ইসলামী নেতৃত্বের প্রধান ভূমিকা
ইসলামী নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে ইসলামী দল আবর্তিত হয়। সৌর জগতের গ্রহগুলো যেমন সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে তেমনিভাবে ইসলামী দলের কর্মীবাহিনী নেতাকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে। সেই কারণেই ইসলামী নেতার কর্মতৎপরতার ব্যাপ্তিও অনেক বেশী।
সৌর জগতের মধ্যমণি সূর্য যদি তাঁর আকর্ষণ শক্তি হারিয়ে ফেলে তাহলে গোটা সৌরজগতের গ্রহ-উপগ্রহগুলো আপন কক্ষপথ থেকে ছিটকে পড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যাবে। তেমনিভাবে ইসলামী নেতা যদি তাঁর আকর্ষণ শক্তি হারিয়ে ফেলেন তাহলে তাঁর দলের কর্মীগণ তাদের সংঘবদ্ধতার শক্তি হারিয়ে হীনবল হয়ে পড়ে।
যদি কোন ইসলামী দল বা রাষ্ট্র- এই ধরনের অনভিপ্রেত পরিস্থিতির সম্মুখীন তাহলে এর পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে নেতৃত্বের ওপর। এমন পরিস্থিতির অভিশাপ থেকে আত্মরক্ষার ইসলামী নেতাকে সদাসর্তক থাকতে হয়। সযত্নে পালন করতে হয় তাঁর কর্তব্য। ইসলামী নেতৃত্বকে যেসব ভূমিকা পালন করতে হয় তারই কিছুটা বর্ণনা দিতে চেষ্টা করছি এখানে।

তাযকিয়া
‘তাযকিয়া’ ইসলামী দলের অন্যতম প্রধান টার্গেট। ‘তাযকিয়া’ নবী রাসূলদের কর্মতৎপরতার সাথে বিশেষভাবে অংগীভূত ছিলো। বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (সা) কাজগুলোর একটি ছিল তাযকিয়া বা পবিত্রকরণ প্রচেষ্টা। এ সর্ম্পকে সূরা আল জুমুয়াতে আল্লাহ বলেন,
******* (আরবী টেক্সট) *******
“তিনিই সেই সত্তা যিনি নিরক্ষদের মধ্যে তাদের মধ্য থেকে একজন রাসূল আবির্ভূত করেছেন যে তাদেরকে তাঁর আয়াতসমূহ পড়ে শুনায়, তাদেরকে পবিত্র পরিশুদ্ধ করে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাহ্ শিক্ষা দেয়।” আল জুমুয়াঃ ২
রাসূল হিসাবে অন্যান্য কর্তব্য সম্পাদনের সংগে সংগে আল্লাহর রাসূল (সা) তাঁর আহবানে সাড়া দানকারীদের ‘তাযকিয়া’ বা পবিত্রকরণ কাজে আত্মনিয়োগ করেন। মুমিনদের চিন্তাধারা ও কর্মধারাকে তিনি পরিপূর্ণরূপে আল্লাহর আনুগত করেছেন। আল্লাহর নির্দেশ পালন করা ছাড়া তাদের জীবনে আর কিছুই প্রিয় ছিল না। তাদের চিন্তা জগতে ছিলো না কোন রকম বিভ্রান্তি তেমনিভাবে তাদের জীবনধারায় ছিলো না ইসলাম ছাড়া অন্য কিছুর সামান্যতম ছোঁয়াচ। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পছন্দ ছিলো তাদের নিজেদের পছন্দ-অপছন্দের মাপকাঠি। এই ধরনের লোকদের জন্যই সূরা আশশামসে আল্লাহ বলেন,
******* (আরবী টেক্সট) *******
কল্যাণ লাভ করলো সেই ব্যক্তি যে আপন সত্তাকে পবিত্র করে নিলো। --- আশ্ শামস ৯
‘তাযকিয়াকে’ আল্লাহর রাসূল এত বেশী গুরুত্ব দিতেন যে তিনি এই বলে দোয়া করতেন,
******* (আরবী টেক্সট) *******
“হে আল্লাহ, আমার সত্তাকে তাকওয় দান করুন এবং একে পবিত্র করুন”
রাসূলুল্লাহর (সা) অবর্তমানে ইসলামের স্বর্ণযুগে আমীরুল মুমিনীনগণ এই মহান কর্তব্য পালন করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁরা এই কর্তব্য পালনে রত ছিলেন। এই প্রসঙ্গে আমীরুল মুমিনীন উমারের (রা) জীবনের একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
উমার (রা) আবু লুলু ফিরোজের ছুরির আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হন। এই অবস্থায় তাঁকে দুধ পান করানো হলে আঘাতের স্থান দিয়ে সেই দুধ বেরিয়ে আসে। তাঁর বাঁচার কোন সম্ভবনাই ছিলোনা। বেদনায় তিনি কাতর হয়ে পড়েন। এই কঠিন মুহূর্তে একজন যুবকের ওপর তাঁর দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়। যুবকটির পোশাক মাটি পর্যন্ত প্রসারিত ছিলো। তিনি বলেন:
******* (আরবী টেক্সট) *******
“তোমার পোশাক ওপরে ওঠাও। এতে তোমার কাপড় পরিচ্ছন্ন থাকবে আর তোমার রবের কাছে এটা অধিকতর পছন্দনীয়।” --সহীহুল বুখারী
মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার কিছক্ষণ আগেও তাযকিয়ার এই মহান কর্তব্য পালন করেছেন উমার (রা)।
রাসূলের (সা) পাদাংক অনুসরণ করে আজকের যুগেও ইসলামী নেতৃত্বকে তাঁর দল বা রাষ্ট্রের লোকদের তাযকিয়ার জন্য নিরালস ভূমিকা পালন করতে হবে।

উখুয়াত সৃষ্টি
‘উখুয়াত সৃষ্টি’ বা ভ্রাতৃত্ব ইসলামী দলের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মুমিনদের পারস্পরিক গভীর সর্ম্পককে আল্লাহ ‘উখুয়াত সৃষ্টি’ নামে আখ্যায়িত করেছেন। সূরা আল-হুজরাতে আল্লাহ বলেন:
******* (আরবী টেক্সট) *******
“নিশ্চয় মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। ” --আল হুজরাত ১০
রাসূলুল্লাহার (সা) যুগে মক্কা থেকে আগত মুহাজাহিরগণ মদীনার আনসারদের দ্বারা এমনভাবে সমাদৃত হয়েছিলেন যার কোন তুলনা কোথাও নেই। আনসারগণ মুহাজাহিরদেরকে তাদের জমি জমা, ফলের বাগান, ব্যবসা বাণিজ্য এবং নগদ টাকার অংশ প্রদান করেন ইদার চিত্তে। আনসারগণ এই মনোভাব দেখাতে ব্যর্থ হলে মদীনায় মুহাজিরদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠতো।
মুহাজিরদের সাথে আনসারদের রক্তের বন্ধন ছিলো না। বরং রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়দের কাছ থেকেই মুহাজিরগণ গোপনে সরে পড়ে মদীনায় পৌঁছেন। রক্তের বন্ধন না থাকলেও ঈমানের যেই বন্ধন আনসারদেরকে মুহাজিরদের সাথে যুক্ত করেছিল তা রক্ত বন্ধনের চাইতেও বেশী মজবুত ছিল। মুহাজিরদেরকে আকাশের নিচে রেখে আনসারগণ ঘরে ঘুমাতেন না। মুহাজিরদেকে অভুক্ত রেখে আনসারগণ খেতেন না।
সেটা ছিল আন্তরিকতার যুগ। একজন মুসলিম অন্তর দিয়ে আরেক জন মুসলিমকে বুঝতে চেষ্টা করতেন। আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নয় অন্তরের এই সম্পর্কই সেদিন মুমিনদেরকে “বুনিয়ানুম মারসুস” অর্থাৎ গলিত সিসা দ্বারা গড়া প্রাচীরের মতো মজবুতি দান করেছিলো।
এই সম্পর্কের কারণেই সেই যুগের একজন মুসলিমের ঘরে কোন হাদিয়া এলে চলে যেত প্রতিবেশীর ঘরে। এই সম্পর্কের কারণেই যুদ্ধে আহত অবস্থায় বুকফাটা পিপাসায় কাতর হয়েও পাশে শায়িত ভাইয়ের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য করে নিজের প্রাপ্য পানিটুকু তাকে দিয়ে দারুণ পিপাসা নিয়ে শাহাদাত বরণ করতে পেরেছিলো সেইযুগর বহু মুমিন। এই সম্পর্কের নাম উখুয়াত।
এই উখুয়াক হচ্ছে সাংগঠনিক শক্তির নির্যাস। এটা যে দল বা রাষ্ট্রে পাওয়া যায় তার শক্তি অনেক। আল্লাহর রাসূল (সা) বলেন:
******* (আরবী টেক্সট) *******
“মুমিনদের পারস্পরিক সম্পর্ক একটি প্রাচীরের মতো। যার একটি অংশ অপর অংশকে মজবুত করে।”
-সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম
******* (আরবী টেক্সট) *******
“পারসাপরিক ভালবাসা, দয়া অনুগ্রহ এবং মায়া মমতার দৃষ্টিকোণ থেকে মুমিনগণ একটি দেহের সমতুল্য। যদি দেহের কোন অংশ অসুস্থ হয়ে পড়ে তবে অন্যান্য অংশও তা অনুভব করে।”
--সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম
এই উখুয়াত বা ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টির জন্য অগ্রণী ভ’মিকা পালন করতে হয় নেতৃত্বকে।
নেতার অন্তরে উষ্ণতা যখন ছড়িয়ে পড়ে দল বা রাষ্ট্রের সকল স্তরে তখনই উখুয়াত গড়ে ওঠে। নেতার অন্তর এই উষ্ণতা ছড়াতে ব্যর্থ হলে শত ওয়াজ নসীহাত করেও উখুয়াত বা ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।

ত্যাগের অনুপ্রেরণা সৃষ্টি
ইসলামী সমাহে নেতৃত্বকেই ত্যাগ কুরবানীর উদাহরণ পেশ করতে হয় সর্বাগ্রে। নেতার ত্যাগই অনুসারীদেরকে আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণা যুগিয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে বিশ্বনবী (সা) যেই আদর্শ স্থাপন করেছেন তার কোন নজীর অন্যত্র খুঁজে পাওয়া যায় না।
আল্লাহর রাসূল (সা) ছিলেন অল্প তুষ্ট মানুষ। মদীনায় রাষ্ট্র প্রধান হয়েও তিনি অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। আল্লাহর রাসূল (সা) এর নিকট অনেক টাকা-পয়সা আসতো। তিনি সেসব নিজে ভোগ না করে অন্যদের মাঝে বিলিয়ে দিতেন। তিনি বলতেন, একজন মুসাফিরের জন্য যেই পরিমাণ পাথেয় দরকার মানুষের জন্য দুনিয়ার ঠিক ততটুকু যথেষ্ট।
উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহর (সা) কাপড় কখনো পাট করে রাখা হতো না। অথাৎ তাঁর অতিরিক্ত কাপড় ছিলো না যা পাট করে রাখা যেতো।
রাসূলুল্লাহর ইন্তিকালের পর আয়িশা (রা) বলেন যে রাসূলুল্লাহ (সা) এই দুনিয়া থেকে চলে গেছেন, কিন্তু কখনও দুবেলা পেট ভরে খেতে পারেননি।
এই ছিলো মিল্লাতের অবিম্বাদিত নেতার জীবন-দ্বারা।
আল্লাহর রাসূলে এই ত্যাগী চরিত্র তাঁকে অনুসারীদের কাছে প্রিয়তম করে তুলেছিলো। নিজে সর্বশ্রেষ্ঠ ত্যাগী হওয়ার কারণে ত্যাগের আহবান জানালে তাঁর অনুসারীগণ ত্যাগের প্রতিযোগিতায় লেগে যেতেন। তাঁর নিস্বার্থ জীবন-যাত্রা অন্যদের জন্য প্রেরণার উৎস ছিলো। তাঁর সাহচর্য লাভ করে ওঠেছিলো একটি নির্লোভ ও নিস্বার্থ জনগোষ্ঠী। সাদাসিধে জীবন যাপনের উৎসাহ দিতে গিয়ে আল্লাহর রাসূল (সা) বলেন,
******* (আরবী টেক্সট) *******
“আড়ম্বরহীনতা ঈমানের অঙ্গ। ” ----সুনানু আবী দাউদ
বস্তুত: অনাড়ম্বর ও ত্যাগী জীবন যাপনকারী নেতার বিরুদ্ধে অনুসারীদেরকে কখনও বিক্ষুদ্ধ হতে দেখা যায় না। রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বের ক্ষেত্রে কথাটি আরো বেশী সত্য। কোন রাষ্ট্রে যদি কখনো দুর্ভিক্ষাবস্থা দেখা দেয় এবং দেশের মানুষ যদি একবেলা খেয়ে কাটাতে বাধ্য হয় সেই সময়টাতেও রাষ্ট্রের নাগরিকগন বিদ্রোহী হয় না যদি তারা দেখতে পায় যে, তাদের নেতা তাদের মতোই একবেলা খাচ্ছেন এবং তাদের মতোই কষ্ট স্বীকার করছেন। এমতাবস্থায় রাষ্ট্রের নাগরিকগণ বরং নেতার সাথে একাত্মা হয়ে ধৈর্য সহকারে পরিস্থিতির মুকাবিলা করতে থাকে।
রাসূলুল্লাহ (সা) যেমন নিজের জীবনকে উদাহরণস্বরূপ উপস্থাপন করে তাঁর সংগী সাথীদেরকে ত্যাগী জীবন যাপন করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন, আজকের দুনিয়ার যেই কোন ইসলামী দল বা রাষ্ট্রের নেতাকে একই নিয়মে তাঁর অনুসারীদেরকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। ত্যাগের অনুপ্রেরণা সৃষ্টির এটাই স্বভাবিক পথ।

কর্মীদের মাঝে ইনসাফ কায়েম
একটি দলে থঅকে নানা রকমের মানুষ। কর্ম-ক্ষমতা, বুদ্ধি-মত্তা এবং দৈহিক সৌন্দর্যের দিক থেকে এদের মাঝে থাকে অনেক পার্থক্য। এসব পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও যারা আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের জন্য তাদের শক্তি সামর্থ নিয়োজিত করার জন্য এগিয়ে আসে তাদের সবার অধিকার সমান। কালো, ধলো, কুৎসিৎ, সুদর্শন, কম বুদ্ধিমান, বেশী বুদ্ধিমান, প্রতিভাবান, প্রতিভাহীন, বলবান, বলহীন এরা সবাই অধিকারের সমান অংশীদার।
কালো, কুৎসিৎ, কম বুদ্ধিমান, প্রতিভাহীন বা বলহীন হওয়ার কারণে নেতা যদি কাউকে হেয় জ্ঞান করেন তাহলে তো তিনি বড় রকমের অপরাধই করে বসেন। আবার সুদর্শন, বেশী বুদ্ধিমান, প্রতিভাবান বা বলবান হওয়ার কারণে তিনি যদি কারো প্রতি বেশী অনুরাগী হন তাহলে তিনি দলের মৃত্যুঘন্টা বাজাতেই শুরু করেন। কালো, কুৎসিৎ, কম বুদ্ধমান, প্রতিভাহীন বা বলহীনকে বাঁকা চোখে দেখার অর্থ স্রষ্টাকে বাঁকা চোখে দেখা। কারণ স্রষ্টাই কিছু লোকে কালো, কুৎসিৎ, কম বুদ্ধিমান, প্রতিভাহীন বা বলহীন রূপে সৃষ্টি করেছেন, তারা নিজের নিজেদেরকে এভাবে সৃষ্টি করেনি।
নেতার কর্তব্য সবাইকে ভালোবাসা। তিনি তাদের সবাইকে শুধুমাত্র এই জন্যই ভালোবাসবেন যে, তারা আল্লাহ্র বান্দা এবং আল্লাহর সন্তোষ লাভের উদ্দেশ্যেনিবেদিত-প্রাণ।
আল্লঅহর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হওয়ার কারণে মুমিনদের মাঝে যেই ভালোবাসা গড়ে ওঠে, কেবলমাত্র এটাই নিকট স্বীকৃত ভালোবাসা, অন্য কোন ভালোবাসা নয়।
ইনসাফের দাবী হচ্ছে নেতা কর্মীদেরকে সমান চোখে দেখবেন, প্রত্যেকের প্রতি সমান মনোযোগ দেবেন, প্রত্যেকের আপনজনে পরিণত হবেন, প্রত্যেকের তার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ দেবেন এবং কাজ আদায় করে নেবেন।
নেতার কথা ও আচরণ থেকে যদি কিছু সংখ্যক লোকের প্রতি অনুরাগ এবং কিছু সংখ্যক লোকের প্রতি উদাসীনতা প্রকাশ পায় তাহলে তাঁর নেতৃত্ব তাঁর দল বা রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণই ডেকে আনে।
******* (আরবী টেক্সট) *******
“নিশ্চই আল্লাহ তোমাদেরকে ইনসাফ এবং সদাচরণের নির্দেশ দিচ্ছেন।”
--আন্নাহাল ৯০
আল্লাহর নির্দেশের এই দাবী অনুযায়ী দল বা রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে ইনসাফ কায়েম না করে, একজন নেতা মানুষের কাছে, এবং মানুষের রবের কাছে সমাদৃত হবেন, এটা কখনো আশা করা যায় না। নেতা তাঁর কর্মীদের প্রতি ইনসাফপূর্ণ আচরণ করতে ব্যর্থ হলে তাঁর দল বা রাষ্ট্রের ভিত দুর্বল হতে থাকে। এক পর্যায়ে তা ভূমিধসের ভয়াবহতার সম্মুখীন হয়। এই অনভিপ্রেত পরিবেশ থেকে দল বা রাষ্ট্রের হিফাজত করার প্রয়োজনে নেতাকে অবশ্যই ইনসাফপূর্ণ আচরণ তাঁর প্রাত্যহিক কাজকর্মের অন্যতম মূলনীতিতে পরিণত করতে হবে।

বিপদ মুসিবাতে অবলম্বনের তালীম
এই দুনিয়ার মুমিনদের চলার পথ মোটেই ফুল বিছানো নয়। আল্লাহ মুমিনদের ওপর কঠিন দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। এই কঠিন দায়িত্ব পালনে সফলতা অর্জন করতে পারলে আল্লাহ তাদের জন্য নির্ধারিত রেখেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামাত--- জান্নাত।
জান্নাতের মতো মূল্যবান স্থানে মুমিনদে কে উন্নীত করার আগে আল্লাহ তাদেরকে উপযুক্ততা প্রমাণের জন্য পরীক্ষার সম্মুখীন করবেন, এটাই স্বাভাবিক। এই উপযুক্ততা প্রমাণের ক্ষেত্র হচ্ছে ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।
এই সংগ্রাম পরিচালনা করতে গিয়ে মুমিনদেরকে বিভিন্ন জটিলতা, সংকট এবং বিপদ মুসিবাতের মুকাবিলা করতে হয়। মুমিনদের সামনে এগুলেঅ আসে পরীক্ষারূপে। এই সম্পর্কে সূরা আল- বাকারাহতে আল্লাহ বলেন:
******* (আরবী টেক্সট) *******
“নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো কিছুটা ভয়ভীতি (ভীতিপ্রদ পরিস্থিতি), ক্ষুধা এবং মাল, জান ও ফল-ফসলের ক্ষতি দ্বারা। আর ধৈর্য অবলম্বনকারীদেরকে সুসংবাদ দাও”
--আল বাকারাহ ১৫৫
সূরা আল আনকাবুতে আল্লাহ বলেন,
******* (আরবী টেক্সট) *******
“মানুষেরা কি মনে করেছে যে, আমরা ঈমান এনেছি একথা বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে এবং কোন পরীক্ষা করা হবেনা? অথচ আমি তাদেরকে পূর্ববর্তীদেরকে পরীক্ষা করেছি। ঈমানের দাবীতে কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী আল্লাহ অবশ্যই তা জেনে নেবেন। ”
--আল্ আনকাবুত ২৩
সূরা আলে ইমরানে আল্লাহ বলেন,
******* (আরবী টেক্সট) *******
“তোমরা কি ভেবেছো যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ আল্লাহ এই বিষয়ে এখনো দেখেননি যে তোমাদের কারা জিহাদে আত্মনিয়োগ করে এবং সবর অবলম্বন করে”
--আলে ইমরান ১৪২
এসব কথার মাধ্যমে আল্লাহ যেই কথাটি মুমিনদের মনে বদ্ধমূল করে দিতে চান তা হচ্ছে এই যে, জান্নাত প্রাপ্তি সহজ ব্যাপার নয়। আত্মপ্রতিষ্ঠার রঙ্গীন স্বপ্ন বাদ দিয়ে পরিপূর্ণ আত্মত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে কেবলমাত্র আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রচ্ষ্টো চালিয়ে জান্নাত প্রাপ্তির আশা করতেপারে।
দীন-প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বাধার চড়াই উতরাই পেরিয়ে সামনে অগ্রসর হয়। চলার পথে বিভিন্ন মানযিরে নেমে আসে প্রতিবান্ধকতা। সমালোচনা, বিদ্রুপ প্রলোভন এবং দৈহিক নির্যাতনের সম্মখীন হতে হয় বার বার। এসব কিছুকে উপেক্ষা করে সামনে চলা নিশ্চয় কঠিন। সমালোচনা ও বিদৃুপ-বাণের সামনে মনোবল বাচিঁয়ে রাখা, বিভিন্ন রকমের প্রলোভনের হাতছানি থেকে আত্মরক্ষা করা এবং যাবতীয় নির্যাতন সহ্য করা চাট্টিখানি কথা নয়।
এই পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে দুর্বলচেতা মুমিনদের কিছুসংখ্যক পিছুটান দেয়, কিছুসংখ্যক লোক গৃহীত সিন্ধান্তের দুর্বলতা আবিষ্কারের জন্য গবেষণায় লেগে যায় এবং কিছু লোক পথটিই সঠিক কিনা সেই সংশয়ে পড়ে যায়। কিন্তু যাদের ঈমানের কোন ঘাটতি নেই, মনে কোন ব্যাধি নেই এবং আল্লাহর সন্তোষের জন্য জীবন দিতে যারা অকুতোভয় তারা এই পরীক্ষাকে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে তারা বাধার প্রতিটি প্রাচীরকেই এক একটা নতুন পরীক্ষা হিসাবে গ্রহণ করে এই পরীক্ষাগুলোতে কামিয়াব হওয়ার জন্য কেবলমাত্র আল্লাহর সাহায্যের ওপরই নির্ভর করে।
মুসলিম মিল্লাতের ইতিহাসে পর্যালোচনা দেখা যায় কঠিন বিপদ মুসিবাতের পরই মিল্লাতের চিন্তা-জগতে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে টড়েছে এবং মিল্লাতের বিরাট অংশ সংগ্রামী চেতনা অবদমিত করে বৈরাগ্যবাদ গ্রহণ করেছে। আজকের যুগে ইসলামী পুনর্জাগরণের পথে বাধঅ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই বৈরাগ্যবাদ।
ইস্যলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিয়োজিত ব্যক্তিদের অন্যতম বিশেষ গুণ হচ্ছে সবর। সবর বলতে কেবল নীরবে নানাবিধ যাতনা সহ্য করাকেই বুঝায় না। আল্লাহর সিদ্ধান্তকে অকাতরে মেনে য়ো এবং সর্ববিধ তাঁর অনুগামীদেরকে মুক্ত থাকাও এর মধ্যে শামিল। ইসলামী নেতা এবং তাঁর অনুগামীদেরকে অবশ্যই বিশ্বাস রাখতে হবে যে আল্লাহর অনুমোদন ছাড়া কোন ব্যক্তির জীবনে কোন মুসিবাত আসতে পারে না। এই ক্ষেত্রে সূরা আল হাদীদে আল্লাহ যেই ঘোষণাটি রেখেছেন তা ভালভাবে মনে রাখা দরকার।
আল্লাহ বলেন:
******* (আরবী টেক্সট) *******
“দুনিয়ার এবং তোমাদের ব্যক্তিসত্তায় এমন কোন মুসিবাত ঘটতে পারে না যা ঘটায় আগেই আমি কিতাবে লিপিবদ্ধ করে রাখিনি। এমনকি করা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ।”
---আল হাদীদ ২২
বিপদ মুসিবাতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা নি:সন্দেহে একটি কঠিন কাজ। তার চেয়েও কঠিন কাজ বিপদ-উত্তর কালে বিভ্রান্তি থেকে দলকে বাঁচিয়ে রাখা। প্রকৃতপক্ষে নেতৃত্বের শ্রেষ্ঠত্ব অথবা ব্যর্থতা প্রমাণিত হয় এখানেই। নেতা যদি সত্যিকার অর্থে সবর অবলম্বন করতে পারেন, তবেই তো তিনি তাঁর অনুসারীদের মাধ্যে সবর সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে পারেন। নেতা যদি নিজে চিন্তার বিভ্রান্তি থেকে আত্মরক্ষা করতে পারেন তবেই তো তিনি তাঁর অনুগামীদেরকে সেই বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত রাখার প্রচেষ্টা চালাতে পারেন।

আল্লাহর সন্তোষ অর্জনকেই সকল তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দু রূপে উপস্থাপন
ইসলাম প্রতিষ্ঠাকামীদের কর্মক্ষেত্র দুনিয়া। এই দুনিয়ার চেহারা পাল্টানোর দায়িত্ব তাদের উপর ন্যস্ত। প্রচলিত সমাজ-ব্যবস্থা উৎখাত করে ইসলামী সমাজ-ব্যবস্থা কায়েমের জন্যই তারা চেষ্টা চালায়। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য দুনিয়ার ইসলাম প্রতিষ্ঠা করাই নয় বরং ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে আল্লাহর সন্তোষ অর্জনই তাদের লক্ষ্য।
ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম দুনিয়াবী দৃষ্টিতে কামিয়াব নাও হতে পারে। আল্লাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নবী নূহ আলাইহিস সালঅম সাড়ে ন’শ বছর ধরে দুনিয়া বুকে ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করেছেন। এমন নয় যে তাঁর নেতৃত্ব দুর্বল ছিলো অথবা তিনি ভালো স্ট্র্যাটিজিষ্ট ছিলেন না। বস্তুত: যেই জাতি ইসলামী সমাজের মতো দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম সম্পদ গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয় আল্লাহ সেই জাতিকে খামাখাই তা দান করেন না। নূহ আলাইহিস সালামের কাওমকেও আল্লাহ তা দান করেননি। এর অর্থ এই নয় যে নূহ আলাইহিস সালামের সংগ্রাম ব্যর্থ হয়েছিল। আল্লাহ পক্ষ থেকে তিনি দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে এসেছিলেন। সেই দায়িত্ব তিনি যথাযথভঅবে পালন করে গেছেন। পরিণামে তিনি আল্লাহর সন্তোষ অর্জন করেছেন। কাজেই তাঁর জীবনে কোন ব্যর্থতা নেই। আল্লাহর সন্তোষ অর্জনকেই যখন ইসলাম প্রতিষ্ঠাকামীগণ তাদের সমগ্র তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে, তখন দুনিয়াবি কোন ব্যর্থতাই তাদের মনে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে না। তারা হতাশ হয় না। দুনিয়ার বুকে সত্য প্রত্যাখানকারীদের প্রতাপ দেখে তারা বিচলিত হয় না। বরং স্মরণ করে আল্লাহর বাণী,
******* (আরবী টেক্সট) *******
“যমীনে সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের সদর্প পদচারণা তোমাকে যেন প্রবঞ্চিত না করে। এটা অতি সামান্য উপভোগের উপকরণ। তাদের চ’ড়ান্ত নিবাস জাহান্নাম যা অত্যন্ত খারাপ এক শয্যা।”
--আলে ইমরান: ১৯৬
মুমিনের দৃষ্টি সঠিক দিকে নিবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ সূরা আলে ইমরানের অন্যত্র বলেন,
******* (আরবী টেক্সট) *******
“দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের মাগফিরাতের দিকে এবং জান্নাতের দিকে যার ব্যপ্তি সমগ্র আসমান ও পৃথিবীর সমান। মুত্তাকীদের জন্যই তা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।”
--আলে ইমরান ১৩৩
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (সা) সংগঠনের অন্তর্ভৃক্ত ব্যক্তিগণ কোন্ মহান লক্ষ্যকে তাঁদের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য বানিয়েছিলেন তা সূরা আল ফাতহের একটি আয়াতে সুন্দরভাবে ব্যক্ত হয়েছে।
******* (আরবী টেক্সট) *******
“তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তোষ অন্বেষণ করে থাকে।”
--আল ফাত্হ ২৯
বস্তুত: আল্লাহর অনুগ্রহ এবং সন্তোষ অর্জনই হচ্ছে মুমিন জীবণের যাবতীয় তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দু।
মুমিনদের তৎপরতা কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তোষ অর্জনকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হোক এটাই আল্লাহ চান। এক্ষেত্রে নিয়াতের বিশুদ্ধতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহর রাসূলের (সা) হাদীস থাকে জানা যায় যে জিহাদ করে শহীদ হওয়ার মতো বড়ো রকমের কুরবানীও আল্লাহর নিকট গৃহীত হয় না যদি তা বিশুদ্ধ নিয়াত সহকারে না করা হয়।
আবু হুরায়রা (রা) বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ (সা)- কে বলতে শুনেছি যে, শেষ বিচারের দিন সর্বপ্রথম একজন শহীদের বিচার ফয়সালা হবে। তাকে হাজির করে তার প্রতি প্রতি প্রদত্ত সকল নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে। সেই ব্যক্তি এসব নিয়ামত-প্রাপ্তি ও ভোগের কথা স্বীকার করবে। তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, “এসব উপভোগের পর তুমি কি করছো? সে বলবে, , আমি শহীদ না হওয়া পর্যন্ত আপনার পথে লড়াই করেছি? আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যে বলছো। তুমি বীররূপে খ্যাত হবার জন্য লড়াই করেছো। সেই খ্যাতি তুমি পেয়েও গেছো। তারপর ফায়সালা দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে পা-ধরে টানা হবে যই পর্যন্ত না সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়।
এরপর হাজির করা হবে এমন এক ব্যক্তিকে যে ইলম অর্জন করেছে, ইলম শিক্ষা দিয়েছে এবং আল-কুরআন পড়েছে। তাকে তার প্রতি প্রদত্ত নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে। তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, এসব ভোগের পর কি করেছো? সে বলবে, আমি ইলম শিক্ষা দিয়েছি আর আপনার সন্তুষ্টির জন্য আল কুরআন পড়েছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো তুমি আলিম (বা বিদ্বান) রূপে খ্যাত হবার জন্য ইলম অর্জন করেছো। তাপর ফয়সালা দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে পা ধরে টানা হবে যেই পর্যন্ত না সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়। এর পর হাজির করা হবে এমন এক ব্যক্তিকে যাকে আল্লাহ সচ্ছলতা ও ধন সম্পদ দান করেছেন। তাকে তার প্রতি প্রদত্ত নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে। সে এসব নিয়ামত-প্রাপ্তি ও ভোগের কথা স্বীকার করবে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, এসব উপভোগের পর তুমি কি করেছো? সে বলবে, আমি আপনার পছন্দনীয় সব কাজই আমার সম্পদ খরচ করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো। দাতারূপে খ্যাত হবার জন্যই দান করেছো। সেই খ্যতি তুমি অর্জনও করেছো। তারপর ফায়সালা দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে পা ধরে টানা হবে যেই পযন্ত না সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়। ”
একমাত্র আল্লাহর সন্তোষ অর্জনকে লক্ষ স্থির না করে বা সেই লক্ষ্যকে শরীক করে যত বড়ো কাজই করা হোক না কেন, তা পন্ডশ্রম মাত্র। ইসলামী দলের কর্মীবাহিনী যাতে এই দুর্ভাগ্যের শিকারে পরিণত না হয় তার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নেতৃত্বের। বস্তুত: আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের দিকে অনুগামীদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে পারার মধ্যেই নিহিত রয়েছে নেতৃত্বের সবচে বড়ো কৃতিত্ব।


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি