মুখ্য বিষয়সমূহ
লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি
সংশ্লিষ্ট বই
সমকালীন মুসলিম বিশ্ব ও বাংলাদেশ
লেখকঃ ড. মোঃ মাইমুল আহসান খান
প্রকাশনীঃ বিশ্বসাহিত্য ভবন
মুসলিম বিশ্ব আজ অনেক বড়। এশিয়া ও আফ্রিকার বিরাট অঞ্চলে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। মুসলিম রাষ্ট্রের সংখ্যা পঞ্চাশের অধিক। এছাড়া আরও অনেক মুসলিম অধ্যুষিত দেশ রয়েছে। পৃথিবীর সকল জনপদেই এখন মুসলমানরা স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। পৃথিবীর মােট জনসংখ্যায় প্রায় সাড়ে বাইশ শতাংশ মানুষ মুসলমান। খুব শীঘ্রই সমগ্র মানব পরিবারের এক চতুর্থাংশই হবে। মুসলমান অর্থাৎ প্রতি চারজন মানুষের একজন হবেন মুসলমান। পৃথিবীর বহু গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের মালিক মুসলমানরা। অথচ সার্বিকভাবে মুসলমানরা আজ অনগ্রসর জাতি। শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানরা আজ অনগ্রসরতার প্রতীক। অথচ এমনটি হবার কথা ছিল না। মানব সভ্যতায় ইসলামের দান অবিস্মরণীয়। জ্ঞানচর্চায় মুসলমানরা ছিলেন পুরােধা। আবিস্কারের ক্ষেত্রে তাদের স্থান ছিল শীর্ষে। ইউরােপীয় রেনেসার সকল কাঁচামাল যােগান দিয়েছে মুসলমানরা। কেন আজ মুসলমানরা এতটা পশ্চাদপদ! অনেকেই মনে করেন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মুসলমানদের অনগ্রসরতাই তাদের পরাজয়ের প্রধান কারণ। অথচ প্রযুক্তিতে পরাজয় এসেছে পরে। প্রথমে মুসলমানরা জাতি ও মানুষ হিসেবে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব হারিয়েছে। তারপর এসেছে তাদের অন্যসব পরাজয়। মানুষ যথার্থ অর্থে মানুষ হবার গুণাবলী থেকে বঞ্চিত হয়েই পরাজয় বরণ করে অন্য মানুষের কাছে। এই নির্জলা সত্যটি মুসলমানরা ভুলে থাকতে চেয়েছে বহুদিন ধরে। মানুষের বড়ত্ব ও মহত্ব সবই প্রথমে ঘটে মনােজগতে। তারপরই তা প্রকাশিত হয় বাইরে। পরাধীনতার গ্লানি থেকে আজ রাজনৈতিকভাবে মুসলমানরা অনেকাংশেই মুক্ত। কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে মুসলমানরা এখনও পরাধীন। সাংস্কৃতিক শৃংখল থেকে মুক্ত হতে পেরেছে খুব কম মুসলিম জাতি। সঠিকভাবে মুসলিম জাতিসমূহের বড়ই বেহাল অবস্থা। আজ মানবতার মুক্তির সাথে মুসলমানদের সঠিক উন্নতি-অবনতি নিবিড়ভাবে সংযুক্ত। বিশ্বব্যাপী মানব সভ্যতা বিপন্ন। অসহায়-বিন্ন মানুষের হাহাকারে
আকাশ-বাতাস ভারাক্রান্ত। পরিবেশ দূষণে পানি ও বায় সেবন অযােগ্য হয়ে পড়েছে। মানবতাকে রক্ষা করার এ দয়তার কার! ইউরােপের মাটিতে সমাজতন্ত্র চরমভাবে ব্যর্থ ও বিতাড়িত। মুসলিম বিশ্ব থেকে সমাজতন্ত্র সর্বোতভাবেই নির্বাসিত। পুঁজিবাদের নব যৌবনে কায়েমী স্বার্থান্বেষী ক্ষুদ্র একটা শ্রেণী উল্লাসে আত্মহারা। তাদের সুখ চর্চায় বিনষ্ট হচ্ছে পৃথিবীর সব সম্পদ। মুসলমানরা কি করতে পারে? তারা নিজেদেরকে রক্ষা করবে নাকি মনুষ্যত্ব রক্ষায় তৎপর হবে? বিপন্ন মানবতা রক্ষার দায়িত্ব কার বেশি? মানবতার আজকের বিপর্যয়ের এক চরম শিকার হচ্ছে মুসলমানরা। এর সবচাইতে বড় প্রমাণ মুসলিম দেশসমূহে সংঘটিত হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, হানাহানি এবং সম্পদের অপচয় ও অপব্যবহার। পরাধীনতার যুগে মুসলমানরা স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়ে লড়েছে। প্রতিদান গ্রহণ করতে শিখেনি। ভারত থেকে ইংরেজ খেদাও আন্দোলনে মুসলমানরা ছিলেন অগ্রবর্তী দল। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের পর মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে তারা ছিলেন উদাসীন। তাই পাকিস্তান সৃষ্টি ও ধ্বংস প্রক্রিয়ায় মুসলমানরা হয়ে। পড়েন বিভ্রান্ত। অসংখ্য উদাহরণের মাঝে এটি একটি সাম্প্রতিক প্রমাণ মাত্র। মুসলমানরা একের পর এক রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছে। কিন্তু রাষ্ট্র দিয়ে কি হবে, তা যেন তারা জানতেন না। এক আরবরাই সৃষ্টি করেছে বাইশটি রাষ্ট্র। সংখ্যার বিবেচনায় ভারতে মুসলমানদের দুইটি মুসলিম রাষ্ট্র যেন নিতান্তই কম। অথচ মুসলমানরা আধুনিক জাতি ও রাষ্ট্র বিনির্মাণে কলা-কৌশল সম্পর্কে বড় বেখেয়াল। অনেকেই হয়ত অজ্ঞ ও বিভ্রান্ত। কিন্তু রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবি। শ্রেণী স্বার্থ চরিতার্থ করার ক্ষেত্রে বড়ই তং। রাষ্ট্র, সমাজ ও সভ্যতা লালন-পালন করার কাজে নিয়ােজিত মানুষের সংখ্যা। সর্বকালেই কম থাকে। সচেতন, বুদ্ধিমান ও জ্ঞানীরাই এই কাজে লিপ্ত থাকে। বৃহত্তর জনগােষ্ঠী তাদের কাজের সুফল ভােগ করে থাকে। আজ ঘটে যাচ্ছে উল্টো রথ টানার এক বলিখেলা। বৃহত্তর জনগােষ্ঠী উৎপাদন ও বন্টনের সকল দায়-দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে অথচ এর নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিয়েছে সকল প্রকার নৈতিকতা বিবর্জিত একটি ক্ষুদ্র শােষকশ্রেণীর হাতে। ফলে অবস্থা যা হবার তাই হয়েছে।
এই দৃশ্য আজ সর্বত্রই পরিস্ফুটিত। অথচ দৃশ্যমান সাফল্যে মানুষ দিশেহারা। মঙ্গলগ্রহ আজ মানুষের বলতে গেলে সরাসরি নাগালে। সূর্যের চাইতে এক কোটি গুণ শক্তিশালী নক্ষত্রের সন্ধান লাভ করেছে মানুষ। কালক্রমে সূর্য ঠাণ্ডা হয়ে পৃথিবী বসবাসের অযােগ্য হয়ে পড়বে, সেই ভয় যেন কমে গেল। আবার। সূর্যকে নিমিষে কাগজের মত ভয় করে দেয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন নক্ষত্র পৃথিবীর প্রতি কোন্ আচরণ করবে, তা নিয়ে মানুষ শংকিত। মানুষ প্রাণী হিসেবে বড়ই আজব সৃষ্টি। সে বেশিক্ষণ আতংকিত থাকতে পারে না। বেশি সুখও তার দীর্ঘক্ষণ সয় না। সভ্যতার ক্রমবিকাশে তাই হয়তাে এত বেশি উত্থান-পতন। ভাঙ্গা-গড়ার ইতিহাসে মানুষ অভ্যস্থ। তাই যুদ্ধ-বিগ্রহকে মানুষ মেনে নিয়েছে। কিন্তু বিংশ শতাব্দী মানব সভ্যতাকে বিপন্ন করে তুলেছে। দুই দুইটি বিশ্বযুদ্ধ শেষে মানুষ বাস করেছে ঠাণ্ডা লড়াইয়ের যুগে। ঠাণ্ডা লড়াইয়ের উত্তপ্ত স্নায়ু শান্ত করেছে একক পরাশক্তির আত্মবিকাশে। কিন্তু বড়ই অশান্ত হয়ে উঠেছে সমগ্র পৃথিবী। স্বস্তি ও শান্তি সকলেরই কাম্য। অথচ অশান্তি ও আতংক যেন সকলেরই নিত্যসঙ্গী। মুসলমানরাই এখন পরিস্থিতির সহজ শিকার। মুসলমানদের রক্ষায়ও আবার অনেকেই তৎপর। ইরাকী শিয়াদের রক্ষার জন্য ইরাকের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রয়ােজন! ইরাকের হাত থেকে কুয়েতকে রক্ষার জন্য প্রয়ােজন ইরাকী লাখ লাখ শিশুর বলিদান! তাই আজ মুশকিল হয়ে পড়েছে শত্রু-মিত্র চেনা ও বুঝা। ইরাকী শিয়াদের রক্ষায় মার্কিনী প্রচেষ্টায় ইরানীরা সন্তুষ্ট নয় কেন? ইংরেজদের প্যালেষ্টাইন রই সৃষ্টির প্রচেষ্টায় আরবরা উৎসাহী নয় কেন? একক ও স্বাধীন বাংলাদেশ কি পাকিস্তান বা ভারতের জন্য হুমকিস্বরূপ? এই সব প্রশ্নের উত্তরের সন্ধানেই আমার এই প্রচেষ্টা। এছাড়াও চলতি দশকে বিশ্ব বিবেক, বিশেষতঃ, মুসলিম উম্মার কাছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর তিনটি নাম হচ্ছে চেচনিয়া, বসনিয়া ও ইন্তিফাদার জন্মভূমি। এই নামগুলাের সাথে জড়িয়ে আছে সন্ত্রাস, হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ, মৌলবাদ ও মানবাধিকার লংঘনের বহু লােমহর্ষক ঘটনা। অতি উত্তপ্ত এই তিনটি জনপদ আবার স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত। অধিবাসীরা প্রায় সবাই মুসলমান। কিন্তু আন্দোলনের শুরুতে এই সব জনপদের মুসলমানদের মৌলবাদী ও সন্ত্রাসী বলে
আখ্যায়িত করে এদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে নস্যাৎ করার অপচেষ্টা চলে বহুদিন। অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে আত্মহুতি দিতে হয়েছে লাখ লাখ নিরীহ মুসলিম জনতাকে। শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা শিকার হয়েছে ইতিহাসে চরমতম ঘূণ্য মানবাধিকার লংঘনের। চেষ্টা চলছে কিভাবে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করা যায় এসব মুসলিম জনপদকে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে এই ধরনের আগ্রাসনের ঘটনাবলীতে ইতিহাসের পাতা ভরপুর। কিন্তু শিক্ষিত, সত্যপন্থী ও মানবতাবাদী মুসলমানের সংখ্যা নগণ্য হওয়ার কারণে বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত মজলুম জনতা এইসব লােমহর্ষক ঘটনা সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত নয়।
যদি আমরা ইতিহাসের ঘড়ির কাটা কয়েক শতাব্দী পেছনে নিয়ে যেতে পারতাম, তবে কতই না স্পষ্ট হয়ে উঠত বিশ্ব সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান। আবার এর বিনিময়ে মুসলিম জাতিসমূহের প্রাপ্তি ও হারানাের খতিয়ান নিয়েও এত বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতাে না। ইতিহাসের সাথে মুসলিম জাতিসমূহের হিসাব-নিকাশ মিলাতেই যেন আজ আমাদেরকে প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে এই সব অবিশ্বাস্য ঘটনা প্রবাহ। ভাবতে অবাক লাগে যে, বিংশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তে এসে বৃহৎ শক্তিগুলাের প্রত্যক্ষ সহযােগিতায় দুর্বল কয়েকটি মুসলিম জাতির লোেকদেরকে এমন লাঞ্ছনা ও গঞ্জনার শিকার হতে হয়। এমনকি মুসলমানদের মাঝেও এমন শিক্ষিত লােকের অভাব নেই, যারা মনে করেন যে, চেচনিয়া, বসনিয়া ও প্যালেস্টাইনে যা ঘটেছে তার সাথে মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রা ও মানবাধিকারের তেমন বড় ধরনের কোন সম্পর্ক নেই। মুলমানরা সন্ত্রাসী ও মৌলবাদী, তাই তাদের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। এই তত্ত্বে যারা বিশ্বী, তারা যে মানবতার কত বড় শত্র, তা বুঝতে হলে ধর্মীয় ও জাতীয় স্বাধীনতার আইনগত স্বরূপ জানা দরকার।
কোন জাতিকে ধর্মীয় বা অন্য কোন কারণে নিশ্চিহ্ন করার অপরাধ মানব সভ্যতা কখনই বেশিদিন সহ্য করে না। এটিই ধর্ম। ইতিহাস হালাকু, চেঙ্গিস, হিটলার ও স্টালিনকে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত সহ্য করেছে। কাউকে জীবদ্দশায়, আবার কাউকে মৃত্যুর পর ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করা হয়েছে। জাতি বা আদর্শের উপর ভর করে ফ্যাসিবাদী শক্তিও বেশিদিন ইতিহাসে দর্প দেখাতে পারে না। সাম্রাজ্যবাদ ও ইউরােপীয় কমিউনিজমের তাই আজ করুণ পরিণতি। সার্ব, ইংরেজ, রুশ ও কট্টর ইহুদীরা আজ তাই ইতিহাসের কাঠগড়ায় দণ্ডায়মান।
চেচনিয়া, বসনিয়া ও প্যালেষ্টাইনে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতার শত্রুদের বিচার হবে কি-না, এটি আজ এক সার্বজনীন মানব ধর্মীয় প্রশ্ন। সার্ব বাহিনী বলতে বুঝায় এক বিশাল সামরিক ও বেসামরিক বাহিনী। এমন কোন অপরাধ নেই, যা তারা অবলীলাক্রমে সংঘটিত করেনি ইউরােপের কেন্দ্রে বসে। সমগ্র মানব সভ্যতা এর সাক্ষী। কিন্তু সার্ব বাহিনীর সকলের বিচার হওয়া বা করা সম্ভব নয়। তাই শুধু চিহ্নিত কিছু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেই অপসারণের চেষ্টা করতে হবে মানুষের মুখ থেকে পশুর কালিমা। একই কথা সমভাবে প্রযােজ্য অন্যান্য জনপদের যুদ্ধাপরাধীদের বেলায়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এই দায়িত্ব সবার। তবে বৃহৎ শক্তিবর্গ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের দায়িত্ব এখানে সুনির্দিষ্ট। লীগ অব নেশনস দুর্বল দেশসমূহকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েই নিজের মৃত্যু ডেকে এনেছিল। জাতিসংঘের ব্যর্থতার ফিরিস্ত বিগত বছরে অনেক বেশি দীর্থ হয়েছে। আফগানিস্তান, প্যালেষ্টাইন, সােমালিয়া, কাশীর ও আরাকানের ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে যখন হিমশিম খাচ্ছিল জাতিসংঘ, তখন ইন্তিফাদা, বসনিয়া ও চেচনিয়া জাতিসংঘকে এক কঠিন সমস্যায় ফেলে দেয়। প্রতিটি ফ্রন্টেই জাতিসংঘ চরমভাবে ব্যর্থ হয়। তাই ইরাক ও লিবিয়ার ক্ষেত্রে সে এত তৎপর। বসনিয়ার ব্যর্থতা মানব সভ্যতাকে দারুণ লজ্জায় ফেলে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো সুযােগ মত বসনিয়ার সকল দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করে ১৯৯৫ সনের শেষের দিকে। ওয়ারশ চুক্তি ভেঙ্গে পড়লে ন্যাটো তার অস্তিত্বের ব্যাপারে আইনগত ও নৈতিক সমস্যায় পড়ে। জাতিসংঘের জন্যে পাঁচ বছরের মাথায় ন্যাটোর সৃষ্টি আন্তর্জাতিক একক বিশ্ব ব্যবস্থার সাথে সঙ্গতিশীল ছিল না। তবে পরবর্তীতে ১৯৫৪ সনে ওয়ারশ চুক্তিভুক্ত দেশসমূহ ন্যাটোর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করাতে ন্যাটো আন্তর্জাতিকভাবে বৈধতা লাভ করে। স্নায়ুযুদ্ধ উত্তর পৃথিবীর আনাচে-কানাচে আবার যুদ্ধের ডঙ্কা বেজে উঠেছে। এর মধ্যে আফগানিস্তান, বসনিয়া, চেচনিয়া ও প্যালেষ্টাইন সমস্যায় নতুন মাত্র সংযােজিত হয়েছে। বসনিয়ার রাষ্ট্রত্ব (Statehood) নিয়ে বিতর্ক না থাকলেও একে ধ্বংস করার সকল প্রকার চেষ্টা চলেছে। বাহ্যত ডেটন চুক্তি বসনিয়ার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছে। কিন্তু আসলে বসনীয় জনগণের এই স্বস্তি খুবই সাময়িক। উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে বসনিয়া থেকে ন্যাটো সৈন্যবাহিনী প্রত্যাহার করার কথা ।
চরমভাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত কোন জাতি বা দেশকে শত্রুমুক্ত করলেই মূল সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। আফগানিস্তান তার জ্বলন্ত প্রমাণ। রুশ সৈন্যদের বিতাড়িত করার পর আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মুসলিম বিশ্বের চরম অবহেলার শিকার। বসনিয়াতেও একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। চেচনিয়াও ব্যতিক্রম নয়। মুসলিম এ জনপদসমূহের প্রতি মুসলিম রাজা-বাদশা, শাসক ও বুদ্ধিজীবি শ্রেণীর দায়িত্বহীনতা ক্ষমার যােগ্য নয়। তাই মুসলিম বিশ্বের আরাে অনেক জনপদ এই ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। ইন্তিফাদা বা গণজাগরণ তাই এই সব সমস্যার সঠিক সমাধানের পথ । তবে গণজাগরণের ভিতর যাতে অশুভ শক্তি ও কট্টরপন্থী চিন্তা-ভাবনা প্রবেশ করতে না পারে, সেই দিকে বিশেষ নজর দেয়া উচিত। চেচনিয়া, বসনিয়া, ইন্তিফাদা আজ আর নিছক কোন নাম নয়। এই সবই মেহনতি ও নির্যাতিত মানুষের এক করুণ ধ্বনির ঝংকার। এটি শুধুমাত্র কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উথান নয়। এই সবই মানব সভ্যতায় নব দিগন্তের উন্মোচন। আশা করা যায় যে, এই পথ ধরে একবিংশ শতাব্দীর মানব সভ্যতাকে জানাবে নতুন আশীর্বাদ, গড়ে তুলবে অধিকতর সুন্দর সার্বজনীন ও নিরাপদ পৃথিবী। কারণ মজলুমরাই যুগে যুগে ইতিহাসের শুভ শক্তি হতে সমর্থ হয়েছে। দূর করতে পেরেছে জুলুমবাজি ও ধনিক শ্রেণীর আস্ফালন। আমরা সেই অনাগত শুভশক্তির আগমনকে আলিঙ্গন করতে চাই। অপশক্তি ও পরাশক্তির খােলসে প্রচলিত অন্যায়, অবিচার ও নির্যাতনের অবসানকল্পে তীব্র প্রতিরােধ আন্দোলন দেখতে চাই। তাই আমাদের এই প্রয়াস। মানব ও প্রকৃতি দরদী মানুষের সত্যনিষ্ঠ কার্যকলাপ ও চিন্তা ভাবনার ক্ষেত্রে আশা করি আমাদের এই প্রয়াস নিরর্থক হবে না। বিচারের ভার অবশ্য পাঠরে কাঁধেই অর্পিত হলাে।
উঃ মােঃ মাইমুল আহসান খান
চেয়ারম্যান আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নভেম্বর, ১৯৯৭ইং
- প্রিয়তে যোগ করতে লগিন করুন
- লাইব্রারীতে যোগ করতে লগিন করুন
পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।
দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি