দি পাইওনিয়ার-এর উপদেষ্টার কথা
ইসলামের সামাজিক শিক্ষার পরিধি অনেক ব্যাপক। এ ব্যাপকতার তুলনায় যথেষ্ট আধুনিক ইসলামী সাহিত্য রচনা হয়নি। তবে অল্প হলেও ইসলামের সামাজিক বিধানের উপর এমন কিছু বই রচিত হয়েছে যেগুলো এ ব্যাপারে ইসলামের শিক্ষা প্রসারে অনেক অবদান রেখেছে এবং এ সংক্রান্ত নানান প্রশ্নের উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। অনূদিত Islamic Teaching Course Vol (III) এরকমের বই।

বইটি মূলতঃ ড. জামাল আল বাদাবী প্রদত্ত ধারাবাহিক বক্তৃতার লিখিত রূপ। এতে তিনি ইসলামের সমাজ ও পরিবার ব্যাস্থার উপর সবিস্তার আলোচনা করেছেন। বিশেষ করে ইসলামে নারীর অবস্থান, এ সংক্রান্ত নানান প্রশ্নের সঠিক জবাব, নারীর দায়িত্ব-কত©ব্য, নারী-পুরুষের সম্পক© ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর যুক্তি নিভ©র ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।

বত©মান সমাজে ইসলামে অগ্রগতির জন্য ইসলামে নারীর সঠিক অবস্থান সুস্পষ্ট করা অত্যন্ত প্রয়োজন। ইসলাম প্রদত্ত নারীর অধিকার, সম্মান ও মযা©দা দানের মধ্যেই কল্যাণ নিহিত। এ ব্যাপারে ইসলামের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। ড. জামালের বইটি এ ব্যাপারে অনেক বিভ্রান্তি দূর করেছে এবং শিক্ষিত মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আল্লাহপাক তাঁকে উত্তম পুরষ্কার দান করুক। বইটি সুন্দরভাবে অনুবাদ করে ড. আবু খলদুন আল মাহমুদ এবং ড. শারমিন ইসলাম সবার জন্য কল্যাণকর কাজ করেছেন। এজন্য তারা ধন্যবাদের যোগ্য। অনুবাদটি প্রকাশের দায়িত্ব নেয়ায় আমি দি পাইওনিয়ার-এর সকল সদস্যদেরকে মোবারকবাদ জানাই।

শাহ আব্দুল হান্নান
উপদেষ্টা
দি পাইওনিয়ার, ঢাকা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

প্রকাশকের পক্ষ থেকে
অবনত চিত্তে মহান রাব্বুল আলামীনের শুকরিয়া আদায় করছি যে অনূদিত Islamic Teaching Course Vol (III প্রকাশের মাধ্যমে সব©মহলের পাঠকদের সামনে আমরা বইটি উপস্থাপন করতে পেরেছি।

আমরা ড. জামাল আল বাদাবী ও তাঁর লেখার সাথে পরিচিত হই দি পাইওনিয়ার- এর উপদেষ্টা ও আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জনাব শাহ আব্দুল হান্নানের মাধ্যমে। তিনি দীঘ©দিন যাবৎ অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে আমাদেরকে বইটি পড়িয়েছেন এবং অনুবাদ করে সাধারণ পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করতে উৎসাহিত করেছেন। তাঁরই অনুপ্রেরণা দি পাইওনিয়ার- এর সাবেক সভাপতি ড. আবু খলনুদ আল মাহমুদ এবং দি উইটনেস- এর সদস্যা ড. শারমিন ইসলাম বইটি অনুবাদের কাজে হাত দেন এবং আমাদেরকে সুন্দর একটি অনুবাদ উপহার দেন।

এ অনুবাদটি প্রকাশ করতে পেরে আমরা সত্যিই আনন্দিত। ইতিপূবে© দি পাইওনিয়ার “Gender Issue: An Islamic Approach” নামে ইসলামে নারীর অধিকারের উপর একটি গুরূত্বপূণ© বই প্রকাশ করেছেন। বত©মানে ইসলামে নারীর অবস্থানের উপর বিশদ আলোচনা আছে। আশা করি আমাদের দু‘টি প্রকাশনা সংক্রান্ত পাঠকের নানান প্রশ্নের জবাব দানে সক্ষম হবে।

আমাদের প্রকাশনায় যারা বিভিন্ন উপায়ে সহয়োগিতা করেছেন আল্লাহ তাঁদের উত্তম পুরস্কার দান করুক।

মো. হাবিবুর রহমান
সভাপতি
দি পাইওনিয়ার, ঢাকা।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

লেখকের ভূমিকা থেকে
ইসলাম সম্পকে© জানতে আগ্রহী সবার জিজ্ঞাসার উত্তর রয়েছে এই সিরিঝে। ইসলামী শিক্ষা সিরিজের তৃতীয় ভল্যূমে ইসলামের সামাজিক শিক্ষা আলোচিত হয়েছে। এর প্রথম ভল্যূমে আলোচিত হয়েছে তাওহীদ, রেসালাত, ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ এবং বাইবেল ও বিভিন্ন ধম©গ্রন্থে মুহাম্মদ (সাঃ)- এর উল্ল্যেখ সংক্রান্ত আলোচনা। ইসলামের নৈতিক শিক্ষা সম্পকে© আলোচনা করা হয়েছে এই সিরিজের দ্বীতিয় ভল্যূমে। চতুথ© ভল্যূমে আলোচিত হবে ইসলামের অথ©নৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা। কুরআনের অলৌকিকত্ব বিষয়ে পঞ্জম ভল্যূমে একটি বিষয় সূচি থাকবে।

মূল ইংরেজী বইতে ইংরেজী ভাষীদের জন্য ইসলামী শব্দগুলোর পাশ্বে© তার ইংরেজী প্রতিশব্দ দেয়া হয়েছে।
ব্যাক্তিগত অধ্যয়ন বা গ্রুপ স্টাডি উভয় ধরনের শিক্ষা পদ্ধতিতে এই বই ব্যবহার করা যাবে। এই বইটি মূলতঃ অডিও ক্যাসেটের আলোচনারাই লিখিত রূপ। কাজেই এই অধ্যয়নের সাথে ক্যাসেট সংগ্রহ করে শনলে বুঝতে সহজ হবে। বইটি পড়ে যদি কোনো অসুবিধা বা অস্পষ্টতা দেখা দেয় তবে মূল ক্যাসেটটি শুনলে আশা করা যায় তা দূর হবে।

জামাল আল বাদাবী

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

অনুবাদকের ভূমিকা
ড. আল্লামা জামাল বাদাবী সমকালীন বিশ্বের অন্যতম ইসলামী চিন্তাবিদ। শিশরে জন্মগ্রহণকারী এই মনীষী বত©মানে কানাডার হ্যালিফ্যাক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যপনারত। ‍ইসলাম ধমে©র সরলতম ব্যাখ্যা ও বিভিন্ন মতবাদের তুলনায় এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে জামাল বাদাবীর প্রশ্নোত্তর সিরিজ প্রাশ্চাত্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিঞ্জানমনস্ক আধুনিক ধ্যান ধারণায় বিশ্বাসী লোকেরা আল্লামা বাদাবীর হৃদয়গ্রাহী ও অভেদ্য যুক্তির মাধ্যমে পরিবেশিত ইসলামের আহবানে খুব সহজেই প্রভাবিত হচ্ছে। জামাল বাদাবীর অনুপম উপস্থাপনা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মত সমাজে ইসলামের দ্রুত প্রসারে গুরুত্বপূণ© ভূমিকা রাখছে।

জনাব শাহ আব্দুল হান্নানের মাধ্যমে আমরা জামাল বাদাবীর লেখার সাথে পরিচিত হই। এই প্রশ্নোত্তর সিরিজ তিনি তার ছাত্র ছাত্রীদের পড়ানো শুরু করেন। তাঁর নিদে©শনা ও ‍অনুপ্রেরণাতেই আমরা এ বই অনুবাদের কাজে হাত দিই। শত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি অনুবাদের প্রতিটি অংশ পড়ে দেখে তার প্রয়োজনীয় সংশোধন করেছেন।
দ্বীতিয় সংস্করণ মোঃ আতিকুর রহমান আহাদ মূল্যবান শ্রম ও মেধা ব্যায় করে বইটিকে আরো সুন্দর ও পরিমাজি©ত করেছেন। এজন্য তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
দি পাইওনিয়ার ও দি উইটনের- এর ভাই ও বোনেরা এ বই প্রকাশের দায়িত্ব নিয়ে আমাদের আরো ঋণী করেছেন।
এ অনুবাদ সম্পকে© সচেতন পাঠকের যে কোনো সংশোধনী, সমালোচনা ও সন্তব্য আমাদের প্রেরণা যেগাবে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর পথে কবুল করুক।

ড. আবু খলনুদ আল মাহমুদ
ড. শারমিন ইসলাম

জি-১ মানব ভ্রাতৃত্ব ও সমতা-১
প্রশ্ন :
১. এই কোসে©র পূবে©র সিরিজ সমূহের সাথে মানব ভ্রাতৃত্ব ও সমতার সম্পক© কি?
২. ইসলামের সামাজিক বিধানের প্রধান ক্ষেত্রগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা দিন?
৩. প্রায় সব ধম© বিশ্বাসেই মানব ভ্রাতৃত্ব ও সমতার প্রসঙ্গটি গুরুত্বের সাথে এসেছে, এক্ষেত্রে ইসলামের পৃথক কোন বিশেষত্ব আছে কি?
৪. মানব ভ্রাতৃত্ব ও সমতার বিষয়টি কিভাবে ঈমান ও আকীদার সাথে সম্প©কিত?
৫. ইসলামের নৈতিক বিধান কিভাবে সমতা ও ভ্রাতৃত্বের সাথে সম্পকি©ত?
৬. আদম (আ:) ও হাওয়া (আ:)- এর কাহিনী কিভাবে কুরআনে বণি©ত হয়েছে? এক্ষেত্রে কুরআনের বণ©নার সাথে অন্যান্য ধম©গ্রন্থের পাথ©ক্য আছে কি?
উত্তর:
১. বত©মান প্রসঙ্গ ও পূর©বতী© সিরিজ সমূহের সম্পক©
ইসলামী শিক্ষা সিরিজের প্রথম পাঁচটি পর্© মূলত‍: তাওহীদ, রেসালাত প্রথাগত ইবাদত (Worship)-এর উপর
আলোকপাত করা হয়েছে। ইসলামের নৈতিক শিক্ষা আলোচিত হয়েছে ষষ্ঠ পর্বে। ইসলাম একটি পূর্ণ©vঙ্গ জীবন
ব্যাবস্থা, অন্যান্য ধমে©র মত কিছু আচার অনুষ্ঠান সব©স্ব ধম© নয়। এই দ্বীন বা জীবন ব্যাবস্থায় নিদে©শনা রয়েছে বিশ্বাস (ঈমান) ও ইবাদত (Worship) সংক্রান্ত বিষয়ে, নৈতিক বিষয়ে, রাজনৈতিক, অথ©নৈতিক, সামাজিক সহ মানব জীবনের সব বিষয়ে। কাজেই আগের সিরিজগুলোর আলোচনার ধারাবাহিকতাই বত©মান সিরিজ।
২. ইসলামের সামাজিক বিধানের প্রধান ক্ষেত্রগুলো
ইসলামের সামাজিক বিধানের অন্ত©ভূক্ত বিষয়গুলোকে আমরা দু‘টো প্রধান ভাগে আলোচনা করতে পারি :
ক) আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী ইসলামের বিশ্বাস, নৈতিক শিক্ষা ও মূলনীতিসমূহ সমাজ জীবনকে কতুটুকু প্রভাবিত করতে পারে। এসব বিশ্বাস ও নৈতিক শিক্ষার মধ্যে নিহিত আছে মানুষের মাঝে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, ন্যায়বিচার, ভারসাম্যপূণ© জীবন পরিচালনা ও পারস্পরিক সহযোগিতার মূলনীতিসমূহ।
খ) পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক সম্পক© প্রসঙ্গে ইসলামী বিধানের আলোচনার মাধ্যমেও আমরা ইসলামের সমাজিক নীতির ধারণা পেতে পারি। কারণ পরিবারই হচ্ছে সমাজ ব্যাবস্থার প্রাথমিক ইউনিট।
৩. মানব ভ্রাতৃত্ব সমতা সম্পকে© ইসলামী বিধানের বিশেষত্ব
মানব ভ্রাতৃত্ব ও সমতা সম্পকে© ইসলাম ও অন্যান্য মতাদশে©র মাঝে প্রধান সামঞ্জস্য হচ্ছে মানুয়ের উৎপত্তি সম্পকি©ত সাধারণ বিশ্বাস। ওহীপ্রাপ্ত ধম©-বিশ্বাসীগণ (খ্রিষ্টান, ইহুদি, মুসলমান) মনে করেন যে মানুষের উৎপত্তি
আদম (আঃ) এবং বিবি হাওয়া (আঃ) থেকে। যারা এর বিপক্ষে বলেন (বিবত©নবাদীগণ), তাদের মত হলো মানুষ বানর বা অন্য প্রাণীর উন্নত সংস্করণ। মুসলিমরা এ ধারণায় দীক্ষিত যে, সকল মানুষ এক পিতা-মাতার সন্তান। এক্ষেত্রে মানবতাবাদ বিষয়ে ইসলামের সাথে অন্যান্য ধমে©মতের পাথ©ক্য নিম্নরূপ:
ক) প্রাচ্যের প্রাচীন ধমে©র ন্যায় ইসলাম এটা সমথ©ন করে না যে, মানুষকে বিভিন্ন বণ© ও গোত্রে বিভক্ত করে জন্ম দেয়া হয়েছে। বরং ইসলাম এই শিক্ষাই দেয় যে প্রত্যেক মানুষকেই আল্লাহ মানবীয় গুণ ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ করে তৈরি করেছেন।
খ) দ্বিতীয়ত ইসলাম এ ধারণা দেয় যে আল্লাহ কেবল কোন বিশেষ সম্প্রদায় বা জাতির প্রভু নন। তিনি হচ্ছেন রাব্বুল আলামীন (জগৎসমূহের প্রভু) এবং রাব্বুন নাস (সমগ্র মানবজাতির প্রভু)। এখানেই ইসলামী মানবতার বিশ্বজনীনতা।
গ) অন্যান্য ধম©গ্রন্থে আদম (আ:) ও বিবি হাওয়া (আ:)- এর কাহিনী নেহায়েৎ গল্পের মতই বণি©ত হয়েছে।যাতে শিক্ষণীয় কিছুই নেই।অথচ কুরআনে তাদের ঘটনাগুলো এমনভাবে বণি©ত হয়েছে যে, যার মাধ্যমে সমগ্র মানবজাতির একই উৎস থেকে সৃষ্ট হবার এবং বিশ্বভ্রাতৃত্বের ধারণা জন্ম দেয়।
৪.মানব ভ্রাতৃত্ব ও সমতা ইসলামের ঈমান ও আকীদার সাথে সম্পৃক্ত
তৌহিদ তথা একত্ব বাদেই ইসলামের সারকথা। একক সত্ত্বা আল্লাহ সমগ্র বিশ্বজগতের স্রষ্টা এবং পালনকতা© এই ধারণা থেকেই তার সৃষ্ট মানবজাতির মধ্যে সমতা, একতা ও ভ্রাতৃত্বের ধারণা সৃষ্টি হয়। কারণ একই সৃষ্টা সকল মানুষ তা সে সাদা, কালো, নয় বা নারী হোক সকলকেই সৃষ্টি করেছেন। সবাই সেই একই প্রভুর বান্দা। অন্যদিকে যদি আল্লাহর ক্ষমতা ও আধিপত্যের এক বা একের অধিক শরীক থাকত তাহলে মানুষের সমতা ও ভ্রাতৃত্ব সম্ভব হত না। সুতরাং এটা সুস্পষ্ট যে, মানুষের ভ্রাতৃত্ব ও একতার ক্ষেত্রে একত্ববাদ (তৌহিদ) অবশ্যই উল্লেখযোগ্য ভূমিকার দাবীদার।
শুধু একত্ববাদেই নয়, ইসলাম আরও শিক্ষা দেয় যে হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে পরবতী সমস্ত নবী রাসূল যেমন, নূহ (আঃ), ঈসা (আঃ), মূসা (আঃ), হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) প্রত্যেকেই ছিলেন পরস্পর ভাইয়ের মত। তাঁরা সবাই ছিলেন মানব জীবনের জন্য আদশ© স্বরূপ। তাঁদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছিল স্ব-ম্ব উম্মতের পথপদশ©ক রূপে। তাঁরা সবাই নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মানুষের কাছে প্রচার করতেন ‍ঃ
ক) আল্লাহর উপর ঈমান সংক্রান্ত জ্ঞান।
খ) আত্মজ্ঞান – পৃথিবীতে আমাদের দায়িত্ব, কত©ব্য ও আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য।
গ) জীবন পরিচালনা সম্পকি©ত জ্ঞান।
ইসলামের এ শিক্ষা থেকে এটা নিশ্চত হয় যে, যারা এসব নবী ও রাসূলগণের প্রতি আনুগত্য প্রদশ©ণ করেন ও
তাদের অনুসরণ করেন তারা সবাই একই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ।
৫. ইসলামের নৈতিক বিধান এবং মানব ভ্রাতৃত্ত্ব ও সমতা
ইসলামে ধম© ও রাষ্ট্র আলাদা নয়। বরং জীবনের সমস্ত দিকে এক অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সুতরাং বিশ্বাস, ইবাদত, নৈতিক বিধান, অথ©নৈতিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন, সামাজীক জীবন এগুলো একে অপরের সাথে সম্পকি©ত। কাজেই মানব ভ্রাতৃত্ব ও একতা সম্পকি©ত ইসলামের শিক্ষা নৈতিক শিক্ষার উপরই ভিত্তি করে গঠিত। ইসলামের নৈতিক শিক্ষা ব্যাক্তিগতভাবে মদ্যপান, জুয়াখেলা, ব্যাভিচার, সুদগ্রহণ ইত্যাদি নিষেধ করে। এই নিষেধাজ্ঞার একটা সামাজিক সুফলও আছে। কারণ যারা এসব কাজ করে তারা শুধু তাদের নিজেদের ক্ষতিই করছেনা বরং সমাজেও এর কুপ্রভাব পড়ছে। একইভাবে ইসলাম যে নৈতিক গুণাবলীর কথা অন্ত©ভূক্ত করে সেগুলো শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত সুখের জন্যই নয় বরং সমষ্টিগত সামাজিক কল্যাণের বটে। সমাজে মানুষ যদি দায়িত্বশীল, ক্ষমা, সহানুভূতি এসব গুণের চচা© করত এবং বিশ্বাসী হত তাহলে সমাজে তার সুফল পরিলক্ষিত হত। একইভাবে এ গুণগুলোর অনুপস্থিতি সমাজে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
৬. হযরত আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়া (আঃ)-এর কাহিনী যেভাবে বণি©ত হয়েছে [সূত্র নিদে©শিকাঃ আল কুরআন- ২০:১২২]
কুরআনে বণি©ত হযরত (আঃ) ও বিবি হাওয়া (আঃ)- এর কাহিনী ইসলামের ভ্রাতৃত্ব ও সমতার বিধানের ভিত্তি প্রদান করেছে। সমগ্র কুরআনের মূলভাবের একটা অংশ হলো এ কাহিনী। এর সবচেয়ে আকষ©ণীয় বিষয়গুলো হলোঃ
ক) কুরআন আদি পাপের দোষ শুধুমাত্র বিবি হাওয়া (আঃ)- এর ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়নি। আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়া (আঃ) উভয়কেই সমভাবে আল্লাহর অবাধ্যতার জন্য ও শয়তানের প্ররোচনায় পড়ার দোষারোপ করা হয়েছে। সমতা ও ভ্রাতৃত্বের বিষয়ে এ ঘটণার বিশেষ ব্যঞ্জনা রয়েছে। কারণ মানুষের অধঃগমনের জন্য শুধুমাএ মানবজাতির একটা অংশকে (মহিলা) দোষী করা হয়নি, যা বাইবেলে লক্ষ্য করা যায়। এভাবে আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ)- বণ©না করতে গিয়ে কুরআন পুরুষ ও নারীর সমতার বিষয়টিকে তুলে ধরেছে।
খ) কুরআনের বণ©নায় দেখা যায় আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) অনুশোচনাগ্রস্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রাথ©না করেন এবং তাঁর কাছ ক্ষমা পান। এ ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে ইসলামে আদি পাপ বলতে কোন কথা নেই। যেমন কোন কোন ধমে© ধারণা করা হয় যে মানবজাতির আদি পাপ হযরত হাওয়া (আঃ) করেছিলেন যার শাস্তি স্বরূপ মানুষ দুনিয়াতে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। কুরআন থেকে এটাই প্রমাণীত হয় যে, আল্লাহতায়ালা নিছক শাস্তিস্বরূপ মানুষকে দুনিয়াতে পাঠাননি। বরং আল্লাহর খলিফা হিসেবে মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর মিশন সফল করতে প্রেরিত হয়েছেন।
এভাবেই আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ)- এর কাহিনী আনুগত্য ও আনুগত্যহীনতার পরিণতীর প্রতীকী বণ©না হিসেবে এসেছে। সাথে এটাও প্রমাণীত হযেছে যে আল্লাহ ক্ষমাশীল এবং তিনি মানুষকে উত্তম সৃষ্টি হিসেবে মনোনীত করেছেন। তাদেরকে এ দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্য নিদে©শনাসহ প্রেরণ করেছেন। এভাবে আল্লাহর সৃষ্টিতে সকল মানুষ সমান এবং লিঙ্গ, জাতি, বণ©, গোত্র ও জন্ম পরিচয়ের উদ্ধে© তার ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ।

জি- ২ মানব ভ্রাতৃত্ব ও সমতা- ২
প্রশ্ন ‍ঃ
১. কুরআনে আদম (আঃ) এবং বিবি হাওয়া (আঃ)- এর কাহিনী কিভাবে বণি©ত হয়েছে? এই বণ©নার সাথে মানব
ভ্রাতৃত্ত্ব এবং সমতার বিষয়টি কতটুকু সংযুক্ত?
২. মানব ভ্রাতৃত্ব এবং সমতার বিষয়ে কুরআনে সুনিদি©ষ্ট কোন উদ্বৃতি আছে কি?
৩. সমতার এই মৌলিক কাঠামোতে মযা©দার ভিত্তিতে মানুষকে পৃথক করার কোনো মানদন্ড ইসলামে আছে কি?
উত্তর ‍ঃ
১. কুরআনে আদম (আঃ) এবং বিবি হাওয়া (আঃ) সংক্রান্ত কুরআনের কাহিনীর সাথে মানব ভ্রাতৃত্ব ও সমতার সম্পক© [আল কুরআন ২:২৮-৩৮, ৩৮:৭১, ৭:১১]
হযরত আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়া (আঃ)- এর প্রসঙ্গ কুরআনের বেশ জায়গায় এসেছে। সূরা বাকারার ২৮ থেকে ৩৮ আয়াতে বিস্তৃতভাবে পুরো ঘটনা বণি©ত হয়েছে। প্রথম মানব-মানবীর ব্যাপারে কুরআনের বণ©নার গুরুত্বপূণ© দিকগুলো হচ্ছেঃ
ক) আল্লাহ মানুষ তৈরির আগেই পৃথিবী তৈরি করেছেন এবং এতে মানুষের স্বচ্ছন্দ অবস্থানের পরিবেশ ও উপাদান নিশ্চিত করেছেন। কাজেই পৃথিবীতে মানুষের আগমন আল্লাহর পূব© পরিকল্পিত ইচ্ছা। এটা কারো পাপের ফল নয়।
খ) যখন আল্লাহ সকল ফেরেশতাদের ডেকে বললেন যে তিনি দুনিয়াতে তাঁর খলিফা (দূত, প্রতিনিধি) প্রেরণ করতে চান তখন ফেরেশতারা শঙ্কা প্রকাশ করল যে এরা হয়ত দুনিয়াতে অন্যায় ও পাপ কাজে লিপ্ত হবে। এখন প্রশ্ন হলো ফেরেশতারা পূব© থেকেই এমন ধারণা কেন করল। এর একটা উত্তর হতে পারে এই যে ফেরেশতারা যখন জানলো মানুষকে মাটি থেকে তৈরি করা হবে তখন তারা ধারণা করল পাথি©ব পাপের কবলে তারা পড়তে পারে। প্রথম মানব-মানবী মাটি খেকে তৈরি হয়েছেন এবং তাদের থেকেই সমগ্র মানবজাতির সৃষ্টি। সেহেতু এই মানবকূল ‍এর মধ্যে কেউ কারো চেয়ে শ্রেষ্ঠ বা কেই অতি মানব এমন দাবি করা অসম্ভব।
গ. যখন ফেরেশতারা মানুষের সম্ভব্য অবাদ্যতার ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন তখন আল্লাহ বলেন, আমি যা জানি
তোমরা তা জান না, যার অথ© হচ্ছে আল্লাহ মানুষকে সেই জ্ঞান দিয়েছেন যা ফেরেশতাদের দেননি। কুরআনের মতে জ্ঞান হচ্ছে পৃথিবীর সব বস্তুর নাম, আল্লাহর বিধান বোঝার ও পালন করার যোগ্যতা এবং হক ও বাতিলের পাথ©ক্য করার সামথ©। হক অথবা বাতিল যে কোন পন্থা গ্রহণের স্বাধীনতাও মানুষকে দেওয়া হয়েছে। এসব জ্ঞানের ব্যাপারেও কোনো মানুষেরই অন্য কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করার কোন সুযোগ নেই।
ঘ. আল্লাহ কতৃ©ক ফেরেশতাদের আদম (আঃ)- কে সিজদা দানের (সম্মান প্রদশ©নের) আদেশের মধ্যে সাব©কভাবে সমগ্র মানবজাতির শ্রেষ্ঠত্ব ও মযা©দার বিষয়টিই নিশ্চিত হয়েছে।
ঙ. এসব আয়াতের মাধ্যমে জাতীয়তা, লিঙ্গ বা অন্যান্য ভিত্তিতে মানুষের উপর মানুষের দাবিটি বাতিল প্রমাণিত হয়। আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ)- এর কাহিনী এই শিক্ষাই দেয় যে সকল মানুষের উৎপত্তি স্থাল একই এবং একই মিশন সাধনের জন্য তাদের পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। তাদের সবাই সৎ আমলের মাধ্যমে আল্লাহর তুষ্টি অর্জন করতে পারে। আবার তাদের সবাই শয়তানের প্ররোচনায় ও পড়তে পারে। এক্ষেত্রে কেউই ভুলের উদ্ধে© নয়।
২. মানব ভ্রাতৃত্ব এবং সমতার বিষয়ে কুরআনে সুনিদি©ষ্ট উদ্বৃতি
[আল কুরআনঃ ২:২১, ২:১৬৮, ৪:১-২, ১৯:৯৩-৯৫]
কুরআনে কয়েকটি সুনিদি©ষ্ট উদ্বৃতির মাধ্যমে মানব জাতির মধ্যকার সাম্যের বিষয়টি বণি©ত হয়েছে। প্রথমত, মানুষকে সম্বোধন করার ব্যাপারে কুরআনে সাধারণত “ইয়া আইয়ুহান্নাস” (হে মানবজাতি) এই বাক্য ব্যাবহার করা হয়েছে। এখানে মানুষের মাঝে সাদা-কালো, ধনী-দরিদ্র, মুসলিম ও অমুসলিম কোনো ভেদ করা হয়নি। আল্লাহ সবাইকে সমভাবে সম্বোধন করেছেন। এ ধরনের সম্বোধন এই ধারণার জন্ম দেয় যে একই স্রষ্টা সকল মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। দ্বিতীয়ত, সূরা বাকারার ১৬৮ আয়াতে ঘোষিত হয়েছে যে আল্লাহর প্রদত্ত নেয়ামতসমূহ সকল মানুষের সমান ভোগাধিকার রয়েছে।
তৃতীয়ত, কুরআন নর ও নারীর সমান মযা©দা ঘোষণা করে মায়ের বিশেষ সম্মান দিয়েছে। কুরআন স্পষ্টভাবে নর ও নারীর একক উৎসস্থলের কথা বণ©না করে উভয়ের সমঅধিকারের কথা বণনা করা হয়েছে। সব©শেষে বো যায় কুরআনে বার বার সকল মানুষকে শেষ বিচারের দিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াবার কথা বলেছে। কেউ সেদিন বিচার এর উদ্ধে© থাকবে না। এটাও মানব সাম্যেরই ঘোষণা দেয়।
৩. মানুষের মযা©দা বিষয়ক কুরআনের মানদন্ড [আল কুরআন ‍ঃ ৪৯:১৩, ৩০:২২]
এটা স্পভাবেই কুরআনে বণি©ত হয়েছে যে, আধ্যাত্মিক এবং মানবিক মানদন্ডে সকল মানুষই এক। রঙ, জাতীয়তা, গোত্র ইত্যাদির ভিত্তিতে কেউকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়নি। কিন্তু ভালো আর মন্দ কখোনই এক হতে পারে না। এজন্যই ইসলামে ভালো আর মন্দের ভিত্তিতে মানুষকে মযা©দা দেবার এক অনুপম মানদন্ড দেয়া হয়েছে।
“(আল্লাহর দৃষ্টিতে) তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যাক্তি শ্রেষ্ঠ যে বেশী তাকওয়াসম্পন্ন (সৎকম©শীল)।”
অথা©ৎ আল্লাহর দৃষ্টিতে মযা©দার ভিত্তিতে মানুষকে পৃথক করার একমাত্র মানদন্ড হচ্ছে সততা এবং খোদাভীতি (আরবীতে তাকওয়া) । তাকওয়া বলতে ব্যাপক অথে© সকল ভালো কিছুকেই বোঝায়। এ সততা মানে বিশ্বাসের সততা, নৈতিকতায় উত্তম এবং অন্যান্য মানুষের সাথে সম্পক© রক্ষা উত্তম হওয়া। কুরআনে আরও বলা হয়েছে য়ে আল্লাহ মানুষকে বিভিন্ন জাতিতে ভাগ করে সৃষ্টি করেছেন ‘যেন তারা পরস্পরকে জানতে পারে’। এক্ষেত্রে বাইবেলে বণি©ত মানুষকে বিভিন্ন জাতিতে ভাগ করার কারণটি তুলনা করা যেতে পারে। বাইবেলে বলে যে, আল্লাহ মানুষকে বিভিন্ন জাতি ও ভাষায় ভাগ করেছেন, এই ভয়ে য়ে নচেৎ তারা খুব ক্ষমতাশালী হয়ে যাবে। (বাবেল টাওয়ার নিমা©ণ কাহিনী প্রসঙ্গ) অথচ কুরআনে এই ভেদটি একটি নেয়ামত হিসেবে এসছে যাতে মানব বৈচিত্র্য পূণ©তা পেতে পারে বিভিন্ন ভাষাগোত্র ও জাতীয়তার সম্মিলন।

জি- ৩ মানব ভ্রাতৃত্ব ও সমতা-৩
প্রশ্ন ‍ঃ
১. মানব ভ্রাতৃত্বের বিষয়ে রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ)- এর দৃষ্টিভঙ্গি কি ছিল?
২. ইসলামে বণি©ত সমঅধিকার অন্য ধমা©বলম্বীদের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত হবার কোনো উদাহরণ আছে কি?
৩. কুরআন সমগ্র মানবজাতিকে সমোবাধন করেছে কিন্তু তবুও বেশ কয়েক জায়গায় বিশেষভাবে মুসলিম বা বিশ্বাসীদের সম্বোধন করা হয়েছে। এক্ষত্রে এমন ধারণার উদ্রেক হতে পারে কি যে কুরআনে মানব ভ্রাতৃত্ব্ ও সমতার ধারনা উপেক্ষিত হয়েছে?
৪. যারা মুসলমানদেরকে জন্মগত মুসলিম, নওমুলিম (ইসলাম গ্রহণকারী) অথবা পিতা মুসলিম হবার সুবদে মুসলিম এমনভাগ করতে চায় তার সমথ©নে ইসলামে যুক্তি আছে?
উত্তর ‍ঃ
১. মানব ভ্রাতৃত্বের বিষয়ে রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ)- এর দৃষ্টিভঙ্গি [আল কুরআন ১৮:২৮]
মানব ভ্রাতৃত্বের বিষয়ে রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ)- এর দৃষ্টিভঙ্গি সকল ক্ষেত্রে পরিস্কার। যথাঃ
ক) যে সময়টাতে চচে© নিজে খোদায়ী কালামের একক ব্যাখ্যাদাতা ছিল এবং তারা নিজেদেরকে আল্লাহর মুখপাত্র হিসেবে দাবী করত সে সময় মুহাম্মদ (সঃ) শেখালেন যে যদিও আলেমরা সম্মানিত ব্যাক্তি; কিন্তু তাদের কথা খোদায়ী কথার সমতুল্য হতে পারে না। সেজন্য ইসলামে চাচে©র মতো কোনো ইনস্টিটিউট নেই। রাসূল (সাঃ) এটা নিশ্চিত করেছেন যে ধমে© সাধারণ জনগণের উপর প্রাধান্যকারী এমন জনগোষ্ঠী নেই।
খ) তিনি আরও শিখিয়েছেন যে নবী রাসূলগণ সহ সকল মানুষই সমান। তিনি তাঁকে পূজা করতেও নিষেধ করতেন।
গ) তিনি শিখিয়েছেন যে সব মানুষ সমান বিধায় কোন মানুষ অপর কোন মানুষকে সেজদা করতে বা তার কাছে মাথা নত করতে পারবে না। শুধু আল্লাহর কাছেই মানুষ মাথা নত করবে।
ঘ) তিনি যখন কোন সভা-সমাবেশে যোগ দিতেন তখন সামনে আসন নেবার জন্য রোকজন ঠেলাঠেলী না করে নিকটতম জায়গায় বসে পড়তেন। তিনি বণ©, গোত্র, পোশাক, সম্পদ এসবের বিবেচনায় মানুষকে ভাগ করার বিরূদ্ধে বলতেন। মানব সমতার বিষয়ে তাঁর শেষ বাণী পাওয়া যায় তাঁর বিদায় হ্বজের ভাষণে- “হে মানবজাতি তোমাদের আল্লাহ এক, পিতা এক, সুতরাং কোন অনারবদের উপর কোন আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শুধুমাত্র খোদাভীতির ভিত্তিতেই তোমাদের মযা©দার পাথ©ক্য হতে পারে।” ‌এটা লক্ষ্য করার মত যে প্রথম যাঁরা রাসূল (সাঃ)- এর দাওয়াত কবুল করে মুসলমান হয়েছিলেন তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক অবস্থান এবং জাতীয়তা থেকে এসছিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন হযরত আবু বকর (রাঃ) যিনি আরবের একজন বিশিষ্ট ধনী এবং সম্ভ্রান্ত ব্যাক্তি ছিলেন। বিল্লাল (রাঃ) ছিলেন একজন নিগ্রো ক্রীতাদাস, শুয়াইব (রাঃ) ছিলেন রোমান, সালমান (রাঃ) পাশী©। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর সবাই সম ভ্রাতৃত্বের অংশীদার হয়ে গিয়েছিলেন। কোন কোন কুরাইশ নেতা রাসূল (সাঃ) কে বলতেন যে আমরা তোমার দ্বীন কবুল করতাম যদি গরীব এবং নীচ ব্যাক্তিরা এটা কবুল না করত। তাদের এই কথার জবাবে রাসূল (সাঃ) বলতেন, “হে আল্লাহ আমি যেন একজন দরিদ্র হিসেবেই জীবন ধারণ করি, মৃত্যূবরণ করি এবং হাশরের দিনে দরিদ্রদের সাথেই অবস্থান করি।”
২. সমঅধিকার অন্য ধমা©বলস্বীদের ক্ষেত্রেও প্রযুক্ত হবে কি?[আল কুরআন ৪:৯২]
কুরআন এবং রাসূল (সাঃ) এর জীবনে অমুসলিমদের ক্ষেত্রেও সমঅধিকার দেবার প্রমাণ আছে। কুরআনে দুঘ©টনাবশত কোন ব্যাক্তির মৃত্যূর ক্ষেত্রে মৃত ব্যাক্তির পরিবারকে যে ক্ষতিপূরণ দেবার বিধান রয়েছে তা মুসলিম অমুসলিম উভয়ের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। কুরআন এবং হাদিসে মুসলিম রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিকদের জানমাল ইজ্জতের মযা©দা মুসলিম নাগরিকের মতই সমভাবে দেয়া হয়েছে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যাক্তি মুসলিম রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিককে আঘাত করে সে যেন আমাকেই আঘাত করে।”
প্রথম দিকের মুসলিম শাসকরা রাসূল (সাঃ) এই আদেশ বুঝতেন এবং যথাযথভাবে পালন করতেন। আবু প্রণীত ‘খারাচ’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে মুসলিম রাষ্ট্রে অবস্থানরত ইহুদি, খ্রিষ্টানসহ সবার সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে। এসব প্রমাণাদীর আলোকে ওইসব মনীষী (যেমন, প্রফেসর ডাব্লিউ স্মিথ). যারা বলেন ইসলামে অমুসলিমদের মযা©দা রক্ষার কোন নিদেশনা নেই তাদের কথা ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়। ইসলামে মুসলিম অমুসলিম সুসম্পক© ও সমঅধিকার রক্ষায় সুস্পষ্ট নিদে©শনা রয়েছে।
৩. যেসব ক্ষেত্রে কুরআন শুধুমাত্র বিশ্বাসীদের সম্বোধন করেছেন তার ব্যাখ্যা [আল কুরআন ২:২৫৬, ৩:৭৫, ১০:১৯]
যদিও ইসলাম সকল মানবকে একসাথেই বলেছে আল্লাহর আনুগত্য করার কথা কিন্তু তবুও কখনো কখনো শুধু বিশ্বাসীদের সম্বোধন করতে হয়েছে তাদের বিশেষ কাজ যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, রোজা, যাকাত ইত্যাদি সম্পকে© নিদে©শনা দিতে। ইসলামের দৃষ্টিতে মুমীনদের ভ্রাতৃত্ব প্রকৃত অথে© মানব ভ্রাতৃত্বের কোন বিকল্প বা প্রতিপক্ষ নয় বরং এটা ব্যাপকভাবে মানব ভ্রাতৃত্বের সীমার মধ্যেই বিশেষভাবে মুমীনদের জন্য প্রযোজ্য। তার উপর ইসলাম মুসলমানদের জাতি, ধম© নিবি©শেষে সকল মানুয়ের মযা©দা ও সম্মান প্রদানের নিদে©শ দিয়েছে। মুসলিম অমুসলিম উভয়ের স্বাথ© ব্যবহারের জন্য একক নৈতিক বিধান ইসলামে দেওয়া হয়েছে। সাথে সাথে এক খোদা, এক শেষ নবী, এক কিতাব এবং আখেরাতে বিশ্বাসীদের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের উৎসাহিত করা হয়েছ্। এছাড়াও ইসলাম শিক্ষা দেয় সহনশীলতার। এখানে বলা হয়েছে আল্লাহ চাইলে গোটা মানব সমাজকে এক জাতিতে পরিণত করতেন।
৪. জন্মগত মুসলমান, নওমুসলিম এবং পিতা অথবা মাতা মুসলিম হবার সুবাদে মুসলমান-এমন বিভক্তির ব্যাপারে ইসলামের অবস্থানঃ [আল কুরআন ৩০:৩০, ৯:১১]
সকল মানুষই জন্ম নেয় মুসলিম হিসেবে। সকল শিশু আল্লাহর প্রতি আত্মসমপ©ণের (ফিতরা) অঙ্গীকার নিয়েই জন্ম নেয়। এই সুবাদে সব শিশুই মুসলিম। যখন একজন ব্যাক্তি তার পিতা মাতার ধম© ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করে তখন প্রকৃতপক্ষে সে তার মূল ধমে© ফিরে আসে। কাজেই জন্মগত মুসলমান, নওমুসলিম আর পিতা অথবা মাতার মুসলিম হবার সুবাদে মুসলিম- এমন বৈশিষ্ট্যর ভিত্তিতে মুসলমানদের ভাগ করা ইসলাম সম্মত নয়। বিশ্বাস হচ্ছে বান্দা এবং আল্লাহর মধ্যে। কোন মুসলমানকে কাফের ঘোষণার অধিকার কারো নেই। কেউ এ ধমে© গ্রহণ করতে চাইলে বাধা দেবার অধিকারও কারো নেই।

জি- ৪ বিশ্বাসের ভ্রাতৃত্ব (ইসলামের ভ্রাতৃত্ব)
প্রশ্ন ‍ঃ
১. আরবী ভাষী মুসলমানদের অন্যান্য ভাষাভাষীদের উপর কোন শ্রেষ্ঠ্ত্ব আছে কি?
পবিত্র ভূমি ও মদিনার আশে পাশের বাসিন্দাদের কোন বিশেষ মযা©দা আছে কি?
২. উম্মাহ শব্দের প্রকৃত অথ© কি এবং ‘জাতি’ শব্দের প্রচলিত ধারণা থেকে পৃথক কিভাবে?
৩. ইসলামের ভ্রাতৃত্ব (brotherhood of faith)বা উম্মাহর ধারণা সময়ের এবং ভৌগলিক সীমা অতিক্রম করে কিভাবে?
৪. রক্তের সম্পক© কি ইসলামের ভ্রাতৃত্বের উপরে স্থান পায়?
৫. ইসরামের ভ্রাতৃত্বকেই সবাই আগে স্থান দিয়েছে এমন কোন মানব সমাজের উদাহরণ আছে কি?
উত্তরঃ
১. আরবী ভাষী হওয়ার বা পবিত্র ভূমি ও মদিনার আশে পাশের অধিবাসী হবার মধ্যে কোন শ্রেষ্ঠত্ব বা বিশেষ মযা©দা আছে কি?
যদিও আরবী জানার মধ্যে সুস্পষ্ট কল্যাণ নিহিত আছে এ ভাষাতেই কুরআন নাযিল হয়েছে, তবুও এমন ধারণ‍ ভুল যে কোন মুসলমান যিনি আরবী জানেন না তিনি আরবীভাষীর চেয়ে কোন ভাবে নিন্ম মযা©দার। আল্লাহর বাণী হিসেবে কুরআন বিশেষ মযা©দা প্রাপ্ত। কোন ভাষা এমনকি আরবী ও এমন মযা©দার অধিকারী নয়।
একইভাবে রাসূল (সাঃ) এর পূণ্যভূমিতে থাকতে পারা সৈাভাগ্যের এত কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু মুসলমান হিসেবে সেখানকার অধিবাসীরা অন্য এলকার মুসলমানদের উপর কোন রকম শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার হতে পারে না। ইসলাম সব ধরণের সংকীণ© জাতীয়তাবাদ অস্বীকার করে। এখানে শ্রেষ্ঠত্বের ভিত্তি হচ্ছে জ্ঞান অজ©ন এবং জীবনে তার অনুসরণ (তাকওয়া)।
২.‘উম্মাহ’ শব্দের অথ© এবং ‘জাতি’ শব্দের প্রচলিত ধারণা থেকে এর পাথ©ক্য
জাতি’ বলতে প্রচলিত ধারণায় কোন নিদি©ষ্ট ভাষাবাসী অথবা কোন নিদি©ষ্ট ভৌগলিক এলাকার জনগণ অথবা একই ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক জনগোষ্টিকে বুঝায়॥ পক্ষান্তরে উম্মাহ বলতে এমন এক জনগোষ্ঠিকে বুঝায় যার অন্ত©ভুক্ত পৃথিবীর সব©কালের সব©দেশের সকল বিশ্বাসীরা। এটা জাতির চেয়ে অনেক উদার ও ব্যাপক ধারণ॥ ইসলাম সংকীণ© জাতীয়তাবাদ বিশ্বাস করেনা। পৃথিবীর দুটি মহাযুদ্ধসহ প্রায় সব বিপয©য়ের মূল কারণ সংকীণ© জাতীয়তাবাদ। এক হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেন- “সে আমাদর অন্ত©ভূক্ত নয় যে আসাবীয়া (Fanatical parochialism বা nationalism) (জাতীয়তাবাদে) প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দেয়।“ জৈনিক সাহাবী যখন আসাবীয়ার ব্যাখ্যা জানতে চাইলেন তখন, রাসূল (সাঃ) বলেন- “আসাবীয়া হচ্চে, যখন এক জাতি আরেক জাতির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করে এবং তাদের অধিকারকে অস্বিকার করে, যখন কোন জাতির লোকজন তাদের লোকদের অন্যায় এবং ভূলগুলোকে সমথ©নে দেয় শুধুমাত্র জাতীয়তার কারণে।”
৩. ইসলামের ভ্রাতৃত্ব কিভাবে কাল (সময়কে) অতিক্রম করে
সূত্র- [আল কুরআন- ৪৯:১০, ৫৯:১০, ২৩:৫১-২, ২১:৯২]
কুরআনে বণি©ত উম্মাহ শব্দ শুধূ মাত্র গোটা বিশ্বের সকল দেশের সকল ঈমানদারকেই অন্ত©ভূক্ত করেনা বরং তা পৃথিবীর আদি থেকে শুরু করে আজ পয©ন্ত সকল ঈমাদারকে সংযুক্ত করে। এভাবে কুরআনে যখন বলা হয় সকল ঈমানদার ভাই ভাই তখন তা হযরত ‍আদম (আঃ) থেকে শুরু করে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পয©ন্ত সকল নবী রাসূলের অনুসারীদের অন্ত©ভূক্ত করে। সকল বিশ্বাসী একই ভ্রাতৃত্ব এবং জাতির অন্ত©ভূক্ত । এভাবে ইসলাম আল্লাহ কতৃ©ক প্রেরিত সকল নবী রাসূল ও ঐশী কিতাবকে স্বীকৃতি দিয়ে লাভ করেছে বিশ্বজনীনতা। আর সব সংকীণ©
মতবাদ যা শুধু কোন বিশেষ গোত্র বা বিশেষ নবীর অনুসারীকেই স্বীকৃতি দেয় সেসব থেকে ইসলামের পাখ©ক্য এখানেই।
৪. রক্তের সম্পক© কি ইসলামের ভ্রাতৃত্বের উপর স্থান পায়
সূত্র- [আল কুরআন- ৯:২৪, ৩১:১৫]
ইসলামে রক্ত সম্পক©সহ অন্য সকল সকল সম্পকে©র উপরে বিশ্বাসের সম্পক© স্থান পায়। ইসলামের ভ্রাতৃত্বের ভিত্তি যেহেতু আল্লাহর উপর বিশ্বাস এবং ভালবাসা সেহেতেু এই ভ্রাতৃত্বের উপর রক্তের সম্পর্ককে স্থান না দেয়ার ব্যাপারে সতক© করা হয়েছে (যদিও রক্তের সম্পক©কে রক্ষা করা এবং সম্মান করার ব্যাপারে মুমিনদের নিদে©শ দেয়া হয়েছে)। মুমিনদের ইসলামী ভ্রাতৃত্ব এবং রক্তের সম্পকে©র মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে বলা হয়েছে। যদি কারো রক্তের সম্পকি©ত ব্যাক্তি বা সআমী বা স্ত্রী অবিশ্বাসীদের অন্ত©ভূক্ত হয় তবে সেই সম্পক©কে বিশ্বাসের উপর স্থান দিতে নিষেধ করা হয়েছে। এমনকি অবিশ্বসী ‌আত্মীয় সম্পকে© হাশরের ময়দাসে সুপারিশ ও করা যাবে না।
৫. রক্তের সম্পকে©র উপর ইসলামের ভ্রাতৃত্বকে স্থান দেয়ার উদাহরণ
সূত্র- [আল কুরআন- ১১:৪৬, ৯:১১৪, ৬৬:১০-১১]
কুরআন্ এমন চারটি উদাহরণ আছে। প্রথম উদাহরণ হচ্ছে হযরত নূহ (আঃ) এর নৌকায় অবিশ্বাসী ছেলে আরোহণ করেনি। দ্বিতীয় উদাহরণ যেখানে সন্তান বিশ্বাসী পিতা অবিশ্বাসী যেমন, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) মুতি© নিমা©তা পিতার সাতে সম্পক©চ্ছেদ করেন। তৃতীয় উদাহরণ হযরত লুত (আঃ) এবং তাঁর স্ত্রী। এখানে হযরত রুত (আঃ) বিশ্বসী এবং স্ত্রী অবিশ্বাসীদের দলে। চতুথ© উদাহরণ ফেরাউন এবং তাঁর স্ত্রী। ফেরাউনের হুমকি সত্তেও তাঁর বিশ্বসী স্ত্রী ঈমান ত্যাগ করেনি। এসব উদাহরণে দেখা যায় বিশ্বসী নবী বা বান্দাগণ তাদের অবিশ্বাসী স্বামী , স্ত্রী বা সন্তানের সাজা রোধ করতে পারেনি।

জি- ৫ সামাজিক সম্পক© ও বন্ধু নিবা©চন
প্রশ্ন ‍ঃ
১. ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় বন্ধুত্বের গুরূত্ব ও ভূমিকা কি?
৩. এমন কোন ক্ষেত্র আছে কি যেখানে মুসলমানদের খোলাখুলি মেশা ঠিক নয়?
৪. কোনটাকে ইসলাম বন্ধুত্বের সঠিক ভিত্তি মনে করে?
৫. কোন কোন কান বন্ধুত্বকে নষ্ট করে?
উত্তর ‍ঃ
১. ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় বন্ধুত্বের গুরূত্ব ও ভূমিকা
সূত্র নিদে©শিকা ‍ঃ আল কুরআন ২৫:২৭-৩০, ৪৩:৬৫-৬৭
শুধূমাত্র ইসরামের তাগিদেই নয় বরং সামাজিক দিক থেকেও বন্ধুত্বের গুরূত্ব অপরিসীম। এর কারণ এই যে, একজন ব্যাক্তির মানসিক গঠন, চিন্তাশক্তি ওআচার আচরন বিকাশে বন্ধুত্বের গুরূত্বপূণ© ভুমিকা আছে। উপরন্তু বন্ধত্ব একজন ব্যাক্তির অধ্যাত্মিক বিকাশে ও নৈতিক উন্মেষের সাহায্য করে। সুতরাং এ থেকে এটাই অনুমিত হয় যে, একটা সমাজের সাফল্য নিভ©র করে সেই সমাজের সদস্যদের পারস্পরিক বন্ধুত্বপূণ© সম্পকে©র উপর।
ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বন্ধুত্ব যদি আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও প্রগাঢ় বিশ্বাসের উপর ভিত্তিকরে স্থাপিত হয় তবে এটা আশীবা©দ স্বরূপ। যদি সম্পক© অন্যান্য নগণ্য বিষয়ের উপর ভিত্তি করে স্থাপিত হয় তবে তা বেশিদিন স্থায়ী হয়না। কুরআন ও হাদিস যে বন্ধুত্ব মানুষকে অপেক্ষাকৃত ভাল মুসলমান বানাবার পরিবতে© তাকে সত্য ও সরল পথ থেকে বিচুত্য করে তার বিরুদ্ধে সতক© করে দিয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ নবী করিম (সাঃ) এরশাদ করেন, “ব্যাক্তি তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর জীবনধারা ও চিন্তা চেতানা অনুসরণ করে। সুতরাং তোমরা প্রত্যেকেই বন্ধু নিবা©চনে সতক© হও।”
কুরআন এ ব্যাপারে সতক© করে এভাবে যে, শেষ বিচারের দিন অবিশ্বাসীদের মধ্যে অনেকেই নিদারুণ মনস্তাপে ভুগবে। কারণ তারা অনুধাবন করবে যে, এ ধরনের বন্ধুত্যের কারণে তারা সত্যপথ হতে বিচুত্য হয়েছিল। অন্যত্র আল্লাহতায়ালা সতক© করেছেন এভাবে যে, যে অবিস্বাসী বন্ধুগণ কেয়ামতের দিন শত্রুতে পরিণত হবে।
২. ইসলামের শিক্ষায় বৈরাগ্যবাদের কোন স্থান আছে কি
সূত্র নিদে©শিকা ‍ঃ আল কুরআন ৫৭:২৭
যদিও ইসলাম সবিস্তারে মানুষ ও আল্লাহর মধ্যকার সম্পকে©র কথা বলে তথাপি একে কোন একক ব্যাক্তির ধম©বিশ্বাস বলা যায় না। ইসলাম শিক্ষা হলো দুনিয়াদারী থেকে সম্পূণ©রূপে বিচ্ছিন্ন থাকা উচিত নয়। কুরআনের বরাত দিয়ে নবী করিম (সাঃ) বৈরাগ্যবাদের নিন্দা করেছেন। যদিও আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় বৈরাগ্যবাদের মাধ্যমে আল্লাহর ধ্যানে সারা জীবন উৎসগ© করা যায় ও পবিত্র ধম©গ্রন্থ পাঠ কর্ আধ্যাত্মিকতার চরম স্তরে উপনীত হওয়া যায় তথাপী এটা ইসরামের আদশ© নয় কারণ এটা সমাজ পরিবত©নের বদলে ব্যাক্তির মুক্তির প্রচেষ্টা মাত্র। অপরদিকে ইসলাম মানুষকে পারস্পরিক মেলামেশায় উৎসাহিত করে। ইসলাম বিশ্বাসীদের এক অপরকে জানার জন্য সমন্বিত কায©ক্রম ও সহযোগিতায় উৎসাহ দেয়।
ইসলামের অনেক ইবাদত ব্যাক্তিভাবে করা যায় না বরং দরবদ্ধ বাবে করতে হয় (যেমন- জানাজার নামাজ, হ্বজ, আল্লাহর পথে জিহাদ ইত্যাদি) উপরন্তু, রাসূল (সাঃ) দৈনিক নামাজসমূহ জামায়াতে পড়ার তাগিদ দিয়েছেন যদি মাত্র দুজন লোকও হয় তবুও।
৩. যেসব ক্ষেত্রে মুসলমানদের খোলাখুলি মেশা ঠিক নয়
সূত্র নিদে©শিকা ‍ঃ আল কুরআন ৬:৭০
যে সব লোক ঈমানকে ঠাট্টার বিষয় মনে করে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে সে সব লোকের সাথে মিশতে মুসলিমরা বাধ্য
নয়। এসব লোক থেকে দূরে থাকার জন্য ইসলাম শিক্ষা দেয়। কোন অবস্থাতেই এদের সাথে বন্ধুত্ব করা ঠিক হবেনা। তাছাড়া কোন নিদি©ষ্ট চক্র বা সমাজ যদি খারাপ হয় এবং কারও পক্ষে যদি এতে ঢুকে এর অবস্থার পরিবত©ণ করা সম্ভব না হয় তবে তার উচিৎ ঐ গোষ্ঠি বা সমাজ ত্যাগ করা। যদি কোন বিশ্বাসী ব্যাক্তির এমন কোন সামথ্য© থাকে যা দ্বারা সে ঐ সব খারাপ কাজ বা অপকম© শুধরাতে পারে তাহলে তার উচিৎ হবে সে চেষ্টা চালিয়ে ঐ সমাজ বা গোষ্ঠিকে সঠিক পথে আনা, যদি সে ব্যাথ© হয় তবে সে সঙ্গ ত্যাগ করাই তার জন্য যথাথ© হবে। নবী করিম (সাঃ) যখন জিজ্ঞাসা করা হল কোন ধরণের লোক সব©শেষ্ঠ্র, তিনি উত্তর দিলেন, “যে ব্যাক্তি আল্লাহর পথে জান, মাল ও সময় ব্যায় করে লড়াই করে। এরপর সেই ব্যাক্তি শ্রেষ্ঠ যে অসৎ ও অনাচারপূণ© সমাজ থেকে নিজেকে পৃথক রাখে।”
এটাই সত্য যে, সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতেও কিছু লোক অবশ্যই থাকবে যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের রজ্জুকে আকড়ে থাকবে। তাঁর দেয়া অপরিবত©নীয় নৈতিক আচরণের নিয়ম নীতিকে অনুসরণ করবে ও সমন্বিত প্রচেষ্টায় বিশ্বসীদের দল গঠন করবে। কেউ বিচ্ছিন্ন থাকার চেয়ে এটাই বেশী বাঞ্চনীয়।
৪. ইসলামের দিক থেকে নিখুত বন্ধুত্বের ভিত্তি
সূত্র নিদে©শিকা ‍ঃ আল কুরআন ৪৯:১১
কুরআন ও রাসূলের হাদিস থেকে এটা সুস্পষ্টভাবে জানা যায় যে, যে বন্ধুত্ব আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও বিশ্বাস এবং তার পথ অন্বেষণের উদ্দেশ্য থেকে সৃষ্ট তাই নিখুত ভিত্তির উপর স্থাপিত। অপরদিকে যে বন্ধুত্ব কোন বিশেষ স্বাথ©রক্ষায়, সামাজিক শ্যেণী বা ভৌাগলিকতার উপর ভিত্তি করে স্থাপিত সেটা নিখুত নয়। হাদিসে লিপিবদ্ধ আছে যে, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, যারা একে অপরকে আমার জন্য ভালোবাসে তাদেরকে কেয়ামতের দিন আমি আমার ছায়ায় আশ্রয় দিব যেদিন আমি ছাড়া আর কোন আশ্রয়দাতা থাকবে না।
যেসব পন্থা বন্ধুত্ব সৃষ্টিতে উৎসাহ যোগায়
কুরআন ও রাসূলের হাদিস অনুসারে, আট প্রকার নিদি©ষ্ট পন্থা বন্ধুত্ব সৃষ্টিতে উৎসাহ দেয়ঃ
ক. দুনী©তি, শঠতা ও অহংকার বজ©ন। কারণ এগুলো মানুষের হৃদয়ের আন্তরিকতা ও সরলতাকে ধংস করে।
খ. সামাজিক সৌজন্যবোধ, যেমন, একজন মুসলিম তার সহচরকে তার নাম ও কোথা থেকে এসছে জিজ্ঞাসা করা।
গ. যদি কোন ভাই বা বোন কে আল্লাহতায়ালাকে বিশ্বাসের কারণে ভালবাসে তাহলে সে যেন অন্যদেরকে সেটা জানায়।
ঘ. ঘনিষ্ট বন্ধুদের বাড়ীতে যাওয়া। এটা বন্ধুত্ব সৃষ্টিতে উৎসাহ যোগায়। বেহেশতের শুভ সংবাদ তাদের জন্য যারা বন্ধুর বাড়ী যায়, অন্য কোন কারণে নয় শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
ঙ. উপহার সামগ্রী আদান প্রদান।
চ. ক্ষমাশীল ও দয়ালু হওয়া।
ছ. ভোজের দাওয়াত গ্রহণ করা।
জ. নিঃস্বাথ© হওয়াঃ নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, যতক্ষণ পয©ন্ত তোমরা নিজেদের জন্য যা পছন্দ কর তোমার ভাই এর জন্য তা পছন্দ না কর, ততক্ষণ তোমারা প্রকৃত মুমিন নও, বিশেষতঃ যদি সেই ভাই অভাবী হয়।
৫. রক্ষাথে© যে সব কাজ পরিত্যাগ করা দরকার
ক. কোন মুসলমান ভাইকে ব্যাঙ্গ করা থেকে বিরত থাকা।
খ. তাকে শ্লেষ না করা এবং তার অনুভূতিতে আঘাত হানা থেকে বিরত থাকা।
গ. যে নাম সে পছন্দ করেনা সেই নামে তাকে না ডাকা।
ঘ. বন্ধুদের গীবত না করা ও গোয়েন্দাগীরী এড়িয়ে চলা।
ঙ. বিনয়ী হওয়া ও চালবাজী বজ©ন করা।
চ. বন্ধুর কোন কাজের পিছনে অসৎ উদ্দেশ্য আরোপ বজ©ন করা।
ছ. এমন কাজ বজ©ন করা যা ভ্রাতৃত্বের পথে হুমকি স্বরুপ ‍ঃ অথা©ৎ মদ্যপান, জুয়াখেলা, ঠকবাজী ইত্যাদী বিষয়ে ইসলামী বিধানের দিকে খেয়াল রাখা।
জ. তিন বা তিনের অধিক মানুষ একত্রিত হলে যে কোন দুজন ব্যাক্তিগত আলাপচারিতায় মেতে উঠা ঠিক নয়, বিশেষ করে যদি সে কথোপকথন অন্যরা শুনতে না পায়।
য. যদি বাদানুবাদ দেখা হয়, তবে একজন দায়িত্ববান মুসলমানের কত©ব্য হবে সেটা মিটমাট করা।

জি-৬ সামাজিক দায়িত্ব-১
প্রশ্ন ‍ঃ
১. ধম© ও সামাজিক দায়িত্ব সম্পকে© ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি?
২. ইসলামে যে শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত পরিশুদ্ধির নিদে©শনা দেয়না বরং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিশুদ্ধির নিদে©শনা দেয়, এর সপক্ষে কোন প্রমাণ আছে কি?
৩. সমাজকে পরিশুদ্ধ করার কোন উপায় ইসলামে নিদে©শিত আছে কি?
৪. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ (আমরু বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনাকার) – এর ব্যাপারে ব্যাখ্যা কর?
৫. একজন মুসলিম কিভাবে সৎকাজের আদেশ করবে ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে? এ ব্যাপারে কুরআনে নিদি©ষ্ট আদেশ আছে কি?
৬. পূব©বতী© উত্তরে কয়েকটি পন্থার যে কোন একটি গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে- এর অথ© কি দাড়ায়?
৭. সামাজিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে সাধারণতঃ নীরবতা ও এড়ানোর চেষ্টা দেখা যায়। এটা কি গ্রহণযোগ্য?
উত্তরঃ
১. ধম© ও সামাজিক দায়িত্ব সম্পকে© ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি
ইসলাম আল্লাহর সাথে মনুষের সম্পক© সৃষ্টি করে এবং এই সম্পক©কে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করে। এটা এমন এক সম্পক© যা কালক্রমে ব্যাক্তির গোটা জীবনের সকল তৎপরতাকে প্রভাবিত করে, পরিশুদ্ধ করে। ইসলাম নিছক ব্যাক্তিগত অনুষ্ঠানাদি সব©স্ব ধম© নয়। এটা শুধু মানুষের সাথে আল্লাহর সম্পক©ই নিয়ন্ত্রণ করেনা; বরং মানুষে মানুষে সম্পক©ও নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষে মানুষে সম্পক© ও সমাজিক দায়িত্ব ছাড়া ইসলাম অসম্পূণ©। যে এটা ছাড়া ইসলামকে কল্পনা করে তার উদাহরণ এমন যে, কেউ বলল আমার একটা বাড়ি আছে, আসলে তার শুধুিএকটি বাড়ির ভিত্তি (Foundation) আছে।
২. ইসলামে যে শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত পরিশুদ্ধির নিদে©শনা দেয়না বরং গোটা সামাজের পরিশুদ্ধির নিদে©শনা দেয় কুরআন থেকে তার পক্ষে দলিল
এর পক্ষে সবচেয়ে বড় যুক্তি এই যে কুরআনের সকল আদেশ নিদে©শ এবং শিক্ষা সকল মানব বা মুমিনদের সম্বোধন করে বহুবচনে বলা হয়েছে, এক বচনে বলা হয়নি। নামাজ কায়েম করতে বলা হয়েছে যা একক ভাবে পালন করা সম্ভব নয়। একই ভাবে যাকাত সংক্রান্ত, মদ্যপান ও জুয়াখেলা থেকে বিরত থাকা সংক্রান্ত আদেশসহ প্রায় সব আদেশ নিষেধ বহুবচনে জারী হয়েছে। এসব উদাহরণ এটাই প্রমাণ করে মুসলমানদের ব্যাক্তিগত জীবন এমন ভাবে পরিশুদ্ধ করে যা চূড়ান্ত ভাবে সমাজকেও শুদ্ধ করে।
৩. ইসলামে নিদে©শিত সমাজকে পরিশুদ্ধ করার কোন উপায়
ইসলামে এজন্য তিনটি পন্থা রয়েছেঃ
ক. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মগঠণ যা ব্যাক্তিকে শুধুমাত্র দেশের বা সমাজের আদশ© নাগরিকই করেনা বরং পৃথিবীর আদশ© নাগরিকেও পরিণত করে।
খ. পরিবার, রাজনৈতিক সংগঠন ও আথি©ক প্রতিষ্ঠান প্রতিটি পরিচালনায় সুষম বিধান ইসলামে রয়েছে এবং এই
তিন এর সমন্বয়ে সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব।
গ. কুরআনে সকল মুসলমানকে নিদে©শ দেয়া হয়েছে সৎ কাজের কাজের আদেশ দিতে এবং অসৎ কাজে বাধা দিতে।
৪. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের ব্যাখ্যা
সূত্র নিদে©শিকা- আল কুরআন ৯:৭১, ৩:১০৪, ৩:১১০
“আমরু বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনাকার” সকল মুসলমানদের জন্য বাধ্যতা মূলক। যে সব বিশ্বাসী নারী পুরুষ সম্মিলিতভাবে অন্যায়কে প্রতিরোধ করে ও ন্যায় কায়েম করে তারা আল্লাহর দয়া লাভ করবে। যে সমাজ এই কাজ করবে আল্লাহর দৃষ্টিতে সফল সমাজ। কাজেই এটা নিশ্চিত হচ্ছে যে এই সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের প্রতিরোধ ইসলামের একটি মৌলিক বিধান, যার মাদ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর খলিফা হিসেবে পৃথিবীতে তাদের মিশন পূণ© করবে। কুরআন মুসলমানদের আরও সতক© করে দেয় যে, অতীতে যে সব জাতীর ভাল লোকেরা তাদের খারাপ লোকদের অন্যায় কাজে বাধা দেয়নি সেসব জাতির ওপর যখন আযাব দেয়া হয় তখন খারাপদের সাথে ভালদেরও রেহাই দেয়া হয়নি। প্রকৃত মুমীনরা সমাজ সংস্কারে সব©দা তৎপর থাকেন॥
৫. সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের পন্থা
রাসূল (সাঃ) বলেন, “তোমাদের কেউ অন্যায় কাজ হতে দেখলে সে যেন তার হাত দিয়ে তাতে বাধা দেয়। এর সামথ্য© না থাকলে সে যেন কথা দিয়ে চেষ্টা করে, তাও সমথ্য© না থাকলে অন্তরের মাধ্যমে। এটাই হচ্ছে ঈমানের দব©লতম প্রকাশ।”
৬. উপরের প্রশ্নের উত্তরে বণি©ত বিভিন্ন বিকল্প কম©পন্থার ব্যাখ্যা
উপরে বণি©ত হাদিস থেকে এটা বোঝা যায় যে, রাসূল (সাঃ) অন্যায়ের বিরুদ্ধে কম©পন্থা বলতে গিয়ে বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ থেকে দুব©লতম পয©ন্ত বণ©না করেছেন। তা হচ্চে-
প্রথমতঃ কাজের মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিরোধ(হাত); দ্বিতীয়ত কথার মাধ্যমে (যেমন- অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা) ; তৃতীয়ত‍ ‍ঃ হৃদয়ের মাধ্যমে (যেখানে মুসলমান অন্যায় দেখে কষ্ট পাবে কিন্তু কিছু করতে ক্ষমতাহীন)। যখনই কোন মুসলিম কোন অন্যায় দেখবে তখনই সে তার অবস্থা দেখে এবং সময়ের আলোকে এই হাদিসের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যদি কোন ব্যাক্তি দেখে একদল শিশু একটি পশুকে অত্যাচার করছে তার উচিৎ হবে প্রথমতঃ পশুটিকে মুক্ত করা। কারণ বাচ্চাদের পশুর প্রতি নমনীয় হবার উপদেশ দেয়ার চেয়ে সেটা অগ্রাধিকার পাবে। আবার কেউ যদি তার বন্ধুকে মদ্যপান করতে দেখে তবে সেখানে শক্তি প্রয়োগের চেয়ে আন্তরিকতার সাথে বুঝানো বেশী ফলপ্রসূ হতে পারে। সাথে সাথে এটাও মনে রাখা দরকার যে, সমাজের প্রতিষ্ঠিত অসৎদের শুধু মুখের কথায় পথে আনা যাবে না, এজন্যে সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও প্রতিরোধ আবশ্যক হবে।
৭. নীরবতা ও দায়িত্ব এড়ানোর প্রচেষ্টা সম্পকে© ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
সূত্র নিদে©শিকা- খালীফা ওমর (রাঃ) বলেণ, “আল্লাহ যেন তাকে দয়া করেন, যে আমাকে আমার ভুল ধরিয়ে দেয়।” আল কুরআন- ৮:২৫
ইসলামের দৃস্টিতে নীরবতা কখনই বিশ্বাসীদের জন্য সঠিক পথ হতে পারেনা। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যাক্তি অন্য বিশ্বাসীদের বিষয়ে উদাসীন সে তাদের অন্ত©ভুক্ত নয়। সাধারণতঃ তিনটি কারণে মানুষ দায়িত্ব এড়াতে চায়-
ক. বন্ধুত্ব হারানোর ভয়ে।
খ. অন্যদের মোকাবেলায় একা হয়ে যাবার ভয়ে।
গ. নীরবতা অথবা দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টায়।
প্রথম যুক্তি এজন্য গ্রহণযোগ্য নয় যে, নিজের দোষ ধরিয়ে দেয়া যারা পছন্দ করেনা তাদের আচরণ ইসলাম সম্মত নয়। এমন বন্ধু হারানোর কোন ক্ষতি নেইঅ আর দ্বিতীয় যুক্তি এজন্য গ্রহণীয় নয় যে, সবাই এই যুক্তি অনুসরণ করলে আজ পয©ন্ত পৃথীবিতে ভাল কিছু হতনা। মানুয়ের ভাল প্রচেষ্টার সাফল্যের মালিক আল্লাহি। কিন্তু প্রচেষ্টা ঠিকমত করা মানুষের দায়িত্ব। তৃতীয় যুক্তিকে কেউ এভাবে জায়েজ করতে চায় যে, নিজের পরিশুদ্ধির ও মুক্তি হলেই তা যথেষ্ট। কিন্তু এটাও গ্রহণ যোগ্য নয়। কেউ যদি মনে করেন অন্যায়কারীরা অন্যদের আক্রমণ করেচে, কাজেই আমার ভয়ের কিছু নেই তবে তা হবে নিজের দরজা পয©ন্ত আসার সুযোগ করে দেয়া। এটা ঠিক যে অনেক সময় ব্যাক্তিগত চেষ্টায় সমাজ থেকে অন্যায় উৎখাত করা যায়না। এজন্য সমন্বিত চেষ্টা দরকার।

জি- ৭ সামাজিক দায়িত্ব- ২
প্রশ্নঃ
১. সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের বিধান কি কুরআনে বণি©ত ‘ধমে© কোন জবরিস্তি নেই’- মূলনীতির বিরোধী নয়?
২. কোন মুসলমান যদি দাবী করে যে আমি নিজে সৎপথে আছি, এ অবস্থায় তাকে অহেতুক খারাপ লোকদের সাথে লড়তে যাবার দরকার নেই?
৩. ইসলামে এমন কোন নিশ্চয়তা আছে কি যার কারণে কেউ আল্লাহর কথাকে নিজ স্বাথে© ইচ্ছা মত ব্যবহার করতে পারবে না?
৪. সামাজিক দায়িত্ব কিভাবে বিধিবদ্ধ ইবাদত- বরে সাথে সম্পৃক্ত? এ দুটোর মধ্যে কোনটা অগ্রাধিকার পাবে?
৫. সামাজিক দায়িত্ব কিভাবে কাজে পরিণত হয় তার উদাহরণ দিন।
৭. সত্যিকার ইসলামী সমাজের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি?
উত্তরঃ
১. সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের সাথে ‘ধমে© কোন জবরিস্তি নেই’- মূলনীতির কথিত বিরোধ প্রসঙ্গে [সূত্র নিদে©শিকা- আল কুরআনঃ ২:২৫৬]
এটা একটা মহৎ বিধান যে ইসলাম ধম© গ্রহণের জন্য মানুষকে জার জবরদস্তি করার অনুমতি মুসলমানদের কুরআন দেয়নি। প্রত্যেকেরই তার স্ব স্ব ধম© পালনের স্বাধীনতা ইসলাম ইসলামী রাষ্ট্রে আছে। সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ এর মাধ্যমে এই স্বাধীনতা বিন্দু মাত্র ক্ষুন্ন হয়না। কোন সমাজই তার মধ্যে দুনী©তি পাপাচারকে অবাধে চলতে দিতে পারেনা। অসৎ দুনী©তিবাজ লোকের হাতে সমাজকে জিম্মি করে দিয়ে তাদের রক্ষার জন্য ধমে© কোন জবরদস্তি নেই বলার সুযোগ ইসলামে নেই । ইসলামে বণি©ত সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের মাধ্যমে দুষ্ট দুনী©তিবাজ ব্যাক্তিদের কবল থেকে সমাজের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা, ইজ্জত ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যায়।
২. বিভ্রান্তদের প্রতি বিশ্বাসীদের আচরণ [সূত্র নিদে©শিকা- আল কুরআনঃ ৫:১০৫]
কুরআনে একটি আয়াত আছে যে, অবিশ্বাসীরা কি করল তা মুমীনদের দেখার বিষয় না(৫:১০৫। এর প্রকৃত অথ© হচ্ছে কোন ব্যাক্তি যে ঈমান আনে নি, আবার তার কাজ বা তৎপরতা দিযে সে সমাজের কোনও ক্ষতি করেছেনা, মানুষের অিধিকারও নষ্ট করছেনা এব্যাপারে মুমিনদের করার কিছু নেই। কিন্তু যদি একজন অবিশ্বাসী তার কম©কান্ডের মাধ্যমে ইসলামী সমাজের বা ধমে©র গোড়ায় আঘাত হানে তবে তার ব্যাপারে নিলি©প্তি থাকা ইসলাম সম্মত নয়। হযরত আবু বকর (রাঃ) এর খেলাফতের যুগে যখন কিছু মুসলমান পূবে© উল্লেখিত কিছু আয়াতের কথা বলে নিস্ক্রিয় থাকতে চেয়েছিল তখন তিনি তাদেরকে রাসূলের (সাঃ) এই হাদিস বলে সতক© করে দেন যে সমাজে ক্ষতিকর কিছু হতে থাকলে মুসলমানরা যদি নিস্ক্রিয় বসে থাকে তবে আল্লাহর আযাব সবাইকে গ্রাস করবে।
৩. আল্লাহর কথাকে নিজ স্বাথে© ইচ্ছা মত ব্যবহারের বিরুদ্ধে ইসলামের ব্যাবস্থা
যে কোন ধমে©র ক্ষেত্রে এই গ্যারান্টি দেয়া কঠিন যে, তার অনুসারীরা কেই স্রষ্ঠার কথাকে নিজ স্বাথ্যে ব্যাবহার করবে না। ইসলামও এর ব্যাতিক্রম নয়। তবে এক্ষেত্রে ইসলামে এমন এক অনুপম ব্যাবস্থা আছে যাতে কেউ তার অপকমে©র ব্যাখ্যা হিসেবে এটা বলতে পারবে না যে সে আল্লাহর ইচ্ছায় এমন কাজ করেছে। ইসলামের মূলনীতি সমূহের আলোকে এমন ব্যাক্তির কাজ এবং দাবী যে অবৈধ তা প্রমাণ করা যায়। ইসলামে একমাত্র ওহী (প্রত্যাদেশ যা নবী রাসূলরা লাভ করেন) ছাড়া আল্লাহর সরাসরী আদেশের সুযোগ কারো নেই।
আল্লাহর সরাসরী আদেশ একমাত্র কুরআনেই আছে যার ব্যাখ্যা রাসূল (সঃ) এর হাদিসে পাওয়া যায়।
৪. সামাজিক দায়িত্ব ও আনুষ্ঠানিক ধমা©চার [সূত্র নিদে©শিকা- আল কুরআনঃ ২:১৭৭]
ইসলামে ধমী©য় আচার অনুষ্ঠান শুধু নিদি©ষ্ঠ কিছু আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ নয়। কুরআনে সৎপন্থা (হক্ক) বলতে বুঝায় আল্লাহর প্রতি ঈমান, দরিদ্রদের দান ও যাকাত আদায় (সামাজিক ন্যায় বিচার), নামাজ, রোজা (আনুষ্ঠানিক ইবাদত) , ওয়াদা রক্ষা করা, সঙযম, অদ্যবসায় ও সামাজিক দায়িত্ব সম্পন্ন হওয়া। যেহেতু এগুলো সবই ইসলামের বণি©ত হক্ক এর অন্ত©ভূক্ত সেহেতু ইসলামে সামাজিক দায়িত্ব ও আনুষ্ঠানিক এবাদতকে পৃখত করার সুযোগ নেই।
৫. সামাজিক দায়িত্ব কিভাবে কাজে পরিণত হয় [সুত্র নিদে©শিকা- আল কুরআনঃ ৫:১২
সামাজিক ঐক্য ও সংহতিই মানুষের সামাজিক দায়িত্ববোধকে সম্মিলিত করে বৃহৎ কাজে পরিণত করে।
নিন্মলিখিত উপায়ে সমাজে ঐক্য ও সংহতি আসেঃ
ক. পরিবারঃ কারণ পরিবার হরো সমাজের একক। পরিবারের সদ্স্যদের মাঝে ঐক্য, ভালোবাসা এবং আকষ©ণ সমাজে সঞ্চালিত হয়। আবার পরিবার গুলোতে বিরাজমান অবিশ্বাস ও অশান্তি সমাজকেও আক্রান্ত করে। ইসলাম পরিবার রক্ষার উপর জোর দেয়।
খ. কম©ক্ষেত্রঃ ‍প্রত্যেক মুসলমান কম©ক্ষেত্রে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে।
গ. সমাজঃ সমাজে প্রত্যেক মুসলমান নিজেকে সমাজের দায়িত্বশীল হিসেবে চিন্তা করে এর স্বাথ© সংরক্ষণ করবে।
ঘ. সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখার ব্যাপারে সবাই সহযোগিতা করবে।
ঙ. সমাজিক সচেতনতাঃ রাসূল (সাঃ) বলেন, “ঐ ব্যাক্তি ঈমানদার নয় যে তার প্রতিবেশীকে অভূক্ত রেখে নিজে পেট ভরে খেয়ে ঘুমাতে যায়।
৬. সত্যিকার ইসলামী সমাজের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো [সূত্র নিদে©শিকা – আল কুরআনঃ ৮২:৭, ৪:৫৮]
আল্লাহ পৃথিবী এবং মানব জাতিকে যে ভারসাম্যপূণ©ভাবে সৃষ্টি করেছেন তার বণ©না দিতে ‘আদল’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এই একই শব্দ মানুসে মানুষে সম্পক© ও সামাজিক ভারসোম্যর ব্যাপারে আদেশ দেয়ার সময় ব্যবহৃত হয়েছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের কুরআন আদেশ দেয় রাষ্ট্র পরিচালনায় মধ্যপন্থা অবলম্বন করকে, আথ©ক ন্যায়নীতি ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে, সমাজের এক অংশ যেন আরেক অংশের উপর শোষণ অবিচার না করে তা নিশ্চিত করতে হবে। বিচারকদের ন্যায়বিচার করতে হবে।
৭. সত্যিকার ইসলামী সমাজের মূল বৈশিষ্ট্য
ক. সমাজের তথা জগতের মূল কতৃ©ত্ব আল্লাহর হাতে।
খ. আল্লাহর আধ্যাত্মিক বিধান অনুযায়ী সমাজ পরিচালিত হবে।
গ. সমাজ পরিচালিত হবে আল্লাহর দেয়া মানব কল্যাণ ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক মিশন সফল করতে।
ঘ. সমাজ হবে ভারসাম্যপূণ© ও ন্যায়নীতি সমৃদ্ধ। তাতে আত্মিক ও পাথি©ব উভয় দিয়ে উন্নতির ব্যবস্থা থাকবে। সমাজে প্রতিটি সদ্স্যদের মযা©দা, সম্মান নিরাপত্তা নিশ্চি থাকবে।

জি- ৮ দাস প্রথার অবসান প্রসঙ্গে- ১
প্রশ্নঃ
১. রাসূল (সাঃ) যখন তার মিশন শুরু করেন তখন ক্রীতাদাস প্রথা কোন অবস্থান ছিল?
২. ক্রীতাদাস মুক্ত করতে ইসলামের মানবিক আবেদন সম্পকে© বলুন।
৩. ক্রীতাদাস সম্পকে© ব্যবহার সংক্রান্ত এবং তাদের অধিকার রক্ষায় ইসলামে আর কোন শিক্ষা আছে কি?
৪. এসব শিক্ষা কি মুসলমানদের উপর কি কোন লক্ষ্যনীয় পরিবত©ন আনতে সক্ষম হয়েছিল?
৫. ব্যাক্তি পযা©য়ে আবান ছাড়া দাস প্রথা উচ্ছেদ ইসলামে কোন আইনগত ব্যবস্থা ছিল কি?
৬. ইসলাম সরাসরি দাস প্রথা উচ্ছেদ করেনি কেন?
৭. রাসূল (সাঃ) এর জীবদ্দশায় যেমন মদ্যপান নিষিদ্ধ করা হল, তেমনি তার জীবদ্দশায় দাস প্রথা উচ্ছেদ করা হলো না কেন?
উত্তরঃ
১. রাসূল (সাঃ) এর মিশনের শুরুতে দাস প্রথার অবস্থা
সপ্তম শতকে যখন রাসূল (সাঃ) তার মিশন শুরু করেন তখন দাস প্রথা বহুলভাবে চালু ছিল, যদিও তার ধরণ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ছিল। তিনভাবে ক্রীতদাস সংগৃহীত হত। যথা- ১. যুদ্ধবন্দী, ২. অপহরণ, ৩. ঋণগ্রস্ত মানুষ যখন ঋণ পরিশোধ করতে পারত না তখন মহাজনরা তাকে দাস বানাত। এটা ছিল এমন এক ছিল যখন দাসরা প্যণের মত ব্যবহৃত হত। নিম©ম নিযা©তনের শিকার হত। মালিক তার দাসকে ইচ্ছামত মারার এমনকি হত্যা করার অধিকার রাখত। রোমানদের মধ্যে তো দাস হত্যা একটি আনন্দদায়ক খেলা ছিল। এমন সময়ে ইসলামের ‍অভূদ্যয় শুধু দাসপ্রথার উচ্ছেদই সূচনা করেনি বরং মানুষের অন্তরে এমন পরিবত©ন আনে যা দাস এবং তার মালিক উভয়ের মধ্যে সাম্যতার অনূভূতি নিয়ে ‍আসে। উভয়ের মাঝে মানব সাম্য প্রতিষ্ঠা করে।
২. দাস প্রতা উচ্ছেদে ইসলামের মানবিক আবেদন
[সূত্র নিদে©শিকা- আল কুরআনঃ ৪:১, ২:২২১, ৪:২৫]
প্রথমতঃ ইসলামের মূল কথা হচ্ছে মানুষ আল্লাহ ছাড়া আর কারো দাসত্ব করবে না। ইসলাম অথ© আল্লাহকে আত্মসমপণের মাধ্যেমে শান্তি অজ©ন।
দ্বিতীয়তঃ কুরআন বলে সকল মানুষ এক আত্মা থেকে সৃষ্ট। একথা আবার হাদিসে এভাবে সমথি©ত আছে যে সকল মানুষ হচ্ছে আদম (আঃ) হতে উদ্ধুত এবং আদম (আঃ) মাটি থেকে সৃষ্ট ; এ থেকে মানব সমতা ও ভ্রাতৃত্বের যে দশ©ণ উৎসারিত হয় তা মানুষ কতৃ©ক মানুষের দাসত্বের ধারণাকে উৎখাত করে। সবো©পরী ইসলাম ‍ এ্ই শিক্ষাই দেয় যে আল্লাহ শুধুমাত্র বৈচিত্র্য সৃষ্টির জন্যই মানুষকে বিভিন্ন বণ©, ভাষা, গোত্র ও জাতিতে ভাগ করেছেন; কারো উপর কারো প্রভুত্বের জন্য নয়। তদুপরি আল্লাহর দৃষ্টিতে সেই শ্রষ্ঠ্ যে বেশী তাকওয়া (খোদাভীতি সম্পন্ন)। রাসূল (সাঃ) মুমীনদের ভাল বংশের অবিশ্বাসী নারীকে বিয়ে করার চেয়ে বিশ্বাসী দাসীকে বিয়ে করতে উৎসাহিত করেছেন॥ ইসলামের এসব ব্যাবস্থা মানুসের মন থেকে দাসপ্রথার অনূকূল দশ©ণকে ভ্রাতৃত্ব ও সমতার অনূভুতি
দিয়ে প্রতিস্তাপিত করে। এরপর যা অবশিষ্ট থাকে তা মূলতঃ অন্ত©বতী©কালীন ব্যাবস্থা।
৩. দাসদের সাথে ব্যবহার সংক্রান্ত ইসলামের শিক্ষা
[সূত্র নিদে©শিকা- আল কুরআনঃ ৪:৩৬, ২:২৫৬]
কুরআন হাদিসে দাসদের সাথে সুব্যবহারের সংক্রান্ত অসখ্য নিদে©শনা রয়েছে। কুরআনের আল্লাহর উপর বিশ্বাসের সাখে সুব্যবহারের কথা এক বাক্যে এসেছে। কুরআন দাস প্রথাকে এক অন্ত©বতী©কালীন ব্যাবস্থা হিসেবেই নিদে©শিত করে। এক হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেন, দাসরা তোমাদের ভাই, আল্লাহ যদি চাইতেন পরিস্থিতি উল্টে করে ও দিতে পারতেন (অথা©ৎ মালিক নিজে দাস ও দাস মালিক হতে পারত)। ইসলামে দাসদের নিদি©ষ্ট যে অধিকার দেয় তা হচ্ছে-
ক. তাদের নিজস্ব ধম© অক্ষুন্ন রাখতে এবং তা চচা© করতে।
খ. খাদ্য ও বস্ত্রের অধিকার। মালিক যা খাবে এবং পরবে দাসদেরও তা খেতে এবং পরতে দিতে হবে। তাদের সাধ্যাতীত কোন কাজ দেয়া যাবে না। যদি মালিকের কোন কঠিন কাজ থাকে তবে ঐ কাজে মালিক নিজে সাহায্য করতে হবে।
গ. মালিক তার দাসের প্রতি ক্ষমা সুলভ হবেন।
ঘ. একজন প্রাক্তন ক্রীতাদাস মুসলমানদের নেতা হতে পারেন এবং তিনি নামাজে ইমামতি করতে পারেন। এক্ষেত্রে তার আনুগত্য করা সব মুসলমানের দায়ত্ব।
ঙ. রাসূল (সাঃ) শিখিয়েছেন যে, কেউ তার দাসদের আমার দাস বা আমার লোক এভাবে না ডেকে আমার পুত্র বা আমার কণ্যা এভাবে ডাকবে।
৪. এসব শিক্ণা কিভাবে মুসলমানদের আচরণ পরিবত©ণ করবে
ইসলামের মানবিক আবেদন যে তৎকালীন আরববাসী মুসলমানদের আচরণে বৈল্পবিক পরিবত©ন এনেছিল তার অসংখ্য দৃষ্টান্ত আছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, প্রথমদিকে ইসলাম কবুলকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হযরত বেলাল (রাঃ) যিনি ছিলেন একজন হাবশী গোলাম। তাঁর মালিক যখন ইসলাম কবুল করায় তার উপর চরম অত্যাচার চালাচ্ছিল তখন হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) তাকে দ্বিগুণ দামে কিনে নেন এবং মুক্ত করেন। পরবতী©তে তিনি সাহাবায়ে কেরামদের মাঝে গুরুত্বপূণ© অবদান রাখেন। তিনি ছিলেন ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন। একদিন মানুষ দেখলেন আবু বকর (রাঃ) তাঁর ক্রীতাদাসের চেয়ে ও কমদামী পোশাক পড়ে আছেন। লোকজন যখন তাকে এ ব্যাপারে জীজ্ঞাস করল তখন তিনি বললেন যে তিনি একজন বৃদ্ধ মানুষ কিন্তু ক্রীতাদাস তো যুবক। তার ভাল কাপড় পড়তে শখ হয়েছে তাই নিজে কমদামী পড়ে ক্রীতাদাসকে দামী কাপড় দিয়েছেন॥ একজন সাহাবী আবু বকর (রাঃ) একজন কালো মানুষের সাথে ঝগড়ার এক পযা©য়ে রেগে বললেন, তুমি একজন কাল মায়ের পুত্র। একথা শুনে রাসূল (সাঃ) ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, “কাল এবং ফসা© মায়ের পুত্রের মধ্যে কোন পাথ©ক্য নেই।” রাসূলের এই নসীহত শুনে সাহাবী ‌আবু বকর (রাঃ) এত হলেন যে, তৎক্ষনাৎ বালতে শুয়ে গিয়ে নিজের মুখে ঐ কালো ব্যাক্তির পা রাখতে বললেন।
এছাড়াও আরও বলা যায় তৎকালীন ধনী মুসলমানরা দাস কিনতেন তাদের মুক্ত করার জন্য। আর অনেক প্রাক্তন দাস ইসলামী রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূণ© আসন লাভ করেছিল।
৫. দাস প্রথা উচ্ছেদে ইসলাম গৃহীত আইনগত ব্যাবস্থা
ক. দাসদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিল। দাস পরিবারের কারো বিরুদ্ধে আক্রমণ মোকেবেলায় পুরা পরিবার ব্যবস্থা নিতে পারত।
খ. দাস প্রথাকে মুক্ত করাকে আখেরাতের অনত্যম মুক্তির উপায় বলে উল্লেখ করে কুরআনে দাস প্রথা উচ্ছেদের সূচনা করে।
গ. বিভিন্ন পাপোর জরিমানা (কাফপারা) হিসেবে কুরআনে দাসমুক্তির কথা উল্লেখ করে। যেমন- অনিচ্ছাকৃত হত্যা, ওয়াদা ভঙ্গ, ইচ্ছাকৃত ভাবে রোযা ভঙ্গ এবং আদজিহার- এর মাধ্যমে তালাক। এভাবে যখনই কেউ এসব পাপ করত তখন সে তার কাফফারা হিসেবে দাসমুক্ত করতে। এছাড়াও এ বিধান ছিল যে কেউ ঠাট্টাবশতঃ কোন দাসকে যদি বলত, তুমি মুক্ত হবে, সে মুক্ত হয়ে যেত।
৬. ইসলাম এককথায় দাস প্রথা নিষিদ্ধি করেনি কেন
প্রথম প্রশ্নের উত্তরে আমরা দেখেছি যে সপ্তম শতকে বিশ্ববাসী দাসপ্রথা এক দৃঢ় আথিক সামাজিক ও রাজনৈতিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। সেই অষ্টাদশ শতকে আমেরিকায় যখন দাস প্রতা উচ্ছেদ করা হল তখনকার গৃহযুদ্ধ এবং কমচুত্য দাসদের বেকারত্ব ও দারিদ্রের কথা আমরা ভূলে যাইনি। কাজেই দাসপ্রথা উচ্ছেদের আগে তৃণমূল পাযায়ে কাজ করার দরকার ছিল। এ ব্যাপারে ইসলাম সফল ছিল। ইসলাম মানুষের মনকে দাসপ্রথার অনূকূলে নিয়ে যায়। তার উপর দাস এর উৎস ইসলাম বন্ধ করে দেয়। যেমন মানুষকে দাসত্বের জন্য অপহরন করা নিষেধ করা হয়। ঋণগ্রস্ত ঋণ শোধে রাষ্ট্র এগিয়ে আসে আর যুদ্ধবন্দীদের মুসলিম যুদ্ধবন্দীদের সাথে বিনিময় ও পণ্যের মাধ্যমে মুক্তির ব্যবস্থা করা হয়। এসব কারণে ইসলামের অভ্যুদয়ে দাসের উৎস বন্ধ হয়।
৭. রাসূল (সাঃ) এর জীবদ্দশায় দাসপ্রথা নিষিদ্ধ হল না কেন
যদিও রাসূল (সাঃ) এর জবদ্দশায় মদ্যপান নিষিদ্ধ হয়, তবুও তার জীবদ্দশায় দাসপ্রথা নিষিদ্ধ হয়নি। কারণ
মদ্যপান ছিল ব্যাক্তিগত সমস্যা, যা ব্যাক্তি পরিশুদ্ধির মাধ্যমে চুড়ান্ত নিষেধাজ্ঞার আগেই সীমাবদ্ধ হয়ে ছিল।পক্ষান্তরে দাসপ্রথা ছিল একটি গভীর সামাজীক সমস্যা, এমনকি রাসূল (সাঃ) মৃত্যূর এক প্রজন্ম পরেই অনেক মুসলমান দাসদের ব্যাপারে আইনভঙ্গ করতে শুরু করে।

জি- ৯ দাসপ্রথার অবসান প্রসঙ্গে- ২
প্রশ্ন:
১. এটা ক সত্য যে ইসলামী যুদ্ধবন্দী ছাড়া আর সব দাসের উৎস বদ্ধ করেছিল?
২. যদিও ইনলাম দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করেনি কবুও এমন কোন প্রমাণ আছে যাতে বুঝা যায় ইসলাম এটাকে একটা অন্ত©বতী©কালীন ব্যবস্থা হিসেবে বহাল রেখেছিল?
৩. দাসী প্রশ্নে ইসলামের অবস্থান কী?
৪. ইসলামে দাসের পক্ষে নিজেকে মুক্ত করার কোন সুযোগ ছিল কি? নাকি সে মালিকের ইচ্ছার অধীন ছিল?
৫. মুক্তি মূল্য গ্রহণের বিনিময়ে দাসের মুক্তি দিতে মালিক কি বাধ্য?
৬. কিভাবে একজন দাস তার মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় অথ© সংগ্রহ করবে?
উত্তরঃ
১. এটা ক সত্য যে ইসলামী যুদ্ধবন্দী ছাড়া আর সব দাসের উৎস বদ্ধ করেছিল?
এটা সত্য ইসলাম শুরুতেই যুদ্ধবন্দী ছাড়া আর সব দাসের উৎস বন্ধ করে দিয়েছিল। যদিও মুসলমানরা কখনও শান্তিকামী মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনা। তারা জাতীয়তা অথবা প্রভুত্ব কায়েমের জন্য অথবা তাদের রাজ্যের সীমানা বাড়তে যুদ্ধ করেনা । তারা এ উদ্দেশ্যে অন্য রাজ্যে আক্রমণ করেনা যে সেখান থেকে মানুষ ধরে দাস বানাবে। ইসলামী আইনে শুধু দুটো ক্ষেত্রে যুদ্ধের অনুমোদন আছে-
ক. আগ্রাসন প্রতিহত করার জন্য।
খ. নিযা©তিত মানুষকে উদ্ধার করতে।
এসব যুদ্ধে মুসলমানরা যাদের বন্দী করত তরা মূলতঃ আগ্রাসী বা হামলাকারী। কাজেই এদর বন্দী করার যৌক্তিক কারণ আছে। এদের ব্যাপারে ইসলামের নীতি ছিল যে এদর সাথে প্রথমত: সৎ ব্যবহার করতে হবে। দাসত্বই তাদের একমাত্র পরিণতি ছিল না। মুসলিম বন্দীর সাথে বিনিময়, অথ© মূল্যে মুক্তি এবং মুসলমানদের লেখাপড়া শেখানোর বিনিময়ে মুক্তির ব্যবস্থা ছিল। তারপরও এটা বলা যায় যে তখন এমন একটা যুগ যখন জেলখানা গড়ে উঠেনি। ফলে যুদ্ধবন্দীদেরকে যুদ্ধে অংমগ্রহণ কারী কোন মুসলমানের জিম্মায় দেয়া ছাড়া উপায় ছিল না।
২. ইসলাম যে দাস প্রথাকে অন্ত©বতী©কালীন ব্যবস্থা হিসেবে নিয়েছিল তার প্রমাণ
[সূত্র নিদে©শিকা- আলকুরআনঃ ৪৭:৪]
প্রথমতঃ ইসলাম যুদ্ধবন্দী ছাড়া আর সব দাস সংগ্রহের উৎস বদ্ধ করে দিয়েছিল। অতঃপর যুদ্ধবন্দীদের ব্যপারে কুরআনে নীচের দুটো ব্যবস্থা নিতে বলে-
ক. তাদের নিঃশত© মুক্তি ও ক্ষমা।
খ. অথে©র বিনিময়ে অথবা মুসলিম যুদ্ধবন্দীর বিনিময়ে তাদের মুক্তি দেয়া অথবা মুসলমান সমাজের উন্নয়নে তাদের মেধা বা শ্রম খাটাবার বিনিময়ে মুক্তি দেয়।
৩. দাসীদের ব্যাপারে ইসলামের অবস্থান
ঐতিহাসিকদের মতে প্রাচীন সেমেটিকদের মধ্যে এই প্রথা ছিল। নারীদের বিশেষ দাসত্ব ইসলামে অন্যসব দাসত্বের মতই গ্রহণযোগ্য নয়। দাস প্রথা অবসানে ইসলাম যেমন ব্যাবস্থা নিয়েছে , তেমনি এই ঘৃণ্য ব্যবস্থার ব্যাপারেও ইসলাম একই ব্যাবস্থা নিয়েছে।
ইসলাম নারী যুদ্ধবন্দীদের সাথে সাথে পুরূষ যুদ্ধবন্দীদের মতই ব্যবহার করতে বলেছে। নারী যুদ্ধবন্দীদের বিপদের সম্ভবনা বেশী কারণ তারা প্রায়ই পিতা/মাতা/ভাইকে যুদ্ধে হারায়। ফলে তারা আথি©ক নিরাপত্তা সংকটে পড়ে পতিতাবৃত্তির শিকার হতে পারে। এসব বিপদের কথা চিন্তা করেই ইসলাম তাদেরকে অনুমোদিত বসবাসের সুযোগ দিয়েছে। এই অনুমোদিত বসবাসের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
ক. অনুমোদিত বসেবাসের সুযোগটা প্রায় বিয়ের অনুরূপ কিছু আলেম মনে করেন যে, বিবাহ ছাড়া এরকম মিলনের অনুমতি ইসলামে নেই। (দ্রষ্টব্যঃ মুহাম্মদ আসাদ, ‘দি মেসেজ আব দি কুরআন’ টি কা২৬, সুরা নিসা- অনুবাদক) মহিলা বন্দী প্রায় সকল বিষয়ে স্ত্রীর মযা©দা ভোগ করত।
খ. বৈধ বিয়ের সাথে এর একটি মাত্র পাথ©ক্য ছিল যে স্ত্রীর মতামত (কবুল) এর প্রয়োজন থাকত না। যুদ্ধোত্তর ভয়াভহ পরিস্থিতির মধ্যে এমটা হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
গ. মহিলা ‘বন্দী’ হিসেবে থাকত না বরং সব ধরণের চলাফেরার স্বাধীনতা পেতেন, এবং ভরণ পোষণ নিরাপত্তাসহ নিরাপত্তা পেতেন।
ঘ. প্রাচীন যুহের মহিলা বন্দীদের মত অগণিত সৈন্যদের ভোগ লালসার স্বীকার হত না বরং একজন স্বামী সংসার দুটোই পেত। এত মহিরা বন্দী এবং সৈনিক উভয়েই যৌন উচ্ছৃঙ্খলতার সম্ভাবনা থেকে মুক্ত হত।
ঙ. দাসীদের মত এদের সন্তানরা দাস হতনা বরং মহিলা বন্দীর কোন সন্তান হলে সে হত মুক্ত।
৪. দাসদের পক্ষে নিজেকে মুক্ত করার সুযোগ
সব©প্রথম ইসলাম ‘মুকতাবা’ নামের এক স্কীম ঘোষণা করে। যার মাধ্যমে ক্রীতদাস তার মালিকের সাথে আলাপ করে উভয়ে আলাপ করে একটি মুক্তিমূল্য ঠিক করবে এবং ক্রীতদাস ধীরে ধীরে উক্ত অথ© পরিশোধ করে মুক্ত হবে। এভাবে মুকতাবা দাসমুক্তির সূচনা করে।
৫. মুক্তিমূল্য গ্রহণের বিনিময়ে দাসের মুক্তি দিতে মালিক কি বাধ্য
[সূত্র নিদে©শিকা- আলকুরআনঃ ২৪:৩৩]
(মালিক কি পূবে©র চুক্তি অমান্য করতে পারে)
কুরআনের যে আয়াতে মুকতাবার বিনিময়ে দাসমুক্তির প্রসঙ্গ এসেছে সেখানে আদেশ সূচক বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘তাদের মুক্তি দাও’; এমন বলা হয়নি যে তাদের মুকতাবার বিনিময়ে মুক্তি দিতে পার। বরং কুরআনে মালিককেই এই আদেশ দেয়া হয়েছে যে, সে যেন দাসকে তার মুক্তি মূল্য অজ©নে সাহায্য করে। দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) তার একজন সহযোগীকে যিনি মুকতাবা অস্বীকার করতে চাইছিলেন, তাকে অবিলম্বে দাস মুক্ত করার আদেশ দেন। যদি কুরআনের আইনে এমন বাধ্যবাধকতা না থাকত তবে খলিফা এমন আদেশ করতেন না।
৬. দাস কিভাবে তার মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় অথ© সংগ্রহ করবে
[সূত্র নিদে©শিকা- আলকুরআনঃ ৯:৬০]
কুরআন যাকাত বিতরণের কিছু নিদি©ষ্ট খাত উল্লেখ করেছে যার একটি হল ‘ক্রীতাদাস মুক্ত করা’ কাজেই প্রত্যাশী ক্রীতাদাস যাকাতদাতা মুসলমানদের কাছ থেকে সহজেই যাকাত সংগ্রহ করে তার মুক্তিমূল্য অজ©ন করতে পারত।

জি- ১০ ইসলামে পরিবারের গুরূত্ব- ভূমিকা
প্রশ্ন ‍ঃ
১. পরিবারের গুরূত্ব কি এবং ইসলামের সামগ্রিক ব্যবস্থায় এর অবস্থান কোথায়?
২. ইসলামে পরিবারের গুরূত্ব আলোচনায় মূলতঃ কোন বিষয় গুলো আসে?
৩. ইসলামী মতে পরিবারের সংজ্ঞা কী?
৪. এটা কি সত্য যে মুসলিম পরিবার মূলথঃ একটি বধি©ত পরিবার?
৫. কেই যদি বলে পরিবারের দায়িত্ব কত©ব্য সম্পক© নিয়ন্ত্রণে কোন আইনের প্রয়োজন?
৬. ইসলামে পরিবারিক কাঠামোতে রক্ত সম্পকেলর ভূমিকা কি?
৭. কোন পালিত সন্তানের পিতৃপরিচয় পাওয়া না গেলে পালনকারীর পরিবারের নামে তার নাম রাখা যাবে কিনা?
৮. সন্তান পালক ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ না অবৈধ?
৯. ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবারের মূল উদ্দেশ্য কি?
উত্তরঃ
১. ইসলামে পরিবারের গুরূত্ব
ইসলামে পরিবারকে একক (The cornerstone of social system) হিসেবেই চিন্তা করে। পরিবারের শান্তি, ঐক্য ও সংহতি সমাজকেই সুসংহত ও শান্তিময় করে। আবার পরিবারের বিপয©য় সমাজে বিপয©য় আনে। পরিবারের দুব©লতা শুধুমাত্র কিশোর অপরাধ, ড্রগ মাদকাসক্তি, অবাধ যৌনাচার ও তালাকেরই সৃষিবট করেনা বরং সমাজ ব্যবস্থারও ধংস্বের সূচনা করে।
২. ইসলামে পরিবারের গুরূত্ব সংক্রান্ত আলোচনায় মূলতঃ যেসব প্রসঙ্গ আসে
ক. পরিবারের সঙজ্ঞা, রক্তের সম্পক© এবং পালিত সন্তান সংক্রান্ত।
খ. পরিবারের ভিত্তি ও কেন্দ্র হিসেবে নারীর ভূমিকা।
গ. ইসলামে নারীর মযা©দা ও গুরূত্ব।
ঘ. পরিবারের গঠন।
ঙ. পরিবারে পিতা-মাতা ও সন্তানের পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব ও কত©ব্য।
চ. পারিবারিক সমস্যা: বৈবাহিক সমস্যা, তালাক ও পুন©বিবাহ।
ছ. ইসলামের উত্তারাধিকার সংক্রান্ত আইন।
৩. ইসলামে পরিবারের সংজ্ঞা [সুত্র নিদে©শিকা- আল কুরআনঃ ৪:১, ৪৯:১০]
ইসলামে সাধারণভাবে সমগ্র মানব জাতিকে এক পিতামাতার সন্তান হিসেবে এক পরিবার রূপে বণ©না করা হয়েছে। কুরআন প্রায়ই মানব জাতিকে ‘আদমের (আঃ) সন্তান’ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে। এরপর ঈমানদারকে এক পরিবারের সদস্য হিসেবে বলা হয়েছে। উম্মাহ অথ© এক আল্লাহ এবং কিতাবসমূহ ও নবী-রাসূলের উপর ঈমান আনেন। সবো©পরি ইসলামে পরবিার বলতে বিবাহিত ও রক্তের সম্পকে© আবদ্ধদের বোঝানো হয়েছে।
৪. মুসলিম পরিবার কি প্রকৃত অথে© বধি©ত পরিবার (Extended Family)
নিউক্লিয়াস পরিবারের ধারণাটি মূলত আধুনিক পাশ্চাত্য সমাজের। যেখানে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানরাই থাকেন। বধি©ত পরিবারের ধারণাটি প্রাচ্য দেশীয় যার অন্ত©ভূক্ত হচ্ছে সন্তা, পিতামাতা, পিতামহ-মাতামহ এবং কখনো কখনো এক বাড়িতে বসবাসরত জ্ঞাতি ভাইতের পরিবারসমূহ। মুসলিম পরিবার নিউক্লিয়াস অথবা
বধি©ত পরিবার কোনটি হবে এমন কোন আদেশ ইসলামে নেই। এখানে স্বামী স্ত্রী তাদের সন্তান ও সন্তানের পিতামহ-মাতামহ নিয়েই সাধারণতঃ পরিবার গঠিত হয়। এছাড়া দ্বিতীয় ধারা বা তৃতীয় ধারার আত্মীয়রাও একই পরিবারের অন্ত©ভূক্ত হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা ইসলামে নেই। ইসলামে প্রথম ধারার আম্মীয়দের অধিকারের ব্যাপারে সুদিদি©ষ্ট বিধি বিধান আছে, যা অন্যদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাজহাবে বিভিন্নভাবে উল্লিখিত।

৫. পারিবারিক সম্পক© নিয়ন্ত্রণে আইনের প্রয়োজন কেন
যদিও পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক দায়িত্ব কি হবে তা মানুষ সহজাতভাবেই অবহিত, তবুও এই সহজাত প্রবৃত্তিকে স্বাভাবিক ভাবে পরিচালিত করতেই আইনের প্রয়োজন। পরিবারের সকল সদস্যদের অধিকার রক্ষায় গ্যারান্টি হিসেবেই আইন আবশ্যক। নচেৎ কোন স্তানের বেশি আবেগবশতঃ বাবা-মা অন্য সন্তানকে বঞ্চিত করে বসতেও পারেন। মুসলিম পারিবারিক আইন পরিবারের সকল সদস্যদের নূন্যতম অধিকার রক্ষার নিশ্চয়তা দেয়। এজন্য ইসলামে পরিবারের সদস্যদের সম্পক© সহজান অনূভূতি ও আইন-উভয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ণা করে তৈরি হয়।
৬. ইসলামের পারিবারিক কাঠামোতে রক্ত সম্পকে©র ভূমিকা
[সুত্র নিদে©শিকা- আল কুরআনঃ ৩৩:৪-৬]
মুসলিম পরিবারে রক্ত সম্পকে©র ভূমিকা অপরিসীশ। কারণ এ থেকেই পরিবারের সদস্যদের সম্পক© এবং পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব ও কতৃ©ব্যেরবিধান সৃষ্ট। ইসরামের গুরূত্বপূণ© বিধান হচ্ছে কেই তার পালক সন্তানকে নিজের সন্তান রূপে দাবী করতে পারবে না। কোন পালক সন্তানও নিজেকে তার পালক পিতা-মাতার সন্তান বলে দাবী করতে পারবে না।
এক্ষত্রে ইসলামের আর দুটি বিধান হচ্ছে যে ‍ঃ
ক. কেউ তার নিজ পরিবারের নামে পালিত সন্তানের নাম রাখতে পারবে না।
খ. কেউ প্রাচীন যুগের ‘আজ-জিহার’ পন্থায় তালাক দিতে পারবে না (স্বামী রাগের বশে স্ত্রীকে বলবে তুমি আমার মায়ের মত তাহলে তালাক হয়ে যাবে) কারণ এটা মিথ্যাচার।
৭. পালিত সন্তানের পিতৃপরিচয় পাওয়া না গেলে পালক পিতা-মাতার পারিবারের নামে তার নাম রাখা যাবে কি? [সুত্র নিদে©শিকা- আল কুরআনঃ ৩৩:৫ ]
কুরআন পালক সন্তান পালককারী মুসলিমদের আদেশ দেয় ‘তাদের পিতৃ পরিচয় অক্ষুন্ন রাখতে’। যদি তাদের পিতৃপরিচয় না থাকে তবে কুরআন বলে, ‘তারা তোমাদের ঈমানী ভাই, এবং তোমাদের পোষ্য, তাদের দয়ার সাথে লালন কর। কিন্তু তাদের পরিবারের নামে নাম রাখা ঠিক নয়।
৮. সন্তান পালক নেয়া ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ না অবৈধ?
যদি পালক নেয়া বলতে কেউ এটা বোঝাতে চান যে তিনি সন্তান দত্তক নেবেন, তাকে নিজের সন্তান পরিচয়ে বড় করবেন, তাকে নিজের সন্তানের মত সম্পদে উত্তারাধিকার দেবেন, তবে এই অথে© সন্তান পালক নেয়া অবৈধ। কারণ এক্ষেত্রে পালিত সন্তানের নিজ বংশ পরিচয় লুকান হয় বা হারিয়ে যায় এবং নিজ সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের হক নষ্ট করা হয়। আর যদি পালক নেয়া বলতে কেউ এটা বোঝান যে, কোন এতিম ও অসহায় বাচ্চাকে দয়াবশতঃ লালন পালন করে বড় করা হল তার পূব© পরিচয় অক্ষুন্ন রেখে, তবে এটা ইসলামের দৃষ্টিতে শুধু বৈধই নয় বরং পরম সওয়াবর কাজ। আল্লাহ এমন ব্যাক্তিদের জন্য বড় পুরষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও পালিত শিশু সম্পদে উত্তরাধিকার পায়না তবুও পালনকারী ইচ্ছে করলে তার সম্পদের কিছু অংশ (সবো©চ্চ এক তৃতীয়াংশ) দান করতে পারেন।
৯. ইসলামের দৃষ্টিতে পারিবারের মযা©দা ও বিশেষত্ব
ক. ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবার শুধুমাত্র মানুষের ঐচ্ছিক বা স্বঃস্ফুত© কোন প্রতিষ্ঠান নয় বরং আল্লাহর নিধা©রিত আধ্যাত্মিক ইনিষ্টিটিউশন। পরিবারের নামে কিছু কিছু সমাজে যে সব বিকৃত চচা© চলছে (যৌথবিবাহ, সমকামী বিবাহ ইত্যাদি) ইসলামে তা নিষেধ।
খ. পরিবার এবং বিয়ে ইসলামে এক পবিত্র বন্ধন হিসেবে স্বীকৃত, যা স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক মযা©দা ও দায়িত্ব নিশ্চিত করে।
গ. পরিবারের প্রতি আনুগত্য ও বিশ্বাস আল্লাহ তায়ালার বিশ্বাস ও আনুগত্যেকে অতিক্রম করতে পারে না।
ঘ. ইসলাম নারী-পুরুষ ‍উভয়কে সমমযা©দা প্রদান করে। স্বামী-স্ত্রী সম্মতির ভিত্তিতে আল্লাহ নিধা©রিত সীমার মধ্যে পরিবারের সকল দায়িত্ব ভাগ করে নিতে পারেন।
১০. পরিবারের কাজ ও লক্ষ্য
ক. সন্তান জন্মের মাধ্যমে মানব বংশধারা রক্ষা।
খ. একমাত্র বৈধ যৌনানন্দ লাভের সুযোগ দিয়ে সমাজ এবং ব্যাক্তির নৈতিক জীবন রক্ষা করা।
গ. সন্তানের সমাজিক মযা©দা ও স্বীকৃতি।
ঘ. মানুষের মানবিক ও আবেগসূচক চাহিদা পূরণ।
ঙ. সামাজিক ও আথি©ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
চ. মানুষের কঠোর পরিশ্রমী করা, দায়িত্ব অনূভূতি জাগ্রত করে পরিবারের স্বাথ© ত্যাগ করার মানসিকতা তৈরি করা।


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি