লেখকঃ অধ্যাপক গোলাম আযম

লেখক পরিচিতি

অধ্যাপক গোলাম আযম

অধ্যাপক গোলাম আযম বিশ্বনন্দিত ইসলামী চিন্তাবিদ, ভাষা আন্দোলনের নেতা, ডাকসুর সাবেক জিএস, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপকার। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের উত্থান-পতনের প্রতিটি ঘটনায় এবং এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অধ্যাপক গোলাম আযমের ভূমিকা ইতিহাস হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের মাটি, আলো-বাতাস এবং মানুষের সাথে একাত্ম হয়ে আছে তার জীবন, তার সংগ্রাম। স্বেচ্ছায় দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরে যাওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন তার মতো ব্যক্তির পক্ষেই দেয়া সম্ভব হয়েছে। ৫ম বারের মতো জেলে যাওয়ার আগে গণমাধ্যমের সামনে তিনি যে বলিষ্ঠ সাক্ষাতকার দিয়ে গেছেন তা ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রেরণার বাতিঘর হিসেবেই দেখছেন সকলে। তার চিন্তা চেতনা আর সাহসিকতা আর বলিষ্ঠতা এদেশের ছাত্র যুব সমাজ তথা ইসলাম প্রিয় মানুষের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে। তার অমর কৃতির জন্য তিনি চির অমর হয়ে থাকবেন।
অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯২২ সালের ৭ই নভেম্বর মঙ্গলবার (বাংলা ১৩২৯ সালের ৫ই অগ্রহায়ণ) ঢাকা শহরের লক্ষ্মীবাজারস্থ বিখ্যাত দ্বীনী পরিবার শাহ সাহেব বাড়ী (মিঞা সাহেবের ময়দান নামে পরিচিত মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম গোলাম কবির ও মায়ের নাম সৈয়দা আশরাফুন্নিসা। তার পিতামহ মাওলানা আব্দুস সোবহান।
১৯৩৭ সালে জুনিয়ার মাদ্রাসা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে কৃতিত্বেও সাথে উত্তীর্ণ হন। এসএসসি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় গোলাম আযম ত্রয়োদশ স্থান লাভ করেন। ১৯৪৪ সালে ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকেই আইএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে ঢাকা বোর্ডে দশম স্থান অধিকার করেন। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের কাজে জড়িয়ে পড়ায় গোলাম আযম পরীক্ষা দিতে পারেননি এবং ১৯৪৯ সালে দাঙ্গাজনিত উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি। ফলে তিনি ১৯৫০ সালে এম. এ পরীক্ষা দেন। ঐ বছর কেউ প্রথম বিভাগ পায়নি। চারজন ছাত্র উচ্চতর দ্বিতীয় বিভাগ লাভ করেন এবং অধ্যাপক গোলাম আযম তাদের মধ্যে একজন।
১৯৫০ সালের ৩রা ডিসেম্বর তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। কর্মজীবনের সূচনা হলো। তিনি ১৯৫০ সালর ৩রা ডিসেম্বর থেকে ১৯৫৫ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের অত্যন্ত জনপ্রিয় শিক্ষক হিসেবে রংপুর কারমাইকেল কলেজে কর্মরত ছিলেন।
তিনি ১৯৪৬-৪৭ সেশনে ফজলুল হক মুসলিম হলের ছাত্র সংসদেও জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। তার যোগ্যতা ও প্রতিভাগুণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত হন ১৯৪৭-৪৮ সেশনে। ১৯৪৮-৪৯ সালেও তিনি ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী তাঁর সাক্ষাৎকারে লিয়াকত আলী খানের সভায় ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে পঠিত স্মারকলিপি সম্পর্কে বলেন, ‘‘রাষ্ট্রভাষার দাবি সম্বলিত মেমোরেন্ডামের খসড়া তৈরির ভার আমার উপর অর্পিত হয়েছিল। ডাকসুর তৎকালীন জি, এস, গোলাম আযম বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম মাঠে তা পাঠ করেন এবং ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে লিয়াকত আলী খানকে প্রদান করেন।’’ তিনি যখন রংপুর কারমাইকেল কলেজে অধ্যাপনা করেছিলেন, তখনও সেখানে ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে সরকার কর্তৃক গ্রেফতার হন। একই কারণে তিনি ১৯৫৫ সালে পুনরায় গ্রেফতার হন অধ্যাপক গোলাম আযম।
ছাত্রজীবন শেষে অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯৫০ সালেই তাবলীগ জামায়াতের তৎপরতার সাথে জড়িত হন। ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি তাবলীগ জামায়াতের রংপুরের আমীর ছিলেন। এছাড়া ১৯৫৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি তমদ্দুন মজলিসের রংপুর জেলার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৫৪ সালের এপ্রিলে জামায়াতে ইসলামীতে সহযোগী (মুত্তাফিক) হিসেবে যোগদান করার পর ১৯৫৫ সালে গ্রেফতার হয়ে রংপুর কারাগারে অবস্থানকালেই জামায়াতের রুকন হন। ১৯৫৫ সালের জুন মাসে তিনি রাজশাহী বিভাগীয় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। এর এক বছর পর তাকে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি এবং রাজশাহী বিভাগীয় জামায়াতের আমীরের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ১৯৬২ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯-১৯৭১ সেশনে তিনি জামায়াতে ইসলামী পূর্ব-পাকিস্তানের আমীর নির্বাচিত হন। ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বেচ্ছায় মজলিসে শূরার কাছে বিশেষ আবেদনের প্রেক্ষিতে আমীরে জামায়াত-এর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ করেন।
অধ্যাপক গোলাম আযম ২৩ অক্টোবর,২০১৪ খ্রিস্টাব্দ রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যবরণ করেন। ২৫ অক্টোবর লক্ষাধিক মানুষের সমাগমে জাতীয় মসজিদ বাইতুল মুকাররমে যোহরের নামাজের পর তাঁর জানাযার নামাজ আদায় করা হয়। জানাযার ইমামতি করেন গোলাম আযমের সন্তান আবদুল্লাহিল আমান আযমী। পরবর্তীতে মগবাজারে গোলাম আযমের পারিবারিক কবরস্তানে তাকে সমাহিত করা হয়।

ঠিকানা