বিবাহ
*****************************************************************

(*************)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, রাসূলে করীম (স) আমাদিগকে সম্বোধন করিয়া বলিয়াছেনঃ হে যুবক দল! তোমাদের মধ্যে যে লোক স্ত্রী গ্রহণে সামর্থবান, তাহার অবশ্যই বিবাহ করা কর্তব্য। কেননা বিবাহ দৃষ্টিকে নীচ ও নিয়ন্ত্রিত করিতে এ লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করিতে অধিক সক্ষম। আর যে লোক তাহাতে সামর্থ্যবান নয়, তাহার উচিত রোযা রাখা। কেননা রোযা তাহার জন্য যৌন উত্তেজনা নিবারণকারী।

(বুখারী, মুসলিম, আবূ দাউদ, মুসনামে আহমদ)

ব্যাখ্যাঃ এই হাদীসের বর্ণনাকারী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) একজন অতীব মর্যাদা সম্পন্ন সাহাবী। হাদীসের যে সময়কার, তখন তিনি যুবক ছিলেন। যে যুব সমাজকে সম্বোধন করিয়া নবী করীম (স) কথাটি বলিয়াছিলেন, তিনি নিজে তখন সেই সমাজের মধ্যেই গণ্য হইতে ছিলেন এবং কথাটি বলার সময় তিনিও তথায় উপস্থিত ছিলেন। এই কারণেই তিনি বলিতে পারিয়াছেনঃ রাসূলে করীম (স) ‘আমাদিগকে’ সম্বোধন করিয়া বলিয়াছেন’।

হাদীসটিতে নবী করীম (স) যুব সম্প্রদায়কে সম্বোধন করিয়া বিবাহ করার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও অপরিহার্যতা বুঝাইতে চাহিয়াছেন। ইহার সার নির্যাস হইল, পৌরুষ সম্পন্ন ও স্ত্রী সঙ্গমে সামর্থ্যবান সকল ব্যক্তিকেই বিবাহ করিতে হইবে, স্ত্রী গ্রহণ করিতে হইবে। বিবাহ করার জন্য যুবকদিগকে তাকিদ দেওয়ার তাৎপর্য সুস্পষ্ট ও সহজেই অনুধাবনীয়।

হাদীসে ব্যবহৃত ********* শব্দটির দুইটি অর্থ হইতে পারে। একটি ******- স্ত্রী-সঙ্গম। অর্থাৎ যাহারাই স্ত্রী-সঙ্গমে সক্ষম, বিবাহ করা তাহাদেরই কর্তব্য। ইহার দ্বিতীয় অর্থ ***** বিবাহ সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয়ভার বহন ও প্রয়োজনীয় উপকরণদি সংগ্রহের সামর্থ্য। এই দৃষ্টিতে হাদীসটির বক্তব্য হইল, যে সব যুবক বিবাহের দায়িত্ব পালনে সমর্থ, স্ত্রী গ্রহণ, প্রতিপালন ও পরিপোষণের দায়িত্ব পালনে সক্ষম, তাহাদেরই বিবাহ করা উচিত। হাদীসের ভাষ্য হইতে স্পষ্ট মনে হয়, স্ত্রী সঙ্গমে অসমর্থ লোকদের জন্য এই হাদীস নহে। এই কাজে যাহারা দৈহিক ভাবে সক্ষম তাহাদের জন্যই এখানে কথা বলা হইয়াছে। বলা হইয়াছে, তাহরা যদি বিবাহের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা সম্পন্ন হয় এবং বিবাহের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করিতে পারে, তবে তাহাদের বিবাহ করা উচিত। এই লোকদের অবিবাহিত থাকা কোনক্রমেই বাঞ্ছনীয় ও সমর্থনযোগ্য নয়। তবে এই শ্রেণীর যুবকরা যদি বিবাহের দায়িত্ব পালনে আর্থিক দিক দিয়া অসমর্থ হয়, তবে তাহাদিগকে রোযা রাখিতে বলা হইয়াছে। কেননা দৈহিক দিক দিয়া সামর্থ্য ও আর্থিক কারণে অসামর্থ্য মানুষকে ন্যায়-অন্যায় জ্ঞানশূন্য করিয়া ফেলিতে ও অন্যায় অবৈধ পন্হায় যৌন উত্তেজনা প্রশমনে প্রবৃত্ত করিয়া দিতে পারে। কিন্তু যদি কেহ স্ত্রী সঙ্গমেই অসমর্থ্য হয় এবং এই সামর্থ্যহীনতা বা অক্ষমতা হয় দৈহিক দিক দিয়া, তবে তাহার যেমন বিবাহের প্রায়োজন হয় না, তেমনি রোযা রাখিয়া যৌন উত্তেজনা প্রশমনেরও কোন প্রশ্ন তাহার ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে না। এই শ্রেণীর লোক তো রোগী বিশেষ।

যৌন উত্তেজনা সম্পন্ন ও স্ত্রী সঙ্গমে সক্ষম যুবকদের পক্ষে বিবাহ করা ও স্ত্রী গ্রহণ যে কত প্রয়োজন এবং বিবাহ তাহাদের জন্য কতদূর কল্যাণকর, তাহা বুঝাইবার জন্য রাসূলে করীম (স) ইহার পরই বলিয়াছেনঃ “উহা দৃষ্টিকে নীচ ও নিয়ন্ত্রিত করিতে ও লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করিতে অধিক সক্ষম- অধিক কার্যকর”। বস্তুত যৌন উত্তেজনা সম্পন্ন যুবকদের পক্ষে পরস্ত্রী দর্শন একটি মারাত্মক রোগ হইয়া দেখা দেয়। এই রোগ যাহার হয় তাহার কেবল মনই খারাপ হয় না, মগজও বিনষ্ট ও বিভ্রান্ত হইয়া যাওয়ার উপক্রম হয়। তখন ফুলে ফুলে রূপ সুধা পান ও যৌবন মধু আহরণের মাদকতা তাহাকে নেশাগ্রস্থ করিয়া চরম চারিত্রিক কুলষতার গভীর পংকে নিমজ্জিত করিয়া দিতে পারে। ইহা কিছু মাত্র অস্বাভাবিক নহে। এই কারণেই নবী করীম (স) ইহার পরই বলিয়াছেন, ‘বিবাহ লজ্জাস্থানের পবিত্রতা সংরক্ষণে অধিক সক্ষম- অধিক কার্যকর’। এই কথা কেবল পুরুষ যুবকদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়, স্ত্রী যুবতীদের অবস্থাও সম্পূর্ণ অভিন্ন। বস্তুত যৌবনকালীন সঙ্গম ইচ্ছা অত্যন্ত তীব্র ও অপ্রতিরোধ্য হইয়া দেখা দিয়া থাকে। এই ইচ্ছার যথার্থ চরিতার্থতা ভিন্ন এই কাজ হইতে বিরত থাকা অসম্ভব। পুরুষ ও নারী উভয়ের পারস্পরিক লিঙ্গের সহিত দৈহিক মিলন সাধনেই ইহা বাস্তবায়িত হওয়া সম্ভব। এই রূপ অবস্থায় যে (পুরুষ) যুবকের স্ত্রী নাই এবং যে (স্ত্রী) যুবতীর স্বামী নাই, তাহার পক্ষে স্বীয় চরিত্রের পবিত্রতা রক্ষা করা অসম্ভব না হইলেও অত্যন্ত কষ্টকত ও দুঃসাধ্য ব্যাপার, তাহাতে কিছুমাত্র সন্দেহ নাই। এই অবস্থায় সংযমের বাঁধন কিছুটা শিথিল হইলে যুবকদের বেলায় পরস্ত্রী দর্শনের এবং যুবতীদের বেলায় ভিন্ন পুরুষ দর্শনের ঝোক ও প্রবণতা অপ্রতিরোধ হইয়া দাঁড়ায়। পরস্ত্রী বা ভিন্ন পুরুষ দর্শনের এই প্রবণতা একদিকে যেমন যৌন উত্তেজনার মাত্রা অসম্ভব রকম বৃদ্ধি করিয়া দেয়, তেমনি যৌন সঙ্গম অভিলাম মানুষকে ব্যভিচাররে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে পুরুষ ও নারীর লজ্জাস্থানের পবিত্রতা বিনষ্ট হয়। মানুষ নৈতিক চরিত্র হারাইয়া ফেলে। আর নৈতিক চরিত্রহীন মানুষ পশুরও অধম।

ঠিক এই কারণেই নবী করীম (স) এই ধরনের যুবক-যুবতীদিগকে বিবাহ করার- বিধিসম্মত পন্হায় যৌন স্পৃহা নিবৃত্তির ব্যবস্থা করার- নির্দেশ দিয়াছেন। বিবাহ করিলে যৌন- উত্তেজনা ও সঙ্গম-স্পৃহার চরিতার্থতা বিবাহের নির্দিষ্ট আওতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এবং ইহার ফলে যৌন-অঙ্গের পবিত্রতা রক্ষা পাইতে পারে।

দৃষ্টি শক্তিকে সংযত করা না হইলে ভিন্ন লিঙ্গের সহিত দৈহিক মিলমন স্পৃহা অদম্য হইয়া উঠে। এই কারণে কুরআন মজীদেও এই ব্যাপারে বলিষ্ঠ নির্দেশ উদ্ধৃত হইয়াছে। পুরুষদের সম্পর্কে ইরশাদ হইয়াছেঃ

*****************************************************************

হে নবী! মু’মিন লোকদিগকে নিজেদের দৃষ্টি নীচ রাখিতে ও এই উপায়ে নিজেদের লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করিতে বল। বস্তুত ইহা তাহাদের জন্য অতীব পবিত্রতাপূর্ণ পদ্ধতি। তাহার যাহা কিছুই করে সে বিষয়ে আল্লাহ তা’আলা যে পূর্ণ মাত্রায় অবহিত তাহা নিঃসন্দেহে।

এর পর পরই নারীদের সম্পর্কে বলা হইয়াছেঃ

*****************************************************************

এবং ঈমানদার মহিলাদের বল, তাহারা যেন তাহাদের দৃষ্টি নিম্নমুখী রাখে, তাহাদের লজ্জাস্থানের সংরক্ষণ করে এবং তাহাদের সৌন্দর্য ও অলংকার প্রকাশ হইতে না দেয়।

দৃষ্টি সংত করণের এই নির্দেশ বস্তুত অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত ও বিজ্ঞান সম্মত। ইহা বিবাহিত ও অবিবাহিত সব যুবক-যুবতীর জন্য সমান ভাবে অনুসরনীয়। কেননা যে সব ইন্দ্রিয়ের কারণে মনে-মগজে আলোড়নের সৃষ্টি হয়, দৃষ্টি শক্তি তন্মধ্যে প্রধান এবং অধিক তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী। হাতের স্পর্শ না হইলেও দৃষ্টির পরশ শানিত তীরের মত গভীর সূক্ষ্ম তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করিতে সক্ষম। এই প্রতিক্রিয়ার প্রভাবে মনের বিভ্রান্তি ও জ্বেনা-ব্যাভিচারের দিকে আকর্ষণ সৃষ্টি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তাই দৃষ্টির সংযম ও নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য। আর ইহারই জন্য বিবাহ একমাত্র উপায়। ইহাতে যেমন মনের স্থিতি ও এককেন্দ্রিকতা লাভ হয়, তেমনি সৌন্দর্য সন্ধানী ও রূপ পিয়াসী দৃষ্টিও নিজ স্ত্রীতে কেন্দ্রীভূত হয়। আলোচ্য হাদীসে বিবাহের এই তাকীদের মূলে এই যৌক্তিকতার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপিত হইয়াছে।

আলোচ্য হাদীসের ভিত্তিতে বলা যায়, যে সমাজে প্রত্যেক যুবক যুবতী উপযুক্ত বয়সে বিবাহিত হয় বা উহার সুযোগ হইতে বঞ্চিত থাকে না, সেখানে সাধারণত জ্বেনা-ব্যভিচারের দুর্ঘটনা খুব কমই ঘটিতে পারে। কিন্তু যে সমাজে অধিক বয়স পর্যন্ত যুবক-যুবতীরা অবিবাহিত থাকে বা থাকিতে বাধ্য হয় সেখানে জ্বেনা-ব্যভিচারের সয়লাব প্রবাহিত হওয়া ও পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় জীবন কলুষিত হওয়া ও উহা মারাত্মক ভাবে বিপর্যস্ত হওয়া একান্তই অবধারিত।

যে সব যুবক-যুবতী যৌন চেতনা থাকা সত্ত্বেও বিবাহের দায়িত্ব পালন ও যাবতীয় প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ তথা পরিবার ভরণ-পোষনের দায়িত্ব গ্রহণে অসমর্থ, রাসূলে করীম (স) তাহাদিগকে রোযা রাখার নির্দেশ দিয়াছেন। রোযা মানুষের মধ্যে নিহিত ষড়রিপু দমন করিয়া রাখে। যৌন উত্তেজনা বহুলাংশে অবদমিত থাকে। ফলে অবিবাহিত থাকার কুফল ও খারাপ পরিণতি হইতে রক্ষা পাওয়া অনেকটা সহজ হইয়া দাঁড়ায়।

এই হাদীসটি হইতে স্পষ্ট জানা গেল, রাসূলে করীম (স) যে ধরনের সমাজ গঠনের দায়িত্ব লইয়া আসিয়াছিলেন ও যে উদ্দেশ্যে আজীবন চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালাইতেছিলেন, তাহাতে পুরুষ ও নারীর বিবাহ বিমুখতা, বেশী বয়স পর্যন্ত অবিবাহিত থাকার প্রবণতা বা অবিবাহিত রাখার প্রচেষ্টা এবং তদ্দরুন নারী পুরুষের যৌন মিলনজনিত চরিত্রহীনতার কোনই স্থান নাই।

বিবাহ নবীর সুন্নাত
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন। একদিন তিন জন লোক নবী করীম (স)- এর বেগমগণের নিকট উপস্থিত হইলেন। তাঁহারা নবী করিমের দিনরাতের ইবাদত বন্দেগী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলেন ও জানিতে চাহিলেন। তাঁহাদিগকে যখন এই বিষয়ে প্রকৃত অবস্থা জানানো হইল তখন তাঁহারা যেন উহাকে খুব কম ও সামান্য মনে করিলেন। পরে তাঁহারা বলিলেনঃ নবী করীম (স)-এর তুলনায় আমরা কোথায়? তাঁহার তো পূর্বের ও পরের সব গুনাহ মাফ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। তাঁহাদের একজন বলিলেনঃ আমি তো চিরকাল সারা রাত্র জাগিয়অ থাকিয়া নামায পড়িব। অপর একজন বলিলেনঃ আমি তো সমস্তকাল ধরিয়া রোযা রাখিব এবং কখনই রোযা ভাঙিত না। তৃতীয় একজন বলিলেনঃ আমি স্ত্রীলোকদের সহিত সম্পর্ক বর্জন করিব। অতঃপর আমি কখনই বিবাহ করিব না। এই সময় রাসূলে করীম (স) তাঁহাদের নিকট উপস্থিত হইলেন এবং বলিলেনঃ তোমরাই তো এই সব কথা-বার্তা বলিয়াছ? কিন্তু আল্লামর নামে শপথ! তোমাদের মধ্যে সকলের তুলনায় আল্লাহ তা’আলাকে আমি-ই অধিক ভয় করি। আল্লাহর ব্যাপারে তোমাদের তুলনায় আমি-ই অধিক তাকওয়া অবলম্বন করিয়া থাকি। অথচ তাহা সত্ত্বেও আমি রোযা থাকি, রোযা ভাঙিও। আমি রাত্রিকালে নামাযও পড়ি, আবার ঘুমাইও। আমি স্ত্রী গ্রহণও করি। (ইহাই আমার সুন্নত) অতএব যে লোক আমার সুন্নাতের প্রতি অনীহা পোষণ করিবে, সে আমার সহিত সম্পর্কিত নয়। (বুখারী, মুসলিম) [এই হাদীসটিই ‘হাদীস শরীফ’ ১ম খণ্ডেও সম্পূর্ণ দ্বীনদারীর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উদ্ধৃত হইয়াছে। এখানে সেই একই হাদীস ভিন্নতর দৃষ্টিকোণে উদ্ধৃত হইয়াছে ও উহার ব্যাখ্যাও ভিন্ন দৃষ্টিতে করা হইয়াছে।]

ব্যাখ্যাঃ হাদীসটি বিবাহ পর্যায়ে উদ্ধৃত হইলেও ইসলাম যে একটি বাস্তববাদী পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, তাহা ইহা হইতে সঠিক রূপে স্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে। নবী করীম (স)-এর জীবনাদর্শ ও অনুসৃত নীতির বাস্তব ভূমিকা ইহা হইতে স্পষ্ট ভাবে জানা যাইতেছে এবং প্রকৃতপক্ষে তাহাই ইসলাম।

মূল হাদীসে বলা হইয়াছেঃ ************* কিন্তু মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এই স্থানের ভাষা হইলঃ ****************** ‘রাসূরের সাহাবীদের মধ্য হইতে কয়েকজন লোক’। ******* ও ****** শব্দদ্বয়ের ব্যবহারিক অর্থে সামান্য পার্থক্য রহিয়াছে। ***** শব্দটি তিন হইতে দশ সংখ্যক পর্যন্ত ব্যক্তিদের বুঝায়। আর **** শব্দটি বুঝায় তিন হইতে নয় জন লোক। মূলক শব্দ দুইটির তাৎর্যে কোনই বিরোধ বা মৌলিক পার্থক্য নাই।

এই তিনজন লোক কাহারা ছিলেন? সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়্যিব হইতে আবদুর রাজ্জাক উদ্ধৃত বর্ণনা হইতে জানা যায়, এই তিনজন লোক ছিলেন (১) হযরত আলী (রা), (২) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আ’স (রা) এবং (৩) হযরত উসমান ইবনে মযয়ূন (রা)।

এই তিনজন সাহাবী রাসূলে করীমের বেগমদের নিকট হইতে রাসূলে করীম (স)-এর দিন রাত্রির ইবাদত-বন্দেগী সংক্রান্ত ব্যস্ততা সম্পর্কে সঠিক খবর জানিবার জন্য উপস্থিত হইয়াছিলেন। এইখানে মুসলিম শরীফের বর্ণনার ভাষা হইলঃ *********** রাসূলে করীম (স) গোপনে সকলের চোখের আড়ালে ও অজ্ঞাতে কি কি আমল করেন সেই বিষয়েই তাঁহারা জানিতে চাহিয়াছিলেন। কেননা তিনি প্রকাশ্যে যাহা যাহা করিতেন, তাহা তো এই সাহাবীদের কিছুমাত্র অজানা ছিল না। নবী (স)-এর বেগমগনের নিকট হইতে তাঁহরা জিজ্ঞাসিত বিষয়ে যাহা কিছু জানিতে পারিয়াছিলেন তাহাতে তাঁহারা খুব খুশী হইতে পারিলেন না। যাহা কিছু জানিতে পারিলেন, তাহা তাহাদের খুবই সামান্য ও নগণ্য মনে হইল। তাঁহারা মনে করিয়াছিলেন, নবী করীম (স) হয়ত দিন-রাত্রি ধরিয়া কেবল ইবাদতই করেন। ইবাদত ছাড়া অন্য কোন কাজই তিনি করেন না। কিন্তু বেগমগণের কথায় তাঁহাদের সে ধারণা অমূলক প্রমাণিত হইল। কিন্তু নবী করীম (স) সম্পর্কে তাঁহারা অন্য কোন ধরনের ধারণা তো করিতে পারেন না, এই জন্য তাঁহারা নিজেরাই নিজদিগকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য নবী করীম (স)-এর পূর্ব ও পরবর্তী কালের সমস্ত গুনাহ মাফ হইয়া যাওয়ার কথা স্মরণ করিলেন।এই প্রেক্ষিতে তাঁহারা মনে করিয়া লইলেন যে, এই কারণেই রাসূলে করীম (স) খুব বেশী ইবাদত করেন না। কিন্তু আমরা তো আর তাঁহার মত নহে, আমাদের পূর্ব ও পরের গুনাহ তো মাফ হইয়া যায় নাই। কাজেই আমাদের অত কম ইবাদাত করিলে চলিবে না। রাসূলে করীমের সাথে আমাদের কি তুলনা হইতে পারে। অতঃপর এক একজন লোক যাহা যাহা বলিয়াছেন তাহা হাদীসের মূল বর্ণনাতেই উদ্ধৃত হইয়াছে। [তাঁহাদের বলা কথাগুলির বর্ণনায় বুখারী মুসলিম গ্রন্হদ্বয়ের বর্ণনার মধ্যে ভাষার পার্থক্য হইয়াছে। উপরে যে হাদীস উদ্ধৃত হইয়াছে উহা বুখারী শরীফ হইতে গৃহীত। মুসলিম শরীফে উদ্ধৃত তাঁহাদের কথা গুলি এইরূপঃ একজন বলিলেনঃ ************ ‘আমি স্ত্রী গ্রহণ করিব না বা বিবাহ করিব না’। অন্যজন বলিলেনঃ ******** ‘আমি গোশত খাইব না’। তৃতীয় জন বলিলেনঃ *********** ‘আমি বিছানায় ঘুমাইব না’। এই শাব্দিক পার্থক্যের কারণ হইল, হাদীসের বর্ণনা সমূহ সাধারণতঃ ভাব ও মূল কথার বর্ণনা। মূল বক্তার ব্যবহৃত শব্দ ও ভাষার হুবহু উচ্চারণ নয় এবং উহা বিভিন্ন বর্ণনাসূত্রে পওয়া গেছে। তাই এই পার্থক্য স্বাভাবিক।] সম্ভবত এই সময় নবী করীম (স) ঘরের মধ্যে অবস্থিত ছিলেন এবং তাঁহাদের সব কথা-বার্তা তিনি নিজ কানেই শুনিতে পাইয়াছিলেন।

এই পর্যায়ে মুসলিম শরীফের বর্ণনায় উদ্ধৃত হইয়াছেঃ

*****************************************************************

সাহাবী তিনজনের উক্তরূপ কথা-বার্তার খবর নবী করীম (স)- এর নিকট পৌঁছিল। অতঃপর তিনি (এই প্রসঙ্গে লোকদের বিভ্রান্তি দূর করার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে শুরু করিলেন) প্রথমে আল্লাহর হামদ ও সানা বলিলেন। পরে বলিলেনঃ লোকদের কি হইয়াছে, তাহারা এই ধরনের কথা-বার্তা বলিতে শুরু করিয়াছে….?

বস্তুত এই দুইটি বর্ণনার মধ্যে মূলত কোনই বিরোধ বা পার্থক্য নাই। রাসূলে করীম (স)-এর ভাষণের প্রথমাংশে লোকদের এই ভুল ধারণা দূর করা হইয়াছে যে, ‘যে লোক আল্লাহর নিকট মায়াফী পাইয়াছে তাহার অন্যান্যদের তুলনায় বেশী বেশী ইবাদত করার প্রয়োজন নাই’। তিনি জানাইয়া দিলেন যে, রাসূলে করীম (স) আল্লাহর নিকট হইতে সর্বকারে গুনাহ হইতে ক্ষমা প্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও ইবাদাতের চরম ও কঠোর কৃচ্ছতা অবলম্বন করেন। কেননা তিনি অন্যদের অপেক্ষা আল্লাহকে বেশী ভয় করেন, অধিক তাকওয়া অবলম্বনকারী তিনি তাহাদের অপেক্ষাও, যাহারা ইবাদাতে খুব বেশী কঠোরতা ও কৃচ্ছতা করিয়া থাকে।

রাসূল (স)- এর কথাঃ ‘অথচ তাহা সত্ত্বেও’ …এইস্থানে একটি অংশ উহ্য রহিয়াছে। তাহা হইলঃ

*****************************************************************

বান্দাহ হওয়ার দিক দিয়া আমি ও তোমরা সম্পূর্ণ সমান। কিন্তু তাহা সত্ত্বেও আমি রোযা রাখি……

মূল হাদীসের শেষ ভাগে রাসূলে করীম (স)- এর উক্তিঃ

*****************************************************************

যে লোক আমার কর্মপন্হা ও জীবন-পদ্ধতি হইতে বিমুখ হইবে- উহা গ্রহণ ও অনুসরণের পরিবর্তে অন্য নিয়ম ও পদ্ধতিতে কাজ করিবে, সে আমার সহিত সম্পর্কিত নয়- অর্থাৎ সে আমার কর্মপন্হার অনুসারী নয়, সে আমার অনুসৃত পথে চলছে না।

ইহার আরও অর্থ হইলঃ সে আমার নিকটবর্তী নয়।

এই পর্যায়ে হযরত আয়েশা (রা) বর্ণিত হাদীসটির ভাষা হইলঃ

*****************************************************************

বিবাহ আমার সুন্নাত-নীতি-আদর্শ ও জীবন-পদ্ধতি। যে লোক আমার এই নীতি- আদর্শ ও জীবন পদ্ধতি অনুযায়ী আমল করিবে না- ইহাকে কাজে পরিণত করিবে না, সে আমার নীতি ও আদর্শানুসারী নয়।

(এই হাদীসটির সনদে ঈসা ইবনে মায়মূন একজন যয়ীফ বর্ণনাকারী)

মুসনাদে দারীমী গ্রন্হে হাদীসটি উদ্ধৃত হইয়াছে এই ভাষায়ঃ

*****************************************************************

যে লোক বিবাহ করার সামর্থ রাখে সে যদি বিবাহ না করে, তাহা হইলে সে আমাদের মধ্যের নয়।

আলোচ্য হাদীস হইতে স্পষ্ট প্রমাণিত হইতেছে যে, নিয়মিত নামায পড়া ও নিদ্রা যাওয়া, নফল রোযা রাখা- না-ও রাখা এবং বিবাহ করা- অন্য কথায়, আল্লাহর হক আদায় করার সঙ্গে সঙ্গে নিজের ও সমাজের হকও আদায় করা, এক কথায় আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের ভিত্তিতে দুনিয়ার সমস্ত কাজ করা, পূর্ণাঙ্গ জীবন যাপন করাই হইতেছে রাসূলে করীম (স)- এর আদর্শ ও জীবন পদ্ধতি। পক্ষান্তরে কেবলমাত্র ধর্মপালনকারী হওয়া ও দুনিয়ার দাবি-দাওয়া ও দায়-দায়িত্ব অস্বীকার করা, অথবা কেবল মাত্র দুনিয়াদারী করা ও দ্বীনী দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা রাসূলে করীম (স)- এর কর্মপন্হা ও জীবন পদ্ধতি নয়। রাসূলে করীম (স)-এর উপস্থাপিত জীবন-পদ্ধতি পূর্ণাঙ্গ ও সর্বাত্মক। তাহা একদেশদর্শী নয়। এই হিসাবে বিবাহও- দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবন যাপনও নবী করীম (স)-এর সুন্নাত। ইহা এই জীবন-পদ্ধতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, রাসূলে করীম (স)-এর উপস্থাপিত পূর্ণাঙ্গ জীবন ও সমাজ ব্যবস্থার ভিত্তি।

মুহাল্লাব বলিয়াছেন, বিবাহ ইসলাম প্রবর্তিত কর্মপদ্ধতির একটি। ইসলামে ‘রাহবানিয়াত’- বিবাহ না করিয়া চিরকুমার হইয়া থাকা- মাত্রই সমর্থিত নয়। যে লোক বিবাহ করিবে না, রাসূলে করীম (স)- এর সুন্নাতের বিপরীত পথে চলিবে, সে ঘৃণ্য বিদয়াতপন্হী। কেননা আল্লাহ তা’আলা কুরআন মজীদে নবী-রাসূলগণের জীবন-আদর্শ অনুসরণ করিয়া চলিবার জন্য স্পষ্ট অকাট্য নির্দেশ দিয়াছেন। বলিয়াছেন, *************** ‘অতএব তোমরা নবী-রাসূলগণের হেদায়েত-বিধান অনুসরণ করিয়া চল’।

দায়ূদ যাহেরী ও তাঁহার অনুসারী ফিকাহবিগণ মনে করিয়াছেন, বিবাহ করা ওয়াজিব। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের মতে বিবাহ করা কর্তব্য। ইমাম আবু হানীফা (র) মত দিয়াছেন, আর্থিক দৈন্য থাকা সত্ত্বেও বিবাহ করা সম্পূর্ণ জায়েয। কেননা কবে আর্থিক স্বচ্ছলতা আসিবে সে জন্য অপেক্ষা করার কোন প্রয়োজন নাই।

প্রাসঙ্গিক আলোচনার অবশিষ্ট অংশে উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, বিবাহ না করা, চিরকুমার হইয়া থাকা পুরুষ ও মেয়ে লোক উভয়ের পক্ষেই ইসলামী শরীয়াতের সম্পূর্ণ পরিপন্হী কাজ। যথা সময়ে বিবাহ করা উভয়ের পক্ষেরই কর্তব্য। ইহা কেবল নৈতিকতার সার্বিক সংরক্ষনই নয়, জৈবিক ও দৈহিক দাবিও। আল্লাহ প্রেরিত নবী-রাসূলগণ দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবনই যাপন করিয়াছেন। কুরআন মাজীদে হযরত মুহাম্মদ (স)- কে সম্বোধন করিয়া বলা হইয়াছেঃ

*****************************************************************

আর আমরা তোমার পূর্বে বহু নবী-রাসূল পাঠাইয়াছি এবং তাহাদের জন্য আমরা স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি বানাইয়া দিয়াছি।

অর্থাৎ বিবাহ, পারিবারিক জীবন যাপন ও সন্তান জন্মদান নবী-রাসূলগণের জীবন পদ্ধতি। আর তাঁহারাই হইতেছেন দুনিয়ার সমগ্র মানুষের আদর্শ ও অনুসরণীয় নেতা। বিশেষভাবে বিশ্বমুসলিমের জন্য তাঁহারা অনুসরনীয়। অতএব তাঁহাদের অনুসৃত নীতি ও জীবন-পদ্ধতির বিনা কারণে বিরুদ্ধতা করা কোন মুসলমাননের ক্ষেত্রেই কল্পনীয় নয়।

সায়াদ ইবনে হিসাম (তাবেয়ী) হযরত আয়েশা (রা)- এর নিকট বিবাহ না করিয়া পরিবারহীন কুমার জীবন যাপন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলিলেন, ************* ‘না, তুমি তাহা করিবে না’। অতঃপর তিনি তাঁহার এই কথার সমর্থনে উপরোক্ত আয়াতটি পাঠ করিলেন।

হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, রাসূলে করীম (স) ইরশাদ করিয়াছেনঃ

*****************************************************************

চারটি কাজ রাসূলগণের জীবন-নীতির অন্তর্ভুক্ত। তাহা হইলঃ সুগন্ধি ব্যবহার, বিবাহ করা, মিসওয়াক করা- দাঁত করিষ্কার ও নির্মল রাখা এবং খতনা করা।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেনঃ

*****************************************************************

নবী করীম (স) প্রায়ই বলিতেনঃ ইসলামে অবিবাহিত, কুমার-কুমারী- বৈরাগী জীবন যাপনের কোন অবকাশ নাই।

আল্লামা কাযী আয়ায বলিয়াছেনঃ ********* শব্দের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থঃ

*****************************************************************

বিবাহ না করা- বিবাহ হইতে বিচ্ছিন্ন ও নিঃসম্পর্ক থাকা এবং বৈরাগ্যবাদীর পথে চলা। অবিবাহিত জীবন যাপন করা।

এই আলোচনা হইতে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হইল যে, যে লোক বিবাহ করিতে সক্ষম এবং বিবাহ না করিলে যাহার পক্ষে পাপ কাজে আকৃষ্ট হইয়া পড়ার আশংকা রহিয়াছে তাহার পক্ষে বিবাহ করা ফরয। কেননা নিজের চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা করা এবং নিজেকে হারাম কাজ হইতে বিরত ও পবিত্র রাখা ঈমানদার ব্যক্তি মাত্রেরই কর্তব্য। ইমাম কুরতুবী ইহাকে সর্বসম্মত মত বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন।

(****************)

বস্তুত বিবাহ পুরুষ-নারীর নৈতিক চরিত্রের রক্ষাকারী এবং মানব বংশের ধারা সুষ্ঠরূপে অব্যাহত রাখার একমাত্র উপায়। মানব সমাজ গঠিত হয় যে ব্যক্তিদের দ্বারা, তাহারা এই বিবাহেরই ফসল। পুরুষ ও নারীর উভয়েরই একটা নির্দিষ্ট বয়সকালে বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তির প্রত তীব্র আকর্ষণ হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। ইহা জন্মগত প্রবণতা।

বিবাহের ফলে এই আকর্ষণ ও জন্মগত প্রবণতার সুষ্ঠু ও পবিত্র পন্হায় চরিতার্থতা সম্ভব। ফলে মানব সমাজ নানাবিধ সংক্রকামক রোগ হইতেও রক্ষা পাইতে পারে। এই পথে পুরুষ ও নারীর যে দাম্পত্য জীবন লাভ হয়, তাহাতেই উভয়েরই হৃদয়-মন-অন্তরের পূর্ণ শান্তি, স্বস্তি ও পূর্ণ মাত্রার পরিতৃপ্তি লাভ হওয়া সম্ভব।

বস্তুত বিবাহ কেবল রাসূলে করীম (স) এবং নবী- রাসূলগণেরই সুন্নাত নয়, ইহা আল্লাহর সৃষ্টিধারা ও বিশ্ব প্রাকৃতিক ব্যবস্থার সহিত সামঞ্জস্য সম্পন্ন একটি স্বাভাবিক ব্যবস্থাও। ইহা যেমন মানব জগত সম্পর্কে সত্য, তেমনি সত্য জন্তু জানোয়ার ও উদ্ভিত জগত সম্পর্কেও। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করিয়াছেনঃ

*****************************************************************

প্রত্যেকটি জিনিসকেই আমরা জোড়ায়-জোড়ায় সৃষ্টি করিয়াছি।

বলিয়াছেনঃ

*****************************************************************

সেই মহান আল্লাহ বড়ই পবিত্র, যিনি সমস্ত জোড়াই সৃষ্টি করিয়াছেন মাটি যাহা উৎপাদন করে তাহা হইতে, তাহাদের নিজেদের হইতে এবং এমন সব জিনিস হইতে যাহা তাহারা জানেনা।

প্রত্যেকটি সৃষ্ট জীব ও প্রাণীকেই আল্লাহ তা’আলা নারী ও পুরুষ সমন্বিত জোড়া হিসাবে সৃষ্টি করিয়াছেন। জীবনকে রক্ষা করা ও উহার ধারাবাহিকতাকে অব্যাহত অক্ষুণ্ন রাখাই আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশ্য এবং এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য তিনি বংশ জন্মের নিয়ম জারী করিয়াছেন। এই উপায়ে তিনি দুইজন হইতে বহু সৃষ্টি করিয়া থাকেন। তিনি মানব জাতিকে সম্বোধন করিয়া বলিয়াছেনঃ

*****************************************************************

হে মানুষ! আমরা তোমাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী হইতে সৃষ্টি করিয়াছি।

সেই দুই জনও আসলে একজনই। বলিয়াছেনঃ

*****************************************************************

হে মানুষ! তোমরা তোমাদের সেই রবকে ভয় কর যিনি তোমাদিগকে মূলত একজন লোক হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন। সেই একজন লোক হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন তাহার জুড়ি। অতঃপর এই দুইজন হইতে বহু সংখ্যক পুরুষ ও নারী সৃষ্টি করিয়া পৃথিবীর দিকে দিকে ছড়াইয়া দিয়াছেন।

আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেকটি সৃষ্টিকেই পুরুষ ও নারী এই উভয় লিঙ্গে সৃষ্টি করিয়াছেন। কিন্তু তিনি জীবন-বিধান নাযিল করিয়াছেন এবং নবী ও রাসূল পাঠাইয়াছেন কেবলমাত্র মানুষের জন্য। কেননা মানুষ সেরা সৃষ্টি, তাহাদের জীবন, নিয়ম-বিধান মুক্ত উচ্ছৃঙ্খলভাবে চলিবে, তাহা তিনি আদৌ পছন্দ করেন নাই। মানুষের মধ্যে যে পৌরুষ ও প্রজনন ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই রহিয়াছে, তাহা উচ্ছৃঙ্খলভাবে ব্যবহৃত হউক, তাহাও তিনি পছন্দ করিতে পারেন নাই। এই কারণে মানুষের জন্য তাহার নিকট হইতে নাযিল করা জীবন বিধানে বিবাহের বিধানও পূর্ণাঙ্গ ভাবে অবতীর্ণ করিয়াছেন। ইহার মাধ্যমেই তিনি চাহিয়াছেন মানুষের মান-মর্যাদা সংরক্ষিত হউক এবং সম্মানজনকভাবে ও পূর্ণ পবিত্রতা সহকারেই হউক পুরুষ ও নারীর- যৌনমিলন।

এই প্রেক্ষিতেই বিবাহে পুরুষ ও নারীর ঈজাব- কবুল- প্রস্তাবনা ও মানিয়া লওয়ার ব্যবস্থা দেওয়া হইয়াছে। অর্থাৎ এক পক্ষ হইতে বিবাহের প্রস্তাব হইবে আর অপর পক্ষ হইতে উহা গ্রহণ করা ও মানিয়া লওয়া হইবে। উপরন্তু এই কাজ কেবল মাত্র বিবাহেচ্ছু পুরুষ ও নারীর মধ্যেই সাধিত হইবে না, ইহা সামাজিক ও আনুষ্ঠানিক ভাবে হইতে হইবে এবং উহাতে সাক্ষীও রাখিতে হইবে। অন্য কথায়, ইহা গোপনে ও সংশ্লিষ্ট লোকদের অজ্ঞাতসারে অগোচরে হইতে পারিবে না, ইহা হইতে হইবে সমাজ পরিবেশকে জানাইয়া শুনাইয়া ও প্রকাশ্য ভাবে।

এই ভাবেই মানুষের পৌরুষ ও জন্মদান ক্ষমতার সংরক্ষণ ও বংশের ধারার মর্যাদা বিধান সম্ভব। আর এই ভাবেই নারীর মান-মর্যাদা ও জীবন-ধারা সংরক্ষিত হইতে পারে। ঠিক এই কারণেই ইসলামে বিবাহের এত গুরুত্ব।

এই জন্যই নবী করীম (ষ) বলিয়াছেনঃ

*****************************************************************

যে লোক বিবাহ করার সাতর্থ্য প্রাপ্ত হইয়অও বিবাহ করিবে না, সে আমার মধ্যে গণ্য নয়?

বস্তুত বিবাহ হইতে বিরত থাকা- বিবাহ না করা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। কেননা বিবাহ না করিয়া- অবিবাহিত থাকিয়া যে জীবন যাপন হয়, তাহা নিছক বৈরাগ্যবাদী জীবন। আর বৈরাগ্যবাদী জীবন ইসলামের পরিপন্হী। যাহা ইসলাম পরিপন্হী, তাহাই প্রকৃতি ও স্বভাব বিরোধী। আর স্বভাব পরিপন্হী জীবন ধারা কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না।

বিবাহ সামাজিক- সামষ্টিক কল্যাণের উৎস। মানব বংশের ধারা এই পন্হায়ই অব্যাহতভাবে চলিতে ও সমুখে অগ্রসর হইতে পারে।

বিবাহ পুরুষ- নারীর মন-মানসিকতার সান্ত্বনা, স্থিতি ও স্বস্থির উপায়।

বিবাহ মানবীয় চরিত্রের সংরক্ষক ও পবিত্রতা বিধায়ক।

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করিয়াছেনঃ

*****************************************************************

আর আল্লাহই তোমাদের জন্য তোমাদের স্বজাতীয়দের মধ্য হইতেই জুড়ি বানাইয়াছে। এবং এই জুড়ি হইতেই তোমাদের জন্য পুত্র-পৌত্র বানাইয়া দিয়াছেন।

এবং

*****************************************************************

আল্লাহর একত্ব ও দয়া- অনুগ্রহের একটি অন্যতম নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের নিজেদের মধ্য হইতেই তোমাদের জন্য জুড়ি বানাইয়া দিয়াছেন, যেন তোমরা উহার নিকট মনের স্বস্তি শান্তি ও স্থিতি লাভ করিতে পার।

বিবাহে আল্লাহর সাহায্য
*****************************************************************

হযরত আবূ হুরাইয়রা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেন, তিনজন লোকের সাহায্য করার দায়িত্ব আল্লাহ নিজের উপর গ্রহণ করিয়াছেন। সে তিন জন হইলঃ (১) যে ক্রীতদাস মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে চুক্তিমানা লিখিয়া দিয়াছে ও প্রতিশ্রুত পরিমাণ অর্থ আদায় করিয়া দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে; (২) বিবাহকারী- যে, চারিত্রিক পবিত্রতা ও নিষ্কুলষতা রক্ষা করিতে ইচ্ছুক এবং (৩) আল্লাহর পথে জিহাদকারী। (তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ)

ব্যাখ্যাঃ আলোচ্য হাদীসে তিনজন ব্যক্তিকে একই মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার সম্ভাব্যতার কথা ঘোষণা করা হইয়াছে। এই তিনজন ব্যক্তি আসলে ভিন্ন ভিন্ন তিনটি কাজের কারক। কাজ তিনটি হইল; (১) দাসত্ব ন্ধন হইতে আর্থিক বিনিময়ের ভিত্তিতে মুক্তি লাভের চেষ্টা, (২) নৈতিক চারিত্রের পবিত্রতা ও নিষ্কুলষতা রক্ষার উদ্দেশ্যে বিবাহ করা এবং (৩) আল্লাহর পথে জিহাদ। কাজ তিনটির মধ্যে পারস্পরিক সাদুশ্য বাহ্যতঃ কিছু নাই বলিয়াই মনে হয়। কিন্তু মানবিক ও দ্বীনদারীর দৃষ্টিতে এই তিনটি কাজই অতিশয় গুরুত্বের অধিকারী। আল্লাহ তা’আলা মানুষকে জন্মগতভাবেই মুক্তি চেষ্টা মানবিক মর্যাদার দৃষ্টিতে অবর্ণনীয় গুরুত্বের অধিকারী। আল্লাহ তা’আলা মানুষকে জন্মগতভাবেই মুক্ত ও স্বাধীন মর্যাদা সম্পন্ন করিয়া সৃষ্টি করিয়অছেন। কিন্তু মানবতার দুশমন লোকদের মনগড়া ও ভুল সমাজ-ব্যবস্থার দরুন মানুষ তাহারই মত মানুষেল দাসত্ব-শৃঙ্খলে বন্দী হইয়া পড়িয়াছে। এই রূপ অবস্থায় এহেন দাসত্ব-শৃঙ্খল হইতে মুক্তি লাভই হইতে পারে তাহার সর্বপ্রথম কর্তব্য। এই মুক্তি যদি অর্থের বিনিময়ে ক্রয় করিতে হয়, মানবতা বিরোধী সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দরুন অর্থ- বিনিময় ব্যতিরেকে মুক্তি লাভোর কোন পথই যদি উন্মুক্ত না থাকে, তবে অর্থের বিনিময়েই তাহা ক্রময় করিতে হইবে এবং এই জন্য প্রয়োজনে মনিবের সহিত চুক্তিবদ্ধ হইতেও দ্বিধা করা যাইবে না। এই চুক্তি যদি আন্তরিকতা সহকারে সম্পাদিত হয় এবং চুক্তি অনুযায়ী অর্থ দিয়া মুক্তি অর্জন করিতে ক্রীতদাস যদি আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালায়, তাহা হইলে হাদীসে বলা হইয়াছে- তাহার সাহায্য করা, চুক্তি পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করিতে তাহাকে সমর্থতকপত্কত বানাইয়া দেওয়ার দায়িত্ব আল্লাহ তা’আলা নিজেই গ্রহণ করিয়াছেন। কেননা আল্লাহর নিকট ইহা অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার কাজ আর কিছুই হইতে পারে না।

দ্বিতীয়, চরিত্রের পবিত্রতা ও নিষ্কুলষতা রক্ষার উদ্দেশ্যে বিবাহ করাও আল্লাহর নিকট নিরতিশয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কেননা চরিত্রহীন মানুষ পশুর অপেক্ষা অধম। চরিত্র হারাইয়া ফেলার ভয় আল্লাহর নাফরমানীতে পড়িয়া যাওয়ার ভয়। এই ভয় যে আল্লাহ তা’আলার নিকট খুবই পছন্দীয় তাহাতে কোনই সন্দেহ থাকিতে পারে না। এই ভয়ের দরুন অন্য কথায় চারিত্রিক পবিত্রতা নিষ্কুলষতা রক্ষার তাকীদে যে লোক বিবাহ করে, স্ত্রী ভরণ-পোষণের আর্থিক যোগ্যতা তাহার না থাকিলেও আল্লাহ তা’আলা সেজন্য তাহার সাহায্য করিবেন,ইহাই স্বাভাবিক। কেননা মনুষ্যত্বের দৃষ্টিকে ইহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আর তৃতীয় হইল, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। আল্লাহর পথে জিহাদের চরম লক্ষ্য হইল মানুষের প্রভুত্ব-সার্বভৌমত্ব ও মানুষের মনগড়া ভাবে রচিত আইন- বিধানের রাজত্ব খতম করিয়া দিয়া আল্লাহ তা’আলার সার্বভৌমত্ব ও তাহারই নাযিল করা দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। আল্লাহর সৃষ্ট এই জমীনে, আল্লাহর সৃষ্ট মানুষের উপর একমাত্র আল্লাহর প্রভুত্ব ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হইবে, মানুষ মানুষের গড়া আইন ও শাসন হইতে মুক্তি লাভ করিয়া একান্তভাবে আল্লাহর বান্দা হইয়া জীবন যাপন করিতে পারিবে, ইহা অপেক্ষা আল্লাহর অধিক সন্তুষ্টির কাজ আর কি হইতে পারে! কাজেই যে লোক এই উদ্দেশ্য লইয়া জিহাদে ঝাঁপাইয়া পড়িবে, সে যে মহান আল্লাহর অসামান্য সাহায্য ও সহযোগিতা লাভ করিবে, তাহাতে কোন সন্দেহেরই অবকাশ নাই।

বস্তুত এই তিনটি কাজই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই তিনটি কাজের ব্যক্তিগণকে সাহায্য করিবেন বলিয়া আল্লাহ নিজেই দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছেন, ইহাই আলোচ্য হাদীসের বক্তব্য। আর এই বক্তব্য যে আল্লাহর কালাম কুরআন মজীদের বিভিন্ন ঘোষণার সহিত পুরাপুরি সামঞ্জস্যশীল, তাহা বলিষ্ঠ কণ্ঠেই বলা যায়।

তবে এই তিনটি কাজেরই মূলে নিহিত রহিয়াছে চরিত্র। চরিত্রই মানুষের মানবিক মেরুদণ্ড শক্ত ও অনমনীয় করিয়া দেয়। সে দাস হইলে তাহা হইতে মুক্তি লাভের জন্য চেষ্টা চালাইবে। যৌন উত্তেজনার প্রাবল্যের চাপে চরিত্র হারাইয়া ফেলার আশঙ্কা দেখা দিলে সে তাহা রক্ষা করার জন্য তৎপর হইবে, বিবাহ অপরিহায্য বোধ হইলে সে বিবাহ করিবে। আর আল্লাহর দ্বীন কায়েমের উদ্দেশ্যে প্রয়োজন ইলে সে সম্মুখে সমরে ঝাঁপাইয়া পড়িবে। খালেস নিয়্যতের উপর ভিত্তিশীল এই কাজ কয়টিতে একমাত্র ভরসা থাকিবে আল্লাহর সাহায্য লাভের আশার উপর। উপরোক্ত হাদীসটিই এই আশার বাণী ঘোষণা করিয়াছে। বস্তুত আল্লাহর সাহায্য না হইলে এই তিনটি কাজের কোন একটিও করা কাহারও পক্ষেই সম্ভবপর হইতে পারে না।

পক্ষান্তরে যাহার চরিত্র নাই, সে দাসত্ব শৃঙ্কল হইতে মুক্তি লাভের কোন চেষ্টাই করিবে না, নৈতিক পতনের আশঙ্কা দেখা দিলে সে হাল ছাড়িয়া দিবে, যৌন উচ্ছৃঙ্খলতার মধ্যে পড়িয়া গড্ডালিকা প্রবাহে ভাসিয়া যাইবে এবং আল্লাহর দ্বীন কায়েম না থাকিলে সে তাহা কায়েম করার সাধনায় আত্মনিয়োগ করিবে না- ইহাই স্বাভাবিক। তাই চরিত্রই যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা করাই যে অত্যন্ত কঠিন কাজ, তাহাতে কোনই সন্দেহ থাকিতে পারে না। কেননা ইহার জন্য মানুষের স্বভাবজাত ও কেন্দ্রীভূত যৌন-উত্তেজনা দমন করা অপরিহার্য হইয়া পড়ে। যৌন শক্তি আসলে দুর্দমনীয় পাশবিকতা। ইহা মানুষের উপার একবার জয়ী হইয়া চাপিয়া বসিতে পারিলে মানুষকে চরম অধঃপতনের নিম্নতম পংকে নামাইয়া দেয়। কিন্তু মানুষ যদি এই শক্তির নিকট পরাজয় বরণ করিতে অস্বীকার করে ও পূর্ণ শক্তিতে উহার মুকাবিলায় নিজেকে জয়ী করিয়অ রাখে তবে তাহার প্রতি আল্লাহর রহমত ও সাহায্য অবশ্যই নাযিল হইবে। আর তাহা সম্ভব হইতে পারে শরীয়াত সম্মত বিবাহের মাধ্যমে। কাজেই কোন লোক যদি নিজের চরিত্র পুত-পবিত্র ও নির্মল- নিষ্কুলষ রাখার নিয়্যাতে বিবাহ করে, বিবাহের মূলে এতদ্ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্য না থাকে, বিবাহ করিলেই তাহার চরিত্র রক্ষা পাইয়া যাইবে মনে করিয়া কেহ বিবাহ করে, তবে এই কাজে সে আল্লাহর সাহায্য লাভ করিবে। তাহার আর্থিক দৈন্য ও অসচ্ছলতা থাকিলেও আল্লাহ তা’আলা তাহা ক্রমশ দূর করিয়া দিবেন। কুরআন মজীদে পূর্ণ বয়স্ক ছেলে-মেয়েদের বিবাহের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়ার পরই আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করিয়াছেনঃ

*****************************************************************

এই লোকেরা যদি দরিদ্র হয়, তাহা হইলে আল্লাহ তাঁহার অনুগ্রহ দানে তাহাদিগকে সচ্ছল ও ধনশালী করিয়া দিবেন।

এই আয়াতের ভিত্তিতে মুফাসসিরগণ লিখিয়াছেন, কেবলমাত্র দারিদ্রের কারণে তোমরা কাহাকেও বিবাহ করা হইতে বিরত রাখিও না। কেননা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও তাঁহার নাফরমানী হইতে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে কেহ বিবাহ করিলে আল্লাহ তা’আলা তাহাকে সচ্ছলতা দেওয়ার ওয়াদা করিয়াছেন। তবে ইমাম শওকানীর মতে ইহা আল্লাহ তা’আলার নিশ্চিত ও অবশ্যপূরনীয় কোন প্রতিশ্রুতি নহে। বিবাহ করলেই দরিদ্র ব্যক্তির দারিদ্র দূর হইয়া যাইবে এবং তাহার সচ্ছলতা ও স্বাচ্ছন্দ্য অর্জিত হইয়া যাইবে, এমন কথা বলা হয় নাই, আর তাহা বাস্তবও নহে। কেননা অসংখ্য দম্পতিকেই চরম দারিদ্র্যে নিমজ্জিত দেখা যায় অহরহ। তবে ইহা একান্তভাবে আল্লাহর অনুগ্রহের ও তাঁহার নিজের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। কিন্তু ইমাম কুরতুবী উপরোক্ত আয়াতের তাফসীরে এই ব্যাপারে নিশ্চয়তার উল্লেখ করিয়াছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলিয়াছেনঃ

*****************************************************************

তোমরা বিবাহের মাধ্যমে সচ্ছলতা লাভ করিতে চেষ্টা কর।

হযরত উমর (রা) বলিয়াছেনঃ

*****************************************************************

লোকেরা বিবাহের মাধ্যমে সচ্ছলতা অর্জন করিতে চাহিতেছে না দেখিয়া আমার আশ্চর্য লাগে।

হযরত ইবনে আব্বাস (রা)-ও এইরূপ উক্তি করিয়াছেন এবং তাঁহারা প্রত্যেকে উপরোক্ত আয়াতটিকেই এই কথার দলীল হিসাবে উল্লেখ করিয়াছেন।

ইবনে মাজাহ গ্রন্হ এই হাদীসটির ভাষায় ওলট-পালট হইয়া গিয়াছে। উহাতে হাদীসটির রূপ এইঃ

****************************************

তিন শ্রেণীর লোকের সাহায্য করা আল্লাহর উপর অর্পিত। (১) আল্লাহর পথে জিহাদকারী, (২) বিবাহকারী- যে নৈতিক পবিত্রতা রক্ষার ইচ্ছা করে এবং (৩) অর্থের বিনিময়ে দাস মুক্তির চুক্তিতে আবদ্ধ- যে চুক্তির অর্থ আদায় করিতে ইচ্ছুক।

কিন্তু এই বর্ণনায় হাদীসের মূল কথাগুলি অভিন্নই রহিয়াছে।

উপরোক্ত আয়াতেও এই হাদীসের তাৎপর্যস্বরূপ ইহাতে বলা হইয়াছেঃ

****************************************

লোকেরা যদি বিবাহের মুখাপেক্ষী হইয়াই পড়ে তাহা হইলে আল্লাহ হালাল উপায়ে তাহাদের এই মুখাপেক্ষিতা দূর করিয়া দিবেন, যেন তাহারা জ্বেনা-ব্যভিচার হইতে নিজেদের চরিত্র পবিত্র ও নিষ্কুলষ করিয়া রাখিতে পারে।

এই আয়াত ও হাদীসের ভিত্তিতে ফিকাহবিদগণ বলিয়াছেন, দরিদ্র ব্যক্তির পক্ষেও বিবাহ করা জায়েয এবং সঙ্গত। কেননা রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহর। রাসূলে করীম (স) বহু দরিদ্র নারী পুরুষেরই বিবাহের ব্যবস্থা করিয়াছেন। দারিদ্রই যদি বিবাহ হইতে বিরত থাকার ভিত্তি হইত, তাহা হইলে নবী করীম (স) নিশ্চয়ই তাহা করিতেন না।

এতসব সত্ত্বেও যদি কোন লোক বিবাহ করার সুযোগ বা ব্যবস্থা করিতেই সমর্থ নাই হয়, তবে আল্লাহ তাহাকে বলিষ্ঠভাবে স্বীয় নৈতিক পবিত্রতা ও নিষ্কুলষতা রক্ষা করিবার ও কোনরূপ নৈতিক উচ্ছৃঙ্খলতা ও পদস্থলন জ্বেনা-ব্যভিচারে না পড়িবার জন্য তাকীদ করিয়াছেন। উপরোক্ত আয়াতের পরই বলা হইয়াছেঃ

****************************************

যে সব লোক কোনরূপেই বিবাহের ব্যবস্থা করিতে পারিতেছে না, তাহাদের কর্তব্য হইল শক্তভাবে স্বীয় নৈতিক পবিত্রতা রক্ষা করা, যতদিন না আল্লাহ তাহাদিগকে সচ্ছল করিয়া দেন।

প্রথমোক্ত হাদীসে এইরূপ অবস্থায় চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার জন্য নফল রোযা রাখার নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে।

****************************************

প্রজনন ক্ষমতা ধ্বংস করা হারাম
****************************************

সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়্যিব হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, আমি হযরত সায়দ ইবনে আবূ আক্কাস (রা) কে বলিতে শুনিয়াছি, রাসূলে করীম (স) হযরত উমান ইবনে মযয়ূনের স্ত্রী সংসর্গ পরিহার করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করিয়াছিলেন। তিনি যদি ইহার অনুমতি তাঁহাকে দিতেন, তাহা হইলে আমরা নিশ্চয়ই নিজেদের খাসী বানাইয়া লইতাম। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ)

ব্যাখ্যাঃ হাদীসটি হইতে স্পষ্ট জানা যায়, হযরত উসমান ইবনে মযয়ূন (রা) নবী করীম (স)-এর নিকট স্ত্রী সংসর্গ পরিহার করার অনুমতি চাহিলে তিনি তাহা প্রত্যাখ্যান করেন। এখানে ব্যবহৃত মূল শব্দ হইল ******** ইহার আভিধানিক অর্থ ‘সম্পর্ক ছিন্ন করা’। কেহ যখন কোন জিনিসের সহিত সম্পর্ক ছিন্ন করে, বহুদিন পর্যন্ত ব্যবহৃত হওয়া কোন জিনিস পরিত্যক্ত হয়- উহার ব্যবহার শেষ করিয়া দেওয়া হয়, তখই এই কথা বুঝাইবার জন্য আরবী ভাষায় এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আর আলোচ্য হাদীসে ব্যবহৃত এই শব্দটির পারিভাষিক অর্থ হইল **************************************** ‘স্ত্রীলোকের সহিত নিঃসম্পর্কতা ও বিচ্ছন্নতা গ্রহণ এবং বিবাহ পরিহার করা’। কিন্তু কুরআন মজীদে এই শব্দটি ব্যবহৃত হইয়াছে ভিন্নতর অর্থে ও দৃষ্টিতে। আল্লাত তা’আলা রাসূলে করীম (স)কে নির্দেশ দিয়াছেনঃ

****************************************

এবং সারা দুনিয়ার সহিত সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করিয়া আল্লাহর দিকে ঐকান্তিকভাভে একনিষ্ঠ ও একমুখী হইয়া থাক।

এখানে ******* অর্থ নিয়্যাত খালেছ করিয়া একান্তভাবে আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল হইয়া যাওয়া। আর হাদীসে ব্যবহৃত ****** অর্থঃ অবিবাহিত থাকা, স্ত্রী সংসর্গ ও সঙ্গম পরিহার করা।

হাদীসটির বক্তব্য হইল, হযরত উসমান ইবনে মযয়ূন (রা) স্ত্রী সংসর্গ পরিহার করা- বিবাহ না করিয়া চিরকুমার হইয়া থাকার অনুমতি চাহিলে রাসূলে করীম (স) তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি তাঁহাকে ইহার অনুমতি দেন নাই; বরং এই মত বা নীতি গ্রহণ করিতে স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করেন।

রাসূলে করীম (স)-এর এই প্রত্যাখ্যান ও নিষেধের উল্লেখ করিয়া হযরত সায়াদ ইবনে আবূ অক্কাস (রা) বলিয়াছেন, রাসূলে করীম (স) যদি তাঁহাকে এই কাজের অনুমতি দিতেন তাহা হইলে স্ত্রী-সংসর্গ পরিহার করার এই অনুমতির ভিত্তিতেই আমরা আরও অগ্রসর হইয়া নিজদিগকে ‘খাসী’ করিয়া লইতাম। ‘খাসী’ করার কথাটি এতদ্দেশে সাধারণভাবে ব্যবহৃত ও সর্বজনবোধ্য। এই শব্দটি সাধারণতঃ জন্তু জানোয়ার, ছাগল-ভেড়া-গরু-মহিষের পুরুষাঙ্গ কাটিয়া উহার প্রজনন ক্ষমতা হরণ করা বুঝায়। হযরত সায়াদের কথার তাৎপর্য হইল, স্ত্রী সংসর্গ পরিহার বৈধ হইলে পুরুষাঙ্গ কাটিয়া ফেলা- নিজদিগকে খাসী করা বা বন্ধ্যাকরণ অবৈধ হইতে পারে না। ইসলামী আইন-বিজ্ঞানের ভাষায় ইহাকে বলা হয় ‘কিয়াস’। একটি বৈধ কাজের উপর অনুমান স্থাপন করিয়া অনুরূপ ফল পূর্ণ অপর একটি কাজের বৈধতা জানিয়া লওয়াকেই কিয়াস বলা হয়। অন্য কথায়, ইহা ‘নিম্ন ধাপে পা রাখিয়া উপরের ধাপে উঠিয়া যাওয়া’র মতই ব্যাপার। আরবী ভাষারীতি অনুযায়ী হযরত সায়াদের কথাটি এইরূপ হওয়া উচিত ছিলঃ ********* ‘তিনি যদি তাঁহাকে স্ত্রী সংসর্গ পরিহার করিবার অনুমতি দিতেন, তাহা হইলে আমরা স্ত্রী সংসর্গ পরিহার করিতাম।

কিন্তু তিনি এইরূপ না বলিয়া বহুদূর অগ্রসর হইয়া বলিয়াছেন, ******* আমরা অবশ্যই নিজেদের খাসী করিয়া লইতাম। ইহার অর্থ দাঁড়ায়ঃ

****************************************

তাঁহাকে স্ত্রী সংসর্গ পরিহার করার অনুমতি দিলে আমরা এই কাজে চরমে পৌঁছিয়া নিজদিগকে ‘খাসী’ বানাইয়া ফেলিতাম।

নিজদিগকে ‘খাসী’ বানাইবার কথাটি হযরত সায়াদ (রা) অপ্রাসঙ্গিকভাবেই বলিয়া ফেলেন নাই। তদানীন্তন আরবের খৃস্টান সমাজে ধর্মীয় অনুমতির ভিত্তিতে ইহার ব্যাপক প্রচলন হইয়াছিল বলিয়া নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়। কিন্তু নবী করীম (স) ইহা করার অনুমতি দেন নাই, না প্রথম কাজটির, না দ্বিতীয় কাজটির। বরং তিনি তাঁহার উম্মতকে এই ধরনের কাজ হইতে বিরত থাকার জন্য কঠোর ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন।

এই পর্যায়ে আর একটি হাদীসের ভাষা এইরূপঃ

****************************************

রাসূলে করীম (স) বিবাহ করার জন্য আদেশ নির্দেশ দিতেন এবং অবিবাহিত কুমার থাকিতে ও স্ত্রী সংসর্গ পরিহার করিতে তীব্র ভাষায় নিষেধ করিতেন।

ইমাম কুরতুবী লিখিয়াছেনঃ এই হাদীসের আলোকে বলা যায়, স্ত্রী সংসর্গ পরিহার ও চিরকুমার (বা কুমারী) থাকা শরীয়াতে জায়েয হইলে নিজদিগকে ‘খাসী’ করাও জায়েয হইয়া যায়। কেননা উভয়ের পরিণতি অভিন্ন।

‘খাসী’ করা সম্পর্কে তিনি লিখিয়াছেনঃ ‘খাসী করা অর্থ, যে দুইটি অঙ্গ দ্বারা সন্তান প্রজনন ও বংশ ধারা অব্যাহত থাকে, তাহা কাটিয়া ফেলা’। ইহা অত্যন্ত জ্বালা-যন্ত্রণা ও কষ্টদায়ক কাজ। ইহার ফলে অনেক সময় মৃত্যু সংঘটিত হইতে পারে। কোন কোন যুবতী অস্ত্রোপাচারে সন্তান ধারণ ক্ষমতা বিলুপ্ত করার পরিণতিতে অন্ধ হইয়া গিয়াছে বলিয়াও জানা যায়। ‘ভেসেকটমী’ (Vesectomy)- নির্বীর্যকরণের নিমিত্তে পুরুষের উপর অস্ত্রোপাচার বা লাইগেশন (ligation) মহিলাদের বন্ধ্যাকারণের ইত্যাকার আধুনিক পদ্ধতিই এই নিষেধের অন্তর্ভুক্ত এবং সম্পূর্ণ হারাম।

ইমাম নববী উপরোদ্ধৃত হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখিয়াছেন, হাদীসে উদ্ধৃত হযরত সায়াদের কথার অর্থ হইল, স্ত্রী সংসর্গ ত্যাগ করার, সম্পর্ক পরিহার করার ও এই ধরনের অন্যান্য বৈষয়িক স্বাধ আস্বাধন পরিত্যাগ করার অনুমতি দেওয়া হইলে আমরা যৌন সঙ্গমের প্রবৃত্তি দমনের জন্য- যেন স্ত্রী সংসর্গ পরিহার করা কিছুমাত্র কষ্টকর না হয়- আমরা নিজদিগকে ‘খাসী’ বা বন্ধা করিয়া ফেলিতাম। (প্রচলিত কথায়, না থাকিবে বাঁশ, না বাজিবে বাঁশি) তাঁহার এই কথাটি কিয়াস ও ইজতিহাদের পর্যায়ভুক্ত। প্রথম কাজটি জায়েয হইলে এই কাজটিও জায়েয হইত বলিয়া তিনি মনে করিয়া লইয়াছিলেন। কিন্তু ইহা ঠিক নহে। কেননা ইহা মূলতঃই ইজতিহাদের ব্যাপার নয়। ইজতিহাদ তো হইতে পারে সেই সব বিষয়ে, যাহাতে শরীয়াতের কোন অকাট্য দলীল বর্তমান নাই। অথচ ‘খাসী’ করা সম্পর্কে শরীয়াতের স্পষ্ট বিধান রহিয়াছে। আর তাহা হইলঃ ******************** মানুষকে ‘খাসী’ করানো বিনা শর্তে ও নিরংকুশভাবে হারাম। ইমাম নববীর ভাষায়ঃ ********* ছোট হউক বড় হউক- যে কোন বয়সের লোককে ‘খাসী’ করানো সম্পূর্ণ হারাম। ইমাম বগভী বলিয়াছেনঃ যে সব জন্তুর গোশত খাওয়া হয় না সেই সবের খাসী করাও হারাম। আর যে সব জন্তুর গোশত খাওয়া হয় সে সবের ছোট বয়সে খাসী করা জায়েয। বেশীয় বয়স হইলে নয়। জন্তুর খাসী করানো জায়েয এই মতের দলীল হিসাবে উল্লেখ করা হইয়াছে **************** রাসূলে করীম (ষ) দুইটি খাসী কৃত ছাগল কুরবানী করিয়াছেন। বস্তুত খাসী করা জায়েয না হইলে নবী করীম (স) নিশ্চয়ই খাসী করা ছাগল কুরবানী দিতেন না। কিন্তু ইহার বিপরীত মতও কম প্রবল ও কম প্রমাণিত নয়। একটি হাদীসে বলা হইয়াছে, নবী করীম (স) জন্তুর খাসী করিতে নিষেধ করিয়াছেন, উহার গোশত খাওয়া হউক, কি না-ই হউক, ছোট হউক, কি বড় হউক’।

এই পর্যায়ে সঠিক ও যথার্থ কথা হইল, হযরত উসমান ইবনে মযয়ূন (রা) স্ত্রী সংসর্গ পরিহার করার জন্য যে অনুমতি চাহিয়াছিলেন সেই অনুমতি যদি তিনি পাইতেন, তাহা হইলে লোকদের পক্ষে নিজদিগকে খাসী করাও জায়েয হইয়া যাইত। কেননা হযরত উসমান ইবনে মযয়ূনের স্ত্রী সংসর্গ পরিহারের অনুমতি প্রার্থনা পরিণতির দিক দিয়া খাসী করার অনুমতি প্রার্থনার সমান। এই ব্যাখ্যার আলোকে বুঝিতে পারা যায়, খাসী করার কথাটি হযরত সায়াদের নিজস্ব কোন ‘কিয়াস’ বা ‘ইজতিহাদের’ ব্যাপার ছিল না। আয়েশা বিনতে কুদামাহ বর্ণিত অপর একটি হাদীস হইতে এই কথাই স্পষ্ট হইয়া যায়। সে হাদীসটির মূল বর্ণনাকারী হযরত উসমান ইবনে মযয়ূন (রা) নিজে। তাহা এইঃ

****************************************

তিনি বলিলেন, ইয়া রাসূল! আমরা যুদ্ধ জিহাদের কাজে দূরদেশে পড়িয়া থাকিতে বাধ্য হই বলিয়া তখন স্ত্রী সঙ্গহীন অবস্থায় থাকা আমাদের পক্ষে বড়ই কষ্টকর হইয়া পড়ে। এমতাবস্থায় আপনি যদি খাসী করার অনুমতি দিতেন, তাহা হইলে আমি নিজেকে খাসী করিয়া লইতাম? তখন নবী করীম (ষ) বলিলেনঃ না, তবে হে মযয়ূন পুত্র! তুমি রোযা রাখিতে থাক।উহাই তোমাকে এই কষ্ট হইতে মুক্তি দিবে।

ইবনে আবদুল বার এই হাদীসটির উদ্ধৃত করিয়া এই প্রসঙ্গে আরও লিখিয়াছেন, হযরত উসমান ইবনে মযয়ূন, হযরত আলী ও হযরত আবূ যার গিফারী (রা) নিজদিগকে খাসী করার ও স্ত্রী সংসর্গ সম্পূর্ণ পরিহার করার সংকল্প করিয়াছিলেন। কিন্তু নবী করীম (স) তাঁহাদিগকে এই কাজ করিতে নিষেধ করিয়া দিলেন।

মুহাদ্দিস তাবারানী হযরত উসমান ইবনে মযয়ূন (রা) হইতে অপর একটি হাদীস উদ্ধৃত করিয়াছেন। হাদীসটি এইঃ

****************************************

তিনি বলিলেনঃ ইয়া রাসূল! আমি এমন ব্যক্তি যে, স্ত্রী হইতে নিঃসম্পর্ক ও সংসর্গহীন হইয়া থাকা আমার পক্ষে খুবই কঠিন ও বিশেষ কষ্টকর। অতএব আমাকে খাসী করার অনুমতি দিন। রাসূলে করীম (স) বলিলেনঃ না, এমতাবস্থায় রোযা রাখাই তোমার কর্তব্য।

এই পর্যায়ে আরও একটি হাদীস উল্লেখ্য। কায়স বলেন, আমি আবদুল্লাহকে বলিতে শুনিয়াছি, আমরা রাসূলে করীম (স)- এর সাথে যুদ্ধে মগ্ন ছিলাম। আমাদের সঙ্গে আমাদের স্ত্রী ছিল না। তখন আমরা রাসূলে করীম (স) কে জিজ্ঞাসা করিলামঃ ****** আমরা কি নিজদিগকে খাসী করিয়া লইব না’? ইহার জওয়াবে তিনি ****** আমাদিগকে এই কাজ করিতে নিষেধ করিলেন।

(মুসলিম)

এই হাদীসটির ব্যাখ্যায় ইমাম নববী লিখিয়াছেনঃ

****************************************

কেননা উহার ফলে আল্লাহর সৃষ্টি ধারাকে পরিবর্তিত ও ব্যাহত করা হয় এবং উহার ফলে মানব-বংশ বৃদ্ধির ধারা রুদ্ধ ও স্তব্ধ হইয়া যায়।

ইসমাঈল ইবনে আবূ খালেদ কায়স ইবনে আবূ হাজিম হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলিয়াছেনঃ

****************************************

আমরা এক যুদ্ধে রাসূলের (স) সঙ্গে ছিলাম। আমাদের স্ত্রীরা সঙ্গে ছিল না। তখন আমরা বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি খাসী করাইয়া লইব না?… পরে তিনি আমাদিগকে এই কাজ করিতে নিষেধ করিলেন। ইহার পর তিনি কুরআনের আয়াত পাঠ করিলেনঃ ‘তোমরা হারাম করিও না আল্লাহ যেসব পবিত্র জিনিস তোমাদের জন্য হালাল করিয়াছেন’।

ব্যাখ্যাঃ এই হাদীসে প্রথমতঃ ‘খাসী’ করিতে- প্রজনন ক্ষমতা বিনষ্ট বা উৎপাটিত করিতে নিষেধ করা হইয়াছে। আর এই নিষেধকে দলীল ভিত্তিক করার জন্য রাসূলে করীম (স) একটি আয়াত পাঠ করিলেন। তাহাতে আল্লাহর হালাল করা জিনিসকে হারাম করিতে নিষেধ করা হইয়াছে।

ইহার অর্থ হইল, বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রীর যৌন-সুখ লাভ ও স্বাদ-আস্বাদনকে আল্লাহ তা’আলা হালাল করিয়াছেন। ‘খাসী’ করিয়া এই সুখভোগ ও স্বাদ-আস্বাদনের উপায় বিনষ্ট করিয়া দেওয়ায় আল্লাহর হালাল করা জিনিসকেই হারাম করিয়া লওয়ার শামিল হয়। আর ইহা একটি অতিবড় অপরাধ। (আহকামুল কুরআন- আবূ বকর আল-জাসসাদ, ২য় খণ্ড, ১৮৪ পৃঃ)

এই বিস্তারিত আলোচনার নির্যাস হইল, যৌবন, যৌন শক্তি, স্ত্রীসঙ্গম ও প্রজনন ক্ষমতা মানুষের প্রতি মহান আল্লাহ তা’আলার বিশেষ নিয়ামত। ইহাকে কোনক্রমেই বিনষ্ট,ব্যাহত বা ধ্বংস করা যাইতে পারে না। ইসলামী আইন-বিধানে এই কাজ সম্পূর্ণ হারাম।

****************************************

স্ত্রীহীন অবস্থায় কাহারও যদি স্বীয় চরিত্র নিষ্কুলষ ও অকলংক রাখা কঠিন হইয়া দেখা দেয়, তাহা হইলে রাসূলে করীম (স) প্রদত্ত শিক্ষানুযায়ী তাহার রোযা রাখা কর্তব্য। কিন্তু নিজেকে খাসী করা- যৌন অঙ্গকে প্রজনন ক্ষমতাশূণ্য করা কোনক্রমেই জায়েয হইবে না। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) বলিয়াছেন, একজন লোক রাসূলে করীম (স)- এর নিকট উপস্থিত হইয়া বলিলঃ

****************************************

ইয়া রাসূল! আমাকে নিজেকে খাসী করার অনুমতি দিন।

তখন নবী করীম (স) বলিলেনঃ

****************************************

আমার উম্মতের লোকদের জন্য রোযা রাখা ও রাত্র জাগিয়া ইবাদত করাই তাহাদের খাসী করণ (এর বিকল্প পন্হা)।

অর্থাৎ খাসী করণের উদ্দেশ্যে এই দুইটি কাজ দ্বারা সম্পন্ন করাই আমার উম্মতের জন্য বিধি।

হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ হইতে বর্ণিত অপর একটি হাদীসে বলা হইয়াছে, একজন যুবক রাসূলে করীম (স)-এর নিকট নিজেকে খাসী করণের অনুমতি চাহিলে তিনি বলিলেনঃ

****************************************

রোযা থাক এবং আল্লাহর নিকট (বিবাহের সঙ্গতির ব্যাপারে) তাহার অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করিতে থাক।

এই দুইটি হাদীস মুসনাদে আহমাদ ও তাবারানী আল- আওসাত গ্রন্হে উদ্ধৃত হইয়াছে।

ইমাম বায়হাকী তাঁহার মুসনাদ গ্রন্হে হযরত আবু ইমামা (রা) হইতে বর্ণনা উদ্ধৃত করিয়াছেনঃ

****************************************

তোমরা বিবাহ কর, কেননা আমি বেশী সংখ্যক উম্মত লইয়া অন্যান্য নবীর উম্মতের উপর অগ্রবর্তী হইব এবং তোমরা খৃষ্টান (পাদ্রীদের) ন্যায় (বিবাহ না করার) বৈরাগ্য গ্রহণ করিও না।

বিবাহ না করা ও বৈরাগ্য গ্রহণ ইসলামে আদৌ পছন্দ করা হয় নাই। বরং বিবাহ করা ও যতবেশী সম্ভব সন্তানের জন্মদানই অধিক পছন্দনীয় কাজ।

বদল বিবাহ জায়েয নয়
****************************************

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, হযরত রাসূলে করীম (স) বদল বিবাহ নিষেধ করিয়া দিয়াছেন। (মুসলিম, আবু দাউদ)

ব্যাখ্যাঃ মূল হাদীসে ব্যবহৃত শব্দটি হইল ****** – ইমাম নববী লিখিয়াছেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) হইতে এই হাদীসের বর্ণনাকারী নাফে এই শব্দটির ব্যাখ্যা করিয়াছেন এই ভাষায়ঃ

****************************************

‘শিগার’- বদল বিবাহ- হয় এই ভাবে যে, এক ব্যক্তি তাহার কন্যাকে অপর একজনের নিকট বিবাহ দিবে এই শর্তে যে, তাহার কন্যা এই ব্যক্তির নিকট বিবাহ দিবে এবং এই দুইটি বিবাহে মহরানা ধার্য হইবে না।

আল-কামুস- আল মুহীত গ্রন্হে ‘শিগার’ শব্দের অর্থ বলা হইয়াছেঃ তুমি এক ব্যক্তির নিকট একজন মেয়েলোককে বিবাহ দিবে এই শর্তে যে, সে তোমার নিকট অপর একটি মেয়েকে বিবাহ দিবে কোনরূপ মহরানা ছাড়াই।

অপর একটি বর্ণনায় ‘শিগার’ বিবাহের ব্যাখ্যায় ******-র ****** কিংবা তাহার বোন’ উল্লেখিত হইয়াছে। ইমাম খাত্তাবী এই কথাটি লিখিয়াছেন এই ভাষায়ঃ

****************************************

এবং এক ব্যক্তির বোনকে বিবাহ দিবে এবং সে তাহার বোনকে বিবাহ দিবে মহরানা ছাড়া।

এই ধরনের বিবাহের প্রস্তাবনায় এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বলেঃ

****************************************

তুমি তোমার কন্যাকে বা তোমার নিকটাত্মীয়া অথবা তোমার মুয়াক্কিলা অমুক মেয়েটিকে আমার নিকট বিবাহ দাও ইহার মুকাবিলায় যে, আমি আমার কন্যা বা নিকটাত্মীয় অথবা মুয়াক্কিলা অমুক মেয়েটিকে তোমার নিকট বিবাহ দিব।

***** শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘উত্তোলন’ বা উঠানো, উপরে তোলা। কুকুর যখন প্রসাব করার জন্য পা উপরে তোলে, তখন বলা হয় ****** ‘কুকুরটি পা উপরে তুলিয়াছে’। আলোচ্য ধরনের বিবাহকে **** বলা হয় এই সাদৃশ্যের কারণে যে, এই রূপ বিবাহের কথা-বার্তায় একজন যেন অপর জনকে বলিলঃ

****************************************

তুমি আমার কন্যার পা উপরে তুলিবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমার কন্যার পা উপরে না তুলি।

বলা বাহুল্য, পা উপরে তোলার অর্থ, স্ত্রীর সহিত যৌন কর্মের প্রস্তুত হওয়া, উদ্যোগী হওয়া।

কাহারও কাহারও মতে ******** শব্দের অর্থ শূণ্যতা। আরবী ভাষায় বলা হয় ****** ‘শহর শূন্য হইয়া গিয়াছে’। আলোচ্য ধরনের বিবাহ যেহেতু মহরানা শূন্য- মহরানা ছাড়াই হয়, এই সাদৃশ্যে উহাকেও **** বা ***** বলা হয়। আর স্ত্রী যখন সঙ্গম কালে পা তোলে তখন বলা হয় ******* ‘স্ত্রী লোকটি নিজেকে শূণ্য করিয়া দিয়াছে’। ইবনে কুতাইবা বলিয়াছেন, এই নারীদের প্রত্যেকেই সঙ্গম কালে পা উপরে তোলে বলিয়া এই বিবাহকে ****** ‘শিগার বিবাহ’ (বদল বিবাহ) বলা হয়। এই ধরনের বিবাহ আরব জাহিলিয়াতের সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। অপর একটি বর্ণনায় স্পষ্ট ভাষায় বলা হইয়াছেঃ ************- ‘ইসলামে বদল বিবাহ নাই’। ‘মজমাউজ জাওয়ায়িদ’ গ্রন্হকার লিখিয়াছেন, এই হাদীসটির সনদ সহীহ।

হাদীস ও ফিকাহবিদগণ একমত হইয়া বলিয়াছেন, উক্তরূপ বদল বিবাহ ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এইরূপ বিবাহ আনুষ্ঠানিকভাবে হইয়া গেলেও শরীয়াতের দৃষ্টিতে মূলত-ই সংঘটিত হয় না। ইহা বাতিল।

কিন্তু প্রশ্ন উঠিয়াছে, কোন মুসলমান যদি এইরূপ বিবাহ করিয়াই বসে, তাহা হইলে সে বিবাহটিকে কি বাতিল ঘোষণা করিতে ও ভাঙিয়া দিতে হইবে? কিংবা না? এই পর্যায়ে বিভিন্ন ফিকাহবিদগণ বিভিন্ন মত দিয়াছেন। ইমাম শাফেয়ী বলিয়াছেন, হ্যাঁ, এইরূপ বিবাহ হইয়া গেলেও উহাকে বাতিল করিতে হইবে। ইমাম খাত্তাবীর বর্ণনানুযায়ী ইমাম আহমদ, ইসহাক ও আবূ উবাইদও এই মতই দিয়াছেন। ইমাম মালিক বলিয়াছেন, এইরূপ বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গম হইয়া গেলেও; কিংবা না হইলেও উহা ভাঙিয়অ দিতে হইবে। অবশ্য তাহার অপর একটি মতে সঙ্গমের পূর্বে ভাঙিয়া দিতে হইবে, সঙ্গম হওয়ার পর নয়। কিছু সংখ্যক ফিকাহবিদ বলিয়াছেন, এইরূপ বিবাহ হইয়া গেলে পরে বংশের অন্যান্য মেয়ের জন্য ধার্যকৃত পরিমাণে মহরানা ***** নির্ধারিত করা হইলে উক্ত বিবাহ বহাল রাখা চলিবে। ইমাম আবু হানীফাও এই মতই দিয়াছেন। এতদ্ব্যতীত আতা, জুহরী তাবারী প্রমুখও এইমত যাহির করিয়াছেন। ফিকাহবিদগণ এই মতও দিয়াছেন যে, কেবল নিজের মেয়ের ক্ষেত্রেই এই নিষেধ প্রযোজ্য নয়, নিজ কন্যা ছাড়া বোন, ভাইফি, ফূফি ও চাচা-ফুফার মেয়ের বদলের ক্ষেত্রেও এই নিষেধ কার্যকর হইবে।

আবূ দায়ূদ কিতাবে আ’রজ হইতে বর্ণনা উদ্ধৃত হইয়াছে, আব্বাস ইবনে আবদুল্লাহ তাঁহার কন্যাকে আবদুর রহমানের নিকট বিবাহ দিয়াছিলেন এবং আবদুর রহমান আবদুল্লাহ আব্বাস ইবনে আবদুল্লাহর নিকট তাঁহার নিজের কন্যাকে বিবাহ দিয়াছিলেন। আর ইহাকেই তাঁহারা পরস্পরের মহরানা বানাইয়াছিলেন। হযরত মুয়াবীয়া (রা) সরকারী ক্ষমতায় তাঁহাদের দুইজনের বিবাহ ভাঙিয়া দিয়াছিলেন, উভয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাইয়অ দিয়াছিলেন এবং বলিয়াছিলেনঃ

****************************************

ইহাতো সেই ‘শিগার’ বিবাহ, যাহা করিতে রাসূলে করীম (স) নিষেধ করিয়াছেন।

এইরূপ বিবাহ হারাম হওয়ার বিভিন্ন কারণ শরীয়ত বিষেশজ্ঞগণ উল্লেখ করিয়াছেন। বলা হইয়াছে, ইহাতে একটি বিবাহ অপর বিবাহের উপরে ঝুলন্ত হইয়া থাকে। অথচ কোন শর্তের উপর বিবাহের ঝুলন্ত হইয়া থাকা ইসলামী শরীয়াতে মূলতই জায়েয নয়। কেননা তাহাতে কথাটি শেষ পর্যন্ত এই দাঁড়ায়, যেন একজন অপরজনকে বলিতেছে, আমার মেয়ের বিবাহ তোমার সহিত সংঘটিত হইবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার মেয়ের বিবাহ আমার সহিত সংঘটিত না হইবে।

এতদ্ব্যতীত ইসলাম এই কারণেও এই রূপ বিবাহ হারাম করিয়াছে যে, ইহাতে স্ত্রীর হক- মহরানা পাওয়অর হক- বিনষ্ট হয়, তাহার মর্যাদার হানি হয়। ইহাতে দুইজন পুরুষের প্রত্যেকে স্ত্রী গ্রহণ করে অপর এক স্ত্রীর বিনিময়ে- মহরানা ব্যতীতই। অথচ মহরানা প্রত্যেক স্ত্রীরই অনিবার্যভাবে (ওয়াজিব) প্রাপ্ত। কিন্তু এই ধরনের বিবাহে তাহারা তাহা হইতে বঞ্চিত থাকিতে বাধ্য হয়।

****************************************

যে সব পুরুষ-মেয়ের পারস্পরিক বিবাহ হারাম
****************************************

হযরত আলী (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, রাসূলে করীম (স) ইরশাদ করিয়াছেন, আল্লাহ তা’আলা দুগ্ধ পানের কারণে সেই সব পুরুষ-মেয়ের পারস্পরিক বিবাহ হারাম করিয়া দিয়াছেন, যাহা হারাম করিয়াছেন বংশ ও রক্ত সম্পর্কের কারণে। (তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ)

ব্যাখ্যাঃ এখানে হযরত আলী (রা) বর্ণিত যে হাদীসটি উদ্ধৃত হইয়াছে, ইহা দশজন সাহাবী হইতে বর্ণিত। হযরত আলী (রা) ব্যতীত অপর নয় জন সাহাবী হইলেনঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আয়েশা, উম্মে সালমা, উম্মে হাবীবা, আবূ হুরায়রা, সওবান, আবূ আমামাতা, আনাস ইবনে মালিক এবং কায়াব ইবনে আজুজাতা (রা)। হযরত আয়েশা (রা) হইতে হাদীসটি বর্ণিত হইয়াছে এই ভাষায়ঃ

****************************************

জন্মসুত্রে যে বিবাহ হারাম, দুগ্ধপান সূত্রেও সেই বিবাহ হারাম।

ইহা হইতে স্পষ্ট হয় যে, এই হাদীসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত পারিবারিক জীবনের পবিত্রতা, বিশুদ্ধতা ও স্থায়ীত্বের নিরাপত্তা বিধানের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা’আলা সমাজে কতিপয় মেয়ে-পুরুষের পারস্পরিক বিবাহ সম্পূর্ণ এবং চিরকালের জন্য হারাম করিয়া দিয়াছেন। এই ব্যাপারটি মোট নয়টি বিভাগে বিভক্ত। তাহা হইল (১) নিকটবর্তীতার কারণে হারাম (২) বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে হারাম (৩) দুগ্ধ পানের কারণে হারাম (৪) একত্রিত করণ হারাম (৫) স্বাধীনা মেয়ের উপর ক্রীতদাসী বিবাহ হারাম (৬) অন্য লোকের অধিকারের কারণে হারাম (৭) মালিকানার কারণে হারাম (৮) শিরক-এর কারণে হারাম এবং (৯) তিন তালাক দেওয়ার কারণে হারাম।

নিকটাত্মীয়তার কারণে সাত বিভাগের মেয়েরা হারামঃ মা, কন্যা, ভগ্নি, ফুফী, খালা, ভাইঝি, বোনঝি।

মা শাখায়ঃ ব্যক্তির নিজের মা, দাদী, নানী ইত্যাদি। আল্লাহ তা’আলা বলিয়াছেনঃ

****************************************

তোমাদের মাদেরকে তোমাদের প্রতি হারাম করিয়া দেওয়া হইয়াছে।

কন্যা শাখায়ঃ ব্যক্তির নিজের ঔরষজাত কন্যা, ছেলের মেয়ে- আরও নিচের দিকে।

বোন শাখায়ঃ তিনটি প্রশাখা। আপন বোন, পিতার দিকের বোন, মায়ের দিকের বোন।

ফুফি শাখায়ঃ তিনটি প্রশাখা। আপন ফুফি, বাবার দিক দিয়া ফুফি, মা’র দিক দিয়া ফুফি। পিতার ফুফি, দাদার ফুফি, মায়ের ফুফি, দাদীর ফুফি ইত্যাদি।

খালা পর্যায়েঃ আপন খালা, বাবার দিক দিয়া খালা, মা’র দিক দিয়া খালা ইত্যাদি।

ভাইঝি পর্যায়েঃ বোনঝি, ভাইঝির কন্যা, বোনঝির কন্যা, ভাইর ছেলেদের কন্যা, বোনের ছেলেদের কন্যা- নিচের দিকে…

বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে চারটি শাখা হারামঃ

স্ত্রীর মা, স্ত্রীর পিতা-মাতার দিক দিয়া দাদী। কেহ যদি একটি মেয়ে বিবাহ করে, সেই স্ত্রীর সহিত তাহার সঙ্গম হউক কি না হউক, সর্বাবস্থায়ই এই স্ত্রীর মা এই পুরুষটির জন্য হারাম। আল্লাহ তা’আলা বলিয়াছেন, ******** এবং তোমাদের স্ত্রীদের মা’রাও….

স্ত্রীর কন্যা- যদি সে স্ত্রী সহিত ব্যক্তির সঙ্গম হইয়া থাকে। কুরআনে বলা হইয়াছেঃ

****************************************

তোমরা সঙ্গম করিয়াছে তোমাদের এমন স্ত্রীদের কোলে লইয়া আসা নিজ গর্ভজাত সন্তান যাহারা তোমাদের লালিতা-পালিতা- তাহারা তোমাদের জন্য হারাম।– স্ত্রীর কন্যার কন্যা এবং স্ত্রীর পুত্রের কন্যাও হারাম।

পুত্রের স্ত্রী- তাহার সহিত পুত্রের সঙ্গম হউক, কি না হউক। পৌত্রের স্ত্রীও হারাম। কুরআনে বলা হইয়াছেঃ

****************************************

তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীরাও হারাম।

আলোচ্য হাদীসের ঘোষণা হইল, বংশ বা রক্ত সম্পর্কের কারণে যাহারা হারাম, দুগ্ধ পানের কারণেও সেই সব আত্মীয়ও হারাম হইয়া যায়। হযরত হামজার কন্যা রাসূলে করীম (স)- এর সহিত বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া হইলে রাসূলে করীম (স) বলিলেনঃ

****************************************

হামজার কন্যা আমার জন্য হালাল নয়। কেননা সে তো আমার দুধ ভাইর কন্যা।

রাসূলে করীম (স) ও হযরত হামজা পরস্পর দুধ ভাই ছিলেন।

হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, আবুল কুয়াইসের ভাই আছলাহ আমার সহিত সাক্ষাত করিতে চাহিলে আমি বলিলামঃ

****************************************

আল্লাহর নামে শপথ, রাসূলে করীমের নিকট হইতে অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত আমি তাহাকে সাক্ষাতের অনুমতি দিব না। কেননা আবুল কুয়াইসের এই ভাইতো আমাকে দুধ খাওয়ায় নাই। আমাকে দুধ খাওয়াইয়াছে তাহার স্ত্রী।

পরে রাসূলে করীম (স) ইহা শুনিয়া বলিলেনঃ

****************************************

হ্যাঁ, তুমি তাহার সহিত দেখা করিতে পার। কেননা সে তোমার দুধ পানের কারণে চাচা।

কুরআন মজীদে বলা হইয়াছেঃ

****************************************

তোমাদের সেই সব মা-ও হারাম, যাহারা তোমাদিগকে দুধ খাওয়াইয়াছে এবং দুধের বোনেরাও।

ইহার কারণ এই যে, যে মেয়ে বা ছেলেকে যে স্ত্রীলোকটি দুধ পান করাইয়াছে, সে দুধ সে পাইয়াছে তাহার স্বামীর নিকট হইতে। অতএব এই দুধ স্ত্রী ও তাহার স্বামী এই দুইজনের মিলিত দেহাংশ। আর এই দেহাংশ পান করিয়া যে লালিত পালিত হইয়াছে, সে তাহাদেরই অংশ হইয়াছে। এই দিক দিয়া এই দুধপানকারী সন্তান তাহাদের ঔরসজাত সন্তানের মতই হারাম হইয়া গিয়াছে। ইহাই এই পর্যায়ের হাদীস সমূহের বক্তব্য।

(*************************)

তাহলীল-বিবাহ হারাম
****************************************

হযরত আদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, নবী করীম (স) হালালকারী ব্যক্তি ও যাহার জন্য হালাল করা হয় সেই ব্যক্তির উপর অভিশাপ বর্ষণ করিয়াছেন।

(মুসনাদে আহমদ, বায়হাকী, নাসায়ী, তিরমিযী)

(ইবনুল কাতান ও ইবনে দকীকুল-ঈদ-এর মতে এই হাদীসটি বুখারীর শর্তে উত্তীর্ণ সহীহ হাদীস।)

ব্যাখ্যাঃ হাদীসের শব্দ ********* অর্থ ‘তাহলীলকারী’- অর্থাৎ অন্য একজনের জন্য কোন মেয়ে লোককে হালাল বানাইবার উদ্দেশ্যে সেই মেয়ে লোকটিকে বিবাহ করাকে বলা হয় তাহলীল বিবাহ। ইহার তাৎপর্য হইল, একজন লোক তাহার স্ত্রীকে তিন তালাক বাইন দিয়াছে। তালাক দেওয়ার পর সে আবার সেই স্ত্রীকেই স্ত্রীরূপে রাখিতে ইচ্ছুক হইয়াছে এবং সে স্ত্রীও তাহার স্ত্রী হইয়া থাকিতে ও পূর্বে তালাক দাতাকেই পুনরায় স্বামীরূপে বরণ করিয়া লইতে রাযী হইয়াছে। কিন্তু কুরআনের বিধান মতে এ স্ত্রী লোকটি যতক্ষণ অন্য একজন লোককে বিবাহ না করিবে, ততক্ষণ সে তাহার প্রথম স্বামীকে স্বামীরূপৈ বরণ করিতে পারে না। এইরূপ অবস্থায় একজন আপন জনকে রাযী করানো হয় এই উদ্দেশ্যে যে, সে এই স্ত্রী লোকটিকে বিবাহ করিবে, তাহার সহিত সঙ্গম করিবে এবং পরে সে তাহাকে তালাক দিবে- যেন মেয়ে লোকটি তাহার প্রথম স্বামীর বিবাহিত স্ত্রী হইতে পারে ও সেই প্রথম স্বামীর পক্ষেও তাহাকে বিবাহ করা হালাল হইয়া যায়। মোটামুটি এই রূপ বিবাহকে তাহলীল বিবাহ বলে এবং যে লোক এই বিবাহ করে তাহাকে বলা হয় ‘মুহাল্লিল’ (********)। আর যাহার জন্য হালাল করার উদ্দেস্যে সে বিবাহ করে তাহাকে বলা হয় ‘মুহাল্লিল লাহু’ (******)। আলোচ্য এই দুই ব্যক্তির উপরই রাসূলে করীম (স) লা’নত ও অভিশাপ বর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া জানানো হইয়াছে। বস্তুত এই লা’নত ও অভিশাপ বর্ষণের বাস্তব কারণ রহিয়াছে। যাহারা এই বিবাহকে হালাল মনে করে তাহারা কুরআনের আয়াতের ধৃষ্টতাপূর্ণ কদর্য করে। কেননা কুরআনের আয়াতঃ

****************************************

তিন তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীলোকটি তালাকদাতার জন্য হালাল হইবে না যতক্ষণ না সে অপর একজন লোককে স্বামীরূপে বরণ করিবে। (ও তাহার সহিত সঙ্গম করিবে)

ইহার সঠিক অর্থ হইল, একজন স্বামী তাহার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়া দিলে মূলত এই স্ত্রীলোকটি তাহার এই স্বামীর জন্য চিরকালের তরে হারাম হইয়া যায়- তবে মেয়ে লোকটি যদি সাধারণ নিয়মে অন্য এক স্বামী গ্রহণ করে ও তাহার সহিত সঙ্গম হয় ও তাহার পর সে হয় মরিয়া যায়, কিংবা সেও তিন তালাক দিয়া ছাড়িয়া দেয়, তাহা হইলে সেই প্রথম স্বামী ও সম্পূর্ণ ভিন্ন ও নূতন ব্যক্তির ন্যায় এই মেয়ে লোকটিকে বিবাহ করিতে পারিবে। তখন এই বিবাহ জায়েয এবং এই মেয়েলোকটি তাহার জন্য হালাল হইবে। ইহা অতীব স্বাভাবিক নিয়মের কথা। ইহাতে কৃত্রিমতার লেশ মাত্র নাই। কিন্তু বর্তমান কালে কুরআনের এই আইনটির সম্পূর্ণ ভূল অর্থ করিয়া কার্যত করা হইতেছে এই যে, কেহ রাগের বশবর্তী হইয়া স্ত্রীকে এক সঙ্গে তিন তালাক দিলে পরে তাহার ঘর-সংসার সব রসাতলে যাইতেছে ও জীবন অচল হইয়া পড়িতেছে দেখিয়া আবার সেই স্ত্রীকেই গ্রহণ করিতে উদ্যোগী হয়। কিন্তু কুরআনের এই আয়াতটি তাহার সম্মুখে বাধা হইয়া দাঁড়ায় দেখিয়া ইহাকেই অতিক্রম করার জন্য এই তাহলীল বিবাহ করিতেছে এবং মেয়েলোকটিও জানে যে, তাহাকে স্থায়ী স্বামী রূপে বরণ করার জন্য নয়- একরাত্রির যৌন-সঙ্গিণী হইবার জন্যই সে তাহাকে বিবাহ করিতেছে এবং সেও তাহার নিকট বিবাহ বসিতে রাযী হইয়াছে। নবী করীম (স) এই তাহলীল বিবাহকারীকে ‘ভাড়া করা বদল’ বলিয়া আখ্যায়িত করিয়াছেন। হযরত উকবা ইবনে আমর (রা) বর্ণনা করিয়াছেনঃ রাসূলে করীম (স) ইরশঅদ করিয়াছেনঃ

****************************************

আমি কি তোমাগিদকে ধার করা ষাড়ের সম্পর্কে বলিব? সাহাবাগণ বলিলেনঃ হ্যাঁ রাসূল! বলূন, তখন তিনি বলিলেনঃ তাহলীল বিবাহকারীই হইতেছে ধার করা ষাড়। আল্লাহ তা’আলা তাহলীলকারী ও যাহার জন্য তাহলীল করে এই উভয় ব্যক্তির উপরই অভিশাপ বর্ষণ করিয়াছেন।

(ইবনে মাজাহ, বায়হাকী)

হযরত আলী (রা) ও হযরত আবূ হুরায়রা (রা) হইতে এই একই হাদীস বর্ণিত হইয়াছে। এই সব হাদীস হইতে অকাট্য ভাবে প্রমাণিত হয় যে, তাহলীল বিবাহ সম্পূর্ণ হারাম। কেননা রাসূলে করীম (স)- এর মুখে এই ব্যাপারে এতবেশী কঠোর ও তীব্র ভাষায় হাদীস উচ্চারিত ও বর্ণিত হইয়াছে যে, তাহা পড়িলে শরীর মন কাঁপিয়া উঠে। ইহা প্রমাণ করে যে, ইহা নিশ্চয়ই অতি বড় গুনাহ। তাহা না হইলে এতভাবে ও এত কঠোর ভাষঅয় নবী করীম (স) এই কথা বলিতেন না। কেননা সুস্পষ্ট হারাম কবিরা গুনাহের কাজ এবং যে করে কেবল তাহার প্রতিই অভিশাপ বর্ষণ করা যাইতে পারে। অন্য কাহারও প্রতি নয়। আল্লাম ইবনুল কাইয়্যেম লিখিয়াছেনঃ ************************** “অভিশাপ হয় বড় কোন গুনাহের জন্য”। এই জন্য শরীয়াত বিশেষজ্ঞগণ এই বিষয়ে একমত হইয়াছেন যে, অন্য কাহারও জন্য হালাল করার উদ্দেশ্যে যে বিবাহ হয়, তাহা শরীয়াত মুতাবিক বিবাহ নয়। আর এইরূপ বিবাহের পর যে যৌন সঙ্গম হয় তাহা নির্লজ্জ ও প্রকাশ্য ব্যভিচার ছাড়া আর কিছুই নয়। এমন কি, যদি মৌলিকভাবে এজন্য কোন শর্তও করা নাও হয় যে,একরাত্রির সঙ্গমের পর সে তাহাকে তালাক দিবে, তবুও ইহা শরীয়াত মুতাবিক বিবাহ হইতে পারে না।[তাহলীল বিবাহ সম্পর্কে রাসূলে করীম-কে জিজ্ঞাসা করা হইলে তিনি জওয়াবে বলিলেনঃ

****************************************

না, জায়েয নয়। কেবল সেই বিবাহই জায়েয যাহা বিবাহের উদ্দেশ্যে ও আগ্রহে করা হইবে, যাহাতে কোন ধোঁকা প্রতারণার অবকাশ থাকিবে না এবং আল্লাহর কিতাবের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রূপও হইবে না, উহার অপমান হইবে না- যতক্ষণ তুমি তোমার স্বামীর নিকট যৌন মিলনের স্বাদ-আস্বাদন না করিবে।]

[‘ফাসেদ বিবাহ’ বলা হয় সেই বিবাহকে যাহা আনুষ্ঠানিক ভাবে হইলেও প্রকৃত পক্ষে শরীয়ত অনুযায়ী সংঘটিত হয় না।]

ইমাম তিরমিযী লিখিয়াছেন, নবী করীম (স)- এর সাহাবীগণের মধ্যে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব, উসমান ইবনে আফফান, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) প্রমুখ, তাবেয়ী ফিকাহবিদ সুফিয়ান সওরী, ইবনুল মুবারক, শাফেয়ী, আহমাদ ইবনে হাম্বল ও ইসহাক প্রমুখ বিশেষজ্ঞগণ সম্পূর্ণ একমত হইয়া এইরূপ বিবাহকে হারাম বলিয়াছেন।

ইমাম আবূ হানীফার মত হইল, কেহ যখন কোন মেয়েলোককে এই উদ্দেশ্যে বিবাহ করে যে, সে মেয়েলোকটিকে তাহার তালাকক দাতার জন্য হালাল করিয়া দিবে এবং শর্ত করে যে, সে যখন তাহার সহিত যৌন সঙ্গম করিবে, তখনই সে তালাক হইয়া যাইবে- কিংবা অতঃপর এই বিবাহের কোন অস্তিত্ব থাকিবে না, তাহা হইলে এই বিবাহটা সহীহ হইবে; কিন্তু যে শর্ত করিয়াছে, তাহার বাধ্যবাধকতা থাকিবে না। ইমাম মালিকের মতে তালাকদাতার (প্রথম স্বামীর) জন্য এই মেয়েটি হালাল হইবে কেবল সহীহ ও আগ্রহ প্রসূত বিবাহ অন্য কাহারও সহিত অনুষ্ঠিত হইলে ও সে তাহার সহিত যৌন সঙ্গম করিলে। এই যৌন সঙ্গম হইবে তখন যখন মেয়েটি পাক থাকিবে ও হায়েয অবস্থায় থাকিবে না এবং এই বিবাহে তাহলীল- অন্য কাহারও জন্য হালাল করিয়া দেওয়ার উদ্দেশ্যে সে বিবাহ করিতেছে এই রূপ কোন ইচ্ছা বা ধারণা থাকিতে পারিবে না। তাহার পর যদি সেও তালাক দেয় কিংবা সে মরিয়া যায়, তাহা হইলে। যদি তাহলীলের শর্ত করা হয়, কিংবা উহা নিয়্যাত থাকে, তাহা হইলে এই বিবাহ সহীহ হইবে না ও দ্বিতীয় জনের জন্যও সে হালাল হইবেনা, প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হওয়া তো দূরের কথা।

এই বিষয়ে ইমাম শাফেয়ী হইতে দুইটি কথার উল্লেখ হইয়াছে। তন্মধ্যে নির্ভূলতম কথা হইল, এই বিবাহ সহীহ নয়। ইমাম আবূ ইউসূফ বলিয়াছেনঃ ইহা ফাসেক বিবাহ। কেননা ইহা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হইয়াছে। ইমাম মুহাম্মদ (****************) বলিয়াছেনঃ দ্বিতীয় স্বামীর সহিত বিবাহ শুদ্ধ, প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হইবে না।

হযরত উমর (রা) বলিয়াছেনঃ

****************************************

হালাল বিবাহকারী ও যাহার জন্য হালাল করা হয় এই দুই জন এমন যে, আমার নিকট তাহাদিগকে উপস্থিত করা হইলে আমি তাহাদের ‘রজম’- পাথর নিক্ষেপে হত্যা দন্ডে দন্ডিত করিব।

হযরত ইবনে উমর (রা) বলিয়াছেনঃ

****************************************

ইহারা উভয়ই ব্যভিচারী।

এক ব্যক্তি হযরত ইবনে উমর (রা) কে জিজ্ঞাসা করিলঃ

আমি একটি মেয়ে লোককে বিবাহ করিলাম তাহাকে তাহার স্বামীর জন্য হালাল করার উদ্দেশ্যে, কিন্তু সে আমাকে কোন আদেশ করিল না, জানাইলও না। এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?

জওয়াবে তিনি বলিলেনঃ

****************************************

না ইহা বিবাহ হইবে না। বিবাহ হইবে যদি বিবাহের আন্তরিক আগ্রহ লইয়া বিবাহ করা হয়। অতঃপর তোমার পছন্দ হইলে তাহাকে স্ত্রী হিসাবে রাখিবে আর তাহাকে অপছন্দ করিলে বিচ্ছিন্ন করিয়া দিবে।

উক্তরূপ বিবাহকে রাসূলে করীম (স)-এর যুগে আমরা ব্যভিচার গণ্য করিতাম।

তিনি আরও বলিয়াছেনঃ

এইরূপ বিবাহের পর পুরুষ-নারী উভয়ই ব্যভিচারীরূপে গণ্য হইবে বিশ বৎসর পর্যন্ত তাহা স্থায়ী হইলেও- যখন সে জানিবে যে, সে স্ত্রী লোকটিকে কাহারও জন্য হালাল করার উদ্দেশ্যেই বিবাহ করিয়াছিল।

বিবাহের এক প্রস্তাবের উপর অন্য প্রস্তাব দেওয়া
****************************************

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি রাসূলে করীম (ষ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, নবী করীম (স) বলিয়াছেন, তোমাদের মধ্যে কেহ যেন একজনের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর অন্যজন ক্রয়-বিক্রয় না করে এবং একজনের বিবাহ-প্রস্তাবের উপর অন্যজন বিবাহের প্রস্তাব না দেয়।

(মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ বিবাহের প্রস্তাবদান প্রসঙ্গে এই হাদীস। মুল শব্দ **** অর্থ *************** সমাজের লোকদের মধ্যে প্রচলিত ও – সকলের পরিচিত নিয়মে বিবাহের প্রস্তাব দান। এই প্রস্তাবদান বিবাহের পূর্বশর্ত। বিবাহকার্য সুষ্ঠুরূপে সম্পাদনের উদ্দেশ্যে বর ও কনে- উভয় পক্ষের লোকদের সহিত এই উদ্দেশ্যে পরিচিতি লাভের জন্য ইসলামী শরীয়াতে এই ব্যাবস্থা রাখা হইয়াছে। হাদীসটির মূল প্রতিপাদ্য ও বক্তব্য সুস্পষ্ট। নবী করীম (স) বিশ্ব মানবের জন্য যে সামাজিক নিয়ম বিধান ও আচার-রীতি প্রবর্তন করিয়াছেন, আলোচ্য হাদীসটি তাহারই একটি অংশ। এই হাদীসটিতে পারস্পরিক ক্রয়-বিক্রয় ও বিবাহের প্রস্তাব সংক্রান্ত দুইটি মৌীলক নিয়ম উদ্ধৃত হইয়াছে। ক্রয়-বিক্রয় সামাজিক-সামষ্টিক ক্রিয়া-কলাপের মধ্যে খুব বেশী ঘটিতব্য ব্যাপার। একজন বিক্রয় করে, অন্যজন ক্রয় করে। এই ক্রয়-বিক্রয়ের উপর মানুষের জৈবিক জীবন সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। ক্রয়-বিক্রয়হীন কোন সমাজ-সংস্থার ধারণা পর্যন্ত করা যায় না। ক্রয়-বিক্রয় হইবে না এমন কোন সমাজ ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত পেশ করা কাহারও পক্ষে সম্ভবপর হয় নাই। সেই ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায়, একজন লোক কোন একটি বিশেষ জিনিস ক্রয় করার জন্য কথা-বার্তা বলিতে শুরু করিয়াছে ও দাম দস্তুর-লইয়া আলাপ করিতেছে, ঠিক এই সময় অপর একজনও ঠিক সেই জিনিসটি ক্রয় করার উদ্দেশ্যে আগাইয়অ আসিয়া দুই জনের কথার মধ্যে কথা বলিতে ও নিজের পছন্দসই দাম বলিতে শুরু করিয়অ দেয়। কথাবার্তার মাঝখঅনে এই দ্বিতীয় ক্রেতার অনুপ্রবেশের ফলে প্রথম ক্রেতা-বিক্রেতার বিরক্তির উদ্রেক হওয়া এবং অনেক ক্ষেত্রে তাহাদের কথাবার্তা ভাঙিয়া যাওয়ার উপক্রম হয়। ইহার ফলে দুই ক্রেতার পরস্পরের মধ্যে হিংসা ও বিদ্বেষের আগুন জ্বলিয়া উঠা ও পরম শক্রতার উদ্ভব হওয়া কিছুমাত্র অসম্ভব বা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু ইহা সুস্থ-শালীনতা পূর্ণ সমাজ পরিবেশের পক্ষে খুবই মারাত্মক। এই কারণে নবী করীম (স) ইহা করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

এই ব্যাপারে সঠিক নিয়ম হইল একজনের ক্রয়-বিক্রয়ের কথাবার্তা শেষ হইয়া ও চূড়ান্তভাবে ভাঙিয়া গেলে অপর জন কথাবার্তা বলিতে শুরু করিবে, তাহার পূর্বে নয়।

বিবাহের প্রস্তাব দেওয়ার ব্যাপারটিও অনুরূপ। এরূপ প্রায়ই হইয়া থাকে যে, একটি ছেলের পক্ষ হইতে মেয়ের বিবাহের কিংবা ইহার বিপরীত একটি মেয়ের পক্ষ হইতে একটি ছেলের বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া হইয়াছে। এই প্রস্তাব কোন চূড়ান্ত পরিণতি পর্যন্ত পৌঁছার পূর্বেই অপর একটি ছেলে বা মেয়ের প্রস্তাব তাহাদের- ছেলে বা মেয়ের- জন্য দেওয়া হইল। ইহাতেও পূর্ববর্ণিত রূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হইতে পারে এবং তাহাতে সমাজ সংস্থার ঐক্য সংহতিতে ফাঁটল ধরিতে পারে। কিন্তু তাহা কোনক্রমেই বাঞ্ছনীয় হইতে পারে না।

এই পর্যায়ে হযরত ইবনে উমর (রা) হইতে বর্ণিত অপর একটি হাদীসের ভাষা এইঃ

****************************************

এক ব্যক্তি তাহার ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় করিবে না এবং তাহার ভাইর দেওয়া বিবাহ-প্রস্তাবের উপর দ্বিতীয় প্রস্তাব দিবে না। তবে সে ভাই যদি অনুমতি দেয়, তবে ভিন্ন কথা।

হযরত উকবা ইবনে আমের হইতে তৃতীয় একটি বর্ণনায় বলা হইয়াছেঃ

****************************************

মু’মিন মু’মিনের ভাই। অতএব এক ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর অন্য মু’মিনের ক্রয়-বিক্রয় করিতে চাওয়া হালাল নয়। আর তাহারই এক ভাইয়েল দেওয়া বিবাহ-প্রস্তাবের উপর আর এক প্রস্তাব দিবে না। যতক্ষণ না সে তাহার প্রস্তাব প্রত্যাহার করে।

বুখারী ও নাসায়ী গ্রন্হে উদ্ধৃত হাদীসে এই কথার স্পষ্ট সমর্থন রহিয়াছে। হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) হইতে বর্ণিত, রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ

****************************************

এক ব্যক্তি কোন মেয়ের জন্য বিবাহের প্রস্তাব দিলে সে বিবাহ সম্পন্ন হইয়া যাইবে, অথবা প্রস্তাবদাতা কর্তৃক উহা প্রত্যাহৃত হইবে- এই চূড়ান্ত পরিণতি না দেখিয়া অপরকে আর একটি প্রস্তাব দিয়া বসিবে না।

আহমাদ, বুখারী ও নাসায়ী বর্ণিত অপর এক হাদীসের ভাষা এইঃ

****************************************

প্রথম প্রস্তাবদাতা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান কিংবা নূতন প্রস্তাব দেওয়ার অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি প্রস্তাব দিবে না।

এই সব হাদীস হইতে একথা স্পষ্ট হইয়া উঠে যে, একজনের দেওয়া প্রস্তাব চূড়ান্ত পরিণতি পর্যন্ত পৌঁছার পূর্বেই আর একটা বিবাহ প্রস্তাব দেওয়া হারাম। এই কাজটির হারাম হওয়ার ব্যাপারে শরীয়তবিদদের পূর্ণ ঐকমত্য ও ইজমা রহিয়াছে। বিশেষত প্রথশ প্রস্তাবকারীকে ইতিবাচক জওয়াব দেওয়া হইলে ও দ্বিতীয় প্রস্তাবের পক্ষে কোন অনুমতি পাওয়া না গেলে ইহার হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোনই প্রশ্ন উঠিতে পারে না। তবে যদি কেহ জোর পূর্বক প্রস্তাব দেয় এবং বিবাহ সম্পন্ন করিয়া ফেলে, তাহা হইলে বিবাহটা তো শুদ্ধ হইবে, উহা ভঙ্গ হইয়া যাইবে না; কিন্তু ইহার দরুণ তাহাকেও গুনাহগার হইতে হইবে। জমহুর ও শাফেয়ী ফিকাহবিদদের মত ইহাই। দায়ূদ যাহেরী বলিয়াছেনঃ এই রূপ বিবাহ ভঙ্গ হইয়া যাইবে। ইমাম মালিকের দুইট মত উদ্ধৃত হইয়াছে। তন্মধ্যে একটি মত শাফেয়ী মতের পক্ষে, আর অপর মতটি দায়ূদ যাহেরীর পক্ষে। মালিকী মাযহাবের অন্যান্য ফিকাহবিদরা মত প্রকাশ করিয়াছেন যে, এই রূপ বিবাহ সংঘটিত হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রীর মিলন ঘটিয়া গেলে সে বিবাহ ভাঙ্গিবে না। তবে উহার পূর্বে আপত্তি উঠিলে এই বিবাহ ভাঙ্গিয়অ দেওয়া হইবে। মালিকী মাযহাবের অন্যান্য কিছু সংখ্যক ফিকাহবিদদের মত হইল, বিবাহ যদি উভয় পক্ষের মতের ভিত্তিতে হয়, উভয় পক্ষই বিবাহে সন্তুষ্ট হয় এবং উহাতে মহরানা সুনির্দিষ্ট হয়, তবে এই বিবাহ হারাম হইবে না। হযরত ফাতিমা বিনতে কায়স (রা) বলিয়াছেন, আবূ জহম ও মুয়াবিয়া উভয়ই আমাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু নবী করীম (স) একজনের প্রস্তাবের উপর আর একজনের এইরূপ প্রস্তাব দেওয়ার প্রতিবাদ করেন নাই। বরং তিনি হযরত উসামার জন্যও প্রস্তাব পাঠাইলেন। ইহা হইতে প্রমাণিত হয় যে, বিবাহের এক প্রস্তাবের উপর আর একটি প্রস্তাব দেওয়া বুঝি নিষিদ্ধ বা হারাম নয়। কিন্তু এইরূপ ধারণা ঠিক নহে। কেননা হযরত ফাতিমার উপরোক্ত বর্ণনার ভিন্নতর ব্যাখ্যা রহিয়াছে এবং তাহা এই যে, জহম ও মুয়াবিয়া দুইজনের কেহই হয়ত অন্যজনের প্রস্তাবের কথা জানিতেন না। আর নবী করীম (স) প্রস্তাব দিয়াছিলেন বলিয়া যাহা বলা হইয়াছে তাহা ঠিক নয়, এই জন্য যে, তিনি রীতিমত কোন প্রস্তাব দেন নাই, তিনি শুধু ইঙ্গিত করিয়াছিলেন মাত্র। কাজেই সাহাবীদ্বয় বা স্বয়ং নবী করীম (স) কোন নিষিদ্ধ কাজ করিয়াছেন, এমন কথা কিছুতেই বলা যায় না। তবে প্রথম প্রস্তাবদাতা যদি অপর পক্ষের অনীহা ও অনাগ্রহ হওয়ার দরুন প্রস্তাব প্রত্যাহার বা প্রত্যাখ্যান করে; কিংবা একটি প্রস্তাব থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় প্রস্তাব দেওয়ার অনুমতি কোন পক্ষ দেয়, তবে সেখানে দ্বিতীয় প্রস্তাব দেওয়া হারাম হইবে না। এই ব্যাপারে ফিকাহবিদগণ সম্পূর্ণ একমত। পূর্বোদ্ধৃত হাদীসসমূহ হইতে এই কথাই সুস্পষ্টরূপে জানা যায়।

উপরে উদ্ধৃত দ্বিতীয় ও তৃতীয় হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম খাত্তাবী লিখিয়াছেন, এই হাদীস দুইটির ভাষা হইতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, বিবাহের এক প্রস্তাবের উপর আর একটি (বিবাহের) প্রস্তাব দেওয়া হারাম হইবে কেবল তখন যদি প্রথম প্রস্তাবদাতা প্রকৃত ও নেককার মুলমান হয়। কিন্তু সে যদি ফাসেক-ফাজের ধরনের লোক হয়, তাহা হইলে ইহা হারাম হইবে না। ইবনুল কাসেম বলিয়াছেন ****************** প্রথম প্রস্তাব দাতা ফাসেক ব্যক্তি হইলে তাহার উপর দ্বিতীয় প্রস্তাব দেওয়া সম্পূর্ণ জায়েয।

ইমাম আওজায়ীও এই মত প্রকাশ করিয়াছেন। তাঁহার মনে এই নিষেধ ******* সামাজিক ও নৈতিক নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষার জনগণকে শাসনে রাখার উদ্দেশ্যে। চূড়ান্ত ভাবে হারাম ঘোষণা ইহার লক্ষ্য নহে।

কিন্তু জমহুর মুহাদ্দিস ও ফিকাহবিদগণের মতে এইরূপ নির্ধারণও কাহারও জন্য জায়েয কাহারও জন্য জায়েয নয় বলার কোন যৌক্তিকতা থাকিতে পারে না। হাদীসে যে ‘ভাই’ বলা হইয়াছে, ইহা সাধারণ প্রচলন অনুযায়ীই বলা হইয়াছে। ইহার বিশেষ কোন অর্থ নাই। ইমাম নববী লিখিয়াছেন, এই পর্যায়ে যতগুলি হাদীস বর্ণিত হইয়াছে, তাহার ভিত্তিতে নেককার মুসলমান ও ফাসেক-ফাজের মুসলমানের মধ্যে এই ব্যাপারে কোন পার্থক্য করা চলে না।

আবু দাউদ বলিয়াছেনঃ

****************************************

দ্বিতীয় প্রস্তাবদাতা যদি বিবাহ করিয়া বসে, তাহা হইলে তাহার এই আকদ ভাঙিয়া দিতে হইবে- বিবাহের পর স্ত্রী সঙ্গম হওয়ার পূর্বে হইলেও এবং পরে হইলেও।

বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া পর্যায়ে দুইটি শর্তের উল্লেখ করা হইয়াছেঃ

একটিঃ উপস্থিতভাবে বিবাহ সংঘটিত হওয়ার পথে শরীয়াতের দৃষ্টিতে কোন বাধা না থাকা।

দ্বিতীয়ঃ শরীয়াত মুতাবিক বিবাহের প্রস্তাব এখনও অপর কেহ দেয় নাই।

এই দুইটি দৃষ্টিতে যদি কোন প্রতিবন্ধকতা থাকে, তাহা হইলে তখন বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া সঙ্গত কারণেই হারাম হইবে। ইদ্দত পালনরত মহিলাকে বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া হারাম, সে ইদ্দত তালাক দেওয়ার কারণে হউক; কিংবা স্বামীর মৃত্যুর কারণে। আর তালাক রিজয়ী হউক, কি বায়েন। কেননা এই অবস্থাসমূহের মধ্যে কোন একটি অবস্থায়ও স্ত্রী লোকটি বিবাহের উপযুক্ত বিবেচিত হইবে পারে না।

(******************************************)


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি