প্রারম্ভিক কথা

বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক আয়োজিত অগাস্ট ১৮, ২০১১ তারিখে অনুষ্ঠিত স্টাডি সেশনে ড. মোহাম্মাদ শফিউল আলম ভূঁইয়া ‘‘ইসলাম নির্দেশিত পানাহার পদ্ধতি’’ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন।
উপস্থাপিত গবেষণাপত্রটির মানোন্নয়নের লক্ষ্যে মূল্যবান পরামর্শ রাখেন ড. মুহাম্মাদ আবদুল মাবুদ, ড. মুহাম্মাদ ছামিউল হক ফারুকী, ড. মুহাম্মাদ ছাইদুল হক, ড. মুহাম্মাদ মতিউল ইসলাম, অধ্যক্ষ এ.কিউ.এম. আবদুল হাকীম, মাওলানা নাজমুল ইসলাম, মুহাদ্দিস মুহাম্মাদ ইমদাদুল্লাহ, ড. যুবাইর মুহাম্মাদ এহসানুল হক, ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মাদ আতহার উদ্দীন, জনাব মুহাম্মাদ আবদুল মান্নান, জনাব মুহাম্মাদ যাইনুল আবেদীন ও জনাব মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম।
সম্মানিত গবেষক আলোচকদের পরামর্শের ভিত্তিতে গবেষণাপত্রটিকে আরো সমৃদ্ধ করে বর্তমান রূপ দান করেন।
পানাহার মানব জীবনের এক প্রাত্যহিক চাহিদা। এ চাহিদা মেটাবার পন্থা-পদ্ধতি জানা প্রত্যেক মু’মিনেরই একান্ত প্রয়োজন।
আমরা আশাকরি, এই গবেষণাপত্রটি ইসলাম নির্দেশিত পানাহার পদ্ধতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা সৃষ্টিতে মূল্যবান অবদান রাখবে। আমরা আরো আশাকরি, গবেষণাপত্রটি সম্মানীয় পাঠক-পাঠিকাদের নিকট বিপুলভাবে সমাদৃত হবে।
মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন!
এ.কে.এম. নাজির আহমদ

 

সূচীপত্র
1. ভূমিকা \ ৯
2. হালাল এবং পবিত্র রিয্ক গ্রহণের অপরিহার্যতা \ ১০
3. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাদ্যাভ্যাস \ ১২-৪৩
3.1. আহার গ্রহণকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে বসতেন \ ১২
3.2. পানাহারের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর পছন্দ/অপছন্দ \ ১৫
3.3. মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর বিশেষ আকর্ষণ \ ২০
3.4. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাত্রের কোন্ অংশ থেকে খেতেন \ ২৩
3.5. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর দস্তরখানের বর্ণনা \ ২৫
3.6. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর পানপাত্রের বর্ণনা \ ২৬
3.7. আহারের শুরুতে এবং শেষে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাত ধুইতেন \ ২৯
3.8. পানি পান করাবার ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর আদর্শ \ ৩১
3.9. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর প্রিয় পানীয় \ ৩৬
3.10. আহার শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসব দু‘আ পড়তেন \ ৩৭
4. পানাহারের সাধারণ নীতিমালা \ ৪৩-৬৪
4.1. বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করা \ ৪৩
4.2. ডান হাতে খাবার গ্রহণ করা \ ৪৭
4.3. বসে পানাহার করা \ ৪৮
4.4. যামযাম পান করার বিশেষ ফযীলত ও এ সময় বিশেষ দু‘আ পাঠ করা \ ৫৩
4.5. পানি পান করার সময় তিনবার নিঃশ্বাস নেয়া তবে পানপাত্রে নিঃশ্বাস ত্যাগ না করা \ ৫৫
4.6. পানাহারকালে সালাম দেয়ার বিধান \ ৬০
4.7. পানাহারকালে কথা বলার বিধান \ ৬২
5. পানাহারের বিশেষ নীতিমালা \ ৬৪-৯৫
5.1. পানাহারকালে বিনয় প্রকাশ \ ৬৪
5.2. বড় লুকমায় খাবার মুখে না তোলা \ ৬৮
5.3. খাওয়া নিয়ে মিথ্যাচার না করা \ ৭০
5.4. খাবারে বাম হাতের সহযোগিতা নেয়া \ ৭১
5.5. নিজের নিকটবর্তী ডান পাশ থেকে খাবার গ্রহণ করা \ ৭২
5.6. সামষ্টিকভাবে খাওয়ার সময় খাবারের পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখা \৭৪
5.7. মাজলিসের মুরববীকে দিয়ে খাবার শুরু করা \ ৭৬
5.8. খাবার বন্টনে ছোটদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া \ ৭৮
5.9. আঙ্গুল চেটে খাওয়া ও প্লেট মুছে খাওয়া \ ৮০
5.10. কাঁচা পিঁয়াজ/রসুন ইত্যাদি না খাওয়া \ ৮৩
5.11. পানাহারের সঠিক সময় \ ৮৬
5.12. পানাহারের পরিমাণ \ ৯০
5.13. পানাহারে অপব্যয় ও অপচয় না করা \ ৯৩
5.14. স্ত্রীর সাথে স্বামীর আহার গ্রহণ \ ৯৪
6. পানাহারের আসবাবপত্র \ ৯৫-১০৬
6.1. পানাহারে অমুসলিমদের পাত্র ব্যবহার \ ৯৬
6.2. স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে পানাহার \ ৯৮
6.3. পানাহারে চাকু, ছুরি ও চামচ ইত্যাদির ব্যবহার \ ১০১
৬.৪. পাত্রে কুকুর, বিড়াল কিংবা অন্য কোন প্রাণী মুখ দিলে করণীয় \ ১০২
7. খাদ্য-দ্রব্যে প্রতিবেশীদের অধিকার \ ১০৬
8. পানাহারে গৃহপরিচারিকা ও ভৃত্যদের অধিকার \ ১১১
9. পানাহারে আত্মীয় স্বজনের অধিকার \ ১১৩
10. মেহমান-মেযবানের অধিকার \ ১১৭-১৩৬
10.1. মেযবানের সুযোগ সুবিধা ও সামর্থের দিকে খেয়াল রাখা \ ১২০
10.2. মেহমানকে আপ্যায়নের ব্যাপারে সাধ্যের অতিরিক্ত ব্যস্ত না হওয়া \১২৩
10.3. আহার শেষে অযথা বিলম্ব না করা \ ১২৪
10.4. ধনী ও গরীব সবাইকেই দাওয়াতে অন্তর্ভুক্ত করা \ ১২৬
10.5. খাবার ঢেকে পরিবেশন করা \ ১২৭
10.6. মেহমানকে সাথে নিয়ে খেতে বসা \ ১২৯
10.7. খাবারের উৎস না খোঁজা \ ১৩০
10.8. খাবারের দোষ না ধরা \ ১৩২
10.9. মেযবানের জন্য দু‘আ করা \ ১৩৪
11. এক নজরে খাদ্য গ্রহণের আদাবসমূহ \ ১৩৬
12. এক নজরে পান করার আদাবসমূহ \ ১৩৭
13. শেষকথা \ ১৩৮
14. গ্রন্থপঞ্জী \ ১৪০


بسم الله الرحمن الرحيم

اَلْحَمْدُ ِللهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ. وَالصَّلَوةُ وَالسَّلاَمُ عَلَى سَيِّدِ الْمُرْسَلِيْنَ وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِيْنَ ، وَ مَنِ اهْـتَدَى بِهَدْيِهِ إِلىَ يَوْمِ الدِّيـْنِ . أَمَّا بَعْدُ :

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনাদর্শ। এই জীবনাদর্শে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সকল চাহিদা পূরণের যথাযথ পন্থা বাতলে দেয়া হয়েছে। মানব জীবনের প্রতিটি মৌলিক চাহিদা পূরণের পন্থা-পদ্ধতি এ জীবনাদর্শে দেখানো হয়েছে এবং এ সবগুলোকেই মহান আল্লাহর দাসত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। পানাহারও মানব জীবনের একটি মৌলিক চাহিদা। এ চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে ইসলামের রয়েছে এক সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর বাস্তব জীবনে এই নির্দেশনারই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। বক্ষমান পুস্তিকায় আমি এ মৌলিক চাহিদাটি পূরণের ক্ষেত্রে ইসলাম নির্দেশিত পদ্ধতি আলোচনার প্রয়াস চালিয়েছি।
এ বিষয়ে লিখা আমার পান্ডুলিপিটি বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টারে জমা দিলে তারা এর উপর আলোচনার জন্য একটি স্টাডি সেশনের আয়োজন করেন। সেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দীনী শিক্ষায়তনের কয়েকজন বিদগ্ধ গবেষক পান্ডুলিপির বিভিন্ন দিকের উপর খোলামেলা আলোচনা করেন এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ রাখেন। তাঁদের সেসব মূল্যবান পরামর্শের আলোকে আমি বইটিকে নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়েছি। বইটিতে হাদীসের তথ্যসূত্র লিখতে আমি বিশেষভাবে المكةبة الشاملة (আল-মাকতাবাতুশ শামিলাহ) এর সহযোগিতা নিয়েছি। তবে বইটি একান্ত ব্যবহারিক বিষয় কেন্দ্রিক হওয়ায় আমি হাদীসের শুদ্ধাশুদ্ধি বা মান নিয়ে খুব বেশী পর্যালোচনায় যাইনি। ইমাম বুখারীর ‘আল-আদাবুল মুফরাদ’, ইমাম তিরমিযীর ‘শামাইলুন নাবিয়্যি’, ইমাম নববীর ‘রিয়াদুস সালিহীন’ এবং আল-ইসফাহানীর ‘আখলাকুন্ নবী’ থেকে বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছি। তবে একই বিষয়ে যেখানে বিভিন্ন গ্রন্থের হাদীস পেয়েছি, সেখানে সাহীহাইন তথা সাহীহুল বুখারী ও সাহীহ মুসলিম থেকে নেয়ার চেষ্টা করেছি। এরপর অগ্রাধিকার দিয়েছি সাহীহ ইবন হিববান এবং আল-মুসতাদরাক ‘আলা আস্-সাহীহাইনকে। পাঠকের সুবিধার জন্য কখনো কখনো প্রযোজ্য ক্ষেত্রে একই হাদীসকে বিভিন্ন জায়গায় পূণরোল্লেখ করেছি।
‘ইসলাম নির্দেশিত পানাহার পদ্ধতি’ বিষয়ক আমার এ লিখাটিকে আরো তথ্যনির্ভর এবং মানসম্পন্ন করার জন্য যেসব সম্মানিত লেখক ও গবেষক তাঁদের মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে আমাকে সহযোগিতা করেছেন আমি তাঁদের সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। তাছাড়া প্রাথমিকভাবে বইটির বিষয়সূচীর বিন্যাস ও তা ঢেলে সাজাতে আমার স্ত্রী ও সন্তানরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মহান আল্লাহ তাদের সকলকে এর অতি উত্তম বদলা দিন। একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও এখনো বইটিতে যে কোন ধরনের ভুল থেকে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। সম্মানিত পাঠকবৃন্দের কারো কাছে এমন কিছু ধরা পড়লে তা আমাকে অবহিত করার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
বইটি ছাপাবার দায়িত্ব নেয়ায় আমি বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টারের সম্মানিত পরিচালক মহোদয়কে আমার অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। ইসলামী জীবন বিধানের কল্যাণময় দিকগুলো জনগণের সামনে উপস্থাপনে বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টারের এ উদ্যোগ সফল হোক, সার্থক হোক। মহান আল্লাহ আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে কবুল করুন। এর ওসীলায় আমাদের ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করুন। এবং সুধী পাঠক সমাজকে এর দ্বারা উপকৃত হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন \

ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম ভুঁইয়া
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম
ঢাকা ক্যাম্পাস।

 

 


بسم الله الرحمن الرحيم
ইসলাম নির্দেশিত পানাহার পদ্ধতি
1. ভূমিকা:
পানাহার করা একদিকে একটি মৌলিক মানবীয় চাহিদা পূরণ, অন্যদিকে একটি ‘ইবাদাত। এটি মহান প্রভুর আনুগত্য ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি মাধ্যম। ইসলামের পানাহার পদ্ধতি নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা বিদ্যমান। পানাহারে তাঁর অনুসৃত নীতি নিয়ে হাদীসের কোন কোন গ্রন্থে আলাদা অধ্যায় সন্নিবেশিত হয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর পানাহারে অনুসৃত নীতি আমরাও পানাহারের সময় অনুসরণ করলে আমাদের এই পানাহার ‘ইবাদাতের মধ্যে গণ্য হবে এবং মহান স্রষ্টার প্রতি যথাযথ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হবে। আর যদি এসব শিষ্টাচারের প্রতি লক্ষ্য না রাখা হয় তবে তা হবে মহান স্রষ্টার নি‘আমাতের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রকাশ ও তাঁর প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শনের নামান্তর। তিনি চান যে আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হই। তাহলে তিনি আমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ আরো বাড়িয়ে দেবেন। আর অকৃতজ্ঞ হলে তিনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন। মহান আল্লাহ বলেন:
( لَئِنْ شَكَرْتُمْ َلأَزِيْدَنَّكُمْ وَ لَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِيْ لَشَدِيْدٌ )
‘‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর তাহলে অবশ্যই তোমাদেরকে আমি আরো বেশি দান করব। আর যদি কুফরী কর (অকৃতজ্ঞ হও) তাহলে (জেনে রেখ যে) আমার আযাব বড়ই কঠিন’’।
অতএব মহান আল্লাহর দেয়া রিয্ক গ্রহণকালে আমাদের পানাহার পদ্ধতিতে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নমূনা প্রদর্শন করতে হবে। আর মহান আল্লাহ সমগ্র সৃষ্টির মাঝে আমাদেরকে যে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন আমাদের পানাহার পদ্ধতিতেও সেই শ্রেষ্ঠত্বের ছাপ পরিলক্ষিত হতে হবে। অন্যথায় আমরাও হব অন্য সব সৃষ্টির মতই। স্মরণ রাখতে হবে যে, অন্যান্য পশু-পাখি এবং প্রাণীরাও পানাহার করে। তাই তাদের তুলনায় আমাদের পানাহার পদ্ধতি হতে হবে ব্যতিক্রম ও উন্নততর। ইসলাম আমাদেরকে পানাহারের ক্ষেত্রে যে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছে নিম্নে আমরা পানাহার সামগ্রী উপভোগ করার ইসলাম নির্দেশিত সেই পদ্ধতিগত দিকগুলো আলোচনার প্রয়াস চালাব।
2. হালাল এবং পবিত্র রিয্ক গ্রহণের অপরিহার্যতা:
জলভাগে ও স্থলভাগে মহান আল্লাহর যে অসংখ্য সৃষ্টি রয়েছে তাদের মাঝে তিনি আমাদেরকে মর্যাদাবান করেছেন ও শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। অন্যসব সৃষ্টিকে তিনি আমাদের কল্যাণের জন্য বানিয়েছেন এবং তাদেরকে আমাদের অধীন ও অনুগত করে দিয়েছেন। তিনি বলেন:
(وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِيْ آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيْرٍ مِمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيْلاً)
‘‘(এটা তো আমারই দয়া যে) আমি আদম সন্তানকে সম্মানিত করেছি, তাদেরকে জলভাগে ও স্থলভাগে যানবাহন দান করেছি, তাদেরকে পবিত্র জিনিস থেকে রিয্ক দিয়েছি এবং আমার বহু সৃষ্টির উপর তাদেরকে অনেক উচ্চ মর্যাদা দিয়েছি’’।
এ আয়াতের ভিত্তিতে মানব জাতির শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম কারণ হলো আল্লাহ প্রদত্ত পবিত্র রিয্ক। তিনি আমাদের জন্য রিয্ক এর ব্যবস্থা করেছেন এবং আমাদেরকে তাঁর দেয়া পবিত্র রিয্ক থেকে ভক্ষণ করতে বলেছেন। তাই তো আমরা স্বভাবগতভাবেই ঐসব প্রাণীর গোশত খেতে চাই না যেগুলো অপবিত্র স্থানে বিচরণ করে বেড়ায় এবং অপবিত্র খাবারে মুখ দেয়। ইসলাম অপবিত্র খাবার, অশালীন ও অপরিচ্ছন্ন পোষাক, অপবিত্র দেহ এবং অশ্রাব্য কথা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে বলেছে। অন্য সব সৃষ্টির উপর আমাদের এ শ্রেষ্ঠত্বের দাবীই হলো যে, আমরা আমাদের কথা-বার্তা, কাজ-কর্ম, আচার-আচরণ ও কৃষ্টি-কালচার ইত্যাদিতে অন্যদের তুলনায় হবো স্বতন্ত্র। মহান আল্লাহ আমাদেরকে রুচিবোধ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। ভাল ও মন্দ যাচাই করার মত বিবেক বুদ্ধি প্রদান করেছেন। এর ফলেই আমরা অন্যদের উপর শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার হয়েছি। সুতরাং আমাদের পানাহার সামগ্রী হতে হবে হালাল এবং পবিত্র যা মহান আল্লাহ প্রদত্ত সেই মর্যাদার সাথে হবে মানানসই। মহান আল্লাহ বলেন:
(يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُواْ مِمَّا فِي الأَرْضِ حَلاَلاً طَيِّباً وَلاَ تَتَّبِعُواْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ )
‘‘হে মানুষ ! যমীনে যেসব হালাল ও পবিত্র জিনিস আছে তা তোমরা খাও এবং শয়তানের দেখানো পথে চলো না। সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন’’।
অন্যত্র তিনি বলেন:
(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُلُواْ مِن طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُواْ لِلّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ )
‘‘হে ঐসব লোক, যারা ঈমান এনেছ ! যদি তোমরা সত্যি সত্যি আল্লাহর ‘ইবাদাতকারী হও, তাহলে আমি তোমাদের যেসব পাক-পবিত্র জিনিস (রিয্ক হিসেবে) দান করেছি, তা খাও এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর’’।
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
(يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحاً إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ )
‘‘হে রাসূলগণ ! আপনারা পবিত্র জিনিস থেকে খান এবং নেক আমল করুন। আপনারা যা-ই করেন তা আমি ভাল করেই জানি’’।
অতএব, সাধারণভাবে সমগ্র মানবতার প্রতি এবং বিশেষভাবে মু’মিনদের প্রতি মহান আল্লাহর নির্দেশনা হলো তারা যেন তাঁর দেয়া হালাল এবং পবিত্র রিয্ক থেকে গ্রহণ করে এবং আরো বিশেষভাবে তিনি এ নির্দেশনা প্রদান করেছেন সকল নবী ও রাসূলগণকে, যেন তাঁরা পবিত্র আহার গ্রহণ করেন এবং সৎ কর্ম সম্পাদন করেন। সাধারণ মানুষ এবং মু’মিনদেরকে তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, শয়তান তোমাদের দুশমন, সে চাইবে তোমাদেরকে হালাল এবং পবিত্র রিয্ক এর পথ থেকে বিচ্যুত করতে। কিন্তু তোমরা যেন কিছুতেই এই শত্রুর খপ্পরে না পড় এবং শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও হালাল এবং পবিত্র রিয্ক অন্বেষণে ব্রতী হও। তিনি আরো স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, যাবতীয় রিয্ক তাঁরই দেয়া। কাজেই এ রিয্ক গ্রহণের পর তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে হবে এবং তাঁরই দাসত্বে মনোনিবেশ করতে হবে।
৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর খাদ্যাভ্যাস:
খাদ্য ও পানীয়ের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবসময় সংযম ও অল্পে তুষ্টির নীতি অবলম্বন করতেন। যখন যা সামনে আসতো তাই তিনি সন্তুষ্টচিত্তে খেয়ে নিতেন। এবং এর জন্য মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন। কখনো কোন খাবারের সমালোচনা করতেন না। খাওয়ার আগে হাত ধুয়ে নিতেন। দস্তরখান বিছিয়ে খাওয়া দাওয়া করতেন। উপস্থিত লোকদেরকে সাথে নিয়েই খেতে বসতেন। অল্প পরিমাণ খাবার মুখে নিতেন এবং তা ভালভাবে চিবিয়ে খেতেন। বেশীর ভাগ সময় খাওয়ার কাজে তিন আঙ্গুল ব্যবহার করতেন। আঙ্গুলে লেগে থাকা খাদ্য-কণাগুলো ভালো করে চেটে নিতেন। কোন কিছুতে হেলান দিয়ে বসে পানাহার করতেন না। বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করতেন। খাওয়া শেষে হাত ধুতেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করতেন।
মিহি আটার রুটি তিনি কখনো খাননি। পেট পুরে খাওয়া তিনি পছন্দ করতেন না। একাধারে অনেক দিন তাঁর বাড়িতে রান্না হতো না। সেই সময়গুলো তিনি শুধু খেজুর খেয়েই কাটিয়ে দিতেন। এমন কখনও হয়নি যে, একই দিনে দু'বেলা তিনি গোশত-রুটি খেয়েছেন। পানীয়ের মধ্যে ঠান্ডা পানি ছিল তাঁর বেশী পছন্দ। তরল জিনিস পান করার সময় তিনবার বিরতি দিয়ে শ্বাস নিতেন। ক্ষীর বা পায়েস রান্নার সময় পাতিলের তলায় হাল্কাভাবে যেটুকু লেগে যায় তা খেতে খুব পছন্দ করতেন। কাঁচা পিঁয়াজ বা রসুন পছন্দ করতেন না এবং বলতেন- ‘যে ব্যক্তি কাঁচা পিঁয়াজ বা রসুন খাবে সে যেন মুখ ভালভাবে পরিষ্কার করা ছাড়া মাসজিদে না আসে’। কেউ খাওয়ার জন্য দাওয়াত করলে দাওয়াত গ্রহণ করতেন এবং নিজেও অন্যদেরকে দাওয়াত করে খাওয়াতেন। খাওয়ার সময়ও বিভিন্ন নসীহতপূর্ণ কথা বলতেন। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর তিনি কাইলূলাহ (বিছানায় শুয়ে একটু আরাম) করতেন। রাতের খাবার যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি খেয়ে নিতেন এবং সাথে সাথেই বিছানায় যেতেন না। এ হলো সংক্ষেপে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর খাদ্যাভ্যাস। নিম্নে আমরা দলিল সমেত এ সংক্রান্ত বিস্তারিত বর্ণনা পেশ করছি।
৩.১. আহার গ্রহণকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে বসতেন:
সাধারণভাবে বসে খাবার গ্রহণ করাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সুন্নাত। বসার ব্যবস্থা না থাকলে কিংবা বসার ক্ষেত্রে কোন শারিরীক সমস্যা থাকলে ভিন্ন কথা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম পানাহারে বিনয়ীভাব প্রকাশ করতেন। তিনি শিখিয়েছেন যে, পানাহারের সময়ও বান্দাহ তার মহাপ্রভূ আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল হবে না। কেননা সে তাঁরই দাসানুদাস, তাঁরই দেয়া রিয্ক আহার করছে। অতএব তাঁর দেয়া রিয্ক গ্রহণ করার জন্য সে যখন বসবে তখন তার বসার মধ্যেও যেন বিনয় ও নম্রতার প্রকাশ ঘটে এবং কোনরূপ অহংকার প্রকাশ না পায়। কেননা দাসের পক্ষে অহংকার শোভা পায় না। বসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন্ ভাবে বসতেন - তার বর্ণনাও হাদীসের ভাষ্য থেকে পাওয়া যায়। যেমন-
عَنْ أَبِي جُحَيْفَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَّا أَنَا فَلَا آكُلُ مُتَّكِئًا.
আবূ জুহাইফাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমি কখনো হেলান দিয়ে পানাহার করি না।
عن جابر بن عبد الله رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إنما أنا عبد آكل كما يأكل العبد و أجلس كما يجلس العبد.
জাবির ইবন ‘আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমি তো (আল্লাহর) একজন দাস। তাই আমি সেভাবে আহার করি যেভাবে কোন দাস আহার করে এবং সেভাবে বসি যেভাবে কোন দাস বসে।
عن عبد الله بن عمرو رضي الله عنه قال: ما رئي رسول الله صلى الله عليه وسلم يأكل متكئا قط و لا يطأ عقبيه رجلان.
‘আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কখনো হেলান দিয়ে পানাহার করতে দেখা যায়নি এবং তাঁর পেছনে কারো পদক্ষেপ পড়েনি।
عن أبي بن كعب رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه و سلم كان يجنو على ركبته و كان لا يتكئ .
উবাই ইবন কা’ব (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আহারের সময়) হাঁটু উঁচু করে বসতেন এবং হেলান দিয়ে বসতেন না।
عن ابن عباس رضي الله عنهما قال : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يجلس على الأرض و يأكل على الأرض .
ইবন ‘আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাটির উপর (মেঝেতে) বসতেন এবং মাটির উপর (মেঝেতে) বসেই আহার করতেন।
عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: إن الله عز و جل أرسل إلى نبيه صلى الله عليه وسلم ملكا من الملائكة معه جبريل، فقال الملك لرسول الله صلى الله عليه وسلم إن الله عز وجل يخيرك بين أن تكون عبدا نبيا و بين أن تكون ملكا نبيا. فالتفت رسول الله صلى الله عليه وسلم إلى جبريل كالمستشير له، فأشار جبريل بيده أن تواضع، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: بل عبدا نبيا. فما أكل بعد تلك الكلمة طعاما متكئا حتى لحق بربه عز و جل.
ইবন ‘আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: মহামহিম আল্লাহ কোন এক ফিরিশতাকে জিবরীল (আ.) সহকারে মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নিকট প্রেরণ করেন। ফিরিশতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন: মহান আল্লাহ আপনাকে দু’টি বিষয়ের যে কোন একটি বেছে নেয়ার ইখতিয়ার দান করেছেন। আপনি আল্লাহর বান্দাহ ও নবী হতে চান না রাজা নবী ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরামর্শের জন্য জিবরীল (আ.) এর দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। জিবরীল (আ.) তাঁর হাতের ইশারায় বললেন, আপনি নিজেকে নীচু রাখুন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: বরং আমি আল্লাহর বান্দাহ ও নবী হতে চাই। (রাবী বলেন) এরপর থেকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মহান প্রভূর সাথে সাক্ষাতের (মৃত্যুর) পূর্ব পর্যন্ত কখনো হেলান দিয়ে আহার করেননি।
অতএব আমাদের উচিত আহার গ্রহণের সময় অবশ্যই বিনয়ের সাথে বসা এবং আমরা যে মহান আল্লাহর দেয়া কৃপা ও তাঁর একান্ত নি‘আমাত গ্রহণ করছি সে কথা স্মরণ রাখা। আর আমাদের বাস্তব কর্মের মাধ্যমে এর বহি:প্রকাশ ঘটানো।
৩.২. পানাহারের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পছন্দ/অপছন্দ:
সাধারণভাবে যে কোন হালাল খাদ্য ও পানীয় গ্রহণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন প্রকার অনীহা বা অনাগ্রহ ছিল না। যেমন- তিনি মাছ, গোশত, রুটি, খেজুর ইত্যাদি স্বাভাবিক খাবার ছাড়াও খেজুর গাছের রস, খেজুর গাছের মাথি, শসা, দুধ, নাবীয, মধু, সিরকা, যাইতূনের তেল ও ঘি খেয়েছেন ইত্যাদি। তবে কিছু কিছু খাবারকে তিনি অন্য খাবারের তুলনায় অধিক পছন্দ করতেন। কিন্তু অমুক খাবারটা না হলেই নয়, অথবা অমুক খাবারটা আমার চাই- এরূপ কোন মানসিকতা তাঁর কখনোই ছিল না। যেমন-
عن أنس رضي الله عنه قال: كان أحب الطعام إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم البقل.
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নিকট সর্বাধিক প্রিয় খাদ্য ছিল শাকসব্জি ও তরিতরকারী।
عَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُعْجِبُهُ الْقَرْعُ.
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর খুবই পছন্দনীয় (তরকারী) ছিল কদু।
عن أنس رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يحب الدباء. فإذا كان عندنا منه شيئ آثرناه به.
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কদু খুবই পছন্দ করতেন। অতএব আমাদের নিকট কদু তরকারী থাকলে আমরা তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাঁকে দিতাম।
عن أنس بن مالك رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه و سلم كان يعجبه القرع . قال فربما أتيته بالمرقة فيها القرع فيلتمس بإصبعه .
আনাস ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত যে, কদু তরকারী ছিল নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম - এর খুবই প্রিয়। অতএব আমি তাঁর নিকট কখনো কদুর তরকারী নিয়ে আসলে তিনি তা আঙ্গুল দিয়ে তালাশ করে খেতেন। অন্য বর্ণনায় আনাস (রা.) বলেন:
فأنا أحب القرع لحب رسول الله صلى الله عليه و سلم إياه.
কদুর প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর বিশেষ আকর্ষণের কারণে আমিও তা পছন্দ করি।
عن عطاء رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: عليكم بالقرع فإنه يزيد في العقل ويكبر الدماغ.
‘আতা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তোমাদের উচিত বেশি বেশি কদু খাওয়া। কেননা এটি বুদ্ধি বাড়ায় এবং স্মরণশক্তি প্রখর করে।
عَنْ حَكِيمِ بن جَابِرٍ الأَحْمَسِيِّ عَنْ أَبِيهِ رضي الله عنهما قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَرَأَيْتُ عِنْدَهُ الدُّبَّاءَ ، فَقُلْتُ: مَا هَذَا يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: " نُكْثِرُ بِهِ طَعَامَ أَهْلِنَا ".
হাকীম ইবন জাবির আল-আহমাসী (রা.) থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত, তিনি (জাবির) বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁর সামনে কদু দেখতে পেলাম। আমি বললাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ! (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কি ? তিনি বললেন: এর দ্বারা আমি আমার পরিবারের সদস্যদের খাদ্যে পরিবৃদ্ধি ঘটাই।
عن أنس رضي الله عنه قال: كان النبي صلى الله عليه و سلم يكثر من أكل الدباء. فقلت يا رسول الله ! إنك تكثر من أكل الدباء , قال: إنه يكثر الدماغ و يزيد في العقل .
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রচুর পরিমাণে কদু তরকারী খেতেন। আমি বললাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি প্রচুর পরিমাণে কদু তরকারী কেন খাচ্ছেন? তিনি বললেন: কদু মগজের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং স্মরণশক্তি প্রখর করে।
উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে জানা যায় যে, তরিতরকারীর মধ্যে কদু ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর খুবই পছন্দ। এবং তাঁর দেখাদেখি সাহাবাগণও তা পছন্দ করতেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত শেষোক্ত হাদীস থেকে আরো জানা যায় যে, কদু খেলে মাথার মগজ বৃদ্ধি পায় এবং স্মরণশক্তি প্রখর হয়। কোন কোন ‘আলিমের মতে, কদু পরিপাকশক্তি বৃদ্ধি করে এবং পেট ঠান্ডা রাখে। অতএব কদু পছন্দ করা মুস্তাহাব। কারণ তা ছিলো মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর প্রিয় তরকারী। কদু দ্বারা খাদ্যে পরিবৃদ্ধি ঘটানোর অর্থ হলো- তাতে রান্না করা তরকারীর পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং অনেক লোককে খাওয়ানো যায়। আর গোশতের মধ্যে পিঠ, কাঁধ এবং বাহুর গোশতই ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নিকট বেশী পছন্দনীয়। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত কয়েকটি হাদীস নিম্নরূপ:
عن عبد الله بن جعفر رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: أطيب اللحم لحم الظهر.
‘আবদুল্লাহ ইবন জা’ফর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: গোশতের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে পিঠের গোশত।
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه و سلم لم يكن يعجبه في الشاة إلا الكتف.
আবূ হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বকরীর কাঁধের গোশতই সর্বাধিক পছন্দ করতেন।
عن ابن عباس رضي الله عنه قال: كان أحب اللحم إلى رسول الله صلى الله عليه و سلم الكتف.
ইবন ‘আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট কাঁধের গোশতই অধিক পছন্দনীয় ছিল।
عن عائشة رضي الله عنها قالت: كان أحب اللحم إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم الزراع.
‘আয়িশাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট বাহুর (সামনের পা) গোশতই অধিক প্রিয় ছিল।
عن زهدم رضي الله عنه قال: دخلت على أبي موسى الأشعري و هو يأكل الدجاج فقال: ادن ، فكل. فإني رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يأكل لحم الدجاج.
যাহদাম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ মূসা আল-আশ‘আরীর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি মুরগীর গোশত খাচ্ছিলেন। তিনি বললেন: কাছে এসো এবং খাও। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মুরগীর গোশত খেতে দেখেছি।
উপরোক্ত বর্ণনাসমূহ থেকে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুরগী, বকরী ও উট ইত্যাদির গোশত খেতেন। গোশতের মধ্যে তিনি পিঠ, বাহু, রান ও কাঁধের গোশত অধিক পছন্দ করতেন। ইহুদীরা তাঁর এই পছন্দের কথা বিবেচনা করেই বকরীর সামনের বাহুর ভুনা গোশত বিষ মিশ্রিত করে তাঁকে খেতে দেয়। খায়বার এলাকা বিজয়ের পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে ইয়াহুদী সালাম ইবন মিশকামের স্ত্রী এবং হারিসের কন্যা যায়নাব নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য তা পাঠিয়েছিল। সে জিজ্ঞেস করেছিল যে, বকরীর কোন্ অংশ রাসূলের বেশি পছন্দ ? তখন তাকে বলা হয়েছিল যে, বকরীর হাতা/বাহুর গোশত। তাই সে এ অংশে বেশি পরিমাণে বিষ মিশিয়েছিল। এই বিষযুক্ত খাবার খেয়ে সাহাবীদের মধ্যে বিশর ইবনুল বারা (রা.) ইন্তিকাল করেন। এ প্রসঙ্গে হাফিয ইবন হাজার আল-‘আসকালানী (মৃ. ৮৫২ হি.) বাইহাকীর সূত্রে আবূ হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে,
أن امرأت من اليهود أهدت لرسول الله صلى الله عليه و سلم شات مسمومت فأكل، فقال لأصحابه: أمسكوا فإنها مسمومت. و قال لها: ما حملك على ذلك؟ قالت: أردت إن كنت نبياًّ فيطلعك الله، و إن كنت كاذبا فأريح الناس منك.
এক ইহুদী রমনী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিষ মিশানো বকরীর গোশত উপহার দিল। তিনি তা খেলেন। তারপর সাহাবীদেরকে বললেন: তোমরা বিরত হও (এটা খেয়ো না)। কারণ এটা বিষযুক্ত। আর তাকে (মহিলাকে) জিজ্ঞেস করলেন যে, কিসে তোমাকে এ কাজে উদ্বুদ্ধ করেছে? সে বললো: আমি (আপনাকে পরীক্ষা করতে) চেয়েছিলাম যে, যদি আপনি সত্য নবী হন তাহলে আল্লাহ আপনাকে এটা জানিয়ে দেবেন। আর যদি আপনি মিথ্যাবাদী হয়ে থাকেন তাহলে আমি (এর মাধ্যমে আপনাকে মেরে ফেলে) আপনার থেকে মানুষদেরকে নিষ্কৃতি দেব।
কোন কোন বর্ণনা মতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ক্ষমা করে দেন। কোন কোন বর্ণনায়- অত:পর সে ইসলাম গ্রহণ করে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ক্ষমা করে দেন। আবার কোন কোন বর্ণনামতে, এই ঘটনায় বিশর ইবনুল বারা এর মৃত্যু ঘটার কারণে এই মহিলাকে হত্যা করা হয়। ইমাম যুহরী সহ কেউ কেউ এই মতটিকেই অধিকতর বিশুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
৩.৩. মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর বিশেষ আকর্ষণ:
মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর বিশেষ আকর্ষণ ছিল। তিনি দুধ, দুগ্ধজাতীয় অন্যান্য খাবার, মধু এবং হালুয়া ইত্যাদি পছন্দ করতেন। বিশেষ করে খেজুর ছিল তাঁর একান্ত পছন্দনীয় খাদ্য। দিনের কোন না কোন অংশে তিনি অবশ্যই খেজুর খেতেন। এ সংক্রান্ত কয়েকটি বর্ণনা নিচে সন্নিবেশিত হলো-
عن عائشة رضي الله عنها قالت كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يحب العسل و الحلواء.
‘আয়িশাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মধু ও মিষ্টি দ্রব্যাদী খেতে পছন্দ করতেন।
عن عائشت رضي الله عنها قالت: ما أكل آل محمد صلى الله عليه و سلم أكلتين في يوم إلا إحداهما تمر.
‘আয়িশাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর পরিবার একদিনে যখনই দুইবার আহার করেছেন তার মধ্যে একবার খেজুর খেয়েছেন।
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال: كنت إذا قدمت إلى رسول الله صلى الله عليه و سلم رطبا أكل الرطب وترك المذنب.
আনাস ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম - এর খেদমতে তাজা খেজুর পেশ করলে তিনি পাকাগুলো খেতেন এবং আধাপাকাগুলো ত্যাগ করতেন।
عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: كان أحب التمر إلى رسول الله صلى الله عليه و سلم العجوة.
ইবন ‘আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম - এর নিকট ‘আজওয়া (নামের) খেজুর অত্যধিক প্রিয় ছিলো।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণভাবে সকল মিষ্টিজাতীয় খাবার পছন্দ করতেন। আর বিশেষভাবে মধু পছন্দ করতেন। তাঁর কাছে খেজুরও অত্যন্ত পছন্দনীয় খাবার ছিল। তিনি দৈনিক কমপক্ষে একবার খাদ্য হিসেবে খেজুর আহার করতেন। অন্য খাবারের সাথে মিশিয়েও তিনি অনেক সময় খেজুর খেতেন। এক হাদীসে তিনি বলেছেন যে, যে ঘরে খেজুর নাই সে ঘরের লোকেরা অভূক্ত। খেজুরের মধ্যে আবার নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘আজওয়াকে অধিক পছন্দ করতেন। তিনি নিজ হাতে মদীনায় এ খেজুর বপন করেছেন। এটি মদীনার সর্বাপেক্ষা উত্তম খেজুর। এক হাদীসে তিনি বলেন- যে ব্যক্তি রোজ সকালে উঠে খালি পেটে সাতটি ‘আজওয়া খেজুর খাবে তার উপর (ঐদিন) বিষ অথবা যাদুটোনা ক্রিয়া করবে না।
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: العجوة من الجنة وهو شفاء من السم .
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: ‘আজওয়া জান্নাতের খেজুরের অন্তর্ভুক্ত এবং তাতে বিষের নিরাময় বিদ্যমান।
عن عبد الله بن جعفر رضي الله عنه قال : رأيت النبي صلى الله عليه و سلم يأكل القثاء بالرطب.
‘আবদুল্লাহ ইবন জা’ফর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাজা খেজুরের সাথে শসা খেতে দেখেছি।
عن سهل بن سعد رضي الله عنه قال: كان النبي صلى الله عليه و سلم يأكل البطيخ بالرطب.
সাহল ইবন সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাজা খেজুরের সাথে তরমুজ মিশিয়ে খেতেন।
عن عائشة رضي الله عنها قالت: كان النبي صلى الله عليه و سلم يأكل البطيخ بالرطب.
‘আয়িশাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাজা খেজুরের সাথে তরমুজ মিশিয়ে খেতেন।
عن عَائِشَةَ رضي الله عنها قالت: كان رسول اللهِ صلى الله عليه وسلم يَأْكُلُ الْبِطِّيخَ بِالرُّطَبِ فيقول نَكْسِرُ حَرَّ هذا بِبَرْدِ هذا وَبَرْدَ هذا بِحَرِّ هذا.
‘আয়িশাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাজা খেজুরের সাথে তরমুজ মিশিয়ে খেতেন। আর বলতেন, এটির উষ্ণতা দিয়ে ঐটির শীতলতা এবং এইটির শীতলতা দিয়ে ঐটির উষ্ণতা দূর করব।
عن جابر رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه و سلم كان يأكل الخربز بالرطب و يقول: هما الأطيبان.
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাজা খেজুরের সাথে খরবুযা খেতেন এবং বলতেন: উভয়টিই বড় উত্তম ফল।
عن عائشة رضي الله عنها قالت: كان النبي صلى الله عليه و سلم يأكل البطيخ بالرطب والقثاء بالملح.
‘আয়িশাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাজা খেজুরের সাথে তরমুজ খেতেন এবং লবণ মিশিয়ে শসা খেতেন।
উপরোক্ত হাদীসসমূহ থেকে জানা যায় যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেজুরকে অন্যান্য বিভিন্ন ফলের সাথে মিশিয়ে খেতেন। কেননা খেজুর একটি উষ্ণ ক্রিয়ার ফল। তার এই উষ্ণ ক্রিয়াকে দুরীভূত করার জন্য তিনি তরমুজ, খরবুযা কিংবা শসার সাথে একে মিলিয়ে খেতেন। এর ফলে গরম ও ঠান্ডার মধ্যম অবস্থা সৃষ্টি হয়ে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হয়। অথবা স্বাদ পরিবর্তন করার উদ্দেশ্যেও এরূপ করা হয়ে থাকতে পারে।
৩.৪. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাত্রের কোন্ অংশ থেকে খেতেন ?
খাবার গ্রহণকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাত্রের কোন্ অংশ থেকে খাওয়া শুরু করতেন- তাও হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। কোন পাত্রে একাকী খাওয়ার সময় আমরা কি এখান সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন - বিক্ষিপ্তভাবে খাবার গ্রহণ করব ? নাকি পাত্রের নির্দিষ্ট এক পার্শ্ব থেকে শুরু করে গুছালোভাবে তা খেয়ে শেষ করব? এসব বিষয়েও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতে ছাড়েননি। কেননা পাত্রের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে হাত মাড়ালে তা দেখতে খারাপ দেখায়। বিশেষ করে যদি একই পাত্রে একসাথে অনেকে মিলে কোন কিছু খায় তখন একেক বার একেক দিক থেকে হাত মাড়ালে খুবই দৃষ্টিকটু দেখায়। তাই এ বিষয়েও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা বিদ্যমান। যেমন তিনি বলেছেন-
إذا وضعت المائدة فليأكل الرجل مما يليه، ولا يأكل مما بين يدي جليسه ولا من ذروة القصعة، فإنما تأتيه البركة من أعلاها، ولا يقوم رجل حتى ترفع.
যখন খাবার পেশ করা হয় তখন প্রত্যেক ব্যক্তি যেন তার নিকটবর্তী পার্শ্ব থেকে খায়। তার পাশের জনের নিকট থেকে যেন না খায়। খাবারের (স্ত্তপের) শীর্ষভাগ থেকেও যেন না খায়। কেননা খাবারে উপরের দিক থেকেই বরকত আসে। আর খাবার শেষ না হলে কেউ যেন উঠে না যায়।
عن عبد الحكم قال رآني عبد الله بن جعفر رضي الله عنه و أنا غلام و أنا آكل من هاهنا و من هاهنا فقال: إن رسول الله صلى الله عليه و سلم كان إذا أكل لم تعد يده بين يديه.
‘আবদুল হাকাম (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘আবদুল্লাহ ইবন জা’ফর (রা.) লক্ষ্য করলেন যে, আমি পাত্রের এখান থেকে সেখান থেকে বিক্ষিপ্তভাবে আহার গ্রহণ করছি। আমি তখন তরুণ ছিলাম। তিনি বললেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আহার করতেন তখন তাঁর হাত তাঁর সম্মুখভাগ অতিক্রম করত না।
عن عائشة رضي الله عنها قالت: كان رسول الله صلى الله عليه و سلم إذا أكل الطعام أكل مما يليه.
‘আয়িশাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন খাবার খেতেন তখন নিজের পাশের দিক থেকে খেতেন।
খাদ্যের পাত্র থেকে নিজের নিকটবর্তী খাবার গ্রহণ করা এবং অপরের নিকটবর্তী খাবার তার জন্য রেখে দেয়া পানাহারের শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত। অপরের সামনে থেকে খাবার নিয়ে নেয়া খুবই লজ্জাজনক ও আপত্তিকর। তাই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বাস্তব কর্মের মাধ্যমে আমাদেরকে এ শিক্ষাও দিয়ে গেছেন। সুতরাং পানাহারের বেলায় শিষ্টাচার এই যে, আহার গ্রহণকারী তার সামনের খাবার থেকে গ্রহণ করবে, অপরের সামনের খাবার তুলে নিবে না। আর পাত্রের মধ্যেও বিক্ষিপ্তভাবে হাত চালনা করবে না। এটি অভদ্রচিত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সুন্নাতের পরিপন্থী। তাই তা অপর মানুষের নিকটও পছন্দনীয় হতে পারে না। তবে বিভিন্ন পাত্রে রকমারি খাদ্য থাকলে তা দূরে হলেও অন্যের সহযোগিতায় চেয়ে নেয়া অথবা নিজে অগ্রসর হয়ে তা থেকে পরিমাণমত তুলে নেয়ায় কোন দোষ নেই। বরং এক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই উচিত অপরের প্রয়োজন ও সুবিধার দিকে লক্ষ্য রাখা। যেমন- কোন বিশেষ আইটেম কারো নাগালের বাইরে থেকে থাকলে তা তাকে এগিয়ে দেয়া, প্রয়োজনে নিজে তার প্লেটে উঠিয়ে দেয়া ইত্যাদি।
৩.৫. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর দস্তরখানের বর্ণনা:
বর্তমান সময়ে ডাইনিং টেবিলের চারপাশে চেয়ার পেতে বসে সামষ্টিকভাবে খাওয়ার প্রচলনই বেশি। এতে রকমারী খাবারকে সকলের সামনে সমানভাবে পরিবেশনে সুবিধা হয়। কোন কোন ‘আলিম এটিকে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ বলে মনে করেন। আবার কেউ কেউ একে মুস্তাহাব পরিপন্থী বলে মনে করেন। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো এভাবে টেবিল-চেয়ারে বসে খাননি। তিনি সাধারণত: মাটিতে দস্তরখান বিছিয়ে তার উপর বসে আহার গ্রহণ করতেন। যেমন-
عن أنس رضي الله عنه قال: ما أكل رسول الله صلى الله عليه وسلم على خوان و لا في سكرجة و لا خبز له مرقق . قلت لقتادة على ما يأكلون ؟ قال: على هذه السفرة .
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো টেবিলের উপর আহার করেননি, ছোট পেয়ালায়ও আহার করেননি, তাঁর জন্য কখনও চাপাতি রুটি বানানো হয়নি। (রাবী বলেন) আমি কাতাদাকে বললাম, তারা কিসের উপর রেখে আহার করতেন ? তিনি বলেন: ঐ (চামড়ার) দস্তরখানের উপর বসে আহার করতেন।
আরবী ভাষায় টেবিল বা অনুরূপ উঁচু আসবাবকে ‘খাওয়ান’ বলে। আর বিভিন্ন পরিমাপের ছোট ছোট পেয়ালাকে বলা হয় ‘সুকরুজাহ’। তাছাড়া চামড়া কিংবা প্লাষ্টিকের চাদরের মত বিছানাকে বলা হয় সুফরাহ। আরব দেশে এখনো খাবারের কাজে পলিথিনের এক বিশেষ ধরনের সুফরাহ ব্যবহার করা হয়। যা একবার ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হয়। ঘরের মেঝেতে বসে খাওয়ার জন্য এটি খুবই উপযোগী। আমাদের দেশে (বিশেষত: গ্রামাঞ্চলে) পাটি কিংবা চাদর পেতে সুফরার মত ব্যবহার করা হয়। আবার কোথাও কোথাও কাপড়ের তৈরি এক বিশেষ ধরনের লম্বা দস্তরখানও ব্যবহার করা হতো যার উপর খাবারের প্লেট ও বাটি ইত্যাদি রাখা হতো। ছোটবেলায় গ্রামের বাড়ীতে আমরা এগুলোর ব্যবহার দেখেছি। আজকাল অবশ্য গ্রামে-গঞ্জেও ডাইনিং টেবিলের প্রচলন হয়ে গেছে। টেবিলের উপর আবার প্লেট ও বাটি ইত্যাদি রাখার জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের আলাদা আলাদা দস্তরখান ব্যবহার করা হয়। আধুনিককালে এগুলো ‘টেবিল মেট’ নামে পরিচিত। এগুলোকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর ব্যবহৃত দস্তরখানেরই উন্নত সংস্করণ হিসেবে ধরা যেতে পারে। তাই ডাইনিং টেবিল ও এতদসংশ্লিষ্ট অন্যান্য জীবনোপকরণগুলো ব্যবহারে কোন সমস্যা নাই বলে মনে করা যেতে পারে। তাছাড়া এটি কোন মৌলিক ‘ইবাদাত নয় বরং ‘ইবাদাত সম্পাদনের মাধ্যম। স্থান ও কাল ভেদে এই মাধ্যমে পরিবর্তন সাধিত হতে পারে। তবে মৌলিক ‘ইবাদাতে কোন পরিবর্তন হয় না। যেমন- আজকাল আমরা মোজাইক করা ফ্লোরে, টাইলস ফিটিং ফ্লোরে, বৈদ্যুতিক পাখার নিচে, এয়ারকন্ডিশনের ঠান্ডা বাতাসে, উন্নত মানের জায়নামায বিছিয়ে অথবা আরামদায়ক অত্যাধুনিক কার্পেটে দাঁড়িয়ে ঐভাবে এবং ঐ পরিমাণ সালাত আদায় করি, যেভাবে এবং যে পরিমাণ সালাত আদায় করতেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে এবং তাঁর সাহাবীগণ। কেননা এই সালাত হলো একটি মৌলিক ‘ইবাদাত আর অন্যান্যগুলো হলো তার আনুসঙ্গিক উপকরণ।
৩.৬. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর পানপাত্রের বর্ণনা:
মাটি, তামা, কাসা, রূপা ও কাঁচ ইত্যাদি দ্বারা নির্মিত পানপাত্রের প্রচলন প্রাচীনকাল থেকেই চালু ছিল। সেই সাথে আজকাল সিরামিক, এ্যলুমিনিয়াম ও মেলামাইন ইত্যাদি দ্বারাও বিভিন্ন ডিজাইনের পাত্রের প্রচলন হয়েছে। স্টীল ও কাঠের হাতলওয়ালা কিংবা এগুলো দ্বারা আবৃত ও নকশাকৃত রকমারি পাত্রেরও প্রচলন দেখা যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সময়েও এরূপ বিভিন্ন ধরনের পাত্র ছিল। যেমন-
عن عبد الله بن بسر رضي الله عنه قال: كانت للنبي صلى الله عليه و سلم قَصْعَةً يقال لها الْغَرَّاءُ يحملها أربعة رجالٍ.
‘আবদুল্লাহ ইবন বুসর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর একটি বড় খাদ্যের পাত্র ছিল। তাকে ‘গার্রা’ (সাদা পেয়ালা) বলা হতো। তা বহন করতে চারজন লোকের প্রয়োজন হতো।
عن عبد الله بن بسر رضي الله عنه قال: كان لرسول الله صلى الله عليه وسلم جفنة لها أربع حلقٍ.
‘আবদুল্লাহ ইবন বুসর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি বড় বরতন ছিল। যাতে চারটি আংটা যুক্ত ছিল।
উপরোক্ত হাদীসদ্বয় থেকে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বড় বড় পাত্র ব্যবহার করতেন। যেহেতু একত্রিতভাবে আহার করাই ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সচরাচর অভ্যাস। এর ফলে পারস্পরিক হৃদ্যতা বাড়ে এবং খাবারে বরকত হয়। তাই তিনি পৃথক পৃথকভাবে ছোট ছোট বরতনে আহার করতেন না।
عن محمد بن أبي اسماعيل قال: دخلت على أنس رضى الله عنه فرأيت في بيته قدحا من خشب فقال:كان النبي صلى الله عليه وسلم يشرب فيه و يتوضأ.
মুহাম্মদ ইবন আবী ইসমাঈল থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আনাস (রা.) এর কাছে গেলে তার ঘরে কাঠের একটি বড় পাত্র দেখতে পেলাম। তখন তিনি (আনাস) বললেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই পাত্রে পানি পান করতেন এবং এতেই ওযূ করতেন।
عن عبيد الله بن عبد الله بن عباس رضي الله عنهما أن صاحب اسكندرية بعث إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم بقدح قوارير وكان يشرب منه.
‘উবাইদুল্লাহ ইবন ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে, আলেকজান্দ্রিয়ার শাসক নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর জন্য একটি কাঁচের পাত্র উপহার পাঠিয়েছিলেন। তিনি তাতে পানি পান করতেন।
عن ثابت قال: أخرج إلينا أنس بن مالك رضي الله عنه قدحا غليظا مضببا بحديد فقال: يا ثابت هذا قدح رسول الله صلى الله عليه و سلم.
সাবিত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আনাস ইবন মালিক (রা.) লোহার পাতযুক্ত একটি কাঠের মোটা পেয়ালা বের করে আমাদের দেখান এবং বলেন: হে সাবিত! এটাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পেয়ালা।
عن أنس رضي الله عنه قال: لقد سقيت رسول الله صلى الله عليه وسلم بهذا القدح الشراب كلهু الماء والنبيذ والعسل واللبن.
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ পেয়ালায় পানি, নাবীয, মধু ও দুধ সব রকম পানীয় পান করিয়েছি।
عن أنس رضي الله عنه قال: كنت أسقي النبي صلى الله عليه وسلم في القدح اللبن والعسل والسويق والنبيذ والماء البارد.
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই পাত্রে দুধ, মধু, ছাতু, নাবীয ও ঠান্ডা পানি পান করাতাম।
উপরোক্ত হাদীসসমূহ থেকে জানা গেল যে, সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অত্যধিক ভালবাসতেন। তারা তাঁর ব্যবহৃত প্রতিটি জিনিসকে সযত্নে হিফাযাত করেছেন। আনাস ইবন মালিক (রা.) ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর খাদিম। তিনি লাভ করেছিলেন তাঁর পানপাত্র। তাই তিনি গর্ব করে বলতেন যে, আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই পাত্রে দুধ, নাবীয, ছাতু ও ঠান্ডা পানি ইত্যাদি পান করিয়েছি। এখান থেকে আরো জানা যায় যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাঠের এবং কাঁচের পাত্রে পানি পান করেছেন। তাঁর ব্যবহৃত কোন কোন পাত্র লোহার পাতযুক্ত ছিল। সুতরাং আধুনিককালে আমরা খাবার গ্রহণ ও পরিবেশনকালে যেসব দৃষ্টিনন্দন পাত্র, তৈজষ সামগ্রী ও আসবাবপত্র ব্যবহার করে থাকি তাতে দোষের কিছু নেই, যদি তা অহংকারমুক্তভাবে বিনয়ের সাথে হয় এবং যদি তাতে অপচয় ও অপব্যয় না করা হয়।
৩.৭. আহারের শুরুতে এবং শেষে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাত ধুইতেন:
আহারের শুরুতে এবং শেষে হাত ধুয়ে নেয়া ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সুন্নাত। হাত ধুয়াকে তিনি বরকত লাভের উপায় বলে সাব্যস্ত করেছেন। এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদীস নিম্নরূপ-
عن عَائِشَةَ رضي الله عنها أن رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كان إذا أَرَادَ ان يَنَامَ وهو جُنُبٌ يَتَوَضَّأُ وُضُوءَهُ لِلصَّلاَةِ وإذا أَرَادَ أَنْ يَأْكُلَ أو يَشْرَبَ غَسَلَ يَدَهُ ثُمَّ أَكَلَ وَشَرِبَ.
‘আয়িশাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাললাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি অপবিত্র অবস্থায় ঘুমাতে চাইতেন তাহলে তিনি নামাযের উযূর ন্যায় উযূ করে নিতেন। আর যখন খেতে অথবা পান করতে চাইতেন তখন হাত ধুয়ে তারপর খেতেন ও পান করতেন।
عن أَنَسَ بن مَالِكٍ رضي الله عنه يقول قال رسول اللهِ صلى الله عليه وسلم: من أَحَبَّ أَنْ يُكْثِرَ الله خَيْرَ بَيْتِهِ فَلْيَتَوَضَّأْ إذا حَضَرَ غَدَاؤُهُ وإذا رُفِعَ .
আনাস ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি আকাংখা করে যে আল্লাহ তার ঘরের বরকত বাড়িয়ে দিন, সে যেন তার খাবার উপস্থিত হলে হাত ধুয়ে নেয় এবং তা তুলে নেয়ার পরও হাত ধুয়ে নেয়।
এ হাদীসে ওযূ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এর দ্বারা সাধারণভাবে ওযূ করাও বুঝা যায়। তবে এখানে হাত ধুয়াই উদ্দেশ্য। কেননা খাবার পূর্বক্ষণে ওযূ করার পর আবার খাবারের পরক্ষণে ওযূ করার কোন অর্থ হয় না। অন্য এক হাদীস থেকে জানা যায় যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাবার শেষে হাত ধুয়ার পর বলেছিলেন: ‘হে ‘ইকরাশ! আগুনে রান্না করা জিনিস আহারের পর এভাবে ওযূ করতে (হাত ধুইতে) হয়’।
عن أبي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قال: قال رسول اللهِ صلى الله عليه وسلم: من نَامَ وفي يَدِهِ غَمَرٌ ولم يَغْسِلْهُ فَأَصَابَهُ شَيْءٌ فلا يَلُومَنَّ إلا نَفْسَهُ.
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি হাতে গোশতের চর্বিসহ ঘুমিয়ে পড়ল এবং তা ধৌত করল না, ফলে তার কোন রোগ হয়, তাহলে সে যেন নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে দোষারোপ না করে।
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن الشيطان حساس لحاس فاحذروه على أنفسكم من بات وفي يده غمر فأصابه شيء فلا يلومن إلا نفسه.
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: নিশ্চয়ই শয়তান ঘ্রাণ অনুভব করতে খুবই দক্ষ এবং লোভী। তোমরা নিজেদের ব্যাপারে এই শয়তান থেকে সাবধান হও। কোন ব্যক্তি খাদ্যের চর্বি (ইত্যাদির ঘ্রাণ) হাত থেকে দূর না করে রাত যাপন করলে এবং এতে তার কোন ক্ষতি হলে সে এজন্য নিজেকেই যেন তিরষ্কার করে।
عن أبي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: إذا نَامَ أحدكم وفي يَدِهِ رِيحُ غَمَرٍ فلم يَغْسِلْ يَدَهُ فَأَصَابَهُ شَيْءٌ فلا يَلُومَنَّ إلا نَفْسَهُ.
আবূ হুরাইরাহ (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি ইরশাদ করেছেন: কোন ব্যক্তি খাদ্যের চর্বির ঘ্রাণ হাত থেকে দূর না করে ঘুমিয়ে পড়লে এবং এতে তার কোন ক্ষতি হলে সে এজন্য নিজেকেই যেন তিরষ্কার করে।
খাবারের পর হাত ধুয়ার আরেকটি রূপকার্থও হতে পারে। সেটি হলো- খাবার পরিমাণমত নেয়া ও তা শেষ করে খাওয়া। কেননা অনেক সময় শুকনো খাবার খেলে অথবা চামচের সাহায্যে খেলে হাতে কিছুই লাগে না। ফলে বাহ্যিকভাবে তখন হাত ধুয়ার কোন প্রয়োজনীয়তাই থাকে না। এমতাবস্থায় হাদীসটির অর্থ দাঁড়াবে এই যে, পরিবারে বরকত বৃদ্ধির উপায় হচ্ছে পরিচ্ছন্নভাবে এবং পরিমাণমত খাবার গ্রহণ করা। তথা অপরিচ্ছন্নতা ও অপচয় পরিহার করা।
আর ‘ঘরে বরকত হওয়া’ কথাটিও অনেক ব্যাপক অর্থবোধক। পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হওয়া, অল্প আহারে পরিতৃপ্ত হওয়া, অভাব-অনটন থেকে মুক্ত থাকা ইত্যাদি সবই এর অন্তর্ভুক্ত। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সুন্নাত অনুযায়ী আমল করার কারণে ঈমান ও তাকওয়া বৃদ্ধি পেতে পারে, বেশি বেশি সৎকাজ করার অনুপ্রেরণা জাগ্রত হতে পারে ইত্যাদিও বরকতের অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া স্বাস্থ্যগত দিক থেকে তো আহারের পূর্বে ও পরে হাত ধুয়ার উপকারিতা আছেই। ইসলাম স্বভাবজাত ধর্ম। খাবারের পর এটো হাতে বসে থাকা মানুষের স্বভাব বিরুদ্ধ। তাই ইসলাম তা কখনোই অনুমোদন করতে পারে না। তাছাড়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। সুতরাং খাবারের পর হাত ধুয়ে পরিচ্ছন্ন হয়ে যাওয়া ঈমানের অনিবার্য দাবী।
৩.৮. পানি পান করাবার ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর আদর্শ:
ইসলামী শিষ্টাচারিতার অন্যতম একটি হচ্ছে মেহমানদের আপ্যায়ন করা। মানুষদেরকে পানীয় পান করানোও আবহমান কাল থেকে সভ্যজগতের একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল। আরব দেশে সেসময় মক্কায় আগত বিভিন্ন এলাকার হাজীগণকে পানি পান করানোর রীতি ছিল এবং এটি ছিল তাদের জন্য একটি গৌরবের বিষয়। তবে ইসলামের অন্যান্য অনুশাসন মেনে নেয়ার পরই কেবল এই গৌরব ইসলামে স্বীকৃত। হাজীদেরকে ছাড়াও অন্যান্য মুসাফির ও পথিকদেরকে পানাহার করানোর রেওয়াজ তখন থেকেই ছিল। সাধারণভাবে যে কোন ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাবার খাওয়ানো এবং পিপাসার্ত ব্যক্তিকে পানি পান করানো ইসলামের অন্যতম আদব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কখনো নিজ হাতে তাঁর সাহাবীদেরকে পানি পান করাতেন। সাহাবীগণও উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁর মত পরস্পরকে পানি পান করাতেন। এক্ষেত্রেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ রীতি অবলম্বন করতেন। নিম্নে এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদীস উদ্ধৃত হলো।
عن ابن عمر رضي الله عنهما أن النبي صلى الله عليه وسلم شرب فناول الذي عن يمينه.
ইবন ‘উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে পান করলেন। তারপর তাঁর ডানপাশে উপবিষ্ট ব্যক্তিকে দিলেন।
عن أَنَسِ بن مَالِكٍ رضي الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أُتِيَ بِلَبَنٍ قد شِيبَ بِمَاءٍ وَعَنْ يَمِينِهِ أَعْرَابِيٌّ وَعَنْ شِمَالِهِ أبو بَكْرٍ فَشَرِبَ ثُمَّ أَعْطَى الْأَعْرَابِيَّ وقال الْأَيْمَنَ الأيمن .
আনাস ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর কাছে একবার দুধ নিয়ে আসা হলো যার সাথে পানি মিশানো হয়েছে। তখন তাঁর ডান দিকে ছিল এক বেদুঈন এবং বাম দিকে ছিলেন আবূ বকর (রা.)। তিনি নিজে পান করলেন অত:পর সেই বেদুঈনকে দিয়ে বললেন: প্রথমে ডান দিকের ব্যক্তি এবং পরে তার ডান দিকের ব্যক্তিকে ক্রমান্বয়ে দিতে হবে।
عن عبد الله بن عبد الرحمن بن معمر الأنصاري أنه سمع أنس بن مالك رضي الله عنه يقول: دخل رسول الله صلى الله عليه وسلم في دارنا هذه ومعه أبو بكر و عمر و ناس من الأعراب، فحلبت له شاة و صب عليه ماء من بئرنا هذه ثم سقيناه فشرب، وكان أبو بكر وعمر عن يساره والأعرابي عن يمينه. فلما شرب، قال عمر: أبو بكر يا رسول الله ! فأعطاه رسول الله صلى الله عليه وسلم الأعرابي وقال: الأيمن فالأيمن.
‘আবদুল্লাহ ইবন ‘আবদুর রহমান ইবন মা’মার আল-আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি আনাস ইবন মালিককে (রা.) বলতে শুনেছেন যে, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের এই বাড়ীতে আসলেন। তাঁর সাথে ছিলেন আবূ বকর, ‘উমার এবং আরো কিছু সংখ্যক মরুবাসী আরব। আমি নবী সাল্লাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর জন্য বকরী দোহন করলাম এবং সে দুধের সাথে আমাদের এই কূপের পানি মিশানো হলো। আমি তাঁকে তা পান করতে দিলাম। অত:পর তিনি পান করলেন। তাঁর বাম পাশে ছিলেন আবূ বকর ও ‘উমার এবং ডান পাশে ছিলো মরুবাসী বেদুঈনরা। নবী সাল্লাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম পান করার পর ‘উমার (রা.) বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আবূ বকরকে দিন। কিন্তু তিনি প্রথমেই মরুবাসী বেদুঈনকে দিলেন এবং বললেন: প্রথমে ডান দিকের ব্যক্তিদের তারপর তার ডান দিকের ব্যক্তিদের অধিকার।
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يسقى أصحابه فقالوا:يا رسول الله لو شربت؟ فقال: ساقي القوم آخرهم.
আনাস ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার তাঁর সাহাবীদেরকে কিছু পান করাচ্ছিলেন। সাহাবীগণ বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি পান করুন। তিনি বললেন: কোন দলকে যিনি পান করান তিনি সবশেষে পান করেন।
عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: دخلت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم أنا وخالد بن الوليد على ميمونة فجاءتنا بإناء من لبن فشرب رسول الله صلى الله عليه وسلم وأنا على يمينه وخالد على شماله. فقال لي: الشربة لك، فإن شئت أثرت بها خالدا، فقلت: ما كنت لأوثر على سورك أحدا. ثم قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من أطعمه الله طعاما فليقل: اللهم بارك لنا فيه وأطعمنا خيرا منه، ومن سقاه الله لبنا فليقل: اللهم بارك لنا فيه وزدنا منه. قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ليس شيئ يجزئ مكان الطعام والشراب غير اللبن.
ইবন ‘আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি এবং খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সাথে মাইমূনাহ (রা.) এর নিকট গেলাম। তিনি আমাদের সামনে এক পাত্র দুধ নিয়ে আসলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা থেকে পান করলেন। আমি তখন তাঁর ডান দিকে ছিলাম আর খালিদ ছিলেন তাঁর বাম দিকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন: এবার পান করার অধিকার তোমার। তবে তুমি চাইলে খালিদকে অগ্রাধিকার দিতে পার। আমি বললাম: আমি আপনার ঝুটার ব্যাপারে নিজের উপর অন্য কাউকে অগ্রাধিকার দিতে পারি না। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: যাকে আল্লাহ কোন খাবার খাওয়ান, সে যেন এ দু‘আ পড়ে- ‘হে আল্লাহ ! এ খাবারের মধ্যে আমাদের জন্য বরকত দান কর এবং ভবিষ্যতে আমাদেরকে এর চেয়ে উত্তম খাবার দাও’। আর যাকে আল্লাহ দুধ পান করান, সে যেন এ দু‘আ পড়ে- ‘হে আল্লাহ ! এতে আমাদের জন্য বরকত দাও এবং আরো বেশি করে এ নি‘আমাত দান কর’। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: দুধ ছাড়া আর কোন জিনিস নেই যা একই সাথে খাবার ও পানীয় উভয়ের কাজ দিতে পারে।
উপরোক্ত হাদীসসমূহ থেকে জানা যায় যে, পানি পান করা এবং পান করানোর সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। যিনি একদল লোককে পান করান তার নিয়ম হচ্ছে, সবাইকে পান করানোর পর তিনি নিজে পান করবেন। কেউ নিজে পান করার পর যদি তার সঙ্গী কাউকে পান করাতে চায় তাহলে প্রথমে তার ডান দিকের ব্যক্তিকে দিবে। অর্থাৎ ডান দিকের ব্যক্তির অধিকার অগ্রগণ্য হবে। কিন্তু বাম দিকে যদি কোন সম্মানিত বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি থাকেন তাহলে ডান দিকের ব্যক্তির অনুমতি নিয়ে তাকে দেয়ায় কোন দোষ নেই। যেমন বর্ণিত হয়েছে যে,
حَدَّثَنَا أَبُوحَازِمٍ قَالَ: سَمِعْتُ سَهْلَ بن سَعْدٍ رضي الله عنه يَقُولُ: أُتِيَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَدَحٍ، فَشَرِبَ وَالأَشْيَاخُ عَلَى يَسَارِهِ، وَغُلامٌ هُوَ أَصْغَرُ الْقَوْمِ عَلَى يَمِينِهِ، فَلَمَّا شَرِبَ قَالَ :يَا غُلامُ تَأْذَنُ لِي أَنْ أُعْطِيَ الأَشْيَاخَ؟ قَالَ: مَا كُنْتُ أُوثِرُ بنصِيبِي مِنْ فَضْلِكَ يَا رَسُولَ اللهِ، فَأَعْطَاهُ إِيَّاهُ.
আবূ হাযিম বলেন: আমি সাহল ইবন সা’দকে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর কাছে এক পাত্র পানীয় আনা হলো। তিনি তা থেকে পান করলেন। তাঁর বাম দিকে ছিল বয়স্ক ব্যক্তিরা আর ডানে ছিল সর্বকনিষ্ঠ এক বালক। তিনি পান করার পর বালকটিকে বললেন: তুমি কি আমাকে আগে বড়দেরকে দেয়ার অনুমতি দেবে? সে বললো: আপনার উচ্ছিষ্ট থেকে প্রাপ্ত আমার অংশের ব্যাপারে আমি কাউকে অগ্রাধিকার দিতে পারি না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তা তাকেই দিলেন।
عن سهل بن سعد رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم أتي بشراب، فشرب منه وعن يمينه غلام، وعن يساره أشياخ، فقال للغلام: أتأذن لي أن أعطي هؤلاء؟ فقال الغلام: لا والله، لا أوثر بنصيبي منك أحدا، فتله رسول الله صلى الله عليه وسلم في يده.
সাহল ইবন সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর কাছে কিছু পানীয় বস্ত্ত আনা হলে তিনি নিজে পান করার পর দেখলেন যে, তাঁর ডান দিকে একটি বালক বসে আছে এবং বাম দিকে কিছু বয়স্ক লোক বসে আছেন। তিনি বালকটিকে বললেন: এসব বয়স্ক লোকদের দেয়ার জন্য তুমি কি আমাকে অনুমতি দেবে ? সে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর শপথ! আপনার থেকে প্রাপ্ত আমার কোন অংশে আমি কাউকেই অগ্রাধিকার দিবোনা। (হাদীসটির বর্ণনাকারী বলেন) তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ বালকটিকেই দিলেন।
সুতরাং অপরকে পানি পান করাবার ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর আদর্শ হলো ডান দিক থেকে শুরু করা। এবং পর্যায়ক্রমে ডান দিকের লোকদেরকেই অগ্রাধিকার প্রদান করা। কোন কারণে এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানোর প্রয়োজন দেখা দিলেও ডান দিকের ব্যক্তির অনুমতিক্রমেই তা করতে হবে। আর যিনি পান করাবেন তার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর আদর্শ হলো যে, তিনি নিজে সকলের শেষে পান করবেন।
৩.৯. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর প্রিয় পানীয়:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর কাছে সবচেয়ে প্রিয় পানীয় ছিল ঠান্ডা পানি। কোন কোন বর্ণনায় যদিও এসেছে যে, তিনি দুধ অত্যধিক পছন্দ করতেন। কিন্তু দুধ একদিকে যেমন পানীয় অপরদিকে তা খাদ্য। আর অন্যান্য বিভিন্ন বর্ণনা মতে তাঁর কাছে সবচেয়ে অধিক প্রিয় পানীয় ছিল ঠান্ডা পানি। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর অধিক প্রিয় পানীয় কি ছিল? এ নিয়ে বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে শিরোনাম সাজানো হয়েছে। এবং তাতে যেসব হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে তার কয়েকটি নিম্নরূপ:
عن عائشة رضي الله عنها قالت: كان أحب الشراب إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم الحلو البارد .
‘আয়িশাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর কাছে সবচেয়ে প্রিয় পানীয় ছিল ঠান্ডা মিষ্টি শরবত।
حدثنا بن أبي عُمَرَ حدثنا سُفْيَانُ بن عُيَيْنَةَ عن مَعْمَرٍ عن الزُّهْرِيِّ عن عُرْوَةَ عن عَائِشَةَ رضي الله عنها قالت: كان أَحَبُّ الشَّرَابِ إلى رسول اللهِ صلى الله عليه وسلم الْحُلْوَ الْبَارِدَ قال أبو عِيسَى هَكَذَا رَوَى غَيْرُ وَاحِدٍ عن بن عُيَيْنَةَ مِثْلَ هذا عن مَعْمَرٍ عن الزُّهْرِيِّ عن عُرْوَةَ عن عَائِشَةَ رضي الله عنها وَالصَّحِيحُ ما رُوِيَ عن الزُّهْرِيِّ عن النبي صلى الله عليه وسلم مُرْسَلًا .
(ইমাম তিরমিযী বলেন) আমাকে ইবন আবী ‘উমার সুফইয়ান ইবন ‘উয়াইনার সুত্রে, তিনি মা‘মার থেকে, তিনি যুহরী থেকে, তিনি ‘উরওয়া থেকে, তিনি ‘আয়িশাহ (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘অয়িশাহ (রা.) বলেন: ঠান্ডা মিষ্টি শরবত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর কাছে অধিক প্রিয় ছিল।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি একাধিক রাবী ইবন ‘উয়াইনাহ-মা‘মার-যুহরী-‘উরওয়া-‘আয়িশাহ (রা.) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে যুহরীর সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মুরসাল বর্ণনাটিই সাহীহ।
عن الزهري أن رسول الله صلى الله عليه وسلم سئل أي الشراب أطيب ؟ قال: الحلو البارد .
যুহরী (রহ.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ ধরনের পানীয় অতীব উত্তম? তিনি বললেন: ঠান্ডা মিষ্টি শরবত। আবূ ঈসা বলেন, ‘আব্দুর রায্যাক (রহ.) মা’মার-যুহরী-নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূত্রে অনুরূপভাবে মুরসালরূপে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইবন ‘উয়াইনার রিওয়ায়াতের তুলনায় এটি অধিকতর সাহীহ।
৩.১০. আহার শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসব দু‘আ পড়তেন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন মহান আল্লাহর একান্ত অনুগত ও কৃতজ্ঞ বান্দাহ। তিনি তাঁর কথা-বার্তা, আচার-আচরণ ও প্রতিটি পদক্ষেপেই এর সাক্ষর রাখতেন। তাঁর চলাফেরা ও আচরণে কখনোই কোন ঔদ্ধত্য প্রকাশ পেত না। কোন খাবারের ব্যবস্থা হলে তিনি কখনো তা একাকী খেতেন না। আশে পাশে যারা থাকতো তাদের সবাইকে তিনি অল্প কিংবা বিস্তর সকল খাবারেই শামিল করতেন। খাবার দেখে তিনি তাতে বরকতের জন্য দু‘আ করতেন। আল্লাহর নাম নিয়ে খাওয়া শুরু করতেন এবং খাওয়া শেষে আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করতেন। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত কতক হাদীস নিম্নরূপ:
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه و سلم دعاه رجل إلى طعام فذهبنا معه، فلما طعم و غسل يده أو قال يديه، قال: الحمد لله الذي يطعم و لا يطعم، من علينا فهدانا و أطعمنا و سقانا و كل بلاء حسن أبلانا. الحمد لله غير مودع و لا مكافًى و لا مكفور و لا مستغنىً عنه ربنا. الحمد لله الذي أطعم الطعام و سقى من الشراب و كسى من العري و هدى من الضلالة و بصر من العمي. الحمد لله الذي فضلني على كثير من خلقه تفضيلا. الحمد لله رب العالمين.
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খাবারের দাওয়াত দিলো। আমরাও তাঁর সাথে গেলাম। খাদ্য গ্রহণ শেষে তিনি তাঁর এক হাত অথবা দুই হাত ধুয়ার পর এই দু‘আ পড়লেন: ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি (সবাইকে) খাদ্য দান করেন। কিন্তু তাকে কেউ আহার দেয় না। তিনি আমাদের প্রতি দয়া করে আমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন, আমাদেরকে খাদ্য এবং পানীয় দিয়েছেন। আর আমাদেরকে প্রতিটি উত্তম নি‘আমাত দান করেছেন’। ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। হে আমাদের রব! আমরা চিরদিনের জন্য খাদ্য পরিত্যাগ করছি না। আমরা এর কোন প্রতিদান দিতে পারি না। আমরা অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি না এবং এর প্রতি অমুখাপেক্ষিতাও প্রকাশ করছি না’। ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। যিনি (আমাদেরকে) খাদ্য দিয়েছেন, পানি পান করিয়েছেন, উলঙ্গ হওয়া থেকে রক্ষা করে বস্ত্র দান করেছেন, গোমরাহী থেকে রক্ষা করে হিদায়াত দান করেছেন এবং দৃষ্টিহীন না বানিয়ে দৃষ্টি দান করেছেন’। ‘সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমাকে তাঁর বহু সৃষ্টির উপর মর্যাদা দিয়েছেন’। ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি সমগ্র বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক’।
عن أبي سعيد رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا أكل طعاما قال: الحمد لله الذي أطعمنا وسقانا وجعلنا مسلمين.
আবূ সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাবার শেষে বলতেন: সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে খাবার খাইয়েছেন এবং পান করিয়েছেন। আর আমাদেরকে মুসলিম বানিয়েছেন।
عن عمرو بن مرة رضي الله عنه قال: كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا فرغ من طعامه قال: الحمد لله الذي من علينا فهدانا، والحمد لله الذي أشبعنا وأروانا، وكل بلاء حسن أو صالح أبلانا.
‘আমর ইবন মুররাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাবার শেষ হলে বলতেন: সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি আমাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে আমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন। সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে ক্ষুধামুক্ত করেছেন ও পরিত…ৃপ্ত দিয়েছেন। আর আমাদেরকে প্রতিটি সুন্দর অথবা উত্তম নি‘আমাত দান করেছেন।
عن ابن معبد قال: قال علي رضي الله عنه: تدري ما حق الطعام؟ قال: قلت: وما حقه؟ قال: تقول بسم الله اللهم بارك لنا فيما رزقتنا، ثم قال: تدري ما شكره؟ قلت: وما شكره؟ قال: تقول: الحمد لله الذي أطعمنا وسقانا.
ইবন মা’বাদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘আলী (রা.) বলেছেন: তুমি কি জান খাবারের হক কি? তিনি (রাবী) বলেন: আমি বললাম: খাবারের হক কি? তিনি (‘আলী) বললেন: (খাবারের হক হলো) তুমি বলবে যে, আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে যা রিয্ক দিয়েছো, তাতে বরকত দাও। অত:পর তিনি জিজ্ঞেস করলেন: তুমি কি জান খাবারের শুকরিয়া কি? আমি (তাঁর কাছে জানতে চেয়ে) বললাম: খাবারের শুকরিয়া কি? তিনি বললেন: (খাবারের শুকরিয়া হলো- খাবার শেষে) তুমি বলবে যে, সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে খাইয়েছেন এবং পান করিয়েছেন।
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إن الله ليرضى عن العبد أن يأكل الأكلة فيحمده عليها أو يشرب الشربة فيحمده عليها .
আনাস ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ (তাঁর) বান্দাহর প্রতি সন্তুষ্ট হন যখন সে কোন খাবার খেতে পেরে সেজন্য তাঁর প্রশংসা করে কিংবা কোন পানীয় পান করতে পেরে সেজন্যে তাঁর প্রশংসা করে।
عن ثعلبة رضي الله عنه قال: كان النبي صلى الله عليه و سلم يقول إذا أكل: الحمد لله الذي أطعمنا في الجائعين. والحمد لله الذي كسانا في العارين. والحمد لله الذي حملنا في الراجلين. والحمد لله الذي علمنا في الجاهلين. والحمد لله رب العالمين.
সা‘লাবা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন খাবার খেতেন তখন বলতেন: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি ক্ষুধার্তদের মধ্য থেকে আমাদেরকে খাবার দান করেছেন। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি বস্ত্রহীনদের ভেতর থেকে আমাদেরকে বস্ত্র দান করেছেন। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি পায়ে হেঁটে গমনকারীদের মধ্যে আমাদেরকে সাওয়ারী দান করেছেন। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি মূর্খদের মধ্যে আমাদেরকে জ্ঞান দান করেছেন। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি সমগ্র বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর উপরোক্ত দু‘আসমূহের মধ্যেও মহান আল্লাহর দাসত্বের এক চমৎকার বহি:প্রকাশ বিদ্যমান। এর মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দিলেন যে, আমরা যেন শিক্ষা-দীক্ষা, খাদ্য, পোশাক, বাহন ও জ্ঞান-গরিমার কারণে গর্ব না করি; বরং এসবকে মহান আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ মনে করে আমরা যেন তাঁর প্রতি চিরকৃতজ্ঞ হই। কেননা, আল্লাহর এমন অনেক বান্দাহ আছেন যারা তাঁর এসব নি‘আমাত লাভ করতে পারেননি।
عن رباح بن عبيدة قال سمعت أبا سعيد الخدري رضي الله عنه يقول: كان رسول الله صلى الله عليه و سلم إذا طعم أو شرب قال: الحمد لله الذي أطعمنا و سقانا و جعلنا من المسلمين.
রাবাহ ইবন ‘আবীদাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রা.) কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন খাবার খেতেন কিংবা পান করতেন তখন এই দু‘আটি পড়তেন: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদেরকে খাদ্য দিয়েছেন, পান করিয়েছেন এবং মুসলিম বানিয়েছেন।
মহান আল্লাহ অনুগ্রহ করে আমাদেরকে জীবন দিয়েছেন এবং জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল জীবনোপকরণও দিয়েছেন। আবার এই জীবন ও জীবনোপকরণকে তাঁর একান্ত দান মনে করে তাঁরই অনুগত (মুসলিম) হওয়ার তাওফীক দিয়েছেন। উপরোক্ত দু‘আসমূহে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এভাবেই মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দীক্ষা দিলেন।
عن أبي أيوب الأنصاري رضي الله عنه قال: كان النبي صلى الله عليه و سلم إذا أكل و شرب قال: الحمد لله الذي أطعمنا و سقانا و سوغه و جعل له مخرجا.
আবূ আইয়ূব আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম পানাহার শেষ করে বলতেন: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদেরকে খাদ্য ও পানীয় দান করেছেন। তা গলধ:করণ সহজ করে দিয়েছেন এবং তা নি:সরণের পথও তৈরি করে দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ তাঁর যেসব নি‘আমাতকে আমাদের খাদ্য হিসেবে দান করেছেন তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ আমাদের দেহের অংশে রূপান্তরিত হয়। আর যা দেহের অংশে রূপান্তরিত হয় না তা বর্জ্য হিসেবে আমাদের দেহ থেকে বিভিন্নভাবে বেরিয়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এসবের বিশদ ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। উপরোক্ত দু‘আর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সতর্ক করেছেন যে, মানুষের জন্য খাদ্য ও পানীয়ের সংস্থান হওয়া যেমন আল্লাহ তা‘আলার মেহেরবাণী। ঠিক তেমনি তা হযম হওয়ার ব্যবস্থাপনাও তাঁর অনেক বড় দান। এটা মহান আল্লাহর এত বড় দান যে, আমরা অনেকেই জানিনা আমাদের দেহের অভ্যন্তরে আল্লাহ প্রদত্ত কত রকম কলাকৌশল কাজ করছে। যদি কারো খাবার হযম না হয়, পস্রাব-পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়, ঘাম বের না হয় এবং দেহের তাপ নি:শেষ হয়ে যায় কেবল তখনই সে এসব নি‘আমাতের মূল্য উপলব্ধি করতে পারে।
عن أبي أمامة الباهلي رضي الله عنه قال: كان النبي صلى الله عليه و سلم إذا رفعت المائدة من بين يديه قال: الحمد لله حمدا كثيرا طيبا مباركا فيه غير مكفٍّ ولا مودعٍ ولا مستغنىً عنه ربنا.
আবূ উমামা আল-বাহিলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সামনে থেকে দস্তরখানা উঠিয়ে নেয়া হলে তিনি বলতেন: পবিত্র ও বরকতময় সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। হে আমাদের রব! এই খাদ্যের প্রতি অমনযোগী হওয়া যায় না, তা পরিত্যাগ করা যায় না এবং তার প্রয়োজনকে অস্বীকারও করা যায় না।
অর্থাৎ এ দস্তরখানা আমরা এজন্যে উঠিয়ে নিচ্ছিনা যে, যে খাদ্য খেলাম তা চিরদিনের জন্য যথেষ্ট, ভবিষ্যতে আর কখনো খেতে হবে না কিংবা পানাহারের প্রয়োজন হবে না। হে আমাদের প্রতিপালক! ক্ষুধা বারবার আমাদেরকে পীড়া দিবে। তাই খাদ্যের প্রয়োজনও বারবার দেখা দিবে। আমরা আজীবন তোমার এই নি‘আমাতের মুখাপেক্ষী থাকব। এখন যেভাবে তুমি আমাদের খাদ্য দান করছো, ভবিষ্যতেও সেভাবে দান করবে- এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
عن عبد الرحمن بن جبير أنه حدثه رجل خدم النبي صلى الله عليه و سلم ثمان سنين أنه كان يسمع رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول: بسم الله، فإذا فرغ قال: اللهم أطعمت و أسقيت و هديت و أحييت, فلك الحمد على ما أعطيت.
‘আবদুর রহমান ইবন জুবাইর (রা.) থেকে বর্ণিত, যিনি আট বছর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর খিদমাত করেছেন এমন এক ব্যক্তি তার কাছে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- (এর কাছে খাবার হাযির করা হলে) তাঁকে তিনি বলতে শুনেছেন: ‘বিসমিল্লাহ’। খাওয়া শেষ হলে তিনি বলতেন: ‘হে আল্লাহ (তুমি বড়ই দয়া করেছো) তুমি খাদ্য ও পানীয় দান করেছো, হিদায়াত দিয়েছো এবং জীবন দান করেছো। তুমি যেসব নি‘আমাত দিয়েছো সেজন্য সব প্রশংসা তোমারই’।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবসময় আল্লাহর নাম নিয়ে খাবার শুরু করতেন। এক্ষেত্রে তিনি ‘বিসমিল্লাহ’ বলতেন। তাই আমরা খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলার মাধ্যমে খাবারে বরকতহীনতা থেকে রক্ষা পাব। আর খাবারের শেষেও তিনি যেসব দু‘আ পড়তেন তা বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। সবগুলোরই বিষয়বস্ত্ত এক। তাই আমরা এর যে কোনটি পড়তে পারব। তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, আমরা যেন সর্বদাই মহান আল্লাহর সব নি‘আমাতের কথা স্মরণ রাখি এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আমরা যেন মনে রাখি যে, আমরা এসব নি‘আমাত লাভের উপযুক্ত নই। তিনি দয়াপরবশ হয়ে আমাদেরকে এসব নি‘আমাত প্রদান করেছেন বলেই আমরা তা ভোগ করতে পারছি।
4. পানাহারের সাধারণ নীতিমালা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর জীবনে আমাদের জন্য রয়েছে সর্বোৎকৃষ্ট অনুকরণীয় আদর্শ। মহান আল্লাহ বলেন:
)لقد كان لكم في رسول الله أسوة حسنة)
‘‘নি:সন্দেহে তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর জীবনেই রয়েছে সর্বোৎকৃষ্ট অনুকরণীয় আদর্শ’’। সুতরাং উপরে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর খাদ্যাভ্যাসের আলোকে পানাহারের ক্ষেত্রে তাঁর অনুসৃত নীতিমালা থেকেই আমরা আমাদের জন্য ইসলাম নির্দেশিত পানাহার পদ্ধতি খোঁজে পাব। আর সেই পদ্ধতিকে আমরা ‘পানাহারের সাধারণ নীতিমালা’ এবং ‘পানাহারের বিশেষ নীতিমালা’ এই দু’টি প্রধান শিরোনামের আওতায় লিপিবদ্ধ করেছি।
৪.১. বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করা:
পানাহারকালে আমরা মহান আল্লাহ প্রদত্ত নি‘আমাত গ্রহণ করে থাকি। তিনি মঞ্জুর না করলে এ নি‘আমাত আমরা পেতাম না। অঢেল সম্পদ থাকলেও অনেক সময় তাঁর পক্ষ থেকে বরাদ্দ না থাকায় মান সম্পন্ন খাদ্য সামগ্রী উপভোগ করা যায় না। আবার গরীব দু:খী হয়েও কখনো কখনো উন্নত মানের আহার জুটে যায়। তাই আহার গ্রহণকালে মহা মহীম আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণে থাকা চাই। আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণে থাকার প্রথম পদক্ষেপই হলো তাঁর নাম নিয়ে খাবার গ্রহণ শুরু করা। তাঁর কাছে এই খাবারে বরকত লাভের আশা করা এবং খাবার শেষে তাঁর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অনেকগুলো হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
عن عمر بن أبي سلمة رضي الله عنهما قال: قال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم : سم الله وكل بيمينك ، وكل مما يليك.
‘উমার ইবন আবী সালামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন: ‘আল্লাহর নাম নাও। ডান হাত দিয়ে খাও এবং যা তোমার কাছে (নিকটবর্তী পার্শ্বে) তা থেকে খাও’।
عن عائشت رضي الله عنها قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إذا أكل أحدكم فليذكر اسم الله تعالى، فإن نسي أن يذكر اسم الله تعالى في أوله، فليقل: باسم الله أوله وآخره .
‘আয়িশাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কেউ যখন খায়, তখন যেন সে আল্লাহর নাম স্মরণ করে। যদি শুরুতে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যায়, তাহলে (স্মরণ হওয়া মাত্রই) সে যেন বলে: ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু’।
عن ابن مسعود رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من نسي أن يذكر الله في أول طعامه فليقل حين يذكر: باسم الله في أوله وآخره، فإنه يستقبل طعامه جديدا و يمنع الخبيث ما كان يصيب منه.
ইবন মাস‘উদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি খাবারের শুরুতে আল্লাহর নাম নিতে ভুলে যায়, সে যেন স্মরণ হওয়া মাত্রই বলে- ‘বিসমিল্লাহি ফী আওয়ালিহী ওয়া আখিরিহী’। এর মাধ্যমে সে নতুনভাবে খাবার গ্রহণ শুরু করছে এবং আগে তার কোন অনিষ্ট হয়ে গিয়ে থাকলে তাও রুখে দিচ্ছে।
খাবার সময় মহান আল্লাহর স্মরণের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক গুরুত্ব দিতেন। এ ব্যাপারে তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে উৎসাহিত করতেন। কারণ এতে খাদ্যগ্রহণকারীদের জন্য প্রচুর বরকত নিহিত রয়েছে। তাছাড়া এটি খাদ্য ও খাদ্যগ্রহণকারীদের থেকে শয়তান ও তার বিপদকে প্রতিহত করে। এ সম্পর্কেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়।
عن حذيفة رضي الله عنه قال: كنا إذا حضرنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم طعاما، لم نضع أيدينا حتى يبدأ رسول الله صلى الله عليه وسلم فيضع يده. وإنا حضرنا معه مرة طعاما، فجاءت جارية كأنها تدفع، فذهبت لتضع يدها في الطعام، فأخذ رسول الله صلى الله عليه وسلم بيدها، ثم جاء أعرابي كأنما يدفع ، فأخذ بيده، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن الشيطان يستحل الطعام إن لا يذكر اسم الله تعالى عليه، وإنه جاء بهذه الجارية ليستحل بها، فأخذت بيدها، فجاء بهذا الأعرابي ليستحل به، فأخذت بيده، والذي نفسي بيده إن يده في يدي مع يديهما. ثم ذكر اسم الله تعالى و أكل.
হুযাইফাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সাথে কোন খাবারে উপস্থিত হতাম, তখন তিনি তাঁর হাত দিয়ে খাওয়া শুরু না করা পর্যন্ত আমরা খাবারে হাত দিতাম না। একবার আমরা তাঁর সাথে এক খাওয়ার মাজলিসে উপস্থিত ছিলাম। এ সময় একটি বালিকা এল। সে এমনভাবে এল যেন তাকে ধাক্কা দেয়া হচ্ছে। সে এসে খাবারে হাত রাখতে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাত ধরে ফেললেন। এরপর এক বেদুঈন এল। এমনভাবে যেন তাকে কেউ ধাক্কা দিচ্ছে। (সেও খাবারে হাত দিতে গেলে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাত ধরে ফেললেন। অত:পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: যদি খাবারের উপর আল্লাহর নাম নেওয়া না হয়, তবে শয়তান তার দখল নিয়ে নেয় (তার জন্য তা বৈধ করে নেয়)। সে এই বালিকার সাথে এসেছে, যাতে সে এর মাধ্যমে খাবারে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু আমি তার হাত ধরে ফেলেছি। এরপর বেদুঈনের মাধ্যমে এসেছে, তার মাধ্যমে খাবার নষ্ট করতে, কিন্তু আমি এবারো তার হাত ধরে ফেলেছি। সেই সত্ত্বার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! এ দুইজনের হাতের সাথে শয়তানের হাতও এখন আমার হাতে। অত:পর তিনি আল্লাহর নাম নিয়ে খাওয়া শুরু করলেন।
عن جابر رضي الله عنه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: إذا دخل الرجل بيته، فذكر الله تعالى عند دخوله وعند طعامه، قال الشيطان لأصحابه: لا مبيت لكم ولا عَشاء. وإذا دخل، فلم يذكر الله تعالى عند دخوله، قال الشيطان: أدركتم المبيت، وإذا لم يذكر الله تعالى عند طعامه قال: أدركتم المبيتَ والعَشاءَ.
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: কোন ব্যক্তি যখন তার ঘরে প্রবেশ করে, তখন সে যদি ঘরে প্রবেশের সময় এবং খাওয়ার সময় মহান আল্লাহর নাম স্মরণ করে, তাহলে শয়তান তার সাথীদেরকে বলে: আজ তোমাদের (এখানে) রাত্রিযাপন এবং রাতের খাবার কোনটিই হলো না। আর যদি সে ঘরে প্রবেশের সময় মহান আল্লাহর নাম না নেয়, তাহলে শয়তান (তাদেরকে) বলে: তোমরা (এখানে) রাত্রিযাপনের সুযোগ পেয়ে গেলে। এরপর যদি সে খাওয়ার সময় আল্লাহর নাম না নেয়, তাহলে শয়তান বলে: তোমরা রাত্রিযাপন এবং রাতের খাবার দুটোই পেয়ে গেলে।
সুতরাং খাবারের শুরুতে মহান আল্লাহর নাম নিয়ে খাওয়া শুরু করা, খাবার গ্রহণকালে তাঁর দেয়া রিয্ক এর কথা স্মরণ রাখা এবং খাবারের শেষে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা অত্যন্ত জরুরী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণ খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলার ব্যাপারে খুবই যত্নবান ছিলেন। আমাদেরও উচিত তাঁদের অনুকরণে মহান আল্লাহর দেয়া নি‘আমাতরাজী সামনে পেলে তাঁর কথা স্মরণ করে তাঁর নামে তা গ্রহণ করা এবং সর্বাবস্থায় তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা।
4.2. ডান হাতে খাবার গ্রহণ করা:
সকল ভালো কাজে ডান হাত ব্যবহার করা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাতের অন্তর্গত। যার প্রমাণ সাহীহ হাদীসসমূহে সুস্পষ্ট। এ কারণেই পানাহারের বেলায় ডান হাতের ব্যবহারের উপর ‘আলিমগণ বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন। তারা কেউ কেউ ডান হাতে পানাহার করাকে ওয়াজিবও বলেছেন। তবে এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, ডান হাতে খাবার খাওয়া সুন্নাত। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ডান হাত দিয়েই খেতেন। বর্ণিত হয়েছে যে,
عن حفصة رضي الله عنها أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يجعل يمينه لطعامه وشرابه وثيابه، ويجعل يساره لما سوى ذلك.
হাফসাহ (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাদ্য গ্রহণ, পানি পান ও পোশাক পরিধানে তাঁর ডান হাত ব্যবহার করতেন। এছাড়া অন্যান্য কাজে তিনি তাঁর বাম হাত ব্যবহার করতেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবসময় ডান হাত দিয়েই খেতেন এবং বিভিন্ন হাদীসে তিনি সাহাবীদেরকেও ডান হাত দিয়ে খেতে আদেশ করেছেন। বর্ণিত হয়েছে যে,
عن ابن عمر رضي الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إذا أكل أحدكم فليأكل بيمينه وإذا شرب فليشرب بيمينه، فإن الشيطان يأكل بشماله ويشرب بشماله.
ইবন ‘উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কেউ যখন খায় সে যেন তার ডান হাত দিয়ে খায়। আর যখন সে পান করে তখনও যেন ডান হাত দিয়ে পান করে, কেননা শয়তান তার বাম হাত দিয়ে খায় ও পান করে।
عن عمر بن أبي سلمة رضي الله عنهما قال: كنت غلاما في حجر رسول الله صلى الله عليه وسلم، وكانت يدي تطيش في الصحفة، فقال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم: يا غلام سم الله تعالى، وكل بيمينك، وكل مما يليك .
‘উমার ইবন আবী সালামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর তত্ত্বাবধানে আমি তখন ছোট ছিলাম। খাবারের বাসনে আমার হাত এদিক সেদিক নড়াচড়া করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন আমাকে বললেন: হে বালক! আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু কর, তোমার ডান হাত দিয়ে খাও এবং তোমার নিকটবর্তী পার্শ্ব থেকে খাও।
তাই আমাদেরও পানাহারের বেলায় ডান হাতই ব্যবহার করা উচিত। তবে এক্ষেত্রে বাম হাতের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। যেমন খাবারের মাঝখানে পানির গ্লাস ইত্যাদি ধরার প্রয়োজন হলে ঐসময় ডান হাত অপরিচ্ছন্ন হয়ে থাকলে বাম হাতের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডান হাতেরও সাপোর্ট থাকা উচিত।
৪.৩. বসে পানাহার করা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সচরাচর বসেই পানাহার করতেন। তাই পানাহার বসে করাই সুন্নাত। তবে বসার ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকলে অথবা বসার উপযুক্ত পরিবেশ না থাকলে দাঁড়িয়েও পানাহার করা যাবে। না বসতে পারার অজুহাতে উপোষ থেকে নিজেকে কষ্ট দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। তাছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও বসে বসে খাবার গ্রহণ করাই অধিকতর স্বাস্থ্য সম্মত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়ানো এবং বসা উভয় অবস্থায়ই পানি পান করেছেন বলে প্রমাণিত। তবে যামযামের পানি তিনি সচরাচর দাঁড়িয়েই পান করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর পান করার নিয়ম সংক্রান্ত কয়েকটি হাদীস নিম্নরূপ:
عن عائشة رضي الله عنها أن النبي صلى الله عليه وسلم شرب قائما وقاعدا، وصلى حافيا ومتنعلا، وانصرف عن يمينه وعن شماله.
‘আয়িশাহ (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে ও বসে পান করেছেন। জুতা পরে ও জুতা খুলে (উভয় অবস্থায়) সালাত পড়েছেন এবং সালাত শেষে ডান ও বাম (দুই দিক) থেকেই উঠে মুসাল্লা হতে ফিরেছেন।
এ হাদীসে তিনটি বিষয় বলা হয়েছে: এক. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসে এবং (ওযরের কারণে কখনো কখনো) দাঁড়িয়ে (দু’ভাবেই) পানি পান করেছেন। দুই. তিনি জুতা পরে এবং জুতা খুলে (দু’ভাবেই) সালাত পড়েছেন। তিন. সালাত শেষে সালাম ফিরিয়ে তিনি ডান এবং বাম (দুই পাশ থেকেই) উঠে চলে যেতেন। কখনো কোন পার্শ্ব নির্দিষ্ট করে নেননি। তিনি তাঁর এসব আমল দ্বারা দুই পন্থারই বৈধতা বর্ণনা করেছেন। তবে কোন্টি উত্তম তা পরে কখনো কখনো বলে দিয়েছেন।
عن عمرو بن شعيب عن أبيه عن جده رضي الله عنه قال: رأيت النبي صلى الله عليه وسلم يشرب قائما أو قاعدا .
‘আমর ইবন শু‘আইব থেকে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাললামকে দাঁড়িয়ে ও বসে (উভয় অবস্থায়) পান করতে দেখেছি।
عن ابن عباس رضي الله عنهما أن النبي صلى الله عليه وسلم شرب من زمزم و هو قائم .
ইবন ‘আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যামযামের পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন।
عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: سقيت النبي صلى الله عليه وسلم من زمزم، فشرب و هو قائم .
ইবন ‘আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যামযামের পানি পান করিয়েছি। তিনি তা দাঁড়ানো অবস্থায় পান করেছেন।
عن النزال بن سيرة قال: أتي علي بكوز من ماء وهو في الرحبة فأخذ منه كفا، فغسل يديه ومضمض واستنشق ومسح وجهه وذراعيه ورأسه ثم شرب منه وهو قائم، ثم قال : هذا وضوء من لم يحدث، هكذا رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم فعل .
আন-নাযাল ইবন সাইরাহ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘আলী (রা.) এর নিকট এক জগ পানি আনা হল। তিনি তখন (কূফার মসজিদ) প্রাঙ্গনে ছিলেন। তিনি তা থেকে এক আঁজলা পানি নিয়ে তার উভয় হাত ধুইলেন, কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন এবং মুখমন্ডল, উভয় হাত ও মাথা মাসেহ করলেন। তারপর দাঁড়িয়ে কিছু পানি পান করলেন এবং বললেন: এটাই ঐ ব্যক্তির উযূ যার উযূ ভঙ্গ হয়নি। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এরূপই করতে দেখেছি।
عن أنس رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم شرب قائما.
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করেছেন।
عن عائشة بنت سعد عن أبيها رضي الله عنهما قالت: رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يشرب قائما .
‘আয়িশাহ বিনত সা’দ (রা.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দাঁড়িয়ে পান করতে দেখেছি।
عن أنس بن مالك رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم دخل على أم سليم وقربة معلقة، فشرب من فم القربة و هو قائم فقامة أم سليم إلى رأس القربة فقطعتها .
আনাস ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মু সুলাইম (রা.)-এর বাড়ীতে গেলেন। সেখানে ছিল একটি ঝোলানো পানির মশক। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়ানো অবস্থায় ঐ মশকের মুখে মুখ লাগিয়ে পানি পান করলেন। উম্মু সুলাইম (রা.) তৎক্ষণাত উঠে গিয়ে মশকের মুখ কেটে নিলেন।
عن أنس رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه نهى أن يشرب الرجل قائما. قال قتادة: فقلنا لأنس: فالأكل؟ قال: ذلك أشر- أو أخبث- . وفي رواية له أن النبي صلى الله عليه وسلم زجر عن الشرب قائما.
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি কাউকে দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। কাতাদাহ বলেন: আমরা তখন আনাসকে জিজ্ঞেস করলাম যে, তাহলে (দাঁড়িয়ে) খাবারের ব্যাপারে কি বিধান হবে? তখন তিনি বলেন: সেটি তো আরো খারাপ বা আরো নিকৃষ্টতর কাজ। আনাস (রা.) এর অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করার ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
عَنِ الْجَارُودِ بن الْمُعَلَّى رضي الله عنه عَنِ النبي صلى اللهُ عليه وسلم أَنَّهُ نهى أَنْ يَشْرَبَ الرَّجُلُ قَائِمًا.
জারূদ ইবন আল-মু’আল্লা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন।
عن أَنَسٍ رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم نهى عن الشُّرْبِ قَائِمًا قال وسألته عن الْأَكْلِ قال فذاك أَخْبَثُ.
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। আমি তাঁকে দাঁড়িয়ে খাবারের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম, তখন তিনি বললেন: সেটি আরো খারাপ।
عن أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: لو يعلم الذي يشرب وهو قائم ما في بطنه لاستقاء .
আবূ হুরাইরাহ (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি ইরশাদ করেছেন: দাঁড়িয়ে পান করা ব্যক্তি যদি জানত সে তার পেটে কী ভরছে, তাহলে সে বমি করে দিতে চাইত।
عن أَنَسٍ رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ نهى أَنْ يَشْرَبَ الرَّجُلُ قَائِمًا قال قَتَادَةُ فَقُلْنَا فَالْأَكْلُ فقال ذَاكَ أَشَرُّ أو أَخْبَثُ .
আনাস (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। কাতাদাহ (রহ.) বলেন: আমরা তখন বললাম, তাহলে খাবার? তিনি বললেন: এটি আরো অনিষ্টকর, আরো জঘন্য।
উপরোক্ত বর্ণনাসমূহ থেকে একথা পরিষ্কার যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো দাঁড়িয়ে এবং কখনো বসে পানি পান করেছেন। অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে দাঁড়িয়ে এবং বসে উভয় অবস্থায় পান করার প্রমাণ পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে উম্মাতের জন্য উভয় অবস্থায় পান করার বৈধতা বুঝা যায়। তবে তিনি যামযামের পানি সচরাচর দাঁড়িয়েই পান করেছেন বলে পাওয়া যায়। আর অন্যান্য পানীয়ের বেলায় দাঁড়ানো এবং বসা উভয় অবস্থার কথাই বিপুল সংখ্যক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। হাদীস বিশেষজ্ঞগণ এসব হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্য ও সমন্বয় সাধন করতে গিয়ে বলেন যে, দাঁড়িয়ে পান করার হাদীসগুলো ইসলামের প্রাথমিক যুগের। এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে পরে। সুতরাং দাঁড়িয়ে পানি পান সংক্রান্ত হাদীসগুলো ‘মানসূখ’ (রহিত) হয়ে গিয়েছে। অথবা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করার বৈধতা বর্ণনার জন্য কোন কোন সময় দাঁড়িয়ে পানি পান করেছেন। তাই এক্ষেত্রে যে নিষেধাজ্ঞা বর্ণনা করা হয়েছে তা শার‘য়ী নির্দেশ বা হারামসূচক নির্দেশনা নয়, বরং পানাহারের উত্তম নিয়ম হিসেবে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে পানি পান করা উত্তম নিয়মনীতির বিপরীত। তাছাড়া যেহেতু যামযামের পানি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়েই পান করতেন, তাই হতে পারে যে যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দাঁড়িয়ে পানি পান করতে দেখেছেন বলে বর্ণনা করেছেন তারা মূলত: ঐ অবস্থাটিরই বর্ণনা দিয়েছেন। সুতরাং এর দ্বারা অন্য সময় দাঁড়িয়ে পানি পান করা প্রমাণিত হয় না। তাছাড়া দাঁড়িয়ে পান করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা সহ যেসব হাদীস এসেছে তাতেও বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে যে, একান্ত বাধ্য না হলে দাঁড়িয়ে পানি পান করা উচিত নয়, বসে পান করাই উত্তম।
‘আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) দাঁড়িয়ে পানি পান করার অনেক ক্ষতি উল্লেখ করেছেন। যার কয়েকটি হলো:
দাঁড়িয়ে পান করার প্রথম ক্ষতি হচ্ছে, এভাবে পানি পান করার মাধ্যমে পূর্ণ তৃপ্তি লাভ করা যায় না, পিপাসার অনুভূতি অবশিষ্ট থেকে যায়। দ্বিতীয় ক্ষতি হচ্ছে, এভাবে পান করলে পানি পাকস্থলীতে গিয়ে জমতে পারে না, বরং পরক্ষণেই নীচের দিকে নেমে যায়। এতে যেসব অঙ্গের পানির প্রয়োজন সে সব অঙ্গ পানি থেকে বঞ্চিত হয়। তৃতীয় ক্ষতি হচ্ছে, দাঁড়িয়ে পানি পান করায় তা অতি দ্রুত পাকস্থলীতে পৌঁছে যায়, যার কারণে পাকস্থলীর উষ্ণতা হ্রাস পাওয়ার আশংকা দেখা দেয়। ফলে এটা স্বাস্থ্যের জন্য বড় রকমের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে হঠাৎ মাঝে মধ্যে এরূপ হয়ে গেলে সেটা ভিন্ন কথা।
৪.৪. যামযাম পান করার বিশেষ ফযীলত ও এ সময় বিশেষ দু‘আ পাঠ করা:
যামযাম হলো মহান আল্লাহর এক বিশেষ নিদর্শন এবং এটি তাঁর এক খাস নি‘আমাত। এটি মহান আল্লাহর রাহমাতের অশেষ ধারা। যামযাম শুধু পানীয়ই নয়, এটি খাদ্যও। যামযাম পান করলে ক্ষুধা নিবারণ হয়, রোগ আরোগ্য হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যামযাম পেট ভরে খেতেন। অন্য কোন খাবার তিনি পেট ভরে খেতেন না। এটি সকল রোগের ঔষধ। এক হাদীসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে,
عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ عَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ .
আবুয যুবাইর (রহ.) জাবির (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: ‘যামযামের পানি (ঐ উদ্দেশ্যের সফলতা) যার জন্য তা পান করা হয়’। অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে,
إنها مباركة وهي طعام طعم وشفاء سقم .
এটি বরকতময়, এটি এক প্রকার খাদ্য এবং আরোগ্য।
ماء زمزم شفاء من كل داء .
যামযাম এর পানি সকল রোগের ঔষধ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাললাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ গুরুত্বের সাথে যামযাম পান করতেন। তিনি সচরাচর যামযাম দাঁড়িয়ে পান করতেন। সাহাবীগণ কেউ কেউ যামযাম পান করার সময় একটি বিশেষ দু‘আ পড়তেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। আর তা হলো-
عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ماء زمزم لما شرب له، فإن شربته تستشفي به شفاك الله، وإن شربته مستعيذا عاذك الله، وإن شربته ليقطع ظمأك قطعه. قال: وكان ابن عباس إذا شرب ماء زمزم قال: اللهم إني أسألك علما نافعا، ورزقا واسعا، وشفاء من كل داء.
ইবন ‘আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘যামযামের পানি (ঐ উদ্দেশ্যে সফলতা) যার জন্য তা পান করা হয়’। অতএব আরোগ্য চেয়ে যদি তুমি তা পান কর তাহলে আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করবেন। অনিষ্ট থেকে মুক্তি চেয়ে যদি তুমি তা পান কর তাহলে আল্লাহ তোমাকে অনিষ্ট থেকে মুক্তি দেবেন। আর যদি তৃষ্ণা নিবারণের জন্য পান কর তাহলে তৃষ্ণা নিবারণ হবে। বর্ণনাকারী বলেন: ইবন ‘আববাস (রা.) যখন যামযাম পান করতেন তখন তিনি বলতেন: হে আল্লাহ ! আমি তোমার কাছে উপকারী ‘ইলম, প্রশস্ত রিয্ক এবং সকল প্রকার রোগ থেকে আরোগ্য কামনা করছি।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ إِنْ شَرِبْتَهُ تَسْتَشْفِى بِهِ شَفَاكَ اللهُ وَإِنْ شَرِبْتَهُ لِشِبَعِكَ أَشْبَعَكَ اللهُ بِهِ وَإِنْ شَرِبْتَهُ لِقَطْعِ ظَمَئِكَ قَطَعَهُ.
ইবন ‘আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: যামযামের পানি ঐ উদ্দেশ্যের সফলতা যার জন্য তা পান করা হয়। অতএব আরোগ্য চেয়ে যদি তুমি তা পান কর তাহলে আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করবেন। ক্ষুধা নিবারণের জন্য যদি তুমি তা পান কর তাহলে এর দ্বারা আল্লাহ তোমার ক্ষুধা নিবারণ করবেন। আর যদি তোমার তৃষ্ণা নিবারণের জন্য তুমি তা পান কর তাহলে তৃষ্ণা নিবারণ হবে।
কা’বা ঘর তাওয়াফের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম পেট ভরে যামযামের পানি পান করতেন। এ থেকে নি:সন্দেহে যামযামের পানির বিশেষ ফযীলত ও মর্যাদা প্রমাণিত হয়। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ এ পানি পান করে এবং পৃথিবীর দেশে দেশে তা প্রেরিত হয়। কিন্তু এতে কোন অপ্রতুলতা কিংবা কমতির লেশ মাত্র দেখা দেয় না। এটি পৃথিবীতে মহান আল্লাহর এক চলমান মু’জিযাহ ও নিদর্শন।
৪.৫. পানি পান করার সময় তিনবার নি:শ্বাস নেয়া তবে পানপাত্রে নি:শ্বাস ত্যাগ না করা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণত: এক নি:শ্বাসে পানি পান করতেন না। এক নি:শ্বাসে পানি পান করার ব্যাপারে বিভিন্ন হাদীসে তিনি নিষেধ করেছেন। পানি পানের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর শ্বাস গ্রহণ সংক্রান্ত কয়েকটি বর্ণনা নিম্নরূপ:
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: لا يتنفس أحدكم في الإناء إذا كان يشرب منه ولكن إذا أراد أن يتنفس فليؤخره عنه ثم يتنفس (هذا حديث صحيح الإسناد ولم يخرجاه) .
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তোমাদের কেউ যখন পান করে সে যেন পানপাত্রে নি:শ্বাস ত্যাগ না করে। তবে সে যদি নি:শ্বাস ছাড়তে চায় তাহলে যেন পাত্রটিকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে নেয় এবং তারপর নি:শ্বাস ছাড়ে। (হাকিম বলেন- এটি বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হাদীস, তবে ইমাম বুখারী এবং ইমাম মুসলিম তা বর্ণনা করেননি)।
عن أبي قتادة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إذا شرب أحدكم فلا يتنفس في الإناء .
আবূ কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: পান করার সময় তোমরা কেউ পাত্রের মধ্যে নি:শ্বাস ফেলবে না।
عن أنس بن مالك رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يتنفس في الإناء ثلاثا إذا شرب، ويقول: هو امرأ وأروى.
আনাস ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাত্র থেকে পানি পান করার সময় তিনবার নি:শ্বাস নিতেন। আর তিনি বলতেন: এভাবে পান করা অধিক আরামদায়ক ও তৃপ্তিকর।
عن ابن عباس رضي الله عنهما أن النبي صلى الله عليه و سلم كان إذا شرب يتنفس مرتين .
ইবন ‘আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কিছু পান করতেন, দুইবার নি:শ্বাস নিতেন।
এ হাদীসটিতে দুইবার শ্বাস গ্রহণ করে পানি পান করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সম্ভবত এভাবে পানি পানের বৈধতা বর্ণনার জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ করেছেন। কেননা তিনি সাধারণত: তিন নি:শ্বাসেই পানি পান করতেন। আর হাদীসটি বর্ণনাকারীর উদ্দেশ্য যদি হয়ে থাকে যে, পানি পান করার মাঝখানে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুইবার শ্বাস গ্রহণ করেছেন তাহলে অন্য সব হাদীসের সাথে এটির কোন বিরোধ নেই। কারণ পানি পান করার মাঝখানে যদি দুইবার শ্বাস গ্রহণ করা হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তিনটি নি:শ্বাসে পুরো পানি পান করা হবে। অন্য হাদীসে এটিকেই তিন নি:শ্বাসে পানি পান বলা হয়েছে। তাছাড়া দুইবার ও তিনবার ইত্যাদি দ্বৈত বর্ণনার দ্বারা এও বুঝা যায় যে, পানির পরিমাণ খুবই কম হয়ে থাকলে তা এক নি:শ্বাসেও পান করতে কোন বাধা নেই।
عن ثمامة بن عبد الله قال:كان أنس بن مالك رضي الله عنه يتنفس في الإناء ثلاثا، و زعم أنس أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يتنفس في الإناء ثلاثا.
সুমামাহ ইবন ‘আবদুল্লাহ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আনাস ইবন মালিক (রা.) পানি পান করার সময় তিনবার নি:শ্বাস নিতেন। তিনি বলতেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন নি:শ্বাসে পানীয় পান করতেন।
عن أنس بن مالك رضي الله عنه أنه رأى رسول الله صلى الله عليه وسلم شرب جرعت ثم قطع ثم سمى ثم جرع ثم قطع ثم سمى ثلاثا حتى فرغ، فلما شرب حمد الله عليه.
আনাস ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি দেখেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ঢোক পানি পান করে থামলেন এবং ‘বিসমিল্লাহ’ বললেন। তারপর এক ঢোক পানি পান করে থামলেন। এভাবে তিনি তিনবার ‘বিসমিল্লাহ’ বললেন এবং পানি পান শেষ করলেন। সবশেষে তিনি পান করে আল্লাহর প্রশংসা করলেন। (অর্থাৎ ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বললেন)।
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال:كان النبي صلى الله عليه وسلم يتنفس في الإناء مرتين أو ثلاثا.
আনাস ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: পাত্রে পানি পান করার সময় নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই অথবা তিনবার শ্বাস নিতেন।
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال:كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذاشرب تنفس ثلاثا.
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: পান করার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনবার শ্বাস গ্রহণ করতেন।
عن ابن مسعود رضي الله عنه قال:كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا شرب تنفس على الإناء ثلاثة أنفاس، يحمد الله على كل نفس و يشكره عند آخرهن.
ইবন মাস‘উদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাত্রে পানি পান করার সময় তিনবার শ্বাস গ্রহণ করতেন। প্রতিবার শ্বাস গ্রহণ করার সময় আল্লাহর প্রশংসা করতেন এবং শেষবারে তাঁর শুকরিয়া আদায় করতেন।
عن ابن عمر رضي الله عنهما قال: ما شرب رسول الله صلى الله عليه وسلم شرابا إلا تنفس فيه ثلاثا وقال: بسم الله والحمد لله.
ইবন ‘উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন নি:শ্বাসে ছাড়া পানি পান করতেন না। তিনি এই সময় (শুরুতে) বিসমিল্লাহ এবং (শেষে) আলহামদুলিল্লাহ পড়তেন।
عن أنس رضي الله عنه قال:كان النبي صلى الله عليه وسلم يتنفس في الشراب ثلاثا ويقول: هو أهنأ وأبرأ وأشفى. قال أنس: فأنا أتنفس في الشراب ثلاثا.
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: পানি পান করার সময় নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনবার শ্বাস গ্রহণ করতেন। তিনি বলতেন: এটা সবচেয়ে আরামদায়ক, স্বাস্থ্যকর ও রোগ নিরাময়কারী। আনাস (রা.) বলেন: আমি সবসময় তিন নি:শ্বাসে পানি পান করে থাকি।
عن يزيد بن الأصم عن خالته ميمونة رضي الله عنها قالت:كنت آتي رسول الله صلى الله عليه وسلم بالماء فيضعه على فيه فيسمي الله ويشكر ثم يرفع فيشكر، يفعل ذلك ثلاثا لا يعب ولا يلهث.
ইয়াযীদ ইবন আল-আসাম (রা.) তার খালা (উম্মুল মু’মিনীন) মাইমূনাহ (রা.) এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি (মাইমূনাহ) বলেছেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য পানি আনতাম। তিনি পানির পাত্র নিয়ে মুখে লাগাবার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলতেন এবং শুকরিয়া আদায় করতেন। এরপর মুখ থেকে পাত্র সরিয়ে নিতেন এবং শুকরিয়া আদায় করতেন। তিনবার এরূপ করতেন। শ্বাস গ্রহণ না করেই একবারে সবটুকু পানি পান করতেন না কিংবা জিহবা বের করেও পান করতেন না।
উপরোক্ত হাদীসসমূহ থেকে বুঝা যায় যে, তিনবার শ্বাস গ্রহণ করে পানি পান করা সুন্নাত। তিনবার শ্বাস গ্রহণ করে পানি পান করার অর্থ হলো- একবার পান করে পাত্র থেকে মুখ সরিয়ে নিয়ে শ্বাস গ্রহণ করা। তারপর আবার পান করা। এভাবে তিনবার পান করাকে তিনশ্বাসে পানি পান করা বলে। অর্থাৎ পানি পানকালে পানপাত্র মুখের সাথে রেখেই পাত্রের মধ্যেই শ্বাস নেয়া উচিত নয়। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর হাদীসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তাছাড়া জিহবা বের করে দিয়ে পশুদের মত করেও তিনি পানি পান করতেন না।
এক নি:শ্বাসে পানি পান করার ব্যাপারে কতক মন্দ ও ক্ষতিকর দিক রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এর ফলে পাকস্থলী ও যকৃতে প্রদাহ হয়। তাছাড়া এক নি:শ্বাসে পানি পান করায় তাৎক্ষণিকভাবেও ততটা তৃপ্তি অনুভূত হয় না এবং ততটা শান্তি পাওয়া যায় না যতটা পাওয়া যায় থেমে থেমে তিনবারে পান করলে। চিকিৎসাবিদদের মতে তীব্র পিপাসার সময় অতি সামান্য পরিমাণ পানি ধীরে ধীরে পান করা উচিত। একবারে বেশি মাত্রায় পান করলে রোগের আশংকা থাকে। বিশেষ করে তা কিডনীর জন্যও ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ কারণেই কিডনীর রোগীদের কারো কারো বেলায় অভিজ্ঞ ডাক্তার সারাদিনে রোগী কতটুকু পানি পান করবে তা নির্ধারণ করে দেন। এর চেয়ে কম করাটা যেমনি তার জন্য ক্ষতিকর, বেশি করাটাও তেমনি ক্ষতিকর।
৪.৬. পানাহারকালে সালাম দেয়ার বিধান:
আমাদের সমাজে অনেককে দেখা যায় যে, আহাররত ব্যক্তির পাশে এসে বলে যে, ‘আপনি খাচ্ছিলেন তো- তাই সালাম দিলাম না’। আবার কেউ কেউ সালাম দিয়ে ব্যক্তির কাছে এসে যখন দেখে যে, তিনি খাচ্ছিলেন তখন অনুশোচনা করে বলতে থাকে যে, আপনি যে খাচ্ছিলেন তা আমি বুঝতে পারিনি। কখনো বা খাবার গ্রহণকারী ব্যক্তিকেই এভাবে কৈফিয়ত তলব করতে দেখা যায় যে, আমি খাচ্ছিলাম এ অবস্থায় আপনি কেন আমাকে সালাম দিলেন ? ইত্যাদি। তাদের দৃষ্টিতে খাবারের সময় সালাম দেয়া নিষেধ। মূলত তারা খাবারের সময় সালাম দিতে বারণ করেন সম্ভবত এই কারণে যে, তাদের মতে খাবার সালাতের মতই একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘ইবাদাত। তাই সালাতে যেমন কাউকে সালাম দেয়া যায় না এবং কারো সালামের জবাবও দেয়া যায় না, তদ্রুপ খাবারের সময়ও তা করা যাবে না। আসলে খাবার গ্রহণ সালাতের মত এমন কোন ‘ইবাদাত নয় যেখানে কোন প্রকার কথাই বলা চলবে না।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ইসলামের মৌলিক ‘ইবাদাতগুলোর মধ্যে একমাত্র সালাতই হলো এমন ‘ইবাদাত যার মধ্যে বাইরের কারো সাথে কোন প্রকার কথাবার্তা বলা চলে না। কিন্তু আমাদের সমাজের অনেকে বাড়াবাড়ি বশত: খাবারকে সালাতের মত ‘ইবাদাত মনে করে সে সময় সালাম দিতে বারণ করে থাকেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর হাদীসে কা‘বা ঘরের চারিপাশে তাওয়াফকে সালাতের সাথে তুলনা করেও আবার এই পার্থক্যটি দেখানো হয়েছে যে, সালাতে কথা বার্তা বলা যায় না। কিন্তু তাওয়াফে কথা বার্তা বলা যাবে। বর্ণিত হয়েছে যে,
عن ابن عباس رضي الله عنهما عن النبي صلى الله عليه وسلم: الطواف حول البيت مثل الصلاة إلا أنكم تتكلمون فيه. فمن تكلم فيه فلا يتكلمن إلا بخير.
ইবন ‘আববাস (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, বাইতুল্লাহর চারপাশে তাওয়াফ করা সালাতেরই মত। অবশ্য তোমরা তাতে কথা বলতে পার। অতএব, তাওয়াফে কেউ যখন কথা বলে, তখন সে যেন অবশ্যই ভাল কথাই বলে। অন্য বর্ণনায় এসেছে-
عن طاوس قال: قال عبد الله بن عمر رضي الله عنهما: أقلوا الكلام في الطواف فإنما أنةم في الصلاة.
তাউস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘উমার (রা.) বলেছেন: তাওয়াফরত অবস্থায় তোমরা কম কথা বলবে। কেননা তোমরা তখন (যেন) সালাতের মধ্যেই রয়েছ।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:الطَّوَافُ بِالْبَيْتِ صَلاةٌ، وَلَكِنَّ اللهَ تَعَالَى أَحَلَّ فِيهِ الْمَنْطِقَ، فَمَنْ نَطَقَ فَلا يَنْطِقْ إِلا بِخَيْرٍ.
ইবন ‘আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: বাইতুল্লাহর তাওয়াফ সালাতেরই মত। তবে আল্লাহ তাতে কথা বলা হালাল রেখেছেন। অতএব, কেউ যদি (তাতে) কথা বলে তাহলে অবশ্যই যেন ভাল কথা বলে।
সালাতে যেমন ওযূ শর্ত, তাওয়াফেও তেমনি ওযূ অপরিহার্য। সালাতে যেমন কা‘বা ঘরের দিকে মুখ ফিরাতে হয়, তাওয়াফেও তেমনি কা‘বা ঘরকে কেন্দ্র করে ঘুরতে হয়। অর্থাৎ এদিক থেকে সালাতের সাথে তাওয়াফের মিল থাকলেও তাওয়াফে রুকূ’ সিজদাহ নেই এবং কোরআন তিলাওয়াত করাও সেখানে ফরয নয়। আর সালাতে কোন প্রকার কথা বলাও যায় না এবং বাইরের কারো কথার জবাবও দেয়া যায় না। কিন্তু তাওয়াফে কথা বলাও যায় এবং কথার জবাবও দেয়া যায়। সুতরাং সালাম দেয়া বা কথা বলার ক্ষেত্রে যদি কোন নিষেধাজ্ঞা থাকতো তাহলে সেটা তাওয়াফের বেলায় থাকাটাই ছিল অধিকতর যুক্তিযুক্ত, পানাহারের বেলায় নয়। তবে মুখে খাবার বা পানীয় থাকা অবস্থায় সালাম না দেয়াই উচিত।
৪.৭. পানাহারকালে কথা বলার বিধান:
পানাহারকালে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা নিষেধ নয়। খাবারগ্রহণকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে কথা বলেছেন বলেও প্রমাণ পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম পানাহারকালে কথা বলতে নিষেধ করেননি। তবে হতে পারে যে, তিনি মুখে খাবার নিয়ে কথা বলতে বারণ করেছেন। কারণ এটি দৃষ্টিকটু এবং অরুচিকর। তাছাড়া এ অবস্থায় কথা বললে অনেক সময় খাবার গলায় আটকিয়ে বিপদ ঘটারও আশংকা রয়েছে। তাই প্রয়োজন সাপেক্ষে খাবার গ্রহণকালেও টুক টাক কথা বার্তা বলা যাবে। যেমন- সামষ্টিকভাবে খাবার গ্রহণের সময় পরস্পরকে খাবার এগিয়ে দেয়া, অপরের কাছে কোন কিছু চাওয়া কিংবা কাউকে বিশেষ কোন খাবার এগিয়ে দিতে বলায় দোষের কিছু নেই। একবার ক্ষুধার্ত অবস্থায় কয়েক ধরনের খেজুর খেতে পাওয়ায় আনন্দের আতিশায্যে এবং পরকালে জবাবদিহীতার অনুভূতিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর চোখ থেকে অশ্রু গড়াতে দেখে একজন সাহাবী তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন যে, খাবার পেয়ে যাওয়ার পর এখন আপনি কাঁদছেন কেন ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন (আশ্চর্যজনক ভঙ্গিতে তিন ধরনের খেজুরের নাম উচ্চারণ করে) বলেছিলেন ‘তামারুন, ওয়া বুসারুন ওয়া রুতাবুন !!! নি:সন্দেহে এ হলো সেই নি‘আমাত যা সম্পর্কে তোমরা কিয়ামাতের দিন জিজ্ঞাসিত হবে’। অপর বর্ণনায় এসেছে যে,
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يسقى أصحابه فقالوا: يا رسول الله ! لو شربت؟ فقال: ساقي القوم آخرهم.
আনাস ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার তাঁর সাহাবীদেরকে কিছু পান করাচ্ছিলেন। সাহাবীগণ বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি পান করুন। তিনি বললেন: কোন দলকে যিনি পান করান তিনি সবশেষে পান করেন।
عَنِ بن عَبَّاسٍ رضي الله عنهما قال: حَدَّثَتْنِي أُمُّ الْفَضْلِ رضي الله عنها أَنّ النبي صلى اللهُ عليه وسلم أُتِيَ بِلَبَنٍ بِعَرَفَةَ فَشَرِبَ وهو يَخْطُبُ.
ইবন ‘আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমাকে উম্মুল ফাদল (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নিকট ‘আরাফায় দুধ আনা হলো। অত:পর খুতবা দানরত অবস্থায় তিনি তা পান করলেন।
উপরোক্ত বর্ণনাগুলো থেকে বুঝা যায় যে, আহাররত অবস্থায় এই কথাবার্তাগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীদের মাঝে সংঘটিত হচ্ছিল। কিংবা কথাবার্তার মাঝেই তাঁরা পানাহার চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আরেক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
عن جَابِرِ بن عبد اللهِ الأَنْصَارِيِّ رضي الله عنه قال: جَاءَنَا رسول اللهِ صلى اللهُ عليه وسلم وأبو بَكْرٍ وَعُمَرُ فَأَطْعَمْنَاهُمْ رُطَبًا وَسَقَيْنَاهُمْ مِنَ الْمَاءِ . فقال رسول اللهِ صلى اللهُ عليه وسلم: هذا مِنَ النَّعِيمِ الذي تُسْأَلُونَ عنه يوم الْقِيَامَةِ .
জাবির ইবন ‘আব্দুল্লাহ আল-আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: (একদা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আবূ বকর এবং ‘উমার (রা.) আমাদের বাড়িতে আসলেন। আমরা তাঁদেরকে খেজুর খাওয়ালাম এবং পানি পান করালাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: এ হলো সেই নি‘আমাত যা সম্পর্কে কিয়ামাতের দিন তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে।
বিশেষ কোন খাবার অথবা আল্লাহর যে কোন ধরনের নি‘আমাত প্রাপ্তির সুবাদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনিভাবে তাঁর সাহাবীদেরকে মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আহবান জানাতেন। তাঁর অফুরন্ত নি‘আমাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন এবং যারা এ নি‘আমাত থেকে বঞ্চিত ছিলেন তাদের কথাও স্মরণ করাতেন। তাই খাবার গ্রহণকালীন কথা বলতে কিংবা শুনতে কোন নিষেধ নেই। একে সালাত অথবা তাওয়াফ কোনটির সাথেই তুলনা করার কোন সুযোগ নেই। তবে এটা ঠিক যে, খাবারের সময় এমন প্রচন্ড বাক বিতন্ডায় লিপ্ত হয়ে যাওয়া উচিত নয়, যার মাধ্যমে খাবারের আদাব ভঙ্গ হয়। তথা আল্লাহর নি‘আমাতের কথা স্মরণেই না থাকে এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কথাও ভুলে যেতে হয়। তাই খাওয়ার সময় প্রয়োজন অনুসারে এবং সুযোগমত উত্তম কথা বলতে কোন দোষ নেই। খাওয়ার সময়ও নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাথীদেরকে উপদেশ দিয়েছেন এবং তাদেরকে খাওয়ার পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। আমাদের নেককার পূর্বপুরুষগণ খাওয়ার সময় ভাল কথা বলেছেন এবং খাওয়ার সুন্নাত পদ্ধতি আলোচনা করেছেন।
৫. পানাহারের বিশেষ নীতিমালা:
পানাহারের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রদর্শিত উপরোক্ত সাধারণ নীতিমালার বাইরে আরো কিছু বিশেষ নীতিমালা রয়েছে যেগুলো মেনে চলার ব্যাপারে আমাদের প্রত্যেকেরই বিশেষভাবে যত্নবান হওয়া উচিত। মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে, শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ উম্মাত হিসেবে এবং রুচিশীল, সৌহার্দপূর্ণ ও উন্নততর সামাজিক জীবন যাপনের লক্ষ্যে এ নীতিমালাগুলো আমাদেরকে বিশেষভাবে সহযোগিতা করবে।
৫.১. পানাহারকালে বিনয় প্রকাশ:
পানাহার হলো সরাসরি মহান আল্লাহর নি‘আমাত গ্রহণ। তাই পানাহারের সময় বিনয় ও নম্রতার দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। ঘরের মেঝেতে বসার মাধ্যমে অধিকতর বিনয় প্রকাশ পায়। তবে পাটি, পিঁড়ি কিংবা অন্য কোন উঁচু আসনে বসে আহার করাতেও দোষের কিছু নেই, যদি তাতে বিনয়ী ভাব অবশিষ্ট থাকে। অবশ্য যেখানেই বসা হোক না কেন বাস্তব ওজর ছাড়া হেলান দিয়ে আহার করা অহংকারের নিদর্শন এবং শিষ্টাচারের পরিপন্থী। হেলান দিয়ে আহার করলে ক্ষুধার পরিমাণের চেয়ে বেশি আহার করা হয়, খাবারের প্রতি অনীহা প্রকাশ পায় এবং সর্বোপরি এটি অহংকারের বহি:প্রকাশ ও বিনয়ের পরিপন্থী। এ কারণেই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো হেলান দিয়ে আহার করতেন না। এবং তিনি আমাদেরকে সকল বিষয়ে কেবল তাঁকেই অনুসরণ করতে বলেছেন। ‘আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন:
الاةكاء على ثلاثة أنواع ، أحدها : الاةكاء على الجنب ، والثاني : الةربع ، والثالث : الاةكاء على إحدى يديه وأكله بالأخرى ، والثلاث مذمومة .
আহারের সময় হেলান দেয়া তিন ধরনের হতে পারে। এক. শরীরের (ডান অথবা বাম) কোন এক পার্শ (বাহু) দিয়ে কোন কিছুর উপর হেলান দিয়ে আহার করা। দুই. চারজানু অবস্থায় বসে আহার করা। এবং তিন. এক হাতে যমীনের উপর ভর করে অপর হাত দিয়ে খাওয়া। খাবার গ্রহণের এ তিনটি পদ্ধতিই নিন্দনীয়।
এছাড়াও ‘আলিমগণ হেলান দেয়ার সম্ভাব্য চারটি নিয়মের সবগুলো নিয়মকেই নিষেধের আওতাভূক্ত বলেছেন। যথা (১) ডান অথবা বাম বাহুকে বালিশ অথবা অন্য কিছুর উপর হেলান দিয়ে আহার করা। (২) হাতের দ্বারা যমীনের উপর ভর দিয়ে আহার করা। (৩) চারজানু অবস্থায় বসে আহার করা। এবং (৪) কোমরকে দেয়াল অথবা বালিশের উপর হেলান দিয়ে আহার করা। এই চারটি নিয়মের সবগুলোই বিভিন্ন অবস্থাভেদে হেলান দিয়ে আহার করার অন্তর্ভুক্ত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত বিনীত ও ভদ্র পন্থায় আহার করতেন। তিনি মেঝেতে বসে আহার করতেন এবং কখনো হেলান দিয়ে আহার করতেন না। মেঝেতে বসার যতগুলো পন্থা আছে তার মধ্যে হাঁটু বিছিয়ে তাশাহ্হুদের অধিবেশনের মত করে বসাই হলো সবচেয়ে বিনীত অবস্থা। বর্ণিত হয়েছে যে,
عن عبد اللهِ بن بُسْرٍ رضي الله عنه قال أَهْدَيْتُ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم شَاةً فجثى رسول اللهِ صلى الله عليه وسلم على رُكْبَتَيْهِ يَأْكُلُ فقال أَعْرَابِيٌّ ما هذه الْجِلْسَةُ فقال إِنَّ اللهَ جَعَلَنِي عَبْدًا كَرِيمًا ولم يَجْعَلْنِي جَبَّارًا عَنِيدًا.
‘আব্দুল্লাহ ইবন বুসর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নিকট আমি একটি (ভাজা করা) ভেড়া/বকরী উপহার দিলাম। তিনি দুই হাঁটু বিছিয়ে তা খেতে বসেন। তখন এক বেদুইন তাঁকে প্রশ্ন করল- এটা কি ধরনের বসা? তিনি উত্তরে বলেন: ‘নিশ্চয় আল্লাহ আমাকে সম্মানিত বান্দাহ হিসেবে তৈরী করেছেন, উদ্ধত ও অহংকারী হিসেবে নয়’।
তাছাড়া হেলান দিয়ে থাকার মধ্যে এক ধরনের ঔদ্যত্য প্রকাশ পায় ও অহমিকা বুঝা যায়। তাই খাবার গ্রহণকালে এভাবে থাকা উচিত নয়। আজকাল আমরা ডাইনিং টেবিলের চারপাশে চেয়ার পেতে বসি। এক সঙ্গে অনেকে রকমারী খাবার সামনে নিয়ে বসার এটি একটি সহজতর উপায়। বিশেষ করে কোন কোন অসুস্থ ব্যক্তির জন্য এটি খাবার গ্রহণের আরামপ্রদ ব্যবস্থা। কাজেই বিনীতভাবে ও ভদ্রোচিত পন্থায় এভাবেও খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে। কিন্তু কোন কোন বড় বড় ভোজসভায় টেবিলের চারদিকে ঘুরে ঘুরে চক্কর দিতে দিতে খাওয়ার প্রচলন দেখা যায়। কোন নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া এটি আপত্তিকর। কেননা এটি কাফির-মুশরিক তথা অমুসলিমদের সংস্কৃতি। কাফিরেরা এবং চতুষ্পদ জন্তুরা এভাবেই খেয়ে থাকে। মহান আল্লাহ বলেন:
(إِنَّ اللهَ يُدْخِلُ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا اْلأَنْهَارُ، وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَـتَـمَـتَّـعُوْنَ وَ يَأْكُلُوْنَ كَمَا تَأْكُلُ اْلأَنْعَامُ وَالنَّارُ مَثْوًى لَهُمْ)
‘‘যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নালাসমূহ প্রবাহিত। কিন্তু যারা কুফরী করে, তারা ভোগবিলাসে মগ্ন থাকে এবং চতুষ্পদ জন্তুর মত উদর পূর্তি করে। আর জাহান্নামই হলো তাদের নিবাস’’।
এ আয়াতে কাফিরদের দুনিয়ার ভোগ-বিলাস ও আহার-বিহার পদ্ধতির সমালোচনা করা হয়েছে এবং এটিকে চতুষ্পদ জানোয়ারের জীবনাচার ও আহার-বিহারের সাথে তুলনা করা হয়েছে। আর এমনটি যারা করে তাদের পরিণতি জাহান্নাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। পক্ষান্তরে যারা ঈমানদার ও সৎকর্মশীল তাদের জীবনাচার ও পরিণতিকে এর বিপরীতে দেখানো হয়েছে। সুতরাং দুনিয়ার ভোগ-বিলাস ও আহার-বিহার পদ্ধতিতে মু’মিনদেরকে তাদের স্বাতন্ত্র বজায় রেখে চলতে হবে। এক্ষেত্রে তারা যেন এমন উপায় ও পন্থা অবলম্বন না করে যা কাফিরদের সাথে কিংবা পশুদের সাথে মিলে যায়। উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ‘আল্লামা শাওকানী (রহ) বলেন:
أي يتمتعون بمتاع الدنيا و ينتفعون به كأنهم أنعام ليس لهم همة إلا بطونهم وفروجهم ، ساهون عن العاقبة لاهون بما هم فيه.
অর্থাৎ তারা দুনিয়ার ভোগ-বিলাসের সামগ্রীগুলো উপভোগ করা এবং এর দ্বারা ফায়দা হাসিল করার ক্ষেত্রে নিতান্তই চতুষ্পদ জানোয়ারের মত আচরণ করে থাকে। নিজেদের পেট আর যৌনাঙ্গের চাহিদা মেটানো ছাড়া তাদের যেন আর কোন লক্ষ্যই থাকে না। তারা কোন পরিণতির কথা ভাবে না এবং শুধুই নিজেদের ভোগ বিলাসে মত্ত থাকে। হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:
عن أبي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قال قال رسول اللهِ صلى الله عليه وسلم: يَأْكُلُ الْمُسْلِمُ في معي وَاحِدٍ وَالْكَافِرُ يَأْكُلُ في سَبْعَةِ أَمْعَاءٍ .
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: মুসলিম এক উদরে/পাকস্থলিতে খায়, আর কাফির খায় সাত উদরে/পাকস্থলিতে।
উপরোক্ত আয়াতটির ব্যাখ্যায় হাফিয ইবনু কাসীর (মৃ. ৭৭৪ হি.) লিখেন:
أي في دنياهم يتمتعون بها و يأكلون منها كأكل الأنعام خضما و قضما، وليس لهم همة إلا في ذلك. ولذلك ثبت في الصحيح: المؤمن يأكل في معي واحد، والكافر يأكل في سبعة أمعاء.
তারা (কাফিররা) দুনিয়ার ভোগ বিলাসে মত্ত থাকে এবং চতুষ্পদ জানোয়ারের মত অতিরিক্ত উদরপূর্তি করে ও আওয়াজ করে করে খায়। আর এটিই হয়ে থাকে তাদের একান্ত সাধনা। এ কারণেই সাহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘মু’মিন এক উদরে খায় আর কাফির খায় সাত উদরে’।
হাফিয ইবন কাসীর এখানে ‘খাদম’ এবং ‘কাদম’ শব্দ দু’টি ব্যবহার করেছেন। ‘খাদম’ হলো উপচে পড়া, গড়িয়ে পড়া। আর ‘কাদম’ হলো বিশেষ ধরনের শব্দ। পশুরা যখন খায় তখন তারা কোন সীমারেখা মেনে খায় না। খেতে খেতে পেট ফুলিয়ে ফেলে, মুখের দু’পাশ থেকে খাবার গড়িয়ে পড়তে থাকে এবং খাওয়ার সময় এক ধরনের আওয়াজ করে যা খুবই শ্রুতিকটু। তারা সামনে যা পায় তার সবটুকুই খেয়ে নেয়, তা তার প্রয়োজনের চেয়ে যত বেশিই হোক, আর অন্যের জন্য কিছু অবশিষ্ট থাকুক অথবা নাই থাকুক। কোন কোন প্রাণী খাবারকে কম চিবিয়ে আগে নিজের উদর পূর্তি করে নেয়। পরে সে নিরিবিলি বসে নিজের গচ্ছিত খাবারগুলো পূণরায় মুখে এনে জাবর কাটে। অথচ এক্ষেত্রে ইসলামের শিক্ষা হলো সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। ইসলাম প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খেতে নিষেধ করে। পেট ভর্তি করে খাবার খেতেও নিষেধ করে। আর অন্যের প্রয়োজন ও চাহিদার কথা বিবেচনা না করে নিজেই সবটুকু খেয়ে নেয়াকেও অপছন্দ করে।
৫.২. বড় লুকমায় খাবার মুখে না তোলা:
ইসলাম সর্বাবস্থায় সৌজন্যতা ও শিষ্ঠাচারিতা অবলম্বন করতে উৎসাহিত করে। নিজের জন্য কষ্টকর কোন পন্থা-পদ্ধতি এবং অপরের কাছে দৃষ্টিকটু কোন অবস্থাকে ইসলাম অনুমোদন করে না। তাড়াহুড়া করে বড় বড় লুকমায় খাবার মুখে তোলা যেমনি দৃষ্টিকটু তেমনি অসেŠজন্যমূলক। তাই একজন মুসলিম বিশ্রীভাবে খাবে না। খাওয়ার সময় অদ্ভুত ও বিরক্তিকর আওয়াজ করবে না। এত বড় বড় লুকমা মুখে তুলবে না, যা অন্যদের বিতৃষ্ণা জাগায় এবং তাকে হাস্যকর করে তোলে। তাছাড়া খাবার গ্রহণের পদ্ধতিতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভঙ্গী থাকা চাই। বড় বড় লুকমায় খাবার খেলে অকৃতজ্ঞতার ছাপ এবং জলদি শেষ করে ফেলার মনোবৃত্তি প্রকাশ পায়। অন্যরা পেল কি পেল না, আর কারো জন্য থাকল কি থাকল না- এরূপ কোন ভাবনাই যেন নেই। তাছাড়া বড় লুকমা মুখে নিয়ে গাল ফুলিয়ে ফেললে খাবার চিবাতে কষ্ট হয়, ধীর-স্থিরে নি:শ্বাস ফেলা যায় না এবং দেখতে খুবই খারাপ দেখায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো বড় বড় লুকমা মুখে তুলতেন না। তিনি তিন আঙ্গুল দিয়ে খেতেন। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত কয়েকটি হাদীস হলো:
عن كعب بن مالك عن أبيه رضي الله عنهما قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يأكل بأصابعه الثلاث ويلعقهن.
কা’ব ইবন মালিক (রা.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর তিন আঙ্গুলের সাহায্যে আহার করতেন এবং সেগুলো চাটতেন।
عن أنس رضي الله عنه قال: كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا أكل طعاما لعق أصابعه الثلاث.
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আহার শেষে তাঁর তিনটি আঙ্গুল চাটতেন।
عن كعب بن مالك رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يأكل بثلاث أصابع ، ويلعق يده قبل أن يمسحها.
কা‘ব ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন আঙ্গুলের সাহায্যে আহার করতেন। এবং তাঁর হাতকে মাসেহ/ধৌত করার আগে তা চেটে নিতেন।
এসব হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো বড় লুকমা নিতেন না। তিনি তাঁর হাতের তিনটি আঙ্গুলকে খাবারের কাজে ব্যবহার করতেন। আহারের শিষ্টাচার হলো, ব্যক্তি সহজভাবে ছোট লুকমা গ্রহণ করার জন্য তিন আঙ্গুলে আহার করবে এবং যাতে সমস্ত হাতে খাবার লেগে না যায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। বড় বড় গ্রাস গ্রহণ করা শিষ্টাচারের পরিপন্থী। তাই প্রয়োজন ছাড়া চতুর্থ ও পঞ্চম আঙ্গুল ব্যবহার না করাই ভাল। অবশ্য প্রয়োজন হলে ঝোলযুক্ত খাবার খেতে পাঁচ আঙ্গুল ব্যবহার করতে কোন দোষ নেই। এমতাবস্থায় অবশ্যই তা সুন্নাত বিরোধী নয়।
ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন আঙ্গুল দিয়ে খেতেন এবং খাবার শেষে আঙ্গুলগুলো চেটে নিতেন। তিনি এক আঙ্গুলেও খেতেন না, আবার পাঁচ আঙ্গুলেও খেতেন না। এক আঙ্গুল দিয়ে খেলে অহংকার প্রকাশ পায়। আর পাঁচ আঙ্গুল দিয়ে খেলে লোভী ও অভদ্র মনে হয়।
তবে তিন আঙ্গুল দিয়ে খাবারের বিষয়টি শুকনো দানা জাতীয় খাবারের বেলায় এবং সামষ্টিকভাবে একই বাসন থেকে খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। কিন্তু একা একা আলাদা বাসনে খাওয়ার সময় পাঁচ আঙ্গুলে খেতে দোষের কিছু নেই। এমনকি একসাথে খাওয়ার সময়ও যেসব খাবার তিন আঙ্গুলে হাতে তুলতে সমস্যা হয় সেখানে অবশ্যই পাঁচ আঙ্গুল ব্যবহার করা যাবে। তবে কোন অবস্থাতেই এত বড় লুকমা মুখে দেয়া উচিত নয় যার ফলে খাবার চিবাতে সমস্যা হয় এবং দেখতে খারাপ দেখায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শুকনা খাবার খেতেন তাই তিনি সচরাচর তিন আঙ্গুলে খাবার মুখে তুলতেন। তবে তরকারী দিয়ে খাবার খাওয়ার সময় তিনি তিনের অধিক আঙ্গুল ব্যবহার করতেন।
পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে এক খবরে বলা হয়েছে যে, ক্যান্টারবুরি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষায় গোগ্রাসে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সমীক্ষায় জানানো হয় যে, ধীরে ধীরে এবং ছোট ছোট কামড়ে খাবার গ্রহণ স্বাস্থ্যকর বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতে করে ওজন হ্রাসেও বেশ সুফল পাওয়া যায় বলে জানা গেছে। গবেষকেরা দেখতে পান, বড় বড় কামড়ে খাবার খেলে সেটা পাকস্থলিতে গিয়ে ভাঙতে সময় লাগে। ফলে খাবার থেকে শক্তি সৃষ্টিতে সময় লাগে। এতে করে মস্তিষ্ক অব্যাহতভাবে ক্ষুধা অনুভবের বার্তা পাঠাতে থাকে। ফলে খাওয়াটা অনেক সময়ই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। এটা আরো অনেক সমস্যার সাথে ওজন বাড়াতেও সহায়তা করে।
৫.৩. খাওয়া নিয়ে মিথ্যাচার না করা:
মিথ্যা বলা মহাপাপ। মুনাফিকের আলামতের মধ্যে প্রথমটিই হলো মিথ্যা বলা। মিথ্যা যত মামুলি ব্যাপারেই হোক এটি আরো মিথ্যার জন্ম দেয়। কেননা এই মিথ্যাটিকে সঠিক বলে প্রমাণিত করতে গিয়ে আরো অনেক মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। এ কারণেই এটিকে (أم المعاصي) ‘উম্মুল মা‘আসী’ বা সকল পাপের জননী বলা হয়। তাই যে কোন বিষয়ে আমাদেরকে মিথ্যাচার পরিহার করতে হবে। কোন নতুন জায়গায় গেলে অথবা অসময়ে কারো বাসায় গেলে খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে মানুষ সাধারণত সংকোচ প্রকাশ করে থাকে। অপর পক্ষের কষ্ট হবে ভেবে সে খেয়ে এসেছে বা তার এখন ক্ষুধা নেই- এ জাতীয় কথা বলে থাকে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ পরিস্থিতিতেও মিথ্যা বলতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ অপর মুসলিম ভাই আপ্যায়ন করতে চাইলে মিথ্যা কথা বলে তাকে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর এক নববধুকে আপ্যায়ন করতে চাইলে এমনি এক ঘটনার উদ্ভব হয়। বর্ণিত হয়েছে যে,
عن أسماء بنت عميس رضي الله عنها قالت: زففنا إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم بعض نسائه، فلما دخلنا عليه أخرج عسًا من لبن، فشرب منه، ثم ناوله امرأته، فقالت: لا أشتهيه. فقال: لا تجمعي جوعاً وكذباً.
আসমা বিনতে ‘উমাইস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর কাছে তাঁর এক নববধুকে নিয়ে গেলাম। আমরা যখন তাঁর কক্ষে পৌঁছলাম, তখন তিনি বড় এক পেয়ালা দুধ নিয়ে এলেন। প্রথমে তা থেকে নিজে কিছুটা পান করলেন। তারপর তাঁর নববধুকে দিলেন। নববধু বললো: আমার খাওয়ার চাহিদা নেই। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ক্ষুধা ও মিথ্যাকে একত্রিত করো না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার ক্ষুধা লেগেছে। কিন্তু লজ্জা ও সংকোচ বশত: সে সত্য লুকিয়ে বলছে যে, এখন তার চাহিদা নেই। তাই তিনি তাকে ক্ষুধা নিয়ে এরূপ মিথ্যা সংকোচ করতে নিষেধ করলেন। তাই পানাহারের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও লৌকিকতার কারণে মিথ্যা বলে কারো অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয়।
৫.৪. খাবারে বাম হাতের সহযোগিতা নেয়া:
সাধারণভাবে খাবারের জন্য ডান হাতই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাছাড়া কাউকে কোন কিছু দেয়া, কারো থেকে কিছু নেয়া, কারো সাথে মুসাফাহা করা ইত্যাদি সকল ভাল কাজে ডান হাতই ব্যবহার করতে হয়। আর প্রশ্রাব-পায়খানার পর পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে সচরাচর বাম হাত ব্যবহার করতে হয়। তাই বাম হাতকে খাবারের জন্য ব্যবহার করা হয় না। তবে খাবারেও বাম হাতের সহযোগিতা নিতে দোষের কিছু নেই। অন্যান্য কাজেও ডান হাতের সাথে বাম হাতকে ব্যবহার করতে কোন দোষ নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাবারের সময় বাম হাতের সহযোগিতা নিয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন-
عن أنس رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يأخذ الرطب بيمينه والبطيخ بيساره فيأكل الرطب بالبطيخ، وكان أحب الفاكهة إليه.
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ডান হাতে তাজা খেজুর এবং বাম হাতে তরমুজ নিতেন। তারপর তিনি তাজা খেজুরের সাথে একত্রে তরমুজ খেতেন। তরমুজ ছিল তাঁর নিকট অপেক্ষাকৃত পছন্দনীয় ফল।
‘আবদুল্লাহ ইবন জা’ফর (রা.) বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ডান হাতে শসা এবং বাম হাতে খেজুর খেতে দেখেছি। একবার শসা খাচ্ছেন আরেকবার খেজুর খাচ্ছেন।
এ হাদীস থেকে খাবারের সময় বাম হাতের সহযোগিতা নেয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। অর্থাৎ প্রয়োজনবোধে আহারের সময় বাম হাতের সাহায্য গ্রহণ করা যেতে পারে। কোন কোন ‘আলিমের মতে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর বাম হাতে তরমুজ থাকলেও তিনি তা মুখে দেয়ার সময় ডান হাতে নিয়ে নিতেন। কেননা অন্য হাদীসে তিনি বাম হাতে আহার করতে নিষেধ করেছেন। তবে হাদীসটির ব্যাখ্যা এও হতে পারে যে, প্রয়োজনবোধে আহারের সময় বাম হাতের সাহায্য গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন- খাবারের মাঝখানে পানি পান করা অথবা অন্য কোন খাবার বাটি থেকে উঠিয়ে নেয়ার সময় বা কাউকে কোন কিছু দেয়ার সময় ডান হাত অপরিচ্ছন্ন থাকে। এ অবস্থায় প্রত্যেকেই নিজ নিজ ডান হাত ব্যবহার করতে থাকলে গ্লাস, বাটি, চামচ ইত্যাদি নোংরা হয়ে যাবে এবং এক অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হবে। তাই তখন ডান হাতে কাজটি করা একদিকে যেমন অপরিচ্ছন্নতা অপরদিকে অরুচিকরও। এমতাবস্থায় ডান হাতের সাপোর্ট রেখে বাম হাত দিয়ে অপরকে দিতে বা নিজে নিতে কোন দোষ নেই। তবে খাবার গ্রহণকালে অবশ্যই মূল ভূমিকা থাকবে ডান হাতের।
৫.৫. নিজের নিকটবর্তী ডান পাশ থেকে খাবার গ্রহণ করা:
খাবার গ্রহণের সময় বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা, নিজের ডান হাত দিয়ে খাওয়া এবং নিকটবর্তী পার্শ্ব থেকে খাওয়ার কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন হাদীসে সাহাবীদেরকে নসীহত করেছেন। তাঁর এসকল নির্দেশনা একাকী খাওয়ার সময় যেমন প্রযোজ্য, সামষ্টিকভাবে খাওয়ার সময়ও তেমনি প্রযোজ্য। তিনি নিজে যখন খেতেন তখন নিজের নিকটস্থ পার্শ্ব থেকেই খেতেন। সাহাবীদের প্রতিও তাঁর এই নির্দেশনাই ছিল। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে,
عن وَهْبِ بن كَيْسَانَ أبي نُعَيْمٍ رضي الله عنه قال أتى رسول اللهِ صلى الله عليه وسلم بِطَعَامٍ وَمَعَهُ رَبِيبُهُ عُمَرُ بن أبي سَلَمَةَ فقال: سَمِّ اللهَ وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ.
আবূ নু‘আইম ওয়াহাব ইবন কাইসান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নিকট খাবার আনা হল। তাঁর সঙ্গে তাঁর সৎপুত্র ‘উমার ইবন আবী সালামাহ ছিল। তিনি বললেন: বিসমিল্লাহ বল, আর তোমার নিজের নিকটবর্তী পার্শ্ব থেকে খাও।
عن عمر بن أبي سلمة رضي الله عنهما قال: كنت غلاما في حجر رسول الله صلى الله عليه وسلم، وكانت يدي تطيش في الصحفة، فقال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم: يا غلام سم الله تعالى، وكل بيمينك، وكل مما يليك .
‘উমার ইবন আবী সালামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর তত্ত্বাবআনে আমি তখন ছোট ছিলাম। খাবারের বাসনে আমার হাত এদিক সেদিক নড়াচড়া করছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন আমাকে বললেন: হে বালক! আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু কর, তোমার ডান হাত দিয়ে খাও এবং তোমার নিকটবর্তী পার্শ্ব থেকে খাও।
এ হাদীসে নিকটবর্তী পার্শ্ব থেকে এবং ডান হাতে খেতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যক্তির ডানহাতের দিক থেকে তার সবচেয়ে নিকটবর্তী জায়গা থেকে সে খাবে। বড় খাঞ্চা/দস্তরখানের চারিপাশে যদি লোক বসা থাকে তাহলে প্রত্যেকেই নিজ নিজ নিকটবর্তী ডান পার্শ্ব থেকে খাবে। তাহলেই সুশৃংখলভাবে সকলের খাওয়া হবে। অন্যথায় একজনের হাতের সঙ্গে আরেকজনের হাত ক্রস হবে। যা খুবই দৃষ্টিকটূ ও আপত্তিকর। এ ব্যাপারেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা বিদ্যমান।
عن بن عُمَرَ رضي الله عنهما قال قال رسول اللهِ صلى الله عليه وسلم: إذا وُضِعَتْ الْمَائِدَةُ فَلْيَأْكُلْ مِمَّا يَلِيهِ ولا يَتَنَاوَلْ من بَيْنِ يَدَيْ جَلِيسِهِ.
ইবন ‘উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: যখন খাবার পরিবেশন করা হয়, তখন (প্রত্যেকেই) যেন তার নিকটবর্তী পার্শ্ব থেকে খায়। তার পার্শ্ববর্তী জনের সামনে থেকে যেন না খায়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণত নিজের নিকটবর্তী খাদ্য থেকে গ্রহণ করতেন। তবে তাঁর সামনে খেজুর পেশ করা হলে তিনি তা থেকে বেছে বেছে খেতেন। ‘আয়িশাহ (রা.) বলেন:
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يأكل الطعام مما يليه حتى إذا جاء التمر جالت يده .
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নিকটের খাদ্য থেকে গ্রহণ করতেন। কিন্তু তাঁর সামনে খেজুর আসলে তাঁর হাত এদিক সেদিক ঘুরত (যত্রতত্র থেকে বেছে বেছে খেতেন)।
অতএব একাকী কিংবা সামষ্টিকভাবে খাওয়ার সময় প্রত্যেককেই নিজ নিজ ডান পার্শ্ব থেকে খেতে হবে। অন্যথায় এটি হবে সুন্নাতের খেলাপ এবং দৃষ্টিকটু। তবে খেজুর অথবা অন্য কোন দানাজাতীয় শুকনা খাবার হলে তা শুধুই নিজের ডান পাশ থেকে খাওয়া জরুরী নয়। প্রয়োজনে এদিক সেদিক থেকে বেছে বেছে খাওয়া যাবে। কারণ এগুলো বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।
৫.৬. সামষ্টিকভাবে খাওয়ার সময় খাবারের পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখা:
সামষ্টিকভাবে খাওয়ার সময় শুধু নিজের পার্শ্ববর্তী ডান পাশ থেকে খাওয়াই যথেষ্ট নয়। বরং খাদ্যের পরিমাণ এবং সকলে তা পাচ্ছে কিনা ইত্যাদি বিষয়গুলোও খেয়াল রাখা উচিত। এমন যেন না হয় যে, আমার পার্শ্বে সব ভাল খাবারগুলো আছে বিধায় অতিসত্ত্বর তা গ্রাস করে নিলাম। অথচ অন্য পার্শ্বে যারা বসেছে তারা তা মোটেও পায়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। তিনি ছিলেন ইনসাফের ধারক ও বাহক। সাহাবীদের নিয়ে খেতে বসলে তিনি নিজে তাদের দিকে খাবার এগিয়ে দিতেন। অর্থাৎ খাবারে সকলেই যেন ঠিকমত ভাগ পায় তা তিনি খেয়াল করতেন। ইচ্ছাকৃতভাবে সকলের চেয়ে বেশি অংশ নিজে নিয়ে নিতেন না। এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে,
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: كنا مع النبي صلى الله عليه وسلم وكان ينبذ إلينا بالةمر ةمر العجوة ، وكنا غراثاً ، وكان إذا قرن قال: إني قد قرنت فاقرنوا .
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি আমাদের দিকে ‘আজওয়া খেজুর (এগিয়ে দিচ্ছিলেন) নিক্ষেপ করছিলেন এবং আমরা তখন অভুক্ত ছিলাম। যখন তিনি দুই দুইটা খেজুর একত্রে নিতেন, তখন আমাদেরকেও বলে দিতেন- ‘আমি দুটো করে খেজুর একত্রে নিয়েছি, তোমরাও দুটো করে নাও’।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের জন্য অনুকরণীয় উত্তম আদর্শ। যখন অন্য কোন খাবার ছিল না, খেজুরই ছিল তাদের প্রধান খাদ্য, তখন তিনি তাঁর অভুক্ত সাথীদেরকে নিজে খেজুর এগিয়ে দিতেন। তাদের সাথে তিনিও খেতেন। কোন কারণে নিজের হাতে একসাথে দুটো খেজুর উঠে গেলে তিনি তা অন্যদেরকে জানিয়ে দিতেন এবং তাদেরকেও দুটো নিতে বলতেন। এভাবে সাম্য ও সহানুভূতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তিনি। এমনিভাবে তাঁর সাহাবীগণও (রা.) একসাথে কোন কিছু খাওয়ার সময় নিজে বেশি নিয়ে ফেললে তা অপরজনকে জানিয়ে দিতেন। সুতরাং অসুস্থতা কিংবা বিশেষ কোন কারণে স্পেশাল কোন আইটেম খাওয়ার সময় মাজলিসের অন্যদেরকে তা জানিয়ে দেয়া উচিত। তাছাড়া খাবারের সময় কোন আইটেম পরিমাণে কম আছে বলে জানা থাকলেও তা সবাই মিলে শেয়ার করা উচিত। এ নিয়ে কাউকে কোন প্রকার বকা-ঝকা কিংবা ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হতে দেয়া উচিত নয়। এমতাবস্থায় বিশেষ কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি না করে সকলকে মিলে মিশে খাবার গ্রহণের দিকে উদ্বুদ্ধ করাই ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সুন্নাত। মিলে মিশে খাবার গ্রহণের ব্যাপারে উৎসাহিত করে তিনি বলেন:
عن سالم بن عبد الله بن عمر عن أبيه عن جده عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إن طعام الواحد يكفي الاثنين ، وإن طعام الاثنين يكفي الثلاثة والأربعة ، وإن طعام الأربعة يكفي الخمسة والسةة .
সালিম ইবন ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘উমার তাঁর পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তাঁর দাদা ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: ‘নিশ্চয়ই একজনের খাবার দুইজনের জন্য যথেষ্ট, দুইজনের খাবার তিনজন এবং চারজনের জন্য যথেষ্ট। আর চারজনের খাবার পাঁচজন এবং ছয়জনের জন্য যথেষ্ট’।
عن جابر بن عبد الله رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: طعام الواحد يكفي الاثنين ، وطعام الاثنين يكفي الأربعة وطعام الأربعة يكفي الثمانية .
জাবির ইবন ‘আবদিল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘একজনের খাবার দুইজনের জন্য যথেষ্ট, দুইজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট এবং চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট’।
অতএব যখন যে খাবার উপস্থিত থাকবে তাতেই অন্য মুসলিম ভাইকে অনায়াসে শামিল করানো উচিত। খাবার পরিমাণে কম হওয়ার অজুহাতে তাকে বঞ্চিত না করে বরং যা আছে তাই মিলে মিশে খাওয়া উত্তম। এতে পরস্পরের হৃদ্যতা বাড়বে ও আন্তরিক সম্পর্ক তৈরি হবে।
৫.৭. মাজলিসের মুরববীকে দিয়ে খাবার শুরু করা:
সামষ্টিকভাবে খাবার গ্রহণের সময় তাড়াহুড়া করবে না এবং সকলেই যার যার মত খাওয়া শুরু করে দিবে না। ইসলাম এ ব্যাপারেও সুশৃংখল পন্থা বাতলে দিয়েছে। মাজলিসের যিনি মুরববী তাকে দিয়েই খাবার উদ্বোধন করতে হবে। তিনি বিসমিল্লাহ বলে শুরু করলেই অন্যরা খেতে শুরু করবে। অর্থাৎ সকলের কাছে খাবার পৌঁছার পর তিনি অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত সকলেই অপেক্ষা করবে। হাদীসের নিম্নোক্ত বর্ণনাগুলো থেকে আমরা এ ব্যাপারে নির্দেশনা পাই।
عن جابر رضي الله عنه قال : كنا إذا أكلنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم طعاما لانبدأ حتى يكون رسول الله صلى الله عليه وسلم يبدأ .
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সাথে একত্রে আহার করলে তিনি আহার শুরু না করা পর্যন্ত আমরা শুরু করতাম না।
عن حذيفة بن اليمان رضي الله عنه قال: بينما نحن عند رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا أتي بجفنة فوضعت، فكف عنها رسول الله صلى الله عليه وسلم يده وكففنا أيدينا وكنا لا نضع أيدينا حتى يضع رسول الله صلى الله عليه وسلم يده. فجاء أعرابي يشتد كأنه يطرد حتى أهوى إلى الجفنة فأخذ رسول الله صلى الله عليه وسلم بيده فأجلسه، وجاءت جارية كأنها تدفع فذهبت تضع يدها في الطعام فأخذ النبي يدها، ثم قال: إن الشيطان يستحل الطعام إذا لم يذكر اسم الله عليه، وإنه لما رآنا كففنا أيدينا جاء بهذا الأعرابي يستحل به، ثم جاء بالجارية يستحل بها. والذي لا إله غيره يده في يدي مع يدها.
হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একবার আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমতাবস্থায় এক পাত্র খাদ্য এনে তাঁর সামনে রাখা হলো। কিন্তু আহার গ্রহণে তিনি তাঁর হাতকে বিরত রাখলেন দেখে আমরাও আমাদের হাত গুটিয়ে রাখলাম। কারণ আমরা কখনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর স্পর্শ করার আগে খাদ্যের পাত্রে হাত দিতাম না। ইত্যবসরে এক বেদুঈন দৌড়াতে দৌড়াতে এসে হাযির হলো যেন তাকে তাড়িয়ে বেড়ানো হচ্ছে। সে উপস্থিত হয়েই খাদ্যের পাত্রে হাত বাড়ালো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাত ধরে ফেললেন এবং তাকে বসিয়ে দিলেন। অত:পর এক মেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে উপস্থিত হলো। যেন তাকেও হাঁকিয়ে বেড়ানো হচ্ছে। সেও খাদ্যের পাত্রে হাত দিতে উদ্যত হলো। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাতও ধরে ফেললেন। অত:পর বললেন: কোন খাবার আল্লাহর নাম নিয়ে গ্রহণ না করা হলে তাতে শয়তান অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। শয়তান আমাদেরকে খাবারের পাত্রে হাত ঢুকাতে বিরত থাকতে দেখে খাদ্যে ভাগ বসাবার উদ্দেশ্যে এখন বেদুঈনকে ধরে নিয়ে এসেছে। (কিন্তু আমি তার হাত ধরে ফেললে) সে খাদ্য গ্রহণের সুযোগ লাভের জন্য পুনরায় এই মেয়েকে হাঁকিয়ে নিয়ে এসেছে। সেই সত্ত্বার কসম যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, এখন এই মেয়ের হাতের সাথে শয়তানের হাতও আমার মুঠোর মধ্যে।
এই হাদীস থেকে জানা গেল যে, পানাহার শুরু করার শিষ্টাচার এই যে, মাজলিসে উপস্থিত সর্বাধিক সম্মানিত ও মুরববী ব্যক্তি খাদ্যে হাত না দেয়া পর্যন্ত অন্যদের বিরত থাকা উচিত। আর দাওয়াতদানকারী মাজলিসে উপস্থিত থাকলে তিনিই সর্বপ্রথম আহার শুরু করবেন অথবা অনুমতি দেবেন, যাতে অন্যরা নির্দ্বিধায় পানাহার করতে পারে। এত্থেকে আরো জানা গেল যে, বিসমিল্লাহ বলে পানাহার শুরু করা অত্যন্ত জরুরী। অন্যথায় খাদ্যেও বরকত কমে যায় এবং শয়তান এসে খাবারে শরীক হয়। পানাহারের পূর্বে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নাত। মাজলিসের মুরববী একটু শব্দ করে বিসমিল্লাহ বললে অন্যরাও সচেতন হয়ে বিসমিল্লাহ পড়তে পারবে।
৫.৮. খাবার বণ্টনে ছোটদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া:
কোন মাজলিসে খাবার বণ্টনের সময় সেখানে কোন বাচ্চা উপস্থিত থাকলে তাকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। এটি অন্য কোন বিবেচনায় নয়, বরং মানসিকভাবে তার প্রতি ভালবাসা প্রদর্শনের জন্যই। কেননা ছোটরা চায় যে বড়রা তাদেরকে স্নেহ করুক এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদেরকে গুরুত্ব দিক। এজন্য কোন কিছু বণ্টনের সময় ছোটদেরকে দিয়ে শুরু করা এবং অতিরিক্ত হলে সেটা তাদেরকেই দেয়া উত্তম। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
ليس منا من لم يرحم صغيرنا ويعرف شرف كبيرنا .
যে ব্যক্তি ছোটদেরকে স্নেহ করল না এবং বড়দের প্রতি সম্মান দেখাল না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।
বিশেষ করে খাদ্য-দ্রব্য বণ্টন একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এক্ষেত্রে ছোটদেরকে রেখে আগে বড়দেরকে দিলে ছোটরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়। বড়দের মত তাদের বাস্তব অবস্থা অনুধাবন করার যোগ্যতা থাকে না। ফলে এ ধরনের ঘটনায় তারা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। আর বড়রা ছোটদেরকে অগ্রাধিকার দিলে ছোটরাও বড়দেরকে অগ্রাধিকার দিতে শিখবে। তাছাড়া বড়রা ছোটদের প্রতি সহানুভূতি দেখালে ছোটরাও তাদের ছোটদের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর বাস্তব কর্মে আমরা এরূপ নির্দেশনাই দেখতে পাই। বর্ণিত হয়েছে যে,
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا أتي بالزهو قال: اللهم بارك لنا في مدينتنا و مدنا و صاعنا بركة مع بركة ، ثم ناوله أصغر من يليه من الولدان .
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নিকট মৌসুমের প্রথম পাকা ফল আনা হলে তিনি বলতেন: ‘হে আল্লাহ! আমাদের শহরে এবং আমাদের ওজনে ও মাপে বরকতের সাথে আরো বরকত দিন’। অত:পর তিনি তাঁর নিকট উপস্থিত শিশুদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠকে তা খেতে দিতেন। অপর এক বর্ণনায় এসেছে,
عن أبي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قال: كان رسول اللهِ صلى الله عليه وسلم إذا أُتِيَ بِالْبَاكُورَةِ بِأَوَّلِ الثَّمَرَةِ قال: اللّهُمَّ بَارِكْ لنا في مَدِينَتِنَا وفي ثَمَرَتِنَا وفي مُدِّنَا وفي صَاعِنَا بَرَكَةً مع بَرَكَةٍ . ثُمَّ يُعْطِيهِ أَصْغَرَ من يَحْضُرُهُ من الْوِلْدَانِ .
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নিকট যদি মৌসুমের প্রথম ফল থেকে নিয়ে আসা হতো তাহলে তিনি বলতেন: ‘হে আল্লাহ! আমাদের শহরে, আমাদের ফল-ফলাদিতে এবং আমাদের ওজনে ও মাপে বরকতের সাথে আরো বরকত দিন’। অত:পর তিনি তাঁর নিকট উপস্থিত শিশুদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠকে তা খেতে দিতেন।
অতএব খাবার বন্টনে ছোটদেরকে অগ্রাধিকার দেয়াই উত্তম। এর ফলে ছোটরা মানসিকভাবে স্বস্তি বোধ করবে এবং বড়দের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ বাড়বে। আর তারাও তাদের ছোটদের প্রতি এরূপ দয়ালু ও অনুগ্রহশীল হবে।
৫.৯. আঙ্গুল চেটে খাওয়া ও প্লেট মুছে খাওয়া:
ইসলাম প্রদর্শিত পানাহার পদ্ধতির একটি অন্যতম দিক হলো হাতে লেগে থাকা খাবার চেটে খাওয়া ও খাবারের প্লেট মুছে খাওয়া। অর্থাৎ যতটুকু খাবার প্লেটে নেয়া হয় তা সবই শেষ করে খাওয়া। অথবা যতটুকু পানীয় গ্লাস কিংবা মগে ঢেলে নেয়া হয় তার সবটুকু পান করা। এতে একদিকে অপচয় রোধ করা যায় এবং অপরদিকে অরুচিকর পরিস্থিতি থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। এজন্যেই নিজের প্লেটে খাবার নেয়ার সময় চিন্তা করে নেয়া উচিত যে আমি কতটুকু খেতে পারব। অথবা কাউকে তার প্লেটে খাবার তুলে দেয়ার সময় তার চাহিদা ও মতামত জেনেই দেয়া উচিত। অন্যথায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও অপচয় হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিংবা বাধ্য হয়ে সেই খাবার শেষ করতে গিয়ে নিজের শারিরীক ক্ষতি হওয়ার আশংকা থেকে যায়।
একইভাবে পানি অথবা অন্য যে কোন পানীয় গ্লাসে ঢালার পর তা অর্ধেক খেয়ে রেখে দিলে অন্য কেউ সেই গ্লাসে খেতে অস্বস্তি বোধ করতে পারে। এমতাবস্থায় সে আগের জনের রেখে দেয়া অবশিষ্ট পানিটুকু ফেলতে গিয়েও বিড়ম্বনার শিকার হতে পারে। এজন্যে সামষ্টিক পরিবেশে পানাহারের বেলায় এসব ছোট খাট বিষয়ও খেয়াল রাখা বাঞ্চনীয়। এর ফলে কোন প্রকার অপচয় না করেই রুচি সম্মত উপায়ে পানাহার সম্পন্ন করা সম্ভব।
তাছাড়া প্লেট মুছে খাওয়ার আরেকটি তাত্ত্বিক দিকও রয়েছে। তা হলো এই যে, বিভিন্ন রকম খাবারের সংমিশ্রিত নির্যাস প্লেটের নিচে তলানির মত জমা হয়, যার পুষ্টিমাণ অনেক বেশি। প্লেট মুছা এসব খাবারকে তাই আমাদের দেশের কোন কোন এলাকায় ‘বলভাত’ বলা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে এগুলো আমাদেরকে খাবার হজমের ক্ষেত্রে দারুণভাবে সহযোগিতা করে। এসব কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মধ্যে বরকত রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি নিজে তাঁর প্লেট মুছে খেতেন এবং নিজের আঙ্গুলকেও চেটে খেতেন। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর হাদীসগুলো নিম্নরূপ:
عن أنس رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا أكل طعاما لعق أصابعه الثلاث، وقال: إذا سقطة لقمة أحدكم فليأخذها، وليمط عنها الأذى، وليأكلها، ولا يدعها للشيطان. وأمرنا أن نسلة القصعة وقال: إنكم لا ةدرون في أي طعامكم البركة.
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন খাবার খেতেন, তখন তাঁর তিন আঙ্গুল চেটে নিতেন এবং তিনি বলেছেন: ‘যখন তোমাদের কারো লুকমা পড়ে যায় তখন সে যেন তা উঠিয়ে নেয়। এরপর ময়লা দূর করে সে যেন তা খেয়ে নেয়, শয়তানের জন্য যেন না রেখে দেয়’। আর তিনি আমাদেরকে আদেশ করেছেন যেন আমরা প্লেট মুছে নেই এবং বলেছেন: ‘তোমরা জাননা যে, তোমাদের কোন্ খাবারের মধ্যে বরকত (লুকায়িত) রয়েছে’।
عن كعب بن عجرة رضي الله عنه قال: رأيت النبي صلى الله عليه وسلم يأكل طعاما فلعق أصابعه.
কা‘ব ইবন ‘উজরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আহারের পর আঙ্গুল চাটতে দেখেছি।
عن جابر رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان إذا أكل لعق أصابعه.
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আহার করতেন তখন তাঁর আঙ্গুল চাটতেন।
عن جابر رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم أمر بلعق الأصابع والصحفة وقال: إنكم لاتدرون في أي طعامكم البركة.
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম (খাবারের পর) আঙ্গুল এবং প্লেট মুছে খেতে আদেশ করেছেন এবং বলেছেন: ‘তোমরা জাননা যে, তোমাদের কোন্ খাবারের মধ্যে বরকত (লুকায়িত) রয়েছে’।
عن كعب بن مالك رضي الله عنه قال: كان النبي صلى الله عليه وسلم يأكل بثلاثة أصابع ولا يمسح يده حتى يلعقها.
কা‘ব ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন আঙ্গুল দ্বারা আহার গ্রহণ করতেন এবং হাত না চাটা পর্যন্ত তা মুছতেন না।
عن كعب بن عجرة رضي الله عنه قال: رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يأكل بأصابعه الثلاث الإبهام والتي تليها والوسطى. ورأيته لعق أصابعه الثلاث قبل أن يمسحها لعق الوسطى والتي تليها.
কা‘ব ইবন ‘উজরাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর তিন আঙ্গুল অর্থাৎ বৃদ্ধাঙ্গুল, তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলের সাহায্যে আহার করতে দেখেছি। আমি আরো দেখেছি যে, তিনি মধ্যমা ও তর্জনীসহ আঙ্গুলগুলো মোছার পূর্বে চেটেছেন।
عن كعب بن مالك رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يأكل بثلاث أصابع ، ويلعق يده قبل أن يمسحها.
কা‘ব ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন আঙ্গুলের সাহায্যে আহার করতেন। এবং তাঁর হাতকে মাসেহ/ধৌত করার আগে তা চেটে নিতেন।
উপরোক্ত হাদীসসমূহ থেকে জানা যায় যে, আহারের পর হাত ধৌত করার পূর্বে হাতে বা আঙ্গুলে লেগে থাকা আহারের অংশ চেটে খাওয়া উত্তম। এ প্রসঙ্গে অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
عن جَابِرٍ رضي الله عنه أَنَّ النبي صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِلَعْقِ الْأَصَابِعِ وَالصَّحْفَةِ وقال إِنَّكُمْ لَا تَدْرُونَ في أَيِّهِ الْبَرَكَةُ .
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আঙ্গুলসমূহ এবং প্লেট চেটে খেতে আদেশ করেছেন এবং বলেছেন যে, তোমাদের জানা নাই যে, খাদ্যের কোন্ অংশে বরকত নিহিত আছে’।
একথা দু:খজনক হলেও সত্য যে, প্লেট বা গ্লাসে কিছু খাবার রেখে দেয়াকে আজকাল অনেকে আভিজাত্যের প্রতীক বলে মনে করে। আর প্লেট মুছে খাওয়াকে সেকেলে বা পশ্চাৎপদতা হিসেবে চিহ্নিত করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্লেটে ছেড়ে আসা এই অবশিষ্ট খাবারগুলোকে শয়তানের আহার বলেছেন এবং এগুলোকে তিনি বরকতের আঁধারও বলেছেন। কাজেই পাছে লোকে কিছু বলে- এই চিন্তায় শয়তানের জন্য খাবারের বরকতগুলো ছেড়ে আসা কোনক্রমেই বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না।
৫.১০. কাঁচা পিঁয়াজ/রসুন ইত্যাদি না খাওয়া:
ইসলাম পরিচ্ছন্ন জীবন যাপনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। সমাজের অন্য লোকদের সাথে অত্যন্ত পরিপাটি ও পরিচ্ছন্ন অবস্থায় মেলামেশা করতে ইসলাম উৎসাহিত করে। অন্যদের জন্য কষ্টকর ও অরুচিকর কোন অবস্থা সৃষ্টি করাকে ইসলাম অনুমোদন করে না। অপর ভাইয়ের সাথে কথাবার্তা বলার সময় মুখের দুর্গন্ধ যাতে তাকে কষ্ট না দেয় সেজন্য ইসলাম প্রতিবার উযূ করার সময় মিসওয়াক ব্যবহার করতে উৎসাহিত করে। উযূর সময় মিসওয়াক ও কুলি করলে সাধারণত মুখ গহ্বরে কোন দুর্গন্ধ হতে পারে না। এ লক্ষ্যে ইসলাম কাঁচা পিঁয়াজ এবং রসুন খেতেও বারণ করে। বিশেষ করে দুর্গন্ধযুক্ত খাবার খেয়ে কেউ যেন কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে না আসে এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর অত্যন্ত কড়া নির্দেশনা রয়েছে। তিনি ইরশাদ করেন:
عن ابن عُمَرَ رضي الله عنهما أَنَّ النبي صلى الله عليه وسلم قال في غَزْوَةِ خَيْبَرَ من أَكَلَ من هذه الشَّجَرَةِ يَعْنِي الثُّومَ فلا يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا.
ইবন ‘উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বারের যুদ্ধের সময় বলেন: যে ব্যক্তি এই গাছ থেকে অর্থাৎ রসুন খেল সে যেন আমাদের মাসজিদে না আসে।
عن أبي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قال قال رسول اللهِ صلى الله عليه وسلم: من أَكَلَ من هذه الشَّجَرَةِ فلا يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا ولا يُؤْذِيَنَّا بِرِيحِ الثُّومِ .
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি এই গাছ থেকে খেল সে যেন আমাদের মাসজিদের কাছে না আসে এবং আমাদেরকে যেন রসুনের গন্ধ দ্বারা কষ্ট না দেয়।
عن مُعَاوِيَةَ بن قُرَّةَ عن أبيه رضي الله عنهما أَنَّ النبي صلى الله عليه وسلم نهى عن هَاتَيْنِ الشَّجَرَتَيْنِ ، وقال: من أَكَلَهُمَا فلا يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا ، وقال: إن كُنْتُمْ لَا بُدَّ آكِلِيهِمَا فَأَمِيتُوهُمَا طَبْخًا. قال: يَعْنِي الْبَصَلَ وَالثُّومَ .
মু‘আবিয়াহ ইবন কুরত্মাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দুটো গাছের ব্যাপারে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন: যে এই দুটো গাছ থেকে খেল সে যেন আমাদের মাসজিদের নিকটবর্তী না হয়। তিনি আরো বলেছেন: যদি তোমাদের এ দুটো খেতেই হয় তাহলে তোমরা রান্না করার মাধ্যমে (এর গন্ধ) নি:শ্বেষিত করে দাও। রাবী বলেন: এ দুটো বলতে তিনি পিঁয়াজ এবং রসুনকে বুঝিয়েছেন।
عن أبي زِيَادٍ خِيَارِ بن سَلَمَةَ رضي الله عنه أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ رضي الله عنها عن الْبَصَلِ، فقالت: إِنَّ آخِرَ طَعَامٍ أَكَلَهُ رسول اللهِ صلى الله عليه وسلم طَعَامٌ فيه بَصَلٌ
আবূ যিয়াদ খিয়ার ইবন সালামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি ‘আয়িশাহ (রা.) কে পিঁয়াজের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তখন তিনি বলেন: সর্বশেষ যে খাবারটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেয়েছিলেন তাতে পিঁয়াজ ছিল।
عن معاوية بن قرة عن أبيه رضي الله عنهما عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: من أكل من هاتين الشجرتين الخبيثتين فلا يقربن مسجدنا فإن كنتم لا بد آكليها فأميتوهما طبخا .
মু‘আবিয়াহ ইবন কুরত্মাহ (রা.) তার পিতা থেকে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে এই দুটো নিকৃষ্ট গাছ থেকে খেল সে যেন আমাদের মাসজিদের নিকটবর্তী না হয়। যদি তোমাদের এ দুটো খেতেই হয় তাহলে তোমরা রান্না করার মাধ্যমে (এর গন্ধ) নি:শ্বেষিত করে দাও।
عن جَابِرِ بن سَمُرَةَ رضي الله عنه أَنّ النبي صلى اللهُ عليه وسلم كان إذا أُتِيَ بِطَعَامٍ فَأَكَلَ منه و بَعَثَ بِفَضْلِهِ إلى أبي أَيُّوبَ. وكان أبو أَيُّوبَ يَتَتَبَّعُ أَصَابِعَ النبي صلى اللهُ عليه وسلم، يَضَعُ أَصَابِعَهُ حَيْثُ يَرَى أَصَابِعَ النبي صلى اللهُ عليه وسلم. فَأُتِيَ رسول اللهِ صلى اللهُ عليه وسلم ذَاتَ يَوْمٍ بِصَفْحَةٍ، فَوَجَدَ فيها رِيحَ ثُومٍ فلم يَأْكُلْ منها، وَبَعَثَ بها إلى أبي أَيُّوبَ. فلم يَرَ أبو أَيُّوبَ فيها أَثَرَ أَصَابِعِ النبي صلى اللهُ عليه وسلم، فقال: يا رَسُولَ اللهِ! لم أَرَ فيها أَثَرَ أَصَابِعِكَ فقال إني وَجَدْتُ فيها أَثَرَ ثُومٍ . فقال بَعَثْتَ إلي بِمَا لا تَأْكُلُهُ، فقال: إنه يَأْتِينِي الْمَلَكُ .
জাবির ইবন সামুরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর কাছে যখন কোন খাবার আনা হতো তিনি তা থেকে খেতেন এবং অবশিষ্টগুলো আবূ আইয়ূব (রা.) এর কাছে পাঠিয়ে দিতেন। আর আবূ আইয়ূব (এর অভ্যাস ছিল যে,) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আঙ্গুলের চিহ্ন অনুসরণ করতেন। যেখানে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আঙ্গুলের চিহ্ন দেখতে পেতেন সেখানেই তিনি তার হাত রাখতেন। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নিকট খাবারের প্লেট আনা হলো, তিনি তাতে রসুনের গন্ধ পেয়ে তা খেলেন না। এবং তা আবূ আইয়ূবের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। আবূ আইয়ূব তাতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর আঙ্গুলের ছাপ দেখতে পেলেন না। তাই তিনি বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো এতে আপনার আঙ্গুলের ছাপ দেখছি না। তখন তিনি বললেন: আমি এতে রসুনের চিহ্ন পেয়েছিলাম। তখন আবূ আইয়ূব বললেন: আপনি যা খান না তা কিভাবে আমার কাছে পাঠালেন? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: কেননা আমার কাছে তো ফেরেশতা আসে।
উপরোক্ত হাদীসসমূহ থেকে জানা গেল যে, পিঁয়াজ এবং রসুন কোন নিষিদ্ধ খাবার নয়। এবং এর কিছু শারিরীক উপকারীতা ও খাদ্যগুণ প্রমাণিত। তবে কাঁচা অবস্থায় এগুলো খেলে মুখের মধ্যে যে গন্ধের সৃষ্টি হয় তা অপরকে কষ্ট দিতে পারে বিধায় এগুলো রান্না করেই খাওয়া উচিত। কাঁচা পিঁয়াজ ও রসুন থেকে যে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয় তা বিশেষত: ফেরেশতাদেরকে কষ্ট দেয়। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তা পরিহার করতেন এবং মাসজিদে যাওয়ার সময় আমাদেরকেও তা পরিহার করতে বলেছেন।
৫.১১. পানাহারের সঠিক সময়:
সাধারণভাবে সকাল, দুপুর এবং রাত- এই তিন বেলা পানাহারের নিয়ম দুনিয়াব্যাপী প্রচলিত। রাতের বিশ্রাম এবং দিনের কর্মব্যস্ততার আলোকে এভাবেই মানুষের খাদ্যাভ্যাস গড়ে উঠেছে। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার মানুষদের খাদ্যের ধরন ও সময়ে সামান্য পার্থক্য থাকলেও পানাহারের এ তিনটি সময় সকলের মাঝেই মোটামুটি এক ও অভিন্ন। সারারাত বিশ্রাম শেষে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সতেজ ও সজীব হলেও কোন প্রকার খাবার বিহীন বেশীক্ষণ কর্মক্ষম থাকতে পারে না। তাই সকাল বেলা ভারী খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন কোন কোন স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী। দীর্ঘক্ষণ উপবাস থাকার পর সকালের এই আহারকে ‘উপবাস ভাঙ্গা’ বা Break fast বলা হয়। আরবীতে সকালের খাবারকে বলা হয় إفطار (ইফতার) বা فطور (ফুতূর)। এর অর্থও উপবাস ভাঙ্গা। সিয়াম পালনের সময় সারাদিন উপবাস থাকার পর সন্ধ্যায় যে খাবার গ্রহণ করা হয় একেও আরবীতে বলা হয় ইফতার বা উপবাস ভাঙ্গা।
এরপর দ্বিপ্রহরে যে খাবার গ্রহণ করা হয় একে বলা হয় Lunch বা মধ্যা‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎ বলে একে মধ্যা‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎Lunch বলে। আর দিনের শেষভাগের খাবারকে Dinner বলে। আরবীতে দুপুরের খাবারকে বলা হয় غداء (গাদা) বা যে খাবার যোহরের সময় খাওয়া হয়। আর সন্ধ্যায় বা রাতে যে খাবার খাওয়া হয় তাকে বলা হয় Dinner/Supper বা রাতের খাবার। আরবীতে একে বলা হয় عشاء (‘আশা), অর্থাৎ যে খাবার বিকাল বা সন্ধ্যায় খাওয়া হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সময়েও এভাবে তিন বেলা খাবারের প্রথা চালু ছিল। যদিও আর্থিক দৈন্যতা ও সামর্থের অভাবে সেসময় অনেকের ভাগ্যেই তিন বেলা খাবার জুটত না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও অত্যন্ত সাদামাটা জীবন যাপন করতেন। জীবনের অধিকাংশ সময়েই তাঁর একই দিন দুইবেলা ভাল খাবার খাওয়া হত না। বর্ণিত হয়েছে যে,
عن أَنَسِ بن مَالِكٍ رضي الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم لم يَجْتَمِعْ له غَدَاءٌ وَلاَ عَشَاءٌ من خُبْزٍ وَلَحْمٍ الا على ضَفَفٍ .
আনাস ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত যে, গোশত ও রুটি দিয়ে কখনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর একই দিনের গাদা এবং ‘আশা হতো না। তবে কখনো বা এটি হতো যখন তিনি অনেক মানুষের সাথে খেতেন।
ভাষাবিদ খলীল বলেন: ضَفَفٌ দাফাফ হলো- খাবারে অনেক লোক একত্রে শামিল হওয়া। (অর্থাৎ কোন অনুষ্ঠানাদি ছাড়া এমনিতেই রাসূলের কখনো পর পর দুই বেলা ভাল খাবার খাওয়া হত না।) আর ভাষাবিদ ফারত্মা এর মতে- দাফাফ হলো, প্রয়োজন। (অর্থাৎ বিনা প্রয়োজনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাললাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো দুই বেলা ভাল খাবার খেতেন না।) ইবনুল আ‘রাবীর মতে, দাফাফ হলো- কম। (অর্থাৎ খুব কম সময়ই তিনি পর পর দুই বেলা গোশত-রুটি খেতেন।)
রাতের খাবারের ব্যাপারে হাদীসে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
عن أَنَسِ بن مَالِكٍ رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: إذا وُضِعَ الْعَشَاءُ وَأُقِيمَتْ الصَّلَاةُ فابدؤوا بِالْعَشَاءِ وَعَنْ أَيُّوبَ عن نَافِعٍ عن بن عُمَرَ عن النبي صلى الله عليه وسلم نَحْوَهُ وَعَنْ أَيُّوبَ عن نَافِعٍ عن بن عُمَرَ أَنَّهُ تعشي مَرَّةً وهو يَسْمَعُ قِرَاءَةَ الْإِمَامِ .
আনাস ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: যদি রাতের খাবার উপস্থিত করা হয় এবং নামাযও দাঁড়িয়ে যায় তাহলে আগে খাবার খেয়ে নাও। আইউব নাফি‘ থেকে ইবন ‘উমারের সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আইউব নাফি‘ এর সূত্রে এও বর্ণনা করেছেন যে, একবার ইবন ‘উমার রাতের খাবার খাচ্ছিলেন এমতাবস্থায় যে, তিনি নামাযে ইমামের কিরাআত শুনতে পাচ্ছিলেন।
عن عَائِشَةَ رضي الله عنها قالت: قال رسول اللهِ صلى الله عليه وسلم: إذَا حَضَرَتْ الصَّلاَة وَوُضِعَ العشاء فأبدءوا بِالْعَشَاءِ .
‘আয়িশাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: যদি নামাযের সময় হয়ে যায় এবং (‘আশা) রাতের খাবারও দেয়া হয়, তাহলে তোমরা প্রথমে রাতের খাবার খেয়ে নাও।
عن أَنَسٍ رضي الله عنه أَنَّ النبي صلى الله عليه وسلم قال إذَا حَضَرَ العشاء وَأُقِيمَتْ الصَّلاَة فَابْدَؤُوا بِالْعَشَاءِ .
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যদি রাতের খাবার এসে যায় এবং নামাযেরও সময় হয়, তাহলে তোমরা আগে রাতের খাবার খেয়ে নাও।
عن أَنَسِ بن مَالِكٍ رضي الله عنه قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم: تَعَشَّوْا وَلَوْ بِكَفٍّ من حَشَفٍ فإن تَرْكَ الْعَشَاءِ مَهْرَمَةٌ . قال أبو عِيسَى هذا حَدِيثٌ مُنْكَرٌ لَا نَعْرِفُهُ إلا من هذا الْوَجْهِ وَعَنْبَسَةُ يُضَعَّفُ في الحديث وَعَبْدُ الْمَلِكِ بن عَلَّاقٍ مَجْهُولٌ .
আনাস ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তোমরা অবশ্যই রাতের আহার করবে তা একমুঠ শুকনা খেজুর হলেও। কেননা রাতের খাবার ত্যাগ দুর্বলতার কারণ। আবূ ঈসা বলেন, এটি একটি প্রত্যাখ্যাত (মুনকার) হাদীস। আমরা কেবল উল্লেখিত সূত্রে এটি জানতে পেরেছি। রাবী ‘আনবাসাকে হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাছাড়া ‘আব্দুল মালিক ইবন ‘আল্লাক একজন অখ্যাত-অপরিচিত রাবী।
দুপুরের খাবারের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাথে সাথে হাঁটা-চলা করতেন না, সামান্য বিশ্রাম নিতেন। কিন্তু রাতের খাবারের পর সাথে সাথে শুইতেন না। ‘ইশার নামায পড়তেন অথবা নামায পড়া হয়ে গিয়ে থাকলে সামান্য হাঁটা-চলা করতেন। রাসূলের এ অভ্যাসের কথা হাদীসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে-
كان إذا تغدى لم يتعش ، وإذا تعشى لم يتغد .
তিনি দুপুরের খাবার খেয়ে সাথে সাথে চলাফেরা করতেন না এবং রাতের খাবার খেয়ে সাথে সাথে শুইতেন না।
রাতের খাবার সংক্রান্ত হাদীসগুলো থেকে আরেকটি বিষয় পরিষ্কার হয়, সেটি হলো- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সচরাচর সন্ধ্যা রাতে তথা ‘ইশার নামাযের আগেই রাতের খাবার সেরে নিতেন। অর্থাৎ তিনি অনেক রাতে খেতেন না। আর রাতের খাবারের পর সাথে সাথে ঘুমাতেন না। চিকিৎসা বিজ্ঞানও রাতে দেরীতে খেতে নিষেধ করে এবং খাওয়ার পর সাথে সাথে ঘুমাতে বারণ করে। এতে শরীরের ওজন বৃদ্ধি সহ নানা রোগের কারণ ঘটে।
৫.১২. পানাহারের পরিমাণ:
ইসলাম প্রয়োজনের অতিরিক্ত এক লুকমা/গ্রাস খাবারকেও অনুমোদন করে না। বরং নিজের পেটকে তিন ভাগ করে এক ভাগ খাদ্য দিয়ে পূরণ করতে, এক ভাগ পানি দিয়ে পূরণ করতে এবং এক ভাগ সম্পূর্ণ খালি রাখতে উৎসাহিত করে। যাতে তার উঠাবসা, চলাফেরা ও শ্বাস-নি:শ্বাস করতে সহজ হয়। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের মতে বিভিন্ন রোগ-বালাই থেকে মুক্ত থেকে সুস্থ জীবন যাপনের এটিই উৎকৃষ্ট উপায়। তাছাড়া শুধু নিজের প্রয়োজনটুকু পূরণ করাকেও ইসলাম নিরুৎসাহিত করে। এক হাদীসে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে:
عن عبد الله بن المساور قال: سمعت ابن عباس رضي الله عنهما يقول: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: ليس المؤمن الذي يشبع وجاره جائع إلى جنبه.
‘আবদুল্লাহ ইবন আল-মুসাবির থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি ইবন ‘আববাস (রা.) কে বলতে শুনেছি যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন: ‘সে ব্যক্তি মু’মিন নয় যে তার উদর পূর্তি করে খায়, অথচ তার পাশেই তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত অবস্থায় কাটায়’।
নিজের যা আছে তাতেই ইসলাম অন্য ভাইকে শামিল করার নির্দেশ দেয়। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের বাস্তব কর্ম ও কথায় বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করেছেন। যেমন-
عن سالم بن عبد الله بن عمر عن أبيه عن جده عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن طعام الواحد يكفي الاثنين، وإن طعام الاثنين يكفي الثلاثة والأربعة، وإن طعام الأربعة يكفي الخمسة والسةة.
সালিম ইবন ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘উমার তাঁর পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তাঁর দাদা ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: ‘নিশ্চয়ই একজনের খাবার দুইজনের জন্য যথেষ্ট, দুইজনের খাবার তিনজন এবং চারজনের জন্য যথেষ্ট। আর চারজনের খাবার পাঁচজন এবং ছয়জনের জন্য যথেষ্ট’।
عن جابر بن عبد الله رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: طعام الواحد يكفي الاثنين، وطعام الاثنين يكفي الأربعة وطعام الأربعة يكفي الثمانية .
জাবির ইবন ‘আব্দিল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘একজনের খাবার দুইজনের জন্য যথেষ্ট, দুইজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট এবং চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট’।
عَنْ نَافِعٍ قَالَ:كَانَ ابْنُ عُمَرَ رضي الله عنهما لَا يَأْكُلُ حَتَّى يُؤْتَى بِمِسْكِينٍ يَأْكُلُ مَعَهُ فَأَدْخَلْتُ رَجُلًا يَأْكُلُ مَعَهُ فَأَكَلَ كَثِيرًا فَقَالَ: يَا نَافِعُ لَا تُدْخِلْ هَذَا عَلَيَّ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: الْمُؤْمِنُ يَأْكُلُ فِي مِعًى وَاحِدٍ وَالْكَافِرُ يَأْكُلُ فِي سَبْعَةِ أَمْعَاءٍ.
নাফি’ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ইবন ‘উমার (রা.) তাঁর সাথে কোন একজন মিসকিনকে না নিয়ে খেতেন না। একবার আমি একলোককে তাঁর সাথে খেতে বসালাম। লোকটি অনেক খেল। অত:পর ইবন ‘উমার (আমাকে) বললেন: হে নাফি’! এ লোককে তুমি আর কখনো আমার সাথে খেতে বসাবে না। আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: ‘‘মু’মিন খায় এক উদরে, আর কাফির খায় সাত উদরে’’। অন্যত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
عن المقدام بن معدي كرب رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: ما وعى بن آدم وعاء شرا من بطنه، حسب المسلم أكلات يقمن صلبه فإن كان لا محالة فثلث لطعامه وثلث لشرابه وثلث لنفسه .
মিকদাম ইবন মা‘দী কারাব (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: মানুষ তার পেটের চেয়ে নিকৃষ্ট আর কোন থলে ভরে না। (অর্থাৎ খেতে খেতে পেট পুরো ভরিয়ে ফেললে এটাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট থলেতে পরিণত হয়।) একজন মুসলিমের টিকে থাকার জন্য কিছু খাবারই যথেষ্ট। যদি সে বেশী খেতেই চায়, তাহলে (উত্তম হলো) পেটের এক-তৃতীয়াংশে খাদ্য, এক-তৃতীয়াংশে পানি এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস গ্রহণের জন্য খালি রাখা উচিত।
ইসলাম খাবারের কোন সুনির্দিষ্ট সীমারেখা টেনে দেয়নি। বরং সতর্কতা স্বরূপ খাবারের কিছু আদাব বর্ণনা করেছে। মানুষ যদি তৃপ্তিপূর্ণ করে খায় তাতেও দোষ নেই। তৃপ্তি সহকারে খেলে তাকে অপচয় বলা হয় না। তবে অধিক তৃপ্ত হতে গিয়ে যদি শরীরের ওজন অস্বাভাবিক বাড়িয়ে ফেলে, যাতে অলসতা ও অবসাদ দেখা দেয় এবং নড়াচড়া করাই মুশকিল হয়ে পড়ে, তাহলে তা নি:সন্দেহে আপত্তিকর। এর ফলে অনেক ধরনের রোগ-শোকের উৎপত্তি হয় এবং ‘ইবাদাত-বন্দেগীতে অলসতা সৃষ্টি হয়। তাই এক্ষেত্রে ইসলামের একটা মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি হলো এই যে, আমরা (ঈমানদার মানুষেরা) খাওয়ার জন্য বাঁচি না, বরং বাঁচার জন্য খাই। অর্থাৎ খাওয়াই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য নয়। আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্বসমূহ সুন্দরভাবে সম্পাদনের নিমিত্তেই আমাদেরকে সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকতে হবে। আর সে উদ্দেশ্যেই আমরা খাই। অতএব, যা আমাদের জন্য বৈধ, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং যতটুকু খেলে আমাদের প্রয়োজন মিটে ও সুস্থ থাকা যায় ততটুকুই আমরা খাব। পক্ষান্তরে কাফিরদের মূল লক্ষ্যই হলো খাওয়া ও ভোগ করা। তাই তারা যা সামনে পায় তাই খায়। নিজেরটাও খায়, পরেরটাও খায়। নিজের জন্য যা বরাদ্দ তাও খায় আর সুযোগ পেলে বরাদ্দের বাইরেও খায়। যা সামনে পায় তাই খায়, হালালটাও খায় এবং হারামটাও খায়।
পক্ষান্তরে, একজন প্রকৃত মুসলিম কখনো শুধু খাওয়ার জন্যেই বাঁচে না। সে খায় বাঁচার জন্য। আর তাই সে সবসময় বেছে বেছে খায়। যা তার স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী কেবল তাই খায়। যতটুকু খেলে সুস্থ্য থাকা যায় কেবল ততটুকুই খায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারেও আমাদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তিনি নিজে কখনো প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেতেন না। আশেপাশের অন্যদেরকে অভূক্ত রেখে নিজে একাকী খেতেন না। এ ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত কড়া ভাষায় মু’মিনদেরকে সতর্ক করেছেন।
৫.১৩. পানাহারে অপব্যয় ও অপচয় না করা:
ইসলাম নির্দেশিত পানাহার পদ্ধতির একটি অন্যতম দিক হলো পানাহারে অপব্যয় ও অপচয় না করা। সাধারণভাবে ইসলাম যে কোন কিছুতেই অপব্যয় ও অপচয়কে অনুমোদন করে না। আর বিশেষ করে পানাহারের ক্ষেত্রে ইসলামে অপব্যয় ও অপচয়ের কোন সুযোগ নেই। কেননা পানাহার হলো আল্লাহ প্রদত্ত এক বিশেষ নি‘আমাত। যে নি‘আমাত থেকে আল্লাহর অনেক বান্দাহই বঞ্চিত হয়ে থাকে। সুতরাং যাদেরকে এ নি‘আমাত দেয়া হলো তারা যদি এর ভোগ বিলাসে অতিরঞ্জন করে তাহলে তা একদিকে আল্লাহর নি‘আমাতের প্রতি অকৃতজ্ঞতার বহি:প্রকাশ, আর অপরদিকে যারা এই নি‘আমাত থেকে বঞ্চিত হয়েছে তাদের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন। মহান আল্লাহ চান যে, আমরা তাঁর নি‘আমাত ভোগ করি এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। কিন্তু এ নি‘আমাতের ক্ষেত্রে আমরা কোন প্রকার বাড়াবাড়ি করি তা তিনি বরদাশত করেন না। তিনি ইরশাদ করেন:
(يَا بَنِي آدَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ وكُلُواْ وَاشْرَبُواْ وَلاَ تُسْرِفُواْ إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ )
‘‘হে আদম সন্তানেরা! তোমরা প্রত্যেক ‘ইবাদাতের সময় তোমাদের সাজসজ্জা গ্রহণ কর। আর খাও ও পান কর, তবে অপচয় (সীমালংঘন) করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না’’।
(وَآتِ ذَا الْقُرْبَى حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَلاَ تُبَذِّرْ تَبْذِيراً. إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُواْ إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُوراً)
‘‘প্রতিবেশী, মিসকীন এবং পথিককে তার হক দিয়ে দাও। তবে কোনক্রমেই অপব্যয় করো না। নি:সন্দেহে অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ’’।
উপরোক্ত প্রথম আয়াতে নিজের সাধ্যমত পানাহারের অনুমোদন করা হয়েছে এবং সাথে সাথে এক্ষেত্রে অপচয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় আয়াতে নিজের সামর্থের আলোকে অন্যান্যদেরকে তাদের প্রাপ্য দিয়ে দিতে বলা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে কোন প্রকার অপব্যয় (শৈথিল্য/কমবেশী করা/বঞ্চিত করা/অন্যায়ভাবে প্রাধান্য দেয়া ইত্যাদি) করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। অর্থাৎ সামর্থের আলোকে নিজে খাওয়া যাবে এবং অপরকেও খাওয়াতে হবে। তবে এক্ষেত্রে কোন প্রকার অপচয় অথবা অপব্যয় করা চলবে না।
ইসলামে ‘ইসরাফ’ তথা অপচয় এবং ‘তাবযীর’ তথা অপব্যয় খুবই নিন্দনীয় বিষয়। ইসরাফ বা অপচয় হলো বৈধ খাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ। আর তাবযীর বা অপব্যয় হলো অবৈধ বা অপ্রয়োজনীয় খাতে খরচ। পানাহারের ক্ষেত্রে ইসলাম এ দুটোকেই কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। কেননা এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় এবং তাঁর অসীম নি‘আমাতের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়।
৫.১৪. স্ত্রীর সাথে স্বামীর আহার গ্রহণ:
ইসলাম পরিবার ব্যবস্থাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। পারিবারিক কাঠামোকে অত্যন্ত সুদৃঢ় ব্যবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত করে। এ লক্ষ্যে ইসলাম পরিবারের সদস্যদেরকে পরষ্পরের প্রতি দায়িত্ববান, সহানুভূতিশীল ও উদার হতে শেখায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক্ষেত্রে আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ স্থাপন করে গেছেন। তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যদের সুখে-দু:খে সাথে থাকতেন। তাদের কাজ কর্মে সহযোগিতা করতেন। সকলের প্রয়োজনের কথা শুনতেন। নিজের প্রয়োজনের কথাও তাদের কাছে বলতেন। পানাহারের সময় তাদেরকে সাথে রাখতেন। পানাহারের সময় স্ত্রীদের কেউ কাছে থাকলে তাদেরকে সাথে নিয়ে একসঙ্গেই খেতেন। যেমন-
عن عائشة رضي الله عنها قالت: كنت آكل مع النبي صلى الله عليه وسلم حيسا، فمر عمر فدعاه، فأكل. فأصابت يده إصبعي، فقال: حس لو أطاع فيكن ما رأتكن عين، فنزل الحجاب.
‘আয়িশাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সাথে হায়স (এক প্রকার মিষ্টি জাতীয় খাদ্য) খাচ্ছিলাম। তখন ‘উমার (রা.) এলে তিনি তাকে ডাকলেন এবং তিনিও আহার করলেন। তাঁর হাত আমার আঙ্গুল স্পর্শ করলে তিনি বলেন: তোমাদের ব্যাপারে বোধশক্তি কাজ করলে কোন চোখ তোমাদের দেখতে পেতো না। তখন পর্দার বিধান নাযিল হয়।
عن سالم بن سرج مولى أم حبيبة بنت قيس رضي الله عنها أنه سمعها تقول: اختلفت يدي و يد رسول الله صلى الله عليه وسلم في إناء واحد .
সালিম ইবন সারজ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি উম্মি হাবীবাহ বিনত কাইস (রা.) কে বলতে শুনেছেন: একই পাত্রে (আহারের সময়) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর হাত আমার হাতে লেগে যায়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনিভাবে তাঁর স্ত্রীদেরকে সাথে নিয়ে খেতেন। কখনো কখনো তারা সাথে না থাকলে এবং অবশিষ্ট খাবার থাকলে তা তাদের জন্য বিশেষত: তাঁর কন্যাদের জন্য পাঠাতেন। অতএব স্বামীদের উচিত সম্ভব হলে স্ত্রীদেরকে সাথে নিয়ে খাবার গ্রহণ করা। তাতে পরষ্পরের হৃদ্যতা বৃদ্ধি পাবে। স্ত্রী-সন্তানদেরকে সাথে নিয়ে খেলে সকল খাবারে তাদেরকে শেয়ার করা যাবে। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে পরস্পরের কুশল বিনিময় এবং দীনের বিভিন্ন বিষয়ে নসীহত করা যাবে। এতে পরস্পরের ভুল বুঝাবুঝি থাকলে তা দূর হবে এবং হৃদ্যতাপূর্ণ সামাজিক পরিবেশ তৈরী হবে।
৬. পানাহারের আসবাবপত্র:
পানাহারের কাজে আমরা নানারকম আসবাবপত্র ব্যবহার করে থাকি। মাটি, তামা-কাসা, সোনা-রূপা, এ্যলুমিনিয়াম, মেলামাইন প্রভৃতি নানারকম উপাদান থেকে এসব আসবাবপত্র তৈরী হয়ে থাকে। এসব পাত্র ব্যবহারের বেলায়ও ইসলামের কিছু সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। আবার পাত্রটি যদি হয় অমুসলিমদের ব্যবহৃত তাহলে সেটির বেলায়ও রয়েছে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা। তাছাড়া এসব পাত্রে কোন অপবিত্র প্রাণীর মুখ লাগলে বিশেষ পদ্ধতিতে পরিচ্ছন্ন করে তা ব্যবহার করতে হয়। নিম্নে আমরা এ সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত বিধান সন্নিবেশিত করছি।
৬.১. পানাহারে অমুসলিমদের পাত্র ব্যবহার:
ইসলাম মুসলিমদেরকে সকল ক্ষেত্রে নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখে চলতে বলে। বিশেষ করে আহার-নিদ্রা ও চলাফেরায় তারা যেন অমুসলিমদের সাথে মিশতে গিয়ে তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে না যায় এবং নিজেদের স্বকীয়তা যেন হারিয়ে না ফেলে। ইসলামের দাওয়াত সম্প্রসারণের লক্ষ্যে একজন মুসলিম অবশ্যই কাফির ও মুশরিকদের সাথে মিশবে, তাদের উপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে। নিজের আচার-ব্যবহার ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তাদের মন জয় করবে। ইসলামের সুশীতল ছায়ার দিকে তাদেরকে ডাকবে। কিন্তু অবস্থা যেন এত মাখামাখির পর্যায়ে না যায় যে, বিছানা-বালিশ, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি সব কিছুতে তারা এক ও অভিন্ন হয়ে গেছে। যেমন- পানাহারের ক্ষেত্রে তাদের ব্যবহৃত আসবাবপত্র মুসলিমরা ব্যবহার করতে পারবে কি না এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন:
عن أَبي ثَعْلَبَةَ الْخُشَنِيَّ رضي الله عنه يقول: أَتَيْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فقلت: يا رَسُولَ اللهِ إِنَّا بِأَرْضِ قَوْمٍ أَهْلِ الْكِتَابِ نَأْكُلُ في آنِيَتِهِمْ وَأَرْضِ صَيْدٍ أَصِيدُ بِقَوْسِي وَأَصِيدُ بِكَلْبِي الْمُعَلَّمِ وَالَّذِي ليس مُعَلَّمًا، فَأَخْبِرْنِي ما الذي يَحِلُّ لنا من ذلك. فقال: أَمَّا ما ذَكَرْتَ أَنَّكَ بِأَرْضِ قَوْمٍ أَهْلِ الْكِتَابِ تَأْكُلُ في آنِيَتِهِمْ فَإِنْ وَجَدْتُمْ غير آنِيَتِهِمْ فلا تَأْكُلُوا فيها، وَإِنْ لم تَجِدُوا فَاغْسِلُوهَا ثُمَّ كُلُوا فيها. وَأَمَّا ما ذَكَرْتَ أَنَّكَ بِأَرْضِ صَيْدٍ فما صِدْتَ بِقَوْسِكَ فَاذْكُرْ اسْمَ اللهِ ثُمَّ كُلْ وما صِدْتَ بِكَلْبِكَ الْمُعَلَّمِ فَاذْكُرْ اسْمَ اللهِ ثُمَّ كُلْ وما صِدْتَ بِكَلْبِكَ الذي ليس مُعَلَّمًا فَأَدْرَكْتَ ذَكَاتَهُ فَكُلْ .
আবূ সা‘লাবাহ আল-খুশানী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আহলে কিতাবদের জনপদে বাস করি এবং তাদের পাত্রে আহার করি। শিকারের এলাকায় থাকি। কখনো নিজের তীর দিয়ে শিকার করি, কখনো নিজের প্রশিক্ষিত কুকুর দিয়ে শিকার করি আবার কখনো বা প্রশিক্ষিত নয় এমন কুকুর দিয়েও শিকার করি। আপনি আমাকে বলুন যে, এগুলোর মধ্যে কোন্টি আমাদের জন্য হালাল হবে? তখন তিনি বললেন: ‘তুমি বলেছো যে, আহলে কিতাবদের জনপদে বাস কর বিধায় তাদের বাসন-কোসন ও পাত্রে আহার কর। (এ ব্যাপারে কথা হলো যে,) যদি তাদের পাত্র ছাড়া অন্য পাত্র পাও তাহলে তাদেরগুলোতে আহার করো না। আর যদি (এগুলো ছাড়া) না পাও তাহলে তা ধুয়ে নাও এবং তাতে আহার কর। আর শিকারের এলাকায় থাকার কারণে শিকার করা প্রাণীদের যে বর্ণনা দিয়েছো (সে ব্যাপারে কথা হলো যে,) যা তুমি নিজের তীর দিয়ে শিকার করো তাতে আল্লাহর নাম নাও এবং তা খাও। আর প্রশিক্ষিত কুকুর দিয়ে যা শিকার করো তাতেও আল্লাহর নাম নাও এবং তা খাও। তবে প্রশিক্ষিত নয় এমন কুকুর দিয়ে যা শিকার করেছো তা যদি জবাই করতে পেরে থাক, তাহলে তাও খাও।
عن الخشني رضي الله عنه قال: قلت يا رسول الله! إنا نخالط المشركين وليس لنا قدور ولا آنية غير آنيتهم قال فقال استغنوا عنها ما استطعتم فإن لم تجدوا فارحضوها بالماء فإن الماء طهورها ثم اطبخوا فيها.
আল-খুশানী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা মুশরিকদের সাথে মিশি। (অনেক সময়) তাদেরগুলো ছাড়া আমাদের নিজেদের হাড়ি-পাতিল ও পাত্র থাকে না। (এমতাবস্থায় আমরা কি তাদের পাত্রগুলো ব্যবহার করতে পারব?) বর্ণনাকারী বলেন- অত:পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমরা যতক্ষণ সম্ভব তাদেরগুলো পরিহার করার চেষ্টা করবে। যদি এগুলো ছাড়া কোন উপায়ই না থাকে তাহলে তা পানি দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নাও, কেননা পানিই হলো এগুলোর পবিত্রকারী। এরপর তোমরা সেগুলোতে রান্না কর।
عن أبي ثَعْلَبَةَ الْخُشَنِيِّ رضي الله عنه قال: سُئِلَ رسول اللهِ صلى الله عليه وسلم عن قُدُورِ الْمَجُوسِ ، فقال: انقوها غَسْلًا وَاطْبُخُوا فيها وَنَهَى عن كل سَبُعٍ وَذِي نَابٍ .
আবূ সা‘লাবাহ আল-খুশানী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মাজূসীদের (অগ্নি উপাসক) হাঁড়ি-পাতিল ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন: এগুলো পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নাও, অত:পর এতে রান্নাবান্না কর। তিনি নখর ও শিকারী দাঁতযুক্ত হিংস্র প্রাণীও (খেতে) নিষেধ করেছেন।
অতএব পারতপক্ষে অমুসলিমদের পাত্র ব্যবহার করা যাবে না। কেননা অপর এক বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে বলেছেন যে, ‘তোমরা তাদের পাত্র ছাড়া অন্য পাত্র সংগ্রহ করতে পারলে তাতে খাওয়া-দাওয়া করো না। আর অন্য পাত্র যোগার করতে না পারলে এগুলো পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নাও, অত:পর এতে খাও’। সুতরাং বাধ্য না হলে অমুসলিমদের পাত্র ব্যবহার করা যাবে না। আর একান্ত বাধ্য হলে তা পানি দিয়ে ভাল করে ধৌত করে ব্যবহার করতে কোন আপত্তি নেই।
৬.২. স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে পানাহার:
সাধারণভাবে স্বর্ণের ব্যবহার মুসলিম পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ। তাছাড়া স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্র ব্যবহার করা সকল মুসলিম নরনারীর জন্যই নিষিদ্ধ। আর যা ব্যবহার করা সকলের জন্য হারাম, তা তোহফা বা উপহার হিসেবে দেয়াও হারাম এবং সাজ-সজ্জা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যও হারাম। এ কারণেই মুসলমানদের ঘরে স্বর্ণ-রৌপ্যের পাত্র ও খাঁটি রেশমের শয্যা থাকাটাও হারাম করে দেয়া হয়েছে। যারা এ নীতির বিরোধিতা করবে তাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কঠোর ভাষায় কঠিন পরিণতির কথা শুনিয়েছেন। যেমন-
عن أم سلمة رضي الله عنها أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: الذي يشرب في آنية الفضة إنما يجرجر في بطنه نار جهنم. وفي رواية لمسلم: إن الذي يأكل أو يشرب في آنية الفضة والذهب. وفي رواية له: من شرب في إناء من ذهب أو فضة فإنما يجرجر في بطنه نارا من جهنم.
উম্মু সালামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি রোপার পাত্রে পান করে সে জাহান্নামের আগুন দিয়েই তার পেটকে প্রজ্জলিত করে। মুসলিমের অন্য বর্ণনায় রয়েছে: যে ব্যক্তি রূপা অথবা সোনার পাত্রে পান করল সে যেন তার পেট আগুন দিয়ে প্রজ্জলিত করল। তাঁর (ইমাম মুসলিমের) অপর এক বর্ণনায় রয়েছে যে, যে ব্যক্তি স্বর্ণের অথবা রৌপ্যের পাত্রে পান করল সে যেন জাহান্নামের আগুন দিয়ে তার পেটকে প্রজ্জলিত করল।
عن حذيفة رضي الله عنه قال: إن النبي صلى الله عليه وسلم نهانا عن الحرير والديباج والشرب في آنية الذهب والفضة، وقال: هي لهم في الدنيا، وهي لكم في الآخرة .
হুযাইফাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে রেশমী ও রেশম সুতি মিশেল কাপড় পড়তে নিষেধ করেছেন। তিনি সোনা ও রূপার পাত্রে পান করতেও আমাদেরকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন: এসব জিনিস দুনিয়াতে তাদের (কাফিরদের) জন্য এবং আখিরাতে তোমাদের জন্য।
عن الْحَكَمِ قَال سمعت بن أبي لَيْلَى يحدث أَنَّ حُذَيْفَةَ اسْتَسْقَى فَأَتَاهُ إِنْسَانٌ بِإِنَاءٍ من فِضَّةٍ فَرَمَاهُ بِهِ وقال: إني كنت قد نَهَيْتُهُ فَأَبَى أَنْ يَنْتَهِيَ أن رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم نهى عن الشُّرْبِ في آنِيَةِ الْفِضَّةِ وَالذَّهَبِ وَلُبْسِ الْحَرِيرِ وَالدِّيبَاجِ وقال: هِيَ لهم في الدُّنْيَا وَلَكُمْ في الْآخِرَةِ . وفي الْبَاب عن أُمِّ سَلَمَةَ وَالْبَرَاءِ وَعَائِشَةَ . قال أبو عِيسَى هذا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
হাকাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবন আবী লাইলাকে বর্ণনা করতে শুনেছি যে, হুযাইফাহ (রা.) পানি পান করতে চাইলেন। এক ব্যক্তি রোপার পাত্রে করে তার জন্য পানি নিয়ে আসলো। তিনি তা ছুড়ে মারলেন এবং বললেন: আমি (ইতিপূর্বে) তাকে নিষেধ করেছি, কিন্তু সে তা থেকে বিরত হয়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোনা-রূপার পাত্রে পান করতে এবং রেশম ও মখমলের কাপড় পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন: দুনিয়ায় এগুলো তাদের (কাফিরদের) জন্য এবং আখিরাতে এগুলো তোমাদের জন্য। এ অনুচ্ছেদে উম্মু সালামাহ, বারাআ এবং ‘আয়িশাহ (রা.) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান ও সাহীহ।
عن عَائِشَةَ رضي الله عنها عَنِ النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال في الذي يَشْرَبُ في إِنَاءِ فِضَّةٍ كَأَنَّمَا يُجَرْجِرُ في بَطْنِهِ نَاراً .
‘আয়িশাহ (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন: যে ব্যক্তি রোপার পাত্রে পান করে সে জাহান্নামের আগুন দিয়েই তার পেটকে প্রজ্জলিত করে।
উপরোক্ত হাদীসসমূহে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্র ব্যবহারে কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। মূলত: এসব পাত্রে পানাহার করা অহংকার ও গর্বের প্রতীক বটে। উপরন্তু পরকালে মহান আল্লাহ এসব পাত্রে জান্নাতী নারী-পুরুষদের পানাহার করাবেন। অতএব দুনিয়ার জীবনে রূপা অথবা সোনার পাত্রে পানাহার করা কোন মুসলিমের জন্য শোভনীয় নয়। স্বর্ণ-রৌপ্যের পাত্র ব্যবহার ও রেশমের শয্যা গ্রহণ পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্যই হারাম। মুসলিমদের ঘর-বাড়ি বিলাসদ্রব্য থেকে মুক্ত ও পবিত্রকরণই এগুলোকে হারাম করার একমাত্র উদ্দেশ্য। এ প্রসঙ্গে ইবন কুদামাহ (রহ.) চমৎকার লিখেছেন-
‘‘হাদীসে সাধারণভাবেই এ কথাগুলো এসেছে বলে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যেই তা সমানভাবে হারাম। কেননা এগুলোকে হারাম করার উদ্দেশ্য হচ্ছে অপচয়, বেহুদা খরচ, গৌরব-অহংকার ও দরিদ্রদের মনে আঘাত দান বন্ধ করা। আর তা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই সমান। তবে স্ত্রী লোকদের জন্য অলংকারাদির ব্যবহার শুধু এজন্যেই জায়েয যে, যেন তারা তাদের স্বামীদের জন্য সাজ-সজ্জা করতে পারে। কেউ হয়ত প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে যে, তাহলে ইয়াকূত, হীরা, জহরত ইত্যাদি মহামূল্যবান পাথরের বর্তনাদি কেন হারাম হলো না? তার জবাব হচ্ছে, গরীব লোকেরা এসব জিনিসের সাথে পরিচিত নয়। কাজেই ধনী লোকেরা যদি তা ব্যবহার করে তাহলে গরীব লোকদের মনে কষ্ট পাওয়ার কোন কারণ হয় না। তাছাড়া এসব মহামূল্য পাথর পরিমাণে খুব কমই থাকে বলে তা দিয়ে পাত্র বানাবার কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। এ কারণে তা হারাম করার কোন প্রয়োজনই অবশিষ্ট থাকে না। কিন্তু স্বর্ণ-রৌপ্যের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভিন্ন’’। সোনা ও রোপার তৈজষপত্র হারাম হওয়ার পেছনে এসব কারণ ছাড়া অর্থনৈতিক কারণও রয়েছে। কেননা সোনা ও রোপা আন্তর্জাতিকভাবে নগদ মূলধন বলে গণ্য। তাই এটি বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়েরও কাজ করে। মহান আল্লাহ একে ধন-সম্পদের মূল্যমানরূপে নির্দিষ্ট করেছেন। এবং তা ব্যবহারের পদ্ধতি বলে দিয়ে মানুষকে তাঁর নি‘আমাত দানে ধন্য করেছেন। তিনি চান যে, মানুষ যেন এটা সবসময় আবর্তনের মধ্যে রাখে। একে নগদ সম্পদ হিসেবে ঘরে বন্ধ করে রাখা বা সৌন্দর্য সামগ্রী করে বেকার ফেলে রাখা তিনি কিছুতেই পছন্দ করেন না।
৬.৩. পানাহারে চাকু, ছুরি, চামচ ইত্যাদির ব্যবহার:
হাতে পানাহার করা সুন্নাত। তবে পানাহারে চাকু, ছুরি, চামচ ইত্যাদি ব্যবহার করতে কোন দোষ নেই। অবশ্য সেটা খাবারের কাজে ব্যবহৃত ছুরি ও চামচই হতে হবে। অন্য কাজে ব্যবহৃত নয়। খাবারের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন, খাদ্যের সংরক্ষণ এবং লোকমা ছোট করার ক্ষেত্রে এগুলো যদি বেশী কার্যকর হয় তাহলে তা দিয়ে পানাহার করা সুন্নাত বিরোধী হবে না। এক্ষেত্রে এগুলোও হাতের স্থলাভিষিক্ত এবং এর সহযোগী। এমনকি পানাহারের সময় কাঁটা চামচের সহযোগিতা নেয়াও সুন্নাত বিরোধী হবে না যদি তা ডান হাত দিয়েই ব্যবহার করা হয় এবং এর দ্বারা নিছক বিধর্মীদের অনুকরণ উদ্দেশ্য না হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও খাবারের সময় ছুরির সহযোগিতা নিয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন-
عن بن شِهَابٍ قال أخبرني جَعْفَرُ بن عَمْرِو بن أُمَيَّةَ أَنَّ أَبَاهُ عَمْرَو بن أُمَيَّةَ رضي الله عنه أخبره أَنَّهُ رَأَى رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَحْتَزُّ من كَتِفِ شَاةٍ في يَدِهِ، فَدُعِيَ إلى الصَّلَاةِ فَأَلْقَاهَا وَالسِّكِّينَ التي كان يَحْتَزُّ بها، ثُمَّ قام فَصَلَّى، ولم يَتَوَضَّأْ.
ইবন শিহাব (রহ.) জা‘ফর ইবন ‘আমর ইবন উমাইয়ার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তার পিতা ‘আমর ইবন উমাইয়াহ (রা.) রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছেন যে, তিনি বকরীর কাঁধ থেকে গোশত ছাড়িয়ে হাতে নিচ্ছেন। যখন তাঁকে নামাযে ডাকা হলো তখন তিনি তা রেখে দিলেন এবং ঐ ছুরিটিও রেখে দিলেন যা দিয়ে তিনি গোশত ছাড়াচ্ছিলেন। তারপর নতুনভাবে উযূ না করেই তিনি গিয়ে নামায পড়লেন।
অতএব চাকু, ছুরি ও চামচ ইত্যাদি খাওয়ার কাজে ব্যবহার করতে কোন দোষ নেই। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও ছুরি দিয়ে গোশত কেটে খেয়েছেন বলে প্রমাণিত। আর বর্তমান সময়ে থাকলে হয়ত তিনি অন্যান্য আধুনিক জীবনোপকরণের মত ভাতের চামচ, কাটা চামচ, চা চামচ, টেবিল চামচ ও হাতা (বড় বাটি থেকে মিষ্টি ইত্যাদি তুলে পরিবেশন করার কাজে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের লম্বা হাতল বিশিষ্ট চামচ) ইত্যাদি সবই ব্যবহার করতেন।
৬.৪. পাত্রে কুকুর, বিড়াল কিংবা অন্য কোন প্রাণী মুখ দিলে করণীয়:
অনেক সময় অসাবধানতাবশত: কোন পাত্রের মুখ খোলা থাকলে বাড়িতে অবস্থানকারী বিভিন্ন প্রাণী তাতে মুখ দিয়ে বসতে পারে। এমতাবস্থায় ঐ পাত্রের অবশিষ্ট খাদ্য বা পানীয় আমরা খেতে পারব কিনা- এ প্রশ্নটি অতিশয় সংগত। কেননা বাড়িতে পোষা বিড়াল কিংবা কুকুর ছাড়াও অনেক প্রাণী আমাদের কাছাকাছি বসবাস করে যাদেরকে আমরা ইচ্ছা করলেও সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলতে পারি না। বিশেষ করে মাছি এবং ইঁদুর ইত্যাদির উপস্থিতি প্রায় বাড়িতেই লক্ষ্য করা যায়। এসব বিষয়েও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দিকনির্দেশনা বিদ্যমান। যেমন-
عن أبي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قال قال رسول اللهِ صلى الله عليه وسلم: إذا وَلَغَ الْكَلْبُ في إِنَاءِ أَحَدِكُمْ فَلْيُرِقْهُ ثُمَّ لِيَغْسِلْهُ سَبْعَ مِرَارٍ.
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: তোমাদের কারো পাত্রে যদি কুকুর মুখ দেয়, তাহলে সে যেন তা ফেলে দেয়। এরপর যেন তা সাতবার ধুয়ে নেয়।
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: إذا ولغ الكلب في إناء أحدكم فاغسلوه سبع مرات .
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: তোমাদের কারো পাত্রে কুকুর মুখ দিলে তোমরা তা সাতবার ধুয়ে নাও।
عن أبي هريرة رضي الله عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا ولغ الكلب في إناء أحدكم فليغسله سبع مرات إحداهن بالتراب .
আবূ হুরাইরাহ (রা.) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তোমাদের কারো পাত্রে কুকুর মুখ দিলে সে যেন তা সাত বার ধুয়ে নেয়। তন্মধ্যে একবার যেন হয় মাটি দিয়ে। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, অষ্টমবার যেন তা মাটি দিয়ে রগড়িয়ে ধুয়া হয়।
উপরোক্ত হাদীস সমূহ থেকে একথা স্পষ্ট হলো যে, শিকারের কাজে কুকুরকে ব্যবহার করা গেলেও সাধারণভাবে কুকুর অপবিত্র। তাই কোন পাত্রে কুকুর মুখ দিলে সে পাত্রের অবশিষ্ট খাদ্য অথবা পানীয় ফেলে দিতে হয় এবং পাত্রটিকে সাতবার অথবা আটবার ধুয়ে নিতে হয়। এমনকি পাত্রটিকে জীবাণুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে একে যেন একবার মাটি দিয়ে রগড়িয়ে নেয়া হয়। পক্ষান্তরে কোন পাত্রে বিড়াল মুখ দিলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশনা ছিল অন্যরকম। যেমন-
عن عائشة رضي الله عنها أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لهم: إنها ليست بنجس هي كبعض أهل البيت يعني الهرة .
‘আয়িশাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, (খাবারে বিড়ালের মুখ দেয়া সংক্রান্ত বিষয়ে একদল সাহাবী জিজ্ঞেস করলে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে বলেন: এটি অপবিত্র নয়। এটি ঘরের অধিবাসীদের মতই। এর দ্বারা তিনি বিড়ালকে বুঝিয়েছেন।
عن كَبْشَةَ بِنْتِ كَعْبِ بن مَالِكٍ وَكَانَتْ تَحْتَ بن أبي قَتَادَةَ ان أَبَا قَتَادَةَ دخل عليها فَسَكَبَتْ له وَضُوءًا فَجَاءَتْ هِرَّةٌ تَشْرَبُ منه فَأَصْغَى لها أبو قَتَادَةَ الْإِنَاءَ حتى شَرِبَتْ . قالت كَبْشَةُ فَرَآنِي انظر فقال: أَتَعْجَبِينَ يا بِنْتَ أَخِي؟ قلت نعم، قال إن رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قال: إِنَّهَا لَيْسَتْ بِنَجَسٍ إنما هِيَ من الطَّوَّافِينَ عَلَيْكُمْ أو الطوافات.
কাবশাহ বিনত কা’ব ইবন মালিক (যিনি আবূ কাতাদাহ এর পুত্রবধূ ছিলেন) থেকে বর্ণিত যে, আবূ কাতাদাহ একদিন তার কাছে এলেন। তিনি তার জন্য উযুর পানি দিলেন। আর অমনি একটি বিড়াল সেখান থেকে পানি পান করতে এগিয়ে এল। আবূ কাতাদাহ তার জন্য পাত্রটি কাত করে দিলেন এবং সে পান করল। কাবশাহ বলেন, তিনি লক্ষ্য করলেন যে, আমি বিষয়টির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। অত:পর বললেন: ওহে ভাতিজী! তুমি কি অবাক হচ্ছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: এটি নাপাক নয়। এটি তোমাদের মাঝে পূণ: পূণ: আগমনকারী।
অতএব বিড়ালের বিষয়টি কুকুর থেকে ভিন্ন। বিড়াল কুকুরের ন্যায় নোংরা কিংবা হিংস্র নয়। আর এটি মানুষের ঘরে ও বাইরে এমনভাবে বিচরণ করে যে, এ যেন পরিবারেরই একজন সদস্য। সাহাবায়ে কিরামের কারো কারো বিড়াল পোষার প্রবণতা ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে তাদেরকে নিষেধও করেননি। এমনিভাবে বিড়ালের ন্যায় আরেকটি অপ্রতিরোধ্য প্রাণী হলো মাছি। এটিও চোখের পলকে মানুষের খাবারে এসে মুখ দিতে চায়। এগুলোর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إذا وقع الذباب في إناء أحدكم فليغمسه فإن في أحد جناحيه داء وفي الآخر شفاء وإنه يتقي بجناحه الذي فيه الداء فليغمسه كله ثم لينزعه .
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: তোমাদের কারো পাত্রে যদি মাছি পড়ে যায়, তাহলে সে যেন সেখানে তাকে ডুবিয়ে দেয়। কেননা এর এক ডানায় থাকে জীবাণু আর আরেক ডানায় থাকে তার প্রতিষেধক। তার যে ডানায় জীবাণু থাকে তা থেকে অবশ্যই সাবধান থাকা উচিত। কাজেই (যদি কারো পাত্রে মাছি বসে যায়) সে যেন এর পুরো দেহকেই সেখানে ডুবিয়ে দেয়, অত:পর যেন তা উঠিয়ে ফেলে দেয়।
আর ইঁদুর কিংবা অন্য কোন অপবিত্র বস্ত্ত খাবারে পড়ে মরে গেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা ফেলে দিতে বলেছেন। কেননা এটি মানুষের স্বভাব বিরুদ্ধ এবং অরুচিকর বিষয়। পানাহারের ক্ষেত্রে ইসলাম কোন ধরনের অরুচিকর বস্ত্তকে অনুমোদন করে না। যেমন বর্ণিত হয়েছে যে,
عن أبي الزبير قال: سألت جابرا رضي الله عنه عن الفأرة تموت في الطعام أو الشراب أأطعمه ؟ قال: لا، زجر رسول الله صلى الله عليه وسلم عن ذلك. رواه أحمد .
আবুয যুবাইর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি জাবির (রা.) কে জিজ্ঞেস করলাম যে, খাদ্য অথবা পানীয়ের মধ্যে ইঁদুর পড়ে মরে গেলে আমি কি তা খেতে পারব? তিনি বললেন: না, এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। ইমাম আহমাদ এটি বর্ণনা করেছেন।
ইসলাম বিভিন্ন জীবের ব্যাপারে দয়াপরবশ হতে বললেও এদের সাথে এমন মাখামাখি করে চলার অনুমতি দেয় না যা স্বাভাবিক মানব প্রকৃতির বিরোধী। কোন কোন জীবকে ইসলাম মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করার অনুমতি দেয়। এবং সেজন্য তাকে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দিয়ে তারপর তার দ্বারা উপকৃত হওয়া অনুমোদন করে। কিন্তু পাশ্চাত্য সভ্যতায় মানবীয় প্রকৃতিকে বিসর্জন দিয়ে কুকুর-বিড়াল নিয়ে মেতে উঠতে উদ্বুদ্ধ করে। আহার-বিহার সবকিছুতেই তারা যেন এক ও একাকার। ইসলাম এক্ষেত্রে একটি সীমারেখা টেনে দিয়ে মানুষকে তার মনুষ্যত্ব বজায় রেখে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হিসেবে অন্যান্য সকল জীবের প্রতি দয়া করতে শেখায়।
৭. খাদ্য-দ্রব্যে প্রতিবেশীদের অধিকার:
ইসলাম প্রতিবেশীদের অধিকারকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছে। তাই সুখে-দু:খে সবসময় প্রতিবেশীর কথা স্মরণ রাখতে বলেছে। একজন প্রকৃত মুসলিম তার প্রতিবেশীর সাথে সবসময় দয়ালু আচরণ করবে, সুন্দরভাবে তার সাথে মিশবে এবং উত্তম আচরণের মাধ্যমে তার হৃদয় জয় করে নেবে, এটাই স্বাভাবিক। প্রতিবেশী কোন প্রয়োজনে তার ঘরে আসলে সে তার প্রয়োজন পূরণের চেষ্টা করবে। মহান আল্লাহ বলেন:
(وَآتِ ذَا الْقُرْبَى حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَلاَ تُبَذِّرْ تَبْذِيراً )
‘‘আর প্রতিবেশীকে তার অধিকার দিয়ে দাও এবং দাও মিসকীন ও পথিককে। (খবরদার) অপব্যয় করো না’’।
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ আরো বলেন:
(وَاعْبُدُواْ اللّهَ وَلاَ تُشْرِكُواْ بِهِ شَيْئاً وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالجَنبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللّهَ لاَ يُحِبُّ مَن كَانَ مُخْتَالاً فَخُوراً )
‘‘তোমরা আল্লাহর গোলামী কর, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না, পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার কর, নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম ও মিসকীনদের সাথে নেক আচরণ কর এবং আত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের অধীনে যেসব দাস-দাসী রয়েছে তাদের প্রতি সদয় হও। নিশ্চয়ই জেনে রাখ যে, আল্লাহ এমন লোককে পছন্দ করেন না, যে বড় হওয়ার গৌরব করে ও অহংকার করে’’।
এ আয়াতে আত্মীয় কিংবা অনাত্মীয় প্রতিবেশী ছাড়াও আরেক ধরনের প্রতিবেশীর কথা বলা হয়েছে। তারা হলো- ‘সাহিবি বিল জানবি’ বা পাশের সাথী। এর অর্থ একত্রে বসবাসকারী বন্ধুও হতে পারে। কোথাও কোনো সময় সাময়িকভাবে কেউ সঙ্গী হলে তাকেও বুঝাতে পারে। যেমন বাজারের পথে, দোকানে কোন কিছু কেনার সময় অথবা সফরে যে ব্যক্তি কারো সহযাত্রী হয়েছে। এসব অস্থায়ী ও সাময়িক প্রতিবেশীরও কিছু না কিছু হক আছে। সুতরাং আমাদের বাসস্থানের আশেপাশে যেই বাস করুক, আমাদের উপর তার প্রতিবেশীত্বের অধিকার রয়েছে। আমাদের সাথে তার বংশীয় বা ধর্মীয় কোনো ধরনের সম্পর্ক থাকুক বা নাই থাকুক, তাতে কিছু যায় আসে না, সে যে আমাদের পাশে থাকে এটাই বিবেচ্য বিষয়। তাই তার প্রতি যথাসম্ভব ভালো ব্যবহার করা ও তাকে দু:খ দেয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
মানব সমাজে শান্তিময় সহঅবস্থানের জন্য সৎ ও আদর্শবান প্রতিবেশীর কোন বিকল্প নেই। এ কারণেই বলা হয় যে, ‘নতুন বসত গড়ার আগে প্রতিবেশী দেখে নাও’। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন তাঁর প্রতিবেশীদের প্রতি একান্তভাবেই মমতাশীল, দয়াবান, সহনশীল ও তাদের সহযোগী। তিনি সদা সর্বদা প্রতিবেশীদের সাথে উত্তম আচরণ করতেন। প্রতিবেশীকে অনাহারে রেখে তিনি কখনও খাদ্য গ্রহণ করতেন না। প্রতিবেশীর প্রতি সদাচরণ করার জন্য বিশেষ তাকিদ দিয়ে (তিন তিন বার আল্লাহর কসম করে) তিনি বলেছেন-
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: والله لا يؤمن، والله لا يؤمن، والله لا يؤمن ! قيل: من يا رسول الله ؟ قال: الذي لا يأمن جاره بوائقه.
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আল্লাহর কসম, সে মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম, সে মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম, সে মু’মিন নয়। জিজ্ঞেস করা হলো- কে সে ব্যক্তি ? হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন: ‘যে ব্যক্তির অনিষ্ট হতে তার প্রতিবেশী নিরাপদে থাকে না’।
عن عبد الله بن المساور قال: سمعت عبد الله بن عباس رضي الله عنهما يقول: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: ليس المؤمن الذي يشبع وجاره جائع إلى جنبه.
‘আবদুল্লাহ ইবন আল-মুসাবির থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি ‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আববাস (রা.) কে বলতে শুনেছি, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন: ‘সে ব্যক্তি মু’মিন নয় যে তার উদর পূর্তি করে খায়, অথচ তার পাশেই তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত অবস্থায় কাটায়’।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকল প্রতিবেশীদেরই আশ্রয়স্থল, সকলের প্রতি দরদী ও সহমর্মী একান্ত আপনজন। তিনি নিজে ছিলেন একজন সৎ ও আদর্শবান উত্তম প্রতিবেশী। তিনি বলেন:
ما زال جبريل يوصيني بالجار حتى ظننت أنه سيورثه.
‘প্রতিবেশীর প্রতি সদাচরণ করার জন্য জিবরীল আমাকে যেরূপ অব্যাহতভাবে তাগিদ দিচ্ছিলেন তাতে আমি ধারণা করেছিলাম যে, তিনি হয়ত প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেবেন’।
প্রতিবেশী শুধু সদাচরণ পাওয়ারই যোগ্য নয়, বরং পানাহারেও তার ভাগ পাওয়ার অধিকার আছে। একবার আবূ যার (রা.)-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার প্রতিবেশীর ব্যাপারে নসীহত করে বলছিলেন-
يا أبا ذر ! إذا طبخت مرقةً فأكثرْ ماءها، وتعاهد جيرانك .
হে আবূ যার! তুমি যদি ঝোল রান্না কর তাহলে তাতে বেশি করে পানি দাও (একটু বেশি পরিমাণে রান্না কর) এবং তোমার প্রতিবেশীদেরকে (খোজ করে) পাঠিয়ে দাও।
লক্ষ্যণীয় যে, এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাল কিছু রান্না হলে প্রতিবেশীদেরকে তাতে শামিল করতে বলেছেন। কেননা ভাল রান্নার সুবাসকে আটকে রাখা যায় না। ফলে তাতে তাদেরকে শামিল করা না হলে তারা (বিশেষ করে তাদের শিশু সন্তানেরা) কষ্ট পাবে। অথবা তাদের বাবা-মাকে এরূপ ভাল খাবারের জন্য পীড়াপিড়ী করবে। অথচ সামর্থের অভাবে তারা হয়ত এ মানের খাবারের ব্যবস্থা করতে পারবে না। এত্থেকে অতি সহজেই অনুমান করা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কত বড় আদর্শ সমাজবিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি প্রতিবেশীর ব্যাপারে শুধু কয়টি নীতি বাক্য বলেই ক্ষান্ত হননি। বরং আশপাশের চল্লিশ ঘর পর্যন্ত প্রতিবেশীর সীমানা এটে দিয়েছেন। বর্ণিত হয়েছে যে-
عن عائشة رضي الله عنها قالت: يا رسول الله ما حق أو قال ما حد الجوار ؟ قال: أربعون دارا .
‘আয়িশাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: হে আল্লাহর রাসূল! প্রতিবেশীত্বের সীমা কি? তিনি বললেন: চল্লিশ ঘর।
প্রতিবেশীর সীমানা এটে দেয়ার মাধ্যমে এভাবে তিনি গোটা সমাজকে এক নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ করে দিয়েছেন। সেই সময়ে আশপাশে চল্লিশ ঘর বলতে বিরাট এলাকাকে বুঝাত। কিন্তু আজকাল হয়ত অতি অল্প জায়গাতেই চল্লিশটি পরিবার বাস করে। একই বাড়ীতে উপরের দিকেও অনেক পরিবার বাস করে। অথচ দু:খজনক হলেও সত্য যে, বছরের পর বছর ধরে একই বিল্ডিং এর পাশাপাশি ফ্ল্যাটে বাস করেও আজকাল অনেকে তার প্রতিবেশীকে চিনেই না। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর উম্মাতদের জন্য এটি নি:সন্দেহে অত্যন্ত দু:খজনক। বর্ণিত হয়েছে যে,
عن عائشت رضي الله عنها قالت، قلت: يا رسول الله! إن لي جارين، فإلى أيهما أهدي؟ قال: إلى أقربهما منكِ باباً.
‘আয়িশাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমার দুইজন প্রতিবেশী আছে। তাহলে আমি তাদের মধ্য থেকে কাকে হাদিয়া দেব? তিনি বলেন: তোমার থেকে যেই প্রতিবেশীর দরজা বেশি নিকটে তাকে।
عن عبد الله بن عمر رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: خيرالأصحاب عند الله تعالى خيرهم لصاحبه، وخيرالجيران عند الله تعالى خيرهم لجاره.
‘আবদুল্লাহ ইবন ‘উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: বন্ধুদের মধ্যে মহান আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম সেই যে তার বন্ধুর দৃষ্টিতে উত্তম। আর প্রতিবেশীদের মধ্যে মহান আল্লাহর নিকট উত্তম প্রতিবেশী সেই যে তার প্রতিবেশীর কাছে উত্তম।
প্রতিবেশীদের প্রতি সদাচরণের ক্ষেত্রে তাই নিকটতম প্রতিবেশীকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। মানুষের স্বাভাবিক বিবেক ও অনুভূতির দাবীও এটিই। এতে ভালোবাসা, সহানুভূতি ও কল্যাণকামিতা স্থায়িত্ব লাভ করে। প্রতিবেশীর প্রতি সদাচার এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়টিকে ঈমানের সাথে জড়িয়ে ঘোষণা করেছেন:
عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ما يؤمن من بات شبعان وجاره طاو إلى جنبه.
ইবন ‘আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: ‘যে ব্যক্তি পেট পুরে খেয়ে রাত কাটাল, অথচ সে জানে তার পাশে তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত। সে ঈমান আনেনি’।
একজন সচেতন মুসলিম তাই স্বীয় সদাচরণকে শুধু তার মুসলিম প্রতিবেশীদের জন্য সীমাবদ্ধ রাখবে না, বরং অমুসলিম প্রতিবেশীদের মাঝেও তা ছড়িয়ে দেবে। দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের সাথেই তার সদাচরণ অব্যাহত রাখবে। এজন্যেই আহলে কিতাবগণ মুসলিমদের প্রতিবেশীত্বে নির্ভয়ে জীবন যাপন করত। কেননা মহান আল্লাহ বলেন:
(لَا يَنْهَاكُمُ اللهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ )
‘‘যারা দীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়ি-ঘর থেকে বের করে দেয়নি, তাদের সাথে সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন’’।
অতএব একজন অমুসলিম প্রতিবেশীর প্রতিও সদাচরণ করতে হবে। বরং তার প্রতি আরো বেশি সদাচরণের মাধ্যমে তাকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে নিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৎ প্রতিবেশীকে একজন মুসলিমের অন্যতম সৌভাগ্য হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন:
من سعادة المرء المسلم في الدنيا الجار الصالح والمنزل الواسع والمركب الهنيئ .
পার্থিব জগতে মুসলিমের সৌভাগ্যের অন্যতম হলো- সৎ প্রতিবেশী, সু-প্রশস্ত গৃহ এবং উত্তম বাহন।
অতএব প্রতিবেশীদের প্রতি আমাদেরকে যত্নবান হতে হবে। দু:খে-দারিদ্রে ও অভাব অনটনে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। নিজের সুখ-সুবিধায় তাদেরকেও শামিল করতে হবে। তারা অমুসলিম হয়ে থাকলে সদাচরণের মাধ্যমে তাদের মন জয় করতে হবে এবং ইসলামের দিকে তাদেরকে আহবান জানাতে হবে।
8. পানাহারে গৃহপরিচারিকা ও ভৃত্যদের অধিকার:
বাড়ীতে যারা কাজের লোক হিসেবে থেকে কাজ করে অথবা যারা রান্না-বান্নায় সহযোগিতা করে খাবারের সকল আইটেমেই তাদেরকে শামিল করানো উচিত। কেননা সে এই খাবার দেখেছে, হাত দিয়ে ধরেছে, মাথায় করে এনেছে.. ইত্যাদি। তাই এ খাবারের প্রতি তার একটা আগ্রহ থেকে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। তাই তাকে কেবল অন্য খাবার খেতে দেয়া এবং এই বিশেষ খাবার থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। আমাদের তথাকথিত সুশীল সমাজের কেউ কেউ ভাল ভাল খাবারের অতিরিক্ত অংশ ডাস্টবিনে ফেলেন, তথাপি তা তাদের গৃহপরিচারিকা কিংবা ভৃত্যদেরকে দেন না। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাবারে তাদেরকে শামিল করতে বলেছেন। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত তাঁর কয়েকটি হাদীস নিম্নরূপ-
عن أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: إذا أتي أحدكم خادمه بطعامه، فإن لم يجلسه معه، فليناوله لقمةً أو لقمتين أو أكلةً أو أكلتين، فإنه ولي علاجه.
আবূ হুরাইরাহ (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি ইরশাদ করেছেন: তোমাদের কারো খাদেম তার জন্য খাবার আনলে এবং সে তাকে নিজের সাথে (আহারে) বসাতে না পারলে (কমপক্ষে) এক গ্রাস বা দুই গ্রাস যেন তার মুখে তুলে দেয়। কারণ সেই কষ্ট করে তার জন্য খাবার তৈরি করে এনেছে।
عن أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: إذا جاء أحدكم خادمه بطعامه فليجلسه ، فإن لم يقبل فليناوله منه .
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তোমাদের কারো খাদেম আহারাদি নিয়ে তার কাছে আসলে সে যেন তাকেও সাথে বসায়। যদি সে তাতে সম্মত না হয়, তবে যেন তাকে তা (খাবার) থেকে কিছু তুলে দেয়।
عن المعرور بن سويد قال: رأيت أبا ذر رضي الله عنه وعليه حلةٌ وعلى غلامه مثلها، فسألته عن ذلك، فذكر أنه ساب رجلا على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم، فعيَّره بأمه، فقال النبي صلى الله عليه وسلم: إنك امرؤٌ فيك جاهلية. هم إخوانكم، وخَوَلُكم جعلهم الله تحت أيديكم، فمن كان أخوه تحت يده، فليطعمه مما يأكل، وليلبسه مما يلبس، ولا تكلفوهم ما يغلبهم، فإن كلفتموهم فأعينوهم .
মা‘রূর ইবন সুয়াইদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ যার (রা.) কে দেখলাম তিনি এক জোড়া দামী চাদর পরে আছেন এবং তার গোলামটির পোশাকও তদ্রূপ। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর যামানায় এক ব্যক্তির সাথে তার তীব্র কথা কাটাকাটি হয়। তিনি তার মায়ের নাম তুলে তাকে লজ্জা দেন (কারণ তার মা ছিলেন হাবশী)। একথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তোমার মধ্যে জাহিলিয়াত রয়ে গেছে। তারা হচ্ছে- তোমাদের ভাই ও তোমাদের খাদেম। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। কাজেই তোমাদের যার ভাই তার অধীনে আছে তার তাকে তাই খাওয়ানো উচিত যা সে নিজে খায় এবং তাকে তাই পরানো উচিত যা সে নিজে পরে। সামর্থ্যের বাইরের কাজের বোঝা তাদের উপর চাপিয়ে দিয়ো না। আর এ ধরনের কাজের বোঝা তাদের উপর চাপিয়ে দিলে তাদেরকে সাহায্য কর।
عن أبي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: إذا كَفَى أَحَدَكُمْ خَادِمُهُ طَعَامَهُ حَرَّهُ وَدُخَانَهُ فَلْيَأْخُذْ بيده فَلْيُقْعِدْهُ معه . فَإِنْ أَبَى فَلْيَأْخُذْ لُقْمَةً فَلْيُطْعِمْهَا إِيَّاهُ . قال أبو عِيسَى هذا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ وأبو خَالِدٍ ولد إسماعيل اسْمُهُ سَعْدٌ .
আবূ হুরাইরাহ (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি ইরশাদ করেছেন: তোমাদের কারো খাদেম তার জন্য খাবার তৈরী করাকালে তাকে এর গরম ও ধোঁয়া সহ্য করতে হয়। কাজেই সে (মনিব) যেন তার (খাদেমের) হাত ধরে তাকে নিজের সাথে আহার করতে বসায়। যদি সে (খাদেম) তার সাথে একত্রে বসে খেতে রাজী না হয় (সংকোচ বোধ করে) তবে সে যেন তার মুখে অন্তত একটি গ্রাস তুলে দেয়। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান ও সাহীহ। ইসমাঈলের পিতা আবূ খালিদের নাম সা’দ।
নিজের অধীনস্থদের সাথে সদাচরণের ব্যাপারে ইসলাম অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে। বিশেষ করে যারা খাবার তৈরি এবং পরিবেশনে নিয়োজিত থাকে তাদেরকে অবশ্যই সেই খাবারের ভাগ দেয়া উচিত। অন্যথায় তা তাদের মনে দাগ কাটবে। তারা অপমান বোধ করবে ও হীনমন্যতায় ভুগবে। তাছাড়া ভাল খাবারে তাদেরকে শামিল করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে এবং এভাবেই তাঁর নি‘আমাতের যথার্থ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পাবে।
9. পানাহারে আত্মীয় স্বজনের অধিকার:
নিজের বাড়িতে আপন আত্মীয় স্বজনদেরকে দাওয়াত করে খাওয়ানো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর একটি অভ্যাস ছিল। দাওয়াত করে এনে তিনি তাদের সাথে কুশল বিনিময় করতেন এবং একসাথে খাওয়া দাওয়া করে সামাজিক বিভিন্ন কল্যাণকর বিষয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা এ কারণে করতেন যে, এর মাধ্যমে পরস্পরের মাঝে হৃদ্যতা বাড়ে এবং ভুল বোঝাবুঝি থাকলে তা দূর হয়ে যায়। একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া যায়। নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত রাসূলের সাথে তাঁর সকল আত্মীয়দেরই অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। নবী হওয়ার পর বাপ-দাদার অনুসৃত নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়েই তিনি তাদের অনেকের চক্ষুশুলে পরিণত হন। কিন্তু তাই বলে তিনি কারো সাথে সামাজিক সম্পর্ক বিনষ্ট হতে দেননি। তিনি ঘোষণা করেছেন:
عن الزُّهْرِيِّ أَنَّ مُحَمَّدَ بن جُبَيْرِ بن مُطْعِمٍ أخبره أَنَّ أَبَاهُ رضي الله عنه أخبره أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قال: لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ .
যুহরী থেকে বর্ণিত, মুহাম্মাদ ইবন জুবাইর ইবন মুত‘ইমকে তার পিতা জুবাইর ইবন মুত‘ইম (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
عن أبي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قال سمعت رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قال: إِنَّ أَعْمَالَ بني آدَمَ تُعْرَضُ كُلَّ خَمِيسٍ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ فَلاَ يُقْبَلُ عَمَلُ قَاطِعِ رَحِمٍ.
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: বানী আদমের আমলসমূহ প্রত্যেক বৃহস্পতি তথা জুমু‘আর রাত্রিতে পেশ করা হয়। (তবে) আত্মীয়তার সম্পর্ক বিনষ্টকারীর আমল কবুল করা হয় না।
عن أَنَسِ بن مَالِكٍ رضي الله عنه قال: سمعت رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يقول: من سَرَّهُ أَنْ يُبْسَطَ له في رِزْقِهِ أو يُنْسَأَ له في أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ .
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: যে ব্যক্তি নিজের রিয্ক বর্ধিত হওয়া এবং মৃত্যু দেরীতে আসা পছন্দ করে, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখে।
عن عَائِشَةَ رضي الله عنها قالت قال رسول اللهِ صلى الله عليه وسلم: الرَّحِمُ مُعَلَّقَةٌ بِالْعَرْشِ تَقُولُ من وَصَلَنِي وَصَلَهُ الله وَمَنْ قَطَعَنِي قَطَعَهُ الله .
‘আয়িশাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: আত্মীয়তা আল্লাহর আরশের সাথে ঝোলন্ত অবস্থায় বলে, যে আমার সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখে, আল্লাহও তার সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখেন। আর যে আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
عن سَلْمَانَ بن عَامِرٍ رضى الله عنه قال: سمعت رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يقول: الصَّدَقَةُ على الْمِسْكِيْنِ صَدَقَةٌ وَالصَّدَقَةُ على ذي الرَّحِمِ اثْنَتَانِ : صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ.
সালমান ইবন ‘আমির (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: মিসকীনকে দান করলে একগুণ সাওয়াব পাওয়া যায়। আর আত্মীয়কে দান করলে দ্বিগুণ সাওয়াব পাওয়া যায়। (আর তা হচ্ছে) সাদাকাহ ও আত্মীয়তার সাওয়াব।
নবুওয়াত প্রাপ্তির প্রায় তিন বছর পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যখন আপন আত্মীয় স্বজনদেরকে পরকালের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শনের আদেশ করা হলো, তখন তিনি একবার তাঁর সকল নিকটাত্মীয়দেরকে নিজের বাড়িতে দাওয়াত করলেন। বরাবরের মত এবারও খাওয়া-দাওয়া শেষে তিনি হয়ত কিছু বলবেন ভেবে চাচা আবূ লাহাব বললেন: দেখ ভাতিজা! এখানে যারা আছেন তারা সবাই তোমার মুরববী, এমন কোন কথা যেন বলো না যা তাদের মনে কষ্ট দেয় এবং বাপ-দাদার ধর্মের বিরুদ্ধে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিস্থিতি টের পেয়ে এবার ধর্মীয় বিষয়ে কিছু না বলে কেবল কুশল বিনিময় করেই ক্ষান্ত হলেন। এরপর আবারো একদিন সবাইকে খাবারের নিমন্ত্রণ জানালেন। আগের বারের অভিজ্ঞতায় আবূ লাহাব এবার কিছু বললো না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত বিনয়ের সাথে এবার এক আল্লাহর দাসত্বের দিকে সবাইকে আহবান জানালেন এবং মূর্তি ও দেব-দেবীদের অসারতার কথা তুলে ধরলেন। তিনি বললেন: ‘আল্লাহ পাকের জন্যেই সকল প্রশংসা। আমি তাঁর প্রশংসা করছি এবং তাঁর কাছেই সাহায্য চাইছি। তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করছি। তাঁর উপর ভরসা করছি। আমি এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত ‘ইবাদাতের উপযুক্ত কেউ নেই। তিনি এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোন শরীক নেই’। এরপর তিনি বললেন: ‘কোন পথ প্রদর্শক তার পরিবারের লোকদের নিকট মিথ্যা কথা বলতে পারে না। সেই আল্লাহর শপথ যিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই, আমি তোমাদের প্রতি বিশেষভাবে এবং অন্য সব মানুষের প্রতি সাধারণভাবে আল্লাহর রাসূল। আল্লাহর শপথ, তোমরা যেভাবে ঘুমিয়ে থাকো সেভাবেই একদিন মৃত্যুমুখে পতিত হবে। ঘুম থেকে যেভাবে তোমরা জাগ্রত হও, সেভাবেই একদিন তোমাদের উঠানো হবে। এরপর তোমাদের থেকে তোমাদের কৃতকর্মের হিসাব নেয়া হবে। এরপর রয়েছে চিরকালের জন্য হয়তো জান্নাত অথবা জাহান্নাম।’
একথা শুনে চাচা আবূ তালিব বললেন, তোমাকে সহায়তা করা আমার কতো যে পছন্দ সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তোমার উপদেশ গ্রহণযোগ্য। তোমার কথা আমি সত্য বলে বিশ্বাস করি। এখানে তোমার পিতৃকূলের সকলে উপস্থিত রয়েছে আমিও তাদের একজন। কাজেই তুমি যে কাজের নির্দেশ পেয়েছ আমি অব্যাহতভাবে তোমার হেফাযত এবং সহায়তা করে যাব। তবে আমার মন ‘আব্দুল মুত্তালিবের দীন ছাড়ার পক্ষপাতি নয়। তখন আবূ লাহাব বলল: আল্লাহর শপথ, এটা মন্দ কাজ। অন্যদের আগে তুমিই তার হাত ধরেছ? আবূ তালিব বললেন: আল্লাহর শপথ, যতোদিন বেঁচে থাকি ততোদিন আমি তার হেফাযত করতে থাকব।
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সদা তৎপর ছিলেন। আদর্শিক বিরোধ সত্ত্বেও তিনি কখনো কারো সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেননি। চাচা আবূ তালিব যেমনি ছোটবেলায় তাঁর ভরণ-পোষনের ব্যবস্থা করেছিলেন, তিনিও তেমনি চাচাতো ভাই ‘আলীর সার্বিক দেখাশুনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর ঘরে থাকার সুবাদেই ‘আলী (রা.) সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী কিশোর হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। খাদীজা (রা.) এর মৃত্যুর পর তাঁর আত্মীয়-স্বজন এবং বান্ধবীদের সাথেও তিনি সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।
১০. মেহমান-মেযবানের অধিকার:
যাকে দাওয়াত করা হয় বা আপ্যায়িত করা হয় তিনি হলেন মেহমান বা অতিথি। আরবীতে তাকে (ضيف) ‘দাইফ’ বলে। আর যিনি অন্যদেরকে আপ্যায়ন করেন বা দাওয়াত করে আনেন তাকে বলা হয় মেযবান। আরবীতে মেযবানকে বলা হয় (مضيف) ‘মুদীফ’। এ দু’টো আরবী শব্দেরই উৎপত্তি হয়েছে (الضيافة) ‘দিয়াফাত’ ক্রিয়ামূল থেকে। যার অর্থ মেহমানদারী, আতিথেয়তা, আতিথ্য, আপ্যায়ন ইত্যাদি। এখান থেকেই বাংলায় বহুল প্রচলিত ‘যেফত’ শব্দটি এসেছে। বড় ধরনের খাবারের আয়োজনকে আমাদের দেশে যেফত বলা হয়।
মেহমানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানানো প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়। মেহমান দেখলে মন খারাপ করা বা দু:শ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া যাবে না। তাকে হাসিমুখে সাদর সম্ভাষণ জানাতে হবে এবং তার সাথে কোমল ব্যবহার করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন:
(وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِينَ)
‘‘তুমি মু’মিনদের প্রতি সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ করো’’। অন্য আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:
(هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ ضَيْفِ إِبْرَاهِيمَ الْمُكْرَمِينَ. إِذْ دَخَلُوا عَلَيْهِ فَقَالُوا سَلَاماً قَالَ سَلَامٌ قَوْمٌ مُّنكَرُونَ. فَرَاغَ إِلَى أَهْلِهِ فَجَاء بِعِجْلٍ سَمِينٍ. فَقَرَّبَهُ إِلَيْهِمْ قَالَ أَلَا تَأْكُلُونَ)
‘‘(হে রাসূল!) ইবরাহীমের সম্মানিত মেহমানদের কাহিনী আপনার নিকট পৌঁছেছে কি? তারা যখন তার নিকট এসে বলল, আপনাকে সালাম। তিনি বললেন, আপনাদেরও সালাম। অপরিচিত লোক এরা। পরে তিনি চুপচাপ তার স্ত্রীর নিকট চলে গেলেন এবং একটা মোটাতাজা ভুনা বাছুর নিয়ে এসে মেহমানদের সামনে পেশ করলেন। তিনি বললেন, আপনারা খাচ্ছেন না কেন’’?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে যে-
عن أبي ذر رضي الله عنه قال: قال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم: لا تحقرن من المعروف شيئا ولوأن تلق أخاك بوجه طليق.
আবূ যার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কোন ভাল কাজকেই অবজ্ঞা করো না। এমনকি যদি তা তোমার ভাইয়ের সাথে তোমার হাসিমুখে মোলাকাত করাই হোক না কেন। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে-
عن أبي شريح خويلد بن عمرو الخزاعي رضي الله عنه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فليكرم ضيفه جائزته، قالوا: وما جائزته يا رسول الله ؟ قال: يومه وليلته، والضيافة ثلاثة أيام ، فما كان وراء ذلك فهو صدقة عليه. متفق عليه .
وفي رواية لمسلم : لا يحل لمسلم أن يقيم عند أخيه حتى يؤثمه، قالوا: يا رسول الله وكيف يؤثمه ؟ قال: يقيم عنده ولا شيئ له يقريه به .
আবূ শুরাইহ খুয়াইলিদ ইবন ‘আমর আল-খুযাঈ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাললাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে তার হক আদায় সহকারে। সাহাবারা বলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! তার হক কি? তিনি বলেন: তার এক দিন ও এক রাত (তাকে সমাদর ও যত্ন করবে)। মেহমানদারির সীমা হলো তিন দিন। এর চেয়ে অতিরিক্ত করা দান স্বরূপ। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীসটির বিশুদ্ধতার ব্যাপারে একমত হয়েছেন।
মুসলিমের এক বর্ণনায় রয়েছে: মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের নিকট সে পরিমাণ সময় (মেহমান হিসেবে) অবস্থান করা হালাল নয় যা তাকে গুনাহগার বানিয়ে দেয়। সাহাবারা বলেন: সে তাকে গুনাহগার বানাবে কিভাবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: সে তার নিকট অবস্থান করতে থাকবে। অথচ তার নিকট এমন কোন জিনিস নেই, যা দিয়ে সে তার মেহমানদারি করবে।
অতএব মেহমানকে সাদরে গ্রহণ করতে হবে। অন্তত: তিন দিন নিজের সাধ্যমত তার আতিথেয়তার চেষ্টা করতে হবে। পক্ষান্তরে মেহমানকেও মেযবানের অর্থনৈতিক অবস্থা ও তার পারিপার্শ্বিক বিষয়াদি মাথায় রাখতে হবে। এত বেশি দিন একনাগাড়ে কারো মেহমান হয়ে থাকার চিন্তা করা যাবে না যে, এতে মেযবানের চলাফেরা ইত্যাদিতে কষ্ট হয় এবং তাদের স্বাভাবিক জীবনাচারে ব্যঘাত ঘটে। এমন যেন না হয় যে, তিনি লজ্জায় কিছু বলতেও পারেন না, আবার সুন্দরমত তার মেহমানদারিও করতে পারেন না।
ইসলামে মেহমান ও মেযবানের মাঝে এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। নিজেদের আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশী ছাড়াও পথিকদেরকে মেহমানদারী করা সম্ভ্রান্ত মুসলিমদের এক ঐতিহ্যগত আচরণ হিসেবে গণ্য ছিল। ইসলামে মেহমানের আতিথেয়তাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মেহমানের সাথে সদাচরণ করা ও তাকে আপ্যায়িত করাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈমানের অনিবার্য দাবী বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন:
عن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: من كان يؤمن بالله واليوم الآخرفليكرم ضيفه، ومن كان يؤمن بالله واليوم الآخر فليصل رحمه، ومن كان يؤمن بالله واليوم الآخر فليقل خيرا أو ليصمت .
‘আবদুল্লাহ ইবন মাস‘উদ (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাস রাখে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাস রাখে সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাস রাখে সে যেন ভাল কথা বলে অথবা যেন চুপ থাকে। অপর বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
من أطعم أخاه من الخبز حتى يشبعه وسقاه من الماء حتى يرويه بعده الله من النار سبع خنادق كل خندق مسيرة سبع مائة عام .
যে ব্যক্তি তার ভাইকে রুটি খাইয়ে পরিতৃপ্ত করল এবং পানি পান করিয়ে পিপাসা নিবারণ করল, জাহান্নাম থেকে আল্লাহ তাকে সাত খন্দক পরিমাণ দূরে সরিয়ে রাখবেন। প্রতিটি খন্দক হলো সাতশত বছরের পথ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীদের মধ্যে এই আতিথেয়তার রেওয়াজ চালু ছিল। তিনি হিজরত করে মদীনায় গিয়ে পৌঁছার পর সকলেই তাঁকে অতিথি হিসেবে পেতে চাইল। অবস্থা এমন হলো যে, একজনের আবদার রক্ষা করলে অন্যজন মনক্ষুন্ন হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তাঁর উটটি যে বাড়ীর সামনে গিয়ে স্বেচ্ছায় থামে তার উপর বিষয়টি ছেড়ে দিলেন, যাতে কেউ মনে কষ্ট না পায় এবং এভাবেই অবশেষে আবূ আইয়ূব আনসারী (রা.) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সর্বপ্রথম মেহমানদারীর গৌরব অর্জন করেন। পরবর্তীতেও তাঁরা কোন উপলক্ষ্যে অথবা উপলক্ষ্য ছাড়াই পরস্পরকে দাওয়াত করে খাওয়াতেন। এসব ঘটনার মাধ্যমে জানা যায় যে, মেহমান ও মেযবান- কার কি অধিকার ও দায়িত্ব? যেমন-
১০.১. মেযবানের সুযোগ সুবিধা ও সামর্থের দিকে খেয়াল রাখা:
মেহমানের উচিত মেযবানের সুযোগ সুবিধা ও সামর্থের দিকে খেয়াল রাখা। যতজন ব্যক্তিকে দাওয়াত করা হয়েছে তার চেয়ে বেশি সংখ্যক যেতে হলে তার অনুমতি প্রার্থনা করা উচিত। অন্যথায় তিনি হঠাৎ করে বিব্রত বোধ করতে পারেন। বর্ণিত হয়েছে যে,
عن أبي مسعود البدري رضي الله عنه قال: دعا رجل النبي صلى الله عليه وسلم لطعام صنعه له خامس خمسة، فتبعهم رجل، فلما بلغ الباب، قال النبي صلى الله عليه وسلم: إن هذا تبعنا، فإن شئت أن تأذن له، وإن شئت رجع. قال: بل آذن له يا رسول الله.
আবূ মাস‘উদ আল-বাদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জনৈক ব্যক্তি খাবার তৈরি করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দাওয়াত করলেন। যে পাঁচজনের জন্য খাবার তৈরি করা হয়েছিল তিনি ছিলেন তাদের একজন। কিন্তু তাঁদের সাথে সাথে আরো একজন লোক এসে উপস্থিত হলো। অত:পর বাড়ীর দরজায় পৌঁছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: এ লোকটি আমাদের সাথে সাথে চলে এসেছে। তুমি চাইলে তাকে অনুমতি দিতে পার, নইলে সে চলে যাবে। তখন তিনি (মেযবান) বললেন: বরং তাকে আমি অনুমতিই দিচ্ছি হে আল্লাহর রাসূল!।
عن أبي شريح خويلد بن عمرو الخزاعي رضي الله عنه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: لا يحل لمسلم أن يقيم عند أخيه حتى يؤثمه، قالوا: يا رسول الله وكيف يؤثمه ؟ قال: يقيم عنده ولا شيئ له يقريه به .
আবূ শুরাইহ খুয়াইলিদ ইবন ‘আমর আল-খুযাঈ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের নিকট সে পরিমাণ সময় (মেহমান হিসেবে) অবস্থান করা হালাল নয় যা তাকে গুনাহগার বানিয়ে দেয়। সাহাবারা বলেন: সে তাকে গুনাহগার বানাবে কিভাবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: সে তার নিকট অবস্থান করতে থাকবে। অথচ তার নিকট এমন কোন জিনিস নেই, যা দিয়ে সে তার মেহমানদারি করবে।
عن أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: إذا دخل أحدكم على أخيه المسلم فأطعمه فليأكل من طعامه ولا يسأله وإن سقاه شربا فليشرب من شرابه ولا يسأله عنه .
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: তোমাদের কেউ যখন তার মুসলিম ভাইয়ের বাড়িতে যায়, তখন সে তাকে যা খাওয়ায় তা যেন খায় এবং এ নিয়ে যেন কোন প্রশ্ন না করে। আর যদি তাকে কোন পানীয় পান করায় তা যেন পান করে এবং এ নিয়ে যেন কোন প্রশ্ন না করে।
এখান থেকে বুঝা গেল যে, মেযবানের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে যায় কিনা তা খেয়াল রাখা মেহমানের দায়িত্ব। আমাদের দেশে কখনো কখনো বিবাহ-শাদী ইত্যাদি বড় বড় অনুষ্ঠানে এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখা হয় না। ফলে অনেক সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। সামর্থ না থাকা সত্ত্বেও অথবা অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিরাট খরচের বোঝা এসে মাথায় চেপে বসে। একইভাবে যাদেরকে দাওয়াত দেয়া হয় তাদের বিরাট অংশ যদি দাওয়াতে অংশগ্রহণ না করেন তাহলেও এক ধরনের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এর ফলে অর্থের অপচয় হয় এবং মেযবানকে বিরাট মানসিক চাপের মধ্যে পড়তে হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাই এক মুসলিমের কাছে অপর মুসলিমের যেসব অধিকারের কথা বলেছেন তন্মধ্যে একটি অধিকার হচ্ছে সে দাওয়াত দিলে তার দাওয়াতে সাড়া দেয়া। তবে কারো বাড়িতে গেলেই যখন তখন সেখানে খেতে বসে যাওয়া উচিত নয় এবং তাদের সাধ্য ও সামর্থ্যের কথাও মাথায় রাখা উচিত। কেউ খাবারের দাওয়াত করলে সে দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয়। আবার নিজের ইচ্ছামত সঙ্গী-সাথীদেরকে নিয়ে সদলবলে হাজির হওয়াও অনুচিত। কোন মেযবানের কাছে তার সাধ্যের অতিরিক্ত আপ্যায়িত হওয়ার আশা করাও উচিত নয়। অথবা কেবল নিজের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে এও মনে করা উচিত নয় যে, কষ্ট করে যখন আসলামই আরো কিছু দিন থেকেই যাই। সম্ভবত: এদিকে ইঙ্গিত করেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
عن أبي شريح الكعبي رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فليقل خيرا أو ليصمت . ومن كان يؤمن بالله واليوم الآخر فليكرم ضيفه . جائزته يوم وليلة . والضيافة ثلاثة أيام ، فما بعد ذلك فهو صدقة . ولا يحل له أن يثوي عنده حتى يحرجه .
আবূ শুরাইহ আল-কা‘বী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ও আখিরাতের দিনের উপর ঈমান রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে, অন্যথায় নীরব থাকে। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ও আখিরাতের দিনের উপর ঈমান রাখে সে যেন মেহমানের সমাদর করে। তার বিশেষ মেহমানদারী হচ্ছে এক দিন এক রাত। আর স্বাভাবিক মেহমানদারী হচ্ছে তিন দিন। তার অতিরিক্ত যা করা হবে তা বদান্যতারূপে গণ্য হবে। আর মেহমানের পক্ষে মেযবানের বাড়িতে এতো অধিক দিন অবস্থান করা উচিত নয় যাতে সে অসুবিধা বোধ করে।
আজকাল শহর এলাকায় মেহমানদের আরেকটি বিষয়েও সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিত, তা হলো- শহরের বাড়িগুলোতে জায়গার সংকীর্ণতার কারণে একাধারে দীর্ঘদিন কোন মেহমানের উপস্থিতি মেযবানদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে মেহমান পরিবার ও মেযবান পরিবারের মাঝে পর্দা মেনে চলা অনেক ক্ষেত্রে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এবং বাচ্চাদের লেখাপড়া ইত্যাদি চরমভাবে বিঘ্নিত হয়। বিশেষ করে মেহমানগণ অত্যধিক সতর্ক ও সচেতন না হলে তাদের দীর্ঘমেয়াদী অবস্থান নামায-রোযার ক্ষেত্রেও ব্যাঘাতের কারণ হতে পারে। যেমন- ফজরের সময় বাসার নারী-পুরুষ ও ছেলে-মেয়ে সবাই একই সাথে নামাযের প্রস্ত্ততি নিতে গিয়ে যখন বাথরুমগুলোতে লাইন হয়ে যায়, তখন বাসায় অবস্থিত মেহমান ফ্যামিলি যদি সংযুক্ত টয়লেট বিশিষ্ট রুমটি আটকে রেখে দেন তাহলে তা হয়তো বা কারো ফজরের নামায ফাউত হয়ে যাওয়ারও কারণ হতে পারে। কিংবা কারো সাহরী খাওয়ার সময়ও চলে যাওয়ার আশংকা দেখা দিতে পারে। তাই এসব খুটিনাটি ব্যাপারগুলোও মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট সকলের চলা উচিত।
১০.২. মেহমানকে আপ্যায়নের ব্যাপারে সাধ্যের অতিরিক্ত ব্যস্ত না হওয়া:
মেহমানকে আপ্যায়নের ব্যাপারে সাধ্যের অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে পড়া উচিত নয়। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী মেহমানকে আপ্যায়িত করতে হবে। উপস্থিত ক্ষেত্রে নিজের কাছে যা আছে তা দিয়েই মেহমানকে আপ্যায়ন করার কথাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তিনি মেহমানের উপস্থিতি দেখে বিচলিত না হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেই বলেছেন যে,
عن جَابِرِ بن عبد اللهِ رضي الله عنه يقول سمعت رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يقول: طَعَامُ الْوَاحِدِ يَكْفِي الإثنين وَطَعَامُ الإثنين يَكْفِي الْأَرْبَعَةَ وَطَعَامُ الْأَرْبَعَةِ يَكْفِي الثَّمَانِيَةَ .
জাবির ইবন ‘আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: একজনের খাবার দুইজনের জন্য যথেষ্ট, দুইজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট এবং চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট।
মেহমানকে তাৎক্ষণিকভাবে এরূপ স্বাভাবিক আপ্যায়ন করেই মানসিকভাবে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। আর মেহমানকেও তা স্বজ্ঞানে বুঝতে হবে। অতিরিক্ত আপ্যায়িত হওয়ার আশা করা যাবে না। কেননা ইসলামের সাধারণ রেওয়াজই হলো যে, মহান আল্লাহ কাউকে কোন ব্যাপারে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কোন কিছু চাপিয়ে দেন না। অতএব নিজের সামর্থ্যের আলোকে মেহমানকে আপ্যায়িত করে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কোন প্রকার বাড়াবাড়ি কিংবা অতিরঞ্জনের আশ্রয় নেয়া যাবে না। এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে:
لا يتكلفن أحد لضيفه ما لا يقدر.
তোমাদের কেউ যেন তার মেহমানের জন্য নিজের সাধ্যের অতিরিক্ত কষ্ট না করে। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে:
لا تكلفوا للضيف .
তোমরা মেহমানের জন্য অতিরিক্ত কষ্ট করো না।
অর্থাৎ মেহমানকে নিয়ে নিজেকে কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে এত বেশী ব্যস্ত করে ফেলা উচিত নয় যা তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যহত করে বলে সে মনে করে বা অন্যদের কাছে মনে হয়। বরং এই মেহমানের উপস্থিতি এবং তার আতিথেয়তাকেও নিজের স্বাভাবিক কর্মকান্ডেরই অংশ মনে করে নিতে হবে। তাহলে তা নিজের জন্যও বোঝা মনে হবে না, অন্যদের জন্যও কষ্টের কারণ হবে না এবং মেহমানের প্রতিও অতিশয় আন্তরিকতা প্রদর্শন বলে গণ্য হবে।
১০.৩. আহার শেষে অযথা বিলম্ব না করা:
শুধু আহারের জন্য দাওয়াত করা হয়ে থাকলে আহার শেষে অযথা বিলম্ব করা উচিত নয়। একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর ঘরে আহার শেষে সাহাবীগণ গল্পে নিয়োজিত থাকলেন। ভদ্রতার খাতিরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে কিছু বলছিলেন না। কিন্তু তা তাঁকে কষ্ট দিচ্ছিল। এমতাবস্থায় মহান আল্লাহ কুরআনের আয়াত নাযিল করে জানিয়ে দিলেন যে, খাবার শেষে বিলম্ব না করে তোমাদের চলে যাওয়া উচিত। ইরশাদ হয়েছে:
(يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتَ النَّبِيِّ إِلَّا أَن يُؤْذَنَ لَكُمْ إِلَى طَعَامٍ غَيْرَ نَاظِرِينَ إِنَاهُ وَلَكِنْ إِذَا دُعِيتُمْ فَادْخُلُوا فَإِذَا طَعِمْتُمْ فَانتَشِرُوا وَلَا مُسْتَأْنِسِينَ لِحَدِيثٍ إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ يُؤْذِي النَّبِيَّ فَيَسْتَحْيِي مِنكُمْ وَاللهُ لَا يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعاً فَاسْأَلُوهُنَّ مِن وَرَاء حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ وَمَاكَانَ لَكُمْ أَن تُؤْذُوا رَسُولَ اللهِ وَلَا أَن تَنكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِن بَعْدِهِ أَبَداً إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ عِندَ اللهِ عَظِيماً)
‘‘হে ঐসব লোক, যারা ঈমান এনেছ! তোমরা নবীর ঘরে অনুমতি ছাড়া ঢুকে পড়বে না। আর (ঘরে এলে) খাওয়ার সময়ের জন্য বসে থেক না। যদি তোমাদেরকে খাবার জন্য দাওয়াত দেয়া হয় তাহলে অবশ্যই আসবে। কিন্তু তোমাদের খাওয়া হয়ে গেলে চলে যাবে। কথাবার্তায় লেগে থেকো না। তোমাদের এসব আচরণ নবীকে কষ্ট দেয়। কিন্তু তিনি লজ্জায় কিছু বলেন না। আল্লাহ হক কথা বলতে লজ্জা বোধ করেন না। নবীর স্ত্রীদের কাছে যদি তোমাদের কিছু চাইতে হয় তাহলে পর্দার পেছন থেকে চাও। এটা তোমাদের ও তাদের মনের পবিত্রতার জন্য বেশি ভালো। তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া মোটেই জায়েয নয় এবং তাঁর পরে কখনো তাঁর স্ত্রীগণকে বিয়ে করাও জায়েয নয়। এটা আল্লাহর নিকট মস্তবড় গুনাহ’’।
মেহমান-মেযবানের সাথে সম্পর্কিত বেশ কিছু বিষয় এ আয়াত থেকে জানা যায়। যেমন-
1. অনুমতি বিহীন তথা দাওয়াত বিহীন কারো বাড়ীতে না যাওয়া,
2. কাজ সম্পাদন হয়ে গেলে অযথা বেশি সময় অবস্থান না করা,
3. পরবর্তী খাবারের সময় অনেক দূরে থাকলে তার জন্য অপেক্ষা না করা,
4. শুধু খাবারের জন্য দাওয়াত দেয়া হয়ে থাকলে খাবার শেষে অযথা বিলম্ব না করা,
5. সেখানে অবস্থানকালীন মেযবানের সুযোগ-সুবিধা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রতি খেয়াল রাখা,
6. এমন কোন আচরণ না করা যাতে মেযবানের মনে কষ্ট হতে পারে,
7. এমন কোন কিছু না চেয়ে বসা যা দিতে মেযবান অপারগ হন ও লজ্জা বোধ করেন এবং
8. মেযবানের বাড়ীতে অবস্থানকালীনও শার‘য়ী পর্দা মেনে চলা। ইত্যাদি।
অতএব শুধু আহারের জন্য দাওয়াত করা হয়ে থাকলে আহার শেষে বিলম্ব না করে অনুমতি নিয়ে চলে যাওয়া উচিত। যাতে করে অন্য মেহমানদের জন্য সুবিধা হয়। এবং মেযবানদের মধ্যে যারা এখনো খায়নি তারা যেন খেয়ে নিতে পারে। কিংবা যাদের বিশ্রাম দরকার তারা যেন বিশ্রাম করতে পারে। অথবা নিজেদের অন্যান্য জরুরী কাজে মনোনিবেশ করতে পারে।
১০.৪. ধনী ও গরীব সবাইকেই দাওয়াতে অন্তর্ভুক্ত করা:
কেবল বিশেষ শ্রেণীর মেহমানদেরকেই খাবারের দাওয়াত দেয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। খাবারের দাওয়াত দানের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব ফাসিক ব্যক্তিদেরকে পরিহার করে মু’মিন মুত্তাকীদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এক্ষেত্রে ধনী গরীব নির্বিশেষে সকলকে শামিল করতে হবে। গরীব হওয়ার কারণে কেউ যেন দাওয়াত থেকে বঞ্চিত না হয়। এবং খাবারের মাজলিসেও যেন কাউকে বিশেষ কোন আইটেম থেকে বঞ্চিত করা না হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
لا تصاحب إلا مؤمنا، ولا يأكل طعامك إلا تقي.
মু’মিন ছাড়া অন্যদের তোমার সাথী করো না। আর কেবল মুত্তাকী যেন তোমার খাবার খায়। অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে:
عن أبي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه أَنَّهُ كان يقول: شَرُّ الطَّعَامِ طَعَامُ الْوَلِيمَةِ يُدْعَى لها الْأَغْنِيَاءُ وَيُتْرَكُ الْفُقَرَاءُ وَمَنْ تَرَكَ الدَّعْوَةَ فَقَدْ عَصَى اللهَ تعالى وَرَسُولَهُ صلى الله عليه وسلم .
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন: সর্ব নিকৃষ্ট খাবার হলো ঐ ওয়ালীমার খাবার যেখানে গরীবদেরকে বাদ দিয়ে শুধু ধনীদেরকে দাওয়াত করা হয়। আর যে ব্যক্তি দাওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করল সে মহান আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নাফরমানী করল। অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
عن بن عُمَرَ رضي الله عنهما أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قال: إذا دُعِيَ أحدكم إلى وَلِيمَةِ عُرْسٍ فَلْيُجِبْ .
ইবন ‘উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: তোমাদের কাউকে যখন বিবাহের ওয়ালীমায় দাওয়াত করা হয় তখন সে যেন তাতে অংশগ্রহণ করে।
আধুনিক মুসলিম সমাজে অনেকের মধ্যে এ রেওয়াজ বিদ্যমান যে, বিবাহ-শাদী, ‘আকীকাহ-ওয়ালীমাহ ইত্যাদিতে সমাজের কেবল বিত্তবান অথবা গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে তারা দাওয়াত করে থাকে। কম বিত্তশালী কিংবা অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিরা এত্থেকে বঞ্চিত হয়। এক্ষেত্রে কারো কারো মধ্যে এ প্রবণতাও কাজ করতে পারে যে, কম বিত্তশালী ব্যক্তি দামী/উল্লেখযোগ্য কোন উপঢৌকন দিতে পারবে না। তাই তাকে দাওয়াত দিয়ে লাভ নেই। আর ধনী ব্যক্তি যেহেতু দামী উপঢৌকন দেবেন তাই তার দাওয়াত যেন কোনভাবেই বাদ না পড়ে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাই দাওয়াত দানের ক্ষেত্রে এ মানসিকতা সম্পূর্ণরূপে পরিহার করে চলার আহবান জানিয়েছেন।
এছাড়াও মেহমান-মেযবানের পারস্পরিক অধিকারের মধ্যে আরো কিছু অধিকার হলো নিম্নরূপ-
১০.৫. খাবার ঢেকে পরিবেশন করা:
মেহমানের সামনে কোন খাবার পরিবেশনের সময় তা যথাযথভাবে ঢেকে পরিবেশন করা উচিত। এমনকি মেহমানকে এক গ্লাস পানি পরিবেশনের সময়ও তা ঢাকা অবস্থায় পরিবেশন করা ভাল। মহান আল্লাহ যেসব খাদ্য-দ্রব্য ও ফল-মূল আমাদের জন্য উৎপাদন করেছেন তার সবই তিনি আমাদেরকে ঢেকে ঢেকে পরিবেশন করেছেন। কোন কোনটিকে একাধিক আবরণে আবৃত করে অত্যন্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তিনি আমাদের সামনে তা উপস্থাপন করেছেন। আমাদের জন্য নি:সন্দেহে এটি এক বিরাট শিক্ষা। মেহমানের সামনে এভাবে ঢেকে খাবার পরিবেশন করলে তাতে মেহমানের ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়। ফলে তিনি সম্মান বোধ করেন এবং অন্তর থেকে দু‘আ দেন। পক্ষান্তরে খোলা অবস্থায় খাবার পরিবেশন করলে মেহমানের প্রতি অনীহা প্রকাশ পায়, তিনি অসম্মান বোধ করেন, যে কোন ধরনের ধুলা-বালি ও ময়লা আবর্জনা পরার আশংকা থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নিকট একবার না ঢেকেই এক পেয়ালা দুধ আনা হলে তিনি তা ঢেকে আনার নির্দেশ দেন। বর্ণিত হয়েছে যে,
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رجلا يقال له أبو حميد أتى النبي صلى الله عليه وسلم بإناء فيه لبن من البقيع نهارا، فقال له النبي صلى الله عليه وسلم: ألا خمرته ولو أن تعرض عليه بعود . رواه أبو يعلى ورجاله رجال الصحيح .
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, আবূ হুমাইদ নামক এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর কাছে বাকী‘র দিক থেকে দিনের বেলা একটি দুধের পাত্র নিয়ে আসলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন: তুমি এটা ঢেকে আনলে না! এক খন্ড কাঠ দিয়েও যদি তুমি এটি ঢেকে আনতে! (তাহলে ভাল হত)। হাদীসটি আবূ ই‘য়ালা বর্ণনা করেছেন এবং এর বর্ণনাকারীগণ সকলেই বিশুদ্ধ বর্ণনাকারী।
এ হাদীস থেকে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, খাদ্য ও পানীয় ঢেকে পরিবেশন করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উৎসাহিত করেছেন। তাছাড়া স্বভাবগতভাবেই যে কোন ঢাকা জিনিসের প্রতি মানুষের যে আকর্ষণ থাকে তা খোলা জিনিসের প্রতি থাকে না। খাদ্য-দ্রব্য ও পানীয় ঢাকা অবস্থায় থাকলে তাতে কোনরূপ অরুচি আসে না। তাছাড়া মশা-মাছি, তেলাপোকা, পিপড়া ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার প্রাণীর অনাকাংখিত থাবা এবং ধুলা-বালির সংমিশ্রণ থেকেও তা নিরাপদ থাকে। খাদ্য-দ্রব্যকে জীবাণুমুক্ত রাখারও এটি একটি অন্যতম উপায়। তাই খাদ্য-দ্রব্যকে ঢেকে রাখার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাধারণ নির্দেশনা রয়েছে। বিশেষ করে রাতের বেলায় খাদ্য-দ্রব্য ঢেকে রাখার কথা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে হাদীসে এসেছে। যেমন-
عن جَابِرٍ رضي الله عنه قال قال رسول اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَغْلِقُوا أَبْوَابَكُمْ وَخَمِّرُوا آنِيَتَكُمْ وأطفؤا سُرُجَكُمْ وَأَوْكُوا أَسْقِيَتَكُمْ فان الشَّيْطَانَ لاَ يَفْتَحُ بَاباً مُغْلَقاً وَلاَ يَكْشِفُ غَطَاءً وَلاَ يَحُلُّ وِكَاءً وان الْفُوَيْسِقَةَ تُضْرِمُ الْبَيْتَ على أَهْلِهِ يعني الْفَأْرَةَ .
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: তোমরা (শোয়ার পূর্বে) তোমাদের (ঘরের) দরজাসমূহ বন্ধ করে দাও, তোমাদের পাত্রসমূহ ঢেকে দাও (অথবা উপুর করে রাখ), তোমাদের বাতিসমূহ নিভিয়ে রাখ এবং তোমাদের পানপাত্রগুলোর মুখ ঢেকে বা বেঁধে রাখ। কেননা শয়তান বন্ধ দরজাকে খুলতে পারে না, পাত্রের মুখকেও খুলতে পারে না এবং মশকের বন্ধ মুখ উম্মুক্ত করতে পারে না। (তাছাড়া আলো নিভিয়ে না দিলে) ফুয়াইসিকাহ/ দুষ্টু ইদুর মানুষের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়।
খন্দক যুদ্ধের সময় জাবির (রা.) এর বাড়ীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর কতিপয় সাহাবীর জন্য যে খাবার প্রস্ত্তত করা হয়েছিল তা ঢেকে রাখার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত জাবিরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
অতএব খাদ্য ও পানীয়ের পাত্রকে ঢেকে রাখতে হবে এবং যথাসম্ভব তা ঢাকা অবস্থায়ই মেহমানের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে রাত্রিবেলা যেন কিছুতেই তা খোলা অবস্থায় না থাকে এ ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
১০.৬. মেহমানকে সাথে নিয়ে খেতে বসা:
মেহমানকে আপ্যায়নের সময় তার সাথে মেযবান নিজে কিংবা তার কোন প্রতিনিধি বসা উচিত। এতে মেহমান স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করবে। অন্যথায় তার মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি কিংবা লজ্জাবোধ কাজ করতে পারে। তিনি নিজেকে মেযবানের জন্য বোঝা কিংবা অনাহুত ভাবতে পারেন। আর মেযবান সাথে বসলে তিনি মনে করেন যে, তারা আমাকে আপন ভাবছে, সাদর সম্ভাষণ করছে ইত্যাদি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেহমানের এই মানসিক অবস্থাটির প্রতিও লক্ষ্য রাখতে বলেছেন। একবার ‘আয়িশাহ (রা.) এর এক নিকটাত্মীয় বেড়াতে আসলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাথে ‘আয়িশাহ (রা.) কে খেতে বসতে বলেন। তিনি ইরশাদ করেন:
وآكلي ضيفك فإن الضيف يستحيي أن يأكل وحده .
তুমি তোমার মেহমানকে সাথে নিয়ে খাও। কেননা মেহমান একা একা খেতে লজ্জা পায়।
অতএব মেহমানকে একা একা খেতে দিয়ে নিজে দূরে থাকা ঠিক নয়। এতে মেহমান লজ্জা বোধ করেন এবং তার প্রতি আন্তরিকতার কমতি পরিলক্ষিত হয়। তাই গৃহকর্তা নিজে অথবা তার কোন প্রতিনিধিকে মেহমানের সাথে খেতে দেয়া উত্তম। আগেই নিজের খাওয়া হয়ে গিয়ে থাকলে অথবা এ মুহুর্তে খেতে কোন সমস্যা থাকলে তা মেহমানকে বুঝিয়ে বললে দোষের কিছু নেই। তবে না খেতে পারলেও মেহমানের সাথে বসাই ভদ্রতার দাবী।
১০.৭. খাবারের উৎস না খোঁজা:
কোন ব্যক্তি কাউকে তার বাড়ীতে দাওয়াত দিলে তিনি কোন কারণবশত: নাও যেতে পারেন। কিন্তু দাওয়াত গ্রহণ করে সেখানে যাওয়ার পর এমন কোন প্রশ্ন করা বা এমন কোন আচরণ করা উচিত নয় যা মেযবানকে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়। যেমন - খেতে বসে খাবারের উৎস খোঁজার চেষ্টা করা, এ খাবার কোথা থেকে এলো, এটি হালাল না হারাম, যে রান্না করেছে সে নামাযী না বেনামাযী ইত্যাকার বিভিন্ন প্রশ্ন করে মেযবানকে বিচলিত করে ফেলা উচিত নয়। এতে মানুষের ব্যক্তিত্বের উপর আঘাত করা হয় এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে। দাওয়াতী কাজের বেলায়ও এটি নি:সন্দেহে হিকমাতের পরিপন্থী। বরং এই মেযবানের আয়-রোযগার ইত্যাদি নিয়ে কোন সংশয় থেকে থাকলে পূর্ব থেকেই অন্য কোন প্রক্রিয়ায় তার দাওয়াতটিকে এড়িয়ে যাওয়া ভাল। কিন্তু দাওয়াত গ্রহণ করে সেখানে যাওয়ার পর এসব প্রশ্ন উত্থাপন করলে মেযবান বিব্রত বোধ করাই স্বাভাবিক।
একবার এক দরিদ্র মহিলা সাহাবী তার নিজের প্রাপ্ত সাদাকাহ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কিছু হাদিয়াহ দিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার এ হাদিয়াহ গ্রহণ করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, ‘এটি তার জন্য সাদাকাহ, আর আমাদের জন্য হাদিয়া’। কারণ সাদাকাহ গ্রহণ করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর পরিবার পরিজনের জন্য বৈধ ছিল না। তাই তিনি সাদাকাহ খেতেন না কিন্তু হাদিয়াহ গ্রহণ করতেন। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত কয়েকটি হাদীস নিম্নরূপ-
دَخَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا بَيْتَ عَائِشَةَ رضي الله عنها وَعَلَى النَّارِ بُرْمَةٌ تَفُورُ فَدَعَا بِالْغَدَاءِ فَأُتِيَ بِخُبْزٍ وَأُدْمٍ مِنْ أُدْمِ الْبَيْتِ فَقَالَ أَلَمْ أَرَ لَحْمًا قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ وَلَكِنَّهُ لَحْمٌ تُصُدِّقَ بِهِ عَلَى بَرِيرَةَ فَأَهْدَتْهُ لَنَا فَقَالَ هُوَ صَدَقَةٌ عَلَيْهَا وَهَدِيَّةٌ لَنَا.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন ‘আয়িশার (রা.) ঘরে প্রবেশ করলেন। চুলায় তখন টগবগ করে গোশত রান্না হচ্ছিল। তিনি খাবার দিতে বললে তাকে রুটি এবং ঘরে থাকা সবজি এনে দেয়া হলো। তখন তিনি বললেন: আমি তো গোশত আছে বলে মনে করেছিলাম। তারা বললেন: অবশ্য তা ঠিক, হে আল্লাহর রাসূল! তবে তা হচ্ছে বারীরার জন্য দেয়া সাদাকার গোশত, যা সে আমাদের জন্য হাদিয়াহ হিসেবে দিয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: এটি তার জন্য সাদাকাহ আর আমাদের জন্য হাদিয়াহ।
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا أتي بطعام سأل عنه أهديةٌ أم صدقةٌ ؟ فإن قيل صدقة قال لأصحابه:كلوا، ولم يأكل. وإن قيل هدية ضرب بيده صلى الله عليه وسلم فأكل معهم.
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাললাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর কাছে কোন খাবার আনা হলে তিনি জিজ্ঞেস করতেন- এটি কি হাদিয়াহ, নাকি সাদাকাহ? যদি বলা হতো যে, এটি সাদাকাহ তাহলে তিনি তাঁর সাথীদেরকে বলতেন: তোমরা খাও। তিনি নিজে খেতেন না। আর যদি বলা হতো যে, এটি হাদিয়াহ তাহলে তিনি সে খাবারে হাত রাখতেন এবং তাদের সাথে খেতেন।
عن قتادة سمع أنس بن مالك رضي الله عنه قال: أهدة بريرة إلى النبي صلى الله عليه وسلم لحما ةصدق به عليها فقال: هو لها صدقة ولنا هدية.
কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি আনাস ইবন মালিককে (রা.) বলতে শুনেছেন: বারীরাহ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কিছু গোশত হাদিয়াহ দিল যা তাকে সাদাকাহ করা হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন: এটি তার জন্য সাদাকাহ, আর আমাদের জন্য হাদিয়াহ।
عن أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: إذا دخل أحدكم على أخيه المسلم فأطعمه فليأكل من طعامه ولا يسأله وإن سقاه شربا فليشرب من شرابه ولا يسأله عنه.
আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: তোমাদের কেউ যখন তার মুসলিম ভাইয়ের বাড়িতে যায়, তখন সে তাকে যা খাওয়ায় তা যেন খায় এবং এ নিয়ে যেন কোন প্রশ্ন না করে। আর যদি তাকে কোন পানীয় পান করায় তা যেন পান করে এবং এ নিয়ে যেন কোন প্রশ্ন না করে।
অতএব মেযবানের বাড়িতে গিয়ে কেবল নিজের পছন্দমত খাবারেরই অপেক্ষা করা যাবে না। যা তারা পেশ করবে তাই হাসিমুখে গ্রহণ করতে হবে। আর এ খাবার কোথা থেকে এল? এটি হালাল না হারাম? বৈধ উপায়ে অর্জিত না অবৈধ? তা খোঁজে ফেরা যাবে না। এ ব্যাপারে কোন কিছু জানার থাকলে তা দাওয়াত গ্রহণের আগেই জেনে নেয়া উচিত। অন্যথায় এ নিয়ে উভয়েরই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হতে পারে।
১০.৮. খাবারের দোষ না ধরা:
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর খাবার সংক্রান্ত শিষ্টাচারের মধ্যে একটি ছিল এই যে, তিনি কখনো কোন খাবারের দোষ ধরতেন না। এটি ভাল নয়, এটি আমি পছন্দ করি না অথবা এটিতে এই ত্রুটি রয়েছে- এ জাতীয় কোন মন্তব্য তিনি কখনো কোন খাবারের ব্যাপারে করতেন না। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর আচরণ সংক্রান্ত অনেকগুলো বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন-
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: ماَ عَابَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَعَامًا قَطُّ إِنِ اشْتَهَاهُ أَكَلَهُ وَ إِلاَّ تَرَكَهُ.
আবূ হুরাইরাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কোন খাবারের ত্রুটি ধরতেন না। (ঐ খাদ্যে) রুচি হলে তিনি তা খেতেন অন্যথায় রেখে দিতেন। আরেক বর্ণনায় আবূ হুরাইরাহ (রা.) বলেন:
ماَ عَابَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ طَعاَمًا قَطُّ، إِنِ اشْتَهَاهُ أَكَلَهُ وَ إِذَا كَرِهَهُ تَرَكَهُ .
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কোন খাদ্যদ্রব্যের প্রতি দোষারোপ করতেন না। তাঁর রুচি হলে তিনি তা খেতেন এবং কখনো অরুচি হলে তা বর্জন করতেন। আরেক বর্ণনায় এসেছে:
عن الحسن بن علي رضي الله عنهما قال: سألة هند بن أبي هالة رضي الله عنها عن صفة النبي صلى الله عليه و سلم فقال: لم يكن يذم ذواقا و لا يمدحه.
হাসান ইবন ‘আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি হিন্দ ইবন আবী হালাহ (রা.) এর নিকট নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর গুণাবলী সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন: তিনি কখনো কোন খাদ্যের বদনামও করতেন না এবং প্রশংসাও করতেন না।
উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কোন খাদ্যদ্রব্যের দোষ খুঁজে বেড়াতেন না। কেননা সকল প্রকার খাদ্যই আল্লাহ প্রদত্ত রিয্ক। এই রিয্ক এর দোষ খুঁজে বেড়ানো আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞতারই শামিল। কোন কোন খাবারের প্রতি কারো কারো বিশেষ আকর্ষণবোধ থাকবে, আবার কারো হয়ত থাকবে না। অতএব কারো আকর্ষণবোধ হলে সে খাবে, অন্যথায় খাবে না। কিন্তু খাদ্যের দোষ খুঁজে বের করা বা তাতে ত্রুটি নির্দেশ করা মূলত: আল্লাহ প্রদত্ত রিয্ক এর প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশের শামিল। তাছাড়া এই মন্তব্য মাজলিসের অন্যান্যদেরকেও প্রভাবিত করে। বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের সামনে কেউ কোন খাবারের ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করলে ঐ বাচ্চাকে সে খাবার খাওয়ানো দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাই এরূপ করা মোটেও উচিত নয়। এখান থেকে এও বুঝা যায় যে, তরকারীতে লবণ কম হয়েছে অথবা বেশি হয়েছে, কিংবা ঝাল কম অথবা বেশি হয়েছে- এ জাতীয় মন্তব্য করা থেকেও বিরত থাকা উচিত। কেননা এর ফলে যিনি খাবার রান্না করেছেন তার মনেও আঘাত লাগতে পারে। অথবা তিনি বিব্রত বোধ করতে পারেন।
১০.৯. মেযবানের জন্য দু‘আ করা:
মেযবানের প্রতি মেহমানের আরেকটি দায়িত্ব হলো তার জন্য মহান আল্লাহর কাছে দু‘আ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাললাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কারো বাড়িতে বেড়াতে গেলে তার জন্য দু‘আ করতেন। খাবারের শেষে তিনি সাধারণভাবে মহান আল্লাহর প্রশংসা করতেন। আর সে খাবারটি অন্য কারো বাড়িতে হলে সেই বাড়িওয়ালার জন্যও তিনি দু‘আ করতেন। যেমন বর্ণিত হয়েছে যে,
عن أنس رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا أفطر عند أهل بية قال: أفطر عندكم الصائمون وأكل طعامكم الأبرار وةنزلة عليكم الملائكة .
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কারো বাড়িতে ইফতার করলে বলতেন: রোযাদাররা তোমাদের এখানে ইফতার করল। সৎকর্মশীলরা তোমাদের খাবার খেল। আর তোমাদের বাড়িতে ফেরেশতাদের আগমন ঘটল।
عن جَابِرِ بن عبد اللهِ رضي الله عنه قال: صَنَعَ أبو الْهَيْثَمِ بن التَّيْهَانِ رضي الله عنه لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم طَعَامًا فَدَعَا النبي صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابَهُ فلما فَرَغُوا قال: أَثِيبُوا أَخَاكُمْ قالوا يا رَسُولَ اللهِ وما إِثَابَتُهُ قال إِنَّ الرَّجُلَ إذا دُخِلَ بَيْتُهُ فَأُكِلَ طَعَامُهُ وَشُرِبَ شَرَابُهُ فَدَعَوْا له فَذَلِكَ إِثَابَتُهُ.
জাবির ইবন ‘আব্দিল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবুল হাইসাম ইবন আত-তাইহান (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর জন্য খাবার প্রস্ত্তত করল। অত:পর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাথীদেরকে দাওয়াত করল। খাবার শেষে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমরা তোমাদের ভাইয়ের প্রতি সাওয়াব পৌঁছাও। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কিভাবে সাওয়াব পৌঁছাব? তিনি বললেন: যখন কোন মেযবানের ঘরে প্রবেশ করা হয়, তার খাবার গ্রহণ করা হয় এবং পানীয় পান করা হয়, তখন তার জন্য দু‘আ কর। এটাই তার প্রতি সাওয়াব পৌঁছানো।
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ دَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أُمِّ سُلَيْمٍ فَأَتَتْهُ بِتَمْرٍ وَسَمْنٍ قَالَ أَعِيدُوا سَمْنَكُمْ فِي سِقَائِهِ وَتَمْرَكُمْ فِي وِعَائِهِ فَإِنِّي صَائِمٌ ثُمَّ قَامَ إِلَى نَاحِيَةٍ مِنْ الْبَيْتِ فَصَلَّى غَيْرَ الْمَكْتُوبَةِ فَدَعَا لِأُمِّ سُلَيْمٍ وَأَهْلِ بَيْتِهَا.
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মি সুলাইমের ঘরে আসলেন। তিনি তখন (তাঁকে আপ্যায়নের জন্য) কিছু খেজুর ও কিছু ঘি নিয়ে আসলেন। তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ) বললেন: তোমাদের ঘি তার মশকে ফিরিয়ে নাও এবং খেজুরও তার পাত্রে ফিরিয়ে নাও। কেননা আমি রোযাদার। অত:পর তিনি ঘরের এক পার্শ্বে গিয়ে নফল সালাত পড়লেন এবং উম্মি সুলাইম ও তার পরিবারের জন্য দু‘আ করলেন।
সাধারণভাবে প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব হলো অপর মুসলিমের কল্যাণ কামনা করা, তার জন্য মহান আল্লাহর কাছে দু‘আ করা। আর বিশেষ করে কেউ আপ্যায়ন করলে অথবা আপ্যায়নের ইচ্ছা পোষণ করলেও তাদের কল্যাণের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দু‘আ করা উচিত। মেযবানের কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও বরকতের জন্য দু‘আ করা মেহমানের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হিসেবে গণ্য।
১১. এক নজরে খাদ্য গ্রহণের আদাবসমূহ :
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, খাদ্য গ্রহণের আদাবসমূহ হলো-
1. খাবারের আগে হাত ধুয়ে নেয়া ও কুলকুচি করে নেয়া।
2. এই নিয়তে খাবার গ্রহণ করা যে, এটি আমাদেরকে সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর আনুগত্য করতে শক্তি যোগাবে।
3. ডান হাত দিয়ে খাওয়া এবং প্রয়োজনে বাম হাতের সহযোগিতা নেয়া।
4. সকলে মিলে মিশে খাওয়া, একা একা নয়। কেননা এক বাসনে অনেক হাত পড়লে আল্লাহ তাতে বরকত দেন।
5. আহারের জন্য যখনই যা পাওয়া যায় তার জন্য মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া।
6. ফ্লোরে বসা অবস্থায় খেলে- হাটু ভাঁজ করা অবস্থায় দুই পায়ের উপর বসা। অথবা বাম পায়ের উপর বসা এবং ডান হাতের কব্জি খাড়া ডান হাটুর উপর রাখা। অথবা ভাঁজ করা দুই হাটুর উপর দুই কব্জি রেখে বসা।
7. জুতা খুলে রেখে খাবার গ্রহণ করা।
8. বয়োজৈষ্ঠ্য ও বুজুর্গ ব্যক্তিকে দিয়ে খাবার শুরু করা।
9. সম্ভব হলে বৃদ্ধাঙ্গুলি ও প্রথম দুই আঙ্গুল দিয়ে খাওয়া। অথবা প্রয়োজনে সকল আঙ্গুলও ব্যবহার করতে দোষ নেই।
10. দয়াময় আল্লাহর নাম নিয়ে খাবার শুরু করা। শুরুতে তা ভুলে গেলে যখন স্মরণ হয় তখনই বলা।
11. মাজলিসের মুরববী অথবা মেযবানের অনুমতি ছাড়া খাবার শুরু না করা।
12. নিজের সামনে থেকে খাবার গ্রহণ করা। প্লেটের মাঝখান থেকে নয়, কিংবা অন্য কারো সামনে থেকেও নয়।
13. বড় বড় লুকমা মুখে না তোলা এবং খাওয়ার সময় অদ্ভুত ও বিরক্তিকর আওয়াজ না করা।
14. মুখে লুকমা ভর্তি অবস্থায় কথা বলা থেকে বিরত থাকা।
15. খাওয়ার মাজলিসের লোকেরা দেখছে এমতাবস্থায় কফ, সর্দি কিংবা থুথু ইত্যাদি না ফেলা।
16. গরম খাবারের উপর মুখ দিয়ে ফুঁ না দেয়া।
17. অত্যধিক গরম খাবার অথবা অত্যধিক ঠান্ডা খাবার না খাওয়া।
18. সামনে অনেক রকমের খাবার থাকলে নিজের পছন্দমত যে কোনটি দিয়ে শুরু করা।
19. হাত থেকে খাবারের কোন অংশ দস্তরখানে পড়ে গিয়ে থাকলে সম্ভব হলে তা পরিষ্কার করে খেয়ে নেয়া, শয়তানের জন্য তা ফেলে না রাখা।
20. অপর মুসলিম ভাইকেও খাবারে শামিল করা।
21. মেহমানের সামনে খাবার ঢেকে পরিবেশন করা।
22. পাশের জনের খাবার শেষ না হয়ে থাকলে তাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য বসা। তাড়াহুড়া করে উঠে না যাওয়া।
23. খাবার নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা।
24. আলাদাভাবে বিশেষ কোন খাবার তালাশ না করা এবং মেযবান যে পরিমাণ খাবার উপস্থিত করেছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা।
25. যিনি খাবারের আয়োজন করলেন তার জন্য দু’আ করা।
26. প্রয়োজন বোধ করলে মেযবানের পরিবার ও সন্তানাদির জন্য কিছু খাবার রেখে দেয়া।
27. কেউ খাবারের দাওয়াত করলে সে দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করা।
28. বিনা দাওয়াতে কোন অনুষ্ঠানে আহার না করার চেষ্টা করা।
29. বাবুর্চি অথবা চাকর-চাকরানীকেও খাবারের ভাগ দেয়া।
30. মেহমানের সাথে যে বাহন অথবা বাহনের চালক থাকে তাকেও খাবারে শামিল করা।
31. খাবার দস্তরখানের উপর রাখা। খাবারের উচ্ছিষ্ট অন্য কারো সামনে বা নিজের ভাল খাবারের সাথে না রেখে এর জন্য নির্ধারিত স্থানে রাখা।
32. আঙ্গুলকে চেটে নেয়া এবং প্লেট মুছে খাওয়া।
33. খাবারের পর হাত ধুয়ে নেয়া এবং গড়গড়া করা।
34. পানাহারে অপচয় ও অপব্যয় করা থেকে বিরত থাকা।
35. খাবার শেষে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।
১২. এক নজরে পান করার আদাবসমূহ :
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, পান করার আদাবসমূহ হলো-
1. ডান হাত দিয়ে পান করা। কেননা শয়তান বাম হাত দিয়ে পান করে।
2. তিন চুমুকে বা তিন নি:শ্বাসে পান করা।
3. পান করার শুরুতে মহান আল্লাহর নাম নেয়া এবং শেষে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
4. যিনি পান করালেন তার জন্য নেক দু‘আ করা।
5. পান পাত্রে মুখ দিয়ে ফুঁ না দেয়া।
6. বিনা কারণে দাঁড়িয়ে পানাহার না করা।
7. অত্যধিক গরম অথবা অত্যধিক ঠান্ডা বস্ত্ত পান করা থেকে বিরত থাকা।
8. ভাঙ্গা পাত্রের ভগ্নাংশ দিয়ে পান না করা।
9. অন্য কাউকে পান করাতে চাইলে নিজের ডানের জনকে দিয়ে শুরু করা।
10. যামযাম পান করার সময় কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে পান করা এবং দু‘আ পড়া।

১৩. শেষকথা:
ইসলাম একটি বাস্তবসম্মত, কল্যাণধর্মী, সাবলিল ও সহজাত জীবনাদর্শ। আর মানুষের খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া একটি সহজাত জীবনাচারের অন্তর্ভুক্ত। ইসলামী জীবনাদর্শে তাই মানুষের জীবনাচারকে তাঁর সাধ্য-সামর্থ্য, রুচিবোধ, সহজাত প্রবৃত্তি ও মানবিক গুণাবলী ইত্যাদি সবকিছুর মাঝে সুন্দরতম সমন্বয় সাধন করা হয়েছে। একদিকে সমন্বয় করা হয়েছে তাদের চাহিদা ও সামর্থের মাঝে। অপরদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে তাদের পারস্পরিক অধিকার ও অনুভূতির দিকে। এবং আরো লক্ষ্য রাখা হয়েছে তাদের জন্য যাবতীয় কল্যাণ নিশ্চিতকরণ ও তাদেরকে যাবতীয় অকল্যাণ থেকে মুক্ত রাখার দিকে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সকল মৌলিক মানবীয় গুণাবলীর আঁধার। তিনি আমাদেরকে পানাহারের ক্ষেত্রেও এমন সুন্দর শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়ে গেছেন যাতে একদিকে যেমন ব্যক্তির নিজের চাহিদা, সামর্থ্য ও রুচিবোধের প্রতি নজর দেয়া হয়েছে। তেমনি নজর দেয়া হয়েছে অপরের চাহিদা, সামর্থ্য ও রুচিবোধের দিকে এবং তাদের প্রতি দায়িত্ববোধ ও সহমর্মিতা প্রকাশের দিকে। নজর দেয়া হয়েছে মানুষের প্রতি মানুষের অধিকার ও দায়িত্বানুভূতির দিকে, আবার মহান স্রষ্টার প্রতিও মানুষের অধিকার এবং দায়িত্বানুভূতির দিকে। এ বিধানে তাই উপচেপড়া খাবার পেলেও কেউ অহমিকায় মেতে উঠে না। আবার প্রাণ বাঁচাবার ন্যূনতম ব্যবস্থার জন্যও সে মহান স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতার সাথে নতশির হয়। অল্প-বিস্তর সকল পানাহার সামগ্রীকেই সে মহান প্রভুর নি‘আমাত গণ্য করে। আর তাই তাঁর নাম নিয়েই তা গ্রহণ করে এবং পরিশেষে আবার তাঁরই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর নবীর দেখানো পানাহার পদ্ধতি অনুসরণের তৌফিক দিন। সর্বাবস্থায় তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অনুভূতি দিন। আমাদের রিয্ককে সুপ্রশন্ন করুন। আমাদের প্রতি তাঁর নি‘আমাতকে আরো বহুগুণে বাড়িয়ে দিন। আমীন \
وَصَلَّى اللهُ وَ سَلَّمَ عَلَى نَبِيِّـنَا مُحَمَّدٍ وَّ عَلَى آلِهِ وَ أَصْحَابِهِ وَ مَنِ اتَّـبَعَ هُدَاهُ إِلَى يَوْمِ الدِّيْـنِ. وَ آخِرُ دَعْـوَانَا أَنِ الْحَمْدُ ِللهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ.
১৪. গ্রন্থপঞ্জী:
এ পুস্তিকা রচনায় যেসব গ্রন্থের উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে এবং আরো যেসব গ্রন্থ থেকে আমি উপকৃত হয়েছি সেগুলোর একটি মোটামুটি তালিকা নিম্নে প্রদান করা হলো। এগুলোর মধ্যে যেসব গ্রন্থের বিস্তারিত বর্ণনা পাদটিকায় উলে¬খ করা হয়েছে সেগুলোর এখানে শুধু নাম দেয়া হলো। মহান আল্ল¬াহ এ সকল ইমাম, ‘আলিম ও বিজ্ঞজনদের তাঁর অফুরন্ত নি‘আমত, রহমত, মাগফিরাত ও মর্যাদা প্রদান করুন এবং এ গ্রন্থকে তাদের জন্যেও সাদকায়ে জারিয়াহ হিসেবে কবুল করুন।
1. আল-কোরআনুল কারীম
2. আল-বুখারী, আবূ ‘আবদিল্লাহ মুহাম্মদ, সাহীহুল বুখারী
3. মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ, সাহীহ মুসলিম
4. আত্-তিরমিযী, আবূ ঈসা মুহাম্মদ ইবন ঈসা, আল জামি’ লিত্-তিরমিযী
5. আবূ দাউদ, সুলাইমান ইবনুল আশ‘আস, সুনান আবী দাউদ
6. আন্-নাসায়ী, ‘আব্দুর রহমান আহমাদ ইবন শু‘আইব, সুনান আন্-নাসায়ী
7. আল-বাইহাকী, আবূ বকর আহমাদ ইবনুল হুসাইন, সুনান আল-বাইহাকী আল-কুবরা
8. আল-বাইহাকী, আবূ বকর আহমাদ ইবনুল হুসাইন, শু‘আবুল ঈমান
9. আদ্-দারিমী, আবূ মুহাম্মদ ‘আব্দুল¬াহ ইবন ‘আব্দুর রহমান, সুনান আদ্-দারিমী
10. মালিক ইবন আনাস, মুয়াত্তা ইমাম মালিক
11. আহমাদ ইবন হাম্বল, মুসনাদ আহমাদ ইবন হাম্বল
12. আল-হাকিম, আবূ ‘আব্দিল¬াহ মুহাম্মদ ইবন ‘আব্দিল¬াহ (৩২১-৪০৫হি.), আল-মুসতাদরাক ‘আলা আস্- সাহীহাইন
13. মুহাম্মদ ইবন হিববান ইবন আহমাদ আত-তামীমী (মৃ. ৩৫৪হি.), সাহীহ ইবন হিববান
14. আত-তিরমিযী, আবূ ঈসা মুহাম্মদ ইবন ঈসা, শামাইলুন নাবিয়্যি
15. মুহাম্মদ ইবন ইয়াযীদ আল-কাযবীনী, সুনান ইবন মাজাহ
16. ‘আলী ইবন ‘উমার আবুল হাসান আদ্-দারা কুতনী, সুনান আদ্-দারা কুতনী
17. আল-আলবানী, মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাহীহু ওয়া দা’য়ীফু ইবন মাজাহ
18. আল-বুখারী, আবূ ‘আব্দিল¬াহ মুহাম্মদ, আল-আদাবুল মুফরাদ, অনু- মাওলানা মুহাম্মদ মূসা (ঢাকা: আহসান পাবলিকেশন্স, ২০০১)
19. আত-তাবারানী, সুলাইমান ইবন আহমাদ, আল-মু’জাম আল-কাবীর (আল-মুসিল: মাকতাবাতুল ‘উলূমি ওয়াল হিকাম, ১৪০৪ হি.)
20. আন্-নাবাবী, ইয়াহইয়া ইবন শারফ, রিয়াদুস সালেহীন
21. ‘আলাউদ্দীন ‘আলী আল-মুত্তাকী (৮৮৫-৯৭৫হি.), কানযুল ‘উম্মাল ফী সুনানিল আকওয়ালি ওয়াল আফ‘আল (বৈরূত: দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, ১৪১৯ হি.)
22. আবূ বকর ‘আব্দুল্লাহ ইবন মু‏হাম্মাদ ইবন আবী শাইবাহ আল-কূফী (১৫৯-২৩৫হি.), আল-কিতাবুল মুসান্নাফ ফিল আহাদীসি ওয়াল আসার (রিয়াদ: মাকতাবাতুর রুশদ, ১৪০৯ হি.)
23. ‘আলী ইবন আবী বকর আল-হাইসামী (মৃ. ৮০৭হি.), মাজমা‘উয যাওয়ায়িদ ওয়া মামবা‘উল ফাওয়াইদ (বৈরূত: দারুল কিতাবিল ‘আরাবী, ১৪০৭ হি.)
24. আবূ বকর ‘আব্দুর রায্যাক ইবন হুমাম আস-সান‘আনী (১২৬-২১১), আল-মুসান্নাফ (বৈরূত: আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৪০৩ হি.)
25. মুহাম্মদ ফুয়াদ ‘আব্দুল বাকী, আল-মু’জামুল মুফাহরাস লি আলফাযিল হাদীসিন্- নাবাবী
26. মুহাম্মদ ফুয়াদ ‘আব্দুল বাকী, আল-লু’লু’ ওয়াল মারজান ফীমাত্তাফাকা ‘আলাইহি আশ্-শাইখান
27. ইবন কাসীর, তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম
28. আত্-তাবারী, আবূ জা’ফর মুহাম্মদ ইবন জারীর, জামি’উল বায়ান ‘আন তা’বীলি আইল কোরআন
29. আবূ ‘আব্দিল¬াহ মুহাম্মদ ইবন আহমাদ আল-কুরতুবী, আল জামি’ লিআহকামিল কোরআন
30. শাইখুল ইসলাম, আহমাদ ইবন তাইমিয়াহ, মাজমূ’উল ফাতাওয়া (রিয়াদ: দারু ‘আলামিল কুতুব, ১৯৯১ খৃ.)
31. শাইখুল ইসলাম, আহমাদ ইবন তাইমিয়াহ, আল-‘উবূদিয়্যাহ (বৈরূত: আল-মাকতাবুল ইসলামী, দ্বিতীয় সংস্করণ)
32. মুনীর মুহাম্মদ গাদবান, ফিক্হুস সীরাহ আন্-নাবাবিয়্যাহ
33. আর-রাযী, ফখরুদ্দীন, আত-তাফসীরুল কাবীর
34. আশ্-শাওকানী, মুহাম্মদ ইবন ‘আলী, নাইলুল আওতার (দামেস্ক: দারুল ফিকর, ১৯৮০ খৃ.)
35. মুহাম্মদ ইবন জামীল যাইনূ, আরকানুল ইসলাম ওয়াল ঈমান ওয়া আল-আকীদাহ আল-ইসলামিয়্যাহ
36. আল-‘আসকালানী, ইবন হাজার, ফাতহুল বারী বিশারহি সাহীহিল বুখারী
37. আল-হাইসামী, ইবন হাজার, আয্-যাওয়াজির ‘আন ইকতিরাফিল কাবাইর বৈরূত: আল-মাকতাবাতুল ‘আসরিয়্যাহ, ১৪২০ হি.)
38. আল-জাযায়িরী, ‘আব্দুর রহমান, আল-ফিক্হু ‘আলাল মাযাহিবিল আরবা’আহ (বৈরূত: দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, ১৪০৬ হি.)
39. আল-কুরতুবী, ইবন রুশদ, বিদায়াতুল মুজতাহিদ ওয়া নিহায়াতুল মুকতাসিদ (বৈরূত: দারুল কুতুব, ১০ম সংস্করণ, ১৯৮৮ খৃ.)
40. আল-জাযায়িরী, আবূ বকর জাবির, মিনহাজুল মুসলিম
41. মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ, মুখতাসারু সাহীহ মুসলিম
42. আল-হাম্বলী, ‘আব্দুর রহমান ইবন রজব, জামি’উল ‘উলূমি ওয়াল হিকাম (বৈরূত: আল-মাকতাবাহ আল-‘আসরিয়্যাহ)
43. শাতিবী, আবূ ইসহাক ইবরাহীম, আল-ই’তিসাম (বৈরূত: দার আল-মা’রিফাহ)
44. ড. মুহাম্মদ সাঈদ রামাদান আল-বূতী, ফিক্হুস সীরাহ আন্-নাবাবিয়্যাহ (বৈরূত: দারুল ফিকর আল-মু‘আসির, মু. ১১, ১৪১২ হি.)
45. আল-কারাদাবী, ড. ইউসুফ, আল-‘ইবাদাহ ফিল ইসলাম
46. আল-কারাদাবী, ড. ইউসুফ, আল-ঈমানু ওয়াল হায়াতু (কায়রো: মাকতাবাতু উহবাহ, মু. ৬, ১৩৯৮ হি.)
47. আল-কারাদাবী, ড. ইউসুফ, আল-হালালু ওয়াল হারামু ফিল ইসলাম
48. আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপুরী, আর রাহীকুল মাখতূম (ঢাকা: আল কোরআন একাডেমী লন্ডন, বাংলাদেশ কার্যালয়, ১৯৯৯)
49. ইমাম গাযযালী, এহইয়াউ উলুমিদ্দীন (অনু. মুহিউদ্দীন খান), (ঢাকা: মদীনা পাবলিকেশন্স, ২০০৭)
50. হাসান আইউব, ইসলামের সামাজিক আচরণ (ঢাকা: আহসান পাবলিকেশন্স, ২০০৭)
51. হাফিয আবূ শায়খ আল-ইসফাহানী, আখলাকুন্ নবী (সা.), (ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক অনুদিত, মু. ২, ১৯৯৮)
52. আবূ ঈসা মুহাম্মাদ ইবন ঈসা আত-তিরমিযী, শামাইলুন নাবিয়্যী (সা.), মুহাম্মদ সাঈদ আহমদ অনুদিত, (ঢাকা: বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ১৯৯৮)
53. মাসিক পৃথিবী, জুলাই ২০০৫ সংখ্যা
54. ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম ভুঁইয়া, ‘ইবাদাত (ঢাকা: বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ২০১১)
55. ড. মুহাম্মদ ‘আলী আল-খাওলী, মু’জামুল আলফায আল-ইসলামিয়্যাহ
56. ড. মুহাম্মদ হাসান আল-হিমসী, কোরআনুন কারীম তাফসীর ওয়া বায়ান মা‘আ আসবাবিন নুযূল লিস্-সুয়ূতী মা‘আ ফাহারিস কামিলাহ লিল-মাওয়াদি’ ওয়াল আলফায
57. মুহাম্মদ ফুয়াদ ‘আব্দুল বাকী, আল-মু’জাম আল-মুফাহরাস লিআলফাযিল কোরআনিল কারীম (কায়রো: দারুল হাদীস, মু. ২, ১৪০৮ হি.)
58. আল-মুনজিদ ফিল্-লুগাতি ওয়াল আ‘লাম, (লেবানন: বৈরূত, দার আল-মাশরিক, ১৯৮৬ ইং)
59. HANS WRHR, A Dictionary of Modern Written Arabic
60. Munir Baalabakki, AL-MAWRID DICTIONARY
61. ইবন মানযূর, লিসানুল আরব (কায়রো: দারুল হাদীস, ১৪২৩ হি.)
62. ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, আরবী-বাংলা ব্যবহারিক অভিধান (ঢাকা: রিয়াদ প্রকাশনী, ২০০২)
63. ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক ও অন্যান্য, ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ১৯৯২)

 

ফুটনোটঃ

. আল-কোরআন: সূরা ইবরাহীম, ১৪:৭
. আল-কোরআন: সূরা বানী ইসরাঈল, ১৭:৭০
. আল-কোরআন: সূরা আল-বাকারাহ, ২:১৬৮
. আল-কোরআন: সূরা আল-বাকারাহ, ২:১৭২
. আল-কোরআন: সূরা আল-মু’মিনূন, ২৩:৫১
. জামি’ আত-তিরমিযী, খ. ৭, পৃ. ৮
. হাফিয আবূ শায়খ আল-ইসফাহানী, আখলাকুন্ নবী (সা.), (ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক অনুদিত, মু. ২, ১৯৯৮), পৃ. ২৭৮, হাদীস নং- ৫৮৫ ও মুসান্নাফ ‘আব্দুর রায্যাক, খ. ১০, পৃ. ৪১৭, হাদীস নং- ১৯৫৫৪
. মুসনাদ আহমাদ, খ. ১৩, পৃ. ৩১২, হাদীস নং- ৬২৭৪ ও সুনান ইবন মাজাহ, খ. ১, পৃ. ২৮৪, হাদীস নং- ২৪০
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ২৭২, হাদীস নং- ৫৬৫
. আল-বাইহাকী, শু‘আবুল ঈমান, খ. ১৭, পৃ. ২৩৩
. আল-বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা, খ. ৭, পৃ. ৪৯
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ২৭৩, হাদীস নং- ৫৬৭
. মুসনাদ আহমাদ, খ. ২৫, পৃ. ৩১৩
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ২৯৫, হাদীস নং- ৬৩২
. মুসনাদ আহমাদ, খ. ২৫, পৃ. ২১৫, হাদীস নং- ১২১৬৯
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ২৯৫, হাদীস নং- ৬৩৫
. আল-বাইহাকী, শু‘আবুল ঈমান, খ. ১২, পৃ. ৪৩০, হাদীস নং- ৫৬৯০ ও কানযুল ‘উম্মাল, খ. ১০, পৃ. ১৯, হাদীস নং- ২৮২৭৬
. আত-তাবারানী, আল-মু’জামুল কাবীর, খ, ২, পৃ. ৩৭২
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ২৯৬, হাদীস নং- ৬৪০ ও কানযুল ‘উম্মাল, খ. ১০, পৃ. ১৯, হাদীস নং- ২৮২৭৮
. আল-হাকিম, আল-মুসতাদরাক ‘আলা আস-সাহীহাইন, খ. ১৬, পৃ. ৪২২, হাদীস নং- ৭১৯৭ ও ইবন মাজাহ, খ. ১০, পৃ. ৪২, হাদীস নং- ৩২৯৯
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ২৮৩, হাদীস নং- ৫৯৭
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ২৮৩, হাদীস নং- ৫৯৮ ও কানযুল ‘উম্মাল, খ. ৭, পৃ. ৩৯, হাদীস নং- ১৮১৬৯
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ২৮৩, হাদীস নং- ৫৯৯
. আত-তাবারানী, আল-মু’জাম আস-সাগীর, খ. ১, পৃ. ১৫৩, হাদীস নং- ১৫০
. আল-‘আসকালানী, আহমাদ ইবন ‘আলী ইবন হাজার, ফাতহুল বারী শারহু সাহীহিল বুখারী (কায়রো: দারুর রাইয়ান লিত্-তুরাস, ১৪০৭ হি.), খ. ৭, পৃ. ৫৬৮-৫৬৯
. ফাতহুল বারী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৬৯
. প্রাগুক্ত।
. মুসনাদ আহমাদ, খ. ৪৯, পৃ. ৩৩৬, হাদীস নং- ২৩১৮০
. সাহীহুল বুখারী, খ. ২০, পৃ. ৯০, হাদীস নং- ৫৯৭৪
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ২৮৫, হাদীস নং- ৬০৫
. কানযুল ‘উম্মাল, খ. ৭, পৃ. ৪২, হাদীস নং- ১৮২১৭
. সুনান আবী দাউদ, খ. ৩, পৃ. ৩৬২, হাদীস নং- ৩৮৩১ ও আল-মু‘জামুল কাবীর, খ. ২৪, পৃ. ২৯৯, হাদীস নং- ৭৫৮
. সাহীহ মুসলিম, খ. ৩, পৃ. ১৬১৮, হাদীস নং- ২০৪৭
. মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ, খ. ৫, পৃ. ৩৬, হাদীস নং- ২৩৪৭৮
. মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ, খ. ৫, পৃ. ৫৭০ ও আল-বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা, খ. ৭, পৃ. ২৮১
. আত-তাবারানী, আল-মু’জাম আল-কাবীর, খ. ৫, পৃ. ৪৪৫, হাদীস নং- ৫৭২৬
. জামি’ আত-তিরমিযী, খ. ৭, পৃ. ২৯, হাদীস নং- ১৭৬৬
. সুনান আবী দাউদ, খ. ৩, পৃ. ৩৬৩, হাদীস নং- ৩৮৩৬
. আল-বাইহাকী, শু‘আবুল ঈমান, খ. ১২, পৃ. ৪৮০, হাদীস নং- ৫৭৩৬
. সুনান আবী দাউদ, খ. ১০, পৃ. ৩১২, হাদীস নং- ৩৩৩৯
. কানযুল ‘উম্মাল, খ. ১৫, পৃ. ১০৫, হাদীস নং- ৪০৭৫১
. কানযুল ‘উম্মাল, খ. ১৫, পৃ. ১৮১, হাদীস নং- ৪১৬৯৬
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ২৭৩, হাদীস নং- ৫৬৬
. সাহীহুল বুখারী, খ. ৫, পৃ. ২০৬৬, হাদীস নং- ৫০৯৯
. সুনান আবী দাউদ, হাদীস নং- ৩৭৭৩, সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস নং- ৩২৬৩
. কানযুল ‘উম্মাল, খ. ৭, পৃ. ৪০, হাদীস নং- ১৮১৮২
. আল-বাইহাকী, আস-সুনান আল-কুবরা, খ. ১, পৃ. ৩১, হাদীস নং- ১২৩
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ৩০৪, হাদীস নং- ৬৬৩
. আবূ ঈসা মুহাম্মাদ ইবন ঈসা আত-তিরমিযী, শামাইলুন নাবিয়্যী (সা.), মুহাম্মদ সাঈদ আহমদ অনুদিত, (ঢাকা: বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ১৯৯৮ খৃ.), পৃ. ৯৪, হাদীস নং- ১৮৮
. শামাইলুন নাবিয়্যী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ৯৪-৯৫, হাদীস নং- ১৮৯
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ৩০৫, হাদীস নং- ৬৬৭
. মুসনাদ আহমাদ, খ. ৬, পৃ. ২৭৯, হাদীস নং- ২৬৪২৬
. কানযুল ‘উম্মাল, খ. ১৫, পৃ. ১০৬, হাদীস নং- ৪০৭৬৫ ও সুনান ইবন মাজাহ, খ. ২, পৃ. ১০৮৫, হাদীস নং- ৩২৬০
. আত-তাবারানী, আল-মু’জাম আল- আউসাত, খ. ৬, পৃ. ১৮০. হাদীস নং- ৬১২৬
. সুনান আবী দাউদ, খ. ৩, পৃ. ৩৬৬, হাদীস নং- ৩৮৫২ ও মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ, খ. ৫, পৃ. ২৯৩, হাদীস নং- ২৬২১৮
. আল-মুসতাদরাক ‘আলা আস-সাহীহাইন, খ. ৪, পৃ. ১৫২, হাদীস নং- ৭১৯৮ ও জামি‘ আত-তিরমিযী, খ. ৪, পৃ. ২৮৯, হাদীস নং- ১৮৫৯
. জামি‘ আত-তিরমিযী, খ. ৪, পৃ. ২৮৯, হাদীস নং- ১৮৬০ ও সুনান ইবন মাজাহ, খ. ২, পৃ. ১০৯৬, হাদীস নং- ৩২৯৭
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ৩০৯, হাদীস নং- ৬৭৯
. সাহীহুল বুখারী, খ. ৫, পৃ. ২১৩০, হাদীস নং- ৫২৯৬ ও সুনান আবী দাউদ, খ. ৩, পৃ. ৩৩৮, হাদীস নং- ৩৭২৬
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ৩১১, হাদীস নং- ৬৮২
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ৩০৯, হাদীস নং- ৬৭৮ ও সাহীহ মুসলিম, খ. ১, পৃ. ৪৭৩
. মুসনাদ আহমাদ, খ. ১, পৃ. ২২৫, হাদীস নং- ১৯৭৮, ১৯৮৪ ও শামাইলুন নাবিয়্যী (সা.), পৃ. ৯৮-৯৯, হাদীস নং- ১৯৮
. আত-তাবারানী, আল-মু’জাম আল-কাবীর, খ. ৫, পৃ. ৪৩০, হাদীস নং- ৫৬৮৩
. সাহীহুল বুখারী, খ. ১০, পৃ. ৭৬, সাহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২০৩০
. আল-মুসতাদরাক ‘আলা আস-সাহীহাইন, খ. ৪, পৃ. ১৫৩, হাদীস নং- ৭২০১
. জামি‘ আত-তিরমিযী, খ. ৪, পৃ. ৩০৭, হাদীস নং- ১৮৯৫
. জামি‘ আত-তিরমিযী, খ. ৩, পৃ. ৩৬০, হাদীস নং- ১৮৪৫ (ঢাকা: বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক অনুদিত)
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ৩০১, হাদীস নং- ৬৫৫
. ইবন আবী শাইবাহ, মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ, খ. ৭, পৃ. ৯১, হাদীস নং- ৬৬
. মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ, প্রাগুক্ত, পৃ. ৯১
. মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ, খ. ৫, পৃ. ১৩৯, হাদীস নং- ২৪৫০৯
. সাহীহ মুসলিম, খ. ১৩, পৃ. ২৭৩, হাদীস নং- ৪৯১৫
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ৩০১-৩০২, হাদীস নং- ৬৫৬
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ৩০২, হাদীস নং- ৬৫৭
. আন-নাসায়ী, আস-সুনান আল-কুবরা, খ. ৪, পৃ. ২০১, হাদীস নং- ৬৮৯৪
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ৩০৩, হাদীস নং- ৬৬০
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ৩০৩, হাদীস নং- ৬৬১
. আল-কোরআন: সূরা আল-আহযাব, ৩৩:২১
. সাহীহুল বুখারী, খ. ৯, পৃ. ৪৫৮ ও সাহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২০২২
. জামি’ আত-তিরমিযী, হাদীস নং- ১৮৫৯ ও সুনান আবী দাউদ, হাদীস নং- ৩৭৬৭
. সাহীহ ইবন হিববান, হাদীস নং- ৫২১৩, ইবন সুন্নী, হাদীস নং- ৪৬১ এবং সিলসিলাতুস সাহীহাহ, হাদীস নং- ১৯৮
. সাহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২০১৭
. সাহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২০১৮
. আত-তাবারানী, আল-মু’জাম আল-কাবীর, খ. ১৭, পৃ. ৩৮, হাদীস নং- ১৮৮৬৭
. আল-বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা, খ. ৭, পৃ. ২৭৭
. সাহীহুল বুখারী, খ. ৯, পৃ. ৪৫৮, সাহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২০২২
. সুনান আন-নাসায়ী, খ. ৫, পৃ. ১৮৪, হাদীস নং- ১৩৪৪, আস-সুনান আল-কুবরা লিন-নাসায়ী, খ. ১, পৃ. ৪০৫, হাদীস নং- ১২৮৪ ও আল-মু’জাম আল-আউসাত লিত-তাবারানী, খ. ৩, পৃ. ২২৮, হাদীস নং- ১২৬৭
. শামাইলুন নাবিয়্যী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ১০০, হাদীস নং- ২০০
. সাহীহ মুসলিম, খ. ১০, পৃ. ৩১১, মুসনাদ আহমাদ, খ. ৭, পৃ. ৫১, জামি’ আত-তিরমিযী, খ. ৭, পৃ. ৯১,
. মুসনাদ আহমাদ, খ. ৭, পৃ. ৩৫০
. মুসনাদ আহমাদ, খ. ২, পৃ. ৫৬
. মুসনাদ আবী ইয়া’লা আল-মুসিলী, খ. ৮, পৃ. ৭৮, হাদীস নং- ৩৪৬৩
. আত-তিরমিযী, আশ-শামায়িলুল মুহাম্মাদিয়্যাহ, খ. ১, পৃ. ২৪৪, হাদীস নং- ২১৪
. আশ-শামায়িলুল মুহাম্মাদিয়্যাহ, প্রাগুক্ত, খ. ১, পৃ. ২৪৩, হাদীস নং- ২১৩ ও মুসনাদ আহমাদ, খ. ২৪, পৃ. ২৮৯
. সাহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২০২৪; জামি’ আত-তিরমিযী, হাদীস নং- ১৮৮০ এবং সুনান আবী দাউদ, হাদীস নং- ৩৭১৭
. আল-মু’জামুল কাবীর, খ. ২, পৃ. ২৬৭, হাদীস নং- ২১২৪
. সুনান আদ-দারিমী, খ. ২, পৃ. ১৬২, হাদীস নং- ২১২৭
. সাহীহ ইবন হিববান, খ. ১২, পৃ. ১৪২, হাদীস নং- ৫৩২৪
. সাহীহ মুসলিম, খ. ৩, পৃ. ১৬০০, হাদীস নং- ২০২৪
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ৩১২
. মুসনাদ আহমাদ, খ. ২৯, পৃ. ৩৬৯, হাদীস নং- ১৪৩২০ ও সুনান ইবন মাজাহ, খ. ৯, পৃ. ১৮২, হাদীস নং- ৩০৫৩
. কানযুল ‘উম্মাল, খ. ১২, পৃ. ১০১, হাদীস নং- ৩৪৭৬৯
. কানযুল ‘উম্মাল, প্রাগুক্ত, হাদীস নং- ৩৪৭৭৭
. আল-হাকিম, আল-মুসতাদরাক ‘আলা আস-সাহীহাইন, খ. ৪, পৃ. ২৮৫, হাদীস নং- ১৬৯৩
. সুনান আদ-দারা কুতনী, খ. ৭, পৃ. ১৯, হাদীস নং- ২৭৭২
. আল-মুসতাদরাক ‘আলা আস-সাহীহাইন, খ. ৪, পৃ. ১৫৫, হাদীস নং- ৭২০৭
. সাহীহ ইবন হিববান, খ. ২২, পৃ. ১৯৪, হাদীস নং- ৫৪১৮ ও জামি‘ আত-তিরমিযী, খ. ৭, পৃ. ১০৩, হাদীস নং- ১৮১১
. আশ-শামায়িলুল মুহাম্মাদিয়্যাহ, প্রাগুক্ত, খ. ১, পৃ. ২৩৯, হাদীস নং- ২০৯
. শামাইলুন নাবিয়্যী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ১০২, হাদীস নং- ২০৪
. সাহীহুল বুখারী, খ. ১৭, পৃ. ৩৫৭, হাদীস নং- ৫২০০ ও মুসনাদ আহমাদ, খ. ২৬, পৃ. ৩, হাদীস নং- ১২৪৫৭
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ৩০৬, হাদীস নং- ৬৬৮
. আস-সুনান আল-কুবরা লিন-নাসায়ী, খ. ৪, পৃ. ১৯৮, হাদীস নং- ৬৮৮৬
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ৩০৬, হাদীস নং- ৬৭০
. আত-তাবারানী, আল-মু’জাম আল-আউসাত, খ. ২০, পৃ. ১৩৬, হাদীস নং- ১১৩৪৬
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ৩০৯, হাদীস নং- ৬৭৬
. সাহীহ মুসলিম, খ. ১০, পৃ. ৩১৬, হাদীস নং- ৩৭৮২
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ৩০৯, হাদীস নং- ৬৭৭
. জামি’ আত-তিরমিযী (বাবু মা জাআ ফিল কালামি ফিত-তাওয়াফি), খ. ৪, পৃ. ৫৯, হাদীস নং- ৮৮৩
. সুনান আন-নাসায়ী (বাবু ইবাহাতিল কালামি ফিত-তাওয়াফি), খ. ৯, পৃ. ৩৬৯, হাদীস নং- ২৮৭৪
. আত-তাবারানী, আল-মু’জামুল কাবীর, খ. ৯, পৃ. ২৪৭, হাদীস নং- ১০৭৯৩
. আল-মু’জামুল আউসাত, খ. ২, পৃ. ৩৬৬
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ৩০৯, হাদীস নং- ৬৭৮
. আল-মু’জামুল কাবীর, খ. ২৫, পৃ. ১৮, হাদীস নং- ১৫
. প্রাগুক্ত, খ. ১৯, পৃ. ২৫৮
. ইবন কাইয়্যিম আল-জাওযিয়্যাহ, যাদুল মা‘আদ ফী হাদয়ি খাইরিল ‘ইবাদ (বৈরূত: মুয়াস্সাসাতুর রিসালাহ, ১৪০৭ হি.), খ. ১, পৃ. ১৪৮
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ২৭৮
. সুনান ইবন মাজাহ, খ. ২, পৃ. ১০৮৬, হাদীস নং- ৩২৬৩, ৩২৬৫
. আল-কোরআন: সূরা মুহাম্মদ, ৪৭:১২
. আশ-শাওকানী, মুহাম্মদ ইবন ‘আলী, ফাতহুল কাদীর (বৈরূত: আল-মাকতাবাতুল ‘আসরিয়্যাহ, ১৪১৭ হি.), খ. ৫, পৃ. ৪১
. সাহীহুল বুখারী, খ. ৫, পৃ. ২০৬২, হাদীস নং- ৫০৮১ ও সাহীহ মুসলিম, খ. ৩, পৃ. ১৬৩১, হাদীস নং- ২০৬০
. ইবন কাসীর, হাফিয আবুল ফিদা ইসমাঈল আল-কুরাশী, আদ-দামেস্কী, তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম (বৈরূত: দারুল মা’রিফাহ, ১৪০৯ হি.), খ. ৪, পৃ. ১৮৯
. শামাইলুন নাবিয়্যী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ৭০, হাদীস নং- ১৩৫
. সাহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২০৩৪, জামি‘ আত-তিরমিযী, হাদীস নং- ১৮০৪ এবং সুনান আবী দাউদ, হাদীস নং- ৩৮৪৫
. সাহীহ মুসলিম, খ. ৩, পৃ. ১৬০৫, হাদীস নং- ২০৩২
. যাদুল মা‘আদ ফী হাদয়ি খাইরিল ‘ইবাদ, প্রাগুক্ত, খ. ১, পৃ. ১৪৮
. হেলথ টিপস, দৈনিক নয়া দিগন্ত, ০৬.০৬.২০১১ ইংরেজী
. আত-তাবারানী, আল-মু‘জাম আস-সাগীর, খ. ২, পৃ. ৩২৮, হাদীস নং- ৭১১
. আল-মুসতাদরাক ‘আলা আস-সাহীহাইন, খ. ৪, পৃ. ১৩৪, হাদীস নং- ৭১৩৭, আল-মু’জাম আল-আওসাত, খ. ৮, পৃ. ৪৪, হাদীস নং- ৭৯০৭ ও আল-বাইহাকী, শু‘আবুল ঈমান, খ. ১২, পৃ. ৪৭৮, হাদীস নং- ৫৭৩৪
. কানযুল ‘উম্মাল, খ. ৭, পৃ. ৪০, হাদীস নং- ১৮১৯১
. সাহীহুল বুখারী, খ. ৫, পৃ. ২০৫৬, হাদীস নং- ৫০৬৩
. সাহীহুল বুখারী, খ. ৯, পৃ. ৪৫৮, সাহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২০২২
. সুনান ইবন মাজাহ, খ. ২, পৃ. ১০৮৯, হাদীস নং- ৩২৭৩
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ২৮৭, হাদীস নং- ৬১৩
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ২৮৬, হাদীস নং- ৬১১
. সুনান ইবন মাজাহ, খ. ৯, পৃ. ৪৬৩
. সুনান ইবন মাজাহ, খ. ৯, পৃ. ৪৬৩
. আল-মুসতাদরাক ‘আলা আস-সাহীহাইন, খ. ৪, পৃ. ১২২, হাদীস নং- ৭০৯২
. কানযুল ‘উম্মাল, খ. ১৫, পৃ. ১৮২, হাদীস নং- ৪১৭০০
. সুনান আবী দাউদ, হাদীস নং- ৪৯৪৩, জামি’ আত-তিরমিযী, হাদীস নং- ১৯২১
. ইমাম বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ (মুহাম্মদ মূসা অনুদিত), (ঢাকা: আহসান পাবলিকেশন্স, ২০০১), পৃ. ১৪৫, অনুচ্ছেদ- ১৬৮, হাদীস নং- ৩৬৩
. সুনান আদ-দারিমী, খ. ২, পৃ. ১৪৫, হাদীস নং- ২০৭২
. সাহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২০৩৪, জামি’ আত-তিরমিযী, হাদীস নং- ১৮০৪, সুনান আবী দাউদ, হাদীস নং- ৩৮৪৫
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ২৭৬, হাদীস নং- ৫৭৮
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ২৭৬, হাদীস নং- ৫৭৯
. সাহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২০৩৩, জামি’ আত-তিরমিযী, হাদীস নং- ১৮০৩
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ২৭৬-২৭৭, হাদীস নং- ৫৮০
. আখলাকুন্ নবী (সা.), প্রাগুক্ত, পৃ. ২৭৭, হাদীস নং- ৫৮১
. সাহীহ মুসলিম, খ. ৩, পৃ. ১৬০৫, হাদীস নং- ২০৩২
. সাহীহ মুসলিম, খ. ৩, পৃ. ১৬০৬, হাদীস নং- ২০৩৩
. সাহীহুল বুখারী, খ. ১, পৃ. ২৯২, হাদীস নং- ৮১৫
. সাহীহ মুসলিম, খ. ১, পৃ. ৩৯৪, হাদীস নং- ৫৬৩
. সাহীহ মুসলিম, খ. ৩, পৃ. ৩৬১, হাদীস নং- ৩৮২৭
. প্রাগুক্ত, হাদীস নং- ৩৮২৯
. আন-নাসায়ী, আস-সুনান আল-কুবরা, খ. ৪, পৃ. ১৫৮, হাদীস নং- ৬৬৩৭, ৬৬৮১
. আল-মু‘জামুল কাবীর, খ. ২, পৃ. ২৩৩, হাদীস নং- ১৯৭২
. সাহীহ ইবন হিববান, খ. ১৪, পৃ. ২৭৩, হাদীস নং- ৬৩৫৯ ও মুসনাদ আহমাদ, খ. ৩, পৃ. ২৭০, হাদীস নং- ১৩৮৮৬
. ইবন মানযূর, লিসানুল আরব (কায়রো: দারুল হাদীস, ১৪২৩ হি.), খ. ৫, পৃ. ৫১৬
. সাহীহুল বুখারী, খ. ৫, পৃ.২০৭৯, হাদীস নং- ৫১৪৭
. মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ, খ. ২, পৃ. ১৮৩, হাদীস নং- ৭৯১১
. প্রাগুক্ত, হাদীস নং- ৭৯১২
. জামি‘ আত-তিরমিযী, খ. ৪, পৃ. ২৮৭, হাদীস নং- ১৮৫৬
. কানযুল ‘উম্মাল, খ. ৭, পৃ. ৩৯, হাদীস নং- ১৮১৭৭
. আস-সুনানুল কুবরা, প্রাগুক্ত, খ. ১০, পৃ. ৩
. সুনান ইবন মাজাহ, খ. ৯, পৃ. ৪৬৩
. সুনান ইবন মাজাহ, খ. ৯, ৪৬৩
. সাহীহুল বুখারী, খ. ১৬, পৃ. ৪৯৭, হাদীস নং- ৪৯৭৪ ও সাহীহ মুসলিম, খ. ১০, পৃ. ৩৯১, হাদীস নং- ৩৮৩৯
. আল-মুসতাদরাক ‘আলা আস-সাহীহাইন, খ. ৪, পৃ. ১৩৫, হাদীস নং- ৭১৩৯ ও জামি‘ আত-তিরমিযী, খ. ৪, পৃ. ৫৯০, হাদীস নং- ২৩৮০
. আল-কোরআন: সূরা আল-আ’রাফ, ৭:৩১
. আল-কোরআন: সূরা বানী ইসরাঈল, ১৭:২৬-২৭
. আল-আদাবুল মুফরাদ, বাবু আকলির রাজুলি মা‘আ ইমরাআতিহী, হাদীস নং- ১০৬৩
. প্রাগুক্ত, হাদীস নং- ১০৬৪
. সাহীহুল বুখারী, খ. ৫, পৃ. ২০৯০, হাদীস নং- ৫১৭০ ও সাহীহ মুসলিম, খ. ৩, পৃ. ১৫৩২, হাদীস নং- ১৯৩০
. সুনান আদ- দারা কুতনী, খ. ৪, পৃ. ২৯৫, হাদীস নং- ৯২
. জামি‘ আত-তিরমিযী, খ. ৪, পৃ. ১২৯, হাদীস নং- ১৫৬০
. সাহীহুল বুখারী, খ. ১০, পৃ. ৮৩-৮৪, সাহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২০৬৫
. সাহীহুল বুখারী, খ. ১০, পৃ. ৮২-৮৩, সাহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২০৬৭
. জামি‘ আত-তিরমিযী, খ. ৪, পৃ. ২৯৯, হাদীস নং- ১৮৭৮ ও সাহীহ মুসলিম, খ. ৩, পৃ. ১৬৩৭, হাদীস নং- ২০৬৭
. মুসনাদ আহমাদ, খ. ৬, পৃ. ৯৮, হাদীস নং- ২৪৭০৬
. ইবন কুদামাহ, আল-মুগনী, খ. ৮, পৃ. ৩২৩
. সাহীহুল বুখারী, খ. ৫, পৃ. ২০৭৯, হাদীস নং- ৫১৪৬, সাহীহ মুসলিম, খ. ১, পৃ. ২৭৪, হাদীস নং- ৩৫৫ ও সাহীহ ইবন হিববান, খ. ৩, পৃ. ৪২১, হাদীস নং- ১১৪১
. সাহীহ মুসলিম, খ. ১, পৃ. ২৩৪, হাদীস নং- ২৭৯
. সাহীহ ইবন হিববান, খ. ৪, পৃ. ১০৯, হাদীস নং- ১২৯৪
. আন-নাসায়ী, আস-সুনানুল কুবরা, খ. ১, পৃ. ৭৮, হাদীস নং- ৬৯
. সাহীহ ইবন খুযাইমাহ, খ. ১, পৃ. ৫৪, হাদীস নং- ১০২
. সুনান আদ-দারিমী, খ. ১, পৃ. ২০৩, হাদীস নং- ৭৩৬
. সাহীহ ইবন হিববান, খ. ১২, পৃ. ৫৫, হাদীস নং- ৫২৫০
. মাজমা‘উয যাওয়ায়িদ, খ. ১, পৃ. ২৮৭
. আল-কোরআন: সূরা আল-ইসরা, ১৭:২৬
. আল-কোরআন: সূরা আন-নিসা, ৪:৩৬
. সাহীহুল বুখারী, খ. ১০, পৃ. ৩৭০, ৩৭১ ও সাহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৪৬
. আস-সুনানুল কুবরা, প্রাগুক্ত, খ. ১০, পৃ. ৩
. সাহীহুল বুখারী, খ. ৫, পৃ. ২২৩৯, হাদীস নং- ৫৬৬৮, ৫৬৬৯ ও সাহীহ মুসলিম, খ. ৪, পৃ. ২০২৫, হাদীস নং- ২৬২৪
. সাহীহ মুসলিম, খ. ৪, পৃ. ২০২৫, হাদীস নং- ২৬২৫
. আল-বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা, খ. ৬, পৃ. ২৭৬, হাদীস নং- ১২৩৯১
. সাহীহুল বুখারী, খ. ১০, পৃ. ৩৭৪
. জামি’ আত-তিরমিযী, হাদীস নং- ১৯৪৫
. মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ, খ. ৭, পৃ. ২১৮
. আল-কোরআন: সূরা আল-মুমতাহিনা, ৬০:৮
. আল-হাকিম, আল-মুসতাদরাক ‘আলা আস-সাহীহাইন, খ. ১৭, পৃ. ১৫৩, হাদীস নং- ৭৪১৪
. সাহীহুল বুখারী, খ. ৯, পৃ. ৫০২, ৫০৩ ও সাহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১৬৬৩
. আল-আদাবুল মুফরাদ, প্রাগুক্ত, পৃ. ৯৬, অনুচ্ছেদ- ১০২, হাদীস নং- ১৯৯
. সাহীহুল বুখারী, খ. ১, পৃ. ৮০, ৮১ ও সাহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১৬৬১
. জামি‘ আত-তিরমিযী, খ. ৪, পৃ. ২৮৬, হাদীস নং- ১৮৫৩
. সাহীহ মুসলিম, খ. ৪, পৃ. ১৯৮১, হাদীস নং- ২৫৫৬
. মুসনাদ আহমাদ, খ. ২, পৃ. ৪৮৩, হাদীস নং- ১০৩১৭, ১০২৭৭
. সাহীহুল বুখারী, খ. ২, পৃ. ৭২৮, হাদীস নং- ১৯৬১ ও সাহীহ মুসলিম, খ. ৪, পৃ. ১৯৮২, হাদীস নং- ২৫৫৭
. সাহীহ মুসলিম, খ. ৪, পৃ. ১৯৮১, হাদীস নং- ২৫৫৫
. মুসনাদ আহমাদ, খ. ৪, পৃ. ১৮, হাদীস নং- ১৬২৭৮
ইবনুল আসীর, ফিক্হুস সীরাত, পৃ. ৭৭, ৮৮ (এ সংক্রান্ত বিস্তারিত বর্ণনার জন্যে দেখুন: কানযুল ‘উম্মাল, বাবু ফাদাইলি ‘আলী (রা.), খ. ১৩, পৃ. ৫৮, হাদীস নং- ৩৬৪১৯)
. আল-কোরআন: সূরা আল-হিজর, ১৫:৮৮
. আল-কোরআন: সূরা আয-যারিয়াত, ৫১:২৪-২৭
. সাহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২৬২৬
. সাহীহুল বুখারী, খ. ১০, পৃ. ৪৪১, সাহীহ মুসলিম, খ. ৩, পৃ. ১৩৫২
. সাহীহুল বুখারী, খ. ১০, পৃ. ৩৭৩, সাহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৪৭
. কানযুল ‘উম্মাল, খ. ৬, পৃ. ১৮১, হাদীস নং- ১৬৩৭৩
. সাহীহুল বুখারী, খ. ৫, পৃ. ২০৭৯, হাদীস নং- ৫১৪৫ ও খ. ৯, পৃ. ৪৮৪, ৪৮৫, ৫০৫, সাহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২০৩৬
. সাহীহ মুসলিম, খ. ৩, পৃ. ১৩৫২
. সুনান আদ-দারা কুতনী, খ. ৪, পৃ. ২৫৮, হাদীস নং- ৬৫
. আল-আদাবুল মুফরাদ, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৬৬, অনুচ্ছেদ- ৩১৩, হাদীস নং- ৭৪৮
. সাহীহ মুসলিম, খ. ৩, পৃ. ১৬৩০, হাদীস নং- ২০৫৯
. কানযুল ‘উম্মাল, খ. ৯, পৃ. ১১০, হাদীস নং- ২৫৮৭৬
. প্রাগুক্ত, হাদীস নং- ২৫৮৭৫
. আল-কোরআন: সূরা আল-আহযাব, ৩৩:৫৩
. সাহীহ ইবন হিববান, খ. ২, পৃ. ৩১৪ ও ৩২০, হাদীস নং- ৫৬০, জামি‘ আত-তিরমিযী, খ. ৪, পৃ. ৬০০, হাদীস নং- ২৩৯৫ ও সুনান আবী দাউদ, খ.৪, পৃ. ২৫৯, হাদীস নং- ৪৮৩২
. সাহীহুল বুখারী, খ. ৫, পৃ. ১৯৮৫, হাদীস নং- ৪৮৮২
.সুনান ইবন মাজাহ, খ. ১, পৃ. ৬১৬, হাদীস নং- ১৯১৪
. মাজমা‘উয যাওয়াইদ, খ. ৮, পৃ. ১১১
. সাহীহ মুসলিম, খ. ৩, পৃ. ১৫৯৪, হাদীস নং- ২০১২, মুসনাদ আহমাদ, খ. ৩, পৃ. ৩০১, হাদীস নং- ১৪২৬৬ ও জামি‘ আত-তিরমিযী, খ. ৪, পৃ. ২৬৩, হাদীস নং- ১৮১২
. সুনান আদ-দারিমী, হাদীস নং- ৪২
. কানযুল ‘উম্মাল, খ. ৯, পৃ. ১১৯, হাদীস নং- ২৫৯৭৮
. সাহীহুল বুখারী, খ. ১৭, পৃ. ৫২, হাদীস নং- ৫০১০
. সাহীহুল বুখারী, খ. ৯, পৃ. ২৪, হাদীস নং- ২৩৮৮
. সাহীহ মুসলিম, খ. ৫, পৃ. ৩২৫, হাদীস নং- ১৭৮৬
. সুনান আদ-দারা কুতনী, খ. ৪, পৃ. ২৫৮, হাদীস নং- ৬৫
. সাহীহুল বুখারী, খ. ১১, পৃ. ৩৯৮, হাদীস নং- ৩২৯৯ ও সাহীহ ইবন হিববান, খ. ২৬, পৃ. ৪০৪, হাদীস নং- ৬৫৪৪
. সাহীহুল বুখারী, খ. ১৭, পৃ. ২১, হাদীস নং- ৪৯৮৯ ও সুনান আবী দাউদ, খ. ১০, পৃ. ২১৩, হাদীস নং- ৩২৭১
. আবূ ঈসা আত-তিরমিযী, আশ্-শামায়িলুল মুহাম্মাদিয়্যাহ, খ. ১, পৃ. ২৫৫
. আন-নাসায়ী, আস-সুনান আল-কুবরা, খ. ৪, পৃ. ২০২, হাদীস নং- ৬৯০১
. সুনান আবী দাউদ, খ. ৩, পৃ. ২৬৭, হাদীস নং- ৩৮৫৩
. সাহীহুল বুখারী, খ. ৭, পৃ. ১০০, হাদীস নং- ১৮৪৬

 

--০--

 

 


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।