প্রাথমিক কথা
শরীঅতে হাদীছের গুরুত্ব অপরিসীম, হাদীছ একাধারে কোরআন পাকের ব্যাখ্যা, রাছুলে করীমের জীবন আলেখ্য এবং শরীঅতে মোহাম্মদীর দ্বিতীয় উৎস। হাদীছ ব্যতীত কোরআন বুঝাই অসম্ভব। কোরআনে আল্লাহ তা’আলা মানুষকে বহু আহ্কাম পালনের নির্দেশ দান করিয়াছেন। কিন্তু অনেক আহকামেরই বাস্তবায়নের বিস্তারিত বিবরণ দান করেন নাই, ইহার ভার ন্যস্ত করিয়াছেন তিনি তাঁহার রাছূলের উপর। রাছূল আপন কথা ও কার্য প্রভৃতির দ্বারা উহার বিস্তারিত বিবরণ দান করিয়াছেন আর হাদীছে উহা সংরক্ষিত হইয়াছে। সুতরাং মানুষের মধ্যে হাদীছের আলোচনা যতই অধিক হইবে ততই তাহারা শরীঅত সম্পর্কে অধিক অবগত হইবে। দুঃখের বিষয় বাংলাভাষীদের মধ্যে বাংলা ভাষায় হাদীছের আলোচনা এ যাবৎ হয় নাই বলিলেই চলে। নাই, অথচ ব্যাখ্যা ব্যতিরেকে অনেক হাদীছে ভুল বুঝাবুঝির আশংকাই অধিক; বরং কোন কোন হাদীছ বুঝা সম্পূর্ণ অসম্ভবও বটে।

এ অভাবের কিঞ্চিৎ পূরণ উদ্দেশ্যে আমি ১৩৭৬ হিজরীর ১লা মোহাররম মোঃ ৭ই আগষ্ট ১৯৫৬ইং মেশকাত শরীফের বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা আরম্ভ করি। কিন্তু দেশের ঘটনাবলী হাদীছের হুজ্জিয়াত (শরীঅতের উৎস হওয়া) সম্পর্কে প্রমাণাদি নূতন করিয়া পেশ করার এবং যুগে যুগে –বিশেষ করিয়া প্রথম ও দ্বিতীয় যুগে হাদীছের সংরক্ষণ কিরূপে হইয়াছে তাহার ইতিহাস আলোচনা করার প্রতি জোর তাকীদ করিতে থাকে। অতএব, আমি মেশকাত শরীফের অনুবাদ ও ব্যাখ্যার কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখিয়া এ কাজে আত্মনিয়োগ করি। কিন্তু আবশ্যক কিতাবাদির অভাব, ঢাকায় আমার স্থায়ীভাবে অবস্থানের অসুবিধা, সর্বোপরি আমার স্বাস্থ্যহীনতা এ ক্ষেত্রে আমার বিরাট অন্তরায় হইয়া দাঁড়ায়। এমতাবস্থায় আমার পক্ষে যাহা সম্ভবপর হইয়াছে তাহা আমি মেশকাত অনুবাদের ভূমিকারূপে ‘হাদীছের তত্ত্ব ও ইতিহাস’ নামে সুধীবৃন্দের খেদমতে পেশ করিলাম। ইহার ভাল মন্দের বিচার তাঁহারাই করিবেন।

এখানে আমি আমার মোহতারাম দোস্ত মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ, মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী, ঢাকা জামেয়া কোরআনিয়ার শায়খুল হাদীছ মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ হাজীগাঞ্জী, ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার মোহাদ্দেছ মাওলানা উবাইদুল হক জালালাবাদী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ মোহাম্মদ ইছহাক ও ঢাকা বাংলা কলেজের অধ্যাপক মাওলানা আব্দুর রজ্জাক ছাহেবানের অশেষ শোকরিয়া আদায় করিতেছি যাঁহারা এ কাজে (হাদীছের তত্ত্ব ও ইতিহাস রচনার কাজে) নানাভাবে আমার সাহায্য করিয়াছেন। এছাড়া আমি সিলেট আলিয়া মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ হুছাইন সিলেটী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদীছের উস্তাদ মাওলানা শায়খ আব্দুর রহীম ছাহেবেরও অশেষ শোকরিয়া আদায় করিতেছি যাঁহারা কিতাবের বিশুদ্ধ করণে আমাকে বিশেষ সহায়তা করিয়াছেন।

অবশেষে রহমান ও রহীম আল্লাহ তা’আলার নিকট আমার নিবেদন, তিনি যেন দয়া পরবশ হইয়া আমার এ অকিঞ্চিৎকর খেদমতটিকে কবুল করেন এবং আখেরাতে ইহাকে আমার নাজাতের ওছীলা করেন। আ-মীন!!

১৮ জুমাদাল আখেরা ১৩৮৫ হিঃ

২৭ আশ্বিন ১৩৭২ বাং

১৪ অক্টোবর ১৯৬৫ ইং

আহকার –নূর মোহাম্মদ

গ্রামঃ নেয়াজপুর

পোঃ সিলোনিয়া

ফেনী, নোয়াখালী

বরাত

প্রথম ভাগ

রচনায় যে সকল কিতাব হইতে সরাসরিভাবে সাহায্য গ্রহণ করা হইয়াছেঃ

১। মা’রেফাতুল উলুমিল হাদীছ (আরবী*************)

-হাকেম আবু আব্দুল্লাহ নিশাপুরী (মৃঃ ৪০৫ হিঃ)

২। মোকাদ্দমায়ে ইবনুছ ছালাহ্ (আরবী*************) –ইবনুছ ছালাহ্ (মৃঃ ৬৪২ হিঃ)

৩। শারহে নুখবাতুল ফিকার (আরবী*********) –ইবনে হাজার আছকালানী (মৃঃ ৮৫২ হিঃ)

৪। তাদরীবুররাবী (আরবী**********) –জালালুদ্দীন ছুয়ুতী (মৃঃ ৯১১ হিঃ)

৫। মোকাদ্দমাতুশ শায়খ (আরবী***********) –শায়খ আব্দুল হক মোহাদ্দেছ দেহলবী

৬। আররিছালাহ (আরবী*******) ইমাম শাফেয়ী (মৃঃ ২০৪ হিঃ)

৭। কিতাবুল আমওয়াল (আরবী*******) –আবু উবাইদ কাছেম ইবনে ছাল্লাম (মৃঃ ২২৪ হিঃ)

৮। মোছনাদে দারেমী (আরবী*******) –ইমাম দারেমী (মৃঃ ২৫৫ হিঃ)

৯। তা’বীলু মোখতালেফিল্ হাদীছ (আরবী*******) –ইবনে কুতাইবা দীনুরী (মৃঃ ২৭৬ হিঃ)

১০। মুখতাছারু জামেয়ে বয়ানিল এলম (আরবী*******) –ইবনে আব্দুল বার (মৃঃ ৪৬৩ হিঃ)

১১। ই’লামুল মোয়াক্কেয়ীন (আরবী*******) –ইবনুল কায়্যেম (মৃঃ ৭৫১ হিঃ)

১২। আল মোআফেকাত (আরবী*******) –ইমাম শাতেবী (মৃঃ ৭৯০ হিঃ)

১৩। তাদবীনে হাদীছ (আরবী*******) –মানাজির আহছান গীলানী

১৪। তারজুমানুছ ছুন্নাহ (আরবী*******) –বাদরে আলম মিরাঠী

১৫। ফাহমে কোরআন (আরবী*******) –ছায়ীদ আকবরবাদী

১৬। শরহুল বোখারী (আরবী*******) –কিরমানী (মৃঃ ৭৮৬ হিঃ)

১৭। ফতহুলবারী (আরবী*******) –ইবনে হাজার আছকালানী

১৮। মাজমাউজ জাওয়ায়িদ (আরবী*******) –নুরুদ্দীন হাইছমী (মৃঃ ৮০৭ হিঃ)

১৯। কানজুল উম্মাল (আরবী*******) –আলী কোত্তাকী (মৃঃ ৯৫৫ হিঃ)

২০। জামউল ফাওয়ায়েদ (আরবী*******) –সোলাইমান ইবনুল ফাছী (মৃঃ ১০৯৪ হিঃ)

২১। আততাবাকাতুল কুবরা (আরবী*******) –ইবনে ছা’দ (মৃঃ ৩৩০ হিঃ)

২২। আল ইস্তী’আব (আরবী*******) –ইবনে আব্দুল বার (মৃঃ ৪৪৮ হিঃ)

২৩। তাজকেরাতুল হোফফাজ (আরবী*******) –ইমাম জাহবী (মৃঃ ৭৪৮ হিঃ)

২৪। তাজরীদু আছমায়িছ ছাহাবাহ (আরবী*******) –ইমাম জাহবী (মৃঃ ৭৪৮ হিঃ)

২৫। আল ইছাবাহ (আরবী*******) –ইবনে হাজার আছকালানী

২৬। তাহজীবুত তাহজীব (আরবী*******) –ইবনে হাজার আছকালানী

২৭। মিফতাহুছ ছুন্নাহ (আরবী*******) –আব্দুল আজীজ খাওলী মিছরী

২৮। ছহীফায়ে হাম্মাম বিন মুনাব্বেহ –ডঃ হামীদুল্লাহ

২৯। মাওজু’আতে কবীর (আরবী*******) –মোল্লাআলী ক্কারী

দ্বিতীয় ভাগ

পাক-ভারত

৩০। আখবারুল আখয়ার (আরবী*******) –শায়খ আব্দুল হক মোহদ্দেছ দেহলবী (মৃঃ ১০৫০ হিঃ)

৩১। তাজকেরায়ে ওলামায়ে হিন্দ (আরবী*******) –রহমান আলী

৩২। নোজহাতুল খাওয়াতির (আরবী*******) –ছৈয়দ আবদুল হাই বেরেলবী

৩৩। তারীখে ‌ওলামায়ে হাদীছে হিন্দ (আরবী*******) –ইমাম খাঁ নোশহরবী

৩৪। তারীখে ওলামায়ে আহলে হাদীছ (আরবী*******) –মীর ইব্রাহীম শিয়ালকোটী

৩৫। India’s Contribution to the Study of Hadith Literature –Dr. Md. Ishaq

৩৬। তারিখুল হাদীছ (আরবী*******) –মুফতী আমুমুল ইহছান বরকতী (মৃঃ ২৫৫ হিঃ)

৩৭। তাজকেরায়ে আওলিয়ায়ে বাঙ্গাল (আরবী*******) –মাওলানা ওবাইদুল হক সাতকানবী

৩৮। খান্দানে আজীজিয়া (আরবী*******) –মুখতার আহমদ

৩৯। সাওয়ানেহে কাছেমী (আরবী*******) –মাওলানা মানাজির আহছান গীলানী

৪০। তাজকীরাতুর রশীদ (আরবী*******) –মাওলানা আশেকে ইলাহী

৪১। হায়াতে আনওয়ার (আরবী*******) –সৈয়দ আজহার শাহ্

৪২। আশরাফুস সাওয়ানেহ (আরবী*******) –মুনসী আব্দুর রহমান

৪৩। তাজাল্লিয়াতে ওছমানী (আরবী*******) –আনওয়ারুল হাসান শেরকুটী

৪৪। তারীখে মাদ্রাসায়ে আলিয়া (আরবী*******) –মাওলানা আব্দুচ্ছাত্তার

৪৫। তাজকেরায়ে জমীর (আরবী*******) –হাফেজ ফয়েজ আহমদ ইছলামাবাদী

৪৬। আল ইয়ানেউল জনী (আরবী*******) –মাওলানা মোহাম্মদ মোহসেন ইবনে ইয়াহইয়া তরহাটী

৪৭। আল ইজদিয়াদুছ ছনী (আরবী*******) –মুফতী মোহাম্মদ শফী দেওবন্দী

৪৮। তাজকেরায়ে ওলামা ফিরিঙ্গী মহল (আরবী*******) –এনায়েতুল্লাহ আনছারী

৪৯। তারীখে দেওবন্দ (আরবী*******) –সৈয়দ মাহবুব রেজবী (রাজাবী)

৫০। মোকাদ্দমায়ে আনওয়ারুল বারী (আরবী*******) –সৈয়দ আহমদ রাজা বিজনৌরী

৫১। আল হায়াত বা’দাল মামাত (আরবী*******) –ফজলে হোছাইন বিহারী

৫২। ছিলছিলায়ে ফিরদাউছিয়া (আরবী*******) –প্রফেসর

৫৩। মোকাদ্দমায়ে আওজাজিল মাছালিক (আরবী*******) –মাওলানা জাকারিয়া কান্দলবী

৫৪। হায়াতে এ’জাজ (আরবী*******) –আবদুল আহাদ কাছেমী

 

অভিমত
জামেয়া কোরআনিয়া, লালবাগ, ঢাকা-এর ভূতপূর্ব প্রিন্সিপাল মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী (রঃ) ছাহেব বলেনঃ

আল্লাহ তা’আলা তাঁহার নবীকে ওহীর মাধ্যমে য জ্ঞান দান করিয়াছেন তাহা দুই প্রকারঃ এক প্রকার জ্ঞান যাহা মৌর। ইহার নাম ‘কিতাবুল্লাহ’ বা ‘আল কোরআন’। ইহার ভাব ও ভাষা উভয় স্বয়ং আল্লাহর। নবী করীম (ছাঃ) ইহাকে আল্লাহর ভাষায়ই প্রকাশ করিয়াছেন। দ্বিতীয় প্রকার জ্ঞান যাহা প্রথম প্রকার জ্ঞানের ভাষ্য। ইহার নাম ‘ছুন্নাহ’ বা ‘আল হাদীছ’। ইহার ভাব আল্লাহর। নবী করীম ইহাকে আপন কথা, কার্য ও সম্মতি অর্থাৎ আপন জীবন দ্বারা প্রকাশ করিয়াছেন। ইহাও প্রথমটির ন্যায় শরীঅতে মোহাম্মদীর একটি উৎস। অতএব, উম্মতে মোহাম্মদী প্রথম প্রকার ওহীর সংরক্ষণের জন্য যে সকল ব্যবস্থা অবলম্বন করিয়াছেন এই দ্বিতীয় প্রকার জ্ঞান যাহা প্রথম প্রকার জ্ঞানের ভাষ্য। ইহার নাম ‘ছুন্নাহ’ বা ‘আল হাদীছ’। ইহার ভাব আল্লাহর। নবী করীম ইহাকে আপন কথা, কার্য ও সম্মতি অর্থাৎ আপন জীবন দ্দারা প্রকাশ করিয়াছেন। ইহাও প্রথমটির ন্যায় শরীঅতে মোহাম্মদীর একটি উৎস। অতএব, উম্মতে মোহাম্মদী প্রথম প্রকার ওহীর সংরক্ষণের জন্য যে সকল ব্যবস্থা অবলস্বন করিয়াছেন এই দ্বিতীয় প্রকার ওহীর সংরক্ষণের জন্যও ঠিক সে সকল ব্যবস্থাই করিয়াছেন অর্থাৎ শিক্ষাকরণ ও হেফজ (মুখস্থ) করণ, অন্যদের উহা শিক্ষাদান, কিতাবে উহা লিপিবদ্ধ করণ এবং বাস্তবে উহাকে কার্যকরী করণ। আর এই সকল ব্যবস্থা ছাবাহীগণের যুগ হইতে এ পর্যন্ত বরাবর অব্যাহত রহিয়াছে। কোন যুগেই এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্রও শিথিলতা প্রদর্শিত হয় নাই। (অবশ্য ছাহাবা ও তাবেয়ীনদের যুগে লিখন অপেক্ষা মুখস্থ করণই প্রধান ছিল।

এতদব্যতীত আইনবেত্তাগণ (ফকীহগণ) আল কোরআনের ন্যায় ইহার আইনের দিক আলোচনা করিয়াছেন, দার্শনিকগণ (মোতাকাল্লেমীনগণ) ইহার দার্শনিক তথ্য প্রকাশ করিয়াছেন। ছুফীগণ ইহার আধ্যাত্মিক দ্বার উদঘাটন করিয়াছেন এবং মোহাদ্দেছীন বিশেষ করিয়অ জারহ-তা’দীলকারী ইমামগণ ইহার বিশুদ্ধতা রক্ষার চেষ্টা করিয়াছেন, আর এ ব্যাপারে ইহারা এত অধিক দক্ষতা প্রদর্শন করিয়াছেন যাহার নজীর পেশ করিতে দুনিয়া সক্ষম নহে।

মাওলানা নূর মোহাম্মদ আ’জমী ছাহেব তাঁহার মেশকাত-অনুবাদের ভূমিকায় ‘হাদীছের তত্ত্ব ও ইতিহাস’ নামে হাদীছ সম্পর্কে উম্মতে মোহাম্মদীর এ সকল তৎপরতারই বিশদ আলোচনা করিয়াছেন। অতঃপর তিনি মূল কিতাবের বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা করিয়াছেন। ব্যাখ্যায় তিনি দৃঢ়তার সহিত মোতাকাদ্দেমীনদের (পূর্ববর্তীদের) মতেরই অনুসরণ করিয়াছেন। আমার মতে বাংলা ভাষায় মেশকাত শরীফের সুষ্ঠু ও নির্ভরযোগ্য অনুবাদ ইহাই প্রথম। আর ইহার ভূমিকা অর্থাৎ ‘হাদীছের তত্ত্ব ও ইতিহাস’-এর ন্যায় একটি মূল্যবান কিতাব বাংলা ভাষায় কেন উর্দু প্রভৃতি ভাষায় লেখা হইয়াছে বলিয়াও আমার জানা নাই। সত্যই ইতা বাংলা সাহিত্যের একটি অবদান। প্রকাশক ছাহেবের নিকট আমার অনুরোধ, তিনি যেন ইহার উর্দু অনুবাদ প্রকাশের ব্যবস্থা করেন।

নাচিজ –শামছুল হক

২/৯/১৯৬৫ ইং

কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসার মোহাদ্দেছ, সিলেট আলিয়া মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাহরুল উলুম মাওলামা মোহাম্মদ হোছাইন ছাহেব বলেনঃ

শরীঅতে ইসলামীর দ্বিতীয় প্রধান উৎস হাদীছ বা ছুন্নাহর গুরুত্ব যে কত বেশী তাহা মুসলিম সমাজের কাছে মোটেই অবিদিত থাকার কথা নহে। কোরআনের ব্যাখ্যা, হযরত রাছুলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাদর্শ ও ইসলামী জীবন ব্যবস্থার আলেখ্য হিসাবে ইহার গুরুত্ব অপরিসীম। বস্তুতঃ এলমে হাদীছ বা ছুন্নাহ ব্যতিরেকে ইসলামের রূপরেখা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা কোনমতেই কল্পনা করা যায় না।

