মানুষের তৎপরতা যত বৃদ্ধি পায়, যত অধিক গুরুত্ব অর্জন করে, সেখানে শয়তানের হস্তক্ষেপও ততই ব্যাপকতর হতে থাকে। এদিক দিয়ে বর্তমান যুগ উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এ যুগে একদিকে পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী ও স্বার্থপূজারী সভ্যতা আমাদের জাতির নৈতিক পতনকে চরম পর্যায়ে উপনীত করেছে, অন্যদিকে চলছে সমাজতন্ত্রের নাস্তিক্যবাদী চিন্তার হামলা। এ হামলা আমাদের জাতির মৌলিক ঈমান-আকীদার মধ্যে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করেছে। এর ফলে ইসলামের সাথে জাতির গভীর প্রেম-প্রীতিময় সম্পর্কের ভিত্তি নড়ে উঠেছে। বিপর্যয় ও অনিষ্টকারিতার ‘সিপাহসালার’ শয়তান যে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল হুবহু তারই চিত্র যেন আজ ফুটে উঠেছে।

শয়তান বলেছিলঃ

“আমি (হামলা করার জন্য) এদের (মানব জাতির) সামনে থেকে আসবো, পিছন থেকে আসবো, ডান দিক থেকে আসবো, বাম দিক থেকে আসবো।“ (সূরা আরাফঃ ১৭)

এ অবস্থায় আমাদের অনেক কল্যাণকামী বন্ধু দুনিয়ার ঝামেলা থেকে সরে এসে সংসারের একান্তে বসে কেবল নিজের মুসলমানিত্বটুকু বজায় রাখার জন্য প্রচেষ্টা চালাবার উপদেশ দান করে থাকেন। অবশ্য এ অবস্থার মধ্যে অবস্থান করা মামুলী ব্যাপার নয়। সাধারণ অবস্থায় প্রত্যেক সৎ ব্যক্তি নৈতিকতার আদর্শকে কায়েম রাখে। কিন্তু নৈতিক উচ্ছৃঙ্খলার প্রবল বাত্যা পরিবেষ্টিত হয়ে উন্নত নৈতিক বৃত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু কিছু সংখ্যক লোক যদি মহামারি আক্রান্ত এলাকা থেকে দূরে অবস্থান করে নিজেদের স্বাস্থ্যোন্নতির কাজে ব্যাপৃত থাকে এবং নিশ্চিন্তে মহামারিকে নৈতিক মৃত্যুর বিভীষিকা চালিয়ে যাবার ব্যাপক অনুমতি দান করে, তাহলে আমাদের মতে এর চাইতে বড় স্বার্থপরতা আর হতে পারে না। মাজারের নিকট যে সমস্ত মূল্যবান প্রদীপ ও স্বর্ণনির্মিত বাতিদান অযথা আলোক বিচ্ছুরণ করে, অথচ তাদের সন্নিকটে বনে-জঙ্গলে মানুষের কাফেলা পথভ্রষ্ট হয়ে দস্যুহস্তে লুন্ঠিত হয়, সেই প্রদীপ ও বাতিদানের অস্তিত্ব-অনস্তিত্ব যেমন সমান মূল্যহীন, ঠিক তেমনি যে ঈমান, ইসলাম ও তাকওয়া চতুষ্পার্শের পরিবেশকে আলোকিত করার জন্য কর্মক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ার পরিবর্তে বিরোধী শক্তির ভয়ে মসজিদে আশ্রয় খুঁজে ফেরে, তাও হৃদয়-মনের জন্য নিছক স্বর্ণালংকার বৈ আর কিছুই নয়। চরিত্রের যে ‘মূলধন’কে ক্ষতির আশঙ্কায় হামেশা সিন্দুকের মধ্যে তালাবদ্ধ করে রাখা হয় এবং যা হামেশা অনুৎপাদক (Unproductive) অবস্থায় বিরাজিত থাকে, সমাজ জীবনের জন্যে তার থাকা না থাকা সমান। মুসলমান নারী-পুরুষ এবং মুসলিম দলের নিকট চরিত্র ও ঈমানের কিছু ‘মূলধন’ থাকলে তাকে বাজারে আবর্তন (Circulation) করার জন্য ছেড়ে দেওয়া উচিত। তারপর মূলধন নিয়োগকারীদের মধ্যে যোগ্যতা থাকলে সে মূলধন লাভসহ ফিরে আসবে, আর অযোগ্য হলে লাভ তো দূরের কথা আসল পুঁজিও মারা পড়বে। কিন্তু বাজারে আবর্তিত হতে থাকার মধ্যেই পুঁজির স্বার্থকতা। অন্যথায় যত অধিক পরিমাণ পুঁজিই জমা করা হোক না কেন তা পুরোপুরি ব্যর্থ হতে বাধ্য।

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীগণ যখন তাদের চরিত্র ও ঈমানের ন্যূনতম পুঁজি এ পথে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, তখন একে কেবল ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাবার জন্যই নয়, বরং দেশ ও জাতির এবং আমাদের নিজেদেরকেও এ থেকে অধিকতর মুনাফা অর্জনের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একজন স্বল্প পুঁজিদার ব্যবসায়ীর ন্যায় আমাদের রক্ত পানি করা উপার্জনকে ব্যবসায়ে খাটাবার ব্যাপারে পূর্ণ সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত। এর পরিচালনা এবং দেখা-শুনার জন্য যাবতীয় উপায়ও অবলম্বন করা কর্তব্য। মহামারী আক্রান্ত এলাকায় জনগণের সেবা করার জন্য আমাদের নিজেদের স্বার্থরক্ষার সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।