প্রত্যয়ের সূর্যোদয়
লেখকঃ নসীম হিজাযী
প্রকাশনীঃ বাংলা সাহিত্য পরিষদ
উপমহাদেশের সবকটি বড় ভাষায় যেখানে মুসলমানদের দখল আছে সেখানে নসীম হিজাযীর প্রভাব একটি অনস্বীকার্য সত্য। মুসলমানদের সাহিত্য চর্চায় তিনি একটি নতুন দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। ইসলামের ইতিহাস থেকে তার অন্তরনিহিত প্রাণশক্তি ও চরিত্র মাধুর্য তিনি নিংড়ে বের করে এনেছেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, মুসলমানদের পতন যুগের ইতিহাস লিখেও তিনি ইসলাম ও মুসলমানকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।
প্রত্যয়ের সূর্যোদয়ে তিনি আর একটি নতুন দিগন্ত উন্মােচন করেছেন। প্রথমত এখানে আছে অতি সাম্প্রতিক কালের কথা। দ্বিতীয়ত এখানে তিনি আমাদর আধুনিক সমাজ কাঠামােটি তুলে ধরেছেন। ইংরেজী সভ্যতার যে প্রভাব আমাদের সমাজে পড়েছে তাকে সঠিকভাবে উঠিয়ে এনেছেন এবং আনার সময় তার ইসলামী ও মুসলিম আধারটির প্রতিও নজর রেখেছেন। তাকে বিকৃত বা অতিরঞ্জিত করার চেষ্টা করেননি। যেখানে নতুনকে গ্রহণ ও পুরাতনকে ছুঁড়ে ফেলার আবেগ আমরা সতত লক্ষ্য করি সেখানে তিনি কোনাে নতুনকে অস্বীকার এবং কোনাে পুরাতনকে অবজ্ঞাও করেননি। বরং উভয়ের গ্রহণ ও বর্জনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রেখেছেন। কোনাে জাতির পরিবর্তন যেমন একদিনে হয় না তেমনি কখনাে সে একই অপরিবর্তিত অবস্থায়ও থাকে না। উপমহাদেশের মুসলমানদের ক্ষেত্রে তিনি একথা বিস্মৃত হননি।
ইতিপূর্বে তিনি ইতিহাস থেকে মুসলমানদের সমাজ কাঠামাে তুলে ধরেছেন। আর এখানে সাম্প্রতিক কালের বাস্তব সমাজ কাঠামােটিই চিত্রিত হয়েছে। তাই তার এ . উপন্যাসটির স্বাদ আগের উপন্যাসগুলি থেকে অনেকটা ভিন্ন।
মূলত উপমহাদেশে বৃটিশ শাসনের অবসান কালের মুসলিম-হিন্দুর রাজনৈতিক সংঘাত এবং তার সাথে শিখদেরও জড়িত থাকা আর এই সাথে এসে গেছে অপরিহার্যভাবে কাশ্মীর সমস্যা এবং ১৯৪৮-৪৯ সালের কাশ্মীরের প্রথম জিহাদ। হিন্দু ও শিখ চক্রান্তের মুখােমুখি হয়ে লাখাে নিরপরাধ মুসলমানের জীবনাবসান ঘটেছে। পথে হাজার হাজার মুসলমান নিখোঁজ হয়ে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গেছে। তাই লেখক এর নাম দিয়েছেন ‘গুম শুদা কাফেলা' অর্থাৎ যে কাফেলা গন্তব্যে পৌছার আগে পথেই হারিয়ে গেছে। কিন্তু কাশ্মীরের জিহাদ মুসলমানদের মনে যে নতুন প্রত্যয়ের জন্ম দেয় তারই ভিত্তিতে বাংলায় এর নামকরণ করা হয়েছে প্রত্যয়ের সূর্যোদয়'।
#সারাংশ:
উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনােত্তরকালে মুসলিম সামাজিক মূল্যবােধে যে অবক্ষয় নেমে এসেছিল তার মধ্য দিয়ে এগিয়ে এসেছে ইউসুফ ও ফাহমিদাদের পরিবার, এই সংগে এগিয়ে এসেছে মুসলমান-হিন্দু-শিখ-খৃষ্টান সমাজের। পারিবারিক সখ্যতা.......গ্রামীণ জীবনের সরলতার মধ্যে সুখ-দুঃখ, হাসি কান্নার এক সমান্তরাল অনুভূতি ...........তারপর দেখা গেল আকাশে কালাে মেঘের ঘনঘটা........ইংরেজ বিরােধী স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় লগ্নে দেশের একটি বৃহত্তর গােষ্ঠীকে মানসিক ও জাগতিক উভয় শক্তির ক্ষেত্রে পংগু করে রাখার একটি বিরাট চক্রান্ত দানা বেঁধে উঠলাে......শেষ পর্যন্ত দেশ স্বাধীন হলাে, ইংরেজের শাসন মুক্ত হলাে.....তবে মুসলমানদের দিতে হলাে এক নদী রক্তের নজরানা.........কিন্তু এতসব দুঃখ কষ্ট ত্যাগ ও সংগ্রামের মধ্যেও ইউসুফ ও ফাহমিদা তাদের স্বপকে ভেঙে চুরমার হতে দিলাে না। তারা তাদের লক্ষ্যপানে এগিয়ে চললাে। এ লক্ষ্য ছিল সমগ্র ইসলামী মিল্লাতের লক্ষ্য, এ জন্য তারা শেষ পর্যন্ত জিহাদে অবতীর্ণ হলাে। আরাে অসংখ্য কাহিনী ও ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত হলাে প্রত্যয়ের সূর্যোদয়।