এলমে হাদীছের এই গুরুত্ব অনুভব করিয়াই মুসলমানগণ প্রথমিক যুগ হইতেই ইহার সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য যে সাধনা করিয়া আসিতেছেন বিশ্বের অমুসলিম মনীষীবৃন্দও অকুণ্ঠভাবে এই সত্যকে স্বীকার করিতে বাধ্য হইয়াছেন। হাজার হাজার মুসলিম সন্তান ইহাকে নিজেদের জীবনের ব্রত হিসাবে গ্রহণ করিয়াছেন। এই মহান ব্রত পালন করিতে গিয়া তাঁহারা নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করিয়া গিয়াছেন, এমন কি শুধু রাবীর মুখ হইতে প্রত্যক্ষভাবে হাদীছ শ্রবণের জন্য মদীনা শরীফ হইতে দামেষ্ক পর্যন্ত সুদীর্ঘ পথ পদব্রজে অতিক্রমের কষ্ট বরণ করিয়াছেন। এলমে হাদীছের প্রতি এবংবিধ অনুরাগ ও আসক্তির ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত ইসলামের ইতিহাসে পাওয়া যায়।

মোহাদ্দেছীনে কেরামের এই কঠোর সাধনার ফলস্বরূপ এলমে হাদীছের বিপুল জ্ঞান-ভাণ্ডার আজও অবিকৃতরূপে আমাদের সম্মুখে মওজুদ রহিয়াছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রাথমিক যুগে কিছু সংখ্যক মনগড়া হাদীছও যে রচিত হয় নাই এমন নহে, তবে আমাদের মোহাদ্দেছীনে কেরাম যে অবিচল নিষ্ঠার সহিত ইহার যাচাই বাছাই করিয়াছেন তাহারও কোন তুলনা মিলে না। নেহাৎ মামুলী চারিত্রিক দোষ বা দোষ বলিয়াও যে সমস্ত অভ্যাসকে সচরাচর মনে করা হয় না, এমন হাদীছ বর্ণনাকারীর হাদীছ হইতেও সতর্কথা অবলম্বন করা হইয়াছে।

এতসব সত্ত্বেও হাদীছের প্রামাণিকতা নিয়া পাশ্চাত্যবাদী কতিপয় ইসলামবিদ্বেষী ও তাহাদের দ্বারা প্রভাবান্বিত কতিপয় মুসলিম সন্তানও সম্প্রতি প্রশ্ন তুলিয়াছেন। তাহাদের সৃষ্ট ধুম্রজাল ছিন্ন করত এলমে হাদীছের সঠিক তত্ত্ব ও ইতিহাস দেশবাসীর কাছে তুলিয়া ধরার অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল।

অত্যন্ত সুখের বিষয় যে, মাওলানা নূর মোহাম্মদ আ’জমী ছাহেব তাঁহার অর্ধ শতাব্দীর অক্লান্ত সাধনাকে ইসলামের এই খেদমতের জন্য নিয়োজিত করিয়াছেন এবং কয়েক বৎসরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর মেশকাত শরীফের অনুবাদের ভূমিকাস্বরূপ তিনশত পৃষ্ঠায় এলমে হাদীছের তত্ত্ব ও ইতিহাস জাতিকে উপহার দিয়াছেন। এই দায়িত্বপূর্ণ, গভীর ও গবেষণা সাপেক্ষ গ্রন্থ রচনার জন্য তাঁহার এই বিরাট গ্রন্থে এলমে হাদীছের পরিভাষা, শরীঅতের উৎস হিসাবে এলমে হাদীছ, হাদীছের প্রমাণিকতা, হাদীছ সংরক্ষণের ইতিহাস, পাকভারতে এলমে হাদীছ এমন কি বঙ্গে এলমে হাদীছ পর্যন্ত সবিস্তার বর্ণনা করিয়াছেন। মোহাদ্দেছীনে কেরামের সংক্ষিপ্ত জীবনী সহ পাকভারতের বিশেষ করিয়া বাংলার প্রায় হাদীছ শিক্ষা কেন্দ্রের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসও তিনি ইহাতে যোজনা করিয়াছেন। এলমে হাদীছের এত ব্যাপক আলোচনা বাংলা ভাষায় তো নয়ই এমন কি উর্দু ফার্সীতেও ইতিপূর্বে হয় নাই। এলমে হাদীছ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ও জ্ঞান লাভের জন্য প্রত্যেক মুসলমানের এই গ্রন্থ পাঠ করা বর্তব্য বলিয়া আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। হাদীছ শিক্ষার্থীদের জন্য এই গ্রন্থখানি অত্যন্ত উপাদেয় হইবে।

মাওলানা আ’জমী ছাহেব তাঁহার ভগ্ন স্বাস্থ্য লইয়া এলমে নববীর জ্ঞান পিপাসুদের জন্য বাংলা ভাষায় যে অমূল্য অবদান রাখিয়া যাইতেছেন তজ্জন্য তাঁহাকে আমার আন্তরিক মোবারকবাদ। দোআ করি, খোদা তাঁহার স্বাস্থ্যা ফিরাইয়া দিন, হায়াত দারাজ করুন এবং আরও দীর্ঘকাল পর্যন্ত মুসলিম সমাজকে তাঁহার দ্বারা উপকৃত করুন। আমিন!

জিন্দাবাজার, সিলেট

১০/৯/১৯৬৫ ইং

মোহাম্মদ হোছাইন

স্বনামখ্যাত শিক্ষাবিশারদ ও বহু ভাষাবিদ ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্

এম-এ, (ক্যাল); ডিপ্লো-ফোন…. ডি-লিট্ (প্যারিস), বিদ্যাবচস্পতি ছাহেব বলেনঃ

মাওলানা নূর মোহাম্মদ আজমী সাহেব একজন সুপ্রসিদ্ধ মুহাক্কি আলিম। তাঁহার রচিত ‘হাদীছের তত্ত্ব ও ইতিহাস’ বহু অধ্যয়ন ও গবেষণার সুফল। ইহতে হাদীছের তত্ত্ব এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ্ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় হইতে এ পর্য়্ন্ত বিভিন্ন স্তরে হাদীসের ইতিহাস বিবৃত হইয়াছে। ইহাতে বিভিন্ন সময়ের মুহদ্দিসগণ এমন কি পাক-ভারতের এবং বাঙ্গালা দেশের আধুনিক কাল পযর্ন্ত সমস্ত প্রসিদ্ধ মুহদ্দিসের সংক্ষিপ্ত জীবনী আলোচিত হইয়াছে। আমার জ্ঞানানুসারে এরূপ হাদীস সম্বন্ধীয় পুস্তক ইহর পূর্বে রচিত হয় নাই। ইহা তাঁহার মিশকাত শরীফের বৃহৎ ভুমিকা এবং স্বতন্ত্র পুস্তকও বটে। মৌলানা সাহেব এই তথপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করিয়া বাঙ্গালা ভাষায় ইসলামী সাহিত্যের একটি বড় প্রশংসনীয় থিদমত করিয়াছেন। আমরা ইহার বহুল প্রচার এবং গ্রন্থকারের নীরোগ দীর্ঘ জীবন কামনা করি । ইতি-

মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

২৬/১২/৬৫ ইং

শান্তিনিকেতন বিশ্বভারতীয় আরবী-ইসলামী বিষয়ের সাবেক নিজাম-অধ্যাপক,নওগাঁ ইসলামী ইন্টামিডিয়েট কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও ঢাকস্থ বাংলা একাডেমী সংকলিত বাংলা ইসলামী বিশ্বকোষের সহ-সম্পাদক জনাব আবুল কাসিম মুহাম্মদ আদমুদ্দীন এম, এ, ছাহেব বলেনঃ

মাওলানা নূর মোহাম্মদ আ’জমী সেই শ্রেণীর খ্যাতিসম্পন্ন আলেম যাঁহারা বিদ্যালয় ত্যাগের পর কিতাব পত্রকে ‘সালামু আলায়কুম’ না বলিয়া ‘দোলনা হইতে কবর পযর্ন্ত জ্ঞানাম্বেষণ কর’ বাণীর অনুসরণে আজীবন জ্ঞান সাধনায় রত। তাঁহার ন্যায় একজন প্রকৃত আলেম ব্যক্তি মেশকাত শরীফের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ হাদীসের কিতাবের অসুবাদে প্রবৃত্ত হওয়া সত্যই আনন্দের বিষয়। পুস্তকের ভুমিকা অর্থাৎ ‘হাদীছের তত্ত্ব ও ইতিহাস’ অংশটি বাংলা সাহিত্যে অভিনব বস্ত। কারণ হাদীস- তত্ত্ব বা উছুলে হাদীস ও হাদীস ও হাদীসের ইতিহাস সম্বন্ধে স্বয়ংসম্পূর্ন কোন গ্রন্থ বাংলা ভাষার ও বাংলাভাষী জ্ঞান পিপাসুদের একটি বিরাট অভাব মোচন করিলেন ও বাংলাভাষী পাঠকদের সম্মুখে এক নতুন জগতের দ্ধার উন্মোচিত করিলেন। ভূমিকার চতুর্থ অধ্যায়ে গ্রন্থকার জাল হাদীস চিনিবার উপায় ও জাল হাদীস হইতে বাঁচিবার যে যুক্তিপূর্ন পথ নিদের্শ করিয়াছেন তাহা এবং ‘হাদীস রেওয়ায়তে বিশ্বস্ততার প্রমাণ’ শীর্ষক অনুচ্ছেদটি বর্তমান যুগে হাদীসের প্রতি আস্থাহীন ও সন্দেহ পোষণকারী তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের জ্ঞানচক্ষু উম্মীলিত করিবে বলিয়া আশা করি।

গ্রন্থের ভূমিকায় দ্বিতীয় খণ্ডের দ্বিতীয় অধ্যায়ে ‘বঙ্গে এলমে হাদীছ’ আলোচিত হইয়াছে। এই অধ্যায়টি আত্মবিস্মৃত বাঙ্গালী মুসলিম আলেমদের আত্মচেতনা জাগরূক করিতে সাহায্য করিবে বলিয়া মনে করি। অবশ্য মুসলিম বঙ্গের সর্বত্র আরও বহু সংখ্যক মোহাদ্দেস যে রহিয়াছেন ও অতীতে ছিলেন তাহা বলাই বাহুল্য। তাঁহাদেরও জীবনী ও হাদিসের খেদমতের কথা লোক সমক্ষে তুলিয়া ধরিতে সচেষ্ট হইবার অনুপ্রেরণা এই গ্রন্থ দিবে বলিয়া আশা করি।

মূল পুস্তকে মেশকাত শরীফ সম্পর্কে যাবতীয় জ্ঞাতব্য তথ্য দেওয়ায় পুস্তখানির মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি পাইয়াছে। তাছাড়া অনুবাদে তিনি যে নীতি অবলম্বন করিয়াছেন, তাহাতে তাঁহার অনুবাদ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হইয়াছে বলিয়াই আমার ধারণা। আমি গ্রন্থখানির বহুল প্রচার কামনা করি। ইতি-

আবুল কাসিম মুহাম্মদ আদমুদ্দীন

বাংলা একাডেমী-ঢাকা

মাদ্রাসা-ই-আলেয়া ঢাকার সাবেক অধ্যক্ষ, পূর্বপাক মাদ্রাসা এডুকেশন বোর্ডের (অবসরপ্রাপ্ত) রেজিষ্টার ও ঢাকা জগন্নাথ কলেজের অবসরপ্রাপ্ত প্রিন্সিপ্যাল, জনাব শায়খ শরফুদ্দীন এম-এ, বি-এল, ই-পি-এস-ই-এস ছাহেব বলেনঃ

খ্যাতনামা মহাক্কিক আলিম জনাব মাওলানা নূর মোহাম্মদ আ’জমী সাহেবের লিখত ‘হাদীছে তত্ত্ব ও ইতিহা গন্থখানি সযত্নে পড়িয়া অত্যন্ত আনন্দিত হইলাম। প্রায় তিনশত পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটি তাঁহার দীর্ঘকালের গবেষণার ফল। ইলমে হাদীছ’সম্পর্কিত বহু জ্ঞাতব্য বিষয় ইহাতে স্থান পাইয়াছে। হযরত রাসুল (স) হইতে আরম্ব করিয়া বর্তমানকাল পযর্ন্ত সহী হাদীসের সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও সংকলনের ইতিবৃত্ত যেমন সুসামঞ্জস ও মনোজ্ঞ হইয়াছে, হাদীসের প্রামাণিকতা ও যখন হাদীসের প্রামাণিকতা ও প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে প্রশ্ন তুলিয়াছে সেই সময় ইহার প্রকাশ অত্যন্ত সময়োচিত হইয়াছে। আশাকরি, এই গ্রন্থ পাঠে ইলমে হাদীস বিষয় বহু ভুল বুঝাবুঝির অবসান হইবে। গ্রন্থটি বাংলা ভাষার একটি বিরাট কীর্তি। এই বিষয়ে এমন তথ্যপূর্ণ গ্রন্থ এ পযর্ন্ত দেখা যায় নাই। ইহার উর্দু অনুবাদ হওয়া বিশেষ প্রয়োজন। তবে গ্রন্থকার গ্রন্থের দুই স্থানে লিখিয়াছে যে, হযরত আলী (রা) আব্দুল ইবনে সাবাকে তাহার দলবল সহ আগুনে পোড়াইয়া মারিয়াছেন। ইমাম জাহাবীর নিছক অনুমানমূলক কথাটির প্রতি এত গুরুত্ব আরোপ না করাই আমার মতে ভাল ছিল।

গ্রন্থখানি আসলে তাঁহার মেশকাত শরীফের বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যার ভূমিকা স্বরূপই লেখা হইয়াছে। ইহা তাঁহার মেশকাত অনুবাদের প্রথম খণ্ডের সাথেও প্রকাশিত হইয়াছে।

খাকসার

শায়খ শরফুদ্দী

সিলেট, গাছবাড়ী আলিয়া মাদ্রাসার সুযোগ্য হেড প্রধান মোহাদ্দেছ

খ্যাতনামা মাওলানা শফীকুল হক ছাহেব বলেনঃ

মসুলমানদের কাছে কোরআনের পরই যে হাদীছে নববীর স্থান উর্ধ্বে একথা কাহারও অজানা নাই তাই উর্দুভাষী হাদীছ অনুবাদকদের মত বাংলা ভাষাও হাদীছের অনুবাদ সুযোগ বাংলা ভাষাভাষীদেরকেও দান করার জন্য হাদীছের বিভিন্ন কিতাবের বাংলা অনুবাদের অত্যধিক প্রয়োজন ছিল।

কিন্তু দীর্ঘদিন বাংলার আলেম সমাজ এ মহান কর্তব্য সম্পাদে অগ্রসর হন নাই। অত্যন্ত সুখের বিষয় বর্তমানে মাওলানা নূর মোহাম্মদ আজমী ছাহেব এ গুরুদায়িত্ব সম্পাদনে ব্রতী হইয়াছেন। তাঁহার অনূদিত মেশকাত শরীফের প্রথম জিলদ আমার হাতে পৌছিয়াছে। ইহাতে তিনি প্রথমতঃ এলমে হাদীছের পরিভাষা, হাদীছ গ্রন্থাদির প্রকরণ, ছাহাবীদের হাদীছ বর্ণনা, উম্মেতে মোহাম্মদীর দায়িত্ব, বিভিন্ন যুগের হাদীছ গ্রন্হদি, ফেকা শান্ত্রের ইমামগণসহ ছিহাহ ছিত্তার চেষ্টা, এলমে হাদীছ ও তাঁহাদের রচনাবলী জাল হাদীছ সৃষ্টর কারণ ও উহা প্রতিরোধের পাকভারতে এলমে হাদীছের আগমন, এখানকার বিভিন্ন যুগের মুহাদ্দিছগণের জীবণী ও তাঁহাদের রচনাবলী এবং বিভিন্ন যুগের হাদীছ শিক্ষা কেন্দ্রসমূহের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বর্ণনা করিয়া পাক- ভারতের জ্ঞন পিপাসুদের বিশেষ করিয়া বাংলাভাষীদের জন্য যে অপূর্ব সুযোগ দান করিলেন তাহা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।

দ্বিতীয়তঃ পাক-ভারতের বিশেষতঃ পুর্ব পাকিস্তানের বর্তমান কালের বিখ্যাত মুহাদ্দিছদের সংক্ষিপ্ত জীবনী রচনা করিয়া লেখক এমন একটি দুঃসাধ্য ও কঠোর গবেষণা সাপেক্ষে কাজ করিয়াছেন যাহা শুধু লেখক এবং সুধী-মণ্ডলীই বুঝিতে পারেন। ইহা শুধু পাক-ভারতের জন্যই অনুদান করত উর্দুভাষী ভাইদেরও ইহা হইতে উপকৃত হইতে দেওয়া উচিত; বরং আরবী ভাষায় ইহর অনুবাদ করিয়া মসুলিম বিশ্বকে এদেশের এলমী অবদান সম্পর্কে জানিয়ে দিলেই এই কিতাবের পূর্ণ হক আদায় হইতে পারে। হাদীছের ব্যাখ্যা করিতে যাইয়া লিখক ঈমান প্রসঙ্গে যে বিস্তারিত ও সুষ্ঠু বর্ণনা দান করিয়াছেন, কবরের আজাবের সত্যতা প্রমাণের জন্য যে উপমা-উদাহরণের অবতারণা করিয়াছেন, তকদীর প্রসঙ্গে অপূর্ব ব্যাখ্যা দান করিয়াছেন, আহলুছ ছুন্নত ওল-জমাতের ভাষ্য যে ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন বাংলা ভাষায় তাহা পাঠ করিয়া অন্তরের অন্তঃস্থল হইতে লিখকের শোকরিয়া আদায় করিতেছি। উর্দু আরবী সম্পর্কে অনবিজ্ঞ ভাইদের জন্য ইহা লেখকের একটি অমুল্য অবদান।হাদীছ শাস্ত্র সম্পর্কে সুষ্ঠু জ্ঞান অর্জনের জন্য জ্ঞান-পিপাসুদের ইহা পাঠ করা বরং সর্বদা ইহার এক কপি হাতের কাছে রাখা উচিত বলিয়া আমি মনে করি। মুদ্দাকথা, এই কিতাবখানা গ্রন্হকারের এমন একটি গৌরবময় অবদান যাহার জন্য পাক-ভারতবাসীরা বিশেষতঃ এতদঞ্চলের অধিবাসীগণ সঙ্গতভাবেই গৌরব বোধ করিতে পারে।

দোয়া করি, আল্লাহ ত’আলা এই কৃতী সন্তানকে সমন্ত রোগ ভোগ হইতে মুক্তি দিন এবং তাঁহাকে দীর্ঘয়ু করত সুদীর্ঘকাল পযর্ন্ত দেশ ও জাতির খেদমত করার সুযোগ দান করুন। তাঁহার এই মহান কীর্তির জন্য আল্লাহ ইহকাল ও পরকালে তাঁহার মুখ উজ্জল করুন। আমীন! ছুম্মা আমীন!

আহকার-শফীকুল হক

২৮ রমজান, ১৩৮৬ হিঃ

মাদ্রাসায়ে আলীয়া জামেউল উলুম

পোঃ গাছবাড়ী, সিলেট

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

হাদীছের তত্ত্ব ও ইতিহাস


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি