১৬. মাক্কী ও মাদানী সূরার সংখ্যা ভিত্তিক হিসাব
কুরআন মজীদের ১১৪টি সূরার ক্রমিক সংখ্যার ভিত্তিতে মাক্কী যুগের ৮৯টি ও মাদানী যুগের ২৫টি সূরার হিসাব নিম্নে দেয়া হলোঃ

মাক্কী যুগের সূরা সংখ্যা মাদানী যুগের সূরা সংখ্যা
১নং ১ ২-৫নং ৪
৬ ও ৭নং ২ ৮ ও ৯ নং ২
১০ ২১নং ১২ ২২ ও ২৪নং ২
২৩নং ১ ৩৩নং ১
২৫-৩২নং ৮ ৪৭-৪৯নং ৩
৩৪-৪৬নং ১৩ ৫৭-৬৬নং ১০
৫০-৫৪নং ৫ ৯৮নং ১
৫৫ ও ৫৬নং ২ ১০নং ১
৬৭-৯৭নং ৩১ ১১০নং ১
৯৯-১০৬নং ৮
১০৮ও১০৯নং ২
১১১-১১৪নং ৪
মোট ৮৯ মোট ২৫
১৭. কুরআনের আলোচ্য বিষয়
ক) কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়ঃ
মানুষের কল্যাণ ও অকল্যাণের সঠিক পথনির্দেশঃ

এ কেন্দ্রীয় বিষয়কে নিতিবাচক ও ইতিবাচক বিষয়ে ভাগ করা যায়। গোটা কুরআনে একদিকে মানুষকে ভুল পথ সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে; অপরদিকে সঠিক পথের সন্ধান দেয়া হয়েছেঃ

খ) নেতিবাচক বিষয়ঃ
১. বালষ্ঠ যুক্তি দিয়ে বুঝানো হয়েছে যে নির্ভুল জ্ঞানের অভাবেই মানুষ জীবনের সঠিক উদ্দেশ্য বুঝতে পারে না।

২. স্থুল দৃষ্টি, অমূলক ধারণা ও প্রচলিত কুসংস্কারের দরুন মানুষ বিশ্বের স্রষ্টা ও বিশ্বজগত সম্পর্কে এমনসব মতবাদ রচনা করেছে যা মানব জীবনে অশান্তিই বৃদ্ধি করে চলেছে।

৩. বিবেকের দাবী ও নৈতিকতার বন্ধন অগ্রাহ্য করে প্রবৃত্তির দাসত্ব ও ভোগবাদী মনোবৃত্তির দরুন মানুষ নিজের সত্তার সঠিক পরিচয় সম্পর্কে ও সচেতন নয়।

৪. উপরোক্ত কারণে জগত ও জীবন সম্পর্কে বহু অযৌক্তিক ধারনার ভিত্তিতে মানুষ ভ্রান্ত আচরণ ও মন্দ কর্মে লিপ্ত রয়েছে।

৫. মানবজাতির অতীত ইতিহাস থেকে উদাহরন দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছে যে, আল্লাহর বিধানকে অগ্রাহ্য করে মনগড়া মত ও পথে চলার ফলেই মানুষ যুগে যুগে ধ্বংস হয়েছে।

গ) ইতিবাচক দিক দিয়ে আলোচনার ধারা নিম্নরূপঃ
১. নির্ভুল জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর নিকটই আছে। মানুষ ও বিশ্বজগত যিনি সৃষ্টি করেছেন তাঁর কাছ থেকেই বিশুদ্ধ জ্ঞান পাওয়া সম্ভব।

২. অতীত ও ভবিষ্যতের জ্ঞান যে আল্লাহর নিকট চির বর্তমান তিনিই মানুষকে সঠিক পথ দেখাতে সক্ষম।

৩. মানুষকে দুনিয়ায় সঠিকভাবে জীবন-যাপন করে আখিরাতে চির শান্তি লাভ করার একমাত্র উপায়ই হলো আল্লাহর রাসূলগণকে পূর্ণরূপে অনুসরণ করা।

৪. মানুষের চিন্তা ও কর্মের জন্য একমাত্র নির্ভরযোগ্য পথনির্দেশকই হলো দ্বীন ইসলাম।

৫. দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তি পেতে হলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যই একমাত্র উপায়।

ঘ) উপরোক্ত কেন্দ্রীয় বক্তব্যকে সুস্পষ্ট করার উদ্দেশ্যে যেসব বিষয় কুরআনে আলোচনা করা হয়েছে, তার মধ্যে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিশেষ উল্লেখযোগ্যঃ
১. পৃথিবী ও আকাশ রাজ্যের গঠন প্রকৃতি, প্রাকৃতির অগণিত নিদর্শন এবং চন্দ্র -সূর্য, গ্রহ-তারা এবং বায়ু ও বৃষ্টি ইত্যাদির প্রতি বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। ভূগোল ও বিজ্ঞান শেখাবার উদ্দেশ্যে এসব আলোচনা করা হয়নি। এসবের পেছনে যে মহাকুশলী স্রষ্টা রয়েছেন এবং তিনি যে এসব বিনা উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেননি সে কথা বুঝাবার জন্যই অতি আকর্ষণীয় ভাষা ও ভঙ্গিতে সমস্ত কুরআনে এ বিষয়ে বারবার আলোচনা করা হয়েছে।

২. মানুষের প্রয়োজনে আল্লাহ পাক যত কিছু পয়দা করেছেন —বিশেষ করে খাদ্য ও পানীয়, গৃহপালিত পশু, ফল ও ফসলাদী সম্পর্কে বারবার উল্লেখ করে চিন্তা করতে বাধ্য করা হয়েছে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কারো পক্ষে এসবের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয় এবং এসব ছাড়া মানুষ দুনিয়ায় একদিন ও বেঁচে থাকতে পারতো না। তাই একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব করাই মানুষের কর্তব্য।
উপরোক্ত দু প্রকার বিষয়কে এক সাথে ‘আফাক’ বা প্রকৃতি জগত বলা হয়। গোটা সৃষ্টি জগতই এর অর্ন্তভুক্ত। ‘উফুক’ এর বহুবচন আফাক। উফুক অর্থ দিগন্ত (Horizon)

৩. “আফাক”-এর আলোচনার পাশাপাশি ‘আনফুস’-এর আলোচনা করা হয়েছে ‘আনফুস’ অর্থ মানব জীবন বা মানবসত্তা। আল্লাহ পাক কুরআনে বহু জায়গায় মানুষকে কিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে এর বিবরণ দিয়েছেন। মানুষের দেহ ও বিভিন্ন অংগপ্রত্যঙ্গ নিয়ে যথেষ্ট কথা বলা হয়েছে। মানুষকে আত্মসচেতন করার উদ্দেশ্যেই এবং তার স্রষ্টাকে চিনে তার প্রতি কৃতজ্ঞ বানাবার উদ্দেশ্যেই এ বিষয়ের দিকে মানুষের দৃষ্টি আর্কষণ করা হয়েছে।

৪. মানব জাতির ইতিহাস থেকে বহু জাতির উথান ও পতন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ আলোচনা এমনভাবে করা হয়নি যেমন ইতিহাসের বইতে করা হয়। অতীত জাতিগুলোর থেকে উপদেশ গ্রহণ করার উদ্দেশ্যেই এ আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিশেষ করে অতীতে যেসব নবী ও রাসূল পাঠানো হয়েছে তাদের কাওমের উল্লেখ করে প্রমাণ করা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূলগণের সাথে যারা যে আচরণ করেছে তাদের সাথে আল্লাহ সে রকম ব্যবহারই করেছেন। যেসব জাতি রাসূলগণকে অস্বীকার করেছে তাদের উপর আল্লাহ অবশ্যই গযব নাযিল করেছেন। মানব জাতির উন্নতি ও অবনতি যে রাসূলের আনুগত্যের উপর নির্ভর করে সে কথা প্রমাণ করাই ইতিহাস আলোচনার উদ্দেশ্য।

৫. কুরআনের বহু জায়গায় কতকগুলো বিষয়ে তুলনামূলক আলোচনা করে দু’রকম বিপরীত জিনিসের পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে আলোচনা করে দু’রকম বিপরীতে জিনিসের পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যেখানেই বেহেশতের বিবরণ দেয়া হয়েছে সেখানেই দোযখের চিত্রও আঁকা হয়েছে। সৎলোকের গুনাবলী বর্ণনা করার সাথে সাথেই অসৎলোকের বিবরণও দেয়া হয়েছে। মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি আল্লাহর নাফরমানদের চরিত্রও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সফলতা লাভের উপায় বলার সাথে বিফলতার কারণও উল্লেখ করা হয়েছে। বেহেশতের সুখের আকর্ষণীয় বিবরণের পাশে দোযখের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। হাশরে নেক লোকদের অবস্থার পাশে বদলোকদের দশাও বর্ণনা করা হয়েছে। এভাবে কুরআনে বিপরীতমুখী, (Contrast) চিত্রের মাধ্যমে মানুষকে কল্যাণের পথে আহবান জানানো হয়েছে।

 

ঙ) কুরআনের সবচেয়ে বেশী আলোচিত বিষয়ঃ
১. আল্লাহর পরিচয় কয়েক আয়াতের পর পরই আল্লাহর কোন না কোন গুণের উল্লেখ পাওয়া যায়। কোথাও কোথাও এক সাথেই আল্লাহর অনেক গুণের উল্লেখ করা হয়েছে।

২. রাসূল ও নবীদের পরিচয়, মর্যাদা, দায়িত্ব ও কর্তব্য।

৩. আখিরাতের যুক্তি, সম্ভাবনা ও বিবরণ।

৪. আল্লাহর কিতাবের গুরুত্ব।

চ) মাদানী সূরাগুলোর বিশেষ আলোচ্য বিষয়ঃ
উপরে বর্ণিত আলোচ্য বিষয়সমূহ সমস্ত কুরআনেই ছড়িয়ে আছে।মাক্কী ও মাদানী উভয় যুগের সূরার মধ্যেই ঐসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। যা মাক্কী যুগের সূরাতে পাওয়া যায়, সেগুলো নিম্নরূপঃ
১. মদীনায় হিজরাত করার পরই সমাজ গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ এলো। তাই পারিবারিক আইন থেকে শুরু করে সরকারী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় সব আইন-কানুন মাদানী সুরাগুলোতেই পাওয়া যায়। এসব বিষয়ে মাক্কী যুগের শেষ দিকে সূরা বনী ইসরাইলে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে এমন সংক্ষেপে ইঙ্গিত করা হয়েছে যা মূলনীতি হিসাবে গণ্য। কিন্তু বিস্তারিত আইন মাদানী যুগেই নাযিল হয়েছে।
২. মাক্কী যুগে মুসলমানদের উপর অত্যাচর ও নির্যাতন চললেও কাফির ও মুনফিকদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের কোন উপায় ছিল না। হিজরাতের পর মুসলমানদের হাতে ক্ষুদ্র আকারে হলেও রাষ্ট্রক্ষমতা আসার পরই বিরোধী শক্তির সাথে যুদ্ধ করার সুযোগ হলো।তাই যুদ্ধ, সন্ধি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, যুদ্ধবন্দীদের সাথে আচরণ, যুদ্ধের ফলে অর্জিত সম্পদ ও এলাকার ব্যবহার, যুদ্ধে শহীদদের পরিবারের প্রতি কর্তব্য ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আইন মাদানী সূরায়ই পাওয়া যায়।

৩. মাদানী সূরায় যেসব বিষয়ে বিস্তারিত বিধি বিধান দেয়া হয়েছে তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলোঃ বিয়ে ও তালাক, সম্পত্তির উত্তরাধিকার, খাদ্যের হালাল ও হারাম এবং ফোজদারী আইন (সমাজবিরোধী কোন কাজের কী শাস্তি হওয়া উচিত), সামাজিক নিরাপত্তার জন্য যাকাত ব্যবস্থার প্রবর্তন, ধার –কর্য ও লেন -দেনের বিধান ইত্যাদি।

৪. যেসব বিষয়ে মূলনীতি বেঁধে দেয়া হয়েছে এবং এর ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইন রচনার দায়িত্ব ইসলামী রাষ্ট্রের পরিচালকদের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছেঃ
সরকার গঠন ও পরিচালনার মূলনীতি, অর্থনৈতিক পলিসী, উৎপাদন ও বন্টনের নীতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের বিধি ইত্যাদি বিষয়ে ‘গাইড-লাইন’ দিয়ে দেয়া হয়েছে। ঐসব মূলনীতির ভিত্তিতেই রাসূল (সাঃ) বিস্তারিত বিধান চালু করেন।

আল্লাহর কুরআন ও রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাহ এসব বিষয়ে যে বিধান দিয়েছে তারই ভিত্তিতে খোলাফায়ে রাশেদীন আরও বিস্তারিত আইন জারী করেন।

এ বিষয়গুলো এমন যে, যুগে যুগে নতুন নতুন বিধি-বিধানের দরকার বোধ না হয়ে পারে না। কুরআনের মূলনীতি, সুন্নাহর প্রয়োগ বিধি ও খোলাফায়ে রাশেদার পদাংক অনুসরণকরে দেশে দেশে যুগে যুগে প্রয়োজনীয় বিধান রচনা করতে হবে।

৫. বিশেষ বিবেচনার বিষয়ঃ এখানে একটি কথা গভীরভাবে চিন্তা ও বিবেচনা করা প্রয়োজন। যেসব বিষয়ে মাদানী যুগের সূরাগুলোতে মূলনীতি ও বিস্তারিত আইন নাযিল করা হয়েছে সেসব মাক্কী সূরায় কেন নাযিল করা হয়নি? এ প্রশ্নটি কুরআন বুঝার সাথে জড়িত।

যদি মাক্কী যুগে এসব আইন নাযিল করা হতো তাহলে মুসলমানেরা এসব আয়াত শুধু তেলাওয়াতই করতে পারতেন। মক্কায় এসব আইন জারী করার সুযোগ ছিল না। আইন জারী করার ক্ষমতা মুসলমানদের হাতে তুলে দেবার পরই আল্লাহ পাক তাদের নিকট আইন পাঠালেন, যাতে এসব আইন শুধু তেলাওয়াত করেই ক্ষান্ত হতে না হয়। এ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর আইন শুধু তেলাওয়াতের জন্য নাযিল করা হয়নি।তাই সমাজ ও রাষ্ট্রের এসব আইন চালু করার দায়িত্ববোধ নিয়ে কুরআনকে বুঝতে হবে। তা না হলে কুরআন বুঝবার হক আদায় হতে পারে না।

১৮. কুরআনের আলোচনা কৌশল
মাদানী যুগের সূরাগুলোর আলোচ্য বিষয় এমন যে তা বুঝতে এতটা অসুবিধা মনে হয় না। কিন্তু মাক্কী যুগের সূরার আসল বক্তব্য বুঝতে সে তুলনার বেশ কঠিন বোধ হয়। অবশ্য কুরআনের আলোচনার টেকনিক ধরতে পারলে সহজেই বুঝতে পারা যায়।

ক) প্রথমেই মনে রাখতে হবে মাক্কী যুগের সূরাগুলোর মূল আরোচ্য বিষয় হলো তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাত। কোন সূরায় এ তিনটির একটি, কোনটায় যে কোন দুটো এবং কোনটায় তিনটিই আলোচনা করা হয়েছে। আবার দেখা যাবে যে কোন সূরায় একটা বিষয় প্রত্যক্ষ এবং অন্য একটা বা দুটো পরাক্ষভাবে এসেছে।

গ) তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতের শিক্ষাকে বাস্তবে উপলব্ধি করার জন্য নবী ও রাসূলগণের বহু ঘটনা, বিভিন্ন জাতির উদাহরণ ও রূপক কাহিনী আলোচনা করা হয়েছে। এসবের মূল শিক্ষা যে তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাত, সে কথার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ না রাখলে ঐসব ঘটনা ও কাহিনীই আসল বিষয় বলে গণ্য হবার আশংকা রয়েছে।

‘ইসরাঈলিয়াত ’নামে পরিচিত বিস্তারিত কাহিনী ইয়াহুদীদের ইতিহাস থেকে আমদানী হয়ে কুরআনে উল্লেখিত ঘটনাবলী ও কাহিনীসমূহকে রূপকথার এমন গল্পে পরিণত করেছে যে, তাফসীর পড়তে গিয়ে পাঠক ঐ গল্পের মধ্যেই আটক হয়ে পড়ে। তখন তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতের যুক্তি হিসাবেই যে ঐ ঘটনাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে সে উদ্দেশ্য ও শিক্ষাই হারিয়ে যায়।

ঘ)মূল আলোচ্য বিষয় নির্ধারণঃ সুতরাং প্রত্যেক সূরা অধ্যয়নকালে পয়লা তালাশ করতে হবে, সূরাটির মূল আলোচ্য বিষয়টি কী?যেমন সূরা মুলক (৬৭নং সুরা)।এর মূল আলোচ্য বিষয় তাওহীদ। সূরা মুদ্দাসসির (৭৪) ও আবাসা (৮০)এর মূল আলোচ্য বিষয় হলো রিসালাত।সূরা কাফ(৫০), সূরা যারিয়াত (৫১), সূরা মায়ারিজ(৭০)ও সূরা মুতাফফিফীন(৮৩)এর প্রধান আলোচ্য বিষয় আখিরাত। সূরা তুর(৫২) ও সূরা হাক্কাহ (৬৯) এর প্রথম রুকূতে আখিরাত ও ২য় রুকূ’তে রিসালাত হলো মূল বিষয়।

এভাবে মূল বিষয় তালাশ করার পর দেখা যাবে যে, প্রত্যেক বিষয়ের পক্ষে বিভিন্ন রকম যুক্তি করা হয়েছে। ঐ যুক্তিগুলোর ধরন বুঝতে হবে। তাহলে যুক্তিগ্রলোর ভিত্তিতে মূল বিষয়কে বুঝা সহজ হবে। তাই তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতের যুক্তির ধরন সম্পর্কে ভালভাবে অবগত হওয়া দরকার।

একঃ তাওহীদের পক্ষে যুক্তি

যে সূরা বা রুকূর মূল আলোচ্য বিষয় তাওহীদ সূরার পক্ষে তিন ধরনের যুক্তির যে কোন এক বা একাধিক যুক্তি পাওয়া যায়।

প্রথমতঃ আফাকী যুক্তিঃ পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্ট যা মনুষের উপকারে লাগে এবং মহাশূন্যের বিরাট বিরাট সৃষ্টি যা মানুষের খেদমতে নিযুক্ত এসবকে তাওহীদের যুক্তি হিসাবে পেশ করে দেখানো হয়েছে যে, গোটা বিশ্ব একজন মহাকৌশলীর একক পরিকল্পনায়ই এমন সুশৃখলভাবে এবং এক নিয়মে চলছে। এ মহাপরিকল্পনায়ই এমন সুশৃংখলভাবে এবং এক নিয়মে বলছে।এ মহাপরিকল্পনায় ও বিশ্বের পরিচালনায় এবং মানবজাতির প্রয়োজনে যাকিছু করা হচ্ছে এর মধ্যে আল্লাহর সাথেও আর কেউ শরীক নেই। সমগ্র সৃষ্টির ব্যবস্থাপনা আল্লাহর একক ইচছা ও ক্ষমতার অধীন। আর কারো ইখতিয়ার সেখানে খাটে না।

দ্বিতীয়তঃ ‘আনফুস ’-এর যুক্তিঃ মানব সৃষ্টির কৌশল—মাটি থেকে পয়লা আদমকে সৃষ্টি করে তা থেকে হাওয়াকে পয়দা করা হয় এবং এর পর তাদের যৌন মিলনের মাধ্যমে আল্লাহরই ইচ্ছায় মানব বংশের বৃদ্ধি হচ্ছে। পুরুষের সামান্য শুক্রকীট নারীর গর্ভস্থ ডিম্বের সাথে মিলে যে অণু পরিমাণ ক্ষুদ্র সৃষ্টির পত্তন হয় তা একমাত্র আল্লাহরই পরিকল্পনায় সুন্দর দেহ ও অগণিত গুণ বিশিষ্ট মানুষে পরিণত হয়।

মানুষের প্রতিটি অংগপ্রত্যঙ্গ প্রমাণ করে যে, মানব দেহের এ সুনিপুণ বিন্যাস ও তার মন মস্তিস্কের এমন বিকাশের কৃতিত্ব একমাত্র আল্লাহর। এতে মানুষের বাহাদুরী করার কিছুই নেই। আল্লাহ যাকে পুরুষ বানাতে চান তাকে মেয়ে বানাবার ক্ষমতা কারো নেই। মায়ের পেটে তিনি যাকে একটা হাত দেননি তাকে এ হাত কেউ দিতে পারে না। যাকে তিনি বোকা বানিয়েছেন তাকে কেউ মেধাশক্তি দিতে পারেনা। এসব যুক্তি দিয়ে বুঝানো হয়েছে যে, এসব কিছুর ক্ষমতা এককভাবে একমাত্র আল্লাহর হাতে রয়েছে। কেউ তাঁর সাথে শরীক নেই।

তৃতীয়তঃ তাওহীদ বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের পরিণাম বর্ণনা করা হয়েছে যাতে মানুষ তাওহীদ বিশ্বাস করার গুরুত্ব অনুভব করতে পারে। এ পরিণাম দু’প্রকারে দেখানো হয়েছে।

ক) ঐতিহাসিক যুক্তি—

তাওহীদ অবিশ্বাসী জাতির উপর অতীতে আল্লাহ কিভাবে আযাব নাযিল করেছেন তার উদাহরণ দেয়া হয়েছে।

খ) আখিরাতের ভয়াবহ পরিণামের যুক্তি—-

তাওহীদ অবিশ্বাসীগণকে আল্লাহ পাক আখিরাতে কেমন শাস্তি দেবেন এবং বিশ্বাসীদেরকে কিভাবে পুরস্কৃত করবেন তার বিবরণ দিয়ে তাওহীদকে কবুল করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং শিরক থেকে সাবধান করা হয়েছে।

দুইঃ রিসালাতের পক্ষে যুক্তি

যে সূরা বা রুকূ’র মূল আলোচ্য বিষয় ‘রিসালাত’ সেখানেও তিন রকম যুক্তির এক বা একধিক যুক্তি পাওয়া যায়ঃ

প্রথমতঃ রাসূল (সাঃ) এর উন্নত নির্মল চরিত্রকে প্রমাণ হিসাবে পেশ করে বলা হয়েছে যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) অবশ্যই আল্লাহর রাসূল। তাঁর অতীত জীবনে, তাঁর মানবিক গুণাবলী এবং তাঁর সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের নৈতিক ও মানসিক উন্নতি একথাই প্রমাণ করে যে তাঁর নবুওয়াতের দাবী খুবই যুক্তিসঙ্গত।

দ্বিতীয়তঃ রাসূল (সাঃ)-এর উপর আল্লাহর যে কিতাব নাযিল হয়েছে সে কুরআনকেও যুক্তি প্রমাণ হিসাবে পেশ করা হয়েছে। কুরআনের ভাষা ও ভাব এমন যে কোন মানুষের পক্ষে তা রচনা করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে কুরআন কাফিরদের চ্যালেঞ্জও দিয়েছে। এর মহান উপদেশ, নির্ভূল বিধান ও যুক্তিপূর্ণ আহ্বান একথাই প্রমাণ করে যে মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল। তা না হলে কুরআন তিনি কী করে পেলেন?

তৃতীয়তঃ রাসূলকে অবিশ্বাস করার ভয়াবহ পরিণাম বর্ণনা করে এ বিষয়ে মানুষকে উপদেশ দেয়া হয়েছে। এর পরিণাম ও দু’প্রকারের দেখানো হয়েছেঃ

ক) ইতিহাসের উদাহরণ— নূহ (আঃ), শোয়াইব (আঃ), লূত (আঃ), হুদ (আঃ), সালেহ (আঃ) ও অন্যান্য নবীদের কাওমের উপর দুনিয়াতেই আযাব নাযিল হয়েছে। এসবের বিবরণ কুরআনে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে।

খ) আখিরাতের পরিণাম এমনভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যা থেকে বুঝা যায় যে, ষেখানে মানুষের কিসমতের ফায়সালা এই ভিত্তিতে হবে যে, কে রাসূলকে বিশ্বাস করেছে আর কে করেনি।

তিনঃ আখিরাতের পক্ষে যুক্তি

যে সূরা বা রুকূ’র মূল আলোচ্য বিষয় আখিরাত সেখানেও তিন ধরনের যুক্তির মধ্যে এক বা একাধিক যুক্তি পেশ করা হয়েছেঃ

প্রথমতঃ ইমকান বা সম্ভাবনা -– আখিরাত হওয়া যে সম্ভব তা প্রমাণ করা হয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ উকূ’ বা আখিরাত অবশ্যই যে হবে বা হবেই সে বিষয়ে বিবরণ।
তৃতীয়তঃ উজূব বা হওয়াই ইচিত — অর্থাৎ যুক্তি, বিবেক ও কান্ডজ্ঞানের দাবী যে আখিরাত হওয়া অপরিহার্য। এ তিন ধরনের যুক্তিগুলোর আরও একটু ব্যাখ্যা দরকার—-

প্রথমতঃ ইমকান বা সম্ভাবনা সম্পর্কে যেসব যুক্তি প্রমান দেয়া হয়েছে তা দু’প্রকার –আফাক ও আনফুস। আফাক মানে সৃষ্টিজগতের বহু উদাহরণ দিয়ে —-বিশেষ করে বৃষ্টির পানি দ্বারা মৃত যমীনকে জীবিত করার উদাহরণ বারবার দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছে যে, আখিরাতে আবার মানুষকে পয়দা করা সম্ভব। আর আনফুস মানে মানুষের দেহের অংগ – প্রত্যঙ্গ ইত্যাদির উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে যে, একবার যিনি এসব সৃষ্টি করেছেন তাঁর পক্ষে আবার সৃষ্টি করা অসম্ভব হবে কেন?

দ্বিতীয়তঃ উকূ’ অর্থাৎ হবেই হবে। কুরআনে এ বিষয়ে এমনভাবে কথা বলা হয়েছে যে আখিরাত হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ করার উপায় নেই। আখিরাতের কয়েকটি পর্যায়ে রয়েছে। প্রথম পর্যায় হলো কিয়ামত। দুনিয়া যে অবস্থায় আছে তা এক সময় ভেঙে চুরমার করে দেয়া হবে। এরই নাম কিয়ামত। পুনরুথ্থানের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের নাম হলো বারযাখ। এরপর হলো বা’স বা পুনরায় সৃষ্টি হওয়া। এরপর হাশর ও বিচার।

কুরআনের বিভিন্ন সুরায় কিয়ামাত ও হাশরের এমন জীবন্ত বিবরণ দেয়া হয়েছে যা প্রমাণ করে যে এসব অবশ্যই হবে। বহু জায়গায় অতীত কালের ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে যাতে বুঝা যায় যে, আখিরাত আল্লাহর হিসাবে ভবিষ্যতের সম্ভাবনার বিষয় নয়, যেন অতীতের ঘটনার মতো সত্য।

তৃতীয়তঃ উজূব মানে হওয়াই যুক্তিসংগত, অবশ্যই কর্তব্য, অপরিহার্য এবং যা না হলে চলে না।

এ প্রসঙ্গে কুরআনে তিন রকমের যুক্তি দেয়া হয়েছেঃ

ক) ইতিহাসের প্রমাণ বহু জাতির উথান পতনের উদাহরন দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছে যে, দুনিয়াটা বস্তুজগত হলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে গোটা মানবজাতি আল্লাহর তৈরী নৈতিক বিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। নৈতিক এমন এক মনাদন্ড দ্বারা আল্লাহ মানব জাতিকে নিয়ন্ত্রিত করেন যে কোন জাতি এর শেষ সীমা লংঘন করলে তিনি সে জাতির উপর অবশ্যই গযব নাযিল করেন।

খ) আল্লাহ পাক যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছেন যে দুনিয়ার জীবনে মানুষকে চিন্তা ও কর্মে যে ইখতিয়ার বা স্বাধীনতা দিয়েছেন তার দরুন তিনি মন্দ কাজ করার সাথে সাথেই মানুষকে শাস্তি দেন না। দুনিয়ায় দেখা যায় যে, চরম অন্যায় করেও মানুষ যেন সুখেই আছে। আবার অত্যন্ত সৎলোক ও জীবনে কেবল দুঃখই পায়।

কুরআনে যুক্তি দেয়া হয়েছে যে, এ দুনিয়ায় ভাল ও মন্দ কাজের বস্তুগত ফলই শুধু প্রকাশ পায়, নৈতিক ফল প্রকাশ পায় না, এভাবেই মানুষকে দুনিয়ায় পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে।

কুরআনে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে যে, মানুষকে এত সুযোগ সুবিধা দেবার সাথে সাথে ভাল ও মন্দের ধারণাও দেয়া হয়েছে। একদিন এসবের হিসাব দিতেই হবে। তাই নৈতিক ফল প্রকাশ করার জন্য আখিরাত অপরিহার্য।

গ) আরও এক রকম যুক্তি দ্বারা একথা বুঝানো হয়েছে যে, মানুষ নৈতিক বিধানকে অবশ্যই স্বীকার করে থাকে। ভালকে ভাল বলা এবং মন্দকে মন্দ মনে করার মতো বিবেক মক্তি মানুষকে দেয়া হয়েছে। তাই মানুষের বিবেকেরই দাবী যে, ভাল কাজের ভাল ফল ও মন্দ কাজের মন্দ ফল হওয়া উচিত। সূরা কিয়ামাহ (৭৫নং)-এর দ্বিতীয় আয়াতে নাফসে লাওয়ামাহ বা বিবেকের কসম খেয়ে আল্লাহ বলেছেন যে, আখিরাত হওয়া অবশ্যই উচিত।

মানুষ যদি ভাল কাজের পুরস্কার ও মন্দ কাজের শাস্তিকে যুক্তিসংগত মনে না করতো তাহলে মানব জীবন অচল হতো। আইন, বিচার ও জেলের অস্তিত্বই প্রমাণ করে যে, মানুষ নৈতিক জীবন এং নৈতিক বিধান দ্বারা পরিচালিত। তাহলে বিবেক, বুদ্ধি ও যুক্তিরই দাবী যে, আখিরাত হওয়া জরুরী। কুরআনে বহু জায়গায় প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে, নেক ও বদ লোকের পরিণাম কী করে এক রকম হতে পারে?

১৯. আন্দোলনের দৃষ্টিতে অধ্যয়ন
যেহেতু শেষ নবী (সাঃ)-এর নেতৃত্বে পরিচালিত ইসলামী আন্দোলানকে ধাপে ধাপে বিজয়ের পথে এগিয়ে নেবার উদ্দেশ্যেই কুরআন নাযিল হয়েছে, সেহেতু এর অধ্যয়ন আন্দোলনের দৃষ্টিতেই হওয়া উচিত। তবেই কুরআনের মর্মকথা বুঝা সহজ হবে।

অধ্যয়নকালে একথা খেয়াল রাখতে হবে যে দ্বীনে হকের আন্দোলন ময়দানে চলছে এবং বাতিল শক্তি এর বিরোধিতা করছে। হক ও বাতিলের এ সংঘর্ষে হকের সহায়তা করার জন্যই কুরআনের আগমন।

যে অংশ পড়া হচ্ছে তা আন্দোলনের কোন্ যুগে কোন অবস্থায় নাযির হয়েছে এবং ঐ সময় হকের আন্দেলন কোন অবস্থায় ছিল ও বাতিলের ভূমিকা কী ছিল তা মনের চোখে দেখতে হবে, এটাই হল আসল শানে নুযূল।

অধ্যয়নকারী যদি ইসলামী আন্দোলনে সক্রিয় না হন তাহলে তার মন আন্দোলনে নিরপেক্ষ থাকার দরুন কুরআনের মর্মবাণী পূর্ণরূপে উপলব্ধি করতে পারবে না। হক ও বাতিলের এ সংঘর্ষে কুরআনের পাঠক নিজকে কোন পক্ষে মনে করেন সে কথা জানা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি তিনি হকের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তাহলে তার মনে হবে যেন তাকে বর্তমান পরিস্থিতিতে সঠিক পথ দেখাবার জন্যই কুরআন নাযিল হয়েছে।

কুরআনের বেশীর ভাগ আয়াতই এমন যে তা একদিকে হক পন্থীদেরকে উপদেশ ও সাহস দেয় এবং অপরদিকে বাতিল কে দমন করার জন্য সাবধানবাণী শুনায়। এ যেন দুধারী তলোয়র উভয় দিকেই কাটে। একই আয়াতে উভয় পক্ষের বক্তব্য রয়েছে। পাঠক কোন পক্ষে আছেন সে অণুযায়ীই বুঝবার সুযোগ হবে। আন্দোলনে সক্রিয় হলে বক্তব্য সরাসরি বুঝে আসবে।

২০.মাক্কী যুগের সূরা অধ্যয়নের টেকনিক (পদ্ধতি বা কৌশল)
ক) সর্বপ্রথম একথা জানাবার চেষ্টা করতে হবে যে, আলোচ্য সূরাটি কখন নাযিল হয়েছে। মাক্কী যুগের যে স্তরে সূরাটি নাযিল হয়েছে সে যুগে রাসূল (সাঃ)-এর নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনের অবস্থা কী ছিল এবং কাফির ও মুশরিকরা কী ধরনের বিরোধিতা করছিল সে চিত্রটি মনের চোখে দেখতে হবে।

খ) তারপর সূরাটি কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয় নির্ণয় করতে হবে। সূরাটি একটু বড় হলে আলোচ্য বিষয় একাধিক হতে পারে। তাওহীদ, রিসালাত বা আখিরাতের কোন একটা বা দুটো বা তিনটাই মূল আলোচ্য হতে পারে। সূরার কোন অংশের মূল বিষয় কী তা নির্দিষ্ট করাই প্রথম কর্তব্য।

গ) এরপর যে সূরার যে মূল আলোচ্য বিষয় বা সূরার যে অংশের যে মূল বিষয় জানা গেল তাকে কেন্দ্র করেই সূরার বা এর কোন রুকু বা অংশের বাকী বক্তব্যকে বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। কারণ আর সব কথা এ মূল বিষয়ের যুক্তি হিসাবেই দেয়া হয়েছে বলে মনে করতে হবে।

এমন কি কোন ঐতিহাসিক ঘটনা বা কোন রূপক কাহিনীও যদি থাকে তাও ঐ মূল আলোচ্য বিষয়ের পক্ষে যুক্তি হিসাবেই আনা হয়েছে বলে বুঝতে হবে।

যেমন সূরা কাহফ (১৮নং)-এর মধ্যে গুহাবাসীদের যে ঘটনার বিবরণ দেয়া হয়েছে তাত আখিরাত যে সম্ভব তার প্রমাণ দেয়াই উদ্দেশ্য। কিন্তু মানুষ আসল শিক্ষা বা উপদেশের দিকে খেয়াল না করে কাহিনীর অপ্রয়োজনীয় বিস্তারিত বিষয়ের চর্চায় লেগে যায়। তাই গুহায় আশ্রয় গ্রহণকারী কতজন ছিলেন এবং তারা কত বছর ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন এসব অপ্রয়োজনীয় কথা বাদ দিয়ে আসল উপদেশের দিকে লক্ষ্য করার তাকিদ সেখানে দেয়া হয়েছে।

ঘ) সূরাটিকে ভালভাবে বুঝতে হলে আয়াতগুলোকে পয়েন্টের ভিত্তিতে ভাগ করে নিতে হবে। কয়েকটি আয়াত মিলে একটি কথা স্পষ্ট হতে পারে। আবার অনেক ক’টি আয়াত একটি পয়েন্টে শামিল হতে পারে। কোন সময় একটি আয়াতের বক্তব্য একটা পৃথক পয়েন্টেও হতে পারে। যেমন আমপারার সূরা নাবা (৭৮নং)-এর ১-৩ আয়াতে এক পয়েন্ট, ৪ ও ৫ আয়াতে আর এক পয়েন্ট এবং ৬-১৬ আয়াতে অণ্য আর একটি মাত্র পয়েন্ট বা বক্তব্য পেশ করা হয়েছে।

যত পয়েন্টেই সূরাটি ভাগ করা হোক সব পয়েন্টের বক্তব্যকেই সূরাটির কেন্দ্রীয় বা মূল আলোচ্য বিষয়ের সাথে মিল করে বুঝতে হবে। তাহলে সূরাটির গোটা আলোচনা পাঠকের মনে ভালভাবে হজম হবে।

আমি এ পদ্ধতিতেই আমপারার সূরাগুলো আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এ পদ্ধতিটি মাওলানা মওদুদী (রঃ) এর ‘তাফহীমুল কুরআন’ নামক বিখ্যাত তাফসীরের বেশ কয়টি সূরার ভূমিকাকে অনুসরণ করেই তৈরী করেছি।

যারা কুরআনকে গভীরভাবে অধ্যয়নের চেষ্টা করেন এমন বন্ধু –বান্ধবদের সাথে এ প্রসংগে আলোচন ার পর এ পদ্ধতিটি কুরআন বুঝবার পক্ষে খুব সহায়ক বলেই মনে হয়। এ পদ্ধতিতে একটি সূরাকে ভালভাবে বুঝতে পারার তৃপ্তিবোধ হয় বলে অনেকের মতামত পেয়ে এ বিষয়ে আমার প্রত্যয় আরও বেড়েছে।

২১. নবী কাহিনীর উদ্দেশ্য
কুরআনের বহু সূরায়, বিশেষ করে বড় বড় সূরাগুলোতে নবী-রাসূলগণের কাহিনী বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। এ সম্পর্কিত আয়াতসমূহ কুরআনের বিরাট অংশ দখল করে আছে। গল্প বলা বা ইতিহাস চর্চা যে এর আসল উদ্দেশ্য নয় তা না বুঝলে ঐসব কাহিনী ও ঘটনার খুঁটিনাটি আলোচনায়ই মানুষ মশগুল হয়ে পড়ে।

কুরআনে কোন নবীরই ধারাবাহিক ইতহাস আলোচনা করা হয়নি। যেখানে যে মূল বক্তব্য উদ্দেশ্য তার পক্ষে ঐতিহাসিক যুক্তি পেশ করার জন্য যতটুকু ঘটনা দরকার ততটুকুই শুধু উল্লেখ করা হয়েছে। তাই একই নবীর কাহিনীর বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন সূরায় প্রয়োজন মত তুলে ধরা হয়েছে। একটি কাহিনী হিসাবে একই সূরায় একটানা কোন নবীর জীবনী আলোচনা করা হয়নি। হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর গোটা কাহিনী এক সূরায় আলোচনা করা হলেও তা মোটেই গল্পের আকারে পেশ করা হয়নি। নবীদের কাহিনী আলোচনার মূল উদ্দেশ্য কয়েকটিঃ

ক) ঈমানদারদেরকে নবীদের উদাহরণ থেকে ধৈর্য, সাহস, দৃঢ়তা ও নিষ্টার শিক্ষা গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করা।

খ) নবীদের বিরোধিতা করার মারাত্মক পরিণাম উল্লেখ করে বাতিল শক্তিকে সাবধান করা।

গ) শেষ নবীর বিরোধিতায় যারা লিপ্ত ছিল তাদেরকে পূর্ববর্তী নবীদের বিরোধীদের পরিণাম থেকে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেয়া।

ঘ) যুগে যুগে যত নবী ও রাসূল এসেছেন তাঁদের সবাই যে একই দ্বীনের ধারক ছিলেন সে কথা প্রমাণ করা।

ঙ) হক ও বাতিলের সংঘর্ষ যে চিরন্তন সে কথা স্পষ্ট করে তুলে ধরা। যখন কোন নবী দ্বীনে হক কায়েম করার চেষ্টা করেছেন তখনই বাতিল কায়েমী স্বার্থবাদী শক্তি বিরোধিতা করেছে।

চ) আল্লাহ পাক শক্তিবলে মানুষকে হেদায়াত করার ইখতিয়ার দেননি। মানুষকে শুধু বুঝাবার চেষ্টা করাই নবীদের দায়িত্ব ছিল।

ছ) মানুষ হককে কবুল করতে রাজী না হলে আল্লাহ জবরদস্তি করে কোন জাতিকে হেদায়াত করেনা। হককে কবুল করা ও না করা মানুষের স্বাধীন ইচছার উপরই নির্ভর করে।

২২. কুরআনের শিক্ষাকে জনগণের মধ্যে ব্যাপক করার উপায়
মুসলমানদের মধ্যে কুরআন তেলাওয়াতের রেওয়াজ বেশ আছে। এর অর্থ না জানলে ও কাউকে কুরআন তেলাওয়াত করতে শুনলে তারা বুঝতে পারে যে, কুরআন পড়া হচেছ। কুরআনের প্রতি ভক্তি থাকার ফলে তারা কুরআনের অর্থ শুনবার সুযোগ পেলে মন দিয়ে শুনে। কিন্তু সহজ ভাষায় কুরআনের বক্তব্য শুনবার সুযোগ তারা পায়না।

এ দেশের বহু জায়গায় দারসে কুরআন ও তাফসীর মাহফিল নামে কুরআন পাকের আলোচনা হয়। তাতে বিপুল সংখ্যায় মুসলমান জনসাধারণ উৎসাহের সাথে শরীক হয়। বছরে একবার জাঁকজমকের সাথে কয়েক দিন ধরেও এসব মাহফিল হয়। এতে কুরআন মজীদের প্রতি জনগণের আগ্রহ ও মহব্বতের পরিচয় পাওয়া যায়।

কুরআনের প্রতি এ শ্রদ্ধা ও আকর্ষনকে কাজে লাগিয়ে মসজিদে প্রতি সপ্তাহে একদিন করে হলেও ‘দারসে কুরআন ’চালু করা সহজ। কিছু সংখ্যক মসজিদে চালু আছে। কিন্তু দারস দেবার লোকের অভাবে অনেক মসজিদে চালু করা সম্ভব হয় না।

তাফসীরে মাহফিলে যারা কুরআনের তাফসীর করেন তাঁরা ওলামায়ে কেরাম। আরবী ভাষায় তাঁদের জ্ঞান থাকার ফলে যোগ্যতার সাথে তাফসীর করতে পারেন। তারা আরবী, উর্দূ ও বাংলায় অনেক তাফসীর পড়ার যোগ্যতা ও রাখেন। কিন্তু তাঁরা বিস্তারিত তাফসীর করেন বলে কুরআনের অল্প কিছু অংশের শিক্ষাই পরিবেশন করার সময় পান।

তাফসীর মানে বিস্তারিত ব্যাখ্যা। ভাল আলেম ছাড়া তাফসীর করা সম্ভব নয়। আরবী বাক্য বিন্যাস না জানলে শব্দে শব্দে অর্থ বলে ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। তাই যোগ্য লোকের অভাবে ব্যাপকভাবে তাফসীর মাহফিল সারা বছর চালু রাখার উপায় নেই। কিন্তু কুরআনের শিক্ষাকে জনগণের জন্য সহজলভ্য করতে না পারলে ইকামাতে দ্বীনের প্রচেষ্টা সফল হতে পারে না। এ মহান উদ্দেশ্যে ‘দারসে কুরআন ’ এর ব্যবস্থা হওয়া উচিত। দারস মানে শিক্ষা। “দারসে কুরআন” অর্থ হলো কুরআনের শিক্ষা। এ শিক্ষাকে জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে চালু করতে হলে মসজিদে ‘দারসে করআন ’ এর ব্যবস্থা থাকা দরকার। অন্ততঃ সপ্তাহে একদিন করে হলেও কুরআনের আলো যথেষ্ট ছড়ানো সম্ভব হবে।

কুরআন মজিদের মোট ১১৪টি সূরার মধ্যে সূরা ফাতিহরে পর ৪৪টি সূরা কুরআনের ২৫টি পারা দখল করে আছে। আর ২৬ পারা থেকে ৩০ পারা পর্যন্ত মাত্র ৫টি পারায় ৬৯টি সূরা আছে। এ ৬৯-এর সাথে সূরা ফাতিহা যোগ করলে মোট ৭০টি সূরা হয়। এ ৭০টির মধ্যে মাত্র ১৬টি মাদানী সূরা, .আর ৫৪টি মাক্কী সূরা।

এ ৭০টি সূরা থেকেই নামাযে ইমামগন বেশী বেশী পড়েন। তাছাড়া এর মধ্যে অধিকাংশই মাক্কী সূরা। কুরআন পাকের ১১৪টি সূরার মধ্যে ৮৯টি মাক্কী এবং এর মধ্যে ৫৪টি শেষ ৫ পারায় আছে। ইসলামী আন্দোলনের দৃষ্টিতে মাক্কী সুরাগুলো প্রথমে বুঝা বেশী দরাকর।

সাপ্তাহিক ‘দারসে কুরআন’ চালু হলে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে এ ৭০টি সূরার শিক্ষা জনগণ পেতে পারে। এর মধ্যে ১৬টি মাদানী সূরা থাকায় সে সম্পর্কে ও কিছু আলো তারা পেয়ে যাবে। মসজিদে সাপ্তাহিক দারেসে কুরআন চালু করার কাজটির দায়িত্ব ইমাম সাহেবগণ নেন তাহলে খুবই সহজে এ ব্যবস্থা জারী হতে পারে। তাঁরা একটু পরিশ্রম করলে দ্বীনের এক বিরাট কাজ হবে।

কুরআন বুঝবার জন্য এ বইটিতে যা লেখা হয়েছে তা ইমামগণের এ কাজে সহায়ক হতে পারে।

কুরআন বুঝা ও বুঝানোতে অবশ্যই পার্থক্য আছে। বুঝবার জন্য আরবীয় ভাষা জ্ঞান না হলেও কোনরকম চলতে পারে। কিন্তু আরবী ব্যাকরণের প্রাথমিক জ্ঞানটুকু ছাড়া বুঝাবার কাজ কঠিন। তবু যারা বুঝাবার কাজে আগ্রহ রাখেন তারা কোন আলেমের সাহায্যে নিম্নতম যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন।

একটা মহাসত্য কথা সবাইকে স্বীকার করতে হবে যে, বুঝাবার চেষ্টা যারা করে তাদেরই বুঝবার যোগ্যতা অর্জন করা সহজ হয়। যে অন্যকে বুঝাবার জন্য সময় ও শ্রম ব্যয় করে আল্লাহ পাক তাকেই ভালভাবে বুঝবার তাওফিক দান করেন। সে যদি কিছু ভুল করে তাহলে শ্রোতাদের মধ্য থেকে তার ভুল ধরার লোকও পাওয়া যাবে। এভাবে চর্চা চলতে থাকলে কুরআন বুঝবার লোকের সংখ্যা সমাজে বাড়তে থাকবে।

২৩. দারসে কুরআনের পদ্ধতি
দারসে কুরআনের দায়িত্ব যিনি নেবেন তাকে প্রথমেই দুটো কাজ করতে হবেঃ

ক) প্রথমে তাকে কুরআন শুদ্ধ করে পড়তে হবে। তাজবীদের নিয়মে পুরোপুরি পড়তে না পারলেও মোটামুটি শুদ্ধ করে পড়তে সক্ষম হতে হবে।

খ) যদি তিনি আলেম না হয়ে থাকেন তাহলে কোন একজন আলেমের কাছে আরবীর প্রাথমিক ভাষাজ্ঞান শিখতে হবে।

দারসে কুরআন পেশ করার সময় নিম্নরূপ তারতীব অনুযায়ী একটার পর একটা করতে হবেঃ

১. তেলাওয়াত —-যে পরিমাণ আয়াত দারস পেশ করা হবে তা পয়লা তেলাওয়াত করে শুনাতে হবে।

২. তরজমা —- যথসম্ভব সহজ ভাষায় আয়াতগুলোর নাযিলের অনুবাদ করতে হবে।

৩. শানে নুযুল বা পটভূমি—- আলোচ্য আয়াতগুলোর নাযিলের সময় ও পরিবেশ আলোচনা করতে হবে।

৪. ব্যাখ্যা —-আলোচ্য আয়াতগুলোর অর্থের বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে।

৫. শিক্ষা —-এ আয়াতগুলো থেকে কী কী বাস্তব শিক্ষা পাওয়া গেলো তা নির্ণয় করতে হবে। বর্তমান পরিবেশের সাথে মিলিয়ে কী কী উপদেশ পাওয়া গেলো তা তুলে ধরতে হবে।

২৪. কোন ধরনের মন কুরআনের মর্মার্থ ধরতে পারে?
ক) শুধু কুরআনের তাফসীর ঘাটলেই এর মর্মকথা বুঝে আসে না। ইকামাতে দ্বীনের যে মহান আন্দোলনকে পথ দেখাবার জন্য কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে সে আন্দোলনে সক্রিয় হলে কুরআন বুঝবার জন্য পাঠকের মনের দুয়ার সঠিকভাবে খুলে যায়।

খ) যার নিকট কুরআন নাযিল হয়েছে সে মহা মানবের দরদী মনের সাথে যে পাঠকের মন যতটা ঘনিষ্ট, কুরআনের মর্মার্থ সে ততটা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। মানব সমাজের সংশোধনও শান্তির জন্য মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর মনে যে অস্থিরতা ও পেরেশানী ছিল তার যতটা পাঠকের মনে সৃষ্টি হবে সে পরিমাণেই সে কুরআনকে বুঝতে পারবে।

গ) কুরআন অধ্যয়নের সময় মনে তীব্র অনুভুতি জাগতে হবে যে, আমার মহান মনিব কুরআনের মাধ্যমে আমাকে উপদেশ দিচ্ছেন।

এ উপদেশ আমাকে মন- মগজ দিয়ে কবুল করতে হবে এবং নিজের জীবনে তা পালন করে চলতে হবে।

ঘ) মনে আকুল আকুতি নিয়ে মনিবের নিকট কুরআন বুঝবার শক্তি যোগ্যতা চাইতে হবে। দিল দিয়ে দোয়া করতে হবে।

ঙ) অন্তরে কুরআনের মর্যাদা, আযমত, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে হবে। এ কিতাব যে দুনিয়ার আর সব কিতাবের মতো নয় তা খেয়াল করে মহব্বত ও ভক্তির সাথে পড়তে হবে।

২৫.কুরআনের পারা, রুকু, আয়াত, শব্দ ও অক্ষর সংখ্যা
ক) গোটা কুরাআন সমান ৩০টি পারায় বিভক্ত। হিজরী ৮৬ সালে এভাবে পারা, পারার অর্ধেক, একচতুর্থাংশ ইত্যাদি খন্ডে ভাগ করা হয়েছে। এতে পাঠকদের পক্ষে হিসাব রাখা সহজ হয়েছে।

খ) মোট ১১৪টি সূরা।

গ) মোট ৫৪০টি রুকূ।

ঘ) আয়াতের হিসাবে অনেক মতভেদ আছে। ৬০০০ থেকে ৬৬৬৬ পর্যন্ত বিভিন্ন মত আছে। এটা গণনার ধরনে পার্থক্যের ফল।

ঙ) ২৭৭৫ টি আয়াতের পুনরাবৃত্তি আছে। শব্দ সংখ্যা ৭৭, ২৭৭ বা ৭৭৯৩৪। গণনার ধরনের পার্থক্যের কারণেই শব্দ সংখ্যার ব্যাপারেও মতভেদ হয়েছে।

চ) অক্ষর সংখ্যা ৩, ৩৮, ৬০৬।

“ইকামাতে দ্বীনের যে মহান আন্দোলনকে পথ দেখাবার জন্য কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে সে আন্দোলনে সক্রিয় হলে কুরআন বুঝবার জন্য পাঠকের মনের দুয়ার সঠিকভাবে খুলে যায়।”

“মানব সমাজের সংশোধন ও শান্তির জন্য মহাম্মদ (সাঃ) – এর মনে যে অনস্থিরতা ও পেরেশানী ছিল তার যতটা পাঠকের মনে সৃষ্টি হবে সে পরিমাণই কুরআন বুঝতে পারবে।”

“মনে আকুল আকুতি নিয়ে মনিবের নিকট কুরআন বুঝবার শক্তি ও যোগ্যতা চাইতে হবে, দিল দিয়ে দোয়া করতে হবে।”

— সমাপ্ত —


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি