হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম
হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ছিলেন আল্লাহর একজন শ্রেষ্ঠ রসূল। তিনি বনী ইসরাঈল বংশে জন্মলাভ করেছিলেন এং তাদের জন্যই রসূল হিসেবে এসেছিলেন। তাঁর জন্ম আল্লাহ তা’আলার অসীম শক্তির প্রমাণ। আল্লাহ তা’আলা হযরত আদম আলাইহিস সালঅমকে মাতা-পিতা ছাড়াই সৃষ্টি করেছিলেন। আর হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেছিলেন পিতা ছাড়াই। হযরত মরিয়াম (আ) ছিলেন তাঁর মা। তাই তাঁকে ঈসা ইবনে মরিয়াম বলা হয়।

হযরত ঈসার (আ) মা হযরত মরিয়াম (আ) মায়ের পেটে থাকতেই তাঁর মা হান্না বিবি মানত করেছিলেন যে, তাঁর গর্ভের সন্তানকে েএকনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ঘর বায়তুল মাকদাসের খাদেম বানাবেন। কিন্তু ভূমিষ্ঠ হলে দেখা গেল পুত্র সন্তান জন্মলাভ না করে মেয়ে সন্তান জন্মলাভ করেছে। তিন তাঁর িএ মেয়ের নাম রাখলেন মরিয়াম। একটু বড় হলে মেয়েকেই তিনি বায়তুল মাকদাসেরখেদমতের জন্য নিয়োজিত করলেন। হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম ছিলেন বায়তুল মাকদাসেরমোতাওয়াল্লী। তিনি ছিলেন হযরত মরিয়ামের আত্মীয়। তাঁর তত্ত্বাবধানে তিনি বায়তুল মাকদাস সংলগ্ন িএকটি আলাদা কামরায় থাকতেন। অত্যন্ত পবিত্র পরিবেশে তিন লালিত পালিত িএবং বড় হতে থাকলেন। যাকারিয়া (আ) খোঁজ-খবর নেয়ারজন্য মাঝে মাঝে তাঁর কামরায় প্রবেশ করতেন। যখনই তিনি যেতেন তখনই দেখতেন বালিকা মরিয়ামের কামরায় অনেক সুমিষ্ট ফল-মূল। এ দেখে তিনি আশ্চর্য হয়ে যেতেন। ভাবতেন অসময়ে মারিয়াম এসব কোথা থেকে পায়? একদিন তিনি মরিয়ামকে জিজ্ঞেস করলেন: মারিয়াম তুমি এসব ফল-মূল কোথা থেকে পাও? এ সব তো এখন পাওয়ার কথা নয়। মরিয়াম বললেন মহান আল্লাহ আমাকে এ সব ফল-মূল দান করেন। এ সব ঘটনা থেকেই বুঝা যায় যে, হযরত মারিয়াম ছিলেন আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় পাত্রী।

মারিয়াম সেখানেই বড় হলেন এবং যৌবনে পদার্পণ করলেন। এ সময় একদিন আল্লাহর ফেরেশথা হযরত জিব্রাঈল (আ) তাঁর কাছে এসে বললেন: আমি আল্লাহর দূত। আল্লাহ আমাকে তোমার কাছে পাঠিয়েছেন। আমি তোমাকে (আল্লাহর হুকুমে) একটা সন্তান দান করবো। এ বলে হযরত জিব্রাঈল (আ) তাঁর বুকে একটি ফূঁ দিলেন। হযরত মরিয়মা গর্ভবতী হলেন এবং বায়তুল মাকদাসের অদূরে এক স্থানে একটি সন্তান প্রসব করলেন। তিন সন্তানের নাম রাখলেন ঈসা। মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ট হওয়ার পর পরিই ঈসা কথা বলে উঠলেন। হযরত মরিয়াম অত্যন্ত খুশী হলেন। তাঁর সব দুঃখ দূর হয়ে গেল। লজ্জা ভয় কোন কিছুই আর তাঁর থাকলো না। শিশু সন্তান কোলে নিয়ে ফিরে আসতে দেখে দুশ্চরিত্র ইয়াহুদীরা তাঁকে অনেক গাল-মন্দ দিতে লাগলো। কিন্তু তিনি কোন কথা বললেন না, শুধু শিশুর দিকে ইশারা করলেন অর্থাৎ এ শিশুই সব কথা বলবে। সবাই বলে উঠলো, এ দোলনায় শায়িত শিশুর সাথে আমরা কেমন করে কথা বলবো? সে কি কথা বলতে পারবে? তখন শিশু নবী হযরত ঈসা (আ) কথা বলে উঠলেন। তিনি বললেন, “আমি আল্লাহ বান্দা। আলআহ মানুষের হেদায়েতের জন্য আমাকে কিতাব দান করেছেন। তিনি আমাকে নবী হিসেবে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।” সদ্য প্রসূত শিশুর মুখে এসব কথা শুনে সবাই তাজ্জব বনে গেল। তারা তাঁকে বিশ্বাস করলো এবং কোন কিছু না বলে চলে গেল।

হযরত ঈসা (আ) ধীরে ধীরে বড় হলেন এবং নবুওয়াত লাভ করলেন। এ সময় বনী ইসরাঈলগণ আল্লাহর সব নির্দেশ ভুলে গিয়েছিল। তারা শিরক ও আরো অনেক গোনাহর কাজে লিপ্ত ছিল্ রাজা বাদশারাই আবার বেশী করে আল্লাহ ও তাঁর আদেশ নির্দেশ ভুলে গিয়েছিল। এনটিওকস নামে এক রাজা তার আমলে জোর পূর্বক বায়তুল মাকদাসের মধ্যে মূর্তি স্থাপনেএবং লোকজনকে তার পূজা করতে বাধ্য করেছিল। আল্লাহর নামে কুরবানী করা বন্ধ করে দিয়েছিল। যারা বাড়িতে তাওরাত গ্রন্থ রাখতো সে তাদের মৃত্যুদন্ড দেয়ার ব্যবস্থা করেছিল্ হযরত ঈসা (আ) তাদের এসব অন্যায় কাজ করতে নিষেধ করলেন। তারা যে সব অন্যায় কাজ করতো তিনি সে সব কাজ সম্পর্কেও তাদের সাবধান করে দিলেন।

েইয়াহুদরা তাঁর এসব কথা ভাল মনে করলো না। তারা তাঁর বিরোধিতা শুরু করলো। কেউ যাতে তাঁর কথা না মানে সেজন্যও তারা চেষ্টা করতে লাগলো। ইয়াহুদ আলেমরাও তাঁকে নবী বলে স্বীকার করলো না। হযরত ঈসা (আ) যখন দেখলেন যে, কেউ তা৭র কথা শুনছে না তখন তিনি সবাইকে ডেকে বললেন: আল্লাহর দ্বীনের কাজে আমাকে কে সাহায্য করতে পার? তাঁর এ আহবানে একদল মৎস্যজীবী জেলে তাঁর ওপর ঈমান এনে তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন। এঁদেরকে কোরআন মজীদে হাওয়ারী বলা হয়েছে। হাওয়ারীরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হযরত ঈসা (আ) কে সাহায্য করেছেন।

হযরত ঈসাকে (আ) আল্লাহ তা’আলা অনেক মু’জিযা দান করেছিলেন। তিনি আল্লাহর হুকুমে মৃত মানুষকে জীবিত করতে পারতেন। কুষ্ঠ ও অন্যান্য কঠিন রোগ ভাল করতে পারতেন। মাটি দিয়ে পাখি তৈর িকরে তাতে ফুঁক দিলে তা জীবিত হয়ে উড়ে যেতো। লোকেরা কি খেতো এবং বাড়িতে কি জমা করে রাখতো আল্লাহর হুকুমে তাও তিনি বলতে পারতেন।

ইয়াহুদদের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ এবং অন্যায় কাজ করতে নিষেধ করার কারণে তারা তাঁর শত্রু হয়ে গেল এবং তাঁকে হত্যা কারা ষড়যন্ত্র করলো। তারা দেশের শাসনকর্তার কাছে গিয়ে হযরত ঈসা (আ) সম্পর্কে এ বলে অভিযোগ করলো যে, তিন লোকদের তার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলছেন। শাসনকরাতা েইয়াহুদদের কথা বিশ্বাস করলো। সে হযরত ঈসা (আ)-কে হত্যা করার জন্য লোক পাঠালো। ইয়াহুদরা তাঁকে গ্রেহফতার করার ব্যাপারে সাহায্য করলো। গ্রেফতার করে তাঁকে একটি ঘরে বন্দী করে রাখা হয় এবং পরে শূলে চড়িয়ে হত্যা করার সিদ্ধান্ত হয। তাঁকে ধরে আনার জন্য প্রথমে ঘরের মধ্যে একটি লোক প্রবেশ করে। কিন্তু সে হযরত ঈসা (আ)-কে সেখানে দেখে আশ্চর্ হয়ে যায়। পরে অন্যান্য লোকেরা সেখানে গিয়ে ঐ লোকটিকে হযরত ঈসা (আ)-এর আকৃতিতে দেখতে পায় এবং তাঁকে ঈসা মনে করে শুলে চড়িয়ে হত্যা করে।

এদিতে হয়েছে কি! আল্লাহ তাঁর প্রিয় রসূলের এরূপ বিপদ দেথে কাঁকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করেন। তিনি নিজের অসীম কুদরতে তাঁকে উঠিয়ে নেন। আর যে লোকটি হযরত ঈসা (আ)-কে ধরে আনার জন্য প্রথমে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করেছিল তাকে ঈসার আকৃতি দান করেন। লোকেরা মনে করলো সেই বুঝি ঈসা। তাই তাকে শূলে চড়িয়ে হত্যা করলে। মহান আল্লাহ এভাবে তাঁর নবীকে রক্ষা করলেন।

কিয়ামতের পূর্বে দাজ্জালকে হত্যা করার জন্য তিনি আবার দুনিয়াতে আসবেন। তবে তখন তিনি নবী হিসেবে আসবেন না।

অনুশীলনী

১। হযরত ঈসাকে (আ) ঈসা ইবনে মারিয়াম বলা হয় কেন?

২। হযরত মারিয়ামের কামরায় গিয়ে হযরত যাকারিয়া (আ) কি দেখতে পেতেন?

৩। কিভাবে বুঝা যায় যে, হযর মারিয়াম আল্লাহর প্রিয় পাত্রী ছিলেন?

৪। ফেরেশতা হযরত বিজরাঈল এসে মারিয়ামকে কি বললেন?

৫। দুশ্চরিত্র ইয়াহুদরা হযরত মারিয়ামকে গাল –মন্দ দিল কেন? জবাবে তিনি কি বললেন?

৬। বনী ইসরাঈলদের অবস্থা কিরূপ ছিল?

৭। হযরত ঈসার (আ) ডাকে কারা সাড়া দিয়েছিল? তাঁর কি কি মু’জিযা ছিল?

৮। ইয়াহুদরা তাঁর শত্রু হলো কেন? তিনি আবার কি দুনিয়ায় আসবেন?


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি