনে আনে।
যে সব মতবাদ ও বিশ্বাস মানুষকে পথ ভ্রষ্ট করে, মানুষকে পশুত্বের পর্যায়ে নামিয়ে আনে, সেসবের তীব্র প্রতিবাদ করে তিনি বহ, গ্রহ ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। সে সবের ভ্রান্তি ও অন্তঃসারশূন্য তার অকাট্য যক্তি প্রমাণ পেশ করেছেন। মানব সমাজে অকল্যাণ, বিশংখলা করতে পারে এমন কোন বিষয় নেই, যার বিরুদ্ধে তিনি শক্তিশালী তরবারি চালনা করে তা খণ্ডন করেননি।
যে কোন সমাজ বিলবে হর হামেশা যুব সমাজকেই জীবনের সকল প্রকার ঝুঁকি নিতে দেখা যায়। নবী রসূলগণের বেলায়ও তাই দেখা গেছে। মাওলানার চিন্তাধারা ও সাহিত্যে এমন এক বিরাট আকর্ষণ আছে যা সব চেয়ে বেশী অকৃষ্ট করেছে যুব সমাজকে। নাস্তিকতা, খোদাদ্রোহিতা ও অনৈতিকতার প্রবল স্রোতে ভাসমান সংগীসাথীদের থেকে তারা সম্পূর্ণ পৃথক পথ বেছে নিয়েছে জীবনের জন্যে। কোন ভয়ভীতি, প্রলোভন অথবা জীবনকে উপভোগ করার সুবর্ণ সুযোগ তাদেরকে ফেরাতে পারেনি সে সব পথ থেকে যে পথের সন্ধান তারা পেয়েছে মাওলানা চিন্তাধারা ও সাহিত্যে। তারাই আজ ইসলামী বিপ্লবের অগ্রপথিক।
মাওলানার বহুমখী প্রতিভার আলোচনা করা আমার উদ্দেশ্য নয়। | বিশ্বের বহ, ইসলামী চিন্তাশীল ও পণ্ডিত ব্যক্তি তার সম্পর্কে যে সব
মূল্যবান মন্তব্য করেছেন, তা একত্রে সংকলিত করে পাঠক সমাজকে পরিবেশন করাই আমার উদ্দেশ্য। এ গ্রন্থের প্রবন্ধকারগণ শুধু বতমান ও ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্যে মাওলানার রেখে যাওয়া অমূল্য অবদানের উল্লেখই করেন নি, সেই সাথে তাঁর প্রতি হৃদয়ের গভীর শ্রদ্ধাভালােবাসার অভিব্যক্তিও করেছেন। দুনিয়া থেকে তাঁর বিদায়ের দুঃসংবাদ তাদেরকে এমন ব্যথিত ও মর্মাহত করেছে যেন তাদের প্রিয়তম ব্যক্তি তাঁদেরকে শোক সাগরে ভাসিয়ে বিদায় নিয়েছেন। তাদের এ শ্রদ্ধাজড়িত ভাবাবেগ ও মানসিক প্রতিক্রিয়া সংরক্ষিত রাখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। এ ভবিষ্যৎ বংশধরদের মধ্যে নিঃসন্দেহে ইসলামী প্রেরণা সষ্টি করবে এবং মাওলানার চিন্তধারা থেকে তারা তাদের জীবনের সঠিক পথ বেছে নিতে পারবে। বিশেষ করে মাওলানার ফহীমল কুরঅান যুগ যুগ ধরে তাদের রাহময়ী করতে থাকবে। | মাওলানা তাঁর সারা জীবন কুরআন পাক এবং নবী মুস্তাফার (সঃ) জীবন চরিতকে অনুসরণ করেই চলবার চেষ্টা করেছেন এবং এ দিকেই সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। মুসলিম জাতির সকল সমস্যার স্থায়ী সমাধান এ পথেই হতে পারে একথা তিনি আগাগোড়াই বলে এসেছেন। মানব সমাজে ইসলামের সঠিক ও বাস্তব পায়নই ছিল তার জীবনের লক্ষ্য। | দেশ ও বিদেশের বহ, জ্ঞানীগণী ও মনীষী মাওলানার গণমুগ্ধ হয়ে যে সব মন্তব্য করেছেন এবং বিশেষ করে তার ইন্তেকালের পর যারা তাদের প্রতিক্রিয়া ও ভাবাবেগ ব্যক্ত করেছেন, তাদের সে সব কথার ভাষান্তর সংকলন ও সম্পাদনার ফসলই এ গ্রন্থখানা।
দ্বিতীয় খণ্ডও ইনশাআল্লাহ প্রকাশিত হবে।
এ গ্রহখানি পাঠ করে যদি কারো মধ্যে দ্বীন কায়েমের প্রেরণা জাগ্রত হয় যার জন্যে মাওলানা তাঁর গোটা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাহলে এ পরিশ্রমলব্ধ সংকলন সম্পাদনা সাথক হস্নেছে বলে মনে করব। আল্লাহতায়ালা তার দ্বীন প্রতিষ্ঠার মহান কাজে আমাদেরকে লাগিয়ে দিন
-আমীন।
-সম্পাদক