নাহদাহঃ ইসলামী পুনর্জাগরণ
ইসলামী আন্দোলন
ইসলাম একই সাথে একটি ধর্ম ও সমাজব্যবস্থা। ইসলাম কুরআন ও সুন্নাহর চিরন্তন নীতিমালা অনুযয়ী সরকার গঠন ও পরিচালনা করে। যেহেতু ইসলাম মানেই প্রায়োগিক আচরণ ও ব্যবহার, তাই ইসলাম জাগতিক কর্মকাণ্ডে বিশ্বাসী মানুষদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দাবি করে, বস্তুগত সকল বিষয়ে বিশ্বাসী মানুষদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দাবি করে, বস্তুগত সকল বিষয়ে বিশ্বাসী মানুষের ধার্মিক ও সৎচরিত্রের উৎঘাটন চায়, জীবনের সকল ক্ষেত্রে ন্যায়নিষ্ঠ নৈতিক আচরণের সর্বোচ্চ অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য সংগ্রামে লিপ্ত হতে বলে। ফলশ্রুতিতে সমগ্র ইসলামী ইতিহাসে মুসলিম সমাজ দেহ হতে বিজাতীয় চিহ্নাবলী অপসারণ, একটি কার্যকর সভ্যতা নির্মাণ ও শরীয়ার ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চলছে।
মুসলিম বিশ্বের বর্তমান যেসব ইসলামী আন্দোলন চলছে তার গভীর শিকড় রাসূলুল্লাহ (সা) এর সময়কালের মধ্যে নিহিত। ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে পশ্চিমা পর্যবেক্ষকগণ এসব আন্দোলনকে সাম্প্রদায়িক অর্থে মৌলবাদ বলে অভিহিত করেছে এবং আদি আন্দোলনের পুনর্জাগরণের ব্যাখ্যা না পেয়ে তারা হতবুদ্ধি হয়ে যায়। ‘মুসলমানদের নিজেদের ধারণা ও ভূমিকার আলোকে এসব ইসলামী আন্দোলনকে বিশ্লেষণ করা হবে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি।–[ খুরশীদ আহমদ ‘The Nature of Islamic Resurgence’; জন এল. এল. এসপোসিটো সম্পাদিত ‘Voice of Rasurgent Islam’ (নিউইয়র্ক, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৩), পৃ: ২২২] এসব ইসলামী আন্দোলনকে বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে ইসলামী বিশ্বদৃষ্টি ও দৃষ্টিকোণকে অস্বীকার করার ফলে এসব আন্দোলনের ভুল নামকরণ হয়েছে এবং একই সাথে এসব আন্দোলনের ভিন্ন ভিন্ন ও বৈচিত্র্যময় চরিত্র বুঝতেও অক্ষমতার সৃষ্টি হয়েছে। এ অধ্যায়ে মৌলবাদ অভিধাটি পরীক্ষা করা হয়েছে এবং বর্তমান ইসলামী আন্দোলন সমূহকে মৌলবাদ অভিধাটি পরীক্ষা করা হয়েছে এবং বর্তমান ইসলামী আন্দোলন সমূহকে মৌলবাদ আখ্যা দেয়ার উপযোগীতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে, এসব আন্দোলনের অভ্যুদয়ের বিকল্প ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ প্রদান করা হয়েছে এবং পরিশেষে বিভিন্ন আন্দোলনসমূহ হলো মাওলানা মোহাম্মদ ইলিয়াসের (হিজরী ১৩০৩-১৩৬৩সন/১৮৮৫-১৯৪৭ খ্রি.) তবলীগ জামাত আন্দোলন, পাকিস্তানে সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদীর নেতৃত্বের জামাত-ই-ইসলামী আন্দোলন এবং আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনীর (হিজরী ১৩২১-১৪০৯ সন/ ১৯০২-১৯৮৯ খ্রি.) নেতৃত্বে ইরানের বিপ্লব।

মাওলানা বনাম নাহদাহ বা পুনর্জাগরণী আন্দোলন
মৌলবাদ পরিভাষাটি ঐসব আন্দোলন সম্পর্কে প্রয়োগ করা হয়েছে যারা এমন ইসলামী রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে, যার লক্ষ্য হচ্ছে শরীয়াহকে জনসাধারণের সামনে স্বীকৃতি প্রদান করা এবং আইনসঙ্গতভাবে প্রয়োগ করা।–[ এল বাইন্ডার কর্তৃক ‘Fundamentalism’ শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়েছে ‘The Ideological Revolution in the Middle East’ (নিউইয়র্ক, উইলী, ১৯৬৪)] শব্দটির উৎপত্তিস্থল আমেরিকা এবং মার্কিণ প্রটেস্ট্যান্টবাদ সম্পর্কে অভিধাটি ব্যবহৃত হয়েছিল, যে প্রটেস্ট্যান্টবাদের লক্ষ্য ছিল ‘আধুনিক ও উদারনৈতিক’ মতবাদ সমূহকে প্রতিরোধ করা। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে শব্দটির উৎপত্তি হয় এবং এই প্রটেস্ট্যান্ট মৌলবাদের বক্তব্য হচ্ছেঃ ঐশীবাণীর অভ্রান্ততা, কুমারী মাতার গর্ভে যীশুর জন্ম, পরিবর্তক প্রায়শ্চিত্ত ব্যবস্থা, যীশুখ্রিষ্টের শারীরিক পুরুত্থান, এবং অলৌকিক ঘটনার সত্যতা।–[ George Marshden, ‘Fundamentalism and American Culture’ (অক্সফোর্ড, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮২) পৃ: ১১৭] ১৯২০ দশকের আমেরিকান মৌলবাদীরা এক ধরনের অপশক্তির মত কাজ করে, যখন তারা আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা ও ডারউইনের বিবর্তনবাদের বিরুদ্ধে জোরালো প্রচারণা শুরু করে। এই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তারা এবং সাংস্কৃতিক উপ-সম্প্রদায়ে পরিণত হয় এবং পরবর্তীতে ‘মরাল মেজরিটি’ নামে আত্মপ্রকাশ করে।–[ উইলিয়াম শেফার্ড, ‘Fundamentalism: Christian and Islamic’, Relogion, ভলিউম ১৭ (১৯৮৭) পৃ: ৩৫৬]
উৎসের দিক থেকে প্রটেস্ট্যাস্ট খ্রিষ্টানদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া সত্ত্বেও মৌলবাদ শব্দটি মৌলিক ইসলামী আন্দোলন যা অন্যকোণ অমুসলিমদের অনুরূপ আন্দোলন সম্পর্কে ব্যবহৃত হতে থাকে।–[দ্রষ্টব্য হামিদ এনায়েত, Model Islamic Political Thought (লন্ডন, ম্যাকমিলান প্রেস, ১৯৮২); ফজলুর রহমান, ‘Roots of Islamic NeopFundamentalism’, ফিলিপ এইচ স্টোয়ার্ড ও ডেভিড সি. ক্যাথেল সম্পাদিত ‘Change and the Islamic World’; ব্রুস বি লরেন্স, ‘Defenders of God: The Fundamentalist Revolt Against Model Age. (সান ফ্রান্সিসকো, ১৯৮৯)।] ব্রুস লরেন্স প্রদত্ত নতুন সংজ্ঞা অনুসারে ‘মৌলবাদ হচ্ছে এমন এক ধরনের আদর্শবাদী সংগঠন বা আন্দোলন যা আধুনিকতার পরিপন্থী এবং তার সমস্ত শক্তি আধুনিকতার সকল লক্ষ্যের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। এটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও আধুনিকতা পরিপন্থি ও বিরুদ্ধবাদী। সে হিসাবে সমস্ত আধুনিকতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকারী।–[ ব্রুস বি লরেন্স, ‘Muslim Fundamentalist Movenemt Reflections Towards a new Approace’; বারবারা ফ্রেয়ার সম্পাদিত, ‘The Ismic Impulse (লন্ডন, ক্রুস হেম, ১৯৮৭), পৃ: ৩১, ৩২]
জন ও ভল ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি হিসাবে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন যে, এটা ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহ শাব্দিক ও আবিধানিক অর্থে এবং উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে এবং কঠোরভাবে ইসলাম ধর্মের সামাজিক-নৈতিক পুনর্গঠনের জন্য কাজ করে।–[ John O. Voll, ‘Fundamentalism in the Sunni Arab World: Egypt and the Sudan’; Mratine E. Marty এবং R. Scott Appleby সম্পাদিত (শিকাগো, ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস, ১৯৯১), পৃ: ৩৪৭]
এ দৃষ্টিভঙ্গি হতে সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানই ‘মৌলবাদী’ কেননা সকল ধর্মপরায়ণ মুসলমানই আল্লাহর সার্বভৌম একত্বে বিশ্বাস করে, কুরআনকে ঐশীবাণী রূপে বিশ্বাস করে, কুরআন ও সুন্নাহ অনুসারে কতিপয় দায়িত্ব ও কর্তব্য অবশ্য করণীয় হিসাবে পালন করে। মুসলমানগণ ইসলাম ধর্মকে একটি সার্বিক সামাজিক ব্যবস্থঅ হিসাবে মনে করে, যা ইহজীবন ও পরজীবনের সকল জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে পারে। এর অর্থ অবশ্য এ নয় যে, তারা ইজতিহাদের মাধ্যমে নতুন যুগ সমস্যার সমাধান মেনে নেয়া বা প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়নের বিরোধী। তাই মুসলমান বা মুসলমানদের কোন দল নিজেদের মৌলবাদী মনে করে না। এই পরিভাষাটি আরবীতে কোন প্রতিশব্দ নেই কিংবা কোন মুসলমান সম্প্রদায়ের ভাষাতেও শব্দটি নেই। যারা ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত তারা নিজেদেরকে শুধু মুসলমান মনে করে, তারা ইসলাম নিয়ে কথা বলে এবং পাশ্চাত্য মূল্যবোধ আমদানীকে ঘৃণা করে। লক্ষ্য করা উচিত, যে বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে অহরহ মৌলবাদী হিসাবে অভিহিত করা হয় তারা সহিংস পদ্ধতি বা রক্তপাতের মধ্যে দিয়ে তাদের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চায় না বরং শান্তিপূর্ণ ও সাংবিধানিক উপায়ে তা করতে চায়। পাশ্চাত্য প্রচার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ, প্রতিক্রিয়াশীল, গোঁড়ামী ও মধ্যযুগীয় মানসিকতাকে অহরহই মৌলবাদ হিসাবে চালিয়ে দেয়া হয়- এ অপ-মানসিকতার মধ্যদিয়ে প্রচারণাকারীদের আসল চরিত্রই ধরা পড়ে।
অনেক বিজ্ঞ পণ্ডিতের বিবেচনায়, মৌলবাদ শব্দটি যা খ্রিষ্টান জগতে ঘটনাচক্রে জন্মলাভ করেছে, তা ইসলামের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যুক্তিসঙ্গত নয়। ইসমাইল আল ফারুকী মৌলবাদের পরিবর্তে ‘নাহদাহ’ বা পুনর্জীবন শব্দটি যা খ্রিষ্টান জগতে ঘটনাচক্রে জন্মলাভ করেছে, তা ইসলামের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যুক্তিসঙ্গত নয়। ইসমাইল আল ফারুকী মৌলবাদের পরিবর্তে ‘নাহদাহ’ বা পুনর্জীবন শব্দটি ব্যবহার করেছেন যা বাস্তব অবস্থার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।–[ ইসমাইল আল ফারুকী, ‘Islamic Renaissance in Contemporary Society’ আল ইত্তেহাদ, ১৫(৪), অক্টোবর, ১৯৭৮), পৃ: ১৫] আরভী বিশেষ অর্থ একটি শিশুর মাঝে সে সম্ভাবনা সুপ্ত থাকে তাকে জাগ্রত করা। এটা সমাজের জন্যও প্রযোজ্য।–[ ইসমাইল আল ফারুকী, ‘Islamic Renaissance in Contemporary Society’ আল ইত্তেহাদ, ১৫(৪), অক্টোবর, ১৯৭৮), পৃ: ১৫ পৃ: ১৬] তাই এ কথা সঙ্গত যে মুসলিম বিশ্ব ‘নাহদাহ’ এর মধ্যদিয়ে বিবর্তিত হচ্ছে (অর্থাৎ মুসলিম সম্ভাবনার অংকুর সজীব বৃক্ষের রূপ নিচ্ছে)। আসলে ইসলাম সবসবয়ের জন্যই অপরিবর্তিত থাকছে। এর ক্ষমতা ও সম্ভাবনা ধীরে ধীরে মুসলিম জাতির দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। ফলে তারা তাদের যুগসমস্যার প্রেক্ষিতে ইসলামকে প্রয়োগ করতে সচেষ্ট হয়েছে।

নাহদাহ বা ইসলামী পুনর্জাগরণ এবং ইসলামী বিশ্বদৃষ্টি
গঠন, প্রকৃতি, লক্ষ্য, বিষয়বস্তু নির্বিশেষে বিভিন্ন দেশের ইসলামী আন্দোলন পশ্চিমাদের অনেক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। পশ্চিমা দেশসমূহের জন্য তৈল উৎপাদনকারী আরবদেশ সমূহের গুরুত্ব, ১৯৭৯ সালে ইরানে সফল বিপ্লব, সোভিয়েত দখলদারীত্বের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে প্রতিরোধ আন্দোলনের পররাষ্ট্র বিষয়ক গুরুত্ব এবং অনুরূপ অনেক ঘটনা পশ্চিমে উদ্বেগ ও সতর্ক মনোভাব তৈরীর ক্ষেত্র তৈরীর ক্ষেত্র তৈরী করেছিল। আধুনিক তাত্ত্বিকদের অনেকেই মুসলিম নাহদাহ আন্দোলন সম্পর্কে প্রকৃত উপলব্ধি পেতে ব্যর্থ হয় এবং তাই সমাজের দ্বৈত বা সংকর চরিত্র লক্ষণের উপর বেশ জোর প্রদান করে।–[আধুনিক পরিপ্রেক্ষিতের জন্য দেখুরন, ডেনিয়েল লার্নার ‘The Passing of Traditional Society: Modernising the Middle East (গ্লেনকো, ফ্রি প্রেস, ১৯৫৮); Manfred Halpern, ‘The Politics of Social Change in the Middle East nad North Africa’ (প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৬৩); Karl Deutsch, ‘Social Mobilization and Political Development’, American Political Science Review, এল.ভি (৩) সেপ্টেম্বর, ১৯৬১। পরবর্তী ধারণার জন্য দ্রষ্টব্য ফুয়াদ আজামী, ‘The Arab Predicament: Arab Political Thought and Practice Since 1967 (নিউইয়র্ক, ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮১; মাইকেল কার্টিস সম্পাদিত ‘Religion and Politics in the Middle East’ (বোল্ডার, ওয়েস্টভিউ প্রেস, ১৯৮১)।] শেষের মতবাদটি দু’টি আকর্ষণ বিন্দু তত্ত্বের উপস্থাপন করে; একটি হচ্ছে পশ্চিমের প্রভাব, যা মুসলমানদের জন্য বৈরী ও চ্যালেঞ্জমুখী। যার সাথে মুসলমানদের মুখোমুখি হতে হবে, সমঝোতা আসতে হবে এবং এ অবস্থাকে অতিক্রম করে যেতে হবে। অন্যকথায় পাশ্চাত্যের উদারনৈতিক বা মার্ক্সবাদী মহল মুসলমানদের ব্যাপার যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ঐসব ভাবনাচিন্তা বিভিন্ন সমীক্ষার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে মুসলমানগণ শুধু প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে কিন্তু কোন ইতিবাচক বা পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে পারেনি।
বিশ্বের সামনে আন্দোলন ও মূলনীতির উপস্থাপন ও মুসলিম সমাজে পাশ্চাত্য চিন্তাধারার অনুপ্রবেশের বিষয়ে সাধারণ আলোচনা হলেও ইসলামের সাথে ইসলামী আন্দোলনগুলির সম্পর্কের প্রাসঙ্গিকতা তেমন আলোচিত হয়নি। যেমন, মধ্যপ্রাচ্যের প্রশ্নে ইসলামী আন্দোলন সমূহ প্যালেস্টাইনের পক্ষে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও ইহুদীবাদের বিরুদ্ধে জোরালো সমর্থন যোগালেও এই সমর্থন সামগ্রিকভাবে একই প্ল্যাটফর্ম হতে ইউরোপীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত হতে পারেনি। প্যালেস্টাইনের ধর্মীয় গুরুত্ব এবং ইসলামী সহমর্মিতার কারণে প্যালেস্টাইনের ধর্মীয় গুরুত্ব এবং ইসলামী সহমর্মিতার কারণে প্যালেস্টাইনের সপক্ষে মুসলিম দলগুলি সমর্থন ও সহযোগীতা দিয়েছিল এ কথাও সমানভাবে সত্য। একইভাবে ইরানী বিপ্লবকে পাশ্চাত্য সভ্যতা (পাশ্চাত্যের সামরিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শক্তি) ও আধুনিকতার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসাবে দেখা… যেতে পারে। ইমাম খোমেনীর ভাষায় বলা যায়, ‘যদি ইরানের শাহের বিরুদ্ধে ইরানী জনগণ বিদ্রোহ করে থাকে, তবে তা তারা ইসলামী কর্তব্য হিসাবে করেছে।–[ খোমেনী, ‘Islam and Revolution: Writtings and Declarations of Imam Khomeini’ সম্পাদনা: হামিদ আলগার (বার্কলী, মিজান প্রেস, ১৯৮১), পৃ: ৩২৭]
চলমান নাহদাহ আন্দোলন তথা পুনর্জাগরণী আন্দোলন সমূহের স্বরূপ উপলব্ধি করতে হলে মনে রাখতে হবে যে, মুসলমানরা এমন একটি বিশ্বে বাস করে যেখানে ধর্ম সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে কাজ করে। ইসলাম হচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ সভ্যতার নাম। খ্রিষ্টধর্মের মত ইসলাম সীজারের অংশ সিজারকে, আল্লাহর অংশ আল্লাহকে দাও এমন দর্শনে বিশ্বাস করে না। ইসলাম এমন একটি সার্বিক জীবন বিধান যা ধর্ম, রাষ্ট্র, সমাজ, সংস্কৃতি সবকিছুকে সম্পৃক্ত করে নেয়। ইসলামে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পদ্রান করে তাওহীদে অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌম একত্ব, বিশ্বাসীদের. ঐক্য এবং জীবনের সামগ্রিকতার ঐক্য এবং বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক জীবনের ঐক্যকে। মুসলিশ বিশ্বাস অনুযায়ী মানব জীবনের প্রত্যেক বিষয়ে যথাযথ ঐশী নির্দেশনা দেয়া আছে।
এটা সত্য যে, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনে পাশ্চাত্য শিক্ষিত নাগরিক ও ধনিক শ্রেণী শিথিলতা প্রদর্শন করেছে। পক্ষান্তরে গরীব, অশিক্ষিত ও গ্রামীণ লোকেরা সরলভাবে আল্লাহর রহমত, বরকত ও সার্বভৌম ঐশ্বরিক ক্ষমতার গভীর বিশ্বাস স্থাপন করে জীবন যাপন করে। এ পার্থক্য সত্ত্বেও ধর্মে বিশ্বাস ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সকল মুসলমানকে একই প্ল্যাটফর্মে আনয়ন করে একই সামাজিক আদর্শে আবদ্ধ করে। এ সচেতনতা হয়ত অপরিণত ও অস্পষ্ট হতে পারে, কিন্তু এ সচেতনতার যথার্থতা ও বাস্তবতার বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কুরআনের বাণী, রাসূলুল্লাহ (সা) ও খোলাফায়ে রাশেদার সময় সাহাবীদের অভিজ্ঞতা ও জীবনাচরণ থেকে জানা যায় যে জীবন যাপন করত তাকে তারা সত্য হিসাবে জানত এবং তাতে গর্ববোধ করত।
প্রথম যুগের মানুষেরা যে সভ্যতা লাভ করেছিল তাতে তারা দুনিয়াবী সকল সাফল্যের সাথে পরকালীন মুক্তিরও নিশ্চয়তা লাভ করেছিল। ক্ষমতা ও মর্যাদা ছাড়াও তারা বস্তুগত সমৃদ্ধি উচ্চতম সাংস্কৃতিক সৃজনশীলতা লাভ করেছিল। এসব কিছুর উপলব্ধি সমকালীন মুসলমানদের তাদের জীবনের বড় মিশনের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়। অতীতের গৌরব গাঁথা মুসলমানদের ভাগ্য সম্পর্কে আশাবাদে অভিসিক্ত করে, যার ফলে তারা আল্লাহর রাহে জিহাদে অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকে। সাইয়েদ মওদুদী মুসলমানদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে তারা যদি মহানবী (সা) প্রদর্শিত পথে ইসলাম প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাহলে ‘একই ফলাফল পুনঃপ্রাপ্তি ঘটবে’।–[ আবদুল রশীদ মোতেন, ‘Pure and Practical Ideology The Thought of Mawlana Mawdudi’, ইসলামিক কোয়ার্টালী, ১৮ (১৯৮৪) পৃ: ২১৮] এই আশাবাদ মুসলমানদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগরণ ও প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছে। জেহাদের ধারণা ও তার ফলে সৃষ্ট আত্মবিশ্বাস ও আশাবাদ মুসলমানদের মধ্যে চালিকা শক্তি হিসাবে নাহদাহ ইসলামী পুনর্জাগরণের চলমান প্রক্রিয়ায় শামিল রেখেছে। ইসলামের মধ্যেই গতিশীল নাহদাহ এর বীজ সুপ্ত আছে, যা এ হাদীসে প্রমাণিত হয়েছে, ‘প্রত্যেক শতাব্দীর প্রথম ভাগে একজন মুজাহিদ আবির্ভূত হবেন, যিনি ইসলামের পুনজীবনের জন্য লোকদের আহবান করবেন’।–[ আবদুল রশীদ মোতেন, ‘Pure and Practical Ideology The Thought of Mawlana Mawdudi’, ইসলামিক কোয়ার্টালী, ১৮ (১৯৮৪) পৃ: ২১৮]
এ দৃষ্টিকোণ থেকে সারা মুসলিম বিশ্বে নাহদাহ আন্দোলন আধুনিক কোন ঘটনাও নয়, নতুন কোন আন্দোলনও নয়। এ আন্দোলন শুধু পাশ্চাত্যের চ্যালেঞ্জের প্রতিক্রিয়া নয় বরং এ হচ্ছে ক্রটিপূর্ণ পৃথিবীর নবুয়তী কার্যের অনুসরণে মুসলিম সমাজকে পুনরায় জাগিয়ে তোলার চেষ্টা।

সালাফিয়াহ আন্দোলন
মুহাম্মদ ইবনে আবদ আল ওয়াহহাব (হিজরী ১১১৫-১২০৭ সন/১৭০৩-১৭৯২খ্রি.) এর সালাফিয়া আন্দোলন এই ধারায় একটি উজ্জল উদাহরণ। ইসলামের আদি বিশুদ্ধতায় বিশ্বাসী আবদ আল ওয়াহহাব শাসকবর্গ ও জনসাধারণের ভোগবিলাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তিনি কুরআন সুন্নাহর ও ইসলামের প্রথম তিন শতাব্দীর সুন্নী ফিকাহের দিকে জনগণকে ফিরে আসার আহবান জানান। আর সবকিছুকে তিনিও তার সহকর্মীরা বিদাত বলে ঘোষণা করেন। পীরপূজাকে ধ্বংস সাধনের জন্য চিহ্নিত করলেন, যা কিছু শির্ক (মূর্তিপূজা) এর পর্যায়ের তাকে বাতিল ঘোষণা করলেন এবং সুফীবাদকে প্রবলভাবে আক্রমণ করলেন। ইবনে আবদ আল ওয়াহহাব আরবের দিরিয়স্থ (বর্তমান রিয়াদ) স্থানীয় নেতা মোহাম্মদ ইবনে সউদ (মৃত্যু হিজরী ১১৭৯/১৭৬৫ খ্রি.) সাথে সংঘবদ্ধ হলেন এবং তার হাতে শাসন ক্ষমতা অর্পণ করলেন। এর ফলে সৌদি রাজকীয় পরিবার ও ওয়াহহাবী ধর্মীয় সংঘেল মধ্যে গভীল সম্প্রীতি জন্ম নেয়, যা অদ্যাবধি সৌদি আরবে বহাল আছে।–[ জন এল এসপোসিটো, Islam and Politics’ (নিউইয়র্ক, Syracuse University Pres, ১৯৮৪) পৃ: ১০২-৩]

সেকোতো জিহাদ
ঊনবিংশ শতাব্দীতে বর্তমান নাইজেরিয়ায় ইসলামী বিশ্বাস ও আচার শুদ্ধিকরণের জন্য একটি আন্দোলন গড়ে ওঠে। এখানে অনৈসলামিক প্রথা সমাজকে দুষিত করে তুলেছিল। এ আন্দোলন উপজাতি হাউসল্যান্ডের নেতা ও তাদের সহকর্মীদের অবিশ্বাস হিসাবে চিহ্নিত করে।
তারা গাছের পূজা করত, প্রসাদ বিতরণ করত ও ময়দা দিয়ে রং মাখাত। তারা ছিল অবিশ্বাসী।–[বি.জি মার্টিন, ‘Muslim Brotherhoods in Nineteenth Century Africa (ক্যামব্রিজ; ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৭৬), পৃ: ২৮। আরো দ্রষ্টব্য এ. রশিদ মোতেন, ‘Political Dynamism of Islam in Nigeria’ ইসলামিক স্টাডিজ, ২৬ (২), ১৯৮৭]
এ জিহাদের পিছনে ছিলেন শেখ উসমান ইবনে মুহাম্মদ ফুদি (হিজরী ১১৬৮-১২৩৩ সন/১৭৫৪-১৮১৭ খ্রি.) তিনি শেহু (আরবী ভাষায় শেখ) উসমান দান ফোদিও নামে পরিচিতি ছিলেন। তার প্রদত্ত মেনিফেস্টো অনুযায়ী সেহু’র জিহাদের লক্ষ্য ছিল কলুষমুক্ত সত্য ইসলাম প্রচার করা এবং শরীয়াহর ভিত্তিতে সরকার গঠন করা। ফুলানী ও হাউসা কৃষকদের সহায়তায় তিনি একটি ইসলামী রাজনৈতিক ব্যবস্তঅ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন যার শীর্ষে ছিলেন মুজুলসী বা আমিরুল মোমেনীন (বিশ্বাসীদের নেতা)। এ জিহাদের মাধ্যমে যে শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা লাভ করে তা সোকোটো খিলাফত হিসাবে পরিচিত। সে ব্যবস্থায় শরীয়াহ ও ইসলামী সংস্কৃতি ছিল বাধ্যতামূলক। রাজনৈতিক ব্যবহারের আইনগত ভিত্তি ছিল শরীয়ার অনুশাসন।

মাহদীয়াহ আন্দোলন
মোহাম্মদ আহমাদ আবদ আল্লাহ (হিজরী ১২৫০-১৩০৩ সন/১৮৩৪-১৮৮৫ খ্রি.) নেতৃত্বে মাহদিয়াহ আন্দোলন আল্লাহ ও বিচার দিবসের শত্রু ও ভুয়া মহিসের (আল দাজ্জাল) আগমন ও যুদ্ধের পূর্বে বিশ্বজনীন সুবিচার ও সাম্যতা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। মাহদী ও তার অনুসারীদের অটোম্যান মিশরীয় শাসকদের বিরুদ্ধে প্রবল ঘৃণা ছিল, তারা ‘আল্লাহর রাসূল ও নবীদের আদেশ অমান্য করেছিল,… মোহাম্মদ (সা) এর শরীয়া পরির্তন করেছিল, আল্লাহর প্রতি ধর্মদ্রোহীতা প্রদর্শন করেছিল।–[ জন ও. ভল ‘The Sudanese Mahdi; Frontier Fundamentalist’ ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব মিডল ইস্ট স্টাডিজ, ১০ (১৯৭৯), পৃ: ১৫৯] বেশ্যাবৃত্তি, জুয়া, মদ্যপান ও গানবাদ্য ইত্যাদির সাহায্যে সুদানী সমাজের দুর্বৃত্তায়নে তারা ব্যথিত ও ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। সালাফিয়া আন্দোলনের মত মাহাদী পন্থীরা ইসলামী বিশ্বাস ও আচরণে পরিশুদ্ধতা আনতে চেয়েছেন, ধর্মদ্রোহী ও দুর্নীতিপরায়ণ সরকার উৎখাত করে মদীনা মডেলের অনুকরণে সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্মাণ করতে চেয়েছেন। মাহদীপন্থী রাজনৈতিক ব্যবস্থা ১৪ বৎসর স্থায়ী ছিল। কিন্তু ১৮৯৯ সালে ইন্দো-মিশরীয় শক্তির হাতে তারা পরাজয় বরণ করেন।
মোহাম্মদ ইবনে আবদ আল ওয়াহহাবের সালাফীয়াহ আন্দোলন বা পশ্চিম আফ্রিকার শেখ উসমান দাউ ফদিও-এর নেতৃত্বে সকোতো জেহাদ স্বদেশে ইসলামী ব্যবস্থার বিকৃতি ও দুর্নীতির বিষয়ে অধিক দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছিল। পাশ্চাত্য প্রভাবে ইসলমী শক্তির অবক্ষয় হয়েছে এ দৃষ্টিকোণটি তারা তাদের আন্দোলনী মনোভাব বা কার্যপরিধিতে আনতে পারেননি। একইভাবে ইসলামী সমাজের অবক্ষয়ের প্রেক্ষিতে সুদানে মাহাদীপন্থী রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছিল। পাশ্চাত্যের চ্যালেঞ্জ হয়ত এ আন্দোলনে গতিবেগ সঞ্চার করেছিল, কিন্তু এ চ্যালেঞ্জ হতে এ আন্দোলন সৃষ্টি হয়নি। আরব বিশ্বের ইখওয়ানুল মুসলিমুন, দক্ষিণ এশিয়ার তাবলীগ জামাত আন্দোলন ও জামাত-ই-ইসলামী, অন্যান্য ইসলামী আন্দোলন এবং একই রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে মুসলিম নাহদাহ তথা পুনর্জাগরণ আন্দোলন ধারাবাহিক আত্মপ্রকাশ বলে পরিগণিত হয়েছে।
উপরের বিবরণ যদি আজকের মুসলিম নাহদাহ আন্দোলন সমূহের উৎপত্তি, লক্ষ্য, উৎসের কারণ হয়, তবে যে সমস্যা ও প্রয়োজনীয়তার কথা এ আন্দোলন সমূহ উপস্থাপন করেছে তা হচ্ছে বিশুদ্ধ ইসলামের দিকে প্রত্যাবর্তন। এর আহবান রয়েছে কুরআনে ‘তোমরা সৎ কাজের আদেশ কর এবং নিষেধ কাজ প্রতিরোধ কর’।
উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতায় ইসলাম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে- এ হতে ইসলামের মৌলিক ধারা তথা পুনর্জাগরণী নাহদাহ আন্দোলন সমূহের স্বরূপকে খাটো করে দেখা বা অবমূল্যায়নেরকোন অবকাশ নেই। পাশ্চাত্যের প্রভাব এ নাহদাহ আন্দোলনগুলোর একটি ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা খুঁজে নেবার অন্বেষাকে বেগবান করেছে।

মুসলিম নাহদাহ’র বিভিন্ন প্রকার রূপ
মূলধারার নাহদাহ আন্দোলনকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়: প্রথমভাগে যে আন্দোলন তার কেন্দ্রীয় সুর শুধু ধর্মীয় এবং দ্বিতীয়ভাগে রয়েছে ঐ আন্দোলন যার সমাজ-রাষ্ট্রীয় লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রথমভাগে ফেলা যায় মাওলানা ইলিয়াসের তাবলীগ জামাত আন্দোলকে এবং দ্বিতীয় ভাগে পাকিস্তানের জামাত-ই-ইসলামী আন্দোলন ও ইরানের ইসলামী বিপ্লবকে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, এ সবগুলো আন্দোলনই প্রথমে বিশুদ্ধ ইসলামে ফিরে যাবার সংকল্প নিয়ে শুরু হয়েছে। প্রথমত: তারা কেউই ইসলামকে অনুষ্ঠান সর্বস্ব ধর্ম হিসাবে দেখেনি বরং একটি জীবন বিধান হিসাবে অবলোকন করেছে, দ্বিতীয়ত আন্দোলনগুলো ইসলামে বিশ্বজনীনতায় বিশ্বাস করে এবং জাতি, বর্ণ, সীমান্ত রেখার প্রাচীর ভেঙ্গে সমস্ত মুসলমানদের এক জাতি বা উম্মাহ হিসাবে গণ্য করে। তৃতীয়ত: তারা পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদকে মানব রচিত বিবেচনা করে প্রত্যাখ্যান করে এবং বিশ্বাস করে এগুলো মানুষের সুখ সমৃদ্ধির বিধান করতে পারবে না। মুসলিম সমাজের দুর্দশার কারণ হিসাবে তারা ধর্মকে অবহেলা করে পাশ্চাত্য বস্তুবাদের পেছনে ছুটাকে দায়ী করেছে। চতুর্থত: তারা অন্ধ অনুসরণ ও আনুগত্য তথা (তাকলীদ)কে প্রত্যাখ্যান করে এবং সুন্নাহর নির্দেশনা মোতাবেক ইজতিহাদের উপরসবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে। চতুর্থত: তারা সবাই একটি ইসলামী রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য বিরামহীন চেষ্টায় বিশ্বাস করে। যদিও সমকালীন সকল নাহদাহ আন্দোলন মুসলমানদের একটি আদর্শ ব্যবস্থা অর্জনের প্রত্যাশার ধারাবাহিকতা, তবুও নতুন নাহদাহ আন্দোলন যে সব নতুন উপাদান সংযুক্ত হয়েছে তা চিহ্নিত ও বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। প্রথমত: বর্তমান নাহদাহ আন্দোলণ ভৌগোলিকভাবে পূর্বের চেয়ে অনেক স্থানে চলছে। আন্দোলনসমূহ কোন বিশেষ ভৌগোলিক সীমারেখায় আবদ্ধ না থেকে স্ব স্ব চরিত্র ও সাংগঠনিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে সমস্ত মুসলিম উম্মাহকে জড়িত করেছে। দ্বিতীয়ত অতীতের আন্দোলনসমূহ যেরূপ ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা চালিত হতো, বর্তমানে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম এমন সব অন্যান্য বিভিন্ন পেশার লোকও আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। বিভিন্ন সংগঠিত ছাত্র, শ্রমিক, সেনাবাহিনী ইত্যাদির মধ্যে বর্তমান নাহদাহ আন্দোলন প্রভাব বলয় বিস্তার করে আন্দোলনের গণভিত্তি রচনা করেছে, যাতে বাইরের ও ভিতরের বৈরী চাপ মোকাবেলা করা যায়। তৃতীয়ত- অধিকাংশ মুসলিম দেশ এসব আন্দোলনের চাপের মুখে অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও সমাজ ও সাংস্কৃতিক জীবনে ইসলামী আদর্শ সংযোজন করে চলেছে। ৫২টি মুসলিম দেশের মধ্যে ২৬টি দেশের সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ ধরনের অভিধা প্রতীকি হলেও, রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে এর নানা প্রভাব রয়েছে। সর্বশেষে ১৯৭৯ সালে সংঘটিত হয়েছে ইরানী বিপ্লব যা, ‘সাম্প্রতিক সামগ্রিক ইসলামী ইতিহাসে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও অনন্যসাধারণ ঘটনা’।–[ হামিদ আলগার, ‘The Roots of the Islamic Revolution’ (লন্ডন:দি অপেন প্রেস, ১৯৮৩), পৃ: ৯] শাহের স্বৈরাচারী শাসনের সকল চিহ্ন মুছে দেবার জন্য গণজাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে উলেমা সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দুর্বলতা ও গতিশীলতা এবং পরবর্তীতে একটি ইসলামী ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। বিশ্বের সকল পরাশক্তি ও তাদের ক্রীড়নকদের প্রবল বাধার মুখে ইরানী বিপ্লবের সফলতা ইসলামে অন্তর্নিহিত শক্তির প্রমাণ এবং কুফরের শক্তির জন্য একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা।

তাবলীগ জামাত
১৯২০-এর দশকে ভারতের দিল্লী ও এর আশে পাশে ‘ঈমানী আন্দোলন’ নামে পরিচিত তাবলীগ জামাত আন্দোলন জন্মলাভ করে। ভারতের উত্তরাঞ্চলে গঙ্গা অববাহিকায় অবস্থিত মেওয়াত নামক স্থানের মুসলিম অধিবাসীদের অবক্ষয়িত নৈতিক ও ধর্মীয় আচরণ সংশোধনের জন্য একজন নিবেদিত প্রাণ দ্বীনি নেতা মাওলানা মোহাম্মদ ইলিয়াস এ আন্দোলনের সূত্রপাত করেন।–[ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী, ‘Hadrat Mawlana Mohammad Ilyas awr Unki Dini Da’wat’ (লখনো, তানভীর প্রেস, ১৯৬০); এম.এ হক ‘The Faith Movement of Mawlana Muhammad Ilyas’ (লন্ডন, জর্জ এলেন এন্ড আনউইন, ১৯৭২)] তাবলীগ জামাত ইসলামের জন্য নিবেদিত সম্ভবত: এটিই সবচেয়ে বড় অরাজনৈতিক দল। জ্যানসেনের ভাষায় ‘এ আন্দোলনের লক্ষ্য নৈতিক সসস্ত্রীকরণ’।–[ গডফ্রে জ্যানসেন, ‘Islam in Asia Towards an Ismamic Society’, The Economist, ৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৮২, পৃ: ৫৪] উম্মতের ভিতর থেকে দূরে থেকে নিয়তের বিশুদ্ধতা, ঈমানের শক্তি বৃদ্ধি, শুদ্ধভাবে এবাদ বন্দেগী তথা প্রার্থনা করা, জ্ঞান অর্জন, জীবনের সকল ক্ষেত্রে শরীয়াহ পালনের মাধ্যমে ইসলামের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছে। সার্বিক লক্ষ্য হচ্ছে জীবনের সকল ক্ষেত্রকে শরীয়াহ আওতাধীনে আনা। তাবলীগ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতার মতে, ‘নৈতিক, বাণিজ্যিক ও সামাজিক সম্পর্ক শুদ্ধিকরণের মাধ্যমে রাজনৈতিক বিষয়েও শুদ্ধতা আসবে’।–[ নদভী, ‘Hadrat Mawlana Ilyas পৃ: ২৬৯]
এ আন্দোলনের কোন স্থায়ী সাংগঠনিক কাঠামো নেই বা স্থায়ী সদস্যপদও নেই। স্বেচ্ছামূলকভাবে নিজ খরচে জামাতে অংশগ্রহণকারীদের ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে ঈমান আকিদা শিক্ষা ও প্রচারের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করা হয়। স্থানীয় মসজিদকে অস্থায়ী আবাসস্থল করে তারা দেশের দূরবর্তী কোণায় ছড়িয়ে পড়ে। তারা দুয়ারে, জনে জনে মানুষকে মসজিদে এসে আল্লাহ ও রাসূলের কথা শোনার দাওয়াত দেয়, ছয় উসূল বা দফার মাধ্যমে তারা তাদের ইসলামী দাওয়াতের বাণী উপস্থাপন করে:
১. কলেমা শাহাদাত বা আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দেয়া, তার শুদ্ধ উচ্চারণ এবং তার অর্থ ও তাৎপর্য উপলব্ধি করা, ২. সালাত বা আল্লাহর আনুগত্য হিসাবে দৈনিক ৫ বার নামাজ আদায় করা। ৩. জিকির বা ধর্মভীরুতা অর্জনের জন্য সর্বসময় আল্লাহকে স্মরণ করা, ৪. ইকরামুল মুসলেমীন ধর্মীয় কর্তব্য হিসাবে ও দাওয়াতের কৌশল হিসাবে মুসলমানদের সম্মান বা সেবা করা, ৫. দাওয়াত বা নিজের বাসগৃহের বাইরে দলবদ্ধ অবস্থায় আল্লাহ-রাসূলের বাণী প্রচার করা, ৬. ইখলাস বা শুদ্ধ নিয়ত তথা ধর্মীয় কাজে নিষ্ঠা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাবলীগের কাজ করা।–[ মুহাম্মদ আইয়ুব কাদরী, ‘Tablighi Jama’at Ka Tarikhi Jalizah’ (করাচী, Maktaba Muawiyah, ১৯৭১) পৃ: ৯২-৬] তাবলীগ জামাত আন্দোলন সংবাদ প্রচারণা মাধ্যমকে পরিহার করে এবং সংবাদ মিডিয়ায় তাদের কোন প্রচারণা প্রেরণ করে না; এতদত্বেও এটা মুসলমানদের জন্য একটি শক্তিশালী নাহদাহ আন্দোলনের প্ল্যাটফরম। এ আন্দোলন প্রমাণ করে যে ইসলামী পুনর্জাগরণের বীজ ইসলামের ভিতরই অন্তর্নিহিত আছে।
তাবলীগ জামাত নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিহার করার উপর বিশেষ জোর দেন এবং সমাজ-রাষ্ট্রীক গুরুত্বপূর্ণ কোন রাজনৈতিক কাজে নিজেদের সংশ্লিষ্ট ও সংযুক্ত করে না। ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁরা অবশ্য ইসলামী রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেন, তবে মুসলমানদের জন্য সর্বপ্রথম রাজনীতিকে অগ্রাধিকার হিসাবে স্বীকার করেন না। রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা শুদ্ধরূপ ইসলামকে বিকৃত করবে এবং জাতির মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করবে বলে তারা মনে করেন।–[ মাওলানা ওয়াহিদ উদ্দীন খান, ‘Din Kya Hai? (দিল্লী, মাকতাবাহ আল রিসালাহ) পৃ: ২৬] তাদের দৃষ্টিতে ইসলামী আকিদার দুর্বলতার কারণে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। তাই ‘রাজনীতি পরিহার’? ইসলামী পুনর্জাগরণের প্রথম পদক্ষেপ বা ভিত্তি বলে তারা মনে করেন। ইসলামের বৈরী শক্তির মোকাবেলা, তাদের মতে, ইসলামী বিশুদ্ধ তাবলীগের বাণী ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে, ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের বাস্তব জীবনে অনুশীলন করতে হবে, আল্লাহর সাথে ভয় ও ভালোবাসায় নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে এবং শেষ পদক্ষেপ হিসাবে হিজরত ও জিহাদের পন্থা অবলম্বন করতে হবে।–[ মাওলানা ওয়াহিদ উদ্দিন খান, ‘Aqliat-e-Islam’, (দিল্লী মাকতাবাহ আল রিসালাহ); পৃ: ৪-৫]
তাবলীগ জামাত আন্দোলনের সফলতার পরিমাণগত মান নির্ণয় দুরূহকর্ম। পৃথিবীর ২৪টি দেশে তাবলীগ জামাত আন্দোলনের কাজ চলছে। বিভিন্ন দেশে তাবলীগ জামাতের বার্ষিক সম্মেলনে সর্বস্তরের লক্ষ লক্ষ লোকের সমাবেশ হয়। এ আন্দোলন বহু বুদ্ধিজীবীকেও তাবলীগ জামাতে সামিল করতে পেরেছে। বৎসরে একবার সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ তবলিগ জামাতের আমল আকিদায় বিশ্বাসী মুসলমানগণ বাংলাদেশে একত্রিত হন যাকে বলা হয় ‘বিশ্ব ইসতেমা’। এ সম্মেলন তিনদিন চলে।

জামাত-ই-ইসলামী
১৯৪১ সালে পাকিস্তানের লাহোর সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী জামাত-ই-ইসলামী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এটা রাজনৈতিক দল হিসাবে নয় বরং একটি আদর্শিক আন্দোলন হিসাবে জন্মলাভ করে। ইসলামের তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক দিকের উপর সাইয়েদ মওদুদীর বিস্তৃত ও সুগভীর জ্ঞান ও দখল রয়েছে বলে পাকিস্তানে তার ব্যাপক স্বীকৃতি রয়েছে। জামাতে ইসলামী নামে গঠিত দলটির একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে এবং এ দলের একনিষ্ঠ মনোযোগ ও অঙ্গিকার রয়েছে এবং এ দল একনিষ্ঠ মনোযোগ ও অঙ্গিকারের সাথে সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে’।–[ রজেনথাল, Islam in the Modern National State (ক্যামব্রিজ, ক্যামব্রীজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৬৫), পৃ: ২৪৭] মওদুদীর মতে ইসলাম হচ্ছে একটি সর্বাত্মক বিশ্বজনীন জীবন বিধান, এটা একটি সুবিন্যস্ত ব্যবস্থা, জীবনের সকল প্রশ্নের উত্তর এতে রয়েছে। এর মৌলিক কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে আল্লাহর সর্বপ্লাবী সার্বভৌমত্বের ঐক্য। ইসলামের জীবন ব্যবস্থা শরীয়াহ নামে অভিহিত, যা গভীর ঈমানের উপর সংস্থাপিত। এ ভিত্তির উপরই ইসলামের সামাজিক, রাজনৈতিক, নৈতিক ও অর্থব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
মওদুদীর মতে আদর্শ ইসলামী ব্যবস্থা গঠিত হতে পারে একমাত্র এমন লোক সমষ্টির সাহায্যে যারা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া সকল কিছুর আনুগত্য হতে নিজেদের মুক্ত করতে পেরেছে; এরূপ সমাজ-রাষ্ট্র হবে ধর্মীয়গণতান্ত্রিক এবং এর নাগরিকগণ হবে চিরুনীর ফলার মত সমান। মুসলমানদের পরিচয় হচ্ছে ‘উম্মাহ ওয়াসাহ’ (ন্যায়ানুগ ও ভারসাম্যমূলক সমাজ) এবং তাই তারা ‘সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা’ দায়িত্বপ্রাপ্ত। তাঁর মতে কুরআন শুধুমাত্র খানকাহ, মঠ ও বিদ্যালয়ে চর্চার জন্য কোন তাত্ত্বিক ও ধর্মীয় হেয়ালীপূর্ণ পুস্তক নয় বরং এটি হচ্ছে সক্রিয় আন্দোলনের নির্দেশনা সম্বলিত কিতাব।–[ এ. এ. মওদুদী, ‘তাফহীমুল কুরআন, (লাহোর, ইদারা তারজুমানুল কুরআন, ১৯৭৩), ভলিউম-১, পৃ: ৩৩] ফলে ইসলাম হচ্ছে বিপ্লবী সংগ্রাম ও সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার (জিহাদ) ধর্ম, সংজ্ঞা নির্ণয়ে মওদুদী রাষ্ট্রযন্ত্রের পরিবর্তনের কথা বলেছেন, যে রাষ্ট্রযন্ত্র- মিথ্যা ভাবমূর্তি, বিকৃত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও অভিজান শ্রেণীর স্বার্থ সংরক্ষণ করে।
এ উদ্দেশ্যে সাইয়েদ মওদুদী জামাত-ই-ইসলামী গঠন করেন এবং রাসূলুল্লাহর (সা) কর্মপদ্ধীত দলের মৌলিক নীতিমালা ও কৌশল হিসাবে গ্রহণ করেন। প্রথমেই আল্লাহর আপোষহীন সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে সর্বাত্মক বিপ্লবী কাজে ঝাপিয়ে পড়তে হবে এবং সঠিক আঙ্গিকে ইসলামী আকিদা বিশ্বাস ও অনুশাসন শক্তিশালীভাবে উপস্থাপন করতে হবে। দ্বিতীয়ত যারা এ আহবানে সাড়া দেবেন তাদের এক প্ল্যাটফর্মে সংগঠিত করে তাদের নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক মানোন্নয়নের জন্য একটি সুসমন্বিত পরিকল্পনা ও প্রোগ্রাম রচনা করতে হবে। তৃতীয়ত মুসলিম সম্প্রদায়ের সামষ্টিক জীবনকে ইসলামী নীতিমালার ভিত্তিতে পুর্জীবিত করার জন্য একটি সর্বপ্লাবী আন্দোলন পরিচালনা করতে হবে। সর্বশেষে দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটাতে হবে। এই বিপ্লবী আন্দোলনের মত শাসন ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টা ছাড়া কোন বিকল্প পন্থা নেই, কেন না রাষ্ট্রযন্ত্র ছাড়া যে ধর্মপরায়ণ ব্যবস্থার কথা ইসলামে বর্ণিত রয়েছে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। ইসলামী আন্দোলন পরিচালিত হয় আল্লাহর ঐশী নির্দেশনা মোতাবেক। তাই প্রকাশ্যে ও শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে, আইন ও সংবিধানের কাঠামোর মধ্য থেকে এ আন্দোলন পরিচালনা করতে হবে।
‘যে সব আইনের বিরুদ্ধে আমি সারা জীবন লড়াই করেছি সে সব আইনও আমি কখনো ভঙ্গ করিনি। আমি আইনসঙ্গত ও সাংবিধানিক পদ্ধতিতে তা পরিবর্তন করতে চেয়েছি এবং কখনো আইন অমান্যের পন্থা অবলম্বন করিনি।(মাওলানা মওদুদী)–[ মরিয়ম জামিলাহ, ‘Islam in Theory and Practice’ (লাহোর, মোহাম্মদ ইউসুফ খান), পৃ: ৩৩৪]
স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান হতে জামাত সদস্য সংগ্রহ করে। ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে জামাত নতুন এক বুদ্ধিজীবী শ্রেণী সৃষ্টি করেছে। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে ২৫ জন সদস্য নিয়ে শুরুকরে ১৯৭৮ সালে জামাতের রোকন বা সক্রিয় সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৩,৫০০ জন, যার সাথে রয়েছে পাকিস্তানের প্রায় ৫ লক্ষ সহযোগী সদস্য। চারটি দেশে এর সহযোগী সংগঠন রয়েছে। জামাত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেছে যেখান হতে ইসলামী ও আধুনিক শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে। এ সংগঠন ৩০০ এর অধিক পুস্তক প্রণয়ন ও প্রকাশ করেছে এবং ১৯৫৫-৫৬ সাল নাগাদ ৫০টি স্থায়ী হাসপাতাল ও ১১টি অস্থায়ী ক্লিনিক স্থাপন করেছে। মৃত্যুর পূর্বে সাইয়েদ মওদুদী লক্ষ লক্ষ মানুষের সক্রিয় সমর্থন লাভ করেছেন, যাদের মধ্যে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক অন্যতম। জিয়াউল হক সরকার জামাতের বহু শীর্ষ নেতার পরামর্শ ও সাহায্যে অনেক ইসলামী নীতিমালা বাস্তবায়ন করেছিলেন এবং মৃত্যুর সময় পর্যন্ত আরো কিছু ইসলামী নীতিমালা নিয়ে পরীক্ষা করছিলেন।

ইরানী বিপ্লব
কেবলমাত্র ইরানী ইতিহাসের গভীর শিকড় অনুসন্ধান ও ইসলামের ভিতর ইতিহাসের মর্মবাণীর উপলব্ধির মাধ্যমেই ইরানী বিপ্লবকে অনুধাবন করা সম্ভব। এ আলোচনা এখানে সম্ভব নয়।–[ ইরান সম্পর্কে সার্বিকভাবে জানার জন্য দেখুন, Nikkei keddie, Roots of Revolition: An Interpretive History of Modern Iran’ (নিউ হ্যাভেন, ইয়েল ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮১)] ইরানী বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছেন আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ সুমাভী খোমেনী। তিনি আধ্যাত্মিকবাদী শিক্ষক হিসাবে প্রথমে খ্যাতি লাভ করেন। আলগার সঠিকভাবে মন্তব্য করেছেন যে ‘ইমাম খোমেনীর জীবন নির্দেশ করে যে ইসলামী বিপ্লব আবশ্যিকভাবে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জাগরণ হতে সংঘটিত হয়।–[ ইমাম খোমেনী, ‘Islam and Revolition…., পৃ: ১৪] ইমাম খোমেনীর মতে ইসলাম সকলকাজের নির্দেশনা ও মূল্যবোধ ঠিক করে দিয়েছে। ইসলামী আইন হচ্ছে বিশ্বজনীন, অপরিবর্তনীয় এবং তাকে অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করতে হবে। যেহেতু ইমামগণ ঐশী ইচ্ছা অনুযায়ী নবী করিম (সা) কর্তৃক নিযুক্ত হন,তাই ইমামদের অনুসারীদের জন্য ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠা বাধ্যতামূলক।–[ ইমাম খোমেনী, ‘Islam and Revolition…., পৃ: ৩৭] শেষ ইমামের গায়েরে থাকা অবস্থায় (গায়েবাহ), ঐশী বিধান অনুযায়ী ইসলামী আইনশাস্ত্রবিদগণ শাসনকার্য পরিচালনা করবেন; ‘ফকিহরাই হচ্ছেন প্রকৃত শাসক’।–[ ইমাম খোমেনী, ‘Islam and Revolition…., ৬০]
খোমেনী খোলাফায়ে রাশেদার সময়কার মদীনার যুগ বিশেস করে রাসূলুল্লাহর জামাতা আলীর খিলাফতের প্রতি গভীর অনুরাগ ব্যক্ত করেন। পরবর্তীতে শির্ক (বহুত্ববাদ) অর্থনৈতিক দমন ও শোষনের মাধ্যমে সমাজে প্রবেশ করে। ইরানে আলীপন্থী ধর্মানুসারীর সাফায়ী শাসনকর্তাদের বিরোধিতা করেন, যে শাসকবৃন্দ ধর্মকে কলুষিত করেছিল, ক্ষমতাসীনদের স্বার্থ রক্ষা করত এবং সামাজিক বৈষম্যকে বৈধতা দান করত। শাহের রাজতন্ত্রের যে সমালোচনা খোমেনী করেন তা ছিল প্রধানত ইরানে বিরাজমান অর্থনৈতিক বৈষম্য কেন্দ্রিক। তিনি জনগণকে পবিত্র জিহাদে অবতীর্ণ হতে আহবান জানান:
ইসলাম সাহসী ব্যক্তি সমষ্টির ধর্ম যারা সত্য ও ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। ইহা তাদের ধর্ম যারা মুক্তি ও স্বাধীনতাপ্রিয়। এটা তাদের ধর্ম যারা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী।–[ ইমাম খোমেনী, ‘Islam and Revolition…., ২৮] জিহাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘ন্যায়পরায়ণ সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা’ করা এমন বৈষম্যহীন সমাজ যেখানে প্রত্যেক মানুষের পরিশীলিত নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির সুযোগ রয়েছে। জিহাদের জন্য ইমাম খোমেনী যে পথ, পন্থা ও পদ্ধতি অবলম্বন করেন তা হলো: ১. পাহলবী রাজতন্ত্রের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে আপোষহীন বিরোধীতা, ২. তিনি শাহের সরকারকে যুক্তরাষ্ট ও ইসরাইলের ক্রীড়নক হিসাবে চিহ্নিত করেন। ৩. তিনি খণ্ড খণ্ড বিচ্ছিন্ন সংস্কার ধর্মী পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে তিনি ধর্মীয় ফরমান ও ভাষণের মাধ্যমে জনগণকে শাহের বিরুদ্ধে সুসংগঠিত করেন, এসব বক্তৃতার অনেকগুলো ছিল তাঁর নির্বাসিত জীবন কালের ও ক্যাসেট ধারণকৃত, যা- ‘ক্যাসেক বিপ্লক’ শিরোনামটির জন্ম দেয়। তিনি জনগণকে উদ্ধুদ্ধ করে বলেন, ‘ইসলামী আইনের চলিষ্ণুতার বিষয়ে লিখুন ও পুস্তক প্রকাশ করুন, যাতে ইসলামের কল্যাণমুখী দিকগুলি জনগণ জানতে পারে। আপনাদের প্রচারণার ধরন ও পদ্ধতি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি আরো সমৃদ্ধশালী ও উন্নতকরণ… নিজেদের প্রতি গভীর বিশ্বাস রাখুন এবং জেনে রাখুন এ পবিত্র কাজটি আপনারা অবশ্যই সম্পাদত করতে পারবেন’।–[ ইমাম খোমেনী, ‘Islam and Revolition…., ৩৭]
রাজনৈতিক নিপীড়ন, অর্থনৈতিক শোষণ ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে খোমেনীর বাণী সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আবেদন সৃষ্টি করে। তিনি দেশ-বিদেশের সকল নির্যাতিত মানুষ, শ্রমিক, বিত্তহীন ও সাধারণ মানুষের অধিকারের কথা সোচ্চারভাবে ব্যক্ত করেন। যেখাকে ইরানের শাহের পতন ঘটান সম্ভব হয়েছিল তা ইসলামের অন্তর্নিহিত বিপ্লবী শক্তির পরিচয়বাহী। পাহলবী রাজতন্ত্র ইমামের নেতৃত্বে ইসলামী রাজনৈতিক ব্যবস্থা ধারা প্রতিস্থাপিত হয়। তিনি ‘বেলায়েতে ফকীহ’ ধারণা ও পদবী উপস্থাপন করেন, যার মর্যাদা ও ক্ষমতা সরকারের ঊর্ধে। ইমাম খোমেনীকে ইরান জাতি এ পদবীতে ভূষিত করে। ইমাম খোমেনীর মতে ‘বেলায়েতে ফকীহ’ কে ইরানী হতে হবে এমন শর্ত নেই, যদি তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ কর্তৃক গৃহীত হন। জাতীয়তার উর্ধ্বে ইসলামী চেতনাকে স্থান দান ইরানী সংবিধানের একটি অনন্য ধারার সংযোজন, যার তুলনা অন্যকোন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় পাওয়া যাবেনা। ইরানে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও গ্রামীণ দরিদ্র শ্রেণীর জন্য অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান সমূহের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলো। বহুবিধ সমস্যা থাকা সত্ত্বেও ইরানী ইসলামী রিপাবলিকান রাষ্ট্র একটি অনন্য সাধারণ উদাহরণ, যার গুরুত্ব ও তাৎপর্য ইরানের সীমারেখার বাইরে পর্যন্ত বিস্তৃত।–[ Nikki R. Keddie, ‘Iranian Revolution and Islamic Republic’ যুক্তরাষ্ট্র উইড্রো উইলসন সেন্টার, ১৯৮২), পৃ: ১৩]

একটি তুলনামূলক পরিপ্রেক্ষিত
ইরানের নাহদাহ আন্দোলনের প্রক্রিয়া ও বিজয়ের সাথে তুলনা করলে জামাত-ই-ইসলামী ও তাবলীগ আন্দোলনের অর্জন তাৎপর্যহীনতায় ম্লান হয়ে যায়। কারণগুলি সুস্পষ্ট। বিপ্লবের পথ রচনার জন্য সাইয়েদ মওদূদীর সামনে তেমন কো ঐতিহাসিক ঐতিহ্য ভাবমূর্তি ছিল না। পক্ষান্তরে ইমাম খোমেনী উত্তরাধিকার সূত্রে মুজাদ্দিদ বা সংস্কারকদের ভাবধারা ও অস্ত্রসমূহ প্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং তার সাথে নিজের জ্ঞান ও ব্যক্তিত্বকে সংযুক্ত করতে পেরেছিলেন। অধিকন্তু সুন্নী মতবাদের বিপরীতে শিয়া মতবাদে একটি শক্তিশালী বিপ্লবী ভাবধারা অন্তর্নিহিত রয়েছে। শিয়ারা ইমামবৃন্দ এবং তাদের মনোনীতদের কর্তৃত্বের সঠিক অধিকারী বলে মনে করেন। অন্যরা সবাই অবৈধ এবং তাদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে বলে মনে করতেন। এখানেই মূল বিষয়টি নিহিত: ‘সুন্নী দেশসমূহের মুসলমানরা শাসকদের মান্য করায় বিশ্বাস করে, পক্ষান্তরে শিয়ারা সব সময় বিদ্রোহ-বিপ্লবে বিশ্বাস করে-কখনো কখনো তারা বিদ্রোহ করতে পেরেছে আবার কখনো অবস্থার চাপে তারা নীরব থেকেছে’।–[ খোমেনী, ‘Islam and Revolution… পৃ: ৩২৭] পরিশেষে সাইয়েদ মওদুদীর প্রচেষ্টা পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিতদের ইসলামের পরিধির মধ্যে টেনে আনতে পেরেছিলেন। ইরানে ডঃ আলী শরীয়তী এ কাজটি সফলতার সাথে সম্পাদন করেছিলেন। উলেমা সম্প্রাদায়ের অর্থপূর্ণ অবদানের অনুপস্থিতির কারণে পাকিস্তানে সাধারণ জনগণের মধ্যে কোন জাগরণ সৃষ্টি হয়নি এবং এমতাবস্থায় জাতীয় নির্বাচনে জামাত জনসমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়। ইরানের ক্ষেত্রে উলেমাবৃন্দ ইমাম খোমেনীর চারপাশে জনগণকে সমবেত করতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন; তাছাড়া ইমাম খোমেনীও ছিলেন সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন আলেম। এভাবে কোন সংযোগহীনতা না থাকায়, ইরানে বিপ্লব সাফল্যমণ্ডিত হয়।

উপসংহার
বিশ্বব্যাপী মুসলিম পুনর্জাগরণেল যে ধারাক্রম চলছে তাকে মৌলবাদ, ইসলামী পুনরুত্তান, রেনেসাঁ ও অন্যান্য নানা নামে অভিহিত করা হচ্ছে। পশ্চিমে এই শব্দও পরিভাষার উদ্ভব বিধায়, এগুলি একদেশদর্শীতা, ভয় ও আবেগের জন্ম দিচ্ছে এবং এ শব্দগুলি অপপ্রয়োগ মাত্র। মুসলিম পুনর্জাগরণের এই ধারাকে আরবী শব্দে বা ইসলামী নাহদাহ পুনর্জাগরণ নামে অভিহিত করা অধিক যুক্তিসঙ্গত, কেননা বাস্তবতার নীরিখে মুসলিম অভিজ্ঞতা একে বাস্তব যৌক্তিকতা প্রদান করেছে (নাহদাহ অর্থ শিশুর মাঝে সুপ্ত সম্ভাবনা)।
ইসলামী প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে নাহাদাত আন্দোলনের স্বাতন্ত্রিক বৈশিষ্ট্য কি এ প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিক। উল্লেখ্য জনসাধারণের উপর ইসলামের প্রভাব বিপুল। মুসলমনাগণ নিজেদেরকে ন্যায়পরায়ণ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাজের সদস্য হিসাবে মনে করে। ধর্ম ও ধর্মনিরপেক্ষ এরূপ দু’টি পৃথক ক্ষেত্রের অস্তিত্ব ইসলাম স্বীকার করে না। চার্চের সাথে রাষ্ট্রের বিভেদকে ইসলাম স্বীকৃতি দেয় না। জীবনের সকল ক্ষেত্রেই ইসলামের ভূমিকা রয়েছে বলে মুসলমানরা মনে করে। আল্লাহ কর্তৃক মানবজাতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে ঘোষিত মুসলমানরা যেখানেই শাসন ক্ষমতা পাবে সেখানেই তারা অর্পিত দায়িত্ব হিসাবে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করবে। মহানবী (সা) ও তাঁর সাহাবীরা এ জিহাদ পরিচালনা করে গৌরবময় মুসলিম সভ্যতার পত্তন করেছিলেন। মুসলিমরা সে সভ্যতার জন্য সব সময়ে গর্বিত। জিহাদ, আশাবাদ ও সাফল্য হচ্ছে নাহদাহের চলমান প্রক্রিয়ার চারিকা শক্তি। এই উপাদান এবং প্রতি শতাব্দীর প্রথম ভাগে মুজাদ্দিদ বা সংস্কারকের আগমণ সম্পর্কে নবী করিম (সা) এর ভবিষ্যৎবাণী মুসলমানদের বিশুদ্ধ ইসলামের উত্থানের জন্য সংগ্রাম করতে উদ্ধুদ্ধ করে আসছে। নাহদাহ আন্দোলনকে তাই শুধুমাত্র ইসলামের কাঠামোর ভিতর থেকেই বোঝা সম্ভব। বিশেষ ধরনের সামাজিক অবস্থা ও বিশেষ রাজনৈতিক চাপ অতিরিক্ত উপাদান হিসাবে এই আন্দোলনকে গতিশীল ও জোরদার করেছে।
নাহদাহ আন্দোলনের নানা প্রকরণ রয়েছে। কিছু আন্দোলন শুধু নৈতিক সংস্কারের সাথে জড়িত, কিছু আন্দোলনের আর্থ-সামাজিক-রাষ্ট্রীক লক্ষ্য রয়েছে। প্রত্যেক গ্রুপের ভিতর আবার শ্রেণী বিভাজনমূলক ধারা রয়েছে, যেগুলোর স্ব স্ব বৈশিষ্ট্যসমূঞ উপলব্ধি করতে হবে। এ সবগুলো আন্দোলনের লক্ষ্য এক ও অভিন্ন, যা হচ্ছে একটি সুস্থ মানবিক ফলাফলের দিক থেকে তার সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য রয়েছে। ইরানী অভিজ্ঞতা হতে বলা যায় সাফল্য আসে বহু ত্যাগ, রক্তপাত, ঘাম, সংকল্প ও আল্লাহর উপর গভীর আস্থা থেকে। এটি রাজনৈতিক, আধ্যাত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রস্তুতিকর এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া, বুদ্ধিজীবী ও গণমানুষের শক্তির মনোগত সফল ঐক্য এবং একটি মনোভঙ্গি ও মনস্তত্ব যা প্রতিরোধ ও শাহাদাত বরণকে উচ্চতম মর্যাদা প্রদান করে।

পরিভাষা
‘আদালাহ’(ধাতুগতরূপ ‘আদল’) নৈতিক সঠিকতা, ন্যায়ানুগভাবে কাজ করা, প্রত্যেককে তার ন্যায্যা হিস্যা প্রদান করা। ‘আদালাহ’ পরিভাষাটি ‘সুবিচার’ শব্দটি হতে অনেক বেশী ব্যাপক এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে ব্যাপ্ত। একজন মানুষের নিজের প্রতি বা অন্যাণ্য সকলের প্রতি যা কিছু করা কর্তব্য তা ‘আদালাহ’ এর পরিধির মধ্যে পড়ে।
‘আদিল্লাহ’ (একবচন দালিল) প্রমাণ, ঐশীগ্রন্থ বা প্রতিষ্ঠিত আইন হতে অহরিত সাকষ্যপ্রমাণ বা বিধি।
‘আদল’ : চরিত্রের সঠিকতা, সুবিচার, আল্লাহর আনুগত্য অনুসারে কাজ করা।
‘আহদ’: প্রামাণিক পদমর্যাদা, চুক্তি, অঙ্গীকার।
‘আহকাম’ (একবচন হুকুম): আইন, বিধিবিধান; ঐশী নির্দেশনা সম্পর্কিত; সীমিত অর্থে কতিপয় আইনগত রায়।
‘আহকাম কুল্লিয়াহ ওয়া ফারিয়াহ’: সাধারণ বা সম্পূরক ধরনের শরীয়াহর অনুশাসন, কোনটি একাধিক বিষয় আওতাভুক্ত করে, আবার কোনটির সীমিত অর্থ রয়েছে।
‘আহল আল-হাল ওয়াল আকদ’ যা বন্ধন কঠোর ও শিথিল করে, প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিবর্গ, মুসলিম সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল ও ব্যক্তিবর্গ যারা শাসনকর্তাকে নিযুক্ত করে অথবা পদচ্যুত করে (খিলাফত)।
‘আহল আল কিতাব’: কিতাবী লোকগণ; বিশেষভাবে ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের বোঝায়, তবে জরোস্ত্রিয়ানদের বোঝাতেও ব্যবহৃত হয়।
‘আহল আল শুরা’ আলাপ আলোচনা বা পরামর্শে অংশগ্রহণ করা, পরামর্শ সভার সদস্যবৃন্দ (পার্লামেন্ট বা আইনসভা)।
‘আহল হাদি আল সাহিফাহ’: চুক্তিবদ্ধ লোকসমষ্টি।
‘আলী’: সমুন্নত, উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন।
‘আলীম’ (বহুবচন উলমা) : পণ্ডিত,জ্ঞানী, যিনি ধর্ম বিজ্ঞানে সবিশেষ জ্ঞান রাখেন।
‘আমানাহ’: আমানত, আমানতদারী, আস্থা, নির্ভরযোগ্যতা। ইহা শুধুমাত্র লোকসমষ্টির মধ্যে আচরণের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয় না বরং আল্লাহর সাথে অঙ্গীকারও বোঝাতে যে তিনি মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। আল্লাহর পক্ষ হতে মানুষের প্রতি ‘খিলাফতের’ দায়িত্ব একটি ‘আমানত’।
‘আমীর’: আদেশদাতা, নেতা।
‘আমীর আল মুমিনীন’: ঈমানদারদের নেতা, দ্বিতীয় খলীফা ওমর এই উপাধি প্রবর্তন করেন এবং পরবর্তীতে খলিফা পদবীর জন্য এই পরিভাষা ব্যবহৃত হয়েছে।
‘আমর বি আল-মারুফ ওয়া নেহী আন-আল মুনকার’ সত্যের উদ্বোধন ও মিথ্যার প্রতিরোধ করা।
‘আনসার’ : সাহায্যকারী, অনুসারী, পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানকারী; উম্মতের প্রতিষ্ঠার জন্য মক্কার মোহাজের মুসলমানদের সাথে রাসূলুল্লাহ (সা) এর অনুসারী যে সব মদীনাবাসীরা যোগ দেন।
‘আসাবিয়াহ’: দলগত আনুগত্য, সম্পদ্রায়ের স্বার্থ, সামাজিক দলের সংহতি প্রকাশ।
‘আওয়ান’: সাহায্যকারী, সহায়তাপ্রদানকারী, সহযোগী।
‘আওলিয়া’: সাহায্যকারী, পৃষ্ঠপোষক, সহায়তাকারী।
‘আয়াত’: সৃষ্ট মহাবিশ্বে আল্লাহর চিহ্নসমূহ; কুরআনের পংতি।
‘আয়াত আল আহকাম’: কুরআনের প্রত্যাদিষ্ট আয়াত যাতে আইনগত মূল্যবোধ বিধৃত আছে; অথবা কুরআনের আয়াত হতে অনুসৃত বিধান।
‘আইন আল ইয়াকীন’ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুভূতি’ পর্যবেক্ষণের সাহায্যে নিশ্চয়থার সাথে প্রাপ্ত জ্ঞান।
‘বায়াত’ চুক্তি, সমঝোতার ব্যবস্তা, শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, কোন শাসক বিশেষ করে খলিফার কাছে আনুগত্যের শপথ করা।
‘বায়াত আল আম’: সর্বসাধারণ কর্তৃক আনুগত্যের শপথ।
‘বায়াত আল খাস’: জনসাধারণের প্রতিনিধিগণ কর্তৃক আনুগত্যের শপথ।
‘বিদাত’ বিশ্বাস বা কার্যক্ষেত্রে নতুন কিছুর উদ্ভাবন, রাসূলুল্লাহ (সা) বা খোলাফায়ে রাশেদার সময় যার কোন প্রচলন ছিলান, এমতাবস্থায় কুরআন, সুন্নার বিরোধী।
‘দারুল হরব’: ‘যুদ্ধের আবাসস্থল’, এমন ভূ-খণ্ড যা ইসলামের শত্রুদের অধীনে রয়েছে।
‘দারুল ইসলাম’ ‘শান্তির আবাসস্থল’ এমন ভূ-খণ্ড যেখানে শরীয়াহর অনুশাসন জারী রয়েছে।
‘জরুরীয়াত’ এমন সব দ্রব্যসামগ্রী যা ছাড়া জীবনধারণ করা সম্ভব নয়, রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নাগরিকদের সাধারণ সুযোগ সুবিধা প্রদানের নিশ্চয়তা বুঝায়।
‘দাওয়াহ’: আহবান, আবেদন, আমন্ত্রণ; অমুসলিমদেরকে মুসলমান হবার জন্য বা যে সব মুসলমান সত্যপথ হতে সরে গিয়েছে তাদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য দাওয়াতী বা মিশনারী কার্য।
‘দাওলাহ’: রাষ্ট্র, সরকার বা রাজনীতির ক্ষেত্র
‘দায়া’: অপচয়, কারো সময়, শক্তি ও অর্থ ব্যয় করা যার কোন নৈতিক বিনিময় পাওয়া যাবে না।
‘জিকির’: আল্লাহর স্মরণ; বিভিন্ন সুফী তরীকার আধ্যাত্মিক শৃঙ্খলার মূল বিষয়।
‘দ্বীন’: বৃহত্তর অর্থে ধর্ম, যা মানবজীবনের সকল অঙ্গন পরিবেষ্টন করে আছে।
‘আদ-দ্বীন লিল্লাহ ওয় আল ওয়াতান লি জামী’ ধর্ম আল্লাহর জন্য এবং মাতৃভূমি সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য।
‘দিওয়ান’ প্রশাসনিক কার্যালয়, ব্যুরো; সরকারী রাজস্বের হিসাব বহি অর্থেও ব্যবহৃত হয়।
‘দিওয়ান আল মুজলীম’ ‘দিওয়ান আল নজর ফি আল-মুজালীম’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ
‘দিওয়ান আল নজর আল মুজালিম’ যে সংস্থা ঐতিহাসিকভাবে শাসন বিভাগের প্রশাসনিক কার্যকলাপের উপর তত্ত্বাবধানমূলক নজরদারী করে এসেছে।
‘দিয়াহ’: সময় সময় পরিবর্তন করা, সার্কিট তৈরী করা, বিকল্প ব্যবস্থা করা।
‘ফালাসিফাহ’ দার্শনিকবৃন্দ; মুসলিম পণ্ডিতবর্গ যারা গ্রীক ঐতিহ্য অনুযায়ী দর্শন চর্চা করতেন।
‘ফা-কা; কাফারু বি আল্লাহ’: যারা প্রকৃত প্রস্তাবে আল্লাহকে অস্বীকার করেছে।
‘ফকীহ’ (বহুবচন: ফুকাহা): ইসলামী আইনশাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি।
‘ফারাইদ’ (একবচন: ফরজ) আল্লাহ মুসলমানদের উপর যেসব কার্যাবলী বাধ্যতামূলকভাবে অবশ্য করণীয় করেছেন।
‘ফরজ’ (বহুবচন ফারাইদ) পাঁচওয়াক্ত নামাজের মত বাধ্যতামূলকভাবে অবশ্য করণীয় কার্যাদি; যা পালন না করলে শাস্তি পেতে হবে, পালন করার ক্ষেত্রে পুরস্কৃত হবে।
‘ফরজে আইন’: ব্যক্তির উপর অবশ্য পালনীয় কর্তব্য।
‘ফরজে কিফায়াহ’ সমাজের উপর অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। সমাজের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তি তা পালন করলে, সমাজের অন্যান্য ব্যক্তি কর্তব্যকাজটি হতে অব্যাহতি প্রাপ্ত হয়।
‘ফাতওয়া’ (বহুবচন: ফাতাওয়া) কোন আইনগত বিষয়ের উপর কোন আইনবিশারদ কর্তৃক প্রদত্ত মতামত। যে ব্যক্তি ফতোয়া প্রদান করেন তিনি ‘মুফতী’ নামে অভিহিত।
‘ফিকাহ’: শাব্দিক অর্থে উপলব্ধি করা, বুঝা জ্ঞান এবং বিশেষ অর্থে ইসলামী আইনশাস্ত্র বিজ্ঞানকে বুঝায়।
‘ফুকাহা’ (একবচন ফকিহ) আইনশাস্ত্রবিদগণ বা ফকিহগণ যারা আইনের মর্মার্থ উপলব্ধিতে বিশষজ্ঞ।
‘হাদ’ (বহুবচন: হুদুদ) সীমারেখা, প্রান্তরেখা, নিষিদ্ধ যে সব কার্যকলাপের জন্য কুরআনে শাস্তি বিধান করা হয়েছে।
‘হাদীস’: নবী করিম মোহাম্মদ (সা) এর সুন্নাহ তথা তার উক্তি, বক্তব্য, কার্যাবলীও সাহাবীদের কারো কাজে মৌন সম্মতি।
‘হাফিজ’: অভিভাবক, সংরক্ষণকারী; যিনি কুরআন হফিজ বা মুখস্থ করেছেন।
‘হাজীয়াহ’ ঐসব দ্রব্য সামগ্রী যার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তবে অত্যাবশ্যক নয়।
‘হজ’ : মক্কাশরীফে তীর্থযাত্রা।
‘হালাল’ : আইনসঙ্গত; খাদ্য ও কার্যকলাপের বিষয়ে যেগুলি অনুমোদিত।
‘হক’ : সত্য।
‘হক আল ইবাদ’ ব্যক্তির নিজের প্রতি অন্যান্য মানুষের প্রতি ও অন্যান্য জীবজন্তু ও প্রাণীর প্রতি আল্লাহর নির্ধারিত দায়িত্ব ও কর্তব্য।
‘হাক্কুল্লাহ’: আল্লাহর প্রতি নির্ধারিত দায়িত্ব ও কর্তব্য।
‘হক্কুল ইয়াকীন’ :স্বজ্ঞঅ বা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার দ্বারা অর্জিত পূর্ণ নিশ্চয়তামূলক জ্ঞান। ইন্দ্রীয়জান বা বিচারবুদ্ধিজাত কোন ভ্রান্তি থাকতে পারে না এমন নির্ভুল সত্যজ্ঞান।
‘হারাম’ বেআইনী, নিষিদ্ধ, হালালের বিপরীত; পবিত্র অর্থেও শব্দটি ক্ষেত্রবিশেষে ব্যবহৃত হয়।
‘হিজাব’ বোরখা, চাদর; মুসলিম মহিলাদের হে আবৃত করার জন্য নির্ধারিত আচ্ছাদন।
‘হিজরা বা হিজরত’ : একস্থান হতে অন্য স্থানে গমন; বিশেষ করে মহানবী (সা) কর্তৃক ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মক্কা হতে মদীনা গমন। এই ঘটনাকাল হতে ইসলামী বর্ষপঞ্জী গণনা করা হয়।
‘হিসবাহ’ সত্যকে উৎসাহিতকরণ ও মিথ্যাকে প্রতিরোধ করার জন্য প্রত্যেক মুসলমানের উপর অর্পিত দায়িত্ব; বাজার ও অন্যান্য স্থানের নৈতিক পবিত্রতা রক্ষার দায়িত্ব প্রাপ্ত সরকারী কার্যালয়।
‘হিযবুল্লাহ’: আল্লাহর দল; যারা আল্লাহর আদেশ নিষেধ অনুসরণ ও কার্যকর করে।
‘হুদুদ’ (বহু বচন : হাদ্) : কুরআন ও সুন্নায় সে সব অপরাধের শাস্তি বর্ণিত রয়েছে।
‘হুদুল-আল-শরীয়াহ’: ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী প্রদত্ত শাস্তি।
‘হুকুম’ (বহুবচন: আহকাম) আইন, রায়, কর্তৃত্ব; কাজীর রায়, বিচারের রায়, ন্যায়বিচার প্রয়োগ করা।
‘আল-হুরমাহ’: পবিত্রতা, পংকিলতা, পযকিলতামুক্ত, মহা পবিত্র ও অলংঘনীয়তা।
‘আল-হুররিয়াহ’: মুক্তি, স্বাধীনতা।
‘ইবাদাহ’ (বহুবচন: ইবাদত) উপাসনা, আরাধনা, ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন; আল্লাহ কর্তৃক সকল দায়িত্ব পালন করা; চিন্তা ও কর্মে জীবনের প্রতি পদক্ষেপ আল্লাহর আদেশ মেনে চলা।
‘ইজমা’ ঐক্যমত্য; ইসলমী আইনের চারটি উৎসের একটি; কোন বিষয়ের উপর উলেমাবৃন্দ বা জনসাধারণের সর্ববাদিসম্মত একমত পোষণ করা।
‘ইজতিহাদ’: আইনগত বৈধতার প্রশ্নে স্বাধীন চিন্তার প্রয়োগ; শরীয়াহর বিধি বিধানের প্রশ্নে ব্যাখ্যা প্রদান; কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে কোন বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা। যে যোগ্য ব্যক্তি ‘ইজতিহাদ’ পরিচালনা করেন তাকে ‘মুজতাহিদ’ বলা হয়।
‘ইখলাস’ : আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততা।
‘ইকরাম আল মুসলীম’: মুসলমানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন
‘ইলাহ’ : দেবতা, ঈশ্বর (?)
‘ইল্লাহ’: বিশেষ কার্য বা রায়ের অন্তর্নিহিত কারণ।
‘ইলম’ : জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রজ্ঞা; কোন ক্ষেত্রে প্রকৃত বাস্তবতা বিষয়ক জ্ঞান।
‘ইলম-আল-কালাম’ : দ্বান্দ্বিক বা পদ্ধতিসুসমন্বিত ধর্মতত্ত্ব; ইসলামের একপ্রকার ‘ধর্ম বিজ্ঞান’।
‘ইলম-আল-ইয়াকীন’: যুক্তি, বুদ্ধি বা অবরোহগত জ্ঞান।
‘ইমাম’ : নেতা, প্রধান, নাজাম পরিচালনাকারী; খলিফার সমার্থক শব্দ।
‘ইমামহ’: ইমমাত, খিলাফতের প্রতিশব্দ বা সমার্থক শব্দ, ইসলমী রাজনৈতিক ব্যবস্থা।
‘ঈমান’ বিশ্বাস, আত্মসমর্পণ, নৈতিক মূল্যবোধের উৎস ইসলামে যা সর্বোচ্চ বলে স্বীকৃত।
‘ইন্না ইয়াহুদ বনি আউফউম্মাহ মা’আ আল-মুমিনিন’ বিশ্বাসীদের সাথে বনি আউফ গোত্রের ইহুদীরা একই উম্মতভুক্ত।
‘ইসতিহসান’ সম্মতি, অনুমোদন, আইনগত পছন্দ, কোন কিছুকে ভালো মনে করা, প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজনীয়তার সাথে সঙ্গতি রেখে আইনগত কোন সমস্যার ক্ষেত্রে বিবেক বুদ্ধি মতে সমাধান প্রদান করা, আইনগত সমাধানে পৌঁছার পদ্ধতি।
‘ইসতিসহাব’ কোন আইনগত নীতি বর্তমানে বিদ্যমান নই বা পরিবর্তিত হয়েছে এ মর্মে প্রকাশিত হবার পূর্ব পর্যন্ত ঐ আইনগত নীতির কার্যকারিতা বহাল থাকা।
‘ইসতিসলাহ’ জনস্বার্থ সম্পর্কিত; জনগণের কল্যাণ কামনা, আইনের উৎস হিসাবে বিবেচিত।
‘ইজাহ’ : আনুগত্য।
‘জাহিল’ : অজ্ঞ, ঐশী প্রত্যাদেশে বর্ণিত সুসভ্য জীবনে বুঝতে বা উপলব্ধি করতে যে অক্ষম।
‘জাহিলিয়াহ’ : অজ্ঞানতার যুগ, প্রাক-ইসলামিক আরব ইতিসাহের যুগ, বর্তমান মুসলিম সমাজের দুর্নীতিপরায়ণ বুঝাতেও শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
‘জামাহ’ দল, সম্প্রদায়, উম্মাহর সমার্থক শব্দ, কিন্তু আরো সংকীর্ণ অর্থেও শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
‘জিহাদ’: প্রচেষ্টা, ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধতা অর্জনের চেষ্টা, ইসলামকে রক্ষা করার জন্য যুদ্ধ, যিনি সক্রিয়ভাবে জিহাদে লিপ্ত থাকেন তাকে ‘মুজাহিদ’ বলা হয়।
‘জিহাদ ফি সাবিল আল্লাহ’ : আল্লাহর পথে নিজ দায়িথ্বপালনের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা; নিজের ভিতর ভুলক্রটি সংশোধনের জন্য অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কার্য, আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা।
‘কাবাহ’ : শাব্দিক অর্থে ‘ঘনক্ষেত্র’, মক্কায় অবস্থিত ইসলামের প্রধান পবিত্র স্থান।
‘কাফাহ’ : যোগ্যতা, দক্ষতা, উপযুক্ততা।
‘কাফির’ : অবিশ্বাসী, নাস্তিক, অকৃতজ্ঞ, যে ব্যক্তি ইসলামের বাণী বিশ্বাস বা গ্রহন করে না।
‘কালাম’ : বিশেষভাবে ধর্মীয় বিষয়ের উপর বক্তৃতা ভাষণ।
‘খলিফাহ’ : যিনি পরে আসেন, উত্তরসুরী, বিশেষকরে নবী করিম (সা) এর প্রতিনিধি।
‘খিলাফত’: উত্তরাধিকার, দুনিয়ার বুকে আল্লাহ পাকের প্রতিনিধিত্ব করার পদ, ইমামত শব্দের সমার্থক।
‘খিলাফত আল নবুওয়াহ’ নবী করিম (সা) এর প্রতিনিধিত্ব, যা দ্বারা মদীনার যুগের খিলাফতকে বুঝায়।
‘খাওয়ারীজ’ : যারা বাহির হয়ে গেছে, ভিন্নমত পোষণকারী; সিফফিনের যুদ্ধের সময় যারা চতুর্থ খলিফা আলীর দলত্যাগ করে এবং আলাদা দল গঠন করে।
‘খোলাফায়ে রাশেদীন’ : সঠিক পথে পরিচালিত উত্তরসূরীগণ, এ পরিভাষাটি প্রথম চার খলিফা আবুবকর, ওমর, ওসমান ও আলী সম্পর্কে ব্যবহৃত হয়, যারা নবী করিম (সা) এর সাহাবী ছিলেন এবং মুসলিম উম্মাহ কর্তৃক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাদের শাসনকাল সর্বোচ্চ আদর্শ ও অনুসরণীয় বলে বিবেচিত।
‘কিতাব’ : লিখা, পুস্তক, গ্রন্থ।
‘কুফর’ : অবিশ্বাস, ধর্মদ্রোহীতা, অকৃতজ্ঞতা, নাস্তিকতা।
‘মাজহাব’ কার্যপ্রণালী, ইসলামী আইনশাস্ত্রের পদ্ধতি, চারিটি সুন্নী তরিকা সম্পর্কে পরিভাষাটি ব্যবহৃত হয়; হানবলী ,মালেকা, হানাফী সাফীঈ।
‘মাহদী’ : পথ প্রদর্শক, নেতা; সত্য, ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যার আগমন সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে।
‘মাহদীয়াত’ : মাহদী সম্পর্কিত, মাহদীবাদ।
‘মজলিস’ : পরামর্শ সভা যেখানে জনস্বার্থমূলক বিষয়াদি আলোচনা করা হয়।
‘মজলিস আল বায়াত’ : জাতীয় সংসদ
‘মজলিসে শূরা’ পরামর্শ সভা।
‘মাকরুহ’ অপ্রীতিকর, যেসব কাজ করতে মুসলিমদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে; যেসব কাজ না করলে পূণ্য অর্জিত হবে, কিন্তু করলে শাস্তি প্রদান করা হবেনা।
‘মানদুব’ :সুপারিশকৃত; যে সব কাজ করার জন্য মুসলমানদের জন্য উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে এবং যে সব কাজ করলে পূণ্য অর্জিত হবে, তবে না করলে শাস্তি প্রদান করা হবে না।
‘মারিফাত’ : আধ্যাত্মিক জ্ঞান বা উপলব্ধি
‘মারুফাত’ : ভালো, উপকারী, উপযুক্ত; ঐশীপ্রত্যাদেশ বা যুক্তিবুদ্ধি যে সব পূণ্য কাজ করতে মুসলমানদের উৎসাহিত করেছে।
‘মাওয়ালী’ : পৃষ্ঠপোষক, বন্ধু।
‘মুজালিম’ : মন্দকাজ, ভুলকাজ, বৈষম্য, অবিচারমূলক কাজ।
‘মিজান’ : দাড়িপাল্লা, ওজন, সমতা, সুষমতা।
‘মুয়ামালাত’ : মদীনায় রাসূলুল্লাহ (সা) কর্তৃক মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন।
‘মুয়ামালাত’ : অন্যের প্রতি আচরণ; ইসলামী আইন অনুযায়ী অর্থনৈতিক লেন-দেন।
‘মুবাহ’ : অনুমোদিত; যে কাজের জন্য মুসলমানগণ পুণ্য বা শাস্তি কিছু প্রাপ্ত হবে না।
‘মুবিন’ : সুস্পষ্ট, সমুজ্জল, স্থানকালের পরিসীমায় সমগ্র মানবতার জন্য বুদ্ধিগ্রাহ্য।
‘মুফতী’ : আইনশাস্ত্র বিশারদ; কুরআন, সুন্নাহ ও ফিকাহশাস্ত্রে পারদর্শী পণ্ডিত।
‘মুহাররামাত’ নিষিদ্ধ শাস্তিযোগ্য; ক্ষেত্র বিশেষে ‘পবিত্র’ অর্থে নিষিদ্ধ মর্মেও পরিভাষাটি ব্যবহৃত হয়।
‘মুহাসাবাহ’ : জবাবদিহিতা; বিবেকের পরীক্ষা।
‘মুহতাসীব’ ‘হিসবাহ’ এর দায়িত্বে নিযুক্ত কর্মকর্তা।
‘মুজাদ্দিদ’ : ইসলামের সংস্কারক; কুরআন ও সুন্নাহর অনুশাসনের বিচ্যুতি সংশোধন করে যিনি ইসলামকে পুর্জীবন দান করেন।
‘মুজাহিদ’ : যিদি সক্রিয়ভাবে জিহাদে রত থাকেন।
‘মুজতাহিদ’ : যিনি সক্রিয়ভাবে জিহাদে রত থাকেন।
‘মুজতাহিদ’ যিনি আইনগত প্রশ্নে প্রাজ্ঞ মতামত দিতে সক্ষম তথা ‘ইজতিহাদ’ পরিচালনা করেন।
‘মুলুক’ : রাজত্ব, রাজকীয় মর্যাদা, শাসন, সরকার, অস্থায়ী কর্তৃত্ব।
‘মুনকারাত’ ঐশী প্রত্যাদেশ বা যুক্তিবুদ্ধি দ্বারা যে সব পাপকর্ম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
‘মুসাওয়াহ’ : সমতা
‘মুসেয়তীর’ : বলপূর্বক কার্য সম্পাদনকারী; কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার উপর অন্যের মত চাপিয়ে দেয়া।
‘মুশরিকুন’: বহুত্ববাদী; যারা আল্লাহর সহিত কাউকে শরিক করে। কুরআন অনুযায়ী ইহা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
‘মুসতাখলাফ’ : জিম্মাদার, অভিভাবক।
‘মুতাজিলাহ’ ধর্মতত্ত্ব চর্চার একটি প্রণালী; ‘আলাদাভাবে দণ্ডায়মান হওয়া’ শব্দ হতে পরিভাষাটি এসেছে।
‘মুত্তাকী’ (ধাতুগত রূপ: তাকওয়া) যে ব্যক্তি আল্লাহ, প্রকৃতি ও মানব সমাজের প্রতি ইসলামী দায়িত্বশীলতা সম্পর্কে সচেতন।
‘মুওয়াহহীদ’ : তাওহীদে বিশ্বাসী; চিন্তায় ও কার্যে সর্বদা ঐশী একত্বে বিশ্বাসী।
‘নাহদাহ’ : পুনর্জাগরণ; শিশুর মাঝে সুপ্ত শক্তির জাগরণ, পরিভাষাটি ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে ব্যবহৃত হয়।
‘নাসব’ : বংশানুক্রমিকতা, আত্মীয়তা।
‘নিয়ত’ ইচ্ছা, প্রতিজ্ঞা, অভিপ্রায়, নামাজের মত ধর্মীয় আনুষ্ঠানিক কাজের পূর্বে অভিব্যক্তি ইচ্ছা বা এরাদা।
‘কাজা’ : কাজীর কার্য ও কার্যাবলী, বিচার বিভাগ, কাজী কর্তৃক প্রদত্ত রায়।
‘কাজফ’ অবমাননাকর অভিযোগ
‘কাজী’ কাজী; নিয়োজিত কিন্তু স্বাধীন ধর্মীয় কর্তৃত্ব যিনি শরীয়াহ অনুযায়ী বিচার করেন।
‘কাহর ওয়া ঘালাবাহ’ :শক্তি ও সীমাবদ্ধতা
‘কানুন’ : খলিফার রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক আদেশ।
‘কাসামাহ’ : ভাগ, অংশ,হিস্যা।
‘কাওয়াইদ’ : সাধারণ নীতিমালা।
‘কওম’ গোত্র, লোকসমষ্টি, জাতি।
‘কিবলাহ’ : মক্কার দিক, যে দিকে মুখ করে মুসলমানগণ নামাজ আদয় করেন।
‘কিসাস’ : প্রতিশোধ গ্রহণ করা,তার বিরুদ্ধে যে অন্যায় করা হয়েছে তজ্জন্য।
‘কিন্তু’ : সুবিচার, ন্যায়বিচার।
‘কিয়াস’ : অবরোহী পদ্ধতিতে যুক্তি প্রয়োগ। ইহা শরীয়ার চতুর্থ উৎস। ইহা ইজতিহাদ পরিচালনার বিশেষ পদ্ধতি।
‘রাসূল’ : বাণী বাহক; সমগ্র মানবতার জন্য ঐশী বাণী বাহক নবী।
‘রে’ : বিশেষত আইনগত প্রশ্নে ব্যক্তিগত মতামত।
‘রিবা’ : ঋনের উপর ধার্যকৃত সুদ, ইসলামে রিবা বা সুদ নিষিদ্ধ।
‘রিবাত’ মুসলিম দেশের সীমান্তে সেনাবাহিনী স্থাপনা বা দুর্গ; সুফী সম্প্রদায়ের নির্জনবাসের আশ্রয়স্থল অর্থে ব্যবহৃত হয়।
‘রিসালত’ : নবী মারফত বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য প্রেরিত ঐশী প্রত্যাদেশ; নবুয়তের পদ।
‘সালাফিয়াহ’ : যোগ্য উত্তরসূরী।
‘সালামাহ’ : নিষ্কলুষতা, ত্রুটিহীনতা, চারিত্রিক সংহতি।
‘সা’ব’ : আত্মীয়তার সম্পর্কে সম্পর্কীত লোকসমষ্টি।
‘শাহাদাত’ : বিশ্বাসীদের অঙ্গীকার; আল্লাহর একত্ব ও মোহাম্মদ (সা) এর রিসালতের সাক্ষ্য প্রদান করা; গভীর বিশ্বাসের সাথে কলেমা শাহাদাত উচ্চারণ একজনকে মুসলমানে পরিণত করে; অর্পিত দায়িত্ব পালনের প্রমাণ।
‘শারা’ : ইসলামী আইনের ঐশী উৎসের ভিত্তিতে আইন প্রয়োগ করা।
‘শারী’ : আইনসম্মত, বৈধ।
‘শরীয়াহ’ : শাব্দিক অর্থে পানির উৎসের দিকে গমনের পথ। কুরআন, সু্ন্নাহ, ইজমা, কিয়াস বা ইজতিহাদের ভিত্তিতে প্রণীত ইসলামী আইন বা আচরণ বিধি। ইহা ইসলামী ব্যবস্থার সমগ্রতা।
‘শিয়া’ : দল, উপদল, সম্প্রদায়; যারা আলী ও তাঁর অধস্তন পুরুষদের সঠিক খলিফা বলে মনে করেন।
‘শির্ক’ : বহুত্ববাদ, মূর্তিপূজা; যারা আল্লাহর সহিত কোন কিছুকে শরীক করে।
‘শুরা’ পরামর্শ, আলাপ আলোচনা; একটি রাজনৈতিক নীতিমালা যেথায় জনগণ নিজেদের প্রতিনিধিদের সাথে আলাপ আলোচনা, পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে শুরা পার্লামেন্ট (মজলিসে শুরা) এর সমার্থক।
‘মুউবিয়াহ’ : আরবদের অধিক সুবিধা প্রদানের সমর্থক একটি আন্দোলন।
‘সিহাহ’ ইমাম আল বুখারী, ইমাম মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ এবং আল তিরমিজী কর্তৃক সংকলিত নবী করিম (সা) হাদীসসমূহের ছয়টি প্রামাণিক গ্রন্থ।
‘সিরাত’ : জীবন চরিত।
‘সিরাতুল মুস্তাকিম’ : সঠিক পথ, প্রত্যাদিষ্ট পন্থা।
‘সিয়াসাহ’ কর্তৃত্ব; শাসক বা তার প্রতিনিধি কর্তৃক প্রশাসনিক বিচার কার্য; সরকারী প্রশাসন, নীতি, রাজনীতি।
‘সিয়াসাহ আদিলাহ’ : ন্যায়পরায়ণ সরকার।
‘সিয়াসাহ আকলিয়াহ’ : যুক্তিভিত্তিক সরকার।
‘সিয়ামাহ শরীয়াহ’ : শরীয়ত ভিত্তিক ব্যবস্থা।
‘সুফী’ : মুসলিম আধ্যাত্মবাদী বা মরমীবাদী; যিনি ইসলামী আধ্যাত্মবাদ চর্চা করেন।
‘সুলতান’ : ক্ষমতা, দুনিয়াবী শাসনকর্তা, একজন স্বাধীন শাসক।
‘সুন্নাহ’ : নবী করিম (সা) এর উক্তি, কার্য, জীবনাচরণ বা সাহাবীদের কারো কার্যে মৌন সম্মতিকে সমন্বিতভাবে সুন্নাহ বলা হয়। নবী করিম (সা) এর সুন্নাহ শরীয়তের অন্যতম উৎস।
‘সূরা’ : কুরআনের অধ্যায়।
‘তাবলীগ’ : প্রচার, ঘোষণা; দাওয়াহ এর প্রতিশব্দ।
‘তাগুত’ মন্দশক্তি, সীমা লংঘনকারী অপশক্তি, আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, মিথ্যা দেবদেবী, খারাপ কাজের মন্ত্রণাদানকারী।
‘তাহসিনিয়াত’ সৌকর্যবৃদ্ধিকরণ, সুন্দর করা, কোন কিছুকে নিখুঁত করে চরম উৎকর্ষে পৌঁছান।
‘তাজদীদ’ : পুর্জ্জীবন, পুনরুত্থান, প্রামাণিক ও আদি উৎস অনুসারে ইসলামী শিক্ষার পুনর্জ্জীবন। যিনি ‘তাজদীদ’ চর্চা করেত তাকে ‘মুজাদ্দিদ’ বলা হয়।
‘তাকলীদ’ : অন্ধ অনুকরণ, স্বাধীনভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে কোন ধর্মতত্ত্ববিদ বা আইনশাস্ত্রবিদ যে পদ্ধতি প্রদান করেছেন তা অনুসরণ করে চলা।
‘তাকলীদ আল –ইমামাহ’ শরীয়াহর কোন বিধানের বিষয়ে ইসলামী আইনজ্ঞগণের প্রদত্ত রায় অনুসরণ করা।
‘তাকওয়া’ ধর্মপরায়ণতা, খোদাভীতি; ইহা বিশ্বাস, ধর্মানুগতা, আনুগত্য ও আল্লাহর সাথে অঙ্গীকারের সমন্বয়; ইহা আল্লাহর নৈকট্য ও তাকে সন্তুষ্ট করার প্রচেষ্টাকেও বুঝঅয়।
‘তাশরী’ : আইন প্রণয়ন।
‘তাওহীদ’ আল্লাহর ঐশ্বরিক একত্বতা, যা কালেমা শাহাদাতের প্রথম অংশে ব্যক্ত হয়েছে। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া এবাদতের যোগ্য আর কেউ নেই। ইহা ইসলামের সামগ্রিকতার নির্যাস।
‘তাউইল’ মূল গ্রন্থে যার অস্পষ্টতা বা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ রয়েছে তার প্রতীকি ব্যখ্যা।
‘তা’যীর’ : নিরোধক; কাজী কর্তৃক প্রদত্ত বিচার বুদ্ধিসম্পন্ন শাস্তি।
‘তাযীরাত’ : নিরোধসমূহ; বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন শাস্তিসমূহ।
‘উখুওয়াহ’(ধানুগত রূপ: আখ বা ভাই) : ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব।
‘উলামা’ (একবচন: আলেম) : মুসলিম আইনশাস্ত্রবিদ, পণ্ডিত, ধর্মতত্ত্ববিদ; যে ব্যক্তিবর্গ শরীয়াহর জ্ঞানে পারদর্শী।
‘উলুল আমর’ : শাসক, আদেশ, প্রদানকারী, আইন শাস্ত্রবিদ; যারা জ্ঞান।
‘উমাম’ (উম্মাহ’র বহুবচন) : সম্প্রদায় সমষ্টি, লোক সমষ্টি।
‘উমারা’ (আমীর’র বহুবচন):শাসকবৃন্দ, আদেশদাতাগণ।
‘উম্মাহ’ সম্প্রদায়, দল, লোকসমষ্টি; ভাষা, বর্ণ, জাতিসত্তা, গোত্র নির্বিশেষে মুসলিম উম্মাহ একই ও অভিন্ন আদর্শ, ধর্ম, আইন, জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ও নৈতিকতার ভিত্তিতে সুসমন্বিত ও সংঘবদ্ধ সম্প্রদায় বা জাতি।
‘উম্মাহ মুসলিমাহ’ : জাতিসত্তা, বর্ণ ইত্যাদি নির্বিশেষে ঈমানদারদের দল বা গোষ্ঠী।
‘উম্মাহ ওয়াহিদাহ’ একক সম্প্রদায়। কুরআন ১০:‌‌১৯ আয়াতে সমগ্র মানবজাতিকে একটি মাত্র সম্প্রদায় হিসাবে উল্লেখ করেছে।
‘উরফ’ : সমাজের রীতিনীতি, নীতিনীতির ভিত্তিতে সাম্প্রতিক কালের আইন বা প্রথা।
‘উরুবাহ’ : আরব জাতীয়তাবাদ, আরবীয় চরিত্র।
‘উসুল আল ফিকাহ’ : আইনশাস্ত্র বিজ্ঞান।
‘উসওয়াহ হাসানাহ’ : অনুসরণযোগ্য আদর্শ চরিত্র।
‘ওয়াজীবাত’ (ওয়াজিব এর বহুবচন): বাধ্যতামূলকসমূঞ।
‘ওয়াকিল’ : কর্তৃত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি; বিরোধ, বিবাহ, বিবাদ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে এক বা উভয় পক্ষ কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি।
‘ওয়াকফ’ সমাজকল্যাণ বা ধর্মীয় উদ্দেশ্য গঠিত দাতব্য প্রতিষ্টান।
‘ওয়ারা’ খোদাভীতি, আল্লাহর শাস্তি সম্পর্কে সচেতনতা, ইসলামের প্রতি অঙ্গীকার
‘ওয়াসাত’ : মধ্যপন্থা।
‘উইলাইয়অহ’ : জনগণের কাজ, দক্ষতা, অধিক্ষেত্র, সরকারী কার্যালয়, কর্তৃত্ব।
‘জাকাত’ একজন মুসলমানের সম্পদ ও আয়ের একটি অংশ নির্দিষ্ট গরীব ও দরিদ্র জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া। ইহা অন্যতম বাধ্যতামূলক এবাদত। জাকাত প্রদানের মাধ্যমে ধনসম্পদের পরিশুদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
‘জিনা’ : ব্যভিচার।
‘জুলুম’ : নিপীড়ন, নির্যাতন, অবিচার, কারো ন্যায্যা পাওনা প্রদান না করা, ‘আদালাহ’ এর বিপরীত শব্দ। কুরআনে শির্ক, করাকে ‘জুলুম’ এবং অবিশ্বাসীদের জালিমরূপে অভিহিত করা হয়েছে (আল কাফিরুনা হুম আল জালিমুন)।

পরিশিষ্ট-ক
একটি ইসলামী রাষ্ট্রের কাঠামো
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

১. ইসলামী উম্মাহ
আর্টিকেল ১
ক. সব মুসলমান মিলে একটি একক উম্মাহ গঠিত
খ. শরীয়াহ সকল আইনের উৎস।
আর্টিকেল ২
ইসলামী উম্মাহর মধ্যে বিভিন্ন রাষ্ট্র থাকতে পারে এবং তাদের ভিন্ন ভিন্ন ধরনের সরকার ব্যবস্থা থাকতে পারে।
আর্টিকেল ৩
একটি রাষ্ট্র অন্য একটি রাষ্ট্র বা একাধিক রাষ্ট্রের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একই রাষ্ট্র গঠন করতে পারে অথবা পারস্পরিক সম্মতিক্রমে অন্য কোনভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে।
আর্টিকেল ৪
জনগণ ইমাম, তার পরিষদবর্গ ও রাষ্ট্রের অন্যান্য কর্মকর্তা, কর্মচারীরর উপর নজর রাখবে এবং শরীয়াহর বিধান অনুযায়ী তাদের দায়ী করতে পারবে।

২. রাষ্ট্রের দায়িত্ব
আর্টিকেল ৫
পারস্পরিক সহযোগীতা ও সামাজিক নিরাপত্তা সমাজের ভিত্তি গঠন করে।
আর্টিকেল ৬
প্রত্যেক ব্যক্তিকে সৎকাজের উদ্বোধন ও মন্দকাজকে প্রতিহত করতে হবে; যে ব্যক্তি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও দায়িত্ব পালন করবেনা সে গুনাহগার হিসাবে পরিগণিত হবে।
আর্টিকেল ৭
পরিবার হচ্ছে সমাজ ব্যবস্থার মৌলিক একক। এর অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে দ্বীন এবং নৈতিকতা। রাষ্ট্র পরিবারকে সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করবে, মাতৃত্ব ও শিশুদের সংরক্ষণ করবে এবং এসব উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সর্বপ্রকার সহায়থা প্রদান করবে।
আর্টিকেল ৮
পরিবার ব্যবস্থা সংরক্ষণের জন্য রাষ্ট্র বিবাহ প্রথাকে উৎসাহিত করবে এবং তজ্জন্য বস্তুগত সহায়তা যথা বাসস্থান অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করবে। বৈবাহিক জীবনকে সম্মানের চোখে দেখা হবে এবং এমন ইতিবাচক সাহায্য-সহযোগীতা প্রদান করা হবে যাতে স্ত্রী স্বামীর একজন ভালো সহযোগী হতে পারে, সন্তানদের দেখাশুনা করতে পারে, এবং পরিবারের যত্ন নেয়ার বিষয়টিতে নিজের সমস্ত শক্তি নিয়োজিত করতে পারে।
আর্টিকেল ৯
উম্মাহ তথা প্রত্যেক ব্যক্তি মানুসের স্বাস্থ্য রক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সুস্বাস্থ্য রক্ষা ও রোগ নিরাময়ের জন্য রাষ্ট্র বিনা খরচে নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করবে।
আর্টিকেল ১০
জ্ঞানার্জনের বাধ্যবাধকতা ও সে মর্মে নির্দেশনা প্রদান রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
আর্টিকেল ১১
ধর্মীয় শিক্ষা সকল স্তরে মৌলিক নির্দেশ হিসাবে কাজ করবে।
আর্টিকেল ১২
ছাত্রদের শিক্ষাবর্ষের মধ্যে মহানবী (সা) এবং খোলাফাফায়ে রাশেদার নৈতিক ও অন্যান্য জীবনাচরণের শিক্ষা নির্যাস প্রদান করতে হবে।
আর্টিকেল ১৩
সর্ব ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় ছাত্রদের শিক্ষাজীবনের মধ্যে কুরআন অধ্যয়নের সর্ববিধ সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। অনিয়মিত ছাত্রদের কুরআন হেফজ করার জন্য বিশেষ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। রাষ্ট্র কুরআন প্রকাশনা ও বিতরণের ব্যবস্থা করবে।
আর্টিকেল ১৪
কারো সম্পদ, অর্থকড়ি অথবা সরকারী কর্তৃত্ব জাহির করা অবৈধ এবং এসব প্রদর্শনী হতে বিরত থাকা বাধ্যতামূলক। জনচরিত্রের পবিত্রতা রক্ষার জন্য সরকার আদেশ জারী করবে এবং শরীয়াহর নির্দেশনা অনুযায়ী আইন প্রয়োগ করবে।
আর্টিকেল ১৫
আরবী হবে সরকারী ভাষা (অনারব দেশের ক্ষেত্রে সে দেশের ভাষা) এবং সরকারী চিঠিপত্রে হিজরী সনের ব্যবস্থার বাধ্যতামূলক হবে।
আর্টিকেল ১৬
জনগণের সেবা তথা দ্বীন-ধর্মের সংরক্ষণ, চরিত্রের শুদ্ধতা, জীবন, সম্মান ও সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধান করার মধ্যে সরকারের কর্তৃত্ব নিহিত ও নির্ভরশীল।
আর্টিকেল ১৭
কোন লক্ষ্য বৈধ এটুকুই যথেষ্ট নয়। কোন কাজের বৈধতার জন্য যে পদ্ধতিতে বা পন্থায় লক্ষ্যটি অর্জন করা হবে সে পদ্ধতি বা পন্থাও বৈধ হতে হবে।

৩.ইসলামী অর্থনীতি
আর্টিকেল ১৮
দেশের অর্থনীতি ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক হবে। রাষ্ট্র মানব মর্যদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করবে; সংশ্লিষ্ট সবাইকে পরিশ্রম ও বুদ্ধিমত্তার সাথে জীবনের অর্থনৈতিক কার্যাদি পরিচালনার জন্য উদ্ধুদ্ধ করবে এবং হালাল (আইনসঙ্গত) উপায়ে অর্জিত জীবিকাকে সুরক্ষা প্রদান করবে।
আর্টিকেল ১৯
ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প ও কৃষিকর্মের স্বাধীনতা শরীয়াহর সীমারেখা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।
আর্টিকেল ২০
রাষ্ট্র শরীয়াহর বিধান মোতাবেক অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে।
আর্টিকেল ২১
রাষ্ট্র একচেটিয়া ব্যবসা ও মজুতদারী বন্ধ করবে এবং প্রয়োজনে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করবে।
আর্টিকেল ২২
রাষ্ট্র পতিত জমি আবাদ ও কর্ষণযোগ্য ভূমির পরিমাণ বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করবে।
আর্টিকেল ২৩
রিবা বা সুদের ভিত্তিতে কোন লেনদেন সুদকে গোপন রাখার জণ্য যে কোন কার্যকে রাষ্ট্র নিষিদ্ধ ঘোষণা করবে।
আর্টিকেল ২৪
মাটির তলার সকল সম্পদ, খনি, কাঁচামাল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের মালিকানা হবে রাষ্ট্রের।
আর্টিকেল ২৫
মালিকবিহীন যে কোন সম্পত্তি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে এবং আইনদ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে তা বিলিবন্দোবস্ত, বন্টন বা ব্যবহারক করা হবে।
আর্টিকেল ২৬
রাষ্ট্র জনগণ প্রদত্ত জাকাত শরীয়াহর নির্দেশ মোতাবেক ব্যয় করবে।
আর্টিকেল ২৭
জনকল্যাণের জন্য ওয়াকঠ করা বৈধ এবং এ বিষয়ে সংগঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রয়োগ করা হবে।

৪. ব্যক্তিগত অধিকার ও স্বাধীনতা
আর্টিকেল ২৮
সুবিচার ও সমতা সরকারের ভিত্তি। আত্মরক্ষার মামলা রুজু করার অধিকার রাষ্ট্রকর্তৃক স্বীকৃত।
আর্টিকেল ২৯
ধর্মীয় ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্বাস পোষণ, কাজের অধিকার, লিখিত বা মৌখিকভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা;দল, সংঘ বা ইউনিয়ন গঠনে ও তাতে অংশগ্রহণের অধিকার ইত্যাদি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার।এ সমস্ত অধিকার শরিয়াহর বিধানের মধ্যে রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।
আর্টিকেল ৩০
বাসগৃহ, চিঠিপত্র ও অন্যান্য ব্যক্তিগত বিষয়ের গোপনীয়তা রক্ষা পবিত্র দায়িত্ব এবং রাষ্ট্র এসবের গোপনীয়তা লংঘন প্রতিরোধ ও নিষিদ্ধ করবে। তবে রাষ্ট্রদ্রোহীতা বা অনুরূপ গুরুতর অপরাধ সংঘটনের আশংকা থাকলে আদালতের আদেশে উল্লেখিত গোপনীয়তার বিষয়ে সরকারের নির্ধারিত পদ্ধতি হস্তক্ষেপ করা যাবে।
আর্টিকেল ৩১
রাষ্ট্রের সীমান্তের ভিতরে ও বাইরে চলাচল আইনত সিদ্ধ ও অনুমোদিত। বাংলাদেশের ভিতরে যে কোন স্থানে বসবাস বা বিদেশ ভ্রমণে কোনরূপ বাধা দেওয়া যাবে না। তবে এ ধরনের বিধিনিষেধ আদালতের আদেশে আরোপ করা যাবে এবং আদালত তার কারণ নিষেধাজ্ঞায় উল্লেখ করবে। কোন নাগরিককে দেশ থেকে বহিষ্কার তথা নাগিরকত্ব হরণ করা যাবে না।
আর্টিকেল ৩২
রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠান নিষিদ্ধ তথা অনুমোদিত নয়। তবে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের মধ্যে চুক্তি বা দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা অনুযায়ী সাধারণ অপরাধীদের বিদেশে ফেরত প্রেরণ করা যাবে। রাজনৈতিক কারণে আশ্রয়প্রার্থীদের ব্যাপারে কি হবে?
আর্টিকেল ৩৩
জনসাধারণকে নির্যানত করা অপরাধ। এ রূপ অপরাধ সংঘটনকারীদের কৃত অপরাধ ক্ষমা করা যাবে না। অপরাধী ও তার সহকারী উভয়ে অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হতে পারে (কারাদণ্ড ছাড়াও)। যদি কোন সরকারী কর্মকর্তার সহায়তা, সম্মতি, মৌন সমর্থনের মাধ্যমে অপরাধটি সংঘটিত হয়ে থাকে তবে তাকে অপরাধে সহায়তাকারী হিসাবে গণ্য করে ফৌজদারী বা দেওয়ানী শাস্তি প্রদান করা হবে এবং সরকার নিগৃহীত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে।
আর্টিকেল ৩৪
কোন সরকারী কর্মকর্তার অধিক্ষেত্রীয় এলাকায় কোন অপরাধ সংঘটিত হলে এবং তার জানা থাকা সত্ত্বেও যদি তিনি বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের গোচরীভুত না করেন, উক্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে আদালতের মাধ্যকে (তা’জীর) শাস্তি প্রদান করা হবে।
আর্টিকেল ৩৫
কোন রক্তপাত সংঘটিত হতে দেয়া যাবে না এবং সংঘটিত হলে তার অবশ্যই শাস্তি বিধান করতে হবে। নিহত ব্যক্তির পরিবারকে রাষ্ট্র ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে। যদি অপরাধ সংঘটনকারীকে খুঁজে পাওয়া না যায় অথবা সে দেউলিয়া হয় তবে রাষ্ট্র ক্ষতিপূরণ প্রদানের দায়িত্বভার গ্রহণ করবে। তবে সাধারণত অপরাধীকেই দৈহিক বা আর্থিক অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
আর্টিকেল ৩৬
কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন অপরাধ সংঘটিত হলে তিনি আদালতে মামলা রুজু করতে পারবেন। যদি অন্য ব্যক্তির বিরুদ্ধেও কোন অপরাধ ঘটে অথবা সরকারী সম্পত্তির আত্মসাৎ বা ক্ষতিসাধন করা হয় তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে যে কোন নাগরিক আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবেন।
আর্টিকেল ৩৭
কাজ করা, জীবিকা অর্জন করা এবং তা ভোগ বা সঞ্চয় করার নাগরিক অধিকার রাষ্ট্র সুনিশ্চিত করবে। এসব বিষয়ে কারো দ্বারা কারো অধিকার লংঘন করা যাবে না। শুধুমাত্র শরিয়ার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা লংঘনের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
আর্টিকেল ৩৮
শরীয়াহর সীমারেখার মধ্যে থেকে নারীগণ কাজ করার অধিকার পাবেন।
আর্টিকেল ৩৯
রাষ্ট্র জনগণকে ব্যক্তিগত মালিকানার অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে। কোন পন্থায় সরকার জনগণের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারবে না। তবে আদালতের আদেশে জনস্বার্থে রাষ্ট্র ব্যক্তিগত সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে পারে।
আর্টিকেল ৪০
ক্ষতিপূরণ প্রদানপূর্বক সরকার জনগণের সম্পত্তি জনস্বার্থে অধিগ্রহণ করতে পারবে। এ উদ্দেশ্যে প্রণীত আইন মোতাবেক সরকার ব্যক্তিগত সম্পত্তি অধিগ্রহণ করবে।
আর্টিকেল ৪১
রাষ্ট্র পত্র পত্রিকা প্রকাশের অনুমতি প্রদান করবে। জনগণের সংবাদপত্রের প্রকাশনার স্বাধীনতা থাকবে, তবে এ ক্ষেত্রে শরীয়াহর মর্ত বলবৎ থাকবে।…
আর্টিকেল ৪২
জনগণ আইনসঙ্গতভাবে দল, এসোসিয়েশন বা ইউনিয়ন গঠন করতে পারবে। কিন্তু প্রকাশিত পত্র পত্রিকার বিষয়বস্তু সমাজ বিরোধী ও অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ধ্বংসাত্মক নয়, অথবা শরীয়ার বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক নয়, তবে রাষ্ট্র এ ধরনের দল, এসোসিয়েশন বা ইউনিয়ন নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে।
আর্টিকেল ৪৩
শরীয়াহর উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে সকল অধিকার ভোগ করা যাবে।

৫. ইমাম
আর্টিকেল ৪৪
রাষ্ট্রের একজন ইমাম থাকবেন। যদি কারো মতের সাথে তার অমিল হয় তবুও তার আনুগত্য করা বাধ্যতামূলক হবে।
আর্টিকেল ৪৫
স্রষ্টার আদেশ লংঘন করলে কোন কর্তৃপক্ষের আদেশ মান্য করা যাবে না। ইমাম আনুগত্য পাবার দাবীদার হবেন না, যদি তিনি শরীয়াহর কোন বিধান অমান্য করেন।
আর্টিকেল ৪৬
আইন জনগণের ইমাম নির্বাচনের জন্য পদ্ধতি নির্ধারন করে দেবে। এ নির্বাচন পদ্ধতি শরীয়াহর বিধানের সাথে সামঞ্জস্যশীল হবে। ভোটারদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের অনুকূল মতামত দ্বারা ইমামতি বা নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে।
আর্টিকেল ৪৭
রাষ্ট্রের প্রধান পদে প্রার্থী বা ইচ্ছুক ব্যক্তিকে নিম্ন শর্তাবলী পালন করতে হবেঃ
ক. তিনি একজন মুসলমান হবেন: প্রকৃত অর্থে (মোত্তাকী)
খ. তিনি একজন পুরুষ হবেন;
গ. তিনি একজন প্রাপ্তবয়স্ত ব্যক্তি হবেন;
ঘ. তিনি একজন সুস্থ মস্তিস্কের ব্যক্তি হবেন;
ঙ. তিনি একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি হবেন;
চ. তিনি শরীয়াহর সকল বিধি বিধান ও অনুশাসন সম্পর্কে পূর্ণভাবে ওয়াকেফহাল হবেন।
আর্টিকেল ৪৮
আইন অনুসারে নির্ধারিত পদ্ধতিতে সকল প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর ভোটে রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাচিত হবেন। অন্য যে কোন পদের জন্য ভোটে মহিলারা অংশগ্রহণ করতে পারবেন, যদি তিনি নির্ধারিত আইনের নির্ধারিত বিধি বিধান ও পদ্ধতির শর্ত পূরণ করতে পারেন।
আর্টিকেল ৪৯
আদালত তলব করলে রাষ্ট্রের প্রধান বিজ্ঞ আদালতের সামনে হাজির হবেন অথবা তাঁর প্রতিনিধি আদালতে হাজিরা দেবেন।
আর্টিকেল ৫০
রাষ্ট্রের প্রধান অন্যান্য নাগরিকদের মত সকল অধিকার ভোগ করবেন এবং অন্যান্য নাগরিকদের মত সকল দায়দায়িত্ব পালন করবেন। আর্থিক বিষয়ে তিনি আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করবেন।
আর্টিকেল ৫১
ইমামের অনুকুলে কোন দলিল করা যাবে না এবং তাঁর ও তাঁর আত্মীয় স্বজনের জন্য চতুর্থ ডিগ্রীর কোন ওয়াকফ গঠন করা যাবে না। তবে মিরাসী আইন অনুযায়ী তিনি উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হবেন। ইমাম রাষ্ট্রের কোন সম্পত্তি ক্রয়, বিক্রয় বা ভাড়া দিতে পারবেন না।
আর্টিকেল ৫২
ইমামকে প্রদত্ত উপহার সামগ্রী তার হাত, পায়ের শিকল স্বরূপ এবং এসব সামগ্রী রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে।
আর্টিকেল ৫৩
ইমামকে ন্যায়পরায়ণতা, ধর্মপরায়ণতা ও অন্যান্য সৎগুণাবলীতে জনগণের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সকল কাজ নিষ্পন্ন করতে হবে। প্রতিবছর তাঁকে মক্কায় হজ্জ্ব মিশন পাঠাতে হবে, যারা আনুষ্ঠাতিক ও অনানুষ্ঠাতিক সকল সভায় অংশগ্রহণ করবেন।
আর্টিকেল ৫৪
শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদে ইমাম সেনাপতিত্ব করবেন। তিনি দেশের সীমান্ত রক্ষা করবেন, হুদুদ (শরীয়ায় বর্ণিত শাস্তি) প্রতিষ্ঠা করবেন, চুক্তি সম্পাদন ও তা অনুসমর্থন করবেন।
আর্টিকেল ৫৫
ইমাম ভালো কাজ করতে এবং মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকতে ও অন্যান্য বাধ্যতামূলক কাজ করতে জনগণকে সক্ষম করে তুলবেন।
আর্টিকেল ৫৬
ইমাম রাষ্ট্রীয় কাজে গুরুত্বপূর্ণপদে লোকবর্গকে নিয়োগ দান করবেন। তিনি তার নিয়োগ দানের কিছু ক্ষমতা অধীনস্থদের অর্পণ করবেন, যারা গুরুত্বপূর্ণ পদ ছাড়া অন্যান্য পদে নিয়োগ দান করবেন।
আর্টিকেল ৫৭
কোন অপরাধ ক্ষমা করা যাবেনা, তবে আইনে ক্ষমা প্রদানের বিধান থাকলে ক্ষমা করা যাবে। রাষ্ট্রদ্রোহীতা ও শরীয়তে বর্ণিত শাস্তি (হুদুদ) ব্যতিত অন্যান্য অপরাধ ইমাম ক্ষমা করতে পারবেন।
আর্টিকেল ৫৮
ইমাম বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন যদি দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, অথবা এমন পরিস্থিতি বিরাজ করে যা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে, অথবা রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে এমন অবস্থা বিরাজ করে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দেয়, অন্যরাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধের আশংকা থাকে। তবে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগের এক সপ্তাহের মধ্যে তা আইন সভার নিকট পেশ করতে হবে। নির্বাচিত নতুন আইনসভা না থাকলে, পুরান আইনসভার অধিবেশন ডাকতে হবে। সেক্ষেত্রে এ বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগকে আইনসঙ্গত রূপ প্রদানের জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করত হবে এবং কোন পদ্ধতিতে এবং কোন কর্তৃপক্ষ বিশেষ ক্ষমতাবে বৈধতা প্রদান করবে আইনে তা নির্দেশিত থাকবে।

৬. বিচার বিভাগ
আর্টিকেল ৫৯
বিচার বিভাগের বিচারপতিগণ শরিয়াহর বিধি বিধান মোতাবেক বিচারকার্য পরিচালনা করবেন।
আর্টিকেল ৬০
বিচার বিভাগের সামনে আইনের চোখে সকল মানুষ সমান বলে গণ্য হবে। কোন ব্যক্তি বা দলকে বিশেষ সুবিধা প্রদানের জন্য বিশেষ বিচারালয় প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।
আর্টিকেল ৬১
বিশেষ আদালত প্রতিষ্ঠা নিষিদ্ধ ও অবৈধ বিবেচিত হবে। কোন মামলা রুজুকারীকে প্রতিকার হতে বঞ্চিত করা যাবে না।
আর্টিকেল ৬২
ইমাম বা শাসকের বিরুদ্ধে শুনানী গ্রহণে আদালতকে নিষেধ করা যাবে না বা বিচার কার্যকে বিঘ্নিত করা যাবে না।
আর্টিকেল ৬৩
রাহমানুর রাহিম আল্লাহর নামে আদালত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও প্রয়োগ করবে। বিচারকার্য পরিচালনায় বিচারপতিগণ শরীয়াহর আইন ছাড়া অন্য কোন আইনের আশ্রয় নেবেন না।
আর্টিকেল ৬৪
আদালতের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং এ বিষয়ে গাফিলতি বা ব্যর্থতা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে।
আর্টিকেল ৬৫
রাষ্ট্র বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে এবং বিচার বিভাগের উপর হস্তক্ষেপ অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে।
আর্টিকেল ৬৬
রাষ্ট্র সবচেয়ে যোগ্যতম ব্যক্তিবর্গকে বিচারপতির আসনে অধিষ্ঠিত করবে এবং সুচারু বিচার ব্যবস্থা পরিচালনা নিশ্চিত করবে।
আর্টিকেল ৬৭
শরীয়াহ’য় বর্ণিত শাস্তিযোগ্য অপরাধের (হুদুদ) ক্ষেত্রে অপরাধীকে আদালতে হাজির করতে হবে, তাকে তার মনোনীত আইনবিদ মনোনিত করতে দেয়া হবে; তার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র তার পক্ষে উকিল নিযুক্ত করবে।
আর্টিকেল ৬৮
আদালতের কার্যক্রম হবে মুক্ত এবং জনগণ তাতে হাজির থাকতে পারবেন। গোপনে আদালতের বিচার কার্য সম্পন্ন করা যাবে না, যদি না শরীয়াহ তা অনুমোদন করে।
আর্টিকেল ৬৯
জিনা, কাজফ (মানহানী), চুরি, দস্যুতা (হিরাবাহ), মদ্যপান ও স্বধর্মত্যাগ প্রভৃতি অপরাধের ক্ষেত্রে ‘হুদুদ আল শরীয়াহ’-এ বর্ণিত শাস্তি প্রদান করা হবে।
আর্টিকেল ৭০
হুদুদ ব্যতিত অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে আইন দ্বারা নির্ধারিত ও কাজীর বিচারবুদ্ধি (তা’জীর) অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা হবে।
আর্টিকেল ৭১
অপরাধকারীর অপরাধ সংঘটনে কতটুকু দায়দায়িত্ব তা আইন নির্ধারণ করবে। তবে এ দায়ভার রক্তপণের সীমা অতিক্রম করবে না।
আর্টিকেল ৭২
আইন অপরাধীর অনুতপ্ত হবার ক্ষেত্রে তা গ্রহণের মানদণ্ড ও শর্তাদি নির্ধারণ করবে।
আর্টিকেল ৭৩
(উল্লেখ করা হয় নাই)
আর্টিকেল ৭৪
(উল্লেখ করা হয় নাই)
আর্টিকেল ৭৫
নারীর ক্ষেত্রে রক্তপণ পুরুষের সমান হতে পারে।
আর্টিকেল ৭৬
‘উইসাস’ প্রয়োগের শর্তাধীনে আদালতের পূর্ণ নিশ্চয়তা ও সমতা কার্যকরী হবে।
আর্টিকেল ৭৭
কাজীর বিচারের ক্ষেত্রে বেত্রদণ্ডসুল শাস্তি হিসাবে গণ্য হবে, কতিপয় ক্ষেত্র ছাড়া কারাদণ্ড প্রদান করা যাবেনা এবং কারাদণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে সময়সীমা সীমিত হবে।
আর্টিকেল ৭৮
কারাবন্দীকে নির্যাতন, অত্যাচার বা মানহানি করা যাবে না।
আর্টিকেল ৭৯
একটি ‘সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালত’ গঠন করা হবে যা বিধি বিধান ইত্যাদি সময় সময় পর্যালোচান ও তত্ত্বাবধান করবে এবং তা শরীয়াহর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা তা পরীক্ষা করে দেখবে। এই সর্বোচ্চ আদালতকে আরো কি ক্ষমতা দেয়া যায় তা আইন নির্ধারণ করবে। কারা হবে এর সদস্য?
আর্টিকেল ৮০
একটি ‘দিওয়ান-আল-মুজালিম’ গঠন করা হবে এবং এ আইন সংস্থার গঠন কার্যপরিধি ও সদস্যদের ভাতা ইত্যাদি নির্ধারণ করে দেবে।

৭. শুরা, তত্ত্বাবধান ও আইন প্রণয়ন
আর্টিকেল ৮১
রাষ্ট্রের একটি ‘মজলিসে শুরা’ থাকবে, যা (আইন পরিষদ) নিম্নবর্ণিত ক্ষমতাসমূহ প্রয়োগ করবে:
১. শরীয়াহর অনুশাসন অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করা;
২. রাষ্টের বার্ষিক বাজেট অনুমোদন করা এবং এর হিসাব নির্ধারণ ও তত্ত্বাবধান করা;
৩. সরকারের নির্বাহী বিভাগের কার্যকলাপ তত্ত্বাবধান করা;
৪. মন্ত্রীপরিষদের কার্য ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে দেওয়া এবং প্রয়োজনে মন্ত্রীসভা হতে অনুমোদন প্রত্যাহার করা।
আর্টিকেল ৮২
আইন সমলিসে শুরার নির্বাচন পদ্ধতি, শুরার সদস্য হবার যোগ্যতা ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি নির্ধারণ করে দেবে। বিজ্ঞজনের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ও বিধানাদি নির্ধারিত হবে, যাতে প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কের এবং জ্ঞানীগুণীজন তাদের মতামত ব্যক্ত করতে পারেন। আইন শুরার সদস্যদের আর্থিক বিষয়াদিও নির্ধারণ করে দেবে। মজলিসে শুরা তার নিজস্ব অভ্যন্তরীণ পরিচালনা পদ্ধতি নিজে ঠিক করে নেবে।

৮. সরকার
আর্টিকেল ৮৩
সরকার সকল সরকারী কার্য পরিচালনার জন্য দায়িত্বাবদ্ধ থাকবে; শরীয়াহর বিধান অনুযায়ী তা পরিচালনা করবে এবং ইমামের নিকট দায়বদ্ধ থাকবে (যে সব রাষ্ট্রে ‘মজলিসে শুরা’ থাকবে সেখানে ‘ইমাম’ শব্দটির স্থলে সেখানে ‘ইমাম’ শব্দটির স্থলে ‘মজলিসে শুরা’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হবে)।
আর্টিকেল ৮৪
আইন মন্ত্রীবর্গের নিয়োগের শর্ত নির্ধারণ করে দেবে, তাদের কার্যকালে যে সব তাদের জন্য নিষিদ্ধ তা উল্লেখ করবে, তাদের দায়িত্ব লংঘনের ক্ষেত্রে বিচারপদ্ধতি বর্ণনা করবে।

৯. সাধারণ অন্তর্বর্তীকালীন বিধান
আর্টিকেল ৮৫
…(শহরের নাম) হবে দেশের রাজধানী।
আর্টিকেল ৮৬
আইন রাষ্ট্রের পতাকা ও প্রতীক নির্ধারণ করে দেবে এবং এ সংক্রান্ত সকল নিয়মকানুন উল্লেখ করবে।
আর্টিকেল ৮৭
বলবৎ হবার তারিখ হতে আইনসমূহ কার্যকর হবে। বলবৎ হবার পূর্ব কোন তারিখ হতে আইনসমূহের কার্যকারিতা নির্ধারণ করা যাবে না। তবে আইনসভার দু-তৃতীয়াংশ সদস্যের ইতিবাচক ভোটে ফৌজদারী অপরাধ বিষয় ছাড়া অন্য কোন আইনের বিষয়ে পূর্বকার্যকারিতা বা ভূতাপেক্ষিক অনুমোদন প্রদান করা যাবে।
আর্টিকেল ৮৮
আইন বলবৎ হবার দু’ সপ্তাহের মধ্যে সরকারী গেজেট তা প্রকাশ করতে হবে। অন্য কোন বিধান না থাকলে গেজেটে প্রকাশের ১ মাসের মধ্যে আইন কার্যকর হবে।
আর্টিকেল ৮৯
ইমাম এবং আইনসভা উভয়ে সংবিধানের এক বা একাধিক আর্টিকেল সংশোধনের প্রস্তাব করতে পারবেন। যে বা যেসব আর্টিকেল সংশোধনের প্রস্তাব করা হবে তার যৌক্তিকতা উপস্থাপন করতে হবে। যদি আইন পরিষদ এ সংশোধনী প্রস্তাব করে তবে সে প্রস্তাব আইন পরিষদের দু’তৃতীয়াংশ সদস্য কর্তৃক সমর্থিত হতে হবে। আইন পরিষদ সংশোধন প্রস্তাব বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করবেন এবং দু’তৃতীয়াংশ ভোটে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। যতি কোন সংশোধনী প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়, তবে এক বছরের মধ্যে ঐ সংশোধনী প্রস্তাব পুনঃ আনয়ন করা যাবে না। যদি আইনসভা প্রতম পর্যায়ে সংশোধনটি অনুমোদন করে এবং দু’-তৃতীয়াংশ সদস্য কর্তৃক সমর্থিত হয়, তবে বিষয়টি জনগণের সমর্থনের জন্য গণভোটে পেশ করা হবে।
গণভোটে সংশোধনীটি অনুমোদিত হলে গণভোটের রায় প্রকাশের দিন থেকে সংশোধনীটি কার্যকর হবে।
আর্টিকেল ৯০
এ সংবিধান বলবৎ হবার পূর্ববর্তী সকল আইন, বিধান, প্রবিধি ইত্যাদি বলবৎ ও কার্যকর থাকবে। তবে সংবিধানের আলোকে পূর্ববর্তী বিধিবিধানসমূহ সংশোধন বা বাতিল করা যাবে। যদি পূর্ববর্তী বিধি বিধান শরীয়ার সাথে সাংঘর্ষিক হয় তবে যতটুকু সাংঘর্ষিক বা অসঙ্গতিপূর্ণ ততটুকু বাতিল করা হবে।
আর্টিকেল ৯১
উম্মাহ কর্তৃক গণভোটে সমর্থিত হবার দিন থেকে এ সংবিধান কার্যকর হবে।
(সূত্র: দি মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ জার্নাল, ৯ (৬), এপ্রিল, ১৯৮২ পৃষ্ঠা ২৯-৩৪)

পরিশিষ্ট-খ
ইসলামী শাসনতন্ত্রের মডেল
প্রস্তাবনা
যেহেতু ইসলাম সকল যুগের সকল মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান এবং আল্লাহর বিধান বিশ্বজনীন ও চিরন্তন এবং মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য;
যেহেতু প্রত্যেক ব্যক্তি মানুষের আত্মমর্যাদা রয়েছে;
যেহেতু ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক সকল ক্ষমতা শরীয়াহর বিধান অনুযায়ী পরিচালনার জন্য অর্পিত আমানত বা দায়িত্ব, যাতে ঐশীবাণী বিধান মোতাবেক সকল অবিচার ও অভাবমুক্ত জীবন নিশ্চিত হয় এবং মানব জীবন যাতে সামঞ্জস্যশীলতা, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও পরিপূর্ণতা দ্বারা উজ্জীবিত হয়;
স্বীকৃতি প্রদান করা যাচ্ছে যে ইসলাম ও ইসলামী নীতির ভিত্তিতে সমাজ গঠন সংবিধান ও আইনে শরীয়াহর পূর্ণ বাস্তবায়ন দাবি করে এবং প্রত্যেক মানুষ তার নিজের প্রতি, দেশের প্রতি এবং সমগ্র মানবতার প্রতি দায়িত্ব পালন করবে;
আমরা,…(রাষ্ট্রের নাম)… এর নাগরিকগণ নিম্নবর্ণিত মূল্যবোধ ভিত্তিক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা গঠনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হচ্ছি:
ক. একমাত্র আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ;
খ. শৃংখলা ও দায়িত্ব সচেতনতা দ্বারা উদ্ধুদ্ধ স্বাধীনতা;
গ. ক্ষমা ও দয়া ভিত্তিতে সমতা,
ঘ. ভ্রাতৃত্ববোধের ভিত্তিতে সমতা,
ঙ. শাসন ব্যবস্থার পদ্ধতি হিসাবে ‘শুরা’ বা পারস্পরিক পরামর্শ ব্যবস্থা।
আমরা, (রাষ্ট্রের নাম) জনগণ, তারিখে অনুষ্ঠিত গণভোটের-[অথবা পার্লামেন্ট বা অন্যকোন যথাযথ সংস্থার প্রদত্ত সিদ্ধান্ত মোতাবেক] মাধ্যমে এই সংবিধান গ্রহণ করলাম, উপরোক্ত নীতিমালায় নিজদের আবদ্ধ করলাম এবং তদনুসারে আমাদের দায়িত্ব পালনের জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হলাম। এবং আল্লাহ পাক আমাদের সাক্ষী।

শাসন কর্তৃত্বের ভিত্তি ও সমাজের ভিত্তি
আর্টিকেল ১
ক. সার্বভৌমত্ব কেবলমাত্র আল্লাহর এবং শরীয়াহ হচ্ছে চূড়ান্ত বিধান;
খ. শাসন পদ্ধতি হবে ‘শুরা’ বা পারস্পরিক পরামর্শ ভিত্তিক;
গ. এই বিশ্বাস যে, এই বিশ্বের সকল কিছুর মালিকানা আল্লাহর এবং এসব কিছু মানবজাতির জন্য আল্লাহর আশীর্বাদ এবং প্রত্যেক ব্যক্তির এই ঐশী আশীর্বাদে ন্যায়সঙ্গত হিস্যা রয়েছে;
ঘ. এই বিশ্বাস যে, সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদ আল্লাহর পক্ষ হতে একটি আমানত এবং মানুষ ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে এসবের আমানতদার (মুসতাখলাফ)। এই আমানতদারীর কাঠামোর মধ্যে মানুষের অর্থনৈতিক প্রচেষ্টা ও তার প্রাপ্তি নিহিত রয়েছে,
ঙ. মানবাধিকার সম্পর্কে ইসলামী বিধানের অলংঘনীয়তা এবং বিশ্বের সর্বত্র শোষিত ও নির্যাতিত মানুষেকে সহায়তা প্রদান;
চ. ইসলামী শিক্ষা, সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম, মিডিয়া ও অন্যান্য উপায়ে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে ইসলামী চরিত্রের রূপায়ণের সর্বোচ্চ গুরুত্ব;
ছ. সমাজের সকল সক্ষম সদস্যদের কাজের সুযোগ এবং অসমর্থ, পীড়িত ও বৃদ্ধাদের জীবিকার নিরাপত্তা বিধান,
জ. সবার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সুযোগ সুবিধা সরবরাহ;
ঝ. উম্মাহর একতাবদ্ধতা ও তা বাস্তবায়নের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা;
ঞ. ইসলামী দাওয়াত প্রদানের দায়িত্ব বাধ্যতামূলক পালন করা;

দায়িত্ব ও অধিকার
আর্টিকেল ৪
ক. মানুষের জীবন, শরীর, সম্মান ও স্বাধীনতা পবিত্র ও অলংঘনীয়। একমাত্র শরীয়াহর কর্তৃত্ব ও অনুমোদন ব্যতিরেকে প্রাণ বা দেহের ক্ষতি করা যাবে না;
খ. জীবদ্দশার মত মৃত্যুর পরও ব্যক্তিমানুষের শরীর ও সম্মান পবিত্র ও অলংঘনীয়।
আর্টিকেল ৫
ক. কোন ব্যক্তির দেহের উপর অত্যাচার বা মানসিক নির্যাতন করা যাবে না। কোন ব্যক্তি কোন অপরাধ করেছে মর্মে জোরপূর্বক মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা যাবে না; এমন কিছু করতে বাধ্য করা যাবেনা যা ঐ ব্যক্তির জন্য বা অন্যের জন্য ক্ষতিকর;
খ. অত্যাচার একটি অপরাধ এবং যে কোন সময়েই দণ্ডনীয়;
আর্টিকেল ৬
ক. প্রত্যেক ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার দাবীদার;
খ. বাসগৃহ, চিঠিপত্র ইত্যাদির গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার প্রত্যেকের রয়েছে এবং আদালতের বৈধ আদেশ ছাড়া তা ভঙ্গ করার কারো অধিকার নেই।
আর্টিকেল ৭
প্রত্যেক ব্যক্তির খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার অধিকার রয়েছে। রাষ্ট্র আয়ত্বাধীন সম্পদের মাধ্যমে এসবের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আর্টিকেল ৮
প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব চিন্তা, মতামত ও বিশ্বাস পোষণের অধিকার রয়েছে। আইনের সীমারেখার মধ্যে ঐসব প্রকাশ করারও তার অধিকার রয়েছে।–[এই সংবিধান অনুযায়ী কো আইন শরীয়াহর পরিপন্থী হতে পারবে না। যখনই আইনের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয় তখন আইন বলতে শরীয়াহ বোঝাবে তা শরীয়াহ কর্তৃক অনুমোদিত বোঝাবে]
আর্টিকেল ৯
ক. প্রত্যেক মানুষ আইনের চোখে সমান এবং প্রত্যেকে সমভাবে আইনের নিরাপত্তা পাবে;
খ. সমান যোগ্যতাসম্পন্ন প্রত্যেক ব্যক্তি সমান সুযোগ পাবার দাবীদার। ধর্মীয় বিশ্বাস বর্ণ, গোত্র, ভাষাগত ইত্যাদি কারণে কারো প্রতি কোন বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না।
আর্টিকেল ১০
ক. প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে আইন মোতাবেক এবং কেবলমাত্র আইন মোতাবেক আচরণ করতে হবে।
খ. সকল ফৌজদারী আইন বলবৎ হবার তারিখ হতে কার্যকর হবে এবং এ আইনকে বলবৎ হবার পূর্ব কোন তারিখ থেকে কার্যকারিতা প্রদান করা যাবে না।
আর্টিকেল ১১
ক. আইনে সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণিত এবং লিপিবদ্ধ না থাকলে কোন কাজকে অপরাধ গণ্য করা যাবে না বা তজ্জন্য শাস্তি প্রদান করা যাবে না।
খ. প্রত্যেক ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে তার নিজের কাজের জন্য দায়ী। একজনের অপরাধের জন্য পরিবারের কোন সদস্য বা অন্য কাউকে দায়ী করা যাবেনা, যদি না তাতে তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা থাকে।
গ. আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হবার পূর্ব পর্যন্ত প্রত্যেক ব্যক্তি নির্দোষ বলে গণ্য হবে।
ঘ. যথাযথ নিয়মে বিচার কার্য সম্পাদন এবং আসামীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান না করে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না।
আর্টিকেল ১২
ক. কোন ব্যক্তিকে কোন সরকারী এজেন্সী কর্তৃক অহেতুক হেনস্থা করা যাবে না।
খ. কোন ব্যক্তি যখন ব্যক্তিগত বা জন অধিকার দাবী করবে তখন তাকে কোন রূপ হেনস্তা করা যাবে না।
আর্টিকেল ১৩
ক. প্রত্যেক মুসলমানের বিবাহের মাধ্যমে পরিবার গঠনের অধিকার আছে এবং শরীয়াহর নিয়ম মোতাবেক তিনি তার সন্তানদের গড়ে তুলবেন।
খ. প্রত্যেক স্বামী তার সামর্থ্য অনুযায়ী তার স্ত্রী ও সন্তানদের লালন পালন করবেন।
গ. পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র হতে মাতৃসমাজ বিশেষ সম্মান, যত্ন ও সহায়থা প্রাপ্ত হবেন।
ঘ. প্রত্যেক শিশুর পিতামাতা কর্তৃক যথাযথভাবে প্রতিপালিত হবার অধিকার রয়েছে।
ঙ. শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। কত বৎসর পর্যন্ত?
আর্টিকেল ১৪
ক. নাগরিকত্ব আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে।
খ. প্রত্যেক মুসলমানের রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভের আবেদনের অধিকার থাকবে। আইন মোতাবেক এই আবেদন নিষ্পত্তি করা হবে।
আর্টিকেল ১৫
আইন দ্বারা কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপিত না হলে, প্রত্যেক নাগরিকের দেশের যে কোন স্থানে বসবাসের এবং দেশের ভিতরে বাহিরে গমনাগমনের অধিকার থাকবে। কোন নাগরিককে দেশ থেকে বহিষ্কার করা যাবে না এবং দেশে প্রত্যাবর্তনে বাধা দেয়া যাবে না।
আর্টিকেল ১৬
ক. ধর্মের ব্যাপারে কোন বাধ্যবাধকতা থাকবে না।
খ. অমুসলিম সংখ্যালঘুদের তাদের ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার থাকবে।
গ. পারিবারিক আইনের ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুরা তাদের নিজস্ব আইন ও ঐতিহ্য দ্বারা পরিচালিত হবে।
আর্টিকেল ১৭
বৎসরের উর্ধ্বের প্রত্যেক নাগরিকের রাষ্ট্রের জনগণ সম্পর্কিত বিষয়াবলীতে অংশগ্রহণের দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকবে।
আর্টিকেল ১৮
ক. শরিয়াহর কোন বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক না হলে প্রত্যেক নাগরিকের সমবেত হবার এবং রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক, সামাজিক বা অন্য ধরনের দল, সংগঠন, গ্রুপ, এসোসিয়েশন ইত্যাদি গঠনের অধিকার থাকবে।
খ. এ ধরনের দল, সংগঠন ও এসোসিয়েশনের গঠন ও কার্যাবলী আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।
আর্টিকেল ১৯
আইন অনুসারে কেউ রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলে রাষ্ট্র তা প্রদান করবে। এ ধরনের রাজনৈতিক শরণার্থীদের রাষ্ট্র নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান করবে এবং আবেদন করলে নিরাপদে অন্যত্র চলে যাবার অনুমতি প্রদান করবে।

মজলিসে শুরা
আর্টিকেল ২০
ক. জনগণ কর্তৃক প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত একটি ‘মজলিসে শুরা’ থাকবে, যার সদস্য সংখ্যা হবে…. জন।
খ.মজলিসের মেয়াদকাল হবে ….. বৎসর।
গ. মজলিসের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার গুণাবলী আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে।
আর্টিকেল ২১
‘মজলিসে শুরা’র কার্যাবলী হবে নিম্নরূপ:
ক. শরিয়াহর উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আইন প্রণয়ন; প্রয়োজনে উলেমা কাউন্সিলের মতামত গ্রহণ;
খ. সরকার ও মজলিসে শুরা’র সদস্যদের প্রস্তাবিত আইন প্রণয়ন করা;
গ. সরকারের বাজেট অনুমোদন করা এবং সরকারী আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষঅ তত্ত্বাবধান করা;
ঘ. সরকার ও তার বিভিন্ন বিভাগের নীতিমালা পর্যালোচান করা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা, আইনের অধীনে গঠিত বিভিন্ন বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে প্রয়োজনে তদন্তকার্য পরিচালনা করা;
ঙ. যুদ্ধ, শান্তি বা জাতীয় জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা;
চ. আন্তর্জাতিক চুক্তি, সমঝোতা, প্রটোকল ইত্যাদি অনুমোদন করা;
আর্টিকেল ২২
দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে মজলিসে শুরার সদস্যবৃন্দ স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারবেন এবং তাদেরকে গ্রেফতার, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, হেনস্তা বা সদস্যপদ থেকে অপাসারিত করা যাবে না।

ইমাম
আর্টিকেল ২৩
ক. ইমাম হবেন দেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, যিনি জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে… বৎসরের জন্য নির্বাটিত হবেন। ‘মুজলিস আল বায়াহ’ তার হাতে ‘বায়াত’ গ্রহণ করার তারিখ হতে তার কার্যকালের মেয়াদ শুরু হবে।
খ. আইনের নির্দেশনা মোতাবেক ইমাম জনগণ ও ‘মজলিসে শুরা’র নিকট দায়ী থাকবেন।
আর্টিকেল ২৪
একজন ব্যক্তির ইমাম নির্বাচিত হবার জণ্য নিম্নবর্ণিত যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন:
ক. মুসলিম প্রার্থীর বয়স… এর কম হবে না;
খ. তিনি নিষ্কলংক চরিত্রের অধিকারী হবেন;
গ. তিনি কুআন ও সুন্নাহর অনুশাসন মেনে চলবেন, ইসলামের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং শরীয়াহর বিধি বিধানের বিষয়ে সম্যকভাবে অবহিত;
ঘ. শারীরিক, মানসিক ও অনুভূতিগতভাবে তার পদের দায়িত্ব পালনে সক্ষম;
ঙ. তিনি নম্র, ভদ্র এবং সুষম আচরণের অধিকারী। জ্ঞানী, সৎ, নিষ্ঠাবান।
আর্টিকেল ২৫
দায়িত্বভার গ্রহনের পূর্বে ইমাম ‘মজলিসে শুরা’ সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় সংসদ (মজলিসে বায়াহ), উলেমা কাউন্সিল, সুপ্রীম সাংবিধানিক কাউন্সিল, সর্বোচ্চ আদালত, ইলেকশন কমিশন, সশস্ত্র বাহিনী প্রধানগণের সামনে ঘোষণা প্রদান করবেন যে, তিনি অক্ষরে অক্ষরে শরীয়াহর অনুশাসন অনুসরণ করবেন, ইসলামের বাণীকে যে কোন মূল্যে সর্ব ঊর্ধ্বে তুলে ধরবেন, সংবিধান সংরক্ষণ করবেন; দেশের সীমান্ত, আদর্শিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবেন, জনগণের অধিকার রক্ষা করবেন; ভয় বা প্রলোভন ব্যতিরেকে বৈষম্যহীনভাবে সবার প্রতি সুবিচার করবেন; জনগণের দুঃখ দুর্দশা আপনোদনের জস্য সরাসরি বা সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে শুনানী শ্রবণ করবেন। তাঁর এই অঙ্গীকার ঘোষণার পর, উপস্থিত সকল অংশগ্রহণকারী তাঁদের নিজ ও জনগণের পক্ষ হতে তাঁর নিকট ‘বায়াত’ গ্রহণ করবেন।
আর্টিকেল ২৬
ইমাম সকল ব্যক্তির আনুগত্য প্রাপ্ত হবেন, যদি কারো মতামত ইমাম থেকে ভিন্নও হয়। তবে আল্লাহ ও রাসূল (সা) এর বিরুদ্ধাচরণের ক্ষেত্রে ইমাম আনুগত্য লাভ করবেন না।
আর্টিকেল ২৭
অন্যান্য নাগরিকদের ন্যায় ইমাম সমঅধিকার ভোগ করবেন। তিনি সবার ন্যায় আইন মান্য করে চলবেন; এ বিষয়ে তিনি কোন প্রকার দণ্ডমুক্তি বা বিশেষ সুবিধা ভোগ করবেন না।
আর্টিকেল ২৮
ক. ইমাম রাষ্ট্রীয় কোন সম্পত্তি ক্রয় বা ভাড়া করবেন না অথবা তিনি নিজের কোন সম্পত্তি রাষ্ট্রের নিকট বিক্রি বা ভাড়া দিতে পারবেন না। তিনি দেশের ভিতরে বা বাইরে কোন ব্যবসা পরিচালনা করবেন না।
খ. সরকারী পদাধিকার বলে ইমাম, ইমামের পরিবারের সদস্যবর্গ বা সরকারী কর্মকর্তাকে প্রদত্ত উপহার সরকারী সম্পত্তি বলে গণ্য হবে।
গ. ইমাম আদালতের কোন আদেশকে বাতিল করে দিতে পারবেন না; হুদুদ, কিসাস বা দিয়াহ এর ক্ষেত্রে দণ্ডিত কোন ব্যক্তির শাস্তি হ্রাস, রদ বা নিলম্বিত করতে পারবেন না। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে তার ক্ষমা প্রদানের অধিকার থাকবে।
আর্টিকেল ২৯
ইমাম বা যথাযথভাবে নিযুক্ত তার প্রতিনিধি বিদেশী সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহের সাথে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে চুক্তি সম্পাদন করতে পারবেন।
আর্টিকেল ৩০
ইমাম ‘মজলিসে শুরা’ কর্তৃক অনুমোদিত আইনে সম্মতি প্রদান করবেন এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তা বাস্তবায়নের জন্য প্রেরণ করবেন। মজলিস কর্তৃক অনুমোদিত কোন আইনে তিনি ভেটো প্রয়োগ করতে পারবেন না। তবে তিনি প্রণীত আইনটি প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে মজলিসে শুরার নিকট ফেরত পাঠাতে পারবেন। ‘মজলিসে শুরা’ পূন: আইনটি বিবেচনা করে দু’তৃতীয়াংশ ভোটে তা আবার অনুমোদন করলে, ইমাম আইনটিতে সম্মতি প্রদান করবেন।
আর্টিকেল ৩১
ইমাম উপদেষ্টা, মন্ত্রীবর্গ, রাষ্ট্রদূত এবং সশস্ত্রবাহিনী প্রধানদের নিয়োগ দান করবেন।
আর্টিকেল ৩২
ইমাম অভিশংসিত হবেন যদি তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে সংবিধান লংঘন করেন অথবা শরীয়াহর বিধান গুরুতরভাবে ভঙ্গ করেন। মজলিসে শুরার দু’তৃতীয়াংশ ভোটে এই অভিশংসন কার্যকর হবে। ইমাম যদি ‘বায়াতের’ কোন শর্ত লংঘন করেন তবে মজলিসে বায়াহ’ এর দু’তৃতীয়াংশ প্রদত্ত ‘বায়াত’ বাতিল বলে গণ্য হবে।
খ. অভিশংসনের রীতিনীতি পদ্ধতি এবং ইমামের অপসারণ আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে।
আর্টিকেল ৩৩
ক. ইমাম ‘মজলিসে শুরা’র নিকট স্বহস্ত স্বাক্ষরে পদত্যাগ করতে পারেন।
খ. ইমামের পদ শূন্য থাকার ক্ষেত্রে, ইমাম নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত সর্বোচ্চ….. দিন মজলিসে শুরার স্পীকার ইমামের দায়িত্ব পালন করবেন।
গ. ইমামের অক্ষমতার ক্ষেত্রে,… দিন পর্যন্ত মজলিসে শুরার স্পীকার ইমানের দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যথায় ইমামের পদ শূণ্য বলে গণ্য হবে।

বিচার বিভাগ
আর্টিকেল ৩৪
প্রত্যেক ব্যক্তির আদালতে মালা রুজু করার অধিকার থাকবে।
আর্টিকেল ৩৫
ক. বিচার বিভাগ শাসন বিভাগ হতে স্বাধীন ও প্রভাবমুক্ত থাকবে। বিচার বিভাগ বিচারকার্য পরিচালনা করবে ও জনগণের অধিকার রক্ষায় ব্রতী থাকবে।
খ. নিচারপতিগণ স্বাধীন এবং আইনের কর্তৃত্ব ব্যতিত তাদের উপর আর কোন কর্তৃত্ব থাকবে না।
আর্টিকেল ৩৬
ন্যায়বিচার প্রয়োগ হবে স্বাধীন ও মুক্ত এবং ক্ষমতার অপব্যবহার আইন প্রতিরোধ করবে।
আর্টিকেল ৩৭
আদালতের যাবতীয় কার্যাদি জনসমুক্ষে উন্মুক্ত হবে এবং জাতীয় নিরাপত্তা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, সম্মান ইত্যাদি রক্ষার ক্ষেত্র ব্যতীত গোপনে বিচার কার্য পরিচালনা করা যাবে না।
আর্টিকেল ৩৮
ক. বিশেষ আদালত বা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা বৈধ নয়।
খ. তবে সামরিক আইনের অধীন অপরাধের জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য সামরিক আদালত গঠন করা যাবে।
আর্টিকেল ৩৯
আদালতের রায় বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব এবং এ বিষয়ে শিথিলতা বা ব্যর্থতা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
আর্টিকেল ৪০
সংবিধানের নীতিমালা অনুযায়ী বিচার বিভাগের গঠন, বিচারপতিদের যোগ্যতা; তাদের নিয়োগ, বদলী, পদচ্যুতি ইত্যাদির নিয়মপদ্ধতি; আইন ও শাসন বিভাগের সাথে বিচার বিভাগের সম্পর্ক ও আনুসঙ্গিক বিষয়াদি আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে।
আর্টিকেল ৪১
নিম্নবর্ণিত উদ্দেশ্যে একটি ‘হিসবাহ’ বিভাগ গঠিত হবে:
ক. সৎকাজ সমুন্নত রাখা ও মন্দ কাজকে নিরোধের জন্য ইসলামী মূল্যবোধ সমূহের রক্ষণাবেক্ষণ ও উজ্জীবিত করা;
খ. রাষ্ট্র ও এর অঙ্গ সংস্থার বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তির অভিযোগ তদন্ত করা;
গ. ব্যক্তিমানুষের অধিকার রক্ষা করা;
ঘ. রাষ্ট্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কার্যাবলী পর্যালোচনা করা; ভুল সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে অথবা দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা বিচ্যুতি ঘটলে তা সংশোধন করা;
ঙ. প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বৈধতা পরীক্ষা ও পরিবীক্ষণ করা;
আর্টিকেল ৪২
‘হিসবাহ’ প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবে একজন ‘মুহতাসীন আম’ থাকবেন এবং তাঁকে সহায়তা প্রদানের জন্য প্রদেশ ও নিম্নস্তরের ‘মুহতাসীব’গণ থাকবেন। এই কার্যালয়ের বিধি-বিধান ও কার্যপ্রণালী আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে।
আর্টিকেল ৪৩
‘মুহতাসীব’গণ স্বউদ্যোগে অথবা কারো নিকট হতে আবেদন বা তথ্য পাবার পর কার্যক্রম শুরু করবেন। তারা সরকারী বিভাগ বা এজেন্সী হতে প্রয়োজনীয় তথ্য তলব করতে পারবেন এবং চাহিদা মোতাবেক সরকারী কর্মচারীগণ ত্বরিৎ ও যথাযথভাবে তথ্য সরবরাহ করবেন।
আর্টিকেল ৪৪
যদি ‘মুহতাসিব আম’ কোন আইন বা সরকারী বিধিবিধানকে নিপীড়নমূলক বা অসঙ্গত মনে করেন এবং জনগণের পক্ষে তা পালন কষ্টসাধ্য বলে মনে করেন অথবা আইন বা বিধিটি অসাংবিধানিক মর্মে বিবেচিত হয় তবে তিনি আইন বা বিধিটি বাতিল বা সংশোধনের জন্য বিচার বিভাগের নিকট প্রেরণ করতে পারবেন।
আর্টিকেল ৪৫
কোন বিষয় যথাযথ আদালত আমলে নেয়া সত্ত্বেও, অথবা আমলে নেয় প্রক্রিয়াধীন থাকা সত্ত্বেও একজন ‘মুহতাসিব’ বিষয়টি আমলে নিতে পারবেন।

অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
আর্টিকেল ৪৬
দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ইসলামী নীতির ন্যায়পরায়ণতা, সমতা, মানবিক মর্যাদা, উদ্যোগ গ্রহণের স্বাধীনতা, সুষম সম্পর্ক এবং অপচয় রোধের ভিত্তিতে সংস্থাপিত হবে। জনগণের বস্তুগত, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক চাহিদা পূরণের জন্য সরকার সুপরিকল্পিত ও সুসমন্বিত পদ্ধতিতে দেশের মানব ও অন্যান্য বস্তুগত সম্পদ ব্যবহার করবেন।
আর্টিকেল ৪৭
দেশের সকল প্রকার সম্পদ ও শক্তির উৎস সমূহের উন্নয়ন করা এবং তাদের সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং রাষ্ট্র লক্ষ্য রাখবে যাতে কোন সম্পদের মজুতদারী না হয়, অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে না থাকে বা অপচয় না হয়। জনগণ আইনের সীমারেখার মধ্যে বর্ণিত অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
আর্টিকেল ৪৮
ক. সকল প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের মালিকানা সমাজের। সকল সরকারী ও বেসরকারী ব্যবসায়িক শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপর সরকারী নিয়মনীতির নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
খ. সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা আইনসঙ্গত ও বৈধ যতি তা বৈধ পন্তার উপায় উপার্জিত হয়ে থাকে এবং শরীয়ার অনুশাসন মোতাবেক সমন্বিত বা ব্যয়িত হয়।
গ. সমাজের স্বার্থরক্ষার প্রয়োজন ব্যতিরেকে কোন সরকারী সম্পত্তি বন্টন করা যাবে না। জনগণের স্বার্থ রক্ষার প্রয়োজন ব্যতিরেকে কোন ব্যক্তিগত সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা যাবে না; প্রয়োজনে করা হলে সেক্ষেত্রে ত্বরিৎগতিতে ন্যায্যা ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
আর্টিকেল ৪৯
ক. ব্যক্তিগত উদ্যোগ গ্রহণের স্বাধীনতা আইন দ্বারা নির্ধারণ ও নিশ্চিত করা হবে।
খ. শরিয়াহর অনুশাসনের পরিপন্থী সকল প্রকার মুনাফা অর্জন বা ব্যয় নিষিদ্ধ।
গ. বৈধভাবে অর্জিত মুনাফা বা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা যাবে না।
আর্টিকেল ৫০
টাকা যেহেতু কোন কিছুর মূল্য নির্ধারক এবং বিনিময়ের মাধ্যম, তাই এমন কোন রাজস্ব বা মুদ্রানীতি গ্রহণ করা যাবে না, যা টাকার অবমূল্যায়ন ঘটায় বা মূল্যমানকে ব্যাহত করে।
আর্টিকেল ৫১
বেসরকারী ব্যক্তি বা সংগঠন দ্বারা অর্জিত নয় এমন সব আয় ও সম্পত্তির মালিকানা হবে রাষ্ট্রের।
আর্টিকেল ৫২
রিবা (সুদ), একচেটিয়া ব্যবসা, মজুদদারী, মুনাফাখোরী এবং অর্থনৈতিক শোষণ এবং এ ধরনের যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকবে। ব্যাংক চলবে PLS এর মাধ্যমে।
আর্টিকেল ৫৩
বৈদেশিক অর্থনৈতিক আধিপত্য ছিন্ন বা প্রতিহত করার জন্য রাষ্ট্র সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আর্টিকেল ৫৪
আর্থ-সামাজিক বিষয় ও শরীয়াহর জ্ঞানে অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ সমন্বয়ে একটি ‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল’ গঠন করা হবে, যা নিম্নবর্ণিত কার্যাদি সম্পাদন করবে:
ক. সংবিধানে বিধৃত আর্থ-সামাজিক লক্ষ্য পূরণের জন্য দেশের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে;
খ. সরকার ও ‘মজলিসে শুরা’ কে আর্থ-সামাজিক পরিকল্পনা, বাজেট ও অন্যান্য আর্থ-সামাজিক বিষয় অবহিত করবে;
আর্টিকেল ৫৫
‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল’ এর গঠন এবং এ সম্পর্কিত সকল নিয়মপদ্ধতি আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে।

প্রতিরক্ষা
আর্টিকেল ৫৬
ক. জিহাদ একটি অবিচ্ছিন্ন ও পবিত্র দায়িত্ব।
খ. প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ইসলামী রাষ্ট্রের ভূ-খণ্ড এবং ইসলামী ব্যবস্থার প্রতিরক্ষা অবশ্য কর্তব্য।
আর্টিকেল ৫৭
ক. রাষ্ট্র দেশের সমাজের সাথে সঙ্গতিশীল একটি সক্ষম সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তুলবে, যা জিহাদের দায়িত্ব পূর্ণভাবে পালন করবে।
খ. রাষ্ট্র জিহাদের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রত্যেক নাগরিককে সক্ষম করে তুলবে।
গ. সামরিক প্রশিক্ষণ ছাড়াও সেনাবাহিনীর মধ্যে জিহাদের চেতনাকে উজ্জীবিত করে তোলার জন্য ইসলামী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচী থাকবে।
আর্টিকেল ৫৮
ক. ইমাম হবেন সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক।
খ. ‘মজলিসে শুরা’র অনুমোদন সাপেক্ষে তিনি যুদ্ধ, শান্তি বা জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন।
আর্টিকেল ৫৯
যুদ্ধ ও শান্তির নীতি ও কৌশল প্রণয়নের জন্য একটি ‘সুপ্রীম জিহাদ কাউন্সিল’ থাকবে। কাউন্সিলের গঠন, নিয়ম ও কার্যপদ্ধতি আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে।

সুপ্রীম সাংবিধানিক কাউন্সিল
আর্টিকেল ৬০
‘সুপ্রীম সাংবিধানিক কাউন্সিল’ নামে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় সংস্থা থাকবে, যা রাষ্ট্রে ইসলামী চরিত্র ও সংবিধানের অভিভাবক হিসাবে কাজ করবে।
আর্টিকেল ৬১
কাউন্সিলের কার্যাবলী হবে নিম্নরূপ:
ক. শরিয়াহর সাথে কোন আইনের সংঘর্ষের বা অসামঞ্জস্যশীলতার প্রশ্ন উত্থাপিত হলে কাউন্সিল এ বিষয়ে রায় প্রদান,
খ. সংবিধান ও আইনের ব্যাখ্যা প্রদান।
গ. বিচার বিভাগীয় বিরোধের নিষ্পত্তি।
ঘ. ইলেকশন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানী গ্রহণ ও রায় প্রদান।
আর্টিকেল ৬২
ক. ‘সুপ্রীম সংবিধানিক কাউন্সিল’ এর গঠন নিয়ম পদ্ধতি, এর সদস্যগণের যোগ্যতা, তাদের নিয়োগের শর্তাবলী, পদচ্যুতি বা অবসর গ্রহণ, সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি এবং কাউন্সিলের পরিচালন পদ্ধতি আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে।
খ. উল্লেখিত আইন ‘মজলিসে শুরা’র দু’তৃতীয়াংশ ভোটে নির্ধারিত হবে।

উলেমা কাউন্সিল
আর্টিকেল ৬৩
‘উলেমা কাউন্সিল’ নামে একটি সংস্থা থাকবে। শরীয়াহর জ্ঞানে গভীরভাবে জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ, খোদাভীতি ও ধর্মপরায়ণতার জন্য খান এবং সমকারীন ইস্যুতে চ্যালেঞ্জ ও বিষয়াদিতে যাদের গভীর অন্তর্দৃষ্টি আছে এমন সব সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ উক্ত কাউন্সিলের সদস্য হবেন।
আর্টিকেল ৬৪
‘উলেমা কাউন্সিল’ এর কার্যাবলী হবে নিম্নরূপ:
ক. তাঁরা আইন সংক্রান্ত ইজতিহাদ পরিচালনা করবেন।
খ. ‘মজলিসে শুরা’র নিকট উপস্থাপিত বিভিন্ন আইনগত প্রস্তাবের উপর শরীয়ার অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন।
গ. কোনরূপ কালক্ষেপণ না করে মুসলিম উম্মাহর স্বার্তের সাথে জড়িত বিষয়াদিতে সত্যকে তুলে ধরে কাউন্সিল তাদের সর্বোচ্চ নৈতিক দায়িত্ব পালন করবেন।
আর্টিকেল ৬৫
‘উলেমা কাউন্সিল’ গঠনের বিধি, এর গঠন, সদস্যদের যোগ্যতা এবং অন্যান্য বিষয়াদি আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে।

ইলেকশন কমিশন
আর্টিকেল ৬৬
… সদস্যের সমবায়ে একটি স্বাধীণ ও স্থায়ী ‘ইলেকশন কমিশন থাকবে।
আর্টিকেল ৬৭
কমিশনের কার্যাবলী হবে নিম্নরূপ:
ক. আইনের বিধান মোতাবেক ইমাম, ‘মজলিসে শুরা’র সদস্য ও অন্যাণ্য পদের নির্বাচনের আয়োজন ও তত্ত্বাবধান পরিচালনা করবে;
খ. গণভোট সংগঠন ও তত্ত্বাবধান করবেন;
গ. আইনের বিধান মোতাবেক প্রার্থীগণ যাতে যাবতীয় শর্তাবলী পূরণ করেন তা নিশ্চিত করবে;
আর্টিকেল ৬৮
ক. ইলেকশন কমিশনের সদস্যবর্গ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিগণ হতে নিয়োজিত হবেন।
খ. ইলেকশন কমিশনের সদস্য থাকাকালীন তিনি অন্যকোন পদের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন না।
আর্টিকেল ৬৯
ইলেকশন কমিশন গঠনের রীতিপদ্ধতি নির্ধারিত হবে। নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধান, নির্বাচন এলাকা সুনির্দিষ্টকরণ, প্রার্থীতাপদ জমা দেবার পদ্ধতি, ভোট প্রদান পদ্ধতি, ব্যালটের গোপনীয়তা রক্ষণ ও নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা ইত্যাদি আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে।
আর্টিকেল ৭০
সকল সরকারী প্রতিষ্ঠান ও সরকারী কর্মচারী ইলেকশনকে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে সর্ববিধ সহায়তা প্রদান করবে এবং অন্যকোন কর্তৃপক্ষের মতামত ছাড়াই সরাসরি ও দ্রুত ইলেকশন কমিশনের আদেশ মান্য করিবে।

উম্মাহর একত্ব ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
আর্টিকেল ৭১
সর্ববিধ উপায়ে উম্মাহর একত্ব ও সংহতির জন্য কাজ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
আর্টিকেল ৭২
বিশ্বে স্বাধীনতা, ন্যায় পরায়ণতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানব জাতির সর্বাঙ্গীন কল্যাণ সাধনের নীতিমালার ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি প্রণীত ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালিত হবে।
আর্টিকেল ৭৩
অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের সকল নীতি, কর্মসূচি ও কার্য পরিচালিত হবে এবং রাষ্ট্র তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা এতদুদ্দেশ্যে কাজ করবে।
আর্টিকেল ৭৪
উপরন্তু, ইসলামী অনুশাসনের নীতিমালা অনুযায়ী রাষ্ট্র নিম্নবর্ণিত দায়িত্বসমূহ পালন করবে:
ক. সাবাবিশ্বে মানুষের স্বাধীনতা সংরক্ষণ,
খ. বিশ্বের যে কোন স্থানে জনগণের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিত হলে তার রোধ ও অপসারণের জন্য সংগ্রাম করা;
গ. স্রষ্টার উপাসনালয় সমূহের পবিত্রতা রক্ষা করা,
আর্টিকেল ৭৫
ক. ভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাস, অন্য দেশের সম্পদ লুন্ঠন এবং তাদের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রাষ্ট্র কোন প্রকার যুদ্ধে লিপ্ত হবে না।
খ. স্বধর্মের বিশ্বাসের সংরক্ষণ, রাষ্ট্রের ভূখণ্ডগত ও আদর্শিক ঐক্য রক্ষা, বিশ্বের নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের পক্ষাবলম্বন; মানুষের মর্যাদা, সম্মান ও স্বাধীনতা রক্ষা এবং বিশ্বে শান্তি বজায় রাখার জন্য যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া যাবে।
আর্টিকেল ৭৬
ইসলামী রাষ্ট্র দুর্বল জাতিসমূহকে শোষণ ও তাদের উপর আধিপত্য বিস্তারের জন্য কতিপয় রাষ্ট্র কর্তৃক রাষ্ট্রসংঘ বা গোষ্ঠী বা গ্রুপ গঠনের বিরোধিতা করবে।
আর্টিকেল ৭৭
রাষ্ট্র নিজ ভূখণ্ড ও অধিক্ষেত্রীয় এলাকায় বিদেশী সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি প্রদান করবে না; যা নিজ রাষ্ট্র বা এলাকায় মুসলিম রাষ্ট্রের স্বার্তের পরিপন্থী হয়।
আর্টিকেল ৭৮
রাষ্ট্র শাব্দিক অর্থে ও অন্তর্নিহিত অর্তে আন্তর্জাতিক চুক্তি সমূহকে সম্মান ও বাস্তবায়ন করবে।

প্রচার মাধ্যম ও প্রকাশনা
আর্টিকেল ৭৯
প্রচার মাধ্যম ও প্রকাশনা সংস্থাসমূহ তাদের মত প্রকাশের বিষয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সত্য তথ্যের প্রকাশ এবং ইসলামী মূল্যবোধ ও আচরণ বিধির প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকে। দৈনিক পত্র পত্রিকা ও সাময়িকী ইত্যাদি এ সীমারেখার মধ্যে প্রকাশনার অধিকার থাকবে। যুদ্ধের সময় ব্যতিত অন্য সময়ে আদালতের আদেশের সংবাদপত্রের সংবাদ প্রকাশের উপর নিষেদাজ্ঞা জারী বা পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া যাবে।
আর্টিকেল ৮০
সংবাদ মাধ্যম ও প্রকাশনা সংস্থা সমূহের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিম্নরূপ:
ক. যার দ্বারাই সম্পাদিত হোক না কেন, সকল প্রকার নির্যাতিত, অবিচার, নিপীড়ন ইত্যাদি উৎঘাটন করাও প্রতিবাদ করা;
খ. মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে সম্মান করা এবং কারো ব্যক্তিগত বিষয় প্রকাশ না করা;
গ. মানহানিকর বিষয় ও গুজব সৃষ্টি করা ও রটনা হতে বিরত থাকা;
ঘ. সত্যকে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করা, দৃঢ়তার সাথে মিথ্যা প্রচারণা হতে বিরত থাকা বা সত্যের সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করা অথবা সজ্ঞানে সত্যকে লুকিয়ে রাখা বা বিকৃত করা হতে বিরত থাকা।
ঙ. সুরুচিশীল ও মর্যাদাবান ভাষা ব্যবহার করা।
চ. সমাজে সু-আচরণ ও নৈতিক মূল্যবোধের উদ্বোধন ঘটান;
ছ. কুরুচিশীল, অশ্লীল ও অনৈতিক বিষয়ের প্রচারণা হতে কঠোরভাবে বিরত থাকা;
জ. ইসলাম বিরোধী অপরাধ বা কর্মকে ক্ষমার চোখে দেখা বা উৎসাহিত করা হতে বিরত থাকা;
ঝ. কোন প্রকার দুর্নীতির অস্ত্রে পরিণত হওয়া হতে বিরত থাকা;

সাধারণ ও অন্যান্য বিধান মালা
আর্টিকেল ৮১
হিজরী সন হবে রাষ্ট্রের সরকারী বর্ষপঞ্জী এবং রাষ্ট্রভাষা হবে……। যদি আরবী সরকারী ভাষা না হয় তবে তা হবে দ্বিতীয় সরকারী ভাষা
আর্টিকেল ৮২
ক. ইমাম বা ‘মজলিসে শুরা’ সংবিধানের সংশোধন প্রস্তাব করতে পারবে না। মজলিসে শুরার দু’তৃতীয়াংশ ভোটে সমর্থিত হলে সংশোধনী প্রস্তাব করতে পারবে না। মজলিসে শুরার দু’-তৃতীয়াংশ ভোটে সমর্থিত হলে সংশোধনী কার্যকর হবে।
খ. কোন সংশোধনী যদি রাষ্ট্রের ইসলামী চরিত্র বিপন্ন করে বা শরিয়ার কোন বিধান লংঘন করে, তবে সে সংশোধনী বাতিল বলে গণ্য হবে।
আর্টিকেল ৮৩
ক. এই সংবিধান কার্যকর হবার পূর্ব পর্যন্ত আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ এবং অন্যান্য যে সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান ছিল তাদের কার্যাবলী চালু থাকবে এবং তাদের কার্যাবলী সংবিধানের বিধান অনুযায়ী নতুন বিভাগ, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানসমূহ গঠিত ও কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
খ. এই সংবিধান কার্যকর হওয়ার সময় যে সকল আইন, বিধান, নিয়ম বলবৎ ছিল তাদের কার্যকারিতা বলবৎ থাকবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত এই সকল আইন, বিধান বা নিয়ম এই সংবিধানের বিধান অনুযায়ী বাতিল বা সংশোধিত না হয়।
গ. এই সংবিধান গ্রহণের পর এই সংবিধানের বিধান অনুযায়ী বর্তমামে বিদ্যমান আইনসভার মাধ্যমে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বিদ্যমান আইনসভা প্রথম ‘মজলিসে শুরা’, প্রথম ‘ইলেকশন কমিশন’ এবং প্রথম ‘সুপ্রীম সাংবিধানিক কাউন্সিল’ প্রতিষ্ঠার বা গঠনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আর্টিকেল ৮৪
সংশ্লিষ্ট সকলের আবশ্যিক কর্তব্য থাকবে যে, এই সংবিধানের বিধানাবলী দ্রুত কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয় যাতে এ সংবিধান গ্রহণের পর অবিলম্বে সামগ্রিকভাবে এই সংবিধান কার্যকর হয়।
আর্টিকেল ৮৫
গণভোটের ফলাফল প্রকাশের দিন হতে (যদি গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান গৃহীত হয়) অথবা দেশের সাংবিধানিক অন্যকোন সংস্থা কর্তৃক যে দিন সংবিধান গৃহীত হয় সেদিন হতে এ সংবিধান কার্যকর হবে।
(সূত্র: ইসলামিক কাউন্সিল, A Model of an Islamic Constitution (লন্ডন: ইসলামিক কাউন্সিল, ১৯৮৩)।

_______________________________০০______________________________
লেখক পরিচিতি
আবদুর রশিদ মতিন
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়া-এর রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ-
>> INTERODUCTION TO POLITICAL SCIENCE
>> ISLAM AND REVOLITION : Contribution of Syed Maududi
>> FRONTIERS AND MECHANICS OF ISLAMIC ECONOMICS
(co-editor with R.I.Molla, S. Gusau and A. A. Gwandu)
>> NATURE AND METHODOLOGY OF ISLAMIC ECONOMICS
(co-editor with M. O. K. Bajulaiye-Shasi)
>> ISLAM IN AFRICA : Proceedings of the Islam in Africa Conference
(co-editor with Nura Alkai, Adamu Adamu, Awwal Yaduda and Ha

বাংলাদেশ ইনষ্টিটিউট অব ইসলামিক থ্যট


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি