সহীহ ইলমের উৎস
উপরে যে চারটি জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে এ সবের মধ্যে একমাত্র ওহীর জ্ঞানকেই নিশ্চিতরূপে সহীহ মনে করতে হবে। অন্য তিনটি উৎস থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান শুদ্ধও হতে পারে, অশুদ্ধও হতে পারে। তাই ওহীর জ্ঞানের কষ্টিপাথরে যাচাই করেই অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান সহীহ কিনা, সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বিশ্বের জ্ঞান ভাণ্ডার বিশাল ও ব্যাপক। যুগে যুগে বহু মনীষীর চিন্তার ফসল হলেও ওহীর কষ্টিপাথারে যাচাই না করে তি পরিত্যাগ করা মোটেই উচিত নয়। আর মুসলিম কোনো মনীষীর মাধ্যমে প্রাপ্ত জ্ঞানকেও ওহীর মানদন্ডে যাচাই করে সহীহ বলে গ্রহণ করা উচিত নয়।
তাই মানব জাতিরমধ্যে প্রতিটি ওহীর জ্ঞানে সমৃদ্ধ একদল মানুষ সকল যুগেই গড়ে তোলা প্রয়োজন। বিশেষ করে যারা নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করবে তারা ওহীর জ্ঞানে আলোকিত না হলে মানব সমাজের কেমন দুর্দশা হয় তা আধূনিক বিশ্বে বাস্তব প্রমাণিত।
কোন ইলম তালাশ করা ফরয?
রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন: ++
প্রত্যেক মুসলিমের (নর নারী) উপর ইলম তালাশ করা ফরয।এখানে ইলম দ্বারা একমাত্র ওহীর ইলম বুঝতে হবে। দুনিয়ার সকল ইলম হাসিলের চেষ্টা করা ফরয হতে পারে না। কোন অসম্ভব কাজের দায়িত্ব রাসূল (সাঃ) মানুষের উপর চাপাতে পারে না। কারণ তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকেই ওহীর জ্ঞানে পরিচালিত। আগেই বলেছি, কুরআন ও হাদীসের পরিভাষা হিসেবে ইলম মানেই ওহীর ইলম।
ইলম কতটুকু ফরয?
ফরয মানে অবশ্য পালনীয়, যা পালন না করলে আল্লাহ শান্তি দেবেন। তাহলে প্রশ্ন জাগে যে, ওহীর ইলম তো বিশাল ও ব্যাপক। ৩০ পারা কুরআন এবং লক্ষ লক্ষ হাদীস সবইতো হেীর ইলম। যদি এ ইলমের সবটুকু অর্জন করা ফরয হয় তাহলে রাসূল (সাঃ) চটাড়া আর কারে পক্ষে তা সম্ভব নয়। তাহলে নিশ্চয়ই ওহীর সবটুকু ইলমই তালাশ করা ফরয হতে পারে না।
তাহলে এটা কেমন করে নির্ণয় করা যাবে যে, কতটুকু ইলম হাসিল করা ফরয? এটা খুবই গুরত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এ প্রশ্নের সঠিক জওয়াব না জানলে মুসলিম হিসেবে সঠিকভাবে জীবন যাপন করা একেবারেই অসম্ভব।
একটি বাস্তব উদাহরণ দিলে এ প্রশ্নে সঠিক জওয়াব সহজেই বুঝে আসবে। যার উপর হজ্জ যাকাত ফরয নয়, তার ঐ বিষয়ে জানা আবশ্যক নয়। যার উপর যাকাত ফরয তাকে এ দায়িত্ব পালন করতে হলে ওহীর ইলম থেকে জানতে হবে যে,কোন কোন সম্পদের কী পরিমাণের মালিক হলে যাকাত ফরয হয় এবং এর হিসাব কিভাবে করতে হয়, কত মালের কত পরিমাণ যাকাত আদায় করতে হয় এবং কোন কোন খাতে যাকাত খরচ করলে ফরযটি সঠিক ভাবে আদায় হবে। যার উপর যাকাত ফরয নয় তার এসব বিষয়ে জানা জরুরী নয়। ু
এ একটি মাত্র উদাহরণ থেকে ঐ প্রশ্নের সহীহ জওয়াব পাওয়া যায়। জওয়াবটি তাহলে এভাবে প্রকাশ করলে বুঝতে সহজ হবে।
যার উপর যে দায়িত্ব পালন করা ফরয, সে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের প্রয়োজনে ওহীর যতটুকু ইলম জানা জরুরী ততটুকু ইলম অর্জনই ফরয। এ দায়িত্ব বলতে শুধু ধর্মীয় বিষয়ই বুঝায় না। মানুষ হিসেবে দুনিয়ায় জীবন যাপন করতে হলে যত রকম দায়িত্ব পালন করতে হয় সে সবই এর আওতায় পড়ে।কেননা মুমিনের জীবনে দুনিয়াদারি ও দীনদারিতে কোন পার্থক্য নেই। আল্লাহর হুকুম ও রাসূল (সাঃ) এর তরীকা অনুযায়ী যে কাজ করা হয় তা ই দীনদারি। আয় রোজগার, ব্যবসা বাণিজ্য, বিয়ে শাদী ইত্যাদি দায়িত্ব শরীআত মোতাবেক করাও দীনদারি। লোক দেখাবার উদ্দেশ্যে লাখ টাকার কুরবানী দিলে বা নিজের নামে আলহাজ্জ লেখার নিয়তে হজ্জ করলে তা দুনিয়াদারিতে পরিণত হয়। দানশীল হিসেবে সুনামের উদ্দেশ্যে দান খয়রাত করার পুরস্কার আখিরাতে পাবে না এবং বীর ও বাহাদুর হিসেবে খ্যাতি লাভের জন্য জিহাদের ময়দানে শহীদ হলেও দোযখে যেতে হবে বলে রাসূল (সাঃ) বলেছেন।
মুমিনের দু দফা ঘোষণা
আসলে মুমিন ও মুসলিম ঐ লোককেই বল হয়েছে, যে আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের তরীকা অনুযায়ী জীবন যাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ উচ্চারণ করা মানে না বুঝে কোন মন্ত্র জপা নয়; আসলে এ দুটো ঘোষণা জীবনের নীতি নির্ধারণী দফা ==
প্রথম দফা হলো, আমি আল্লাহর হুকুম মেনে চলব, এর বিপরীত কোন হুকুমই মানব না।
দ্বিতীয় দফা হলো, আল্লাহর প্রতিটি হুকুম আমি একমাত্র রাসূলের শেখানো তরীকা অনূযায়ী পালন করব, আর কোন তরীকা আমি গ্রহণ করব না।
এ দুটো ঘোষণা অনুযায়ী দুনিয়ার জীবনে যে কাজই করা হোক তা দীনদারি হিসেবে গণ্য।
ইসলাম অন্যান্য ধর্মের মতো কতক ধর্মীয় অনুষ্ঠানসর্বস্ব নয়। দীন ইসলাম মানে ইসলাম ধর্ম নয়। দীন ইসলাম মানে ইসলামী জীবনব্যবস্থা। দীন মানে আনুগত্য। আল্লাহর আনুগত্যের ভিত্তিতে জীবন যাপনের বিধানের নামই দীন ইসলাম। এর অনুবাদ ইসলাম ধর্ম নয়। এ অনুবাদে ইসলামকে নিছক একটি শব্দ দুটোর অনুবাদ না করেই আমারা বলে থাকি। দীন ইসলমের ও অনুবাদরে প্রয়োজন নেই। এর মর্ম বুঝে নিলেই যথেষ্ট। যেমন আল্লাহ,কুরআন ও রাসূল বললে আমরা অনুবাদ ছাড়াই বুঝি। কালেমা তাইয়্যেবার এ ব্যাখ্যা যারা সঠিক মনে করে তারা দুনিয়াদারি দীনদারিকে আলাদা মনে করে না। তাই তার পার্থিব দায়িত্ব ও আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের তরীকা অনুযায়ী পালন করতে হবে বলে বিশ্বাস করে। তাই প্রতিটি দায়িত্বের ব্যাপারেই আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের তরীকা জানা ফরয।
১. আজ একজন যুবক ও একজন যুবতীর মধ্যে বিবাহের বন্ধন হলো। তাদেরকে মুসলিম স্বামী ও মুসলিম স্ত্রী হিসেবে আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের তরীকা মেনে দাম্পত্য জীবন যাপন করতে হবে। তাই এ বিষয়ে যতটুকু ওহীর ইলম জানা প্রয়োজন তা অর্জন করা ফরয। গতকাল পর্যন্ত ও তা জানা ফরয ছিল না। যদি তারা তা না জানে তাহলে তারা কাফির দম্পত্তির মতোই জীবন যাপন করবে।
২. যেদিন এ দম্পত্তির ঘরে সন্তান আসবে। সেদিন পিতা ও মাতার দায়িত্ব সম্পর্কে ওহূর জ্ঞান তালাশ তাদের জন্য ফরয হয়ে যাবে।
৩. একজন ব্যবসায়ী যদি মুসলিম হিসেবে ব্যবসা করতে চান তাহলে এ বিষয়ে ওহীর জ্ঞান হাসিল কর হার উপর ফরয। যদি তা তিনি না জানেন তাহলে তিনি কাফির ব্যবসায়ীর মতোই দায়িত্ব পালন করবেন।
৪. যদি কোন মুসলিমের উপর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হয় তাহলে এ সংক্রান্ত যাবতীয় ইরম হাসিল করা তার উপর ফরয হয়ে যাবে। তা না জানলে তিনি কাফির শাসকের মতেই দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি নিজেকে ধর্ম নিরপেক্ষ বরে দাবি করুন আর নাই করুন, বাস্তব তিনি মুসলিম শাসক হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন না।
যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি বিচারকের আসনে বসেন তাহলে তাকে বিচার সম্পর্কে শরীআতের যাবতীয় বিধান আয়ত্ত করতে হবে। বিচারকের আইন রচনার ক্ষমতা নেই। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাঁকে এ দায়িত্ব পালন করতে হয়। এসত্ত্বে ও ন্যায় বিচারের দায়িত্ব পালনের জন্য শরীআতের বিধান তাকে জানতে হবে এবং যথাসাধ্য তা প্রয়োগ করতে হবে।
নফল ইলমের মর্যাদা কী?
যার উপর যাকাত ফরয নয় তার জন্য তো ঐ বিষয়ে জীবন সম্পর্কে ওহীর ইলম তালাশ করা ফরয নয়; কিন্তু সে যদি তা অর্জন করে তাহলে তা নফল হিসেবেই গণ্য হবে। এখন প্রশ্ন হলো, নফল ইলম হাসিলের মর্যাদা কতটুকু?
তেমনিভাবে যে এখনও বিয়ে করেনি সে যদি দম্পত্য জীবন সম্পর্কে ওহীর ইলম অর্জন করে তাহলে এ কাজটি কি বেহুদা বা ফালতু কাজ বলে গণ্য হবে।
যার উপর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেই যদি এ বিষয়ে ইলম অর্জন করে তাহলে এটাকে কি বেগার শ্রম মনে করা হবে?
একটি হাদিসে থেকে এ প্রশ্নের সুস্পষ্ট জওয়াব পাওয়া যায়। হাদীসটি হলো,
রাতের কিছু সময় ইলম চর্চা করা (শেখানো ও শেখা) সারা রাত জেগে (অন্য নফল ইবাদত) থাকার চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
এ হাদিসে থেকে জানা গেল যে, সকল নফল ইবাদতের মধ্যে নফল ইলম চর্চা করা শ্রেষ্ঠ ইবাদত। এ কারণেই যে আলেম নয় শুধু আবেদ তার তুলনায় আলেমের শ্রেষ্ঠত্ব হাদিসে চমৎকার ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছেঃ যে দীনের একজন আলেম শ্রেষ্ঠ, যদি ও তিনি এত নফল এবাদত হয়তো করেন না। এর দ্বারা সকল নফল ইবাদতের মধ্যে নফল ইলম চর্চার মর্যাদা অনেক বেশি বলে প্রমাণিত হয়। এ বিষয়ে ৩টি হাদিসই যথেষ্ট। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন।+++
আবেদের উপর আলেমের তেমনি শ্রেষ্টত্ব যেমন তোমাদের একজন সাধারণ লোকের উপর আমার মর্যাদা।
+++ আবেদের উপর আলেমের তেমনি শ্রেষ্ঠত্ব। যেমন সকল তারকার উপর পূর্ণিমার চাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব।
+++ শয়তানের উপর একজন ফকীহ একজন ফকীহ (ইসলামী বিধানে জ্ঞানী) ব্যক্তি এক হাজার আবেদের চেয়েও শক্তিমান।
ওহূর ইলমের এ মর্যাদার কারণেই প্রত্যেক শিক্ষিত মুসলিমের জন্য ইসলামের জ্ঞান অর্জনের সকল সুযোগ গ্রহণ করা উচিত। যদি সব সময় ইসলামী সাহিত্যে সঙ্গে রাখা হয় তাহলে সুযোগ পেলেই তা থেকে ইলম হাসিল করা যায়। আর সুযোগ তো পাওয়াই যায়।
১. কারো সাথে দেখা করতে গেলে কোন কারণে কিছুক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হলে সময় পাওয়া যায়। যিকর করে বা দরূদ পড়েও এ সময়টা কাটানো যায়। কিন্তু ইলম হাসিলে করার মর্যাদা অনেক বেশি।
২. জলপথে, সড়ক পথে ও বিমানে প্রচুর সময় বেকার কেটে যায়। সাথে ইসলামী বই থাকলে সময়টা শ্রেষ্ঠ কাজে লাগানো যায়।
৩. শহরে যানজটে পড়লে দীর্ঘ সময় নষ্ট হয়ে যায়। সাথে ইসলামী সাহিত্যে থাকলে সময়টা সেরা কাজে ব্যয় হতে পারে।
৪. বিছানার পাশে ইসলামী বই থাকলে ঘুম আসবার আগে কিছু ইলম হাসিল করা যায়।
৫. বই সাথে থাকলে কোথাও লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার সময়টাকেও অপচয় থেকে বাঁচানো যায়।
পার্থিব অন্যান্য জ্ঞানের কোনো শরয়ী মর্যাদা আছে কী?
কৃষিবিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, প্রকৌশলবিদ্যা ইত্যাদি জ্ঞান ওহীর ইলম নয় বটে, কিন্তু এ সবের কোনো মর্যাদা ইসলামী দৃষ্টিতে আছে কিনা? এসব বিদ্যার প্রয়োজনীয়তা তো স্বীকার করতেই হবে, তবে এ সব বিদ্যা অর্জন করাটা কি নিছক দুনিয়াদারি ব্যাপার? এসবের কি কোন শরয়ী মর্যাদা আছে?
একটি হাদীস থেকে এবিষয়ে আমরা এর সঠিক জওয়াব জানতে পারি।+++
অন্য সব ফরযের পর হালাল রুজী তালা মকরাও ফরয।
এ হাদীস থেকে জানা গেল যে, হালাল উপায়ে রোজগারের চেষ্টা করা ফরয। তাহলে আয় রোজগারের উদ্দেশ্যে কোন নাকোন পেশা অবশ্যই অবলম্বন করতে হবে। যে পেশাই গ্রহণ করা হোক এর জন্য নির্দিষ্ট বিদ্যা অজর্ন করতেই হবে। ডাক্তারি পেশা গ্রহণ করলে তাকে ডাক্তারি বিদ্যা শিক্ষা করতেই হবে। চিকিৎসা করে রোগীদের নিকট থেকে টাকা নিয়েইযারা রুজী যোগাড় করে তারা যদি চিকিৎসা বিদ্যা ভালোভাবে আয়ত্ত না করে, যে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নন সে বিষয়েও প্রেসক্রিপশন লিখে রোগীর সাথে প্রতারণা করে তাহলে তার আয় হালাল হবে না। তাই তার আয় হালাল করার প্রয়োজনেই তাকে ঐ বিদ্যা যথাযথভাবে অর্জন করতে হবে। ডাক্তারি বিদ্যা না শিখেই হাতুড়ে চিকিৎসকরা যে আয় করে তা কি হালাল হতে পারে।
তাহলে একথা প্রমাণিত হলে যে, হালাল রেজগারের চেষ্টা করা ফরয এবং রুজী হালাল করার প্রয়োজনে পেশাগত বিদ্যা যথাযথ শিক্ষা করা জরুরী। সুতরাং পার্থিব সব বিদ্যা অর্জন করা সরাসরি ফরয নয় বটে, কিন্তু পরোক্ষভাবে তাও ফরযের মর্যাদার অধিকারী। যিনি শিক্ষক তাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন তার রুজীকে হালাল করতে হলে তাকে াতার বিষয়ের যথাযথ জ্ঞান অর্জনের সাথে সাথে তাকে পাঠ দানের বিদ্যাও আয়ত্ত করতে হবে। যে শিক্ষকের ক্লাসে ছাত্ররা পাঠদানে সন্তুষ্ট নয় তার বেতন হালাল হবে কি? যে শিক্ষক যোগ্যতার সাথে পড়ান ছাত্ররা তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে। ছাত্রদের মন্তব্য থেকেই জানা যায় যে, কে ভালো শিক্ষক, আর কে ভালো নয়। এভাবেই আমরা পেশাগত বিদ্যার শরয়ী মূল্যায়ন করতে পারি।
শখের বিদ্যার মর্যাদার কী?
পেশার অতিরিক্ত কোন বিদ্যা শখ করে কেউ কেউ শিখে থাকে। যেমন হস্তরেখা বিদ্যা, জোতিবিদ্যা, ভাস্কর্যও চিত্রঙ্গণ বিদ্যা, যাদু বিদ্যা, গার্ডেনিং ইত্যাদি। মানব সমাজের জন্য কল্যাণকর যে কোন বিদ্যাই শিক্ষা করা যেতে পারে পেশাগত বিদ্যা তো রজী রোজগারের জন্য শিখতেই হয়। কেউ সৌখিন হয়ে অন্য কোন বিদ্যা শিখলে শরীআতে কোন আপত্তি আছে কি না?
এ বিষয়ে নীতিগত কথা হলো, যে পেশা গ্রহণ করা হালাল নয় সে পেশাগত বিদ্যা অর্জন করা ও জায়েয নয়। হস্তরেকা বিদ্যা শিখে ত পেশা হিসেবে গ্রহণ করা জায়েয নয়। এ দ্বারা মানুষের কোন কল্যাণ হয় না; বরং হস্তরেখা দেখে কারো কিসমত বা আয়ু সম্পর্কে মতামত দেওয়া প্রতারণা মাত্র। এটা কোন নিশ্চিত বিষয় না। এ মতামত দ্বারা কারো কল্যাণ হবার কারণ নেই।
এ বিষয়ে বিস্তর মত পার্থক্যের সুযোগ আছে। মানুষের রুচি বিচিত্র। তাই এসব নিয়ে বিতর্ক করে লাভ নেই। যাদুকরের শিল্প বা হাতের সাফাই মানুষকে নির্মল আনন্দ দান করে। এর মধ্যে অশ্লীলতা না থাকারই কথা। বিনোদন হিসেবে তা দেখা যায়। কিন্তু এটাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা আপত্তি নেই। তাই এটাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করায়ও দোষ নেই।
মুমিন আখিরাতের সাফল্যকেই জীবনের প্যধঅন লক্ষ্য মনে করে। তাই সাবধানেই তাকে পেশা বাছাই করতে হয়। সে হিসাব কষেই শখের বিদ্যা সম্পর্কেও তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
নেক আমল
আরবী ++ (আমল) শব্দের বাংলা অনুবাদ হলো কর্ম বা কাজ। কাজের সূচনা হয় চিন্তা থাকে। মানুষ যখন কোন কাজ করতে চায় তখন বুঝা যায়, সে ঐ কাজ করার চিন্তা ভাবনা করছে। চিন্তার সাথে সাথেই কাজ শুরু হয়ে যায় না। যখন সে ইচ্ছাকৃতভাবে ঐ কাজের উদ্দেশ্যে চেষ্টা করে তখন কাজটি শুরু করা হয়েছে বলা যায়। অর্থাৎ ইচ্ছা ও চেষ্টার সমন্বয়েই কাজ শুরু হয়। ইচ্ছা করাকে আরবীতে নিয়ত বলা হয়। এর অর্থ হলো কোন কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলেই কাজটি শুরু হয় না। ইচ্ছা, নিয়ত বা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চেষ্টা করলে কাজটি শুরু হয়েছে বলে বুঝা গেল।
নেক বলতে কী বুঝায়?
নেক শব্দটি র্ফাসি ভাষার। এ উপমহাদেশে দীর্ঘ ৬ শতাব্দীর মুসলিম শাসনামলে ফার্সিই রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদায় ছিল। তাি বাংলা ভাষায় অগনিত ফার্সি শব্দ চালু হয়ে আছে। ইসলামের অনেক মৌলিক পরিভাষাও আরবীর বদলে ফার্সি পরিভাষায় চালু হয়েছে। আরবী সালাত ও সাওম নামায ও রোযা পরিভাষায় প্রচলিত। এমনকি স্বয়ং আল্লাহও খোদা হিসেবে এদেশে পরিচিত হয়েছেন। খোদা মানে খোদÑআ। অর্থাৎ যিনি নিজেই অস্তিত্বে এসেছেন। সূরা ইখলাসের লাম ইউলাদ শব্দটির মানেই খোদা। অর্থাৎ তাকে কেউ পয়দা করেনি। তিনি স্বয়ং অস্তিত্ববান।
কুরআনের যে শব্দটি হলো ++ (সালেহ)। এ শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক। যেমনÑ ভালো, সৎ, যোগ্য, উপযুক্ত, যথাযথ, ভালো কাজ, পুণ্য ইত্যাদি। কুরআনে বহু আয়াতে বেহেশতের সুসংবাদ দিতে গিয়ে বল হয়েছে, ++ যারা ঈমান এনেছে ও সালেহ আমল করেছে তারাই জান্নাতবাসী হবে। শুধু ঈমান আনলেই চলবে না, নেক আমল ও করতে হবে, যদি বেহেশতে কেউ যেতে চায়। নেক আমলের অভাব হলে ঈমান থাকা সত্ত্বেও প্রথমে দোযখেই যেতে হবে। অবশ্য শাস্তির মেয়াদ শেষ হরে ইমানদার ব্যক্তি এক সময়ে বেহেশতে যেতে পারবে। কিন্তু সালেহ আমল ছাড়া শুধু ইমানের কারণে কেউ প্রথমে বেহেশতে যেতে পারবে না।
কুরআনের বহু আয়াতে এবং অগণিত হাদীস ++ কথাটি পাওয়া যায়। এর অর্থ করা হয়Ñ ভালো কাজের আদেশ করা ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা। এখানে ভালো অর্থে যে শব্দটি প্রয়োগ করা হয়েছে তা আরবীতে মারূফ এবং মন্দ অর্থে মুনকার শব্দ ব্যবহার কর হয়েছে। এটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ্ এ দুটো শব্দের আভিধানিক অর্থ পসম্পর ভিন্ন।
++ শব্দটির অর্থ হলো পরিচিত। অথচ এ শব্দটি ভালো কাজ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। আর ++ শব্দের মানে হলো যা প্রত্যাখ্যাত, অস্বীকৃত, পরিত্যাজ্য। অথচ এ শব্দটি মন্দ কাজ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। তাই এর তাৎপর্য বুঝতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা সকল মানুষের মধ্যেই নৈতিক চেতনা দান করেছেন। তাইসে কোনটা ভালো, আর কোনটা মন্দ তা বোঝে। এ চেতনাকেই আমরা বিবেক বলে থাকি। নাফসের তাড়নায় ও শয়তানের প্ররোচনায় মানুষ মন্দ কাজ করে বটে, কিন্তু তার বিবেক জানে যে, কাজ টি মন্দ। এমন কোন অপরাধী নেই, যে অপরাধ করে কিন্তু সে বুঝে না যে, এটা অপরাধ। বিবেককে ফাঁসি দেবার সাধ্য কারো নেই।
এই বিকেকের নিকট যা যা ভারে তা পরিচিত। সে ভালো করেই চেনে কোনটা ভালো। তাই কুরআনে ভালো কাজ বুঝাবার জন্য মারুফ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার এ শব্দ চয়ন কতই না চমৎকার! আল্লাহ বলতে চান যে, হে মানুষ! তোমাদেরকে আমি যা কিছু করতে হুকুম করেছি, তা যে ভালো তা তো তোমাদের অবশ্যই জানা আছে। নাফসের গোলামি কবুল করলে আলাদা কথা। তা না হলে আমার হুকুম তোমাদের জন্য যে কল্যাণকর তা তোমাদের অজানা নয়।
যা মন্দ তা মানুষের বিবেকের নিকট পরিত্যাজ্য। মনুষ্যত্ববোধ কোন মন্দকে ভালো বলে স্বীকার করে না। তাই আল্লাহ তায়ালা মন্দ কাজের অর্থে মুনকার শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ বলতে চান যে, তোমার বিবেক যা ভালো বলে স্বীকার করে না তাই মন্দ এবং আমি মন্দ কাজ করতেই নিষেধ করেছি। আমার নিষেধাজ্ঞা তোমার বিবেকের নিকট সঠিক।
নাফস, রূহ ও কালবের ফাংশন বা কর্মতৎপরতা
নাফস মানে দেহের যাবতীয় দাবি। খিদে লাগলে খেতে চায়, বোধ করলে ঠাণ্ডা চায়, সুন্দর কিছু পেলে দেখতে চায়, ভোগের উপকরণ পেলে ভোগ করতে চায়। দেহের কোন নৈতিক চেতনা বলে সে যা চায় তা নৈতিক দিক দিয়ে মন্দ হতেই পারে। তাই মানু ষখন কোন কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয় তখনি সে কাজটি নৈতিক দিক দিয়ে আপত্তিকর হলে রূহ আপত্তি জানায়। তখন নাফস ও রূহের মধ্যে লড়াই চলে। সব মানুষেরই এ তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। বঙ্কিম চন্দ্র রোহিনী উপন্যাসে এ লড়াই এর দুপক্ষের সুন্দর নাম দিয়েছেনÑ সুমতি ও কুমতি। সুমতি বলে যে, এটা করা ঠিক নয়। কুমতি বলে, এমন মজা কি ত্যাগ করা য়ায়? রূহ ও নাফসের এ লড়াইতে যার জয় হয় তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই কর্ম সম্পাদন করা হতয়। এ কর্ম সম্পাদনী শক্তিই হচ্ছে কালব। কালব শব্দের অর্থ পরিবর্তনশীল। এক সময় সে রূহের আনুগত্য করে, আর এক সময় নাফসের। সে এক অবস্থায় থাকতে পারে না বলেই নাম কালব।
একটা সহজ উদাহরণ দিলে কথাটি স্পষ্ট হতে পারে। রাষ্ট্রে যে সরকার থাকে এর তিনটা বিভাগ আছেÑ আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগÑ === আইন বিভাগ সিদ্ধান্ত দেয় যে, এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে। এটাই নাফসের ফাংশন। বিচার বিভাগ ঐ আইনটি শাসনতন্ত্রের নীতির বিরোধী হলে আপত্তি জানায়। এটা হলো রূহের ফাংশন। এ বিরোধ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলার পর এক পর্যায়ে হয় করকার বিচার বিভাগের কথা মেনে নেয়, অথবা বিচার বিভাগ তার আপত্তি তুলে নেয়। তখন যার কথা টিকল তাই শাসন বিভাগ কার্যকর করে। এটাই কালবের ফাংশন।
কর্ম সম্পাদনের কোন ক্ষমতা বাইখতিয়ার মানুষের নেই
মানুষকে আল্লাহ তায়ালা কোন কাজের জন্য ইচ্ছা করা ও চেষ্টা করার ক্ষমতা এবং দায়িত্ব দিয়েছেন। কাজটি সমাধা বা সম্পন্ন করার কোন ইখতিয়ারই দিননি। কাজটি ভালো হোক, আর মন্দ হোক তা সম্পন্ন করবার ইখতিয়ার সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে। মানুষ ইচ্ছা করেচে বলেই কাজটি সম্পন্ন হয়ে যাবে না, না চাইলে যত চেষ্টাই করা হোক কাটটি সম্পন্ন হবে না।
যেহেতু কর্ম সম্পাদনের ক্ষমতা মানুষের হাতে নয়, সেহেতু ভালো কাজের পুরস্কার ও মন্দ কাজের শাস্তির জন্য কর্মটি সমাধা হওয়া শর্ত নয়। কেউ কোন ভালো কাজের ইচ্ছা ও চেষ্টা করলে কাজটি সমাধা না হলে ও সে কাজটি সমাধা করেছে বলে গন্য করে পুরস্কার দেওয়াযাবে। কারণ তার ইখতিয়ার যা ছিল তা সে করেছে। যা তার ক্ষমতার বাইরে এর জন্য তার পুরস্কার আটকে থাকবে কেন?
যেমন এক ব্যক্তি হজ্জে যাবার ইচ্ছা করল এবং রওয়ানা হয়ে গেল। ইচ্ছাও চেষ্টার দায়িত্ব সে পালন করল; কিন্তু পথে সে মারা গেল। সে হজ্জ সমাধা করেছে বলে গন্য করা হবে। কারণ যদি হাশরের ময়দানে তাকে চার্জ করা হয় যে, তুমি হজ্জ করলে না কেন? তাহলে সে বলবে, আমি তো হজ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলাম। তুমি আমাকে মুত্যু দিলে কেন? তাই আল্লাহ তাকে চার্জই করবেন না। হজ্জ করার পুরস্কার তাকে দিয়ে দেবেন।
মন্দ কাজের উদাহরণ দেওয়া যাকঃ এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে খুন করার ইচ্ছা করল এবং সে উদ্দেশ্যে শাবল মাথার উপর উঁচিয়ে মারতে উদ্যত হলো। দুজন লোক দৌড়ে এস শাবল ধরে বিরত করল। আদালতে মামলায় প্রমাণ হলোযে, সে খুন করার জন্য ইচ্ছাকুতভাবে চেষ্টা করেছে। আইনের ভাষায় == আমদের দেশের আইনে এ করতে চেয়েছিল তাকে একটু চিমটিও কাটেনি। তাহলে শাস্তি কেন? প্রমাণীত হলো যে, শাস্তি কমপক্ষে তিন বছরের জেল। অথচ অপরাধী যাকে খুন করতে চেয়েছিলা তাকে একটু ইচ্ছাও করেনি, চেষ্টা ও কাটেনি। তাহলে শাস্তি কেন? প্রমাণিত হলো যে, শাস্তি কর্ম সম্পাদনের উপর নির্ভর করে না। ইচ্ছা ও চেষ্টা সম্পন্ন হলেই কর্ম সম্পন্ন হয়েছে বলে গণ্য।
আরও একটা উদাহরণ দিচ্ছিঃ এক ব্যক্তি পাখি শিকারের উদ্দেশ্যে গাছে গুলি চালাল। সেখানে এক লোক ছিল। কিন্তু শিকারী জানতো না। ঐ লোকের গায়ে গুলি লাগলো। এবং লোকটি মারা গেল। খুনের কর্ম সম্পাদন হলো বটে, কিন্তু এর জন্য বন্দুকের মালিক ইচ্ছাও করেনি, চেষ্টাও করেনি। তাই আদালতে এ কথা প্রমাণ হলে তার কোন শাস্তি ও হবে না। অথচ খুনের কর্মটি কিন্তু হয়েই গেল।
দুনিয়ায় যেমন, আখিরাতে ও তেমনি পুরস্কার ও শাস্তি ইচ্ছা ও চেষ্টার ফল, কর্মের বদলা নয়।
এ কথা বুঝে আসলে তাকদীরও আর রহস্য থাকে না। মানুষ যা করতে ইচ্ছা ও চেষ্টা করে তা সম্পন্ন হবে যদি আল্লাহর তার তাকদীরে রেখে থাকেন। আর নেক আমল সম্পন্ন হওয়া তাকদীরে না থাকলেও এর পুরস্কার অবশ্যই পাবে। তেমনি তার মন্দ কাজ সমাধা না হলেও সে শাস্তি পাবেই। তাই তাকদীরের কোন দোষ নেই। কাজের বদলা (ভালো বা মন্দ) তাকদীরের উপর নির্ভর করে না। আল্লাহর এ নিয়মে কোন অবিচার নেই। প্রত্যেকেই তার নিয়ত ও চেষ্টা অনুযায়ী বদলা পাবে। তাই তাকদীরে যাই থাকুক তাতে তার লাভও নেই, ক্ষতিও নেই। তাকদীর নিয়ে পেরেশান হবার কোন প্রয়েঅজনই নেই। তবে তাকদীরে বিশ্বাস করা জরুরী। এ বিশ্বাস মানে, আল্লাহ যা নির্ধারিত করেছেন তাই হবে। কারো চেষ্টায় তাকদীর বদলে যাবে না।
সহীহ নিয়ত ছাড়া পুরস্কার পাওয়া যাবে না
রাসূল (সাঃ) ঘোষণা করেছেন, +++ নিশ্চায়ই প্রতিটি কাজ নিয়ত হিসেবেই বিবেচ্য।
কাজটি বাহ্যত খুব ভালো হলেও কী নিয়তে কাজটি করা হলো সে বিষয়টি বিবেচনা করেই আল্লাহ তায়ালা ঐ কাজটি মূল্যায়ন করবেন। যদি কাজটি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতের সাফল্যের নিয়তে করা হয় তবে তা তিনি কবুল করবেন। আল্লাহর নিকট পুরস্কার পাওয়ার নিয়ত ছাড়া যদি কেউ দুনিয়ায় মানুষ বীর ও বাহাদুর বলবে আশা করে জিহাদের ময়দানের শহীদ ও হয় তবু সে দোযখেই যাবে বলেরাসূল (সাঃ) ঘোষণা করেছেন। হাদীসে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে যে, কাজটি যত নেকই হোক তা ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে করলেই পুরস্কারের যোগ্য বিবেচিত হবে। কাজটি ঈমানের দাবি পূরণের উদ্দেশ্যে ও এর বদলায় সওয়াব পাওয়ার নিয়তে করতে হবে।
সাধারণত মানুষ সুনামের উদ্দেশ্যে জনকল্যাণমূলক কাজ করে থাকে। ইসলামী পরিভাষায় এটাকে রিয়া বা লোক দেখানো কাজ বলা হয়। জনগণ দানশীল হিসেবে সম্মান করবে বা নেতা বানাবে এ আশায় দান করা হয়। যে নিয়তে সে করেছে তা দুনিয়তেই সে পেয়ে যায়। সে আিিখরাতে কোন পুরস্কার পাবে? সে উদ্দেশ্যে তো সে তা করেনি। তাই নিয়তের ব্যাপারটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চেষ্টা না করা পর্যন্ত শুধু ইচ্ছা করার কোন ফল আছে কি?
কেউ কোন একটি ভালো বা মন্দ কাজ করার ইচ্ছা করলো, কিন্তু ঐ ইচ্ছা অনুযায়ী কাজটি করার চেষ্টা করার সুযোগ পেল না। এ রকম ইচ্ছা করার কোন ফল আছে কি না?
বান্দদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা বড়ই মেহেরবান। সহীহ বুখারী থেকে জানা যায়, যদি কেউ কোন নেক কাজের নিয়ত করে আর তা কাজে পরিণত করার সুযোগ না পায় তবুও তাকে একটি পূর্ণ সওয়াব দেওয়া হবে। আর যদি কেউ কোন মন্দ কাজের ইচ্ছা করার পর তা কাজে পরিণত না করে, তবে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার পুরস্কার হিসেবে একটি কাজের পূর্ণ সওয়াব পাবে।
মৃত্যুর পরও কি আমল জারী থাকে?
রাসূল (সাঃ) অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাষায় এ প্রশ্নের জওয়াব দিয়েছেন। ++
যখন কেউ মারা যায়া তখন তার আমল করা বন্দ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি জিনিস (বাকি থেকে যায়) ১. সদকায়ে জারিয়া (যে দান চালু থাকে), ২. এমন বিদ্যা যা থেকে উপকার পাওয়া যায় এবং ৩. এমন নেক সন্তান যে পিতা মাতার জন্য দোআ করতে থাকে।
এ হাদীসটি খুবই তাৎপর্যপূণ। মানুষ যে কাজ করে যদি তার জের চলতে থাকে তাহলে যতদিন জের চলবে ততদিন সে কাজ করছে বলে গণ্য হবে। যেমন –
১. জনগণের সুবিধার জন্য সওয়াব নিয়তে কেউ একটা রাস্তা তৈরি করে দেয় তাহলে যতদিন রাস্তাটি টিকে থাকবে ততদিন পর্যন্ত এর সওয়াব তার আমলনামায় জমা হতে থাকবে।
২. কেউ যদি তার সন্তানকে আল্লাহর নেক বান্দাহ হিসেবে গড়ে তোলে তহলে ঐ সন্তান আজীবন যত নেক আমল করবে এর সওয়াব সমপরিমাণে তার আমলনামায় জমা হতে থাকবে। তার সন্তান ও যদি তারই মতো তার সন্তান কে গড়ে তোলে তাহলে এর সওয়াবও তাদের আমলনামায় জমা হতে থাকবে।
৩. কেউ যদি সওয়াবের নিয়তে মানুষকে এমন কোনো বিদ্যা শিক্ষা দেয়, যা মানুষের জন্য কল্যাণকর, তাহলে যতদিন ঐ কল্যাণ চালু থাকবে ততদিন তার আমলনামায় সওয়াব জমা হতে থাকবে।
মন্দ কাজের বেলায়ও গুনাহ জারি থাকবে। যেমন –
১. কেউ যদি ডাকাতি করে এবং অন্য কাউকে ডাকাতি শিক্ষা দেয় তাহলে তার মৃত্যুর পর তার শাগরিদের গুনাহও উস্তাদের আমলনামায় জমা হে ব।
২. কেউ যদি কাউকে কোনো মন্দ কাজে সাহায্য করে বা উৎসাহিত করে তাহলে সে নিজে মন্দ কাজ না করলেও ঐ মন্দ কাজের গুনাহ তার আমলনামায় শামিল করা হবে।
৩. কেউ যদি কোনো কুপ্রথা বা নৈতিকতা বিরোধী কোনো কাজ সমাজে চালু করে, তাহলে তার মৃত্যুর পরও যতদিন তা সমাজে চালু থাকবে ততদিন এর গুনাহ তার আমলনামায় জমা হতে থাকবে।
এদ্বারা বুঝা গেল যে, কারো মুত্যুর সাথে সাথে তার আমলের একাউন্ট (হিসাবের খাতা) বন্ধ হয়ে যায় না। কোনো কোনো ভালো ও মন্দ কাজের জের কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকতে পারে। তাই দুনিয়া ধ্বংস হওয়ার পরই আমলের খাতা লেখা বন্ধ হবে।
হাদীসে আছে, মানুষ যখন আমলনামা হাতে পাবে তখন তার কাজের দীর্ঘ হিসাব দেখে চিৎকার করে বলে উঠবে, হে আল্লাহ আমি তো এত কিছু করিনি। এতগুলো আমার হিসাবে কেমন করে এলো? একথা শুধু বদ লোকেরাই বলবে না, নেক লোকেরাও বলবে। উভয় প্রকার লোককে একই জওয়াব দেওয়া হবে – এটা ঠিক যে তুমি নিজে এত কিছু করনি, কিন্তু তুমি অন্যদেরকে শিক্ষা দিয়েছ, অন্যদেরকে উৎসাহ দিয়েছ, তোমাকে দেখে তারা শিখেছে বা উদ্বুদ্ধ হয়েছে। তাই অন্যদের আমরও তোমার হিসাবে ধরা হয়েছে। সূরা ইনফিতারের ৫নং আয়াতে বলা হয়েছে,++++
(কিয়ামতের পর) প্রত্যেক মানুষ জানতে পারবে যে, সে আগে কী (আমল) পাঠিয়েছে এবং পরে সে কী করেছে। এখানে আগে করেছে মানে জীবিতকালে করেছে আর পরে করেছে মানে মৃত্যুর পরে করা হয়েছে বলে ধরা হয়েছে।
তাই দুনিয়ায় অতি সতর্কতার সাথে আখিরাতের হিসাবের কথা খেয়ালে রেখে আমল করতে হবে।
আমল সম্পর্কে একটা ভুল ধারণা
আমল মানে কাজ। কিন্তু কোনো কিছু হাসিল করার জন্য কোনো দুআ পড়াকেও সাধারণত আমল বলাহয়। মাওলানা মওদুদী (র) কে খুলনায় এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন হুযুর আমার আয়ের কোন পথ নেই। বেকার অবস্থায় আছি। এক হুযুর আমাকে এ দোআটি সোয়া লাখ বার পড়তে বলেছেন। এটা নাকি রিযিক হাসিলের আমল।
মাওলানা তাকে বললেন, আপনি এ দোআটি বসে বসে পড়লে রিযিকের আমল হবে না। আপনি আয়ের জন্য চেষ্টা করতে থাকবেন এবং এ দোআটি পড়তে থাকবেন। সোয়া লাখবার হলো কিনা সে হিসাবের দরকার নেই। যতদিন পর্যন্ত আয়ের উপায় নাহয় ততদিন পড়তে থাকবেন এবং আয়ের পথ তালাশ করতে থাকবেন।
লোকটি চলে গেলে মাওলানা মন্তব্য করলেন যে জাতি আমল না করাকে আমল মনে করে সে জাতির কেমন করে উন্নতি হবে?
হাদীসে আছে, যখন কেউ মারা যায় তখন তার লাশের সাথে তিনটি জিনিস কবর পর্যন্ত যায়। ১. আত্মীয় স্বজন ২. কিছু মাল ৩.তার আমল। দাফনের পর দুটো জিনিস ফিরে আসে, আর শুধু একটি জিনিস তার সাথে যায়। সে জিনিসটি হলো তার আমল।
— সমাপ্ত —
পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।
দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি