৬. সমাজ বিপ্লবের উপযোগী আন্দোলনের পরিচয়
ক. সমাজ বিপ্লবের উদ্দেশ্যে পরিচালিত আন্দোলনের সাথে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা ও কায়েমী স্বার্থের সংঘর্ষ অনিবার্য।

খ. এ ধরনের আন্দোলন সমাজের মানুষকে প্রধানতঃ দুভাগে বিভক্ত করেঃ

১. বিপ্লবের অনুসারী -প্র্রধানতঃ যারা প্রচলিত সমাজের সুবিদাভোগী নয়।

২. বিপ্লব বিরোধী– প্রচলিত সমাজের কায়েমী স্বার্থ বা সুবিধাভোগী।

গ. উভয় পক্ষে সাহসী ও মযবুত লোকের সংখ্যা কম হলেও অনেক লোক উভয় পক্ষের সমর্থক হয় — যদিও তারা বেশীর ভাগই নিষ্ক্রীয় থাকে।

ঘ. সর্ব সাধারণ অধিকাংশ লোক নিরপেক্ষ থাকে বা পরিস্থিতি বিবেচনা করতে থাকে– যে দিকে জয় হয় সে দিকেই সায় দেয়।

ঙ. বিপ্লবী আদর্শের মুমিন (অনুসারী) ও কাফির (বিরোধী) ছাড়া আন্দোলনের বিভিন্ন সময় ৫ রকম মুনাফিকের আবির্ভাব হয়ঃ

১. দুর্বল মুমিন সংগ্রাম যুগে।
২. দুর্বল কাফির সংগ্রাম যুগে অল্প এবং বিজয় যুগে বেশী।
৩. সন্দেহ পরায়ণ (‘মযাবযাবীন’) উভয় যুগে।
৪. মুমিন বেশে কাফির বিজয় যুগে।
৫. বাধ্য হয়ে মুমিন চূড়ান্ত বিজয়ের পর।
চ. আন্দোলনের বিভিন্ন স্তরে বিরোধীতার রুপ মোকাবেলার ধরন সংঘর্ষের ফলাফল।
১. বিদ্রুপ ধৈর্যের সাথে দাওয়াত দেয়া সংখ্যা বৃদ্ধি।
২. মিথ্যা প্রচার যুক্তিদ্বারা খন্ডন সংখ্যা বৃদ্ধি।
৩. নির্যাতন আদর্শের মজবুতীকরণ সাহসী লোক বাছাই। দুর্বল লোক ছাঁটাই।
৭. রাসূল (সাঃ)-এর আন্দোলনের বিভিন্ন যুগ ও স্তর
ক) রাসূল (সাঃ)-এর আন্দোলনের দুটো যুগঃ

১. মাক্কী যুগ- প্রথম ১৩ বছর। এটা সংগ্রাম যুগ, লোক তৈরীর যুগ বা ব্যক্তি গঠনের যুগ ও নির্যাতনের যুগ।

২. মাদানী যুগ- হিজরাতের পর ১০বছর। এটা বিজয় যুগ, সমাজ গঠনের যুগ, রাষ্ট্র পরিচারনার যুগ ও সশস্ত্র মোকাবেলার যুগ।

খ) মাক্কী যুগের বিভিন্ন স্তরঃ

তাফহীমুল কুরআনে সূরা আল আনয়ামের ভূমিকায় এর বিস্তারিত আলোচনা আছে।

১. ব্যক্তিগতভাবে বা গোপনে (আন্ডার গ্রাউন্ড) দাওয়াত ও সংগঠনের সময়কাল ৩ বছর।
২. প্রকাশ্যে দাওয়াত–বিরোধীদের বিদ্রুপ ও অপপ্রচার এবং নির্যাতনের প্রাথমিক অবস্থার সময়কাল ২ বছর। নবুওয়াতের ৫ম বছর রজব মাসে পয়লা কিস্তিতে ১৬ জন (৪ জন মহিলাসহ) হাবসায় হিজরাত করেন। ২য় কিস্তিতে ১৫ জন মহিলা ও ৮৮ জন পুরুষ হিজরাত করেন।

৩. বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার ও নির্যাতন কাল ৫ বছর। নবুওয়াতের ৭ম থেকে ৯ম বছর পূর্ণ ৩ বছর রাসূল (সাঃ) এর নিজ বংশ ‘বনী হাশিম’ সহ ‘শে’বে আবু তালিব’ নামক উপত্যকায় কঠোর বন্দী দশা। ১০ম বছরে রাসূল (সাঃ) -এর চাচা আবু তালিব ও বিবি খাদিজা (রাঃ) ইন্তেকাল করেন।

৩. মাক্কী যুগের শেষ ৩ বছর চরম বিরোধিতা, নিষ্ঠুর নির্যাতন, এমনকি রাসূল (সাঃ) – কে হত্যার চেষ্টা চলে। এ ৩ বছরে প্রত্যেক হজ্জের সময় মদীনা থেকে আগত লোকেরা ইসলাম কবুল করতে থাকেন। পয়লা বছর ৬জন, ২য় বছর ১২জন বাইয়াত হন (১ম বাইয়াতে আকাবা) এবং শেষ বছর ৭৫ জন বাইয়াত হন (২য় বাইয়াতে আকাবা) ।

গ) মাদানী যুগের বিভিন্ন স্তর -মোট ১০ বছর।

১. বদর যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত- ১ বছর ৬ মাস।

২. বদর থেকে হোদায়বিয়ার সন্ধি পর্যন্ত -৪ বছর ২মাস।

৩. মক্কা বিজয় পর্যন্ত -১ বছর ১০ মাস।

৪. মক্কা বিজয়ের পর ২ বছর ৬ মাস।

৮. মাদানী যুগের বড় বড় ঘটনার সময়কাল
১. হিজরাত-১২ রবিউল আউয়াল ১ হিজরী জুময়ার দিন মদীনায় পৌঁছেন।

২. বদর যুদ্ধ – রমযান ২য় হিজরী

৩. ওহুদ যুদ্ধ -শাওয়াল ৩য় হিজরী

৪. বানূ নাযীরের বিরুদ্ধে অভিযান রবিউল আউয়াল ৪র্থ হিজরী।

৫. খন্দকের যুদ্ধ (আহযাব) – শাওয়াল ৬ষ্ঠ হিজরী

৬. হোদায়বিয়ার সন্ধি ও বাইযাতে রিদওয়আন- যিলকাদ ৬ষ্ঠ হিজরী।

৭. খায়বার যুদ্ধ – মুহাররাম ৭ম হিজরী।

৮. মক্কা বিজয় -রমযান ৮ম হিজরী।

৯. হুনাইনের যুদ্ধ- শাওয়াল ৯ম হিজরী।

১০. তাবুকের যুদ্ধ- রজব ৯ম হিজরী।

১১. বিদায় হজ্জ – যিলহজ্জ ১০ম হিজরী।

৯.মাক্কী সূরার বৈশিষ্ট্য (হিজরাতের পূর্বে অবতীর্ণ)
ক) প্রথম দিকের সূরার বৈশিষ্ট্যঃ

১. রাসূলকে দেয়া বিরাট দায়িত্ব পালনের উপযোগী উপদেশ।

২. জীবন ও জগত সম্পর্কে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণার অপনোদন ও সঠিক বিশ্বাস সৃষ্টির চেষ্টা, ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষাকে বিভিন্ন ভাবে পেশ করা —তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতের বেশি চর্চা।

৩. মানুষের ঘুমন্ত বিবেক ও নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করে চিন্তাশক্তিকে সত্য গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা।

৪. প্রাথমিক সূরাগুলোর ভাষা স্বচ্ছ, ঝর্ণাধারার মত ঝরঝরে, ছোট ছোট ছন্দময় আয়াত; অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও হৃদয়গ্রাহী, সহজে মুখস্ত হবার যোগ্য, অতি উন্নত সাহিত্য।

খ) মাক্কী সূরা ব্যক্তি গঠনের হেদায়াতপূর্ণ —তাতে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের আইন বিধান নেই। শুধু শেষ দিকে সমাজ গঠনের ইংগিতমূলক কথা ‘ম্যানিফেস্টো’ আকারে আছে। অতীতে বিভিন্ন জাতির নিকট নবীর আগমন —নবীর প্রতি জনগণের আচরণের ভিত্তিতে তাদের উথান পতনের বর্ণনা (ইতিহাস জানার জন্য নয় ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য) ।

গ) কাফির ও মুশরিকদের বিরোধিতার বিভিন্ন অবস্থায় ধৈর্যের উপদেশ বিরোধিতার জবাব ও মোকাবেলা করার পন্থা।

১০.মাদানী সূরার বৈশিষ্ট্যঃ
হিজরাতের পর অবতীর্ণ সূরা — মক্কায় নাযিল হলেও মাদানী হিসাবে গণ্য

১. দীর্ঘ সূরা (অধিকাংশ),

২. সমাজ গঠনের বিধান,

ক) ফৌজদারী আইন, উত্তরাধিকার বিধান, বিয়ে -তালাক, যাকাত ও ওশর ইত্যাদির নিয়ম কানুন।

খ) দল, রাষ্ট্র, সভ্যতা ও সামাজিকতার ভিত্তি,

গ) মুনাফিক, কাফির, যিম্মি, আহলে কিতাব, যুদ্ধমান শত্রু ও সন্ধি সূত্রে আবদ্ধ জাতির প্রতি আচরণ।

ঘ) জয় -পরাজয়, বিপদ- শান্তি, নিরাপত্তা ভীতি ইত্যাদি অবস্থায় মুসলমানদের কর্তব্য।

১১. কুরআনের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য
ক) কুরআনের বাচনভংগীঃ

–একটি বিপ্লবী আন্দোলনের উপযোগী

–সমর্থকদের উদ্দীপিত করার মত সম্মোহক

–বিরোধীদের প্রতিহত করায় বলিষ্ঠ

–বিপ্লবী নেতার ঝংকারময় ভাষণ

–মন – মগজ বুদ্ধি – বিবেককে উদ্বুদ্ধ করার মতো এবং ভাবাবেগের প্লাবন সৃষ্টি করার যোগ্য।

–দরদী মন দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করার মতো আবেগ ও আবেদনময় আহবান।

খ) কুরআনে কেন একইকথা বার বার উল্লেখ করা হয়েছেঃ

১. আন্দোলনের বিশেষ এক অধ্যায়ে যেসব কথা মন- মগজে বসান দরকার তা বারবারই বলা দরকার।

২. বারবার একই ভাষা বা শব্দে, নতুন ভংগীতে ও আকর্ষণীয় পদ্ধতীতে একটি কথাকে পূর্ণরূপে হজম করাবার জন্যই বলা হয়েছে।

৩. আল্লাহর গুনাবলী, তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত, কিতাব, ঈমান, তাকওয়া, সবর, তাওয়াক্কুল ইত্যাদি এমন গুরুত্বপূর্ণ যে এ সবের পুনরূক্তি ব্যাপক হওয়াই স্বাভাবিক এবং আন্দোলনের সকল স্তরে এর প্রয়োজন।

গ) কুরআন হলো ব্লু- প্রিন্ট বা ইসলামী বিধানের নীল নকশা। আল্লাহর তৈরী এ নীল নকশা অনুযায়ী ইসলামের বিরাট সৌধ গড়ার দায়িত্ব যে ইঞ্জিনিয়ারকে দেয়া হয়েছে তিনিই হলেন রাসূল (সাঃ)। তিনি কুরআনে দেয়া পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করে ইসলামের পরিপূর্ণ রূপ প্রকাশ করেছেন।

১২. মাক্কী ও মাদানী সূরার সংখ্যা
ক) মোট ১১৪টি সূরার মধ্যে ১৭টি সূরা সম্পর্কে মতভেদ দেখা যায়। এর মধ্যে ৫টি সূরা নিয়ে ব্যাপক মতভেদ আছে। বাকী ১২টির মধ্যে অধিকাংশের মতে ৪টি মাদানী ও ৮টি মাক্কী।

১. যে ৫টি সূরা সম্পর্কে ব্যাপক মতভেদ আছে — আল বাইয়েনাহ (৯৮), আল আদিয়াহ (১০০), আল মাউন (১০৭), আল ফালাক (১১৩) ও আন নাস (১১৪)।

২. অধিকাংশের মতে যে ৪টি সূরা মাদানীঃ

আর – রাদ (১৩), আর- রাহমান (৫৫), আদ- দাহর (৭৬) ও আল যিলযাল (৯৯)।

৩. অধিকাংশের মতে যে ৮টি সূরা মাক্কীঃ

আত- তীন (৯৫), আল কদর (৯৭), আত- তাকাসুর (১০২), আল- আসর (১০৩), আল কুরাইশ (১০৬), আল কাউসার (১০৮), আল কাফিরুন (১০৯) ও আল ইখলাস(১১২)।

খ) তাফহীমুল কুরআনে সূরাগুলোর ভুমিকায় মাওলানা মওদূদী (রঃ) সুরাসমূহের নাযিল হবার সময় নিয়ে যে গবেষণামূলক আলোচনা করেছেন তাতে মাত্র ২৫টি সূরা মাদানী বলে প্রমাণিত হয়। সে হিসেবে ১১৪- ২৫=৮৯টি সূরাই মাক্কী বলে সাব্যস্ত হয়। অবশ্য তিনি তাফহীমে ৫৫ও ৯৯নং সূরার শিরোনামে মাদানী লিখেছেন —-যদিও গবেষণার মাক্কী প্রমাণ করেছেন। আবার ১০নং সূরার শিরোনামে মাক্কী লিখেও গবেষণায় মাদানী প্রমাণ করেছেন। কিন্তু তাঁর তরজমায়ে কুরআন মজীদে ১৩ ও ৭৬নং সূরার শিরোনামে মাদানী লিখেছেন।

গ) অধিকাংশের মতে, ২৮টি মাদানী সূরা এবং ৮৬টি মাক্কী সূরা। মাওলানা মওদূদী তাফহীমে ২৭টি এবং তরজমায়ে কুরআনে মজীদে ২৯টি সূরার শিরোনামে মাদানী লিখেছেন।

ঘ) কুরআনের শেষ দু পারায় অধিকাংশ মাক্কী সূরা রয়েছে। ২৯ পরার ১১টি সূরার সবই মাক্কী এবং আমপারার ৩৭ টির মধ্যে ৩৪টিই মাক্কী। মোট ৮৯টি মাক্কী সূরার ৪৫টি শেষ দু পারায় এবং বাকী ৪৪টি সমগ্র কুরআনে ছড়িয়ে আছে।

ঙ) কতক সূরার প্রথম ভাগ মাক্কী হওয়ায় পরবর্তী অংশ মাদানী হওয়া সত্ত্বেও মাক্কী হিসেবে পরিচিত। যেমন সূরা মুযযাম্মিল।

১৩. মাক্কী যুগের সূরার তালিকা
সুরার নং সূরার নাম পারার নং
১ আল ফাতিহা ১
৬ আল-আনয়াম ৭/৮
৭ আল- আ’রাফ ৮/৯
১০ ইউনুস ১১
১১ হুদ ১২
১২ ইউসুফ ১২/১৩
১৩ আর-রা’দ; ১৩
১৪ ইবরাহীম ১৩
১৫ আল-হিজর ১৪
১৬ আন-নাহল ১৪
১৭ বনী ইসরাঈল(আল-ইসরা) ১৫
১৮ আল-কাহাফ ১৫/১৬
১৯ মারইয়াম ১৬
২০ তোয়াহা ১৬
২১ আল- আম্বিয়া ১৭
২৩ আল-মু’মিনূন ১৮
২৫ আল-ফুরকান ১৮/১৯
২৬ আল-শুয়ারা ১৯
২৭ আল-নামল ১৯/২০
২৮ আল-কাসাস ২০
২৯ আল-আনকাবুত ২০/২১
৩০ আর-রুম ২১
৩১ লুকমান ২১
৩২ আস-সাজদাহ ২১
৩৪ সাবা ২২
৩৫ ফাতের (আল মালাইকা) ২২
৩৬ ইয়াসীন ২২/২৩
৩৭ আস-সাফফাত ২৩
৩৮ সোয়াদ ২৩
৩৯ আয-যুমার ২৩/২৪
৪০ আল মু’মিন (গাফির) ২৫
৪১ হা- মীমআস-সাজদাহ(ফুসসিলাত) ২৫
৪২ আশ-শূরা ২৫
৪৩ আয্-যুখরুফ ২৫
৪৪ আদ-দোখান ২৫
৪৫ আল জাসিয়া ২৫
৪৬ আল-আহকাফ ২৫
৫০ কাফ ২৬
৫১ আয-যারিয়াত ২৬/২৭
৫২ আত-তুর ২৭
৫৩ আল-নাজম ২৭
৫৪ আর-কামার ২৭
৫৫ আর-রহমান ২৭
৫৬ আল-ওয়াকিয় ২৭
৬৭ আল-মুলক ২৯
৬৮ আল-কালাম ২৯
৬৯ আল- হাক্কাহ ২৯
৭০ আল-মায়ারিজ ২৯
৭১ নূহ ২৯
৭২ আল-জ্বিন ২৯
৭৩ আল-মুয্যাম্মিল ২৯
৭৪ আল-মুদ্দাসসির ২৯
৭৫ আল কিয়ামাহ ২৯
৭৬ আদ দাহর (আল ইনসান) ২৯
৭৭ আল-মুরসালাত ২৯
৭৮ আন- নাবা ৩০
৭৯ আন-নাযিয়াত ৩০
৮০ আবাসা ৩০
৮১ আত-তাকভীর ৩০
৮২ আল-ইনফিতার ৩০
৮৩ আল-মুতাফফিফীন (আত-তাতফীক) ৩০
৮৪ আল-ইনশিকাক (ইনশাককাত) ৩০
৮৫ আল-বরুজ ৩০
৮৬ আত-তারিক ৩০
৮৭ আল-আ’লা ৩০
৮৮ আল-গাশিয়া ৩০
৮৯ আল-ফাজর ৩০
৯০ আল-বালাদ ৩০
৯১ আশ-শামস ৩০
৯২ আল-লাইল ৩০
৯৩ আল-দোহা ৩০
৯৪ আলাম-নাশরাহ ৩০
৯৫ আত-ত্বীন ৩০
৯৬ আল-আলাক (ইকরা) ৩০
৯৭ আল-কাদর ৩০
৯৯ আয-যিলযাল ৩০
১০০ আল-আদিয়াহ ৩০
১০১ আল-কারিয়াহ ৩০
১০২ আল-তাকাসুর ৩০
১০৩ আল-আসর ৩০
১০৪ হুমাযাহ ৩০
১০৫ আল-ফীল ৩০
১০৬ কুরাইশ ৩০
১০৮ আল-কাউছার ৩০
১০৯ আল-কাফিরুন ৩০
১১১ লাহাব(আল-মাসাদ বা তাব্বাত) ৩০
১১২ আল-ইখলাস ৩০
১১৩ আল-ফালাক ৩০
১১৪ আন-নাস ৩০
১৪.মাদানী যুগের সূরার তালিকা
সূরার নং সূরার নাম পারার নং
২ আল-বাকারাহ ১-৩
৩ আলে-ইমরান ৩-৪
৪ আন-নিসা ৪-৫
৫ আল-মায়িদা ৭
৮ আল-আনফাল ৯-১০
৯ আত-তাওবা (বারা-আত) ১০-১১
২২ আল-হাজ্জ ১৭
২৪ আন-নূর ১৮
৩৩ আল-আহযাব ২২
৪৭ মুহাম্মদ(আল-কিতাল) ২৬
৪৮ আল-ফাতহ ২৬
৪৯ আল-হুজরাত ২৬
৫৭ আল-হাদীদ ২৮
৫৮ আল-মুজাদালা ২৮
৫৯ আল-হাশর ২৮
৬০ আল-মুমতাহিনা ২৮
৬১ আস-সফ ২৮
৬২ আল-জুমুয়া ২৮
৬৩ আল-মুনাফিকুন ২৮
৬৪ আত-তাগাবুন ২৮
৬৫ আত-তালাক ২৮
৬৬ আত-তাহরীম ২৮
৯৮ আল-বাইয়্যেনাহ ৩০
১০৭ আল-মাউন ৩০
১১০ আল-নাসর ৩০
১৫. মাক্কী যুগের বিভিন্ন স্তরে অবতীর্ণ সূরার শ্রেণীবিন্যাস
কুরআন পাক রাসূল (সাঃ) এর নেতৃত্বে পরিচালিত ইসলামী আন্দোলনের বিভিন্ন অবস্থায় প্রয়োজনীয় হেদায়াতেরই সমষ্টি। তাই কোন যুগের কোন স্তরে কোন কোন সূরা নাযিল হয়েছিল তা জানতে পারলে কুরআনের মর্ম উদ্ধার করা সহজ হয়।

বিশেষ করে মাক্কী যুগের বিভিন্ন স্তরের সাথে মিলিয়ে সূরাগুলোর শ্রেণীবিন্যাস বেশী প্রয়োজন। কিন্তু এ কাজটি বেশ কঠিন। মাদানী সূরা নাযিলের সময় নির্ধারণ যতটা সহজ মাক্কী যুগের বেলায় সে কাজ ঠিক ততটাই দুঃসাধ্য। তবুও সার্থকভাবে কুরআনকে বুঝবার প্রয়োজনে মাওলানা মওদূদী (রঃ) তাফসীরে দেয়া গবেষণার ভিত্তিতে মাক্কী যুগের চারটি স্তরের নিন্ম রূপ শ্রেণী বিন্যাস করা যায়।
প্রথম স্তরে মোট ২৮টি, দ্বিতীয় স্তরে ১১, তৃতীয় স্তরে ৩৭ ও চতুর্থ স্তরে ১৩টি সূরা = মোট ৮৯টি।

ক) মাক্কী যুগের প্রথম স্তরে (৩ বছরে) যে ২৮টি সূরা নাযিল হয়েছে তার তালিকাঃ
ক্রমিক নং পারার নং সূরার নাম সূরার নং
১ ১ আল-ফাতিহা ১
২ ২৭ আর রাহমান ৫৫
৩ ২৯ আল জ্বিন ৭২
৪ ২৯ আল মযযাম্মিল(প্রথমাংশ) ৭৩
৫ ২৯ আল মুদ্দাসসির (১ম ৭ আয়াত) ৭৪
৬ ২৯ আল কিয়ামাহ ৭৫
৭ ২৯ আদ-দাহর ৭৬
৮ ২৯ আল-মুরসালাত ৭৭
৯ ৩০ আন-নাবা ৭৮
১০ ৩০ আন-নাযিরাত ৭৯
১১ ৩০ আত-তাকভীর ৮১
১২ ৩০ আল-ইনফিতার ৮২
১৩ ৩০ আল-ইনশিকাক ৮৪
১৪ ৩০ আল-আ’লা ৮৭
১৫ ৩০ আদ-দোহা ৯৩
১৬ ৩০ আলাম নাশরাহ ৯৪
১৭ ৩০ আত-তীন ৯৫
১৮ ৩০ আল-আলাক ৯৬
১৯ ৩০ আল-কাদর ৯৭
২০ ৩০ আয-যিলযাল ৯৯
২১ ৩০ আল-আদিয়াত ১০০
২২ ৩০ আল-কারিয়াহ ১০১
২৩ ৩০ আল-তাকাসুর ১০২
২৪ ৩০ আল-আসর ১০৩
২৫ ৩০ আল-হুমাযা ১০৪
২৬ ৩০ আল-ফীল ১০৫
২৭ ৩০ আল-কুরাইশ ১০৬
২৮ ৩০ আল-ইখলাস ১১২
খ) মাক্কী যুগের দ্বিতীয় স্তরের দু বছরে নাযিলকৃত ১১টি সূরার তালিকার নাযিল
ক্রমিক নং পারার নং সূরার নাম সূরার নং
১ ২৩ সোয়াদ ৩৮
২ ২৬ কাফ(শেষ দিকে) ৫০
৩ ২৬-২৭ আয-যারিয়াত(শেষ দিকে) ৫১
৪ ২৭ আত-তুর(শেষ দিকে) ৫২
৫ ২৯ আল মুলক ৬৭
৬ ২৯ আল-হাককাহ ৬৯
৭ ২৯ আল-মায়ারিজ ৭০
প্রথম স্তরের ৫ নম্বরে গণ্য ২৯ আল-মুদ্দাসসির ৮ম আয়াত থেকে সবটুকু সূরা ৭৪
৮ ৩০ আবাসা ৮০
৯ ৩০ আল-মুতাফফিফীন ৮৩
১০ ৩০ আত-তারিক ৮৬
১১ ৩০ আল-গাশিয়া ৮৮
গ) মাক্কী যুগের তৃতীয় স্তরের ৫ বছরে অবতীর্ণ সূরার তালিকা
ক্রমিক নং পারার নং সূরার নাম সূরার নং
১ ১৫-১৬ আল-কাহফ(হিজরাতে হাবশার পূর্বে) ১৮
২ ১৬ মারইয়াম(ঐ) ১৯
৩ ১৬ তোয়াহা [হযরত ওমরের (রাঃ)ইসলামগ্রহণের পূর্বে ] ২০
৪ ১৭ আল আম্বিয়া (৩য় স্তরের ১ম দিকে) ২১
৫ ১৮ আল মুমি’নূন(হযরত ওমরের ইসলাম গ্রহণের পর এবং দুর্ভিক্ষের সময়) ২৩
৬ ১৮-১৯ আল ফুরকান ২৫
৭ ১৯ আশ শুয়ারা (সূরা তোয়াহা ও ওয়াকেয়ার পর) ২৬
৮ ১৯-২০ আন-নামল(শূয়ারার পর) ২৭
৯ ২০ আল কাসাস(নামলের পর) ২৮
১০ ২০-২১ আল আনকাবুত(হিজরাতে হাবশার পূর্বে) ২৯
১১ ২১ আর রুম(হাবশার পরে) ৩০
১২ ২১ লুকমান(আনকাবুতের পর) ৩১
১৩ ২১ আস সাজদা (১ম দিকে) ৩২
১৪ ২২ আস সাবা (১ম দিকে) ৩৪
১৫ ২২ আল ফাতির (১ম দিকে) ৩৫
১৬ ২২-২৩ ইয়াসিন(৩য় স্তরের শেষ দিকে বা ৪র্থ প্রথম দিকে) ৩৬
১৭ ২৩ আস সাফফাত(ইয়াসিনের সাথে সাথে) ৩৭
১৮ ২৩-২৪ আয্ যুমার (হাবশার পূর্বে) ৩৯
১৯ ২৪ আল মু’মিন(যুমারের পর) ৪০
২০ ২৪-২৫ হা-মীম আস- সাজদা [হামযা (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণের পর ও ওমর(রাঃ)-এর পূর্বে ] ৪১
২১ ২৫ আশ- শুরা (হা-মীম আস-সাজদার পর) ৪২
২২ ২৫ আদ্ দোখান (দুর্ভিক্ষের সময়) ৪৪
২৩ ২৫ আল- জাসিয়া (দোখানের পর) ৪৫
২৪ ২৭ আন্ নাজম (হাবশার পর) ৫৩
২৫ ২৭ আল-কামার (৮ম নাবাভীতে) ৫৪
২৬ ২৭ আল ওয়াকেয়াহ [হাবশার পর ওমর (রাঃ)এর ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ] ৫৬
২৭ ২৯ আল কালাম (১ম দিকে) ৬৮
২৮ ২৯ নূহ(১ম দিকে) ৭১
২৯ ৩০ আল- বুরুজ(শেষ দিকে) ৮৫
৩০ ৩০ আল-ফাজর (১ম দিকে) ৮৯
৩১ ৩০ আশ-শামস ৯১
৩২ ৩০ আল-লাইল ৯২
৩৩ ৩০ আল-কাউছার ১০৮
৩৪ ৩০ আল-কাফিরূন ১০৯
৩৫ ৩০ আল-লাহাব ১১১
৩৬ ৩০ আল-ফালাক ১১৩
৩৭ ৩০ আন-নাস ১১৪
ঘ) মাক্কী যুগের ৪র্থ স্তরের ৩ বছরে নাযিল হওয়া ১৩টি সূরার তালিকা
ক্রমিক নং পারার নং সূরার নাম সূরার নং
১ ৭-৮ আল-আনয়াম ৬
২ ৮-৯ আল-আরা’ফ ৭
৩ ১১ ইউনুস ১০
৪ ১২ হুদ ১১
৫ ১২-১৩ ইউসূফ ১২
৬ ১৩ আর- রা’দ ১৩
৭ ১৩ ইবরাহীম ১৪
৮ ১৪ আল-হিজর ১৫
৯ ১৪ আন-নাহল ১৬
১০ ১৫ বনী ইসরাঈল ১৭
১১ ২৫ আয্ যুখরুফ [রাসল (সাঃ)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র ] ৪৩
১২ ২৬ আল-আহকাফ ৪৬
১৩ ৩০ আল- বালাদ ৯০
পূর্বে ও বলা হয়েছে যে মাক্কী সূরাগুলোর নাযিলের সঠিক সময় হিসাব করা খুবই কঠিন। যেসব সূরা সম্পর্কে স্পষ্ট রেওয়ায়াত পাওয়া যায় না সেগুলোর ভাষা ও বাচনভংগী এবং আলোচ্য বিষয়বস্তুর ভিত্তিতেই সিন্ধান্ত নিতে হয়েছে। তাই মাক্কী সূরাগুলোকে উপরোক্ত চারটি স্তরে যেভাবে সাজানো হয়েছে তা একেবারে নির্ভুল বলে দাবী করার উপায় নেই। তবু এ স্তর বিন্যাস সূরাগুলোর বক্তব্য বুঝতে সাহায্য করবে বলেই আশা করা যায়। আর সেটাই এ শ্রেণীবিন্যাসের আসল উদ্দেশ্য।

 


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি