প্রসঙ্গ-কথা
ইসলামী জীবন ব্যবস্থার অবয়ব নির্মাণে হাদীস এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার অধিকারী। কুরআনী নির্দেশাবলীর মর্মার্থ অনুধাবন এবং বাস্তব জীবনে উহার যথার্থ অনুশীলনে হাদীসের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা একান্ত অপরিহার্য। এ কারণেই যুগে-যুগে দেশে-দেশে হাদীসের সংকলন, অনুদাবন ও বিশ্লেষণের উপর সমধিক গুরুত্ব আরোপ করা হইয়াছে। সময়ের চাহিদা মোতাবেক হাদীসের বিন্যাস ও ভাষ্য রচনার দুরূহ কাজও অনেক মনীষী সম্পাদন করিয়াছেন।

বাংলা ভাষায় হাদীসের কিছু কিছু প্রাচীন গ্রন্হের অনুবাদ হইলেও উহার যুগোপযোগী বিন্যাস ও ভাষ্য রচনার কাজটি প্রায় উপেক্ষিতই ছিল দীর্ঘকাল যাবত। ফলে এতদাঞ্চলের সাধারণ দ্বীনদার লোকেরা এসব অনুবাদ পড়িয়া খুব বেশী উপকৃত হইতে পারিতেন না; উহা হইতে প্রায়োজনীয় নির্দেশনা লাভও অনেকের পক্ষে সম্ভবপর হইত না। সৌভাগ্যক্রমে, একালের মহান ইসলামী চিন্তাবিদ ও দার্শিনিক হযরত আল্লামা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ) সুদীর্ঘ প্রায় পঁচিশ বৎসরব্যাপী অশেষ সাধনা বলে ‘হাদীস শরীফ’ নামক গ্রন্হমালা প্রাণয়ন করিয়া বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের দীর্ঘকালের এক বিরাট অভাব পূরণ করিয়াছেন।

এই গ্রন্হে তিনি হাদীসের বিশাল ভাণ্ডার হইতে অতি প্রায়োজনীয় হাদীসসমূহ চয়ন করিয়া একটি নির্দিষ্ট ধারাক্রম অনুসারে সাজাইয়া দিয়াছেন। এ ক্ষেত্রে আগাগোড়াই তিনি ইসলামের মৌল বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি আধুনিক মন-মানসের চাহিদার প্রতিও লক্ষ্য রাখিয়াছেন। ইহাতে সন্নিবিষ্ট হাদীসমূহের তিনি শুধু প্রঞ্জল অনুবাদ ও যুগোপযোগী ব্যাখ্যা প্রদান করিয়াই ক্ষান্ত হন নাই বরং ইহার আলোকে প্রাসঙ্গিক বিধি-বিধানগুলিও অতি চমৎকারভাবে বিবৃত করিয়াছেন। এই দিক দিয়া তিনি একই সঙ্গে মুহাদ্দিস ও মুজতাহিদ- উভয়ের দায়িত্বই অতি নিপুণভাবে পালন করিয়া গিয়াছেন।

‘হাদীস শরীফ’ নামক এই গ্রন্হমালার প্রণয়নের কাজ তিনি শুরু করিয়াছিলেন ষাটের দশকের গোড়ার দিকে। ইহার প্রথম খণ্ডের প্রথম ভাগ পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালে- আইয়ুব শাহীব কারাগারে তাঁহার অবস্থানকালে। আর দ্বিতীয় ভাগ প্রকাশিত হয় ১৯৬৬ সালে। অতঃপর বিগত দুই যুগে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা হইতে ইহার পাঁচটি সংস্করণ প্রকাশিত হইয়াছে। একইভাবে ইহার দ্বিতীয় খণ্ডও প্রথমতঃ দুই ভাগে এবং পরে একত্রে প্রকাশিত হইয়াছে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা হইতে। এক্ষণে ‘খায়রুন প্রকাশনী’ গ্রন্হটির সকল খন্ডের প্রকাশনার দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছে এবং সে অনুসারে ইহার তৃতীয় খন্ড পাঠকদের হাতে তুলিয়া দেওয়া হইতেছে।

এই গ্রন্হমালার প্রথম খণ্ডে গ্রন্হকার ইসলামের বুনিয়াদী বিষয় যথা নিয়ত, আকায়িদ, শিরক, তওহীদ, ঈমান, নবুয়্যাত, আখিরাত, তাকদীর, রিজিক, নাজাত, সুন্নাত, বিদয়াত, ইলম, আখলাক, ইসলাম, সংগঠন, জিহাদ, রাষ্ট্র, বিচার প্রভৃতি বিষয় এবং দ্বিতীয় ফরয আমল যথা নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাকার প্রসঙ্গ আলোচনা করিয়াছেন, আর আলোচ্য তৃতীয় খণ্ডে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের নানা মৌলিক বিষয়াদি আলোচিত হইয়াছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে। তৃতীয় খণ্ডে গ্রন্হকার শুধু পারিবারিক জীবনের উপর আলোকপাত করার পর চতুর্থ খণ্ডে সামাজিক প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা শুরু করিয়াছিলেন। কিন্তু সামান্য কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর তিনি আর সে আলোচনা সমাপ্তি করিয়া যাইতে পারেন নাই। তাই চতুর্থ খণ্ডে ঐ অসমাপ্ত আলোচনা আমরা তৃতীয় খণ্ডেরই শেষে সংযুক্ত করিয়া দিয়াছি।

বর্তমানে কাগজ-কালির অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির দরুণ মুদ্রণ ব্যয় বহুলাংশে বাড়িয়া গিয়াছে। কিন্তু পাঠকদের ক্রয় ক্ষমতার প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া প্রকাশক গ্রন্হটির মূল্য যথাসম্ভব যুক্তিসঙ্গত সীমার মধ্যে রাখার চেষ্টা করিয়াছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন গ্রন্হকারের এই দ্বীনি খিদমত কবুল করুন এবং তাহাকে জান্নাতুল ফিরদৌসে স্থান দিন, ইহাই আমাদের সানুনয় প্রার্থনা।

মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান

চেয়ারম্যান

মওলানা আবদুর রহীম ফাউন্ডেশন


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি