হযরত ইলিয়াস আলাইহিস সালাম
হযরত ইলিয়াস আলাইহিস সালাম বনী ইসরাঈলদের একজন বিখ্যাত নবী। তিনি হযরত মূসার (আ) ভাই হযরত হাুনের (আ) বংশধর। তিনি বর্তমান জর্ডান নদীর উত্তর অঞ্চলের জিল’আদ নামক স্থানের “আবেল মাহুলা” নামক জায়গার অধিবাসী ছিলেন। খৃষ্টান এবং ইয়াহুদদের কাছে তিনি ইলিশা নামে পরিচিত। তিনি খৃষ্টপূর্ব ৮৭৫ থকে ৮৫০ সনের মাঝামাঝি সময়ে জন্মলাভ করেন।

মহান আল্লাহর ইচ্ছায় বনী ইসরাঈলদের মধ্যে বহু নবী আগমন করেন। এর পরও তারা বার বার সত্য পথ থেকে দূরে সরে যায়। যে সময় হযরত েইলিয়াস (আ) জন্ম লাভ বরেন সে সময় বনী িইসরাঈলগণ আবার আল্লাহর পথ ছেড়ে গোনাহর কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল।

হযরত সুলায়মানের (আ) সময় বনী ইসরাঈলদের প্রভাব- প্রতিপত্তি চরম পর্যায়ে উনীত হয়। কিন্তু তাঁর ইনতিকালের পর পরই বনী ইসরাঈলদের রাষ্ট্র দু’ভাগ হয়ে যায়। দক্ষিণ ফিলিস্তিনে একটি ছোট রাষ্ট্র কায়েম হয়। এর রাজধানী হয় বায়তুল মাকদাস। অন্যদিকে উত্তর ফিলিস্তিনে েইসরাঈল নামে একটি রাষ্ট্র কায়েম হয়। এর রাজধাী ছিল সামেরিয়া। উত্তর এলাকার ইসরাঈল নামক রাষ্ট্রে প্রথম থেকেই শিরক, মূর্তি পূজা, জুলুম-অত্যাচার ও লজ্জাহীনতা বেড়ে যেতে থাকে। এ অবস্থায় এ রাষ্ট্রের শাসক ‘আখীআব’ লেবাননের মুশরিক রাজ কন্যা ইযবেলকে বিয়ে করে। তার প্রভাবে পড়ে ‘আখী আব’ ও শুশরিক হয়ে যায়। স্ত্রী ইযবেলের কথামত সে রাজধানী সামেরিয়ায় ‘বা’ল’ দেবতার মন্দির ও বলির বেদী তৈরী করে এবং এক আল্লাহকে বাদ দিয়ে বা’ল দেবতার পূজা প্রচলনের চেষ্টা চালায়।

ঠিক এ সময় হযরত ইলিয়াস (আ) এর আবির্ভাব ঘটে। তিনি এসব পাপ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। লোকজনকে তিনি এ মূর্তি পূজার অপকারিতা বুঝাতে থাকেন। তিনি বাদশাহ ‘আখী আবকে তার অন্যায় কাজকর্মের জন্য সাবধান করে দেন। তিনি বাদশাহকে বললেন: তুমি এসব অন্যায় বন্ধ না করলে তোমার রাষ্ট্রে আর এক বিন্দু বৃষ্টিও হবে না। আল্লাহর নবীর কথাই সত্য প্রমাণিত হলো। সেখানে সাড়ে তিন বছর পর্যন্ত বৃষ্টি হলো না। এমন অবস্থায় বাদশাহ ইলিয়াস (আ)-কে খুঁজে আনলেন এবং বৃষ্টির জন্য আল্লাহর কাছে দো’আ করতে বললেন। এ সময় হযরত ইলিয়াস (আ) বা’ল দেবতা এবং মহান আল্লাহর পার্থক্য মানুষের সামনে প্রকাশ করতে চাইলেন। তিনি বললেন: একটি প্রকাশ্য সভায় বা’ল দেবতার পূজারীরা তাদের দেবতার নামে কুরবানী করবে এবং আমি আল্লাহর নামে কুরবানী পেশ করবো। গায়েবী আগুন এসে কুরবানীকে পুড়িয়ে ফেলবে সেই সত্য পথের অনুসারী। ‘আখী আব’ প্রস্তাবটি মেনে নিল। সুতরাং কারমেল পর্বতে বা’ল দেবতার আটশত পূজারী এবং হযরত ইলিয়াস (আ) হাজার হাজার লোকের সামনে কুরবানী পেশ করলেন। গায়েবী আগুন এসে হযরত ইলিয়াসের (আ) কুরবানী পুড়িয়ে ফেললে সবাই তাঁর প্রভুর সত্যতা মেনে নিল। েইলিয়াস (আ) সেখানেই পূজারীদেরকে হত্যা করালেন। এরপর তিনি দো’আ করলেন। প্রচুর বৃষ্টি হলো। এতে প্রমাণ হলো একমাত্র আল্লাহই সত্যিকার ক্ষমতার অধিকারী। তিনিই সব ইবাদত পাওয়ার যোগ্য। আর হযরত ইলিয়াস (আ) তাঁরই প্রেরিত নবী।

এই ঘটনার পর রাজা ‘আখী আব’ তার স্ত্রী ইযবেলের প্ররোজনায় হযরত ইলয়াসের (আ) শত্রু হয়ে গেল। সে শপথ করল: বা’ল দেবতার পূজারীদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে েইলিয়াসকেও সেভাবে হত্যা করবে। এ অবস্থায় হযরত ইলিয়াস (আ) দেশ ছেড়ে সিনাই মরুভূমির সিনাই পর্বতে গিয়ে আশ্রয় নিলেন এবং কয়েক বছর পর্যন্ত সেখানেই কাটালেন। ঐ সময় তিনি আল্লাহর কাছে দো’আ করে বলতেন: ‘হে আল্লাহ, বনী ইসরাঈলরা তোমার হুকুম-আহকাম পরিত্যাগ করেছে। তোমার নবীদের হত্যা করেছে। তোমার নবীরেদ মধ্যে এখন আমিই শুধু বেঁচে আছি। তারা আমাকেও হত্যা করতে চায়।

এ সময়েই বায়তুল মাকদাসের ইয়াহুদী রাষ্ট্রের শাসক ইয়াহুরাম ইসরাঈলৈর বাদশাহ আখী আবের য়েকে বিয়ে করে। ফলেতারা রাজ্যেও শিরক ও বা’ল দেবতার পূজা শুরু হয়। হযরত েইলিয়াস (আ) ইয়াহুরামের কাছে পত্র লিখে তাকেও সাবধান করে দেন। কিন্তু তারা কেউিই তাঁর কথায় কান দিলো না। অবশেষে তাদের ওপর আল্লাহর গযব নেমে আসে। বিদেশীরা ইয়াহুরামের রাজ্রের উপর হামলঅ করে তাকে হত্যা করে এবং স্ত্রীকে বন্দী করে নিয়ে যায়। কিছুদিন পর সেও কঠিন পেটের পীড়ায় মারা যায়।

এর কয়েক বছর পর হযরত ইলিয়াস (আ) আবার ইসরাঈলে ফিরে গিয়ে ‘আখী আব’কে সাবধান করে দেন। তার মৃত্যুর কিছুদিন পর হযরত ইলিযাস (আ) ইনতিকাল করেন।

হযরত ইলিয়াস(আ) সারা জীবন অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তিনি মানুষের কল্যাণ কামনা করেছেন। আর একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করেননি।

অনুশীলনী

১। যার সময়ে বন্দী ইসরাঈলদের প্রভাব প্রতিপত্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল?

২। ইসরাঈল রাষ্ট্রে কি বেড়ে গিয়েছিলো?

৩। শাসক ‘আখী আব’ কিভাবে মুশরিক হয়েছিলো?

৪। বাল দেবতা ও মহান আল্লাহর মধ্যেযার পার্থক্য তুলে ধরার জন্য হযরত ইলিয়াস (আ) কি করলেন?

৫। হযরত ইলিয়াস (আ) বা’ল দেবতার পূজারীদের কিভাবে হত্যা করাতে সক্ষম হলেন?

৬। বাদশাহ হযরত ইলিয়াস (আ) কে হত্যা করতে চাইলো কেন?

৭। সিনাই পর্বতে ইলিয়াস (আ) কি বলে আল্লাহর কাছে দো’আ করতেন?

৮। হযরত ইলয়াস (আ) কার কাছে পত্র দিলেন এবং কেন?

৯। ইয়াহুরাম তার ও তার রাজ্যের পরিণতি কি হয়েছিলো লিখ?


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি