স্মৃতি অমলিন
লেখকঃ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির
প্রকাশনীঃ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির
পৃথিবীতে সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব চলে আসছে সেই অতি প্রাচীনকাল থেকে। এ দ্বন্দ্ব চিরন্তন। বাতিল শক্তির ধ্বজাধারীরা সত্যের বিরুদ্ধে অপচেষ্টা চালিয়েছে বারবার। আল্লাহ যেমনটি বলেন, “তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায় । আর আল্লাহর এটাই ফয়সালা যে, কাফিররা যতই অপছন্দ করুক, তিনি তার নূরকে পূর্ণরূপে প্রকাশ করবেনই।” (সূরা আস-সফ, আয়াত : ৮) বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সত্য ও সুন্দরের পথের সৈনিকদের একটি সংগঠনের নাম। এটি এক অনন্য ও ঐতিহাসিক নাম । দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা যখন সুনাগরিক তৈরিতে ব্যর্থ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলােতে বিরাজ করছিল অস্থিরতা, সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিকামী মানুষের দিগ্বিদিক ছােটাছুটি- এমনই এক প্রেক্ষাপটে ছাত্রশিবির তার ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু করে। তরুণ ছাত্রসমাজের অহঙ্কার এ সংগঠনটি আজ এদেশের মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার হৃদয়স্পন্দন। প্রায় দুইশত বছরের ইংরেজ শাসন এবং ইংরেজ শাসনপরবর্তী শাসকগােষ্ঠীর চরম ব্যর্থতা আর উদাসীনতায় মুসলমানরা শিক্ষা-দীক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে। পঙ্গু হয়ে যায় তাদের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড। বৈষম্যের অবসান আর শান্তির অম্বেষায় পাকিস্তান ভেঙে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। এ স্বাধীন দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার জয়-জয়কার, হত্যার রাজনীতির মহােৎসব, ইসলামী রাজনীতি বন্ধসহ এমন সবকিছু ঘটতে থাকলাে যা ছিল অনাকাক্ষিত। মানুষ এ অবস্থার উত্তরণ
চেয়েছিল। অবস্থার পটপরিবর্তনের একটা সময়ে ১৯৭৭ সালে ছাত্রশিবিরের যাত্রার সূচনা ছিল এদেশ ও জাতির জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাজুক আর অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ এমন একটি আদর্শবাদী ছাত্রসংগঠনের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছিল। দীর্ঘ ৩৩ বছরে নিজেদের গঠনমূলক আর কল্যাণধর্মী কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ছাত্রশিবির আজ এক বিকল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম- এক মুক্তিকামী কাফেলার নাম । ছাত্রশিবিরের এ অর্জনটুকুর পেছনে যেমন ছিল তাদের গঠনমূলক আর কল্যাণধর্মী কর্মসূচি, তেমনি একদল মর্দে মুমিনের ত্যাগ, কুরবানি আর শাহাদাতের নজরানা। ৩৩ বছরে ১৩৬ জন তরতাজা যুবকের শাহাদাতের মধ্য দিয়ে ছাত্রশিবিরের অগ্রযাত্রা হয়েছে বেগবান, পেয়েছে শহীদি কাফেলার মর্যাদা। রাসূলের (সা) আদর্শ আর সাহাবায়ে কেরামের ত্যাগের ধারাবাহিকতা এ সংগঠন ধরে রাখতে পেরেছে শহীদের রক্ত, পঙ্গু এবং আহত ভাইদের ত্যাগ আর কুরবানির মধ্য দিয়ে। যে ১৩৬ জন মর্দে মুমিন তাদের জীবন দিয়ে এ দেশে ইসলামী আন্দোলনকে বিজয়ী দেখতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির তার সেসব বীর সিপাহসালার জীবনী আর ইতিহাস রক্ষার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তাদের এ উদ্যোগ সত্যিই সময়ােপযােগী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রেরণাদায়ক। এ উপলক্ষে স্মৃতি অমলিন' নামক শহীদ স্মরণিকা প্রকাশের উদ্যোগের প্রশংসা করছি এবং সেই সাথে সফলতাও কামনা করছি। শহীদরা আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। তারা কোনাে দোষ করেননি। তবুও হায়েনারা-ঘাতকরা অকালে তাদের জীবন কেড়ে নিয়েছে। তাদের মায়ের বুক খালি করেছে। কুরআনের ভাষায় তাদের দোষ হচ্ছে- তাদের অপরাধ একটাই তাঁরা মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে।" পরিশেষে মহান আল্লাহর দরবারে শহীদ ভাইদের উচ্চ মর্যাদা কামনা করছি। তাদের পরিবার-পরিজনকে আল্লাহ যেন সবর দান করেন এবং উত্তম প্রতিদান দান করেন সেই দোয়া করছি ।
- মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী