পরিশিষ্ট-১

নবী জীবনের ঘটনাবলীঃ কালগত ধারা বিন্যাস

পুস্তকের আলোচ্য বিষয়গুলোতে মোটামুটিভাবে কালগত ধারাবিন্যাস করা হয়েছে। তবে খুঁটিনাটি বিষয়গুলোতে এই ধারাবিন্যাসের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন সময়কার ঘটনাবলীকে একত্রিত করা হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস ও জীবনী শাস্ত্রে ঘটনাবলীর কালগত ধারাবাহিকতা খুবই গুরুত্ববহ। এই প্রয়োজন পূরণের নিমিত্তে নিম্নের নকশাটি পরিশিষ্ট হিসেবে পুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, যাতে করে এক নজরে নবী জীবনের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
যে যে কারণে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার দিন ও তারিখ সম্পর্কে মতভেদ ঘটে তা নিম্নরূপঃ
রসূল সা. এর নবুয়ত লাভের পূর্বেকার ঘটনাবলীকে “আমুল ফীল” তথা “হস্তিবাহিনীর কা’বা আক্রমণের সন” বা রসূল সা. এর জন্মের সনের হিসেব অনুযায়ী উল্লেখ করা হয়ে থাকে এবং এই সব সনকে খৃষ্টীয় সনের সাথে সমন্বিত করা হয়। হস্তিবাহিনীর সন-১ এবং রসূল সা. এর জন্মের সন-১ যদিও মোটামুটিভাবে একই সন, কিন্তু হস্তিবাহিনীর সনের প্রথম দিন ছিল হস্তিবাহিনীর আক্রমণের দিন। (অর্থাৎ ১৭ই মুহাররম বৃহস্পতিবার)। পক্ষান্তরে রসূল সা. এর জন্মের সন হস্তী সন শুরুর ৫০ বা ৫৫ দিন অর্থাৎ প্রায় দু’মাস পর শুরু হয়। উভয় সনের এই পার্থক্যকে ঐতিহাসিকগণ ও বর্ণনাকারীগণ হয় পুরোপুরিভাবে উপেক্ষা করেছেন, নয়তো তারা উল্লেখ করেননি যে, কোন সন বুঝাচ্ছেন। এরফলে একটি বছর শুরু হচ্ছে রবিউল আউয়াল থেকে, অপরদিকে প্রচলিত চন্দ্র বছর শুরু হয় মুহাররম থেকে। এভাবে হিসাবের গোলমাল বেড়ে যায়। উদাহরণ স্বরূপ যদি জন্মের বছরের শুরু মুহাররম মাস থেকে ধরা হয়, তাহলে হিজরত সংঘঠিত হয় চতুর্দশ জন্ম বছরে। কিন্তু যদি বছরের শুরু রবিউল আউয়াল থেকে ধরা হয়, তাহলে হিজরত সংঘঠিত হয় জন্ম সনের ত্রয়োদশ বছরে। ঐতিহাসিকগণ উভয় সনই লিখেছেন।
হযরত ওমর রা. নিজ খেলাফত যুগে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ইসলামী হিজরী সন চালু করেন ১৭ হিজরীর ২০শে জমাদিউসসানী তারিখ বৃহস্পতিবার। এর আগে হিজরী সন নিয়মিতভাবে চালু ছিলনা এবং ঐ সন অনুসারে ঘটনাবলীর সময় নির্ধারণ রেওয়াজও ছিলনা। এ জন্য সহীহ হাদীস গ্রন্থ সমূহে কোন্ ঘটনা কোন্ হিজরী সনে ঘটেছিল, তার উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়না। হিজরী সনকে গ্রহণ করার পর সাবেক ঘটনাবলীর কালগত ধারাবিন্যাস হিজরী সন অনুসারে করা হতে থাকে।
এরপর হিজরত থেকে যে চন্দ্রবর্ষ গণনা শুরু হয়, তাও দু’ভাগে গণনা করা যায়। একটা হলো, হিজরতের মাস, রবিউল আউয়াল থেকে বর্ষের গণনা শুরু করা। অপরটি হিজরতের বর্ষ গণনা করে চন্দ্র বর্ষের প্রচলিত প্রথম মাস মুহাররাম থেকেই গণনা শুরু করা। এর অর্থ দাঁড়ায়, প্রথম হিজরী বর্ষ রবিউল আউয়াল থেকে যিলহজ্জ পর্যন্ত দশ মাসের গণনা করা হবে। হাদীস বিশারদগণ, সীরাত লেখকগণ ও ঐতিহাসিকগণ হিজরী বর্ষকে এই দু’ভাগেই গণনা করেছেন। কিন্তু বর্ষকে কিভাবে গণনা করা হয়েছে, সেটা সুস্পষ্টভাবে খুব কমই উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন রেওয়ায়েতে তারিখের সাথে যে দিনের উল্লেখ পাওয়া যায়, সেটা দুটোর মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায়না। দুটোর মধ্যে যেটির নির্ভরযোগ্যতা পাওয়া যায় অথবা রেওয়ায়েতের মতৈক্য পরিলক্ষিত হয়, সেটিকে ভিত্তি করে অপর দিকটা হিসাব করে স্থির করা হয়।
সবচেয়ে জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয় ক্যালেন্ডার ও বিভিন্ন বর্ষধারার সমন্বয় করতে গিয়ে। কেননা ইতিহাস গ্রন্থাবলীতে কোন নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার বা বর্ষধারার উল্লেখ নেই। ক্যালেন্ডারের এই হেরফের এ কারণেও বেড়ে যায় যে, বিভিন্ন সৌরবর্ষ ছাড়াও খোদ্ খৃষ্টীয় ক্যালেন্ডারও কখনো কখনো এক সাথে একাধিক চালু থাকতো; একটা সৌর ক্যালেন্ডার, অপরটা চন্দ্র ক্যালেন্ডার। তাছাড়া খৃ্ষ্টীয় ও অন্যান্য ক্যালেন্ডার নিয়মে রদবদল হতে থাকতো। এখন কয়েক শতাব্দি পর দিন ও তারিখের সমন্বয়ে হিসাব করতে গেলেই বিভিন্ন দিক দিয়ে মতভেদের অবকাশ সৃষ্টি হয়ে যায়।
কিছু কিছু ঘটনা ও কর্মকান্ডকে তার সুনির্দিষ্ট দিন তারিখ সহকারে গুরুত্বপূর্ণ হাদীসেও বর্ণনা করা হয়নি। কোরআন ও হাদীসের আলোকে শুধু এতটুকুই নির্দিষ্টভাবে জানা যায় যে, কোন ঘটনা অমুক ঘটনার আগে বা পরে ঘটেছে। কিন্তু কিছু কিছু ঘটনা (যেমন তায়াম্মুমের অনুমতি, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য বিয়ে তথা মুতয়া বিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা, পর্দার বিধান বাস্তবায়ন এবং বিভিন্ন চুক্তি, যুদ্ধ ও সেনাদল প্রেরণ) সম্পর্কে তারিখ নির্ণয় ছাড়া নিছক ভাসাভাসা কালগত ধারাবাহিকতা স্থির করার ব্যাপারেও হাদীসের বর্ণনা পরস্পর বিরোধী।
মোটামুটিভাবে ধরে নেয়া যেতে পারে যে, রসূল সা.এর জীবনের সবকটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে বিশদভাবে সুনিশ্চিত দিন তারিখ নির্ণয়সহ পেশ করা কঠিন। বড় বড় সীরাত লেখক, মুফাসসির, হাদীসবিশারদ, ফেকাবিদ- যারা সুখ্যাতি সম্পন্ন তথ্য অনুসন্ধান করতে অভ্যস্ত, তাদের মধ্যেও দিন তারিখ নিয়ে বিস্তর মত পার্থক্য দেখতে পাওয়া যায় এবং প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গীর পক্ষে ও বিপক্ষে দীর্ঘ যুক্তিতর্ক রয়েছে।
বর্তমান সীরাত গ্রন্থটি লিখতে গিয়ে আমি এই সব মতভেদ ও ক্যালেন্ডারের হিসাব নিয়ে যথাসাধ্য অধ্যয়ন, তথ্যানুসন্ধান ও চিন্তাগবেষণার পর একটা নির্দিষ্ট মত ‘আলোচ্য ঘটনাসূচী’তে স্থির করে দিয়েছি এবং গুরুত্বপূর্ণ মতবেধগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করেছি। সব ক’টা ভিন্নমতকে সবিস্তারে উল্লেখ করে পাঠককে বিব্রত করা যেমন সমীচীন ছিলনা, তেমনি তার অবকাশও এখানে ছিল না। এ কাজ যদি করাও হয়, তবে সম্পূর্ণ পৃথকভাবে করা দরকার। আমাদের এই ‘ঘটনাসূচী’তে হিজরতের পূর্ববর্তী ঘটনাবলীকে হয় ‘আমুল ফীল’ (হস্তি বাহিনীর আগ্রাসন বর্ষ) অথবা রসূল সা. এর জন্ম বর্ষের হিসাব অনুযায়ী উল্লেখ করা হয়েছে, নচেত নবুয়ত বর্ষ হিসাবে কোথাও কোথাও রাসূল সা. এর বয়সকেই সময় নির্ণয়ের মাপকাঠি ধরা হয়েছে।

(১) রসূল সা. এর জন্মদিন-
(বসন্তকালের সোমবার (এই দিন সম্পর্কে মতৈক্য রয়েছে) তারিখ ৯ই রবিউল আউয়াল, হস্তি বর্ষ-১, (হস্তিবাহিনীর আক্রমণের ৫০ দিন পর)মোতাবেক ২২শে এপ্রিল, ৫৭১ খৃষ্টাব্দ, ১লা জৈষ্ঠ, ৬২৮ বিক্রমাব্দ সুবহে সাদেক (সূর্যোদয়ের পর)। সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মতানুসারে ১২ ই রবিউল আউয়াল।)
(তাবারী ও ইবনে খালদুন ১২ রবিউল এবং আবুল মিকদাদ ১০ই রবিউল আউয়াল বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু যেহেতু সোমবার সম্পর্কে মতৈক্য রয়েছে। অথচ সোমবার ৯ই রবিউল আউয়ালেই পড়ে। তাই মুহাম্মদ তালাত বেগ (আরব ঐতিহাসিক) এবং কাযী সুলায়মান মানসুর পুরী পঞ্জিকার হিসাব নিয়ে চুলচেরা গবেষণা করার পর ৯ই রবিউল আউয়ালের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। মিশরের প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ মাহমুদ পাশা বৈজ্ঞানিক যুক্তিপ্রমাণ দিয়ে বলেছেন, রসূল সা. এর জন্ম তারিখ ৯ই রবিউল আউয়াল মোতাবেক ২০শে এপ্রিল, ৫৭১ খৃষ্টাব্দে। আল্লামা শিবলী নোমানীও এই মতকে সমর্থন দিয়েছেন। তবে গ্রেগরিয়ান নিয়মে দিনটা হয়ে ২২শে এপ্রিল। এই নিয়মের অধীন ১৭৫২ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে নতুন খৃষ্টীয় ক্যালেন্ডার চালু হয়েছে। প্রাচীন ক্যালেন্ডারের নিয়মানুসারে ঐ দিনটি নির্দ্ধারিত হয়েছে ১৯শে এপ্রিল সন জুলিয়ান ৫২৮৪ অব্দ। রসূল সা. এর জন্ম হস্তিবাহিনীর আক্রমণের ৫৫দিন পর না ৫০ দিন পর হয়েছিল, তা নিয়েও মতভেদ রয়েছে, তা দৃশ্যত ৫০ দিন পরের মতটাই সঠিক বলে মনে হয়।
আসাহাহুস্ সিয়ার গ্রন্থকার মাওলানা আব্দুর রউফ দানাপুরি ৮ বা ১২ই রবিউল আউয়াল উল্লেখ করেছেন, তবে যু্ক্তিতর্কের উল্লেখ করেননি। কেউ কেউ ১লা মুহাররম এবং খৃষ্টীয় তারিখ হিসাবে ১২ বা ১৫ই ফেব্রুয়ারী উল্লেখ করেছেন। ইবনে ইসহাকের মতে ১২ই রবিউল আউয়াল রাত অতিবাহিত হওয়ার পর রসূল সা. এর জন্ম হয়। আমার দৃষ্টিতে ৯ই রবিউল আউয়ালের মতটাই অগ্রগণ্য মনে হয়।)

(২) দুধ খাওয়ার মেয়াদ শুরু- ৪ মাস বয়সে (জন্মের ২ বা তিন দিন পর আবু লাহাবের ক্রীতদাসী ছাওবিয়ার দুধ কয়েকদিন পান করেন। নিয়মিত দুধ খাওয়ার মেয়াদ তিনি ধাত্রী হালিমার বাড়িতেই কাটান। এই বাড়ী মরুভূমির ভেতরে অবস্থিত।

(৩) রসূল সা. এর মায়ের ইন্তিকাল -৬ বছর বয়সে
(৪) রসূল সা. এর দাদার ইন্তিকাল -৮ বছর ২ মাস ১০ দিন বয়সে
(৫) প্রথম সিরিয়া সফর (চাচা আবু তালেবের সাথে) -১২ বছর ২ মাস বয়সে (খৃষ্টান সন্নাসী বুহায়রার সাথে সাক্ষাত হয় এই সফর কালেই)

(৬) ফুজ্জার যুদ্ধে প্রথম অংশগ্রহণ -১৫ বছর বা কিছু বেশী বয়সে

(৭) ফুজ্জার যুদ্ধে দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণ -প্রথমবারের কিছুকাল পরে। সময় অজ্ঞাত

(৮) সংস্কারমূলক সংগঠন হিলফুল ফুযুলে যোগদান -১৬ বছর বয়সে

(৯) সিরিয়ায় দ্বিতীয় সফর ব্যবসায়ী হিসেবে -২২ বা২৫ বছর বয়সে

(১০) হযরত খাদিজার সাথে বিয়ে -২৫ বছর ২ মাস ১০ দিন বয়সে

(১১) রহস্যময় ঘটনাবলীর সুচনা –নবুয়তের ৭ বছর আগে

(১২) সালিশ নির্বাচিত হওয়া -৩৫ বছর বয়সে
(১৩) নবূয়ত লাভ -৪০ বছর ১১ দিন বয়সে। ৯ই রবিউল আউয়াল জন্ম সন ৪১, মোতাবেক ১২ই ফেব্রুয়ারী, ৬১০ খৃষ্টাব্দ, সোমবার।

কা’বা শরীফের সংস্কারের সময় হজরে আসওয়াদ পুনস্থাপন নিয়ে বিরোধ বাধে। সবাই তাকে বিশ্বস্ত আখ্যয়িত করে সালিশ মানে। তিনি বিরোধের চমৎকার নিষ্পত্তি করেন। এই তারিখটা নিয়েও বিস্তর মতভেদ রয়েছে। একটি মতানুসারে চন্দ্র বর্ষের ক্যালেন্ডারের হিসেবে ৪০ বছর ৬ মাস ১৬ দিন এবং সৌর ক্যালেন্ডারের হিসেবে ৩৯ বছর ৩ মাস ১৬ দিন বয়সে। নবুয়তের খোদায়ী ঘোষণা হেরা পর্বত গুহায় নাযিল হয়। তারিখটা ছিল কারো মতে ২৫শে রমযান, কারো মতে ১৩ই রবিউল আউয়াল। খৃষ্টীয় ক্যালেন্ডারের হিসেবে ১২ই ফেব্রুয়ারী ও ৬ই আগষ্ট ৬১০ খৃষ্টাব্দও বলা হয়েছে। তবে এই সমস্ত মতভেদ পঞ্জিকার হিসেবের জটিলতা থেকে উদ্ভুত। অস্পষ্টতার আরো একটা কারণ এই যে, নবুয়তের ঘোষণা এবং কোরআন নাযিল হওয়ার সময়টা হাদীসের বর্ণনাতেই দু’রকমের। যাদুল মায়াদে ৮ তারিখ লেখা হয়েছে। কিন্তু পঞ্জিকার হিসেব অনুসারে সোমবার পড়ে ৯ তারিখে। নবূয়াতের ঘোষণা দেয়া হয় এভাবে যে, হযরত জিবরীল গুহার ভেতরে তাঁর সামনে এসে বললেন, “সুসংবাদ নিন। আপনি আল্লাহর রসূল। আর আমি জিবরীল।” হযরত জিবরীলকে এভাবে প্রকাশ্যে দেখে তিনি কিছুটা ভড়কে যান এবং হযরত খাদীজা তাঁকে সান্ত্বনা দেন।

(১৪) নামায ফরয হওয়া (ফরয ও আছরের দুই দুই রাকায়াত) - ৯ই রবিউল আউয়াল নবূয়ত লাভের দিন।
(১৫) কোরআন নাযিল হওয়ার সূচনা -১৮ই রমজান, নবূয়ত বর্ষ-১ শুক্রবার (রাত্রে)
মোতাবেক ১৭ই আগষ্ট, ৬১০ খৃষ্টাব্দ।
(১৬) গোপন দাওয়াতের কাজ শুরু - নবূয়ত বর্ষ-১ থেকে ৩ পর্যন্ত।

এ পর্যায়ে সূরা আলাক নাযিল হয়। তাবারী ১৭ ও ১৮ এই দুটো তারিখই লিখেছেন। কিন্তু পঞ্জিকার হিসাব অনুসারে ১৮ই রমযান শুক্রবার হয়।আকরাম মাখযুমীর সাফা পাহাড়ে অবস্থিত বাড়ীটি ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রে পরিণত হয়। এই সময় প্রায় ৪০ ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেন। শহরের বাইরে গিয়ে গোপনে নামায পড়া হতো।

(১৭) নবূয়তের ঘোষণা (প্রথম ভাষণ) -নবূয়ত বর্ষ-৩ (শেষের দিকে)

(১৮) বিরোধিতার প্রথম যুগ (ঠাট্টা বিদ্রুপ, অপপ্রচার ও অল্প স্বল্প নির্যাতন) -নবূয়ত বর্ষ-১ থেকে ৫ পর্যন্ত বিস্তৃত।
(আবু তালেবের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য কোরায়েশ প্রতিনিধি দলের আলোচনা অব্যাহত। বিরোধিতার জন্য নানা রকম কৌশল উদ্ভাবন।)

(১৯) প্রচন্ড বিরোধিতার দ্বিতীয় যুগ (সর্বব্যাপী যুলুম নির্যাতন) -৫ থেকে ৭ম নবুয়ত বর্ষ

(২০) আবিসিনিয়ায় হিজরত –জন্ম বর্ষ ৪৫ এর রজব মাস, নবুয়ত বর্ষ-৫, নবুয়ত বর্ষ-৬

(২১) হযরত হামযা ও হযরত ওমরের ইসলাম গ্রহণ –নবুয়ত বর্ষ-৬
(হযরত ওমর রা. হামযার তিন দিন পর ইসলাম গ্রহণ করেন। কারো কারো মতে, নবূয়তের দ্বিতীয় বছর হযরত হামযা ইসলাম গ্রহণ করেন।)

(২২) রসূল সা. এর গোত্র বনু হাশেমের নজরবন্দী ও অবরোধ “শিয়াবে আবু তালেব” নামক পার্বত্য উপত্যকায় -১লা মুহররম, ৭ম নবূয়ত বর্ষ, ৪৭তম জন্মবর্ষ, মঙ্গলবার।

(২৩) নজরবন্দী ও অবরোধের অবসান -নবূয়ত বর্ষ-৯ এর শেষভাগ বা নবূয়ত বর্ষ-১০ এর প্রথমভাগ।

(২৪) “শোকাবহ বছর” আবু তালেব ও হযরত খাদীজার ইন্তিকাল -নবূয়ত বর্ষ-১০

(২৫) তায়েফ সফর -জমাদিউস সানী, জন্মবর্ষ-৫০ নবূয়তবর্ষ-১০
(আবু তালেবের মৃত্যুর ৩ বা ৫ দিন পর হযরত খাদীজা রমজান মাসে ইন্তিকাল করেন।
মতান্তরে ২৬-২৭ শওয়াল, নবূয়তবর্ষ-১০।)

(২৬) মেরাজ -২৭শে রজব, জন্মবর্ষ-৫০ নবূয়ত বর্ষ-১০, সোমবার (রাত্রে)

(২৭) পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ -২৭শে রজব, জন্মবর্ষ-৫০ নবূয়ত বর্ষ-১০, সোমবার (রাত্রে)

(২৮) মদিনায় ইসলামের সূচনা -জিলহজ্জ, জন্মবর্ষ-৫০ নবূয়তবর্ষ-১০
(আয়াস বিন মুয়ায সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন।)

(২৯) ৬ জন মদীনাবাসীর ইসলাম গ্রহণ -জিলহজ্জ, জন্মবর্ষ-৫১ নবূয়তবর্ষ-১১

(৩০) প্রথম আকাবার বায়য়াত (১২ ব্যক্তি) –জিলহজ্জ, জন্মবর্ষ ৫২,নবুয়ত বর্ষ ১২

(৩১) দ্বিতীয় আকাবার বায়য়াত (৭৫ ব্যক্তি) -–জিলহজ্জ, জন্মবর্ষ-৫৩,নবুয়ত বর্ষ-১৩

(৩২) হিজরত -২৬ শে সফর রাত
(এই ঘটনার সময় রসূল সা. এর বয়স ৫৩ পার হয়ে ৫৪-তে এবং নবূয়তের ১৩ বছর পার হয়ে ১৪ বছরে পদার্পণ করে।)
ক. মক্কা থেকে সূর পর্বতগুহা -জন্মবর্ষ-৫৩,নবুয়ত বর্ষ-১৩
খ. সুর পর্বতগুহা থেকে যাত্রা শুরু -১লা রবিউল আউয়াল সোমবার, মোতাবেক ১৫ই সেপ্টেম্বর, ৬২১ খৃ:
গ. কোবায় উপস্থিতি -৮ই রবিউল আউয়াল জন্মবর্ষ-৫৩, নবূয়তবর্ষ-১৩ মোতাবেক, ২৩ সেপ্টেম্বর ৬২২ খৃষ্টাব্দ সোমবার
ঘ. কোবা থেকে মদিনায় যাত্রা ও মদিনায় প্রবেশ -১২ই রবিউল আউয়াল হিজরীবর্ষ-১ নবূয়তবর্ষ-১৪ শুক্রবার
(বনুসালেম গোত্রের এলাকায় জুময়ার নাময আদায় করেন। কারো কারো মতে তিনি ১৪ দিন কোবায় অবস্থান করেন।)

(৩৩) মসজিদে নববীর ভিত্তি স্থাপন -রবিউল আউয়াল হিজরীবর্ষ-১

(৩৪) ফরয নামাযের রাকাত বৃদ্ধি -রবিউল আউয়াল হিজরীবর্ষ-১
(জোহর, আসর ও এশার চার রাকাত নাময ফরয করা হয়।
হযরত আনাসের বাড়ীতে ভ্রাতৃত্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে রসূল সা. এর সামনে ৯০ জন আনসার ও মোহাজেরের উপস্থিতি।)

(৩৫) মোহাজের ও আনসারদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক ভ্রাতৃত্ব -হিজরীবর্ষ-১ এর প্রথম তিনমাস।

(৩৬) ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, মদিনার জনগণের পারস্পরিক সাংবিধানিক চুক্তি সম্পাদন - হিজরীবর্ষ-১ এর মধ্যভাগ

(৩৭) প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন শুরু –হিজরতের ৭ম মাসের শুরুতে।
(সামরিক মহড়াও টহলদানের জন্য একের পর এক তিনটে সেনাদল প্রেরণ-(১) সপ্তম মাসে হযরত হামযার নেতৃত্বে ৩০ ব্যক্তির সেনাদল সাইফুল বাহর পর্যন্ত চলে যায়। (২) ৮ম মাস শওয়ালে ৬০ বা ৮০ জনের বাহিনী উবাইদা ইবনুল হারেসের নেতৃত্বে রাবেগ পর্যন্ত গমন করে। (৩) নবম মাস জিলকদে সা’দ ইবনে ওয়াক্কাসের নেতৃত্বে ২০ জনের সেনাদল খায়বার পর্যন্ত যায়। এর পর রসূল সা. স্বয়ং একটি দল নিয়ে ওয়াদ্দান পর্যন্ত যান। এই বাস্তব পরিস্থিতির কারণে জেহাদের অনুমতি সম্বলিত বিখ্যাত আয়াত হিজরী ২ সালে নযিল হয়েছে- এই বক্তব্যের সাথে আমি একমতহতে পারিনি। হিজরী ২ সালে আসলে সশস্ত্র জেহাদের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর আগে সংঘর্ষে যাওয়া থেকে বিরত থাকা হতো। কিন্তু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বাস্তবায়নের জন্য অবশ্যই কোন না কোন আয়াত নাযিল হওয়া দরকার ছিল। এ জন্যই জেহাদের অনুমতি সম্বলিত আয়াত হিজরতের আগে নাযিল হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। এর উদ্দেশ্য ছিল এই যে, মুসলিম জামায়াতের মন দাওয়াতের ধৈর্যের যুগ থেকে অনাগত জেহাদের যুগের দিকে স্থানান্তরিত হোক এবং তারা যেন মদিনায় পৌছা মাত্রই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগঠিত ও বাস্তবায়িত করার কাজ শুরু করে।)

(৩৮) হযরত আয়েশার রসূলের সাথে হেরেমে আগমন -শওয়াল, ১ম হিজরী।

(৩৯) দু’জন শীর্ষ ব্যক্তিত্বের ইসলাম গ্রহণ সাবেক ইহুদী আলেম আবদুল্লাহ বিন সালাম এবং খৃস্টান সন্যাসী আবু কায়েস সারহা -হিজরীবর্ষ-১।

(৪০) জেহাদের অনুমতি (সক্রিয় সামরিক ব্যাবস্থা গ্রহণের অনুমতি) -১২ই সফর, হিজরীবর্ষ-২ বা হিজরতের ১ বছর ২মাস ১দিন পর।

(৪১) রসূল সা. এর প্রথম সশরীরে সামরিক ও রাজনৈতিক সফর ওয়াদ্দান অভিযান -হিজরতের ১২শ মাসে।

(৪২) বহিরাগত গোত্রগুলোর সাথে চুক্তিভিত্তিক মৈত্রী- বনু যামরা, বুয়াতবাসী - বনু মুদলিজ -সফর থেকে জমাদিউস সানী হিজরীবর্ষ-২।

(ঐতিহাসিকদের বিবরণ থেকে এটাও জানা যায় যে, জুহাইনা গোত্রের নেতা মাজদী জুহাইনী বনু যামরা গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার আগে থেকেই মদিনার সাথে মৈত্রী সম্পর্ক রাখতো।)

(৪৩) কারয বিন জাবের ফেহরীর ডাকাতি (শত্রুর প্রথম আগ্রাসী তৎপরতা) -রবিউল আউয়াল হিজরীবর্ষ-২।

(৪৪) নাখলার ঘটনা (মুসলিম সেনাদলের সাথে প্রথম সীমান্ত সংঘর্ষ) -রজবের শেষভাগ হিজরীবর্ষ-২।
(আমর বিন হাযরামী নামক একজন কাফের নিহত। উট ও মালপত্র সমেত ২ জন বন্দীকে মদিনায় আনায়ন। রসূল সা. কর্তৃক এই সংঘর্ষে অসন্তোষ প্রকাশ।)

(৪৫) সালমান ফারসীর ইসলাম গ্রহণ -হিজরী-২।

(৪৬) আযানের প্রচলন -হিজরী-২।

(৪৭) যাকাত ফরয হয় -হিজরী-২।

(৪৮) কেবলা পরিবর্তন -১৫ই শাবান, হিজরী-২ সোমবার।

(৪৯) রমযান মাসের রোযা ফরয হয় -১লা রমযান, হিজরী-২ বুধবার।
(যেহেতু অধিকাংশ বর্ণনা মোতাবেক বদর যুদ্ধের দিন অর্থাৎ ১৭ই রমযান শুক্রবার ছিল, তাই হিসাব অনুযায়ী ১লা রমযান বুধবার হওয়ারই কথা।
এজন্য যে বর্ণনায় ১লা রমযান রবিবার বলা হয়েছে, সেটি আমরা বাদ দিয়েছি।)

(৫০) ঈদুল ফেতরের নামায জামায়াতে পড়া ও ফেতরা দেয়ার বিধান চালু -১লা শাওয়াল, হিজরী-২

(৫১) বদর যুদ্ধ (সর্বপ্রথম নিয়মিত যুদ্ধ) -৮ই রমযান, হিজরী-২ বুধবার অথবা ১২ই রমযান
-মদিনা যাত্রা
-যুদ্ধ
(জটিল সমস্য এই যে, যুদ্ধের দিন ও তারিখ সম্পর্কে অনেকাংশে মতৈক্য থাকলেও মদিনা থেকে যাত্রার তারিখ কারো মতে ১২ই এবং কারো মতে ৮ই রমযান। যারা ৮ তারিখ লেখেন তারা ঐ দিন সোমবার বলে উল্লেখ করেন। অথচ ১৭ তারিখ শুক্রবার হলে ৮ তারিখ কিছুতেই সোমবার হতে পারেনা। তাই আমরা ৮ই রমযানের বর্ণনায় বুধবার এবং ১২ই রমযানের বর্ণনায় শনিবার উল্লেখ করেছি। তবে যে বর্ণনায় ১৭ই রমযানকে মঙ্গলবার বলা হয়েছে, সেটিকে সঠিক মেনে নিলে ১লা ও ৮ই রমযান রবিবার হওয়ারই কথা।)
-মদিনায় বিজয়ী বেশে প্রত্যাবর্তন

(৫২) হযরত আলী ও ফাতেমার বিয়ে -বদরযুদ্ধের পর হিজরী-২।

(৫৩) বনু কাইনুকা অবরোধ -শওয়ালের মাঝামাঝি থেকে যিলকদের প্রথম ভাগ পর্যন্ত হিজরী-২।

(৫৪) হযরত ওমরের মেয়ে হাফসার সাথে রাসূলের সা. বিয়ে - হিজরী-৩।

(৫৫) হযরত উসমান ও উম্মে কুলসুমের বিয়ে (রসূল সা.এর মেয়ে) -হিজরী-৩।

(৫৬) মদের প্রথম নিষেধাজ্ঞা -হিজরী-৩।

(৫৭) কা’ব বিন আশরাফকে হত্যা -হিজরী-৩ সাল।

(৫৮) ইমাম হাসানের জন্ম --হিজরী-৩ সাল।

(৫৯) ওহুদ যুদ্ধঃ মদিনা থেকে যাত্রা -৫ শওয়াল, হিজরী-৩ জুমার নামাযের পর। ৬ই শওয়াল- শনিবার।
-যুদ্ধ
-হামরাউল আসাদ পর্যন্ত আবু সুফিয়ান বাহিনীকে ধাওয়া -৭শওয়াল-রবিবার।

(৬০) সুদ ত্যাগের প্রাথমিক নির্দেশ -ওহুদ যুদ্ধের অব্যবহিত পর।
(সূরা আল-ইমরাম আয়াত-১৩০ দেখুন।)

(৬১) এতিমদের সম্পত্তি সংক্রান্ত নির্দেশাবলী -ওহুদ যুদ্ধের অব্যবহিত পর।

(৬২) উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইন -হিজরী-৩, ওহুদ যুদ্ধের পর।

(৬৩) বিয়ের আইন, স্বামী স্ত্রীর অধিকার মোশরেক মহিলা বিয়ে করার নিষেধাজ্ঞা -হিজরী-৩।

(৬৪) হযরত যয়নব বিনতে খুয়ায়মার রা. সাথে রসূল সা. এর বিয়ে -হিজরী-৩ এর শেষভাগ।
(ওহুদ যুদ্ধে বিধবা হন।)

(৬৫) রজী’র দুর্ঘটনা(দশ সদস্য বিশিষ্ট দাওয়াতী দলের শাহাদাত) -সফর, হিজরী-৪।

(৬৬) বনু নযীরের যুদ্ধ -রবিউল আউয়াল হিজরী-৪।

(৬৭) উম্মুল মুমিনীন যয়নব বিনতে খুযায়মার ইন্তিকাল -৪র্থ হিজরীর প্রথম ভাগ।

(বিয়ের মাত্র দু তিন মাস পর ইন্তিকাল করেন।)

(৬৮) পর্দার বিধান কার্যকর -১লা যিলকদ, হিজরী-৪, শুক্রবার।

(৬৯) মদের চূড়ান্ত নিষেধাজ্ঞা বলবৎ -হিজরী-৪।

(৭০) দ্বিতীয় বদর অভিযান -যিলকদ, হিজরী-৪।
(আবু সুফিয়ান তার চ্যালেঞ্জ অনুযায়ী যুদ্ধ করতে আসেনি, যুদ্ধ হয়নি।)

(৭১) দুমাতুল জান্দাল অভিযান -রবিউল আউয়াল হিজরী-৫।

(৭২) বনুল মুস্তালিক অভিযান -৩রা শাবান, হিজরী-৫।

(৭৩) তায়াম্মুমের বিধান -বনু মুস্তালিক সফরে।

(৭৪) হযরত জুয়াইরিয়ার সাথে রসূল সা. এর বিয়ে -শাবান,হিজরী-৫।

(৭৫) হযরত আয়েশার বিরুদ্ধে অপবাদ আরোপের ঘটনা -শাবান,হিজরী-৫।

(৭৬) ব্যভিচার, ব্যভিচারের অপবাদ ও দম্পতির পরস্পরের বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অপবাদ সংক্রান্ত বিধান ও পর্দার বিস্তারিত বিধান প্রবর্তন -হিজরী-৫, (হযরত আয়েশার বিরুদ্ধে অপবাদের ঘটনার পর)

(৭৭) আহযাব বা খন্দক যুদ্ধ -শওয়াল বা যিলকদ, হিজরী-৫।
(৭০/৮০টি মুসলিম পরিবারের এক বিশাল দল মদিনায় এসেছিল।)

(৭৮) মদিনায় দাওস গোত্রের প্রতিনিধি দলের আগমন -হিজরী-৫।

(৭৯) বনু কুরায়যার উচ্ছেদ -যিলহজ্জ, হিজরী-৫।

(৮০) হযরত যয়নব বিনতে জাহশের সাথে রসূল সা. এর বিয়ে -হিজরী-৫।

(৮১) নাজদের সরদার ছামামা বিন আছাল হানাফীর ইসলাম গ্রহণ -হিজরী-৬।

(৮২) হোদায়বিয়ার সন্ধি -জিলকদ, হিজরী-৬।

(৮৩) হোদায়বিয়া থেকে মদিনায় প্রত্যাবর্তন -জিলহজ্জ, হিজরী-৬।

(৮৪) খালিদ বিন ওলীদ ও আমর ইবনুল আসের ইসলাম গ্রহণ -জিলহজ্জ, হিজরী-৬।

(৮৫) আন্তর্জাতিক দাওয়াতের সূচনা (রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের নামে চিঠি প্রেরণ) -১লা মুহাররম, হিজরী-৭ বুধবার।

(৮৬) খয়বরের যুদ্ধ -মুহাররম, হিজরী-৭।

(৮৭) হযরত সফিয়ার সাথে রসূল সা. এর বিয়ে -মুহাররম, হিজরী-৭

(৮৮) আবিসিনিয়ার মোহাজেরদের প্রত্যাবর্তন -খয়বর বিজয়ের সময় হিজরী-৭।

(৮৯) সাইফুল বাহার নামক স্থানে স্বাধীন মুসলিম শিবির স্থাপন -হিজরী-৭ এর শুরু।
(হোদায়বিয়ার সন্ধির শর্ত অনুযায়ী রসূল সা. মক্কার নির্যাতিত মুসলমানদেরকে মদিনায় আশ্রয় দিতে অসমর্থ ছিলেন। তাই আবু জানদাল ও আবু বসীর সহ বেশ কিছু নির্যাতিত মুসলমান মক্কা থেকে পালিয়ে সাইফুল বাহারে সমবেত হন।)

(৯০) সাইফুল বাহারের জওয়ানদের পথ থেকে কোরায়েশ কাফেলার ওপর গেরিলা আক্রমণ -সফর, হিজরী-৭।

(৯১) ওমরাতুল কাযা -যিলকদ, হিজরী-৭।

(৯২) বিয়ে ও তালাকের বিধান প্রবর্তিত -হিজরী-৭।

(৯৩) হযরত মায়মূনার সাথে রসূল সা. এর বিয়ে (মক্কায়) -হিজরী-৭।

(৯৪) জাবালা গাসসানীর ইসলাম গ্রহণ -হিজরী-৭।

(৯৫) মূতার যুদ্ধ -জমাদিউল উলা হিজরী-৭।

(৯৬) মক্কার মোশরেকদের পক্ষ থেকে হোদায়বিয়ার সন্ধি ভঙ্গ -রজব,হিজরী-৮।

(৯৭) মক্কা অভিযান:
-মদিনা থেকে যাত্রা- ১০ রমযান, বুধবার, ৮ম হিজরী।
-মক্কায় বিজয়ী বেশে প্রবেশ -২০শে রমযান
(বিশ্বস্ত সূত্রে এও জানা যায় যে, রসূল সা. ১৮ই রমযান পর্যন্ত মদিনায় ছিলেন। এ হিসাবে মক্কা প্রবেশের তারিখ ২৯ বা ৩০শে রমযান হওয়ার কথা।)
-নাখলায় অবস্থিত উযযার মন্দির ধ্বংস করার জন্য খালেদের নেতৃত্বে সেনাদল প্রেরণ -২৫শে রমযান হিজরী-৮।
-সুয়া’ মন্দির ধ্বংস করার জন্য আমর ইবনুল আসের নেতৃত্বে সেনাদল প্রেরণ -রমযান, হিজরী-৮।
-মানাত মন্দির ধ্বংসের জন্য সা’দ আশহালীর নেতৃত্বে সেনাদল প্রেরণ -রমযান, হিজরী-৮
-মক্কায় অবস্থান -৯ই শওয়াল পর্যন্ত।
(অন্য বর্ণনা অনুসারে ১৮ই শওয়াল পর্যন্ত।)
-হোনায়েন যুদ্ধ -শওয়াল, হিজরী-৮।
-তায়েফ অবরোধ -শওয়াল যিলকদ ১৮থেকে২০দিন।
(মাকলুলের বর্ণনা অনুযায়ী ৪০দিন ব্যাপী অবরোধ।)
-জারানায় গনীমত বন্টনের পর জারানার ওমরা -জিলকদ, হিজরী-৮।

(৯৮) সূদের চূড়ান্ত বিলুপ্তির আইন -মক্কা বিজয়ের সময় হিজরী-৮।
(সূদের সমস্ত দাবী বাতিল -বাকারাঃ২৭৮)

(৯৯) মদিনায় সাদার প্রতিনিধি দলের আগমন -হিজরী-৮।

(১০০) রসূল সা. এর কন্যা হযরত যয়নবের ইন্তেকাল -হিজরী-৮।
-রসূল সা. এর ছেলে হযরত ইব্রাহীমের ইন্তেকাল -হিজরী-৮।

(১০১) যাকাত ব্যবস্থা। যাকাত আদায় কারীদের প্রথম নিয়োগ -মুহাররম, হিজরী-৯।

(১০২) তবুক যুদ্ধ -রজব, হিজরী-৯ মোতাবেক নভেম্বর ৬৩৫ খৃ।
-মদিনা থেকে যাত্রা শুরু -বৃহস্পতিবার।

(১০৩) জিযিয়ার বিধান -তবুক অভিযান কালে।
(এক বর্ণনা অনুযায়ী তবুকের পূর্বে অষ্টম হিজরীতে চালু হয়।)

(১০৪) মসজিদে যিরার ভস্মীভূত -তবুক যুদ্ধ থেকে ফেরার পর।

(১০৫) দুমাতুল জানদালের শাসক উকাইদিরের ইসলাম গ্রহণ -হিজরী-৯।

(১০৬) কা’ব বিন যুহাইরের ক্ষমা প্রার্থনা ও ইসলাম গ্রহণ -হিজরী-৯।
(‘বানাত, সুয়াদ’ শীর্ষক কবিতা উপস্থাপন)

(১০৭) এ বছর মদীনায় আগত কয়েকটি প্রতিনিধি দলঃ
-আযরার প্রতিনিধি দল -সফর, হিজরী-৯।
-বাল্লীর প্রতিনিধি দল -রবিউল আউয়াল হিজরী-৯।
-খাওলানের প্রতিনিধি দল -শাবান, হিজরী-৯।
-সাকীফের প্রতিনিধি দল -হিজরী-৯।

(১০৮) হজ্জ ফরয হয় -৯ই জিলহজ্জ, হিজরী-৯।
হযরত আবু বকর সিদ্দীকের নেতৃত্বে প্রথম হজ্জ।
(বিভিন্ন হাদীসে ৬,৭,৮,৯ ও ১০ম হিজরীতে হজ্জ ফরয হয় বলে উল্লেখ আছে। তবে ৯ম হিজরীর বর্ণনাই আমার দৃষ্টিতে অগ্রগণ্য। কেউ কেউ বলেন, কাফেরদের ক্যালেন্ডার ব্যবহারের দরুন যিলকদ মাসে এই হজ্জ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এ মতটি দুর্বল।)

(১০৯) হযরত আলীর মাধ্যমে মোশরেকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ ও সমস্ত অমেয়াদী চুক্তি বাতিল ঘোষণা -১০ রবিউস সানী. জিলহজ্জ হিজরী-১০।(সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা নিয়েও মতভেদ আছে যে, এটি আরাফার দিন না কুরবাণীর দিন(৯ই জিলহজ্জ না ১০ই জিলহজ্জ) হয়েছিল। কোরআন ও হাদীসের আলোকে আমার মতে ১০ই জিলহজ্জের মতই অগ্রগণ্য।)

(১১০) মোহারেবের প্রতিনিধি দল -হিজরী-১০।
(অন্যান্য প্রতিনিধি দলেরও বেশীর ভাগ ৯ ও ১০ম হিজরীতে মদিনায় আসে। তবে তাদের আগমনের সঠিক সময় চিহ্নিত করা দুরূহ।)
মোহামেদের প্রতিনিধি দল -শাবান, হিজরী-১০।
খা্ওলানের প্রতিনিধি দল -শাবান, হিজরী-১০।
নাইসানের প্রতিনিধি দল -রমযান, হিজরী-১০।
বনু হারেস বিন কা’বের প্রতিনিধি দল -শওয়াল, হিজরী-১০।
সালামের প্রতিনিধি দল -শওয়াল, হিজরী-১০।

(১১১) শেষ রমযানে রসূল সা. কর্তৃক বিশ দিন এ’তেকাফ -রমযান, হিজরী-১০।

(১১২) রসূল সা. এর সাথে মুসায়লামা কাযযাবের প্রত্রালাপ -হিজরী-১০।

(১১৩) বিদায় হজ্জঃ
-মদিনা থেকে যাত্রা -২৬ যিলকদ, হি:-১০ শনিবার জোহর ও আছরের মধ্যবর্তী সময়।
(এ ব্যাপারেও তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। তবে আমি যেটা গ্রহণ করেছি, ওটাই অধিকতর নির্ভরযোগ্য)
-যুল হুলাইফায় অবস্থান -শনি ও রবিবারের মধ্যবর্তী রাত।
-এহরাম বাঁধা –রবিবার (জোহরের সময়)।
-যী তুয়াতে অবস্থান -রবিবার রাত, ৪জিলহজ্জ হি:১০।
-যীতুয়া থেকে মক্কায় রওয়ানা -৫ই জিলহজ্জ, ফজরের নামাযের পর।
(ছানিয়াতুল আলীলা দিক থেকে রসূল সা. এর মক্কায় প্রবেশ।)

-মসজিদুল হারামে প্রবেশ -৫ই জিলহজ্জ দুপুর।
(বনু আবদ মানাফ গেট দিয়ে রসূল সা. এর প্রবেশ।)

-মক্কার বাইরে ৮ই জিলহজ্জ পর্যন্ত অবস্থান
(সকল সাহাবীর রসূল সা. এর সাথে অবস্থান, মিনায় রাত্রি যাপন।)

-মিনায় যাত্রা -৮ই জিলহজ্জ বৃহস্পতিবার দুপুর।
-মিনা থেকে আরাফাত যাত্রা -৯ই জিলহজ্জ শুক্রবার সূর্যোদয়ের পর।
(আরাফাতের পূর্ব প্রান্তে নামিরার পথ দিয়ে প্রবেশ।)

-হজ্জের খুতবা বা ভাষণ দান -৯ই জিলহজ্জ শুক্রবার জোহরের পর।
(কুসওয়া নাম্নী উটনীর পিঠের ওপর থেকে ভাষণ দান।)

-আরাফায় অবস্থান -৯ই জিলহজ্জ শুক্রবার জোহর ও আছরের নামাজের পর।
(এখানে রসূল সা. মাগরিব পর্যন্ত আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি সহকারে দোয়া করেন।)

-আরাফা থেকে মুযদালিফা অভিমুখে যাত্রা -৯ই জিলহজ্জ, বাদ মাগরিব।
(মাযবীন রাস্তা ধরে প্রত্যাবর্তন।)

-মুযদালিফা থেকে

মাশায়ারে হারাম যাত্রা -১০ই জিলহজ্জ ফজরের নামায বাদ।
(এখানে রসূল সা. কাঁদাকাটি সহকারে যিকর ও দোয়া করেন।)

-মাশায়ারে হারাম থেকে মিনা অভিমুখে যাত্রা -১০জিলহজ্জ সূর্যোদয়ের পূর্বে।
-পাথর নিক্ষেপ -১০ই জিলহজ্জ সূর্যোদয়ের পর দুপুর পর্যন্ত।
(এই সময়ে রৌদ্র প্রখর হয়ে গিয়েছিল।)

-মিনায় ভাষণ (কুরবানীর দিন) -১০ই জিলহজ্জ দুপুরের পূর্বে।
-কুরবানী -ভাষণের পর।

(কুরবানীর একশো উটের মধ্য থেকে ৬১টি নিজ হস্তে জবাই করেন। বাকীগুলোকে হযরত আলীর হাতে সমর্পন করেন।এরপর মাথা কামালেন।)

-মিনা থেকে মক্কা যাত্রা -১০ই জিলহজ্জ মাথা কামানোর পর।
(মক্কা পৌঁছে যোহরের পূর্বে কা’বা তাওয়াফ করলেন।)

-মক্কা থেকে মিনায় প্রত্যাবর্তন -শেষ দিন।
(রাত কাটান মিনায়।)

-মিনার দ্বিতীয় ভাষণ -১১ই জিলহজ্জ।
(এ ভাষণের বিষয় আবু দা্উদে উল্লেখ আছে।)


-মিনা থেকে মুহাসসাব বা আবতাহ যাত্রা -১৩ই জিলহজ্জ মঙ্গলবার।
(রাতে মক্কা থেকে যেয়ে বিদায়ী তওয়াফ করেন।)

-মক্কা থেকে প্রত্যাবর্তন -১৩ ও ১৪ই জিলহজ্জের মধ্যবর্তী রাত।

(১১৪) নাখা’র প্রতিনিধি দলের আগমন -মুহাররমের মধ্যবর্তী সময়, ১১ হিজরী।

(রসূল সা. এর জীবদ্দশায় আগত সর্বশেষ প্রতিনিধি দল।)

(১১৫) উসামা বাহিনীকে যাত্রার নির্দেশ -২৬শে সফর, হিজরী ১১।
(রসূল সা. এর নির্দেশে সর্বশেষ সামরিক অভিযান।)

(১১৬) রসূল সা. এর মৃত্যুব্যাধি শুরু -সফরের শেষভাগ হি:১১।(সম্ভবত: ২৯ সফর)।
(নির্ভরযোগ্য মতে রোগাক্রান্ত থাকার মেয়াদ ১৩দিন।)

(১১৭) রোগের চরম আকার ধারণ (হযরত আয়েশার কক্ষে ইন্তিকাল পর্যন্ত সাত দিন অবস্থান)।

(১১৮) মসজিদে নববীতে জামায়াতে সর্বশেষ নামায ও সর্বশেষ ভাষণ -ইন্তিকালের ৫দিন আগে বৃহস্পতিবার জোহরের নামায।
(বিভিন্ন হাদীসে একাধিক ভাষণের উল্লেখ রয়েছে। তবে সম্ভবত এই একই ভাষণে ঐ সব কথা বলেছেন।)

(১১৯) ইন্তিকাল -১২ই রবিউল আউয়াল হি: সোমবার দুপুরের আগে।
(সোমবার সম্পর্কে সবাই একমত। কিন্তু তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ ১ তারিখ, কেউ ২ তারিখ, আবার কেউ ১৩ তারিখও বলেছেন।)

(১২০) দাফন (হযরত আয়েশার কক্ষে কবর তৈরী) -১৩ই রবিউল আউয়াল ও ১৪ই রবিউল আউয়ালের মধ্যবর্তী রাত।
(আসল সমস্যা হলো, ৯ই জিলহজ্জ যে শুক্রবার ছিল তা অকাট্যভাবে প্রমাণিত। এর ভিত্তিতে হিসাব করলে ১২ই রবিউল সোমবার ছাড়া অন্য কোন দিন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কেবল একাধারে তিনটে চন্দ্রমাস যদি ত্রিশ দিনের হয়, তবেই তা সম্ভব। তবে কেউ কেউ বলেন, বিরল হলেও তা সম্ভব। তাছাড়া মক্কা ও মদিনায় আবহাওয়াগত কারণে চাঁদ দেখায় একদিনের ব্যবধান হওয়াও সম্ভব।)


পরিশিষ্ট-২
যে যে ঘটনা সর্বপ্রথম ও সবার আগে

- নবুয়তের সূচনাঃ ৯ই রবিউল আউয়াল, জন্মবর্ষ বা বয়স-৪১।
- কোরআন নাযিল হওয়ার সূচনাঃ সূরা আলাক, ১৮ই রমযান, নবুয়ত বর্ষ-১।
- সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ পূর্বক রসূল সা. এর সহকর্মীরূপে যোগদানকারী।
১. নারী ও পুরুষের সম্মিলিতভাবেও এবং শুধু নারীদের মধ্যেও সর্বপ্রথম হযরত খাদীজা রা.।
২. পরিপক্ক জ্ঞান সম্পন্ন ও সচেতন স্বাধীন পুরুষদের মধ্যে হযরত আবু বকর রা.।
৩. নবীন যুবকদের মধ্যে হযরত আলী রা.।
৪. দাস শ্রেণীর মধ্যে হযরত যায়েদ বিন হারেসা রা. (রসূল সা. এর গোলাম ও পরে মুক্ত)
- হযরত খাদীজার পরে প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী মহিলাঃ লুবাবা বিনতুল হারেস। ইনি হযরত আব্বাসের স্ত্রী ছিলেন।
- হযরত আরাকামের বাড়ী কেন্দ্রিক দাওয়াতের সময় প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীঃ আকেল বিন বুকাইর রা.।
- ইসলামী আন্দোলনের প্রথম কেন্দ্রঃ সাফা পর্বতে অবস্থিত দারে আরকাম (হযরত আরকামের বাড়ী)
- সর্বপ্রথম প্রকাশ্য ভাষণঃ সাফা পর্বতে নবুয়তের তৃতীয় বছর।
সর্বপ্রথম যে আয়াত কাফেররা ক্ষিপ্ত হয়-
(*******)
- রসূল সা. এর পর যে সাহাবী সর্বপ্রথম নিজের ইসলাম প্রকাশ করেন, তিনি হচ্ছেন হযরত খাব্বাব ইবনুল আরত তামীমী।
- সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ ইসলামী পরিবারঃ হযরত আবু বকর সিদ্দীকের পরিবার।
- সর্বপ্রথম যে মহিলা আশৈশব মুসলিম পিতামাতার কোলে বেড়ে ওঠেনঃ হযরত আয়েশা রা.।
- ইসলামী উদ্দীপনায় সর্বপ্রথম অনিচ্ছাকৃত হত্যাঃ হযরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাসের হাতে জনৈক কাফের নিহত হয়। ঘটনাটা ছিল এই যে, মক্কার বাইরে গিয়ে মুসলমানরা নামায পড়ছিল। কাফেররা এই সময় তাদেরকে উত্যক্ত করলে হযরত সা’দ একখানা হাড্ডি তাদের দিকে ছুঁড়ে মারেন। হাড্ডিটা গায়ে লেগে এক কাফের তৎক্ষণাত মারা যায়।
- রসূল সা. এর ভাষায় হযরত ইবরাহীম ও হযরত লুত আ. এর পর সর্বপ্রথম আল্লাহর পথে হিজরতকারী মুসলিম দম্পতি ছিলেন আবিসিনিয়ায় হিজরতকারী রসূল সা. এর মেয়ে রুকাইয়া ও জামাতা হযরত উসমান রা.।
- ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসে সর্বপ্রথম উত্তোলিত পতাকাঃ হযরত বারীদা আসলামীর হাতে উত্তোলিত পতাকা। এ সময় তিনি হিজরতে যাচ্ছিলেন।
- যে সাহাবী সর্বপ্রথম কাবা শরীফের সামনে প্রকাশ্যে উচ্চস্বরে কালেমা পড়ে ইসলাম গ্রহণ করে কাফেরদের গণপিটুনির শিকার হন, তিনি হচ্ছেন হযরত আবু যর গিফারী রা.।
- যিনি সর্বপ্রথম নিজের ইসলাম গ্রহণকে জোরদারভাবে প্রকাশ করেন, তিনি হযরত ওমর রা.।- যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করায় সর্বপ্রথম কা’বা শরীফে নামায পড়া শুরু হয়ঃ হযরত ওমর রা.
- যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করার পর কাফেররা সর্বপ্রথম অনুভব করে যে, ইসলামী আন্দোলন শক্তিশালী হয়েছে, তিনি হচ্ছেন হযরত হামযা রা.।
- সর্বপ্রথম মদিনার মুসলিম নেতা, যিনি মক্কার কাফেরদের হাতে মার খানঃ হযরত সা’দ বিন মুয়ায রা.।
- হারাম শরীফে শাহাদাত লাভকারী প্রথম মুসলিমঃ হযরত হারেস বিন আবি হালা।
- চরম নির্যাতনে শাহাদাত বরণকারী প্রথম মুসলিম মহিলাঃ হযরত ইয়াসারের স্ত্রী ও হযরত আম্মারের মা হযরত সুমাইয়া রা.।
- যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম বনু হাশেমের বিরুদ্ধে কাফেরদের বয়কট চুক্তি বাতিল করার চেষ্টা চালানঃ হিশাম বিন আমর বিন রবিয়া।
- সর্বপ্রথম যে মুসলিমের চোখ ইলামের পথে শহীদ হয়ঃ হযরত উসমান ইবনে মাযউন রা.। কোরায়েশদের মজলিশে লাবীদের একটা ইসলাম বিরোধী কবিতায় তিনি আপত্তি করলে তাঁর চোখ ফুটো করে দেয়া হয়।
- সর্বপ্রথম মদীনায় হিজরতকারী মুসলমানঃ হযরত আবু মুসলিমা রা.।
- প্রথম মুরতাদ বা ইসলাম ত্যাগকারীঃ আবিসিনিয়ায় হিজরতকারী উবাইদ বিন জাহশ। ওখানে গিয়ে সে খৃষ্টান হয়ে যায়।
- ইসলামের প্রতিরক্ষায় সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপকারীঃ হযরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রা.। আবদুল হারেসের নেতৃত্বে পরিচালিত সেনাদলে তিনি শত্রুকে লক্ষ্য করে তীর ছোঁড়েন। কিন্তু এতে কেউ হতাহত হয়নি।
- ইসলামের প্রতিরক্ষায় সর্বপ্রথম অসি চালনাকারীঃ হযরত যুবায়ের ইবনুল আওয়াম।
- আবিসিনিয়ায় দ্বিতীয়বার হিজরতে প্রথম মোহাজেরঃ হযরত জাফর বিন আবু তালেব।
- রসূল সা. এর দাওয়াতে প্রভাবিত মদিনার প্রথম যুবকঃ সুয়াইদ বিন সামেত।
- হিজরতের পর মদিনায় সর্বপ্রথম ওফাতপ্রাপ্ত আনসারী সাহাবীঃ কুলসুম ইবনুল হাদাম, যার কোবাস্থ বাড়ীতে রসূল সা. হিজরতের পর কয়েকদিন অবস্থান করে।
- ইসলামী আত্মমর্যাদাবোধের ভিত্তিতে সংঘঠিত প্রথম ব্যক্তিগত হত্যাকান্ড, নারীঃ আসমা বিনতে মারওয়ান খাতামিয়া। এই মহিলা স্বীয় গোত্রের লোকদেরকে সব সময় রসূল সা. এর বিরুদ্ধে উস্কানী দিত এবং কুৎসা রটাতো। এক পর্যায়ে তার ইসলাম গ্রহণকারী ভাই হযরত উমাইর বিন আদী আল খাতামী উত্তেজিত হয়ে তাকে হত্যা করে। (রমযান, হিঃ ২)
- ইসলামী আত্মমর্যাদাবোধের ভিত্তিতে সংঘঠিত সর্বপ্রথম ব্যক্তিগত হত্যাকান্ড, পুরুষঃ ইহুদী আবু গাফলা। সে রসূল সা. ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে চরম মিথ্যা অপপ্রচারে লিপ্ত থাকতো। হযরত আলেম ইবনে উমায়ের আনসারী উত্তেজিত হয়ে তাকে হত্যা করেন।
- মদিনায় সর্বপ্রথম ইসলামী শিক্ষক নিয়োগঃ হযরত মুসায়াব ইবনে উমাইরকে (ইবনে উম্মে মাকতুম সহযোগে) রসূল সা. আনসার প্রতিনিধি দলের সাথে মদিনায় পাঠান। (নবুয়ত বর্ষ-১৪)
আকাবার দ্বিতীয় বায়য়াতে সর্বপ্রথম বায়াতকারী আনসারী সাহাবীঃ বরা বিন মারূর।
- মদিনায় সর্বপ্রথম সামষ্টিক কোরআন শিক্ষার আসরঃ মসজিদে বনী রিযীকে অনুষ্ঠিত হয়। (সম্ভবত এটি কোন পূর্ণাঙ্গ মসজিদ ছিলনা। কেবল নামায পড়ার জায়গা ছিল।
- সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ মসজিদ নির্মাণঃ মসজিদে কোবা, এটি ৮ থেকে ১১ই রবিউল আউয়াল, হিজরী ১ সালে নির্মিত হয়।
- রসূল সা. এর ইমামতিতে অনুষ্ঠিত প্রথম জুমার নামাযঃ হিজরী ১ সনের ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে বনী সালেম গোত্রের এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে নামাযীর সংখ্যা ছিল একশো জন।
- মদীনায় এক সাথে গোটা গোত্রের ইসলাম গ্রহণের প্রথম ঘটনাঃ বনু আব্দুল আশহাল। এই গোত্রের কেবলমাত্র এক ব্যক্তি কিছু পরে ইসলাম গ্রহণ করেছিল।
- ইসলামী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে টহল দেয়ার জন্য বহির্গত সর্বপ্রথম সেনাদলঃ হযরত হামযর নেতৃত্বে গঠিত সেনাদল হিজরতের ৭ম মাসে সাইফুল বাহর পর্যন্ত টহল দেয়।
- ইসলামী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আওতায় সর্বপ্রথম পতাকা বহনকারীঃ আবু মুরছাদ আল-গানাবী।
- রসূল সা. এর প্রথম প্রত্যক্ষ সামরিক ও রাজনৈতিক পদক্ষেপঃ ওয়াদ্দান বা আবওয়া অভিযান। হিজরতের দ্বাদশ মাসে এটি সংঘটিত হয়।
- মদীনায় রসূল সা. এর নিযুক্ত প্রথম ভারপ্রাপ্ত শাসকঃ সা’দ বিন উবাদা রা. (ওয়াদ্দান অভিযানের সময়)।
- রসূল সা. এর সওয়ারীতে প্রথম পতাকা ওড়ানোর গৌরবের অধিকারীঃ হযরত হামযা, ওয়াদ্দান অভিযানে।
- কোরায়েশের পক্ষ থেকে ইসলামী রাষ্ট্রের ওপর প্রথম আগ্রাসী তৎপরতা পরিচালনাকারীঃ কারয বিন জাবের ফেহরীর ডাকাতি (রবিউল আউয়াল হিঃ২)।
- প্রথম সীমান্ত সংঘর্ষ যাতে শত্রুপক্ষীয় একজন নিহত হয়ঃ নাখলা অঞ্চলে টহলরত সেনাদলের সদস্য ওয়াকেদ বিন আবদুল্লাহ তামিমীর তীর নিক্ষেপে জনৈক কাফের নিহত হয়। (রজব, হিঃ ২)
- গণিমত ও বন্দী সব মদিনায় নিয়ে আসার প্রথম ঘটনাঃ নাখলা অঞ্চলের উপরোক্ত ঘটনা।
- আযানের সূচনাঃ হিজরী ২ সালে।
- কা’বা শরীফে প্রথম আযানঃ মক্কা বিজয়ের সময় হযরত বিলাল কর্তৃক প্রদত্ত।
- সর্বপ্রথম মিথ্যা নবুয়তের দাবীদারঃ মুসাইলাম কাযযাব।
- সর্বপ্রথম লিখিত নিরাপত্তা পত্র, যা রসূল সা. প্রদান করেনঃ সুরাকা বিন জা’শাম এর জন্য (হিজরতের সফরের সময়)।
- দুনিয়ার প্রথম আনুষ্ঠানিক লিখিত যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধানঃ হিঃ ১ সনে মদিনায় রসূল সা. কর্তৃক রচিত ও প্রবর্তিত।
- মদিনার বাইরে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রথম মৈত্রী চুক্তিঃ বনু যামরার নেতা আমর বিন ফাহশী যামরীর সাথে বা বনু যামরা গোত্রের সাথে।
- ইসলাম গ্রহণের দায়ে প্রথম ক্রুশবিদ্ধ হয়ে শহীদঃ হযরত খুবাইব ইবনে আদী ও যায়দ বিন দাসনা।(মক্কার নিকটবর্তী) তানয়ীমে।
- মদীনায় ইহুদীদের প্রথম বিদ্রোহাত্মক ও বিশ্বাসঘাতকতামূলক তৎপরতাঃ বনূ কাইনুকা কর্তৃক জনৈক মুসলিম নারীকে প্রকাশ্যে বাজারে উলংগ করে দেয়ায় ইহুদী-মুসলিম দাংগা।
- প্রথম মুক্তি ইসলামী শিবিরঃ সাইফুল বাহরে হযরত আবু বসীর ও আবু জানদাল কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শিবির।
- মক্কা বিজয়ের সময় সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেঃ আবু সুফিয়ান বিন হারেস বিন আবদুল মুত্তালিব।
- প্রথম আনুষ্ঠানিক যুদ্ধঃ বদর যুদ্ধ (রমযান হিঃ২)।
- সর্বপ্রথম যে যুদ্ধে আনসার ও মোহাজেরগণ একত্রে অংশগ্রহণ করেনঃ বদর যুদ্ধ।
- বদরের ময়দানে মুসলিম বাহিনীর প্রথম তিনজন লড়াকু মোজাহেদঃ হযরত আলী, হযরত হামযা, হযরত ওবায়দা বিন হারেস বিন আবদুল মুত্তালিব।
- বদর যুদ্ধে প্রথম নিহত শত্রুঃ আসওয়াদ বিন আব্দুল আসাদ।
- বদর যুদ্ধে প্রথম শহীদঃ হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাবের মুক্ত গোলাম মিহজা।
- মদিনায় বদর জয়ের সুসংবাদ বাহক প্রথম দূতঃ যায়দ বিন হারেসা রা.।
- প্রথম ঈদুল ফিতরের নামাযঃ ১লা শওয়াল হিজরী-২।
- ইসলামী রাষ্ট্রের প্রথম দূত, যাকে পথিমধ্যে হত্যা করা হয়ঃ হারেস বিন উমাইর আযদী। সিরিয়ার শাসনকর্তা শুহারবীল বিন আমর গাসসানী তাকে হত্যা করে।
- রসূল সা. প্রদত্ত প্রথম বীরত্বের খেতাবঃ হযরত খালেদ বিন ওলীদকে প্রদত্ত “সাইফুল্লাহ” খেতাব (মূতার যুদ্ধ, হিঃ ৮)।
- সরকারী চিঠিপত্র ও দলীলে প্রথম সিল ব্যবহারঃ ১লা মুহাররম, হিঃ ৭।
- ইসলামী বিধানের অধীনে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক শালিশীর ঘটনাঃ হিজরী ৫ সালে ইসলাম রাষ্ট্র ও বনু কুরাইযার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়।
- ইসলামী যুগে প্রথম যে সাহাবীকে সালিশ নিয়োগ করা হয়ঃ হযরত সা’দ বিন মুয়ায।
- রসূল সা. এর কাছে প্রেরিত প্রথম রাজকীয় উপহারঃ বাদশাহ নাজ্জাশী কর্তৃক প্রেরিত উপহার।
- আরবের মোশরেকদের মধ্য থেকে সর্বপ্রথম যে ব্যক্তির উপহার রসূল সা. গ্রহণ করেনঃ আবু সুফিয়ান (হোদায়বিয়ার সন্ধির যুগে)।
- প্রথম সাবেক গোলাম, যাকে সেনাপতি বানানো হয়’ যায়দ বিন হারেসা (মূতার যুদ্ধ)।
- যে যুদ্ধে সর্বপ্রথম বাইতুল মালের জন্য এক পঞ্চমাংশ বের করা হয়ঃ বনু কাইনুকা বা বনু কুরাইযার যুদ্ধ।
- কলেমায়ে তাইয়েবা উচ্চারণকারী কাফেরকে হত্যার প্রথম ঘটনাঃ জুহায়না অভিযানকালে উসামা ইবনে যায়দের হাতে নাহীক বিন মারদুস নিহত হয়। (রমযানঃ হিঃ ৭)।
- সর্বপ্রথম মুসলমানদের বিপুল সংখ্যাগুরু অংশ সাময়িকভাবে সিদ্ধান্তহীনতায় আক্রান্ত হয়ঃ হোদায়বিয়ার সন্ধিকালে।
- রসূল সা. এর হাতে প্রথম নিহত ব্যক্তিঃ হারেস বিন আয্-যাম্মা (ওহুদ যুদ্ধ)।
- প্রথম জান্নাতবাসী শহীদ, যিনি একবারও নামায পড়া রোযা রাখার সুযোগ পাননিঃ হযরত উসাইরিম রা.। বনু আব্দুল আশহাল গোত্রের এই ব্যক্তি ওহুদ যুদ্ধের দিন ইসলাম গ্রহণ করে তৎক্ষণাত জেহাদে অংশগ্রহণ করেন এবং শাহাদাত পান।
- প্রথম শহীদ, যিনি মৃত্যুর পূর্বে নামায পড়ার সুন্নাত চালু করেনঃ হযরত খুবাইব রা.।
- বীরে মাঊনার ঘটনার প্রথম শহীদঃ হারাম ইবনে মিলহান রা. (হযরত আনাসের মামা)।
- প্রথম “সালাতুল খাওফ” (ভয়ের নামায) পড়া হয়ঃ উসফান বা যাতুর রিকার যুদ্ধে।
- প্রথম নামাযী, যার গায়ে তিনটে তীর বিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও নামায ছাড়েননিঃ আব্বাদ বিন বাশার (যাতুর রিকা যুদ্ধে)।
- মদিনায় প্রথম মুরতাদঃ হারেস বিন সুয়াইদ বিন সামেত। ওহুদ যুদ্ধে মুসলমান অবস্থায় অংশ গ্রহণ করার পরও সে মুরতাদ হয়ে যায়। তবে মুজাযযার বিন যিয়াদ বালাভীকে হত্যা করে মক্কায় পালিয়ে যায়। পরে মদিনায় এলে গ্রেফতার ও নিহত হয়।
- যুদ্ধের ময়দানে ভুলক্রমে জনৈক মুসলমানের হাতে নিহত প্রথম মুসলমানঃ হিশাম বিন ইসাবা (উবাদা বিন সামেতের হাতে)।
- সর্বপ্রথম শত্রু পক্ষীয় গুপ্তচর গ্রেফতার ও নিহত হয়ঃ বনুল মুসতালিক যুদ্ধে।
- প্রথম মুসলমান যুবক, যে স্বীয় মোনাফেক পিতাকে হত্যা করার জন্য রসূল সা. এর কাছে অনুমতি চায়ঃ তালহা বিন আব্দুল্লাহ বিন উবাই।
- হযরত আয়েশাকে অপবাদ সংক্রান্ত ঘটনার তথ্য জ্ঞাপনকারী প্রথম ব্যক্তিঃ মিসতাহ বিন আসাসার মাতা।
- হযরত আয়েশার সতীত্বের পক্ষে প্রথম সাক্ষীঃ পুরুষদের মধ্য থেকে উসামা বিন যায়দ, মহিলাদের মধ্য থেকে বারীরা রা. এবং রসূল সা. এর স্ত্রীদের মধ্য থেকে যয়নব বিনতে জাহাশ।
- ব্যভিচারের অপবাদ আরোপের শরীয়ত সম্মত শাস্তির প্রথম প্রয়োগঃ হাসসান বিন সাবেত, মিসতাহ বিন আসাসা ও হিমনা বিনতে জাহাশের ওপর।
- সর্বপ্রথম যে যুদ্ধে মুসলমানদের একাধিক নামায একাদিক্রমে কাযা হয়ঃ খন্দক যুদ্ধে।
- শত্রুর শক্তি খর্ব করার জন্য সর্বপ্রথম সফল কূটনৈতিক প্রচেষ্টাঃ নঈম ইবনে মাসঊদের মাধ্যমে খন্দক যুদ্ধে এই প্রচেষ্টা চালানো হয়।
- প্রথম মুসলিম তীর নিক্ষেপক, যিনি একাকী ডাকাতদের একটি দলকে পরাজিত করেনঃ সালামা ইবনুল আকওয়া।
- সর্বপ্রথম রসূল সা. এর মুখ দিয়ে স্বতস্ফূর্ত কবিতা আবৃত্তির ঘটনাঃ হোনাইন যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী বিক্ষিপ্ত হয়ে গেলে রসূল সা. একাকী হয়ে যান। তখন তিনি নিজের সাদা খচ্চরে চড়ে উচ্চস্বরে আবৃত্তি করতে থাকেনঃ
(*************)
অর্থাৎ “আমি নিসন্দেহে নবী। আমি আব্দুল মুত্তালিবের বংশধর।”
- সর্বপ্রথম যাকাত বিভাগীয় কর্মচারী নিয়োগঃ মুহাররম ৯ম হিজরী।
- সর্বপ্রথম মুসলিম বাহিনী কামান ব্যবহার করে দুর্গ ভাংগেঃ তায়েফ অভিযানে।
- সর্বপ্রথম যুদ্ধবন্দী বিনিময়, যা মদিনার ইসলামী সরকার ও মক্কাবাসীর মধ্যে সংঘটিত হয়ঃ নাখলা অভিযানে ধৃত দু’জন যৌথ বন্দী আত্তাব বিন আব্দুল্লাহ ও হাকাম বিন কায়সারের বিনিময়ে সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস ও উতবা বিন গাযওয়ানকে মুক্ত করা হয়।
- সর্বপ্রথম যে যুদ্ধে মোহাজেরদেরকে ঘোড়ার অংশ দেয়া হয়ঃ বনু কুরায়যা যুদ্ধ।
- সর্বপ্রথম জিযিয়া গ্রহণের নির্দেশঃ তাবুক যুদ্ধের কিছু আগে নাযিল হয়।
- সর্বপ্রথম জিযিয়ার প্রশ্নে মতৈক্য হয়ঃ দুমাতুল জান্দালের শাসকের সাথে (তবুক অভিযানকালে)।
- সর্বপ্রথম বিপুল পরিমাণ জিযিয়া প্রদানের চুক্তি সম্পাদিতঃ নাজরানের খৃষ্টানরা ইসলামী সরকারকে বাৎসরিক দু’হাজার পোশাক এবং প্রয়োজনের সময় সামরিক সরঞ্জাম ধার দেয়ার অংগীকার করে।
- সর্বপ্রথম এবং একমাত্র ব্যক্তি, যিনি হোদায়বিয়ার সন্ধির সময় আদৌ কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেননিঃ হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা.।
- সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি হোদায়বিয়ার চুক্তির পর কুরবানী ও চুল কামানোর ব্যাপারে মুসলমানদের দ্বিধাদ্বন্দ্বের সময় রসূল সা. কে প্রবোধ দেনঃ উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালমা রা.।
- সর্বপ্রথম যে কবি রসূল সা. এর কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেঃ মক্কা বিজয়ের পর কা’ব বিন যুহায়ের উপস্থিত হয়ে ক্ষমা চাওয়ার জন্য “বানাত সুয়াদ” শীর্ষক কবিতা পাঠ করেন এবং রসূল সা. তাকে নিজের চাদর পুরস্কার স্বরূপ দান করেন।
- রসূল সা. তাকে কর্তৃক সর্বপ্রথম ‘কুনুতে নাযেলা’ পাঠঃ রজী ও বীরে মাউনার হৃদয়বিধারক ঘটনার পর। এই দুটি ঘটনায় শত্রুরা দাওয়াতী ও শিক্ষামূলক প্রতিনিধি দলের সুদক্ষ ব্যক্তিবর্গকে হত্যা করে।(হিঃ ৪)
- সর্বপ্রথম মুসলিম মহিলাদের রণাঙ্গণে আগমনঃ ওহুদ যুদ্ধে (হিঃ ৩)
- প্রথম শাসক, যিনি ইসলাম গ্রহণ করেনঃ আসম বিন আবজার, আবিসিনিয়ার বাদশাহ।
- সর্বপ্রথম যে ব্যক্তিকে রসূল সা. এই বলে প্রশংসা করেন যে, তার সম্পর্কে যে সুনাম তিনি শুনেছেন, তিনি তার চেয়েও মহৎ তিনি তাঈ গোত্রের সরদার যায়দুল খায়র, পূর্বনাম যায়দুল খায়ল।
- প্র্রথম অনারব নওমুসলিম, যাকে ইসলাম গ্রহণের কারণে শূলে চড়িয়ে হত্যা করা হয়ঃ মুযান নামক স্থানে কর্মরত উত্তর আরবের রোমক গভর্ণন ফারওয়া জুযামী।
- ওহুদ যুদ্ধে প্রথম মোশরেক সম্মুখ যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ দাতাঃ তালহা।
- ওহুদ যুদ্ধের সম্মুখ সমরের চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী প্রথম মুসলমানঃ হযরত আলী।
- ওহুদ যুদ্ধের প্রথম নিহত শত্রুঃ তালহা।
- প্রথম গর্ব প্রকাশ, যা রসূল সা. পছন্দ করেছিলেনঃ ওহুদ যুদ্ধে রসূল সা. এর তরবারী হাতে পেয়ে আবু দুজানার গর্বে বুক ফুলিয়ে চলা।
- ইসলামে প্রথম হজ্জঃ নবম হিজরীতে হযরত আবু বকর সিদ্দীকের নেতৃত্বে।
- প্রথম বিদেশে যুদ্ধঃ মূতার যুদ্ধ (জমাদিউস সানী, হিঃ৮)।
- তায়েফের সাকীফ গোত্র থেকে ইসলামের শিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্যে মদিনায় আগত প্রথম ব্যক্তিঃ উরওয়া বিন মাসউদ সাকাফী।


পরিশিষ্ট-৩
ইসলামী আন্দোলনে জনশক্তির ক্রমবৃদ্ধি

- রসূল সা. এর ইসলামী সংগঠনের প্রথম সহযোগীঃ (১) হযরত খাদীজা, (২) হযরত আবু বকর (৩) হযরত আলী (৪) হযরত যায়েদ বিন হারেসা রা.।
- হযরত আবু বকরের দাওয়াতী প্রচেষ্টার ফলে প্রথম পর্যায়ে ইসলাম গ্রহণকারী ৫ জনঃ (১) হযরত যুবায়ের ইবনুল আওয়াম (২) হযরত ওসমান ইবনে আফফান (৩) হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ (৪) হযরত তালহা বিন উবায়দুল্লাহ (৫) হযরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস।
- দাওয়াতের প্রথম তিন বছরে ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ৪৬ ব্যক্তিঃ (১) খাব্বাব ইবনুল আরত তামীমী (২) সাঈদ বিন যায়দ (দারুল আরকাম কেন্দ্রিক আন্দোলনেরও পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন) (৩) ফাতেমা বিনতুল খাত্তাব (৪) লুবাবা বিনতুল হারেস (হযরত খাদিজার পর সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী মহিলা) হযরত আব্বাসের স্ত্রী (৫) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (কারো কারো মতে, ইনি ইসলাম গ্রহণকারী ৬ষ্ঠ ব্যক্তি) (৬) উসমান ইবনে মাযঊন (ইসলাম গ্রহণকারী চতুর্দশ ব্যক্তি) (৭) আরকাম ইবনে আবুল আরকাম (ইসলাম গ্রহণকারী একাদশ বা দ্বাদশ ব্যক্তি।মতান্তরে তিনি ৭ম) মাখযুমী (ইবনে হাজারের মতে, ইনি উসমান ইবনে মাযঊন, উবায়দা ইবনুল হারেস, আব্দুর রহমান ইবনে আওফ ও আবু সালমার সাথে একত্রেই দারুল আরকামে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। (৮) আবু সালমা বিন আব্দুল আসাদ মাখযুমী (৯) আবু উবাইদা বিন আমের আল জাররাহ (হযরত ওমরের আগে ইসলাম গ্রহণ করেন) (১০) কুদামা ইবনে মাযঊন (১১) উবায়দা বিন হারেস বিন আবদুল মুত্তালিব (১২) জাফর বিন আবু তালেব (১৩) আসমা বিনতে উমায়েস (১৪) আবদুল্লাহ বিন জাহাশ (১৫) আবু আহমদ বিন জাহাশ (১৬) সায়েব বিন উসমান বিন মাযঊন (১৭) মুত্তালিব বিন আযহার (১৮) রমলা বিনতে আবি আওফ, মুতালিব ইবনে আযহারের স্ত্রী (১৯) উমাইর বিন আবি ওয়াক্কাস (সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাসের ভাই) (২০) আসমা বিনতে আবি বকর (২১) আয়েশা বিনতে আবি বকর (২২) হযরত আইয়াশ বিন আবি রবীয়া (আবু জাহলের ভাই) (২৩) আসমা (আইয়াশের স্ত্রী) (২৪) সুলাইত বিন আমর (হযরত আবু বকরের বর্ণনা অনুসারে, ইনি দারুল আরকাম যুগের পূর্বের মুসলমান) (২৫) মাসঊদ বিন রবীয়া (দারুল আরকাম যুগের পূর্বে ইসলাম গ্রহণকারী) (২৬) খুনাইস বিন হাদ্দাফা (২৭) আমের বিন রবীয়া (২৮) হাতেব ইবনুল হারস জুমহী (২৯) ফাতেমা বিনতে মুহাল্লাল, হাতেবের স্ত্রী (৩০) খাত্তাব ইবনুল হারেস (৩১) ফুকাইহা, খাত্তাবের স্ত্রী (৩২) মুয়াম্মার বিন হারেস (হযরত ওমরের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ইনিই তার বোনকে কোরআন পড়াতেন। ওয়াকেদীর মতে, তার স্থান দশ জনের পর। ইবনে খাসয়ামার মতে, ৩৮ জনের পর।) (৩৩) নঈম বিন আব্দুল্লাহ, বনু আদীর সদস্য (চতুর্থ বা পঞ্চম ইসলাম গ্রহণকারী, কিন্তু পিতার ভয়ে ঈমান গোপন রাখেন) (৩৪) খালেদ বিন সাঈদ ইবনুল আস (ইমাম যুহরীর মতে, তাঁর স্থান ৪৪তম) (৩৫) আমীনা (বা হামিনা) বিনতে খালাফ, খালেদ বিন সাঈদের স্ত্রী। (৩৬) হাতেব বিন আমর (৩৭) ওয়াকেদ বিন আব্দুল্লাহ, বনী আদীর মিত্র (৩৯) খালেদ বিন হিযাম (হযরত খাদীজার ভ্রাতুষ্পুত্র) (৪০) আমের বিন মালেক (দারুল আরকামে ইনিই প্রথম বায়য়াত করেন) (৪১) আকেল বিন বুকায়ের (৩৫ বা ৩৬তম স্থান) (৪২) খালেদ বিন বুকায়ের (৪৩) আমের বিন বুকায়ের (৪৪) আম্মার বিন ইয়াসার (পিতা ইয়াসারের সাথে ইসলাম গ্রহণ করেন) (৪৫) সুমাইয়া (আম্মারের মাতা) (৪৬) সুহায়েব বিন সুফান রুমী, ইবনে জাদয়ানের মুক্ত গোলাম।
- আবিসিনিয়ায় প্রথম হিজরতকারীদের সংখ্যাঃ ১২ জন পুরুষ, ৪ জন মহিলা (মোট ১৬জন)।
- দ্বিতীয়বার আবিসিনিয়ায় হিজরতের সময় মোট সংখ্যাঃ ৮৩ জন। এ সময় যারা মক্কায় থেকে যান, তাদের সংখ্যা অন্তত পক্ষে আবিসিনিয়ায় গমনকারীদের সমান হবে। তাই মোট সংখ্যা দেড়শোর ওপরে হবে।
- মদিনায় ইসলামী দাওয়াতের প্রাথমিক পতাকাবাহীদের সংখ্যা ছিল মোট ৮জন।এরা সর্বপ্রথম রসূল সা. এর কাছে বায়য়াত করেন। (১) বারা বিন মারূর (২) কা’ব বিন মালেক (৩) আবদুল হাইছাম মালেক বিন তায়হান (৪) আসাদ বিন যারারা (৫) রাফে বিন মালেক (৬)কুতবা বিন আমের (৭) উকবা বিন আমের (৮) জাবের বিন আবদুল্লাহ।(সুবিদিত বর্ণনা অনুসারে আকবায় প্রথম বায়য়াত গ্রহণ করেন ৬ জন। ওয়াকেদীর মতে আসাদ বিন যারারা এবং যাকওয়ান বিন আব্দুল কায়েস আকাবার প্রথম বায়য়াতের আগে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
- আকাবার দ্বিতীয় বায়য়াতে অংশ গ্রহণ কারীগণঃ মোট ১২ ব্যক্তি অংশ নেন। জাবের বিন আব্দুল্লাহ ব্যতীত উপরোক্ত আনসারীগণ পুনরায় আসেন এবং নিজেদের সাথে আরো ৫ জনকে নিয়ে আসেন। নবাগতরা হলেনঃ (১) মুয়ায বিন হারেস (২) আওফ বিন হারেস (৩) যাকওয়ান বিন আবদুল কায়েস (৪) ইয়াযীদ বিন সা’লাবা (৫) উয়াইমির বিন মালেক।
- আকাবার দ্বিতীয় বায়য়াতে অংশগ্রহণকারীগণঃ এবারে সর্বমোট ৭৩ জন নারী ওপুরুষ ইসলাম গ্রহণ করেন।
- (আকাবার তৃতীয় বায়য়াতের সময়) মক্কার শেষ যুগে মুসলমানদের সর্বমোট সংখ্যাঃ আবিসিনিয়ার মোহাজের ৮৩ এবং আকাবার বায়য়াতকারী আনসারী ৭৩ ছাড়াও মক্কায় কিছু মুসলমান ছিল। অনুরূপ, মদিনাতেও এমন কিছু মুসলমান থাকতে পারে, যারা নবুয়তের ১৩তম বর্ষের হজ্জে নাও এসে থাকতে পারে। এভাবে আনুমানিক মোট সংখ্যা আড়াই শো হতে পারে। এই সাথে যদি নাজরান ও গিফার (গিফার গোত্রের প্রায় অর্ধেক অল্প দিনের মধ্যেই ইসলাম গ্রহণ করেছিল) এবং ইয়ামানের নও মুসলিমদের সংখ্যাও অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তবে আরবের সর্বমোট মুসলমানদের সংখ্যা তিনশোর কম হবেনা।
- হিজরতের অব্যবহিত পর মদিনার মুসলমানদের সংখ্যা, আনুমানিকঃ বনুসালেম গোত্রের এলাকায় সর্বপ্রথম যে জুমার নামায পড়া হয়, তাতে একশো মুসলমান শরীক হয়েছিল, একথা সুবিদিত। যারা শরীক হতে পারেনি, সেই সব নারী ও রোগীদের সংখ্যা ধরলে মদিনার মুসলমান জনসংখ্যা কমের পক্ষে তিনশো হওয়ার কথা। একথাও সুবিদিত যে, রসূল সা. আনসার ও মোহাজেরদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য একেবারে প্রথম দিকে যে সভা ডেকেছিলেন, তাতে ৯০ জন অংশ নিয়েছিল। এদের মধ্যে উভয় পক্ষের লোক ছিল অর্ধেক অর্ধেক। এই সম্মেলনে আনসারদের মধ্য থেকে সম্ভবত সচ্ছল লোকদেরকেই রাখা হয়েছিল, যারা নিজ নিজ আর্থিক অবস্থার ভেতরে অন্তত একজন করে মোহাজেরের স্থান সংকুলান করতে পারে। এখানে নারীরা শরীক ছিলনা। তাই এই সম্মেলন থেকেও উপরোক্ত অনুমান সঠিক বলেই ধারণা জন্মে।
- বদর যুদ্ধের সময় মদিনায় মুসলমানদের আনুমানিক সংখ্যাঃ একথা সবার জানা যে, মদিনার আনসারদের মধ্যে ইসলাম অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বিস্তার লাভ করে এবং আওস ও খাজরাজ গোত্রে এ ব্যাপারে কোন বাধা ছিলনা। এ কথাও সুবিদিত যে, হিজরত থেকে বদর যুদ্ধ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময় দু’একজন করে মোহাজেরের আগমন অব্যাহত ছিল এবং তাদের মোট সংখ্যা মোটামুটি কম ছিলনা। বুয়াত অভিযানে রসূল সা. এর সাথে দু’শো মোহাজের ছিল। অনুরূপভাবে, যুল উশাইর অভিযানেও তাদের সংখ্যা ১৫০ থেকে ২০০ এর কাছাকাছি ছিল। এই সব প্রাথমিক অভিযানে রসূল সা. শুধু মোহাজেরদেরকেই কাজে লাগাতেন।
কেননা আকাবার বায়য়াত অনুসারে আনসারগণ শুধু মদিনার ভেতরে প্রতিরক্ষামূলক কাজে যোগ দিতে বাধ্য ছিল। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, যুদ্ধে যোগদানকারী মোহাজেরদের সংখ্যাই যদি ২০০ হয়ে থাকে, তাহলে মোট সংখ্যা আরো কিছু বেশীই হবে। কমের পক্ষে আড়াই শো ধরে নেয়া যেতে পারে। [সাধারণভাবে যে কোন জনবসতিতে পুরুষদের সামরিক অনুপাত ১/৪ এবং ১/৫ হওয়ার কথা। কিন্তু দুই কারণে মদিনার মোহাজেরদের অবস্থা ভিন্নতার ছিল। প্রথমত, আরবের গোত্রীয় সমাজে সাধারণত প্রত্যেক পুরুষই লড়াকু হতো এবং এর ব্যতিক্রম খু্ব কমই হতো। তদুপরি মোহাজেরদের ঈমানী ও বিপ্লবী প্রেরণা থাকার কারণে তারা সর্বক্ষণ জীবন ও মৃত্যুর সংঘাতের মধ্যে জীবন যাপন করতো। এর ব্যতিক্রম কেউ ছিলনা বললেই চলে। তাছাড়া মোহাজের সমস্ত পরিবার পরিজন নিয়ে আসেনি। নারীদের উপস্থিতিও কম ছিল এবং বুড়ো লোকেরা বেশীর ভাগ মক্কায় থেকে গিয়েছিল। এই দুটি কারণে আমরা এভাবে অনুমান করেছি।] আনসারদের সংখ্যা এর দ্বিগুণ হওয়ার কথা। অর্থাৎ সর্বমোট সংখ্যা সাত আটশো হতে পারে।[বিভিন্ন ঐতিহাসিক বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, মদিনা রসূল সা. তিনবার আদম শুমারি করিয়েছিলেন। প্রথমবার লোক সংখ্যা ছিল পাঁচশো, দ্বিতীয়বার ৭-৮ শো এবং তৃতীয়বার হাজারের কিছূ বেশী। আমাদের ধারণা, প্রথম আদম-শুমারী মোহাজেরদের পুনর্বাসনের সময় অথবা প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের শুরুতে করা হয়ে থাকতে পারে। এরপর কোন গুরুতর পদক্ষেপ গ্রহণের সময় (যেমন সিরিয়া প্রত্যাগত কোরায়েশী বাণিজ্যিক কাফেলার গতিরোধ করা) পুনরায় জনশক্তি যাচাই করা হতে পারে। তৃতীয় আদমশুমারী সম্ভবত এক বছর পর আবু সুফিয়ানের প্রতিশোধ গ্রহণের হুমকির সম্মুখীন হয়ে করা হয়ে থাকবে।]
বদর যুদ্ধের মুসলিম যোদ্ধাদের সংখ্যা দেখে অনেকে বিভ্রাটে পড়ে যেতে পারে। তবে আমাদের গবেষণা মোতাবেক রসূল সা. যখন মদিনা থেকে ৩১৪ জন সাথীকে নিয়ে বেরিয়ে যান, তখন কোন আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ-সংঘর্ষের আশংকা তিনি করেননি। তার আসল উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্যিক কাফেলাকে প্রতিরোধ করা। তাছাড়া তাড়াহুড়োর ভেতরে ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল বিধায় সওয়ারীর ও অস্ত্রশস্ত্রের পরিমাণ খুবই কম ছিল। অথচ মদিনার মুসলিম অধিবাসীরা এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশী সওয়ারী ও অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবস্থা করতে পারতো। যে যোদ্ধা সংখ্যা জোগাড় করা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশী যোদ্ধা সংগ্রহ করাও সম্ভব ছিল। এর প্রমাণ এই যে, বদরযুদ্ধে সর্বমোট ৮৬ জন মোহাজের শরীক ছিলেন। অথচ ইতিপূর্বে কোন কোন টহল অভিযানেও মোহাজেরদের মোট সংখ্যা ২০০ পর্যন্ত দেখা গেছে। সুতরাং আমাদের অনুমান এই যে, বদর যুদ্ধের কাছাকাছি সময়ে মদিনায় মোট মুসলমান জনসংখ্যা ৭/৮ শোর কাছাকাছি ছিল। এর মধ্য থেকে ৪/৫ শো লড়াকু যোদ্ধা সংগ্রহ করা যেত। কিন্তু বদর যুদ্ধে পুরো সামরিক শক্তি শরীক হতে পারেনি। কারণ সমগ্র সামরিক শক্তিকে যোগদান করার নির্দেশ দেয়া হয়নি। তাৎক্ষণিকভাবে একটা বাহিনী সীমিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য রসূল সা. এর সাথে গিয়েছিল মাত্র।
বনু কাইনুকার অভিযান থেকেও আমাদের এই অনুমানের সত্যতা প্রমাণিত হয়। বদর যুদ্ধের অব্যবহিত পর এই পাষন্ড ও বর্বর ইহুদী গোত্রটিকে ঘেরাও করা হয় এবং তারা পর্যুদস্ত হয়ে মদিনা থেকে বেরিয়ে যেতে সম্মত হয়। জানা যায়, এই গোত্রের লড়াকু শক্তি ৬০০ যুবক নিয়ে সংগঠিত ছিল। তাদেরকে ১৫ দিন যাবত অবরুদ্ধ করে রেখে পর্যুদস্থ করতে মুসলিম বাহিনীর কমের পক্ষে ৪/৫ শো যোদ্ধার প্রয়োজন হয়েছিল বলে অনুমান করা যায়।
- বদর যুদ্ধের সময় সমগ্র পৃথিবীতে মুসলমানদের সার্বিক জনসংখ্যাঃ (আনুমানিক) মদিনার সাত আটশো জনের সাথে আমরা যদি আবিসিনিয়ায় অবস্থানরত মোহাজেরগণ, নাজরান, ইয়ামান, গিফার গোত্র, বাহরাইন ও অন্যান্য অঞ্চলে ও গোত্রে বিদ্যমান বিক্ষিপ্ত মুসলমানদের সংখ্যা যোগ করি, তাহলে সম্ভবত মোট জনশক্তি এক হাজার বা তার চেয়ে কিছু বেশী হবে।
- বিভিন্ন যুদ্ধে ও অভিযানে মুসলিম জনশক্তির সংখ্যাঃ [পরবর্তী যুগের ইসলামী আন্দোলনের জনশক্তির হিসাব করতে হলে যুদ্ধ বিগ্রহ ও অভিযান সমূহে অংশ গ্রহণকারীদের সংখ্যার আলোকেই তা জানা যাবে।]
- ওহুদ যুদ্ধ- ৬৫০ মতান্তরে ৭০০[আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এর তিন শো মুনাফেক সাথী বিদায় হয়ে যাওয়ার পর…..।]
- দ্বিতীয় বদর অভিযান- (যুদ্ধ হয়নি) ১৫১০।
- দুমাতুল জানদাল অভিযান (যুদ্ধ হয়নি) ১০০০।
- খন্দক যুদ্ধ- ৩০০০।
- হোদায়বিয়ার সফর- ১৪০০।
- খয়বরের যুদ্ধ- ১৪২০ (২০ জন মহিলাসহ)।
- মূতার যুদ্ধ- ৩০০০।
- মক্কা অভিযান- ১০,০০০।
- হোনায়েন যুদ্ধ ও তায়েফ অবরোধ- ১২,০০০।
- তবুক অভিযান- ৩০,০০০।
- বিদায় হজ্জের সহযাত্রী- ১,২৪০০০, মতান্তরে ১,৪৪০০০। [কোন কোন রেওয়ায়েতে এর সংখ্য বেশী বলা হয়েছে।]
- ইসলামী আন্দোলনের ক্রমবর্ধমান জনশক্তির পর্যালোচনা করার সময় একথাওমনে রাখতে হবে যে, রসূলের সা. বিপ্লবী সংগ্রামে মহিলারাও শুরু থেকেই অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য তারাও নিজ নিজ কর্তব্য পালন করেছেন। মক্কার অগ্নিপরীক্ষায় তারাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। হিজরতের সময়ও তাদের অনেকে সহযাত্রী হয়েছে। এমনকি সম্ভাব্য জেহাদেও তারা সহযোগী হয়েছেন। বরঞ্চ এটা মহিলাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয় যে রসূল সা. এর ওপর সর্বপ্রথম ঈমান আনা, রসূল সা. কে প্রবোধ দেয়া, এবং তাঁকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দানকারীও একজন মহিলাই ছিলেন, অর্থাৎ হযরত খাদীজা। বস্তুত রসূল সা. যে সর্বাত্মক মৌলিক পরিবর্তন সাধন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তা মহিলাদের সহযোগিতা ছাড়া কার্যকর হওয়া সম্ভব ছিলনা। পারিবারিক ক্ষেত্র যদি কোন সংগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে, তাহলে কাজের গতি অত্যধিক শ্লথ হয়ে যায়। রসূল সা.পরিচালিত ইসলামী আন্দোলন পুরুষদের ন্যায় মহিলাদের নিকট থেকেও প্রেরণা,অর্থ, শ্রম ও ত্যাগ পুরো মাত্রায় অর্জন করেছে। আসলে এ বিষয়ে একটা স্বতন্ত্র নিবন্ধের প্রয়োজন। তবে আপাতত এটা স্থগিত রাখছি। এখানে সংক্ষেপে শুধু ইসলামী আন্দোলনের মহিলাদের অনুপাত কেমন ছিল,তাই দেখাতে চাই। প্রথম তিন বছরের প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ৫৬ জনের মধ্যে ১২ জন ছিলেন মহিলা। আবিসিনিয়ায় প্রথম দফা ও দ্বিতীয় দফা হিজরতে তাদের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৫ ও ১৭, তৃতীয় আকাবার বায়য়াতের অধিবেশনে ২ জন মহিলা আনসারীও ছিলেন। রসূল সা. এর পূর্বে যারা মদিনায় হিজরত করেন, তাদের মধ্যেও কমের পক্ষে দশজন মহিলা ছিলেন।

[সমাপ্ত]


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি