উৎসর্গ

আমার আম্মা ও আব্বা যাঁদের অপত্য স্নেহবাৎসল্যে আমি দুনিয়ায় চোখ খুলেছি, মানুষ হয়েছি এবং আমার ছোট চাচা যিনি আমার বিদ্যাচর্চার জন্য সবিশেষ যত্ন নিয়েছেন এবং আমার ‘আহল ও আয়াল’ তাদের সকলের মাগফেরাতের জন্য গ্রন্থখানি উৎসর্গীকৃত হলো।

-গ্রন্থকার

গ্রন্থকারের কথা
যেসব আকীদাহ বিশ্বাসের উপরে ঈমানের প্রাসাদ দাঁড়িয়ে আছে তার মধ্যে আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস অন্যতম। আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস না থাকলে, আল্লাহ্‌, রসূল, আল্লাহর কেতাব প্রভৃতির প্রতি সত্যিকার অর্থে বিশ্বাসই জন্মে না। উপরন্তু প্রবৃত্তির দাসত্ব ও শয়তানী প্ররোচনা থেকে মুক্ত হয়ে নিষ্ঠার সাথে নেক আমল করতে হলে আখেরাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ছাড়া কিছুতেই সম্ভব নয়।

আবার আখেরাতের প্রতি যেমন তেমন একটা বিশ্বাস রাখলেই চলবে না। বরঞ্চ সে বিশ্বাস হতে হবে ইসলাম সম্মত, কুরআন-হাদীস সম্মত। এ বিশ্বাসে থাকে যদি অপূর্ণতা, অথবা তা যদি হয় ভ্রান্ত, তাহলে গোটা ঈমান ও আমলের প্রাসাদ ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।

ইসলাম ও ইসলামী ইতিহাস সম্পর্কে যতটুকু জ্ঞানলাভ করার তওফীক আল্লাহ্‌ আমাকে দিয়েছেন, তাতে করে আমার এ দৃঢ় প্রত্যয় জন্মেছে যে, আখেরাত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা হয়ে গেলেই দুনিয়ার জীবনে খোদার পথে চলা সম্ভব হবে। উপরন্তু মনের মধ্যে পাপ কাজের প্রবণতার যে উন্মেষ হয়, তাকে অংকুরে বিনষ্ট করা হয় আখেরাতের প্রতি সঠিক ও দৃঢ় বিশ্বাস মনে হর-হামেশা জাগ্রত থাকলে।

পার্থিব জীবনটাই একমাত্র জীবন নয়, বরঞ্চ মৃত্যুর পরের জীবনই আসল ও অনন্ত জীবন। সেখানে পার্থিব জীবনের নৈতিক পরিণাম ফল অবশ্য অবশ্যই প্রকাশিত হবে। সেখানে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন মানুষের গোপন প্রকাশ্য প্রতিটি কর্ম বিচারের জন্যে উপস্থাপিত করবেন। প্রতিটি পাপ পুণ্যের সুবিচারপূর্ণ সিদ্ধান্ত সেদিন করা হবে। সেদিনের ভয়াবহ রূপ যদি মনের কোণে চির জাগরূক থাকে, আর তার সাথে যদি থাকে সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান খোদার ভয়, তাহলেই পাপ কাজ থেকে দূরে সরে থেকে উন্নত ও মহান চরিত্র লাভ করা সম্ভব হবে। চরিত্র লাভের দ্বিতীয় বা বিকল্প কোন পন্থা নেই, থাকতেও পারে না।

দুনিয়ার কোলাহল থেকে মুক্ত হয়ে কিছুকাল নির্জন নীরব কারা জীবন-যাপন কালে ‘মৃত্যু যবনিকার ওপারে’ গ্রন্থখানি রচনা করেছি। এ গ্রন্থ রচনায় হঠাৎ প্রেরণা লাভ করেছিলাম তাফহীমুল কুরআনের সূরা ‘কাফ’ –এর তফসীর পড়তে গিয়ে। এতব্দ্যতীত কোন জ্ঞানী গুণীর পরামর্শ নেয়ার অথবা কোন প্রামাণ্য গ্রন্থের সাহায্য নেয়ার সুযোগও তখন হয়নি। স্বভাবতই গ্রন্থখানির মধ্যে কিছু অপূর্ণতা, কিছু ত্রুতি-বিচ্যুতি রয়ে যাওয়া বিচিত্র কিছু নয়। সহৃদয় পাঠকের মধ্যে কেউ এ বিষয়ে গ্রন্থকারকে অবহিত করলে অথবা অতিরিক্ত তত্ত্ব ও তথ্য পরিবেশন করলে কৃতজ্ঞতার সাথে তা পরবর্তী সংস্করণে ইনশাল্লাহ সংযোজিত করা হবে। তাছাড়া আগামী সংস্করণে অধিকতর বিস্তারিত আলোচনার আশা রইলো।

অবশ্যি এ বিষয়ের উপরে অনেকেরই লেখা বই বাজারে আছে। কিন্তু এ গ্রন্থ রচনাকালে হাতের কাছে কোন ‘রেফারেন্স বুকস’ (অনুসরণযোগ্য প্রামাণ্য গ্রন্থ) না থাকলেও এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে লেখার চেষ্টা করেছি। অবশ্যি বইয়ের ভাল-মন্দ হওয়াটা পাঠকেরই বিবেচ্য।

গ্রন্থ রচনার প্রায় দু’ বছর পর তা প্রকাশিত হতে পারলো বলে এ একমাত্র আল্লাহ্‌ তা’য়ালারই অসীম অনুগ্রহ মনে করে তাঁর কাছে শুকরিয়ায় মাথা নত করছি।

এ ক্ষুদ্র গ্রন্থখানি পাঠ করে এর আলোকে যদি কেউ তার জীবন খোদার পথে চালাবার চেষ্টা করেন, তাহলে আমার নীরব সঙ্গীহীন দিনগুলোর শ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করব।

আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন যেন আমাকেওতাঁর ‘সিরাতুল মুস্তাকিমে’ অবিরাম চলার শক্তি দান করেন, সেই দোয়াই চাই মহান পাঠক-পাঠিকার কাছে। আমীন।

বিনীত

-গ্রন্থকার

রবিউল আউয়াল ১৩৯৫ হিঃ

১৯৭৫ ইং

আগাহ আপনি মওত সে কুই বাশার নিহি,

সমান সও বরস কা হ্যায় পলকি খবর নিহি।

সজাগ সচেতন নয় সে মানুষ

ভয় নাহি তাঁর মরণের।

মুহূর্তেরও খবর নাহি

স্বপ্ন রঙিন শত বরষের।


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি