ঈমান
‘ঈমান’ আরবী শব্দ। এর বাংলা অর্থ ‘বিশ্বাস’। আমরা বিশ্বাস শব্দটি সবাই বলি। কিন্তু এর সঠিক অর্থ বুঝতে হবে। আমরা জ্ঞানের চারটি উৎসের আলোচনায় জেনেছি যে, পাঁচটি ইন্দ্রিয় দিয়েই আমরা সরাসরি জ্ঞান লাভ করি। পাঁচটি ইন্দ্রিয়-চোখ, কান, নাক, জিহ্বা ও চামড়া দিয়ে খুব সামান্য জ্ঞানই আমরা পেয়ে থাকি। যখন সরাসরি জ্ঞানে (Direct knowledge) কোনো বিষয় জানতে পারি না, অথচ ঐ বিষয়ে আমাকে সিদ্ধান্ত নিতেই হচ্ছে তখন বাধ্য হয়ে পরোক্ষ জ্ঞানের (Indirect knowledge) সাহায্য নিতে হয়। পরোক্ষ জ্ঞানের সাহায্যে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তারই নাম ‘বিশ্বাস’।

একটি সহজ উদাহরণ দিচ্ছি- আমার পরিচিত এক লোক এসে বলল, ‘ভাই আমাকে ৫০০ টাকা কর্জ দাও, আমি এক সপ্তাহ পর ফেরত দেব।’ এক সপ্তাহ পর সে ফেরত দেবে কি না, সে বিষয়ে তো আমার সরাসরি জ্ঞান নেই। আমি টাকা ধার দেব কি দেব না, সে বিষয়ে কেমন করে সিদ্ধান্ত নেব? আমাকে তো একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হবে- হয় তাকে বিশ্বাস করে টাকা ধার দেব, আর বিশ্বাস না হলে দেব না। এ সিদ্ধান্ত আমি কেমন করে নেব? তার সম্বন্ধে আমি যতটুকু জানি তাতে যদি আমার ধারণা হয়, তাকে টাকা দিলে ফেরত পাওয়া যবে তাহলে ধার দেব। আর যদি মনে হয, এ লোক ফেরত দেবে না তাহলে ধার দেব না। সত্যি ফেরত দেবে কি না তা সরাসরি জানার উপায় নেই। পরোক্ষ জ্ঞানের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।

এ উদাহরণ থেকে বুঝতে হবে, ‘বিশ্বাস’ মানে কী? ‘বিশ্বাস’ বললে কী বোঝায়? ‘বিশ্বাস’ এর সংজ্ঞা কী? তা হলো চারটি কথাঃ

১. সে বিষয়ে সরাসরি জ্ঞান নেই।

২. অথচ সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।

৩. তাই পরোক্ষ জ্ঞান ছাড়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপায় নেই।

৪. পরোক্ষ জ্ঞানের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এরই নাম ‘বিশ্বাস’।

লোকটির উপর বিশ্বাস হলে ধার দেব, অবিশ্বাস হলে দেব না। এখানে মজার ব্যাপার হলো, অবিশ্বাসটাও এক রকমের বিশ্বাস। একটি ইতিবাচক, বিশ্বাস, অপরটি নেতিবাচক। অবিশ্বাস মানে এ বিশ্বাস যে, সে টাকা ফেরত দেবে না। টাকা দেওয়া ও না দেওয়া দুটোই বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে।

এবার একটা বড় উদাহরণ দিচ্ছি। মৃত্যুর পর আবার জীবিত হতে হবে কিনা, এ বিষয়ে সরাসরি জানার উপায় নেই। অথচ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ‘‘আখিরাত থাকলে থাকুক না থাকলে না থাকুক আমার কী’’- এভাবে উড়িয়ে দেওয়ার মতো বিষয় এটা নয়। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। আল্লাহ তাআলা ওহীর মাধ্যমে বহু পরোক্ষ জ্ঞান দান করেছেন; যার ফলে মানুষ আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়। আল্লাহর দেওয়া মযবুত যুক্তি বুঝলে বিশ্বাস না করে পারা যায় না।

এ দুটো উদাহরণ থেকে আমরা সহজভাবে বিশ্বাস বা ঈমানের অর্থ বুঝতে পারলাম।

বিশ্বাস ছাড়া কি চলা যায়?
পাঁচ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে এত সামান্য বিষয় জানা যায় যে, বিশ্বাস ছাড়া মানুষ একদিনও চলতে পারবে না। আমার মা কে, বাবা কোন্‌ জন- এ বিষয়ে আমার কি সরাসরি জ্ঞান আছে? বিশ্বাস ছাড়া উপায় কী? স্ত্রী যে খাবার খেতে দিল তাতে বিষ আছে কি না, তা তদন্ত করে কি খাই? বিশ্বাস না হলে খাওয়াই বন্ধ। অসুখ হলে ডাক্তার ওষুধ দেয়। এ ওষুধে কাজ হবে কি না, তা কি সরাসরি জানি? বিশ্বাস করেই ওষুধ খেতে হয়। চাষী জমিতে ফসসল বুনে। এবার ফসল হবে কি না, তা সে জানে না। গতবার হয়েছে, এর আগের বারও হয়েছে। তাই বিশ্বাস হয় যে, এবারও হবে। এ বিশ্বাস না হলে কি চাষী ফসল বুনতে পারবে? একটু চিন্তা করলেই সবাই বুঝতে পারবে যে, বিশ্বাস ছাড়া মানুষের জীবন অচল।

বিশ্বাস ও কর্ম দু’রকম হয় না
এ কথা খুবই সত্য যে, মানুষ যে রকম বিশ্বাস করে সে রকম কাজই করে। বিশ্বাস ও কর্মের সম্পর্ক অতি নিকটবর্তী। টাকা ধার দিলে ফেরত পাওয়া যাবে না বিশ্বাস হলে কর্ম সে রকমই নেতিবাচক হবে- যার এ বিশ্বাস সে অবশ্যই ধার দেবে না। তাই মানুষের কর্ম থেকেই তার বিশ্বাস কেমন তা বোঝা যায়। যে নিজেকে মুসলমান মনে করে, অথচ নামাযের ধার ধারে না- বোঝা যাবে যে, তার ঈমান অতি দুর্বল। যে আখিরাতে বিশ্বাস করে বলে দাবি করে, সে ইচ্ছা করে জেনে-শুনে মন্দ কাজ করতে পারে না। যদি মন্দ কাজ করে তাহলে মনে করতে হবে যে, তার বিশ্বাসে গোলমাল আছে। হয়ত সে মনে করে, মরার আগে তাওবা করলেই মাফ হয়ে যাবে। কর্ম ও বিশ্বাসে বেমিল থাকলে বুঝতে হবে যে, বিশ্বাস সঠিক হয়নি।

মুসলিম হতে হলে যা বিশ্বাস করা জরুরি
কেউ যদি ইসলাম কবুল করতে চায় বা মুসলিম হতে চায়, তাহলে তাকে ৭ টি বিষয়ে বিশ্বাস করতে হবে, যার পরোক্ষ জ্ঞান কুরআন ও হাদীসে আছে। তাকে ঘোষণা করতে হবেঃ

‘‘আমানতু বিল্লাহি ওয়ামালাইকাতিহি, ওয়াকুতুবিহী, ওয়ারাসূলিহি, ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি, অল ক্বাদরি খাইরিহি, অশাররিহী, মিনাল লাহি তাআলা ওয়াল বা’অছি বা’দাল মাউত।’’

এর অর্থ হলো, আমি ৭ টি বিষয়ের উপর ঈমান এনেছিঃ

১. আল্লাহ, ২. তাঁর ফেরেশতাগণ, ৩. তাঁর কিতাবসমূহ, ৪. তাঁর রাসূলগণ, ৫. আখিরাতের দিন, ৬. তাকদীর-এর ভালো ও মন্দ আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়, ৭. মৃত্যুর পর আবার জীবিত হওয়া।

এ ৭টির সংক্ষিপ্ত পরিচয়

১. আল্লাহঃ যিনি আসমান, জমিন এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে সবই পয়দা করেছেন। আল্লাহই তাঁর আসল নাম। তাঁর গুণবাচক নাম রয়েছে। অন্যান্য ধর্মও বিশ্বাস করে যে, সব কিছুর স্রষ্টা একজনই। খ্রিস্টানরা তাঁকে গড (God) নামে ডাকে। হিন্দুরা বলে ঈশ্বর বা ভগবান।

২. ফেরেশতাঃ ফেরেশতারা আল্লাহর কর্মচারী; তাঁরা ভালো মন্দ সম্পর্কে জানেন। কিন্তু তাঁরা সব সময়ই আল্লাহর হুকুম পালন করেন। তাঁরা কখনও আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে চলেন না। আল্লাহর কোনো গুণের সাথেই তাঁরা কোনো দিক দিয়ে শরীক নন। তাঁরা শুধুই কর্মচারী।

৩. কিতাবঃ রাসূলগণের নিকট ওহীর মাধ্যমে আল্লাহ কিতাব নাযিল করেছেন। শেষ রাসূলের নিকট কুরআন নাযিল করা হয়েছে। পূর্বের কিতাবগুলোর কোনোটাই আসল অবস্থায় নেই। আল্লাহ তাআলা কুরআনকে কিয়ামত পর্যন্ত আসল অবস্থায় হেফাযত করার দায়িত্ব নিয়েছেন।

আমাদেরকে হুকুম করা হয়েছে, যেন আমরা একমাত্র কুরআনকে মেনে চলি। কিন্তু আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ সকল নবী ও রাসূলের কাছেই ওহী পাঠিয়েছেন।

৪. রাসূলগণঃ এ কথা বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন। তবে একমাত্র শেষ নবীকেই মেনে চলতে হবে।

৫. আখিরাতের দিনঃ যেদিন সব মানুষকে হাশরের ময়দানে একত্র করা হবে, সে দিনকেই আখিরাতের দিন বলা হয়েছে। সেখানে সব মানুষের বিচার হবে এবং ফায়সালা হবে যে, কে বেহেশতে যাবে, আর কে দোযখে যাবে।

৬. তাকদীরঃ এ শব্দটির অর্থ হলো যা নির্ধারিত হয়ে আছে। এ কথা বিশ্বাস করতে হবে যে, দুনিয়ায় তা-ই ঘটে যা আল্লাহ ঠিক করে রেখেছেন। ভালো ও মন্দ যা-ই ঘটে আল্লাহর ফায়সালামতোই ঘটে থাকে। তাঁর ইচ্ছা ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না।

তাকদীর সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হওয়া ঈমানের জন্য খুবই জরুরি। দুটো কথা বুঝে নিলেই এ বিষয়ে কোনো অস্পষ্টতা থাকবে নাঃ

ক. আল্লাহ তাআলা মানুষকে কোনো কাজ সমাধা করার ক্ষমতা দেননি। মানুষ কোনো কাজের জন্য ইচ্ছা ও চেষ্টা করতে পারে মাত্র। কাজটি পুরা হওয়া আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। যদি তাকদীরে থাকে তাহলে সমাধা হবে। তাকদীরে না থাকলে কাজটা সম্পন্ন হবে না।

খ. কোনো কাজের শুধু ইচ্ছা ও চেষ্টা করার ক্ষমতাই মানুষকে দেওয়া হয়েছে। তাই যদি মানুষ কোনো ভঅলো কাজের ইচ্ছা ও চেষ্টা করে তাহলে কাজটা সমাধা না হলেও সে কাজটা পুরা করেছে বলে পুরস্কার পাবে। তেমনিভাবে যদি সে কোনো খারাপ কাজের ইচ্ছা কের এবং তা করার চেষ্টা অব্যাহত রাখে, তাহলে কাজটা পুরা না হলেও সে শাস্তি পাবে। কাজটা সমাধা করার ক্ষমতা তো মানুষকে দেওয়াই হয়নি। যেটুকু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এ ভিত্তিতেই পুরস্কার বা শাস্তি পাবে।

যেমন- কেউ যদি হজ্জে যাওয়ার ইচ্ছা ও চেষ্টা করে এবং কাবার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যায়, কিন্তু পথেই মারা যায় তাহলে সে হজ্জ করার পুরস্কার পাবে। কারণ, তার ক্ষমতা যতটুকু আছে ততটুকু সে করেছে।

তেমনিভাবে কেউ কাউকে মেরে ফেলার জন্য ইচ্ছা করে এবং শাবল হাতে নিয়ে মাথার উপরে তুলে মারার চেষ্টা করে, কিন্তু দু’জন লোক দৌঁড়ে এসে ধরে ফেলার কারণে মারতে না পারে তাহলে মেরে ফেলার ইচ্ছা ও চেষ্টা করার দোষে আদালতে সে শাস্তি পাবে।

এ দ্বারা প্রমাণ হয়, পুরস্কার ও শাস্তি পাওয়ার জন্য কাজটি সমাধা হওয়া জরুরি নয়। ইচ্ছা ও চেষ্টা করা হলেই পুরস্কার বা শাস্তি পাবে। তাকদীরের সাথে পুরস্কার ও শাস্তির কোন সম্পর্ক নেই। তাকদীর আল্লাহর হাতে।

৭. মৃত্যুর পর আবার জীবিত হওয়াঃ মানুষের শরীরটাই শুধু মরে। আসল মানুষ ‘রূহ’ মরে না। কিয়ামতের পর সব মানুষকে হাশরের ময়দানে একত্রিত করা হবে। দুনিয়ার কাজের হিসাব নেওয়া হবে এবং বিচারের পর বেহেশত কিংবা দোযখে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

এ সাতটি বিষয়ে সরাসরি কোনো জ্ঞান মানুষের নেই। তাই কুরআন ও হাদীসের পরোক্ষ জ্ঞানের সাহায্যেই এ সবের উপর ঈমান আনতে হয়। [মাওলানা মওদূদীর লেখা ‘ইসলাম পরিচিতি’ বইটতে ঐ সাতটি বিষয়ের পরোক্ষ জ্ঞান সম্পর্কে অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল ভাষায় বিবরণ দেওয়া হয়েছে।]

তাওহীদ-রিসালাত-আখিরাত
ঈমানের ঐ ৭টি বিষয় তিনটি বিষয়ের মধ্যেই শামিল রয়েছে।

১. তাওহীদের মধ্যে আল্লাহ, ফেরেশতা ও তাকদীর শামিল রয়েছে।

২. রিসালাতের মধ্যে আছে কিতাবসমূহ ও রাসূলগণ।

৩. আখিরাতের মধ্যে মৃত্যুর পরের জীবন ও বিচারের দিন।

‘তাওহীদ’ মানে একক। এ শব্দটি ‘শিরক’ শব্দের বিপরীত। আল্লাহর সাথে কোনো দিক দিয়েই আর কোনো সত্তা শরীক নেই। আল্লাহ তার সত্তা, গুণাবলী, ক্ষমতা ও অধিকারে একক। এর কোনোটাতেই আর কোনো সৃষ্টি শরীক নয়। ফেরেশতাসহ সকল সৃষ্টি আল্লাহর অধীন। শির্‌ক মানে শরীক করা। আল্লাহর কোনো সৃষ্টিকে কোনো দিক দিয়ে আল্লাহর সাথে শরীক মনে করা সবচেয়ে বড় গুনাহ যা তিনি মাফ করবেন না বলে কুরআনে একাধিকবার ঘোষণা করেছেন।

ফেরেশতাদেরকে কাফিররা আল্লাহর কন্যা বলে বিশ্বাস করত। আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদেরকে দেব-দেবী বলে বিশ্বাস করে- এ সবই শির্‌ক। অন্ধকারের বিপরীত যেমন আলো, তেমনি শির্‌কের বিপরীত হলো তাওহীদ। অন্ধকার মানে আলো নেই। আলো মানে অন্ধকার নেই। শির্‌ক থাকলে তাওহীদ নেই। তাওহীদ থাকলে শির্‌ক নেই।

আল্লাহর সাথে সম্পর্ক
যখন কেউ আল্লাহর উপর ঈমান আনে তখন তার পরিচয় হয়ে যায় ‘মুমিন’। কুরআনে ‘ইয়া আইয়ুহাল্‌লাযীনা আমানূ’ কথাটি দিয়ে বহু আয়াত শুরু হয়েছে। এর অর্থ হলো, ‘হে ঐসব লোক, যারা ঈমান এনেছ!’ এসব আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঈমানদার হিসেবে ডাক দিয়ে কথা বলেন।

কুরআনের শেষ সূরাটির নাম ‘আন্‌ নাস’। এ সূরাটিকে আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন যে, আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক তিন রকমের- রাব্বিন্‌ নাস, মালিকিন্‌ নাস ও ইলাহিন্‌ নাস।

১. তিনি মানুষের রব। ২. তিনি মানুষের বাদশাহ। ৩. তিনি মানুষের ইলাহ।

সত্যিকার ঈমানদার হতে হলে এ তিন রকমের সম্পর্কের মর্ম বুঝতে হবে। আমি যদি ঈমানদার বলে দাবি করি তাহলে এ কথা খেয়াল রাখতে হবে যে-

১. আল্লাহর সাথে আমার পয়লা সম্পর্ক হলো, তিনি আমার রব। রব শব্দের অর্থ হলো যিনি লালন-পালন করেন। তিনি আমাকে মায়ের পেটে ১০ মাস লালন-পালন করেছেন। পয়দা হওয়ার সাথে সাথে মায়ের বুকে আমার খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। প্রতি মুহূর্তে তিনি আমাকে লালন-পালন করেছেন। নিঃশ্বাস বন্ধ হলেই আমি মরে যাব। তিনি আমার নিঃশ্বাস জারি রেখেছেন বলেই আমি বেঁচে আছি। তিনি যতদিন আমার হৃদ্‌পিণ্ডকে চালু রাখেন ততদিনই বেঁচে থাকব। এমন রবকে কি ভোলা যায়? মায়ের স্নেহ-মমতা কি ভোলা যায়? যে রব আমার মায়ের মনে এমন মায়া দিলেন তাঁকে তো সব সময়ই মনে রাখা উচিত। তাই তিনি নামাযে রুকু ও সিজদায় ‘আমার রব’ ‘আমার রব’ জপ করার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি ‘রাব্বুল আলামীন’, তথা সারা জাহানের রব। তবু আমাকে ‘আমার রব’ বলার অনুমতি দিয়ে আপন করে কাছে টেনে নিলেন। শিশু ‘আমার আম্মু’ ‘আমার আব্বু’ না বললে তৃপ্তি পায় না; যদিও আম্মু তার একার নয়, আরও ভাই-বোন তার আছে।

২. দ্বিতীয় সম্পর্ক হলো, তিনি আমার বাদশাহ। তাঁরই রাজ্যে আমি আছি। তিনি যদি আমার উপর খুশি থাকেন তবেই আমি সুখে থাকতে পারব। তাই সুখ পেতে হলে আমার এমন কিছু করা উচিত নয়, যা তিনি অপছন্দ করেন। এ বিষয়ে সব সময় আমাকে সাবধান থাকতে হবে।

৩. তৃতীয় সম্পর্ক হলো, তিনি আমার ইলাহ। আমাদের দেশে ইলাহ শব্দের যে অর্থ চালু আছে তা হলো ‘উপাস্য’। উপাস্য মানে উপাসনা বা পূজার পাত্র, যার উপাসনা বা পূজা করা হয়। যদি এ অর্থ মেনে নেওয়া হয় তাহলে বুঝতে হবে যে, শুধু উপাসনা করার সময় তাঁর সাথে আমার সম্পর্ক, অন্য সময় কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ তিনি যেমন আমার সব সময়ই রব এবং বাদশাহ তেমনি সব সময়ই ইলাহ। তাই ইলাহ শব্দের ‘উপাস্য’ অর্থ করা একেবারেই ভুল।

ইলাহ শব্দের সমমর্যাদায় আরবীতে আরেক শব্দ হলো মা’বুদ। মা’বুদ মানে মনিব। আবদ মানে দাস, মা’বুদ মানে যার দাসত্ব করা হয়। দাস হলো হুকুমের গোলাম, আর মা’বুদ হলো দাসের হুকুমকর্তা। এ অর্থে ইলাহ মানে হুকুমদাতা বা হুকুমকর্তা। হুকুমকর্তা অনেক আছে, যেমন-পিতা-পাতা, অফিসের বস, সরকার ইত্যাদি। কিন্তু তারা হুকুমকর্তা হলেও প্রভু বা মনিব নয়। আল্লাহ তাআলা হুকুমকর্তা প্রভূ। তাই আল্লাহর হুকুমের বিরোধী কোনো হুকুম যদি কোনো হুকুমকর্তা দেয় তাহলে সে হুকুমকর্তাকে মানা যাবে না। কেননা, আল্লাহ তাআলাই একমাত্র হুকুমকর্তা প্রভু। তাহলে ইলাহ শব্দের অর্থ দাঁড়াল ‘একমাত্র হুকুমকর্তা প্রভু’।

আল্লাহ আমার ইলাহ- এ কথার মর্ম অনেক গভীর। তিনি সব সময় আমার একমাত্র হুকুমকর্তা প্রভু। অন্য কোনো হুকুমকর্তা আমার প্রভুর হুকুমের বিরোধী কোনো হুকুম করলে তা আমি কিছুতেই মানব না।

গোটা বিশ্বের স্রষ্টা ও প্রভুর সাথে আমার মতো নগণ্য দাসের এ তিন রকম সম্পর্কের সুযোগ দিয়ে আল্লাহ তাআলা আমাকে যে বিরাট গৌরব ও মর্যাদা দান করেছেন, তা এক মুহূর্তও কি ভুলে থাকা উচিত?

তিনি আমার প্রতিপালক, আমি প্রতিপালিত। তিনি আমার বাদশাহ, আমি তাঁর প্রজা, তিনি আমার একমাত্র হুকুমকর্তা প্রভু আর আমি তার হুকুমের গোলাম। এ চেতনাই ঈমানের প্রাণ। এ চেতনা সজাগ থাকলে ঈমান মযবুত থাকবে।

তফাজ্জল হোসাইনের লেখা একটা গানের দুটো লাইন এখানে উল্লেখ করছি-

‘‘আল্লাহ আমার রব, এই রবই আমার সব।

দমে দমে তনুমনে তাঁরই অনুভব।’’

নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে ও দেহমনে এ কথা অনুভব করাই হলো চেতন।

ঈমান কীভাবে দুর্বল হয়?
নাফ্‌স ও রূহের মধ্যে যে লড়াই চলে সে আলোচনা থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, রূহ দুর্বল থাকলে নাফ্‌স জয়ী হয়। নাফ্‌সের জয়ই হলো ঈমানের দুর্বলতা। ঈমান দুর্বল হলেই নাফ্‌সের জয় হয় আর রূহের পরাজয় হয়।

সূরা আলে ইমরানের ১৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘‘মানুষের জন্য তাদের পছন্দসই জিনিসের মধ্যে- নারী, সন্তান-সন্ততি, সোনা-রূপার স্তূপ, বাছাইকৃত ঘোড়া, পালিত পশু ও চাষের জমি খুবই কামনার বিষয় বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

এসবই দেহ বা নফ্‌সের জন্য লোভনীয়। একদিকে নাফ্‌স মানবদেহকে এদের দিকে টেনে নেয়, অপরদিকে রূহ আল্লাহর দিকে টানে। রূহের এ টান আছে বলেই কতক মানুষ দুনিয়ার সব মজা ছেড়ে দিয়ে বৈরাগী বা সন্ন্যাসী হয়ে জঙ্গলে চলে যায়। দুনিয়া ত্যাগ করা কি সহজ? তাঁরা মনে করেন যে, দুনিয়ার লোভনীয় জিনিসের মধ্যে থাকরে রূহের ডাকে সাড়া দেওয়া সম্ভব নয়। তাই তারা দুনিয়া থেকে পালিয়ে নাফ্‌সের তাড়না থেকে বাঁচতে চায়। জঙ্গলে গাছের নিচে পাথরের উপর বসে আল্লাহ বা ঈশ্বরের যিক্‌র ও ধ্যানে ডুবে থাকে।

কিন্তু এ পথ আল্লাহ মোটেই পছন্দ করেন না। তিনি যাদেরকে নবী হিসেবে পাঠিয়েছেন তাঁরা মানুষকে বৈরাগী হওয়ার শিক্ষা দেননি। কুরআনে বারবার বলা হয়েছে, আসমান-জমিনের সকল সৃষ্টিই আল্লাহর তাসবী জপে। সন্ন্যাসী যে গাছের নিচে পাথরের উপর বসে তাসবীহ জপছে, ঐ গাছ এবং পাথরও যিক্‌র করছে; কিন্তু গাছ ও পাথরের মতো নীরবে যিক্‌র করার জন্য তো মানুষকে পয়দা করা হয়নি। মানুষকে তো খিলাফতের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে। তাই আসল দায়িত্ব বাদ দিয়ে যারা গাছ ও পাথরের মতো হওয়ার চেষ্টা করে, তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে। আল্লাহ বলবেন, তোকে তো গাছ ও পাথর বানাইনি; মানুষ বানিয়েছি। গাছ-পাথর হতে গেলি কেন? সংসারত্যাগীদেরকে ফারসি ভাষায় ‘দরবেশ’ বলা হয়। আসলে আল্লাহর কাছে তাদের দর খুবই কম, বেশি নয়। দুনিয়ার টান থাকা সত্ত্বেও যার দুনিয়ার গোলাম না হয়ে আল্লাহর গোলাম হতে পারে তাদের কৃতিত্বের জন্যই তারা বেহেশতে যাবে। ফেরেশতাদের গুনাহ করার ক্ষমতাই নেই। তাই সবসময় আল্লাহর হুকুম পালন করা সত্ত্বেও তাঁদেরকে পুরস্কার দেওয়া হবে না। কারণ, এতে তাদের কোনো কৃতিত্ব নেই।

আল্লাহ তাআলা সূরা তাওবার ২৪ নং আয়াতে আটটি জিনিসের তালিকা দিয়েছেন। যথা- পিতা, পুত্র, ভাই, স্ত্রী, আত্মীয়, কামাই করা সম্পত্তি, আয়-রোজগারের মাধ্যম ও বাড়ি। এ ৮ টি জিনিসকে ভালোবাসার দায়িত্ব মানুষকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ ৮ টির ভালোবাসা যদি অন্য তিনটির চেয়ে বেশি হয় তাহলেই ঈমান দুর্বল বলে প্রমাণিত হবে। ঐ ৩ টি হলো আল্লাহ, রাসূল ও আল্লাহর পথে জিহাদ (ইসলামী আন্দোলন বা ইসলামকে বিজয়ী করার চেষ্টা)। ঐ ৮ টি জিনিসের প্রতি ভালোবাসা থাকা দূষণীয় নয়, বরং কর্তব্য। এ সবের ভালোবাসা ত্যাগ করে বৈরাগী হয়ে গেলেও অপরাধ হবে। আবার এ কয়টির প্রতি ভালোবাসার পরিমাণ পরের তিনটির চেয়ে বেশি হলেই অপরাধ।

একটা সুন্দর উদাহরণ দিচ্ছিঃ পানি ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। তাই বলা হয, পানির অপর নাম জীবন। প্রশ্ন হলো, পানিই যদি জীবন হয় তাহলে পানিতে ডুবে মানুষ মরে কেন? এতে বোঝা গেল, পানি জীবন নয়। পানির একটা নির্দিষ্ট পরিমাণই হলো জীবন। ঐ পরিমাণের বেশি হলেই মরণ। পানিই জীবন, আবার পানিই মরণ। এ জীবন-মরণ পানির পরিমাণের উপর নির্ভর করে।

তেমনিভাবে ঐ ৮ টি জিনিসের ভালোবাসা যদি পরিমাণমতো হয় তাহলে ঈমানের জীবন; আর পরিমাণের বেশি হলেই ঈমানের মরণ।

আল্লাহ তাআলা ঐ আয়াতে সহজ কথায় বুঝিয়ে দিলেন যে, আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের তরীকামতো চললে এবং দুনিয়ায় শয়তানের রাজত্ব উৎখাত করে আল্লাহর খিলাফত কায়েমের চেষ্টা করতে গেলেই প্রমাণ হবে যে, ঈমান দুর্বল না সবল। ঐ আটটির কারণে যদি এ তিনটির প্রতি দায়িত্বে অবহেলা করা হয় তাহলে বোঝা যাবে যে, ঈমান দুর্বল।

ইলম
আরবী ‘ইলম’ শব্দের বাংলা হলো বিদ্যা বা জ্ঞান। কুরআন ও হাদীসে ইলম শব্দ দ্বারা ওহীর ইলম বোঝানো হয়েছে। রাসূল সা. বলেছেন, ইলম তালাশ করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয। এখানে ইলম অর্থ যদি সব বিদ্যাই হয় তাহলে কেউ এ ফরয আদায় করতে পারবে না। ডাক্তারী বিদ্যা, ইঞ্জিনিয়রিং বিদ্যা, কৃষিবিদ্যা ইত্যাদি শেখা সবার উপর ফরয হতে পারে না। তাই এ হাদীসে যে ইলম হাসিলের চেষ্টা করাকে ফর্‌য বলা হয়েছে তা অবশ্যই ওহীর ইলম।

কতটুকু ইলম ফরয?
ওহীর ইলম তো বিশাল। ৩০ পারা কুরআন ও লাখ লাখ হাদীস মিলে ওহীর ইলম। সবটুকু ইলম ফরয হতে পারে না। নবী ছাড়া অন্য কারো ওহীর সবটুকু ইলম জানা নেই। এ বিষয়টি সঠিকভাবে বোঝা সবার জন্য বড়ই জরুরি। কতটুকু ইলম ফরয? এ প্রশ্নের সহজ জবাব হলো, যার উপর যে দায়িত্ব আসে তা পালন করার জন্য যতটুকু ইলম জরুরি ততটুকু হাসিল করাই ফরয।

কালেমা তাইয়েবাতে আমরা দু’দফা ওয়াদা করেছি যে, জীবনে সব সময় আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের তরীকা মেনে চলব। তাই আমাদের যে দায়িত্বই পালন করতে হয়, মুসলিম হিসেবে তা পালন করতে হলে ঐ ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম কী ও রাসূলের তরীকা কী- তা জেনে নেওয়া ফরয। তা না হলে কাফিরের মতোই দায়িত্ব পালন করা হবে।

যার উপর যাকাত দেওয়া ফরয নয় তার ওপর যাকাতের ইলম হাসিলও ফরয নয়। যাকাত দেওয়ার দায়িত্ব আসলে সে ইলম ফরয হয়ে যাবে। যে বিয়ে করেনি, মুসলিম স্বামী বা স্ত্রী হিসেবে কিভাবে চলতে হবে সে ইলম তার উপর ফরয নয়। বিয়ে করার সাথে সাথে দু’জনের উপর তা ফরয হয়ে যাবে।

যে ব্যবসা করে তাকে এ বিষয়ে ওহীর ইলম জানতে হবে। তা না হলে কাফির ব্যবসায়ীর মতোই ব্যবসা করবে- যদিও সে পাক্কা নামাযী ও রোযাদার হয়। যে দেশ শাসনের দায়িত্ব পালন করছে, সে যদি মুসলিম শাসকের মর্যাদা পেতে চায় তাহলে রাসূল সা. কিভাবে শাসন করেছেন তা তাকে জানতে হবে। তা না হলে সে কাফির শাসকের মতোই দেশ শাসন করবে। যখন কারো সন্তান পয়দা হয় তখন মুসলিম পিতা ও মাতার দায়িত্ব পালন করতে হলে এ বিষয়ে ওহীর ইলম হাসিল করতেই হবে।

ওহীর নফল ইলম হাসিলের মূল্য কী?
যে কাজ ফরয সে কাজ যদি ফরযের চেয়ে বেশি করা হয় তাহলে তাকে নফল বলা হয়। নফল শব্দের অর্থ অতিরিক্ত। ওহীর যে ইলম ফরয নয় ঐ ইলম যদি কেউ শেখে তাহলে শরীআতে এর মূল্য কী? ইসলামী সকল বিধি-বিধানকে এক শব্দে আরবীতে ‘শরীআত’ বলা হয়।

যার ওপর হজ্জ ফরয নয়, সে যদি হজ্জের ইলম জেনে নেয় তাহলে কি সে কোনো বেহুদা কাজ করল? আমার ওপর দেশ শাসনের দায়িত্ব নেই; আমি এ বিষয়ে যেটুকু ইলম হাসিল করলাম, এর কি কোনো মূল্য নেই?

একটি হাদীস থেকে এর মূল্য জানা যায়। রাসূল সা. বলেছেন, ‘‘রাতের কিছু সময় ইলম শেখা ও শেখানো সারা রাত অন্য নফল আমল করার চেয়ে ভালো।’’

এ হাদীস থেকে জানা গেল যে, ওহীর ইলম চর্চা করা অন্য সব নফল আমলের তুলনায় বেশি মূল্যবান। তাই আমাদের উচিত, সবসময় ইসলামী বই সঙ্গে রাখা। যখনই এমন হয় যে, হাতে কোনো কাজ নেই তখনই ইসলামী বই পড়ে সময়টা এমন কাজে লাগাতে পারি, যা অনেক মূল্যবান।

শরীআতে অন্যান্য বিদ্যার মূল্য আছে কি?
মুসলমানের জীবনকে তো শরীআতমতোই চালাতে হবে। কেউ যদি ডাক্তারি বিদ্যা শেখে তাহলে শরীআতের হিসাবে এর কি কোনো মূল্য নেই? সে কি শরীআতের বাইরে চলে গেল?

একটি হাদীস থেকে এ প্রশ্নের জবাব পাওযা যায়। রাসূল সা. বলেছেন, ‘‘হালাল কামাই করার চেষ্টা করা সব ফরযের পর ফরয।’’ এতে জানা গেল, নামায, রোযা ও অন্যান্য যত ফরয আছে সেসব যেমন ফরয, হালাল রোজগারের চেষ্টা করাও তেমনি ফরয।

রুজি-রোজগার করতে হলে কোনো একটা পেশা বাছাই করে নিতে হয়। যে পেশাই বাছাই করা হোক, এর জন্য যে বিদ্যা দরকার তা শিখতেই হয়। যে চিকিৎার পেশা গ্রহণ করে তাকে ডাক্তরি বিদ্যা শিখতে হয়। যদি সে হালালভাবে কামাই করতে চায় তাহলে তাকে ঐ বিদ্যা ভালো করে শিখতে হবে। ডাক্তারি বিদ্যা ঠিকমতো না শিখে যদি চিকিৎসা করে রোগীর কাছ থেকে টাকা নেয় তাহলে তার আয় হালাল হবে না। তাই তার আয় হালাল করার জন্যই এ বিদ্যা শিখতে হবে। শরীআতের হিসাবে ডাক্তারি বিদ্যা ফরয নয়; কিন্তু যে চিকিৎসাকে পেশা বানিয়েছে তার রোজগারকে হালাল করার জন্যই ঐ বিদ্যা শেখা তার উপর ফরয।

এ উদাহরণ থেকে প্রমাণ হলো, মানুষের হালাল কামাই করার জন্য যেসব বিদ্যা শিখতে হয় তা সরাসরি ফরয না হলেও পরোক্ষভাবে ফরয। এসব বিদ্যা শেখা বেহুদা কাজ নয়। মানুষের খিদমতের জন্য যত রকমের পেশা দরকার সেসবের বিদ্যা পরোক্ষভাবে তাদের ওপর ফরয, যারা ঐসব পেশা গ্রহণ করে। যেসব পেশা হারাম সেসবের বিদ্যা শেখাও হারাম। যেমন- গণকি পেশা।


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি