লেখকঃ শামছুল হক ফরিদপুরী

লেখক পরিচিতি

শামছুল হক ফরিদপুরী

আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী একজন বাংলাদেশী ইসলামি চিন্তাবিদ, প্রখ্যাত আলেম, সমাজ-সংস্কারক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি লালবাগ জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া কওমি মাদ্রাসা সহ গওহরডাঙ্গা কওমি মাদ্রাসা, ফরিদাবাদ কওমি মাদ্রাসা এবং বড় কাটারা কওমি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় নেতা।[১]


জন্ম ও পরিবার
তিনি ১৩০২ বঙ্গাব্দের ২ ফাল্গুন গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী ইউনিয়নের ঘোপেরডাঙ্গা (গওহরডাঙ্গা) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর পূর্বপুরুষগণ প্রায় তিনশো বছর পূর্বে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আরব থেকে বাংলায় আগমন করেন। তাঁর পিতার নাম মুন্সি মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ এবং মাতার নাম আমেনা খাতুন। তাঁর পিতা মুন্সি আবদুল্লাহ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহী বিপ্লবে এবং তাঁর দাদা চেরাগ আলী সৈয়দ আহমদ শহীদের শিখ-ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[২][৩]

শিক্ষাজীবন
ছদর সাহেব পাটগাতীর স্থানীয় জনৈক হিন্দু পণ্ডিতের কাছে লেখাপড়া শুরু করেন। এরপর টুঙ্গিপাড়া এবং বরিশালের সুটিয়াকাঠি স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নোয়াপাড়ার বাঘরিয়া হাই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখা-পড়া সমাপ্ত করার পর সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় এবং ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসার এ্যাংলো পার্সিয়ান (ইংলিশ মিডিয়াম) বিভাগ থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি স্কলারশিপ নিয়ে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে। কিছুদিন পর শুরু হয় মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন। তখন তিনি কলেজ ত্যাগ করে থানাভবনে হাকীমুল উম্মাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর কাছে চলে আসেন।[৪]

এরপর তিনি থানভী রহ.এর পরামর্শে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে সাহারানপুরের মাযাহিরুল উলুম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে ইসলামিয়্যাতে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক শিক্ষা অর্জন করেন। (কাফিয়ে থেকে মেশকাত পর্যন্ত) এরপর দারুল উলুম দেওবন্দে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেন। আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী, শায়খূল ইসলাম মাদানী ও শায়খুল আদব এজাজ আলী রহ প্রমুখ মনীষীগণের নিকট তিনি হাদীস অধ্যয়ন করেন। তিনি মাওলানা জাফর আহমাদ উসমানী ও মাওলানা আব্দুল গনী প্রমুখ মনীষীগণ থেকেও খেলাফত লাভ করেন।

কর্মজীবন
কর্মজীবনে পূর্ণ সময়ে তিনি হাদীস অধ্যাপনায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি দেশে ফিরে এসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসায় অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থিত জামিয়া ইউনূসিয়ায়। এরপর ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ছিলেন ঢাকার আশরাফুল উলুম বড় কাটারায় । ১৯৫১ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হাদীসের দরস দেশ ঢাকার ঐতিহাসিক মাদরাসা জামিয়া কুরআনিয়া লালবাগে। কর্মময় জীবনে তিনি বহু মাদরাসা ও মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। তন্মধ্যে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে বাগেরহাটের গজালিয়া মাদ্রাসা, ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে আশরাফুল উলূম বড় কাটরা মাদ্রাসা, ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা, ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার লালবাগে জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ, ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার ফরিদাবাদের জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম উল্লেখযোগ্য।[৪]

তথ্যসূত্র
সত্যনিষ্ঠ আলেম শামছুল হক ফরিদপুরী (রহ.)।মুফতি এনায়েতুল্লাহ, দৈনিক সমকাল-১০ ফেব্রুয়ারি ২০১২ । ৩১ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে সংগৃহিত
[bn.banglapedia.org/index.php?title=ফরিদপুরী,_মওলানা_শামসুল_হক বাংলাপিডিয়া বাংলা ওয়েব সংস্করণ। ]
গোপালগঞ্জ জেলা তথ্য বাতায়ন
মোঃ আবুল কালাম আজাদ (২০১৩)। "বাংলা ভাষায় তাফসীর চর্চা: বিশেষত তফসীরে নূরুল কোরআন": ১৯৯–২০১। অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)

ঠিকানা