সত্য গোপনের শাস্তি
এমনি সত্য গোপন ও মিথ্যা সাক্ষ্য দানের মধ্যেই আজ আমরা লিপ্ত হয়ে আছি। আর আল্লাহ তায়ালা এমনি গুরুতর অপরাধের জন্য যে ভীষণ পরিণাম নির্ধারিত সরে রেখেছেন, আমাদেরকে ঠিক সেই পরিণতিরই সম্মখীন হতে হচ্ছে।

যখন কোন জাতি আল্লাহর কোন নিয়ামতের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শণ করে আপন সৃষ্টিকর্তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তখন আল্লাহ তাকে ইহকাল ও পরকালে সর্বত্রই শাস্তি দিয়ে থাকেন। ইহুদী জাতির বেলায় আল্লাহ তায়ালার এই শাশ্বত বিধান পুরুপুরি কার্যকরী হয়েছে। আর আজ আমরা আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছি। ইহুদীদের সংগে আল্লাহ তায়ালার কোন ব্যক্তিগত আক্রোশ ছিল না, যে তিনি শুধু তাদেরকেই অপরাধের শাস্তি দান করবেন। আর আমাদের সংগে তাঁর এমন কোন বিশেষ সম্পর্ক নেই যে, অপরাধে লিপ্ত থেকেও আমরা তার শাস্তি থেকে বাঁচতে পারবো। বস্তুত আমরা সত্যের সাক্ষ্যদানে যতটুকু ত্রুটি করে আসছি আর বাতিলের সাক্ষ্যদানে যতখানি তৎপরতার পরিচয় দিচ্ছি, ঠিক ততটাই আমরা অধঃপাতের দিকে নেমে যাচ্ছি। গত এক শতাব্দীর মধেই মরক্কো থেকে পূর্বভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ (ইন্দোনেশিয়া, মালয়, সিংগাপুর ইত্যাদি) পর্যন্ত একের পর এক দেশ আমাদের হস্তচ্যুত হয়ে গেছে। মুসলিম জাতিগুলো একে একে পরাজিত ও পরাধীন হয়ে পড়েছে। মুসলিম নাম আর গৌরব ও সম্মানের প্রতীকরূপে নয়-অপমান, দারিদ্র ও অবনতির প্রতীক স্বরূপ রয়ে গেল। দুনিয়ায় মান সম্মান বলতে আমাদের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকলো না। কোথাও আমাদের কে পাইকারী ভাবে হত্যা করা হলো, আর কোথাও আমাদেরকে ঘর বাড়ী থেকে বিতাড়িত করা হলো, আর কোথাও শুধু চাকরি-বাকরি ও খেদমতের কাজে ব্যবহার করার জন্যে জীবিত রাখা হলো। যেখানে মুসলমানদের নিজস্ব সরকার ছিল, সেখানেও তারা ক্রমাগতভাবে পরাজিত হতে লাগলো। আজ তাদের অবস্থা এই যে, বিদেশী শক্তির ভয়ে তারা সদা ভীত ও সন্ত্রস্ত, অথচ তারা যদি ইসলামের মৌখিক এবং বাস্তব সাক্ষ্য দান করতো, তাহলে কুফরের ধারক ও বাহকরাই তাদের ভয়ে কম্পমান থাকতো।

এ কথাটা বুঝতে খুব বেশী দূরে যেতে হবে না। এই উপমহাদেশে নিজেদের অবস্থাটাই একটু পর্যবেক্ষণ করে দেখুন। আপনারা সত্যের সাক্ষ্যদানে যে ত্রুটি করেছেন এবং কথা ও কাজের মাধ্যমে সত্যের বিপরীত যে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তারই ফলে একের পর এক রাজ্য আপনাদের হস্তচ্যুত হয়ে গেল। প্রথমে আপনারা মারাঠা ও শিখদের হাতে নাজেহাল হলেন। তারপর ইংরেজদের গোলামী আপনাদের ভাগ্যে জুটলো। আর এখন পূর্বের পরাজয়ের চেয়ে অধিকতর শোচনীয় পরাজয় আপনাদের সামনে আসছে। আজ আপনাদের সামনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও সংখ্যালঘিষ্ঠতার প্রশ্নই সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। অন্যরা সংখ্যাগুরু হিন্দুদের অধীন হয়ে পড়ায় এবং এককালীন নমশূদ্র জাতির মতো পরিণতির সম্মখীন হওয়ার আতংকে সদা কম্পমান রয়েছেন। কিন্তু আপনারা আল্লাহর ওয়াস্তে আমায় বলুন তো, আপনারা যদি ইসলামের যথার্থ সাক্ষী হতেন, তাহলে কি এখানকার কোন সংখ্যাগুরু জাতি আপনাদের ভয়ের কারণ হতে পারতো? আর আজো যদি আপনারা কথা ও কাজের মাধ্যমে ইসলামের যথার্থ সাক্ষ্যদানকারী হন, তাহলে কি কয়েক বছরের মধ্যেই সংক্যালঘিষ্ঠতার প্রশ্নে মীমাংসা হয়ে যায় না? আরবের মাত্র প্রতি লাখে একজন সংখ্যালঘুকে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার সিদ্ধান্ত করেছিল এক বিদ্বেষ পরায়ণ ও চরম অত্যাচারী সংখ্যাগুরু জাতি। কিন্তু ইসলামের সত্যতার সাক্ষীগণ মাত্র দশ বছরের মধ্যেই সেই সংখ্যালঘুদেরকে শতকরা একশত জনের সংখ্যাগরিষ্ঠাতায় রূপান্তারিত করেছিল। অতঃপর ইসলামের সাক্ষ্য দানকারী এই জাতিটি যখন আরব থেকে বের হলো, তখন ২৫ বছরের মধ্যেই তুর্কীস্তান থেকে মরক্কো পর্যন্ত একের পর এক জাতি তঁদের সাক্ষ্যদানের উপর ঈমান আনতে লাগলো। যেসব এলাকায় শতকরা একশতজন অগ্নিপূজক ও খ্রিষ্টান বাস করতো, সেখানে শতকরা একশতজনই মুসলমান বাস করতে লাগলো। কোন প্রকার হঠকারিতা, জাতি-বিদ্বেষ এবং ধর্মীয় সংকীর্ণতাই সত্যের এই বাস্তব ও জীবন্ত সাক্ষ্যের সামনে দৃঢ় হয়ে দাঁড়ানোর মতো মযবুত বলে প্রমাণিত হয়নি। কাজেই আজ যদি আপনারা অন্য জাতির পদানত হওয়ার আশংকায় শংকিত হয়ে পড়েন, তাহলে তা সত্য গোপন ও মিথ্যা সাক্ষ্য দানের অনিবার্য শাস্তি ছাড়া আর কি হতে পারে?

পরকালের শাস্তি
এইতো হচ্ছে এ অপরাধের জন্য দুনিয়ার জীবনে প্রাপ্য শাস্তির নমুনা। আর পরকালে এর চেয়েও কঠিনতর শাস্তির আশংকা রয়েছে। যতক্ষণ আপনারা সত্যের সাক্ষীরূপে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন না করছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত দুনিয়ার যত গোমরাহী বিস্তার লাভ করবে, যত যুলুম পীড়ন, ফিতনা- ফাসাদ নাফরমানীমূলক ব্যাপার ঘটবে, যত অনৈতিকতা ও অসচ্চরিত্রতার প্রচলন হবে, নিজ দায়িত্ব থেকে আপনারা কিছুতেই নিস্কৃতি লাভ করতে পারবেন না। কারণ ঐ সকল অনাচার সৃষ্টির দায়িত্ব যদি আপনাদের নয়, কিন্তু ঐগুলো সৃষ্টি হওয়ার কারণ জিইয়ে রাখার এবং এগুলোর বিকাশ লাভের সুযোগ দেয়ার জন্য আপনারা অবশ্যই দায়ী।

মুসলমানদের সমস্যা ও তার সমাধান
ভদ্র মহোদয়গন! এ পর্যন্ত আমি যা কিছু আরয করলাম, তা থেকে আপনারা জানতে পেরেছেন যে, মুসলমান হিসেবে আমাদের কি কর্তব্য ছিল আর কি করছে এবং নিজেদের কৃতকর্মের জন্য আমাদের কি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এদিক থেকে যদি আপনারা প্রকৃত বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য করেন, তাহলে স্বাভাবতই আপনাদের কাছে এ সত্যটি উদঘাটিত হবে যে, মুসলমানরা আজ ভারতবর্ষ ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেসব সমস্যাকে তাদের জাতীয় জীবনের আসল সমস্যা বলে মনে করে নিয়েছে এবং যেগুলোর সমাধানের জন্য কিছুটা পরিকল্পিত আর বেশির ভাগেই অন্যের সময়,শক্তি শ্রম ও অর্থ ব্যয় নিছক পন্ডশ্রম বৈ কিছুই নয়।

একটি সংখ্যালঘু জাতি আর একটি সংখ্যাগুরু জাতির মাঝখানে থেকে নিজেদের স্বার্থ, অস্তিত্ব ও অধিকার কি করে রক্ষা করবে, কোন সংখ্যালঘু জাতি নিজ নিজ সীমার ভেতরে সংখ্যাগুরুর ন্যায় অধিকার কেমন করে আদায় করবে, কোন পরাধীন জাতি একটি পরাক্রমশালী জাতির অধীনতা থেকে কেমন করে মুক্ত হবে, একটি দুর্বল জাতি একটি শক্তিশালী জাতির অন্যায় ও যুলুম থেকে কেমন করে আত্মরক্ষা করবে, একটি অনুন্নত জাতি কেমন করে একটি শক্তিশালী জাতির ন্যায় উন্নতি, সমৃদ্ধি ও শক্তি অর্জন করবে, এ ধরনের সমস্যা অমুসলিমদের পক্ষে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধানতম সমস্যা বিবেচিত হতে পারে এবং এগুলোর প্রতিই তাদের যাবতীয় চেষ্টা- সাধনা ও মনোযোগ কেন্দ্রীভুত হতে পারে। কিন্তু আমাদের মুসলমানদের পক্ষে এগুলো কোন স্বতন্ত্র ও স্থায়ী সমস্যাই নয়, বরং এ হচ্ছে আমাদের আসল কাজের প্রতি বিমুখতারই অনিবার্য পরিণতি। আমরা যদি সে কাজ যথাযথভাবে সম্পাদন করতাম, তাহলে আজ আর এত জটিল ও উদ্বেগজনক সমস্যার স্তুপ জমতে পারত না। এখনো যদি আমরা ঐ আবর্জনা পরিস্কার করার পরিবর্তে আমাদের যাবতীয় মনোযোগ ও শক্তি- সমর্থকে সেই আসল কর্তব্য পালনে নিয়োজিত করি, তাহলে অনতিকালের মধ্যেই শুধু আমাদের নয়, সারা দুনিয়ার পক্ষে উদ্বেগজনক সমস্যার আবর্জনা স্বাভাবিকভাবেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। কারণ, দুনিয়াকে পরিচ্ছন্ন ও পরিশুদ্ধ রাখার দায়িত্ব আমাদের উপরই ন্যাস্ত ছিল। সে দায়িত্ব পালনে গাফলতির ফলেই আজ দুনিয়াটা সমস্যার আবর্জনায় ভরে গেছে। আর দুনিয়ার সর্বাধিক জঞ্জালময় অবস্থাটা আমাদের ভাগেই পড়েছে।

পরিতাপের বিষয় যে, মুসলমাদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এ বিষয়টি বুঝাবার জন্যে আদৌ চেষ্টা করছেন না। মুসলিম জনসাধারণকে আজ সর্বত্রই এ কথা বুঝানো হচ্ছে যে, সংখ্যাগুরুর প্রশ্ন, স্বদেশের স্বাধীনতা, জাতীয় স্বার্থরক্ষা, বৈষয়িক উন্নতি ইত্যাদিই হচ্ছে তোমাদের আসল সমস্যা। পরন্তু এই ভদ্রলোকেরা এসব সমস্যার সমাধানের যে পন্থা অমুসলিমদের কাছে থেকে শিখেছেন, তাই মুসলমানদের কাছে পেশ করছেন। কিন্তু আমি আল্লাহর অস্তিত্বের উপর যতটা বিশ্বাসী ঠিক ততখানি দৃঢ়তার সাথেই বলতে পারি যে, এদ্বারা আপনাদেরকে ভুল পথে পরিচালিত করা হচ্ছে। আর এ পথে চলে আপনারা কখনো কল্যাণময় লক্ষ্যে পৌছতে পারবেন না।

আসল সমস্যা
তাই আপনাদের জীবনে প্রকৃত সমস্যা কি, এ কথা অকপটে ও পরিস্কার ভাষায় বিবৃত না করলে আপনাদের চরম অহিতাকাক্সক্ষী বলেই প্রমাণিত হবে। আমার জানা মতে আপনাদের বর্তমান, ভবিষ্যত একটি বিশেষ প্রশ্নের সাথে ওতপ্রেতভাবে জড়িত। তা হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তাঁর রাসূলের মাধ্যমে আপনাদের কাছে যে হিদায়াত পাঠিয়েছেন, যার কল্যাণে আপনারা মুসলিম নামে অভিহিত হচ্ছেন এবং যার সাথে সম্পর্কে থাকার দরুন ইচ্ছায় হোক কি অনিচ্ছায় আপনারা দুনিয়ায় ইসলামের প্রতিনিধি সাব্যস্ত হয়েছেন, তার সংগে আপনারা কিরূপ আচরণ করছেন? আপনারা যদি সত্যিকারভাবে ইসলামের আনুগত্য করেন এবং কথা ও কাজের মাধ্যমে তার সত্যতার সাক্ষ্য দেন আর আপনাদের উন্নতি ও সমৃদ্ধি এবং পরকালে সাফল্য ও কল্যাণের অধিকারী হবেন। আমাদের উপর ভয়-ভীতি, অপমান -লাঞ্ছনা এবং পরাজয় ও পরাধীনতার যে মেঘ আচ্ছন্ন হয়ে আছে, তা মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই পরিস্কার হয়ে যাবে। সত্যের প্রতি আপনাদের আহবান ও সচ্চারিত্রিক মাধুর্য লোকদের মস্তিস্ক প্রভাবিত করবে। দুনিয়াজোড়া আপনাদের প্রভাব -প্রতিপত্তি কায়েম হবে আপনাদের কাছ থেকেই ইনসাফ ও ন্যায় বিচারের প্রত্যাশা করা হবে। আপনাদের আমনতদারী ও বিশ্বস্ততার উপরই লোকেরা ভরসা করবে। আপনাদের মুখনিঃসৃত বাণীই সকল মহলে প্রবল বলে স্বীকৃতি লাভ করবে। আপনারাই হবেন যাবতীয় কল্যাণের উৎস। আপনাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কুফরী নেতৃত্বের কোন প্রভাব- প্রতিপত্তিই আর অবশিষ্ট থাকবে না। আপনাদের সততা ন্যায়পরায়ণতার ফলে তাদের সমুদয় দর্শন এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মতবাদগুলো মিথ্যা বলে প্রমাণিত হবে। তাদের শিবিরে আজ যেসব শক্তির সমাবেশ দেখা যাচ্ছে, তা ছিন্ন হয়ে ইসলামের শিবিরে এসে পড়বে।

এভাবে এমন এক দিন আসবে যখন কম্যুনিজম মস্কোতে থেকেই আত্মরক্ষার জন্যে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়বে। পুঁজিবাদপুষ্ট গণতন্ত্র ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্ক থেকেই আত্মরক্ষার চিন্তায় কম্পমান হবে। লন্ডন ও প্যারিসের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জড়বাদপুষ্ট ও নাস্তিক্যবাদ স্বয়ং ব্রাহ্মণ ও জার্মানদের মাঝেও ভক্ত খুঁজে পাবে না। আর বর্তমান যুগটি এমন একটি শিক্ষামূলক কাহিনীরূপে ইতিহাসে স্থান পাবে যে, ইসলামের ন্যায় বিশ্বগ্রাসী শক্তির ধারকগণও কোনকালে এমনি বেকুব বনে গিয়েছিল যে, হযরত মুসা (আ.) এর যষ্টি বগল তলে চেপে রেখেও লাঠি ও রশি দেখে সাপের ভয়ে কাঁপছিল।

বস্তুত ইসলামের একনিষ্ঠ অনুসারী ও সত্যিকারের সাক্ষ্যদানকারী হলেই আমাদের ভবিষ্যত এমনি উজ্জ্বল হতে পারে। কিন্তু এর বিপরীত আপনারা যদি আল্লাহর প্রেরিত হিদায়াতের উপর জেঁকে বসে থাকেন তা থেকে না আপনারা নিজেরা উপকৃত হন, আর না অন্যকে উপকৃত হতে দেন। আপনারা নিজেদের মুসলান বলে দাবী করে ইসলামের প্রতিনিধি সেজে বসেন আর নিজেদের কথা ও কাজের মাধ্যমে শিরক, জাহিলিয়াত, দুনিয়াপূজা এবং নৈতিক উচ্ছৃংখতার পথেই বেশীর ভাগ সাক্ষ্য দান করেন। আল্লাহর কিতাব তাকের উপর রেখে পথ নির্র্দেশের জন্য ধাবিত হন কুফরের ধ্বজাধারী ও গোমরাহীর উৎসের দিকে। আল্লাহর বন্দেগীর দাবী করে প্রকৃত শয়তানী ও আল্লাদ্রোহী শক্তিগুলোর দাসত্ব করেন, বন্ধুত্ব ও শত্রুতা শুধু প্রবৃত্তির লালসার জন্যেই করেন, আর উভয় ক্ষেত্রেই ইসলামকে দূরে রাখেন আর এভাবে নিজেদের জীবনকেও ইসলামের কল্যাণ থেকে দূরে রাখেন এবং দুনিয়াবাসীকেও ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার পরিবর্তে উল্টো আরো দুরে ঠেলে দেন,তবে এমতবস্তায় আপনাদের দুনিয়া ও আখিরাত কোনটাই কল্যাণময় হতে পারে না। বরং আজ আপনারা যা কিছু দেখতে পাচ্ছেন, তা হচ্ছে আল্লাহর চিরাচরিত নিয়মানুসারে এরূপ কর্মনীতির পরিণতি। আর অদূর ভবিষ্যতে এর চেয়েও মন্দ পরিণতির সম্মুখীন হওয়া মোটেই বিচিত্র নয়।

ইসলামের লেবেলটাকে খুলে দিয়ে প্রকাশ্যে কুফরকে গ্রহণ করলে হয় তো পারসীয়ান, আমেরিকান ও বৃটেনের মতো আপনাদের দুনিয়াবী যিন্দেগীটা চাকচিক্যময় হতে পারতো কিন্তু মুসলমান হয়ে অমুসলমানদের মতো জীবন যাপন করা এবং আল্লাহর দীনের ভূয়া প্রতিনিধিত্ব করে দুনিয়ার মানুষের জন্যে হিদায়াতের দ্বার রূদ্ধ করে দেয়ার এই গুরুতর অপরাধ আপনাদের দুনিয়াবী যিন্দেগীকেও সমৃদ্ধিশালী হতে দেবে না। এ অপরাধের যে শাস্তির কথা কুরআনে লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং যার জীবন্ত উদাহরণ হিসেবে আপনাদের সামনে ইহুদী জাতি বর্তমান রয়েছে, তা কিছুতেই নড়চড় হতে পারে না। আপনারা এক জাতিত্বের লঘুতর বিপদকে (اهون البليتين) গ্রহণ করুন কিংবা মুসলিম জাতীয়তার নামে নিজেদের স্বতন্ত্র জাতীয়তার স্বীকৃতি আদায় করে যাবতীয় সুযোগ সুবিধা আদায় করে নেন, এ থেকে কোন মতেই আপনারা রেহাই পেতে পারেন না। কারণ এ শাস্তি থেকে অব্যাহতি পাবার একমাত্র পথই হচ্ছে ঐ অপরাধ থেকে বিরত থাকা।

আমাদের উদ্দেশ্য
এখন আমরা কি উদ্দেশ্যে সংঘবদ্ধ হয়েছি তাই আমি আপনাদের কাছে সংক্ষেপে ব্যক্ত করবো। যারা ইসলামকে নিজেদের দীন বলে স্বীকার করে থাকেন, তাদেরকে আমরা এই আহ্বান জানাচ্ছি যে, তাঁরা যেন এই দীনকে নিজেদের প্রকৃত জীবন বিধানে পরিণত করেন। একে যেন ব্যক্তিগতভাবে আহ্বান নিজেদের জীবনে ও সামগ্রিকভাবে নিজেদের গৃহে,খান্দানে,সমাজে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, সাহিত্য ও সাংবাদিকতায়, ব্যবসায়-বাণিজ্যে,অর্থনৈতিক কাজ কারবারে,সমিতি ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানে এবং সাধারণভাবে জাতীয় নীতি নির্ধারণে কার্যত প্রতিষ্ঠিত করেন। আমরা তাদেরকে আরো বলছি যে, মুসলমান হিসেবে দীন ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও সত্যের সাক্ষ্যদানই আপনাদের জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য। তাই আপনাদের যাবতীয় চেষ্টা-সাধনা ও ক্রিয়া-কলাপ এই উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করেই সম্পাদিত হওয়া উচিত। যেসব কথা ও কাজে ইসলামের বিরোধিতা এবং ভুল প্রতিনিধিত্ব হওয়ার আশংকা রয়েছে, তা থেকে আপনাদের সর্বতোভাবে বিরত থাকা কর্তব্য। আপনাদের প্রতিটি কথা ও কাজকে ইসলামের মানদণ্ডে যাচাই করুন। দীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করা, যথার্থরূপে তার সত্যতার সাক্ষ্য দান করা এবং চূড়ান্তরূপে সত্যকে প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে ইসলামের প্রতি দুনিয়ার মানুষকে আহ্বান জানানোর জন্যে নিজেদের যাবতীয় চেষ্ঠা-সাধনাকে নিয়োজিত করুন।

আমাদের কর্মপদ্ধতি
জামায়াতে ইসলামী কায়েম করার এই হচ্ছে একমাত্র উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে যে পথ আমরা বাছাই করে নিয়েছি, তা হচ্ছে এই যে, আমরা প্রথমত মুসলমানদেরকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেই। ইসলাম জিনিসটা কি, তার দাবী ও চাহিদা কি, মুসলমান হওয়ার তাৎপর্য কি, মুসলমান হওয়ার দরূন তাদের উপর কোন্ কোন্ দায়িত্ব অর্পিত হয়, এসব কথা তাদেরকে পরিষ্কার বলে দেই। এ বিষয়টি যারা বুঝে নেন, তাদেরকে আমরা বলে দেই যে, ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় ইসলামের সকল দাবী পূরণ করা সম্ভব নয়। এজন্যে সামগ্রিক ও সম্মিলিত চেষ্টার প্রয়োজন। ব্যক্তি জীবনের সাথে দীনের এক ক্ষুদ্রতম অংশেরই সম্পর্ক রয়েছে মাত্র। সেটুকু আপনারা কায়েম করে ফেললেও পূর্ণ দীন কায়েম হয়ে যাবেনা এবং এতে তার সত্যতার সাক্ষ্যও আদায় হবে না। বরং সমাজ জীবনের কুফরী ব্যবস্থার প্রাধান্য থাকলে ব্যক্তির জীবনেরও বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ইসলামকে কায়েম করা সম্ভব হবে না। কুফরী সমাজ ব্যবস্থার প্রভাব দিন দিন ব্যক্তি জীবনে ইসলামকে সীমিত ও সংকুচিত করতে থাকবে। তাই দীনকে পূর্ণরূপে কায়েম করার এবং যথার্থরূপে তার সত্যতার সাক্ষ্য দান করার জন্যে সকল দায়িত্বসম্পন্ন মুসলমানের সংঘবদ্ধভাবে দীন-ইসলামকে কার্যত প্রতিষ্ঠিত ও তার দিকে দুনিয়ার মানুষকে আহ্বান জানানো এবং সেই সংগে দীনের প্রতিষ্ঠা ও তার প্রচারের পথ থেকে সকল বাধা বিপত্তিকে হটিয়ে দেয়া কর্তব্য।

সংগঠন প্রতিষ্ঠা
এ জন্যে দীন-ইসলামে ‘জামায়াত’ কে অপরিহার্য করে দেয়া হয়েছে এবং দীনের প্রতিষ্ঠা ও তার দাওয়াত প্রচারের জন্যে এই কর্মনীতি নির্দিষ্ট করা হয়েছে যে, প্রথমে একটি সুসংহত দল গঠন করতে হবে এবং তার পরেই আল্লাহর পথে চেষ্টা-সাধনা চালাতে হবে, আর এ কারণেই জামায়াতবিহীন যিন্দেগীকে জাহিলী যিন্দেগী এবং জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ারই শামিল বলে অভিহিত করা হয়েছে।

এ সম্পর্কে নিম্নোক্ত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ

انا امركم بخمس الله امرنى بهن الجماعة والسمع والطاعة والهجرة والجهاد فى سبيل الله فانه من خرج من الجماعة قدر شبر فقد خلع ربقة الاسلام من عنقه الا ان يراجع ومن دعا بدعوى الجاهلية فهو من جثى جهنم، قالوا يا رسول الله وان صام وصلى؟ قال وان صام وصلى وزعم انه مسلم . (أحمد وحاكم)

“আল্লাহ আমাকে যে পাঁচটি বিষয়ের হুকুম দিয়েছেন আমিও তোমাদেরকে তারই হুকুম দিচ্ছি। তা হলো-জামায়াত, নেতৃ-আদেশ শ্রবণ,আনুগত্য,হিজরত ও আল্লাহর পথে জিহাদ। যে ব্যক্তি ইসলামী জামায়াত ত্যাগ করে এক বিঘত পরিমাণও দূরে সরে গেছে, সে যেন নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রজ্জু খুলে ফেলেছে। অবশ্য যদি সে জামায়াতের দিকে পুনঃ প্রত্যাবর্তন করে, তবে স্বতন্ত্র কথা। আর যে ব্যাক্তি জাহিলিয়াতের দিকে (অর্থাৎ অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলার দিকে) আহবান জানাবে, সে হবে জাহান্নামী। (এতদশ্রবণে) সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসুল, নামায- রোযা আদায়করা সত্ত্বেও কি সে জাহান্নমী হবে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেনঃ (হাঁ) যদিও সে নাময-রোযা পালন করে এবং নিজেকে মুসলমান বলে দাবী করে (তাহলেও সে জাহান্নামী হবে )”। ——(আহমদ ও হাকেম)

এই হাদিস থেকে নিম্নোক্ত তিনটি কথা প্রমাণিতঃ

একঃ দীনী কাজের সঠিক নিয়ম হচ্ছে এই যে, সর্বাগ্রে একটি সুসংহত ও সুশৃঙ্খল জামায়াত গঠিত হবে এবং তার জন্যে এমন একটি সংগঠন গড়ে তুলতে হবে যার মাধ্যমে সবাই একজন নেতার আনুগত্য করে চলবে। অতঃপর পরিস্থিতি অনুযায়ী তারা হিজরত করবে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করবে।

দুইঃ জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা প্রায় ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকারই নামান্তর। কারণ এর অর্থ হচ্ছে এই যে, মানুষ আরবের সেই জাহিলী যুগের দিকেই পুনঃ প্রত্যাবর্তন করছে, যে যুগে কেউ কারো প্রতি কর্ণপাত করতো না।

তিনঃ ইসলামের অধিকাংশ দাবী ও তার প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল জামায়াত এবং সম্মিলিত চেষ্টার মাধ্যমেই পূর্ণ হতে পারে। এ জন্যেই হযরত রাসূরুল্লাহ (সা.) নামায- রোযার পাবন্দী এবং মুসলিম হওয়ার দাবী করা সত্বেও জামায়াত ত্যাগী ব্যক্তিকে ইসলামত্যাগী বলে আখ্যা দিয়েছেন। হযরত উমর (রা.) এর নিম্মোক্ত বাণীও একথারই প্রতিধ্বনি করেছেঃ

لا اسلام الا بجماعة . (جامع بيان العلم لابن عبد البر)

জামায়াত বিহীন ইসলামের কোন অস্তিত্ব নেই।”

কাজের তিনটি পথ
যারা জামায়াতী নিয়ম শৃঙ্খলার পাবন্দী করতে পারবেন আমরা তাদেরকে বলে থাকি আপনাদের সামনে এখন মাত্র তিনটি পথই খোলা রয়েছে এবং তার যে কোন পথ বাছাই করে নেয়ার পূর্ণ স্বধীনতা আপনাদের রয়েছে।

প্রথমতঃ আপনাদের মন যদি সাক্ষ্য দেয় যে, আমাদের দাওয়াত, আকীদা- বিশ্বাস, মূল লক্ষ্য, জামায়াতী নিয়ম-শৃঙ্খলা, কর্মনীতি ইত্যাদি সব কিছুই খালিস ইসলাম সম্মত এবং কুরআন – হাদীসের দৃষ্টিতে মুসলিম জাতির যা কর্তব্য, আমরা তা-ই সম্পাদন করছি, তাহলে আমাদেও সাথে এই কাজে আপনারা শামিল হন।

দ্বিতীয়তঃ যদি কোন কারণবশত আমাদের কাজে আপনারা সন্তুষ্ট হতে না পারেন এবং অন্য কোন দলকে ইসলামী উদ্দেশ্যে খাটি ইসলামী পন্থায় কাজ করতে দেখেন, তাহলে তাতেই শামিল হয়ে যান। কেন না, মাত্র দেড়খানা ইট দ্বারা মসজিদ নির্মানের শখ আমাদের নেই।

তৃতীয়তঃ যদি আমাদের বা অন্য কোন দলের উপর আপনাদের আস্থা না থাকে, তাহলে ইসলামী দায়িত্ব পালন করা তথা দীন ইসলামকে পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত করা এবং কথা ও কাজের মাধ্যমে তার সত্যতার সাক্ষ্য দান করার উদ্দেশ্যে আপনারা নিজেরাই অগ্রসর হয়ে খাটি ইসলামী পন্থায় একটি সুসংহত জামায়াত গঠন করুন।

এই তিনটি পথের যে কোন একটি বাছাই করে নিলে ইন্শাআল্লাহ আপনারা মধ্যপন্থী বলে ই গণ্য হবেন। কেবল আমাদের জামায়াতেই সত্যপন্থী এবং আমাদের জামায়াতের বহির্ভূত লোকেরা সবাই বাতিলপন্থী এরূপ দাবী আমরা কোন দিন করিনি আর সুস্থমস্তিষ্ক থাকা পর্যন্ত কোন দিনই তা করবো না। আমরা লোকদের কখনও আমাদের জামায়াতের দিকে আহবান জানাইনি। বরং মুসলমান হিসেবে যে দায়িত্বটি আমাদের সাথে মিলেই করুন বা অন্য কোন পন্থায় আপনাদের কাজ সত্যপন্থীর কাজই হবে। কিন্তু আপনারা নিজেরাও এ কাজে অগ্রসর হবেন না এবং দুনিয়ার সামনে তার সত্যতার সাক্ষদানের দায়িত্ব এড়িয়ে যাবেন কিংবা আল্লাহর দীনের পরিবর্তে অন্য কোন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কাজে নিজেদের শক্তি -সামর্থ্যরে অপচয় করতে থাকবেন আর আপনাদের কথা ও কাজ ইসলামের বিপরীত বস্তুও স্বাক্ষ্যবহন করবে, এটা কোন প্রকারেই সংগত হতে পারে না। ব্যাপার যদি দুনিয়ার মানুষের সাথে হতো, তাহলে না হয় টালবাহানা করে কোন প্রকার কাজ হাসিল করা যেত। কিন্তু এ স্থানে তো ব্যাপার হচ্ছে এমন এক মহান প্রভুর সাথে, যিনি অন্তরের অন্তঃস্থলের খবরও রাখেন। কাজেই কোন চালবাজি দ্বারা তাঁকে প্রতারিত করা সম্ভব হবেনা।

বিভিন্ন দীনী সংগঠন
এ কথা নিঃসন্দেহ যে একই উদ্দেশ্য এবং একই কাজ করার জন্যে বিভিন্ন দল গঠিত হওয়ার ব্যাপারটা আপতদৃষ্টিতে ভুল মনে হতে পারে এবং এতে বিভেদ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ার আশংকা রয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে যেহেতু ইসলামী জীবন ব্যবস্থাই ছিন্নভিন্ন হয়ে আছে এবং এখন শুধু ইসলামী জীবন ব্যবস্থা পরিচালনার প্রশ্ন নয় বরং নতুন করে প্রতিষ্ঠার প্রশ্নই দেখা দিয়েছে তাই এমনি পরিস্থিতিতে গোটা উম্মতের জন্যে আল- জামায়ত, (একটি মাত্র দল) গঠন করা সম্ভ নয়, যাতে শামিল হওয়াকে জাহিলিয়াত কিংবা ইসলাম ত্যাগের সমতুল্য মনে করা যেতে পারে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে এই উদ্দেশ্যে ইসলামী পন্থায়ই কাজ করে যায়, তাহলে শেষ পর্যন্ত এগুলো একত্রীভুত হয়ে যাবেই। কারণ সত্য পথের পথিকরা বেশীক্ষণ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে পারে না, সত্যই তাদের একসূত্রে আবদ্ধ করে ফেলে। কেননা, সত্যের প্রকৃতি হচ্ছে ঐক্য, সংহতি ও একাত্মবোধের প্রেরণা দান করা। অনৈক্য ও বিভেদ কেবল তখনি দেখা দিতে পারে, যখন সত্যের সংগে কিছুটা অসত্যের সংমিশ্রণ ঘটে, অথবা উপরে সত্যের প্রদর্শনী থাকলেও ভিতরে অসত্যই কাজ করতে থাকে।

আমাদের দাবী
এবার যারা আমাদের জামায়াতে স্বেচ্ছায় ও সন্তুষ্ট চিত্তে শামিল হন, তাদের কাছে আমাদের দাবী কি ও এবং আমাদের কাছেই বা তাদের জন্যে কাজের কি প্রোগ্রাম রয়েছে তা আমি সংক্ষেপে পেশ করবো। প্রকৃতপক্ষে এক মুসলমানের কাছে ইসলাম যা দাবী করে, জামায়াতর রুকন বা সদস্যদের কাছে আমাদের দাবী তার চেয়ে বেশী কিছু নয়। আমার ইসলামের মূল দাবীর ব্যাপারে না অণু পরিমাণ কিছু বাড়াতে চাই আর না তা থেকে কিছু মাত্র কমাতে চাই। আমরা কোনরূপ কাট – ছাট না করে প্রতিটি মানুষের সামনে পূর্ণ ইসলামকেই পেশ করে থাকি এবং তাদেরকে এই মর্মে আহবান জানাই যে, এই দীন ইসলামকে বুঝে শুনে সচেতনভাবে গ্রহন করুন এর দাবীগুলো ভেবে -চিন্তে ঠিকমত আদায় করুন এবং নিজেদের চিন্তা, কল্পনা, কথা ও কাজ থেকে এর নির্দেশ ও ভাবধারা বিরোধী যাবতীয় বস্তুকে বের করে দিন ও নিজেদের সমগ্র জীবন দ্বারা ইসলামের সত্যতার সাক্ষ্য দান করুন। এই হচ্ছে আমাদের জামায়াতে ভর্তি হওয়ার ফিস এবং সদস্য হওয়ার পদ্ধতি। আমাদের গঠনতন্ত্র, জামায়াতী নিয়ম- শৃঙ্খলা এবং আমাদের দাওয়াতের মূল লক্ষ্য সব কিছুই স্পষ্ট। এসব যাচাই করে যে কেউ দেখতে পারেন যে আমরা প্রকৃত ইসলামে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক ইসলামে আদৌ কোন কাটছাট বা হ্রাসবৃদ্ধি করিনি। বরং আমাদের কোন কথা যদি কুরআন- সুন্নাহ হতে অতিরিক্ত কিছু বলে কেউ প্রমাণ করতে পারেন, তবে তা বর্জন করতে এবং কুরআন ও সুন্নাহয় বর্তমান রয়েছে অথচ আমাদের এখানে তা নেই, এমন কোন বিষয়ের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করলে আমরা তা দ্বিধাহীন চিত্তে গ্রহণ করে নিতে সদা প্রস্তুত। আমরা তো কোনরূপ কাটছাঁট না করে পূর্ণ ইসলামকে কায়েম করা এবং তার সত্যতার সাক্ষ্যদানের জন্যেই সংঘবদ্ধ হয়েছি এ ব্যাপারে যদি আমরা মুনাফিক বলে প্রমাণিত হই, তবে এর চেয়ে বড় যুলুম আর কি হতে পারে?

এভাবে যারা আমাদের জামায়াতে শামিল হন, তাদের কর্তব্য হচ্ছে, নিজেদের কথা ও কাজের মাধ্যমে ইসলামের সত্যতার সাক্ষ্যদান করা এবং গেটা মানব জাতির সামনে এই সাক্ষ্য আদায় করার জন্যে পরিপূর্নরূপে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা কায়েম করার উদ্দেশ্যে সম্মিলিত চেষ্টা-সাধনায় আত্মনিয়োগ করা। মৌখিক সাক্ষ্যদান সম্পর্কে আমরা আমাদের সদস্যদেরকে এমনিভাবে ট্রেনিং দান করছি যেন তারা নিজ নিজ যোগ্যতা অনুসারে বক্তৃতা ও লেখনীর মাধ্যমে অধিকতর যুক্তিপূর্ণভাবে ইসলামের সত্যতার স্বাক্ষ্যদানের জন্যে প্রস্তুত হতে পারে, পরন্তু আমরা সংঘবদ্ধভাবে জ্ঞান- বিজ্ঞান ও শিল্প- সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় মানব জীবনের যাবতীয় সমস্যার ব্যাপারে ইসলামী শিক্ষা ও তার তাৎপর্যকে স্পষ্ট করে তুলে ধরা এবং এ উদ্দেশ্যে প্রচার প্রোপাগান্ডার সকল সম্ভাব্য উপায়ে সাহায্য করার উপযোগী একটি প্রতিষ্ঠান কায়েমের চেষ্টা করছি। আর বাস্তব সাক্ষীতে পরিণত হবে, অতঃপর তাদের সমন্বয়ে সত্যিকার ইসলামী ভাবধারায় কার্যকরীরূপে লক্ষ্য করার উপযোগী একটি সুশৃঙ্খল সমাজ গড়ে উঠবে। অবশেষে এই সমাজটিই আপন চেষ্টা সাধনার মধ্যেমে বাতিল জীবনব্যবস্থার বিলুপ্তি সাধন করে সত্য জীবন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করবে; যা দুনিয়ার সামনে পূর্ণাংগ ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করবে।


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি